Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে is a textbook prescribed by the ASSAM AHSEC Board Class 11 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে Solutions are free to use and easily accessible.

Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে |একাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্ন ও উত্তর

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 11 Advance Bengali Chapter 9 ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে Question Answer. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 1st year Advance Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. AHSEC Board Class XI Advance Bengali Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. HS 1st Year Advance Bengali Subject Suggestion Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Textbooks. HS 1st Year Advance Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে

গদ্যাংশ

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ

১। ভগীরথের গঙ্গা আনয়নের বৃত্তান্ত সবিস্তারে লেখো।

উত্তরঃ সন্ধ্যা হলে লেখক জগদীশচন্দ্র বসু তার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর তীরে এসে বসতেন। নদীর স্রোতধারাকে দেখে তার মনে কৌতূহল জাগত এই জলধারা কোথা থেকে আসছে আর যাচ্ছেই বা কোথায় ? তিনি নদীকে জিজ্ঞেস করতেন, সে কোথায় থেকে আসছে। তখন উত্তরে নদী বলত, “মহাদেবের জটা হইতে।” তখন লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর ভগীরথের মর্ত্যে গঙ্গা আনয়নের বৃত্তান্ত মনে পড়ত। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে মহাদেবের জটা থেকে।

মহামুনি কপিলের অভিশাপে সাগর রাজার বংশ ধ্বংস হয়ে গেলে, এই বংশের রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ পূর্বপুরুষগণের মুক্তির জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন তিনি শুনেছিলেন গঙ্গার স্পর্শেই তার পূর্বপুরুষগণের মুক্তি সম্ভব। ভগীরথের  তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা গঙ্গাকে মুক্তি দেন। ব্রহ্মার কমণ্ডুল থেকে মুক্ত গঙ্গাকে ধারণ করার ক্ষমতা মহাদেব ছাড়া অন্য কারো ছিলনা, তাই ভগীরথ মহাদেবকেও তার তপস্যায় তুষ্ট করেন মহাদেব গঙ্গাকে নিজ জটাজালে ধারণ করার পর পুনরায় ভগীরথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একে বিন্দু সরোবরে ত্যাগ করেন। তা থেকে গঙ্গা সপ্তধারায় প্রবাহিত হতে থাকে, একটি ধারা ভগীরথের পশ্চাদ্‌গামিনী হয়; তাঁর স্পর্শে সাগর সন্তানরা উদ্ধার লাভ করেন। এই প্রবাহের নাম হয় ভাগীরথী।

২। লেখক কীভাবে ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে কোথায় গিয়েছিলেন বিস্তারিতভাবে লেখো।

অথবা, 

‘লেখক জগদীশচন্দ্র ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে কল্পনা বলে কোথায় গিয়েছিলেন এবং কি দেখেছিলেন তা আলোচনা কর ।

অথবা, 

‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ পাঠটির মূল বক্তব্য তোমাদের নিজের ভাষায় লিপিবদ্ধ করো।

উত্তরঃ জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটি ‘অব্যক্ত’ নামক গ্রন্থটি থেকে সংকলিত। লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ির পাশ দিয়ে গঙ্গানদী প্রবাহিত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লেখক একা নদীর তীরে বসতেন। নদীতে জোয়ার-ভাটা, ছোট-বড় ঢেউ দেখতেন। প্রতিদিন অজস্র জলধারা যেতে দেখে তার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, এই অজস্র জলধারা প্রতিদিন বয়ে যায় কিন্তু সে তো আর ফিরে আসেনা তবে এই অনন্ত জলধারা কোথা থেকে আসে। তিনি নদীকে জিজ্ঞাসা করে উত্তর পান ‘মহাদেবের জটা থেকে। পরবর্তীকালে লেখক গঙ্গা নদীর উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন পণ্ডিতগণের ব্যাখ্যা শুনেন যা তাকে কল্পনাবলে নদীর উৎস সন্ধানে বের হতে কৌতূহল জাগায়। উত্তর-পশ্চিমে যে তুষারমণ্ডিত গিরিশৃঙ্গ দেখা যায় যা জাহ্নবীর উৎপত্তি স্থল। লেখক সেই শৃঙ্গ লক্ষ্য করে বহুগ্রাম, জনপদ অতিক্রম করে কুর্মাচলে উপস্থিত হন। সরযূ নদীর উৎপত্তি স্থল দেখে দানবপুর আসেন। উত্তরদিকের বহু পর্বত- অরণ্যানী অতিক্রম করে দুই তুষার শৃঙ্গ নন্দাদেবী ও ত্রিশূল থাকা স্থানে এসে পৌঁছলেন। 

লেখকের মনে হয় নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সংগে স্বর্গ ও মর্ত্যবিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবে দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবী শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। তারপর দুদিন পথচলার পর দেখতে পান তুষারক্ষেত্র। তুষার ক্ষেত্র হতে বারিকণা নদীরূপে প্রবাহিত হওয়ার সময় পর্বতের ভাঙা টুকরো জলধারা নিয়ে আসে। তখন পর্বতের এই অস্থিচূর্ণর সংযোগে মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। নগর, জনপদ শস্যশ্যামলা করে তুলে। নদী নানা দেশ, জনপদ বিধৌত করে শেষপর্যন্ত সাগরে গিয়ে মিশে যায়। সূর্যতাপে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘরূপে আকাশে এসে আবার পর্বত শিখরস্থ তুষার রাশিতে মিলিত হয়। সেখান থেকে বিগলিত হয়ে নদীরূপে বয়ে যায়। এই গতির বিরাম নেই। এভাবেই চক্রাবর্তনের মধ্যদিয়ে সৃষ্টি ও পয় চলতে থাকে।

S.L. No.সূচীপত্র
পদ্যাংশ
পাঠ – ১গৌরাঙ্গ – বিষয়ক পদ
পাঠ – ২দুই বিঘা জমি
পাঠ – ৩সনেট
পাঠ – ৪সুদূরের আহ্বান
পাঠ – ৫রানার
পাঠ – ৬উত্তরাধিকার
পাঠ – ৭কাস্তে
গদ্যাংশ
পাঠ – ৮রাজধর্ম
পাঠ – ৯ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে
পাঠ – ১০রামায়ণ
পাঠ – ১১রূপকথা
ছোটগল্প
পাঠ – ১২কাবুলিওয়ালা
পাঠ – ১৩রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা
পাঠ – ১৪খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)

সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা

১। “আমরা যথা হইতে আসি, আবার তথায় ফিরিয়া যাই। দীর্ঘ প্রবাসের পর উৎসে মিলিত হইতে যাইতেছি।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুক জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত এখানে লেখক নদী তথা মানব জীবনের উৎস ও পরিণতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধের অন্তর্গত এই উক্তিটিতে নদীর জলের কুল কুল শব্দের কথা বলা হয়েছে। জলকণাগুলি হিমবাহ বা তুষারকণা থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীর স্রোতে বাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয় আবার সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুপ্রবাহকে আশ্রয় করে মেঘে পরিণত হয়ে বৃষ্টি বিন্দুরূপে পর্বতচূড়ায় বর্ষিত হয়।এভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মেই জলধারা যেখানে থেকে আসে আবার সেখানেই ফিরে যায়। তেমনি মানুষও। পরমাত্মার পদতল থেকে জীবাত্মারূপে মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নেয়। সেখানে পার্থিব জীবনলীলার সমাপ্তি হলে আবার ফিরে যায় পরমাত্মার কাছে।

