SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Question Answer, As Per New Syllabus of SEBA Provided by The Roy Library is one of the best content available on the internet as well as many other offline books. SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Notes is made for SEBA Board Bengali Medium Students. Assam SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Solutions We ensure that You can completely trust this content. SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Suggestions If you learn PDF from then you can BUY PDF Class 9 Bengali (MIL) Textbook Solutions. SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Solutions. I hope You Can learn Better Knowledge.
SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Suggestions with you. SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Notes. If you liked SEBA Class 9 Bengali Chapter 15 ভারতবর্ষ Question Answer Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
ভারতবর্ষ
খ – বিভাগ গদ্যাংশ
ক্রিয়াকলাপ-
(ক) ১। লেখক কত বৎসর বয়সে কলকাতায় এসেছিলেন ?
১। বারাে-তেরাে
২। দশ-এগারাে
৩। এগারাে বারাে
৪। নয়-দশ
উত্তরঃ ২। দশ-এগারাে।
২। বৃদ্ধ সাপখেলানাে সুরে কী পড়ছিলেন ?
১। মহাভারত
২। গীতা
৩। চণ্ডী
৪। রামায়ণ
উত্তরঃ ৪। রামায়ণ।
৩। বৃদ্ধের ঠাকুরদা কোথায় রামায়ণ’ গ্রন্থটি কনেছিলেন ?
১। তালতলায়
২। বটতলায়
৩। আমতলায়
৪। ৰেলতলায়
উত্তরঃ ২। বটতলায়।
৪। কত বছর পূর্বে লেখক কলকাতায় এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ?
১। পনেরাে বছর
২। কুড়ি বছর
৩। পঁচিশ বছর
৪। তিরিশ বছর
উত্তরঃ ৩। পঁচিশ বছর।
(খ) শূন্যস্থান পূরণ করাে।
১। আমি কিন্তু স্তম্ভিত হয়ে গেলুম …………………দৃশ্য দেখে।
উত্তরঃ আমি কিন্তু স্তম্ভিত হয়ে গেলুম ভিতরকার দৃশ্য দেখে।
২। বৃদ্ধ গদিতে বসে বিপুলকায় একটা বই নিয়ে …………….সুরে কী পড়তাে।
উত্তরঃ বৃদ্ধ গদিতে বসে বিপুলকায় একটা বই নিয়ে সাপখেলানাে সুরে কী পড়তাে।
৩। নাকের উপর মস্ত ………………………..চশমা।
উত্তরঃ নাকের উপর মস্ত চাঁদির চশমা।
৪। আমার ঠাকুরদাদা ……………………….এটি কিনেছিলেন।
উত্তরঃ আমার ঠাকুরদাদা বটতলায় এটি কিনেছিলেন।
৫। ধীর গম্ভীর দৃষ্টিতে আমায় ………………………… একবার ভালাে করে দেখে নিল।
উত্তরঃ ধীর গম্ভীর দৃষ্টিতে আমায় আপাদমস্তক একবার ভালাে করে দেখে নিল।
(গ) শুদ্ধ-অশুদ্ধ বেছে বের করাে।
১। এই সেদিন দৈবক্রমে ঘুরতে ঘুরতে আবার সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলুম।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
২। সেতু বাঁধা হচ্ছিল তাই আমি শুনেছিলুম।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
৩। বুড়াে কী পড়ছে জানবার জন্য আমার বিশেষ কৌতুহল হল।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
৪। বৃদ্ধকে অভিবাদন করে দোকান ত্যাগ করলাম।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
৫। ঠিক পঁচিশ বছর পূর্বে আমি এই ছেলেদের সামনে আপনাকে এই বই পড়তে দেখেছি।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ঘ) বাক্য রচনা করাে।
শুনতে শুনতে, বেড়াতে বেড়াতে, মিটমিট, আপাদমস্তক, স্মিতহাস্যে, দিব্যচক্ষু, অভিবাদন, Tradition (ঐতিহ্য), অবশ্যম্ভাবী, বিপুলকায়, ক্রিয়াকাণ্ড, ঘরকন্না, দৈবক্রমে।
উত্তরঃ শুনতে শুনতে :- রামায়ণের বর্ণনা শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে গেলাম।
বেড়াতে বেড়াতে :- এই সেদিন দৈবক্রমে বেড়াতে বেড়াতে আবার সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম।
মিটমিট :- মিটমিট করে জোনাকির আলাে দেয়।
আপাদমস্তক :- সে আমার আপাদমস্তক ভালাে করে দেখাল।
স্মিতহাস্যে :- ভদ্রলােক স্মিতহাস্যে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
দিব্যচক্ষু :- মনে হল যেন আমি দিব্যচক্ষু পেয়েছি।
অভিবাদন :- বৃদ্ধকে অভিবাদন করে দোকান ত্যাগ করলাম।
Tradition (ঐতিহ্য) :- সেই Tradition সমানে চলেছে অপরিবর্তিতভাবে।
অবশ্যম্ভাবী :- আমি কালের অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের কথা ভাবছিলাম।
বিপুলকায় :- কৃত্তিবাসী রামায়ণ বিপুলকায় একটি বই।
ক্রিয়াকাণ্ড :- রামের সেতুবন্ধনের পূর্ব ক্রিয়াকাণ্ড ছেলেরা সাগ্রহে শুনতাে।
ঘরকন্না :- ভগবানের ইচ্ছায় তারা স্বামী-পুত্র নিয়ে ঘরকন্না করছে।
দৈবক্রমে :- দৈবক্রমে আজই আমি তার দেখা পেয়ে গেলাম।
(ঙ) বাক্য সংকোচন করাে-
বৃহৎ আকারের – বিপুলকায়।
যাহা অবশ্যই ঘটিবে – অবশ্যম্ভাবী।
পা হইতে মাথা পর্যন্ত – আপাদমস্তক।
ছেলে বা মেয়ের মেয়ে সন্তান – নাতনি।
জানার জন্য বিশেষ আগ্রহ – কৌতূহল।
২। প্রশ্নাবলী (ভাববিষয়ক)
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন-
(ক) ভারতবর্ষ পাঠটির লেখক কে ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষ পাঠটির লেখক এস, ওয়াজেদ আলি।
(খ) লেখক কত বছ বয়সে কলকাতায় এসেছিলেন ?
উত্তরঃ দশ এগারাে বছর বয়সে লেখক কলকাতায় এসেছিলেন।
(গ) লেখকের বাসার নিকটে কী ছিল ?
উত্তরঃ লেখকের বাসার নিকটে ছিল একটি মুদিখানার দোকান।
(ঘ) ‘Tradition’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ ঐতিহ্য।
(ঙ) মুদিখানায় বসে বৃদ্ধটি কী পড়ছিলেন ?
উত্তরঃ মুদিখানায় বসে বৃদ্ধটি একটি বিপুলাকার বই (কৃত্তিবাসী রামায়ণ) পড়ছিলেন।
(চ) লেখকের সামনে কীসের ছবি ফুটে উঠেছিল ?
উত্তরঃ লেখকের সামনে প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুঁত একটা ছবি ফুটে উঠেছিল।
(ছ) বিপুলকায় বইটি কে, কোথা থেকে ক্রয় করেছিলেন ?
উত্তরঃ বিপুলকায় বইটি বৃদ্ধের ঠাকুরদাদা কলকাতার চিৎপুর অঞ্চলের বটতলা থেকে ক্রয় করেছিলেন।
(জ) বৃদ্ধের পাঠের বিষয় কী ছিল ?
উত্তরঃ বৃদ্ধের পাঠের বিষয় ছিল- রামচন্দ্র কি করে কপিসেনার সাহায্যে সমুদ্রের উপর সেতু বেঁধে লঙ্কাদ্বীপে পৌঁছেছিলেন -তাই ছিল বৃদ্ধের পাঠের বিষয়।
(ঝ) বৃদ্ধটি কার লেখা কী বই পড়তেন ?
উত্তরঃ বৃদ্ধটি মহাকবি কৃত্তিবাসের লেখা রামায়ণ (শ্রীরাম পাঁচালী) বই পড়তেন।
৩। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।
(ক) বৃদ্ধ রামায়ণের কোন বিষয় পাঠ করতেন ? ছেলে- মেয়েদের মনে তার কী প্রতিক্রিয়া ঘটত ?
