Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা, AHSEC Class 11 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা Solutions are free to use and easily accessible.

Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই PDF, Assam Board Class 11 Political Science Question in Bengali Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 1st Year Political Science Notes in Bengali, Class 11 All Books PDF File Download in Bengali Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 11 Political Science Solution in Bengali, HS 1st Political Science Suggestion in Bengali, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান Question answer in Bengali, Class 11 Political Science Chapter 12 স্বাধীনতা The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. NCERT Class 11 Political Science Solution, will be able to solve all the doubts of the students. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর, Class XI Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 11 Political Science Textbooks Solution. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2023 Assam AHSEC Class 11 Political Science Suggestion are present on Roy Library’s website in a systematic order.

প্রশ্ন ১৫। “ক্ষতিকর বা অনিষ্টকারী নীতি” বলতে কী বোঝ? এই নীতির প্রবক্তা কে?

উত্তরঃ জন স্টুয়ার্ট মিল মানুষের কার্যসমূহকে দুভাগে ভাগ করেছেন। ভাগ দুটি হল – ‘আত্ম–সম্পর্কিত বিষয়’ এবং ‘অপর–সম্পর্কিত বিষয়। মিলের মতে আত্ম–সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু ‘অপর–সম্পর্কিত বিষয়’ সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর বা অনিষ্টকারি হতে পারে। তাই এই বিষয়গুলোর উপর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।

“ক্ষতিকর নীতি’-র প্রবক্তা হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল।

প্রশ্ন ১৬। সীমাবদ্ধতার দুটি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ স্বাধীনতা মানব সমাজের মৌলিক বিষয় এবং মর্যাদা সম্পন্ন মানব জীবনে স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রকৃত স্বাধীনতা সুনিশ্চিতকরণে সীমাবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ –

(ক) ব্যক্তি স্বাধীনতা যাতে স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত না হয়, তার জন্য সীমাবদ্ধতা বা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(খ) সামাজিক বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন আছে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। স্বরাজ সম্পর্কে গান্ধীজীর অভিমত কী? 

উত্তরঃ স্বরাজ সম্পর্কে গান্ধীজী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “হিন্দ স্বরাজ” -এ বলেছেন– “স্বরাজ তখনই হয় যখন আমরা নিজে নিজেকে শাসন করতে শিখি।” গান্ধীজীর মতে স্বরাজ হল আত্মসম্মান, আত্ম–দায়িত্বশীলতা এবং আত্ম–উপলব্ধি। তাঁর মতে স্বরাজ হল সমাজের বাহ্যিক স্বাধীনতার সঙ্গে মানুষের অন্তরের স্বাধীনতা। গান্ধীজী লক্ষ্য (ends) ও উপায় (means) কে পৃথকভাবে দেখেননি। তাঁর মতে, কেউ যদি উপায় সম্পর্কে যত্নবান হয় তাহলে উদ্দেশ্য নিজ হতেই উপায়ের যত্ন করবে। গান্ধীজী “স্বরাজ এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন গ্রামীণ সাধারণ তন্ত্রের উপর ভিত্তি করে। তাঁর মতে স্বরাজ হল আত্মনির্ভরশীলতা।

২। স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির অভিমত ব্যক্ত করো?

উত্তরঃ নেতাজির মতে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। স্বাধীনতা শব্দটি দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। স্বাধীনতা বলতে নেতাজি সামগ্রিক স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এটি ব্যক্তি তথা সকল শ্রেণীর স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত করে। নেতাজি স্বাধীনতা বলতে রাজনৈতিক পরাধীনতা হতে মুক্তি ছাড়াও সম্পদের সুষম বণ্টন, জাতিভেদ প্রথার বিলোপ, সামাজিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় অসহনশীলতা নির্মূল প্রভৃতির কথা বলেছেন। স্বাধীনতা একটি আদর্শ যা অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করবে।

প্রশ্ন ৩। “ক্ষতিকর নীতি”-র অর্থ ব্যাখ্যা করো? 

