Class 12 Advance Bengali Chapter 1 বংশীনাদে

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Advance Bengali Chapter 1 বংশীনাদে is a textbook prescribed by the ASSAM AHSEC Board Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Advance Bengali Chapter 1 বংশীনাদে The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Advance Bengali Chapter 1 বংশীনাদে Solutions are free to use and easily accessible.

Class 12 Advance Bengali Chapter 1 বংশীনাদে

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 2nd year Advance Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. AHSEC Board Class XII Advance Bengali Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. HS 2nd Year Advance Bengali Suggestion, HS 2nd Year Advance Bengali Notes Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 Advance Bengali Textbooks Solution. HS 2nd Year Advance Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

বংশীনাদে

পদ্যাংশ

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটির কবির নাম কী?

উত্তরঃ বড় চণ্ডীদাস।

প্রশ্ন ২। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

প্রশ্ন ৩। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে মোট কয়টি খণ্ড আছে?

উত্তরঃ তেরোটি।

প্রশ্ন ৪। বড়ু চণ্ডীদাস কোথাকার অধিবাসী ছিলেন?

উত্তরঃ বীরভূম জেলার নানুর গ্রামের।

প্রশ্ন ৫। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ বসন্তরঞ্জন রায়বিদ্ববল্লভ।

প্রশ্ন ৬। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটির ব্যবহৃত ভাষা কোন সময়কার?

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর সময়কালের রচনা।

প্রশ্ন ৭। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের কোন্ খণ্ডের অন্তর্গত?

উত্তরঃ ‘বংশীখণ্ড’ এর অন্তর্গত।

প্রশ্ন ৮। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশে কোন জায়গার কথা বর্ণিত হয়েছে?

উত্তরঃ উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলায় অবস্থিত যমুনা নদী তীরবর্তী তীর্থস্থান বৃন্দাবনের কথা বর্ণিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৯। ‘‘কেনা বাঁশী বাএ বড়ায়ি সে না কোনজনা দাসী হআঁ তার পাত্র নিশিবোঁ আপনা।” – বড়ায়ি কে?

উত্তরঃ বড়ায়ি শ্রীরাধার সহচরী ও দূতী।

প্রশ্ন ১০। ‘‘কেনা বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে।” – কালিন্দী নদীর কূলে কে বাঁশি বাজাচ্ছিল?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ১১। ‘“বাঁশীর শবদে মোঁ আউলাইলোঁ রান্ধন” – আউলাইলোঁ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ আউলাইলোঁ শব্দের অর্থ এলোমেলো হওয়া।

প্রশ্ন ১২। ‘‘কেনা বাঁশি বাএ বড়ায়ি সে না কোনজনা,

দাসী হআঁ তার পাএ নিশিবোঁ আপনা।”

– নিশিবোঁ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ নিশিবোঁ শব্দের অর্থ সপে দেবো বা সমর্পণ করবো।

প্রশ্ন ১৩। ‘‘অঝর ঝরএ মোর নয়নের পাণী,

বাঁশির শবদে বড়ায়ি হারায়িলোঁ পরাণী।”

– এই উক্তিটি কার?

উত্তরঃ উক্তিটি শ্রীরাধার।

S.L. No.সূচীপত্র
পদ্যাংশ
পাঠ – ১বংশীনাদে
পাঠ – ২বিপ্রবেশে অর্জুন
পাঠ – ৩কপোতাক্ষ নদ
পাঠ – ৪আমার কৈফিয়ৎ
পাঠ – ৫মেরুর ডাক
পাঠ – ৬হায় চিল
পাঠ – ৭প্ৰত্যহের ভার
গদ্যাংশ
পাঠ – ৮ভালবাসার অত্যাচার
পাঠ – ৯পনেরো আনা
পাঠ – ১০সাহিত্যে খেলা
পাঠ – ১১দিবা দ্বিপ্রহরে
নাটক
পাঠ – ১২মুকুট
উপন্যাস
পাঠ – ১৩মেজদিদি
ব্যাকরণ
ছন্দ
অলঙ্কার

প্রশ্ন ১৪। ‘‘মেদনী বিদার দেউ পসিআঁ লুকাওঁ”

– মেদনী শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ মেদনী শব্দের অর্থ পৃথিবী।

প্রশ্ন ১৫। ‘‘অঝর ঝরএ মোর নয়নের পাণী।

বাঁশীর শবদে বড়ায়ি হারায়িলোঁ পরাণী॥”

– অঝর ঝরএ কার নয়নের পাণী?