উত্তরঃ বৃদ্ধ রামায়ণের যে বিষয়টি পাঠ করতেন সেটি হল, কপিসেনার সাহায্যে রামের সেতুবন্ধন অংশ।
বৃদ্ধ যখন রামের সেতুবন্ধন অংশটি পাঠ করতেন ছেলেমেয়েরা গভীর ঔৎসুক্য সহকারে সেই পাঠ শুনত। এই উপভােগ্য কাহিনীটি শিশুমনগুলিকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তাদের চোখে-মুখে যে ভাবের প্রকাশ হয়েছিল তা হল, তারা রামায়ণের রস হৃদয়ঙ্গম করতে পারুক আর নাই পারুক অন্তত কাহিনীটি তাদের কাছে বিশেষ আমােদপূর্ণ ছিল।
(খ) লেখকের মতে পঁচিশ বছর পর কলকাতায় কী পরিবর্তন হয়েছিল ?
উত্তরঃ পঁচিশ বছর আগে যেখানে ঘর ছিল এখন সেখানে বড় বড় ম্যানসন, দু-চারটি রিক্শা আর ঘােড়ার গাড়ি যেখানে চলত সেখানে এখন বড় বড় মােটরগাড়ি যাওয়া-আসা করছে। আগে সেখানে গ্যাসের বাতি মিটমিট করে জ্বলত এখন সেখানে ইলেকট্রিক আলাে দিনের মতাে উজ্জ্বল করে রেখেছে। এইসব পরিবর্তনের কথা লেখক উল্লেখ করেছেন।
(গ) ভারতবর্ষের নিখুঁত ছবি বলতে লেখক পাঠটিতে কী বুঝিয়েছেন ?
S.L. No. | Group – A সূচীপত্র |
পাঠ – ১ | গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা |
পাঠ – ২ | খাই খাই |
পাঠ – ৩ | ধূলামন্দির |
পাঠ – ৪ | কবর |
পাঠ – ৫ | মনসামঙ্গল |
পাঠ – ৬ | প্রত্যুপকার |
পাঠ – ৭ | ছুটি |
পাঠ – ৮ | ডাইনী |
পাঠ – ৯ | পিপলান্ত্ৰি গ্ৰাম |
পাঠ – ১০ | অ্যান্টিবায়ােটিক ও পেনিসিলিনের কথা |
পাঠ – ১১ | লড়াই |
পাঠ – ১২ | আমরা |
পাঠ – ১৩ | আগামী |
পাঠ – ১৪ | আত্মকথা |
পাঠ – ১৫ | ভারতবর্ষ |
পাঠ – ১৬ | ব্যাকরণ |
পাঠ – ১৭ | রচনা |
S.L. No. | Group – B বৈচিত্রপূর্ণ আসাম |
পাঠ – ১ | আহােমগণ |
পাঠ – ২ | কাছাড়ের জনগােষ্ঠী |
পাঠ – ৩ | কারবিগণ |
পাঠ – ৪ | কোচ রাজবংশীগণ |
পাঠ – ৫ | গড়িয়া, মরিয়া ও দেশীগণ |
পাঠ – ৬ | গারােগণ |
পাঠ – ৭ | সাঁওতালগণ |
পাঠ – ৮ | চা জনগােষ্ঠী |
পাঠ – ৯ | চুটিয়াগণ |
পাঠ – ১০ | ঠেঙাল কছারিগণ |
পাঠ – ১১ | ডিমাসাগণ |
উত্তরঃ যুগ যুগ ধরে বাইরের দিকে ভারতবর্ষের উপর দিয়ে কত পরিবর্তনের লীলা সংঘটিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের লীলা ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ সামাজিক জীবনকে আঘাত করতে পারেনি। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের বিপুল তরঙ্গ য়ুরােপ থেকে উত্থিত হয়ে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। কিন্তু তা ভারতবর্ষের অন্তজীবনে প্রবেশ করতে পারেনি। ভারতবর্ষের অন্তৰ্জীবনে প্রাচীন যুগের সহজ সরল জীবনযাত্রার ঐতিহ্য শত বাধা বিপত্তিতেও অটুট আছে।
বৃদ্ধ মুদির মৃত্যুর পর তার পুত্র, অতি সহজ স্বাভাবিক নিয়মে তার স্থান অধিকার করেছে এবং আগের মতােই প্রতিদিন রামায়ণ পাঠ করে ভারতবর্ষের সামাজিক জীবনের একাংশ অক্ষুন্ন ও অব্যাহত রয়েছে। লেখকের মতে, প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুঁত ছবি এটাই।
(ঘ) লেখক কী দেখে স্তম্ভিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ লেখক তার বাসার কাছে মুদিখানাটির ভিতরকার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। পঁচিশ বছর আগের মতােই এক বৃদ্ধ গদিতে বসে মােটা একটি বই নিয়ে সাপখেলানাে সুরে কী পড়ছিল, পঁচিশ বছর আগের সেই মধ্যবয়স্ক লােকটির মতােই একটি মধ্যবয়স্ক লােক এক-একবার এসে সেই পাঠ শুনছিল আর আবশ্যক মতাে খদ্দেরদের দেখা-শুনা করছিল। ঠিক সেই আগের ছেলেটির মতাে একটি ছেলে খালি গায়ে বুড়াের দিকে চেয়ে বসেছিল। তার পাশে আগেকার মেয়েদের মতাে দেখতে দুটি মেয়ে বসেছিল।
(ঙ) ভারতবর্ষ রচনাটির মূলভাব কী ? মুদিখানা কীসের প্রতীক ?
উত্তরঃ পাঠের জ্ঞাতব্য বিষয়’ দেখ ।
মুদিখানা প্রকৃত ভারতবর্ষের প্রতীক যেখানে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে, তার কোথাও পরিবর্তন ঘটেনি।
(চ) মুদিখানাটির একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ মুদিখানার দৃশ্যটি অতি সাধারণ, চাদির চশমা পরা এক বৃদ্ধ সাপখেলানাে সুরে রামায়ণ-পাঠ করতেন। তার পাশে লেখকের সমবয়সী একটি বালক ও দুটি বালিকা সেই রামায়ণ-পাঠ শুনত এবং একজন মধ্যবয়সী লােক মুদিখানার বিক্রিবাট্টা চালানাের মাঝে মাঝে রামায়ণ শুনে যেতেন। গভীর ঔৎসুক্যের সঙ্গে তারা রামায়ণ-পাঠ শুনত। পরবর্তীকালেও মুদিখানাটির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তখনও মুদিখানায় ইলেকট্রিক বাতি জ্বলত না। কেরােসিনের বাতিই আগেকার মতাে জ্বলত।
(ছ) রামচন্দ্রের সেতুবন্ধনের কাহিনিটি লেখাে।
উত্তরঃ অযােধ্যার রাজা রামচন্দ্র বনবাসকালে জটায়ু পাখির কাছে সংবাদ পেলেন লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কাদ্বীপে রেখে দিয়েছেন লঙ্কায় যেতে হলে সমুদ্র পার হতে হবে। শ্রীরামচন্দ্রের নির্দেশে কিষ্কিন্ধ্যার সুগ্রীবের অধীন বানর বা কপিসেনাদের সাহায্যে রামেশ্বরে সেতুবন্ধন করা হয়েছিল। পাথর ফেলে ফেলে সমুদ্রের ওপর দিয়ে পথ তৈরি করা হয়েছিল। সেই সেতু না থাকলে সাগরের অপর তীরে লঙ্কায় যাওয়া যেত না। শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে বরুণ দেবতা সেই সেতুবন্ধনে বাধা দেননি। “মেঘনাদবধ কাব্য’-এ সেই কারণে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাশয় বরুণ দেবতা তথা সমুদ্রকে ধিক্কর জানিয়েছিলেন-
হা ধিক্, ওহে জলধরপতি এই কী সাজে তােমারে
অলঙঘ্য অজেয় তুমি!”
যাইহােক, শ্রীরামচন্দ্র বানরদের অন্যতম সেনাপতি নলকে বললেন সাগরের ওপর সেতুবন্ধনে নেতৃত্ব দিতে। তার আগে তপস্যা করেছিলেন রামচন্দ্র তিনদিন উপবাসে থেকে। তৎপরে ক্রোধান্বিত রামচন্দ্র ঠিক করলেন-
মারিব সাগরে আজি কার সাধ্য রাখে ?
…………………………………………..
