Class 12 Advance Bengali Chapter 12 মুকুট Question Answer is a textbook prescribed by the ASSAM AHSEC Board Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Advance Bengali Chapter 12 মুকুট Notes The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Advance Bengali Chapter 12 মুকুট Solutions are free to use and easily accessible.
Class 12 Advance Bengali Chapter 12 মুকুট
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 2nd year Advance Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. AHSEC Board Class XII Advance Bengali Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. HS 2nd Year Advance Bengali Suggestion, HS 2nd Year Advance Bengali Notes Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 Advance Bengali Textbooks Solution. HS 2nd Year Advance Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
মুকুট
নাটক
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘মুকুট’ নাটকের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২। ‘মুকুট’ নাটক কয় অঙ্কে বিভক্ত?
উত্তরঃ তিন অঙ্কে।
প্রশ্ন ৩। ‘মুকুট’ গ্রন্থটিকে কী বলা যায় – নাটক না কি উপন্যাস?
উত্তরঃ নাটক।
প্রশ্ন ৪। “এ মুকুট আমার নয়।” – বক্তার নাম কী?
উত্তরঃ বক্তা হলেন ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ৫। “আমার এই পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়েই আমি যুদ্ধে জিতব, এবং আমি একলাই জিতব।” – বক্তার নাম কী?
উত্তরঃ রাজধর।
প্রশ্ন ৬। যুবরাজের নাম কী?
অথবা,
‘মুকুট’ নাটকে জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজের নাম কী?
উত্তরঃ চন্দ্রমাণিক্য।
প্রশ্ন ৭। “দেখো সেনাপতি আমি বারবার বলছি, তুমি আমার নাম ধরে ডেকো না।”
উত্তরঃ বক্তা রাজধর।
প্রশ্ন ৮। আরাকানরাজের ভাইয়ের নাম কী?
উত্তরঃ হাম-চু।
প্রশ্ন ৯। আরাকান যুদ্ধের সময় রাজধরের অধীনে কত সৈন্য ছিল?
উত্তরঃ পাঁচ হাজার।
প্রশ্ন ১০। রাজধরের বন্ধুর নাম ________। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ ধুরন্ধর।
প্রশ্ন ১১। “শিলা কখনো জলে ভাসে না, বানরে কখনো সংগীত গায় না।” – বক্তা কে?
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ।
প্রশ্ন ১২। অমর মাণিক্য কোথাকার রাজা ছিলেন?
উত্তরঃ ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ছিলেন।
প্রশ্ন ১৩। “অসম্মান কেউ করে না, অসম্মান তুমি করাও।” – বক্তা কে?
উত্তরঃ বক্তা ইশা খাঁ।
প্রশ্ন ১৪। ‘মুকুট’ কোন্ শ্রেণির রচনা?
উত্তরঃ মুকুট একটি নাটক।
প্রশ ১৫। ‘মুকুট’ নাটকের কনিষ্ঠ রাজকুমারের নাম কী?
উত্তরঃ রাজধর।
প্রশ্ন ১৫। “ধিক্! তোমার হাত থেকে ______ অপমান; গ্রহণ করবে কে? (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ এ পুরস্কারের।
S.L. No. | সূচীপত্র |
পদ্যাংশ | |
পাঠ – ১ | বংশীনাদে |
পাঠ – ২ | বিপ্রবেশে অর্জুন |
পাঠ – ৩ | কপোতাক্ষ নদ |
পাঠ – ৪ | আমার কৈফিয়ৎ |
পাঠ – ৫ | মেরুর ডাক |
পাঠ – ৬ | হায় চিল |
পাঠ – ৭ | প্ৰত্যহের ভার |
গদ্যাংশ | |
পাঠ – ৮ | ভালবাসার অত্যাচার |
পাঠ – ৯ | পনেরো আনা |
পাঠ – ১০ | সাহিত্যে খেলা |
পাঠ – ১১ | দিবা দ্বিপ্রহরে |
নাটক | |
পাঠ – ১২ | মুকুট |
উপন্যাস | |
পাঠ – ১৩ | মেজদিদি |
ব্যাকরণ | |
ছন্দ | |
অলঙ্কার |
প্রশ্ন ১৭। ‘মুকুট’ নাটকে মহারাজার নাম কী?
উত্তরঃ অমর মাণিক্য।
প্রশ্ন ১৮। ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের দ্বিতীয় পুত্র কে?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ১৯। ইন্দ্রকুমারের পত্নীর নাম কী?
উত্তরঃ কমলাদেবী।
প্রশ্ন ২০। ‘মুকুট’ নাটকের সেনাপতির নাম লেখো।
উত্তরঃ ইশা খাঁ।
প্রশ্ন ২১। ‘মুকুট’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনটি?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটক থেকে।
প্রশ্ন ২২। “খেলার পরীক্ষা তো চুকেছে, এবার কাজের পরীক্ষা হোক।” – উক্তিটি কোন্ পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ রাজধর।
প্রশ্ন ২৩। ‘মুকুট’ নাটকের মহারাজ অমরমাণিক্যের সন্তান কয়টি?
উত্তরঃ মহারাজ অমরমাণিক্যের সন্তান তিনটি।
প্রশ্ন ২৪। ‘মুকুট’ নাটকের লেখকের নাম লেখো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের লেখকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২৫। রাজধর যে আরাকান রাজের মুকুট নিয়ে এসেছিল, ইশা খাঁ তাকে কোথায় নিক্ষেপ করেছিলেন?
উত্তরঃ কর্ণফুলি নদীর জলে।
প্রশ্ন ২৬। ‘মুকুট’ নাটকের প্রথম অঙ্কে কয়টি দৃশ্য আছে?
উত্তরঃ তিনটি দৃশ্য।
প্রশ্ন ২৭। ‘মুকুট’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে কয়টি দৃশ্য আছে?
উত্তরঃ ছয়টি দৃশ্য আছে।
প্রশ্ন ২৮। ‘মুকুট’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কে কয়টি দৃশ্য আছে?
উত্তরঃ তিনটি দৃশ্য।
প্রশ্ন ২৯। ‘মুকুট’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনটি?
উত্তরঃ রাজধর।
প্রশ্ন ৩০। “আমি আপনার ছাত্র বটে কিন্তু আমি রাজকুমার।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ রাজধরের।
প্রশ্ন ৩১। ধুরন্ধর কে?
উত্তরঃ ধুরন্ধর হলেন রাজধরের মামাতো ভাই।
প্রশ্ন ৩২। ‘সুযোগ কি তিরের মুখে থাকে? সুযোগ বুদ্ধির ডগায়।’ – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ রাজধরের।
প্রশ্ন ৩৩। “সে উপহারে আমার প্রয়োজন নেই।” – এখানে বক্তা কে?
উত্তরঃ বক্তা ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ৩৪। ‘এ মুকুট আমার। এ আমার জয়ের পুরষ্কার”। – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ রাজধরের।
প্রশ্ন ৩৫। “আমি নরাধম। এ মুকুট তোমার পায়ে রাখলুম।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ রাজধরের।
প্রশ্ন ৩৬। “তোমার হাত থেকে এ পুরস্কারের অপমান গ্রহণ করবে কে?” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমারের।
প্রশ্ন ৩৭। “তাই তিনি বুঝি সমস্ত অস্ত্রশালা শুদ্ধই তোমাকে ধার দিয়ে বসে আছেন।” – এখানে বক্তা কে?
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ৩৮। “আমার তিরটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও জগৎ সংসার যেমন চলছিল ঠিক তেমনি চলবে।” – কে উক্তিটি করেছেন?
উত্তরঃ এই উক্তিটি যুবরাজ করেছেন।
প্রশ্ন ৩৯। “তোমার তিরও তোমার দাদার তীরেরই অনুসরণ করেছে – লক্ষ্যের দিকে লক্ষ্যও করেনি। – এটি কার উক্তি?
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ইশা খাঁ-র উক্তি।
প্রশ্ন ৪০। “যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থেকেই তিনি যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ এটি ইন্দ্রকুমারের উক্তি।
প্রশ্ন ৪১। “ক্ষেত্র থেকে যুদ্ধ করে মজুররা, দূরে থেকে যে যুদ্ধ করতে পারে সেই যোদ্ধা।” – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ এটি রাজধরের উক্তি।
প্রশ্ন ৪২। “যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল এক-এক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে।” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ইশা খাঁর।
প্রশ্ন ৪৩। ‘এ মুকুট আমার নয়। এ আমি তোমাকেই পরিয়ে দিলুম।’ – এটা কার উক্তি?
উত্তরঃ এটি ইন্দ্রকুমারের উক্তি।
প্রশ্ন ৪৪। “কাজ তো তোমার বরাবরই করে আসছি, ফল তো কিছুই পাই না।” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ উক্তিটি ধুরন্ধরের।
প্রশ্ন ৪৫। রাজধর শিকারে কোন নদীর তীরে যেতে চেয়েছিলেন?
উত্তরঃ গোমতী নদীর তীরে।
প্রশ্ন ৪৬। ‘মুকুট’ নাটকের আধার কোন রাজবংশ?
উত্তরঃ ত্রিপুরার রাজবংশ।
প্রশ্ন ৪৭। ‘মুকুট’ নাটকের সেনাপতির নাম কী?
উত্তরঃ ইশা খাঁ।
প্রশ্ন ৪৮। ত্রিপুরারাজ রাজকুমারদের অস্ত্র পরীক্ষায় কী পুরস্কার ঘোষণা করেন?
উত্তরঃ যে জয়ী হবে সে পাবে হীরে বাঁধানো তলোয়ার।
প্রশ্ন ৪৯। ত্রিপুরার রাজকুমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর কে?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ৫০। ‘মুকুট’ নাটকে বর্ণিত অস্ত্র পরীক্ষায় লক্ষ্য বিদ্ধ তীরে কার নাম লিখাছিল?
উত্তরঃ রাজধরের।
প্রশ্ন ৫১। আরাকানরাজ কার সঙ্গে যুদ্ধের মতলব করেন?
উত্তরঃ ত্রিপুরারাজের সাথে।
প্রশ্ন ৫২। রাজধর মুক্তিপণ হিসেবে আরাকানরাজের কাছে কী দাবি করেন?
উত্তরঃ তাঁর মাথার মুকুট।
প্রশ্ন ৫৩। ‘মুকুট’ নাটকে প্রতাপ কে?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার প্রহরী।
প্রশ্ন ৫৪। আরাকান যুদ্ধের সময় রাজধরের হাতে সৈন্য কত ছিল?
উত্তরঃ পাঁচ হাজার।
প্রশ্ন ৫৫। ইশাখাঁকে কখন কবর দেওয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ বেলা চার প্রহরের সময়।
প্রশ্ন ৫৬। খোঁজাখুঁজি করে যুবরাজকে কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?
উত্তরঃ কর্ণফুলির তীরে অর্জুন গাছের তলায়।
প্রশ্ন ৫৭। ‘যেখানে আমার প্রয়োজন নেই সেখানে আমার পক্ষে থাকাই অপমান।’ – বক্তা কে?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার।
প্রশ্ন ৫৮। ‘মুকুট’ নাটকের শেষ উক্তিটি কার?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমারের।
প্রশ্ন ৫৯। ‘মুকুট’ নাটকের কনিষ্ঠ রাজকুমারের নাম ______। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ রাজধর।
প্রশ্ন ৬০। কতসালে ‘মুকুট’ নাটকটি লেখা হয়েছে?
উত্তরঃ ১৯০৮ সালে।
প্রশ্ন ৬১। ‘মুকুট’ নাটকে মোট সর্বমোট কতটি দৃশ্য আছে?
উত্তরঃ ১২টি দৃশ্য আছে।
প্রশ্ন ৬২। ‘মুকুট’ নাটকটি কোন রাজ্যের ছায়া অবলম্বনে রচিত?
উত্তরঃ ত্রিপুরা রাজ্যের।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “তাই তিনি বুঝি সমস্ত অস্ত্রশালা শুদ্ধই তোমাকে ধার দিয়ে বসে আছেন” কে, কাকে একথা বলেখেন?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন।
প্রশ্ন ২। “শনির সঙ্গে মঙ্গল এসে জুটেছেন।” – উক্তিটি কার? শনি ও মঙ্গল কাদের বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ঈশা খাঁর। শনি ও মঙ্গল ধুরন্ধর ও রাজধরকে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। “কাজ তো তোমার বরাবরই করে আসছি, ফল তো কিছুই পাই না।” – বক্তা কে? কার কাজ?
উত্তরঃ এখানে বক্তা হলেন ধুরন্ধর। রাজধরের কাজের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। “ভাঙা হাঁড়ির কানা পরে যদি দেশে যান তবেই ওকে সাজবে।” – কে, কাকে ‘ভাঙা হাড়ির কানা’ পরে যাওয়ার কথা বলেছেন?
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ রাজধরকে বলেছেন।
প্রশ্ন ৫। ‘বিচার তুমি বিচার চাও?’ – উক্তিটি কার? কার প্রতি এ উক্তি করা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি ইন্দ্রকুমারের। রাজধরের প্রতি উক্তিটি করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬। “আমার ধনুর্বিদ্যার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস নেই বলেই তোমরা দেখেও দেখতে পাচ্ছ না” – বক্তা কে? কাকে বলেছেন?
উত্তরঃ বক্তা রাজধর। এখানে ইশা খাঁ, ইন্দ্রকুমার চন্দ্রমাণিক্য এদের বলেছেন।
প্রশ্ন ৭। “বারবার শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু মূর্খের শিক্ষার শেষ তো কিছুতেই হয় না, যমরাজের পাঠশালায় না পাঠালে গতি নেই।” – উক্তি কার? তিনি কাকে বারবার শিক্ষা দিয়েছেন?