উত্তরঃ শ্রীরাধিকার।

প্রশ্ন ১৬। “আন্তর সুখাএ মোর কাহ্ন অভিলাসে।

বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে ৷ ”

– এখানে ‘বাসলী’ শব্দে কাকে নির্দেশ করা হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে ‘বাসলী’ শব্দে বাসলী বা বাগুলি নামক লৌকিক দেবীকে নির্দেশ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ১৭। ‘বংশীনাদে’ কবিতার ভণিতায় কবি বড়ু চণ্ডীদাস কোন্ দেবীকে বন্দনা করেছেন?

উত্তরঃ বাসলী নামক লৌকিক দেবীকে।

প্রশ্ন ১৮। নান্দের নন্দন কে?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ১৯। “মোর নয়ন পোড়ে জেহ্ন _______ পণী। (শূন্যস্থান পূর্ণ) করো।

উত্তরঃ কুম্ভারের।

প্রশ্ন ২০। “বাঁশীর শব্দে মোঁ আউলাইলোঁ রান্ধন”

– কার বাঁশীর শব্দে রাধার রান্না এলোমেলো হয়ে পড়েছিল?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণের।

প্রশ্ন ২১। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশে কথক চরিত্র কে?

উত্তরঃ শ্রীরাধিকা।

প্রশ্ন ২২। “বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে।” – মন্তব্যটি কার?

উত্তরঃ কবি বড় চণ্ডীদাসের।

প্রশ্ন ২৩। ‘বংশীনাদে’ কবিতায় কত বার বাঁশি শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে?

উত্তরঃ সাত বার।

প্রশ্ন ২৪। ‘বংশীনাদে’ কবিতার শেষে কবির নাম কেন উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তরঃ মধ্যযুগে পদের শেষে পদকর্তার নাম উল্লেখের প্রচলন ছিল।

প্রশ্ন ২৫। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশের কথক রাধা কৃষ্ণের কাছে কীভাবে নিজেকে সঁপে দিতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ দাসী হিসেবে রাধিকা কৃষ্ণের পদতলে নিজেকে সঁপে দিতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন ২৬। বাসলী কে?

উত্তরঃ বাসলী বা বাগুলি হলেন দেবী বিশালাক্ষ্মী। তিনি বড়ু চণ্ডীদাসের উপাস্য দেবী।

প্রশ্ন ২৭। “আকুল করিতে কিবা _____ মন।” ( শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)

উত্তরঃ আহ্মার।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “পাখি নহোঁ তার ঠাঞি উড়ী পড়ি জাও।” – পাখির সঙ্গে কে নিজেকে তুলনা করেছেন। এখানে ‘তার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? পংক্তিটি কোন্ কবিতার অন্তর্গত?

উত্তরঃ পাখির সঙ্গে শ্রীরাধিকা নিজেকে তুলনা করেছেন। এখানে ‘তার’ বলতে শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে। পংক্তিটি ‘বংশীনাদে’ কবিতার অন্তর্গত।

প্রশ্ন ২। “বন পোড়ে আগ বড়ায়ি জগজন জাণী।

মোর মন পোড়ে জেহ্ন কুম্ভারের পণী॥”

– এখানে কার মনের কথা বলা হয়েছে? ‘কুম্ভারের পণী’ কী?

উত্তরঃ এখানে শ্রীরাধিকার মনের কথা বলা হয়েছে। কুম্ভকারের পাঁজায় যে তুষার আগুন থাকে তার মাধ্যমে মাটির পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। তাকেই এখানে কুম্ভারের পণী বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। “আকুল করিতেঁ কিবা আহ্মার মন।

বাজাএ সুসর বাঁশী নান্দের নন্দন৷”

– এখানে ‘আহ্মার মন’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? ‘নান্দের নন্দন’ কে ছিলেন?

