বন্ধু-বান্ধৱীসকল আজকে আমরা আলোচনা করব যে কিভাবে বাংলাতে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Bankim Chandra Chatterjee Biography in Bengali লিখতে হয়। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের উপকৃত হবে। সুতরাং বেছি সময় নষ্ট না করে চলুন আরম্ভ করি।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Bankim Chandra Chatterjee Biography in Bengali
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সাহিত্য ও সংস্কৃতি
জন্ম: ২৭ শে জুন ১৮৩৮ খ্রিঃ
মৃত্যু: ৮ ই এপ্রিল ১৮৯৪ খ্রিঃ
সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং,
শস্যশ্যামলাং মাতরম্।
শুভ্র জ্যোৎস্না পুলকিত যামিনিং,
ফুণ্ণ – কুসুমিত – প্রমদল – শোভিনীং,
সুহাসিনীং সুমধুর ভাষিনীং,
সুখদাং বরদাং মাতরম্।”
বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ খ্রিঃ ২৭ শে জুন, বাংলা সন ১২৪৫, ১৩ ই আষাঢ় নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেদিনীপুরে ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকুরি করতেন।
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র যথাক্রমে শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্রের মধ্যে লেখক হিসেবে সঞ্জীবচন্দ্র খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা পূর্ণচন্দ্র । পরবর্তীকালে বঙ্কিম জীবনের বহু অজ্ঞাত মূল্যবান তথ্য তাঁর কাছ থেকে জানা সম্ভব হয়েছে।
ছয় বৎসর বয়স পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র পৈতৃক নিবাস কাঁঠাল পাড়াতেই থাকতেন। পাঁচ বছর বয়সে এখানেই তাঁর হাতেখড়ি হয় কুলপুরোহিত বিশ্বস্তর ভট্টাচার্যের কাছে।
শিশুবয়স থেকেই বঙ্কিমচন্দ্রের অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি একদিনেই বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করেছিলেন। পুত্রের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় পেয়ে যাদবচন্দ্র তার শিক্ষার ব্যাপারে খুবই সতর্ক ও যত্নবান ছিলেন।
১৮৪৪ খ্রিঃ ছয় বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে এসে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।
নম্র ব্যবহার ও নিরীহ প্রকৃতির জন্য অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এখানে সকলের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ক্লাসের পাঠেও বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়ে তিনি সকলকে চমৎকৃত করেন।
১৮৪৯ খ্রিঃ বঙ্কিম আবার কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন। উক্ত সালের ফেব্রুয়ারী মাসেই নারায়ণপুর গ্রাম নিবাসী পাঁচ বছরের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । বিয়ের সময়ে বঙ্কিমের বয়স হয়েছিল এগারো।
১৮৫৩ খ্রিঃ বঙ্কিমের জীবনে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পারিতোষিক লাভ করেন।
তাঁর কবিতার নাম ছিল— “কামিনীর উক্তি। তোমাতে লৌ ষড়ঋতু”। কবিতাটি যথারীতি সংবাদ প্রভাকরে মুদ্রিত হয়।
উল্লেখযোগ্য যে হুগলী কলেজে পড়ার কালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের আদর্শে সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য ও পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরে তাঁর বহু গদ্য ও পদ্য রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়।
হুগলী কলেজে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ( ১৮৫৬ খ্রিঃ ) সকল বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে বঙ্কিমচন্দ্র দুই বছরের জন্য কুড়িটাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বৎসরই তিনি হুগলী কলেজ পরিত্যাগ করে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। একই বছরে তাঁর ললিতা, পুরাকালিক গল্প, তথা মানস নামক কবিতা পুস্তক প্রকাশিত হয়।
তাঁর গদ্য, পদ্য রচনা প্রকাশে কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের বিশেষ সহায়তার কথা পরবর্তীকালে মুক্তকণ্ঠে তিনি প্রকাশ করেন।
১৮৫৭ খ্রিঃ জানুয়ারী মাসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
পরের বছর ১৮৫৮ খ্রিঃ প্রথমবারের মত বি. এ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু।
এরপর বঙ্কিমচন্দ্র আইন পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই তিনি সেই বছরেই যশোর জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে সরকারী চাকুরিতে যোগ দেন।
বারো বছর পরে চাকুরিরত অবস্থায় ১৮৬৯ খ্রিঃ তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র দীর্ঘ তেইশ বছর সরকারী পদে চাকুরী করার পর ১৮৯১ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে অবসর গ্রহণ করেন।
যশোরে থাকাকালে ১৮৫৯ খ্রিঃ বঙ্কিমচন্দ্রের পত্নীবিয়োগ হয়। ১৮৬০ খ্রিঃ তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। সহধর্মিনী রাজলক্ষ্মী দেবী সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র পরবর্তীকালে বলেছেন, “আমার জীবন অবিশ্রান্ত সংগ্রামের জীবন। একজনের প্রভাব আমার জীবনে বড় বেশি রকমের – আমার পরিবারের। আমার জীবনী লিখিতে হইলে তাঁহারও লিখিতে হয়। তিনি না থাকিলে আমি কি হইতাম বলিতে পারি না।”
বঙ্কিমচন্দ্র হাকিমরূপে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করায় মানুষের দুঃখ বেদনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর দেশপ্রেম ও স্বদেশ হিতৈষণা ছিল প্রগাঢ়।
ভারতের অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত “বন্দেমাতরম” বঙ্কিমচন্দ্র রচনা করেছিলেন ১৮৭৫ খ্রিঃ।
১৮৯১ খ্রিঃ চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতাতেই বাস করতে থাকেন। ১৮৯৪ খ্রিঃ ৮ ই এপ্রিল তিনি অমৃতলোকে যাত্রা করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র মোট চোদ্দটি উপন্যাস রচনা করেন। উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারাণী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী ও সীতারাম। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল কৃষ্ণচরিত, লোকরহস্য, ‘বিজ্ঞানরহস্য, ললিতা, দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী, ধর্মতত্ত্ব, শ্রীমদ্ভাগবতগীতা প্রভৃতি।
৷৷ অমৃতবাণী ৷৷
“পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না, পরের জন্য আপনার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।”
*“ শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে, বার্ধক্যে, সকল সময়েই ঈশ্বরকে ডাকিবে। ইহার জন্য বিশেষ অবসরের প্রয়োজন নাই – ইহার জন্য কোন কার্যের ক্ষতি নাই। বরং দেখিবে, ঈশ্বরভক্তির সঙ্গে মিলিত হইলে সকল কার্যই মঙ্গলপ্রদ এবং পরিশুদ্ধ হয়।”
* “আকাশ যেমন বস্তুত নীল নয়, আমরা নীল দেখি মাত্র; ধন তেমনিই। ধন সুখের নয়, আমরা সুখের বলিয়া মনে করি।”
* “সকল ধর্মের উপরে স্বদেশ – প্রীতি, ইহা বিস্মৃত হইও না।”
অনুগ্রহ করে মন করবেনঃ সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Bankim Chandra Chatterjee Biography Biography in Bengali আমাদের এই লেখা যদি আপনার জন্যে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনি আমাদেরকে নিছে Comment Box এ Feedback দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইল। আপনাদের এই ছোট্ট Feedback এ আমাদেরকে কাজের জন্য উৎসাহ জাগায়।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.