Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Board Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল Suggestions in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 10 Social Science Chapter 8 পৃথিবীর ভূগোল Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
পৃথিবীর ভূগোল
দ্বিতীয় খন্ড
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। পৃথিবীর স্থলমণ্ডল আর জলমণ্ডল বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ পৃথিবীর মোট আয়তন প্রায় ৫১০ নিযুত বর্গ কিলোমিটার । পৃথিবীর ভূ – পৃষ্ঠের প্রায় ১৪৯ নিযুত বর্গ কিলোমিটার স্থলভাগ এবং প্রায় ৩৬১ নিযুত বর্গ – কিলোমিটাার জলভাগ । পৃথিবীর স্থলভাগ ৭ টি মহাদেশ দ্বারা গঠিত— এশিয়া , আফ্রিকা , ইউরোপ , উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা , ওশেনিয়া এবং এণ্টার্কটিকা এবং জলভাগ প্রশান্ত মহাসাগর , আটলান্টিক মহাসাগর , ভারত মহাসাগর , উত্তর ও দক্ষিণ মহাসাগর । মহাদেশ সমূহের মধ্যে এশিয়া মহাদেশ এবং মহাসাগর সমূহের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগর সর্ববৃহৎ । ২০১৫ সনের আনুমানিক তথ্য অনুসারে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭৩০ কোটি ।
প্রশ্ন ২। মহাদেশীয় স্থংস্থান সূত্র অনুসারে পৃথিবীর অবস্থা আদিতে কেমন ছিল ?
উত্তরঃ মহাদেশীয় বিস্থাপন বা সঞ্চারণ সূত্র ( Continental Drift Theory ) অনুযায়ী আদিতে , অর্থাৎ প্রায় ৩০০ নিযুত বৎসর পূর্বে পৃথিবীটির স্থলমণ্ডল একত্রিত হয়েছিল এবং এর চতুর্দিকে জলমণ্ডল দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল । পৃথিবীর এই অবস্থাতে থাকা স্থলমণ্ডলটিকে পেঞ্জিয়া ( Pangaea ) এবং এর চতুর্দিকে আবেষ্টনকারী জলমণ্ডলকে পান্থালাসা ( Panthalassa ) বলে ।
প্রশ্ন ৩। মহাসাগরের তলদেশের ভূ – অবয়ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ মহাসাগরের জলপৃষ্ঠ অতি মসৃণ কিন্তু তলদেশের ভূ – প্রকৃতি অতিশয় অসমান । স্থলমণ্ডলে যেমন পাহাড় – পর্বত , মালভূমি , সমভূমি ইত্যাদি দেখা যায় , ঠিক তেমনই সাগর – মহাসাগরের তলদেশ শৈলশিরা , দ্রোণী , সামুদ্রিক টিলা , খাত ইত্যাদি অসমান করে রেখেছে । মহাসাগরের গভীরতা গড়ে প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার । উপকূলভাগ থেকে যতই মধ্যভাগের দিকে যাওয়া যায় সাগর মহাসাগরের গভীরতা ততই বাড়তে থাকে । উপকূলভাগ থেকে সাগর মহাসাগরের মধ্যভাগ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে মহীসোপান ( Continental Shelf ) , মহীঢাল ( Continental slope ) , ” গভীর সমুদ্রতল ( Deep Sea Plain ) , সমুদ্রতলীয় দ্রোণী ( Oceanic Floor ) , সামুদ্রিক শৈলশিরা ও দ্বীপ ( Oceanic Ridge and Island ) এবং গভীর সমুদ্রখাত ( Deep Sea Trench ) । এছাড়া বহু শৈলশিরা , দ্বীপ ইত্যাদি দেখা যায় ।
উপকূলের নিকটবর্তী স্থানে থাকা সাগর – মহাসাগরের অগভীর ( প্রায় ২০০০ মিটার পর্যন্ত ) অংশকে মহীসোপান বলে । মহীসোপানের পরের অংশ যথেষ্ট
গভীর ( প্রায় ২০০ মিটার ) অংশকে মহীঢাল বলে । মহীঢালের পর সাগর মহাসাগরের মধ্যভাগ অতি গভীর সমুদ্রতলীয় দ্রোণী ( ৪০০০ মিটার পর্যন্ত গভীর ) ; গভীরতম সামুদ্রিক খাত ( গড়ে ৮০০০ মিটার পর্যন্ত গভীর ) । প্রশাস্ত মহাসাগরের তলায় থাকা মেরিয়ানা খাত ( ১১,০২২ মিটার গভীর ) পৃথিবীর গভীরতম খাত ।
প্রশ্ন ৪। মহাসাগর এবং মহাদেশগুলোর বিতরণ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ ভূ – পৃষ্ঠের সাগর – মহাসাগরকে ধরে নদ – নদী , হ্রদ ইত্যাদির জল দ্বারা আবেষ্টিত বৃহৎ অংশকে জলমণ্ডল ( Hydrosphere ) বলা হয় । পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগর হল — প্রশান্ত মহাসাগর , আটলান্টিক মহাসাগর , ভারত মহাসাগর , উত্তর মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর । প্রশান্ত মহাসাগর এশিয়া মহাদেশ , উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত । আটলান্টিক মহাসাগর উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ , ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত । ভারত মহাসাগর এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে , আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বে ও ওশেনিয়া মহাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত । উত্তর মহাসাগর উত্তর আমেরিকা , ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের উত্তরে অবস্থিত । দক্ষিণ মহাসাগর দক্ষিণ আমেরিকা , আফ্রিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত । জলমণ্ডলের বেশির ভাগই দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত ।
পেঞ্জিয়ার প্রায় মাঝামাঝি পূর্ব – পশ্চিমে একটি সংকীর্ণ এবং লম্বা সাগরের সৃষ্টি হয়েছিল । একে টেথিস সাগর বলা হয় । এই সাগরের উত্তর – অংশটিকে লরেসিয়া এবং দক্ষিণ অংশকে গণ্ডোয়ানা ল্যাণ্ড বলা হয় । মহাদেশীর সঞ্চারণ সূত্র অনুসারে লরেসিয়া বিভাজিত হয়ে উত্তর আমেরিকা , গ্রীণল্যাণ্ড ও ভারত
উপমহাদেশের উত্তরে থাকা ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল । অপরদিকে গণ্ডোয়ানা ল্যাণ্ড বিভাজিত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা , আফ্রিকা , মাদাগাস্কার ; ভারতবর্ষ , আরব অঞ্চল , মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দ্বীপপুঞ্জ , অষ্ট্রেলিয়া , এণ্টার্কটিকা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছিল ।
সাগরপৃষ্ঠের কিছুটা উপরে থাকা মাটিতে পরিপূর্ণ একটি বৃহৎ অংশকে স্থলমণ্ডল বলে । স্থলমণ্ডলটি জল দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে চারটি বৃহৎ অংশে বিভাজিত হয়েছে । স্থলমণ্ডলের বৃহৎ অংশকে এশিয়া , ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ দ্বারা গঠিত , দ্বিতীয় অংশটি উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা গঠিত , তৃতীয় অংশটি অষ্ট্রেলিয়া ও অনেক দ্বীপপুঞ্জ দ্বারা ওশেনিয়া মহাদেশ গঠিত । চতুর্থ অংশটি এন্টার্কটিকা মহাদেশ দ্বারা গঠিত । স্থলভাগের বেশিরভাগ অংশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ।
প্রশ্ন ৫। পৃথিবীর স্থলভাগের উপরে বিদ্যমান ভূ – অবয়বগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ পাহাড় – পর্বত , মালভূমি , সমভূমি , উপকূলীয় সমভূমি ইত্যাদির উপস্থিতি স্থলমণ্ডলের ভূ – অবয়ব অসমান করে রেখেছে । অবশ্য মহাদেশের সকল স্থানে ভূ – প্রকৃতি একই নয় । পৃথিবীর ৭ টি মহাদেশের ভূ – প্রকৃতি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল ।
( ১ ) এশিয়া মহাদেশ :- এশিয়া পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাদেশ । প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত জাপান , তাইওয়ান , ফিলিপাইন , জাভা , সুমাত্রা , বোর্ণিও ইত্যাদি দ্বীপসমূহ এবং ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান – নিকোবর , শ্রীলংকা , লাক্ষাদ্বীপ , মালদ্বীপ , বাহরিণ ইত্যাদি এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত ।
এশিয়া মহাদেশটি সুউচ্চ পর্বত শ্রেণি , মালভূমি , নদী উপত্যকা , নিম্নভূমি , উপকূলীয় সমভূমি , মহাসাগরীয় দ্বীপ , মরুভূমি ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ । মহাদেশটির মধ্য অংশ পর্বত ও মালভূমিপূর্ণ । পর্বতশ্রেণির মধ্যে মহাদেশটির পশ্চিম সীমাতে উত্তর – দক্ষিণে থাকা ইউরাল পর্বতমালা , মধ্যাংশে পূর্ব – পশ্চিমে বিস্তৃত পৃথিবীর সর্বোচ্চ হিমালয় পর্বতমালা , কারাকোরাম পর্বতমালা , কুনলুন পর্বতমালা , অলতাইন পর্বতমালা , তিয়েনসান পর্বতমালা, অলতাই পর্বত , আরাবল্লী পর্বত প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । হিমালয় পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত পৃথিবীর উচ্চতম শৃংগ এভারেষ্ট এবং কারাকোরাম এশিয়া মহাদেশেই অবস্থিত । অপরদিকে মালভূমির মধ্যে তিব্বত মালভূমি , পৃথিবীর উচ্চতম পামীর মালভূমি, সাইবেরিয়া মালভূমি , মংগোলিয়া মালভূমি , দাক্ষিণাত্য মালভূমি , আরব মালভূমি , ইরান মালভূমি ইত্যাদিই প্রধান ।
Sl. No. | সূচিপত্র |
প্রথম খণ্ড: ইতিহাস | |
অধ্যায়-১ | বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫–১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন |
অধ্যায়-২ | মহাত্মা গান্ধি এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম |
অধ্যায়-৩ | অসমে ব্রিটিশ বিরোধী জাগরণ এবং কৃষক বিদ্রোহ |
অধ্যায়-৪ | স্বাধীনতা আন্দোলন এবং অসমে জাতীয় জাগরণ |
অধ্যায়-৫ | ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য |
দ্বিতীয় খণ্ড: ভূগোল | |
অধ্যায়-১ | অর্থনৈতিক ভূগোল: বিষয়বস্তু এবং সম্পদ |
অধ্যায়-২ | পরিবেশ ও পরিবেশের সমস্যা |
অধ্যায়-৩ | পৃথিবীর ভূগোল |
অধ্যায়-৪ | অসমের ভূগোল |
তৃতীয় খণ্ড: রাজনীতি বিজ্ঞান | |
অধ্যায়-১ | ভারতীয় গণতন্ত্র |
অধ্যায়-২ | আন্তর্জাতিক সংস্থা ― রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য |
অর্থনীতি বিজ্ঞান | |
অধ্যায়-১ | মুদ্রা এবং ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা |
অধ্যায়-২ | অর্থনৈতিক উন্নয়ন |
( ২ ) ইউরোপ মহাদেশ :- ভূ – প্রাকৃতিকভাবে ইউরোপ মহাদেশকে দুভাগে ভাগ করা যায় — উত্তর অংশটি পশ্চিমের ফ্রান্সের উপকূল থেকে পূর্বে ইউরাল পর্বতশ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সমতল ভূমি এবং দক্ষিণ অংশটি স্পেইন হতে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত পাহাড় – পর্বত , মালভূমি দ্বারা কোথাও বা উঁচু আবার কোথাও বা নীচু দক্ষিণ ইউরোপের পর্বতশ্রেণির মধ্যে আল্পস , পিরেনিজ , কার্থেপিয়ান ও ককেশাস বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ককেশাস পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত ‘ মাউণ্ট এলব্রাস ’ শৃংগ হল ইউরোপের উচ্চতম স্থান ( ৫,৬৩৩ মিটার ) অপরদিকে , আল্পস পর্বতের উচ্চতম শৃংগটি হল মাউণ্ট ব্ল্যাঙ্ক ( ৪,৮০৭ মিটার । )
ইউরোপের নদীসমূহের মধ্যে স্পেইনের এলব্রো , ফ্রান্সের রাইন ও সাইন , লোয়র ও গারণ ; জার্মানীর রাইন ও এল্ ; পোলাণ্ডের ওডার ও ভিচুলা , অষ্ট্রিয়া , হাঙ্গেরী ও রোমানিয়া , ডানিয়ুব ; বেলারুশ ও ইউক্রেনের নিপার ; ইটালীর পো ; গ্রেট ব্রিটেনের থেম্স ; রাশিয়ার ডন , ভল্গা ও ইউরাল ইত্যাদি হ্রদ বিশেষভাগে উল্লেখযোগ্য ।
( ৩ ) আফ্রিকা মহাদেশ :- আফ্রিকা পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাদেশ । উপকূলবর্তী সংকীর্ণ সমতলভূমি ছাড়া মহাদেশটির বেশিরভাগ অংশই একটি বৃহৎ মালভূমি । আফ্রিকা মহাদেশে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি নাই । মহাদেশটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট উচ্চভূমি এই মহাদেশের ভূপ্রকৃতিকে উঁচু – নীচু করে রেখেছে । এই মহাদেশের পূর্বপ্রান্তে থাকা কিলিমানজারো শৃংগ মহাদেশটির উচ্চতম স্থান ( ৫,৮৯৫ মিটার ) । আফ্রিকার উচ্চভূমিসমূহের মধ্যে উত্তর প্রান্তের এট্লাস , উত্তর – পূর্ব প্রান্তের ইথিওপিয়ান উচ্চভূমি ; পশ্চিম প্রান্তের এত্তা মাওয়া উচ্চভূমি , দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রাকেন্সবার্গ উচ্চভূমি ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
পৃথিবীর বৃহত্তম নীল নদ ছাড়াও অন্যান্য প্রধান নদীসমূহ হল— কংগো ( জায়রে ) , নাইজার, জাম্বেসি , অরেঞ্জ , লিম্পোপো , ভোল্টা , সেনেগাল , সিবে ওগু , লুরিত , লুয়াঞ্চুয়া , কেলেডোন ইত্যাদি ।
উল্লেখযোগ্য হ্রদগুলো — ভিক্টোরিয়া , এলবার্ট , টাঙ্গানিকা , চাঁদ , ভোল্টা , নিয়াসা , কেবোরা বাচ্চা , মালাওয়ি , টুর্কানা , কিভু , কোচ্চৌ , এব্বে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা ছাড়াও কালাহারী ও নামিবিয়া মরুভূমি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত।
( ৪ ) উত্তর আমেরিকা :- উত্তর আমেরিকা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ । উত্তর আমেরিকা মহাদেশটির ভূ – প্রাকৃতিক গঠন বৈচিত্র্যময় । এর উচ্চতম স্থান ম্যাকিনলে শৃংগ (৬১৯৪ মিটার ) এবং নিম্নতম স্থান মৃত্যু উপত্যকা ( Death Valley ) । মহাদেশটির পশ্চিম ও পূর্ব অংশ দুটি উত্তর – দক্ষিণে পাহাড় পর্বতময় । বাকী অংশ উচ্চ ও নিম্ন সমতলভূমি । এই মহাদেশটিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ১ ) রকি পার্বত্য অঞ্চল ।
( ২ ) বিশাল উচ্চ সমভূমি অঞ্চল ।
( ৩ ) আপালেশিয়ান উচ্চভূমি অঞ্চল ।
( ৪ ) উপকূলীয় নিম্ন সমতলভূমি অঞ্চল ।
উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অনেক নদ – নদী ও হ্রদ আছে । নদী সমূহের মধ্যে মিসৌরী , মিসিসিপি , য়ুকুম , মেকেঞ্জি , রিওগ্রাণ্ডে , রেড , আরকানসাস , কলোরাডো , কলম্বিয়া , স্নেক , ওহিও , টেনেসি , হাডসন , সেণ্ট লরেন্স ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