সাগর শুষিব আজি অগ্নিজাল বাণে।।
শ্রীরামের অগ্নিবাণে সমুদ্র শুকিয়ে গেল। “পুড়িয়া মরিল মৎস, কুম্ভীর, মকর।” তখন ভয়ে প্রকম্পিত সাগর শ্রীরামচরণে আত্মসমর্পণ করে আড়ে দশ যােজন দশগুণ দীর্ঘে জলপ্রবাহ বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। নলের স্পর্শেই একমাত্র সাগরে পাথর ভাসানাে সম্ভব হল। কারণ “গাছ পাথর জোড়া লাগে পরশে তাহার।” অতঃপর ভগবান নারায়ণের নির্দেশে নল অন্যান্য বানরগণের সহযােগিতায় গাছ পাথর দিয়ে দশযােজন সাগর বন্ধন করে বানর সৈন্যদের লঙ্কাযাত্রার জন্য তৈরি করে ফেলেন। এইটিই কৃত্তিবাস রামায়ণে লিখিত রামের সেতুবন্ধন কাহিনী।
এই সেতুবন্ধন অতীত ও বর্তমান কিংবা বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন। ভারতবর্ষে যুগ যুগ ধরে এই সেতুবন্ধন কাজ চলে আসছে।
৬। রচনাধর্মী উত্তর দেখাে।
(ক) “সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।” কোন্ প্রসঙ্গে কে এই উক্তি করেছেন? ট্র্যাডিশন কীভাবে সমানে চলছে বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ আলােচ্যাংশে লেখক এস, ওয়াজেদ আলি পঁচিশ বছর আগেকার দেখা একটি দৃশ্যের সঙ্গে বর্তমানের আশ্চর্য সাদৃশ্য দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ভারতবর্ষের সেই চিরন্তন সমাজচিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক এই উক্তিটি করেছেন।
পচিশ বছর পূর্বে লেখক যখন দশ বৎসর বয়সের বালক ছিলেন, সেই সময় তিনি একদা কলকাতায় এসেছিলেন। বাসার কাছে একটি মুদির দোকান ছিল। এক বৃদ্ধ চোখে চাদির চশমার পরে সাপখেলানাে সুরে মহাকায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাঠ করতেন। এক মধ্যবয়সী ভদ্রলােক খদ্দের দেখাশােনা করার ফাকে ফাকে রামায়ণ পাঠ শুনে যেতেন। এক বালক ও দুটি বালিকা বৃদ্ধের দুপাশে বসে রামায়ণের ‘রামচন্দ্রের সেতুবন্ধন’ কাহিনী সাগ্রহে শুনত। সেই স্মৃতি তার মনে বিশেষ উজ্জ্বল হয়েছিল।
Tradition কথাটির অর্থ ঐতিহ্য। বংশানুক্রমিকভাবে প্রাপ্ত আচার-আচরণ যা অপরিবর্তনীয়। এই অপরিবর্তনীয় রূপটিই হচ্ছে সনাতন ভারতের শাশ্বত রূপ। যুগ যুগান্তর ধরে ভারতবর্ষের কতই না পরিবর্তন হয়েছে। কত রাজবংশের উত্থান- পতন ঘটেছে। কত বিদেশী শক্তির আবির্ভাৰ ভারতবর্ষের সভ্যতা-সংস্কৃতির বহির্দেশকে আলােড়িত করেছে। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির অন্তরতম স্থানে তার কোনাে দাগ পড়েনি। সেখানে ধর্মমুখীন সংস্কৃতির যে রূপ, রামায়ণ মহাভারতের ফল্পধারা ভারতবর্ষের অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার মধ্যে পরিব্যাপ্ত, সেই ভাবরূপই এই মুদির দোকানের চিত্রটির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। যুগ যুগান্তর ধরে ভারতবর্ষের কতই না পরিবর্তন হয়েছে। কত রাজবংশের উত্থান-পতন ঘটেছে।
অতঃপর দীর্ঘ পঁচিশ বছরের ব্যবধানে নানা পরিবর্তনের স্রোতে কলকাতা নগরীর রূপ যেমন পরিবর্তিত হয়েছিল তেমনি লেখকের জীবনেও পরিবর্তন বড় কম হয়নি। তথাপি লেখক যখন পঁচিশ বৎসর পরে সেই দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি প্রবলভাবে বিস্ময়ান্বিত হলেন। দেখলেন পূর্বেকার মতো পাঠরত বৃদ্ধ, কর্মরত মধ্যবয়সী রামায়ণ পাঠে অনুসন্ধিৎসু, শ্রোতা একটি বালক ও দুটি বালিকা। এমনকি পূর্বেকার মতাে রামায়ণের ‘রামের সেতুবন্ধন’ অংশও পাঠ করা হচ্ছে।
লেখকের মনে হল সুদীর্ঘকালের ব্যবধানে আগের দৃশ্যটি পুনরায় অভিনীত হচ্ছে কেমন করে! মুদিখানার বৃদ্ধকে বিস্ময়াপন্ন লেখক প্রশ্ন করে বুঝলেন বংশ- পরম্পরায় ঘটনাটির অনুবর্তন হচ্ছে।
তখন লেখকের মনে হল ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের বা Tradition সমানে চলেছে। বহিরঙ্গের বিবর্তনেও ঐতিহ্যের ধারা বহমান রয়েছে। এখানে সেই একই জীবনবােধ, একই ধর্মানুষ্ঠান, একই ঐতিহ্য বংশপরম্পরায় একভাবে প্রবাহিত হয়ে চলেছে।
(খ) “বুড়াে কী পড়ছে তা জানবার জন্য আমার কৌতূহল হল।”- এখানে কার কৌতুহল হল ? কৌতুহলের কারণ বিশদভাবে আলােচনা কর।
উত্তরঃ এখানে লেখক এস. ওয়াজেদ আলির কৌতূহল হল।
লেখক এস. ওয়াজেদ আলি ১০/১১ বছর বয়সে কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতায় তাদের বাসাবাড়ির সামনে একটি মুদিখানা ছিল। সেই মুদিখানায় এক বৃদ্ধ মাথায় মস্ত টাক, নাকে চাদির চশমা নিয়ে গম্ভীরতার সঙ্গে সাপখেলানাে সুরে রামায়ণ পাঠ করতেন। লেখক ছিলেন মুসলমান। এই সাপখেলানাে সুরের সঙ্গে হিন্দু-ছেলেমেয়েরা যেমন জড়িত মুসলমান ছেলেমেয়েরা ততটা নয়। তাই লেখক বুঝতে পারতেন না আসলে কী পড়া হচ্ছে। তার উপর লেখক দেখতেন একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে যেভাবে ঔৎসুক্যের সঙ্গে রামায়ণ পাঠ শুনত এবং তাতে তাদের চোখে মুখে যেরূপ ভাব প্রকাশিত হত তা দেখে মনে হচ্ছিল কাহিনীটি বিশেষ আনন্দদায়ক ও আমােদপূর্ণ। তারই বয়সী ছেলেমেয়েরা বিষয়টি থেকে আনন্দ পাচ্ছে আর সে সেখানে বঞ্চিত এটা লেখক ছােটোবেলায় বেশিক্ষণ কৌতূহল ধরে রাখতে পারেননি। তাই তার কৌতূহল হয়েছিল বুড়াে কী পড়ছে তা জানার জন্য। শিশু বয়সে অসীম কৌতূহল থাকে। এই বয়সের টানই লেখকের কৌতূহলকে বেশি মাত্রায় বর্ধিত করেছিল। এই কৌতূহলের বশবতী হয়ে লেখক সামনে গিয়ে শুনতে পায় কাহিনীটি রামচন্দ্রের কপিসেনার সাহায্যে সেতুবন্ধনের। ধর্ম হিসাবে না হলেও, ঘটনাটি গল্প হিসাবে খুবই আনন্দদায়ক ছিল।
