Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা are free to use and easily accessible.
Class 11 History Chapter 11 আধুনিকতার বিভিন্ন দিশা
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
3. সান ইয়াৎ-সেনকে আধুনিক চীনের নির্মাতা বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ঘুমন্ত ও অচেতন চীনকে জাগরণের ডাক যাঁরা দিয়াছিলেন তাঁদের মধ্যে ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। ডঃ সান ইয়াৎ-সেনকে ‘আধুনিক চীনের জনক? (Father of Modern China) বলা হয়।
ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ফ্রাঙ্কো-চীন যুদ্ধে চীনের পরাজয় তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
ডঃ সেন উপলব্ধি করেন যে, চীনের যাবতীয় দুর্দশার মূলে ছিল মাঞ্চু বংশের দুর্নীতিপূর্ণ শাসন। তিনি মাঞ্চু শাসন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার ব্রত গ্রহণ করেন। চীনের বহু বিপ্লবী গোষ্ঠী আলাদা আলাদাভাবে কার্যকরী ও সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছিল। ডঃ সেন উপলব্ধি করেন যে, চীনের বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলিকে সংঘবদ্ধ না করলে মাঞ্চু শাসন হতে চীনের মুক্তি আসবে না। দ্বিতীয়ত, বিপ্লবী দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রাণশক্তি দিতে হলে কেবলমাত্র নেতিবাচক আদর্শ চীং সরকারের উচ্ছেদের লক্ষ্যে যথেষ্ট নয়। সরকার উৎখাতের পর চীনকে কিভাবে গড়তে হবে তার রূপরেখা না দিলে জনসাধারণের সাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। ডঃ সেন মনে করতেন যে বিপ্লবের আদর্শ না জানালে চীনের তরুণ ছাত্র সমাজের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। এইজন্য তিনি তাঁর ‘সান-মিন-চু-আই’ বা ডঃ সেনের তিনটি নীতি ঘোষণা করেন। এই তিনটি নীতি ছিল-
(ক) জাতীয়তাবাদ।
(খ) গণতন্ত্র। ও
(গ) জনগণের জীবিকার সংস্থান।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দের চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবে ডঃ সেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মাঞ্চু শাসনের অবসানক্রমে চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ডঃ সেনের চেষ্টায় চীনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। চীনের জনগণ বিপ্লব যারা অনুপ্রাণিত হয়।
জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের ভূমিকাঃ ডঃ সান ইয়াৎ-সেন ক্যান্টন শহরে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। চীনের উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপিত না হওয়ায় ডঃ সেনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনায় অসুবিধা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় ডঃ সেন চীনে সংহতি স্থাপনে সমর্থ হন। এই সময় ডঃ সেনের প্রধান সেনাপতি যুয়ান নিজেকে চীনের সম্রাট পদে অধিষ্ঠানের জন্য চেষ্টা করেন। ডঃ সেন তাকে চীনের রাষ্ট্রপদে নিযুক্ত করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ডঃ সান ইয়াৎ-সেন পরলোকগমন করেন।
ডঃ সান ইয়াৎ-সেন চীনের আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবর্তন করা। এই ব্যাপারে তিনি বহুলাংশে সফল হন। তাঁকে নিঃসন্দেহে আধুনিক চীনের নির্মাতা ও চীনের জনক বলা হয়।
4. আধুনিক চীন নির্মাণে চিয়াং কাই-শেক-এর ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা,
আধুনিক চীন নির্মাণে চিয়াং কাই-শেক-এর মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ চিয়াং-কাই-শেক ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডঃ সান ইয়াৎ-সেনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তাঁকে ডঃ সেন-এর দক্ষিণ হস্ত বলা হয়। ডঃ সেন প্রথমে তাঁকে ক্যান্টন শহরের সেনাধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। কিশোরকালেই তিনি কুওমিংটাং পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যান্টনের মিলিটারী স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যান্টনের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেনারেল চিয়াং চীনের দক্ষিণাঞ্চল অধিকার করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনের উত্তরাঞ্চল দখলের জন্য অগ্রসর হলে সেখানকার সেনাবাহিনী তাঁকে বাধা দান। করে পরাস্ত হলে সৈন্যদল মাঞ্চুরিয়া পলায়ন করে। চিয়াং প্রথমে নানকিং অধিকার করেন। এবং ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে পিকিং অধিকার করেন। কালক্রনে জেনারেল চিয়াং সমগ্র চীন একীকরণ করতে সমর্থ হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর জেনারেল চিয়াং কাই-শেক চীন গণপ্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন।
চিয়াং-এর রাজনৈতিক কার্যাবলীঃ চিয়াং চীনের বিভিন্ন প্রদেশকে একত্র করতে সফল হন। তিনি চীনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের শাসনকার্যে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ও কুওমিনতাং পার্টির সভাপতি ছিলেন। তিনি নিজেকে কমিউনিস্ট প্রভাব হতে মুক্ত রাখেন। এর ফলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্টদের সঙ্গে তাঁর মতভেদ ঘটে। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং জাতীয় সংবিধান সভার আহ্বান করেন। এই সভাতেই দেশের অন্তর্বর্তী সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার উভয়েরই প্রধান ছিলেন। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীগণকে নিয়োগ করতেন। সাধারণ নাগরিক দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় এবং দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।