উত্তরঃ এখানে ‘আহ্মার মন’ বলতে শ্রীরাধিকার কথা বলা হয়েছে। নান্দের নন্দন ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ৪। “পাখি নহোঁ তার ঠাঞি উড়ী পড়ি জাওঁ।

মেদনী বিদার দেউ পসিআঁ লুকাওঁ ॥”

– পংক্তিটি কোন কবিতার অন্তর্গত? ‘তার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? ‘ঠাঞি’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ পংক্তিটি বড় চণ্ডীদাসের ‘বংশীনাদে’ কবিতার অন্তর্গত। এখানে ‘তার’ বলতে শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে। ‘ঠাঞি’ শব্দের অর্থ স্থান।

প্রশ্ন ৫। “বন পোড়ে আগ বড়ায়ি জগজনে জাণী।

মোর মন পোড়ে জেহ্ন কুম্ভারের পণী॥”

– ‘বড়ায়ি’ সম্বন্ধে টীকা লেখো।

উত্তরঃ বড়ায়ি হলেন শ্রীরাধার মায়ের পিসি এবং ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যের একটি বিশিষ্ট চরিত্র। তিনি রাধার সহচরী ও দূতী। বয়সে তিনি অতি বৃদ্ধা কিন্তু অভিজ্ঞতায় তিনি পরিপক্ক। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধার মিলনে বড়ায়ি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

প্রশ্ন ৬। “আঝর ঝরএ মোর নয়নের পাণী॥” – কার নয়নের পাণী ঝরছে এবং কেন?

উত্তরঃ শ্রী রাধিকার নয়নের পাণী ঝরছে। শ্রীকৃষ্ণের বিরহ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তাঁর চোখ থেকে অনবরত জল ঝরে পড়ছে।

প্রশ্ন ৭।‘‘বাজাএ সুসর বাঁশী নান্দের নন্দন॥”

– বক্তা কে? নান্দের নন্দন কে?

উত্তরঃ বক্তা শ্রীরাধা। নান্দের নন্দন হল শ্রীকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ৮। “আন্তর সুখাএ মোর কাহ্ন অভিলাসে।” – উক্তিটি কার? কাহ্ন কে?

উত্তরঃ উক্তিটি শ্রীরাধিকার। কাহ্ন হলেন শ্রীকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ৯। “দাসী হয়্যা তাঁর পায়ে নিশিৰোঁ আপনা।”

– কে বলেছে? তাঁর বলতে কার?

উত্তরঃ শ্রীরাধা বলেছেন। ‘তার’ বলতে শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ১০। শ্রীকৃষ্ণের আসল পিতা ও মাতার নাম কী?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণের আসল পিতার নাম বাসুদেব ও মাতার নাম দেবকী।

প্রশ্ন ১১। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশে কৃষ্ণের নামের পরিবর্তে কী কী নাম ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তরঃ ‘নন্দের নন্দন’, ‘কাহ্ন’ প্রভৃতি নাম ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রশ্ন ১২। ‘বাজাএ সুসর বাঁশী নান্দের নন্দন’ – ‘নান্দের নন্দন’ কে? সে কী বাজায়?

উত্তরঃ নান্দের নন্দন হল নন্দরাজের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ। সে বাঁশি বাজায়।

প্রশ্ন ১৩। ‘বাঁশির শব্দে বড়ায়ি হারায়িলো পরাণী॥’- কে, কার বাঁশির শব্দে মন হারিয়েছে?

উত্তরঃ শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির শব্দে মন হারিয়েছে।

প্রশ্ন ১৪। “কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে”। – কে, কোথায় বাঁশি বাজাচ্ছিলেন?

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ কালিনী নদী অর্থাৎ কালিন্দী নদীর তীরে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।

প্রশ্ন ১৫। টীকা লেখো: 

(ক) বড়ায়ি। 

(খ) নান্দের নন্দন।

(গ) বাসলী।

(ঘ) বড়ু চণ্ডীদাস।

উত্তরঃ (ক) বড়ায়ি: বড়ায়ি হলেন শ্রীরাধার মায়ের পিসি এবং ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যের একটি বিশিষ্ট চরিত্র। তিনি রাধার সহচরী ও দূতী। বয়সে তিনি অতি বৃদ্ধা কিন্তু অভিজ্ঞতায় তিনি পরিপক্ক। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধার মিলনে বড়ায়ি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