উত্তরঃ ত্রিপুরার মহারাজ অমরমাণিক্যের উক্তি। আরাকানরাজকে বারবার শিক্ষা দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৮। ওঁর বুদ্ধিটা সম্প্রতি বড়োই বেড়ে উঠেছে।” – কে, কার প্রসঙ্গে একথা বলেছে?
উত্তরঃ ইশা খাঁ রাজধর সম্বন্ধে একথা বলেছেন।
প্রশ্ন ৯। “দুর্বল লোকের পক্ষে অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো, শোধ তোলবার শখটা তার পক্ষে নিরাপদ নয়।” – উক্তিটি কার? কাকে উদ্দেশ্য করে এ- কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি রাজধরের মামাতো ভাই ধুরন্ধরের। রাজধরকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১০। “তোমার তলোয়ারও যেমন তোমার জিহ্বাও তেমনি, দুই-ই খরধার” – উক্তিটি কার? সে কার প্রতি উক্তিটি করেছে?
উত্তরঃ উক্তিটি যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের। সে ইশাখাঁর প্রতি উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন ১১। “তোমার তীর সকলের আগে ছোটে এবং নির্ঘাত গিয়ে লাগে।” – উক্তিটি কার? কাকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তি করা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ইশা খাঁর। তিনি ইন্দ্রকুমারকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন ১২। “আমাদের সেই চিরশত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে যাত্রা করে ক্ষাত্রচর্যে দীক্ষা গ্রহণ করতে রাজি আছ কি?” – এখানে কে কাকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেছেন?
উত্তরঃ এখানে মহারাজ অমরমাণিক্য, কুমারদের উদ্দেশ্যে এই কথা বলেছেন।
প্রশ্ন ১৩। “আগুন যদি লাগাতে হয় তো নিজের ঘরের চালটা সামলে লাগাতে হবে।” – উক্তিটি কার? – কাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি ধুরন্ধরের। রাজধরকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তি করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৪। “ভাই, আমি নিজের বিপদের কথা বলছিনে।” – এখানে কে, কাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন?
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য ইন্দ্রকুমারকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন।
প্রশ্ন ১৫। “তোমার দাদার বুদ্ধি তীরের মুখে কেন খেলে না তা জান? বুদ্ধিটা তেমন সূক্ষ্ম নয়।” উদ্ধৃতিটি কোন পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে? পাঠটির লেখকের নাম লেখো।
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘মুকুট’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। পাঠটির লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ১৬। “খেলার পরীক্ষা তো চুকেছে, এবার কাজের পরীক্ষা হোক।”- কে, কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছে?
উত্তরঃ ছল-চাতুরি করে রাজধর ধনুর্বিদ্যায় জেতার পর ঈশা খাঁ অমরমাণিক্যকে একথা বলেছেন।
প্রশ্ন ১৭। “আমার ভাই হামচু রয়েছে। সৈন্যরা তাকেই রাজা করবে, যুদ্ধ যেমন চলছিল তেমনি চলবে।” — হামচু কে? কোন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ হামচু আরাকান রাজের ভাই। এখানে আরাকানরাজের যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৮। “আমার ভাই হামচু রয়েছে। সৈন্যরা তাকেই রাজা করবে, যুদ্ধ যেমন চলছিল তেমনি চলবে।” – বক্তা কে? উদ্ধৃতিটি কোন পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ বক্তা আরাকানরাজ। উদ্ধৃতিটি ‘মুকুট’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ১৯। ‘আমি জিতে এনেছি, আমিই পরব।’ – কে কী জিতে এনেছে?
উত্তরঃ রাজধর আরাকান রাজের মাথার মুকুট জিতে এনেছে।
প্রশ্ন ২০। ‘মেজ বউরাণী তামাশা করে আমাকে এখানে বন্দী করে রেখেছিলেন। – বক্তা কে? মেজ বউরাণী কোথায় তাকে বন্দী করে রেখেছিলেন?
উত্তরঃ বক্তা রাজধর। ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায়।
প্রশ্ন ২১। “দুর্বল লোকের পক্ষে অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো, শোধ তুলবার শখটা তার পক্ষে নিরাপদ নয়।” – উক্তিটি কার? কাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি রাজধরের মামাতো ভাই ধুরন্ধরের। রাজধরকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ২২। “শিলা কখনো জলে ভাসে না, বানরে কখনো সংগীত গায় না।” – এটি কার প্রতি কার উক্তি?
উত্তরঃ রাজধরের প্রতি সেনাপতি ইশাখাঁর উক্তি।
প্রশ্ন ২৩। “পরাজয় তোমার হয়নি দাদা, আমারই পরাজয় হয়েছে” – কে কার প্রতি উক্তিটি করেছে?
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রমাণিক্য যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের প্রতি উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন ২৪। “আমি নরাধম। এ মুকুট তোমার পায়ে রাখলুম।”
– কে কাকে বলেছে?
উত্তরঃ উক্তিটি রাজধরের। তিনি যুবরাজকে কথাটি বলেছেন।
প্রশ্ন ২৫। যুবরাজ বাণবিদ্ধ হয়ে হাতি থেকে পড়ে যাওয়ার কথাটা কে, কে সৈন্যদের বলেছিল?
উত্তরঃ উমেশ ও শিবু।
প্রশ্ন ২৬। “কতদিন কত অপরাধ করেছি, আজ সমস্ত মার্জনা করে যাও।” – উক্তিটি কে, কাকে বলেছিলেন?
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য সেনাপতি ইশা খাঁকে বলেছিলেন।
প্রশ্ন ২৭। “আমি জিতে এমেছি, আমিই পরব।” – কে, কী জিতে এনেছে?
উত্তরঃ রাজধর আরাকানরাজের মাথার মুকুট জিতে এনেছে।
প্রশ্ন ২৮। আরাকানরাজ বন্দী হবার পর রাজধরকে কী কী উপহার দিতে চেয়েছিলেন?
উত্তরঃ পাঁচশত ব্রহ্মদেশের ঘোড়া এবং তিনটি হাতি।
প্রশ্ন ২৯। “রাজসভায় দুইপা-ওয়ালা এমন একটি জীব নেই যিনি ওঁর কোনো কোনো ফাঁদে আটকে না পড়েছেন।” – কার উক্তি? ‘ওঁর’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ইশা খাঁর উক্তি। ওঁর বলতে রাজধরকে বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন ৩০। ‘মুকুট’ নাটকটি একটি ক্ষুদ্র উপন্যাসের নাট্যরূপ। – উপন্যাসের নাম লেখো। সেটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকটি মুকুট নামক উপন্যাসের নাট্যরূপ। এটি ‘বালক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ৩১। ‘মুকুট’ নাটকের মহারাজের কটি ছেলে ও তাদের নাম কী?
উত্তরঃ তিনটি। চন্দ্রমাণিক্য, ইন্দ্রকুমার ও রাজধর।
প্রশ্ন ৩২৷ ‘শোনো তো বাবা। বড়ো তামাশার কথা।’ – কার প্রতি কার উক্তি?
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ ইন্দ্রকুমারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
প্রশ্ন ৩৩। ‘আপনার অস্ত্রশালার মধ্যে একটি জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন।’ – কার প্রতি কার উক্তি?
উত্তরঃ অস্ত্রশালার প্রহরী প্রতাপ ইন্দ্রকুমারকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন ৩৪। ‘মুকুট’ নাটকের শেষ উক্তিটি কার? উক্তিটি উদ্ধৃত করো।
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমারের। “আমি পরাজিত – এ মুকুট আমার নয়। এ আমি তোমাকেই পরিয়ে দিলুম দাদা।”
প্রশ্ন ৩৫। ‘মুকুট’ নাটকে ত্রিপুরারাজ ও তাঁর সেনাপতির নাম কী?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের ত্রিপুরারাজের নাম অমরমাণিক্য এবং সেনাপতির নাম ইশাখাঁ।
প্রশ্ন ৩৬। “অসম্মান কেউ করে না, অসম্মান তুমি করাও।” – কে, কাকে এই কথা বলেছিলেন?
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ রাজধরকে একথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন ৩৭। রাজসেনাপতি, অস্ত্রশিক্ষাগুরু ইশাখার প্রতি ত্রিপুরা-রাজকুমারদের মধ্যে কে বা কারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল?
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য এবং মধ্যমকুমার ইন্দ্রকুমার।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “ক্ষেত্র থেকে যুদ্ধ করে মজুররা, দূরে থেকে যে যুদ্ধ করতে পারে সেই যোদ্ধা।” – এটা কার উক্তি? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এটা রাজধরের উক্তি।
আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধের সময় রাজধর পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে দুরে থাকবেন এই প্রস্তাব রাজধর সেনাপতি ইশা খাঁর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ধুরন্ধরের নিকট হতে তাঁর প্রতি ইন্দ্রকুমারের মনোভাব কী তা জানতে চাইলে ধুরন্ধর বললেন যে ইন্দ্রকুমার প্রথমেই তা শুনে অট্টহাস্য করে উঠেন এবং বললেন রাজধরের যুদ্ধ প্রণালীটা এরকম, তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহু দূরে থেকেই যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন। ইন্দ্রকুমারের তার সম্পর্কে একথা বলতে শুনে রাজধর বললেন যে ক্ষেত্র হতে মজুররা যুদ্ধ করে, আর দূর হতে যে যুদ্ধ করতে পারে সে-ই যোদ্ধা।
প্রশ্ন ২। “তোমার দাদার বুদ্ধি তীরের মুখে কেন খেলে না তা জান? বুদ্ধিটা তেমন সূক্ষ্ম নয়।” – অন্তর্নিহিত ভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ অস্ত্র পরীক্ষায় যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য তীর ছুঁড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। যুবরাজ সেনাপতি ইশা খাঁকে বললেন তিনি মনোযোগ সহকারে তীর নিক্ষেপ করেছিলেন তথাপিও তাঁর তীরটি লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। তখন ভ্রাতা ইন্দ্রকুমার যুবরাজকে বললেন যদি তিনি মনোযোগ সহকারে তীর নিক্ষেপ করতেন তবে অবশ্যই তিনি লক্ষ্যভেদ করতে পারতেন। যুবরাজ উদাসীন বলে সব জিনিস ফেলে দেন। ইশা খাঁ তখন ইন্দ্রকুমারকে বললেন যে যুবরাজের বুদ্ধি সুক্ষ্ম নয়। সেজন্য এই বুদ্ধি তীরের মুখে খেলে না।
প্রশ্ন ৩। “একবার তো জিতিয়েছিল সেই অস্ত্রপরীক্ষার সময় – এবারও সেই শয়তান জিতিয়েছে।” – কে, কাকে বলেছেন? বিষয়টি বিশদ করো।
উত্তরঃ সেনাপতি ইশা খাঁ ইন্দ্রকুমারকে একথা বলেছেন।
আরাকানরাজ যখন রাত্রিবেলা শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন রাজধর যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য, ইন্দ্রকুমার ও সেনাপতি ইশা খাঁর অজান্তে রাত্রিবেলা গিয়ে আরকানরাজকে বন্দী করেন। আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দেন এবং পরাজয়ের নিদর্শন স্বরূপ তাঁর মুকুটের বিনিময়ে রাজধর তাঁকে মুক্তি দেন। ইশা খাঁ ইন্দ্ৰকুমারকে বললেন যে অস্ত্র পরীক্ষার সময় রাজধর যে ছল-চাতুরির সাহায্যে জিতেছিল, এবারও সে তেমনভাবেই জিতেছে।
প্রশ্ন ৪। “শিলা কখনো জলে ভাসে না, বানরে কখনো সংগীত গায় না।” – এটা কার উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এটা সেনাপতি ইশা খাঁর উক্তি।
ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় রাজধর ছল-চাতুরির মাধ্যমে ইন্দ্রকুমারকে পরাজিত করেন। তা দেখে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে গেলেন। অস্ত্র শিক্ষাগুরু ইশা খাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে এখানে একটা রহস্য রয়েছে। কারণ ইন্দ্রকুমার ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী। তাঁকে পরাজিত করা অস্ত্রবিদ্যায় অদক্ষ রাজধরের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। শিলা যেমন কখনো জলে ভাসে না, বানরে কখনো সংগীত গায় না, তেমনি রাজধরের পক্ষে কখনো লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৫। “শনির সঙ্গে মঙ্গল এসে জুটেছেন।”- উক্তিটি কার? শনি ও মঙ্গল কাদের বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি প্রথম অনুচরের। এখানে শনি হলেন রাজধর আর মঙ্গল ধুরন্ধর। এদের একসঙ্গে আসতে দেখে এরূপ উক্তিটি প্রথম অনুচর করেছে।
প্রশ্ন ৬। ‘‘আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লার দূতেরা এক-এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তখন সমস্ত হিসাব উলটো করে দিয়ে যায়।” – তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
“শুধু সন্ধিপত্র দিলে তো হবে না মহারাজ। আপনি যে পরাজয় স্বীকার করলেন তার কিছু নিদর্শন তো দেশে নিয়ে যেতে হবে।” – রাজধর আরাকানরাজকে কীভাবে পরাজিত করেছিল? আরাকান রাজ সন্ধির নিদর্শন স্বরূপ কী কী উপহার দিতে সম্মত হয়েছিলেন?
অথবা,
মহারাজ কে? কার কাছে পরাজয় স্বীকার করলে তিনি সন্ধির নিদর্শন স্বরূপ কী দিতে হয় তাঁকে এবং কেন?