২। “যে যায়, সে তো আর ফিরেনা; তবে কি সে অনন্তকালের জন্য লুপ্ত হয় ?”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্ভুক্ত। লেখকের প্রিয়জনের মৃতদেহ গঙ্গারতীরে ভস্মীভূত হতে দেখে এই প্রশ্ন মনে জেগেছিল। ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটির লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু। আত্মকথন ভঙ্গীতেই রচনাটির আরম্ভ। গল্পটির কথক স্বয়ং লেখক। গঙ্গানদীর কথার মধ্যদিয়ে রচনাটির সূচনা। লেখক বলেন, তার বাল্যকাল থেকেই গঙ্গানদীর সঙ্গে সখ্যতা জন্মেছিল । নদীর তীরে বসে দেখেছিলেন বৎসরের একসময়ে এই নদীর কূল প্লাবন করে জলস্রোত বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতো। আবার হেমন্তের শেষে নদী কলেবর ক্ষীণ হয়ে উঠত। তিনি আরো লক্ষ্য করেছেন জোয়ার- ভাঁটায় নদীর গতিপথ কীভাবে পরিবর্তন হয়। রচনাটির বিশেষ দিক হলো নদীর সঙ্গে জীবনের সাদৃশ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণিত। লেখক মনে করেন গতি  পরিবর্তশীল নদী যেন একটি জীবন। 

সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকারে লেখকের শুধু মনে হতে নদীর জলের কুল-কুল ধ্বনি তীরভূমিতে আছড়িয়ে পড়ত। নদীর জলের স্রোতধারা প্রতিদিন গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা আর ফিরে আসেনা। তাই কৌতূহলী বক্তব্য “তবে এই অনন্ত স্রোত কোথা হইতে আসিতেছে” ইহার কি শেষ নেই ?” লেখকের এই জিজ্ঞাসা শুধু নদীর উৎস সম্পর্কে জানার নয়, জীবনের মূল তত্ত্বও একাকার হয়ে গেছে এই বক্তব্যে। নদীর তীরে লেখকের প্রিয়জনের পার্থিব অবশেষ চিতানলে ভস্মীভূত হতে দেখে তার মনে জীবনের উৎস ও শেষ সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। প্রতিটি জীবনের সঙ্গে অনন্তকাল ও মৃত্যু এইসব শব্দগুলির যোগসাযুজ্যের পরিধি কতটুকু তা জানার ইচ্ছা থেকেই লেখকের মুখ থেকে উদ্ধৃতিটি বের হয়।

৩। “এইরূপ পরস্পরের পার্শ্বে সৃষ্ট জগৎ ও সৃষ্টিকর্তার হস্তের আয়ুধ, সাকাররূপে দর্শন করিলাম।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত। লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু নদীর উৎস খোঁজতে বের হয়ে যাত্রাপথে পরিচিত হন নন্দাদেবী ও ত্রিশূল নামে দুই পর্বতশৃঙ্গের সংগে, এই দুই পর্বত শৃঙ্গকে দেখে লেখকের মনে কী ভাব জেগেছিল তা-ই এখানে ব্যক্ত করেছেন। 

‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।

৪। “পরস্পরের পার্শ্বে; সৃষ্ট জগৎ ও সৃষ্টিকর্তার হস্তের আয়ুধ, সাকার রূপ দর্শন করিলাম। এই ত্রিশূল যে স্থিতি ও প্রলয়ের চিহ্নরূপী, তাহা পরে বুঝিলাম।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত। এখানে লেখক ত্রিশূল পর্বত সম্পর্কে উক্তিটি করেছেন।

‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।

৫। “শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক! এখন ইহার অর্থ বুঝিতে পারিলাম।”

অথবা, 

“এই মহাচক্র প্রবাহিত স্রোতে সৃষ্টি ও প্রলয়ের রূপ পরস্পরের পার্শ্বে স্থাপিত দেখিলাম।”

উত্তর। আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত। নন্দাদেবী ও ত্রিশূল নামে বরফে আবৃত পর্বত দুটির পাদদেশে তুষারকণাগুলির ক্রিয়াকলাপ দেখে লেখকের মনে যে ভাবের সৃষ্টি হয় এখানে তা-ই উত্থাপিত হয়েছে।

‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন ।

৬। “বারিকণাগণই বৃষ্টিরূপে পৃথিবী ধৌত করিতেছে, এবং মৃত ও পরিত্যক্ত দ্রব্য বহন করিয়া সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করিতেছে। তথায় মনুষ্য চক্ষুর অগোচরে নূতন রাজ্যের সৃষ্টি হইতেছে।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত।

নদীর উৎস সন্ধান করতে গিয়ে দেখেন বারিকণাগণ বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে নানা কাজ করে চলছে এখানে লেখক তা-ই ব্যক্ত করেছেন।

‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক মানস চক্ষে পৃথিবীর ভাঙাগড়ার বৈজ্ঞানিক সত্যটি গঙ্গার উৎসভূমিতে দেখতে পেলেন। জলকণারা মাটির নীচে প্রবেশ করে পাতালপুরের অগ্নিকুণ্ডে আহুতি দিচ্ছে। বারিকণারা এমনভাবে তুষারশয্যা রচনা করেছে যাতে ভগ্ন শৈল শায়িত হয়েছে। বারিকণারা একে অন্যকে ডেকে বলছে “আইস, আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি।” বারিকণার সংঘবদ্ধ শক্তি নদী-তট উল্লঙঘন করে দেশ প্লাবিত করে। জলকণার সম্মিলিত ধারা কতপথ পার হয়ে নগর, জনপদ, গ্রামগঞ্জ ভাসিয়ে সাগরের দিকে ছুটে চলে। এই বারিকণাই বৃষ্টিরূপে পৃথিবীর মালিন্য ধুয়ে ফেলে। মৃত, পরিত্যক্ত পদার্থ সমুদ্রে নিয়ে ফেলে বেলাভূমির মাটি ক্ষয় করে সমুদ্রের মাঝেই গড়ে তোলে নতুন দ্বীপ, নতুন রাজ্য, নতুন দেশ।

৭। “আইস, আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি।” 

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। বারিকণা এখানে একে অন্যকে ডেকে বলছে পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করার জন্য। এখানে পর্বতশীর্ষের বারিকণাদের কথা বলা হয়েছে।

পর্বতের গায়ে শীত-তাপ ক্রিয়ার সংকোচন ও সম্প্রসারণের ফলে ফাটল ধরায় বারিকণাগুলি তার ভিতরে প্রবেশ করে। পরে পর্বতের অন্তর্নিহিত বারিকণা প্রচণ্ড শীতের প্রভাবে বরফ হয়ে পড়ে। শীত-তাপ ক্রিয়ার সংকোচন ও সম্প্রসারণের ফলে ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলির মতো বরফও জলে পরিণত হয়ে পড়ে। তখন সেই জল পর্বতের ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্তিকায় পরিণত করে। এই মৃত্তিকা উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। পর্বতের এই দেহাবশেষ যা মৃত্তিকারূপে বৃক্ষলতার সজীব ও শ্যাম দেহ নির্মাণ করে।