(খ) নান্দের নন্দন: নন্দ ঘোষ কৃষ্ণের পালক পিতা। কৃষ্ণের জন্মদাতা পিতা বাসুদেব এবং মাতা দেবকী। কৃষ্ণের মামা অত্যাচারী কংস। তিনি আকাশবাণীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন কৃষ্ণ তাকে বধ করবেন। তাই কৃষ্ণের জন্ম হলে কংস তাঁকে বধ করবার জন্য তার মাতা-পিতাকে কারাগারে রেখেছিলেন। কৃষ্ণের জন্মের পর বসুদেব তাকে যমুনা পারে নন্দের ঘরে রেখে আসেন। নন্দের ঘরে শ্রীকৃষ্ণ পুত্রবৎ পালিত হন। এই কারণে শ্রীকৃষ্ণকে ‘নান্দের নন্দন’ বলা হয়।

(গ) বাসলী: দেবী দুর্গার লৌকিক নাম বাসলী। এঁর অপর নাম বিশালাক্ষ্মী। অর্থাৎ যার নয়ন বৃহদাকার। এরূপ বিশাল নয়ন দ্বারা তিনি জগতের সব কিছুই দেখতে পান। কবি বড় চণ্ডীদাস বাসলী দেবীর উপাসক ছিলেন। তাকে বন্দনা করেই তিনি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যখানি লিখেন। কবির দুটি ভিটে নানুর এবং ছাতনায় বাসলী দেবীর মন্দির আছে।

(ঘ) বড়ু চণ্ডীদাস: বাংলা সাহিত্যের আদি মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বড়ু চণ্ডীদাস। তিনি বাসুলীদেবীর উপাসক ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য রচনায় তিনি অসামান্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। রাধাকৃষ্ণের প্রেম কাহিনী নিয়ে তেরোটি খণ্ডে রচিত এই কাব্যখানি। তাঁর বাড়ি ছিল বীরভূম জেলার নানুর গ্রামে। জন্ম ১৩৩৯ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে। তবে এর উপরে বিস্তর মতভেদও আছে। চণ্ডীদাসের নামযুক্ত পদগুলি দীর্ঘকাল বাংলার ঘরে ঘরে গীত হয়েছে। চণ্ডীদাসের নামাঙ্কিত পদের সংখ্যা ন্যূনাধিক এগারো শ। চণ্ডীদাসকে নিয়ে অনেক নাটক ও চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “পাখি নহোঁ তার ঠাঞি উড়ী পড়ি জাওঁ।

মেদনী বিদার দেউ পসিআঁ লুকাও ॥”

– তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

অথবা, 

কে, কাকে, কোন প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছিলেন?

উত্তরঃ শ্রীরাধা উক্তিটি করেছেন। বড়ায়িকে উদ্দেশ্য করে।

কালিন্দী নদীতীরে গোচারণের মাঠ থেকে কৃষ্ণ অনবরত বাঁশি বাজাচ্ছেন। সেই বাঁশির সুরে রাধা নিজের ঘরে থেকেও ছটফট করছেন। এ বাঁশি তাকে প্রেমের ডাক দিচ্ছে। তাঁর গৃহকর্ম এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তিনি আর ঘরে থাকতে পারছেন না। তিনি গৃহবধূ, বাড়ির বাইরে যাওয়া তাঁর শোভা পায় না। এজন্য তিনি সখি বড়ায়িকে মনের আক্ষেপ জানাচ্ছেন – যদি তিনি পাখি হতেন তাহলে উড়ে কৃষ্ণের নিকটে হাজির হতেন। কিন্তু তা তো হবার নয়। সেজন্য তিনি আত্ম গোপণের স্থান খুঁজছেন। মাটি ফাটল দিলে তিনি তার মধ্যে প্রবেশ করে লুকোতে চান। কৃষ্ণের বাঁশি তাঁর কাছে এক বিষম জ্বালা হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন ২। ‘‘বনপোড়ে আগ বড়ায়ি জগজনে জাণী।

মোর মন পোড়ে জেহ্ন কুম্ভারের পণী॥”

– অন্তর্নিহিত ভাব ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ যমুনা নদীতীরে গোচারণের মাঠ থেকে ভেসে আসা কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুমিষ্ট সুর শ্রীরাধাকে কৃষ্ণপ্রাণা করে তুলেছে। তিনি কৃষ্ণের প্রেম জ্বালায় জর্জরিত হচ্ছেন। এজন্য ঘরে আর তিনি এক মুহুর্তও থাকতে পারছেন না। কিন্তু তিনি গৃহবধূ, বাড়ির বাইরে যাওয়া তাঁর শোভা পায় না। কৃষ্ণের বাঁশি তাঁর কাছে প্রেম নিবেদন করছে। অথচ কৃষ্ণ পাশে নেই। শ্রী রাধিকার এই প্রেমজ্বালা এখানে একটি বাস্তব উপমার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। বন পুড়লে সে আগুন দেখা যায় এ কথা জগতের সবাই জানে। কিন্তু কারোর মন পুড়লে কেউ সেই মনের আগুন দেখতে পায় না। কৃষ্ণের প্রেমের আগুনে রাধার অন্তর পুড়ে মাটির হাঁড়ি কলসির মতো শক্ত হয়ে উঠছে। অর্থাৎ রাধা ক্রমশ কৃষ্ণাগত প্ৰাণা হয়ে উঠছেন।

