Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

44. ‘Expel Asia’ মতবাদের প্রবক্তা কে? এর মাধ্যমে কি চাওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ মেইজি বুদ্ধিজীবী ফুকুজাওয়া ইউকিচি হচ্ছেন ‘Expel Asia’ মতবাদের প্রবক্তা। এই মতবাদের মাধ্যমে তার আবেদন ছিল যে জাপান পাশ্চাত্যের দেশগুলির মতো উন্নত ও বিকশিত হয়ে উঠতে হলে তার এশীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে অতিক্রম করে পাশ্চাত্য সভ্যতার পথ অনুসরণ করা প্রয়োজন। 

45. দুইজন মেইজি বুদ্ধিজীবীর নাম লেখ।

উত্তরঃ দুইজন মেইজি বুদ্ধিজীবী হলেন—

(ক) মিয়াকে সেতসুরেই। এবং 

(খ) ইউকি ইমোরি।

46. নিশিতানি কেইজি কে ছিলেন?

উত্তরঃ নিশিতানি কেইজি ছিলেন একজন জাপানী দার্শনিক। তিনি আধুনিক শব্দটিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনটি ইউরোপীয় চিন্তাধারা—নবজাগরণ, প্রতিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলন এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উত্থানের সংমিশ্রণ বলে।

47. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় জাপানের কোন দুইটি শহরের উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল? 

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় জাপানের দুইটি শহর—

(ক) হিরোসিমা। এবং 

(খ) নাগাসাকির উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল।

48. জাপান কখন ও কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে? 

উত্তরঃ জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবার নৌঘাঁটি আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে।

49. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ কেন জাপানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বছর? 

উত্তরঃ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বছর, কারণ-

(ক) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপান ওলিম্পিক খেলা আয়োজন করে।

(খ) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানে দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন যাত্রা শুরু করে। এই দুই উপস্থাপনার দ্বারা জাপান বিশ্বের দরবারে তার অর্থনৈতিক ও কারিগরি প্রযুক্তিগত বা উন্নতির প্রমাণ দেয়।

50. ঊনবিংশ শতকের প্রারম্ভে চীন ও জাপানের রাজনৈতিক অবস্থার তুলনা কর। 

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের প্রথমভাগে পূর্ব এশিয়ায় চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। চীনে কুয়াং রাজবংশ নিরাপদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। অন্যদিকে জাপান একটি ক্ষুদ্র দ্বীপবিশেষ ছিল এবং বহির্জগৎ হতে সম্পূর্ণ পৃথক মনে হত।

51. বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ হ্রাস করার জন্য জাপান কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল? 

উত্তরঃ জাপানের জনসংখ্যা ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৩৫ লক্ষ। কিন্তু ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা ৫৫ লক্ষে বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ হ্রাস করার জন্য জাপান স্থানীয় লোককে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছিল। এর ফলে। জাপানী প্রব্রজন শুরু হয়। এইরূপ প্রথম প্রব্রজনকারী দলটি হক্কাইডো দ্বীপে চলে যায়। পরবর্তীতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিল যায়।

52. “এশিয়াকে নির্বাসিত কর।” উক্তিটি কে ব্যবহার করেছিলেন? এর দ্বারা কি বোঝানো হয়েছিল? 

উত্তরঃ এশিয়াকে নির্বাসিত করতে হবে — উক্তিটি ফুরুজায়া মুকিসি নামে একজন করেছিলেন।

তাঁর একটি মতামতের অর্থ ছিল এই যে জাপান এশিয়া মহদেশের চারিত্রিক গুণসমূহ পরিত্যাগ করে নিজেকে পশ্চিমী দেশের অঙ্গ হিসাবে গণ্য করা উচিত।

53. জাপান কিভাবে আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হয়েছিল?

উত্তরঃ জাপানে ১৯৩০ এবং ১৯৪০ দশকে তীব্র জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই ফলে দেশটি একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশে রূপান্তরিত হয়েছিল। এই সময়সীমার মধ্যে জাপান—

(ক) চীন দখল করে একটি আধুনিক রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিল।

(খ) ১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে একটি আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল। 

54. আমেরিকা কেন জাপানে কলোনী স্থাপন করতে চেয়েছিল?

উত্তরঃ আমেরিকা জাপানে কলোনী স্থাপন করার উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) জাপানে ঘাঁটি স্থাপন করে আমেরিকা চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে চীনেও একটি কলোনী বা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।

(খ) প্রশান্ত মহাসাগরে তিমি মাছ শিকার করতেও তেল ভরার জন্য আমেরিকা জাপানের উপকূলে ভাগে অবতারণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল।

55. আধুনিক দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে জাপান কোন নীতি গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ জাপানকে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার ক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তাছাড়া জাপানকে একটি উদ্যোগিক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাপান সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।

56. আধুনিক চীনের ইতিহাস রচনার কেন্দ্রস্থ বিষয়গুলি কি কি? 

