Class 11 Advance Bengali Chapter 2 দুই বিঘা জমি is a textbook prescribed by the ASSAM AHSEC Board Class 11 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 Advance Bengali Chapter 2 দুই বিঘা জমি The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 Advance Bengali Chapter 2 দুই বিঘা জমি Solutions are free to use and easily accessible.
Class 11 Advance Bengali Chapter 2 দুই বিঘা জমি | একাদশ শ্রেণীর প্রাগ্রসর বাংলা পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্ন ও উত্তর
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 11 Advance Bengali Chapter 2 দুই বিঘা জমি Question Answer. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 1st year Advance Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. AHSEC Board Class XI Advance Bengali Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. HS 1st Year Advance Bengali Subject Suggestion Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Textbooks. HS 1st Year Advance Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
দুই বিঘা জমি
পদ্যাংশ
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
১। ‘দুই বিঘা জমিতে’ রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য সরল করো।
উত্তরঃ মানুষের আশা আকাঙ্খার শেষ নেই। একটি মনস্কামনা পূর্ণ হলে আরেকটির চাহিদা দেখা দেয়। এককথায়, মানুষ যত পায়, তত পাওয়ার আকাঙ্খা বেড়ে ওঠে। আর এই আকাঙ্খাই শেষ পর্যন্ত অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। রাজার প্রধান কর্তব্য প্রজাপালন। প্রজার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখা। কিন্তু কখনও দেখা যায় রাজা শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অর্থভাণ্ডার পরিপূর্ণ ও সাম্রাজ্য বিস্তার করাই তার একমাত্র নজর। আলোচ্য ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের ছবি ফুটে ওঠে। রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল প্রজাপালন কিন্তু সেইজায়গায় রাজাই চক্রান্ত করে তার প্রজা উপেনের শেষ সম্বল দুই বিয়ে জমি যা তার মরবার ঠাঁই ছিল তাকে আত্মসাৎ করে। রাজা বাগানকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান করতে গিয়ে আবশ্যক হয়ে ওঠে উপেনের সাতপুরুষের এই দুই বিঘে ভিটেমাটি। রাজার বাগান দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান না হলেও কোনো অসুবিধে ছিলনা। কিন্তু আপন স্বার্থে মিথ্যে দেনার দায়ে জড়িয়ে উপেনকে বাস্তচ্যুত করে রাজা। উপেন তার শেষ সম্বল হারিয়ে যখন রাস্তায় এসে দাঁড়ায় তখন তার মনে হয় –
“এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি; রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।
এই লাইন দুটির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কবিতাটির নিহিতার্থ প্রকাশ করেন যা বাস্তব সত্য।
২। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার অনুসরণে জমিদারের একটি চরিত্র চিত্রণ করো।
অথবা,
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে তৎকালীন সমাজে রাজা ও জমিদারের প্রতিপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বিষয়বস্তু ক্ষমতাবান সমাজ প্রভু রাজা এবং গরীব এই দুজনের দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্যে আধারিত। উপেন গরীব নিঃস্ব। সমাজের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি সে। ঋণের জালে জড়িয়ে উপেন সর্বশান্ত। পৈত্রিক দুই বিঘা জমি তার সহায় সম্বল। কিন্তু কবি এই কবিতায় যে জমিদারী শাসন ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে এই বিঘা দুই জমি নিয়ে জীবনযাপন করা উপেনের পক্ষে সম্ভব নয় – এটা পাঠককুল সহজেই অনুমান করতে পারেন। রাজা তার প্রভুত্বের প্রকাশ করেছেন খুব তাড়াতাড়ি। গরীব সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি উপেন গ্রামের এককোনে দুই বিঘা ভিটার মধ্যে বাস করে। রাজা তার বাগান তৈরির জন্য উপেনের বসত ভিটা কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। উপেন রাজী হয়নি। সমাজের সর্বময় কর্তা রাজার উপরে গিয়ে কোন কথা বলা যেন সামন্তযুগে যে কোন মানুষের পক্ষে অন্যায়। তাই উপেন রাজাকে অনুনয় বিনয় করে বুঝাতে থাকে যে এই জমিটিই তার শেষ সম্বল। কিন্তু রাজা সাড়া দেয়নি তার অনুনয়ে। রাজা তার ক্ষমতার দৌলতে অগ্নিমূর্তি হয়ে ওঠে। নিমিষে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বা জমিদার তন্ত্রের ছবি ফুটে ওঠে। রাজা তার ক্ষমতার বলে উপেনের জমি কিনে নেয়।