আভ্যন্তরীণ সংস্কারঃ চিয়াং কাই-শেক চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। এর মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে তিনি চীনাভাষার বর্ণমালা সংশোধন করেন। চীনে বসবাসকারী বিদেশী লোকদের কার্যকলাপের উপর চিয়াং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। আভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যে চিয়াং যথেষ্ট অসুবিধার সম্মুখীন হন। দীর্ঘ ১৮ বৎসর অরাজকতার পর চীনে শাসনকার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসনের অফিসার ও কর্মচারীবৃন্দ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়ে। প্রাদেশিক শাসকগণ নিজেদের মতানুসারে শাসনকার্য সম্পাদন করতেন। সমগ্র দেশে একপ্রকার শাসন-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। চুরি, ডাকাতি, খুনখারাপি নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় ছিল। এইরূপ অবস্থা সত্ত্বেও চিয়াং কতিপয় বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে সুস্থিতি স্থাপন করতে বহুলাংশে সফল হয়েছিলেন।
চীন-জাপান যুদ্ধ ও চিয়াংঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চীন মাঞ্চুরিয়া দখল করে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে। মাঞ্চুরিয়ার নাম পরিবর্তন করে মাঞ্চুকুও করা হয়। মাঞ্চুরিয়ার ঘটনা চীন অপেক্ষা রাশিয়াকে অধিক চিন্তিত করে। রুশো চীন শাস্তি চুক্তির পর চীন ও জাপানের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীন আক্রমণ করে। চীনের অধিকাংশ জাপান অধিকার করে। জাপান অক্ষশক্তি এবং চীন মিত্রশক্তিতে যোগদান করে, ফলে চীন-জাপান যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। পরে জাপান মিত্রশক্তির নিকট আত্মসমর্পণ করে। চীন জাপান অধিকৃত সম্পূর্ণ এলাকা ফিরে পায়। সুতরাং চীনের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা রক্ষায় চিয়াং কাই-শেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব পালন করেন।
5. আধুনিক চীন নির্মাণে মাও-সে-তুং-এর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান মাও সে-তুং (মাও জেদং) ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে এক ব দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নায়ক ছিলেন। মাও সে-তুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কমিউনিস্ট সরকারের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি নিজের নেতৃত্ব রক্ষার জন্য ও নিজের ভাবাদর্শ সৃষ্টি প্রচারের জন্য ‘লাল বাহিনী’ গঠন করে চীনে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ আরম্ভ করেন।
মাও সে-তুং-এর প্রচারিত আদর্শ অর্থাৎ মাওবাদ হল একপ্রকার শোধনবাদ। তিনি ইন সাম্যবাদ তথা মার্ক্সবাদকে বহুলাংশে শোধন করেন। মাও ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মার্ক্সবাদী হন, এবং মন্থর গতিতে বিপ্লবের সূত্র পরিত্যাগ করে শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব গ্রহণ করেন। মাও কৃষক আি বিপ্লব ও কৃষি সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি গেরিলা যুদ্ধ নীতি সমর্থন করতেন। তিনি দীর্ঘ সংগ্রাম নীতির পক্ষপাতী ছিলেন। মাওয়ের প্রবর্তিত ‘নব গণতন্ত্র’ তত্ত্ব চীনকে একটি ক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করে।
আভ্যন্তরীণ নীতিঃ কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিরোধীদের দমন করতে আরম্ভ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গণ মুক্তি বাহিনী” এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মিলিত হয়ে বিরোধ দমনে মাও-কে নানাভাবে সাহায্য করে।
প্রথমত, সারা দেশব্যাপী কমিউনিস্ট আধিপত্য কায়েম করবার জন্য কৃষি সংস্কার আরম্ভ হয়। দ্বিতীয়ত, ধনিক শ্রেণী এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রামের জন্য মাও চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে সংঘবদ্ধ করেন। তৃতীয়ত, মাও দুর্নীতিপরায়ণ পার্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন। বহু লোককে ঘুষ নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এবং অনেককে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি হস্তান্তর না করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কয়েক হাজার সদস্যকে দল হতে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়; যার ফলে আট হাজারের অধিক লোক নিহত হয়।