প্রধান প্রধান হ্রদসমূহ হল— সুপিরিয়র , হিউরন , মিচিগান , ইরি , অণ্টোরও , গ্রেট বিয়ার, গ্রেট স্লেভ , উইনিপেগ এবং গ্রেট সল্ট । মহাদেশের দক্ষিণ – পশ্চিম অংশে কলোরাডো নামে প্রায় মরুভূমি অঞ্চল আছে ।
( ৫ ) দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ :- উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ । এই মহাদেশটি কিছুটা ত্রিভুজাকৃতি । এর উত্তর অংশটি যথেষ্ট প্রশস্ত এবং দক্ষিণ অংশ কিছু অপ্রশস্ত ।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ভূ – প্রকৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ । এই মহাদেশে উচ্চ পার্বত্যভূমি , নদীগঠিত সমভূমি , মালভূমি , উপকূলীয় সমভূমি , দ্বীপ , মরুভূমি ইত্যাদি প্রায় সকল ধরনের ভূ – অবয়ব দেখা যায় । দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম।
অংশ উত্তর – দক্ষিণে পানামা যোজক হতে হর্ণ অন্তরীপ পর্যন্ত সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা বিস্তৃত হয়ে আছে । এই পর্বতমালা পৃথিবীর দীর্ঘতম ( প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার ) পর্বতশ্রেণি । উচ্চতার দিক থেকে হিমালয় পর্বতের পরেই আন্দিজের স্থান । মহাদেশটির মধ্য – পূর্ব অংশে বিস্তীর্ণ ব্রাজিলিয়ান মালভূমি আছে । অপরদিকে আন্দিজ পর্বতমালার নিকটবর্তী অঞ্চলের উত্তর অংশে ইকুয়েডর মালভূমি এবং দক্ষিণ অংশে পারাণা – পাটাগণিয়া মালভূমি আছে । প্রশান্ত এবং আটলান্টিক উপকূলের সমভূমি অপ্রশস্ত । দক্ষিণ আমেরিকার উল্লেখযোগ্য নদীসমূহ হল — ওরিনকো , আমাজান , পারাণা , পারাগুয়ে ইত্যাদি । এই নদী কয়টি প্রায় সমগ্র মহাদেশে বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি করেছে । পৃথিবীর উচ্চতম স্থানে অবস্থিত বৃহৎ টিটিকাকা হ্রদ এই মহাদেশে অবস্থিত । এই মহাদেশে আটাকামা এবং পাটাগোণিয়া মরুভূমি আছে ।
( ৫ ) ওশেনিয়া মহাদেশ :- অষ্ট্রেলিয়া মহাদ্বীপকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ – পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত নিউজিল্যাণ্ড , টাসমানিয়া , নিউগিনি ইত্যাদি অনেক ছোট বড় দ্বীপসমূহকে নিয়ে ওশেনিয়া মহাদেশ গঠিত । এই মহাদেশ সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত । এই ক্ষুদ্রতম মহাদেশের বৃহত্তম দেশ হল অষ্ট্রেলিয়া । ওশেনিয়া মহাদেশের প্রধান ভূখণ্ড অষ্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যাণ্ড ইত্যাদি দ্বীপসমূহের চতুর্দিকে ঘিরে রয়েছে প্রশান্ত , ভারত ও দক্ষিণ মহাসাগর ।
ওশেনিয়া মহাদেশের মূল ভূখণ্ড অষ্ট্রেলিয়া একটি প্রাচীন মালভূমি । এই দেশের চারদিকে সংকীর্ণ উপকূলীয় সমভূমি আছে । অষ্ট্রেলিয়ার পূর্ব অংশটি গ্রেট ডিভাইডিংরেঞ্জ ও স্নোয়ি মাউণ্টেইন উচ্চভূমি অঞ্চল । মারে ও ডার্লিং নদীর অববাহিকা অঞ্চলে বৃহৎ সমভূমি আছে ।
নদ – নদী — মারে – ডালিং , বেলিয়াণ্ডো , ফিট্ওরয় , ফ্লিণ্ডার্স , ভিক্টোরিয়া , সোয়ান ইত্যাদি । হ্রদসমূহ — আয়ার , বার্লি , কার্ণেজি , ম্যাকে , ইয়েবে ইত্যাদি ।
এই মহাদেশের মরুভূমি হল অষ্ট্রেলিয়ার গ্রেট ভিক্টোরিয়া , গ্রেট স্যাণ্ডি টানামী , সিম্পসন , গিসন , লিট্ল স্যাণ্ডি , টিরারি , পেডিকা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
প্রশ্ন ৬। এশিয়া মহাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ এশিয়া মহাদেশকে ভূ – প্রকৃতি অনুযায়ী ৫ টি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ১ ) উত্তরের বিশাল নিম্নভূমি ।
( ২ ) মধ্য এশিয়ার মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল ।
( ৩ ) দক্ষিণ এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল ।
( ৪ ) বৃহৎ নদী উপত্যকা ও সমভূমি অঞ্চল ।
( ৫ ) এশিয়ার পূর্বের আগ্নেয় দ্বীপমালা ।
( ১ ) উত্তরের বিশাল নিম্নভূমি :- এশিয়ার উত্তরভাগে পূর্বে সাইবেরিয়ার উত্তর – পূর্বের এনাডির অঞ্চল থেকে পশ্চিমে ইউরাল পর্বত এবং কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত একটি বিশাল ত্রিভুজাকার নিম্ন সমতল আছে । এই সমতল ভূমি মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল থেকে উত্তর সাগরের দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে । এজন্য এই অঞ্চলের নদী ওব , লেনা এবং ইনিসি উত্তর দিকে উত্তর সাগরে পড়েছে । উত্তরের বৃহৎ সমতলকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায় :
( ১ ) উত্তর – পূর্বের ক্ষয়জাত নিম্নভূমি । এই অঞ্চল উচ্চ – নীচ এবং শীতল তুন্দ্রা অঞ্চল ।
( ২ ) লেনা ইনিসি – ওব তিনটি নদীর সংযুক্ত সমতলভূমি । এই নিম্নভূমি অঞ্চলটি শীতল তুন্দ্রা অঞ্চলের অন্তর্গত । নিম্নাংশে জল জমা হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে । কাজেই এই অঞ্চলে বিস্তীর্ণ জলাভূমি আছে ।
( ৩ ) কাস্পিয়ান সাগর হতে পূর্বে তুরান উপত্যকা পর্যন্ত — এই অঞ্চলটি কাজাখস্তান , তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের অর্ধশুষ্ক নিম্ন মরুভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত ।
( ২ ) মধ্য এশিয়ার মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল :- এই অঞ্চলটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত । এই অংশটি এশিয়া মহাদেশের প্রায় অংশ স্থান দখল করে রয়েছে । এই অঞ্চলটি বিভিন্ন উচ্চতার পর্বতমালা ও মালভূমি দ্বারা গঠিত ৷ পামির গ্রন্থির ত্রিভুজাকৃতি ভূ – খণ্ডটির পশ্চিম চূড়া , চীন দেশের অন্তর ভাগে দক্ষিণ – পূর্ব চূড়া এবং মহাদেশের উত্তর – পূর্ব অংশটি উত্তর – পূর্ব চূড়া রচনা করেছে । মধ্য এশিয়ার মালভূমি অঞ্চলটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়— পূর্বের মালভূমি অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল । পামির মালভূমি এই দুটি মালভূমিকে পৃথক করেছে । পানির হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি । পামিরকে বলে ‘ পৃথিবীর ছাদ ’ বলে ।
এই অঞ্চলের অন্তর্গত হিমালয় পর্বতশ্রেণি ধনুকের মত ভারতের উত্তর দিকে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি শাখা চীন দেশে এবং অন্যটি ভারত ও ম্যানমারের মধ্য দিয়ে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হয়ে সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত গিয়েছে । পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউণ্ট এভারেস্ট হিমালয় পর্বতে অবস্থিত । হিমালয়ের উত্তরে কারাকোরাম পর্বতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গড্উইন অষ্টিন বা কে₂ ( K₂ ) অবস্থিত । এর উত্তর দিকে আলটিনটাগ , নানসান , কুলুন ও খিংগাল পর্বত অবস্থিত । পামির গ্রন্থির দক্ষিণ – পশ্চিম দিকে সুলেমান ও ক্ষীরথর পর্বত ইরানের দক্ষিণে জাগ্রস নাম নিয়ে আর্মেনীয়া গ্রন্থিতে মিশেছে । পামির গ্রন্থির পশ্চিম দিক দিয়ে হিন্দুকুশ পর্বত পারস্যের উত্তরে এলবার্জ নামে আর্মেনীয় গ্রন্থিতে মিশেছে ।
( ৩ ) দক্ষিণ এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল :- এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে পৌরাণিক শিলার দ্বারা গঠিত প্রধান মালভূমিগুলি হল—
( ১ ) আরব মালভূমি ।
( ২ ) ভারত মালভূমি । এবং
( ৩ ) ইউনান ও সান মালভূমি ।
( ক ) আরব মালভূমি :- ইহা একটি শুষ্ক মরুময় মালভূমি । এই মালভূমি দক্ষিণ – পশ্চিম দিক হতে উত্তর – পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে ইউফ্রেটিশ ও টাইগ্রীস নদীর উপত্যকাতে মিশেছে ।
( খ ) ভারত মালভূমি :- এই মালভূমিটি ভারত – উপমহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত । এই মালভূমির পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত এবং পূর্বসীমায় পূর্বঘাট নামে একটি অনুচ্চ পর্বত রয়েছে।মালভূমির উত্তর সীমা আরাবল্লী , মহাদেব , মহাকাল , বিন্ধ্য , কাইমুর , রাজমহল , পরেশনাথ ইত্যাদি পর্বত ঘিরে রেখেছে ।
( গ ) ইউনান ও সান মালভূমি :- ম্যানমারের ইউনান এবং চীনের সান মালভূমি দুটিও দক্ষিণ এশিয়ার উল্লেখযোগ্য মালভূমি । এই মালভূমির ভূ – পৃষ্ঠ পৌরাণিক শিলার দ্বারা গঠিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে উঁচু – নীচু । এই মালভূমির মধ্য দিয়ে সাইলুন , মেকং , ইয়াংসি ইত্যাদি নদী প্রবাহিত হয়েছে ।
( ৪ ) বৃহৎ নদী উপত্যকা ও সমভূমি অঞ্চল :- এশিয়া মহাদেশের প্রধান নদী ইউফ্রেটিস , টাইগ্রীস , সিন্ধু , গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , মেকং , মেনাম , ইয়াংসি , সালুইন , ইরাবতী , লেনা , আমুর প্রভৃতি নদীগুলি প্রতি বৎসর পলিমাটি ফেলে নিজ নিজ উপত্যকায় সমভূমির সৃষ্টি করেছে । এজন্য উপত্যকাগুলি কৃষিকার্যের উপযোগী । ফলে এই অঞ্চলগুলিতে জনবসতি ঘন।এগুলির ভেতরে ইউফ্রেটিস , টাইগ্রীস , সিন্ধু , গঙ্গা , হোয়াংহো , সেংজিয়াং ইত্যাদি নদী উপত্যকাগুলিতে প্রাচীন সভ্যতাগুলি গড়ে উঠেছিল ।
( ৫ ) এশিয়ার পূর্বের আগ্নেয় দ্বীপমালা :- এশিয়া মহাদেশের পূর্বে কিউরাইল , শাখালিন , জাপান দ্বীপপুঞ্জ , তাইওয়ান , ফিলিপাইন , কালিমাষ্টান ইত্যাদি দ্বীপপুঞ্জগুলি মালার মত ঘিরে এই দ্বীপগুলির মধ্যে দিয়ে একটি পর্বতশ্রেণি রয়েছে । এই পর্বতসমূহতে অনেক আগ্নেয়গিরি আছে । এর মধ্যে জাপানের হন্দু দ্বীপের ফুজিয়ামা সবচাইতে উঁচু আগ্নেয়গিরি ।
প্রশ্ন ৭। কারণ দর্শিয়ে উত্তর লেখো :
( ক ) পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশই উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করছে কেন ?
উত্তরঃ জলমণ্ডলের বৃহৎ অংশ ( ৫৭ শতাংশ ) দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত । অপরদিকে স্থলভাগের বৃহৎ অংশ ( ৬৭ শতাংশ ) উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত । এছাড়া এন্টার্কটিকা মহাদেশে কোন জনবসতি নেই । এই কারণে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ উত্তর গোলার্ধে বাস করে ।
( খ ) এশিয়া মহাদেশের জলবায়ু বৈচিত্র্যময় কেন ?
উত্তরঃ এশিয়া মহাদেশের জলবায়ু বৈচিত্র্যময় হবার কারণগুলো হল—
( ১ ) সমগ্র মহাদেশটি উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল হতে দক্ষিণে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার জন্য শীত এবং গ্রীষ্ম উভয়ই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।
( ২ ) এই মহাদেশ বন্ধুর পাহাড় – পর্বতে পরিপূর্ণ । এইজন্য পাহাড়গুলির অবস্থিতিই জলবায়ুর তারতম্য ঘটিয়েছে ।
( ৩ ) বিস্তৃত উপকূলরেখা তথা সাগর – মহাসাগরের প্রভাব জলবায়ুর উপরে পড়ার জন্য জলবায়ুর পার্থক্য দেখা যায় ।
( ৪ ) বাতাসের গতি এবং দিকও মহাদেশটির জলবায়ুর তারতম্য ঘটিয়েছে ।
( ৫ ) মাটি , জল , মানুষের বসতি এবং বৎসরের ঋতুগুলিও মহাদেশের জলবায়ুর তারতম্য ঘটিয়েছে বলা যায় ।
( গ ) এন্টার্কটিকা মহাদেশে মানুষের স্থায়ী বসতি নেই কেন ?
উত্তরঃ এণ্টার্কটিকা মহাদেশ প্রায় সারা বৎসরই পুরু বরফে আচ্ছাদিত থাকে । এখানে কোন বড় গাছ জন্মায় না । কেবলমাত্র কোন কোন স্থানে শ্যাওলা ও ঢেকী জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়।এই সকল উদ্ভিদ সারা বৎসর থাকে না । এ জন্যই এই মহাদেশে কোন স্থায়ী বসতি নেই।
প্রশ্ন ৮। নীচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখো :
( ক ) এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশের মধ্যেকার প্রাকৃতিক সীমা কীসে সৃষ্টি হয়েছে ?
উত্তরঃ ইউরাল পর্বত দ্বারা এশিয়া ও ইউরোপের প্রাকৃতিক সীমা নির্দ্ধারিত হয়েছে ।
( খ ) পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা কোন্টি এবং কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা হল আন্দিজ পর্বতমালা । আন্দিজ পর্বতমালা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত ।
( গ ) আয়তনের ভিত্তিতে পৃথিবীর বৃহত্তম আর ক্ষুদ্রতম মহাদেশের নাম লেখো ।
উত্তরঃ এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এবং ক্ষুদ্রতম মহাদেশ ওশেনিয়া ।
( ঘ ) পৃথিবীর কোন্ দেশ কোন্ দুটি মহাদেশে বিস্তৃত ?
উত্তরঃ রাশিয়া দেশটি ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে বিস্তৃত ।
( ঙ ) আয়তনের ভিত্তিতে পৃথিবীর বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম দেশের নাম বলো ।
উত্তরঃ আয়তনের ভিত্তিতে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ রাশিয়া এবং ক্ষুদ্রতম দেশ ভেটিকান সিটি ।
( চ ) উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রধান পর্বত শ্রেণিটির নাম কী ? এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য কত এবং মহাদেশের কোন্ অংশে অবস্থিত ?