উত্তরঃ জন স্টুয়ার্ট মিল মানুষের কার্যসমূহকে দুভাগে ভাগ করেছেন। ভাগ দুটি হল – ‘আত্ম–সম্পর্কিত বিষয়’ এবং ‘অপর–সম্পর্কিত বিষয়। মিলের মতে আত্ম–সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু ‘অপর–সম্পর্কিত বিষয়’ সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর বা অনিষ্টকারি হতে পারে। তাই এই বিষয়গুলোর উপর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।

“ক্ষতিকর নীতি’-র প্রবক্তা হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল।

প্রশ্ন ৪। ব্যাখ্যা করো “চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য।” 

উত্তরঃ স্বাধীনতা রক্ষা করবার জন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সদা সতর্ক থাকা উচিত। যদি নাগরিকগণ তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে সদা সতর্ক ও সদা জাগ্রত না থাকেন তবে কোন বহিঃশক্তি তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। তাছাড়া সরকারও তাদের স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত রাখতে পারে। তাই থমাস জেফারসন বলেছেন (Thomas Jefferson), – “চিরন্তন সতর্কতাই হল স্বাধীনতার মূল্য।”

প্রশ্ন ৫। কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত? 

উত্তরঃ রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আর্থিক নিরাপত্তা ব্যতীত ব্যক্তি তার নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় না। এইজন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা কল্পে আর্থিক নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়। অবশ্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয় না। অধ্যাপক লাস্কির মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হয়। কারণ একজন ব্যক্তির যদি পর্যাপ্ত খাবার, পরার কাপড় ও থাকার মত ঘর না থাকে তবে সেই ব্যক্তি রাজনৈতিক স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারবে না। তাই রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়। 

প্রশ্ন ৬। ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো?

উত্তরঃ ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে ধর্মগ্রহণ, ও আলোচনা করা বা ধর্ম প্রচার করাকে বোঝায়। রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো ধর্ম থাকবে না। রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পৃষ্টপোষকতা করতে পারবে না। প্রতিটি ব্যক্তির নিজ নিজ ধর্মচর্চা ও আলোচনা করার স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রের ধর্মীয় কার্যাবলীর ব্যাপারে কোনো ভূমিকা থাকবে না। রাষ্ট্র সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজন সাপেক্ষে ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে ভারতে রাষ্ট্র ধর্মীয় কুসংস্কার যেমন – অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করেছে।

প্রশ্ন ৭। নেতিবাচক স্বাধীনতার স্বপক্ষে তিনটি যুক্তি দাও?

উত্তরঃ স্বাধীনতার নেতিবাচক দিক হল চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা। লক, অ্যাডাম স্মিথ, বেনথাম ও জে. এস. মিল নেতিচবাচক স্বাধীনতার স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। 

নেতিবাচক স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রদত্ত যুক্তিগুলো নিম্নরূপঃ–

(ক) লকের মতে প্রাকৃতিক অধিকার এবং সীমিত সরকারি প্রভাব ব্যক্তিকে অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করতে সহায়তা করে।

(খ) অ্যাডাম স্মিথ অবাধ প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন। অবাধ প্রতিযোগিতায় ব্যক্তি অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। বেনথামের মতে আইন স্বাধীনতার অন্তরায়। তিনি নেতিবাচক স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন।

(গ) বার্লিন বিশ্বাস করেন যে অবরোধহীন অবস্থায়ই ব্যক্তি অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। নেতিবাচক স্বাধীনতা মুক্ত বাণিজ্য প্রসারের জন্য প্রেরণাদায়ক। 

প্রশ্ন ৮। উদারবাদ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ উদারবাদ একটি রাজনৈতিক মতবাদ। উদারবাদ বা ‘Liberalism’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Liber’ হতে এসেছে। Liber শব্দের অর্থ স্বাধীন বা মুক্ত। রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বাধীন চিন্তাভাবনাই হল উদারবাদের মূল ভিত্তি। উদারবাদের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে উদারবাদের সংজ্ঞা দিয়েছেন। 

অধ্যাপক লাস্কির মতে, – “উদারনীতি হল, মানসিকতার তুলনায় কম মতাদর্শের প্রকাশ। এটি হল স্বাধীনতার আবেগ যা বাধ্যবাধকতা প্রসূত।”

ব্যক্তি স্বাধীনতাই উদারবাদের মূল আদর্শ ও নীতি। উদারবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর অসমর্থনীয় হস্তক্ষেপের বিরোধী। হবস্, লক, বার্কার প্রমুখ রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ উদারনীতির সমর্থন করেছেন। 

প্রশ্ন ৯। উদারবাদের যে কোনো চারটি নীতি লেখো?