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মাওবাদীগণ ক্রুশ্বেভের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সোভিয়েত রাশিয়ার ‘নূতন অর্থনৈতিক কার্যক্রম’ (New Economic Policy) -3 প্রত্যাখ্যান করেন। সোভিয়েত হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ১৯৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দের মাও প্রবর্তিত ‘গ্রেট কীপ ফরোয়ার্ড’ ও ‘কমিউন প্রোগ্রাম’ সূত্র সমগ্র চীনে বাস্তবায়িত হয়। ‘কমিউন’ প্রথার দ্বারা বেসরকারি জমি, গৃহপালিত জীবজন্তু প্রভৃতি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু কমিউন প্রথা চীনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। ফলে এই প্রথা কার্যত ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে কমিউনিস্ট পার্টি তথা সমগ্র দেশে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সাংস্কৃতিক বিপ্লবঃ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসাবে মাও চীনের জনগণকে নুতন ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি চীনের সকল প্রকার ক্রিয়াকলাপের পথ প্রদর্শক। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। বিশাল সংখ্যক ‘লাল বাহিনী’-কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য নিয়োজিত করা হয়। জনকল্যাণকামী নীতিতে মাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মাও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। মাও এই মর্মে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে লাল বাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাংস্কৃতিক বিপ্লব লাভ করতে পারেনি। তা কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপন্ন করে তোলে। অধিকন্তু রাজনৈতিক কার্যে অধিক সংখ্যক সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি দেশের শাস্তি ও রাজনৈতিক সুস্থিতি নষ্ট করে।
সারা জীবনব্যাপী মাও বিভিন্ন তত্ত্ব প্রবর্তন করে এই সমস্ত বাস্তবায়নে কৃতসংকল্পবদ্ধ হন। তিনি চীনকে একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ ও কমিউনিস্ট দেশে পরিণত করেন। তাঁর চেষ্টায় চীনে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গণতান্ত্রিক সংবিধান চালু হয়। তিনি নিঃসন্দেহে চীনের অবিসংবাদী কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর মাও পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি অধিকাংশ তত্ত্ব ও মতবাদকে শোধন ও আধুনিকীকরণ করেন। কালের ধারায় মাওয়ের মতবাদ ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে।
6. বিংশ শতকে জাপান কিভাবে একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিল?
উত্তরঃ পূর্বাভাষঃ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাপানেও সামস্তরা দেশের মালিকানা ভোগ করতেন। জাপানের সম্রাটকে বলা হত ‘মিকাডো’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে মিকাডোর কোন ক্ষমতা ছিল না। সৈনাবাহিনীর প্রধান ‘সোগুন’ উপাধিধারী ব্যক্তিই সামস্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এবং তিনিই প্রকৃতপক্ষে সম্রাটের নামে দেশের যাবতীয় শাসনকার্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দ হতে জাপানে ইউরোপ হতে যাজক, বণিক ও অভিযাত্রীরা আসতে আরম্ভ করলে ষোড়শ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে জাপান সরকার জাপান ও বিদেশের মধ্যে যাতায়াত আইনত দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন জাপানের সহিত বহির্বিশ্বের কোন প্রকার সংস্রব ছিল না।
বিদেশী কর্তৃক জাপান আক্রমণঃ জাপানে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রই সর্বপ্রথম জাপানে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাপানস্থ সর্বপ্রথম নৌ-বাহিনীর প্যারী সোগুনের নিকট হতে জাপানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হওয়ায় অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিরাও সেই পথ অবলম্বন করেন।
সম্রাট কর্তৃক স্বহস্তে ক্ষমতা গ্রহণঃ সোগুনের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জাপানীরা ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে সোগুনকে পদত্যাগে বাধ্য করলে জাপ সম্রাট মুৎসুহিতো স্বহস্তে যাবতীয় শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
সংস্কার আন্দোলনঃ বিদেশি কর্তৃক জাপানে প্রভুত্ব স্থাপনে জাপানিরা বুঝতে পারলেন। যে সংস্কারমুক্ত হয়ে আধুনিক রাজনীতি ও ভাবধারা গ্রহণ না করলে জাপানের কোনদিনই উন্নতি হবে না। এই সংস্কার আন্দোলনে অভিজাত সামন্তরাই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। তারা তাদের সবরকম রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ত্যাগ করে জনসাধারণের। সঙ্গে এক পর্যায়ভুক্ত হয়ে যান। তারাই সোগুনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন।
সংস্কার সাধনঃ স্বহস্তে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে মুসুহিতো ৪৫ বছর রাজত্ব করে যান। এই সময় জাপানের সবদিকে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। সামন্ত প্রথা উঠে যাওয়ায় সম্রাটের কারীরাই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। ইউরোপীয়দের শিক্ষানীতি, শাসননীতি ও আইন-কানুনে আকৃষ্ট হয়ে জাপানিরা এর অনুকরণে তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে মিল রেখে অনেকগুলিই গ্রহণ করল।
ইউরোপের মত জাপানেও রেলপথ, টেলিগ্রাফ, ডাকঘর ও কল-কারখানা স্থাপিত হল। পেশাদার সামুরাই নামক সৈন্যবাহিনী তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে জাতীয় সৈন্যবাহিনী ও তৎসঙ্গে বিশাল নৌ-বহর গঠন করা হয়।
জাপানিদের অদম্য উৎসাহের ফলে শিক্ষাদীক্ষা, শ্রমশিল্প ও বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করে। জাপান আধুনিক শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
