Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Notes in Bengali PDF Download. SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Suggestions in Bengali. SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Notes in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 9 Social Science Chapter 1 ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন
প্রথম খন্ড: ইতিহাস
পাঠ্য পুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
● অতি সংক্ষিপ্ত / সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারত এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথ আবিষ্কার করা প্রথম পর্তুগিজ কে ছিলেন ? তিনি কখন এবং ভারতের কোথায় প্রথম উপস্থিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ভারত এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথ আবিষ্কার করা প্রথম পর্তুগিজ ছিলেন নাবিক ভাস্কোডাগামা। তিনি ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২। জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণে সফল ইংরেজ নাবিক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণে সফল ইংরেজ নাবিক ছিলেন ফ্রান্সিস ড্রেক।
প্রশ্ন ৩। কোন ইংরেজ নাবিক ভারতে প্রথম এবং কখন এসেছিলেন ?
উত্তরঃ ইংরেজ নাবিক জেম মিলডেন হল ভারতে প্রথম। ১৫৯৯ সনে এসেছিলেন।
প্রশ্ন ৪। ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কখন, কোথায় গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ১৬০০ সালে, লণ্ডনে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে ঘাটি স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লিখ।
উত্তরঃ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে ঘাটি স্থাপনের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা বাণিজ্য করা। এছাড়া দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ভারতের শাসন ব্যবস্থা গ্ৰহন করা।
প্রশ্ন ৬। ভারতের কোথায়, কখন ইংরেজদের প্রথম বাণিজ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতের মসলিপট্টমে, ১৬১১ সালে ইংরেজদের প্রথম বাণিজ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ কি ?
উত্তরঃ ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। পরবর্তীকালে এটি সামরিক দুর্গে পরিণত হয়।
প্রশ্ন ৮। ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালকে কোন দুটি মূল ভাগে ভাগ করা যায় লিখ।
উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালকে যে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি হল।
(১) মোগল সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত।
(২) ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত।
প্রশ্ন ৯। ‘ভারত সরকার আইন’ কে, কখন, কী উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করেছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সংসদ, ১৮৫৮ সালের ২রা আগষ্ট ‘ভারত সরকার আইন প্রণয়ন করেছিল।
প্রশ্ন ১০। ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’ কখন, কী উদ্দেশ্যে প্রণয়ন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’ ১৮৬১ সালে, আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষিত ভারতবাসীকে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য ইংরেজদের উদ্যোগ কখন সম্পূর্ণ হয়েছিল ? পদক্ষেপগুলো সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে জল ও স্থলপথে ভারতে এসেছিল। কিন্তু মধ্যযুগে ইউরোপ থেকে ভারতে আসার পথগুলির কর্তৃত্ব আরবদের হাতে থাকায় ইউরোপীয় বণিকরা বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়েন। তারা তখন ইউরোপ থেকে ভারত ও প্রাচ্যদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সুগম জলপথ আবিস্কারে মনোনিবেশ করেন। এই চেষ্টার ফলেই ১৪৯৮ সালে ভাস্কো-ডা-গামা নামে এক পর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপ পার করে ভারতে আসার একটি নতুন জলপথ আবিস্কার করেন।
পর্তুগীজ বণিকরা এই আবিস্কারের পর অতি অল্প সময়ের ভিতরে ভারত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য নিজেদের হাতে আনার জন্য সচেষ্ট হন। তারা ১৫১০ সালে বিজাপুর রাজ্যের অন্তর্গত গোয়া দখল করেন এবং অনতিবিলম্বে গোয়াকে কেন্দ্র করে ভারতে একটি পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপন করেন। কিন্তু তাদের প্রাধান্য বেশিদিন স্থায়ী হয় নি।
হল্যাণ্ড, ইংল্যাণ্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের বণিকরাও পর্তুগীজদের সাফল্য দেখে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে প্রয়াসী হন। এই উদ্দেশ্যে তারা বাণিজ্য সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই একই উদ্দেশ্যে ইংরাজ বণিকরা ১৫৯৯ সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৬০০ সালে তৎকালীন ইংলণ্ডের রানী এলিজাবেথ এই কোম্পানীকে পনের বছরের জন্য প্রাচ্যের সকল দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করবার একচেটিয়া অধিকার দেন।
মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে প্রথমে সুরাট বন্দরে ইংরাজ বণিকরা বাণিজ্য- কুঠি স্থাপন করেন। ১৬১৫ সালে ইংলণ্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত হিসাবে স্যার টমাস রো জাহাঙ্গীরের দরবারে এসে তাঁর কাছ থেকে সুরটা ছাড়াও আগ্ৰা, আহমেদাবাদ প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য-কুঠি স্থাপন করার অনুমতি লাভ করেন।
ফ্রান্সিস ডে নামে কোম্পানীর এক বণিক ১৬৩৯ সালে চন্দ্রগিরি রাজার কাছ থেকে অধুনা চেন্নাই (মাদ্রাজ) শহর অঞ্চলে একটি বাণিজ্যকুঠি ও সেন্ট জর্জ দুর্গ তৈরি করেন। ক্রমে এই কোম্পানী বিহারের পাটনা ও বঙ্গদেশের হুগলীতে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। বিহার, উড়িষ্যা ও বঙ্গদেশের বাণিজ্য-কুঠিগুলি ১৬৫৮ সালে মাদ্রাজের শাসনাধীনে আনা হয়।
ইংলণ্ডের রাজা চার্লস ১৬৬১ সালে পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথারিনকে বিবাহ করে পর্তুগীজ অধীনস্থ বোম্বাই দ্বীপটি যৌতুক হিসাবে পান। ১৬৮৮ সালে কোম্পানী সুরটা থেকে তাদের কার্যালয় বোম্বাইয়ে স্থানান্তরিত করে। এর ফলে বোম্বাই ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর এক কর্মচারী জব চার্ণক ১৬৯০ সালে ভাগীরথী নদীর তীরে কালীঘাট, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনখানা গ্ৰামের জমিদারী লাভ করে কলিকাতা নগর প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ফোর্ট উইলিয়াম নামে একটি দুর্গ তৈরি করে তারা বাণিজ্য বিস্তার শুরু করেন। এইরূপে প্রায় একশ বছরের মধ্যে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী বোম্বাই, মাদ্রাজ ও কলিকাতায় তিনটি প্রধান বানিজ্যিকেন্দ্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
S.L. No. | সূচী-পত্ৰ |
প্রথম খণ্ড | ইতিহাস |
পাঠ -১ | ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন |
পাঠ -২ | ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ |
পাঠ -৩ | মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ |
পাঠ -৪ | মানের অসম আক্রমণ |