এখানে বঙ্গসমাজের মধ্যযুগীয় ও আধুনিকযুগের প্রাকলগ্নের বর্বরতার বাস্তবময় চিত্র ফুটে ওঠে কবিতার অভ্যন্তরে। সেই সময় সমাজের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিল জমিদার। তারা মনমত সাধারণ মানুষকে নিপীড়ন ও শোষণ করত। আর সাধারণ মানুষ তা মুখবোঝে সহ্য করত। আমরা কবিতায় দেখি রাজা যখন উপেনের জমি কিনে নেয় তখন সংঘাত সৃষ্টি হয়নি, প্রতিরোধ তো দূরের কথা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি । উপেন নীরবে তা রাজাকে দিয়ে চলে গেছে । বিপুল বিশ্বের মুক্তাকাশের নীচে । উপেনের মধ্যদিয়ে প্রতিবাদে অসমর্থ সাধারণ মানুষের হালভাঙ্গা মন ফুটে উঠেছে । আমরা কবিতায় দেখি উপেন পনেরো-ষোলো বছরপর গ্ৰামে ফিরে আসর পর দুটি আম ধরার অপরাধে রাজার লাঠিয়ালরা তাকে ধরে নিয়ে যায় । রাজা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় । উপেন দুটি আমের ভিক্ষা চাইলে তাকে চোর অপবাদ সহ্য করতে হয় । তৎকালীন সময়কার সামন্তশ্রেণির সমাজ ব্যবস্থায় জমিদার কিংবা সমাজ প্রভুদের দ্বারা সাধারণ গরীব মানুষ কিভাবে নাজেহাল হতে হয় তারই বাস্তব চিত্র একটি ক্ষুদ্র কাহিনির মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ।
S.L. No. | সূচীপত্র |
পদ্যাংশ | |
পাঠ – ১ | গৌরাঙ্গ – বিষয়ক পদ |
পাঠ – ২ | দুই বিঘা জমি |
পাঠ – ৩ | সনেট |
পাঠ – ৪ | সুদূরের আহ্বান |
পাঠ – ৫ | রানার |
পাঠ – ৬ | উত্তরাধিকার |
পাঠ – ৭ | কাস্তে |
গদ্যাংশ | |
পাঠ – ৮ | রাজধর্ম |
পাঠ – ৯ | ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে |
পাঠ – ১০ | রামায়ণ |
পাঠ – ১১ | রূপকথা |
ছোটগল্প | |
পাঠ – ১২ | কাবুলিওয়ালা |
পাঠ – ১৩ | রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা |
পাঠ – ১৪ | খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন |
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) |
৩। ‘দুই বিঘা জমি’-র ভাববস্ত তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা,
‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতার ভাবার্থ বা মর্মার্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ মানুষের আশা আকাঙ্খার শেষ নেই। একটি মনস্কামনা পূর্ণ হলে আরেকটির চাহিদা দেখা দেয়। এককথায়, মানুষ যত পায়, তত পাওয়ার আকাঙ্খা বেড়ে ওঠে। আর এই আকাঙ্খাই শেষ পর্যন্ত অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। রাজার প্রধান কর্তব্য প্রজাপালন। প্রজার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখা। কিন্তু কখনও দেখা যায় রাজা শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অর্থভাণ্ডার পরিপূর্ণ ও সাম্রাজ্য বিস্তার করাই তার একমাত্র নজর। আলোচ্য ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের ছবি ফুটে ওঠে। রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল প্রজাপালন কিন্তু সেইজায়গায় রাজাই চক্রান্ত করে তার প্রজা উপেনের শেষ সম্বল দুই বিয়ে জমি যা তার মরবার ঠাঁই ছিল তাকে আত্মসাৎ করে। রাজা বাগানকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান করতে গিয়ে আবশ্যক হয়ে ওঠে উপেনের সাতপুরুষের এই দুই বিঘে ভিটেমাটি। রাজার বাগান দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান না হলেও কোনো অসুবিধে ছিলনা। কিন্তু আপন স্বার্থে মিথ্যে দেনার দায়ে জড়িয়ে উপেনকে বাস্তচ্যুত করে রাজা। উপেন তার শেষ সম্বল হারিয়ে যখন রাস্তায় এসে দাঁড়ায় তখন তার মনে হয় –
“এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি; রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।
এই লাইন দুটির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কবিতাটির নিহিতার্থ প্রকাশ করেন যা বাস্তব সত্য।
৪। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা।
অথবা,
‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতার নামকরণ কতটুকু সার্থক ও যুক্তিসঙ্গত আলোচনা করো।
অথবা,
‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতার বিষয়বস্ত সংক্ষেপে বিবৃত করে এর নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ ‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতার মুখ্য চরিত্র উপেন ও রাজা । আর কবিতার আধার তৎকালীন সামন্ত প্রভু কেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা ও উপেন ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আধেয় । এই দুই বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে কবিতার কাহিনি নির্মিত হয়েছে। কবিতার শুরু হয়েছে উপেনের দুই বিঘা জমিকে নিয়ে-
“শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।”
কবিতার শুরুতে দেখা যায় রাজা ও উপেনের মধ্যে দুই বিঘা জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। উপেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়না। তাঁর এই শেষ সম্বল দুই বিঘা জমিতেই সে থাকতে চায়। আর অন্যদিকে ধনীক ও ক্ষমতাবানের প্রতিভূ রাজা তার বাগান তৈরির জন্য উপেনের জমি কিনে নিতে চায়। রাজার জমি কেনার প্রস্তাবে উপেন সাড়া দেয়নি। উপেন জানে রাজার সংগে ক্ষমতার জোরে পারবেনা তাই তাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, এই জমিটিই তার মরবার ঠাঁই এটিকে যেন তিনি না নেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। রাজার চক্রান্তে বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে। পনেরো-ষোলে বছর পর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে নিজের গ্রামে ফিরে আসে। তার দুই বিঘা জমির আকর্ষণে ভিটি মাটিতেও আসতে বাধ্য হয়।
ভিটে মাটিতে থাকা আমগাছের নীচে বসে যখন বালককালের কথা স্মরণ করছিল সে সময় বাতাস দুটো পাকা আম তার কুলে ফেলে দেয়। এই দুটি আম তুলে নেওয়ার অপরাধে রাজার লাঠিয়ালরা তাকে তুলে নিয়ে যায় রাজার কাছে । সেখানে এই দুটি আম ভিক্ষা মাগার ফলে রাজা তাকে চোর বলে অপবাদ দেয়। আমরা কবিতায় দেখি দুইবিঘা জমিকে কেন্দ্র করে কাহিনির সূত্রপাত। কবিতার মূল বিষয় কিছুক্ষণের জন্য দুই বিঘা জমি থেকে সরে গেলেও আবার উপেনকে দুই বিঘা জমির মধ্যে নিয়ে আসে। কবিতার পরিসমাপ্তিও হয় উপেনের এই দুই বিঘা জমির মধ্যে। যদিও তার দুই বিঘা জমির মালিক এখন রাজা। কবিতার শুরু ও সমাপ্তি এবং কাহিনির বিকাশে উপেনের দুইবিঘা জমি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।
৫। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে উপেনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতা অবলম্বনে উপেনের দু:খের কাহিনিটি বিবৃত করো।
উত্তরঃ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র উপেন । উপেন গরীব, সহজ, সরল মানুষ । ঋণের জালে জড়িয়ে তার সর্বস্ব গেছে । দুই বিঘা জমি যা তার সাতপুরুষের ভিটেমাটি তা-ই শুধু তার শেষ সম্বল, কিন্তু রাজা বাগান তৈরিতে এই জমিও কিনে নিতে চান । উপেন রাজাকে বুঝাতে থাকে যে এই জমিটিই মাত্র তার মরবার ঠাঁই । জমিটির জন্য রাজার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা জানায় । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি,রাজা ভয় দেখিয়ে উপেনের কাছ থেকে দুই বিঘা জমি কিনে নেয় । সমাজ প্রভুদের উর্দ্ধে গিয়ে সাধারণ মানুষ নিজের আশা ব্যক্ত করবে এমন সাহস তৎকালীন সময়ের সামন্তশ্রেণির সমাজ পরিবেশে ছিলনা । তাই আমরা দেখি উপেন জমিটি রাজার কাছে বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে । যাওয়ার সময় উপেনের মনে উপস্থিত হয় সেই সময়কার সামাজিক শাসন, যাদের চাহিদা সমস্ত কিছুর উর্দ্ধে-
“এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।”
শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি থেকে উৎখাত হয়ে উপেন সারা বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিজের ভিটেমাটি ও গ্রামের টানে চলে আসে মাতৃভূমিতে। সেখানে প্রাচীরের চারিদিকে ঘুরে ফিরে আমগাছের তলায় শ্রান্ত শরীরে বসে। এমন সময় দুটি আম তার সামনে পড়ে। উপেনের মনে হয় দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরও আমগাছটি তাকে চিনেছে তাই উপহার স্বরূপ এই দুটি আম তাকে দিয়েছে। এখানে উপেনের সহজ, সরল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। আম দুটি ধরার অপরাধে রাজার লাটিয়াল তাকে ধরে নিয়ে যায়। রাজা সমস্ত কাহিনি শুনে তাকে মেরে খুন করার হুমকি দেয়। তবু উপেন এই দুটি আমের ভিক্ষে চায়। রাজা তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া না দিয়ে তাকে ভদ্রতার মুখোশধারী পাকা চোর বলে অপবাদ দেয় –
“আমি কহিলাম, শুধু দুটি আম ভিখ মাগিমহাশয়’।
বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!”