উত্তরঃ চীনের ইতিহাস চর্চায় – 

(ক) কিভাবে সার্বভৌমত্ব পুনরায় অর্জন করা যায়। 

(খ) কীভাবে বিদেশীদের অপমানজনক আগ্রাসনের সমাপ্তি ঘটে। ও 

(গ) কিভাবে সমতা ও উন্নতির পথকে প্রশস্ত করা যায় এ সমস্ত বিষয়বস্তুর উপরই কেন্দ্র করে চীনের আধুনিক ইতিহাস আবর্তিত হয়।

57. চীন ও জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ চীন ও জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) চীন একটি বিশাল দেশ যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া বিভিন্ন ধরনের, অন্যদিকে জাপান একটি দ্বীপমালার দেশ। 

(খ) জাপান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত, কিন্তু চীন-এর অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নয়।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. গণপ্রজাতন্ত্রী চীন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র চীন ছিল এক প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। খ্রিস্টপূর্ব ২২১ অব্দ থেকে চীনে রাজতন্ত্র তথা একনায়কতন্ত্রী শাসন চলে আসছিল। ১৯১২ সাল পর্যন্ত অত্যাচারী মাঞ্চু রাজবংশ চীন শাসন করেছিল। ১৯১১ সালে আধুনিক চীনের নির্মাতা ও জনক ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে মাঞ্চু শাসনের অবসান হয় এবং চীনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ডঃ সেন ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কিন্তু চীনে উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপিত না হওয়ায় ডঃ সেনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনায় অসুবিধা হয়।। পরে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় চীনে সংহতি স্থাপিত হয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

2. কুওমিনতাং সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ কুওমিনতাং হল আধুনিক চীনের নির্মাতা ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। ডঃ সেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে কুওমিনতাং দল গঠন করেন। চীনে অত্যাচারী মাঞ্চু বংশের পতন ঘটানোই ছিল ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের মূল লক্ষ্য। তিনি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে চীনে মাঞ্চুবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে ডঃ সেন দেশ হতে বহিষ্কৃত হন। তিনি প্রায় ১২ বৎসরকাল বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাপানে তার অনুগামী চিয়াং কাই-শেককে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলই পরে চীনে কুওমিনতাং পার্টি নামে পরিচিত হয়। এই কুওমিনতাং পার্টির নেতৃত্বে চীনে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব পরিচালিত হয় এবং চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

3. ডঃ সান ইয়াৎ-সেন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ আধুনিক চীনের জনক ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ক্যান্টন শহরের নিকট একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল হতেই তাঁর মনে দেশপ্রেম জেগে ওঠে। বিপ্লবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা তাঁর মনে বিপ্লবী চিন্তাধারা বিকশিত হয়। ছাত্র জীবন হতেই রাজনীতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ঘটে। তিনি চীনের মাঞ্চু বংশের উৎখাতসাধনে বদ্ধপরিকর হন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘সিন-চু-হুই’ বা ‘চীনের জাগরণ সমিতি’ গঠন করেন। পরে তিনি ‘সান-মিন-চু-আই’ নামে বিপ্লবের তিনটি নীতি ঘোষণা করেন। এই তিনটি নীতি ছিল – (ক) জনজাতীয়তাবাদ, (খ) জনগণতন্ত্র, এবং (গ) জনগণের জীবিকার সংস্থান।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবে ডঃ সেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মাঞ্চু শাসনের অবসানক্রমে চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর চেষ্টায় চীনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চীনের ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় তিনি চীনের সংহতি রক্ষা করতে সমর্থ হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ডঃ সেন পরলোকগমন করেন।

4. চিয়াং কাই-শেক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। 

উত্তরঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের উত্তরসূরি চিয়াং-কাই-শেক ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি চীনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের শাসনকার্যে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং জাতীয় সংবিধান সভার আহ্বান করেন। এই সভাতেই দেশের অন্তবর্তী সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার উভয়েরই প্রধান ছিলেন।

চিয়াং কাই-শেক চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। এর মধ্যে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে তিনি চীনার ভাষায় অসাধারণ সংশোধন করেন। চীনে বসবাসকারী বিদেশি লোকদের উপর চিয়াং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। দীর্ঘ ১৮ বৎসর অরাজকতার পর চীনে শাসনকার্য সুচারুরূপে সম্পাদন করা কঠিন ছিল। সমগ্র দেশে এক প্রকার শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। চিয়াং কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনে সুস্থিতি স্থাপন করতে সফল হন। 