পাঠ -৫ | অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা |
দ্বিতীয় খণ্ড | ভূগোল |
পাঠ -১ | ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন |
পাঠ -২ | বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ |
পাঠ -৩ | ভারতবর্ষের ভূগোল |
পাঠ -৪ | অসমের ভূগোল |
তৃতীয় খণ্ড | ৰাজনীতি ও অৰ্থনীতি বিজ্ঞান |
পাঠ -১ | ভারতের রাজনৈতিক দল |
পাঠ -২ | নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ |
পাঠ -৩ | অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো |
পাঠ -৪ | প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ |
প্রশ্ন ২। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কীভাবে ভারতের তিনটি মূল স্থানে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছিল ? তাদের তিনটি মূল কৌশল সম্পর্কে লিখ।
উত্তরঃ ইংরাজ কোম্পানি গোলকুণ্ডা রাজ্যের সুলতানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মছলিপট্টমে ১৬১১ সালে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে।
১৬৩৬ সালে আরমা গ্ৰামে ইংরাজ কোম্পানি দ্বিতীয় বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। ১৬৩৯ সালে চন্দ্রগিরি রাজার সঙ্গে চুক্তি করে মাদ্রাজের কাছে আরমা গ্ৰামের বাণিজ্য কেন্দ্র তুলে নিয়ে কেন্দ্রটির নতুন নাম দেওয়া হয় ফোর্ট সেন্ট জর্জ। ১৬৬১ সালে ইংলণ্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস্ পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথারিনকে বিবাহ করে যৌতুক হিসাবে বোম্বাই নগর লাভ করে। রাজা চার্লস ১৬৬৮ সালে পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড ধনের বিনিময়ে বোম্বাই নগরটি ইংরাজ কোম্পানিকে হস্তান্তর করে।
১৬৯০ সালে জব চার্ণক নামে কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মচারি বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার নবাবি সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে একটি চুক্তি করে বছরে বারশ টাকার খাজনার বিনিময়ে কলিকাতা, সুতানুটি এবং গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্ৰামের জমিদারি স্বত্ব লাভ করে এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র শুরু করে। এই তিনটি স্থানের সমষ্টিই পরে কলিকাতা নগরের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে রাজা উইলিয়ামের সম্মানার্থে কলিকাতা বাণিজ্য কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় ফোর্ট উইলিয়াম।
প্রশ্ন ৩। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেবাদ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে তুলতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কোন ব্যক্তি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন ? তিনি কী কী কৌশলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন চারটি যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেবাদ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে তুলতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি রবার্ট ক্লাইভ ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার কূটনৈতিক কলা-কৌশল খুব অল্প সময়ের মধ্যে আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রথমত, ক্লাইভ নিজ কোম্পানীর স্বার্থে অন্যান্য বিদেশী ইউরোপীয়ান কোম্পানীকে ভারত থেকে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি যুদ্ধ অথবা মিত্রতার ছলে দেশীয় রাজাগণকে কোম্পানীর অনুগত করতে প্রচেষ্টা করেছিলেন। তৃতীয়ত,বাংলায় নবাব, হায়দ্রাবাদের নিজাম, অযোধ্যার নবাব, রাজপুতানার রাজা সকলকেই কোম্পানীর সঙ্গে মিত্রতা করে প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্তৃত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছিল। চতুর্থত, পলাশী যুদ্ধে (১৭৫৭ সন) বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজদ্দৌলাকে ছলে বলে কৌশলে পরাস্ত করে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেবাদ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে তুলেছিলেন।
প্রশ্ন ৪। সিপাহী বিদ্রোহের চারটি কারণ লিখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। বহু ঐতিহাসিকের মতে এই সিপাহী বিদ্রোহ হল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্ৰাম।
বিদ্রোহের কারণ : সিপাহী বিদ্রোহের পশ্চাতে বহুদিনের পুঞ্জীভূত কারণ নিহিত ছিল। লর্ড ডালহৌসীর রাজ্য অধিকার নীতি এবং কতকগুলি উপাধি ও বৃত্তি লোপ করার ফলে ভারতীয় রাজন্যবর্গ এবং জনসাধারণের মনে সৃষ্টি হয়েছিল দারুন আশঙ্কা ও উত্তেজনা। দিল্লীর বাহাদুর শাহকে দিল্লীর প্রাসাদ থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা এবং পদচ্যুত পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও-এর মৃত্যুর পর তাঁর দত্তক পুত্র নানা সাহেবকে পৈতৃক বৃত্তি থেকে বঞ্চনা প্রভৃতি কার্যাবলী ভারতের সর্বত্র অসন্তোষ এনে দেয়। এই সকল কারণে নানাসাহেব, ঝান্সীর রাণী, অযোধ্যার বেগম এবং অন্যান্য রাজ্যচুত্য ব্যক্তিগণ ইংরাজের পরম শক্রতে পরিণত হলেন সিপাহীরা অনেকে এই সকল দেশীয় রাজ্যের অধিবাসী থাকায় এই বিক্ষোভ তাদেরকে স্পর্শ করে।
ভারতের নানান অংশে বিদেশী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোর করে চাপান হয়েছিল। এর ফলে পূর্বতন অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়লেও নূতন ব্যবস্থা চালু হয় নি। এতে জনসাধারণের আর্থিক দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। বেন্টিঙ্কের আমলে নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত করায়বহুলোকনিঃস্ব হয়ে যায়। দেশীয় রাজ্যগুলি ইংরেজরা অধিকার করায়, তাদের কর্মচারিগণ বেকার হয়ে পড়ে। এতে ইংরেজের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ বেড়ে গিয়েছিল।
সতীদাহ নিবারণ, হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ বিধান প্রভৃতি সামাজিক সংস্কার এবং ইংরেজী শিক্ষার বিস্তার, রেলওয়ে, টেলিগ্ৰাম প্রভৃতির প্রবর্তন এবং বিদেশী খ্রিস্টানদের পারিবারিক সম্পত্তি লাভের অনুকূলে আইন জারী প্রভৃতির দরুন জনসাধারণের ধারণা হয়েছিল যে ইংরেজগণ তাদের জাতি ও ধর্ম নষ্ট করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের ষড়যন্ত্র করছে। এই ধারণা বাংলা, বিহার ও অযোধ্যায় বিশেষ প্রসার লাভ করে।
সেনা বিভাগেও সংক্রামিত হয়েছিল ইংরেজ বিদ্বেষ। উত্তর ভারতে সেন্যবাহিনী ব্রাক্ষণ, রাজপুত উচ্চ জাতি নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমানা বাড়ায় তাদেরকে ভারতের বাইরে ব্রক্ষ প্রভৃতি দেশে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। জাতি নাশের ভয়ে সিপাহীরা ক্ষুব্ধ হল। প্রথম আফগান যুদ্ধে ইংরেজের শোচনীয় পরাজয়, ইউরোপে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়াবাসীদের বীরত্বের কাহিনি শ্রবণ, ইউরোপীয় কর্মচারিদের সংখ্যা হ্রাস এবং সেনাদলে উশৃঙ্খলতার প্রসার ভারতীয় সিপাহীগণকে ব্রিটিশ শক্তি ধ্বংস করতে উৎসাহিত করেছিল।
