SEBA Class 10 Bengali Chapter – 8 বলাই

Join Roy Library Telegram Groups

SEBA Class 10 Bengali Chapter – 8 বলাই Question Answer As Per New Syllabus of SEBA Provided by The Roy Library is one of the best content available on the internet as well as many other offline books. SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Notes is made for SEBA Board Bengali Medium Students. SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Solutions We ensure that You can completely trust this content. SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Suggestions If you learn PDF from then you can BUY PDF Class 10 Bengali textbook Solutions. SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই I hope You Can learn Better Knowledge.

SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই

Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 10 Bengali (MIL) Chapter 8 বলাই Suggestions with you. SEBA Class 10 Bengali Solutions Chapter 8 বলাই I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Notes. If you liked SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Question Answer Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

বলাই

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

( ক ) অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘ বলাই ‘ পাঠটির লেখক কে ? 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ পাঠটির লেখক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

প্রশ্ন ২। বলাইয়ের সঙ্গে লেখকের কী সম্পর্ক ছিল ? 

উত্তরঃ বলাই সম্পর্কে লেখকের ভাইপো ছিল । 

প্রশ্ন ৩। অতি পুরানো বটের কোটরে কারা বাসা বেঁধে আছে ? 

উত্তরঃ অতি পুরানো বটের কোটরে ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী বাসা বেঁধে আছে।

প্রশ্ন ৪। বলাইয়ের মা কোথায় গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের মা বলাইয়ের জন্মের পর মারা গিয়েছিল । 

প্রশ্ন ৫। একদিন সকালে বলাই ওর কাকাকে কী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকালে বলাই ওর কাকাকে বাগানের খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা একটি শিমূল চারা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ কীসের উপর ছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ বাগানের ছোট ছোট চারাগাছগুলির উপর ছিল । 

প্রশ্ন ৭। সিমলে থেকে বলাই ওর কাকিকে কী পাঠিয়ে দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ সিমলে থেকে বলাই ওর কাকিকে শিমূল গাছের ফটোগ্রাফ পাঠিয়ে দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল । 

প্রশ্ন ৮। বলাইয়ের বাবা বলাইকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের বাবা বলাইকে প্রথমে সিমলায় পরে বিলেত নিয়ে গিয়েছিলেন । 

প্রশ্ন ৯। বিলাত যাবার পূর্বে বলাই তার কোন বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বিলাত যাবার পূর্বে বলাই তার বন্ধু শিমুলগাছটার ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল । 

প্রশ্ন ১০। মা মারা যাবার পর বলাইকে কে কোলে পিঠে মানুষ করেছে ? 

উত্তরঃ মা মারা যাবার পর বলাইকে তার কাকিমা অর্থাৎ লেখকের স্ত্রী কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে । 

( খ ) শুদ্ধ – অশুদ্ধ নির্ণয় করো :

১। বলাই একটি মেয়ের নাম । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ ।

২। বেশি কথা কইতে পারে না বলে বলাইকে অনেক বেশি ভাবতে হয় । 

উত্তরঃ শুদ্ধ । 

৩। লেখকের ছোট ভাইয়ের নাম ছিল বলাই । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ । 

৪। শিমূল গাছটি ছিল বলাইয়ের প্রাণের দোসর । 

উত্তরঃ শুদ্ধ । 

৫। ‘ বলাই ’ পাঠটির লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ ।

( ঘ ) শূন্যস্থান পূরণ করোঃ 

১। মাঘের শেষে আমের ________ ধরে । 

উত্তরঃ বোল ।

২। ফাল্গুনে _______ শালবনের মতোই ওর _______ প্রকৃতি চারিদিকে বিস্তৃত হযে ওঠে । 

উত্তরঃ পুষ্পিত,অন্তর ।

৩। ও কাউকে না বলে _______ গিয়ে সেই দেবদারু বনের _______ একলা অবাক হয়ে বসে থাকে । 

উত্তরঃ আস্তে আস্তে,নিস্তব্ধ ছায়াতলে ।

৪। শিমূল গাছ বাড়েও দ্রুত , কিন্তু বলাইয়ের ________ পাল্লা দিতে পারে না । 

উত্তরঃ আগ্রহের ।

৫। আমার সঙ্গে যখন পারলে না , এই ________ শিশুটি গেল কাকির কাছে । 

উত্তরঃ মাতৃহীন ।

৬। ওই গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের _______ তারই প্রাণের _______ ।

উত্তরঃ প্রতিরূপ,দোসব ।

২। ( ক ) বাক্য রচনা করোঃ 

ফপিয়ে ফুঁপিয়ে , আঁকু পাঁকু , গড়াতে গড়াতে , সুড়সুড়ি , খিলখিল , ছমছম , স্তরে স্তরে , দেখে দেখে , ব’সে ব’সে , ড্যাবা – ড্যাবা , ছোটো ছোটো , অহি – নকুল , জোড়াতাড়া , ঝম্ ঝম্। 

উত্তরঃ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে — বলাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরেছিল । 

আঁকুপাঁকু — বিপিন দেবদারু বনে যাবার জন্য আঁকুপাঁকু করছিল । 

গড়াতে গড়াতে — পাহাড় বেয়ে ঝরণার জল গড়াতে গড়াতে নামছে। 

সুড়সুড়ি — ঘাসের আগায় বলাইয়ের ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগত । 

খিলখিল — ঘাসের সুড়সুড়িতে বলাই খিলখিল করে হেসে উঠল । 

ছমছম — অন্ধকার রাস্তায় যেতে রহিমের গা ছমছম করতে লাগত । 

স্তরে স্তরে ― মানুষের মনের স্তরে স্তরে কতই না গোপন ইচ্ছা জেগে থাকে । 

দেখে দেখে — বাগানের নতুন চারাগাছগুলি দেখে দেখে বলাইয়ের আশ মেটে না ।

বসে বসে ― নৃপেনবাবু বসে বসে বাগানের দেখভাল করেন । 

ড্যাবা-ড্যাবা — বলাই ড্যাবা ড্যাবা চোখ মেলে অবাক হয়ে সব দেখত । 

ছোটো ছোটো — বাগানের ছোটো ছোটো চারাগাছগুলি সদ্যোজাত শিশুর মতো । 

অহি-নকুল — রামবাবুর সঙ্গে পাড়ার ক্লাবের অহি – নকুল সম্পর্ক । 

জোড়াতাড়া — বিপদের সময় সে জোড়াতাড়া দিয়ে কাজ চালিয়ে নিল । 

ঝম্-ঝম্ — জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ঝঝম্ বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে । 

( খ ) টীকা লেখঃ 

বলাই , শিমল গাছ , ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী , খোঁয়াড় । 

উত্তরঃ ১। বলাই — নিঃসন্তান কাকা কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই থাকে । সংসারে কাকিমা তার সঙ্গী এবং অপর এক সঙ্গী হল বিশ্বপ্রকৃতি। পূর্ব আকাশে পুঞ্জীভূত কালোমেঘ ভিজে হাওয়ার শ্রাবণ – অরণ্যের গন্ধ ওর মনে বয়ে নিয়ে আসে । সে তার শরীরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ অনুভব করে । বসন্তের পুষ্পিল শালের সুবাসে সে সুবাসিত হয়ে ওঠে। 