জাপানের অগ্রগতিঃ ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার অধিকার নিয়ে চীনের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ বাধলে আধুনিক সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত জাপানিদের নিকট চীন পরাজিত হয়ে সন্ধিব শর্তানুযায়ী ফরমোসা দ্বীপ এবং মাঞ্চুরিয়ার এক বিরাট অংশ জাপানকে দিতে বাধা হয়। কিন্তু বিদেশি ইউরোপীয়দের চাপে এই স্থানগুলি জাপান ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে জাপান সম্রাট জাপানে ইউরোপীয়দের সব সুযোগ ও অধিকার হরণ করে নেন।
মাঞ্চুরিয়ায় রাশিয়া কর্তৃক রেলপথ নির্মাণের অধিকার নিয়ে ১৯০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিলে জাপান স্থল এবং জলযুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করে। জাপান নৌ-সেনাপতি উগো এই যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
এই যুদ্ধে বৃহৎ শক্তি রাশিয়া ক্ষুদ্র দেশ জাপানের নিকট পরাজিত হওয়ায় সামরিক শক্তিতে শুধু জাপানের গৌরব বৃদ্ধি পায়নি, এর ফলে সমগ্র এশিয়াতে নূতন উৎসাহ ও উদ্দীপনা স্থাপন করে, যার ফলে এশিয়াতে জাতীয়তাবাদ দ্রুত প্রসারলাভ করতে থাকে।
7. সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থানের একটি বিবরণ প্রদান কর।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত জাপান বহির্বিশ্ব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মেইজীর পুনরুত্থানের পর জাপান বিচ্ছিন্ন নীতি পরিত্যাগ করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রয়াসী হয়। এর পর জাপানের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদারনৈতিক সংস্কার সাধন করা হয়। পশ্চিমী দেশসমূহের ধাঁচে জাপানের সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। জাতীয় জীবনে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ আরম্ভ হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জাপান ইংল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করে যার ফলে জাপানের জাতীয়তাবাদ দ্রুত প্রসার লাভ করে।
রুশ-জাপান যুদ্ধঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপান ১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জাপান যুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে। এই যুদ্ধে জাপানের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশ বৃহৎ শক্তি রাশিয়াকে পরাজিত করে। এই ঘটনা জাপানকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সহায়তা করে। রুশ-জাপান যুদ্ধ জাপানকে গৌরবান্বিত করে। জাপানি সৈন্যবাহিনীকে অধিকতর বৈজ্ঞানিক উপায়ে পুনর্গঠন করতে উৎসাহিত করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও জাপানঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে জাপান নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে জাপান জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জার্মান অধিকৃত চীনা ভূখণ্ড অধিকার করে। জাপান চীন হতে সমস্ত বিদেশি বহিষ্কার করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই মানি ব্যাপারে জাপান চীনের নিকট হতে সাহায্য সহযোগিতা লাভ করে। এর পর জাপান নিজ দেশের অনুকূলে চীন হতে একগুচ্ছ দাবি আদায় করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানঃ জাপানের ক্ষমতা ও মর্যাদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এশিয়ায় প্রাধান্য বিস্তারের জন্য জাপান উপযুক্ত সুযোগ লাভ করে। নিরস্ত্রীকরণ ও দূর প্রাচ্যের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াশিংটনে একটি সম্মেলনের আহ্বান করা হয়। এই সম্মেলনে জাপানের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নৌশক্তিতে জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। জাপানের সৈন্যসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের সৈনাসংখ্যা অপেক্ষা ৬২ শতাংশের অধিক হবে না।
জাপান ওয়াশিংটন সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চীন শাসিত মাঞ্চুরিয়া অধিকার করে। জাপানের এইরূপ কার্যকারিতা চীন জাতিসংঘের নিকট উত্থাপন করে। জাতিসংঘ জাপানকে মাঞ্চুরিয়া চীনকে প্রত্যর্পণ করতে আদেশ দেয়।
কিন্তু জাপান জাতিসংঘের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রতিবাদস্বরূপ জাতিসংঘ ত্যাগ করে।
মাঞ্চুরিয়া অধিকার ও জাতিসংঘের ব্যর্থতা জাপানকে জাতীয়তাবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদের পথে উৎসাহিত করে। অস্ত্র-শস্ত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীনের উত্তরাংশ অধিকার করে। অধিকন্তু জাপান চীনের অকমিউনিস্ট শাসক চিয়াং কাই-শেককে কমিউনিস্ট শক্তি প্রতিহত করবার জন্য চীনে জাপানের একজন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি উত্থাপন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাপানঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে জাপান জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনীর পক্ষে যোগদান করে। জাপান-জার্মানি ও ইতালি মিলিত হয়ে অক্ষশক্তি গঠন করে। অক্ষশক্তি দ্বারা উৎসাহিত হয়ে জাপান আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করে। অক্ষশক্তির তিনটি দেশের মধ্যে বোঝাপড়া হয় যে তাদের মধ্যে কোন একটি দেশ অন্য কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে অক্ষশক্তিভূক্ত অপর দুটি রাষ্ট্র আক্রান্ত অক্ষশক্তিভুক্ত দেশকে রক্ষা করবে।