উত্তরঃ এখানে মহারাজ হলেন আরাকানরাজ। তিনি রাজধরের কাছে পরাজয় স্বীকার করেন।
আরাকান যুদ্ধে তিন রাজকুমার যোগদান করলেন। কনিষ্ঠ রাজকুমার যুদ্ধক্ষেত্রে না নেমে আলাদা হয়ে যান, এবং রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজের শিবিরে আক্রমন করে রাজাকে বন্দী করেন। ব্যাপারটা যুবরাজ, ইন্দ্রকুমার ও ইশা খাঁর জানা ছিল না। সকালে যুদ্ধ আরম্ভ হলে শত্রু সৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। ইন্দ্রকুমার এর কারণ ইশাখাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি রাজধরের শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করে আরাকানরাজকে বন্দি করার ঘটনা বলেন। ইন্দ্রকুমার কথাটি বিশ্বাস করেন নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইশাখাঁ বলেন, যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল একেক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন একেক সময় আল্লার দূতরা ঘুমিয়ে পড়েন এবং শয়তান সমস্ত হিসেব উল্টো করে দেয়।
আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দিতে চাইলে, রাজধর আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শন নিয়ে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আরাকানরাজ ব্রহ্মদেশের পাঁচশো ঘোড়া ও তিনটি হাতি উপহার দেবার কথা বলেন। কিন্তু রাজধর মহারাজের মাথার মুকুট চেয়ে বসেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটা আদায় করে ছাড়েন।
প্রশ্ন ৭। “তাই তিনি বুঝি সমস্ত অস্ত্রশালা শুদ্ধই তোমাকে ধার দিয়ে বসে আছেন।” – এখানে বক্তা কে? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
কে, কাকে একথা বলেছেন? তিনি কে?
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন। তিনি হলেন ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী কমলাদেবী।
রাজধর শিকারে যাবার জন্য অস্ত্র খুঁজতে গিয়ে দেখেন তাঁর সমস্ত অস্ত্রগুলোতে মর্চে পড়ে আছে। তখন তিনি অস্ত্রপরীক্ষার জন্য সেগুলো সাফ করতে দিয়ে এসে ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী কমলাদেবীর কাছে আসেন ইন্দ্রকুমারের কিছু অস্ত্র ধার নেবার জন্যে। তখন তামাশা করে ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী রাজধরকে অস্ত্রশালায় ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেন। ইন্দ্রকুমার রাজধরের একথা শুনে বিদ্রূপাত্মক সুরে বললেন যে সেজন্যই বুঝি সমস্ত অস্ত্ৰ শালা শুদ্ধই তোমাকে ধার দিয়ে বসে আছেন।
প্রশ্ন ৮। “আজ মরবার যেমন চমৎকার সুযোগ হয়েছে পালাবার তেমন নয়।” – কে, কাকে এ কথা বলেন? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য সেনাপতি ইশা খাঁ-কে এ কথা বলেছেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধে যখন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের সৈন্যরা পরাস্ত হওয়ার উপক্রম দেখা দেয় তখন সেনপতি ইশা খাঁ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যকে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালাবার উপদেশ দেন। তখন যুবরাজ বললেন অস্ত্রগুরু হিসেবে ইশা খাঁর মুখে এরূপ উপদেশ সাজে না। আজ পালাবার পথ নেই কিন্তু মরবার চমৎকার সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন ৯। “আমি কি শত্রুসৈন্যের বেষ্টন ছিন্ন করে তোমার সাহায্যের জন্য আসিনি?” – বক্তা কে? তিনি কার বিপদে সাহায্য করেছিলেন? বক্তার বক্তব্যে অভিমান ফুটে উঠেছে কেন?
উত্তরঃ বক্তা হলেন ইন্দ্রকুমার।
তিনি যুবরাজ চন্দ্রাণিক্যকে বিপদে সাহায্যে করেছিলেন। আরাকানরাজের সঙ্গে প্রথম দিনের যুদ্ধে যুবরাজের সৈন্য পরাস্ত হওয়ার পথে ছিল। যুবরাজের অবস্থাও ভালো ছিল না। তখন ইন্দ্রকুমার তাঁকে রক্ষা করেছিলেন।
রাজধর সকলের অজান্তে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজকে বন্দী করে তাঁর মাথার মুকুট নিয়ে এলেন তখন যুবরাজ তার অপকর্মের নিন্দা না করে প্রশংসা করলেন এসময়ে ইন্দ্রকুমার অভিমানে বললেন যে, তিনি যে প্রাণকে তুচ্ছ করে বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করলেন সে ক্ষেত্রে যুবরাজের মুখ থেকে একটা প্রশংসাও শুনতে পেলেন না, উল্টো শুনতে হলো যে রাজধর না থাকলে কেউ তাদেরকে বিপদ হতে উদ্ধার করতে পারত না।
প্রশ্ন ১০। “আগুন যদি লাগাতে হয় তো নিজের ঘরের চালটা সামলে লাগাতে হবে।” – উক্তিটির ‘আগুন লাগানোর’ তাৎপর্য কী? ‘নিজের ঘরের চাল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সপ্রসঙ্গে আলোচনা করো।
উত্তরঃ কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর ছল-চাতুরির দ্বারা আরাকানকে হারিয়ে তাঁর মুকুট নিয়ে আসেন। রাজধর ক্ষাত্রধর্ম লঙ্ঘন করেছেন বলে ইন্দ্রকুমার ও ইশা খাঁ তাঁর উপর রাগান্বিত। রাজধরের ছিনিয়ে আনা মুকুটটি শেষ পর্যন্ত ইশা খাঁ কর্ণফুলির জলে ফেলে দেন। রাজধরের জয়ে ইন্দ্রকুমার এবং ইশা খাঁর অখুশি এবং ইশা খাঁ দ্বারা মুকুটটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দেওয়া, এতে প্রচণ্ড অপমানিত রাজধর প্রতিশোধ নেবার জন্য ধুরন্ধরের মাধ্যমে পত্রের সাহায্যে আরাকানরাজকে আবার আক্রমণের আহ্বান জানান। ধুরন্ধর এ কাজের জন্য রাজধরকে বলে এ কাজের জন্য পরে নিজের কপালে আঘাত করবে না তো। সুতরাং আগুন লাগালে নিজের চালাকে বাঁচিয়ে লাগানো উচিত।
‘নিজের ঘরের চাল’ বলতে নিজের নিরাপত্তাকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ১১। “বিচার! তুমি বিচার চাও! তা হলে যে মুখে চুনকালি পড়বে; বংশের লজ্জা প্রকাশ করব না অন্তর্যামী তোমার বিচার করবেন।” কে, কাকে এ কথা বলেছেন, ‘বংশের লজ্জা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সপ্রসঙ্গ আলোচনা করো।
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার রাজধরের প্রতি একথা বলেছেন।
অস্ত্র পরীক্ষায় জেতার জন্য রাজধর ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় ঢুকে নিজের নামাঙ্কিত তীরটি তূণে রেখে আসেন। এভাবে ছল চাতুরির দ্বারা রাজধর জয়ের খেতাব অর্জন করেন। কিন্তু উপস্থিত কেউই সেটা বিশ্বাস করতে পারেন নি যে কীভাবে সেটা সম্ভব হল। এতে রাজধর হল অপমান বোধ করে মহারাজকে এই অপমানের বিচার করতে বলেন। তখন ইন্দ্রকুমার সকল রহস্য বুঝতে পেরে রাজধরকে বললেন যে বিচার করলে তার ছল-চাতুরি সব ধরা পড়বে এবং তাঁর মুখে চুনকালি পড়বে। এটা রাজবংশের জন্য লজ্জার বিষয়। তাই তিনি এই লজ্জা প্রকাশ করতে চান না।
প্রশ্ন ১২। “দেখো রাজধর, আমাকে সাবধান করে দেবার জন্য আর কারও বুদ্ধির প্রয়োজন হবে না – তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।” – বক্তা কে। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তরঃ বক্তা হলেন ধুরন্ধর।
ধুরন্ধর হলেন রাজধরের মামাতো ভাই। নাটকে রাজধরকে সবসময় সহযোগিতা করতে তাকে দেখা যায়। রাজধর ধুরন্ধরের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। তীর প্রতিযোগিতার আগের দিন রাজধর ধুরন্ধরকে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় পাঠিয়ে তীর বদল করতে বলেছিলেন। নাটকে ধুরন্ধরের অবস্থান সবসময়ই রাজধরের পাশে। ধুরন্ধরও রাজধরের মতো চতুর ছিলেন।
প্রশ্ন ১৩। “শাবাস রাজধর; শাবাস! আজ তুমি ক্ষত্রিয় সন্তানের মতো কথা বলেছ।” – বক্তা কে? কেন তিনি এই কথা বলেছেন?
উত্তরঃ এখানে বক্তা হলেন সেনাপতি ইশা খাঁ।
রাজধর অস্ত্রগুরু ইশা খাঁকে তাঁর ব্যবহারের দ্বারা কিংবা অস্ত্রশিক্ষায় সন্তুষ্ট করতে না পারার কথা মহারাজের মুখে শুনে রাজধর যখন অস্ত্রবিদ্যার পরীক্ষা নেওয়ার কথা মহারাজকে প্রার্থনা করেন তখন মহারাজ খুশি হয়ে বললেন তিন পুত্রের মধ্যে যে অস্ত্র পরীক্ষায় বিজেতা হবেন তাঁকে হীরে বাঁধানো তলোয়ার পুরস্কার দেবেন। রাজধর যে অস্ত্রপরীক্ষায় অংশ নিতে চান। ইশা খাঁ তা শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন।
প্রশ্ন ১৪। “আমার ভাই হামচু রয়েছে। সৈন্যরা তাকেই রাজা করবে, যুদ্ধ যেমন চলছিল তেমনি চলবে।” – কোন্ গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে? নাট্যকারের নাম কী? হামচু কে এবং তার কথা কে বলেছিল?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটক থেকে গৃহীত হয়েছে। নাট্যকারের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হামচু ছিল আরাকানরাজের ভাই। আরাকানরাজ তার কথা বলেছিল।
প্রশ্ন ১৫। “না ভাই, আমরা তিন ভাই একত্রে বেরিয়েছি, বিজয়লক্ষ্মীর প্রসাদ আমরা ভাগ করে ভোগ না করতে পারলে আমার তো মনে দুঃখ থেকে যাবে।” – বক্তা কে? তিন ভাই-এর নাম লেখো। ‘বিজয়লক্ষ্মীর প্রসাদ’ বলতে কী বোঝ আলোচনা করো।
উত্তরঃ বক্তা হল যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য।
তিন ভাই-এর নাম হল – যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য, রাজকুমার ইন্দ্রকুমার, কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর। ‘বিজয়লক্ষ্মীর প্রসাদ’ বলতে আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের আনন্দের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৬। “সেনাপতি সাহেব কুমারদের এখন বয়স হয়েছে। ওঁদের মান রক্ষা করে চলতে হবে বৈকি।” – উক্তিটি কে করেছেন? সেনাপতি সাহেবের নাম কী? কুমার কতজন ছিলেন?
উত্তরঃ উক্তিটি ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্য করেছেন। সেনাপতি সাহেবের নাম ইশা খাঁ। কুমার তিনজন ছিলেন।
প্রশ্ন ১৭। “এখনো কর্ণফুলির স্রোতের শব্দ তো শুনতে পাচ্ছি। এই শব্দটিতেই কি পৃথিবীর শেষ বিদায় সম্ভাষণ শুনব?” – উপরে উদ্ধৃত উক্তিটি কে করেছেন? কাকে উদ্দেশ্য করে, কোন্ প্রসঙ্গে এহেন কথা বলা হয়েছে? আলোচনা করো।
উত্তরঃ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য উক্তিটি করেছেন।
মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধে সেনাপতি ইশা খাঁর মৃত্যু হলে যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য কর্ণফুলি নদীর তীরে ইশা খাঁকে কবর দিয়ে অর্জুন গাছের নিচে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণার চাইতেও বড় যন্ত্রণা ভ্রাতৃবিরহে কাতর হয়ে চন্দ্রমাণিক্য উপরিউক্ত উক্তিটি ভ্রাতা ইন্দ্রকুমারের উদ্দেশ্যে করেছিলেন।
প্রশ্ন ১৮। “দাদা তুমি কেবল উদাসীন হয়ে সব জিনিস ঠেলে ফেলে দাও। এতে আমার ভারি কষ্ট হয়।” – কোন পাঠ থেকে উক্তিটি গৃহীত হয়েছে? উক্তিটি কে করেছেন? দাদা কে? ‘উদাসীন’ শব্দটির অর্থ লেখো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুকুট’ পাঠ থেকে উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। উক্তিটি মধ্যম ইন্দ্রকুমারের। দাদা হলেন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য। ‘উদাসীন’ শব্দটির অর্থ হল অনাসক্ত বা বৈরাগী।
প্রশ্ন ১৯। ‘মুকুট’ নাটকের তিন রাজকুমারের নাম লেখো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের তিন রাজকুমারের নাম হলো – যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য, মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার ও কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর।
প্রশ্ন ২০। “চলবে না তো কী? আমার লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও জগৎ সংসার যেমন চলছিল ঠিক তেমনিই চলবে। আর যদি বা নাই চলত তবু আমার জেতবার সম্ভবনা দেখছিনে।” – কোন্ পাঠ থেকে উক্তিটি গৃহীত? উক্তিটি কার এবং কোন্ প্রসঙ্গে করা হয়েছে?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুকুট’ নাটক থেকে উক্তিটি গৃহীত।
উক্তিটি যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের।
ইন্দ্রকুমার ভ্রাতা চন্দ্রমাণিক্যকে অশেষ শ্রদ্ধা করতেন। অস্ত্র পরীক্ষার দিন ই ন্দ্রকুমার দাদা চন্দ্রমাণিক্যকে বললেন আজ তাকে জিততেই হবে। না হলে চলবে না। তখন যুবরাজ ইন্দ্রকুমারের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললেন যদি তাঁর তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় জগৎ সংসার যেমন চলছে ঠিক তেমনি চলবে। আর যদি নাই বা চলে তবুও তাঁর জিতবার কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখেন না।
প্রশ্ন ২১। ‘‘সেনাপতি সাহেব, তোমার তলোয়ার যেমন তোমার জিহ্বাও তেমনি, দুইই খরধার যার উপর গিয়ে পড়ে তার একেবারে মর্মচ্ছেদ না করে ফেঁরে না।” – এখানে বক্তা কে? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
“তোমার তলোয়ারও যেমন তোমার জিহ্বাও তেমনি, দুই-ই খরধার।” – উক্তিটি কার? সে কার প্রতি এই উক্তি করেছে?