প্রশ্ন ৩। ‘‘কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নইকূলে।”

– বক্তা কে? তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?

উত্তরঃ বক্তা হলেন ‘শ্রীরাধিকা।

শ্রীরাধিকা একান্ত কৃষ্ণপ্রেমানুরাগী, কিন্তু তিনি গৃহবধূ। গৃহের বাইরে তাঁর যাওয়া শোভা পায় না। যমুনা তীরের গোচারণ মাঠ থেকে ভেসে আসা কৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনি তাকে অস্থির করে তুলছে। তার গৃহের কাজ এলোমেলো হয়ে পড়ছে। উপায় না পেয়ে রাধিকা প্রিয় সখি বড়ায়িকে উদ্দেশ্য করে মনের আকুলতা প্রকাশ করছেন। তিনি কৃষ্ণের শ্রীচরণে তাঁর মনপ্রাণ সপে দিতে চান। কৃষ্ণপ্রেমে তিনি হয়েছেন পাগলিনী।

প্রশ্ন ৪। “আকুল শরীর মোর বে আকুল মন”

বাঁশীর শব্দে মোঁ আউলাইলোঁ রান্ধন।”

– কার বাঁশির শব্দে রান্নাতে ব্যাঘাত ঘটছে। উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ বাঁশির শব্দে শ্রীরাধিকার রান্নার কাজে বিঘ্ন হচ্ছে।

শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বাঁশির ধ্বনিতে রাধিকার চিত্তে চাঞ্চল্য জেগে উঠেছে। তাঁর শরীর আকুল, মন ব্যাকুল। কৃষ্ণ সঙ্গ পাওয়ার জন্য তাঁর মন অস্থির হয়ে পড়ে। ঘরে তাঁর আর মন নেই। রন্ধনকার্যে নানা ব্যাঘাত হচ্ছে, কারণ তিনি সম্পূর্ণ মন লাগিয়ে সে কাজটি করতে পারচ্ছেন না।

প্রশ্ন ৫। “দাসী হয়্যা তাঁর পাত্র নিশিবোঁ আপনা।”

– ‘নিশিবোঁ’ শব্দের অর্থ কী? কে, কার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চান? এবং কেন?

উত্তরঃ ‘নিশিবোঁ’ শব্দের অর্থ হল নিজেকে সপে দেওয়া।

শ্রীকৃষ্ণের মোহন বাঁশির স্বর শুনে শ্রীরাধিকা মনে প্রাণে অস্থির হয়ে পড়েন। তাঁর শরীর আকুল ও মন ব্যাকুল। তিনি গৃহবধূ। এক্ষেত্রে তাঁর গৃহের কাজে নানা ব্যাঘাত হচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ বিরহে রাধিকার কৃষ্ণসঙ্গ পাওয়ার জন্য অন্তরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরহ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তিনি কৃষ্ণের শ্রীচরণে নিজেকে সঁপে দিতে চান।

প্রশ্ন ৬। ‘‘আঝর ঝরএ মোর নয়নের পাণী।

বাঁশির শবদে বড়ায়ি হারায়িলোঁ পরাণী ৷”

– বড়ায়ি কে। কার প্রাণ হারিয়েছে? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।

অথবা, 

উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত ভাব পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ বড়ায়ি হলেন শ্রীরাধিকার সহচরী ও দূতী। এখানে রাধিকার প্রাণ হারিয়েছে।

শ্রীরাধিকা গৃহবধূ। ইতিমধ্যে শ্রীকৃষ্ণের মনকাড়া বাঁশির শব্দে তাঁর মন হারিয়ে গেছে। গৃহকর্মে তার মন আর নিবিষ্ট থাকে না। তাঁর শরীর আকুল, মন ব্যাকুল। রাধার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছে। কৃষ্ণের বাঁশিতে তিনি প্রেমিকের আহ্বান শুনতে পান। তাঁর অন্তর কৃষ্ণের দ্বারা চুরি হয়ে গেছে। তাই বড়ায়িকে একথা বলেছেন।