সিপাহী বিদ্রোহের মূল কারণ হল সৈন্যদলের মধ্যে “এন্ফিল্ড” রাইফেল নামক এক প্রকার বন্দুকের প্রবর্তন। সৈন্যদলের মধ্যে যখন গুজব রটল যে, হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই জাতি নষ্ট করতে ঐ টোটাতে গরু ও শূকরের চর্বি মেশানো করা হয়েছে, তখন অসন্তোষের আগুন জ্বলে উঠে সিপাহী বিদ্রোহে পরিণত হয়। বিদ্রোহের প্রথম প্রকাশ হয় ব্যারাকপুরে। শীঘ্রই মিরাট, লক্ষ্ণৌ, দিল্লী, উত্তরপ্রদেশে ও মধ্য ভারতের নানা স্থানে বিস্তৃত হয়। প্রত্যেক স্থানে বিদ্রোহীরা ইউরোপীয়গণকে হত্যা করতে থাকে। বিদ্রোহীদল মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে। বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে নানাসাহেব, তাঁতিয়া টোপী ও ঝান্সীর রাণী লক্ষীবাঈয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। খুব শীঘ্র এই বিদ্রোহ ইংরেজ সরকার দমন করে বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত এবং তাঁতিয়া টোপীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
প্রশ্ন ৫। সিপাহী বিদ্রোহের চারটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল লিখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল।ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করে ভারতে ইংরেজ শাসন বর্তে রাখতে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনের সব দায়িত্ব ইংলণ্ডের সরকারের হাতে ন্যস্ত করার ফলস্বরূপ কোম্পানি আমলে ভারতের সঙ্গে জড়িত নিয়ন্ত্রণ পরিষদ এবং পরিচালক সভা-এর কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়েছিল। নতুন আইন অনুসারে ভারত শাসন সম্পর্কীয় সব দায়িত্ব ও ক্ষমতা ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের হাতে অপর্ণ করা হয়। ভারত শাসনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মন্ত্রীকে ‘ভারত সচিব’ পদ দেওয়া হয়। তাকে সহায়তা করার জন্য ১৫ সদস্যের একটি পরিষদ গঠন করা হয়।
ভারত সরকার আইন বলবৎ হওয়ার পর ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর এলাহাবাদে একটি দরবারের আয়োজন করে ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং নিজেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করে সরাসরি ভারত শাসনের প্রথম ঘোষণা-পত্র পাঠ করেছিলেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভারতীয় প্রজা এবং দেশী শাসকের মনে সৃষ্ট অশান্তি, সন্দেহ ইত্যাদি দূর করতে চাওয়া হয়েছিল।
বিদ্রোহের সময় কোম্পানি সরকারকে সাহায্যকারী দেশীয় রাজন্যবর্গ এবং কয়েজন ব্রিটিশভক্ত ভারতীয় নেতাকে এলাহাবাদে দরবারে নিমন্ত্রণ করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
বিদ্রোহের পরোক্ষ ফল হিসেবে ভারতীয় সমাজে বিদ্যমান সামন্তযুগের স্থবিরতার অবসান ঘটেছিল এবং আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি তারা আকর্ষিত হয়েছিল। এককথায় সিপাহী বিদ্রোহের পর ভারতীয় সমাজে আধুনিকতার সূচনা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৬। ‘ভারত সরকার আইন’-এর মাধ্যমে চারটি পরিবর্তন উল্লেখ করা।
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ফলে এটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, একটি বণিক কোম্পানীর হাতে ভারতবর্ষে অবস্থিত বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনভার আর ছেড়ে রাখা সম্ভব নয়। ‘ভারত সরকার আইন’-এর মাধ্যমে চারটি প্রশাসনীয় পরিবর্তন হল—-
(১) ‘ভারত সরকার আইন’ অনুযায়ী ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ শাসনকর্তা হিসেবে গভর্নর-জেনারেল থাকলেও তাকে ভাইসরয় অর্থাৎ রাজ প্রতিনিধির খেতাব প্রদান করা হয়।
(২) এই আইন ভাইসরয় এবং প্রাদেশিক প্রধান (গভর্নর)-কে নিযুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা ইংরেজ সরকারের হাতে ন্যস্ত করার সঙ্গে কোম্পানির সামরিক বাহিনীকে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
(৩) এই আইনে ভারত সচিব এবং ভারত- ব্রিটিশ সরকারের সব আমলা কর্মচারীর বেতন-ভাতা ইত্যাদি ভারত থেকে সংগৃহীত রাজস্ব থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
(৪) ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং নিজেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি বলে ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় প্রজা এবং দেশীয় শাসকের মনে সৃষ্ট অশান্তি-সন্দেহ ইত্যাদি দূর করতে চাওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। লর্ড ক্যানিং-এর দুটি প্রধান সংস্কারের বিষয়ে লিখ।
উত্তরঃ লর্ড ক্যানিং-এর দুটি প্রধান সংস্কার হল—-
(ক) শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য লর্ড ক্যানিং “উডের শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প” (wood despatch) প্রবর্তন করে প্রতিটি প্রদেশে একজন সচিবের অধীন শিক্ষাবিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
(খ) সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে ক্যানিং কিছু সাংগঠনিক পরিবর্তন করেছিলেন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মাবলম্বী সৈন্যদের একজোট করে একটি মিশ্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোষ্ঠী গঠন করেছিলেন। এই সেনাগোষ্ঠীতে ইউরোপীয় সেনাও ছিল অধিক সংখ্যক।
প্রশ্ন ৮। ‘ভারতীয় পরিষদ আইন’র দুটি গুণ ও দুটি দোষ লিখ।
উত্তরঃ ভারতীয় পরিষদ আইনের দুটি গুণ :
(১) এই আইনে পাঁচ সদস্যের একটি “কার্যবাহী পরিষদ” গঠনের প্রস্তাব ছিল। এই আইনে ভারত সচিবকে তিনজন ব্যক্তিকে কার্যবাহী পরিষদের জন্যে মনোনীত করার কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছিল। ভারতবর্ষে অন্তত দশ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হবে। ব্রিটিশ সংসদ প্রত্যক্ষভাবে অপর দুজন সদস্যকে নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। এই দুজনের একজনকে আইনী সদস্য এবং অপর জনকে বিত্তীয় সদস্য হিসাবে কার্যবাহী পরিষদে স্থান দেওয়া হয়েছিল।
(২) কার্যবাহী পরিষদ সুচারুরূপে পরিচালনা করার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ভাইসরয়কে দেওয়া হয়। ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় কার্যবাহী পরিষদের সদস্যবর্গের মধ্যে দপ্তরগুলি ভাগ করে নিজ নিজ দপ্তরগুলি পরিচালনা করার অধিকার প্রদান করেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সদস্যগণকে গ্ৰহণ করতে হত ভাইসরয়ের পরামর্শ। কার্যবাহী পরিষদের সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করে ভারতে শাসন ব্যবস্থায় কেবিনেট শাসন প্রণালীর সূচনা করা হয়েছিল।
ভারতীয় পরিষদ আইনে প্রধান দুটি ক্রটি হল:
(১) প্রথমবারের মতো আইনসভায় সুযোগ দিয়ে ইংরেজ শাসক ভারতীয়দের থেকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার আশা করেছিল। ভারতীয়দের আইন সভায় সদস্য পদ দিয়ে ভারতে প্রতিনিধি মূলক সরকার গঠনের সূচনা করেছিল। অবশ্য আলোচিত সদস্যগণকে প্রকৃত অর্থে ভারতীয় জনসাধারণের প্রতিনিধি বলা যায় না। এই সদস্যগণ ছিল উচ্চবংশজাত এবং সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী বর্গের প্রতিনিধি।
(২) কেন্দ্রীয় আইনসভাকে এই আইন রাজস্ব, বিত্ত, প্রতিরক্ষা বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ, দেশীয় রাজ্য ও ব্রিটিশ ভারত অধিকৃত রাজ্যের সীমা সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শ এবং আইন এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করেছিল। কিন্তু ইহা সময় মত ভাইসরয় প্রয়োজনীয় সাপেক্ষে আইনসভায় প্রস্তাবিত আইন নতুন দিক ও পরামর্শ লঙঘন করার ক্ষমতা প্রদান করেছিলে।