এইভাবে জাপান সবদিক দিয়ে একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হয়। জাপানের পরবর্তী অভিপ্রায় ছিল আমেরিকা আক্রমণ। এর কারণ আমেরিকা চীনের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখত যাতে চীনের উপর জাপানের আধিপত্য বিস্তার না হয়। এই অভিপ্রায় সার্থক করবার উদ্দেশ্যে জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর ‘পার্লহারবার’ আক্রমণ করে। ইতিমধ্যে জাপান চীনের বৃহৎ অংশ, মালয় ও ব্রহ্মদেশ অধিকার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়াকলাপের অবসান ঘটে।
8. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকার বিষয়ে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত জাপান বহির্বিশ্ব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মেইজির পুনরুত্থানের পরে জাপান বিচ্ছিন্ন নীতি পরিত্যাগ করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রয়াসী হয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে জাপান ১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জাপান যুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে। রুশ-জাপান যুদ্ধে জয় জাপানকে গৌরবান্বিত করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে জাপান নিরপেক্ষ থাকে, কিন্তু পরবর্তীকালে জাপান জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জার্মান অধিকৃত চীনা ভূখণ্ড অধিকার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ক্ষমতা ও মর্যাদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চীনশাসিত মাঞ্চুরিয়া অধিকার করে এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীনের উত্তরাংশ অধিকার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে জাপান যোগদান করে জার্মানির হিটলার ও ইটালির মুসোলিনীর পক্ষে। জাপান, জার্মানি ও ইটালি মিলিত হয়ে অক্ষশক্তি গঠন করে। অক্ষশক্তির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে জাপান আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করে। অক্ষশক্তির তিনটি দেশের মধ্যে বোঝাপড়া হয় যে তাদের মধ্যে কোন একটি দেশ অন্য কোন শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে অক্ষশক্তিভুক্ত অপর দুটি রাষ্ট্র আক্রান্ত অক্ষশক্তিভুক্ত দেশকে রক্ষা করবে। জাপানের পরবর্তী অভিপ্রায় ছিল আমেরিকা আক্রমণ। এই অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে জাপান ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ই ডিসেম্বর ‘পার্ল হারবার’ আক্রমণ করে। ফলস্বরূপ আমেরিকা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এবং ৯ই আগস্ট জাপানের জনবহুল শহর যথাক্রমে হিরোসিমা ও নাগাশাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় তাতে জাপানকে সামরিক শক্তিচ্যুত করা হয়।
9. দ্রুত উদ্যোগীকরণের নিমিত্ত জাপান এবং তার নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছিল কি? নিজস্ব মতামতসহ একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ হ্যাঁ, দ্রুত উদ্যোগীকরণের নিমিত্ত জাপান ও তার নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছিল।
(ক) জাপানে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব ছিল, তাছাড়া কৃষিকাজের উপযুক্ত জমির অভাব ছিল। কিন্তু তার পার্শ্ববর্তী চীন ছিল এই দুইয়ের-ই উপযুক্ত, তাছাড়া চীনের সরকার ছিল দুর্বল।
(খ) জাপানের উদ্যোগের প্রয়োজনে যেমন কাঁচামালের প্রয়োজন ছিল, তেমনিভাবে তৈরি জিনিসের বাজারও প্রয়োজন ছিল। এই উভয়ই পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মেটাতে পারত।
(গ) জাপানের শাসনব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর বিশাল কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ ছিল। তারা ভীষণ আগ্রাসী ছিল সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য।
জাপান তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশের অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে নিজেকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সমকক্ষ করে তুলতে প্রয়াসী হয়। এই ক্ষেত্রে তার প্রথম প্রয়োজনীয়তা ছিল তার উদ্যোগিক অগ্রগতি। কিন্তু এই উদ্যোগিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তারা সম্মুখীন হয়েছিল নানা প্রতিবন্ধকতার। যেগুলি দূর করতে এবং উদ্যোগীকরণের প্রয়োজনীয়তায় তাকে নানা সময় যেমন ১৮৯৪-৯৫, ১৯০৪, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তথা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উদ্যোগের বিকাশ ঘটে, যার ফলে বিশাল পরিমাণ কাঁচামাল নির্বিচারে আহরণ করা হয়। যা এই অঞ্চলের পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে।
10. মেইজি শাসনকালে শিক্ষাক্ষেত্রে কখন ও কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ১৮৭০-এর দশকে মেইজি শাসনে একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হয়। নতুন শিক্ষানীতিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা জাপানের উন্নতির দিশা নির্ধারিত করেছিলঃ