যে উপেনের বাল্যকাল কেটেছে এই আমগাছের সঙ্গে সেই আজ আমচোর। উপেন এসমস্ত কিছুর জন্য নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়। সে চোখের জলে মনে করে রাজার কথায় নীরবে শেষ সম্বলটিকে বিক্রি করে দিয়ে গেছে তাই আজ চোর আর যে রাজা ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার বলে জমিটি কিনে নিয়েছে সেই আজ সাধু। উপেনের আক্ষেপে আক্রমনিত তৎকালীন সামন্তশ্রেণির সমাজ। যে সমাজে জমিদারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, সেখানে সাধারণ মানুষ হাতের পুতুলের মতো নিয়ন্ত্রিত। সেই সময়কার সহজ, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিরূপে ফুটে ওঠেছে এই কবিতার মুখ্য চরিত্র উপেন। উপেন চরিত্রটি উপস্থাপনাগুণে পাঠকহৃদয়ের সহানুভূতি অতি সহজেই আকর্ষণ করে।
সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো
১। “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি।
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরচিত ‘দুই বিঘা জমি’ শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত।
বক্তা হলেন উপেন। উপনের এই উক্তিটির মধ্যদিয়ে ধনী-গরীবে বিভক্ত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। উপেনের সম্বল মাত্র দুই বিঘে ভিটে মাটি। অথচ রাজা তার বাগানকে দৈর্ঘ্য – প্রস্থে সমান করার জন্য উপেনের জমি কিনে নিতে চায়। শক্তিহীন গরীব উপেন রাজার যাবতীয় দম্ভের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। রাজা জোর করে উপেনের জমি নিয়ে নেয়। উপেন সাতপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে সন্ন্যাসীবেশে পথে বেরিয়ে যায়। তখন যাওয়ার পথে উপেন ভাবে এই জগতের কি আশ্চর্য্য নিয়ম, যার সম্পত্তি ভূরি ভূরি আছে সেই ব্যক্তি আরো বেশি সম্পত্তির নেশায় সাধারণ মানুষের অধিকারকেও কেড়ে নিতে চায়। নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার চাহিদায় অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। রাজতন্ত্রের আধারে যে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল সমাজে তারই যথাযথ চিত্র ফুটে ওঠে কবিতায়।
২। “ভাবিলাম মনে, বুঝি এতক্ষণে আমারে চিনিল মাতা
স্নেহের সে দানে কহ সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা !”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরচিত ‘দুই বিঘা জমি ‘ শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত।
দুইবিঘা জমির মালিক উপেন রাজার ভয়ে ও ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের কাছে শেষ সম্বল এই দুই বিঘা জমিকে বিক্রি করে গ্ৰাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে । দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ন্যাসীবেশে সাধুর শিষ্য হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় । দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় উপেনের নানা মনোরম দৃশ্য নজরে আসে তথাপিও উপেন তার দুই বিঘে জমির কথা ভুলতে পারেনি । পনেরো-ষোলো বছর পর তার গ্ৰামের ভিটে মাটিতে ফিরে আসে । ভিটেতে থাকা বাল্যকালের সঙ্গী আমগাছটির নীচে বসে নানা কথা স্মরণ করে যাচ্ছিল এমন সময় বাতস তার কোলের পাশে আমগাছ থেকে পাকা দুটি আম ফেলে দেয়। তখন উপেনের মনে হল তাঁকে চিনতে পেরে আম গাছটি তাকে স্নেহে এই দুটি আম উপহার দিয়েছে, অথচ মানুষ মানুষকে চিনলনা। তখন উপেন এই স্নেহের দানে মাথা ঠেকায়।
৩। “হেনকালে হায় যমদূত প্রায় কোথা হতে এল মালী,
ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি !
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার অন্তর্ভূক্ত। জমিদারের মালীর কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল উপেনের আম দুটি গ্রহণ করলে তা এখানে ব্যক্ত হয়েছে।
দুই বিঘা জমির মালিক উপেন। ঋণের জালে জড়িয়ে সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে শুধু শেষ সম্বল হয়ে থাকে তার এই দুই বিঘা জমি। কিন্তু এই দুই বিঘা জমির উপরেও রাজার নজর। রাজার বাগান তৈরিতে জমিটি আবশ্যক হয়ে পড়ে। রাজা তার ক্ষমতা বলে উপেনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জমি কেড়ে নেয়। তখন উপেন সাতপুরুষের ভিটে হারিয়ে সন্ন্যাসীবেশে পথে বেরিয়ে পড়ে। দেশের নানা জায়গায় ঘুরলেও তার মাতৃভূমি ও দুইবিঘা জমির কথা ভুলতে পারেনি। অবশেষে পনেরো-ষোলো বছর পর তার গ্রামে ফিরে আসে । তার দুইবিঘা জমিতে থাকা আমগাছটি দেখে তার পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সে গাছের নীচে বসে যখন নানা কথা ভাবতে থাকে এমন সময় কোলের পাশে দুটি পাকা আম পড়ে। এই আম দুটি তুলতে দেখে রাজার মালী তাকে নানা গালিগালাজ করে আর রাজার কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে। রাজার লাটিয়ালরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। রাজা তার সন্ন্যাসী বেশ দেখে তাকে বলে, সে সাধুবেশ পরিধান করা সত্ত্বেও সে চোর তখন উপেন মনে মনে হেঁসে ভাবে এই ছিল তার কপালে। যে মহারাজ অন্যায়ভাবে তার সম্পত্তি কেড়ে নেয় সে আজ সাধু, আর সে চোর।