প্রশ্ন ৯। ইংরেজ শাসনকালে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনের মাধ্যমে আসা পরিবর্তন সমূহ নিয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের পর কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের পরিবর্তন ও সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংস্কার সাধন করা হয়েছিল স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনের ক্ষেত্রে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের প্রায় সমসাময়িক ভাবে স্বায়ত্ব শাসনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করা হয়। ১৮৭০ সালে লর্ড মেয়োর শাসনকালে সর্বপ্রথম বিত্তীয় ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গঠন করা হয় নগর সমিতি ও জেলা পরিষদ। ভারতবর্ষের স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন হয় লর্ড রিপনের সময়ে। তিনি লোক্যাল বোর্ড স্থাপন করে গ্ৰাম্য এলাকার শাসনভার শাসনভার, জনস্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা, মহামারী ও সংক্রামক ব্যাধি নিরোধ প্রভৃতি নানাবিধ কার্যের দায়িত্ব সেই সকল লোক্যাল বোর্ডের উপর ন্যস্ত করেছিলেন, স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা অবশ্য লর্ড রিপনের আগে থেকে ভারতে প্রচলিত ছিল। মুম্বাই প্রেসিডেন্সিতে প্রবর্তিত হয়।
প্রশ্ন ১০। প্রশাসনিক সেবার ভারতীয়দের কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ? এই সেবার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের পর ভারতে অসামরিক সেবা-নিযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক সংঘাত সাধন করা হয়। ১৮৫৮ সালের মহারানীর ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ শাসক জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের অসামরিক সেবায় নিযুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় যে ব্রিটিশরা কৌশলে ভারতীয়দের অসামরিক সেবা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করে। ১৮৬০ সালে ভারতীয়দের অসামরিক সেবায় নিযুক্তির ব্যাপারে বিবেচনা করতে ভারত পরিক্রমা দপ্তরের মন্ত্রী একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মহারাণীর ঘোষণা অনুযায়ী ভারতীয়দের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির রূপায়ণ করা। এই কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিটিশ সংসদ ১৮৬১ সালে ভারতীয় ‘লোকসেবা আইন’ প্রণয়ন করে। কিন্তু এই আইন ও পূর্বের কোম্পানী নিযুক্ত উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের আইনসঙ্গত স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং উচ্চপদস্থ ইংরেজ বা ইউরোপীয়দের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।
লণ্ডনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতীয়গণ লোকসেবার পদবী সমূহে নিযুক্তির রীতি প্রচলিত ছিল। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম ভারতীয় হিসাবে ১৮৬৩ সালে লোকসেবায় নিযুক্তি পেয়েছিলেন। ১৮৭০ সালে অসমের প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত আনন্দরাম বরুয়া ভারতীয় লোকসেবায় নিযুক্তি পেয়েছিলেন।
১৮৭০ সালে গ্ল্যাডস্টোন ইংলণ্ডের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ব্রিটিশ সংসদে ভারতীয় লোকসেবা সম্পর্কীয় অপর একটি আইন প্রণীত হয়। এই আইন অনুযায়ী ভারতীয়গণকে যোগ্যতা অনুযায়ী অসামরিক লোকসেবায় নিযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু উক্ত আইন ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে নি। কেননা গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড নর্থব্রুক মাত্র বিচারব্যবস্থার কতিপয় পদে ভারতীয়দের নিযুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড লিটনও কোনো ভারতীয়কে অসামরিক সেবায় নিযুক্তি না দেওয়ার অভিসন্ধি করেন। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীর ঊর্ধ্বতন বয়স হ্রাস করে ১৯ বছর করা হয়।
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কংগ্রেস নিযুক্তি পরীক্ষার বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি ও একই সঙ্গে ইংল্যাণ্ড ও ভারতে নিযুক্তি পরীক্ষা গ্ৰহণের দাবি উথাপন করে। এর ফলে ১৮৮৬ সালে ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন একটি লোকসেবা আয়োগ গঠন করে সমগ্ৰ বিষয়টি অধ্যয়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। স্যার আর্টসিসলের সভাপতিত্বে উক্ত আয়োগের প্রতিবেদনের প্রস্তাব সমূহের অন্যতম হল—-
(১) প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ ইংরাজদের জন্য সংরক্ষিত রাখা।
(২) একমাত্র ইংল্যাণ্ডেই উক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা।
(৩) পরীক্ষার্থীর উর্দ্ধতম বয়স ২৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো।
(৪) পুলিশ ও পূর্তবিভাগীয় ও বন বিভাগের মুখ্য পদ ইংরেজদের জন্য সংরক্ষণ।
আয়োগের প্রতিবেদন পূর্ণ করতে পারে নি ভারতীয়দের আশা-আকাঙক্ষা ভারতীয়দের নিযুক্তি প্রশাসনিক বিভাগে বাড়েনি।
প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক সেবা সম্পর্কে তিনটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক সেবা সম্পর্কে তিনটি পার্থক্য হল—
(ক) ব্রিটিশ শাসনকালে অসামরিক লোকসেবার প্রার্থীর বয়সের উচ্চসীমা ২২ বছর ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর বয়সের উর্দ্ধসীমা ২৫ বছর করা হয়েছে।
(খ) ব্রিটিশ শাসনকালে সর্বভারতীয় পর্যায়ে লোকসেবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতবর্ষে সর্বভারতীয় এবং প্রাদেশিক উভয় পর্যায়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল।
(গ) ব্রিটিশ শাসনকালে লোকসেবা আয়োগের পরীক্ষা লণ্ডনে অনুষ্ঠিত হত কিন্তু স্বাধীনতার পর লোকসেবা আয়োগের পরীক্ষা ভারতের প্রায় সকল রাজ্যে অনুষ্ঠিত করা হয়।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৪৮৭ সালে কোন পর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত উত্তমাশা অন্তরীপে উপস্থিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ১৪৮৭ সালে পর্তুগীজ নাবিক বার্থল- মিউ-ডিয়াজ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত উত্তমাশা অন্তরীপে উপস্থিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ২। ভাস্কো-ডা-গামা কোন্ পর্তুগীজ নাবিককে অনুসরণ করে কবে দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ভাস্কো-ডা-গামা পর্তুগীজ নাবিক বার্থল-মিউ-ডিয়াজকে অনুসরণ করে ১৪৯৮ সালে দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩। ভাস্কো-ডা-গামা ইউরোপের কোন্ স্থান থেকে ভারতের কোন্ স্থানে উপস্থিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ভাস্কো-ডা-গামা পর্তুগালের লিসবন থেকে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতের কালিকটে উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৪। বন্দীবাসের যুদ্ধে ইংরাজ সেনাপতি কে ছিলেন ?