5. মাও সে-তুং সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ ।

উত্তরঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান মাও সে-তুং (মাও জে-ডং) ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি চীনে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবক্তা। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাও মার্ক্সবাদ গ্রহণ করেন এবং ধীর বিপ্লবের পন্থা পরিত্যাগ করে সশস্ত্র বিপ্লবের নীতি গ্রহণ করেন।

কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে মাও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গণমুক্তি বাহিনী’ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যৌথভাবে বিরোধী দমনে মাওকে নানাভাবে সাহায্য করে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে মাও চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীনে উপকারের চেয়ে অপকারই করে। সারাজীবন ব্যাপী মাও কমিউনিজমের প্রসারে নানাপ্রকার তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। তাঁর প্রবর্তিত মাওবাদ হল মার্ক্সবাদের একপ্রকার শোধনবাদ। মাওবাদ ত্রুটিপূর্ণ থাকায় মাওয়ের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি মাওবাদ পরিত্যাগ করতে আরম্ভ করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর মাও পরলোকগমন করেন। 

6. চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব কখন ঘটেছিল? এর গুরুত্ব কি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। মাও জে দং-এর নেতৃত্বে চীনে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

গুরুত্বঃ চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের বিজয় বিশ্বের একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল রাষ্ট্র কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে আসে। ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়াও দুইটি শক্তিশালী রাষ্ট্র–সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনা বিপ্লবের ফলে এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবঃ গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি বিরাট পরাজয়। সে চীনের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, চীনে বৈধ সরকার হল ফরমোসায় চিয়াং কাই-শেকের সরকার। 

7. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের চীন বিপ্লবের ফলাফল ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীন বিপ্লবের ফলে দুটি প্রধান ফলাফল দেখা দেয়। এইগুলি হল মাঞ্চু সাম্রাজ্যের সমাপ্তি এবং গণরাজ্যের প্রতিষ্ঠা। এই বিপ্লবের ফল কেবলমাত্র দুটি বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এই বিপ্লব রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রের বিষয়। এই বিপ্লবের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে এটি বিনা রক্তপাতে শেষ হয়েছিল। তাছাড়াও চীনের জনগণ একটি সংবিধান লাভ করেছিল। এই বিপ্লবের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল জনগণ চিয়াং কাই-শেকের প্রতিনিধিকে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তা ছাড়াও এই বিচারে বিদেশী শক্তিসমূহ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিল। এই বিপ্লব চীনের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ বিস্তার করে এবং চীনের জনগণকে শোষণের হাত হতে মুক্ত করে।

8. চীনের মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে যা জানো লেখ। 

উত্তরঃ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসাবে মাও চীনের জনগণকে নূতন ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি চীনের সকল প্রকার ক্রিয়াকলাপের পথপ্রদর্শক। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। জনকল্যাণকামী নীতিতে মাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মাও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ। মাও এই মর্মে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে লাল বাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব সাফল্যলাভ করতে পারেনি এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপন্ন করে তোলে। অধিকন্তু রাজনৈতিক কার্যে অধিক সংখ্যক সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি দেশের শান্তি ও রাজনৈতিক সুস্থিতি নাই করে।

9. চীনের লং মার্চ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ চীনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মাও জেদং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টগণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফলে চিয়াং কাই-শেকের সঙ্গে কমিউনিস্টদের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। সেইজন্য চিয়াং কমিউনিস্টদের নিঃশেষ করার জন্য এক অভিযান আরম্ভ করে। কমিউনিষ্টরা কিম্নাংসী থেকে মোনসী পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ মাইল পথ যাত্রা করে। একে ‘দীর্ঘযাত্রা’ বা ‘লং মার্চ” বলে জানা যায়। চিয়াং-এর সেনাবাহিনী মাও-এর লাল ফৌজ বাহিনীকে পিছে পিছে। তাড়িয়ে নিয়ে যায়। এই সময়সীমার মধ্যে লাল ফৌজ বা কমিউনিস্টগণ ১৮টি পর্বত, ২৪টি নদী এবং প্রায় ছয় হাজার মাইল দুর্গম পথ অতিক্রম করে। পরিশেষে অবশ্য লাল ফৌজ বাহিনী বা কমিউনিস্টগণই জয়লাভ করে। 

10. সান ইয়াত সেনের তিনটি বাণী তথা মূল নীতিসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ আধুনিক চীনের নির্মাতা ডঃ সান ইয়াৎ- সেন নিজ লক্ষে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত তিনটি নীতি ঘোষণা করেছিলেনঃ

(ক) জাতীয়তাবাদ।

(খ) ধণতন্ত্র।

(গ) সমাজবাদ।

প্রথম নীতির উদ্দেশ্য ছিল মাধু রাজবংশ ও বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের পতন। দ্বিতীয় নীতির উদ্দেশ্য ছিল চীনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয় নীতির উদ্দেশ্য ছিল পুঁজি নিয়ন্ত্রণ এবং ভূমির মালিকী স্বপ্নের সম বিতরণ।

11. চীনের অগ্রগতিতে প্রভাব থাকা তিনটি ভিন্নতর মতামত কি কি?