প্রশ্ন ৭। “কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি চিত্তের হরিষে।

তাঁর পাত্র বড়ায়ি মোঁ কৈলো কোন দোষে৷”

– তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ যমুনা তীরে গোচরণ মাঠ থেকে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুর ভেসে আসছে রাধার কাছে। রাধা এই বাঁশির শব্দ শুনে বড়ায়িকে প্রশ্ন করছেন, মনের আনন্দে কে বাঁশি বাজাচ্ছে। এই ধ্বনি তাকে কাহিল করে তুলেছে। মনে প্রাণে তিনি ব্যাকুল হয়ে রান্না বান্নায় গোলমাল করে ফেলেছেন। তিনি কৃষ্ণের দাসী হয়ে তার পদতলে নিজেকে সমর্পণ করতে চান। বড়ায়ির কাছে রাধার প্রশ্ন, তিনি কী দোষ করেছেন, যার জন্য তিনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

প্রশ্ন ৮। “আন্তর সুখাএ মোর কাহ্ন অভিলাসে।

বাসলী শিরে বন্দি গাইল চণ্ডীদাসে ৷”

– তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কৃষ্ণের বাঁশির সুর অনুরাগিণী রাধাকে কৃষ্ণাগতপ্রাণা করে তুলেছে। কৃষ্ণের সঙ্গ পেতে রাধা তার কাছে পাখি হয়ে উড়ে যেতে চান। বড়ু চণ্ডীদাস রাধাভাবে ভাবিত ছিলেন বলেই রাধার অন্তজ্বালা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাঁর নিজের মানসিক অভিব্যক্তি তিনি রাধার মানবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। কৃষ্ণপ্রেমে পাবার বাসনায় কবির অন্তরও শুকিয়ে গেছে। তিনি একান্তভাবে কৃষ্ণপ্রেমে সমৃদ্ধ হতে আগ্রহী। তাইতো রাধার আকুতির মধ্য দিয়ে তিনি গীত গেয়েছেন। কবি বাসলী বা বাগুলি নামক দেবীর উপাসক ছিলেন। এই দেবীকে বন্দনা করেই তিনি রাধিকার হৃদয়ানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন ৯। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশটির উৎস সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গবেষক বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্ববল্লভ ১৩১৬ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যখানি জনৈক ব্যক্তির গোয়ালঘরের চালা থেকে আবিষ্কার করেন। তারই সম্পাদনায় গ্রন্থখানা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৩২৩ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থখানির মূল বিষয় হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের প্রেম কাহিনী। এই কাব্যখানিতে রয়েছে মোট ১৩টি খণ্ড। শেষ খণ্ডটির নাম ‘রাধা বিরহ খণ্ড’। তার পূর্বের খণ্ডটির নাম ‘বংশীখণ্ড’। বংশীখণ্ড থেকেই আলোচ্য ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশটি সংকলিত হয়েছে।

প্রশ্ন ১০। ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশটি যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত সেই কাব্যগ্রন্থের কয়টি খণ্ড এবং খণ্ডগুলির নাম কী?

উত্তরঃ ‘বংশীনাদে’ কবিতাংশটি বড়ু চণ্ডীদাসে রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এই কাব্যগ্রন্থটির মোট ১৩ (তেরো)টি খণ্ড। 

এই খণ্ডগুলি হল – 

(১) জন্মখণ্ড। 

(২) তাম্বুলখণ্ড। 

(৩) দানখণ্ড। 

(8) নৌকাখণ্ড। 

(৫) ভারখণ্ড। 

(৬) ছত্রখণ্ড। 

(৭) বৃন্দাবন খণ্ড। 

(৮) যমুনান্তৰ্গত কালীয়দমন খণ্ড। 

(৯) যমুনান্তর্গত বস্ত্র হরণ খণ্ড। 

(১০) যমুনান্তর্গত হার খণ্ড। 

(১১) বাণ খণ্ড। 

(১২) বংশী খণ্ড। ও 

(১৩) রাধাবিরহ খণ্ড।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটি কোন্ কবির কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? কবিতাটির সারমর্ম নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, 