বলাই ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল মানসিকতার অধিকারী । কেউ গাছের ফুল তুললে , গাছে আঘাত করলে বা শাখা ভাঙলে ওর মনে বড়ো কষ্ট হত । ঘাসিয়াড়ার যন্ত্রে যেদিন ঘাস , ছোটো বেগুনি হলুদ ফুল , ছোটো কালমেঘ লতা , অতি ছোটো নিমের চারা কাটা পড়ে সেদিনটা ওর বড়ো দুঃখের দিন । বাগানের রাস্তার মাঝখানে একটি শিমূল চারার জন্ম হতে দেখে বলাইয়ের আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায় । সে দুবেলা চারাটিতে জল দেয় , কতটা বেড়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে । প্রকৃতিপ্রীতির কারণে সে গাছগাছালির সঙ্গে যে নিবিড় আত্মীয়তা অনুভব করে— সেই উপলব্ধি সংসারে অপর কারোও ছিল না । 

২। শিমূল গাছ – বলাইয়ের কাকার বাগানে যাবার পথে খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই গজিয়ে উঠেছিল একটি শিমূল গাছ । বলাইয়ের নিত্য পরিচর্যায় সে গাছ দিনে দিনে বাড়েও দ্রুত , কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না । শিমূল গাছের বাড়ন্ত পাতা দেখে বলাই চমৎকৃত হয় । নিজের আনন্দ প্রকাশের জন্য কাকাকে দেখাতে ছুটে যায় । কিন্তু কাকা গাছটির বৃদ্ধিতে অখুশি ছিলেন । তাই বলাইয়ের বাবা বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে প্রথমে বলাইকে সিমলেয় নিয়ে গেলে বলাইয়ের অনুপস্থিতিতে শিমূল গাছটি কেটে ফেলেন । বলাই বাবার কাছে চলে গেলেও শিমূল গাছটির জন্য তার চিন্তা থাকত । তাই সিমলে থেকে বিলেত যাবার পূর্বে তার বন্ধু শিমুল গাছটির ফটোগ্রাফ চেয়ে পাঠায় । 

৩। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী — ছোটোরা রূপকথার গল্প শুনতে খুব পছন্দ করে । ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী রূপকথার গল্পের এক আশ্চর্য পাখি এবং পাখিনী , যারা অতীত ও ভবিষ্যত দেখতে পায় । রাজকুমার বিদেশ বিভুঁয়ে যখন পথ খুঁজে পায় না , কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারে না তখন এই ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী তাকে সঠিক পথের নির্দেশ দেয় । মাতৃহীন বলাই কাকিমার কাছে ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমীর গল্প শুনত । 

৪। খোঁয়াড় — অপরাধী গোরু , ছাগল ইত্যাদি পশুকে আটকে রাখার জায়গা বিশেষ । খোঁয়াড়ে গোরু , ছাগল জমা পড়লে পশুর মালিককে সেখান থেকে জরিমানা দিয়ে ছাড়াতে হয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলাই গল্পে এই শব্দটিতে জীবজন্তুকে এক সঙ্গে মিলিয়ে রাখার কথায় এটি বলেছেন । তাঁর মতে মানুষের মধ্যে বাঘ গোরুকে এক খোঁয়াড়ে পুরে দেওয়া হয়েছে । মানুষ এখানে খোঁয়াড়ের প্রতীক ।

S.L. No.সূচীপত্র
অধ্যায় -১প্রার্থনা
অধ্যায় -২বিজয়া দশমী
অধ্যায় -৩গ্রাম্যছবি
অধ্যায় -৪প্রতিনিধি
অধ্যায় -৫আবার আসিব ফিরে
অধ্যায় -৬সাগর-সঙ্গমে নবকুমার
অধ্যায় -৭বাংলার নবযুগ
অধ্যায় -৮বলাই
অধ্যায় -৯আদরণী
অধ্যায় -১০তোতাকাহিনি
অধ্যায় -১১অরুণিমা সিনহা: আত্মবিশ্বাস ও সাহসের এক নাম
অধ্যায় -১২কম্পিউটার কথা, ইন্টারনেট কথকতা
অধ্যায় -১৩এসো উদ্যোক্তা হই
অধ্যায় -১৪জীবন সংগীত
অধ্যায় -১৫কাণ্ডারী হুঁশিয়ার
অধ্যায় –১৬পিতা ও পুত্ৰ
অধ্যায় -১৭অরণ্য প্রেমিক: লবটুলিয়ার কাহিনি
অধ্যায় –১৮শ্ৰীকান্ত ও ইন্দ্ৰনাথ
অধ্যায় -১৯উজান গাঙ বাইয়া
বাংলা ব্যাকরণ
S.L. Noবৈচিত্রপূর্ণ আসাম
অধ্যায় -১তিওয়াগণ
অধ্যায় -২দেউরিগণ
অধ্যায়নেপালিভাষী গোর্খাগণ
অধ্যায়বোড়োগণ
অধ্যায়মটকগণ
অধ্যায়মরাণগণ
অধ্যায়মিসিংগণ
অধ্যায়মণিপুরিগণ
অধ্যায়রাভাগণ
অধ্যায়১০চুটিয়াগণ

৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের কী অভ্যাস ছিল ? 

উত্তরঃ ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের অভ্যাস ছিল চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখার । 

( খ ) কখন , কেমন করে বলাইয়ের অন্তর – প্রকৃতিতে ঘন রং লাগে ? 

উত্তরঃ ছাদের উপর বিকেলবেলায় রোদ্দুর যখন পড়ে আসে , মাঘের শেষে আমের বোল ধরে তখন বলাইয়ের মনের অন্তরে ঘন রঙ লাগে । 

( গ ) বস্তুত আমরা কোন পদার্থকে মানুষ বলে থাকি ?

উত্তরঃ বস্তুত আমরা মানুষ বলে থাকি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে দেয় । 

( ঘ ) ‘ কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে— এখানে ‘ ওর ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কেউ গাছের ফুল তুললে ওর বাজে কেন ? ওর প্রকৃতি কেমন ? 

উত্তরঃ এখানে ‘ ওর ’ বলতে বলাইকে বোঝানো হয়েছে । বলাই খুব সংবেদনশীল মানসিকতার অধিকারী । কেউ গাছের ফুল তুললে ওর মনে ব্যথা লাগে । 

( ঙ ) বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্য কী কী করতো ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু’পাশের গাছগুলিকে মারতে মারতে চলে , কেউ বা বকুল গাছের ডাল ভেঙে দেয় । 

( চ ) একদিন বলাই ওর কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে কী বলেছিল ? 