উত্তরঃ মূলত নিম্নলিখিত তিন ধরনের মতামতের উপর ভিত্তি করে চীন দেশের যুক্তি ও চিন্তাধারা বিকশিত হয় এবং চীনের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করেঃ

(ক) বিদেশি প্রত্যাহ্বান মোকাবিলায় কুটং ইউয়েই ও লিয়াং কিচাও-এর মতো প্রাচীন সমাজ সংস্কারকরা মূলত চিরাচরিত ধারণা বা মতামতের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। 

(খ) চীন সাধারণতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ড. সান ইয়াত সেন-এর মতো প্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী বিপ্লবীরা জাপান ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের ভাবধারায় প্রভাবিত ছিলেন। 

(গ) চীনের সাম্যবাদী বা কমিউনিস্ট দল দীর্ঘদিনের অসাম্যের সমাপ্তি ঘটাতে ও বিদেশীদের বিতাড়িত করতে সচেষ্ট ছিলেন।

12. ইংরেজরা কিভাবে চীনে আফিম বাণিজ্য গড়ে তুলেছিল? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা,

কিভাবে ভারত, চীন ও ইংলন্ডের মধ্যে ত্রিমুখী বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল? সংক্ষেপে লেখ ।

উত্তরঃ ১৯ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপে চীনে উৎপাদিত চা, রেশম, পোর্সেলিন ইত্যাদির চাহিদা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারণ চীনে পাশ্চাত্য উৎপাদিত জিনিসের বিশেষ চাহিদা ছিল না। ফলে রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে চীন থেকে জিনিস ক্রয় করতে হত ইউরোপীয় বণিকদের। ইংরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর প্রেক্ষিতে ভারত থেকে আফিম নিয়ে চীনে বিক্রয় শুরু করে এবং চীনারা ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়লে, লাভের অংশ দিয়েই তারা চীন থেকে চা, রেশম ও পোর্সেলিন কিনত ও তা ইউরোপে বিক্রয় করত। এইভাবেই আফিম বাণিজ্যের মাধ্যমে চীন, ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ত্রিমুখী ‘বাণিজ্য’ গড়ে উঠেছিল।

13. চীনাদের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞান প্রসারের জন্য কিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ চীনে জনসাধারণকে আধুনিক পাশ্চাত্য বিষয়গুলিতে প্রশিক্ষিত করবার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের অধ্যয়নের জন্য পাঠানো হয় জাপান, ব্রিটেন ও ফ্রান্সে। অধায়নপর্ব শেষ করে ছাত্ররা শুধু নতুন চিন্তাধারা নিয়েই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেনি, তাদের মধ্যে অনেকেই নেতৃস্থানীয় প্রজাতন্ত্রবাদী হিসাবে আত্মসমর্পণ করেন। এমনকি ন্যায়বিচার, অধিকার, বিপ্লব, ইত্যাদি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দের জাপানি অনুবাদও চীনারা ধার করেছিল, কারণ তারাও চিত্রগত লিপি ব্যবহার করত।

14. ‘চতুর্থ মে (May) আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা ছিল চরম পর্যায়ে। যুদ্ধোত্তর শান্তি কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে তারিখে বেজিংয়ে ধরনা কার্যসূচী পালন করা হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটেনের নেতৃত্বে বিজয়ী মিত্রশক্তির জোট বন্ধনে থাকলেও চীন তাদের দেশের দখলিকৃত জমি ফিরে পায়নি। চারিদিকে তাই প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু হয়, যা যে চতুর্থ আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে আধুনিক বিজ্ঞান, গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে। চীন বাঁচাও আহ্বান জানানো হল। চীনের সম্পদকে বিদেশীদের কবল থেকে মুক্ত করা এবং অসাম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বিদেশীদের উৎখাত করার বৈপ্লবিক আহ্বান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সহজ ভাষার ব্যবহার, পায়ের বন্ধন মুক্তি, মহিলাদের প্রতি দমননীতির বিলুপ্তি সাধন, বিবাহের ক্ষেত্রে সমান অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি আন্দোলনের কার্যসূচী।

এই আন্দোলনে ছাত্র অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও সামিল হয়েছিল। দেশের সর্বত্র একমাস ধরে ধর্মঘট ও বিক্ষোভের চাপে শেষ পর্যন্ত সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়।

এই আন্দোলনের ফলে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন ও কমিউনিস্ট দলের উদ্ভব হয়। ভাষা-সংস্কার ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে গণশিক্ষার দ্রুত প্রসার হয়। প্রাচীনত্বের অবসান হয়ে নতুন চীনের জন্ম হয়। চীনে আধুনিকীকরণের গতি দ্রুততর হয়।