উত্তরঃ উক্তিটি যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের।
যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য সেনাপতি ইশা খাঁকে এই উক্তি করেছেন। রাজধর হঠাৎ করে একদিন শিকারে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার এই ইচ্ছা শুনে ইন্দ্রকুমার আশ্চর্যান্বিত হলেন, তখন ইশা খাঁ বললেন রাজধর সকলের চেয়ে বড়ো জীব শিকার করে বেড়ান। রাজসভায় দুই পা-ওয়ালা এমন একটি জীব নেই যিনি ওঁর কোনো না কোনো ফাঁদে আটকে না পড়েছেন। তখন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য তাঁর এ রূপ কথা শুনে এই উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন ২২। “সুযোগ কি তীরের মুখে থাকে ? সুযোগ বুদ্ধির ডগায়। তোমাকে কিন্তু একটি কাজ করতে হবে।” এটি কার উক্তি? কার প্রতি এই উক্তি করা হয়েছে? এখানে কোন্ কাজের কথা বলা হয়েছে? সংক্ষেপে লেখো।
অথবা,
উক্তিটি কার? কার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে? এখানে ‘একটি কাজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এবং সেই কাজের ফলাফল কী হয়েছিল আলোচনা করো।
উত্তরঃ উক্তিটি রাজধরের।
ধুরন্ধরের প্রতি এই উক্তিটি করা হয়েছে। ইন্দ্রকুমারের প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজধর অস্ত্রপরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন, কিন্তু রাজধর জানেন ইন্দ্রকুমারকে ন্যায় পথে পরাজিত করা তাঁর পক্ষে কোনো অবস্থায় সম্ভব নয়, তাই চাতুরির আশ্রয় নিলেন। ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করে ধুরন্ধর যেন ইন্দ্রকুমারের তূণের প্রথম খোপটি থেকে তাঁর নাম লেখা তীরটি তুলে নিয়ে রাজধরের নাম লেখা তীর যেন বসিয়ে দেয়। এখানে এই কাজের কথা বলা হয়েছে। এই কাজ করে ভাগ্য বদল করা যাবে। অর্থাৎ রাজধর জয়ী হবে।
প্রশ্ন ২৩। “দুর্বল লোকের পক্ষে অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো; শোধ তোলবার শখটা তার পক্ষে নিরাপদ নয়।” – এখানে বক্তা কে? বক্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ বক্তা হলেন ধুরন্ধর।
অস্ত্র পরীক্ষায় জয়ী হওয়ার জন্য রাজধর ধুরন্ধরকে দিয়ে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্র শালা থেকে ইন্দ্রকুমারের রূপার নাম লেখা তীরের পরিবর্তে তাঁর নাম লেখা তীর রেখে আসতে বললেন। পরে রাজধর ধরা পড়লে ধুরন্ধরের উপর দোষ চাপিয়ে দেন। ইন্দ্রকুমার ধুরন্ধরের এই নিচু কাজ করার জন্য অপমান করেছিলেন। ধুরন্ধরের মতে, এই অপমান তার জীবন গেলেও ঘুচবে না। তখন রাজধর ধুরন্ধরকে বললেন এই অপমানের শোধ দেবার জোগাড় করতে হবে। ধুরন্ধর একথার পরিপ্রেক্ষিতে বললেন দুর্বল লোকের অপমান পরিপাক করবার শক্তিটাই ভালো। শোধ তোলবার শখটা তার পক্ষে নিরাপদ নয়।
প্রশ্ন ২৪। “তুমি যদি আমাকে আর আমি যদি তোমাকে সন্দেহ করি তাহলে পৃথিবীতে আমাদের দুটির তো কোথাও ভর দেবার জায়গা থাকবে না।” – কে, কাকে বলেছে? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ ধুরন্ধর রাজধরকে বলেছে।
রাজধর দূতের কাছ থেকে যখন জানতে পারলেন যুবরাজ আরাকান সৈন্যের ভিতরে প্রবেশ করে বিপাকে পড়ায় ইন্দ্রকুমার তাঁকে উদ্ধার করেছেন এবং যুদ্ধে আরাকান সৈন্যদের হঠানো তাদের পক্ষে অসম্ভব তখন রাজধর দূতকে বলেন তিনি যাচ্ছেন। ধুরন্ধর একথা শুনে বিদ্রূপ করে বলেন তিনি কি বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। তখন রাজধর বললেন ধুরন্ধর কি ইশা খাঁর মতো বিদ্রূপ অভ্যেস করছে। যুদ্ধে জয় করে বাড়ি ফিরবেন রাজধরই এবং ধুরন্ধরকে তার শিবিরে প্রদীপ জ্বালাতে বারণ করেন। ধুরন্ধর রাজধরের অভিপ্রায় কী তা খুলে বলার জন্য বলেন। রাজধর যদি ধুরন্ধরকে সন্দেহ করে বা ধুরন্ধর যদি রাজধরকে সন্দেহ করে তাহলে পৃথিবীতে তাদের দুজনেরই কোথাও ভর দিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না।
প্রশ্ন ২৫। “এ মুকুট আমার নয়। এ আমি তোমাকেই পরিয়ে দিলুম।” – এটা কার উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষেণ করো।
অথবা,
‘‘আমি পরাজিত – এ-মুকুট আমার নয়। এ-আমি তোমাকেই পরিয়ে দিলুম – কে পরাজিত? কার মাথায় মুকুট? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি দাদা।” আলোচনা করো।
উত্তরঃ এটা ইন্দ্রকুমারের উক্তি। ইন্দ্রকুমার পরাজিত। মুকুটটি আরাকান রাজের মাথার মুকুট। ইন্দ্রকুমার রাজধরের উদ্দেশ্যে এই উক্তি করেছেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে রাজধর ইন্দ্রকুমার ও যুবরাজকে আড়াল করে রাত্রিবেলা আরকানরাজকে শিবিরে একা আক্রমন করে বন্দী করেন। আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দেন রাজধরকে এবং রাজধর পরাজয়ের চিহ্নস্বরূপ আরাকানরাজের মুকুট নিয়ে আসেন। যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করায় সবাই রাজধরের উপর ক্রুদ্ধ হলেন। রাজধর প্রতিশোধস্বরূপ পত্র লিখে আরাকানরাজকে দিয়ে আবার আক্রমণ করান। এ যুদ্ধে পরাজয়ের পর একেবারে শেষ দৃশ্যে রাজধর মুকুট ইন্দ্রকুমারের চরণে রেখে বললেন যে তিনি নরাধম। এই মুকুট যেন তিনি গ্রহণ করেন এবং রাজধরকে ক্ষমা করেন। ইন্দ্রকুমার তখন বললেন, তিনি পরাজিত। সুতরাং এ মুকুটের মালিক তিনি নন। ইন্দ্রকুমার মৃত্যুপথযাত্রী দাদা চন্দ্রমাণিক্যের মাথায় মুকুট পরিয়ে দিলেন।
প্রশ্ন ২৬। “সেনাপতির আদেশ লঙ্ঘন করে উনি অন্ধকারে শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করলেন আর উনি পরবেন মুকুট!” সেনাপতির নাম কী? কে শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করেছেন? কোন্ প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে আলোচনা করো।
উত্তরঃ সেনাপতির নাম ইশা খাঁ।
রাজধর শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করেছেন। সেনাপতি ইশা খাঁকে না বলে যুদ্ধের নিয়মকে ভঙ্গ করে রাজধর রাতের অন্ধকারে শৃগালের মতো গিয়ে আরাকানরাজকে বন্দী করেন। তখন রাজধর আরাকানরাজের মুক্তির বিনিময়ে তাঁর মাথার মুকুট ছিনিয়ে আনেন। রাজধর মুকুটটি নিয়ে আসলে ইন্দ্রকুমার রাজধরকে জিজ্ঞেস করেন, এই মুকুটটি কার। তখন রাজধর বলেন এ মুকুট তাঁর এবং সেটি তাঁর জয়ের পুরস্কার। তখন সেখানে উপস্থিত থাকা ইশা খাঁ রাজধরের তাঁর আদেশ অমান্য করে অন্ধকারে গিয়ে আরাকানরাজকে বন্ধী করার প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করেছিলেন।
প্রশ্ন ২৭। “তুমি আমাদের অস্ত্রগুরু। তোমাদের মুখে এ উপদেশ সাজে না।”- উক্তিটি কে করেছেন? অস্ত্রগুরু কে ছিলেন? কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য করেছেন। অস্ত্রগুরু ছিলেন সেনাপতি ইশা খাঁ।
আরাকানরাজের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যায় যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের সৈন্যরা আরাকানরাজের সৈন্যদের হাতে পরাজিত হওয়ার উপক্রম দেখা দেয় তখন সেনাপতি ইশা খাঁ যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ণ করে আত্মরক্ষার পরামর্শ দিলে যুবরাজ চন্দ্ৰমাণিক্য এ কথা বলেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম এবং সেটা গৌরবের বিষয়। পলায়ন করাটা একটা মস্ত বড় অপরাধ, সেটা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম নয়।
প্রশ্ন ২৮। ‘খেলার পরীক্ষা তো চুকেছে, এবার কাজের পরীক্ষা হোক।’ – বক্তা কে? পরীক্ষার ফলাফল কী হয়েছিল?
উত্তরঃ বক্তা মুকুট নাটকে সেনাপতি ইশাখাঁ।
অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর ইশাখাঁ মহারাজকে বলেন যে এবার কাজের পরীক্ষা অর্থাৎ আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ হোক। এই যুদ্ধে রাজধর পুনরায় ছলনার আশ্রয় নিয়ে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজকে বন্দী করে রাজ মুকুট নিয়ে আসে। তারপর এই মুকুট পরা নিয়ে বিবাদ বাঁধে। ইন্দ্রকুমার দাদার উপর অভিমান করে স্থান ত্যাগ করেন। আর সেনাপতি ইশাখাঁ মুকুট কর্ণফুলি নদীর জলে ফেলে দেন। রাজধর নিজেকে খুবই অপমানিত বোধ করে এর প্রতিশোধ নিতে গোপনে আবার আরাকানরাজের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এবং পরের দিনের যুদ্ধে ইশা খাঁ এবং যুবরাজের মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রকুমার এবং রাজধরের মিলন হলেও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তাদের দেশে ফিরতে হয়।
প্রশ্ন ২৯। “আপনাকে মুক্তিই দেব, কিন্তু সেটা তো একেবারে বিনামূল্যে দেওয়া চলে না।” – বক্তা কে? কাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বক্তা কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর। তিনি আরাকানরাজকে উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছেন।
রাজধর রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজকে আক্রমণ করে বন্দী করলে আরাকান রাজ মুক্তির বিনিময়ে সন্ধিপত্রে রাজী হলেন এবং রাজধরকে পাঁচশত ব্রহ্মদেশীয় ঘোড়া ও তিনটি হাতি দিবেন বললেন। কিন্তু রাজধর এতে খুশি হলেন না। তিনি আরাকানরাজের মাথার মুকুট দাবি করলেন। কেননা এটা তার যুদ্ধজয়ের নিদর্শন হবে।
প্রশ্ন ৩০। ‘তোমাদের মধ্যে এই যে ব্যক্তিটি সকলের কনিষ্ঠ, এঁকে জাহাপনা শাহেন্শা বলে না ডাকলে ওঁর আর সম্মান থাকে না।’ – বক্তা কে? কার সম্বন্ধে তিনি এই মন্তব্য করেছেন? তাঁর এরকম বলার কারণ কী?