৮। “ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন বৃত্তান্ত স্মৃতিপথে উদিত হইত।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত লেখক গঙ্গানদীকে জিজ্ঞেস করতেন যে সে কোথা থেকে আসছে। নদী উত্তর দিত মহাদেবের জটা থেকে। তখন লেখকের মনে হয় ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন বৃত্তান্ত, এখানে তা-ই ব্যাক্ত হয়েছে। 

সন্ধ্যা হলে লেখক জগদীশচন্দ্র বসু তার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর তীরে এসে বসতেন। নদীর স্রোতধারাকে দেখে তার মনে কৌতূহল জাগত এই জলধারা কোথা থেকে আসছে আর যাচ্ছেই বা কোথায় ? তিনি নদীকে জিজ্ঞেস করতেন, সে কোথায় থেকে আসছে। তখন উত্তরে নদী বলত, “মহাদেবের জটা হইতে।” তখন লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর ভগীরথের মর্ত্যে গঙ্গা আনয়নের বৃত্তান্ত মনে পড়ত। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে মহাদেবের জটা থেকে।

মহামুনি কপিলের অভিশাপে সাগর রাজার বংশ ধ্বংস হয়ে গেলে, এই বংশের রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ পূর্বপুরুষগণের মুক্তির জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন তিনি শুনেছিলেন গঙ্গার স্পর্শেই তার পূর্বপুরুষগণের মুক্তি সম্ভব। ভগীরথের  তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা গঙ্গাকে মুক্তি দেন। ব্রহ্মার কমণ্ডুল থেকে মুক্ত গঙ্গাকে ধারণ করার ক্ষমতা মহাদেব ছাড়া অন্য কারো ছিলনা, তাই ভগীরথ মহাদেবকেও তার তপস্যায় তুষ্ট করেন মহাদেব গঙ্গাকে নিজ জটাজালে ধারণ করার পর পুনরায় ভগীরথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একে বিন্দু সরোবরে ত্যাগ করেন। তা থেকে গঙ্গা সপ্তধারায় প্রবাহিত হতে থাকে, একটি ধারা ভগীরথের পশ্চাদ্‌গামিনী হয়; তাঁর স্পর্শে সাগর সন্তানরা উদ্ধার লাভ করেন । এই প্রবাহের নাম হয় ভাগীরথী।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। “যে যায়, সে তো আর ফিরেনা; – অর্থ পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটির লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু। আত্মকথন ভঙ্গীতেই রচনাটির আরম্ভ। গল্পটির কথক স্বয়ং লেখক। গঙ্গানদীর কথার মধ্যদিয়ে রচনাটির সূচনা। লেখক বলেন, তার বাল্যকাল থেকেই গঙ্গানদীর সঙ্গে সখ্যতা জন্মেছিল । নদীর তীরে বসে দেখেছিলেন বৎসরের একসময়ে এই নদীর কূল প্লাবন করে জলস্রোত বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতো। আবার হেমন্তের শেষে নদী কলেবর ক্ষীণ হয়ে উঠত। তিনি আরো লক্ষ্য করেছেন জোয়ার-

ভাঁটায় নদীর গতিপথ কীভাবে পরিবর্তন হয়। রচনাটির বিশেষ দিক হলো নদীর সঙ্গে জীবনের সাদৃশ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণিত। লেখক মনে করেন গতি  পরিবর্তশীল নদী যেন একটি জীবন। 

সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকারে লেখকের শুধু মনে হতে নদীর জলের কুল-কুল ধ্বনি তীরভূমিতে আছড়িয়ে পড়ত। নদীর জলের স্রোতধারা প্রতিদিন গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা আর ফিরে আসেনা। তাই কৌতূহলী বক্তব্য “তবে এই অনন্ত স্রোত কোথা হইতে আসিতেছে” ইহার কি শেষ নেই ?” লেখকের এই জিজ্ঞাসা শুধু নদীর উৎস সম্পর্কে জানার নয়, জীবনের মূল তত্ত্বও একাকার হয়ে গেছে এই বক্তব্যে। নদীর তীরে লেখকের প্রিয়জনের পার্থিব অবশেষ চিতানলে ভস্মীভূত হতে দেখে তার মনে জীবনের উৎস ও শেষ সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। প্রতিটি জীবনের সঙ্গে অনন্তকাল ও মৃত্যু এইসব শব্দগুলির যোগসাযুজ্যের পরিধি কতটুকু তা জানার ইচ্ছা থেকেই লেখকের মুখ থেকে উদ্ধৃতিটি বের হয়।

২। “দীর্ঘ প্রবাসের পর উৎসে মিলিত হইতে যাইতেছি” অর্থ পরিস্ফুট করো।

অথবা, 

বক্তা কে ? দীর্ঘ প্রবাস বলতে কি বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ বক্তা লেখক জগদীশচন্দ্র বসু। রচনার মূল আখ্যান নদীর মৌলিক ধর্ম বিশ্লেষণ। নদীর উৎস সম্পর্কে একটা গভীর আলোচনা রয়েছে বয়ানে। লেখক দীর্ঘ প্রবাস বলতে প্রতিটি জীবনের স্বাভাবিক ধর্মকেই বুঝিয়েছেন। জলকণা হিমবাহ বা তুষারকণা থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীর স্রোতে বাহিত হয়ে সমুদ্রে পড়ে আবার সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুপ্রবাহকে আশ্রয় করে মেঘে পরিণত হয়ে বৃষ্টি রূপে পৃথিবীর বুকে আসে। তেমনি মানুষের জীবনও নদীর মতো উৎসে লয় পায়। প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষ ‌পরমাত্মার পদতল থেকে এসে জীবাত্মা পৃথিবীতে ধারণ করে আবার মৃত্যুর পর পরমাত্মার পদতলে ফিরে যায়। চক্রাকারে এই যাওয়া আসার কোন বিরাম নেই। লেখক তার আত্মীয়ের চিতাভস্মকে দেখে মনে হয়েছে যে সে পৃথিবীর মধ্যে দীর্ঘদিন ঘুরে ফিরে আবার যেখানে থেকে এসেছে সেখানেই চলে যাচ্ছে।

৩। নন্দাদেবী ও ত্রিশূল সম্পর্কে যা জানো লেখো।

অথবা, 

“সম্মুখে দেখ, জয় নন্দাদেবী – জয় ত্রিশূল” – নন্দাদেবী ও ত্রিশূলের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ জগদীশ চন্দ্র বসু রচিত ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ রচনার শেষদিকে ‘নন্দাদেবী ও ত্রিশূল সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।