৪। “সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষীছাড়া !”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার অন্তর্গত। এখানে উপেন তার দুইবিঘে জমি না দেওয়ার যুক্তি দেখিয়েছে।
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র উপেন। সে গরীব। ঋণের জালে জড়িয়ে সমস্ত কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে উপেন। শুধু দুই বিঘা জমি তার শেষ সম্বল। সাতপুরুষের এই ভিটেমাটিতে উপেন জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি থাকতে চায়। কোনোভাবেই সে এই ভিটেমাটি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়না। কিন্তু ভূস্বামী রাজা তার বাগান তৈরিতে জমি আবশ্যক অনুভব করে। অনেক ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও দরিদ্র উপেনের দুই বিঘা রাস্তুভিটার উপর থেকে নজর এড়ায় না তার। জমিটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিলে উপেন রাজী হয়নি। উপেন রাজাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, মাত্র এই দুই বিঘা জমিই তার সম্বল। কিন্তু রাজা অধিক ভূসম্পত্তির মালিক। উপেন হাতজোড় করে বলতে থাকে এই বাস্তুভিটা তার সাতপুরুষের। এই মাটিটি সোনার বাড়া কারণ এই মাটিতে উপেনের সাতপুরুষ মানুষ হয়েছে। দৈন্যের দায়ে এই মাটিকে বিক্রি করে দেবে এমন লক্ষীছাড়া ব্যক্তি সে নয়। উপেন সাতপুরুষের এই ভিটেমাটি আগলে রেখে বাঁচতে চায়। এছাড়া এই মাটিতে তার মরণের ঠাঁই। কবিতায় আমরা দেখি রাজার ভয় ও ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের কাছে নতী স্বীকার করে মিথ্যা দেনার দিয়ে উপেন রাজার কাছে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে।
৫। আমি কহিলাম ‘শুধু দুটি আমি ভিখ মাগি মহাশয়।’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়।’
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতা থেকে গৃহীত। উপেন আম দুটি ভিক্ষে চাইলে জমিদার এমন কথা বলেছেন। এখানে বাবু হলেন জমিদার। রাজা উপেনকে সাধুবেশে পাকা চোর বলেছে। রাজার ভয় ও ক্ষমতার কাছে উপেন তার সমস্ত ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে দুই বিঘে ভিটে মাটি বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে। সন্ন্যাসীবেশে দেশের বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ায়। তথাপি দিনরাত্রি তার দুইবিঘা জমির কথা মনে পড়ে। পনেরো-ষোলো বছর পর সে চলে আসে তার গ্রামে। সেখানে তার ভিটেতে থাকা আম গাছটির নীচে বসে বাল্যকালের কথা স্মরণ করে। এমন সময় বাতাস তার কোলের পাশে দুইটি পাকা আম ফেলে দেয়। আম দুটি তুলতে রাজার মালী দেখতে পেয়ে তাঁকে গালিগালাজ করে এবং তার বিরুদ্ধে রাজার কাছে নালিশ করে। তখন রাজা তার বেশভূষা দেখে উপরোক্ত উক্তিটি বলেন।
৬। “আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে-
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি চোর বটে।”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘দুই বিঘা জমি’ নামক কবিতা থেকে গৃহীত।
দুটি আম হাতে তুলে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মহারাজ উপেনকে চোরের অপবাদ দেওয়ায় উপেন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
রাজা তার ক্ষমতা বলে উপেনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুই বিঘা জমি কেড়ে নেয়। তখন উপেন তাঁর শেষ সম্বল সাতপুরুষের ভিটে হারিয়ে সন্ন্যাসী বেশে পথে বেরিয়ে পড়ে। দেশের নানা জায়গায় ঘুরলেও তার মাতৃভূমি এই জমির কথা ভুলতে পারেনি। অবশেষে পনেরো-ষোল বছর পর তার নিজ গ্রামে ফিরে আসে। সে তার দুই বিঘা জমিতে থাকা আম গাছটির নীচে যখন বসে তখন তার কোলের পাশে দুটি পাকা আম পড়ে। সে যখন এই আম দুটি তুলে হাতে নেয়, তখন মালি এসে তা দেখে, রাজার কাছে ধরে নিয়ে যায়। রাজা তার সন্ন্যাসীর বেশ দেখে বলেন সাধুবেশ ধারণ করা সত্বেও সে পাকা চোর। চোরের অপমান শুনে উপেনের মনে ভীষণ দুঃখ হয়। সে মনে মনে হেসে ভাবে এই ছিল তার কপালে। যে মহারাজ অন্যায় ভাবে তার সম্পত্তি কেড়ে নেয় সে আজ সাধু, আর সে চোর।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। “শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন ? এ জমি লইব কিনে।”
উপেন কে ? জমি কিনে কে নেবে এবং কেন ?
উত্তরঃ উপেন দুই বিঘা জমির মালিক। রাজা জমি কিনে নেবে। কারণ রাজা বাগান নির্মাণ করছেন। বাগান প্রস্থে ও দৈর্ঘ্যে সমান হওয়ার জন্য উপেনের শেষ সম্বল এই দুই বিঘা জমির প্রয়োজন। উপেন জমিটি বিক্রি করতে না চাইলেও ভয় দেখিয়ে রাজা তার জমিটি দখল করে।
২। শুধু ‘দুই বিঘা জমি’ ছিল কার ? কে তা কিনে নিতে চেয়েছেন ? সেই প্রস্তাব এলে উপেন কি উত্তর দিয়েছে ?