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকার প্রধান পর্বত শ্রেণিটির নাম রকি । এর দৈর্ঘ্য ৬,৮৮৩.কি.মি . এবং এই পর্বত শ্রেণিটি উত্তর আমেরিকার পশ্চিমে অবস্থিত।
( ছ ) পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি কোন্টি এবং তা কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমিটির নাম সাহারা মরুভূমি । এই মরুভূমি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত ।
( জ ) এশিয়া মহাদেশের দুটি করে উত্তর ও পূর্বদিকে প্রবাহিত নদীর নাম লেখো ।
উত্তরঃ এশিয়া মহাদেশের দুটি উত্তরদিকে প্রবাহিত নদী হল লেনা এবং ইনিসি । দুটি পূর্বদিকে প্রবাহিত নদীর নাম ইয়াংসিকিয়াং এবং হোয়াংহো।
( ঝ ) অষ্ট্রেলিয়ার একটি করে প্রধান পর্বতশ্রেণি , নদী এবং মরুভূমির নাম লেখো ।
উত্তরঃ একটি পর্বত শ্রেণির নাম গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ , একটি নদীর নাম মারে – ডার্লিং এবং একটি মরুভূমির নাম হল গ্রেট ভিক্টোরিয়া ।
( ঞ ) ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত তথা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত তিনটি দেশের নাম লেখো ।
উত্তরঃ দেশ তিনটির নাম হল ফ্রান্স , স্পেন ও ইটালী ।
প্রশ্ন ৯। সংক্ষেপে টীকা লেখো :
( ক ) পেঞ্জিয়া ।
উত্তরঃ মহাদেশীয় বিস্থাপন বা সঞ্চারণ সূত্র ( Continental Drift Theory ) অনুযায়ী আদিতে , অর্থাৎ প্রায় ৩০০ নিযুত বৎসর পূর্বে পৃথিবীটির স্থলমণ্ডল একত্রিত হয়েছিল এবং এর চতুর্দিকে জলমণ্ডল দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল । পৃথিবীর এই অবস্থাতে থাকা স্থলমণ্ডলটিকে পেঞ্জিয়া ( Pangaea ) এবং এর চতুর্দিকে আবেষ্টনকারী জলমণ্ডলকে পান্থালাসা (Panthalassa ) বলে ।
( খ ) উত্তর মহাসাগর ।
উত্তরঃ উত্তর মহাসাগর প্রায় ১৪ নিযুত বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে আছে । এই মহাসাগর পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাসাগর । এর আকার ভারত মহাসাগরের এক – পঞ্চমাংশ । এই মহাসাগরটি উত্তর মেরুতে বৃত্তাকারে আছে । এশিয়া , ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশ এই মহাসাগর বেষ্টন করে আছে । উত্তর মহাসাগরের গভীরতা প্রায় ৩৫০০ মিটার।বৎসরের প্রায় সময়ই বরফে ঢাকা থাকে ।
( গ ) ওসেনিয়া মহাদেশ ।
উত্তরঃ চারদশক পূর্বে ওশেনিয়া মহাদেশ বললে অষ্ট্রেলিয়া মহাদ্বীপ ও এর নিকটবর্তী টাসমেনিয়া , নিউজিল্যাণ্ড এবং নিউগিনি দ্বীপকে নিয়ে স্থলভাগ ও জলভাগকে ধরা হত । কিন্তু বর্তমানে জলপথ , বিমানপথ ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় অষ্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যাণ্ড এবং এর নিকটবর্তী অনেক দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মিত্রতা অধিক সুদৃঢ় হওয়ায় এই সকল দ্বীপগুলিকে নিয়ে ওশেনিয়া মহাদেশের ধারণা জন্মেছে । এর উল্লেখযোগ্য দেশের নাম হল — অষ্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যাণ্ড , ফিজি , টাভালু , ভানু আটু , সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ , পপুওয়া নিউগিনি , টঙ্গা ইত্যাদি ।
( ঘ ) এশিয়া মহাদেশের নদ – নদী ।
উত্তরঃ এশিয়ার বৃহৎ নদী উপত্যকা অঞ্চল — ওবি , ইনিসি , লেনা এই তিনটি নদী এশিয়া মহাদেশের মধ্যাংশ ও পূর্বাংশের উচ্চ পর্বত হতে বের হয়ে উত্তর মহাসাগরে পড়েছে । অন্যদিকে আমুর , হোয়াংহো , ইয়াংসিকিয়াং ও সিকিয়াং মহাদেশটির পূর্ব অঞ্চলের পর্বত হতে বের হয়ে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে । মেকং , মেনাম দক্ষিণাংশের উচ্চ পর্বত হতে বের হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ চীন সাগর ও থাইল্যাণ্ড উপসাগরে পড়েছে । সালুইন ও ইরাবতী নদী দুটি চীন – ব্রহ্মদেশের পর্বত হতে বের হয়ে ভারত মহাসাগরের বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদী হিমালয় পর্বত হতে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে ।
সিন্ধু নদী হিমালয়ে আবির্ভাব হয়ে আরব সাগরে পড়েছে । ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদী দুটি এশিয়া মাইনর অঞ্চলের পর্বত হতে উৎপন্ন হয়ে পারস্য উপমহাসাগরে পড়েছে । উপরোক্ত নদীসমূহ বৃহৎ সমভূমির সৃষ্টি করেছে ।
( ঙ ) আফ্রিকা মহাদেশের হ্রদসমূহ ।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের উল্লেখযোগ্য হ্রদসমূহ হল — ভিক্টোরিয়া , এলবার্ট , ট্যাঙ্গানিকা , চাঁদ , ভোল্টা , নিয়াসা , কেবোরা বাচ্চা , মালাওই , টুর্কানা , কিভু , কোচ্চৌ , এব্বে ইত্যাদি।
( চ ) ইউরোপ মহাদেশের নদ – নদী ।
উত্তরঃ ইউরোপ মহাদেশের মধ্য ভাগ দিয়ে অনেক নদ – নদী প্রবাহিত হয়েছে । এই নদীগুলির অধিকাংশই ছোট কিন্তু নাব্য ও শিল্পপ্রধান অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত । এর জন্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে এই নদীগুলির গুরুত্ব অসীম । দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলটি ইউরোপের প্রধান জলবিভাজিকা । ইউরোপের প্রধান নদীসমূহকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয়েছে । যেমন—
( ক ) ভঙ্গিল পর্বতমালার উত্তরের উত্তর বাহিনীর নদী ।
( খ ) ভঙ্গিল পর্বতমালার দক্ষিণের দক্ষিণবাহিনী নদী । এবং
( গ ) রুশ দেশের নদীসমূহ ।
( ক ) ফ্রান্স দেশের প্রধান নদী সাইন , লোয়র এবং গারণ । ভোজ পর্বত হতে পর্বতমা উৎপন্ন হওয়া মিউজ নদী ফ্রান্স , বেলজিয়াম ও হল্যাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর সাগরে পড়েছে । রাইন নদী আল্পস্ থেকে উৎপত্তি হয়ে সুইজারল্যাণ্ড , ফ্রান্স ও জার্মানীর মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে পড়েছে । এই নদীতে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ চলাচল করে । এ নদী জার্মানীর মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে মিশেছে । জার্মানীর মধ্য হতে নির্গত ওয়েজার নদী উত্তর সাগরে মিশেছে । কার্পেথিয়ান পর্বত থেকে ওডার ও ভিষ্টুলা নদী উৎপন্ন হয়ে জার্মানীর মধ্য দিয়ে বাল্টিক সাগরে পড়েছে ।
( খ ) দক্ষিণ বাহিনী নদীসমূহের মধ্যে রোন নদী ফ্রান্সের মধ্য মালভূমি হতে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ সীমা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্য সাগরে পড়েছে । ইটালির পো – নদী আল্পস্ পর্বত হতে উৎপন্ন হয়ে ভূমধ্য সাগরে পড়েছে । আর্নো ও টাইবার নদী ভূমধ্য সাগরে পড়েছে । ব্লেক ফরেস্ট হতে উৎপন্ন হওয়া ডানিয়ুব নদী অনেকগুলি দেশের মধ্য দিয়ে পার হয়ে কৃষ্ণসাগরে পড়েছে । ভিয়েনা , বুডাপেষ্ট , বেলগ্রেড ইত্যাদি শহরগুলি ডানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত ।
( গ ) ইউরোপীয় রুশিয়ার অন্তর্গত ভল্গা নদী এই মহাদেশের দীর্ঘতম নদী । ইহা কাস্পিয়ান সাগরে পড়েছে । রুশিয়ার প্রায় অর্ধেক এই নদীর অববাহিকা অধিকার করে রয়েছে । পশ্চিম ডুইনা ও উত্তর ডুইনা ভলডাই পাহাড় হতে বের হয়ে যথাক্রমে বাল্টিক সাগর ও উত্তর সাগরে পড়েছে । নিষ্টার , নিপার ও ডন রুশিয়ান দক্ষিণ অংশের প্রধান নদী ।
( ছ ) আপেলেসিয়ান উচ্চভূমি অঞ্চল ।
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকার পূর্ব অংশে উত্তরে নিউফাউণ্ডল্যাণ্ড থেকে দক্ষিণে ফ্লোরিডা পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড় – পর্বত , সংকীর্ণ উপত্যকা ও ভগ্ন মালভূমি দ্বারা গঠিত উঁচু – নীচু আপালেশিয়ান উচ্চভূমি অঞ্চল আছে । এই অঞ্চলের দক্ষিণ অংশে এলিঘেণি ও ব্লুরিজ পর্বতশ্রেণি আছে । আপালেশিয়ান উচ্চভূমি থেকে পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলীয় অংশে উত্তরে নোভাস্কশিয়া থেকে দক্ষিণে পানামা পর্যন্ত এক বিস্তৃত উপকূলীয় সমতলভূমি আছে ।
( জ ) উত্তর আমেরিকা মহাদেশের হ্রদসমূহ ।
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকার প্রধান হ্রদসমূহ হল — সুপিরিয়র , হিউরণ , মচিগান , এরি , অণ্টেরিও , গ্রেট বিয়ার , গ্রেট স্লেভ , উইনিপেগ ও গ্রেট সল্ট ।
প্রশ্ন ১০। পার্থক্য লেখো :
( ক ) মহীসোপান এবং মহীঢাল মহীসোপান ।
উত্তরঃ
মহীসোপান | মহীঢাল |
১। উপকূলের চারদিকে থাকা অগভীর (প্রায় ২০০০ মিটার পর্যন্ত ) অংশকে মহীসোপান বলে । | ১। মহীসোপানের পরবর্তী যথেষ্ট গভীর (প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত ) অংশটিকে মহীঢাল বলে । |
২। এই স্থান উপকূল সংলগ্ন হওয়ায় মানুষের গতিবিধি দেখা যায় । | ২। এখানে কোন গতি – বিধি দেখা যায় না । |
( খ ) এভারেস্ট শৃঙ্গ ও গডউইন অস্টিন শৃঙ্গ ।
উত্তরঃ
এভারেস্ট শৃঙ্গ | গডউইন অস্টিন শৃঙ্গ |
১। এভারেষ্ট শৃঙ্গ পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ । | ১। এই শৃঙ্গ পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ । |
২। এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার । | ২। এর উচ্চতা ৮,৬১১ মিটার । |
৩। এভারেষ্টের অপর কোন নাম নেই । | ৩। গডউইন অস্টিনকে K₂ ও বলে । |
৪। এভারেষ্ট হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত । | ৪। কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত । |
( গ ) ওসেনিয়া মহাদেশ এবং এন্টার্কটিকা মহাদেশ ।
উত্তরঃ
ওসেনিয়া মহাদেশ | এন্টার্কটিকা মহাদেশ |
১। ওসেনিয়া দক্ষিণ – পশ্চিম মহাসাগরে অবস্থিত। | ১। এই মহাদেশ দক্ষিণ – মহাসাগরে অবস্থিত । |
২। এই মহাদেশে স্থায়ী জনবসতি আছে । | ২। এখানে কোন জনবসতি নেই । |
৩। এখানে ক্যাঙ্গারু , উটপাখি , ভেড়া , গরু ইত্যাদি জীবজন্তু দেখা যায় । | ৩। এখানে শীল , পেঙ্গুইন , বল্গা হরিণ ইত্যাদি জীবজন্তু দেখা যায় । |
৪। এখানে নানাপ্রকারের উদ্ভিদ তথা তৃণজাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায় । | ৪। এখানে বৎসরের কোন সময়ে শ্যাওলা ও ঢেকী জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া যায় । |
( ঘ ) গোবি মরুভূমি এবং আটাকামা মরুভূমি ।
উত্তৰঃ
গোবি মরুভূমি | আটাকামা মরুভূমি |
১। এই মরুভূমি মঙ্গোলিয়াতে অবস্থিত । | ১। এটা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত । |
২। উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চল । | ২। নাতিশীতোষ্ণ মরুভূমি অঞ্চল । |
৩। এই মরুভূমি প্রশান্ত মহা সাগরের উপকূলে অবস্থিত । | ৩। এই মরুভূমি তিব্বতের মালভূমি অঞ্চলে অবস্থিত । |
প্রশ্ন ১১। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে দাও :
( ক ) পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর কোন্টি ?
( ১ ) প্রশান্ত মহাসাগর
( ২ ) ভারত মহাসাগর
( ৩ ) আটলান্টিক মহাসাগর
( ৪ ) দক্ষিণ মহাসাগর
উত্তৰঃ ( ৩ ) আটলান্টিক মহাসাগর ।
( খ ) পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ কোন্টি ?
( ১ ) উত্তর আমেরিকা মহাদেশ
( ২ ) ইউরোপ মহাদেশ
( ৩ ) এণ্টার্কটিকা মহাদেশ
( ৪ ) ওসেনিয়া মহাদেশ
উত্তৰঃ ( ৪ ) ওসেনিয়া মহাদেশ ।
( গ ) ফক্ল্যাণ্ড দ্বীপটি কোন্ মহাসাগরে অবস্থিত ?
( ১ ) আটলান্টিক মহাসাগর
( ২ ) উত্তর মহাসাগর
( ৩ ) প্রশান্ত মহাসাগর
( ৪ ) ভারত মহাসাগর
উত্তৰঃ ( ১ ) আটলান্টিক মহাসাগর ।
( ঘ ) এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশকে কোন্ সাগর পৃথক করেছে ?
( ১ ) ভূমধ্যসাগর
( ২ ) লোহিত সাগর
( ৩ ) কাস্পিয়ান সাগর
( ৪ ) আরব সাগর
উত্তৰঃ ( ২ ) লোহিত সাগর ।
( ঙ ) এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে প্রাকৃতিকভাবে কে পৃথক করেছে
( ১ ) ইউরাল পর্বতমালা
( ২ ) ককেসাস পর্বত
( ৩ ) কাস্পিয়ান সাগর
( ৪ ) ভল্গা নদী
উত্তৰঃ ( ১ ) ইউরাল পর্বতমালা ।
( চ ) ইকুয়েডর কোন্ মহাদেশে অবস্থিত ?
( ১ ) উত্তর আমেরিকা
( ২ ) দক্ষিণ আমেরিকা
( ৩ ) আফ্ৰিকা
( ৪ ) এশিয়া
উত্তৰঃ ( ২ ) দক্ষিণ আমেরিকা ।
( ছ ) ব্রাজিলের রাজধানী কী ?
( ১ ) রিও ডি জেনেইরো
( ২ ) সাও পাওলো
( ৩ ) ব্রাসিলিয়া
( ৪ ) লিমা
উত্তৰঃ ব্রাসিলিয়া ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। ২০১৫ সনের আনুমানিক তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৭৩০ কোটি ।
প্রশ্ন ২। কোন্ মহাদেশটি সবচেয়ে বড় ?
উত্তৰঃ এশিয়া ।
প্রশ্ন ৩। কোন্ মহাসাগরটি সবচেয়ে বড় ?
উত্তৰঃ প্রশান্ত মহাসাগর ।
প্রশ্ন ৪। পৃথিবীর মোট আয়তন কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৫১০ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ৫। পৃথিবীতে মহাসাগর কয়টি এবং কী কী ?
উত্তৰঃ পৃথিবীতে মহাসাগর ৫ টি । প্রশান্ত মহাসাগর , আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগর , উত্তর মহাসাগর ও দক্ষিণ মহাসাগর ।
প্রশ্ন ৬। পৃথিবীতে মহাদেশ কয়টি এবং কী কী ?
উত্তৰঃ পৃথিবীতে মহাদেশ ৭ টি । এশিয়া , ইউরোপ , আফ্রিকা , উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা , এন্টার্কটিকা , ওশেনিয়া ।
প্রশ্ন ৭। পৃথিবীতে মোট স্থলভাগ ও জলভাগের আয়তন কত ?
উত্তৰঃ পৃথিবীতে মোট স্থলভাগ প্রায় ১৪৯ নিযুত বর্গ কিলোমিটার এবং জলভাগ প্রায় ৩৭১ বর্গ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ৮। পান্থালাসা বলতে কী বোঝ ?
উত্তৰঃ স্থলমণ্ডল বা পেঞ্জিয়ার চতুর্দিকে ঘিরে থাকা জলমণ্ডলটিকে পান্থালাসা বলে ।
প্রশ্ন ৯। কোন্ সাগর পেঞ্জিয়াকে উত্তর দক্ষিণে দুভাগে ভাগ করেছে ?
উত্তৰঃ টেথিস সাগর ।
প্রশ্ন ১০। পেঞ্জিয়ার ভাগ দুটির নাম কী কী ?
উত্তৰঃ উত্তর অংশটির নাম লরেশিয়া এবং দক্ষিণ অংশের নাম গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ড ।
প্রশ্ন ১১। লরেশিয়া বিভক্ত হয়ে কোন্ কোন্ স্থলভাগের সৃষ্টি হয়েছে ?
উত্তৰঃ লরেশিয়া বিভক্ত হয়ে উত্তর আমেরিকা , গ্রীণল্যাণ্ড ও ভারত উপমহাদেশের উত্তরে থাকা ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল ।
প্রশ্ন ১২। গণ্ডোয়ানা ল্যাণ্ড বিভক্ত হয়ে কোন্ কোন্ স্থলভাগের সৃষ্টি হয়েছে ?
উত্তৰঃ গণ্ডোয়ানা ল্যাণ্ড বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা , আফ্রিকা , মাদাগাস্কার , ভারতবর্ষ , আরব অঞ্চল , মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দ্বীপসমূহ , অষ্ট্রেলিয়া , এন্টার্কটিকা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছে ।
প্রশ্ন ১৩। স্থলমণ্ডলকে কী কী চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ?
উত্তৰঃ স্থলমণ্ডলকে চারটি অংশে ভাগ করা হয়েছে —
( ১ ) এশিয়া , ইউরোপ ও আফ্রিকা ।
( ২ ) উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা ।
( ৩ ) অষ্ট্রেলিয়া ও বহুসংখ্যক দ্বীপসহ ওশেনিয়া । এবং
( ৪ ) এন্টার্কটিকা মহাদেশ ।
প্রশ্ন ১৪। পৃথিবীর মোট কত শতাংশ লোক উত্তর গোলার্ধে বাস করে ?
উত্তৰঃ প্রায় ৯০ শতাংশ ।
প্রশ্ন ১৫। পৃথিবীর গভীরতম খাত কোনটি ?
উত্তৰঃ প্রশান্ত মহাসাগরের মেরিয়ানা বা চ্যালেঞ্জার খাত ( ১১,০২২ মিটার গভীর ) ।
প্রশ্ন ১৬। পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর কোন্টি ?
উত্তৰঃ প্রশান্ত মহাসাগর ।
প্রশ্ন ১৭। প্রশান্ত মহাসাগরে ছোট বড় কয়টি দ্বীপ আছে ?
উত্তৰঃ প্রায় ২০,০০০ টি ।
প্রশ্ন ১৮। প্রশান্ত মহাসাগরের গড় গভীরতা কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৫০০০ মিটার ।
প্রশ্ন ১৯। আটলান্টিক মহাসাগরের গড় গভীরতা কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৩০০০ মিটার ।
প্রশ্ন ২০। প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃতি কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ১৬৫ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ২১। আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃতি কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৮২ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ২২। ভারত মহাসাগরের বিস্তৃতি কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৭৩ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ২৩। ভারত মহাসাগরের গড় গভীরতা কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৪০০০ মিটার ।
এশিয়া মহাদেশ :
প্রশ্ন ১। পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ কোন্টি ?
উত্তৰঃ এশিয়া মহাদেশ ।
প্রশ্ন ২। কোন গ্রন্থিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় ?
উত্তৰঃ পামীর গ্রন্থিকে ।
প্রশ্ন ৩। এশিয়ার কোন্ হ্রদটি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম ?
উত্তৰঃ কাস্পিয়ান হ্রদ ।
প্রশ্ন ৪। এশিয়ার কোন্ দেশে জনসংখ্যা সর্বাধিক ?
উত্তৰঃ চীনদেশে ।
প্রশ্ন ৫। এশিয়ার অন্তর্বাহিনী নদীগুলির নাম লেখো ।
উত্তৰঃ এশিয়া মহাদেশের অন্তর্বাহিনী নদীগুলি হল— তারিম , ইউরাল , আমুদরিয়া ও জর্ডান।
প্রশ্ন ৬। এশিয়া মহাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত ?
উত্তৰঃ এশিয়া মহাদেশের দৈর্ঘ্য ৯৬০০ কি.মি. এবং প্রস্থ ৮৪৮০ কি.মি .।
প্রশ্ন ৭। এশিয়ার মোট কালি কত ?
উত্তৰঃ ৪৪.২ নিযুত বর্গ কি.মি. ।
প্রশ্ন ৮। এশিয়া ভারতবর্ষের কতগুণ ?
উত্তৰঃ ১৪ গুণ ।
প্রশ্ন ৯। এশিয়ার চারিসীমা লেখো ।
উত্তৰঃ এশিয়ার উত্তরে উত্তর সাগর , পূর্বে বেরিং প্রণালী ও প্রশাস্ত মহাসাগর , দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর , সুয়েজ খাল , ভূমধ্যসাগর , ককেসাস পর্বত , কাস্পিয়ান সাগর , ইউরাল নদী ও ইউরাল পর্বতমালা ।
প্রশ্ন ১০। এশিয়া মহাদেশের উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৫৮০০০ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ১১। পৃথিবীর ছাদ কাকে বলা হয় ?
উত্তৰঃ পামীর মালভূমিকে ।
প্রশ্ন ১২। এশিয়ার কয়েকটি ধর্মের নাম লেখো ।
উত্তৰঃ ভারতের হিন্দু , জৈন , বৌদ্ধও শিখ । পশ্চিম এশিয়ার ইহুদী , পার্শী , খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্ম । চীন দেশের কনফুসিয়াস ও তাও এবং জাপানের শ্বিন্টো ।
প্রশ্ন ১৩। এশিয়ার কোন স্থানটিকে প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার বলা হয় এবং কেন ?
উত্তৰঃ জাপানের ওসাকাকে প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার বলা হয় । এই স্থানে জাপানের বৃহত্তম কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র । এই স্থানে টেরিলিন , নাইলন , পলিয়েস্টার , রেয়ন প্রভৃতি কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্রবয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে ।
প্রশ্ন ১৪। ইয়াংসিকিয়াং নদীর অববাহিকায় জনবসতি ঘন কেন ?