উত্তরঃ একদিন বলাই ওর কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল , ঘাসিয়াড়া যেন বাগানের সদ্য বেরুনো গাছগুলো ছেঁটে না ফেলে । 

( ছ ) বলাই তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের কী কী বাণী শুনতে পেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাই তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের ‘ আমি থাকব ’ বাণীটি শুনতে পেয়েছিল । 

( জ ) বলাই কখন চমকে উঠে কাকিমাকে কী অনুরোধ করেছিল ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে জন্মানো প্রিয় শিমূল গাছটিকে কাকা কেটে ফেলবেন শুনে চমকে উঠে বলাই কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করেছিল কাকা যেন গাছটিকে কেটে না ফেলে ।

( ঝ ) লেখক তাঁর ভাইপোকে কী বলে শিমূলগাছটা কেটে ফেলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা শিমল গাছটির পরিবর্তে খুব ভালো কতগুলি গোলাপ চারা এনে দেবেন অথবা বেড়ার ধারে অন্য শিমল চারা পুঁতে দেবেন তা সুন্দর লাগবে । 

( ঞ ) সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা কী করেছিলেন ? 

উত্তরঃ সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা বলাইয়ের কাকাকে শিমূল গাছের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবার কথা বলেছিলেন । 

৪। চার / পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও : 

( ক ) বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি কেন ? 

উত্তরঃ নিঃসন্তান কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই মানুষ হচ্ছিল । দশ বছর তাদের ঘর ভরে ছিল সে । হঠাৎ বলাইয়ের বাবা বিলেত থেকে ফিরে এসে তাকে বিলেতি কায়দায় শিক্ষা দেবার জন্য প্রথমে সিমলেয় পরে বিলেতে নিয়ে যান । বিলেত যাবার পূর্বে সে শিমূলগাছের একটি ফটোগ্রাফ চেয়ে পাঠায় । কাকিমা হঠাৎ জানতে পারেন বলাইয়ের কাকা শিমূল গাছটি কেটে ফেলেছেন । সেই কারণে দুঃখে অভিমানে তিনি দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি । 

( খ ) বিলেত যাওয়ার পূর্বে বলাই সিমলে থেকে কাকিকে চিঠিতে কী লিখে পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বিলেত যাওয়ার পূর্বে বলাই সিমলে থেকে কাকিমাকে তার কাঁচা হাতের লেখা চিঠিতে একটি আবেদন রেখেছিল , সে তার বন্ধুর একটি ফটোগ্রাফ চায় । এই বন্ধু হল বাগানে যাবার খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝে গজিয়ে ওঠা এবং বলাইয়ের পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা শিমূল গাছটি । প্রবাসে বন্ধু শিমূল গাছের প্রতিকৃতি তাকে আনন্দ দেবে , দূরে থেকেও ফটোগ্রাফের মধ্যে তার সান্নিধ্যের উত্তাপ অনুভব করবে । 

( গ ) বলাই কেন ছোটবেলা থেকেই কাকিমার কাছেই লালিত পালিত হয়েছে ? 

উত্তরঃ বলাই তার মায়ের কোলে থাকতেই বলাইয়ের মার মৃত্যু হলে বলাই মাতৃহীন হয়ে পড়ে । বলাইয়ের বাবা শোকে বিলেতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে চলে গিয়েছিলেন । লেখক এবং তার স্ত্রী ছিলেন নিঃসন্তান , সেইজন্য লেখকের স্ত্রী অর্থাৎ বলাইয়ের কাকিমার কাছে বলাই লালিত – পালিত হয়েছে । 

( ঘ ) বলাই কখন চমকে উঠেছিল এবং কেন ? 

উত্তরঃ বাগানে যাবার খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা শিমুল গাছটি বলাইয়ের আবিষ্কার । কাকাকে একদিন খুব উৎসাহভরে গাছটি দেখিয়েও ছিল । কিন্তু গাছটির বাড়বাড়ন্ত দেখে লেখক অর্থাৎ বলাইয়ের কাকা সিদ্ধান্ত নেন মালীকে বলবেন গাছটি উপড়ে ফেলে দিতে।এইকথায় বলাই চমকে উঠেছিল । 

( ঙ ) একদিন লেখককে তাঁর ভাইপোটি কোথায় , কখন , কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকালে লেখক একমনে খবরের কাগজ পড়ছিলেন । এমন সময় তাঁর ভাইপো বলাই তাকে তাড়াহুড়ো করে ধরে নিয়ে বাগানে যায় । বাগানে যাওয়ার খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা চারাগাছের ছোট চারা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে গাছটির নাম । শিশু শিমূল গাছটি দেখে আর এক শিশু বলাইয়ের অন্তরে মমত্ববোধ জেগে ওঠে । 

৫। তাৎপর্য বিশ্লেষণ করোঃ 

( ক ) “ এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার । ” 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ গল্পের নায়ক হল ছোট্ট বালক বলাই । বলাই মাতৃহীন ছেলেমানুষ । মায়ের মৃত্যুর পর থেকে নিঃসন্তান কাকির কোলে বলাই মানুষ । কাকির কোলে বসে এখনও গলা জড়িয়ে ধরে যে কোন ব্যাপারে অসংকোচে আবদার করে । জন্মসূত্রে সে মানব সন্তান হলেও তার মধ্যে উদ্ভিদস্বভাব এক ব্যতিক্রমী ব্যাপার । মানুষ ক্রমবিবর্তনের ধারায় নানা জীবের উদ্ভব ইতিহাসের শেষ অধ্যায়ে এসেছে পৃথিবীতে । তাই মানুষের মধ্যে গা ঢেকে আছে উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জীবের প্রকৃতিগত কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য । কোটি বৎসর আগে পৃথিবীতে ভূস্তর সৃষ্টির পরে প্রাণের প্রথম বিকাশস্বরূপ উদ্ভিদের জন্ম । উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যসমূহ বলাইয়ের মধ্যে প্রবলভাবে আছে । 

বলাইয়ের প্রকৃত বয়স — গাছেদের প্রথম জন্মের বয়স ধরা হলে অঙ্কটা দাঁড়ায় কোটি বছর আগেকার । সেই সময়কার মানবসন্তান হয়ে জন্মানোর বয়স যাই হোক না কেন বলাইয়ের স্বভাব ও প্রকৃতির মধ্যে গা ঢেকে থাকা উদ্ভিদ স্বভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ ক্রিয়াশীল । 

( খ ) “ এতদিনে এইসব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে । ” 

উত্তরঃ বলাইয়ের দশ বছর বয়সকালে নিঃসন্তান কাকিমার কোল খালি করে তার বাবা বিদেশী কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে বলাইকে নিয়ে চলে যান । তারপরে দুবছর চলে গেলেও মাতৃসমা বলাইয়ের কাকিমা গোপনে অশ্রু বিসর্জন করেন । বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া একপাটি জুতো , রবারের ফাটা বল , জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বইগুলো নড়াচড়া করে স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন । 

বলাইয়ের কাকিমা কোমল প্রাণের স্নেহবৎসলা নিঃসন্তান নারী । তাঁর নিঃসন্তান মাতৃহৃদয়ের সমস্তটুকু স্নেহবাৎসল্য মা – মরা দুধের শিশু বলাইকে ঘিরেই উৎসারিত । বলাই – শূন্য কাকিমার মাতৃহৃদয়ের কাতর চিত্র বড়ই বেদনাদায়ক হলেও বারো বছর পর বলাই আর আগের ছোট্ট শিশুটি নেই , তার শরীরে ও মনে বহু পরিবর্তন ঘটে গেছে । 