উত্তরঃ শুধু ‘দুই বিঘা জমি’ ছিল উপেনের। রাজা তা কিনে নিতে চেয়েছেন। রাজার জমি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব এলে উপেন রাজাকে অনুনয় বিনয় করে বলে, রাজার জমির অভাব নেই কিন্তু তার কাছে এই দুই বিঘা জমি তার শেষ সম্বল। তার মরবার ঠাঁই। রাজা যাতে তাঁকে তার জমি থেকে বঞ্চিত না করেন।
৩। “কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী ভূমির অন্ত নাই চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।” – পংক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উপেন গরীব। অতিকষ্টে জীবনযাপন করে। ঋণের জালে জড়িয়ে উপেন তার সমস্ত জমি বিক্রি করে দেয়। এখন সম্বল তার এই ভিটে মাটি। কিন্তু রাজার দৃষ্টি পড়ে তার এই জমির উপর। রাজা তার বাগানকে সমান করার জন্য উপেনের এই জমি চান। তখন উপেন অনুনয় বিনয় করে রাজাকে বলে, তার জমির অভাব নেই, কিন্তু উপেনের কাছে এই দুই বিঘে জমি তার শেষ সম্বল, তার মরবার ঠাঁই। তাই রাজা যেন তার কথা ভেবে এই জমি থেকে তাকে বঞ্চিত না করেন।
৪। “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।”
– বক্তা কে ? প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ বক্তা হলেন উপেন। উপনের এই উক্তিটির মধ্যদিয়ে ধনী-গরীবে বিভক্ত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। উপেনের সম্বল মাত্র দুই বিঘে ভিটে মাটি। অথচ রাজা তার বাগানকে দৈর্ঘ্য – প্রস্থে সমান করার জন্য উপেনের জমি কিনে নিতে চায়। শক্তিহীন গরীব উপেন রাজার যাবতীয় দম্ভের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। রাজা জোর করে উপেনের জমি নিয়ে নেয়। উপেন সাতপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে সন্ন্যাসীবেশে পথে বেরিয়ে যায়। তখন যাওয়ার পথে উপেন ভাবে এই জগতের কি আশ্চর্য্য নিয়ম, যার সম্পত্তি ভূরি ভূরি আছে সেই ব্যক্তি আরো বেশি সম্পত্তির নেশায় সাধারণ মানুষের অধিকারকেও কেড়ে নিতে চায়। নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার চাহিদায় অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। রাজতন্ত্রের আধারে যে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল সমাজে তারই যথাযথ চিত্র ফুটে ওঠে কবিতায়।
৫। “মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দুবিঘার পরিবর্তে।”
তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি উপেনের বিদীর্ণ আত্মার প্রতিফলন। ঋণের জালে জড়িয়ে উপেনের সমস্ত জমি-জমা বিক্রি হয়ে গেছে। শেষ সম্বল শুধু দুই বিঘে জমি। এই জমিতেই তার সাতপুরুষ মানুষ হয়ে গেছে। তাই তারও ইচ্ছে দুই বিঘা জমিকে আগলে রেখে যাতে এর মধ্যেই মরণ হয় তার। কিন্তু রাজার স্বার্থের জন্য শেষ পর্যন্ত ছাড়তে হয় এই জমিকেও। মিথ্যে ঋণের দায়ে এই দুই বিঘা জমি রাজার কাছে বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে। পথে পথে হাঁটতে- হাঁটতে উপেনের মনে উদয় হয় সমাজের নিদারুণ প্রশাসনের কথা। যে রাজা সমস্ত প্রজার খেয়াল রাখবে, সুখে দুঃখে পাশে থাকবে সেই রাজাই আজ উপেনকে পথের ভিখেরী করে দেয়। হাল ছাড়া ও হাল ভাঙ্গা মনে উপেন আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়। সে ভাবল ভগবানই চান না তাই মোহগর্তে আমি ছড়িয়ে থাকি। তাই ভগবানই কৌশল করে আমার ভিটেমাটির পরিবর্তে সমস্ত বিশ্বকে আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন। তার কথায় ফুটে ওঠে দুই বিঘার পরিবর্তে ভগবান যেন, সমস্ত বিশ্বের মালিক করে দিয়েছেন।
৬। “সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোহর দৃশ্য।”
– তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র উপেন। সে গরীব। ঋণের দায়ে সমস্ত কিছু বিক্রি করে দুই বিঘা জমির ভিটেমাটি নিয়ে গ্রামের এককোনে বসবাস করে। রাজার বাগান তৈরিতে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান করার জন্য উপেনের দুই বিঘা জমি আবশ্যক হয়ে ওঠে। তাই ভিটেমাটি কিনে নেওয়ার কথা রাজা উপেনকে বলেন। কিন্তু উপেন সাতপুরুষের ভিটেমাটি বিক্রি করতে চায়না। তার ইচ্ছা এই জমিকে সে যে করে হোক আগলে রাখবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত রাজার কাছে বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে সন্ন্যাসীর বেশে। উপেন সন্ন্যাসীবেশে দেশে ঘুরতে থাকে। যে রকম ঘুরে সাধুর শিষ্যরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায়