15. কুওমিনতাং দল কেন চীনকে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়নি? কারণগুলি লেখ।

উত্তরঃ কুওমিনতাং দল চীনকে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এর পিছনে নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ীঃ

(ক) সংকীর্ণ সামাজিক ভিত্তি।

(খ) সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। 

(গ) সম্পদের বিধিবদ্ধ সমবণ্টন ও ভূমির সমবণ্টনে বিফলতা।

(ঘ) কৃষকের প্রতি অবহেলা ও সামাজিক অসাম্যের প্রতি নজর না দেওয়া।

(ঙ) সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর সমাধানের পথে না গিয়ে দলের সামরিক আদেশ চাপানোর প্রচেষ্টা।

16. ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ 

(ক) শাসন বিভাগের প্রধান ছিলেন সম্রাট। তাঁর পদমর্যাদা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সকল মন্ত্রীদের নিযুক্ত করতেন এবং মন্ত্রীগণ সম্রাটের নিকট দায়বদ্ধ ছিলেন। 

(খ) সংবিধানে একটি পার্লামেন্টের সংস্থান ছিল যাকে ডায়েট বলা হত। ডায়েটের ক্ষমতা ছিল সীমিত। ডায়েট ধীরে ধীরে সামরিক শক্তির অধীনে আসে। 

(গ) জনগণের ভোটাধিকার ছিল সীমিত। মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশকে ভোটাধিকার প্রদান করা হত।

(ঘ) সম্রাটের জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করা: হয়েছিল।

17. চীন থেকে জাপান কি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ আফিং-এর দুইটি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইংরেজের হাতে চীনের পরাজয় ঘটেছিল। ফলে চীনের আভ্যন্তরীণ দিকে ইংরেজগণ হস্তক্ষেপের সুবিধা লাভ করে। 

চীনের এ ধরনের ঘটনাবলী জাপানের জনসাধারণ তথা শাসকগণের দৃষ্টি প্রসারিত করে। জাপানের ক্ষেত্রে ইংরেজদের সাম্রাজ্য হতে পারে বলে তাদের মনে আশঙ্কা দেখা দেয়। সেজন্য চীন জনগণের মতো জাপান ইউরোপীয়দের উপেক্ষা না করে ইউরোপীয়গণের নুতন ধ্যান-ধারণার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য যত্নশীল হয়। জাপানের কতিপয় লোক ইউরোপীয়দের থেকে দূরে থেকেও তাদের প্রযুক্তি ও কারিগরী জাল আহরণের জন্য চেষ্টা করে। অধিকন্তু জাপান পূর্বে গ্রহণ করা বন্ধ নীতি’ পরিহার করে মুক্ত নীতি গ্রহণের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করে।

18. “আদেশ বা নির্দেশ অপেক্ষা স্বাধীনতা অধিক মূল্যবান।” এই উক্তিটি কে, কোন্ প্রসঙ্গে করেছিলেন?

উত্তরঃ জাপানের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা একি ইমোরি উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন। ইমোরি একজন উদারপন্থী নেতা ছিলেন। তিনি ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রচলিত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তিনি জাপানে উদারপন্থী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাঁর এই উক্তিটি জাপানে এক অভূতপূর্ব ভাবাবেগের সৃষ্টি করেছিল। এর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এসাম লোকরা মহিলার ভোটাধিকারের দাবিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।

19. শোগানতন্ত্র আমলে জাপানের রাজনৈতিক বা শাসনব্যবস্থার বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ জাপান কিয়োটতে অবস্থানরত একজন সম্রাট দ্বারা শাসিত হত। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ সম্রাটের আধিপত্য খর্ব হয়ে ক্ষমতা চলে আসে সাগুনের হাতে। শোগান সম্রাটের নামে শাসন পরিচালনা করতেন। সমগ্র দেশ ২৫০-এর অধিক এলাকায় ভাগ করে। প্রত্যেকটি এলাকা দায়মিও বলে একজন স্থানীয় শাসকের শাসনাধীন ছিল। এই দায়মিওরা সম্পূর্ণভাবে সোগানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন।

কোনও রকম সাগুন বিরোধী কার্যকলাপ যাতে তারা (দায়মিওরা) লিপ্ত হতে না পারে, সেজন্য তাদের রাজধানী এডোতে থাকতে হত। সাগুন গুরুত্বপূর্ণ নগর ও খনির নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রত্যক্ষভাবে। সামুরাই নামে যোদ্ধা শ্রেণী শাসনকার্যে সোগান ও দায়মিও উভয়কেই সাহায্য করত।

20. ১৭ শতাব্দীর জাপানের উন্নতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ ১৭ শতাব্দীর জাপানের উন্নতির বৈশিষ্টগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) নতুন নতুন শহরের বিকাশ হয়, যার ফলে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সূচিত হয়। 