( গ ) “ বছর খানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল । ” 

উত্তরঃ বলাইয়ের যত্নে শিমূল গাছটা বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে “ নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠেছে ” । লেখক অর্থাৎ বলাইয়ের কাকা বাগানের রাস্তার অজায়গায় শিমূল গাছটাকে রেখে দিতে বাধ্য হয়েছেন মাতৃহীন বলাইয়ের আবদার ও তাঁর স্ত্রী অনুরোধে । রাস্তার মাঝখানেই কাউকে রেয়াত না করে ঐ গাছটির নির্লজ্জভাবে লম্বা বেড়ে ওঠা দেখে লেখকের মনে হয়েছে যে গাছটি নিতান্তই নির্বোধ , সেজন্য চলাচলের রাস্তার মাঝখানে নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠছে । 

( ঘ ) “ তারা ওর চির – অসমাপ্ত গল্প । ” 

উত্তরঃ বাগানের মাটির দিকে তাকিয়ে বলাই সীমাহীন কৌতূহল নিয়ে অঙ্কুরিত বীজের ক্রমবিকাশ লক্ষ্য করত । বীজ কীভাবে অঙ্কুরিত হচ্ছে , অঙ্কুরিত বীজ থেকে কীভাবে গজিয়ে উঠছে কচি পাতা এবং তারপরে কী হবে । এসমস্ত নিয়েই তার ছিল অসীম কৌতূহল , সীমাহীন ঔৎসুক্য আর অনন্ত জিজ্ঞাসা । এ যেন শিশু – শ্রোতার গল্প শোনার অদম্য আকাঙ্ক্ষার মতো । তাই ঐ শিশু চারাগাছগুলির কাছে ছিল চির – অসমাপ্ত গল্প ।

( ঙ ) “ আমি চিরপথিক , মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব , রৌদ্রে বাদলে , দিনে – রাত্রে ।” 

উত্তরঃ পৃথিবীর বুকে জীবনের ক্রমবিবর্তনের ধারায় উদ্ভিদ সকলেরই পূর্বে জন্মেছিল । উদ্ভিদ হল সৃষ্টির আদিমতম প্রাণ । তাই প্রাণের বিকাশের জয়যাত্রায় উদ্ভিদকে সকল জীবের অগ্রগামী বলা হয়েছে । 

সূর্যের কিরণই হল জীবনের মূল উৎস তথা সমস্ত জীবজগতের প্রধান উপাদান । সূর্যকিরণের জন্যই জলে এবং স্থলে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে । তাই গাছ তার প্রাণধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সূর্যের করুণা ও কৃপাপ্রার্থী । লেখক কল্পনা করেছেন যে , প্রাণদাতা সূর্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর কৃপাভিক্ষা করার জন্যই গাছেরা নমস্কারের ভঙ্গিতে হাতজোড় করে সূর্যের সঙ্গে কথা বলে। 

৬। রচনামূলক প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) বলাইয়ের চরিত্র আলোচনা করো । 

উত্তরঃ উদ্ভিদপ্রেমিক বলাইয়ের আত্মীয় পরিজন বন্ধুবান্ধবগণ গাছপালার ব্যাপারে তার সমব্যথী বা সহমর্মী নয় । ঘাসিয়াড়া গাছ কাটার সময় ছোট চারাগাছ , লতাগুল্ম নির্বিচারেও নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকে , তা দেখে বলাই যে ব্যথা – বেদনা – দুঃখ – যন্ত্রণা পায় তা বোঝবার মতো সমব্যথী কেউ নেই । তার সঙ্গী – সাথীগণ তাকে রাগানোর। জন্য গাছের ফুল ছেঁড়ে , ডাল ভাঙে , তাতে তার যে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা হতে থাকে , তা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করার মতো কেউ নেই । সেজন্য তার মনে হয় তার ব্যথাগুলো তার একেবারে নিজস্ব , একার । 

লেখকের ভাইপো বলাই ধীর স্থির ও চুপচাপ স্বভাবের । এ সম্পর্কে লেখক বলেছেন , “ ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ , চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস , নড়েচড়ে বেড়ানো নয় । ” বলাই স্বল্পভাষী , কিন্তু চিন্তাশীল । গাছের অঙ্কুরোদগম থেকে ক্রমবৃদ্ধি নিয়ে বলাইয়ের অশেষ কৌতূহল ও ঔৎসুক্য সীমাহীন । জানার কৌতূহলে জিজাসা অন্তহীন । তা নিয়ে বলা হয়েছে , “ নতুন অঙ্কুরগুলো ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই । ” …. তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে , তারপরে ? 

গাছের প্রতি সমব্যথী , সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল বলাই । গাছের ফুল তুললে , আঘাত করলে , ডাল ভাঙলে বলাইয়ের বুকে ব্যথা জাগে , উথলে ওঠে কান্না । সে জানে , “ কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই । ” সকলের ওপর বলাইয়ের উদ্ভিদস্বভাব ও প্রকৃতিপ্রীতি । উদ্ভিদস্বভাবের বড়ো পরিচয় “ তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল । ” প্রসঙ্গত তার সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে “ এই ছেলের প্রকৃত বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে যেদিন – ভাবী – অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে । ” আর তাই গাছেদের উদ্‌গত বিশ্বপ্রাণের বাণী তার রক্তে সতত প্রতিধ্বনিত । গল্পটির মধ্যে বলাইয়ের উদ্ভিদপ্রীতির অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে— “ গাছেরা এর পরম আত্মীয় । সে গাছপালার সুখ – দুঃখের সঙ্গে একাত্ম । তাদের প্রতি তার সহমর্মিতা ও সমবেদনার অবধি নেই । ” 

( খ ) ‘ বলাই ’ পাঠটি একটি প্রকৃতি – বিষয়ক গল্প — এই আলোকে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ গল্পকার রবীন্দ্রনাথের বহু সফল ও সার্থক ছোটগল্পের মধ্যে ‘ বলাই ’ হল অন্যতম । বলাই স্বতন্ত্র ধরনের এক ভাবকেন্দ্রিক গল্প । এ ধরনের গল্প কেবল বাংলা সাহিত্যে নয় , বিশ্ব সাহিত্যেও দুর্লভ । ‘ 

বলাই ’ উদ্ভিদপ্রেমিক । গাছের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন সখ্য , পরম আত্মীয়তা । চেয়ে চেয়ে দেখা , মনে মনে ভাবা আর চুপচাপ থাকা স্বভাবের ছেলে বলাই । তার অভিন্ন একাত্মতা গাছের সঙ্গে । তার বয়স যেন কোটি বছর আগেকার , ভূস্তরে যখন গাছের জন্মলগ্ন শুরু হয়েছে সেই আদ্যিকালের বয়স যেন । সে শুনতে পায় তার রক্তে বিশ্বপ্রাণের ধাত্রী যে গাছ তার বাণী । দীর্ঘাকৃতি দেবদারুর ছায়ায় গিয়ে কখনও একা দাঁড়ায় , আর তখনই গা ছমছম করা শিহরণের মাঝে যেন দেখতে পায় প্রকাণ্ড গাছের ভেতরকার মানুষকে । সে মানুষ এত পুরনো যে হয় আদ্যিকালের দাদামশাই , নয়তো একদিন রূপকথার কালের । বীজের অঙ্কুরোদগম থেকে প্রতিদিনকার বৃদ্ধি অসীম কৌতূহল নিয়ে সে দেখে। 