উত্তরঃ রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বাধীন বা মুক্ত চিন্তা ভাবনাই হল উদারবাদের ভিত্তি। 

উদারবাদের চারটি নীতি নিম্নরূপঃ

(ক) উদারবাদের মূল ভিত্তি হল ব্যক্তি–স্বাধীনতা। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তি–স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।

(খ) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উদারবাদের একটি মূল নীতি।

(গ) উদারবাদ মতাদর্শ আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা রক্ষার কথা বলে।

(ঘ) উদারবাদ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মুক্ত প্রতিযোগিতা প্রসারের কথা বলে। 

প্রশ্ন ১০। যে কোনো চার প্রকার স্বাধীনতা সম্পর্কে আলোচনা করো?

উত্তরঃ চারপ্রকার স্বাধীনতার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) পৌর স্বাধীনতাঃ ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কতকগুলো সাধারণ অধিকার ভোগ করা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের পক্ষে অপরিহার্য। এই স্বাধীনতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার, ধর্মের অধিকার প্রভৃতি হল পৌর স্বাধীনতার উদাহরণ।

(খ) রাজনৈতিক স্বাধীনতাঃ রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে অংশ গ্রহণ করবার ক্ষমতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে। ভোটদানের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার, সরকারি চাকরি করবার অধিকার প্রভৃতি রাজনৈতিক অধিকার হল রাজনৈতিক স্বাধীনতা।

(গ) অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হল প্রত্যেক মানুষের তার নিজের শিক্ষা ও সামর্থ অনুযায়ী কার্য করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধার অধিকার। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল না হলে মানুষ অন্যান্য স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারে না। জীবিকা অর্জনের অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার প্রভৃতিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলে।

(ঘ) জাতীয় স্বাধীনতাঃ জাতীয় স্বাধীনতা হল অন্য রাষ্ট্র হতে নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীন সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করবার অধিকার। এই স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো জাতিই অন্যান্য স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারে না। ব্রিটিশ শাসন কালে ভারতবর্ষে ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয়রা ব্যক্তি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

প্রশ্ন ১১। আইনের সঙ্গে স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো?

অথবা,

“আইন স্বাধীনতার শর্ত।” ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ আইন ও স্বাধীনতাকে পরস্পর বিরোধী মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। মানুষের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার জন্য আইন একান্ত আবশ্যক। আইন স্বাধীনতার উপর ন্যায় সঙ্গত বাধা–নিষেধ আরোপ করলেই সকলের স্বাধীনতা সমভাবে সুরক্ষিত হবে। সেই কারণেই আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। 

আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছেঃ

(ক) আইন প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতাকে অন্যের হস্তক্ষেপ হতে সুরক্ষা প্রদান করে। রাষ্ট্র অবৈধভাবে স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপকারী ব্যক্তিদের আইন অনুসারে বিচার করে তাদের শাস্তিবিধান করে। এইভাবে আইন নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সহায়তা করে।

(খ) আইন সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে যেখানে নাগরিকগণ তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। রাষ্ট্র নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সহায়ক পরিবেশ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি করে। এইভাবে আইন প্রকৃত স্বাধীনতা উপভোগ করার পথ সুগম করে।

আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে বিরোধ থাকলেও আইন নাগরিককে তার স্বাধীনতা উপভোগ করতে সহায়তা করে। সুতরাং আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। 

প্রশ্ন ১২। গণতন্ত্রে বাক্ স্বাধীনতার গুরুত্বের বিষয়ে ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষাই উদারনীতিবাদের মূলকথা। বাক্ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যক্তি স্বাধীনতার উদাহরণ। এই স্বাধীনতা ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের বাক্ স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। বাক্ স্বাধীনতা না থাকলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করতে সক্ষম হয় না। যে কোনো শক্তিশালী সরকার গঠনের জন্য সুষ্ঠু জনমত গঠন করা আবশ্যক এবং এই জনমত গঠনের জন্য জনগণের বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা একান্ত আবশ্যক। সুতরাং গণতন্ত্রের সাফল্যের মূল শর্ত হল জনগণের বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা।

প্রশ্ন ১৩। সনাতনী উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কে আলোচনা করো?