(গ) পচিশ বছর পূর্বে ও পরে লেখকের দেখা কলকাতার বিস্তৃত বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ পঁচিশ বছর পূর্বের অভিজ্ঞতাটি প্রথমে বর্ণিত হচ্ছে। এগারাে বছর বয়সে লেখক একবার কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার বাসার খুব কাছেই একটি মুদিখানা ছিল। সেখানে রামায়ণ পাঠ ও বিক্রি-বাট্টা একসাথেই চলত। কলকাতার তখন প্রাচীনরূপ ; সেই সঙ্গে দোকানটিরও। চিরাচরিত গদি পাতা। কেরােসিনের বাতি জ্বলত।
পঁচিশ বছর পরের দীর্ঘ পরিবর্তনের স্রোতে লেখক যেমন ভেসে গেছেন তেমনি কলকাতা নগরীরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর মাঝে কলকাতার যে গলিতে দু’একটা রিক্সা বা ঘােড়ার গাড়ি চলত, সেখানে অবিরাম মােটর গাড়ী যাতায়াত করছে। অন্যদিকে যেখানে ছােট ছােট ঘর ছিল, সেখানে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। আগে মিটমিটে গ্যাসের আলো বা বাতি জ্বলত; সেখানে ইলেকট্রিক আলাে চতুর্দিক দিনের আলাের মতাে ঝলমল করে তুলেছে। কলকাতা নগরী আগের চেয়ে অনেক সুন্দর ও নবীন হয়ে উঠেছে যেন কল্লোলিনী তিলােত্তমা।
(ঘ) “প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুঁত একটি ছবি আমার সামনে ফুটে উঠল” -প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুঁত ছবিটি কী ? এর যথাযথ বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ লেখক দশ এগারাে বছর বয়সে একবার কলকাতায় এসেছিলেন। তাদের বাসার খুব কাছেই একটি মুদিখানার দোকান ছিল। সেই মুদিখানায় এক বৃদ্ধ গদিতে বসে সাপ-খেলানাে সুরে বিপুলকায় একখানি গ্রন্থ পাঠ করতেন। বৃদ্ধের মাথায় টাক ছিল, চারপাশে ধবধবে সাদা চুল, নাকের ওপর মস্ত চাদির চশমা, দাড়ি গোঁফশূন্য মুখ। একটি যুবক খদ্দেরদের দেখাশােনা করত এবং মাঝে মাঝে বৃদ্ধের কাছে এসে পাঠ শুনত। বৃদ্ধের কাছে বসে থাকত লেখকের সমবয়সী একটি বালক এবং দুটি বালিকা। বৃদ্ধ যে কী পাঠ করেন তা জানবার কৌতূহলে লেখক একদিন সেই স্থানে দাঁড়িয়ে পাঠ শুনতে থাকেন। রামচন্দ্র কিভাবে বানর সৈন্য নিয়ে সেতুবন্ধন করে লংকাদ্বীপে পৌছেছিলেন তাই ছিল পাঠের বিষয়বস্তু। সেই পাঠ শুনতে শুনতে ঐ চারজন শ্রোতার সঙ্গে লেখকও তন্ময় হয়ে যেতেন। রামচন্দ্র সেতু পার হয়েছিলেন কিনা এবং পার হয়ে বা কি করেছিলেন তখনকার মতাে তা আর লেখকের জানা হয়নি।
এরপর সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর চলে গেছে। পরিবর্তনের স্রোতে লেখক যেমন ভেসে চলেছেন তেমনি কলকাতা নগরীরও পরিবর্তন বড় একটা কম হয়নি। এর মাঝে সেই ক্ষুদ্র ঘটনা কখন যে বিস্মৃতির অন্তরালবর্তী হয়ে গেছে তা স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ করা যায়নি। কলকাতার যে গলিতে দু’একটা রিক্সা বা ঘােড়ার গাড়ি চলত সেখানে অবিরাম মােটর গাড়ি যাতায়াত করছে। অন্য দিকে যেখানে ছােট ছােট ঘর ছিল সেখানে আজ বড় বড় অট্টালিকা উঠেছে। তারই মাঝখানে পঁচিশ বছর আগেকার দেখা সেই ছােট গলিতে লেখক দৈবক্রমে এসে সেই ছোট্ট মুদিখানাটি দেখতে পেলেন। মুদিখানা অপরিবর্তিত। এ-দৃশ্যে লেখক বিস্মিত হলেন। বিস্মিত হলেন আরও যখন তিনি দেখলেন যে পঁচিশ বৎসর আগে যে বৃদ্ধটিকে দেখেছিলেন, ঠিক তারই মতাে এক বৃদ্ধ গদির উপর বসে মােটা একটি বই নিয়ে সাপখেলানাে সুরে কি যেন পড়ছেন। পঁচিশ বছর আগের সেই মধ্যবয়স্ক লােকটির মতাে একটি মধ্যবয়স্ক লােক এক-একবার এসে সেই পাঠ শুনছিলেন আর দরকার মতাে খদ্দেরদের দেখাশুনা করছিল। ঠিক সেই আগের ছেলেটির মতাে একটি ছেলে খালি গায়ে বৃদ্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে বসেছিল। তার পাশে ছিল আগেকার মেয়েদের মতাে দেখতে দুটি মেয়ে। শুধু তাই নয়, পাঠের প্রসঙ্গটি পর্যন্ত সেই সেতুবন্ধনের কথা।
লেখক নিতান্ত কৌতূহলী হয়ে অবশেষে বৃদ্ধের কাছে সকল বৃত্তান্ত বলে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানালেন যে পঁচিশ বছর পূর্বের বৃদ্ধ তারই পিতৃদেব এবং সেদিন যে মধ্যবয়স্ককে তিনি দেখেছিলেন সেই ব্যক্তিই আজকের বৃদ্ধ। যে বালকটি বসে পাঠ শুনত সেই আজ মধ্যবয়স্ক পরিণত হয়েছে এবং তারই পুত্র ও দুই কন্যা আজ রামায়ণ পাঠ শুনছে। সেদিনকার মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির কন্যা দুটি আজ ঘরণী হয়েছে। এই পারিবারিক ইতিহাস শুনে লেখক জিজ্ঞাসা করলেন হস্তষ্কৃত গ্রন্থটি কবেকার ? বৃদ্ধ উত্তর দিলেন যে ইহা কৃত্তিবাসের রামায়ণ। তারই পিতামহ বটতলা থেকে এই গ্রন্থটি ক্রয় করেছিলেন। বংশ পরম্পরায় এটিই পাঠ হয়ে আসছে। এটা যখন কেনা করা হয়েছিল তখন এই বৃদ্ধের জন্ম হয়নি।
লেখক সেই স্থান ত্যাগ করলেন কিন্তু মনের মধ্যে আর এক জগতের উজ্জ্বল চিত্র তিনি দেখতে পেলেন তা প্রাচীন ভারতবর্যের সনাতন প্রথার এক প্রতিচ্ছবি। রামায়ণ যেন এই সমাজে ব্যবস্থার বন্ধন-সূত্র। এই কাব্যে নীতির দিক থেকেও সমাজের এক কল্যাণময় রূপ এখানে ধরা দিয়েছে। এই প্রকৃত ভারতবর্ষের নিখুঁত একটি রূপ লেখকের মনশ্চক্ষুর সামনে উদঘাটিত হয়ে লেখকের মনে এক পরম বিস্ময় পরিপূর্ণ করল।
লেখক বটতলার রামায়ণকে একটি প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তা যেন আমাদের ভারতবর্ষের চিরকালীন ও সর্বজনীন আদর্শের প্রতীক।