গাছেদের প্রতি ছিল তার গভীর সমবেদনা ও মমত্ব । ঢিল ছুঁড়ে কেউ ফল পাড়তে চাইলে , গাছকে লাঠি দিয়ে কেউ প্রহার করলে , গাছের পাতা কেউ ভাঙলে তার বুকে ব্যথা বাজে। সে উদ্‌গত কান্না লুকোয় , পাছে পাগলামি ভেবে তাকে কেউ উপহাস করে । ঘাসিয়াড়া ঘাসের বুকে লুকানো আগাছা গুল্ম নির্বিচারে সাফ করলে সে বেদনায় অধীর হয় । অনুভব করতে পারে এ ব্যথা সম্পূর্ণ তার একার , দ্বিতীয় সহমর্মী তার কেউ নেই , গাছ যেন তার প্রাণের দোসর প্রতিরূপ । 

বলাই একটি ভাবসমৃদ্ধ গল্প হলেও লেখক প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে বলাই চরিত্রকে উপস্থাপিত করেছেন । সৃষ্টির আদি প্রাণের ধারক যে গাছ তার প্রতিরূপ , প্রাণের দোসর । গল্পের ভাববস্তুর সঙ্গে বলাই একাত্ম হলেও চরিত্রে সম্পদে সে অনন্য অদ্বিতীয় , সেইজন্য বলাই গল্পটিকে প্রকৃতি – বিষয়ক গল্প বলা যায় । 

( গ ) “ তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে । ” — এখানে ‘ তাদের ’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? ‘ ওর ’ – ই বা কে ? ‘ তাদের ’ এবং ‘ ওর ’ চিরকালের সম্পর্কটা কী তা আলোচনা করো । 

উত্তরঃ এখানে ‘ তাদের ’ বলতে সদ্য গজিয়ে ওঠা কচি কচি পাতাকে বোঝানো হয়েছে । ‘ ওর ’ বলতে বলাইকে বোঝানো হয়েছে । 

বলাই চরিত্রটি গাছের ‘ প্রতিরূপ ’ এক চরিত্র । তার অভ্যাস ছিল কেবল চেয়ে চেয়ে চুপচাপ দেখা । গাছপালা যেমন নড়াচড়া করে না , তেমনি বলাইও নড়াচড়া করত না । গাছপালার মূল সুরগুলো ছিল তার প্রকৃতিতে প্রবলভাবে প্রকট । পুব আকাশে কালো মেঘ জমলে সে পুলক বোধ করত । ওর মনটাতে ভিজে হাওয়া এনে দিত শ্রাবণ – অরণ্যের গন্ধ । 

বলাইয়ের ভাবে ভোলা চোখদুটি যে বড়ো বড়ো গাছ বা আকাশকে খুঁজে বেড়ায় , কেবল তাই নয় , মাটির দিকে তাকিয়ে অঙ্কুরিত গাছের রহস্যও সে খুঁজে পায় । বীজ থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা অঙ্কুরের কোঁকড়ানো মাথাটুকু দেখে তার ঔৎসুক্যের সীমা থাকে না । গাছের ওপর কোনরকম অত্যাচার সে সহ্য করতে পারে না । বাড়ির বাগানে ‘ ঘাসিয়াড়া ’ এসে যেভাবে নিষ্ঠুর নিড়ানি দিয়ে ঘাস এবং ছোটো চারাগাছ কেটে নিয়ে যায় , তা দেখে তার হৃদয় ব্যথিত হয় । গাছের জন্য এই মর্মপীড়া এবং ব্যথাবোধ হল বলাইয়ের একান্ত নিজের ব্যথা যার কথা সে কাউকে বলতে পারে না ।

মাঘের শেষে আমের বোল ধরলে বলাইয়ের রক্তের ভিতরে এনে দিত নিবিড় আনন্দ । তার মনে জাগ্রত করত কিসের যেন এক অব্যক্ত স্মৃতি। ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবন প্রকৃতিকে যেমন চারিদিক থেকে আনন্দে মাতোয়ারা করে তোলে , প্রকৃতির গায়ে লাগিয়ে দেয় ঘন রঙ , বলাইকেও তেমনি এই আনন্দ মাতোয়ারা করে তুলত । সে খুব স্বচ্ছন্দ অনুভব করত প্রকৃতির এই আনন্দে । 

বলাইয়ের ভেতর প্রচ্ছন্ন আছে অনন্তকালের আদিম পৃথিবীর স্মৃতি । বৃষ্টি ধোয়া সকালে সামনের পাহাড়ের শিখরের ফাঁক দিয়ে দেবদারু বনের ওপর যখন কাঁচা সোনার মতো রোদ্দুর এসে পড়ে , সেইসময় দেবদারু গাছের নীচে দাঁড়ালে বলাই ওই সব গাছের ভেতরকার মানুষকে দেখতে পায় । কোটি কোটি বছর আগেকার বিশ্বপ্রাণের মুকধাত্রী যে গাছ তাদের বিশ্বপ্রাণের বাণী বলাই কেমন করে যেন নিজের রক্তে শুনতে পেয়েছিল । বাগানে সদ্যোজাত শিমূল গাছটি দেখে তার উৎসাহ সীমাহীন । বেয়াড়া চেহারায় বেড়ে ওঠা শিমুল গাছটিকে কাকা কেটে ফেলবেন শুনে সে চমকে ওঠে । ছুটে গিয়ে কাকিকে অনুরোধ জানায় কাকাকে বারণ করার জন্য । সেইজন্য সিমলাতে চলে গিয়েও বলাই গাছটার কথা ভুলতে পারে না । গাছটা কেটে ফেলার ব্যথা কাকিমার বুকে যেন ক্ষত সৃষ্টি করেছিল কেননা কাকিমা জানতেন উদ্ভিদপ্রেমিক বলাইয়ের প্রাণের দোসর ছিল শিমূল গাছটি । 

( ঘ ) ‘ বলাই ‘ গল্পের ধ্যমে ওর প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ গল্পের প্রধান চরিত্র বালক বলাই । খুব শিশু অবস্থা থেকে বলাই মাতৃহারা এবং নিঃসন্তান কাকা – কাকিমার কাছে পরম স্নেহে যত্নে মানুষ । বলাই কথা বলার চেয়ে চুপচাপ দেখতে ভালোবাসে । শ্রাবণ – অরণ্যের ভিজে হাওয়ার গন্ধে তার ভিতরটা পরিপূর্ণ হয় । সে উপলব্ধি করে সমস্ত শরীর দিয়ে ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজ , বিকালের রোদপড়া আকাশ থেকে তার আদুল গা কী যেন সংগ্রহ করে , শেষ মাঘের আমের বোল ধরা নিবিড় আনন্দ সে উপলব্ধি করে । একলা বসে আপন মনে গল্প করতে তার ইচ্ছা হয়। ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকা বলাই কম কথা বলে , মনে মনে অনেক বেশি ভাবে । 