উত্তরঃ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষা উদারনীতিবাদের মূলকথা। চিন্তা, মতপ্রকাশ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, বিবেকবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার স্বাধীনতা, ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা, বৃত্তি বা জীবিকা অর্জনের স্বাধীনতা, চলাফেরা করা ও সংঘবদ্ধ হওয়ার স্বাধীনতা ইত্যাদি ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না।

ভারতীয় সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা পরিস্ফুট হয়েছে। এটি শতাব্দি ব্যাপী ক্রমাগত বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ফসল। ভারতীয় সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যা ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায় (Part III) ভারতীয় জনগণের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অনুমোদন করেছে। 

প্রশ্ন ১৪। আধুনিক উদারনীতিবাদের মৌল বিষয়গুলো উল্লেখ করো?

উত্তরঃ আধুনিক উদারনীতিবাদের মৌল বিষয়গুলো হলোঃ

(ক) স্বাধীনতার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান।

(খ) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

(গ) শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ও সমাজের পরিবর্তন।

(ঘ) ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার।

(ঙ) জনগণের সার্বভৌমত্ব।

(চ) প্রতিযোগিতামূলক দলীয় ব্যবস্থা।

(ছ) রাষ্ট্র ও সমাজের সুষ্ঠুভাবে পৃথকীকরণ।

(জ) প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার।

(ঝ) সামগ্রিকতাবাদের বিরোধিতা।

প্রশ্ন ১৫। আধুনিক উদারনীতিবাদ সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?

উত্তরঃ বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশক থেকে উদারনীতিবাদ পরিমার্জিত রূপ ধারণ করে। আধুনিক উদারনীতিবাদগণ স্বাধীনতা, মানবিকতা, ব্যক্তিবর্গের আর্থ–সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। আধুনিক উদারবাদের মতানুযায়ী রাষ্ট্রকেই মানুষের অনাহার, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অজ্ঞতা, রোগ, ব্যাধি প্রভৃতির বিরুদ্ধে সক্রিয় ও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বিশ শতাব্দিতে উদারনীতিবাদ কল্যাণকামী রাষ্ট্রের তত্ত্ব প্রচার করেছে। সাম্প্রতিকালে উদারনীতিবাদের প্রবক্তা রবার্ট ডাল (Robert Dahl) এবং সুম্পিটার (Sehumpeter) মনে করেন কেবলমাত্র ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে উদারনীতিবাদের গুরুত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব নয়। তাঁরা ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা আরোপের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংস্কারমূলক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের উপরও জোর দিয়েছেন।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিভিন্ন প্রকার স্বাধীনতার আলোচনা করো?

উত্তরঃ স্বাধীনতার বিভিন্ন প্রকারসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) প্রাকৃতিক স্বাধীনতাঃ মানুষের অবাধে কার্য করার ক্ষমতাকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলে। প্রকৃতির রাজ্যে প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে মানুষ যে স্বাধীনতা উপভোগ করত তাকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলা হত। প্রকৃতির রাজ্যে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কোন কর্তৃপক্ষ ছিল না বলে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতারই নামান্তর ছিল।

(খ) পৌর স্বাধীনতাঃ এই স্বাধীনতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের সহায়ক। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার, ধর্মের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার প্রভৃতি হল পৌর অধিকারের উদাহরণ। প্রত্যেক রাষ্ট্রেই এই ধরনের স্বাধীনতা স্বীকৃত।

(গ) রাজনৈতিক স্বাধীনতাঃ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শাসন কার্য পরিচালনার ব্যাপারে অংশগ্রহণ করার অধিকারকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। ভোটদানের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার প্রভৃতি রাজনৈতিক স্বাধীনতার উদাহরণ। 

(ঘ) অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত মানুষ আত্মনির্ভরশীল। হতে পারে না এবং আত্মনির্ভরশীল না হলে মানুষ অন্যান্য স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারে না। জীবিকা অর্জনের অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার প্রভৃতিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়।

(৫) জাতীয় স্বাধীনতাঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা হলে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব। জাতীয় স্বাধীনতার অর্থ হল বহিঃরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করার অধিকার। এ ধরনের স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো জাতিই পৌরস্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রভৃতি উপভোগ করতে পারে না। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষে ব্যক্তি–স্বাধীনতা ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয়রা পুনরায় ব্যক্তি স্বাধীনতা লাভ করে। 

প্রশ্ন ২। স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য কতকগুলো রক্ষা কবচের উল্লেখ করো?