(ঙ) ভারতবর্ষ পাঠটি অনুসরণে বৃদ্ধটির পরিচয় দাও এবং তার রামায়ণ পাঠের দৃশ্যটি বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ পঁচিশ বছর আগে যখন লেখকের বয়স মাত্র দশ এগারাে বছর ছিল সেই সময়ে তিনি একবার কলকাতায় এসেছিলেন। তার বাসার কাছে এক মুদিখানায় সাপখেলানাে সুরে এক বৃদ্ধ শ্রীরামচন্দ্রের সেতুবন্ধনের কাহিনী পাঠ করতেন। একটি মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি দোকানের খদ্দেরদের প্রয়ােজন মেটাতেন এবং একটি বালক ও দুটি বালিকা মনোেযােগের সঙ্গে সেই পাঠ শ্রবণ করত। ঐ মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিও অবসর পেলেই তা শ্রবণ করতেন।
এর সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর পরের কথা লেখক বর্ণনা করেছেন। সময়ের স্রোতে নানা পরিবর্তন ঘটে গেছে লেখকের জীবনে এবং কলকাতা মহানগরীতেও। লেখক শৈশবের ঐ স্মৃতিটিকে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মৃত হয়েছিলেন। কিন্তু পঁচিশ বছর পর হঠাৎ ঐ রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে লেখক সেই মুদিখানাটিকে অপরিবর্তিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। মুদিখানার অভ্যন্তরে সেই পঁচিশ বছর আগেকার একই দৃশ্য দেখলেন। রামায়ণ পাঠরত বৃদ্ধ, কর্মরত মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি, একটি বালক এবং দুটি বালিকা, এমনকি সেতুবন্ধন প্রসঙ্গটি পর্যন্ত যখন লেখক শ্রবণ করলেন তখন নিতান্তই বিস্মিত এবং কৌতূহলী হয়ে বৃদ্ধকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। বৃদ্ধ বললেন পচিশ বছর আগে লেখক তার পিতৃদেবকে রামায়ণের এই বিশেষ অংশ পাঠ করতে দেখেছিলেন। তখনকার মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিই আজকের এই বৃদ্ধ। সেদিনকার পাঠশ্রবণরত বালক আজকের মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি এবং তারই এক পুত্র ও দুই কন্যা আজকের এই বৃদ্ধের পাশে বসে আছে। এই বৃত্তান্ত শুনে লেখক জিজ্ঞাসা করলেন যে, এই গ্রন্থটি কবেকার? বৃদ্ধ বললেন, এটি কৃত্তিবাসী রামায়ণ। বৃদ্ধের ঠাকুরদা-এটি বটতলা থেকে কিনেছিলেন, তখন আজকের এই বৃদ্ধের জন্ম হয়নি।
লেখক এস. ওয়াজেদ আলি এই ঘটনাটির মাধ্যমে ধর্মনির্ভর ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা নূতনভাবে অনুভব করেছেন। শৈশব জীবন, কর্মময় যৌবনের জগৎ এবং বৃদ্ধকালের জীবনচর্যা লেখক একই সূত্রে বেঁধে এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের কাছে উপস্থিত করেছেন। পিতার দায়িত্ব এবং কর্তব্য পুত্রের উপর এবং পরবর্তীকালে ঐ নিয়মেই যে উত্তরাধিকার চলে আসছে তাই লেখক দেখিয়েছেন। রামায়ণের স্নেহ-প্রীতি এবং কর্মময় ভালবাসা জগতের শান্তির বিশ্রামের আনন্দময় জীবনের এক পরিপূর্ণ সার্থক জীবনযাত্রার নিখুঁত ছবির মাধ্যমে সেই পুরাতন জীবনধারার স্বরূঢ়ি লেখকের দৃষ্টিতে আবিষ্কৃত হয়েছে।
৭। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখা।
(ক) “এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এরা কি আর বাড়েনি? আর আপনার মধ্যেও কি কোনাে পরিবর্তন হয়নি ?”
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি এস. ওয়াজেদ আলি বিরচিত ‘ভারতবর্ষ’- শীর্ষক রচনার অন্তর্গত। পঁচিশ বছর পূর্বে ও পরের মুদিখানার দৃশ্য দেখার মধ্যেকার সময়কে দীর্ঘ সময় বলা হয়েছে।
পঁচিশ বছরের ব্যবধানে গৃহসন্নিকটের একটি মুদির দোকানের অভ্যন্তরে একই রূপ দৃশ্য দেখে লেখক স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। এক বৃদ্ধ দুটি ছােট মেয়ে ও একটি ছােট ছেলেকে পাশে নিয়ে রামায়ণ পাঠ করতেন পঁচিশ বছর আগে। পঁচিশ বছর পরেও একই চিত্র। এই প্রসঙ্গেই উপরােক্ত প্রশ্ন লেখক পচিশ বছর পরে মুদির দোকানে দেখা রামায়ণ পাঠরত বৃদ্ধকে করেছিলেন।
পঁচিশ বছর পরে দেখা মুদিখানার রামায়ণ পাঠক বৃদ্ধ লেখককে জানালেন যে পঁচিশ বছর পূর্বেকার বৃদ্ধ তারই পিতদেব এবং যে, মধ্যবয়স্ককে লেখক দেখেছিলেন সেই ব্যক্তিই আজকের বৃদ্ধের পদে আসীন। যে বালকটি বসে পাঠ শুনত সে আজ মধ্যবয়স্ক হয়েছে আর তারই পুত্র ও দুই কন্যা আজ রামায়ণ পাঠ শুনছে। সেদিনকার কন্যাদ্বয় এখন ঘরণী হয়েছে।
এই পারিবারিক ইতিহাস শুনে লেখক উপরােক্ত প্রশ্ন স্তম্ভিত হয়ে করেছিলেন।
(খ) “আমি কালের অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের কথা ভাবছি”।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি এস. ওয়াজেদ আলি রচিত ‘ভারতবর্য’ শীর্ষক গল্পের অন্তর্গত।
লেখক পঁচিশ বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার বয়স দশএগারাে বছর হবে। তখন প্রাচীন কলকাতার চেহারা সত্যিই নিতান্ত সাদা-মাটা ছিল। দৈবক্রমে বেড়াতে বেড়াতে লেখক পুনরায় সেই কলকাতায় পঁচিশ বছর পরে এলেন। দেখলেন কলকাতার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি সব বদলে গেছে। আগে যেখানে ঘর ছিল, এখন সেখানে সুদৃশ্য বড় বড় ম্যানসন (Mansion) মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আগে দু’চারটে রিক্সা, ঘােড়ার গাড়িই, যে- পথ দিয়ে যেত, এখন সেখানে বড় বড় মােটর অনবরত যাওয়া-আসা করছে। আগে মিটমিট করে গ্যাসের বাতি জ্বলত; এখন ইলেকট্রিক আলাে কলকাতাকে উজ্জ্বল করে রেখেছে। তখনই লেখক কালের অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের কথা ভেবেছেন। কালের অমােঘ নিয়মে যুগে যুগে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ভৌগােলিক ধারার এইরূপ পরিবর্তন নিত্য নিয়মিত ঘটে চলেছে। নদীর স্রোতের মতই তার গতি অন্তহীন। কলকাতা শহরও এই নিয়মের বাইরে নয়।
(গ) “কোনাে মায়ামন্ত্র বলে সেই সুদূর অতীত আবার ফিরে এল নাকি ?”