(ক) ছেলেমেয়ের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা প্রায় সার্বজনীন হয়ে উঠেছিল।
(খ) শিক্ষা মাসুল ছিল নগণ্য।
(গ) পাঠ্যক্রম তৈরি হয়েছিল পাশ্চাত্যের আদর্শের উপর ভিত্তি করে।
(ঘ) জাপানের প্রতি আনুগত্য ও জাপানের ইতিহাস অধ্যয়নের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
(ঙ) শিক্ষামন্ত্রক পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী নির্বাচন ও পুনর্গঠন ইত্যাদি এবং শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করত।
(চ) নৈতিক কৃষ্টি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে এবং পাঠ্যবইগুলোতে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং সুনাগরিক হয়ে উঠতে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
11. জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মেইজি শাসনকালে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনিক পরিকাঠামোগত পর্যায়ে? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মেইজি সরকার জাপানের পুরোনো গ্রাম ও রাজ্যের সীমানা পরিবর্তনের সাহায্যে জাপান এক নতুন শাসন পরিকাঠামো গড়ে তুলা হয়। এর ফলে শাসনতান্ত্রিক সংগঠনের স্থানীয় বিদ্যালয়গুলি ও স্বাস্থ্যসেবার সুবিধার্থে এবং সেনাবাহিনীর নিযুক্তি কেন্দ্রগুলি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মাত্রার রাজস্ব প্রয়োজন হয়, যা পুরাণ অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
(ক) কুড়ি বৎসরের অধিক বয়সের প্রতিটি লোক (পুরুষ)-কে একটি নির্দিষ্ট সময় সামরিক সেবাদান বাধ্যতামূলক করা হয়।
(খ) একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
(গ) রাজনৈতিক দলগুলির গঠন নিয়ন্ত্রণ করতে, জনসমাবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সংবাদ প্রকাশে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
(ঘ) সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রকে সম্রাটের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
12. মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জাপানের অর্থনৈতিক আধুনিকিকরণে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সংস্কারগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জাপানের অর্থনীতির আধুনিকিকরণ। এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছিলঃ
(ক) কৃষিজাত দ্রব্যের উপর কর ধার্য করে সরকারি আয় বৃদ্ধি করা হয়।
(খ) রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
(গ) বয়নশিল্পের যন্ত্রপাতি ইউরোপ থেকে আনা হয়।
(ঘ) শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ও সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের জন্য বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের নিযুক্ত করা হয়।
(ঙ) জাপানী ছাত্রদের বিদেশি প্রযুক্তিগত বিদ্যালাভের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।
(চ) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক অর্থ লেনদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
(ছ) জাহাজ নির্মাণ উদ্যোগকে উন্নত করতে জাপানী নির্মাণ সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা ও কর রেহাই-এর মাধ্যমে সহায়তা করা হয়।
13. জাপানে মেইজিদের পুনরুত্থানের বিষয়ে একটি টাকা লেখ।
উত্তরঃ জাপানে ১৮৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে টকুণ্ডয়া রাজবংশের সম্রাট সগুণ শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং নতুন আধিকারিক ও উপদেষ্টামণ্ডলীর দ্বারা শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তারা জাপান সম্রাটের নামে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে। এমতাবস্থায় সম্রাট। পুনরায় দেশের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। সম্রাট মেইজি পদবি গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে জাপানের ইতিহাসে মেইজি পুনরুত্থান বলে অভিহিত করা হয়।
মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সরকার নিম্নলিখিত পরিবর্তন সাধন করেনঃ
(ক) কুড়ি বৎসর ঊর্ধ্বে সকল যুবককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা দিতে হত।
(খ) একটি আধুনিক সামরিকবাহিনী গঠন করা হয়।
(গ) কৃষকদের নিরস্ত্রীকরণ করা হয়। ফলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
(ঘ) ডাইমোদের তাদের নিজস্ব এলাকার রাজধানীতে অবস্থান করতে আদেশ দেওয়া হয়।
(ঙ) ডাইমোদের রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে বাণিজ্য অর্থনীতি প্রসার লাভ করে।
(চ) মানুষের মধ্যে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে।
কৃষির আধুনিকীকরণ মেইজি সংস্কারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ঃ
(ক) কৃষির উপর কর আরোপ করে রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়।
(খ) টোকিও এবং ইয়োকোহামা বন্দরের মধ্যে ১৮৭০-১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়।
(গ) বস্ত্র শিল্পের উন্নতির জন্য ইউরোপ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়।
(ঘ) বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষার জন্য বিদেশে প্রেরণ করা হয়।
