বন্ধু-বান্ধৱীসকল আজকে আমরা আলোচনা করব যে কিভাবে বাংলাতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী – Michael Madhusudan Dutt Biography in Bengali লিখতে হয়। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের উপকৃত হবে। সুতরাং বেছি সময় নষ্ট না করে চলুন আরম্ভ করি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী – Michael Madhusudan Dutt Biography in Bengali
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সাহিত্য ও সংস্কৃতি
জন্ম: ২৫ শে জানুয়ারী ১৮২৪ খ্রিঃ
মৃত্যু: ২৯ শে জুন ১৮৭৩ খ্রিঃ
উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের যুগে বঙ্গ সাহিত্যে মধুসুদন দত্তের আবির্ভাব হয়েছিল নূতন জীবনমন্ত্র তেজ ও বীর্যের পূর্ণবেগ নিয়ে। তাঁর জীবন কাহিনী তাঁর বর্ণময় সাহিত্যের মতই ছিল বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর।
যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ২৫ শে জানুয়ারি ১৮২৪ সালে মধুসুদনের জন্ম হয়। মধুসুদনের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত একজন অবস্থাপন্ন উকিল ছিলেন । মধুসুদনের মা জাহ্নবীদেবী ছিলেন শিক্ষিতা মহিলা। প্রায় সাত বছর বয়স পর্যন্ত মধুসুদন মায়ের কাছেই লেখাপড়া। করেন
সাত বছর বয়সে মধুসুদন কলকাতায় আসেন। এখানে এসে প্রথম দু বছর তিনি খিদিরপুর স্কুলে পড়েন। পরে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। মধুসুদন খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। স্কুলের পরীক্ষায় প্রতি বছর তিনি বৃত্তি পেতেন।
কলেজে পড়ার সময় একটা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় মধুসুদন স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই মধুসুদন ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন। সে সময়কার ইংরেজি পত্রিকায় এসব কবিতা প্রকাশিত হত। ছেলেবেলায় মধুসুদন মায়ের মুখে রামায়ণ পাঠ শুনতেন। তখন থেকেই কবিতার সুর ও ছন্দের প্রতি মধুসুদনের বড় আকর্ষণ ছিল।
মধুসুদন যে সময়ে কলেজে পড়তেন , সে সময়টা আমাদের দেশে ইংরেজি শিক্ষার যুগ। এ যুগের অনেক ইংরেজি – শিক্ষিত যুবক মনে করতেন – ইংরেজদের ভাষা , ইংরেজদের আচার আচরণ , ইংরেজদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ। মধুসুদনও তাই ইংরেজিতেই কবিতা লিখতেন, মনেপ্রাণে ইংরেজ হতে চাইতেন । ঊনিশ বছর বয়সে মধুসুদন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর নাম হয় মাইকেল মধুসুদন দত্ত।
শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে মধুসুদন মাদ্রাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ফরাসি মহিলা হেনরিয়েটাকে বিয়ে করেছিলেন এবং অনেক ইংরেজি কবিতা ও কাব্য লিখেছিলেন। Timothy Penpoem ছদ্মনামে সনেট গীতি কবিতা ও খণ্ডকাব্য এই সময় তিনি লিখেছিলেন। The Visions of the past,The Captive Lady নামক দুটি দীর্ঘ কবিতা একসঙ্গে পুস্তকাকারে মাদ্রাজ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু সুনাম অর্জন করতে পারেননি। অবশেষে মধুসূদন কলকাতয় ফিরে আসেন। কলকাতায় এসে তিনি বাংলায় অনেক নাটক, কবিতা ও কাব্য লেখেন।এগুলির মধ্যে মেঘনাদ বধ কাব্য শ্রেষ্ঠ।
প্রায় আটএিশ বছর বয়সে মধুসূদন ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত গিয়েছিলেন।সেখানে একবার তিনি খুব অর্থ- কষ্টের মধ্যে পড়েছিলেন।তখন,বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁকে টাকা পাঠিয়েছিলেন। পাঁচ বছর পরে ব্যারিস্টারি পাশ করে মধুসূদন দেশে ফিরে আসেন।
বাংলা সাহিত্য অমিত্ৰাক্ষর ছন্দের সৃষ্টিও আকস্মিক ঘটনা।রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর বলেছিলেন ফরাসী ভাষা মতো উন্নত ভাষায় অমিত্ৰাক্ষর ছন্দ রচনা করা হয়নি।সুতরাং বাংলাভাষার মতো সরলভাষায় আমিত্ৰাক্ষরের গাম্ভীর্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত গুপ্ত কবির ব্যঙ্গ রচনার কথাও তিনি উল্লেখ করেছিলেন
কবিতা কমলা কলা পাকা যেন কাঁদি।
ইচ্ছা হয় যত পাই পেট ভরে খাই।
মধুসূদন জবাব দিয়েছিলেন- এটাই একমাত্র কারন নয় যেহেতু বৃদ্ধ ঈশ্বরগুপ্ত অমিত্ৰাক্ষর রচনা করতে পারেন নি বলে আর কেউ পারবে না।
মধুকবি আরও বলেছিলেন যে অল্প সময়ের মধ্যে যদি তিনি তাঁর ( যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর ) ভুল ভাঙ্গাতে না পারেন তবে যেন তাঁকে গাধা বলে ডাকা হয়।