(খ) অর্থনৈতিক নীতি ও ঋণদান পদ্ধতি গড়ে ওঠে।

(গ) ব্যক্তিগত পদমর্যাদার চেয়ে এখন প্রতিভাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়।

(ঘ) নগরগুলিতে এক সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির প্রস্ফুটন ঘটে। দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বণিক শ্রেণী দ্বারা নাটক কলাবিদ্যা ইত্যাদি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।

(ঙ) লোকেরা বিদ্যাচর্চার প্রতি উৎসাহিত হওয়ায় প্রতিভাবান লেখকেরা একমাত্র লেখনীর মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয় ইত্যাদি।

21. ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের কোন দুইটি/তিনটি পরিবর্তন জাপানের ভবিষ্যত উন্নতির ধারাকে প্রতিষ্ঠা করেছিল? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ ১৬০০ শতাব্দীর শেষভাগে তিনটি বিশেষ পরিবর্তন ভবিষ্যত উন্নতির ধারাকে জাপানে প্রতিষ্ঠা করেছিল।

(ক) কৃষক শ্রেণীকুলকে নিবস্ত্র করে রাখা হয়েছিল, এবং শুধু সামুরাই কেবল তরোয়াল ব্যবহার করতে পারত। এই নিয়ম শান্তিশৃঙ্খলাকে নিশ্চিত করে পূর্ববর্তী শতাব্দীর ঘন ঘন যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল।

(খ) দায়মিওদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন প্রত্যেকে সম্পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে তাদের অধিকৃত অঞ্চলের রাজধানীতে বসবাস করেন।

(গ) ভূমি জরীপ করে জমির প্রকৃত মালিকদের এবং করদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবং জমিতে উৎপাদন হওয়া ফসলকে গুণগত মানের ভিত্তিতে শ্রেণী বিভাজন করে রাজস্বের পরিমাণ সুনিশ্চিত করা হয়েছিল।

22. তোকুগাওয়া শোগানরা কেন জাপানে মূল্যবান ধাতুর রপ্তানি বন্ধ করেছিলেন? এর প্রেক্ষিতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ সোনা ও রুপার বিনিময়ে জাপান বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন চীন থেকে রেশম, বিলাসী সামগ্রী আমদানি করত। যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং এর ফলে টকুগাওয়া/তোকুগাওয়া সাগুনরা এসব মূল্যবান ধাতুর রপ্তানির উপর বাধা আরোপ করে।

এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে জাপান সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়ঃ

(ক) কিয়োটর নিশিজিন অঞ্চলে রেশন শিল্প উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়।

(খ) মুদ্রার বহুল প্রচলন করা হয়। বিনিময়ের মাধ্যমে।

(গ) চালের বিনিময় কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ইত্যাদি। 

23. নিশিজিনে গড়ে ওঠা রেশম শিল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ জাপানের কিয়োট শহরের একটি এলাকা নিশিজিন। ১৬ শতকে মাত্র ৩১টি পরিবারকে নিয়ে একটি তাঁতী সংগঠন ছিল, যা ১৭ শতাব্দীতে দাঁড়ায় ৭০,০০০ তাঁতীতে। ধীরে ধীরে রেশমচাষ-এর প্রসার ঘটলে এবং ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দের সরকারি আদেশ যাতে দেশীয় রেশম সুতা ব্যবহার করা হয়, ইত্যাদি নিশিজিনের রেশম উদ্যোগের প্রসার ঘটায়। নিশিজিনের বিশেষত্ব ছিল উন্নতমানের রেশমবস্ত্র। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি আঞ্চলিক উদ্যোগী শ্রেণি গড়ে ওঠে এবং তারা তোকুগাওয়া শাসনকে প্রত্যহ্বান জানায়। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে যখন বিদেশি বাণিজ্য শুরু হয়, তখন রেশম রপ্তানিই হয়ে দাঁড়ায় জাপানের অর্থ উপার্জনের মুখ্য উপাদান।

24. ‘Fukoku Kyohei’ বা ‘ফুকোকু কিয় হেই কি? এর তাৎপর্য লেখ। 

উত্তরঃ ‘ফুকোকু কিয় হেই”, যার অর্থ ‘ধনী দেশ, শক্তিশালী সেনাবাহিনী এই শ্লোগানকে অবলম্বন করে জাপান সরকার একটি সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করেছিল।

তৎকালীন পরিস্থিতিতে জাপান সরকার অনুভব করে যে একটি উন্নত মানের অর্থনীতি ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের আশঙ্কা হয়েছিল যে হয়তো একটি জাপান ও ভারতবর্ষের মতো ইউরোপীয়দের অধীনস্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই নীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন এবং যা কার্যকরী করতে হলে মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা ও প্রজাদের সুনাগরিকে রূপান্তরিত করার প্রয়োজন।

25. ‘সম্রাট পদ্ধতি কি? এর বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? 