অথবা,

স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য বর্তমান বিভিন্ন উপায় সমূহ আলোচনা করো?

উত্তরঃ সকল নাগরিক যাতে সমতার ভিত্তিতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বিনা বাধায় উপভোগ করতে পারে, সেজন্য রাষ্ট্রের হাতে যথেষ্ট রক্ষা কবচ থাকা প্রয়োজন। 

স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন উপায়সমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) লিপিবদ্ধ সংবিধানঃ লিখিত সংবিধান নাগরিকের মৌলিক স্বাধীনতাসমূহ সুরক্ষা করে। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়।

(খ) গণতান্ত্রিক সরকারঃ গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষা করে। জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা দরকার। গণতান্ত্রি ক ব্যবস্থায় সকল নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।

(গ) আইনের সুশাসনঃ স্বাধীনতা রক্ষার একটি প্রধান রক্ষা কবচ হল আইনের শাসন। আইনের চক্ষে সকলেই সমান। সকল ব্যক্তির জন্য একই আইন প্রযোজ্য।

(ঘ) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থাঃ জনগণের সকল প্রকার স্বার্থ রক্ষার্থে স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা একান্ত আবশ্যক। জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বিচারকগণের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা একান্ত আবশ্যক।

(ঙ) ক্ষমতার পৃথকীকরণঃ ক্ষমতার পৃথকীকরণনীতি জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার একটি অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ। জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলী পৃথক হওয়া প্রয়োজন।

স্বাধীনতা সুরক্ষার এই উপায়সমূহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের স্বাধীনতা উপভোগ করার সুনিশ্চয়তা প্রদান করে।

প্রশ্ন ৩। নৈতিবাচক ও ইতিবাচক স্বাধীনতার ধারণা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো?

অথবা,

স্বাধীনতার সাকারাত্মক এবং নাকারাত্মক ধারণার মধ্যে পার্থক্যসমূহ আলোচনা করো?

উত্তরঃ নেতিবাচক অর্থে স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রণহীনতাকে বোঝায়। স্বাধীনতা বা Liberty শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Liber’ হতে উদ্ভূত হয়েছে। Liber শব্দের অর্থ হল ‘স্বাধীন’ বা ‘মুক্ত’। তাই নিজ ইচ্ছানুসারে যে কোন কিছু করা বা উপভোগ করাকে স্বাধীনতা বলে। যখন এই ‘কোন কিছু করা বা উপভোগ করা’-র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণবিহীন হয় তখন এরূপ স্বাধীনতাকে নেতিবাচক স্বাধীনতা (Negative Freedom) বলি। জন লোক, অ্যাডাম স্মিথ, বেন্থাম এবং জন স্টুয়ার্ট মিল নেতিবাচক স্বাধীনতা তত্ত্বের প্রধান সমর্থক ছিলেন। আর ইতিবাচক স্বাধীনতা হল ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে সুযোগ–সুবিধার বিস্তৃতি। এই স্বাধীনতার মানে হল অবরোধ থাকা স্বাধীনতা। সকল ব্যক্তির স্বাধীনতা উপভোগের স্বার্থে স্বাধীনতার কিছু সমর্থনযোগ্য অবরোধ বা নিয়ন্ত্রণ থাকা একান্ত আবশ্যক। অধ্যাপক লাস্কির মতে “স্বাধীনতার অর্থ হল প্রতিটি ব্যক্তি যাতে আত্মবিকাশের সুযোগ পায় এরূপ পরিবেশ রক্ষা করা। স্বাধীনতা অধিকার দ্বারা সৃষ্ট হয়।” তাই ইতিবাচক অর্থে স্বাধীনতা বলতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সুযোগ–সুবিধাকে বোঝায়।