কুমায়ুনের উত্তরে হিমালয়ের অন্যতম উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল নন্দাদেবী। লেখকের মনে হয়েছে শৃঙ্গটি যেন এক মহীয়সী রমণীমূর্তি। তার মাথার ওপর যে উজ্জ্বল জ্যোতি আছে তা থেকে নির্গত ধূম্ররাশি চাঁদোয়ার মতো দিগন্তব্যাপী আবরণ রচনা করেছে, এছাড়াও নন্দাদেবীর মাথায় তুষারকণা গুলি যেন উজ্জ্বল মুকুটরূপে যেন শোভা পাচ্ছে। মহাদেবের একহাতে পিনাক ও অন্যহাতে ত্রিশূল শোভা পায়। এই অস্ত্র দিয়েই তিনি সৃষ্টিও ধ্বংস করেন। এই প্রবন্ধে হিমালয়ের একটি উন্নত পর্বত শৃঙ্গকে ত্রিশূল বলা হয়েছে। লেখক এই প্রবন্ধে ত্রিশূল পর্বতকে শিব ও রুদ্রের সৃষ্টি ও ধ্বংসের পালন ও সংহারের প্রতীকরূপে বর্ণনা করেছেন। ত্রিশূল পর্বতটি এতই বৃহৎ এবং অভ্রভেদী যে লেখকের মনে হয়েছিল মহাদেবের ত্রিশূল যেন পাতাল থেকে বের হয়ে উপরের নীল আকাশকে বিদ্ধ করে আছে।

৪। “ত্রিভুবন এই মহাস্ত্রে গ্রথিত” – অর্থ পরিস্ফুট করো। 

উত্তরঃ এখানে ত্রিভুবন হলো স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল আর মহাস্ত্র হলো শিবের ত্রিশূল। লেখক একদিন শুনেছিলেন উত্তর পশ্চিমে তুষারমণ্ডিত গিরিশৃঙ্গ থেকে গঙ্গার উৎপত্তি। একদিন তিনি এই শৃঙ্গ লক্ষ্য করে যাত্রা করলেন। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখে পড়ল নন্দাদেবী ও ত্রিশূল শৃঙ্গ। লেখক কল্পনা করেছেন মহাদেবের ত্রিশূল অস্ত্রেই গ্রথিত ত্রিভুবন অর্থাৎ স্বর্গ- মর্ত্য-পাতাল। মহাদেবের ত্রিশূল সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের প্রতীক। প্রবন্ধে ত্রিশূল নন্দাদেবীর পার্শ্বস্থ একটি পর্বতশৃঙ্গ। এই পর্বতশৃঙ্গকে মহাদেবের ত্রিশূলের সঙ্গে কল্পনা করেছেন। এই মহাস্ত্রে সম্পূর্ণ ত্রিভুবন আবদ্ধ । লেখকের মনে হয়েছে মহাদেবের ত্রিশূল যেন পাতাল থেকে উৎপন্ন হয়ে মাটি ভেদ করে তার শাণিত অগ্ৰভাগ দিয়ে নীল আকাশকে বিদ্ধ করে আছে। এইভাবে মহাদেবের মহাস্ত্রে ত্রিভুবন গ্ৰথিত।

৫। সৃষ্টিকর্তার হস্তের আয়ুধ – অর্থ পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।

৬। “দুইদিন চলিলে পর তুষার-নদী দেখিতে পাইবে।” কার উক্তি ? তুষার নদীটির বর্ণনা দাও।

অথবা, 

“কোন মহাশিল্পী যেন সমগ্র বিশ্বের স্ফটিকখানি নিঃশেষ করিয়া এই বিশাল ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ সমুদ্রের মূর্তি রচনা করিয়া গিয়াছেন।” 

– উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ উক্তিটির বক্তা লেখকের যাত্রাপথের পথ-প্রদর্শক প্রকৃতির নিয়মে হিমালয়ের এক একটি পর্বত চিরতুষারাবৃত থাকে। তুষার স্তূপীকৃত হতে-হতে ভারি হয়ে গেলে তা একসময় ভেঙ্গে নীচের দিকে গড়িয়ে যায় একেই তুষারনদী বলে। লেখক তুষারনদীর খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। নদীটির স্থানে স্থানে প্রকাণ্ড ঊর্মিমালা প্রস্তরীভূত হয়ে রয়েছে । যেন কোনো মহাশিল্পী যেন সমগ্র বিশ্বের স্ফটিকখানি নিঃশেষ করে এই বিশাল ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ সমুদ্রের মূর্তি রচনা করে গেছেন। লেখক বর্ণনা করেছেন, তুষার নদীটি ধবলগিরির ডউচ্চতম শৃঙ্গ হতে এসেছে, আসবার সময় পর্বতদেহ ভেঙ্গে পাথরের টুকরো বহন করে আনছে। নদীটির দুইধারে উচ্চ পর্বত শ্রেণি আছে, নদীটির তুষার জলধারা বঙ্কিম গতিতে নিম্নস্ত উপত্যকায় পতিত হচ্ছে। কষ্টকর যাত্রার মধ্যে তুষার-নদীটির প্রত্যক্ষে এসে লেখক স্বর্গীয় ও অবর্ণনীয় আনন্দ অনুভব করেছেন।

৭। “ এই গতির বিরাম নাই, শেষ নাই”, অর্থ পরিস্ফুট করো।

অথবা, 

এখানে কোন্ গতির কথা বলা হয়েছে ? তার শেষ নাই কেন ? 

অথবা, 

“সমুদ্রে পতিত হইয়াও বারিবিন্দুগণের বিশ্রাম নাই।” – অর্থ পরিস্ফুট করো।

অথবা, 

“নদীকে আমার একটি গতি পরিবর্তনশীল জীব বলিয়া মনে হইত ।” 

-লেখকের এরূপ মনে করার কারণ কি ?

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের বারিকণিকাগুলির গতির কথা এখানে বোঝানো হয়েছে।

ভারতীয় দর্শনে বলা হয় আমরা যথা হতে আসি আবার তথায় ফিরে যাই । লেখক জগদীশচন্দ্র বসু ভাগীরথীর উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই দর্শনের বিষয়টি প্রবন্ধের মধ্যে এনে দাড় করিয়েছেন। তিনি বারিবিন্দগুলির অবিরাম গতির কথা বলেছেন । সমুদ্রে মিশে বারিবিন্দুরা সূর্যতেজে বাষ্পীভূত হয়। মেঘ হয়ে উর্দ্ধমুখী হয়। সেই বাষ্পীভূত বারিবিন্দুগুলি ঝড়ঝঞ্ঝায় তাড়িতে হয়ে আবার পর্বতের দিকে ধাবিত হয় । বারি হয়ে ঝরণারূপে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে এসে নদীতে পরিণত হয় । আবার কত নগর, জনপদ অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পৌঁছায় । সেখানে থেকে আবার বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয় এই চক্রাকারে চলছে বারিকণার গতি। এই গতির বিরাম নাই, শেষ নাই ।

৮। “তবে কি এই মহাদেবের জটা ?” – লেখক এখানে ‘মহাদেবের জটা’ বলতে কি বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।

৯। “ আমরা যথা হইতে আসি, আবার তথায় ফিরিয়া যাই।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? তারা কোথা হইতে আসে আবার কোথায় ফিরিয়া যায় ? 

উত্তরঃ ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধের অন্তর্গত এই উক্তিটিতে নদীর জলের কুল কুল শব্দের কথা বলা হয়েছে।

জলকণাগুলি হিমবাহ বা তুষারকণা থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীর স্রোতে বাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয় আবার সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুপ্রবাহকে আশ্রয় করে মেঘে পরিণত হয়ে বৃষ্টি বিন্দুরূপে পর্বতচূড়ায় বর্ষিত হয়।এভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মেই জলধারা যেখানে থেকে আসে আবার সেখানেই ফিরে যায়। তেমনি মানুষও। পরমাত্মার পদতল থেকে জীবাত্মারূপে মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নেয়। সেখানে পার্থিব জীবনলীলার সমাপ্তি হলে আবার ফিরে যায় পরমাত্মার কাছে।

১০। “তথায় মনুষ্য চক্ষুর অগোচরে নূতন রাজ্যের সৃষ্টি হইতেছে।” কোথায় কিভাবে নূতন রাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে ?