কবি তাঁর বিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয়, অনমনীয় দৃঢ়তা আর অমিত্রাক্ষর ছন্দের গূঢ়তত্ত্বের উপলব্ধির বলে পুরোপুরি অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখলেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য। এতদিন বাংলা কাব্যভারতী পয়ারের বেড়ীতে শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। আজ তাঁর মুক্তি ঘটলো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এ এক যুগান্তকারী ঘটনা। ‘তিলোত্তমা সম্ভব’ – এ যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের পরীক্ষা তার পরিণতি লাভ ঘটলো মধু কবির অমর কাব্য’ মেঘনাদ বধ কাব্যে ‘। বাংলা শব্দভাণ্ডার থেকে জানা – অজানা শব্দ চয়ন করে তিনি এত সুন্দরভাবে এ – কাব্যে ব্যবহার করলেন যে করুণ ও বীররসের গঙ্গা – যমুনার সঙ্গম- তীর্থস্বরূপ হয়ে উঠলো এ কাব্য। এই কাব্যে কবি রাক্ষসবীর রাবণ ও মেঘনাদকে রাক্ষস রূপে আঁকেন নি। সকলকেই মানুষরূপে, ভাগ্যবিড়ম্বিত রূপে এঁকেছেন। তারা আমাদের সহানুভূতি পেয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর নব – রামায়ণ সৃষ্টি হয়েছে।
এরপর কবি সৃষ্টি করলেন ‘ব্রজাঙ্গনাকাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য ’এবং’ চতুর্দশ পদী কবিতাবলী। কিন্তু এত সৃষ্টি করেও কবি আশানুরূপ খ্যাতি বা যশ লাভ করতে পারেন নি। পুস্তক বিক্রয়ের আয়, আদালতের চাকরী ও পৈতৃক সম্পত্তি অমিতব্যয়ী মধুসুদনের অর্থাকাঙ্ক্ষা মিটাতে পারে নি। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি খুব শান্তি পান নি। এই ব্যর্থতারই করুণ কাহিনী তাঁরই লেখা ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় বাণীরূপ লাভ করেছে।
এদিকে কবির আর্থিক অবস্থা চরমে পৌঁছুলো। দারিদ্র্য কবিকে ক্রমশঃ গ্রাস করতে লাগলো। তাঁর স্ত্রী হেনরিয়েটা অসুখে পড়লেন, কবিও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দুজনেই শয্যা নিলেন। ছেলে – মেয়েদের দেখাশুনার কেউ নেই। বন্ধু – বান্ধব কিছু কিছু অর্থ সাহায্য করলেন। কিন্তু তা সিন্ধুতে বিন্দুর সামিল। এদিকে পাওনাদারেরা দিনের পর দিন তাগাদা করতে লাগলো। কবিকে উত্তরপাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখুজ্জে কিছুদিন নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখলেন। কবির অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হতে লগলো, উত্থানশক্তি রহিত হল। বন্ধুরা কবিকে এনে আলিপুর দাতব্য চিকিৎসালয়ে ভর্তি করে দিলেন।
কয়েকদিন পরে কবির জীবন – সঙ্গিনী হেনরিয়েটা মারা গেলেন। হেনরিয়েটারের মৃত্যুতে কবি ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েন। তিন দিন পরে তিনিও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সে দিনটি হল ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জুন রবিবার। বাংলা দেশের শ্রেষ্ঠ কবি ভিক্ষুকের মতো নিঃস্ব অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেলেন। এ প্রসঙ্গে কবি – বন্ধু নবীন সেনের বিলাপ স্মরণীয় –
অযত্নে মা অনাদরে
বঙ্গ কবিকুলেশ্বরে,
ভিক্ষুকের বেশে মাতঃ দিয়াছ বিদায়।,
কবির দেহ সমাধিস্থ করা হল লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধিক্ষেত্রে। তাঁর সমাধিক্ষেত্রে কবির নিজেরই লেখা একটি কবিতা স্মৃতিফলকে খোদিত করে দেওয়া হল।
দাঁড়াও, পথিকবর ! জন্ম যদি তব
বঙ্গে ! তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এ সমাধিস্থলে
( জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম ) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত
দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসুদন !
যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতক্ষ তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী !
কবি মধুসুদন আর এ পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তিনি যে নবযুগের সৃষ্টি করেছিলেন, অরুণোদয়ের যে রক্তিম আভা নিয়ে বাংলা সাহিত্যাকাশে উদিত হয়েছিলেন, তা তাঁর কাব্যের মাধ্যমে আজও অম্লান হয়ে রয়েছে। বাঙালীর হৃদয়মন্দিরে কবি মধুসুদনের নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
।। অমৃতবাণী ॥
“ জন্মিলে মরিতে হবে
অমর কে কোথা কবে,
চিরস্থির কবে নীর হায়রে, জীবন নদে ?”
* আশার ছলনে ভুলি কিফল লভিনু হায়
তাই ভাবি মনে
জীবন প্রবাহ বহি কালসিন্ধু পানে ধায়।
ফিরাব কেমনে ?”
* “শাস্ত্রে বলে,গূনবান যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুন স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা”
অনুগ্রহ করে মন করবেনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী – Michael Madhusudan Dutt Biography in Bengali আমাদের এই লেখা যদি আপনার জন্যে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনি আমাদেরকে নিছে Comment Box এ Feedback দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইল। আপনাদের এই ছোট্ট Feedback এ আমাদেরকে কাজের জন্য উৎসাহ জাগায়।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.