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি এস. ওয়াজেদ আলি রচিত ‘ভারতবর্ষ’ নামক গদ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে একই স্থানে পূর্বেকার সমস্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে লেখকের মনে যে ভাবােদয় হয়েছিল এখানে তাই উল্লেখিত হয়েছে।
লেখক পঁচিশ বছর পূর্বে কলকাতায় এসেছিলেন। তাদের বাসার কাছে গুলির মধ্যে একটি মুদির দোকান ছিল। এক বৃদ্ধ সাপ খেলানাে সুর করে রামায়ণ পাঠ করতেন, এক যুবক খদ্দেরদের দেখাশােনা করত এবং একটি বালক ও দুটি বালিকা বৃদ্ধের দুপাশে বসে রামায়ণ পাঠ শুনত। পাঠের বিষয় রামচন্দ্রের সেতুবন্ধন। সেই স্মৃতি তার মনে বিশেষ উজ্জ্বল হয়ে আছে। দীর্ঘ পঁচিশ বৎসরের ব্যবধানে নানা পরিবর্তনের স্রোত কলকাতা নগরীর রূপ যেমন অনেকাংশে পরিবর্তন করেছে তেমনি লেখকের জীবনেও পরিবর্তন বড় কম হয়নি। তথাপি লেখক যখন পঁচিশ বৎসর পরে এই দোকানের প্রতি অত্যন্ত আকস্মিকভাবে দৃষ্টি দিলেন তখন তিনি অধিকতর বিস্ময় অনুভব না করে পারেন নি। এবারেও লেখক পূর্বেকার মতাে রামায়ণ পাঠরত বৃদ্ধ, কর্মরত যুবক, একটি বালক ও দুটি বালিকাকে শ্রোতা হিসাবে দেখে বিস্মিত হলেন। লেখক ভাবলেন সময়ের সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখানে পূর্ববৎ সবকিছু বর্তমান। তাহলে এ বুঝি কোন মায়ামন্ত্র। যার বলে অতীতের সবকিছু আবার ফিরে এসেছে।
(ঘ) “আমি কিন্তু স্তম্ভিত হয়ে গেলুম ভিতরকার দৃশ্য দেখে”।
উত্তরঃ আলােচ্য অংশটি এস. ওয়াজেদ আলি রচিত ভারতবর্ষ শীর্ষক গল্পের অন্তর্গত।
লেখক তার বাসার কাছে মুদিখানাটির ভিতরকার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। পঁচিশ বছর আগের মতােই এক বৃদ্ধ গদিতে বসে মােটা একটি বই নিয়ে সাপখেলানাে সুরে কী পড়ছিল, পঁচিশ বছর আগের সেই মধ্যবয়স্ক লােকটির মতােই একটি মধ্যবয়স্ক লােক এক-একবার এসে সেই পাঠ শুনছিল আর আবশ্যক মতাে খদ্দেরদের দেখা-শুনা করছিল। ঠিক সেই আগের ছেলেটির মতাে একটি ছেলে খালি গায়ে বুড়াের দিকে চেয়ে বসেছিল। তার পাশে আগেকার মেয়েদের মতাে দেখতে দুটি মেয়ে বসেছিল।
(ঙ) “পরিবর্তনের কত স্রোত আমার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেল।”
উত্তরঃ উপরােক্ত অংশটি এস. ওয়াজেদ আলি লিখিত ‘ভারতবর্ষ’ শীর্ষক গল্পের থেকে উৎকলিত হয়েছে। পঁচিশ বছর আগে লেখক কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার বয়স দশ-এগারাে বছর হবে। দু-চার দিন পরে লেখক দেশে ফিরে এলেন। তারপর কোথা থেকে যে কোথায় গেলেন তার ঠিকানা রইল না। জগৎ পরিবর্তমান। লেখক তার পূর্ববর্তী জীবনের তার বাসা সন্নিকটস্থ মুদিখানার গদি-আসীন বৃদ্ধের পুত্র, নাতি-নাতনিসহ রামায়ণ পাঠের স্মৃতি বিস্মৃত হলেন। পরিবর্তনের বহু স্রোত লেখকের জীবনের উপর বয়ে গিয়েছিল। পরিবর্তনের বিভিন্নমুখী স্রোতে লেখকের জীবনধারা নদীর মতাে বাঁকে বাঁকে এগিয়ে চলল। লেখক এই প্রসঙ্গে উপরােক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
৮। তাৎপর্য লেখ।
(ক) “তাদের অস্তিত্বের কথা আমি ভুলে গেলুম।”
উত্তরঃ আলােচ্য অংশের বক্তা লেখক এস. ওয়াজেদ আলি।
লেখক দশ- এগারাে বছর বয়সে একবার কলকাতায় এসেছিলেন। বাসার কাছেই এক মুদিখানায় চাদির চশমা পরা এক বৃদ্ধের সাপখেলানাে সুরে কৃত্তিবাসী রামায়ণের ‘রামের সেতুবন্ধন’ অংশ পাঠ তাকে মুগ্ধ করেছিল। বৃদ্ধের দুপাশে তাঁর নাতি-নাতনিরা বসে থাকত শ্রোতা হিসেবে। বৃদ্ধ পুত্রও দোকানদারী করার সাথে সাথে মাঝে মধ্যে সেই রামায়ণ পাঠ শুনতে আসতেন।
তারপর বহুকাল কেটে গেছে। ইতিমধ্যে কালের নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই সেই রামায়ণ পাঠের স্মৃতি বিস্মৃত হয়েছেন। পঁচিশ বছর পরে কলকাতায় বেড়াতে এসে পূর্বে দেখা সেই মুদিখানা ও তার ভিতরের অপরিবর্তিত দৃশ্য দেখে তাদের অস্তিত্বের কথা লেখকের মনে পড়ল।
বক্তা বলেছেন, ভুলে যাওয়াটা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ধর্ম, স্মৃতির রহস্য মানুষকে বড় এক অদ্ভুত অবস্থায় এনে দেয়। অনভ্যাসে ও সময়ের ব্যবধানে মানুষের স্মৃতিও অতল তলে তলিয়ে যায়। লেখকের ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটেছে।
(খ) “মনে হলাে আমি দিব্যচক্ষু পেয়েছি।”
উত্তরঃ আলােচ্য উদ্ধৃতিটির লেখক এস. ওয়াজেদ আলি যে দিব্যচক্ষুর কথা বলেছেন তা ভারতবর্ষের ভৌগােলিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক জীবনে নিত্যকাল ধরে পরিবর্তনের লীলার মধ্যে ভারতবর্ষের যে অপরিবর্তনীয় সত্তা লেখক মানসচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন তাকেই এখানে দিব্যচক্ষু রূপে প্রতিভাত করা হয়েছে।
কালস্রোতে নিয়ত পরিবর্তনের মধ্যেও ভারতবর্ষের এক অপরিবর্তিত সত্তার অস্তিত্বকে মানসনয়নে প্রত্যক্ষ করার ব্যাপারটিকেই লেখক ‘দিব্যচক্ষু-লাভ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বংশ পরম্পরাগতভাবে একটি মুদিদোকানে (কলকাতার) একটি পরিবার কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাঠ করে চলেছিলেন। পঁচিশ বছরের সুদীর্ঘ সময়ের পরিসরেও তার কোনাে অন্যথা হয়নি। ইতিমধ্যে কলকাতা ‘কল্লোলিনী রূপসী হয়ে উঠেছে। ঘরদোর, যানবাহনে, জীবনযাত্রার সর্বাঙ্গে তার ছাপ পড়েছে। শুধু সেই পরিবর্তনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসেছিল কলকাতার পঁচিশ বছর আগে লেখকের দেখা মুদি-পরিবার ও মুদিখানা।
আলােচ্য অংশে ভারতের বহিরঙ্গ রূপের অন্তরালে অন্তজীবনের গভীরে প্রবাহিত অধ্যাত্মবাদের ভাবধারা, কালের চাকার দাগ যার উপর অঙ্কিত হয়নি, শত বাধাবিপত্তিতেও যে অটুট আছে।
(গ) “এ হচ্ছে কৃত্তিবাসে রামায়ণ, আমার ঠাকুরদা বটতলায় এটি কিনেছিলেন।”