ঘোরার পথে নানা মনোহর দৃশ্য তার নজরে আসে কিন্তু তা সত্ত্বেও উপেন ভুলতে পারেনি তার মাতৃভূমি আর ভিটেমাটির কথা। গ্রামে ফিরে এসে দেখে তার মাতৃসম ভিটেমাটি রাজার সেবাদাসী। এতদিন যার কল্যাণময়ী রূপ ছিল, এখন তার চিহ্ন নেই।
৭। “ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই দুই বিঘা জমি।”
– তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ দুই বিঘা জমির মালিক উপেন। ঋণের জালে জড়িয়ে সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে শুধু শেষ সম্বল হয়ে থাকে তার দুই বিঘা জমি। কিন্তু এর উপরেও রাজার নজর। রাজা তার বাগানকে দৈর্ঘ্যে – প্রস্থে সমান করে তোলার জন্য উপেনের শেষ সম্বলটি কেড়ে নেয়। উপেন সাতপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে সন্যাসী বেশে পথে বেরিয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মনোরম দৃশ্য দেখলেও তার মাতৃভূমি ও দুই বিঘা ভিটে মাটিকে ভুলতে পারেনি। রাতদিন সে তার দুই বিঘা জমির কথা মনে করতে থাকে।
৮। ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়। – কে কাকে সাধুবেশে পাকা চোর বলেছে ? তার এরূপ বলার কারণ কি ?
অথবা,
‘বাবু কহে হেসে, বেটা সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়।’ – এখানে ‘বাবু’ কে ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ এখানে বাবু হলেন জমিদার। রাজা উপেনকে সাধুবেশে পাকা চোর বলেছে। রাজার ভয় ও ক্ষমতার কাছে উপেন তার সমস্ত ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে দুই বিঘে ভিটে মাটি বিক্রি করে পথে বেরিয়ে পড়ে। সন্ন্যাসীবেশে দেশের বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ায়। তথাপি দিনরাত্রি তার দুইবিঘা জমির কথা মনে পড়ে। পনেরো-ষোলো বছর পর সে চলে আসে তার গ্রামে। সেখানে তার ভিটেতে থাকা আম গাছটির নীচে বসে বাল্যকালের কথা স্মরণ করে। এমন সময় বাতাস তার কোলের পাশে দুইটি পাকা আম ফেলে দেয়। আম দুটি তুলতে রাজার মালী দেখতে পেয়ে তাঁকে গালিগালাজ করে এবং তার বিরুদ্ধে রাজার কাছে নালিশ করে। তখন রাজা তার বেশভূষা দেখে উপরোক্ত উক্তিটি বলেন।
৯। “নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি !
গঙ্গারতীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।”
– উক্তিটি কার ? বক্তা বঙ্গভূমির কী রূপ দেখতে পেয়েছেন ?
অথবা,
তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি উপেনের।
‘দুই বিঘা জমি ‘ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র গরীব উপেন। তার শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি রাজার কাছে বিক্রি করে পথে বের হয়। উপেন তার সাতপুরুষের ভিটেমাটি বিক্রি করতে চায়নি, কিন্তু রাজার ক্ষমতার আগ্ৰাসনে উপেন জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। উপেন সর্বশান্ত হয়ে পথে বের হয় । দেশ-দেশান্তরে সন্ন্যাসীবেশে ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু সে তার মাতৃভূমি ও দুইবিঘেকে ভুলতে পারেনি। পনেরো-ষোলো বছর বাইরে কাটিয়ে উপেন নিজের গ্ৰামের আসার পথে দেখে এসেছে অনেকগুলি গ্ৰাম। গ্ৰামের চালচিত্রগুলি দেখতে দেখতে যখন নিজের গ্ৰামে এসে পৌঁছেছে তখন তার গ্ৰামের প্রতি আবেগবহুল হয়ে উদ্ধৃতিটি করেন উপেন। তার মাতৃভূমি বঙ্গজননীর প্রতি নমস্কার করেন। নিজের গ্ৰামের উপেন পরমসুন্দরীর সংগে তুলনা করেছেন। বাল্যকাল যে গ্রামকে নিয়ে কেটেছে দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া হয়ে আবার সেই গ্রামের স্পর্শে এসে উপেনের হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। গঙ্গার তীরের শীতল স্নিগ্ধ বাতাস উপেনের দীর্ঘদিনের বেদনাতুর হৃদয়কে জুড়িয়েছে। উপেন গ্রামে প্রবেশ করে সেই প্রশান্তি অনুভব করেছে, যেই প্রশান্তির স্পর্শ পেয়েছিল বাল্যকালে।