নেতিবাচক স্বাধীনতা হল বাহ্যিক অবরোধের অনুপস্থিতি হিসেবে স্বাধীনতা এবং ইতিবাচক স্বাধীনতা হল ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে সুযোগের বিস্তৃতি হিসেবে স্বাধীনতা। নেতিবাচক স্বাধীনতা চূড়ান্ত স্বাধীনতাকে অনুমোদন করে। কিন্তু ইতিবাচক স্বাধীনতা চূড়ান্ত স্বাধীনতাকে অনুমোদন করে না। নেতিবাচক স্বাধীনতা রাষ্ট্রকে একটি প্রয়োজনীয় অথচ ক্ষতিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে। আর ইতিবাচক স্বাধীনতা রাষ্ট্রকে একটি সদর্থক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করে। নেতিবাচক স্বাধীনতা মুক্ত প্রতিযোগিতার অনুমোদন করে এবং ইতিবাচক স্বাধীনতা কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অনুমোদন করে। নেতিবাচক স্বাধীনতা তত্ত্বের সমর্থকদের মতে স্বাধীনতা অবরোধ মুক্ত হতে হবে। কিন্তু ইতিবাচক স্বাধীনতার প্রবক্তাগণের মতে স্বাধীনতায় সমর্থনযোগ্য অবরোধ থাকা প্রয়োজন। টি. এইচ. গ্রীন এবং হ্যারল্ড ল্যাস্তি ইতিবাচক স্বাধীনতার পক্ষে মত পোষণ করেছেন।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ? ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জাতির স্বাধীনতার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কি?

উত্তরঃ সাধারণ অর্থে ‘স্বাধীনতা’ হল নিজ ইচ্ছানুযায়ী কোন কিছু করার অধিকার। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার অর্থ এরূপ নয়। স্বাধীনতার দুইটি দিক আছে। একটি হল বাহ্যিক বাধা বা অবরোধের অনুপস্থিতি এবং অপরটি হল জনগণের প্রতিভা বিকাশের শর্তের অস্তিত্ব। সুতরাং স্বাধীনতা হল এমন পরিস্থিতি যেখানে সমাজের সকল সদস্যগণ ন্যূনতম সামাজিক বাধা–বিপত্তির মধ্য দিয়ে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।

ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জাতির স্বাধীনতাঃ ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জাতির স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষার্থে জাতির স্বাধীনতা একান্ত আবশ্যক। জাতি স্বাধীন না হলে নাগরিকগণ ব্যক্তি–স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে না। দেশ পরাধীন হলে দেশের জনগণ তাদের সকল প্রকার স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে না। মায়ান্মারের গৃহবন্দী নেত্রী আং–সাং–সু–কী বা দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন মেণ্ডেলা দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। কারণ দেশ স্বাধীন হলে দেশের জনগণ, ব্যক্তি স্বাধীনতা উপভোগ করতে সক্ষম হবে। ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয় জনগণের ব্যক্তি–স্বাধীনতার উপর নানাপ্রকার নিয়ন্ত্রণ ও বাধা নিষেধ ছিল। ভারতবাসীর স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে ভারতীয় নেতৃবর্গ নানাপ্রকার সংগ্রামে লিপ্ত হন। কারণ তারা জানতেন যে জাতির স্বাধীনতা ব্যতীত ব্যক্তির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। 

প্রশ্ন ২। নেতিবাচক ও ইতিবাচক স্বাধীনতার ধারণার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ স্বাধীনতার অর্থ আলোচনাকালে আমরা স্বাধীনতার দুটি দিক সম্পর্কে ধারণা পাই। এ দুটি দিক হল – নেতিবাচক এবং ইতিবাচক। নেতিবাচক স্বাধীনতা হল বাহ্যিক অবরোধের অনুপস্থিতি হিসেবে স্বাধীনতা এবং ইতিবাচক স্বাধীনতা হল ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে সুযোগের বিস্তৃতি হিসেবে স্বাধীনতা। 

নেতিবাচক ও ইতিবাচক স্বাধীনতারধারণার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

নেতিবাচক স্বাধীনতাইতিবাচক স্বাধীনতা
(ক) এটি চূড়ান্ত স্বাধীনতা অনুমোদন করে।(ক) এটি চূড়ান্ত স্বাধীনতার বিরোধী।
(খ) স্বাধীনতা অবরোধহীন হতে হবে।(খ) স্বাধীনতায় সমর্থনযোগ্য অবরোধ থাকতে হবে।
(গ) মুক্ত প্রতিযোগিতা অনুমোদন করে।(গ) কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অনুমোদন করে।
(ঘ) এর সমর্থকগণের মতে, রাষ্ট্রের কাজ কেবল-
(i) রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এবং
(ii) বহির্শক্তির আক্রমণ হতে দেশকে রক্ষা করা।
(ঘ) এর সমর্থকগণের মতে, জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের সর্বাধিক কার্যকলাপে জড়িত থাকা উচিত।
ঙ) এটি রাষ্ট্রকে একটি প্রয়োজনীয় অথচক্ষতিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত করে।(ঙ) এটি রাষ্ট্রকে একটি সদর্থক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করে।

প্রশ্ন ৩। সামাজিক অবরোধ বলতে কী বোঝ? স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য কোন্ প্রকারের অবরোধের প্রয়োজন আছে কি?