উত্তৰঃ এই অববাহিকার আয়তন খাস চীনের প্রায় ১/৩ অংশ । ইহা তিব্বতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে চীনের সাগরে পড়েছে । এই নদীর গতিপথে কয়েকটি হ্রদ থাকায় এখানে হোয়াহোং নদীর ন্যায় বন্যা হয় না । নদীর উভয় পারে বহু উর্বর উপত্যকা আছে । একেবারে উচ্চখণ্ড ব্যতীত এই নদীর মাঝখানে এবং শেষ হওয়ার প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার সুনাব্য , এর নদী , শাখা নদী এবং খালসমূহ চীনাদের যাতায়াত ও দৈনন্দিন জীবনের প্রধান সম্বল । তদুপরি নদীটির পার্বত্য অববাহিকায় কয়লা , লোহা ও সোনার খনি আছে । এই সকল সুবিধা থাকার জন্য এখানে চীন দেশের প্রায় অর্দ্ধেক লোক এই নদীর পাড়ে কৃষিকার্য করে সুন্দর নগর গড়ে জীবন অতিবাহিত করছে । জলবায়ুর উপযোগিতার জন্যও এখানে জনবসতি ঘন । এই অঞ্চলে শীতকালে খুব বেশি শীত পড়ে না এবং গরমের দিনে অল্প বৃষ্টিপাত হয় ।
প্রশ্ন ১৫। দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ায় লোকবসতি ঘন কেন ?
উত্তৰঃ দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , ইরাবতী , মেনাম , মেকং প্রভৃতি নদী উপত্যকায় ভূমি অত্যন্ত উর্বর । গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । মালয়, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে সারা বৎসরই পরিচালন বৃষ্টিপাত হয় । এই জন্য দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার বহু লোক কৃষিকার্য করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । জীবিকা অর্জন সহজ বলেই এই অঞ্চলে লোকবসতি ঘন ।
প্রশ্ন ১৬। এশিয়ার মৌসুমী অঞ্চলের দেশগুলি উন্নত কেন ?
উত্তৰঃ এশিয়ার মৌসুমী অঞ্চলের অন্তর্গত দেশগুলিতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় । ভারত , মায়ানমার , থাইল্যাণ্ড , চীনের দক্ষিণ – পূর্ব অংশ ও মধ্যভাগ , জাপান , কোরিয়ার কিছু অংশে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় । গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অধিক । শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অতিশয় কম । শ্রীলঙ্কা , ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জগুলিতে সারবৎসরই বৃষ্টিপাত হয় । এজন্য সমভূমি অঞ্চলগুলিতে চাষাবাদের সুবিধা আছে । বেশির ভাগ লোকের উপজীবিকা কৃষি ।
মৌসুমী বায়ু ও বরফগলা জল দ্বারা পরিপুষ্ট দক্ষিণ প্রবাহিনী ও পূর্ব প্রবাহিনী নদীগুলো বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি করেছে । এগুলি এশিয়ার বিভিন্ন সভ্যতার মূল ভিত্তি । সিন্ধু – গঙ্গা অঞ্চলে আর্যসভ্যতা , ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর অববাহিকাতে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা , ইরাবতী , সালুইন , মেকং , মেনাম ইত্যাদিতে ইন্দোচীন সভ্যতা এবং ইয়াংসিকিয়াং এবং হোয়াংহো নদীর অববাহিকাতে চীন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল । পাকিস্তানের অন্তর্গত সিন্ধুনদের অববাহিকাতেও চাষ করা হয় । এই অঞ্চলের নদীগুলি নাব্য ও জলসেচের উপযুক্ত । সেজন্য অতীতের কৃষিভিত্তিক এশিয়াতে নদীমাতৃক সমভূমি অঞ্চলে সহজেই অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে । মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবেই এই অঞ্চলগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর । এজন্য এ অঞ্চলে জলবসতির ঘনত্বও অত্যধিক । কাজেই এশিয়াতে মৌসুমী অঞ্চলের অন্তর্গত অঞ্চল অধিক উন্নতি লাভ করেছে । এই অঞ্চলগুলিতে কৃষি , শিল্প , যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত ।
প্রশ্ন ১৭। এশিয়ার সকল অঞ্চল বা দেশ সমান উন্নত নয় কেন ?
উত্তৰঃ এশিয়ার সকল অঞ্চল বা দেশ সমান উন্নত নয় । কিছু সংখ্যক দেশ উন্নতির পথে অগ্রসর হলেও কিছু কিছু দেশ বর্তমানেও অগ্রসর হয়ে আছে । এ ধরনের বিভিন্নতার কারণগুলোর মধ্যে ভূ – প্রকৃতির বৈচিত্র্য , জলবায়ুর ভিন্নতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিতরণের অসমতাই প্রধান । প্রতিকূল ভূ – প্রকৃতি ও জলবায়ু প্রধানত জনবসতি , কৃষিকার্য ও যাতায়াতের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধার সৃষ্টি করে । এর ফলে এ সকল অঞ্চলে উন্নয়নের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়ে এবং জনবসতিও পাতলা হয় । প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলে কোন দেশ বা অঞ্চলের উন্নতির পথ গতিরুদ্ধ হয়ে যায় । প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চলগুলো অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করতে পারে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের নামে যাতায়াত ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি পায় ।
প্রশ্ন ১৮। জাপান শিল্পে উন্নত কেন ?
উত্তৰঃ জাপানের শিল্পোন্নতির কারণ :- জাপান এশিয়ার শ্রেষ্ঠ এবং বিশ্বের তৃতীয় প্রধান শিল্পোন্নত দেশ । জাপানের শিল্পোন্নতির কারণগুলি হলঃ
( ১ ) দ্বৈপ রাষ্ট্র হিসেবে জাপানের বিশেষ সুবিধা :- জাপান দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র । দেশের উপকূলভাগ ভগ্ন হওয়ার ফলে বিভিন্ন উপকূলে প্রথম শ্রেণির বন্দর গড়ে উঠেছে । ফলে কাঁচামাল আমদানি ও শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এক বিশেষ সুবিধা লাভ করেছে ।
( ২ ) সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ার জন্য জলপথের সুবিধা :- চারদিক দিয়ে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় জাপানের পক্ষে কম খরচে সমুদ্রপথে জিনিসপত্র আমদানি – রপ্তানি করার সুবিধা হয়েছে ।
( ৩ ) প্রতিবেশী দেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা :- জাপান শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালে সমৃদ্ধ না হলেও এশিয়ার কাঁচামাল সমৃদ্ধ দেশগুলির কাছাকাছি অবস্থিত । ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয় না ।
( ৪ ) শ্রমের উপযোগী নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু :- জাপানের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ার দরুন কঠোর শ্রমের সহায়ক । সেইজন্য জাপানের শ্রমিক পরিশ্রমী ও দক্ষ ।
( ৫ ) খরস্রোতা নদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন :- জাপানের বেশির ভাগ জায়গা পবর্তময় হওয়ার জন্য এদেশের নাতিদীর্ঘ নদীগুলি খরস্রোতা । ফলে এইসব নদী থেকে প্রচুর জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় । সস্তায় প্রচুর জলবিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার জন্য জাপানে শিল্পের উন্নতি ঘটেছে ।
( ৬ ) বনভূমি থেকে প্রচুর কাঠের সরবরাহ :- জাপানের বনভূমি থেকে প্রচুর উন্নতমানের কাঠ পাওয়া যায় । এই কাঠ জাহাজ নির্মাণ শিল্প , কাগজ শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় । ফলে বনভূমি থেকে প্রয়োজনীয় কাঠ পাওয়ার সুবিধা থাকার জন্য শিল্পের উন্নতি ঘটেছে।
( ৭ ) কৃষিজমির অভাব :- আয়তনের তুলনায় জাপানে জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি , অথচ কৃষিজমির অভাব । কৃষিজমির অভাব থাকায় জীবিকার বিকল্প হিসেবে অধিবাসীরা শিল্পকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে । এই কারণে জাপানের অধিবাসীরা শিল্পমুখী ।
( ৮ ) জাতীয়তাবাদী বলিষ্ঠ চরিত্র :- জাতীয়তাবোধ জাপানি চরিত্রের এক দুর্লভ বৈশিষ্ট্য।তারা দেশকে অত্যন্ত ভালবাসে । ফলে তারা প্রত্যেকটি কাজ নিপুণভাবে মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করে । সেইজন্য জাপানি শিল্পজাত দ্রব্যের মান উৎকৃষ্ট ।
( ৯ ) স্বল্প উৎপাদন ব্যয় ও উৎপাদিত পণ্যের অত্যুচ্চ মান :- স্বল্প উৎপাদন ব্যয়ে শিল্পদ্রব্য তৈরি এবং উৎপাদিত পণ্যের অত্যুচ্চ মানের জন্য বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে জাপান শ্রেষ্ঠ আসন অধিকার করেছে । সারা পৃথিবী জুড়ে জাপানি শিল্পদ্রব্যের বিপুল চাহিদা জাপানের অসামান্য শিল্পোন্নতির কারণ ।
( ১০ ) শিল্প নির্বাচনের দক্ষতা :- জাপানের শিল্পগুলি একে অপরের প্রতিযোগী নয় , বরং একে অপরের পরিপূরক । শিল্প নির্বাচনের এই দক্ষতার জন্য জাপান শিল্পে উন্নতি করেছে ।
( ১১ ) জাপানের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা :- জাপানের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ । এই ঘনিষ্ঠতা জাপানের শিল্পোন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করেছে ।
( ১২ ) অন্যান্য কারণ :- জাপানের শিল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হল—
( ক ) উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা ।
( খ ) সরকারি আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতা ।
( গ ) কারিগরি নৈপুণ্য ।
( ঘ ) সমবায় পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গঠন প্রভৃতি ।
প্রশ্ন ১৯। এশিয়ার বেশির ভাগ লোক কৃষিজীবী হবার কারণ কি ?
উত্তৰঃ এশিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক । জাপান ছাড়া প্রায় দেশগুলির লোক প্রধানত কৃষিজীবী । প্রধান শস্যগুলি হল — ধান , গম , আখ , চা , রবার , পাট ও কার্পাস । পৃথিবীর মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯০ ভাগ এশিয়া মহাদেশের ক্রান্তীয় মৌসুমী অঞ্চলে উৎপাদন হয় । এশিয়ার পশ্চিমের পাকিস্তান থেকে আরম্ভ করে দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ চীনকে ধরে জাপান পর্যন্ত এই সমগ্র অঞ্চলটি ধান , চা , পাট , কার্পাস , আখ , তামাক, বাজরা , সরিষা , রবার এবং মশলা জাতীয় শস্যের জন্য বিখ্যাত । ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় মরু অঞ্চলে মরুদ্যানগুলোতে উৎপাদিত শস্যসমূহের ভেতর খেজুর , বড়ই , গম , কার্পাস , আঙুর , আপেল , বাদাম ইত্যাদি । সৌদি আরব এবং ইয়েমেনের মরুদ্যানগুলোতে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট কফি উৎপাদিত হয় ।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান শস্যসমূহ হল — গম , কার্পাস , তামাক । এ অঞ্চলে আপেল , আঙুর , জলপাই , কমলা ইত্যাদি ফলমূল উৎপাদিত হয় । মাঞ্চুরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গম , বার্লি , ওট এবং সয়াবিন উৎপন্ন হয় । ষ্টেপ অঞ্চলে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে কার্পাস , গম , ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদন করা হয় । তাইগা অঞ্চলের দক্ষিণাংশে কিছু পরিমাণে গম , ওট ও বার্লি উৎপাদন করা হয় । ‘ অতএব দেখা যায় যে , জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের ওপর কৃষিকার্য নির্ভর করে । এশিয়া খনিজ সম্পদে উন্নত হওয়া সত্ত্বেও শিল্পোদ্যোগে পিছিয়ে আছে ।
একমাত্র জাপান শিল্পোদ্যোগে উন্নতিলাভ করেছে । এশিয়ার দক্ষিণ – পূর্বাঞ্চল নদীবহুল সমভূমি কৃষিকার্যতে সহায়তা করেছে । কাজেই বেশির ভাগ লোক কৃষিকার্যকে উপজীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে । শিল্পোদ্যোগে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন । বেশির ভাগ লোক দরিদ্র হওয়াতে কৃষিকেই উপজীবিকা হিসেবে নিয়েছে । এশিয়াতে সর্বাধিক জনসংখ্যা থাকার ফলে সস্তা শ্রমিকও সহজলভ্য কৃষিকার্যে প্রচুর পরিমাণে সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজন ৷
প্রশ্ন ২০। এশিয়া মহাদেশকে ভূ – প্রাকৃতিক গঠন অনুসারে ভাগ কর এবং প্রতিটি ভাগের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তৰঃ ভূ – প্রাকৃতিক গঠন অনুসারে এশিয়া মহাদেশকে প্রধানত ৮ টি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ১ ) উত্তরের বিশাল নিম্নভূমি অঞ্চল ।
( ২ ) মধ্য এশিয়ার পার্বত্য এবং মালভূমি অঞ্চল ।
( ৩ ) পশ্চিম এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল ।
( ৪ ) দক্ষিণ এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল ।
( ৫ ) পূর্ব এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল ।
( ৬ ) বৃহৎ নদী উপত্যকা অঞ্চল ।
( ৭ ) উপকূল অঞ্চল । এবং
( ৮ ) সাগরীয় দ্বীপসমূহ ।
( ১ ) উত্তরের বিশাল নিম্নভূমি অঞ্চল :- এশিয়া মহাদেশের উত্তর ভাগের বিস্তৃত অঞ্চলটিকে নিম্ন অঞ্চল বলা হয় । অবশ্য কিছু কিছু অঞ্চলে পাহাড় পর্বত , মালভূমি ও নদী উপত্যকা থাকার ফলে এর ভূ – প্রকৃতি কোন কোন স্থানে উঁচু – নীচু । এই অঞ্চলটি পূর্বের বেরিং প্রণালী থেকে পশ্চিম কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । এই অঞ্চলটিকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) পশ্চিম সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি ।
( খ ) মধ্য সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি । এবং
( গ ) পূর্ব সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি অঞ্চল ।
( ক ) পশ্চিম সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি :- এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাস্পিয়ান ও উত্তরে য়ুরাল পর্বতের মধ্যে অবস্থিত । এই অঞ্চলটিতে আরব সাগর ও কাস্পিয়ান হ্রদে প্রবাহিত বহু নদী আছে ।
( খ ) মধ্য এশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চল :- এই অঞ্চলটি পুরোনো শিলা দ্বারা গঠিত নিম্নমালভূমি অঞ্চলে বিস্তৃত হয়ে আছে । প্রধানত ওবে এবং ইনিসি দুটো বৃহৎ নদী এবং সেগুলির বহু সংখ্যক উপনদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মালভূমি অঞ্চল গঠিত ।
( গ ) পূর্ব সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি :- পূর্ব সাইবেরিয়ার নিম্নভূমি অঞ্চলটি পুরোনো উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গঠিত হয়েছে । ফলে এই অঞ্চলে কিছু সংখ্যক ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড় দেখা যায় ।
( ২ ) মধ্য এশিয়ার পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চল :- এই অঞ্চলটি উত্তরের বিশাল নিম্নভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পূর্বে অবস্থিত । এখানে অনেক সংখ্যক ছোট – বড় ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি ও মালভূমি আছে । পামীর গ্রন্থির কয়েকটি বিখ্যাত পর্বত হল — টিয়েনসান , আলটাই , আলটিনভাগ , নানাসান , কুবেনলুন , খিনগান , স্তনোভয় ও হিমালয় । এই পর্বতগুলির মধ্যে বহু মালভূমি আছে । হিমালয় ও আলটিনতাগ পর্বতশ্রেণি দুটির মধ্যে তিব্বত মালভূমি অবস্থিত । আলটিনতাগ ও টিয়েনসান পর্বতমালার মধ্যে টারিম অববাহিকা অবস্থিত তদুপরি আলটাই , সুয়ান ইত্যাদি পর্বত এই অঞ্চলের উত্তরভাগে আছে । পামীর গ্রন্থিকে ‘ পৃথিবীর চূড়া ’ বলে । ইহা গড়ে প্রায় ৩৬০০ মিটার উচ্চ । অন্যদিকে পামীর গ্রন্থি হতে আসা পাহাড় – পর্বতগুলি সাগরের পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১০,০০০ মিটার উচ্চতার মধ্যে । পর্বতসমূহের মধ্যে দ – অঞ্চলগুলির উচ্চতা সাগরের পৃষ্ঠ হতে ৬০০-১০০০ মিটার ।
( ৩ ) পশ্চিম এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল :- পামীর গ্রন্থির পশ্চিমদিকে ইরানীয় ও এনাতলীয় মালভূমি অবস্থিত । ককেশাস পর্বতের দক্ষিণে থাকা আর্মেনিয় গ্রন্থি এই মালভূমি অঞ্চলেরই একটি অংশ । পামীর গ্রন্থি হতে বের হয়ে আসা পশ্চিমে হিন্দুকুশ ও সুলেমান পর্বত এই মালভূমি অঞ্চলটিকে ঘিরে আছে । এই মালভূমিসমূহ বেলুচিস্তান , আফগানিস্তান , ইরান ও এশিয়া মাইনরে বিস্তৃত হয়ে আছে । এই অঞ্চলের উচ্চতা সাগরের পৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ মিটার ।
( ৪ ) দক্ষিণ এশিয়ার মালভূমি অঞ্চল :- আরব ভূমি , ভারতের মালভূমি , ম্যানমার ও চীনদেশে অবস্থিত ইউনান ও সান মালভূমি উপরোক্ত ভূ – প্রাকৃতিক বিভাগটির অন্তর্গত । কিছু মালভূমি যেমন — আরব ভূমি মরুময় । এই ধরনের মালভূমিতে কিছু সংখ্যক খরস্রোতা নদীর প্রভাব খুব বেশি ।
( ৫ ) পূর্ব এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল :- পূর্ব এশিয়ার বড় বড় নদী উপত্যকাগুলির গায়ে বহু পর্বতমালা অবস্থিত । আমুর নদীর উপত্যকা , মধ্য মাঞ্চুরিয়ার নিম্নভূমি , উত্তর চীনের নদী উপত্যকা , মধ্য চীনের সিকিয়াং , ইন্দোচী মেকং ইত্যাদি নদীর কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে থাকা এই পর্বতমালা এই অঞ্চলটি নির্ধারণ করেছে ।