উত্তরঃ বন্দীবাসের যুদ্ধে ইংরাজ সেনাপতি ছিলেন স্যার আয়ারকূট।
প্রশ্ন ৫। পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথরিনকে বিয়ে করে যৌতুক হিসাবে কে বোম্বাই শহরটি লাভ করেছিলেন ?
উত্তরঃ রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথারিনকে বিয়ে করে যৌতুক হিসাবে বোম্বাই শহরটি লাভ করেছিলেন।
প্রশ্ন ৬। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী কোন মোগল সম্রাটের কাছে থেকে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করে ?
উত্তরঃ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী মোগল সম্রাট ফারুখশিয়ারের কাছ থেকে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে নির্বিঘ্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করে।
প্রশ্ন ৭। ওলন্দাজ কর্তৃক ভারতে স্থাপন করা তিনটি বাণিজ্যকুঠির নাম লিখ ?
উত্তরঃ (ক) মুছলিপট্টম।
(খ) পুলিকট।
(গ) সুরাট।
প্রশ্ন ৮। ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘ লি কমিশন’ গঠন করেছিল কেন ?
উত্তরঃ ১৯১৯ সালের ভারত সরকার আইনের নির্দেশনা কার্যকর করতে ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘লি কমিশন’ গঠন করেছিল।
প্রশ্ন ৯। স্যার টমাস রো কে ? তিনি কার রাজত্বকালে ভারতে আসেন ?
উত্তরঃ স্যার টমাস রো ছিলেন একজন ইংরাজ দূত। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ভারতে আসেন।
প্রশ্ন ১০। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও ইংরেজদের ভারতে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক কুঠিগুলোর নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ পর্তুগিজদের বাণিজ্যিক কুঠিগুলো হল— কোচিন, বোম্বাই, কালিকট, সালসেটি, গোয়া, দমন, দিউ প্রভৃতি।
ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক কুঠিগুলো হল— মাদ্রাজের নাগপট্টম, বঙ্গদেশের চুচুঁড়া, সুরাট, ব্রোচ, আহমেদাবাদ, কোচিন, কালিকট, মছলিপট্টম, কাশিমবাজার প্রভৃতি।
ইংরেজদের বাণিজ্যিক কুঠিগুলো হল—- সুরাট, আহমেদাবাদ, মাদ্রাজ, ব্রোচ, বোম্বাই প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১১। নাসির জং কে ছিলেন ? তিনি কোন ইউরোপীয় শক্তির নিকট থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ নাসির জং হায়দরাবাদের নিজামের পুত্র ছিলেন। তিনি ইংরাজদের নিকট থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ১২। ব্রিটিশ সংসদে কবে ‘ভারত সরকার আইন’ প্রণয়ন করেছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের ২রা আগস্ট ব্রিটিশ সংসদে ‘ভারত সরকার আইন প্রণয়ন করেছিল।
প্রশ্ন ১৩। নাবিক হেনরী কোন দেশের লোক ছিলেন ?
উত্তরঃ পর্তুগালের।
প্রশ্ন ১৪। ১৬০২ সালে প্রতিষ্ঠিত নেদারল্যাণ্ডের বিখ্যাত বাণিজ্যিক কোম্পানীটির নাম লিখ।
উত্তরঃ ইউনাইটেড ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী।
প্রশ্ন ১৫। ইউরোপীয় বণিকদের ভারতের কোন্ সামগ্ৰীগুলো আকর্ষিত করেছিল ?
উত্তরঃ ভারতীয় কার্পাস, মশলা, রেশম, চাল, তামাক, আফিম প্রভৃতি সামগ্ৰী ইউরোপীয় বণিকদের আকর্ষিত করেছিল।
প্রশ্ন ১৬। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী প্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে কত বছর ব্যবসা করার অনুমতি ইংল্যাণ্ডের রাণীর কাছ থেকে লাভ করে ?
উত্তরঃ পনেরো বছরের জন্য।
প্রশ্ন ১৭। কবে কোম্পানির মুদ্রা থেকে মোগল সম্রাটের নাম সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৩৫ সালে কোম্পানির মুদ্রা থেকে মোগল সম্রাটের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছিল
প্রশ্ন ১৮। ইউরোপীয় কোম্পানীগুলো ভারতের উপকূল অঞ্চলে কেন ঘাঁটি গড়েছিল ?
উত্তরঃ ইউরোপের কোম্পানীগুলো জলপথে বাণিজ্যের জন্য ভারতে আসে। এইজন্য তারা প্রথমে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘাঁটি গড়ে।
প্রশ্ন ১৯। ব্রিটিশ সরকার কবে, কার নেতৃত্বে ‘রয়্যাল কমিশন অব পাবলিক সার্ভিস’ গঠন করেছিল ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ১৯২২ সালে, লর্ড হসলিংটনের নেতৃত্বে ‘রয়্যাল কমিশন অব পাবলিক সার্ভিস’ গঠন করেছিল।
প্রশ্ন ২০। ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতের কোথায় প্রথম বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতের সুরাটে প্রথম বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে।
প্রশ্ন ২১। অসমে প্রথম এবং ভারতের ষষ্ঠ ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা (আই .সি.এস) পদবী লাভ করেন কে ?
উত্তরঃ অসমে প্রথম এবং ভারতের ষষ্ঠ ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা (আই.সি.এস) পদবী লাভ করেন আনন্দরাম বরুয়া।
প্রশ্ন ২৩। ভাস্কো-ডা-গামা কোন দেশের লোক ছিলেন ?
উত্তরঃ ভাস্কো-ডা-গামা পর্তুগাল দেশের লোক ছিলেন।
প্রশ্ন ২৪। কত সালে ফরাসীরা পণ্ডিচেরী দখল করে ?
উত্তরঃ ১৬৭৪ সালে ফরাসীরা পণ্ডিচেরী দখল করে।
প্রশ্ন ২৫। বেঙ্গলের কোন স্থানে ব্রিটিশরা তাদের প্রথম বাণিজ্যিকুঠি স্থাপন করে ?
উত্তরঃ বেঙ্গলের সুতানুটিতে ব্রিটিশরা তাদের প্রথম বাণিজ্যিকুঠি স্থাপন করে।
প্রশ্ন ২৬। পর্তুগীজদের আগমনকালে কালিকটের রাজা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ পর্তুগীজদের আগমনকালে কালিকটের রাজা ছিলেন জামরিণ।
প্রশ্ন ২৭। ভারতে পর্তুগীজ শক্তির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ভারতে পর্তুগীজ শক্তির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলবুকারে।
প্রশ্ন ২৮। ভারতে প্রথম ‘ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা’ (আই.সি.এস) পদবী লাভ করেন কে ?