(ঙ) মিতসুবিসি, সুমিটোমো-এর মতো বহু কোম্পানীকে ভর্তুকি ও কর ছাড় দেওয়া হয়। এই গুলি কালক্রমে প্রধান জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিতে পরিণত হয়।
১৮৭০-এর দশক হতে একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হয়। ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শিক্ষার মাশুল ছিল নগণ্য। নৈতিক কৃষ্টি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে এবং মূল পাঠ্য বইগুলোতে পিতামাতাকে শ্রদ্ধা করতে, দেশের প্রতি অনুগত থাকতে এবং সুনাগরিক হয়ে উঠতে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
14. চীন ও জাপানের আধুনিকীকরণের ভিন্ন পর্যায়ক্রমিক পথ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ শিল্পপ্রধান বা শিল্পবোজিত সমাজগুলো আধুনিক হওয়ার পথ পরিক্রমায় পৃথক পৃথকভাবে তাদের নিজস্ব রাস্তা বেছে নিয়েছে। চীন ও জাপানের ইতিহাস দেখায় যে কিভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক শর্ত একটা দেশকে স্বাধীন এবং আধুনিক হওয়ার জন্য একাধিক পথের সন্ধান দিতে পারে।
জাপানে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। পাশ্চাত্য শক্তিকে অনুকরণ করলেও জাপান নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টাও চালিয়েছে। জাপানীদের জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। জাপানীদের মধ্যে অনেকেই এশিয়াকে পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে মুক্ত করতে চাইছিল, আবার উক্ত ধারণাকে কেন্দ্র করে অনারা সাম্রাজ্যবাদ গড়ে তোলাকেই যুক্তিসঙ্গত বলে ভাবতে লাগল। তবে জাপানে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর এবং দৈনন্দিন জীবনধারণের প্রচলিত প্রথার পুনরাবৃত্তি বা জোর করে রক্ষা করার ব্যাপারে না থেকে সৃজনী শক্তির সাহায্যে প্রচলিত ধারাকে নতুন আভিনায় রূপ দিয়েই জাপান তার সাফল্য লাভ করেছিল।
আবার আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ায় চীন অন্য পথ অবলম্বন করেছিল। পাশ্চাত্য ও জাপানী সংমিশ্রণে সরকার দুর্বল ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশিরভাগ জনগণের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধপ্রিয় ক্ষমতাবানদের আধিপত্য, লুটতরাজ, গৃহযুদ্ধ, জাপানীদের বর্বর আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি জনজীবনে প্রচণ্ড আঘাত হানে। তবে, প্রচলিত প্রথার প্রত্যাখ্যান এবং নতুন পথের সন্ধানের মধ্য দিয়া জাতীয় ঐক্য ও শক্তি গড়ে তুলেই ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর সময়কালে চীন আধুনিকীকরণের সাফল্য পায়।
এইভাবেই চীন ও জাপান ভিন্ন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিপরীত পরিস্থিতি ও চিন্তাধারা অবস্থান সত্ত্বেও নিজেদের স্বকীয় অস্তিত্ব বজায় রেখে আধুনিকীকরণের পথে সাফল্য পায় এবং বর্তমানে যা সমগ্র বিশ্বের নিকট উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
1. মেইজি সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পূর্বে কি কি বিষয় জাপানের দ্রুত আধুনিকতা সম্ভব করেছিল?
উত্তরঃ মেইজি শাসন ১৮৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে জাপানে দ্রুত আধুনিকতার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি অবলম্বন করা হয়ঃ
(ক) কৃষকদের নিরস্ত্র করা হয়। কেবলমাত্র যোদ্ধা জাতিগণই তরবারি বহন করতে পারবে। তা দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে এবং পূর্বের শতাব্দী ব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে।
(খ) ডাইমোদের নিজ নিজ রাজধানীতে বাস করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাদের অধিক পরিমাণে স্বাধীনতা প্রদান করা হয়।
(গ) জমির মালিক ও করদাতাদের চিহ্নিত করতে জমি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
(ঘ) ডাইমোদের রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে বাণিজ্যিক অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
(ঙ) একজন ব্যক্তির মর্যাদা অপেক্ষা গুদের উপর মূল্য দেওয়া আরম্ভ হয়।
(চ) শহরের দ্রুত বর্ধিত বণিকশ্রেণী যাত্রাগান এবং শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা করে।
(ছ) মানুষের লেখাপড়ার অভ্যাস বৃদ্ধি পায়।
(জ) মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীর রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
(ঝ) সিল্ক শিল্পের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
(ঞ) টাকার ব্যবহার বৃদ্ধি পায় এবং ধানের উপর ফাটকা বাজার সৃষ্টি হয়।
2. জাপান উন্নত হওয়ার সঙ্গে দৈনন্দিন জীবন কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে আলোচনা কর।
উত্তরঃ পূর্বে জাপানে পুরুষতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থা প্রচলিত ছিল যেখানে বহু প্রজন্ম একত্রে বাস করত। পরিবারের কর্তার অধীনে সকলেই একত্রে বাস করত। কিন্তু নূতন পরিবার ছিল একক পরিবার যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই উপার্জন করত। এই নূতন পরিবার ব্যবস্থা নূতন নূতন দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি করে।
নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
3. জাপানের দ্রুত শিল্পায়ন নীতি কি ইহার প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধের এবং পরিবেশ হানির কারণ হয়েছিল?