( ৬ ) বৃহৎ নদী উপত্যকা অঞ্চল :- এশিয়া মহাদেশের উত্তর , পূর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চলে অনেকগুলি বড় নদী আছে । অতীতকাল থেকেই এই নদীগুলো এবং এদের উপনদীগুলো খনন, পরিবহণ এবং অবক্ষেপণ প্রক্রিয়ার দ্বারা বৃহৎ নদী উপত্যকাসমূহ সৃষ্টি করেছে । এই উর্বর সমভূমি অঞ্চলটি জনবসতিপূর্ণ । পৃথিবীর কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতা এই অঞ্চলটিতে গড়ে উঠেছিল । যেমন — চীন সভ্যতা , আর্য সভ্যতা , সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । এই অঞ্চলটির উল্লেখযোগ্য নদীগুলি হল — ওবি , ইনিসি , লেনা , আমুর , হোয়াংহো , ইয়াংসিকিয়াং , মেকং , মেনাম , সালউইন , ইরাবতী , ব্রহ্মপুত্র , গঙ্গা , সিন্ধু , মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণ ,কাবেরী , নর্মদা , তাপ্তী উল্লেখযোগ্য । পশ্চিম এশিয়ার ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রীস উল্লেখযোগ্য ।
( ৭ ) উপকূল অঞ্চল :- মহাদেশটির উপকূল ভগ্ন প্রকৃতির এবং এর সংলগ্ন উপসাগরের সংখ্যা কম । এশিয়ার উপকূলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৫৮,০০০ কি.মি। কিছু কিছু উপকূল অঞ্চল পর্বতে ভরা । উর্বর উপকূলসমূহ জনবসতিপূর্ণ । অবশ্য উত্তরের উপকূলভাগ প্রায়ই বরফাকৃত থাকে ।
( ৮ ) সাগরীয় দ্বীপসমূহ :- এশিয়া মহাদেশের পূর্বে , দক্ষিণ – পূর্বে এবং দক্ষিণে অবস্থিত সাগরীয় দ্বীপসমূহে মহাদেশটি এক বিশেষ ভূপ্রকৃতির সৃষ্টি করেছে । কিউরাইল , জাপান , রিউকিউ ( Ryukyu ) দ্বীপপুঞ্জসহ এশিয়ার পূর্বে অবস্থিত । এছাড়া উল্লেখযোগ্য দ্বীপসমূহ হল — ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ , আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , শ্রীলংকা , বাহরিন , লাক্ষাদ্বীপ এবং মালদ্বীপ উল্লেখযোগ্য ।
প্রশ্ন ২১। এশিয়া মহাদেশে কি কি প্রকারের জলবায়ু দেখা যায় ? এই জলবায়ুগুলো বিরাজ করা অঞ্চলসমূহ মানচিত্রে চিহ্নিত করে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা কর ।
উত্তৰঃ এশিয়ার বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চল :- উষ্ণতা , বৃষ্টিপাত ও জলবায়ুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তারতম্য অনুসারে এশিয়া মহাদেশে নিম্নলিখিত বিভিন্ন প্রকারের জলবায়ু অঞ্চল (Climatic Regions ) দেখা যায় ; যথা ―
( ১ ) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল ।
( ২ ) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৩ ) মরু জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৪ ) নাতিশীতোষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৫ ) উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ পূর্ব উপকূলীয় চিনদেশীয় ( মাঞ্চুরীয় ) জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৬ ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৭ ) ষ্টেপস ( নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি ) জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৮ ) শীতল নাতিশীতোষ্ণ ( সাইবেরীয় ) জলবায়ু অঞ্চল ।
( ৯ ) তুন্দ্রা ( সুমেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল ।
( ১০ ) আলপাইন জলবায়ু অঞ্চল ।
( ১ ) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল ( The Equatorial climate ) :- এশিয়ার দক্ষিণে নিরক্ষ রেখার কাছাকাছি ( ০° থেকে ১০° উত্তর ও দক্ষিণ ) অঞ্চলে পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ , ফিলিপাইনস ও মালয় উপদ্বীপে নিরক্ষীয় জলবায়ু দেখা যায় । এই
জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য :-
( i ) সারাবছর একই রকমের উঁচু তাপমাত্রা ( ২৬.৬° সে . ) ।
( ii ) শীত – গ্রীষ্ম উষ্ণতার পার্থক্য কম ।
( iii ) সারা বছর প্রায় অপরাহ্নে পরিচলন ক্রিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ( ২০০ থেকে ২৫০ সে.মি)।
( iv ) বৃষ্টিপাত একসঙ্গে প্রচুর ঘটে ।
( v ) সারা বছর একই রকম ঋতু বিরাজ করে অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তন নেই । প্রচণ্ড উষ্ণতা ও আর্দ্রতা এই জলবায়ুর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ।
( ২ ) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল ( Tropical Monsoon Climate ) :- এই ধরনের জলবায়ু দক্ষিণ – পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার ভারত , বাংলাদেশ , মায়ানমার , থাইল্যাণ্ড , ইন্দোচিন , চিন ও জাপানের স্থানবিশেষে দেখা যায় ।
এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল :
( i ) শীতকালীন শুষ্কতা ও গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত ।
( ii ) শীত ( ৮° থেকে ১৫° সে ) ও গ্রীষ্মে ( ২৮° থেকে ৩৫° সে . ) উষ্ণতার পার্থক্য যথেষ্ট থাকে ।
( iii ) প্রধানত গ্রীষ্মকালের দ্বিতীয় পর্বে বা শেষভাগে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।
( iv ) ভূমিরূপের পার্থক্য অনুসারে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বিভিন্ন রকমের ( ৭৫ সে.মি. থেকে ৩০০ সে.মি. বা তার বেশি ) ।
( v ) একটানা দিনের পর দিন বৃষ্টিপাত হয় না , দুই – চারদিন বৃষ্টিপাতের পরে দুই – চারদিন শুষ্ক থাকে । এই জলবায়ু প্রধানত গ্রীষ্মপ্রধান ।
( ৩ ) ক্রান্তীয় উষ্ণ মরু জলবায়ু ( Hot Desert Climate ) :- দক্ষিণ পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার জলবায়ু উষ্ণ মরু প্রকৃতির ।
( i ) চরম উষ্ণতা ও প্রচণ্ড শুষ্কতা এখানকার জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য ।
( ii ) দিনে ও রাতে এবং শীত ও গ্রীষ্মে উষ্ণতার পার্থক্য অত্যন্ত বেশি ( ৩০° -৪০° সে . ) ।
( iii ) বৃষ্টিপাতের বৃষ্টিপাত হয় না । পরিমাণ ২০ সেমি – র কম ।
( iv ) কোনো কোনো সময়ে বছরের পর বছর
( ৪ ) নাতিশীতোষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল :- মধ্য এশিয়ার তিব্বতে ও তার চারিদিকের জলবায়ু এই প্রকৃতির ।
এখানকার জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হল –
( i ) গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম ।
( ii ) শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা ।
( iii ) বৃষ্টিপাত অতি অল্প ; অনেকক্ষেত্রে প্রায় হয় না বললেই চলে ।
( ৫ ) উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ পূর্ব উপকূলীয় চিনদেশীয় ( মাঞ্চুরীয় ) জলবায়ু অঞ্চল :- উত্তর চিনের উত্তরভাগে এবং কোরিয়া ও জাপানের স্থানবিশেষে এই প্রকার জলবায়ু দেখা যায় । এই জলবায়ু উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমি প্রকৃতির ।
( i ) এই জলবায়ু অনেকটা ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির , তবে বেশি শীতল ।
( ii ) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর সঙ্গে এই জলবায়ুর মূল পার্থক্য হল— এখানকার শীতকাল তীব্র শীতল ।
( iii ) শীতকালীন উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়।
( iv ) শীতকালে তুষারপাত স্বাভাবিক ঘটনা ।
( v ) গ্রীষ্মকালে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় ।
( ৬ ) ভূমধ্য সাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল :- ভূমধ্য সাগরের তীরবর্তী সিরিয়া , লেবানন , জর্ডন , ইস্রাইল , তুরস্ক প্রভৃতি দেশের অংশবিশেষে এই জলবায়ু দেখা যায় ।
এই জলবায়ুর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল ―
( i ) গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে ।
( ii ) শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় ।
( iii ) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম বা মাঝারি রকমের ৪০ সে.মি. থেকে ৮০ সেমি .।
( iv ) গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা ২০° থেকে ২৮° সে র মধ্যে থাকে এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা ৫° সে . থেকে ১০° সে .।
( v ) পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও বিশেষ তুষারপাত হয় না ।
( vi ) বছরের বেশির ভাগ সময়ে আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং রোদ ঝলমলে আবহাওয়া বিরাজ করে । সুমিষ্ট ফলের জন্য এই জলবায়ু অঞ্চল বিখ্যাত ।
( ৭ ) ষ্টেপস ( নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি ) জলবায়ু অঞ্চল :- দক্ষিণ – পশ্চিম সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার স্থানবিশেষে এই জলবায়ু দেখা যায় ।
( i ) শীতকাল দীর্ঘ ও অত্যন্ত তীব্র ।
( ii ) গ্রীষ্মকালে ক্ষণস্থায়ী , কিন্তু উষ্ণ ।
( iii ) বৃষ্টিপাত অতি সামান্য ( ২৫ সেমি . – ৩৫ সেমি . ) হয় । শীতকালে যে তুষারপাত হয় তা গ্রীষ্মের আগমনে গলে যায় এবং সবুজ তৃণভূমির সৃষ্টি করে ।
( ৮ ) শীতল নাতিশীতোষ্ণ ( সাইবেরীয় ) জলবায়ু অঞ্চল :- এশিয়ার উত্তরভাগে গোটা সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলবায়ু এই প্রকৃতির । এখানে ―
( i ) শীতকাল সুদীর্ঘ ও অত্যন্ত শীতল ।
( ii ) গ্রীষ্মকাল স্বল্পস্থায়ী ও ঠাণ্ডা ।
( iii ) গ্রীষ্মকালে হালকা বৃষ্টিপাত হয় ।
( iv ) শীতকালে প্রচুর তুষারপাত ঘটে । এই অঞ্চল চিরহরিৎ সরলবর্গীয় অরণ্যে ( তৈগা ) আবৃত ) ।
( ৯ ) তুন্দ্রা ( মেরুদেশীয় জলবায়ু ) অঞ্চল :- এশিয়ার উত্তরে সুমেরু মহাসাগরের উপকূলে এই অঞ্চল অবস্থিত ।
( i ) এখানকার গ্রীষ্মকাল অতি স্বল্পস্থায়ী ও শীতল ।
( ii ) শীতকাল দীর্ঘ ও ঠাণ্ডা ।
( iii ) বছরের বেশির ভাগ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে ।
( iv ) এখানকার বেশির ভাগ অঞ্চল তুষারে আবৃত থাকে । গ্রীষ্মে কিছু বরফ গললে গাছপালাহীন প্রান্তরে মস্ , লাইকেন ও শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে ।
( ১০ ) আলপাইন জলবায়ু অঞ্চল :- এশিয়ার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে এই জলবায়ু দেখা যায় । বরফে আবৃত পর্বতের উচ্চ অংশে অতি শীতল আলপাইন প্রকারের জলবায়ু বিরাজ করে । হিমালয় সহ মহাদেশটির অতি উচ্চ অঞ্চলে এই জলবায়ু অনুভূত হয় ।
প্রশ্ন ২২। এশিয়া মহাদেশকে কেন বৈচিত্র্যপূর্ণ মহাদেশ বলা হয় ।
উত্তৰঃ এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ । এশিয়ার হিমালয় পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত ও এর শৃঙ্গ এভারেষ্ট পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ । এশিয়ায় অবস্থিত পামীর পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমি । আবার জর্ডন নদীর উপত্যকা এলখোর ও মরুসাগর স্থলভাগের মধ্যে নিম্নতম স্থান ।
এশিয়ার কাস্পিয়ান পৃথিবীর বৃহত্তম ও বৈকাল পৃথিবীর গভীরতম হ্রদ । পৃথিবীর বিশালতম সমভূমি সাইবেরিয়া । পাকিস্তানের অন্তর্গত জাকোবাবাদ পৃথিবীর উচ্চতম স্থান এবং সাইবেরিয়ার ভার্খয়ানস্ক লোকবসতিযুক্ত শীতলতম স্থান । ভারতবর্ষের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরাম নামক স্থানে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয় । আবার দক্ষিণ ইরানে একেবারেই বৃষ্টিপাত হয় না । এশিয়ার একদিকে যেমন উদ্ভিদবিহীন মরুভূমি ও তুষার অঞ্চল অন্যদিকে তেমনি চিরহরিৎ বৃক্ষযুক্ত বনভূমি ।
এই মহাদেশেই হিন্দু , মুসলমান , খ্রিস্টান , বৌদ্ধ , জৈন , শিখ , ইহুদী , পার্শী প্রভৃতি সকল ধর্মের প্রবর্তকগণের জন্ম হয়েছিল । এখানে আবার অতি অনুন্নত জনজাতিও আছে ।
পৃথিবীর অতি প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ এশিয়া মহাদেশেই হয়েছিল অথচ এখানে অনেক বনবাসী এবং যাযাবর জাতিও বাস করে ।
এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে পৃথিবীর প্রায় সকল রকম জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায় । এই মহাদেশেই পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্ম ও সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশ হয়েছিল ।
উপরোক্ত কারণসমূহের জন্য এশিয়া মহাদেশকে বৈচিত্র্যময় মহাদেশ বলে ।
ইউরোপ :
প্রশ্ন ১। ইউরোপ মহাদেশ কিসের দ্বারা আফ্রিকা মহাদেশ হতে বিভক্ত হয়েছে ?
উত্তৰঃ জিব্রাল্টার প্রণালী দ্বারা ।
প্রশ্ন ২। ইউরোপের দক্ষিণ – পূর্বে থাকা দুইটি সাগরের নাম লিখ ।
উত্তৰঃ কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণসাগর ।
প্রশ্ন ৩। ইউরোপ মহাদেশের বিস্তৃতি কত ?
উত্তৰঃ উত্তর – দক্ষিণে প্রায় ৩৮৪০ কি.মি বিস্তৃত এবং পূর্ব – পশ্চিমে প্রায় ৫৭৬০ কি.মি .।
প্রশ্ন ৪। ইউরোপ মহাদেশ ভারতবর্ষ হতে কতগুণ বড় ?
উত্তৰঃ প্রায় ৩ গুণ বড় ।
প্রশ্ন ৫। ইউরোপের উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য কত ?
উত্তৰঃ প্রায় ৩৮,৪০০ কি.মি .।
প্রশ্ন ৬। ইউরোপের উত্তর – পশ্চিম উপকূল সর্বদাই বরফমুক্ত থাকে কেন ?
উত্তৰঃ ইউরোপের , উত্তর – পশ্চিমে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত প্রবাহিত হবার ফলে সর্বদাই বরফমুক্ত থাকে ।
প্রশ্ন ৭। নবীন ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি কাকে বলে ?
উত্তৰঃ ইউরোপের দক্ষিণাংশের আল্পস্ পর্বতমালাকে ।
প্রশ্ন ৮। ইউরোপের কয়েকটি জ্বালামুখীর নাম লিখ ।
উত্তৰঃ ইটালীর ভিসুভিয়াস , সিসিলির এটনা এবং লিপারি দ্বীপের এটা ।
প্রশ্ন ৯। ইউরোপের উত্তর বাহিনী নদীগুলির নাম লিখ ।
উত্তৰঃ লয়েব , সিয়েন , রাইন , ওয়েজার , এল্ব , ওভার , বিষ্টুলা , মিউজ ইত্যাদি প্রধান ।
প্রশ্ন ১০। ইউরোপের প্রধান প্রধান দক্ষিণ বাহিনী নদীগুলির নাম লিখ ।
উত্তৰঃ ইউরোপের দক্ষিণ বাহিনী নদীগুলির মধ্যে এব্রো , রোন , পো , দানিয়ুব , নিস্তর , নিপর , ডন , ভল্গা ইত্যাদি প্রধান ।
প্রশ্ন ১১। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর দুইটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ কর ।
উত্তৰঃ ( ১ ) গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকালে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় ।
( ২ ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ ও তৃণাঞ্চল দেখা যায় ।
প্রশ্ন ১২। ইউরোপে কি কি কৃষিজদ্রব্য পাওয়া যায় ?
উত্তৰঃ গম , বার্লি , আলু , বীট , ভুট্টা ইত্যাদি পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন ১৩। ইউরোপের কয়েকটি খনিজ পদার্থের নাম লিখ ।
উত্তৰঃ কয়লা , লৌহ আকরিক , পেট্রোলিয়াম , বক্সাইট , সোনা ও রূপা ।
প্রশ্ন ১৪। ইউরোপে কি কি শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠেছে ?
উত্তৰঃ লৌহ ও ইস্পাত শিল্প , পশম ও বস্ত্র উদ্যোগ , কাগজের কল এবং দুগ্ধজাত সামগ্রীর উৎপাদনের উদ্যোগ , জাহাজ নির্মাণ কারখানা ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ১৫। ইউরোপ শব্দটির উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে ?
উত্তৰঃ ইউরোপ শব্দটি সেমেটিক ‘ ইরিব ’ শব্দ হতে এসেছে বলে অনুমান করা হয় ।
প্রশ্ন ১৬। ইউরোপ মহাদেশটি শিল্পে উন্নত কেন ?
উত্তৰঃ ইউরোপ মহাদেশ শিল্প উদ্যোগে উন্নত হওয়ার মূল কারণগুলি হলঃ
( ১ ) এই মহাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ার জন্য মানুষগুলি যথেষ্ট কর্মঠ ।
( ২ ) উপকূল ভগ্ন হওয়ার জন্য নৌ – বিদ্যায় ইউরোপীয়গণ অতিশয় পারদর্শী । এর ফলে তাঁরা মধ্যযুগে জলযানে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করে ধন সম্পদ ও জ্ঞান আহরণ করেছিল ।
( ৩ ) ইউরোপে সহজেই প্রচুর পরিমাণে কয়লা ও লৌহ আকর পাওয়া যায় । এর ফলে পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ অপেক্ষা ইউরোপে পূর্ব হতেই শিল্প উদ্যোগ স্থাপিত হয়েছিল ।
প্রশ্ন ১৭। ইউরোপের কোথায় কোথায় বিমান নির্মাণ করা হয় ?
উত্তৰঃ ইউরোপের গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স ও জার্মানীতে বিমান নির্মাণ করা হয় ।
প্রশ্ন ১৮। ইউরোপের কোথায় কোথায় রেল ইঞ্জিন এবং মোটর গাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র আছে ?