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক মানস চক্ষে পৃথিবীর ভাঙাগড়ার বৈজ্ঞানিক সত্যটি গঙ্গার উৎসভূমিতে দেখতে পেলেন। জলকণারা মাটির নীচে প্রবেশ করে পাতালপুরের অগ্নিকুণ্ডে আহুতি দিচ্ছে। বারিকণারা এমনভাবে তুষারশয্যা রচনা করেছে যাতে ভগ্ন শৈল শায়িত হয়েছে। বারিকণারা একে অন্যকে ডেকে বলছে “আইস, আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি।” বারিকণার সংঘবদ্ধ শক্তি নদী-তট উল্লঙঘন করে দেশ প্লাবিত করে। জলকণার সম্মিলিত ধারা কতপথ পার হয়ে নগর, জনপদ, গ্রামগঞ্জ ভাসিয়ে সাগরের দিকে ছুটে চলে। এই বারিকণাই বৃষ্টিরূপে পৃথিবীর মালিন্য ধুয়ে ফেলে। মৃত, পরিত্যক্ত পদার্থ সমুদ্রে নিয়ে ফেলে বেলাভূমির মাটি ক্ষয় করে সমুদ্রের মাঝেই গড়ে তোলে নতুন দ্বীপ, নতুন রাজ্য, নতুন দেশ।

১১। “সেই নিবিড় নীলস্তর ভেদ করিয়া দুই শুভ্র তুষার মূর্তি শূন্যে উত্থিত হইয়াছে।” শুভ্র তুষার মূর্তি দুটির নাম উল্লেখ করো।

উত্তরূ শুভ্র তুষার মূর্তি দুটির নাম হল নন্দাদেবী ও ত্রিশূল।

১২। ‘‘আইস, আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি” – এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ?তারা কীভাবে পৃথিবীর দেহ নতুন করে নির্মাণ করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ এখানে পর্বতশীর্ষের বারিকণাদের কথা বলা হয়েছে।

পর্বতের গায়ে শীত-তাপ ক্রিয়ার সংকোচন ও সম্প্রসারণের ফলে ফাটল ধরায় বারিকণাগুলি তার ভিতরে প্রবেশ করে। পরে পর্বতের অন্তর্নিহিত বারিকণা প্রচণ্ড শীতের প্রভাবে বরফ হয়ে পড়ে। শীত-তাপ ক্রিয়ার সংকোচন ও সম্প্রসারণের ফলে ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলির মতো বরফও জলে পরিণত হয়ে পড়ে। তখন সেই জল পর্বতের ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্তিকায় পরিণত করে। এই মৃত্তিকা উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। পর্বতের এই দেহাবশেষ যা মৃত্তিকারূপে বৃক্ষলতার সজীব ও শ্যাম দেহ নির্মাণ করে।

১৩। “আজ বহুকাল অবধি তোমার সহিত আমার সখ্য”। – কার সংগে কার সখ্যতার কথা বলা হয়েছে ? সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর সংগে গঙ্গানদীর সখ্যতা ছিল।

জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ির পাশ দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত, বাল্যকাল থেকেই নদীকে ভালোবাসতেন। সন্ধ্যা হলেই প্রতিদিন একাকী নদীর তীরে এসে বসতেন। নদীর জলধারা বয়ে যেতে দেখে কখনো লেখকের মনে হত, প্রতিদিন যে অজস্র জলধারা বয়ে যাচ্ছে, সেই ধারা তো আর ফিরে আসেনা। তবে এই অনন্ত জলধারা কোথা থেকে আসছে। নদীকে জিজ্ঞেস করতেন, “তুমি কোথা হতে আসিতেছ ?” নদীর কুলুকুলু ধ্বনির মধ্যে নদীর উত্তর শুনতে পেতেন, “মহাদেবের জটা হইতে।”

১৪। “সমগ্র পর্বত ও বনস্থলীতে পূজার আয়োজন হইয়াছে।” – পূজার আয়োজন বর্ণনা করো।

উত্তরঃ লেখক জগদীশচন্দ্র বসু গঙ্গার উৎপত্তিস্থল দেখবার জন্য নানা বন ও গিরি সঙ্কট পার হয়ে হিমালয় শিখরস্থ তুষার ক্ষেত্রে এসে পৌঁছেন। সেখানে দেখেন নদীর ধরল সূত্রটি সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতর হয়ে যায়। নদীর জল যেন থেমে যায়। জলগুলো তুষারে পরিণত হয়।

তার দুইদিকে উচ্চপর্বত শ্রেণি, পর্বতের পাদমূলে থাকা বৃক্ষ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে । নন্দাদেবী ও ত্রিশূল শৃঙ্গটি এখন আর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। তুষার নদীর উপর দিয়ে তিনি উঠতে লাগলেন। যত উপরে উঠছেন ততই বায়ুস্তর ক্ষীণতর হচ্ছে, লেখকের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সেই ক্ষীণবায়ুর মধ্যে দেবধূপের গন্ধ পেলেন। তিনি হিমানী সম্প্রপাতের শব্দ শুনলেন। লেখকের মনে হয় শত-শত শঙ্খ ধ্বনির মতো। জলপ্রপাতগুলি যেন কমণ্ডলুর মুখ থেকে পতিত হচ্ছে। সেই সংগে পারিজাত বৃক্ষ থেকে পুষ্প ঝরে পড়ছে। এসব দূশ্য দেখে লেখকের মনে হয় সমগ্র পর্বত ও বনস্থলীতে যেন পূজার আয়োজন হচ্ছে।

১৫। “সেই দুই দিন বহুবন ও গিরিসংকট অতিক্রম করিয়া অবশেষে তুষারক্ষেত্রে উপনীত হইলাম।” লেখকের অনুসরণ করে সংক্ষেপে তুষারক্ষেত্রের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ উক্তিটির বক্তা লেখকের যাত্রাপথের পথ-প্রদর্শক প্রকৃতির নিয়মে হিমালয়ের এক একটি পর্বত চিরতুষারাবৃত থাকে। তুষার স্তূপীকৃত হতে-হতে ভারি হয়ে গেলে তা একসময় ভেঙ্গে নীচের দিকে গড়িয়ে যায় একেই তুষারনদী বলে। লেখক তুষারনদীর খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। নদীটির স্থানে স্থানে প্রকাণ্ড ঊর্মিমালা প্রস্তরীভূত হয়ে রয়েছে । যেন কোনো মহাশিল্পী যেন সমগ্র বিশ্বের স্ফটিকখানি নিঃশেষ করে এই বিশাল ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ সমুদ্রের মূর্তি রচনা করে গেছেন। লেখক বর্ণনা করেছেন, তুষার নদীটি ধবলগিরির ডউচ্চতম শৃঙ্গ হতে এসেছে, আসবার সময় পর্বতদেহ ভেঙ্গে পাথরের টুকরো বহন করে আনছে। নদীটির দুইধারে উচ্চ পর্বত শ্রেণি আছে, নদীটির তুষার জলধারা বঙ্কিম গতিতে নিম্নস্ত উপত্যকায় পতিত হচ্ছে। কষ্টকর যাত্রার মধ্যে তুষার-নদীটির প্রত্যক্ষে এসে লেখক স্বর্গীয় ও অবর্ণনীয় আনন্দ অনুভব করেছেন।