চারপাশের মানুষজনের চেয়ে বলাইয়ের অনেক বেশি যোগ তৃণলতা গাছপালার সঙ্গে । তার উদ্ভিদপ্রীতি ও উদ্ভিদস্বভাব তার স্বভাব – প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য । কাকার সঙ্গে সে একবার পাহাড়ে গেলে , সেখানে ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের ঢালকে তার মনে হয়েছিল । চলমান , ফলে সে তাতে গড়াত , ঘাসের ডগায় যত সুড়সুড়ি লাগত তত হাসত । রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর সকালে দেবদারু গাছের ছায়ায় তাকিয়ে থাকত অবাক চোখে । 

বলাইয়ের নিত্যদিনের প্রতি মুহূর্তকে ঘিরে থাকত তার চারপাশের গাছপালা ও তৃণলতা । বাগানে মাটির দিকে চোখ রেখে খুঁজে বেড়াত কোথায় কখন কোঁকড়ানো মাথা নিয়ে আলোতে জেগে উঠেছে বীজের খোলার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা অঙ্কুর , কেমন করে সবুজ পাতা মেলে অঙ্কুরিত বীজ ধীরে ধীরে নিজের প্রাণসত্তাকে মাটির বুকে ক্রমশ প্রতিষ্ঠা করছে । গাছের ক্রমবৃদ্ধি সম্পর্কে তার ছিল সীমাহীন জিজ্ঞাসা । বলাইয়ের আত্মীয়তা যে উদ্ভিদ সমাজের সঙ্গে , তাদের আঘাত বেদনার সমব্যথী ও সহমর্মী ছিল বলাই । গাছেদের ব্যথা বেদনায় সে যে ব্যথিত হত তা প্রকাশে ছিল তার সংকোচ , কিছু ব্যথা ছিল যা তার সম্পূর্ণ একলার। 

দিনে পৃথিবী যখন তার বুকে ভাবী অরণ্যের জন্মের ক্রন্দন শুনতে পেয়েছিল বলাই যেন সেইরূপে আদিম অরণ্যের ভাষা নিজের মধ্যে শুনতে পায় । শুনতে পায় বিশ্বপ্রাণের প্রাণী। 

আসল কথা বলাই হল প্রকৃতির প্রতিরূপ , গাছপালার সঙ্গেই তার নিবিড় ভালোবাসা । এদের সবারই স্বাচ্ছন্দ্যেই তার সুখ । 

৭। পাঠনির্ভর ব্যাকরণ : 

( ক ) নিচের শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ লেখো : 

বিস্তৃত , প্রচ্ছন্ন , অব্যক্ত , অন্তর , প্রকাণ্ড , অসমাপ্ত , নিষ্ঠুর , অমৃত , নির্লজ্জ , নির্বোধ , বন্ধুর , ক্ষত , প্রতিরূপ , নিবিড় । 

উত্তরঃ বিস্তৃত — সংকীর্ণ ।

প্রচ্ছন্ন — উন্মুক্ত ।

অন্তর — বাহির ।

প্ৰকাণ্ড — ক্ষুদ্র ।

অসমাপ্ত — সমাপ্ত ।

নিষ্ঠুর — দয়ালু ।

অমৃত — গরল ।

নির্লজ্জ — লজ্জাশীল ।

নির্বোধ — বুদ্ধিমান ।

ক্ষত ― অক্ষত ।

বন্ধুর — মসৃণ ।

প্রতিরূপ — রূপ ।

নিবিড় — নিঃসঙ্গ ।

( খ ) রেখাঙ্কিত পদগুলির কারক – বিভক্তি নির্ণয় করো :

১। একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি । 

উত্তরঃ অপাদান কারকে ‘ এ ’ বিভক্তি , কর্মকারকে ‘ শূন্য ’ বিভক্তি । 

২। বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে পড়তে দিলেন । 

উত্তরঃ করণ কারকে ‘ এর ’ বিভক্তি । 

৩। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে । 

উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘ এর ’ বিভক্তি । 

৪। বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না । 

উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘ এর ’ বিভক্তি , কর্মকারকে ‘ শূন্য ’ বিভক্তি । 

৫। বলাই সেই দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । 

উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘ এ ’ বিভক্তি । 

( গ ) পদ পরিবর্তন করো : 

সুন্দর , বিলেত , চিন্তা , গোপন , লোভ , তমৎকৃত , প্রত্যহ , বিস্তৃত , অন্তর , পুষ্প , উৎসুক , প্রস্তাব গ্রহণ , গম্ভীর , বন্ধুর , অসংগত । 

উত্তরঃ সুন্দর — সৌন্দর্য ।

চিন্তা — চিন্তনীয় ।

লোভ — লোভনীয় ।

বিলেত — বিলেতি ।

গোপন — গোপনীয় ।

চমৎকৃত ― চমৎকার ।

প্রত্যহ — প্রাত্যহিক ।

বিস্তৃত — বিস্তার ।

অন্তর — আন্তরিক ।

পুষ্প — পুষ্পিত ।

উৎসুক — ঔৎসুক্য ।

গ্রহণ — গ্রহণীয় ।

প্রস্তাব ― প্রস্তাবিত ।

গম্ভীর — গাম্ভীর্য ।

বন্ধুর — বন্ধুরতা ।

অসংগত ― সংগীত ।

৮। যোগ্যতা বিচার : 

( ক ) প্রকৃতি – প্রীতির প্রয়োজনীয়তা কী ? 

উত্তরঃ চেতন ও অচেতন উভয়কে নিয়েই আমাদের পরিবেশ । উভয়কে নিয়েই অখণ্ড পৃথিবী । একই সঙ্গে প্রকৃতির দুটি রূপ মেলে , একটি প্রয়োজনের অপরটি আনন্দের । এই বৈষম্যের সামঞ্জস্য বিধানেই মানব জীবন ও সভ্যতা সুন্দর হতে পারে । অরণ্য থেকে অরণি সংগ্রহ করে আমরা নানারকমের প্রয়োজন মেটাই । কিন্তু সংগ্রহ সীমাহীন হলে বৃক্ষশূন্য মরুভূমি তৈরি হয় । আগ্রাসী যন্ত্রসভ্যতার প্রসারে বায়ু ও জল দূষিত হয়ে থাকে । জলাভূমি ভরাট করে অথবা চাষের জমিতে বসতি গড়ে তুলে আমরা পরিবেশকে ধ্বংস করে থাকি । সবুজ বিপ্লবের প্রয়োজনে বনভূমি হ্রাস পায় , রাসায়নিক সারের ব্যবহারে বিভিন্ন প্রজাতির জীব ধ্বংস হয় , শেষপর্যন্ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই । 