১০। “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ দুই বিঘা জমির মালিক উপেন। ঋণের জালে জড়িয়ে সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে শুধু শেষ সম্বল হয়ে থাকে তার এই দুই বিঘা জমি। কিন্তু এই দুই বিঘা জমির উপরেও রাজার নজর। রাজার বাগান তৈরিতে জমিটি আবশ্যক হয়ে পড়ে। রাজা তার ক্ষমতা বলে উপেনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জমি কেড়ে নেয়। তখন উপেন সাতপুরুষের ভিটে হারিয়ে সন্ন্যাসীবেশে পথে বেরিয়ে পড়ে। দেশের নানা জায়গায় ঘুরলেও তার মাতৃভূমি ও দুইবিঘা জমির কথা ভুলতে পারেনি। অবশেষে পনেরো-ষোলো বছর পর তার গ্রামে ফিরে আসে। তার দুইবিঘা জমিতে থাকা আমগাছটি দেখে তার পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সে গাছের নীচে বসে যখন নানা কথা ভাবতে থাকে এমন সময় কোলের পাশে দুটি পাকা আম পড়ে। এই আম দুটি তুলতে দেখে রাজার মালী তাকে নানা গালিগালাজ করে আর রাজার কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে। রাজার লাটিয়ালরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। রাজা তার সন্ন্যাসী বেশ দেখে তাকে বলে, সে সাধুবেশ পরিধান করা সত্ত্বেও সে চোর তখন উপেন মনে মনে হেঁসে ভাবে এই ছিল তার কপালে। যে মহারাজ অন্যায়ভাবে তার সম্পত্তি কেড়ে নেয় সে আজ সাধু, আর সে চোর।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটির রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
উত্তরঃ ‘কথা ও কাহিনী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
৩। “শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে ” -কার দুই বিঘে জমি ছিল ?
উত্তরঃ উপেনের।
৪। “রাজার হস্ত করে সমস্ত ………….. ধন চুরি ।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ কাঙালের ।
৫। “এ জগতে হায় বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি ” -উক্তিটি কার ?
উত্তরঃ উপেনের।
৬। উপেন কত বৎসর পর তাঁর গ্ৰামে ফিরে আসে ?
উত্তরঃ পনেরো-ষোলো বৎসর পর।
৭। ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়! – উক্তিটি কার ?
উত্তরঃ উক্তিটি রাজার অর্থাৎ এখানে জমিদারের কথা বলা হয়েছে।
৮। উপেনের কোলে বাতাস কী ফেলেছিল ?
উত্তরঃ পাকা দুটি আম।
৯। ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’ – এখানে কাকে চোর বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ উপেনকে।
১০। ‘মারিয়া করিব খুন’ – কে কাকে মেরে খুন করবে ?
উত্তরঃ জমিদার উপেনকে।
১১। ভূস্বামী শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর। ভূমির মালিক।
১২। “পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ” -‘খেলাগেহ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ খেলবার ঘর।
১৩। সন্ন্যাসী বেশে ফিরি দেশে দেশে – এখানে সন্ন্যাসী কে ?
উত্তরঃ উপেন।
১৪। ‘লক্ষীছাড়া’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ লক্ষীহীন (সম্পত্তিহীন)।
১৫। ‘বাবু কহে হেসে’ – এখানে ‘বাবু’ কে ?
উত্তরঃ এখানে বাবু হলেন জমিদার।
১৬। শব্দার্থ লেখোঃ- পাণি।
উত্তরঃ হাত।
১৭। ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রম্ভে ও দিঘে সমান হইবে টানা।’
– কে, কাকে একথা বলেছেন ?
উত্তরঃ জমিদার উপেনকে একথা বলেছেন।
১৮। ‘— বুঝেছ …….. ? এজমি লইব কিনে ।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ উপেন।
১৯। “… ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।”
– কে, কাকে একথা বলেছেন ?
উত্তরঃ জমিদার উপেনকে একথা বলেছেন।
২০। “দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া।”
– কে, কাকে বলেছে ?
উত্তরঃ দু’বিঘে জমির মালিক উপেন জমিদারকে একথা বলেছে।
FAQs
Question: Where I can get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Suggestion Chapter Wise?
Answer: You can get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Suggestion Chapter Wise On Roy Library. For every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly.
Question: Which is the best Site to get Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Solutions?
Answer: Roy Library is a genuine and worthy of trust site that offers reliable information regarding Assam AHSEC Board Class 11 Advance Bengali Solutions.
Question: How can students use the solutions for exam preparation?
Answer: Students can use the solutions for the following:
- Students can use solutions for revising the syllabus.
- Students can use it to make notes while studying.
- Students can use solutions to understand the concepts and complete the syllabus.
IMPORTANT NOTICE
We have uploaded this Content by Roy Library. You can read-write and Share your friend’s Education Purposes Only. Please don’t upload it to any other Page or Website because it is Copyrighted Content.
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.