১৬। “শিব ও রুদ্র’ রক্ষক ও সংহারক। এখন ইহার অর্থ বুঝিতে পারিলাম” -অর্থ পরিস্ফুট করো।

অথবা, 

লেখকের এই উপলব্ধির স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

“শিব ও রুদ্র’ রক্ষক ও সংহারক। এখন ইহার অর্থ বুঝিতে পারিলাম”-ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে পাঠটি অবলম্বনে উক্তিটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে লেখক নদীর উৎস খোঁজার জন্য যাত্রাপথে পরিচিত হন ত্রিশূল ও নন্দাদেবী নামক দুই পর্বত শৃঙ্গের সঙ্গে। এই দুইটি পর্বতশৃঙ্গের বর্ণনায় লেখক পৌরাণিক কাহিনিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দুইটি পর্বত শৃঙ্গের ভৌগোলিক ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণনার ফলে রচনায় ফুটে ওঠেছে সৃষ্টির মূল ত‌ত্ত্ব ও সৃষ্টিকর্তার হাতের কলাকৌশল।

লেখকের মনে হল নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। এই দুটি শৃঙ্গকে লেখক সৃষ্টি ও লয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেছিলেন। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্রপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। এই জটা জালের বাষ্পকণাগুলি ত্রিশূল পর্বত শৃঙ্গকে নিরন্তর শান দিয়ে ধারালো করে তুলছে। তখনই তিনি শিব ও রুদ্র! রক্ষক ও সংহারক মূর্তির ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। লেখক গঙ্গানদীর উৎস সন্দর্শনে গিয়ে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ও সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় আয়ুধগুলিকে সাকাররূপে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন।

১৭। ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধে জগদীশচন্দ্র বসু কীভাবে পৌরাণিক আখ্যানের‌ সঙ্গে বৈজ্ঞানিক তথ্যের সমন্বয় সাধন করেছেন, আলোচনা করো।

অথবা, 

“জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কোথা হইতে আসিয়াছ, নদী’ ? নদী সেই পুরাতন স্বরে উত্তর করিল, “মহাদেবের জটা হইতে।” – উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। অথবা, “মহাদেবের জটা থেকে ভাগীরথীর উৎপত্তি হয়েছে” – এই পৌরাণিক কাহিনিকে জগদীশচন্দ্র কীভাবে ভৌগোলিক তথ্য বা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে সমর্থন করেছেন তা সংক্ষেপে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধের লেখক জগদীশচন্দ্র বসু পৌরাণিক কাহিনির সংগে বৈজ্ঞানিক যুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছেন। জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি পাশে দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত। এই নদীর সংগে বাল্যকাল থেকেই তার সখ্য ছিল। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় নদীর তীরে গিয়ে বসতেন। নদীর অনন্ত জলধারা যেতে দেখে তার মনে হত প্রতিদিন এই জলধারা বয়ে যায়, কিন্তু ইহা তো ফিরে আসেনা। লেখকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, এই জলধারা কোথা হতে আসছে। তখন নদীর কুলু কুলু ধ্বনির মধ্যে শুনতে পেতেন, “মহাদেবের জটা হতে।” 

লেখক যখন নদীর উৎস সন্ধানে বের হন তখন উত্তর-পশ্চিমে যে তৃষারমণ্ডিত গিরিশৃঙ্গ দেখা যায় যা জাহ্নবীর উৎপত্তিস্থল, সেই গিরিশৃঙ্গকে লক্ষ্য করে বহুগ্রাম, জনপদ অতিক্রম করে কুমায়ন নামে পুরাণ-গ্রথিত দেশে উপস্থিত হন। সরযূ নদীর উৎপত্তিস্থল দেখেন। নিবিড় শৃঙ্গ পার হয়ে একসময় নন্দাদেবী ও ত্রিশূল নামে দুই পর্বতশৃঙ্গের কাছে পৌঁছেন। লেখকের মনে হয় নন্দাদেবী সৃষ্টিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন আর ত্রিশূল প্রলয়ের প্রতীক হয়ে একই সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিদ্ধ করেছে। কুয়াশা অন্তর্হিত নন্দাদেবীর শৃঙ্গদেশে যে জ্যোতি বিরাজ করেছে তা তাকানো অসম্ভব। সেই জ্যোতির আলোকছটা থেকে নির্গত দিগন্তব্যাপী ধূম্ৰপুঞ্জকে লেখকের মহাদেবের জটা মনে হয়েছে। তখন লেখক বুঝতে পারেন গঙ্গানদীর কুলুকুলু ধ্বনির মধ্যে যে বাণী উচ্চারিত হত তা আসলে পৌরাণিক গল্প নয়। এভাবেই লেখক জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধে ভৌগোলিক তথ্য ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির মাধ্যমে পুরাণ কাহিনিকে মেনে নেন।

১৮। “তখন ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন বৃত্তান্ত স্মৃতিপথে উদিত হইত।” – ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন বৃত্তান্ত সংক্ষেপে লেখ ?

উত্তরঃ সন্ধ্যা হলে লেখক জগদীশচন্দ্র বসু তার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর তীরে এসে বসতেন। নদীর স্রোতধারাকে দেখে তার মনে কৌতূহল জাগত এই জলধারা কোথা থেকে আসছে আর যাচ্ছেই বা কোথায় ? তিনি নদীকে জিজ্ঞেস করতেন, সে কোথায় থেকে আসছে। তখন উত্তরে নদী বলত, “মহাদেবের জটা হইতে।” তখন লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর ভগীরথের মর্ত্যে গঙ্গা আনয়নের বৃত্তান্ত মনে পড়ত। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে মহাদেবের জটা থেকে।

মহামুনি কপিলের অভিশাপে সাগর রাজার বংশ ধ্বংস হয়ে গেলে, এই বংশের রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ পূর্বপুরুষগণের মুক্তির জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন তিনি শুনেছিলেন গঙ্গার স্পর্শেই তার পূর্বপুরুষগণের মুক্তি সম্ভব। ভগীরথের  তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা গঙ্গাকে মুক্তি দেন। ব্রহ্মার কমণ্ডুল থেকে মুক্ত গঙ্গাকে ধারণ করার ক্ষমতা মহাদেব ছাড়া অন্য কারো ছিলনা, তাই ভগীরথ মহাদেবকেও তার তপস্যায় তুষ্ট করেন মহাদেব গঙ্গাকে নিজ জটাজালে ধারণ করার পর পুনরায় ভগীরথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একে বিন্দু সরোবরে ত্যাগ করেন। তা থেকে গঙ্গা সপ্তধারায় প্রবাহিত হতে থাকে, একটি ধারা ভগীরথের পশ্চাদ্‌গামিনী হয়; তাঁর স্পর্শে সাগর সন্তানরা উদ্ধার লাভ করেন । এই প্রবাহের নাম হয় ভাগীরথী।