কিন্তু প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করলে সমস্ত দেশ সমেত পৃথিবীকে বাঁচানোর সমস্যা হবে । সেইজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা ও কর্মপন্থা মাথায় রেখে পরিকল্পনা আবশ্যক । আগামীদিনে মানুষের কাছে কোনো বড়ো রকমের ধ্বংসের পরিবেশ যাতে গড়ে না ওঠে , সেইজন্য প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন । 

( খ ) মানুষ-জীবজন্তুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক আলোচনা করো । 

উত্তরঃ জীবজগতের বিবর্তনের মধ্যে অরণ্যের বুকেই মানুষের জন্ম । মানুষের জীবন ধারণের জন্য আহার দরকার । অরণ্যের ফলমূল মানুষের প্রথম আহার জুগিয়েছে । কেবল মানুষ নয় , অন্যান্য প্রাণীরও আহার জুগিয়েছে অরণ্য । অরণ্যের ডাল দিয়েই মানুষ হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করেছে । বাতাসের দূষণে জীবকুল বিপন্ন হয়। সেজন্য কার্বন ডাই – অক্সাইডের মতো গরল গ্রহণ করে শ্বাস – প্রশ্বাসের জন্য আবশ্যকীয় অক্সিজেন উৎপন্ন করেছে । মানবকুলের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত অরণ্য বন্যা ও ভূমিক্ষয় থেকে আমাদের রক্ষা করেছে । জৈব সারের সহযোগিতায় ভূমিকে উর্বর করেছে । সভ্য মানুষের কাগজ, কাঠ , ভেষজ ও অন্যান্য বহু শিল্পের সম্ভার অরণ্যেরই উপহার । অরণ্যের শান্ত স্নিগ্ধ মাধুর্যময় পরিবেশে প্রাচীন ভারতীয় ও অন্যান্য সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । অরণ্যই প্রাণের সুতিকাগার । অরণ্য পশুপাখি সকলের অভয় আশ্রয় । অরণ্যের কাছেই মানুষের জন্ম জন্মান্তরের অপরিশোধনীয় ঋণ ।

( গ ) বলাইয়ের সঙ্গীরা কী কী উপায়ে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করত ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপারার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দুপাশের গাছগুলিতে আঘাত করতে করতে চলত , হঠাৎ বকুল গাছের ডাল ভেঙে ফেলত এবং গাছের ফুল তুলত ইত্যাদি । ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে আমলকী পাড়ে , বলাই কিছু বলতে পারে না , সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায় । 

জ্ঞাতব্য বিষয় : প্রকৃতি – বিষয়ক রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার বই আছে । তার নাম হল ‘ বনবাণী ’ । রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিকে বড়ো ভালোবাসতেন । তিনি শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন । সেই উৎসব আজও প্রচলিত আছে । ৮ ই জুন তারিখ হল আমাদের বিশ্ব পরিবেশ দিবস । 

৯। ব্যাকরণঃ 

( ক ) পদ পরিবর্তন করো । 

নিক্ষেপ – নিক্ষিপ্ত ।

আঘাত — আঘাতপ্রাপ্ত ।

খণ্ড — খণ্ডিত ।

ফল ― ফলন্ত ।

কল্পনা — কল্পিত ।

উজ্জ্বল ― ঔজ্জ্বল্য ।

আতঙ্ক ― আতঙ্কিত ।

শ্রান্ত ― শ্রান্তি ।

আনন্দ — আনন্দিত ।

উদ্ধার — উদ্ধৃত । 

ロ নিজে করো । 

স্ত্রী , চুরি , দুর্বল , পাথর , আহার , সংকীর্ণ , শৃঙ্খল , অবরোধ , গোপন, আবিষ্কার , নিদ্রা , আশ্রয় , ভুল , নিরুদ্দেশ , অংশ , কুলীন , আশ্বাস , তন্ত্র , চমক । 

উত্তরঃ স্ত্রী — স্ত্রৈণ ।

চুরি ― চৌর্য ।

দুর্বল — দুর্বলতা ।

পাথর ― পাথুরে ।

আহার — আহার্য ।

সংকীর্ণ — সংকীর্ণতা ।

শৃঙ্খল ― শৃঙ্খলতা ।

অবরোধ — অবরুদ্ধ ।

গোপন — গোপনীয়তা ।

আবিষ্কার — আবিষ্কৃত ।

নিদ্রা — নিদ্রালু ।

আশ্রয় — আশ্রিত ।

ভুল ― ভুলো ।

নিরুদ্দেশ ― নিরুদ্দিষ্ট ।

অংশ — আংশিক ।

কুলীন — কৌলিন্য ।

আশ্বাস — আশ্বসিত ।

তন্ত্র — তান্ত্রিক ।

চমক — চমকিত ।

( খ ) প্রত্যয় কাকে বলে ? প্রত্যয় কত প্রকারের ? প্রত্যেক প্রকার প্রত্যয়ের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তরঃ ধাতু বা শব্দ প্রকৃতির সাথে যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যোগ করে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে প্রত্যয় বলে । প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার । কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয় । 

কৃৎপ্রত্যয — ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হয তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে । যেমন— 

বাংলা কৃৎ প্রত্যয় – চল্ + অন্ত = চলন্ত ।

কাঁদ্ + উনি = কাঁদুনি ।

সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় – দৃশ্ + অনট্ = দর্শন ।

কৃ + তব্য = কর্তব্য । 

তদ্ধিত প্রত্যয়— শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে । যেমন— 

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় — বাবুগিরি — বাবু + গিরি = বাবুগিরি ।

পাটনাই — পাটনা + আই — পাটনাই । 

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় : 

অপত্য অর্থে = রাধেয় — রাধা + ষ্ণেয় — রাধেয় । 

বিবিধ অর্থে = পার্থিব — পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব । 

অন্যান্য অর্থে = ভারত + ষ্ণীয় = ভারতীয় । 

প্রত্যয় নির্ণয় করো । 

যেমন — নাচন , রান্না , চড়াই , ডুবারী , পাণ্ডব , গাঙ্গেয় , দৈত্য , দ্বৈপায়ন । 

উত্তরঃ নাচন = নাচ্‌ + অন ( কৃৎপ্রত্যয় ) 

চড়াহ = চড় + আই ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

রান্না = রাঁধ + অনা ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

ডুবাবি = ডুব + আরি ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

পাণ্ডব = পাণ্ডু + ষ্ণ ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

গাঙ্গেয = গঙ্গা + ষ্ণেয় ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দৈত্য = দিতি + ষ্ণ্য ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দ্বৈপায়ন = দ্বীপ + ষ্ণয়ন ( তদ্ধিত প্রত্যয় )

( গ ) অশুদ্ধি সংশোধন করো । 

● শব্দ সংশোধন :

আবিস্কার — আবিষ্কার ।

গননা — গণনা ।

নিরব — নীরব ।

নিরোগী ― নিরোগ ।

উচিৎ — উচিত । 

নমষ্কার ― নমস্কার ।

উজ্জ্বল ― উজ্জ্বল ।

জেষ্ঠ্য — জ্যেষ্ঠ ।

অনটন — অনটন ।

স্বরস্বতী — সরস্বতী ।

রামায়ণ — রামায়ণ ।

সন্ধা — সন্ধ্যা ।

ব্যায — ব্যয় ।

বাল্মিকী — বাল্মীকি । 

● নিজে করোঃ 

পৌরহিত্য , ব্যবস্তা , সান্তনা , রসায়ণ , সন্মান , পূর্বাহ্ন , বৈশিষ্ট, বিদ্যান , সাধণা , সদ্যজাত , সন্যাস , নিশিথ , অভ্যস্থ ।