উত্তরঃ বক্তা সেনাপতি ইশা খাঁ। কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর সম্বন্ধে তিনি একথা বলেছেন।
রাজধর যখন ইশা খাঁকে তার নিজের নাম ধরে ডাকতে বারণ করে, তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে ঠিক সে সময়ে মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার ইশাখার ঘরে এসে উপস্থিত হন। তখন ইন্দ্রকুমারকে সামনে রেখে রাজধর সম্বন্ধে এই বাক্যবান ইশা খাঁ ছোড়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩১। ‘ক্ষেত্র হতে যুদ্ধ করে মজুররা, দূর থেকে যুদ্ধ করতে পারে সেই যোদ্ধা। – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? প্রসঙ্গটি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ রাজধর ধুরন্ধরকে এ কথা বলেছেন।
আরাকান রাজের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাজধর সেনাপতির কাছে পাঁচহাজার সৈন্য চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এবং এই সৈন্য নিয়ে তিনি আলাদা থাকবেন। তিনি ধুরন্ধরের কাছ থেকে ইন্দ্রকুমারের তাঁর প্রতি মনোভাব কী তা জানতে চাইলে, ধুরন্ধর বলল তিনি অট্টহাসি দিয়ে বললেন রাজধরের যুদ্ধ প্রণালীটা এরকমই তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থেকে যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন। এ কথা শুনে রাজধর বলেছিলেন যে ক্ষেত্র থেকে যুদ্ধ করে মজুরেরা, দূর থেকে যে যুদ্ধ করতে পারে সেই যোদ্ধা।
প্রশ্ন ৩২। “আমরা তিন ভাই একত্রে বেরিয়েছি, বিজয়লক্ষ্মীর প্রসাদ আমরা ভোগ না করতে পারলে আমার তো মনে দুঃখ থেকে যাবে।” – এখানে বক্তা কে? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এখানে বক্তা হলেন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য।
রাজধর সকলের অজান্তে আরাকান শিবিরে গিয়ে আরাকানরাজকে বন্দী করেন। এর ফলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে দূত এসে যখন ইন্দ্রকুমার ও যুবরাজকে এ কথা জানান তখন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য রাজধরের উদ্দেশ্যে ইন্দ্রকুমারকে বললেন যদি রাজধর সৈন্য নিয়ে পালিয়ে না যেত, তবে আরাকানরাজের যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার আনন্দে তাঁরা তিনভাই একই সঙ্গে জয়োৎসব করতে পারতেন। আজকের তাদের এই জয় গৌরবে রাজধর না থাকায় একটা মস্ত বড় অভাব থেকে যায়।
প্রশ্ন ৩৩। “যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল এক-এক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে।” – উক্তিটি কার? উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ইশাখাঁর।
আরাকান সৈন্যরা হঠাৎ করে যুদ্ধ বন্ধ করে দিলে ইন্দ্রকুমার ইশা খাঁকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ইশাখাঁ বললেন আরাকানরাজকে রাজধর বন্দী করেছেন। তখন ইন্দ্রকুমার ইশাখাঁর কথা বিশ্বাস করতে পারেন নি। তিনি একথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বললেন। ইশা খাঁ তখন বললেন যা মিথ্যা হওয়া উচিত তা এক-এক সময় সত্য হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৩৪। ‘‘আমার মুকুট যেখানে গিয়েছে আমাদের যুদ্ধ জয়কেও সেই কর্ণফুলির জলে জলাঞ্জলি দেব।” – এটা কার উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এটা রাজধরের উক্তি।
রাজধরের আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শন স্বরূপ পাওয়া মুকুটটি ইশা খাঁ কর্ণফুলির জলে ফেলে দিলে রাজধর প্রতিশোধ নিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন। তখন ধুরন্ধরকে বললেন তাঁর মুকুটের মতো যুদ্ধ জয়কেও তিনি কর্ণফুলির নদীতে নিক্ষেপ করবেন। তখন প্রতিশোধ নেবার জন্য ধুরন্ধরের মাধ্যমে আরাকানরাজকে পত্র পাঠান যাতে তিনি আক্রমণ করেন।
প্রশ্ন ৩৫। “এ মুকুট আমি যুদ্ধ করে আনতুম। রাজধর চুরি করে এনেছে।” – এটা কার উক্তি? কার প্রতি উক্তিটি করা হয়েছে? সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ এটা ইন্দ্রকুমারের উক্তি। যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের প্রতি উক্তিটি করা হয়েছে।
আরাকানরাজ রাতের বেলা যখন তাঁর নিজের শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন রাজধর গোপণে নদী পার হয়ে গিয়ে তাঁকে বন্দী করেন এবং আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শনস্বরূপ পাওয়া তাঁর মুকুটটি রাজধর যুবরাজকে এনে দিলে ইন্দ্রকুমার বললেন এ মুকুটটি তিনি যুদ্ধ করে জিতে যুবরাজকে এনে দিতেন কিন্তু রাজধর মুকুটটি অন্যায়ভাবে প্রাপ্ত করে যুবরাজকে এনে দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৩৬। “পরাজয় তোমার হয়নি দাদা, আমারই পরাজয় হয়েছে।” কে, কার প্রতি এই উক্তিটি করেছেন এবং কেন?
উত্তরঃ ইন্দ্রকুমার যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের প্রতি এই উক্তিটি করেছেন।
আরাকানরাজের সঙ্গে দ্বিতীয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য ইন্দ্রকুমারকে বললেন তিনি যেন যুবরাজকে মার্জনা করেন এবং তাঁর পরাজয়ের কথা যেন ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যকে গিয়ে জানান। তখন ইন্দ্রকুমার যুবরাজ চন্দ্ৰমাণিক্যকে বললেন যে এ পরাজয় শুধু তাঁর পরাজয় নয়। উনার নিজেরও পরাজয়।
প্রশ্ন ৩৭। “যুদ্ধ থেকে পালিয়েছ তুমি, তুমি পুরস্কার পাবে কিসের। এ মুকুট যুবরাজ পরবেন।” – উক্তিটি কে, কার প্রতি করেছেন? কে যুদ্ধ থেকে পালিয়েছে? সে কি সত্যিই যুদ্ধ থেকে পালিয়েছে?
উত্তরঃ উক্তিটি ইন্দ্রকুমার রাজধরের প্রতি করেছেন। রাজধর যুদ্ধ থেকে পালিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে রাজধর যুদ্ধ হতে পলায়ন করেনি। সে রাতের অন্ধকারে সেনাপতি ইশা খাঁ, যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য ও ইন্দ্রকুমারের অজান্তে আরাকান শিবির আক্রমণ করে আরাকানরাজকে বন্দী করে এবং আরাকানরাজের পরাজয়ের নিদর্শন হিসেবে তাঁর মুকুট নিয়ে আসে।
প্রশ্ন ৩৮। “যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহু দূরে থেকেই তিনি যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন।” – এটা কার উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের।
রাজধর যখন ইশা খাঁকে তার নিজের নাম ধরে ডাকতে বারণ করে, তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে ঠিক সে সময়ে মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার ইশাখার ঘরে এসে উপস্থিত হন। তখন ইন্দ্রকুমারকে সামনে রেখে রাজধর সম্বন্ধে এই বাক্যবান ইশা খাঁ ছোড়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩৯। “তোমার হাত থেকে এ পুরস্কারের অপমান গ্রহণ করবে কে?” – এখানে বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এখানে বক্তা মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার।
ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় রাজধর জয়ী হলে মহারাজ তাঁকে পুরস্কার স্বরূপ হিরের তলোয়ার দিলে রাজধর বলেন পুরস্কার তিনি শিরোধার্য করে নিচ্ছেন। কিন্তু তার এই সৌভাগ্যে যখন কারো মন প্রসন্ন নয় তখন তিনি এই পুরস্কারটি দাদা ইন্দ্রকুমারকে তুলে দিতে ইন্দ্রকুমারের দিকে অগ্রসর হন। তখন ইন্দ্রকুমার তলোয়ারটি মাটিতে নিক্ষেপ করে বললেন রাজধরের হাত থেকে এ পুরস্কারের অপমান কেউ গ্রহণ করবেন না।
প্রশ্ন ৪০। “আমার তীরটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও জগৎ সংসার যেমন চলছিল ঠিক তেমনি চলবে।” কে, কাকে এই উক্তিটি করেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ইশা খাঁ রাজকুমারকে করেছেন।
প্রশ্ন ৪১। “তোমার তীরও তোমার দাদার তীরেরই অনুসরণ করেছে- লক্ষ্যের দিকে লক্ষ্যও করেনি।” – এটি কার উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এটি সেনাপতি ইশা খাঁ-র উক্তি।
অস্ত্রপরীক্ষায় যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের তীরটি লক্ষ্যভেদ করেনি। কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন না বলে তাঁর তীরও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। তখন ইশা খাঁ রাজধরকে বলেন তাঁর তীরও যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের তীরের অনুসরণ করেছে। লক্ষ্যের দিকে লক্ষ্যও করেনি। অর্থাৎ লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি।
প্রশ্ন ৪২। “তুমি যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হও তাহলে তোমার লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর আমার হৃদয় বিদীর্ণ করবে – এ তুমি নিশ্চয় জানো।” – এটা কার উক্তি? কার তীর কার হৃদয় বিদীর্ণ করবে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এটা যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের উক্তি।
ইন্দ্রকুমারের তীর যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের হৃদয় বিদীর্ণ করবে। অস্ত্র পরীক্ষার দিন ইন্দ্রকুমার দাদা চন্দ্রমাণিক্যকে বলছেন তাঁকে জিততেই হবে, না হলে চলবে না। তখন যুবরাজ ইন্দ্রকুমারকে বললেন যে তিনি অক্ষম। ইন্দ্রকুমার যেন তাঁর উপর রাগ না করেন। বরং যুবরাজ জানেন ইন্দ্রকুমার লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন। যদি ইন্দ্রকুমার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তবে তাঁর লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের হৃদয় বিদীর্ণ করবে অর্থাৎ ইন্দ্রকুমারের তার লক্ষ্যভেদ করতে না পারলে যুবরাজ অত্যন্ত দুঃখ পাবেন।
প্রশ্ন ৪৩। “আপনার অস্ত্রশালার মধ্যে একটি জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন, তিনি বায়ু – অস্ত্র না নাগপাশ না কী সেটা সন্ধান নেওয়া উচিত?” – এটা কার উক্তি? জ্যান্ত অস্ত্র কী? কার অস্ত্রশালার মধ্যে জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ উক্তিটি প্রতাপের।
রাজধরকে বলা হয়েছে জ্যান্ত অস্ত্র। ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার মধ্যে জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন। রাজধর তাঁর মরিচা পড়া অস্ত্রগুলিকে সারিয়ে তোলার জন্য দিয়ে আসেন। তাই রাতে শিকারে যাবেন বলে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্র ধার নিতে আসেন ইন্দ্রকুমারের স্ত্রীর কাছে। ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী তামাসা করে রাজধরকে অস্ত্রশালায় বন্ধ করে দেন আর প্রতাপকে দিয়ে খবর পাঠান যে তাঁর অস্ত্রশালায় একটি জ্যান্ত অস্ত্র ঢুকেছেন। সেটি বায়ু অস্ত্র না নাগপাশ তা সন্ধান নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৪৪। “এবার তোমার সময় এসেছে, সেই অপমানের শোধ দেবার জোগাড় করো।” কে, কার প্রতি এই উক্তি করেছে? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ রাজধর ধুরন্ধরের প্রতি এই উক্তি করেছেন।
অস্ত্র পরীক্ষায় রাজধর বিজেতা হওয়ার জন্য ছল-চাতুরির সাহায্য নেয়। রাজধরের কথামতো ধুরন্ধর ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় গিয়ে ইন্দ্রকুমার নামাঙ্কিত তীরটির জায়গায় রাজধর নামাঙ্কিত তীরটি রেখে আসে। পরে রাজধর ধরা পড়লে দোষ চাপিয়ে দেয় ধুরন্ধরের ঘাড়ে। ইন্দ্রকুমার ধুরন্ধরকে তার এই হীন কর্মের জন্য অপমান করেন। ধুরন্ধরের মতে, তার এই অপমান জীবন গেলেও ঘুচবে না। রাজধর ধুরন্ধরকে বললেন এবার তার এই অপমানের শোধ দেবার যোগাড় করতে হবে।
প্রশ্ন ৪৫। “আমি তোমার ছাত্র বটে, কিন্তু আমি রাজকুমার সেকথা তুমি ভুলে যাও।” – উক্তিটি কে, কার উদ্দেশ্য করেছেন? কে কার ছাত্র? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি রাজধর সেনাপতি ইশা খাঁর উদ্দেশ্যে করেছেন। রাজধর ইশা খাঁর ছাত্র।
সেনাপতি ইশা খাঁর কাছে রাজধর ধনুর্বিদ্যা শিখতেন। ইশা খাঁ রাজধরকে নাম ধরে ডাকলে রাজধর একদিন ইশা খাঁকে তার নাম ধরে ডাকতে বারণ করেন এবং বললেন যে, তিনি ইশা খাঁর ছাত্র হলেও রাজকুমার। তাই তিনি যেন রাজধরকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন।
প্রশ্ন ৪৬। “ইন্দ্রকুমার ! ভাই ইন্দ্রকুমার ! এখনো তোমার রাগ গেল না।” ‘মুকুট’ নাটকের কোন দৃশ্যে কীভাবে কার এই আক্ষেপ প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের ৩য় অঙ্কের দৃশ্যে কর্ণফুলি নদীর তীরে অর্জুন গাছের নীচে জ্যোৎস্নার ক্ষীণালোকে যুদ্ধে আহত যুবরাজ তার সৈন্যদের বলে, “ওরে, সরিয়ে একটু সরিয়ে দে। গাছের ডালগুলো একটু সরিয়ে দে, আজ আকাশের চাঁদকে একটু দেখ নিই।” তার চার পাশে আজ আপন বলতে কেউ নেই। সেনাপতি ইশা খাঁ, মৃত্যু বরণ করেছে। ইন্দ্রকুমার ও রাজধর তাকে ছেড়ে গেছে। তিনি শুধু শুনতে পাচ্ছেন কর্ণফুলির স্রোতের শব্দ। এই শব্দকে পৃথিবীর শেষ বিদায় সম্ভাষণ শুনতে চান না, তাই প্রাণ প্রিয় ভাই ইন্দ্রকুমারের প্রতীক্ষায় যুবরাজের কণ্ঠে এরূপ আক্ষেপ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ৪৭। রাজধর নিজের রাজ্য ও ভাইদের হারাবার জন্য আরাকানরাজকে যে চিঠি লেখে তার বিষয়বস্তু উদ্ধৃত করো।
উত্তরঃ রাজধর আরাকানরাজের উদ্দেশ্যে চিঠিতে লেখে যে, সে ভাইদের কাছে অপমানিত হয়েছে, সেইজন্য তার ভাইদের কাছ থেকে অবসর নিল। রাজধর তার পাঁচহাজার সৈন্য নিয়ে ঘরে ফেরার নামে দূরে সরে যাবে। অন্যদিকে ইন্দ্রকুমারও দাদা যুবরাজের প্রতি অভিমান করে চলে গেছে। এ অবস্থায় সৈন্যরাও যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে জেনে ঘরে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই অবকাশে যদি আরাকানরাজ সহসা ত্রিপুরা সৈন্যের দিকে আক্রমণ করে তবে ত্রিপুরার সৈন্যদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
প্রশ্ন ৪৮। “তার সঙ্গে আমার তির বদল করতে হবে, ভাগ্যও বদল হবে।” – কার সঙ্গে তির বদলের কথা বলা হয়েছে? ভাগ্য কি বদল হয়েছিল? কাকে, কে কথাটি বলেছিল?