উত্তৰঃ ইউরোপের ইটালী , ফ্রান্স , জার্মানী , গ্রেট ব্রিটেন ও রাশিয়াতে রেল ইঞ্জিন ও মোটর গাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র আছে ।
প্রশ্ন ১৯। ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে কয়লা , লৌহ , তামা ও অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদিকে ভিত্তি করে ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোগ গড়ে উঠেছে ।
উত্তৰঃ ইউরোপ মহাদেশের ব্রিটেনের মধ্যাংশে উত্তর ফ্রান্স , বেলজিয়াম , হল্যাণ্ড , উত্তর জার্মানী , পূর্ব জার্মানী , সেম্মণি – বহেমিয়া সাইলেশিয়া , জার্মানীর রাইন উপত্যকার উপরিভাগ , ইটালীর পো উপত্যকা , স্পেনের ক্যাটালনিয়া , মধ্য সুইডেন , ইউক্রেন এবং ডন – ভলগা – মস্কো অঞ্চলে কয়লা , লৌহ , তামা , অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোগ গড়ে উঠেছে ।
প্রশ্ন ২০। ইউরোপের কোথায় কোথায় ঘন জনবসতি দেখা যায় ?
উত্তৰঃ ইউরোপের উত্তর ফ্রান্স , নেদারল্যাণ্ডস , বেলজিয়াম , লাক্সে মবার্গ , উত্তর জার্মানীতে ঘন জনবসতি দেখা যায় ।
প্রশ্ন ২১। ইউরোপ মহাদেশের ভূ – প্রাকৃতিক ভাগগুলি কী কী ? সেগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তৰঃ ভূ – প্রাকৃতিক গঠন অনুসারে ইউরোপ মহাদেশকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়—
( ১ ) উত্তর – পশ্চিম পার্বত্য অঞ্চল ।
( ২ ) মধ্য ইউরোপের সমভূমি অঞ্চল ।
( ৩ ) দক্ষিণের নব – গঠিত ভঙ্গিল পর্বত ও মালভূমি ।
( ৪ ) নদী গঠিত অববাহিকা ও উপকূলীয় সমভূমি ।
( ১ ) উত্তর – পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল :- ইউরোপের উত্তর – পশ্চিমের এই অংশটি কঠিন পৌরাণিক শিলার দ্বারা গঠিত চারটি ভূ – খণ্ডের সমষ্টি । সিলুরিয়ান যুগে ভূ – আন্দোলনের ফলে উত্তর – পূর্ব দিক হতে দক্ষিণ – পশ্চিম দিক পর্যন্ত এক প্রকারের পর্বতের সৃষ্টি হয় । টার্সিয়ারী যুগে দক্ষিণের আল্পস্ , এপোনিস্ , পেরিনিজ , কার্থেপিয়ান ইত্যাদি পর্বত উৎপত্তি হবার সময় এই ভূ- খণ্ডে কিছু সংখ্যক ফাটল দেখা যায় । এগুলি হতে লাভা উদ্গীরণ হয় । এর ফলে কোন স্থান লাভা দ্বারা বন্ধ হয়ে যায় আবার কিছু কিছু স্থান হয় উপরে উঠেছে না হয় বসে গেছে ।
উত্তরের প্রায় ভাগ অঞ্চল বরফে ঢাকা থাকে এবং অনেক সংখ্যক হিমবাহ আছে । ইউরোপের উত্তর অংশ তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে ।
( ক ) নরওয়ে , ফিনল্যাণ্ড ও সুইডেনের উত্তরের২/৩ ঔ অংশ ভূমি ।
( খ ) স্কটল্যাণ্ডের উচ্চভূমি অঞ্চল । এবং
( গ ) আয়ারল্যাণ্ডের উত্তর – পশ্চিমের উচ্চভূমি অঞ্চল ।
এ ছাড়াও আইসল্যাণ্ডকে নিয়ে অপর একটি চতুর্থ অঞ্চল গঠিত হয়েছে । আইসল্যাণ্ড লাভা আবৃত দ্বীপ । ফিনল্যাণ্ডের মধ্যভাগকে ‘ দশ সহস্র হ্রদের দেশ ’ বলে । উত্তর পার্বত্য অঞ্চলে খনিজ তেল ও কয়লা পাওয়া যায় না , কেবলমাত্র লোহা জাতীয় কিছু ধাতু পাওয়া যায় ।
( ২ ) মধ্য ইউরোপের সমভূমি অঞ্চল :- ইউরোপের প্রায় অর্ধভাগই সমভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত । এই অঞ্চলটি উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে ও আল্পস্ পর্বতমালার উত্তরে অবস্থিত । পূর্ব – পশ্চিমে এই সমভূমি ইউরোল পর্বত হতে বিস্কে উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । এই সমভূমি পশ্চিম হতে পূর্বদিকে অধিক বিস্তৃত । ইংল্যাণ্ডের সমভূমি অঞ্চল এই সমভূমির অন্তর্গত । একে সমভূমি বলা হলেও অনেক অনুচ্চ পর্বত , পাহাড় , মালভূমি ইত্যাদি আছে ।
ইউরোপের মধ্য সমভূমি অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) সমভূমির অন্তর্গত কঠিন পৌরাণিক পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল । এই অঞ্চলের পাহাড় – পর্বত , মালভূমি ক্ষয়রোধক পৌরাণিক পাললিক শিলার দ্বারা গঠিত । ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের উচ্চভূমি , লেক ডিস্ট্রিক্টস্ , পেনিনি পর্বত , ওয়েলস্ , ব্রিটেনের দক্ষিণ – পশ্চিম উপদ্বীপ অঞ্চল , ফ্রান্সের ব্রিটানি , বেলজিয়ামের আর্ডেনিজ , জার্মানির বাইন উপত্যকা ও জার্জ পর্বত ইত্যাদি এই শিলা দ্বারা গঠিত । এই অঞ্চল কৃষির জন্য অনুপযোগী , কেবলমাত্র টিন , তামা ইত্যাদি পাওয়া যায় ।
( খ ) সমভূমির দ্বিতীয় অঞ্চলটি পৌরাণিক শিলার মাঝে মাঝে থাকা নবগঠিত পাললিক শিলার দ্বারা গঠিত অনুচ্চ ভঙ্গিল পর্বতসমূহ দ্বারা সৃষ্ট । এই অঞ্চলটি কৃষিকার্যের জন্য উপযোগী । এই অঞ্চলের অনেক স্থানে কয়লার ভাণ্ডার ও লৌহ আকর আছে ।
( গ ) সমভূমির উত্তরে অনেক স্থান হিমবাহী গোলাশ্ম মৃত্তিকা ইত্যাদিতে আবৃত । অনেক স্থানে লোয়েস মৃত্তিকা দেখা যায় , এই স্থানগুলো উর্বর । হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চল স্কটল্যাণ্ডের দক্ষিণ – পূর্বের উচ্চভূমি , উত্তর – পশ্চিম আয়ারল্যাণ্ড উত্তর পশ্চিম ফ্রান্স , বেলজিয়াম , হল্যাণ্ড , উত্তর জার্মানী , ডেনমার্ক , দক্ষি সুইডেন ও পোল্যাণ্ড ইত্যাদি । ইউরোপের মধ্য সমভূমি অঞ্চল পূর্বদিকের রুশদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত । ইউরোপীয়ান রুশ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত । দক্ষিণের ইউক্রেন অঞ্চলে সুবিস্তৃত লোয়েস ভূমি দেখা যায় । ইউরোপের সমভূমি অঞ্চলটিতে কৃষিকার্য ও যাতায়াতের সুবিধা থাকায় জনবসতি ঘন ।
( ৩ ) দক্ষিণের নবগঠিত পর্বত ও মালভূমি অঞ্চল :- মধ্য ইউরোপের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণে আল্পস্ পর্বতশ্রেণি আটলান্টিক মহাসাগর হতে কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপের দক্ষিণ ভাগ জুড়ে আছে । আল্পস্ গ্রন্থি হতে নির্গত হওয়া একটি পর্বতশ্রেণি আপেনাইন নাম নিয়ে ইটালীতে প্রবেশ করেছে । এবং সিসিলি দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত । এই পর্বত শ্রেণি আফ্রিকা মহাদেশে এটলাস পর্বতের সৃষ্টি করেছে । এটলাস পর্বতের অপর একটি শাখা স্পেন দেশে সিয়োরানেভেড়া পর্বত গঠন করেছে । আল্পস পর্বতের পশ্চিমে অপর একটি শাখা বের হয়ে দক্ষিণ – পশ্চিমে পিরিনিজ ও কেণ্টাবিয়ান পর্বত গঠন করেছে ।
আল্পস্ পর্বতের পূর্বদিকে তিনসারি পর্বত নির্গত হয়েছে । একটি শ্রেণির নাম ডিপারিক । ইহা বলকান উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে । প্রথম শাখাটি পিণ্ডাস নামে গ্রীস দেশ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় শাখাটি রোড় পচ্ নামে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । দ্বিতীয় সারির পর্বত কার্পেথিয়ান , ট্রানসিলভেনিয়ান আল্পস্ ও বলকান পর্বত নামে ডানিয়ুব মালভূমির মধ্য দিয়া অতিক্রম করেছে । তৃতীয় সারির পর্বত কেহেমিয়া মালভূমিকে বেষ্টন করে আছে । আল্পস্ পর্বতের উত্তর – পশ্চিমে এর সমান্তরালভাবে জুরা , ভোজ ও জার্মানীর ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বত পবত অবস্থিত ।
আল্পস্ পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতম শৃঙ্গের নাম মাউণ্ড ব্লেংক ( ৪৮১৫ মিটার ) । দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলে অনেক গিরিপথ আছে । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিম্পলন , সেন্ট গোথার্ড , চালবুর্জ , ব্রীনার বার্কাসনি , মোরিভিয়াদ্বার ও বার্গাণ্ডিয়াদ্বার ।
আল্পস্ ও এর শাখা – প্রশাখার মধ্যে অনেক সমভূমি ও মালভূমি আছে । এই সমস্ত মালভূমির মধ্যে স্পেনের সেসেটা মালভূমি , মধ্য ফ্রান্স মালভূমি , ভোজ পর্বত ও ব্ল্যাক ফরেস্ট মালভূমি , বোহেমিয়ান মালভূমি উল্লেখযোগ্য । ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমভূমিগুলির মধ্যে ইউরোপের উত্তর অংশের পো – নদীর অববাহিকা বা লোম্বার্ডি সমভূমি এবং কার্পেথিয়ান পর্বতশ্রেণি দ্বারা পরিবেষ্টিত বিখ্যাত হাংগেরিয়ান সমভূমি উল্লেখযোগ্য । আল্পস্ পার্বত্য অঞ্চলে খনিজ সম্পদ অতি কম ।
( ৪ ) নদী অববাহিকা ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল :- ইউরোপের দক্ষিণের ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল হতে নির্গত নদী অববাহিকায় অনেক সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে । ইটালীর পো – নদীর অববাহিকায় বিখ্যাত লোম্বার্ডি সমভূমি আছে । ইহা অতি উর্বর ও ঘন জনবসতিপূর্ণ । ডানিয়ুব নদীর অববাহিকায় ডানিয়ুব বা হাংগেরিয়ান সমভূমি আছে । ডানিয়ুব নদীর নিম্নাংশে ওয়ালেসীয় সমভূমি রুমানিয়ার অধিকাংশ এবং বুলগেরিয়ার উত্তর অংশ জুড়ে আছে । ইউরোপের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক সমভূমি আছে । এই সমভূমিসমূহ অর্থনৈতিকভাবে অতি উন্নত ও অতি ঘন জনবসতিপূর্ণ ।
প্রশ্ন ২২। ইউরোপের জলবায়ুর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ ইউরোপের জলবায়ুকে প্রধানত ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়—
( ১ ) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল ।
( ২ ) তৃণভূমি অঞ্চল ।
( ৩ ) শীতল মহাদেশীয় অঞ্চল ।
( ৪ ) তুন্দ্রা অঞ্চল ।
( ৫ ) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল । এবং
( ৬ ) পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু ।
ইউরোপ প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত । এর উত্তরে আইস্ল্যাণ্ড ও স্কাণ্ডিনেভিয়ার উত্তর অংশ মেরুদেশীয় জলবায়ুর অন্তর্গত । বৎসরের প্রায় নয় মাসই বরফে আবৃত থাকে । এই অংশের জলবায়ুকে তুন্দ্রা জলবায়ু বলা হয় । ইউরোপের উত্তর – পশ্চিম অংশের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ , ফ্রান্স , নরওয়ে এবং সুইডেনের দক্ষিণ অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে । গরম উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে শীতকালে এই অংশে তাপমাত্রা অধিক কমে না এবং সারা বৎসরই অল্প – স্বল্প বৃষ্টি হয়ে থাকে । ফলে এই অঞ্চলে পর্ণমোচী বৃক্ষের আধিক্য দেখা যায় । মহাদেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের বুলগেরিয়া ও রুমানিয়াকে ধরে বলকান উপদ্বীপ ও রাশিয়ার মধ্য অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা মধ্যম অর্থাৎ ২০° সেন্টিগ্রেড এবং শীতকালে ০° সেন্টিগ্রেডেরও নীচে নেমে যায় ।
এই অঞ্চলের জলবায়ুকে ‘ মহাদেশীয় তৃণভূমি জলবায়ু বলা হয় । এই অঞ্চলে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি আছে । নরওয়ে , সুইডেন ও ফিনল্যাণ্ডের মধ্যভাগে এবং রাশিয়ার উত্তরাংশে শীতল মহাদেশীয় জলবায়ু বিরাজ করে । এই অঞ্চলে সরলবর্গীয় বৃক্ষের প্রাচুর্য দেখা যায় । দক্ষিণ ইউরোপের ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২৬° -২৭° সেন্টিগ্রেড এবং শীতকালে ১ ° সেণ্টিগ্রেড হতে ৫ ° সেণ্টিগ্রেড হয় । এই অঞ্চলে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় এবং গ্রীষ্মকাল বৃষ্টিহীন থাকে । ছোট ছোট গাছ ও তৃণভূমি দেখা যায়।এই অঞ্চলে আঙুর , আপেল , কমলালেবু , লেবু , মোসাম্বি , জলপাই , নাসপাতি ও ডুমুর প্রভৃতি ফলের গাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । এই অঞ্চলের জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয় ।
উত্তর আমেরিকা :
প্রশ্ন ১। উত্তর আমেরিকার আয়তন কত ?
উত্তরঃ প্রায় ২৪.৩ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ২। উত্তর আমেরিকা চারদিকের সীমা লেখ ।
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকার উত্তরে উত্তর মহাসাগর ; দক্ষিণে দক্ষিণ আমেরিকা , মেক্সিকো উপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর ; পশ্চিমে বেরিংসাগর , বেরিং প্রণালী ও প্রশান্ত মহাসাগর ; পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর ।
প্রশ্ন ৩। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বৃহত্তম মহাদেশ কোন্টি ?
উত্তরঃ কানাডা ।
প্রশ্ন ৪। ২০১৪ সনের তথ্য অনুযায়ী উত্তর আমেরিকার জনসংখ্যা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ৫৬৫ নিযুত ।
প্রশ্ন ৫। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উচ্চতম স্থান এবং নিম্নতম স্থান দুটির নাম লেখ ।
উত্তরঃ উচ্চতম স্থানের নাম মেকিলে শৃংগ ( ৬১৯৪ মিটার ) এবং নিম্নতম স্থান ডেভ্যালী ( সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৮৬ মিটার নীচে ) ।
প্রশ্ন ৬। প্রাকৃতিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় এবং কি কি ? আলোচনা কর ।
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকা মহাদেশকে প্রাকৃতিকভাবে চারভাগে ভাগ করা যায় ।
( ১ ) রকি পার্বত্য অঞ্চল ।
( ২ ) বিশাল উচ্চ সমভূমি অঞ্চল ।
( ৩ ) আপালেশিয়ান উচ্চভূমি অঞ্চল । এবং
( ৪ ) উপকূলীয় নিম্ন সমতলভূমি অঞ্চল ।
( ১ ) রকি পার্বত্য অঞ্চল :- উত্তর আমেরিকার পশ্চিম অংশটি উচ্চ পর্বত , পার্বত্য মালভূমি এবং পার্বত্য সংকীর্ণ উপত্যকা দ্বারা গঠিত । এই পার্বত্য অঞ্চল মহাদেশের সমগ্র পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে আছে । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬,৮৮৩ কিলোমিটার । এর গড় উচ্চতা প্রায় ৯০০ মিটার । এই পার্বত্য অঞ্চলে তিনসারি প্রধান পর্বত আছে । এগুলি প্রায় সমান্তরালভাবে আছে । পূর্বদিকের পর্বত শ্রেণির নাম রকি পর্বত । এটি দক্ষিণ মেক্সিকোতে সিয়েরা মাদ্রে , মধ্যভাগে রকি এবং উত্তরে এণ্ডিকট পর্বত নামে পরিচিত ।
মধ্যভাগের শ্রেণিটিকে উত্তরে আলাস্কারেঞ্জ , মধ্যভাগে কাসকেড্ ও সেলকার্ক , দক্ষিণে সিয়েরা নেভেড়া এবং পশ্চিমে সিয়েরা মাদ্রে নামে পরিচিত । আলাস্কায় এর নাম সেন্ট্ ইলিয়াশ । আলাস্কারেঞ্জের মেক্কিনলে শৃঙ্গ আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এই সমগ্র পর্বতমালাকে একত্রিতভাবে কার্ডিলেরা বলে । এই পার্বত্য অঞ্চলে কলম্বিয়া মালভূমি , স্নেক – মালভূমি , কলোরাডো মালভূমি এবং মেক্সিকো মালভূমি উল্লেখযোগ্য ।
( ক ) বিশাল উচ্চ সমভূমি অঞ্চল :- এই উচ্চভূমিতে মালভূমি এবং কয়েকটি আগ্নেয়গিরি আছে । ইহা লাভা দ্বারা গঠিত , কারণ এই অঞ্চলে মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত হয় । এই স্থানে নিকারাগুয়া হ্রদ অবস্থিত । পশ্চিমের রকি পর্বতমালা ও পূর্বের আপালেশিয়ান পর্বতমালার মধ্যভাগে এই সমভূমি অঞ্চল অবস্থিত । এই সমভূমির উত্তরাংশকে কানাডীয়ান ঢাল বলে । হাজার হাজার বৎসর ধরে ক্ষয়চক্রের ফলে এটি একটি সমভূমিতে পরিণত হয়েছে।
রকি পর্বতের পূর্ব পাদদেশীয় অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত উচ্চ হওয়ার জন্য একে উচ্চ সমভূমি বলে। কানাডীয়ান অঞ্চল ছাড়া সমভূমির প্রায় অংশই মিসিসিপি মিসৌরী নদীর উপত্যকা এবং এই অঞ্চলটি উর্বর ।
( ৩ ) আপালেশিয়ান উচ্চভূমি অঞ্চল :- পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল অপেক্ষা এর উচ্চতা কম।সমগ্র অঞ্চলটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত—
( ১ ) গ্রীণল্যাণ্ড সমভূমি ।
( ২ ) লাব্রাডার সমভূমি । এবং
( ৩ ) আপালেশিয়ান পর্বতমালা ।
গ্রীণল্যাণ্ড দ্বীপটি প্রকৃতপক্ষে একটি মালভূমি । বারমাসই ইহা বরফাবৃত হয়ে থাকে । প্রাচীন শিলাদ্বারা গঠিত লাব্রাডার উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মালভূমিতে পরিণত হয়েছে । এই মালভূমিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হ্রদ এবং খরস্রোতা নদী আছে । আপালেশিয়ান পর্বতমালার পশ্চিমদিকের পর্বতশ্রেণিকে এলঘেনি পর্বতশ্রেণি নামে অভিহিত করা হয়েছে । পূর্বের দিকে ব্লু- রীজ পর্বত এবং পিয়েডমট্ মালভূমি অরস্থিত । এই মালভূমি হতে অনেক ছোট ছোট নদী পূর্বের নিম্ন উপকূলভাগে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে অনেক জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে ।
( ৪ ) উপকূলীয় নিম্ন সমতলভূমি অঞ্চল :- আপালেশিয়ান পর্বতের পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে এক বিস্তীর্ণ সমভূমি আছে । কিন্তু পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অতি সংকীর্ণ । হাডসন উপসাগরের চারিদিকে সমভূমি আছে । এই অঞ্চলটি বরফে আবৃত থাকে । মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী সমভূমিকে উপসাগরীয় সমভূমি বলা হয় । এই সমভূমি প্রশস্ত ও উর্বর ।
প্রশ্ন ৭। উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ঘন জনবসতি গড়ে ওঠার কারণ কি ?