উত্তরঃ এটা সত্য যে জাপানের দ্রুত শিল্পায়ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ ও পরিবেশ হানির কারণ হয়েছিলঃ
(ক) শিল্পের অনিয়ন্ত্রিত বিকাশের ফলে কাঠ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পরিবেশের উপর তা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
(খ) শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারের জন্য উপনিবেশ-এর চাহিদা দেখা দেয়। যার জন্য জাপান তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়।
4. সান ইয়াৎ- সেনের তিনটি নীতি কি কি ছিল?
উত্তরঃ সান ইয়াৎ-সেনের তিনটি নীতি নিম্নরূপঃ
(ক) জাতীয়তাবাদঃ রাজবংশের ক্ষমতাচ্যুতির কারণ হয়েছিল বিদেশি রাজবংশ।
(খ) গণতন্ত্রঃ দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
(গ) সমাজবাদঃ মূলধন বা পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করা এবং জমির মালিকানা সমান করা।
5. পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রত্যাহ্বানের মোকাবিলায় কুয়াং রাজবংশ কিভাবে চেষ্টা করেছিল?
উত্তরঃ পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রত্যাহ্বানের মোকাবিলায় কুয়াং রাজবংশ ব্যর্থ হয়েছিল। ব্রিটেনের সঙ্গে আফিং-এর যুদ্ধ (Opium War) কুয়াং রাজবংশকে দুর্বল করে দেয়। দেশে কুয়াং রাজবংশ দ্বারা সংস্কার ও পরিবর্তনের দাবি উত্থাপিত হয়। কুয়াং রাজবংশ এই ব্যাপারেও ব্যর্থ হয়। ফলে দেশ গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়।
6. তুমি কি মনে কর যে মাও জে দং এবং কমিউনিস্ট চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চীনের মুক্তি ও সাম্প্রতিক সাফল্যে সফল হয়েছিল?
উত্তরঃ মাও জে দং এবং কমিউনিস্ট পার্টি নিঃসন্দেহে চীনের মুক্তি ও বর্তমান সাফল্যের ভিত্তি তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছিল।
(ক) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সান ইয়াৎ সেনের মৃত্যুর পর চিয়াং কাই-শেক চীনে প্রধান হন। এর পূর্বে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু চিয়াং কাই-শেক সান ইয়াত সেনের তিনটি নীতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন নীতি অবলম্বন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন তিনি লাভ করেন। অধিকন্তু তিনি একটি নুতন জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি করেন যা কৃষকদের শোষণ করত। ইতিপূর্বে মাও জে দং তার ‘লাল বাহিনী’ দ্বারা কৃষক আন্দোলন শুরু করেন।
(খ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দং চীনে কৃষক এবং শ্রমিক পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং গোপনে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হন। তিনি লাল বাহিনী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে চিয়াং কাই-শেকের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করেন। তিনি চারবার চিয়াং-এর বাহিনীকে পরাজিত করেন। কিন্তু পঞ্চমবার তিনি এমন চাপের সম্মুখীন হন যে তিনি ‘লং মার্চ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। এই মার্চে প্রায় এক লক্ষ কমিউনিস্ট অংশগ্রহণ করেছিল। ৩৬৮ দিনে ৬০০০ মাইল পরিক্রমা করে এবং দেশের পশ্চিম প্রদেশের শেনসি ও কানসুতে উপস্থিত হয়। তবে কেবলমাত্র ২০,০০০ কমিউনিস্ট সেখানে পৌঁছেছিল। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দং জাপানের বিরুদ্ধে একটি কমিউনিস্ট ফ্রন্ট গঠন করেন। তিনি মনে করিতেন যে জাপানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তাকে জনপ্রিয় করে তুলবে এবং তার জনমুখী সরকার অধিক ফলপ্রসূ হবে। সুতরাং মাও সফল হওয়া পর্যন্ত জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
(গ) মাও-এর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায় চিয়াং কাই-শেক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। তিনি তার সঙ্গে কাজ করিতে চাননি। বিরাট সংকটের পর জাপানের বিরুদ্ধে তিনি মাও-এর পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। যুদ্ধ যখন সমাপ্ত হল তখন মাও চিয়াং কাই-শেককে সম্মিলিত সরকারের (Coalition Govt.)-এর প্রস্তাব দেন। কিন্তু চিয়াং তা গ্রহণ করেননি। মাও তার সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং ফরমোসায় (বর্তমান তাইওয়ান) পলায়ন করে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। মাও জে দং চীন সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুৰখি তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
We Hope the given একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন ও উত্তর will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.