উত্তরঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন লিখেছিলেন “কৃত্তিবাস কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলংকার।” কৃত্তিবাসের লেখা রামায়ণের আসল এবং লেখকদত্ত নাম ‘শ্রীরাম পাঁচালী’। ভারতবর্ষ’ গল্পে এই রামায়ণ পারিবারিকভাবে পাঠ ও শােনা চলত বংশপরম্পরায় অনেক বছর ধরে কলকাতার এক নিতান্ত সাধারণ মুদিখানায়। ব্যবসাপাতি দেখাশােনাও চলত, একই সাথে রামায়ণ পাঠও চলত। পঁচিশ বছর পরে দর্শনপ্রাপ্ত বৃদ্ধের পিতামহাশয় লেখককে জানিয়েছিলেন যে উক্ত রামায়ণটি বটতলা থেকে কেনা হয়েছিল! আসলে সেই সময় বটতলা প্রকাশনা ভালাে মন্দ মিশিয়ে সুখ্যাতি ও কুখ্যাতি দুই-ই কুড়ােত। উপরােক্ত অংশে এই কথাকটিই বোঝানাের চেষ্টা হয়েছে।
(ঘ) “বােধহয় পচিশ বছর আগের সেই বাতিটি।”
উত্তরঃ উপরােক্ত অংশে লেখক এস. ওয়াজেদ আলি তার এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
পঁচিশ বছর পূর্বে কলকাতায় আসা লেখক তার বাসার নিকটস্থ এক মুদির দোকানের কথা এখানে পঁচিশ বছর পর কলকাতায় এসে মনে পড়েছে। প্রাচীন ধরনের সেই দোকানে সমকালে চলত পারিবারিকভাবে বহু বছর বংশানুক্রমিক রামায়ণ- পাঠ। পাঠক ও শ্রোতা নিজেরাই।
পঁচিশ বছর পরে কলকাতায় ফিরে দেখলেন ঘর-বাড়ি, যানবাহন, আলােকসজ্জা, জীবনযাত্রাশৈলী সব কিছুতেই সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে। আসেনি শুধু সেই মুদিখানাতেই। সেখানে বিশেষ কোনাে পরিবর্তন হয়নি। জিনিষপত্র ঠিক আগের মতােই সাজানাে রয়েছে। চালে তখনও কেরােসিনের একটি বাতি ঝুলছিল। লেখকের মনে হল যখন কোনাে কিছুরই পরিবর্তন সাধিত হয়নি তাহলে কেরােসিন বাতিটিও বােধহয় পচিশ বছর পূর্বের।
৯। পাঠ-নির্ভর ব্যাকরণ।
(ক) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখাে-
আপাদমস্তক – পা হইতে মাথা পর্যন্ত- (অব্যয়ীভাব)
বিপুলকায় – বিপুল কায়া যার- (বহুব্রীহি)
শ্মশ্রুগুম্ফ – শ্মশ্র ও গুম্ফ- (দ্বন্দ)
ঘরবাড়ি – ঘর ও বাড়ি- (দ্বন্দ্ব )
লঙ্কাদ্বীপ – লঙ্কা নামক দ্বীপ- (মধ্যপদলােপী কর্মধারয়)
নিজে করাে—মহাশয়, ঠাকুরদাদা, বটতলা, নিখুঁত, মায়ামন্ত্র, স্বামীপুত্র।
উত্তরঃ মহাশয় – মহান যে আশয় (সাধারণ কর্মধারয়)
ঠাকুরদাদা – যিনি ঠাকুর তিনিই দাদা (সাধারণ কর্মধারয়)
বটতলা – বটের তলা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)
নিখুঁত – নাই খুঁত (নঞ তৎপুরুষ) অথবা- নাই খুঁত যাহার (নঞ বহুব্রীহি)
মায়ামন্ত্র – মায়া রচিবার যে মন্ত্র (মধ্যপদলােপী কর্মধারয়)
স্বামীপুত্র – স্বামী ও পুত্র (দ্বন্দ্ব)
(খ) পদান্তর করে।
টাক, উৎসাহ, পরিবর্তন, ত্যাগ, বৃদ্ধ, স্বর্গ, বিস্ময়, গম্ভীর
উত্তরঃ টাক – টেকো
উৎসাহ – উৎসাহী
পরিবর্তন – পরিবর্তিত
ত্যাগ – ত্যক্ত
বৃদ্ধ – বার্ধক্য
স্বর্গ – স্বর্গীয়
বিস্ময় – বিস্মিত
গম্ভীর – গাম্ভীর্য
(গ) বাক্য পরিবর্তন করাে।
ওর বয়স আপনার মতােই হবে। (অস্ত্যর্থক)
উত্তরঃ ওর বয়স আপনার থেকে কম হবে না। (নাস্ত্যর্থক)
সে অনেক দিনের কথা। (অস্ত্যর্থক)
উত্তরঃ সে খুব অল্প দিনের কথা নয়। (নাস্ত্যর্থক)
(ঘ) উক্তি কতপ্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ বক্তা তার শ্রোতার সঙ্গে তার বক্তব্য দু’প্রকারে উপস্থাপিত করতে পারেন। তাই উক্তি দু’প্রকার-
১। প্রত্যক্ষ উক্তি এবং
২। পরােক্ষ উক্তি।
উক্তি পরিবর্তন করাে-
১। প্রত্যক্ষ উক্তি – মালা আমাকে বলল, “এখন বিরক্ত করিস না।”
পরােক্ষ উক্তি – মালা আমাকে বলল যে আমি যেন এখন তাকে বিরক্ত না করি।
২। প্রত্যক্ষ উক্তি – লেখক বললেন, “পচিশ বছর পূর্বে আমি কলকাতায় এসেছিলুম।”
পরােক্ষ উক্তি – লেখক বললেন যে তিনি পঁচিশ বছর পূর্বে কলকাতায় এসেছিলেন।
৩। প্রত্যক্ষ উক্তি – লেখক বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার মধ্যে কি কোনাে পরিবর্তন হয়নি।”
পরােক্ষ উক্তি – লেখক বৃদ্ধের কাছে জানতে চাইলেন যে তার মধ্যে কোনাে পরিবর্তন হয়েছে কি না।
৪। প্রত্যক্ষ উক্তি – গুরু শিষ্যকে বললেন, “তুমি এখন বাড়ি যাও।”
পরােক্ষ উক্তি – গুরু শিষ্যকে এখন বাড়ি যেতে নির্দেশ দিলেন।
৫। প্রত্যক্ষ উক্তি – রাম বলল, “আজ আমার যাওয়া হবে না।
পরােক্ষ উক্তি – রাম জানাল যে সে আজ যেতে পারবে না।
(শব্দজাল)
সূত্র – পাশাপাশি
১। রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম
৫। সুন্দর মুখ যে নারীর
৮। থেমে থেমে চলা
৯। গৃহীত শ্বাস
১০। সেকালে জমিদার বাড়িতে ঢুকতে হলে যা দিতে হত
১২। গুঢ় তথ্য আবিষ্কার
১৫। দখল, অধিকার
১৮। সবসময়
২০। বিপরীত, অন্যথা
২২। মর্ত্যধাম, পৃথিবী
২৪। রুষ্ট হওয়া, রাগ করা
২৬। রঙ্গরসে পটীয়সী
২৮। অপ্রাপ্তবয়স্ক
২৯। শেষ সময়।
উপরনীচ-
১। পথ দিয়ে চলাচলের জন্য খাজনা
২। আনন্দজনক
৩। রূপকথায় বর্ণিত পাখি
8। রাজাসন
৫। বড় এবং ধীরগামী নৌকা
৬। অজয় দামােদরকে যা বলা হয়
৭। কোনও কিছুর নাম দেওয়া
১১। নেতা
১৩। হত্যা
১৪। আভ্যন্তর
১৬। খারাপ কাজকে যা জানানাে হয়।
১৭। মণীন্দ্রলাল বসুর বিখ্যাত উপন্যাস
১৮। কৃতকর্মের জন্য খেদ
১৯। পরনের কাপড়
২০। কোনও ব্যক্তির পরিবর্তে য়ে স্বাক্ষর করে
২১। পরলােক
২৩। ইনি ভক্ষক হলেই মুশকিল
২৫। লেবুজাতীয় ফল
২৬। যুদ্ধ
২৭। চার আনা মূল্যের মুদ্রা।
সমাধান-
পাশাপাশি-
১। পরশুরাম
৫। বরাননা
৮। থমক
৯। দম
১০। নজরানা
১২। রহস্যভেদ
১৫। অধিকরণ
১৮। অনবরত
২০। বরখেলাপ
২২। নরলােক
২৪। চুটা
২৬। রসিকা
২৮। নাবালক
২৯। মরণকাল।
উপরনীচ-
১। পথকর
২। রম
৩। শুক
8। মসনদ
৫। বজরা
৬। নদ
৭। নামকরণ
১১। নায়ক
১৩। হনন
১৪। ভেতর
১৬। ধিক্কার
১৭। রমলা
১৮। অনুশোচনা
১৯। বসন
২০। বকলম
২১। পরকাল
২৩। রক্ষক
২৫। টাবা
২৬। রণ
২৭। সিকি
উত্তর। নিজেরা উত্তর অনুযায়ী উপর নিচে শব্দ বসিয়ে ছকটি পূরণ কর।
বাংলা বানান বিধি –
৩। (ক) বাংলায় গৃহীত সংস্কৃত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দে ঈ, ঈ- কার, উ, ঊ-কার, ঋ- হবে না। রাজি, খুশি, নেপালি, জমিদারি, ছেলেমানুষি, রূপাে, পুজো, চাকুরিয়া, বাঙালি, ব্রিটেন, খ্রিস্টাব্দ।