উত্তরঃ ক্যালিফোর্নিয়াতে ঘন জনবসতি গড়ে উঠার কারণ হল এখানে ফলমূল উৎপাদন , পেট্রোলিয়াম , সোনা ইত্যাদি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় । এ ছাড়া সুষম ও স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া , আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা আছে ।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ :
প্রশ্ন ১। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আয়তন কত ?
উত্তরঃ প্রায় ১৮ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ২। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ কোন্টি ?
উত্তরঃ ব্রাজিল ।
প্রশ্ন ৩। ২০১৪ সনে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আনুমানিক জনসংখ্যা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ৪০৭ নিযুত ।
প্রশ্ন ৪। পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বত শ্রেণিটির নাম কি ?
উত্তরঃ আন্দিজ ( প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার ) ।
প্রশ্ন ৫। আন্দিজ পর্বতমালার উচ্চতম শৃঙ্গ কোন্টি ?
উত্তরঃ একানকাগুয়া ( ৭০২০ মিটার । )
প্রশ্ন ৬। দক্ষিণ আমেরিকায় কি কি ভাষা ব্যবহৃত হয় ?
উত্তরঃ ব্রাজিলে পর্তুগীজ ভাষা এবং বাকী অংশে স্পেনীয় ভাষা ব্যবহৃত হয় ।
প্রশ্ন ৭। দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃতি কত ?
উত্তরঃ উত্তরে ১২.৫° উত্তর অক্ষাংশ হতে দক্ষিণে ৫৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৩৫° পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ হতে ৮২° দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ।
প্রশ্ন ৮। আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে এইরূপ তিনটি নদীর নাম কর ।
উত্তরঃ ওরিনকো , আমাজন ও রায়ো – ডি – লাপ্লাটা ৷
প্রশ্ন ৯। দক্ষিণ আমেরিকায় কি কি কৃষিজাত সামগ্রী পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ রবার , কফি , কোকো , কার্পাস , আখ , তামাক , ধান , ভূট্টা এবং গম ।
প্রশ্ন ১০। দক্ষিণ আমেরিকায় কি কি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ সোনা , রূপা , টিন , ক্রোমাইট , গ্রাফাইট , কয়লা এবং পেট্রোলিয়াম ।
প্রশ্ন ১১। দক্ষিণ আমেরিকার কয়টি স্বাধীন দেশ আছে ?
উত্তরঃ ১২ টি ।
প্রশ্ন ১২। দক্ষিণ আমেরিকা কি কি তাপমণ্ডলে পড়েছে লিখ ।
উত্তরঃ উত্তরভাগ নিরক্ষীয় অঞ্চলে এবং দক্ষিণভাগ উপক্রান্তীয় অঞ্চলে পড়েছে ।
প্রশ্ন ১৩। আফ্রিকার মহাদেশের ভূ – প্রকৃতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ উপকূলের সংকীর্ণ সমভূমি , নদীর মোহনা , ব – দ্বীপ এবং উত্তর পশ্চিমের আটলাস পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া কয়েকটি মালভূমির সমষ্টি মাত্র । মহাদেশটি ৭১ শতাংশ স্থান মালভূমি , ২৫ শতাংশ সমভূমি এবং প্রায় ৪ শতাংশ স্থান পাহাড় – পর্বত জুড়ে আছে । আফ্রিকার উত্তর অঞ্চলে বিস্তীর্ণ সাহারা মরুভূমি অবস্থিত । উত্তরের ভূমধ্য সাগরের উপকূলভূমি এবং আটলাস পর্বতমালা ছাড়া কর্কট ক্রান্তি রেখার দুই দিকে স্থানে স্থানে বালিয়াড়ি বা বালুর স্তূপ এবং শিলাময় ভূমি দ্বারা আবৃত । প্লায়া সমূহকে ( মরুভূমিতে অবস্থিত হ্রদ ) কেন্দ্র করে মাঝে মাঝে মরুদ্যান বা ওয়েসিস গড়ে উঠেছে । সাহারা পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি । আফ্রিকার দক্ষিণভাগে কালাহারি মরুভূমি অবস্থিত । এই মরুভূমিটির নিকটবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে নামিবিয়া , বৎসোয়ানা , দক্ষিণ আফ্রিকা দেশসমূহের গণতন্ত্র উল্লেখযোগ্য । সাহারা ও কালাহারির মধ্যের অংশটি নিম্ন হওয়ায় এই অঞ্চলটি কঙ্গো এবং এর উপনদী সমূহ বিধৌত করেছে ।
সুদান বন্দর হতে কঙ্গো নদীর মোহনায় অবস্থিত বোমা বন্দর পর্যন্ত একটি কাল্পনিক সরলরেখা দ্বারা ভাগ করলে সমগ্র আফ্রিকাকে উচ্চতার ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করা যায় । সাহারা মরুভূমির উচ্চতা কম কিন্তু টিবোষ্টি উচ্চভূমি এবং আহাগার মালভূমির উচ্চতা একটু বেশি । দক্ষিণ – পূর্বের মালভূমি এবং তৃণভূমি অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) প্রাথমিক শিলার দ্বারা গঠিত ইথিওপিয়া উচ্চভূমি ।
( খ ) মধ্যভাগের মালভূমি অঞ্চল । এবং
( গ ) দক্ষিণ আফ্রিকার মালভূমি অঞ্চল ।
আফ্রিকার পূর্বভাগে ইথিওপিয়া হতে রুফ হ্রদ ,ন্যাসা , টাংগানিকা , এডওয়ার্ড ইত্যাদি হয়ে এলবার্ট হ্রদ পর্যন্ত একটি গ্রস্ত উপত্যকা শ্রেণি আছে । গ্রস্ত উপত্যকার পূর্বদিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাউণ্ট কেনিয়া এবং কিলিমাঞ্জোরো অবস্থিত । এডওয়ার্ড হ্রদের দক্ষিণে জাগ্রত আগ্নেয়গিরি কিটাংগা অবস্থিত । এলবার্ট এবং এডওয়ার্ড হ্রদের মধ্যে রুয়েনজারি পর্বতমালা আছে ।
প্রশ্ন ১৪। দক্ষিণ আমেরিকার জলবায়ুর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ বিষুবরেখা দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশের মধ্য দিয়ে গেছে । ফলে উত্তর অংশের সম্পূর্ণ অংশ এবং দক্ষিণে ২৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত ক্রান্তীয় উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে । আন্দিজ পর্বতমালা এবং ব্রাজিলের উচ্চ মালভূমিতে উষ্ণতা কিছুটা কম । চিলির উপকূলে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় । এই অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু দেখা যায় । আটাকামা এবং পাটাগোনিয়া মরুভূমিতে শুষ্ক মরু জলবায়ু বিদ্যমান । দক্ষিণের সংকীর্ণ অংশে শীতপ্রধান জলবায়ু ।
প্রশ্ন ১৫। আন্দিজ পর্বতশ্রেণির বিস্তৃতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ পশ্চিম মহাসাগরের উপকূলের প্রায় সমান্তরালভাবে উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর হতে দক্ষিণে হর্ণ অন্তরীপ পর্যন্ত এই উচ্চ ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি বিস্তারিত হয়ে আছে । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার । একানগুয়া এর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ( ৭০০০ মিটার ) । এই পর্বতশ্রেণির মাঝে মাঝে অনেক মালভূমি ও নদী উপত্যকা আছে । আন্দিজ পর্বতমালা উপকূল হতে খাড়াভাবে উপরে উঠেছে ।
প্রশ্ন ১৬। দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য সমভূমিতে কি কি প্রধান নদী অববাহিকা আছে ?
উত্তরঃ ( ১ ) ওরিনকো নদী অববাহিকা ।
( ২ ) আমাজন নদী অববাহিকা । এবং
( ৩ ) প্লাট নদী অববাহিকা ।
প্রশ্ন ১৭। প্রধান অববাহিকাতে কি কি প্রধান তৃণভূমি আছে ?
উত্তরঃ ওরিনকো অববাহিকায় লানোজ তৃণভূমি , আমাজন অববাহিকায় সেল্ভা তৃণভূমি এবং প্লাট অববাহিকায় পাম্পাস তৃণভূমি আছে ।
প্রশ্ন ১৮। সেল্ভা কি ?
উত্তরঃ আমাজন অববাহিকায় নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করায় এই অঞ্চলে বড় বড় বৃক্ষের অরণ্য আছে । এই অরণ্যময় অঞ্চলকে সেল্ভা বলে ।
প্রশ্ন ১৯। দক্ষিণ আমেরিকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত ?
উত্তরঃ উত্তর হতে দক্ষিণ পর্যন্ত ৭৫২০ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত ৫,১২০ কি.মি. প্রস্থ ।
প্রশ্ন ২০। পৃথিবীর বৃহত্তম নদীর নাম কি এবং কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ পৃথিবীর বৃহত্তম নদীর নাম আমাজন । ইহা দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে অবস্থিত ।
প্রশ্ন ২১। দক্ষিণ আমেরিকার একটি হ্রদের নাম লিখ এবং এটি কোন্ দেশে অবস্থিত ?
উত্তরঃ হ্রদটির নাম টিটিকাকা । এটি দক্ষিণ আমেরিকার পেরু দেশে অবস্থিত ।
আফ্রিকা মহাদেশ :
প্রশ্ন ১। দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের নাম কি ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশ ।
প্রশ্ন ২। আফ্রিকা মহাদেশের আয়তন কত ?
উত্তরঃ প্রায় ৩০ নিযুত বর্গ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ৩। আফ্রিকা মহাদেশকে কোন্ রেখাটি দুভাগে বিভক্ত করেছে ?
উত্তরঃ বিষুবরেখা ।
প্রশ্ন ৪। আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ কোন্টি ?
উত্তরঃ সুদান ।
প্রশ্ন ৫। আফ্রিকা মহাদেশের জনসংখ্যা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ১১ কোটি ।
প্রশ্ন ৬। আফ্রিকা মহাদেশের উচ্চতম স্থানের নাম কি ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব প্রান্তে থাকা কিলিমান্জারো শৃংগ ( ৫,৮৯৫ মিটার ) ।
প্রশ্ন ৭। পৃথিবীর বৃহত্তম নদীর নাম কি ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের নীল নদ ( ৬৬৫৬ কি.মি. )
প্রশ্ন ৮। পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমির নাম কি ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমি ।
প্রশ্ন ৯। আফ্রিকা মহাদেশের অবস্থান নির্ণয় কর :
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশ এশিয়ার এবং ইউরোপ তথা ভূমধ্য সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত ।
প্রশ্ন ১০। আফ্রিকা মহাদেশের সীমা নির্দেশ কর ।
উত্তরঃ আফ্রিকা উত্তর – পূর্ব লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল , উত্তরে ভূমধ্য সাগর ও জিব্রাল্টার প্রণালী , পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর , দক্ষিণে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর ও দক্ষিণ মহাসাগর এবং পূর্বে ভারত মহাসাগর ।
প্রশ্ন ১১। আফ্রিকা মহাদেশের উপসাগরগুলির নাম লিখ ।
উত্তরঃ ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ছিদ্রা ও গাবেজ , পশ্চিম উপকূলে গিনি উপসাগর এবং পূর্বে এডেন উপসাগর ।
প্রশ্ন ১২। ইথিওপিয়া মালভূমি হতে ন্যাসা হ্রদ পর্যন্ত হ্রদগুলির নাম লিখ ।
উত্তরঃ রুডলফ , ভিক্টোরিয়া , এলবার্ট , এডওয়ার্ড , কিভু , টাঙ্গানিকা এবং ন্যাসা ।
প্রশ্ন ১৩। আফ্রিকার একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম লিখ ।
উত্তরঃ রুবেনজারি পর্বতশ্রেণিতে কিটাঙ্গা নামের আগ্নেয়গিরি ।
প্রশ্ন ১৪। আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমিটির নাম কি ?
উত্তরঃ সাহারা মরুভূমি ।
প্রশ্ন ১৫। নীলনদের উপরে থাকা বাঁধটির নাম কি ?
উত্তরঃ আসোয়ান ।
প্রশ্ন ১৬। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে পড়েছে এইরূপ তিনটি নদীর নাম কর ।
উত্তরঃ নাইজার , ভ’ল্টা এবং সেনিগাল ।
প্রশ্ন ১৭। আফ্রিকা মহাদেশের জীবজন্তু ও পক্ষীর নাম লিখ ।
উত্তরঃ হাতী , দুইটি খড়্গাযুক্ত গণ্ডার , সিংহ বাঘ , হরিণ , স্প্রিংবক , জিরাফ , জেব্রা , গরিলা , শিম্পাঞ্জী জলহস্তী এবং উটপাখী ।
প্রশ্ন ১৮। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ কোন্টি ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশ ।
প্রশ্ন ১৯। আফ্রিকার মধ্য দিয়ে কোন রেখাটি গেছে ?
উত্তরঃ বিষুবরেখা ।
প্রশ্ন ২০। আফ্রিকা মহাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০০ কি . মি . এবং প্রস্থ প্রায় ৭,৩৬০ কি.মি .।
প্রশ্ন ২১। আফ্রিকা মহাদেশের আয়তন কত ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের আয়তন ৩০,৪২০,০০০ বর্গ কি.মি .। ইহা আমাদের ভারতবর্ষের নয় গুণেরও বড় ।
প্রশ্ন ২২। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর নাম কি ?
উত্তরঃ আফ্রিকার নীলনদ ( ৬৬৫৬ কি.মি. ) ।
প্রশ্ন ২৩। নীলনদ কোন স্থান হতে উৎপত্তি হয়ে কোথায় শেষ হয়েছে ?
উত্তরঃ নীলনদের উপনদী ব্লু – নীল ভিক্টোরিয়া হ্রদ হতে উৎপন্ন হয়ে সুদানের রাজধানী খাতুলি গরের নিকটে হোয়াইট নীলের সাথে মিশে সুদান এবং ইজিপ্টের মরুভূমির মধ্য দিয়ে ভূমধ্য সাগরে পড়েছে ।
প্রশ্ন ২৪। আফ্রিকার কয়েকটি নদ – নদীর নাম লেখ ।
উত্তরঃ আফ্রিকার নদ – নদীগুলি হল— নীলনদ , জাম্বোসি , অরেঞ্জ , কঙ্গো , নাইজার , ভোল্টা ও সোনিগাল ।
প্রশ্ন ২৫। আফ্রিকার কয়েকটি বনজ সম্পদের নাম লেখ ।
উত্তরঃ মেহগনি , আবলুশ , ওক , রবার , কর্পূর ইত্যাদি মূল্যবান বনজসম্পদ ।
প্রশ্ন ২৬। দক্ষিণ আফ্রিকায় কি কি প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় ইউরেনিয়াম , সোনা , রূপা , হীরা , কয়লা এবং লৌহ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ২৭। আফ্রিকার কোন কোন স্থানে পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ আফ্রিকার নাইজিরিয়া , লিবিয়া ও আলজিরিয়াতে পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন ২৮। আফ্রিকা মহাদেশে কি কি ধরনের ফলমূল ও কৃষিজাত দ্রব্য পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ আখ , তামাক , কার্পাস , গম , ভূট্টা , কলা , চা , কফি , কোকো , আঙুর , জলপাই ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ২৯। আফ্রিকা মহাদেশের কি কি খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ ইউরেনিয়াম , সোনা , রূপা , হীরা , কয়লা , লৌহ আকর , তামা , সীসা , টিন , রেজিয়াম , পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ৩০। আফ্রিকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শহরের নাম লিখ ।
উত্তরঃ কাইরো , মোম্বাসা , দার – এস – সালাম , জারবান , কেপটাউন , লাগোস ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ৩১। আফ্রিকার স্থানীয় অধিবাসীদের কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কি কি ?