‘বংশীনাদে’ কবিতাটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘বংশীনাদে’ কবিতাটির কবি বড়ু চণ্ডীদাস। তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য থেকে কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ ‘তাম্বুল খণ্ডে’ বড়াইয়ের মুখে রাধিকার রূপবর্ণনা শুনে নন্দের ঘরের গরু রাখোয়াল কৃষ্ণ বড়াইয়ের মাধ্যমে রাধিকার নিকট প্রেম নিবেদন করলে রাধিকা বড়াইকে অপমান করে তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন। এরই প্রতিশোধ নিতে ‘বংশীখণ্ডে’ দেখা যায় কৃষ্ণ মোহন বাঁশি বাজিয়ে রাধিকাচিত্তকে উৎপীড়িত করবার এক নিষ্ঠুর লীলায় মেতে উঠেছেন।

এই হৃদয় বিদারক বংশীধ্বনি শুনে রাধিকা সহচরী বড়ায়িকে প্রশ্ন করছেন কে সেই লোক যে কালিন্দী নদী তীরের গোচারণ ভূমি হতে বাঁশি বাজিয়ে তাঁর শরীরকে আকুল ও মনকে ব্যাকুল করছে। আর এক্ষেত্রে তিনি একজন গৃহিনী, তাঁর ঘরের রন্ধনকার্যও এলোমেলো হচ্ছে। বাঁশির ধ্বনিতে রাধিকার দেহ মন ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে পড়ছে। উপায় না পেয়ে রাধিকা শ্রীকৃষ্ণের পদপ্রান্তে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক। প্রেমিক কৃষ্ণের সহিত তার মিলন যেন ত্বরান্বিত হয়, ইহাই তার একমাত্র কাম্য। কেননা তিনি আর ঘরে থাকতে পারছেন না। রাধিকার দু’চক্ষু হতে ঝরণা ধারার মতো অশ্রু নির্গত হচ্ছে। কৃষ্ণ প্রেমে শ্রীমতি রাধিকা আত্মহারা। তাঁর মনে প্রশ্ন কৃষ্ণের এই মনোমুগ্ধকর বংশীধ্বনি কি তাঁকে আকুল করবার জন্যই? এ অবস্থায় রাধিকা যদি পাখি হতেন তা হলে তখনই উড়ে যেতেন আবার কখনও বা বিষণ্ণ রাধা ধরণীর ফাটলেও প্রবেশ করতে চান।

বনে যদি আগুন লাগে তবে সকলেই সে আগুন দেখতে পায় কিন্তু কুম্ভকারের তুষের আগুন যে মাটির পাত্র কঠিন করে সে আগুন কেউ দেখতে পারে না। শ্রীরাধিকার অন্তর-আগুনও সকলের অগোচরে ধীরে ধীরে জ্বলছে। তাই এই বিরহরূপ আগুনের জ্বালা হতে মুক্তির জন্য রাধিকা কৃষ্ণের সহিত মিলন কামনা করছেন। কেননা এই মিলনই তাঁকে এ যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে।

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘বংশীনাদে’ কবিতাটির নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ নবজাতকের জন্মের পর যেভাবে তাঁর পিতা-মাতা বা দাদু-ঠাকুরমা তার নামকরণ করে থাকেন ঠিক সেভাবে শিল্প সাহিত্যেও নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সাহিত্যে নামকরণের কোন বাধাধরা নিয়ম বা রীতি নেই। তবে নামকরণকে হতে হয় কখনও বিষয়মুখি, আবার কখনও বা কাহিনি নির্ভর। আবার শিরোনামের মধ্যে কখনও চরিত্র কখনও মুখ্য ঘটনা প্রধান হয়ে উঠে।

‘বংশীনাদে’ কবিতাটির নামকরণ বিষয়ভিত্তিক। শ্রীকৃষ্ণের মনোমুগ্ধকর বংশীধ্বনি শ্রবণ করে শ্রীমতি রাধিকার যে চিত্ত চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল তাই এখানে বর্ণিত।