১৯। ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ রচনাটিতে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সৌন্দর্য প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা তোমার নিজের ভাষায় ব্যক্ত করো। 

উত্তরঃ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গঙ্গার উৎস স্থল নির্ণয় করতে বের হয়ে হিমালয়ের বহু দুর্গম স্থান অতিক্রম করার পর তিনি তুষারপাত নন্দাদেবী ও ত্রিশূল শৃঙ্গের সমীপবর্তী হলেন। লেখক দেখলেন ওই তুষারশীর্ষে ভাস্করজ্যোতিমণ্ডল আর তা থেকে ধূমরাশি নির্গত হয়ে দিগ-দিগন্ত ব্যাপ্ত করে তুলছে। এই ধূমরাশিকেই পুরাণে মহাদেবের জটারূপে কল্পনা করা হয়েছে। ওই ধূমরাশি থেকে তুহিনাকারে বারিকণা ঝরে পড়ে, পর্বতের নিম্নতর স্থানে সে তুষারক্ষেত্র সৃষ্টি করে। সেই তুষার বিগলিত হয়েই নদীতে পরিণত হয়। পর্বত শিখরের হিমানীর কুজ্ঝটিকা যেন মহাদেবের জটা তা থেকেই গঙ্গার উৎপত্তি।

উত্তরদিকে চলতে চলতে তিনি উপনীত হলেন কুর্মাচলে সেখান থেকে আরও উত্তরে দুর্গম পথে অগ্রসর হলেন। একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, সুউচ্চ এক পর্বতশৃঙ্গ বহু নীচে গঙ্গার ক্ষীণধারা বয়ে যায়। শিখরের ঊর্ধ্বদেশে এসে চোখে পড়ল পাশাপাশি দুটি তুষার শৃঙ্গ নন্দাদেবী ও ত্রিশূল।

নন্দাদেবী ও ত্রিশূল শৃঙ্গকে আচ্ছন্ন করেছিল ঘন কুজ্ঝটিকার আবরণ এক্ষণে তা দূর হয়ে মহাশূন্যে চলে গেল। লেখকের ছবিটির সামনে উদ্ভাসিত হল এক উজ্জ্বল জ্যোতিপুঞ্জ নন্দাদেবীর শীর্ষদেশে  সেই ভাস্কর জ্যোতির্মণ্ডল হতে ধূমরাশি নির্গত হচ্ছে। তাতে দিক দিগন্ত ব্যাপ্ত  হয়ে যাচ্ছে লেখক উপলব্ধি করলেন। লেখক আপন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় এটা উপলব্ধি করলেন যে ভৌগোলিক কাহিনী সত্য এবং পুরাণ কাহিনীর সঙ্গে একটির যোগসূত্র বিদ্যমান। এই উপলব্ধিতে তাঁর অন্তর অপরিসীম আনন্দে পূর্ণ হল। কাহিনীটির বর্ণনার মধ্য দিয়ে লেখক জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর সৌন্দর্যপ্রীতির পরিচয় মেলে ধরেছেন।

২০। সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখো:

‘‘কোটি কোটি ক্ষুদ্র হস্ত অসংখ্য অণুপ্রমাণ শক্তির মিলনে অনায়াসে সেই পর্বতভার বহিয়া নিম্নে চলিল। কোনো পথ ছিল না; পতিত পর্বতখণ্ডের ঘর্ষণেই পথ কাটিয়া ল‌ইল উপত্যকা রচিত হইল।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু বিজ্ঞানের উপাসক লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু রচিত ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত।

পর্বতশীর্ষের বারিকণাগুলি কীভাবে পর্বতের ভেঙ্গে যাওয়া টুকরোগুলিকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্তিকায় মিশে নতুন উপত্যকার সৃষ্টি করে তার কথাই বলা হয়েছে।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা স্বতন্ত্রভাবে শক্তিহীন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে তারা বিরাট শক্তি ধারণ করে। সেই শক্তি বলে তারা পর্বতের শিখরগুলিকে নীচে বয়ে নিয়ে চলে চলার। সময় ওই শিখরগুলির ঘর্ষণে কেটে কেটে পথ প্রস্তুত হয়। সেই প্রক্রিয়াতেই চূর্ণীকৃত প্রস্তর নদী ধারা দুই খণ্ডের দ্বারা নতুন নতুন উপত্যকার সৃষ্টি হয়। পথে হয়তো মরুভূমি পড়ে। কূল ছাপিয়ে প্রস্তরচূর্ণ ছড়িয়ে দেয়। এই প্রস্তরচূর্ণই পলিমাটি এবং পলিমাটির আস্তরণে মরুমৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাতে শ্যামল বৃক্ষলতা গজিয়ে উঠে । এইভাবে বারিকণাগুলি পৃথিবীর দেহে নতুন উপত্যকা ও শ্যামল উর্বরক্ষেত্র রচনা করে চলে।

২১। সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখো:

“এখনও ভাগীরথী-তীরে বসিয়া তাহার কুলু কুলু ধ্বনি শ্রবণ করি। এখনও তাহাতে পূর্বের ন্যায় কথা শুনিতে পাই। এখন আর বুঝিতে ভুল হয় না।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু বিজ্ঞানের উপাসক লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু রচিত ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে।

পর্বত শিখরে আরোহনের পর লেখক যে গঙ্গার কলধ্বনির উত্তর হৃদয়ঙ্গম করেছেন সে কথাই এখানে বলা হয়েছে। ভারতীয় দর্শনে বলা হয় আমরা যথা হতে আসি আবার তথায় ফিরে যাই । লেখক ভাগীরথীর উৎস সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এই দর্শনের বিষয়টি প্রবন্ধের মধ্যে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বারিবিন্দুগুলির অবিরাম গতির কথা বলেছেন। সমুদ্রে মিশে বারিবিন্দুরা সূর্যতেজে বাষ্পীভূত হয়। মেঘ হয়ে উর্দ্ধমুখী হয়। বারি হয়ে ঝরণা রূপে‌ পাহাড়ের বুক চিরে নেমে এসে নদীতে হয়। আবার কত নগর, জনপদ অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে আবার বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়। এই চক্রাকারে চলছে বারিকণার গতি। এই গতির যে বিরাম নেই, শেষ নেই – অবশেষে লেখক তাই উপলব্ধি করতে পারলেন।

২২। সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখো:

‘‘জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘’কোথা হইতে আসিয়াছ নদী ?’ নদী সেই পুরাতন স্বরে উত্তর করিল, ‘মহাদেবের জটা হইতে’ ।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ নামক রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে নদীকে লেখকের এই জিজ্ঞাসার মধ্যে জীবনের মূল তত্ত্বের কথা প্রকাশিত হয়েছে।

বাল্যকাল থেকেই লেখকের গঙ্গা নদীর সখ্যতা জন্মেছিল। তিনি নদীর তীরে বসে লক্ষ্য করেছিলেন বৎসরের এক সময়ে নদীর কূল প্লাবন করে জলস্রোত বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় আবার শীতের সময় নদীর কলেবর ক্ষীণ হয়ে উঠা, আবার জোয়ার-ভাঁটায় নদীর গতিপথ কীভাবে পরিবর্তন হয়। লেখক মনে করেন গতি পরিবর্তনশীল নদী যেন একটি জীবন। সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকারে লেখকের শুধু মনে হত নদীর জলের স্রোতধারা প্রতিদিন গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা আর ফিরে আসে না। তাই কৌতূহলী বক্তব্য “তবে এই অনন্ত স্রোত কোথা হইতে আসিতেছে, ইহার কি শেষ নেই ?” নদীর তীরে লেখকের প্রিয়জনের পার্থিব অবশেষ চিতানলে ভস্মীভূত হতে দেখে তাঁর মনে প্রশ্নজাগে – তাঁর আজন্ম পরিচিত মানুষটি কোন্ অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় দেশে চলে গেল। মৃত্যুই কি জীবনের পরিসমাপ্তি, না হলে পরলোকগত আত্মা কোথায় যায় ?