উত্তরঃ ত্রিপুরার মধ্যম রাজকুমারের তিরের সঙ্গে কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের তির বদলের কথা বলা হয়েছে।
হ্যাঁ, ভাগ্য বদল হয়েছিল। ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় রাজধর সফল হয়েছিলেন। এই সফলতা অবশ্য অন্যায় পথে এসেছিল। উপরোক্ত কথাটি রাজধর তার মামাতো ভাই ধুরন্ধরকে বলেছিল।
প্রশ্ন ৪৯। “হারজিত তো আল্লার ইচ্ছা, কিন্তু ক্ষত্রিয়ের মনে স্পর্ধা থাকা চাই।” উক্তিটি কার? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচনা করো।
উত্তরঃ উক্তিটি ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের সেনাপতি ইশাখাঁর।
রাজধর অস্ত্রগুরু ইশাখাঁকে তার ব্যবহারের দ্বারা কিংবা অস্ত্রশিক্ষায় সন্তুষ্ট করতে না পারার কথা মহারাজের মুখে শুনে রাজধর যখন অস্ত্রবিদ্যার পরীক্ষা নেওয়ার কথা মহারাজকে প্রার্থনা করেন, তখন মহারাজ খুশি হয়ে তাঁর তিনপুত্রের মধ্যে যিনি পরীক্ষায় বিজেতা হবেন তাঁকে তাঁর হীরে বাঁধানো তলোয়ার পুরষ্কার দিবেন। এই সময়ে রাজধর যখন বলেন – ‘আমাদের অস্ত্র পরীক্ষা নেন’। একথা শ্রবণ করে অত্যন্ত খুশিতে সেনাপতি ইশাখাঁ উপরোক্ত কথাগুলি বলেছিলেন।
প্রশ্ন ৫০। “ঠাণ্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমারেই বুদ্ধি তোমারই থাক্, তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।” – কে, কাকে একথা বলেছেন? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি আলোচনা করো।
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন।
নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে রাজধর ইশাখাকে নিজের নামধরে ডাকতে বারণ করে তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে। ঠিক সে সময় মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার সেখানে এসে প্রবেশ করেন। রাজধরের ঔদ্বত্যকে অস্বীকার করে তাকে ব্যঙ্গ করলে রাজধর ইন্দ্রকুমারের উপর রাগ করে যখন তাকে নির্বোধ বলে উল্লেখ করেন তখন ইন্দ্রকুমার উপরোক্ত কথাগুলি বলেন।
প্রশ্ন ৫১। “তবে তো সর্বনাশ হবে।” কোন সর্বনাশের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কে নাটক ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। তার পূর্বের অঙ্কে রাজধর বিশ্বাসঘাতকতা করে ধুরন্ধরের মারফৎ ভাইদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আরাকানরাজের নিকট চিঠি পাঠান। এর ফলস্বরূপ আরাকান বাহিনী দ্বিতীয়বার যুদ্ধ আরম্ভ করে। ইন্দ্রকুমারও তখন এ যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছিলেন না। যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য বীরের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করে, শত্রুসৈন্যের হাতে ক্ষত-বিক্ষত দেহে হাতির উপর হতে লুটিয়ে পড়েন। তখন এর তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে সৈন্যরা যুবরাজের বিপর্যয়ের বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা করে। তাঁদের মধ্যে গুজব রটে যায় যে যুবরাজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তিনি আর জীবিত নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে তার মৃত্যু হয়েছে। তাই প্রথম সৈনিক দ্বিতীয় সৈনিককে উপরোক্ত উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন ৫২। কর্ণফুলি নদীতটে তরুমূলে জ্যোৎস্নার ক্ষীণালোকে মৃত্যুন্মুখ যুবরাজ স্বগতোক্তিতে কী বলেছেন?
উত্তরঃ মুকুট নাটকের তৃতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে কর্ণফুলি নদীর তীরে গাছের নীচে জ্যোৎস্নার ক্ষীণালোকে যুদ্ধে আহত যুবরাজ তার সৈন্যদের স্বগতোক্তিতে বলে, ‘ওরে, সরিয়ে একটি সরিয়ে দে। গাছের ডালগুলো একটু সরিয়ে দে, আজ আকাশের চাঁদকে একটু দেখে নেই।’ তার চারপাশে আজ আপন বলতে কেউ নেই। দুই ভাই ইন্দ্রকুমার ও রাজধর রাগ করে তাকে ছেড়ে গেছে, সেনাপতি ইশাখাঁ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ অবস্থায় গাছের ছায়া না মৃত্যুর ছায়ায় তার চোখ জুড়ে আসছে তা যুবরাজ বুঝতে পারছে না। শুধু শুনতে পাচ্ছে কর্ণফুলির স্রোতের শব্দ। এই শব্দটিকে সে পৃথিবীর শেষ বিদায় সম্ভাষণরূপে শুনতে চায় না, তাই প্রাণাধিক প্রিয় ভাই ইন্দ্রকুমারের প্রতীক্ষায় যুবরাজের কণ্ঠে এরূপ আক্ষেপ প্রকাশ হয়েছে।
প্রশ্ন ৫৩। “ঠাম্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমারই থাক্, তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।” – কে, কাকে একথা বলেছেন? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিষয়টি আলোচনা করো।
উত্তরঃ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরকে একথা বলেছেন। নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় ত্রিপুরার সেনাপতি ইশাখাঁকে রাজধর নিজের নাম ধরে ডাকতে বারণ করে তার প্রতি অসম্মানের অভিযোগ করে। ইশাখা রাজধরের থেকে বয়সে বড়ো এবং তার অস্ত্রগুরু এই অভিমানে তিনি অভিযোগ খণ্ডন করেন। এসময় মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের প্রবেশ করে রাজধরকে একটু ব্যঙ্গ করলে রাজধর রাগান্বিত হয়ে যখন ইন্দ্রকুমারকে অত্যন্ত নির্বোধ বলে তখন তাকে শান্ত করার জন্য ইন্দ্রকুমার একথার অবতারণা করেছিলেন।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘মুকুট’ নাটকটি কার লেখা? ‘মুকুট’ নাটকের বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
অথবা,
‘মুকুট’ নাটকে রাজকুমাদের দ্বন্দ্বের কারণ, ঘটনাক্রম ও পরিণতি সংক্ষেপে গুছিয়ে লেখো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।
রবীন্দ্রনাথ ‘মুকুট’ নামক একটি ক্ষুদ্র উপন্যাসকে নাটকের রূপ দেন। স্ত্রী চরিত্র বর্জিত এই নাটকটি শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য আশ্রমের বালকদের অভিনীত হওয়ার জন্য রচিত হয়।
ত্রিপুরারাজ অমর মাণিক্যের তিন পুত্র। যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য, ইন্দ্রকুমার ও রাজধর। ইন্দ্রকুমার ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী, যুবরাজও দক্ষ, কিন্তু রাজধর ধনুর্বিদ্যায় ছিলেন শূন্যের কোঠায়। দুই রাজকুমার অপেক্ষা রাজধর দুষ্টবুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। কোনো একদিন সেনাপতি ইশা খাঁ রাজকুমারদের ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষার আয়োজন করেন। পরীক্ষার দিন ধার্য্য হলে রাজধর একটি ফন্দি বের করেন। তিনি পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোয় বাঘ শিকারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর অস্ত্রে মরিচা লেগে যাওয়ার ভান করে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করেন এবং বৌদি কমলাদেবী তাঁকে অস্ত্রশালায় বন্ধ করে রাখেন। রাজধর এই সুযোগে ইন্দ্রকুমারের তূণ হতে ইন্দ্রকুমার নামাঙ্কিত একটি তির নিজের তূণে তুলে নিলেন এবং নিজের নামাঙ্কিত একটি তির ইন্দ্রকুমারের তূণে রাখলেন।
পরীক্ষার দিন ইন্দ্রকুমার সেই তীরটি দিয়ে লক্ষ্যভেদ করলে রাজধর বলেন যে তিনিই লক্ষ্যভেদ করেছেন। এ ভাবে ছল-চাতুরি করে রাজধর সেদিনের ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় জয় লাভ করেন। আরাকানরাজ আক্রমণ করলে অমর মাণিক্য রাজকুমারদের যুদ্ধে পাঠান। রাজধর পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মগোপণ করেন। যুদ্ধের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে কোনো পক্ষেরই হার-জিত হয় নি। রাত্রিবেলা যখন আরাকানবাহিনী শিবিরে বিশ্রামরত তখন রাজধর গোপনে নদী পার হয়ে আরাকানরাজের শিবিরে প্রবেশ করে তাঁকে বন্দী করে এবং তার মাথা থেকে রাজমুকুট ছিনিয়ে নেয়। দুজনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের সন্ধি পত্র লিখিত হয়। পরে রাজধর যখন মুকুট নিয়ে সেনাপতি ইশাখাঁ এবং ভাইদের সম্মুখে উপস্থিত হন তখন মুকুট দেখে ইন্দ্রকুমার চমকে গেলেন। যুবরাজ তাকে সমর্থন করেন। এতে ইন্দ্রকুমার দাদার এই অন্যায় সমর্থনের প্রতি রাগ করে শিবির ছেড়ে চলে যান। ইশা খাঁ মুকুটটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দিলেন। যুদ্ধে শৃগাল বৃত্তি অনুসরণ করায় রাজধরের উপর সবাই ক্রুদ্ধ হলেন।
এই অপমানে রাজধর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আরাকানরাজকে আবার যুদ্ধের আহ্বান করে। আরাকানরাজ পুনরায় আক্রমণ করেন। যুবরাজ্য ও সেনাপতি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। যুদ্ধক্ষেত্রে ইশাখাঁ মারা যান। দাদা যুবরাজের অন্তিম পরিণতির জন্য ইন্দ্রকুমার নিজেকেই দায়ী করেন। কর্ণফুলির তীরে জ্যোৎস্না রাতে গাছের ছায়ায় যুবরাজের মরণাপন্ন দেহের পাশে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রকুমার নিজেকে ধিক্কার দেন এবং দাদার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন। এসময়ে সেখানে এসে উপস্থিত হন রাজধর, সেও নিজের ভুল বুঝতে পারে, শেষ পর্যন্ত দুভাই মিলিত হয়ে দাদা যুবরাজের মাথায় জয়ের মুকুট পরিয়ে দেয়।
প্রশ্ন ২। ‘মুকুট’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোন্টি? চরিত্রটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
রাজধরের চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকে যে চরিত্রটি নাটকের গতি এনেছে এবং যাকে কেন্দ্র করে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গেছে, তিনি হলেন রাজধর। নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তিনি ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ অমরমাণিক্যের কনিষ্ঠ পুত্র। নাটকে রাজধরই কেন্দ্রীয় চরিত্র। এই কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে স্বার্থপরতা, ছলনা, ধুর্তামি আর লালসা।
রাজধর তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন। তিনি তার বুদ্ধির জোরে নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করতেন। তাঁর কাছে সততা, সম্মান, বীরত্ব ও আদর্শের কোনো মর্যাদা নেই। অস্ত্রগুরু সেনাপতি ইশাখাঁসহ নিজের বড় ভাইদের তেমন সম্মান করতেন না। অস্ত্রবিদ্যা বা যুদ্ধবিদ্যা কোনোটায়ই তার দখল ছিল না, তবে পরাজয় মানতে তিনি কখনও রাজি হতেন না। এজন্য প্রয়োজনে নৈতিকতা, আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে বা আপনজনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও নামতে পিছনে যান না। সেনাপতি ইশাখাঁ যিনি রাজধরের অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষাগুরু তিনি তাঁকে নাম ধরে ডাকায় তিনি অসম্মান বোধ করেন। এনিয়ে তিনি সেনাপতির সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়লেন।
রাজধরের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায়। পরীক্ষার আগের দিন রাজধর ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় গিয়ে ইন্দ্রকুমার নামাঙ্কিত প্রথম তীরটি উঠিয়ে সেস্থানে রাজধর নামাঙ্কিত তীর রেখে আসেন। ইন্দ্রকুমার রাজধর নামাঙ্কিত তীরটি নিক্ষেপ করার ফলে দেখা যায় রাজধর ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষায় জয়ী হন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ও রাজধর একইভাবে ছল-চাতুরির মাধ্যমে যুদ্ধ জয় করতে দেখা যায়। রাজধর যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করে গোপনে রাত্রিবেলায় আরাকানরাজের শিবিরে গিয়ে আরাকানরাজকে বন্দী করে মুকুট নিয়ে আসেন।
রাজধরের এই অন্যায়, অনুচিত কর্মের জন্য কেউই মুকুট গ্রহণ করতে চাইলেন না এবং ইশা খাঁ সেটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দেন। তখন তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য দেশদ্রোহিতার কাজ করতে দেখা যায় রাজধরকে। তিনি আরাকান রাজকে পত্রের মাধ্যমে জানান তিনি যেন আবার ত্রিপুরার সৈন্যের উপর আক্রমণ করেন। নাটকের শেষে রাজধর এই ভুলের জন্য আত্মগ্লানিতে ভুগে মুকুটটি ফিরিয়ে দিতে চান ইন্দ্রকুমারকে। নাটকের শেষ দৃশ্যে রাজধর ইন্দ্রকুমারকে বলেন, “আমি নরাধম। এই মুকুট তোমার পায়ে রাখলুম, তোমারই !”
নাটকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাজধরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। নাট্যকার এই চরিত্র অঙ্কনে যে দক্ষতা ও নিপুণতা দেখিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।
প্রশ্ন ৩। ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের মধ্যম পুত্র রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তরঃ ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের দ্বিতীয় পুত্র ইন্দ্রকুমার ‘মুকুট’ নাটকের এক শক্তিশালী চরিত্র। নাটকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তিনি রাজপরিবারের প্রকৃত যোগ্য রাজকুমার। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা, অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শিতা, যুদ্ধের ময়দানে ক্ষত্রিয়ের বীরত্ব ও অগ্রজ যুবরাজ ও সেনাপতির প্রতি থাকা ভক্তি, শ্রদ্ধা তাকে এক আদর্শ রাজপুত্ররূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি ছিলেন অস্ত্রগুরু ইশাখাঁর প্রিয় পাত্র। ধনুর্বিদ্যায় ও অস্ত্র পরিচালনায় অদক্ষ কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজধরের ধূর্ত স্বভাব ও ছল-চাতুরির জন্য ইন্দ্রকুমার তাকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু যুবরাজের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। ধনুর্বিদ্যা পরীক্ষার সময় ইন্দ্রকুমার যুবরাজকে বলেছিলেন, “দাদা আজ তোমাকে জিততে হবে, তা না হলে চলবে না।” এই পরীক্ষায় প্রকৃতপক্ষে ইন্দ্রকুমার জিতলেও রাজধরের ছল চাতুরিতে তা প্রমাণ করতে পারেন নি। কিন্তু পরে রাজধর মহারাজের নিকট হতে পাওয়া পুরস্কারের হীরা বাঁধানো তলোয়ারখানা ইন্দ্রকুমারকে দিতে চাইলে ইন্দ্রকুমার ঘৃণায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ইন্দ্রকুমার ছিলেন অত্যন্ত জেদী এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তাই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে মহারাজকে কম্পিত স্বরে বলেছিলেন যে কাজের পরীক্ষায় পার্শ্ববর্তী রাজ্য আরাকান জয় করে তিনি পুরস্কার নিয়ে আসবেন। এইযুদ্ধে রাজধর ক্ষাত্রধর্ম বিসর্জন দিয়ে গোপণে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজ যখন শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছেন তখন তাকে আক্রমন করে বন্দী করেন। তারপর মুক্তির জন্য সন্ধিপত্র লিখিয়ে হস্তিদন্ত নির্মিত মুকুট জয়োপহার হিসেবে নিয়ে আসেন তখন ইন্দ্রকুমার প্রথমে সে কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি। এই মুকুটের অধিকার নিয়ে পরে যখন দুজনের মধ্যে বিবাদ বাধে এবং যুবরাজ রাজধরের পক্ষ অবলম্বন করেন তখন ইন্দ্রকুমার দাদার অন্যায় সমর্থনে অভিমানাহত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেন।
নাটকের শেষ অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে দাদার অন্তিম পরিণতির জন্য এক সৈনিকের কাছে ইন্দ্রকুমার নিজেকেই দায়ী করেন। তৃতীয় দৃশ্যে কর্ণফুলি নদীর তীরে জ্যোৎস্না রাতে অর্জুন গাছের ছায়ায় যুবরাজের মৃত্যুশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রকুমার নিজেকে ধিক্কার দিয়ে দাদার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে নাটকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রকুমার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্দ্রকুমার চরিত্র চিত্রণে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৪। ‘মুকুট’ নাটকের যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের মৃত্যুদৃশ্যটি বর্ণনা করো।
অথবা,
যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যের চরিত্র বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকের প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে যে চরিত্রকে সবচেয়ে সহজ সরল ও উদার বলে চিহ্নিত করা যায়, তিনি হলেন চন্দ্ৰমাণিক্য। চন্দ্ৰমাণিক্য ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র তথা যুবরাজ। নাটকটিতে এই চরিত্রটির ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেখালেও তাঁর চারিত্রিক গুণ তাঁকে মহিমান্বিত করেছে। তিনি খুব চতুর বা অস্ত্র বিদ্যায় তেমন পারদর্শী ছিলেন না। এতে তাঁর মধ্যে কোনো খেদ বা দুঃখ ছিল না। বরং মধ্যম কুমার ইন্দ্রকুমার ও কনিষ্ঠ কুমার রাজধরের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। ইন্দ্রকুমারকে তিনি যতটুকু বিশ্বাস করতেন, রাজধরকে ততটুকু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন যুবরাজ। রাজধরের প্রতি তাঁর কিছু দুর্বলতা ছিল, তাই সেনাপতি ইশাখাঁ রাজধরের কার্যকলাপে কটাক্ষ করলে যুবরাজের মনে ব্যথা লাগত।
যুবরাজ কখনও নিজেকে বড়ো করে দেখেননি তাই অস্ত্র বিদ্যা পরীক্ষার দিনে ইন্দ্রকুমারের কথার উত্তরে যুবরাজকে বলতে শুনা যায় “আমার তীরটা লক্ষ্য ভ্ৰষ্ট হলেও জগত সংসার যেমন চলছিল ঠিক তেমনি চলবে।” যুবরাজ পিতার আদেশ মতো ভাইদের নিয়ে আরাকানরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাত্রা করেন। কিন্তু প্রথম দিনের যুদ্ধে যুবরাজের অপারদর্শিতার জন্য শত্রুদের নিকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
রাজধর গোপনে রাতের অন্ধকারে সকলের অজ্ঞাতে আরাকানরাজকে শিবিরে আক্রমণ করে মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে আসলে, ইন্দ্রকুমার সে মুকুট যুবরাজের মাথায় পরানোর কথা বলেন। যুবরাজ কিন্তু এই মুকুট রাজধরের মাথায় পরিয়ে দেন। এখানে যুবরাজের চরিত্র সরলতাটুকুই প্রকাশিত হয়। যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য আরাকানরাজের সঙ্গে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন।
আরাকানবাহিনীর সঙ্গে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ আরম্ভ হলে অবস্থা বেগতিক দেখে সেনাপতি যখন যুবরাজকে পলায়ণ করতে বললেন, তখন যুবরাজের মুখে শুনা যায় “তুমি আমাদের অস্ত্রগুরু, তোমার মুখে এ উপদেশ সাজে না।” – এই উক্তির মধ্য দিয়েই তাঁর চরিত্রের নৈতিকতা ও চরিত্রের বীরত্বের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। ক্ষত্রিয় বীরের মতোই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করে প্রাণ বিসর্জন দেন। কর্ণফুলি নদীর তীরে অর্জুন গাছের নীচে মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে ইন্দ্রকুমারকে দেখে বলেন “আঃ বাচলুম ভাই! তুমি আসবে জেনেই এত দেরি করে বেঁচেছিলাম।” এই বলে ঈশ্বরকে স্মরণ করে তাঁর কোলে স্থান চেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রশ্ন ৫। ‘মুকুট’ নাটক অবলম্বনে ইশা খাঁর চরিত্র চিত্রণ করো।
উত্তরঃ ‘মুকুট’ নাটকে ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের সেনাপতি ছিলেন ইশা খাঁ। তিনি ছিলেন জাতিতে পাঠান। তিনি মহারাজ অমরমাণিক্যসহ রাজপরিবারের সকলেরই অস্ত্রগুরু। তিনি বয়সে বৃদ্ধ হলেও তার দেহ ও মনে রয়েছে অপরিসীম সাহস এবং শক্তি। তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সততা ও দৃঢ়তা। ইশা খাঁ একজন সৎ ও স্বাধীনচেতা পুরুষ। তিনি কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরকে মোটেই পছন্দ করতেন না। কারণ রাজধরের মধ্যে রাজপুত্রের কোনো গুণ খুঁজে পাননি। ইশা খাঁর প্রিয় শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমার। বাকীদের তিনি খুব একটা মান্য করতেন না। রাজধরের ছল-চাতুরি তিনি ধরে ফেলতেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজসভায় একটি জীব ও নাই যে উহার ফাঁদে একবার না একবার না পড়িয়াছে।’
প্রথমবার অস্ত্র পরীক্ষায় যখন ইন্দ্রকুমারের তীর লক্ষ্য বিদ্ধ হয় এবং চারিদিকে জয়ধ্বনি ওঠে তখন ইশা খাঁ ইন্দ্রকুমারকে আশীর্বাদ করে তিনিই যে পুরস্কারের প্রাপক তা বিবেচনা করেন। কিন্তু রাজধরের কথায় ইশা খাঁ লক্ষ্য থেকে তীর এনে দেখেন তীরের ফলায় রাজধরের নাম। নাম দেখে তিনি বিস্মিত হন। তিনি ইন্দ্রকুমারের কাছে জানতে চান তাঁর অস্ত্রশালায় কেউ প্রবেশ করেছিল কি না। যাই হোক তিনি ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেন এবং তীর যে বদল হয়েছে তাও বুঝতে পারেন। এসময়ে ইশা খাঁ খেলার পরীক্ষা শেষ হল বলে রাজকুমারদের কাজের পরীক্ষায় পাঠাতে চান, আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। মহারাজও সেনাপতির কথায় সায় দিয়ে রাজ্যের নবসৈনিক ইন্দ্রকুমারদের ক্ষাত্রধর্মের দীক্ষা দিতে আরাকানরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইশা খাঁকে সৈন্যাধ্যক্ষ নির্বাচন করে যুদ্ধে পাঠান।
আরাকানরাজকে ছল-চাতুরীর দ্বারা যুদ্ধে পরাজিত করে রাজধর জয়ের উপহার স্বরূপ রাজধর মুকুট নিয়ে এলে ইশা খাঁ তা যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্যকে পরিয়ে দিতে চাইলেন। যুবরাজ তা প্রত্যাখ্যান করলে ইশা খাঁ পদাঘাতে মুকুট কর্ণফুলি নদীতে নিক্ষেপ করেন। এটা ইশাখাঁর বেপরোয়া মানসিকতার পরিচয় দেয়। ইশা খাঁ প্ৰকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস অবধি তিনি যুদ্ধ করে গেছেন।
প্রশ্ন ৬। ধুরন্ধর চরিত্র আলোচনা করো।
অথবা,
ধুরন্ধর কে? ‘মুকুট’ নাটকে ধুরন্ধর চরিত্রের গুরুত্ব কীরূপ তা নির্ধারণ করো।
উত্তরঃ ধুরন্ধর ‘মুকুট’ নাটকের রাজকুমারের মামাতো ভাই।
নাটকে ধুরন্ধর একটি খল চরিত্র। তাঁর অবস্থান সব সময়ই কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের সঙ্গেই। রাজধর এবং ধুরন্ধর একে অন্যের পরিপূরক। একজনকে ছাড়া অন্যজনের চলে না। রাজধর যে কোন কাজ করতে ধুরন্ধরের সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং ধুরন্ধর রাজধরকে নানা ব্যাপারে সাহায্যও করতেন। রাজধর ইন্দ্রকুমারের রূপার পাতের ধনুকটির উপরে লোভ করলে ধুরন্ধরই তা লুকিয়ে এনে রাজধরকে ভালো অপমান করেছিলেন। রাজধর অস্ত্র পরীক্ষার সময় ধুরন্ধরকে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করে ইন্দ্রকুমারের তূণ হতে ইন্দ্রকুমারের নাম লেখা তীরটি নিয়ে রাজধরের নাম লেখা তীরটি সেখানে বসিয়ে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতায় অর্থাৎ ইন্দ্রকুমারের ভয়ে ধুরন্ধর রাজধরের আব্দার অমান্য করে।
আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধের সময় রাজধর চালাকি করে পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে আলাদা অবস্থান করে এবং সঙ্গে রাখে মন্ত্রদাতা ধুরন্ধরকে। ধুরন্ধর ছিলেন সেনাপতি ইশাখাঁর চক্ষুশূল। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনের রাতে আরাকান বাহিনীকে আক্রমণের ব্যাপারে রাজধর ধুরন্ধরকে আগে জানিয়ে তাকে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। যুবরাজের দূতকে বন্দী করতে তিনি ধুরন্ধরকে নির্দেশ করেছিলেন। তারপর রাজধরের জেতা মুকুট সেনাপতি কর্ণফুলি নদীর জলে ফেলে দিলে, এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য রাজধর ধুরন্ধরের মাধ্যমে আরাকানরাজের নিকট চিঠি পাঠিয়ে ঘরের খবর জানিয়ে পুনরায় আক্রমণের আহ্বান করেন।
অনুচরদের মধ্যে কেউ একজন রাজধরকে শনিগ্রহের সঙ্গে তুলনা করতে দেখা যায় তেমনি ধুরন্ধরকেও মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে তুলনা করেন। আমরা দেখি শনি ও মঙ্গল গ্রহ দুটি মানবজীবনকে নানা সমস্যার সম্মুখীন করে তুলে। তেমনি অনুচর রাজধর ও ধুরন্ধরের স্বভাব, চরিত্র সম্পর্কে অবগত ছিলেন বলে উভয়কে শনি ও মঙ্গলের সঙ্গে তুলনা করতে দেখা যায়। এভাবে ধুরন্ধর সবসময়ই রাজধরের পাশে থাকতেন।
প্রশ্ন ৭। ‘মুকুট’ নাটকের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতির নামকরণ করা হয় চরিত্র, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের উপর ভিত্তি করে। বলাবাহুল্য, আলোচ্য ‘মুকুট’ নাটকটি বিষয়ানুগ রচনা।