উত্তরঃ আমাদের সমাজে কতিপয় বাধা–নিষেধ বা অবরোধ না থাকলে আমরা এই পৃথিবীতে বাস করতে পারতাম না। আমাদের কিছু সামাজিক অবরোধের প্রয়োজন আছে, অন্যথায় সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য সমাজবন্ধ জীবনে কিছু বাধা–নিষেধ বা অবরোধ থাকে যা কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাচারী হতে প্রতিহত করে।

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সর্বদাই ব্যক্তি–স্বাধীনতার পরিপন্থি নয়। সমর্থনযোগ্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তি–স্বাধীনতা সুরক্ষার একটি অন্যতম উপায়। মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজবদ্ধ জীবনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপা মেহতা বারাণসীর বিধবাদের সামাজিক অবস্থার উপর একটি ছবি নির্মাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক মানুষের প্রতিবাদে তাকে ছবি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদের অভিমত ছিল যে এ ধরনের ছবি নির্মাণে ভারতের দুর্নাম হবে। সুতরাং স্বাধীনতা যাতে স্বেচ্ছাচারীতার রূপ না নেয় তার জন্য স্বাধীনতা উপভোগ করার ক্ষেত্রে সামাজিক অবরোধ বা সীমাবদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। 

প্রশ্ন ৪। নাগরিকের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা কী?

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষার্থে নানা ব্যবস্থা অবলম্বন করে। রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি নির্ভর করে। 

ব্যক্তিবাদী ও বহুত্ববাদীদের মতে, রাষ্ট্র ব্যক্তি–স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। রাষ্ট্র অত্যধিক সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করলে ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব হয়।

সুতরাং তাদের মতানুযায়ী নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষার্থে রাষ্ট্রের ভূমিকা নগন্য। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্র ও ব্যক্তি–স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী বলে মানতে নারাজ। তাদের মতে, রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে ব্যক্তি–স্বাধীনতা রক্ষা করে। রাষ্ট্রের প্রণীত আইনসমূহ নাগরিকের সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করে। ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপে যুক্তিসঙ্গত বাধা–নিষেধ আরোপ করে রাষ্ট্র সকলের স্বাধীনতা উপভোগের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সুতরাং রাষ্ট্র নাগরিকের স্বাধীনতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ৫। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ? তোমার মতে স্বাধীনতার উপর যুক্তিসঙ্গত বাধা–নিষেধ কী হবে? দৃষ্টান্ত দাও।

উত্তরঃ ব্যক্তির পূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা একান্ত আবশ্যক। পৌরস্বাধীনতা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত করে। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলিক হিসাবে স্বীকার করা হয়েছে। এই মৌলিক স্বাধীনতা ব্যতীত ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় না। স্বাধীনভাবে কথাবার্তা বলা, মুক্ত ও অবাধ আলোচনা করা এবং সৎ ভাবে মতামত বিনিময় এই স্বাধীনতার মূল বিষয়বস্তু। তাছাড়া যোগাযোগ, মতাদর্শের প্রচার প্রভৃতি এই স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। এটি সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, রেডিও, দূরদর্শন প্রভৃতির স্বাধীনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৯নং অনুচ্ছেদে এই স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। বিচারালয়ের ব্যাখ্যার মাধ্যমে এই স্বাধীনতার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে।

মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর যুক্তিসঙ্গত বাধা–নিষেধ থাকা একান্ত প্রয়োজন। 

আমাদের মতে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতার উপর যুক্তিসঙ্গত বাধা–নিষেধ থাকা উচিতঃ

(ক) দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকল্পে।

(খ) দেশের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। 

(গ) দেশের জনগণের স্বার্থে।

(ঘ) আদালতের সিদ্ধান্ত অবমাননার ক্ষেত্রে। 

(ঙ) দেশের সুনাম রক্ষাকল্পে ও কোনো নাগরিকের সম্মানহানির প্রতিরোধকল্পে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top