এই সত্যোপলব্ধির সন্ধানই লেখকের রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করে দেয়, পেলেন নদীর কলধ্বনির মধ্যদিয়ে অর্থাৎ যে যায় তার অবস্থান হয় ‘মহাদেবের পদতলে’ আর সে আসে মহাদেবের জটা হতে।

টীকা লিখন

১। জাহ্নবী – ভগীরথ গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার সময় জহ্নমুনির যজ্ঞভূমি ডুবিয়ে দেন এবং যজ্ঞের উপকরণগুলি ভেসে যাওয়ায় রাগান্বিত জহ্নুমুনি গঙ্গাকে পান করেন। পরে ভগীরথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে জানু ভেদ করে (কেউ-কেউ বলে কান দিয়ে) গঙ্গাকে মুক্ত করেন। সেই থেকে গঙ্গা জহ্নুকন্যা বা জাহ্নবী নামে খ্যাত হন। 

২। সরযূ – সরযূ একটি নদীর নাম। সরযূ নদীর তীরে অযোধ্যা নগরী অবস্থিত। রামচন্দ্র ও ভ্রাতৃগণ সরযূ নদীতে অবতরণ করে দেহত্যাগ করেন। সে সময় রামচন্দ্রের বহু অনুগামী সরযূ নদীতে দেহ বিসর্জন করেন।

৩। ভগীরথ – ইক্ষ্বাকু বংশীয় সগর রাজার পৌত্র অংশুমান, অংশুমানের পুত্র দিলীপ, দিলীপের পুত্ৰ ভগীরথ তাঁর পুর্বপুরুষদের মুক্তির জন্য তপস্যাবলে মহাদেবকে তুষ্টু করে গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। এর ফলে ভগীরথের পূর্বপুরুষদের মুক্তি হয়।

৪। ভগীরথ – কপিলমুনির অভিশাপে ভস্মীভূত হয় সগর রাজার ষাটহাজার পুত্র । ভগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষদের মুক্তির জন্য তপস্যাবলে মহাদেবকে তুষ্টু করে গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। তখন থেকে গঙ্গার আরেক নাম হয় ভাগীরথী । গঙ্গা নদীর অন্য নাম হুগলী নদী।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটির লেখক কে ?

উত্তরঃ জগদীশচন্দ্র বসু ।

২। ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থের অন্তর্গত।

৩। “বহুকাল অবধি তোমার সহিত আমার সখ্য” – লেখক কাকে একথা বলেছেন।

উত্তরঃ লেখক জগদীশচন্দ্র বসু গঙ্গা নদীকে একথা বলেছেন।

৪। “নদী,তুমি কোথা হতে আসিয়াছ”- উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর।

৫। “বাল্যকাল হইতেই নদীর সহিত আমার সখ্য জন্মিয়াছিল।”- উক্তি

উত্তরঃ উক্তিটি লেখক জগদীশচন্দ্র বসুর।

৬। জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ির পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হত ?

উত্তরঃ গঙ্গা নদী।

৭। কুজ্ঝটিকা কী ?

উত্তরঃ কুজ্ঝটিকা হল কুয়াশা।

৮। “নদী, তুমি কোথা হতে আসিয়াছ ?” – এই প্রশ্নের উত্তরে নদী কী বলত ? 

উত্তরঃ নদী উত্তর দিত – “মহাদেবের জটা হইতে।”

৯। “আমি তোমার প্রবাহ অবলম্বন করিয়া তোমার উৎপত্তিস্থান দেখিয়া আসিব। উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ জগদীশচন্দ্র বসুর।

১০। ভাগীরথ কে ?

উত্তরঃ ভাগীরথ ইক্ষ্বাকু বংশীয় সগর রাজার অধস্তন পুরুষ ও দিলীপের পুত্র।

১১। ‘নদী উত্তর করিত, “মহাদেবের ……… হইতে। (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)

উত্তরঃ জটা।

১২। “পুরাতনের মধ্যে কেবল তুমি!” ……… তুমি কে ?

উত্তরঃ তুমি হল গঙ্গানদী।

১৩। “একটি গরীয়সী রমণীর ন্যায়।” – এখানে কাকে ‘গরীয়সী রমণী’ বলা হয়েছে।

উত্তরঃ নন্দাদেবী শৃঙ্গকে।

১৪। কোন্ পর্বতশৃঙ্গকে লেখকের ‘ত্রিশূল’ বলে মনে হয়েছে ?

উত্তরঃ নন্দাদেবীর পার্শ্বস্থ একটি পর্বতশৃঙ্গকে লেখকের ‘ত্রিশূল’ বলে মনে হয়েছে।

১৫। “আইস, আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি ।” – বক্তা কে ?

উত্তরঃ বারিকণাগুলি।

১৬। ‘সেই নিবিড় নীলস্তর ভেদ করিয়া দুই শুভ্র তুষার মূর্তি শূন্যে উত্থিত হ‌ইয়াছে’ – শুভ্র তুষার মূর্তি দুটির নাম লেখো।

উত্তরঃ নন্দাদেবী ও ত্রিশূল

১৭। নন্দাদেবী কার অপর নাম ?

উত্তরঃ দেবী দূর্গার।

১৮। ‘অব্যক্ত’র লেখক কে ?

উত্তরঃ লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু।

১৯। ‘দীর্ঘ প্রবাসের পর উৎসে মিলিত হইতে যাইতেছি।’ – বক্তা কে ? 

উত্তরঃ বক্তা হলেন লেখক জগদীশ চন্দ্র বসু।

২০। “এই শৃঙ্গে উঠিলেই তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে।” – কে, বলেছিল ? অভীষ্ট কী ?

উত্তরঃ কথাটি লেখকের পথ প্রদর্শক বলেছিল। অভীষ্টটি ভাগীরথীর উৎস স্থানটি দর্শন।

FAQs

Question: Where I can get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Suggestion Chapter Wise?

Answer: You can get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Suggestion Chapter Wise On Roy Library. For every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly.

Question: Which is the best Site to get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Solutions?

Answer: Roy Library is a genuine and worthy of trust site that offers reliable information regarding Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Solutions.

Question: How can students use the solutions for exam preparation?

Answer: Students can use the solutions for the following:

  • Students can use solutions for revising the syllabus.
  • Students can use it to make notes while studying.
  • Students can use solutions to understand the concepts and complete the syllabus.

IMPORTANT NOTICE

We have uploaded this Content by Roy Library. You can read-write and Share your friend’s Education Purposes Only. Please don’t upload it to any other Page or Website because it is Copyrighted Content.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top