নাটকটির প্রথম দিকে মুকুটের উল্লেখ না থাকলেও পরে মুকুট বা রাজমুকুটই সমগ্র কাহিনিকে পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে রাজধরের আরাকানরাজকে যুদ্ধে পরাস্ত করবার কাহিনি বর্ণিত আছে। আরাকানরাজ ত্রিপুরা আক্রমণ করলে অমরমাণিক্য রাজকুমারদেরকে যুদ্ধে পাঠান। তিন রাজকুমারের অধীনে পাঁচ হাজার সৈন্য রয়েছে। সেনাপতি ইশা খাঁ, ইন্দ্রকুমার ও যুবরাজের অজান্তে রাজধর রাত্রিবেলা আরাকান বাহিনীর শিবিরে গিয়ে আরাকানরাজকে বন্দী করেন। আরাকানরাজ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধিপত্র লিখে দেন রাজধরের হাতে এবং রাজধর পরাজয়ের চিহ্ন স্বরূপ আরাকানরাজের মুকুট নিয়ে আসেন। রাজধর ইন্দ্রকুমারকে মুকুটটি দেখিয়ে বললেন সেটি তিনি জয় করে এনেছেন। এই মুকুটটি তিনিই পরবেন। ইন্দ্রকুমার বললেন যে রাজধর যুদ্ধ করেনি, সুতরাং এই পুরস্কার তার নয়। এই মুকুট যুবরাজ পরবেন। কিন্তু যুবরাজ মুকুটটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। ইশা খাঁ মুকুটটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দিলেন। রাজধর প্রতিশোধস্বরূপ আরাকানরাজ দিয়ে আবার ত্রিপুরা আক্রমণ করান। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি ইশা খাঁ নিহত হলেন। যুবরাজ ও ইন্দ্রকুমার শোকে ও দুঃখে আত্মবিসর্জন দিলেন।
নাটকের মুখ্য ঘটনা, বিষয়বস্তু ও পরিণতি মুকুটকে অবলম্বন করে সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিষয়ানুসরণে নাটকটির ‘মুকুট’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন ৮। ‘আল্লার দূতেরা এক এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তখন সমস্ত হিসাব উল্টা করে দিয়ে যায়। – কার উক্তি? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচনা করো।
উত্তরঃ উক্তিটি সেনাপতি ইশা খাঁর।
আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধে যাত্রাকালে দুষ্টবুদ্ধি রাজধর পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। তারপর যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য, মধ্যম কুমার ইন্দ্রকুমার এবং সেনাপতি ইশা খাঁর অজান্তে গোপণে ধুরন্ধরের সহিত পরামর্শ করে রাতের অন্ধকারে আরাকানরাজ যখন তাঁর শিবিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন কৌশলে তাকে বন্দী করেন। এর ফলে আরাকান রাজ রাজধরের সঙ্গে সন্ধি করেন। যার ফলে শত্রু সৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দিলে ইন্দ্রকুমার যুদ্ধ থামানোর কারণ জানতে না পেরে ইশাখাঁকে জিজ্ঞেস করলে ইশাখাঁ রাজধরের দ্বারা আরাকানরাজকে বন্দী করার কথা বলেন। কিন্তু ইন্দ্রকুমার এই কথাটি বিশ্বাস করতে না পেরে এ ঘটনাকে মিথ্যে বললে ইশা খাঁ এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে এই উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন ৯। ‘এর মধ্যে একটা রহস্য আছে।’ – ‘মুকুট’ নাটকের প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলির বিবরণ দিয়ে এই রহস্যটি কী তা বোঝাও।
উত্তরঃ রহস্যটা হলো ‘মুকুট’ নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যের। অস্ত্র পরীক্ষা শুরু হলে সেনাপতি মনোযোগ সহকারে প্রথমেই যুবরাজকে তীর ছোঁড়ার আদেশ দেন। তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তারপর কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের তীরও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু রাজধর এর প্রতিবাদ করে বলে, তার তীর লক্ষ্যবিদ্ধ করেছে অনেকটা দূরে বলে কেউ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। এরপর ইন্দ্রকুমারের তীর যখন লক্ষ্যবিদ্ধ করে তখন চারদিকে জয় জয় ধ্বনি ওঠে। ইশা খাঁ মহারাজকে জয়ের পুরস্কার ইন্দ্রকুমারের হাতে তুলে দিতে বললে অকস্মাৎ তুমুল প্রতিবাদী হয়ে ওঠে রাজধর বলে, সেই নাকি যথার্থ পুরস্কারের প্রাপক। রাজধরের কথায় ইশা খাঁ লক্ষ্য থেকে তীর এনে দেখেন তীরের ফলায় রাজধরের নাম লেখা। ইন্দ্রকুমারও তা স্বীকার করেন। চোখের সামনে এতো বড়ো ভুলে মহারাজ বিস্মিত হন। ইশা খাঁ অবিশ্বাস করেন, কিন্তু রাজধর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ইন্দ্রকুমার সমস্ত কিছু বুঝে নিজের হার স্বীকার করে বলেন বিচার করলে রাজধরের মুখে চুন কালি পড়বে তিনি বংশের লজ্জা প্রকাশ করবেন না। ঈশ্বর এর বিচার করবেন। ইশা খাঁ ইন্দ্রকুমারকে তার অস্ত্রশালায় কোন ঘটনা ঘটেছিল কি না তা জানতে চান। আর এই জানার মধ্যেই রহস্যের যবনিকাটুকু লুকিয়ে আছে, অর্থাৎ তীর বদলানোর আসল ঘটনা।
প্রশ্ন ১০। ‘মুকুট’ নাটকে নাট্যোল্লিখিত প্রধান ব্যক্তিগণের নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ নাট্যোল্লিখিত প্রধান ব্যক্তিগণ হলেন-
(ক) অমরমাণিক্য – মহারাজ ত্রিপুরাধিপতি।
(খ) যুবরাজ – চন্দ্রমাণিক্য।
(গ) মধ্যম রাজকুমার – চন্দ্রমাণিক্য।
(ঘ) কনিষ্ঠ রাজকুমার – রাজধর।
(ঙ) রাজধরের মামাতো ভাই – ধুরন্ধর।
(চ) সেনাপতি – ইশাখাঁ।
টীকা লেখো:
(ক) মহারাজ অমর মাণিক্য: ‘মুকুট’ নাটকে অমরমাণিক্য হলেন ত্রিপুরার রাজা। তাঁর তিন পুত্র হলেন – যুবরাজ অমর মাণিক্য, ইন্দ্রকুমার ও রাজধর। তাঁর চরিত্রের মধ্যে কোমলতা ও পুত্রপ্রেম ফুটে উঠেছে। তিনি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। কনিষ্ঠ পুত্র রাজধরের ধূর্তামি ও চাতুরির জন্য আরাকানরাজের কাছে তাকে পরাজিত হতে হয়।
(খ) যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য: ত্রিপুরাধিপতি অমর মাণিক্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র হলেন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য। তিনি কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজধরের মতো চতুর ও সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী নন। ইন্দ্রকুমারের মতো ধনুর্বিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন না। তিনি তাঁর ভ্রাতাদের ভীষণ ভালবাসতেন। পিতাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। পিতার কথায় দ্বিতীয় বার তিনি আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন এবং সেই যুদ্ধে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
(গ) ইন্দ্রকুমার: ত্রিপুরাধিপতি অমর মাণিক্যের দ্বিতীয় পুত্র হলেন ইন্দ্রকুমার। তিনি ধনুর্বিদ্যায় অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ইন্দ্রকুমার অত্যন্ত দাম্ভিক স্বভাবের। তাই তিনি কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজধরকে অপছন্দ করতেন। তাঁর সিংহাসনের প্রতি কোনো লোভ ছিল না। দৃঢ়সংকল্পবদ্ধতা ইন্দ্রকুমারের চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
(ঘ) রাজধর: ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের কনিষ্ঠ পুত্র রাজধর। তিনি সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন। তিনি ধনুর্বিদ্যা জানতেন না কিন্তু ধূর্ত বুদ্ধির জোরে ধনুর্বিদ্যা প্রতিযোগিতায় দাদা ইন্দ্রকুমারকে হারিয়ে মহারাজের নিকট হতে হীরের তলোয়ার লাভ করেছিলেন। আরাকানরাজের সঙ্গে যুদ্ধে ছল-চাতুরি করে রাজধর জয় লাভ করেন।
(ঙ) ঈশা খাঁ: ত্রিপুরাধিপতি অমরমাণিক্যের সেনাপতি এবং অমরমাণিক্যের পুত্রগণের অস্ত্রগুরুও ছিলেন ঈশা খাঁ। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ, সদ্বিবেচক ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
(চ) ধুরন্ধর: ধুরন্ধর রাজকুমারদের মামাতো ভাই। নাটকে সবসময় কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে ধুরন্ধরের অবস্থান। রাজধর ধুরন্ধরের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ।আলোচনা করতেন। ধুরন্ধর রাজধরের ছল-চাতুরি ও অসৎ কাজে সহযোগিতা করতো।
(ছ) কমলাদেবী: কমলাদেবী মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী। নাটকে তাঁর ভূমিকা অতি নগণ্য। তিনি রাজধরকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় তিনি রাজধরকে তালা বন্ধ করে রেখেছিলেন। এই সুযোগে রাজধর তূণের তীর বদল করেন।
(জ) আরাকানরাজ: স্বাধীন ত্রিপুরার প্রতিবেশী রাজ্য আরাকানের রাজাকে বলা হয় আরাকানরাজ। নাটকে জানা যায় মহারাজ অমরমাণিক্য তাঁকে বারবার শিক্ষা দিলেও অর্থাৎ যুদ্ধে পরাস্ত হলেও তিনি ত্রিপুরা আক্রমণে নাছোরবান্দার মতো লেগেছিলেন। রাজধর তাঁকে রাতে তাঁর শিবিরে বন্দী করে। পরে রাজধরের হঠকারিতার জন্য আরাজানরাজের জয় হয়।
(ঝ) যুবরাজের মৃত্যুদৃশ্য: যুবরাজ হলেন অমর মাণিক্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র চন্দ্ৰমাণিক্য। নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে তৃতীয় অঙ্কে তাঁর মৃত্যু দৃশ্য বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয়বার আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে তিনি মারা যান। যুদ্ধে যখন তার দেহে তীর এসে লাগে, তখন মাহুত তার হাতি নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালবার সময় মাহুত মারা যায় এবং যুবরাজ সে সময় হাতির উপর থেকে পড়ে যান। ইন্দ্রকুমার ও তাকে মুকুট পরিয়ে দিতে চাইলে তা ইন্দ্রকুমারকে পরিয়ে দিতে বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস অন্যান্যরা তাকে অর্জুন গাছের তলায় মৃত্যু পথযাত্রী হিসেবে দেখতে পান। রাজধর ত্যাগ করেন।
(ঞ) কর্ণফুলি: কর্ণফুলি একটি নদী। এই নদী বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। মুকুট নাটকে কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধরের আরাকান রাজের পরাজয়ের নিদর্শন স্বরূপ পাওয়া মুকুটটিকে পরবেন এই নিয়ে যখন বিবাদ চলে তখন সেনাপতি ইশাখাঁ মুকুটটি কর্ণফুলির জলে ফেলে দেন। এরই প্রতিশোধ নিতে রাজধর দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন। তিনি ধুরন্ধরকে বলেন তার মুকুটের মতো যুদ্ধজয়কেও তিনি কর্ণফুলি নদীতে নিক্ষেপ করলেন। তাছাড়া নাটকের তৃতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে যখন যুবরাজ চন্দ্রমাণিক্য মৃত্যুপথযাত্রী তখন এই কর্ণফুলি তীরে অর্জুন বৃক্ষতলায় ইন্দ্রকুমারের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে দেখা যায়।
(ট) গোমতী: গোমতী মুকুট নাটকে উল্লেখিত ত্রিপুরা রাজ্যের একটি নদী। এই নদীতে নাকি পূর্ণিমার রাতে বাঘ জল খেতে আসে। ইশাখাঁ ত্রিপুরারাজ অমরমাণিক্যের সেনাপতি ও রাজকুমারদের অস্ত্রিবিদ্যাশিক্ষা দাতা গুরু। মহারাজ যখন সেনাপতি ইশাখাঁকে পুত্রদের অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেন কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর সহ সকলে পূর্ণিমার রাতে গোমতীতে বাঘ জল খেতে আসবে তখন এই বাঘটিকে শিকার করে তাদের অস্ত্রবিদ্যার পারদর্শিতার প্রমাণ দিবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। পরিশেষে রাজধর ছল-চাতুরীর দ্বারা মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারকে পরাজিত করেন।
(ঠ) প্ৰতাপ: মুকুট নাটকের প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে আমরা প্রতাপ চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রতাপ মধ্যম রাজকুমার ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার দ্বার রক্ষক। রাজধর যখন অস্ত্র পরীক্ষার পূর্বদিন তীর বদল করতে ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করে, তখন মধ্যম বউ রাণীমার আদেশে রাজধরকে অস্ত্রশালার বাইরে বন্দি করে রাখে। তারপর ইন্দ্রকুমারকে খবর দিতে যায়। ইন্দ্রকুমার দরজা খুলে দিলে রাজধর কাজ হাসিল করে অস্ত্রধার নেওয়ার কথা বলে বাহির হয়ে যায়। তখন প্রতাপ ইন্দ্রকুমারকে রাজধর সম্বন্ধে তামাসা না করে সাবধান থাকার পরামর্শ দেয়।
(ড) ভাট: মুকুট নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে নিশানধারী ও ভাট চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। এরা নাটকের অতি ক্ষুদ্র চরিত্র। যখন রাজকুমারদের অস্ত্রবিদ্যা পরীক্ষার জন্য পূর্ণিমার রাতে গোমতী নদীর ঘাটে বাঘ শিকারে যাওয়া হয় তখন ভাটরা তাদের কর্মচারী রূপে সেখানে গিয়েছিল।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.