উত্তরঃ মেইজি সরকার জাপানে ‘সম্রাট পদ্ধতি প্রবর্তন করে। এটি একটি প্রশাসনিক পরিকাঠামোগত বিষয়, যেখানে আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী ও সম্রাটকে কেন্দ্র করে একটি সুনির্দিষ্ট সুসংগঠিত ও শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার সংগঠন গঠন করা হয়েছে। সম্রাট পদ্ধতির বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলঃ

(ক) সরকারি কর্মচারীদের ইউরোপীয় রাজতন্ত্রের বিষয় অধ্যয়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল, যাতে এর উপর ভিত্তি করে তারা তাদের নিজেদের মতো করে নমুনা তৈরি করে।

(খ) সম্রাটের সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি হয়। কারণ তিনি সূর্যদেবীর প্রত্যক্ষ উত্তরসূরী ছিলেন। কিন্তু তাকে পাশ্চাত্যকরণের নেতা হিসাবেও উপস্থাপন করা হয়। 

(গ) সম্রাটের জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

(ঘ) তিনি পাশ্চাত্যের ধারা অনুসারে সামরিক পোশাক পরিধান করেন এবং তার নামে নির্দেশ জারি করে চীনে আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলা হয়।

26. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানের কিভাবে নানা প্রশাসনিক পরিবর্তনের সাক্ষ্য হতে হয়? সংক্ষেপে বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হয় এবং এর ফলস্বরূপ ১৯৪৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি জাপান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন অধিগ্রহণে থাকে। এই সময় নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয় জাপানের সামরিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করতে।

(ক) জাপানকে সামরিক শক্তিচ্যুত করা হয় এবং একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়। 

(খ) নতুন সংবিদানের ৯ নং ধারা ‘No War Clause-এর মাধ্যমে যুদ্ধকে রাষ্ট্রনীতির অঙ্গ থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

(গ) কৃষি সংস্কার ও শ্রমিক সংস্থাগুলোর পুনঃস্থাপন করা হয়।

(ঘ) জাইবাৎসগুলিকে নিষ্ক্রিয় করা হয় এবং |

(ঙ) রাজনৈতিক দলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় ইত্যাদি।

27. আধুনিকতার ছাপ জাপানের পারিবারিক পরিকাঠামোকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ আধুনিকতার প্রতিফলন জাপানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় একই বাড়িতে পারিবারিক কর্তার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রজন্ম বসবাস করত। কিন্তু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে পারিবারিক নতুন ধারণাগুলো বিস্তারিত হতে শুরু করে। ক্রমে অন্ধ পরিবার প্রথার সৃষ্টি হয় যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উপার্জনকারী এবং গৃহ ব্যবস্থাপক হিসাবে বাস করতেন। এই নতুন পারিবারিক গঠনের ফলে নতুন ধরনের সাংসারিক সামগ্রী, পারিবারিক মনোরঞ্জনের সামগ্রী ও নতুন ধরনের বাসস্থানের চাহিদা সৃষ্টি হয়।

28. চীনের উপর জাপানের প্রভাব কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ আধুনিক চীন নির্মাণের ক্ষেত্রে জাপানের প্রভাব বিশেষ পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে ১৯৮০-র দশকে বহুসংখ্যক চীনা ছাত্র ফিরে আসার সময় জাপান থেকে বহু নূতন ধ্যান-ধারণা চীনে আমদানি করেছিল। তারা জাপানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে প্রজাতন্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিল। জাপানিগণ ইউরোপের কতিপয় শব্দ; যেমন—ন্যায়, অধিকার, বিদ্রোহী প্রভৃতি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করে ব্যবহার করেছিল। চীন ও জাপান উভয় প্রতীক অক্ষর ব্যবহার করেছিল। 

29. ‘মুক্তদ্বার নীতি’ বলতে কি বোঝ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন এবং কিভাবে এই নীতি গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে ‘মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল। ১৮৯০ – এর দশকে ইউরোপীয় শক্তি চীন বিভাজনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পেরেছিল। যে সে হয়তো বিতাড়িত হয়ে যাবে। সে তখন ‘মুক্তদ্বার নীতি’ গ্রহণ করে। এর অর্থ হল যে কোন শক্তিই যেন চীনে অন্য দেশ কর্তৃক বৈষম্যের স্বীকার না হয়। কিছুদিন পর চীনে ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে বক্সার বিদ্রোহ দেখা দেয়। মার্কিন বাহিনী এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ইউরোপীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের চীন দেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সফলতার কারণসমূহ আলোচনা কর। 