উত্তরঃ                 

● বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধনঃ 

আবশ্যক নেই ― আবশ্যকতা নেই । 

নামজাদা লেখক — নামকরা লেখক । 

মুদি দোকান — মুদির দোকান ।

ছোটবেলাকার কথা — ছোটবেলার কথা । 

গোপন কথা — গোপনীয় কথা । 

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষী — আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ । 

ছেলেটি অশুদ্ধ সংশোধন করতে পারে না — ছেলেটি বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধন করতে পারে না । 

● নিজে করোঃ 

মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর , দেবী দূর্গা দর্শভূজা , আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব , জ্ঞানমান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন , তিনি আরোগ্য হলেন, অপমান হবার ভয় নেই । 

উত্তরঃ মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর — মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো। 

দেবী দূর্গা দর্শভূজা — দেবী দুর্গা দশভুজা । 

আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব — আমি সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাব । 

জ্ঞানমান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন — জ্ঞানবান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন । 

তিনি আরোগ্য হলেন — তিনি আরোগ্য লাভ করলেন । 

অপমান হবার ভয় নেই — অপমানিত হবার ভয় নেই । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। সমাস নির্ণয়ঃ 

জীবজন্তু = জীব ও জন্তু ( দ্বন্দ্ব সমাস ) 

লোকালয = লোক পূর্ণ আলয় ( মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ) 

ঘাসিয়াড়া = ঘাস কাটে যে ( উপপদ তৎপুরুষ ) 

নিঃসন্তান = নাই সন্তান যার ( নঞ বহুব্রীহি ) 

প্রতিরূপ = রূপের সদৃশ ( অব্যয়ীভাব ) 

২। প্রকৃতি প্রত্যয় : 

বল্ + আই = বলাই ।

প্র – কৃ + তি = প্রকৃতি ।

বি – পদ্ + অ = বিপদ ।

মনু + ষ্ম্য = মানুষ ।

পুষ্প + ইত = পুষ্পিত ।

৩। বাক্য পরিবর্তন করোঃ 

( ক ) গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে । ( প্রশ্নসূচক বাক্যে ) 

উত্তরঃ গাছের সেই রব আজও উঠছে না বনে বনে ? 

( খ ) কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল , আমাদের ঘর হল শূন্য । ( সরল বাক্যে ) 

উত্তরঃ কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে যাওয়ায় আমাদের ঘর শূন্য হল । 

● অতিরিক্ত জ্ঞাতব্য বিষয় : 

লণ্ডনে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিতে দেখা গেল একটি গাছের ডাল নিয়মিত ঘর্ষণে দেওয়াল ফাটিয়ে ফেলেছে । গৃহস্বামিনী বৃদ্ধাকে বলা হয় , ডালটা কেটে ফেলে তো দেওয়ালটা বাঁচানো যায় । বৃদ্ধা আঁৎকে উঠলেন । গাছের সামান্য একটা ডাল ছাঁটতে হলেও খোদ ব্রিটিশ রানীর অনুমতি দরকার । রানীর দপ্তরে প্রতিটি গাছের পূর্বাপর পরিচয়, কে লাগিয়েছে , কেন লাগিয়েছে , কবে লাগিয়েছে সব কিছুর নথি আছে। গাছ কাটার আবেদনপত্র পেলে তাঁর লোক আসবে , দেখবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাকচ করে দেবে । গাছ যেমন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে আশ্রয়চ্যুত করছে তেমনই বহু পাখিকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়েছে । সেজন্য গাছটা কাটা চলবে না । এখানেই প্রকৃতিপ্রীতির যথার্থ পরিচয়।

● পরিবেশ নিয়ে আর একটি গল্প :

জাপানের ছোট শহর ফুকুওকা । সময় ১৯৯০ সাল । জাপানিদের পুষ্পপ্রেম ও প্রকৃতির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া গেল একটি ঘটনায় । ঘটনাটি হল— ফুকুওকা শহরে একটি বড়ো রাস্তা কিছুদূর গিয়ে খুব সরু হয়ে গিয়েছে । চওড়া না করলেই হয় না । শেষ প্রান্তে রাস্তাটি মাত্র চার মিটার । কোনো গাড়িতে পারে না । এই অঞ্চলটায় আছে একটি দিঘী এবং চারটি চেরিফুলের গাছ — যা সৌন্দর্য বিতরণ করে পাড়াটির আনন্দ বাড়িয়েছে । মিউনিসিপ্যাল কর্তাদের অত সৌন্দর্য দর্শন করলে চলে না । যানবাহন চলাচলের কথাটাও তাদের ভাবতে হয় । তারা গাছের ডালে নোটিশ টাঙিয়ে দিল । প্রথমে যে চেরি গাছটি কাটা হল সেটির বয়স পঞ্চাশ বছর । 

গাছটিতে কড়ি এসেছিল । ফুল তখনও ফুটতে শুরু করেনি । পরদিন সকালে দেখা গেল কে বা কারা একটি বড় কাগজে একটি কবিতা লিখে সেঁটে দিয়েছে । মিউনিসিপ্যালিটির মেয়রকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতটিতে চেরিফুলের অপার সৌন্দর্য ও জাপানি জীবনে চেরিফুলের ভূমিকা উল্লেখ করে বলা হল – মেয়র মহাশয় , যে গাছটি আপনি কাটলেন এবং কাল অন্য যে গাছগুলো আপনি কাটবেন , তাদের পনেরো দিন প্রাণভিক্ষা দিন । তাদের ফুল এখনও ফোটেনি । সবে কড়ি দেখা দিয়েছে বসন্তকালটা তারা উপভোগ করুক। দেখতে দেখতে এই কবিতার কথা সারা জাপানে ছড়িয়ে পড়ল । একদিন পরে দেখা গেল পাশের চেরিগাছটায় আর একটি কবিতা — ‘ যে হৃদয় চেরিফুলের জন্য কাঁদে , সে হৃদয় ইয়ামাতোর পবিত্র হৃদয় । ওই গাছ কাটা হবে না । ওখানেই সে থাকবে । ‘ কবিতাটির ইংরেজি দুটো লাইন এরকম— 

” To the keeper of cherry trees 

the Hon’ble mayor sindo , 

Take pity on the cherry buds 

Please grant them a fortnight’s reprieve ” 

মেয়র নগরবাসীর পুষ্পপ্রেম দেখে মুগ্ধ । তিনি নিজে এবার কবিতা লিখে গাছে , সেঁটে দিলেন— ” 

” The heart that grieves for the flowers 

is the true heart of Yamato ….. “

6 thoughts on “SEBA Class 10 Bengali Chapter – 8 বলাই”

  1. Sahanaz khanom Barbhuiya

    আদরিনী পাঠের প্রশ্ন উওর কখন আসবে ।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top