(খ) অতৎসম শব্দে সংস্কৃত প্রত্যয় হলে, প্রত্যয়ের বানান সংস্কৃত নিয়মে হবে। ইয়ােরােপীয়, (কিন্তু ইয়ােরােপিয়ান+- কারণ এটি ইংরেজি শব্দের প্রতিবর্ণী রূপ) অস্ট্রেলীয়া, লগ্নীকরণ।
(গ) অতৎসম স্ত্রীলিঙ্গ শব্দে কেবলমাত্র ই-কার। বাঘিনী, নাগিনী, মাসি, পিসি, বুড়ি, হুঁড়ি, দেমাকি, কাকি, মামি, গয়লানি, মেথরানি প্রভৃতি।
৪। (ক) যেসব সংস্কৃত শব্দে ই অথবা ঈ, কিংবা উ, ঊ- দুই বানানই বিকল্প হিসেবে আছে, সেখানে ‘ই’ এবং উ’-যুক্ত রূপটিই ব্যবহৃত হবে। অবনি, অক্ষটি, আবলি, অঘােরি, অঙ্গভঙ্গি, অঙ্গরাখি, অঙ্গুলি, বিথী, অটনি, অটবি, অতিসার, অন্তরিক্ষ, অম্বুরি, উষা প্রভৃতি।
(খ) যেসব সংস্কৃত শব্দে ‘স’ ও ‘খ’ দুই- ই আছে, সেখানে ‘স’ লেখা হবে। শ ও ‘স’ থাকলে শ’ অগ্নিস্বাত্ত, অভিস্যন্দ, কিশলয়।
(গ) না’ ও ‘ণ’ দুই-ই থাকলে কেবল ন’। অঙ্গন, অনুখন, অল্পলােনিকা, মানবক।
৫। (ক) কোনাে লেখা হবে। কোনাে, কোনােই, কোনােও, কোনােটা, কোনােটাই, কোনােটিও, কোনােদিন, কোনােকালে, কোনােমতে, কোনােভাবে, কোনোক্ৰমে।
(খ) কখনাে লেখা হবে। কখনাে, কখনােই, কখনােও, কখনাে কখনাে।
(গ) যেমন, যেমনই, যেমনি, তেমন, তেমনই এমন, এমনই, অমনি- লেখা হবে, তবে এদের অর্থভেদ আছে। যেমনই (য্যামােনি)। যেমনি (যেনি) গাছ। থেকে নেমেছে অমনি (ওমনি)……। তেমন (তামােন)। তেমন খারাপ কিছু দেখছি না তেমনই (ত্যামােনি)। যেমন সুশ্রী দেখতে তেমনি সুন্দর কথা। তেমনি (তেমনি)।……. তেমনি করে গাও গাে’। এমন (অ্যামােন্)- এমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে। এমনই (অ্যামােনি)। এমনই ঊষাকালে। এমনি (এমনি) ‘এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না’।
(ঘ) সেখান, সেদিন, সেকাল, সেক্ষেত্রে, সেজন্য, যেখান, যেদিন, সেকালে, যেজন্য, যেক্ষেত্রে, এখান, এদিন, একাল, এবেলা, ওখান, ওদিন, ওজন্য, ওকাল ইত্যাদি ক্ষেত্রে সে, যে, এ, ও যেখানে যথাক্রমে সেই, যেই এই এবং ওই- এর সংক্ষিপ্ত ও কথ্যরূপ সেখানে এদের একসঙ্গে লেখা হবে। এ ছাড়া সেইখান, সেইস্থান, ওইদিন, যেইদিন- প্রয়ােজনে একসঙ্গে লেখা যেতে পারে।
(ঙ) আজো, কালাে, সেদিনাে, এখনাে, আজি, এখনি–লেখা হবে না। অর্থাৎ জোর দেওয়ার জন্য ‘ও’ কিবা ‘ই’ সবক্ষেত্রে আলাদা ‘ই’ ও ‘ও’ হয়েই থাকবে, ই কার’ অথবা ‘ও-কার হবে না। যেমন আজই, কালও, সেদিনও, এখনও, আজই, এখনই।
(চ) “আর’ শব্দটির একাধিক মানে আছে। আমাকে আর ভাত দিয়াে না। আমাকে আর একটু দাও। সে আর আসবে না। সে ইন্টারভিউ বাের্ডের সামনে আরেই ঘাবড়ে গেল। রাম আর শ্যাম দুই ভাই।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর-
১। ভারতবর্ষ গল্পে বৃদ্ধ ও মুদিখানা কিসের প্রতীক ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষ গল্পে বৃদ্ধ ও মুদিখানা মানবজীবনের আদর্শবাদ, আধ্যাত্মবাদ এবং বংশানুক্রমিক ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতীক।
২। বৃদ্ধ লােকটির চেহারা কেমন ছিল ?
উত্তরঃ বেশ বিজ্ঞ লােকের মতাে লােকটির চেহারা, গুম্ফশূন্য মুখ।
৩। বুড়াের কাছে কে বা কারা বসে থাকত ?
উত্তরঃ বুড়াের কাছে বসে থাকত লেখকের মতাে বয়সের একজন লােক। তার পাশে থাকত দুটি মেয়ে।
৪। লেখকের কিসের কৌতূহল হল ?
উত্তরঃ বুড়াে কি পড়ছে জানার জন্য বিশেষ কৌতূহল হল।
৫। সেতুবন্ধনের কাহিনীতে লেখক আকৃষ্ট হয়েছিলেন কেন ?
উত্তরঃ রামায়ণ পাঠের বিশেষ সুর ও কপিসেনার সাহায্যে রামের সেতুবন্ধনের উপভােগ্য কাহিনী লেখক এস. ওয়াজেদ আলির শিশুমনকে আকৃষ্ট করেছিল।
৬। রামচন্দ্রের সেতু পার হবার কাহিনী তিনি শুনতে পাননি কেন ?
উত্তরঃ মুদিখানায় যখন সেতুবন্ধনের কাহিনী পঠিত হচ্ছিল তখন বাড়ীর লােক এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তিনি কলকাতা ছেড়ে দেশের বাড়ীতে চলে যান। এজন্যই পরবর্তী কাহিনী লেখক আর শুনতে পাননি।
৭। লেখক তখন কি জানতে পারেন নি ?
উত্তরঃ রামচন্দ্র সেতু পার হয়েছিলেন কিনা। আর পার হয়ে বা কি করেছিলেন, তা তিনি তখন জানতে পারেন নি।
৮। কালের অমােঘ পরিবর্তনের কথা ভাবতে ভাবতে লেখক কি দেখতে পেলেন ?
উত্তরঃ কালের অমােঘ পরিবর্তনের কথা ভাবতে ভাবতে লেখক সেই পুরানাে মুদিখানা দোকানটি দেখতে পেলেন।
৯। দোকানটি কি অবস্থায় ছি ?
উত্তরঃ দোকানটি পচিশ বছর পূর্বেকার অবস্থায় ছিল।
১০। অবাক হয়ে লেখক কি শুনতে লাগলেন ?
উত্তরঃ লেখক অবাক হয়ে সেই ২৫ বছর আগেকার মতাে সেতুবন্ধনের কথা শুনতে লাগলেন।
১১। বটতলায় এটা কিনেছিলেন’-
(ক) কোন বই ?
উত্তরঃ উল্লিখিত বইটি কৃত্তিবাসী রামায়ণ।
(খ) কে কিনেছিলেন ?
উত্তরঃ বক্তা, বর্তমান বৃদ্ধের জন্মের আগে তার ঠাকুরদাদা একা কিনেছিলেন।
(গ) বটতলা’ কোথায় ?
উত্তরঃ বটতলা’ হচ্ছেকলকাতা শহরের বর্তমান আপার চিৎপুর অঞ্চলের একটি স্থান।
১২। “রামচন্দ্র কি এখনও সেই সেতুবন্ধনের কাজে ব্যস্ত আছেন।” -কার লেখা কোন রচনার অংশ এটি। বক্তা কে ? তিনি কাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন ? কখন এবং কেন তিনি একথা বলেছেন ?
উত্তরঃ এস. ওয়াজেদ আলির লেখা ‘ভারতবর্ষ’ নামক রচনার অংশ এটি।
বক্তা হলেন লেখক স্বয়ং।তিনি গদির উপর পাঠরত বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন।
পঁচিশ বছৰ আগে যেস্থানে বৃদ্ধকে গনিতে বসে রামায়ণ পাঠ করতে দেখেছিলেন। পঁচিশ বছর পূর্বে তিনি বৃদ্ধকে সেতুবন্ধনের কাহিনী পাঠ করতে শুনেছিলেন। তার পাশে বসে থাকত সেই লোকটি এবং তার পাশে আর দুটি মেয়ে। দীর্ঘদিন পরেও লেখক সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলেন। তাঁর খুব আশ্চর্য বােধ হল। তিনি বৃদ্ধের নিকট গেলেন। আর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও কি কোনাে পরিবর্তন হয়নি? সেই রামায়ণ পাঠ, সেই সেতুবন্ধনের কাহিনি, সেই ছেলেমেয়ে সব একই ভাবে বসে আছে। তাহলে কি রামচন্দ্র তখনও সেতুবন্ধনে ব্যাপৃত। যদিও তা বাস্তবে সম্ভব নয় তবু নেহাৎ বিস্ময়ের বশেই লেখক বৃদ্ধকে এই প্রশ্ন করেছিলেন।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.