উত্তরঃ ভারতে প্রথম ‘ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা’ (আই.সি.এস) পদবী লাভ করেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২৯। ১৫৮০ সালে জাহাজে কোন ইংরেজ নাবিক পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ১৮৫০ সালে ইংরেজ নাবিক ক্যাপটেন ড্রেক জাহাজে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩০। কোন সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ইংল্যাণ্ডের মহারাণীর সনদ লাভ করেছিল ?
উত্তরঃ ১৬০০ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ইংল্যাণ্ডের মহারাণীর সনদ লাভ করেছিল।
প্রশ্ন ৩১। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আসা প্রথম ইংরাজ দূত কে ?
উত্তরঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আসা প্রথম ইংরাজ দূত হলে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিন্স।
প্রশ্ন ৩২। সুতানটী, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর একত্রে করে কোন নগর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ সুতানটী, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর একত্রে করে কলিকাতা নগর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩৩। ইউরোপের কোন ব্যক্তি শ্রীরামপুরে ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন ?
উত্তরঃ কেরি মার্চমেন ও ওয়াদার।
প্রশ্ন ৩৪। কে, কবে, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ গঠন করেছিলেন ?
উত্তরঃ ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন ১৮৮৬ ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ গঠন করেছিলেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৮৫৮ সালের পরবর্তী সময়ে ভারতের সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের হাতে সমপর্ণ করায়, ফলে ভারতে বিভিন্নক্ষেত্রে ব্রিটিশ নীতি পরিবর্তিত থেকে থাকে।
১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সর্বপ্রথম করে ভারতের শাসনভার বণিক কোম্পানীর হাতে থেকে তুলে নেয়। এই আইনের মাধ্যমে শাসন ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্বের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৮ সালের আইনে ভারত সচিবের পদ সৃষ্টি হয়। ভারত শাসনের ব্যাপারে রাজার প্রতিনিধি হিসাবে ভারত সচিব কাজ করতে লাগলেন এবং তাঁকে সাহায্য করতে ১৫জন সদস্য নিয়ে একটি পরিষদ গঠিত হয়। শাসন কার্যে ভারত সচিবই ছিলেন সর্বেসর্বা।
১৮৬১ সালে ভারতীয় পরিষদ আইন পাশ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয় আইনসভায় কয়েকজন অতিরিক্ত বে-সরকারী সদস্য গ্ৰহণ করা হবে স্থির হয় এবং বে-সরকারী সদস্যগণের মধ্যে কয়েকজন ভারতবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করবার ব্যবস্থা হয়। ১৮৮২ সালে বাংলায় এবং ১৮৮৬ সালে উত্তরপ্রদেশে আইনসভা স্থাপিত হয়। বোম্বাই (মুম্বাই) এবং মাদ্রাজের (চেন্নাই) শাসনপরিষদকে সম্প্রসারিত করা হয়। ১৮৯২ সালের ভারতীয় পরিষদ আইনের মাধ্যমে ভারতীয় আইনপরিষদে আরও পাঁচজন অতিরিক্ত সদস্য গ্ৰহণ করবার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রশ্ন ২। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য কি কি ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার ভারতের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারকল্পে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সরকারী ঘোষণা ও অধিসূচনা জারি করে।
এদের মধ্যে অন্যতম হলো——
(১) ভারত শাসন আইন, ১৮৫৮।
(২) মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র ১লা নভেম্বর, ১৮৫৮।
(৩) ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৬১।
(৪) ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৯২।
প্রশ্ন ৩। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় লর্ড রিপনের অবদান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ লর্ড রিপনের সংস্কার কার্যাদির মধ্যে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। তাঁকে বলা হয় স্বায়ত্ব শাসনের জনক।রিপনের পূর্বেও ভারতে স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কিন্তু তিনি স্বায়ত্ব শাসনের নতুন দিক উন্মোচন করেন। ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টপাস করে মিউনিসি- প্যালিটিগুলির ক্ষমতা ও কার্যাবলী বাড়ানো হয়। রিপন মিউনিসিপ্যালিটিকে তিনভাগে ভাগ করেন। প্রথম দুইভাগের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যকে করদাতাগণ নির্বাচিত করত এবং তৃতীয় ভাগে মিউনিসিপ্যালিটির সদস্যগণ সরকার মনোনীত করতেন। প্রত্যেক জিলাতে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড এবং মহকুমাতে লোকাল বোর্ড স্থাপন করা হয়। উভয়বিধ সংস্থায় নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্য থাকত। এই সকল স্বায়ত্তশাসন সংস্থাকে স্থানীয় এলাকার শাসনভার, জনস্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা, মহামারী ও সংক্রামক ব্যাধি প্রভৃতি নানাবিধ কার্যের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়।
প্রশ্ন ৪। ১৮৫৮ সালের পর অসামরিক সেবার সংস্কার ও পরিবর্তন সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালে মহামারী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ সরকার জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের আসামরিক সেবায় নিযুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।কিন্তু তা আদৌ কার্যকরী হয় না।অসামরিক সেবা ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের জন্য ১৮৬১ সালে লোকসেবা আইন বা Indian Civil Service Act পাশ করা হয়। এই আইন অনুযায়ী অসামরিক বিভাগে নিয়োগের জন্য বিলাতে প্রত্যেক বৎসর একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শাসন কার্যের উচ্চপদে কোনো ভারতীয়দের নিয়োগ করা হত না। ইউরোপীয়দের জন্য সমস্ত উচ্চপদ সংরক্ষিত ছিল।
প্রশ্ন ৫। মহারানীর ঘোষণা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ।
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর এলাহাবাদের এক দরবারে ভারতের সর্বপ্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং ইংল্যাণ্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করলেন। উক্ত ঘোষণা পত্রের প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ—-
(১) দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপিত হবে।
(২) জনসাধারণেকে তাদের চিরাচরিত অধিকার ভোগ করতে দেওয়া হবে।
(৩) প্রজাদের মধ্যে ধর্মপালনের স্বাধীনতা এবং সরকারী চাকরি গ্ৰহণের সমতা প্রবর্তন করা হবে।