মনমোহিনী বাঁশির আওয়াজ প্রেম পাগলিনী রাধাকে কতটা বিপর্যস্থ করে তুলেছিল তা কবিতাটিতে উপস্থাপিত হয়েছে। বাঁশির শব্দে রাধার দেহমন উতলা, তাঁর গৃহের রন্ধন কার্যে গোলমাল ঘটেছে। তিনি দাসী হয়ে কৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করতে চান। তাঁর দুচোখ হতে ঝর্ণাধারার মতো অশ্রু নির্গত হচ্ছে। তাঁর মনে হচ্ছে তিনি যদি পাখি হতেন তবে তখনই উড়ে যেতেন কৃষ্ণের কাছে। কখনওবা বিষণ্ণ রাধা ধরণীর ফাটলেও প্রবেশ করতে চান। শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি শ্রবণেই তার এই আত্মহারা অবস্থা। সুতরাং বলা যেতে পারে যে বিষয়বস্তু বা কথা বস্তুর দিক হতে বিচার করলে বলতে হয় ‘বংশীনাদে’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।

প্রশ্ন ২। শ্রীকৃষ্ণের বংশীনাদ শুনে রাধার অন্তরে যে ব্যাকুলতা দেখা দেয় তার পরিচয় দাও।

অথবা, 

‘বংশীনাদে’ কবিতা অবলম্বনে রাধার চিত্ত ব্যাকুলতার পরিচয় দাও।

অথবা, 

‘বংশীনাদে’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে রাধার মানসিক অবস্থার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা লিপিবদ্ধ করো।

উত্তরঃ ‘বংশীনাদে’ কবিতায় কৃষ্ণের বাঁশির ধ্বনি শুনে শ্রীরাধিকার অন্তরে যে ব্যাকুলতা দেখা দিয়েছে তাহাই বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে কবিতাটিতে বর্ণিত হয়েছে। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ‘তাম্বুল খণ্ডে’ বড়াইয়ের মুখে রাধিকার রূপ-যৌবনের কথা শুনে নন্দের ঘরের গরু-রাখোয়াল কৃষ্ণ বড়ায়ির মাধ্যমে রাধিকার নিকট প্রেম নিবেদন করলে রাধিকা বড়ায়িকে অপমান করে তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন। এরই প্রতিশোধ নিতে ‘বংশীখণ্ডে’ দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ মোহনবাঁশি বাজিয়ে রাধিকা চিত্তকে উৎপীড়িত করতে এক নিষ্ঠুর লীলায় মেতে উঠেছেন।

এই হৃদয় বিদারক বংশীধ্বনি শুনে রাধিকা বড়ায়িকে প্রশ্ন করছেন কে সেই লোক যে কালিন্দী নদী তীর (বৃন্দাবন) গোচারণ ভূমি হতে বাঁশি বাজিয়ে তাঁর শরীরকে আকুল ও মনকে ব্যাকুল করছে। আর এক্ষেত্রে তিনি একজন গৃহিনী, তাঁর ঘরের রন্ধন কার্যও এলোমেলো হচ্ছে। মধুর এই বংশীধ্বনিতে রাধা অস্থির হয়ে পড়ছেন। কোন উপায় না পেয়ে রাধিকা শ্রীকৃষ্ণের পদপ্রান্তে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক। প্রেমিক কৃষ্ণের সহিত তাঁর মিলন যেন ত্বরান্বিত হয়, এটিই তার একমাত্র কাম্য। কৃষ্ণের বাঁশির সুর নিজস্ব গুণে তাঁকে উতলা করে তুলছে। ঘরের মানুষ, সমাজের মানুষকে উপেক্ষা করে তিনি কৃষ্ণের কাছে হাজির হতে পারছেন না। তিনি যদি পাখি হতেন তা হলে সমাজের ভয় থাকত না। কিন্তু তা হবার নয়, তাই তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই রাধিকা ধরণীর ফাটলে প্রবেশ করে কৃষ্ণপ্রেমের জ্বালা হতে রক্ষা পেতে চান।

বনে যদি আগুন লাগে তবে তা সকলেই দেখতে পায় কিন্তু কুম্ভকারের তুষের আগুনে যে মাটির পাত্র কঠিন করে, সে আগুন কেউ দেখতে পায় না। শ্রীরাধিকার অন্তর আগুনও সকলের অগোচরে ধীরে ধীরে জ্বলছে। তাই এই বিরহরূপ আগুনের জ্বালা হতে মুক্তির জন্য রাধা কৃষ্ণের সাথে মিলন কামনা করছেন কেননা এ মিলনই তাঁকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে।

প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার এরূপ তীব্র ব্যাকুলতা বৈষ্ণব সাহিত্য ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top