উত্তরঃ চীন দেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সফলতার কারণসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) চিয়াং কাই-শেক সরকারের অবক্ষয় এবং বিফলতাঃ চিনে চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট সরকার দীর্ঘ সময় থেকে ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। চীনা সাধারণ মানুষদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া পূরণে অসমর্থ হয়ে উঠেছিল। দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের সমর্থন পেতে অক্ষম ছিল। এবং বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল।

(খ) কমিউনিস্টদের কৃষকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারঃ মাও সে তুঙ চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে শহরীয় শ্রমিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামের কৃষকদের প্রধান ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কৃষকরা পূর্ব থেকেই বিভিন্ন বিদ্রোহে জড়িত থাকায় তাদের অভিজ্ঞতার দ্বারা কমিউনিস্ট দলকে এক অদম্য শক্তি হিসেবে মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে গড়ে তুললেন।

(গ) সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্যঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর সমস্ত কমিউনিস্ট দলকে বিভিন্ন উপায়ে সমর্থন জানাতে বদ্ধপরিকর ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে নীতিগত সমর্থন ছাড়া সর্বপ্রকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি চিয়াং কাই-শেককে স্বীকৃতি জানালেও মানচুরিয়া দখলের সম্পূর্ণ সুবিধা তারা মাও সে তুং-এর পার্টিকে দিয়েছিল। এমনকি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তারা বিভিন্ন প্রকার সামরিক সাহায্য দিয়েছিল।

(ঘ) কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক শক্তিঃ কমিউনিস্ট পার্টির মূল শক্তি ছিলও তাদের কৃষকদের সামরিক শাখা। এরা যথেষ্ট সুসঙ্গত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রশ্নে তারা তাদের বিরোধী কমিনটার্ন সাথে মিলে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ধীরে ধীরে সকল পেশার মানুষের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল।

(ঙ) সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার চীন পরিত্যাগঃ চিয়াং কাই-শেকের কমিনটার্ন বহুলাংশে। আমেরিকার উপর নির্ভরশীল ছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আমেরিকা চীনকে সাহায্য করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আমেরিকা চীন পরিত্যাগ করে।

(চ) সামরিক নীতিঃ মাও সে তুং কৌশলগতভাবে কমিউনিস্ট পার্টির সেনাবাহিনী। এবং অন্যান্য দপ্তর চীনের উত্তরাঞ্চলে সুরক্ষিত জায়গায় স্থানান্তরিত করেন এবং উত্তরাঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

(ছ) জনপ্রিয় নীতিঃ মাও সে তুং বিভিন্ন জনপ্রিয় নীতির প্রচলন করেন। রাজকোষ এবং জমির পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে গঠন করেন কৃষক সভা। নারী সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য নারী সমিতি এবং নতুন বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। যার ফলে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবে শরিক হন।

2. চীনদেশে নতুন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণ এবং তাৎপর্য বর্ণনা কর।

উত্তরঃ চীনদেশে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের সর্বশ্রেণীর সমন্বয়ে নতুন গণতন্ত্রের নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল সে সরকার। অর্থনীতির জটিল বিষয়গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হল। জমির ব্যক্তিগত মালিকানা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ক্রমশ লুপ্ত হল। এই কর্মসূচী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এরপর সরকার সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের কার্যসূচী ঘোষণা করে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে The Great Leap Forward আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল। দেশে উন্নত শিল্পায়নের উদ্দেশ্যেই এই আন্দোলন শুরু হয়। বাড়ির পিছনে খালি অঙ্গনে মানুষ অগ্নিকৃত নির্মাণ করতে উৎসাহী হল। গ্রামাঞ্চলে যৌথ মালিকানায় চাষবাস করার জন্য ‘কমিউন’ গড়ে উঠল। নির্ধারিত লক্ষ্যে দলকে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে মাও-সে-তুং জনসাধারণকে প্রভাবান্বিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক মানুষ সৃষ্টি করা যাদের পিতৃভূমি, জনগণ, শ্রম, বিজ্ঞান এবং সরকারি সম্পত্তির প্রতি থাকবে অসীম ভালবাসা। মহিলা, শিক্ষার্থী, কৃষক এবং অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনগণের জন্য নানারকমের সংগঠন সৃষ্টি করা হল। মহিলা, শিক্ষার্থী, কৃষক এবং অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনগণের জন্য নানা রকমের সংগঠন সৃষ্টি করা হল। সারা চীন গণতান্ত্রিক মহিলা ফেডারেশন এবং সারা চীন ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৬ এবং ৩.২৯ মিলিয়ন। কিন্তু এসব উদ্দেশ্য বা পদ্ধতি দলের অনেক সদস্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। শিল্প সংগঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তারা আবেদন জানালেন। নিউসাওচি এবং দেং জিয়াওপিং কমিউন পদ্ধতিতে আরও পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করলেন।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top