(৪) যারা ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের ঘোষণা করেছিল তাদের সকলকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি দেওয়া হবে। পর বৎসর কানপুরে আরও একটি দরবারে ডালহৌসি প্রবর্তিত “স্বত্ব বিলোপ” নীতি নাকচ করে ঘোষণা করা হল যে, কোম্পানীর সঙ্গে যে সকল চুক্তি দেশীয় রাজ্যবর্গ স্বাক্ষর করেছিল, সেইগুলির মর্যাদা দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো:
(ক) ফ্রান্সিস ড্রেক।
(খ) ভারতবর্ষের পরিষদ আইন।
(গ) ডুপ্লে।
উত্তরঃ (ক) ফ্রান্সিস ড্রেক : ফ্রান্সিস ড্রেক ছিলেন প্রখ্যাত ইংরেজ নাবিক। ১৫৮০ সালে। তিনি সমুদ্রপথে পৃথিবী ভ্রমণ করে এক ইতিহাস রচনা করেন। ড্রেক ১৬০০ সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী গঠন করে ইংল্যাণ্ডের মহারানী প্রথম এলিজাবেথের নিকট থেকে ব্যবসা- বাণিজ্যের রাজকীয় অনুমতি পত্র বা সনদ লাভ করেন। এই কোম্পানীর প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষ। এর পর রাজা প্রথম জেমস্ও এই সনদ অনুমোদন করেন। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতের বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এসে রাজ্যপাট দখল করে এবং ইংরাজ প্রায় দুইশত বৎসর শাসন করে।
(খ) ভারতবর্ষের পরিষদ আইন, ১৮৬১ : ভারত পরিক্রমা দপ্তরের মন্ত্রী স্যার চার্লস উড ১৮৬০ সালের জানুয়ারী মাসে ব্রিটিশ সংসদে ভারতবর্ষের শাসন সংস্কার সম্পর্কীয় একটি বিল পেশ করেন। উক্ত বিলই ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সংসদে ভারতবর্ষের পরিষদ আইনরূপে গৃহীত হয়। সেই বছরের ১লা আগস্ট এটি রাজকীয় অনুমোদন লাভ করে। এই আইন দ্বারা—-
ভারতীয় ব্যবস্থা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়। এটা কেবল প্রস্তাবিত আইন আলোচনা ও বিধিবদ্ধ অধিকার লাভ করে।
বড়লাটের পরিষদে বে-সরকারী মনোনীত সভ্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হল। ছয় জন থেকে বারজন অতিরিক্ত সভ্যের যোগদানের ফলে শাসন পরিষদ, কার্যত ব্যবস্থাপক সভায় রূপান্তরিত হল।বোম্বাই, মাদ্রাজ এবং পরে অন্যান্য কয়েকটি প্রদেশে ও প্রাদেশিক ব্যবস্থা সভা গঠিত হয়। এদের নিজস্ব এ এলাকার শান্তি ও সুশাসনের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়। এইভাবে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ভারতীয়গণ প্রথম অংশগ্রহণ করবার অধিকার লাভ করে।
গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা পূর্বাপেক্ষা অনেক পরিমাণ বাড়ানো হয়। কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে গভর্নর জেনারেল প্রশাসনিক সর্বপ্রকার কাজ করতে পারতেন। কাউন্সিলের কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরির ভার তার উপরই ন্যস্ত ছিল।
(গ) ডুপ্লে : ডুপ্লে ছিলেন একজন ফরাসী কর্মচারী। তিনি চন্দননগরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে ভারতে আসেন। প্রায় দশ বৎসর চন্দননগরের শাসনভার পরিচালনার পর তিনি নিযুক্ত হন পণ্ডিচেরীর শাসনকর্তা। ডুপ্লে ছিলেন বিচক্ষণ রাজনীতিজ্ঞ। ভারতীয় রাজন্যবর্গের দুর্বলতা এবং সামরিক শক্তির দুর্বলতা লক্ষ্য করে তিনি ভারতে ফরাসী সাম্রাজ্য স্থাপনের সংকল্প করেন। তাঁর কূটনীতিক ফলে ফরাসীগণ দাক্ষিণাত্য বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেছিল। কিন্তু ফরাসী সরকার তাঁকে প্রয়োজনমত অর্থ, সৈন্য ও নৌবল দিয়ে সাহায্য না করায় ভারতে ফরাসী সাম্রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। বিফলতা সত্ত্বেও তাঁর স্বদেশপ্রীতি, সমর কুশলতা প্রভৃতি তাকে ভারতে ফরাসী অধিকারের গৌরবজ্জ্বল আসন দান করেছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা দেশের শাসন ব্যবস্থায় কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছিল সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে বীজ ১৮৫৩ সালেই বপণ করা হয়েছিল। ঐ বৎসর কোম্পানীর সনদের মেয়াদ শেষ হয় এবং কোম্পানী আয়োগ ন্যায় সনদ নবীকরণ করেনি। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, একটি বণিক কোম্পানীর হস্তে ভারতবর্ষের মতো বিশাল দেশের শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর আর ছেড়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত শাসন আইন পাশ করা হয়। এই আইন ভারতে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন সাধন করে।
(১) ভারতবর্ষের কোম্পানীর রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে কোম্পানীর সকল ভূ-সম্পত্তি ও ক্ষমতা মহারানী ভিক্টোরিয়া তথা ব্রিটিশ শক্তির গৃহীত রাজমুকুট-এর উপর ন্যস্ত হবে।
(২) একজন সেক্রেটারী অব স্টেট ফর ইণ্ডিয়া ও তাঁর একটি পরিষদ ভারতবর্ষের শাসন পরিচালনা করবে। এই সেক্রেটারী ও পরিষদ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর ও বোর্ড অব কন্ট্রোল যে ক্ষমতা প্রয়োগ করত, সেই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
(৩) সেক্রেটারী অব স্টেট ফর ইণ্ডিয়া বা ভারত সচিবকে ভারতের শাসনভার ব্যাপারে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাঁকে একজন ক্যাবিনেট পর্যায়ে মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তিনি পার্লামেন্টর অধিবেশনে যোগদান করতে পারবেন।
(৪) গভর্নর জেনারেল ও বিভিন্ন প্রদেশ ও প্রেসিডেন্সীর গভর্নরগণ মহারাণী কর্তৃক নিযুক্ত হলেন।
(৫) গভর্নর জেনারেল মহারানীর প্রতিনিধি হিসাবে ‘ভাইসরয়’ (Viceroy) নিযুক্ত হবেন।
(৬) এই আইন অনুযায়ী ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিষদ গঠিত হবে। সদস্যগণের মধ্যে ৭জন কোর্ট অব ডাইরেক্টর কর্তৃক নির্বাচিত হবেন এবং ৮জন সদস্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
(৭) ভারত সচিব কাউন্সিল অব পরিষদের পদাধিকারী সভাপতি। তাঁর নির্ণায়ক ভোট দান (Casting Vote) ক্ষমতা ছিল।
(৮) উক্ত আইন অনুযায়ী ভারত সচিব ভারতের নৈতিক ও বাহ্যিক উন্নতি সম্পর্কে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করবেন।
(৯) ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারত শাসনের ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উপর ন্যস্ত করা হয়।
(১০) ভারত সচিব সকল প্রকার প্রকল্প, রাজস্ব, জনকল্যাণমুখী, বৃহৎ ব্যয়বহুল কার্য প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