উত্তরঃ দুইভাগে ।
( ক ) ককেসীয় ( শ্বেতাঙ্গ ) । এবং
( খ ) নিগ্রো ( কৃষ্ণাঙ্গ ) ।
প্রশ্ন ৩২। কালাহারি মরুভূমিতে বসবাস করা দুইটি আদিম অধিবাসীদের নাম লিখ ।
উত্তরঃ বুশম্যান ও হটেনটট্ ।
প্রশ্ন ৩৩। মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ মিশর মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত । শুধু নীলনদের অববাহিকা ও এর ব – দ্বীপ অঞ্চলে কৃষিকাজ হয় । উপত্যকা অঞ্চল নদীর পলিমাটি দ্বারা গঠিত । এখানে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে । কৃষিকাজের জন্য নীলনদের জলের উপরই নির্ভর করতে হয় । নদীতে বাঁধ দিয়ে ও নদী হতে খাল কেটে কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে । বিখ্যাত আসোয়ান বাঁধ নীলনদের উপর তৈরি করা হয়েছে । নীলনদ হতে জলসেচ করে , মিশরে সারা বৎসরই কৃষিকাজ হয়ে থাকে । এসব কারণে মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় ।
প্রশ্ন ৩৪। আফ্রিকার প্রাকৃতিক গঠন সংক্ষেপে বর্ণনা কর ।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশ উপকূলীয় সংকীর্ণ সমভূমি , নদীর মোহনা , ব – দ্বীপ এবং উত্তর – পশ্চিমের আটলাস পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া কয়েকটি মালভূমির সমষ্টি মাত্র । মহাদেশটির ৭১ শতাংশ স্থান মালভূমি , ২৫ শতাংশ সমভূমি এবং প্রায় ৪ শতাংশ স্থান পাহাড় – পর্বত জুড়ে আছে । আফ্রিকার উত্তর অঞ্চলে বিস্তীর্ণ সাহারা মরুভূমি অবস্থিত । উত্তরের ভূমধ্য সাগরের উপকূলভূমি এবং আটলাস পর্বতমালা ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখার দুদিকে স্থানে স্থানে বালিয়াড়ি বা বালুর স্তূপ এবং শিলাময় ভূমি দ্বারা আবৃত । প্লায়া ( মরুভূমিতে অবস্থিত হ্রদ ) সমূহকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝে মরুদ্যান বা ওয়েসিস গড়ে উঠেছে । পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা ও আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগে কালাহারি মরুভূমি অবস্থিত ।
এই মরুভূমিটির নিকটবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে নামিবিয়া , বৎসোয়ানা , দক্ষিণ আফ্রিকার দেশসমূহের গণতন্ত্র উল্লেখযোগ্য । সাহারা ও কালাহারির মধ্যের অংশটি নিচু হওয়ায় এই অঞ্চলটি কঙ্গো এবং এর উপনদীসমূহ বিধৌত করেছে । সুদান বন্দর থেকে কঙ্গো নদীর মোহনায় অবস্থিত বোমা বন্দর পর্যন্ত একটি কাল্পনিক সরলরেখা দ্বারা ভাগ করলে সমগ্র আফ্রিকাকে উচ্চতার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা যায় । সাহারা মরুভূমির উচ্চতা কম কিন্তু টিবেষ্টি উচ্চভূমি এবং আহাগার মালভূমির উচ্চতা একটু বেশি । দক্ষিণ – পূর্বের মালভূমি এবং তৃণভূমি অঞ্চলকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—
( ক ) প্রাথমিক শিলার দ্বারা গঠিত ইথিওপিয়া উচ্চভূমি ।
( খ ) মধ্যভাগের মালভূমি অঞ্চল । এবং
( গ ) দক্ষিণ আফ্রিকার মালভূমি অঞ্চল ।
আফ্রিকার পূর্বভাগে ইথিওপিয়া থেকে রুড্লফ , ন্যাসা , টাংগানিকা , এডওয়ার্ড ইত্যাদি হ্রদ হয়ে এলবার্ট হ্রদ পর্যন্ত একটি গ্রস্ত উপত্যকাশ্রেণি আছে । গ্রস্ত উপত্যকার পূর্বদিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাউণ্ট কেনিয়া এবং কিলিমাঞ্জোরো অবস্থিত । এডওয়ার্ড হ্রদের দক্ষিণে জাগ্রত আগ্নেয়গিরি কিটাংগা অবস্থিত । এলবার্ট ও এডওয়ার্ড হ্রদের মধ্যে রুয়েনজারি পর্বতমালা আছে ।
প্রশ্ন ৩৫। আফ্রিকার জলবায়ু এবং তার বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা কর ।
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের মধ্য দিয়া বিষুবরেখা অতিক্রম করেছে । কাজেই এই মহাদেশের উত্তরাংশে যখন গ্রীষ্মকাল তখন দক্ষিণাংশে শীতকাল । আবার উত্তরাংশে যখন শীতকাল তখন দক্ষিণাংশে গ্রীষ্মকাল । নিরক্ষীয় অঞ্চল হওয়ায় এই অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র হয় । প্রায় অংশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে পড়ায় এই স্থানের উষ্ণতা খুব বেশি । কিন্তু উচ্চ মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু মৃদু ভাবাপন্ন । দক্ষিণ – পূর্বাঞ্চলের আবহাওয়া মহাসাগরীয় বায়ুর প্রভাবে মৃদু ভাবাপন্ন । আফ্রিকা মহাদেশকে জলবায়ু অঞ্চল হিসাবে ছয় ভাগে ভাগ করা যায় ।
( ক ) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল :- নিরক্ষ রেখার দুই পার্শ্বে সর্বদাই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু । ইহা সাধারণত নিরক্ষীয় অঞ্চল , কঙ্গো অববাহিকা এবং গিনি উপসাগরে দেখা যায় । এই অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রার সাথে সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।
( খ ) সুদানীয় জলবায়ু :- নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তরে ও দক্ষিণে সুদানীয় জলবায়ু দেখা যায়।গ্রীষ্মকালে কিছু পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলেও শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে । বৃষ্টির ফলে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে । সুদানের পূর্ব ভাগে ভারতের মৌসুমী বায়ুর মত আবহাওয়া দেখা যায় ।
( গ ) মরু অঞ্চলীয় জলবায়ু :- এই প্রকারের জলবায়ু উত্তরে সাহারা এবং দক্ষিণে কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায় । এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক হয় । শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য গ্রীষ্ম ও শীতের পার্থক্য অত্যন্ত বেশি ।
( ঘ ) উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু :- দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে এই প্রকারের জলবায়ু দেখা যায় । ভারত মহাসাগর হতে আসা বাণিজ্য বায়ুর প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় ।
( ঙ ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু :- আফ্রিকার উত্তর এবং উত্তর – পশ্চিম উপকূলে এই জলবায়ু দেখা যায় । এই আবহাওয়ার প্রভাবে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা মৃদুভাবাপন্ন । শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় । এই ধরনের জলবায়ু দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে দেখা যায় ৷
( চ ) মধ্য অক্ষাংশীয় তৃণাঞ্চলীয় জলবায়ু :- দক্ষিণ আফ্রিকার মালভূমি অঞ্চলে এই প্রকারের জলবায়ু দেখা যায় । এই অঞ্চলের তাপমাত্রা নাতিশীতোষ্ণ । এই অঞ্চলটি তৃণাচ্ছাদিত । এই অঞ্চলটির স্থানীয় নাম ভেল্ড ।
ওশেনিয়া মহাদেশ :
প্রশ্ন ১। ওশেনিয়া মহাদেশ কিভাবে গঠিত হয়েছে ?
উত্তরঃ ওশেনিয়া মহাদেশ অষ্ট্রেলিয়া মহাদ্বীপকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ – পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত নিউজিল্যাণ্ড , তাসমানিয়া , নিউগিনি ইত্যাদি অনেক ছোট – বড় দ্বীপসমূহকে নিয়ে গঠিত ।
প্রশ্ন ২। ওশেনিয়া মহাদেশটির অবস্থান লেখ ।
উত্তরঃ ওশেনিয়া মহাদেশটি এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে সম্পূর্ণভাবে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত ।
প্রশ্ন ৩। ওশেনিয়া আয়তন কত ?
উত্তরঃ প্রায় ৮ নিযুত বর্গকিলোমিটার ।
প্রশ্ন ৪। ওশেনিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ কোন্টি ?
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়া ।
প্রশ্ন ৫। ওশেনিয়া মহাদেশে কতটি দেশ আছে ?
উত্তরঃ ১৪ টি ।
প্রশ্ন ৬। ওশেনিয়া মহাদেশের মোট জনসংখ্যা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ৩৮ নিযুত ।
প্রশ্ন ৭। ওশেনিয়া আবিষ্কারকারী সমুদ্রচারী প্রধানত কে কে ?
উত্তরঃ ক্যাপ্টেন জেমস্ কুক্ , বিসমার্ক , সলোমন , স্টুয়ার্ট , আমুণ্ড সেন , চার্লস উইলকিস , রবার্ট ফ্যালকন স্কট ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ৮। গ্রেট বেরিয়ার রিফ কী ?
উত্তরঃ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর – পূর্ব উপকূলের সমান্তরালভাবে অগভীর সাগরে সারিবদ্ধ প্রবাল প্রাচীন আছে । একে ‘ গ্রেট বেরিয়ার রীফ ’ বা বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর বলে । ইহা পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর । এই দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার ।
প্রশ্ন ৯। অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত মেক্ডোনাল্ড কী ?
উত্তরঃ মেক্ডোনাল্ড একটি পর্বতশ্রেণি । ইহা পূর্বদিকে অবস্থিত ।
প্রশ্ন ১০। অষ্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে পতিত হওয়া দুইটি নদীর নাম কর ।
উত্তরঃ বেলিয়াণ্ডো ও ফিটজরয় ।
প্রশ্ন ১১। অষ্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ নদীর নাম লিখ ।
উত্তরঃ ডার্লিং ও মারে ।
প্রশ্ন ১২। অষ্ট্রেলিয়ার একটি মরুহ্রদের নাম লিখ ।
উত্তরঃ আয়ার হ্রদ ।
প্রশ্ন ১৩। আয়ার হ্রদের বৈশিষ্ট্য কি ?
উত্তরঃ এই হ্রদটি সাধারণত শুষ্ক থাকে । বৃষ্টি হলে বারবার্টন ও কুপার্স ক্রিক নামের দুইটি নদী এখানে পড়ে জলপুষ্ট করে ।
প্রশ্ন ১৪। অষ্ট্রেলিয়ার কৃষিজ সম্পদ কি কি ?
উত্তরঃ গম , আখ , ভূট্টা , ধান , আলু এবং ফলমূল ও শাক – সব্জি ।
প্রশ্ন ১৫। অষ্ট্রেলিয়ার খনিজ সম্পদের বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়াতে কয়লা , লৌহ আকর , বক্সাইট , সোনা , রূপা , সীসা , নিকেল , পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন ১৬। অষ্ট্রেলিয়ার কয়েকটি শিল্পোদ্যোগের নাম লিখ ।
উত্তরঃ ইস্পাত শিল্প , তৈল শোধনাগার , পশম বয়ন , ইঞ্জিনিয়ারিং , জাহাজ নির্মাণ , কার্পাস বস্ত্রশিল্প ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ১৭। ২০০৫ সালের জনগণনা মতে অষ্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা কত ?
উত্তরঃ প্রায় ২০,০৯০,৪৩৭ জন ।
প্রশ্ন ১৮। অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানীর নাম কি ?
উত্তরঃ ক্যানবেরা ।
প্রশ্ন ১৯। অষ্ট্রেলিয়ার কয়েকটি নগর শহরের নাম লিখ ।
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়ার কয়েকটি নগর শহরের নাম হল রকহাম্পটন , ব্রিসবেন , সিডনি , বার্থাষ্ট, ক্যানবেরা , মেলবোর্ন , এডিলেইড , হোবার্ট , ডারউইন ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ২০। পপুয়া নিউগিনির অধিবাসীদের কি বলা হয় ?
উত্তরঃ মেলানেশীয় ।
প্রশ্ন ২১। অষ্ট্রেলিয়ার একটি পাখির নাম লেখ যা উড়তে পারে না ।
উত্তরঃ এমু ।
প্রশ্ন ২২। অষ্ট্রেলিয়ার কোন্ স্থানে সোনার খনি আছে ?
উত্তরঃ বার্থহার্ষ্টে ।
প্রশ্ন ২৩। কোন স্থানের অধিবাসীদের মাওরি বলা হয় ?
উত্তরঃ নর্থ আইল্যাণ্ড এবং সাউথল্যাণ্ডের অধিবাসীদের ।
প্রশ্ন ২৪। নিউজিল্যাণ্ডের কয়েকটি নগর শহরের নাম লিখ ।
উত্তরঃ অকল্যাণ্ড , হেমিল্টন , গিসবর্ন , নেপিয়ার , নিউ প্লাইমাউথ , ওয়েলিংটন , ক্রাইষ্টচার্চ, ডানেডিন ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ২৫। অষ্ট্রেলিয়াকে মহাদ্বীপ বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়াকে মহাদ্বীপ বলার কারণ হল এই দ্বীপটি পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ ।
প্রশ্ন ২৬। অষ্ট্রেলিয়ান আল্পস কাকে বলে ?
উত্তরঃ গ্রেট ডিভাইডিংরেঞ্জ ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণির দক্ষিণভাগকে অষ্ট্রেলিয়ান আল্পস বলে ।
প্রশ্ন ২৭। অষ্ট্রেলিয়ায় কখন শীতকাল হয় ?
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়াতে মে মাস হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত শীতকাল হয় ।
প্রশ্ন ২৮। অষ্ট্রেলিয়ার দুইটি বিশিষ্ট গাছের নাম লেখ ।
উত্তরঃ ইউকেলিপটাশ ও ব্লুগাম ।
প্রশ্ন ২৯। অষ্ট্রেলিয়ার কোন কোন স্থানে সোনা ও রূপা পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ অ্যালিসাস্প্রিং , কুলগার্ডি , কালগুলি ইত্যাদি স্থানে সোনা ও রূপা পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন ৩০। ওশেনিয়া মহাদেশের অষ্ট্রেলিয়া ব্যতীত অপর দুইটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপের নাম উল্লেখ কর ।
উত্তরঃ পপুয়া নিউগিনি ও নিউজিল্যাণ্ড ।
প্রশ্ন ৩১। পপুয়া নিউগিনির অধিবাসীদের কি বলা হয় ?
উত্তরঃ মেলানেশীয় অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণের ।
প্রশ্ন ৩২। নিউজিল্যাণ্ড কি জন্য বিখ্যাত ?
উত্তরঃ নউজিল্যা ভেড়া ও গো – পালনের জন্য বিখ্যাত ।
প্রশ্ন ৩৩। অষ্ট্রেলিয়ায় x – mas উৎসব কোন সময়ে প্রতিপালিত হয় ।
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়ায় x – mas উৎসব ডিসেম্বর মাসে প্রতিপালিত হয় । তখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল । কিন্তু নিরক্ষ রেখার দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ায় উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল তখন অষ্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকাল । তাই অষ্ট্রেলিয়ানগণ— x mas উৎসব গ্রীষ্মকালেই প্রতিপালন করে থাকেন ।
প্রশ্ন ৩৪। অষ্ট্রেলিয়ার নদ – নদীর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়ায় নদ – নদীর সংখ্যা খুব কম । এর পূর্ব – উপকূলের প্রধান নদী হল — বেলিয়াণ্ডো ও ফিউজরয় ও সোয়ান । অষ্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ নদী হল ডার্লিং ও মারে ।
প্রশ্ন ৩৫। অষ্ট্রেলিয়া প্রচুর উল রপ্তানি করতে পারার কারণ কি ?
উত্তরঃ অষ্ট্রেলিয়া ভেড়া ও গবাদি পশু পালনের জন্য বিখ্যাত । অষ্ট্রেলিয়ার মূল্য কৃষিজ দ্রব্য হল ভেড়া ও গবাদি পশুর খাওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট মানের বিশেষ ধরনের ঘাসের চাষ করা হয়।অষ্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশে বিশেষত যে সকল অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে ৪০°-৬০° সে.মি. এবং উষ্ণতা গ্রীষ্মকালে ২৫°-২৬° সেলসিয়াস , সেই সকল স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুষ্টিকর ঘাসের চাষ করা হয় । অষ্ট্রেলিয়াতে বর্তমানে প্রায় ২০০ নিযুত ভেড়া পালন করা হয় । সাধারণত গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিম ঢালে এবং আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসে ভেড়া পালন করা হয় । ভেড়ার লোম হতে প্রচুর পরিমাণে উল তৈয়ার হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করিয়া অর্থ উপার্জন হয় । উল রপ্তানির ক্ষেত্রে অষ্ট্রেলিয়ার স্থান পৃথিবীতে প্রথম ।
প্রশ্ন ৩৬। অষ্ট্রেলিয়ার জনবসতি দক্ষিণ – পূর্ব উপকূলে অধিক কেন ?
উত্তরঃ ১৭৮৮ সাল হতে ব্রিটিশগণ এবং ইউরোপের অন্যান্য স্থানের লোকেরা স্থায়ীভাবে অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাস আরম্ভ করেছিল । এরা প্রথমে কৃষিকাজ এবং পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ আরম্ভ করেছিল । এরা প্রথমে দক্ষিণ – পূর্ব এবং পূর্বের বৃষ্টিসিক্ত তৃণ অঞ্চলে বসবাস আরম্ভ করেছিল । পূর্ব উপকূলে বন্দর ও পোতাশ্রয় স্থাপিত হয়েছিল । ভেড়া পালন করার সুবিধা থাকায় অনেক লোক কুইন্সল্যাণ্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের মারে ডার্লিং অববাহিকাতে বসতি স্থাপন করেছিল । কৃষিজাত , খনিজাত এবং নির্মাণ কার্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠা শিল্পোদ্যোগ , প্রশাসনিক কাজকর্ম , যাতায়াত – পরিবহণের সুবিধা থাকায় অনেক নগর – শহর গড়ে উঠেছে ।
প্রশ্ন ৩৭। অষ্ট্রেলিয়ার কোন্ কোন্ অংশে ভূমধ্য সাগরীয় জলবায়ু বিরাজ করে ? সেই অঞ্চলের তিনটি নগরের নাম উল্লেখ কর ।
উত্তরঃ দক্ষিণ অষ্ট্রেলিয়ার উপকূলে এবং পশ্চিম অষ্ট্রেলিয়ার ভূমধ্য সাগরীয় জলবায়ু বিরাজ করে । ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলের তিনটি নগর হল — মেলবোর্ণ , এডিলেইড , পার্থ ।
Thank You for Visiting – Roy Library
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.