প্রশ্ন ২। মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা পত্রের প্রধান শর্তগুলি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ফলে এটা পরিস্কার হয়ে উঠেছিল যে একটি বণিক কোম্পানীর হাতে ভারতবর্ষে অবস্থিত বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনভার আর ছেড়ে রাখা উচিত নয়। তাই ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত শাসন আইন পাশ করা হয়। ভারতবর্ষে কোম্পানীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে কোম্পানীর সকল ভূসম্পত্তি ও ক্ষমতা মহারানী ভিক্টোরিয়া তথা ব্রিটিশ শক্তির প্রতীক রাজমুকুট বা (Crown) উপর ন্যস্ত করা হয়। ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর এলাহাবাদের এক দরবারে ভারতের সর্বপ্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং ইংলণ্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ঘোষণাপাঠ করলেন।উক্ত ঘোষণাপত্রের প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ—–
(১) ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী থেকে দেশের শাসনভার নিজের হাতে নেওয়া হয়।
(২) জনসাধারণকে ভোগ করতে দেওয়া হবে তাদের চিরাচরিত অধিকার।
(৩) দেশীয় রাজ্যগণের অধিকার, সম্মান, মর্যাদা ও রাজ্যের সীমা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
(৪) দেশীয় রাজ্য সমূহের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে না।
(৫) মহারানী ব্যক্তিগতভাবে খ্রিস্টান হলেও ভারতবাসীর উপর জোর করে খ্রিস্টধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
(৬) ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহীদের মুক্তি দেওয়া হবে। স্বত্ত্ববিলোপ নীতি বাতিল করা হবে।
(৭) জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির ভিত্তিতে মহারাণীর সরকার কোনো বৈষম্য করবে না।
এছাড়া ভারতীয় শিক্ষিত যোগ্য ব্যক্তিগণকে বৈষম্য না করে উপযুক্ত সরকারী পদে নিযুক্তির আশ্বাস দান মহারাণীর ঘোষণাপত্রের অন্যতম আকর্ষণ।
মহারাণীর ঘোষণাপত্র স্বাভাবিকভাবে ভারতীয় শিক্ষিত শ্রেণির মনে এক নতুন আশার সঞ্চার করে। ঘোষণাপত্রে মহারাণী এই আশ্বাস দেন যে কেবল ব্রিটিশ নাগরিক ও প্রজাগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত লোকদের ছাড়া অন্যসকল বিদ্রোহীদের ক্ষমা করা হবে। অবশ্য কার্যক্ষেত্রে এই প্রতিশ্রুতি পালন না করে ব্রিটিশ সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিল। এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতীয়দের মোহভঙ্গ হয়।
প্রশ্ন ৩। ভারতে পর্তুগীজদের আগমন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। তারা কেন এই দেশে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারে নি ?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দল ব্যবসা-বাণিজ্যির উদ্দেশ্যে জল ও স্থলপথে ভারতে এসেছিল। কিন্তু মধ্যযুগে ইউরোপ থেকে ভারতে আসার পথগুলির কর্তৃত্ব আরবদের হাতে থাকায় ইউরোপীয় বণিকরা বিভিন্ন অসুবিধা সম্মুখীন হন। তারা তখন ইউরোপ থেকে ভারত ও প্রাচ্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সুগম জলপথ আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন। ১৪৯৮ সালে এই চেষ্টার ফলেই ভাস্কো-দা-গামা নামে এক পর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের উত্তমাশা অন্তরীপ পার করে ভারতে আসার একটি নতুন জলপথ আবিষ্কার করেন।
এই আবিষ্কারের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে পর্তুগীজ বণিকরা ভারত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য নিজেদের হাতে আনার জন্য সচেষ্ট হন। ১৫১০ সালে তারা বিজাপুর রাজ্যের অন্তর্গত গোয়া দখল করেন এবং অনতিবিলম্বে গোয়াকে কেন্দ্র করে ভারতে একটি পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপন করেন। অবশ্য তাদের প্রাধান্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
পর্তুগীজদের ব্যর্থতার কারণ : নিম্নলিখিত কারণে পর্তুগীজগণ ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্যর্থ হয় :
(১) ভারতে পর্তুগীজ শাসন-ব্যবস্থা অনেক ক্রটিপূর্ণ ছিল। পর্তুগীজ শাসকরা ভারতীয় কর্মচারীগণকে সুনজরে দেখত না।
(২) পর্তুগীজদের ধর্মীয় উদারতা ছিল না। তারা ছিল পরধর্ম অসহিষ্ণু।
(৩) দিল্লীতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা পর্তুগীজদের পতনের আর একটি কারণ। পর্তুগীজদের ক্ষমতা বিশেষভাবে মহামতি আকবরের রাজত্বকালে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
(৪) পর্তুগালের মতো একটি ছোট দেশের পক্ষে ভারতে আধিপত্য বিস্তার করা অতি দুরূহ ব্যাপার ছিল। তার উপর ব্রাজিলেও তাদের আধিপত্য ছিল এবং ভারতের চেয়ে ব্রাজিলে ব্যবসা লাভজনক ছিল। ফলে পর্তুগীজরা ভারতে ব্যবসা প্রসারের দিকে মনোযোগ দেয়নি।
(৫) ১৫৮০ সালে পর্তুগাল দেশটি স্পেনের অধিকারে চলে গেলে পর্তুগালের নূতন সরকার ভারতে রাজ্য বিস্তারে ইচ্ছুক ছিলেন না।
প্রশ্ন ৪। ওলন্দাজগণ ভারতে স্থায়ী বসতি স্থাপনে অসমর্থ হয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে ওলন্দাজগণ ছিল অন্যান্য বিদেশী শক্তির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ভারতে ওলন্দাজ বণিকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পর্তুগীজ ও ইংরাজ বণিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ। ১৬৩৬ থেকে ১৬৩৯ সাল পযর্ন্ত তারা প্রতিবৎসর একবার করে গোয়া আক্রমণ করতে লাগল। অবশ্য এ ব্যাপারে তারা সাফল্যলাভ করতে সমর্থ হয় নি। কিন্তু ১৬৪১ সালে মালাক্কা এবং ১৬৫৮ সালে সিংহলের সর্বশেষ পর্তুগীজ বাণিজ্যকেন্দ্রটি জয় করে ওলন্দাজগণ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াস্থ দ্বীপগুলিতে এক অপ্রতিহত শক্তিতে পরিণত হয়। যবদ্বীপ, সুমাত্রা, মালাক্কা প্রভৃতি স্থান অধিকার করে ক্রমে ওলন্দাজ বণিকগণ করমণ্ডল, গুজরাট, বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার বাণিজ্য-কুঠি স্থাপন করতে সক্ষম হল। ভারতে ওলন্দাজ কুঠিগুলির মধ্যে পুলিকট, সুরাট, নেগাপট্টম, কোচিন, চূঁচুড়া, কাশিমবাজার, বরানগর, পাটনা, বালেশ্বর প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্টুয়ার্টযুগে এবং ক্রমওয়েলের আমলে ইংল্যাণ্ড ও হল্যাণ্ডের মধ্যে বাণিজ্যক ও সামুদ্রিক প্রাধান্য নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সেইসূত্রে ভারতবর্ষের ওলন্দাজ ও ইংরাজ বণিকদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ১৬৭২ থেকে ১৬৭৪ সাল পযর্ন্ত দুই বৎসর ওলন্দাজগণের হস্তে ইংরাজ বণিকগণকে নানাভাবে লাঞ্ছনা ভোগ এবং ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছিল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পযর্ন্ত ইঙ্গ- ওলন্দাজ বাণিজ্যক প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিবাদ-বিসংবাদ সমভাবেই বিদ্যমান ছিল। ১৭৫৯ সালের পর থেকেএই দ্বন্দ্বের কতক উপশম হয়। সেই সময় থেকে ওলন্দাজগণ মালয় দ্বীপপুঞ্জেই একাধিপত্য স্থাপনে মনোযোগী হয়ে পড়ে এবং ইংরাজগণ ভারতে প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগ লাভ করে। ফলে ভারতে ওলন্দাজ আধিপত্য দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.