Class 11 History Chapter 4 মধ্য ইসলামীয় ভূমি

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 4 মধ্য ইসলামীয় ভূমি, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 4 মধ্য ইসলামীয় ভূমি The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 4 মধ্য ইসলামীয় ভূমি are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 4 মধ্য ইসলামীয় ভূমি

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

5. ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির পূর্বে আরব সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির পূর্বে আরব সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) আরব সমাজ বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি উপজাতি দলপতির অধীন ছিল। এই দলপতি পারিবারিক সম্পর্কে মনোনীত হলেও জ্ঞান, বুদ্ধি এবং রাজিনার সাহস মুখ্য বিষয় ছিল।

(খ) প্রত্যেক উপজাতির নিজস্ব দেবদেবী ছিল। দেবদেবীকে ধর্মস্থানে রাখা হত ও জন পুজার্চনা করত।

(গ) অধিকাংশ উপজাতি ছিল যাযাবর। তারা সদাই শুষ্ক এলাকা হতে মরুভূমির অনুজ এলাকায় চলে যেত এবং খাদ্য অন্বেষণ ও উটের জন্য জলের ব্যবস্থা করত।

(ঘ) বহুসংখ্যক উপজাতি শহর ও নগরে বাস করত এবং তারা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষিকার্য করত।

6. ‘কোরান’-এর বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ‘কোরান’ ইসলামিক ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কোরান আরবী ভা লিখিত। এটি ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত। অধ্যায়গুলিতে লিখনের দৈর্ঘ্য বড় থেকে ক্রমাগত ছোট হয়ে আসে। মুসলমান পরম্পরা অনুযায়ী পয়গম্বর মহম্মদের মক্কা ও মদিনা বাসকালে, ৩১০ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর কাছে ভগবানের পাঠানো বার্তা কোরানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বার্তাগুলোকে একত্রিত করার কাজ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সম্পূর্ণ হয়। বর্তমানে প্রাপ্ত প্রাচীনতম পূর্ণাঙ্গ কোরানটির সময়কাল নবম শতাব্দী। কোরানের বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মতত্ত্ববিদ ও যুক্তিবাদীরা ভিন্ন মত পোষণ করেন। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীদ খলিফা আল মামুন প্রচার করেন যে কোরান ভগবানের উদ্ভি নয়, ভগবানের সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত, কোরান কোন ঘটনার বিবরণ না দিয়ে শুধু সে সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়ে থাকে। 

7. খলিফা পদের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল? এর উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ হজরত মহম্মদ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তাঁর পর নিজেকে বৈধভাবে পরবর্তী ধর্মগুরু বলে দাবি করবার কেউ ছিল না। উত্তরাধিকারের কোন প্রতিষ্ঠিত নীতি-নিয়মও ছিল না। এই কারণে মহম্মদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব উম্মার উপর অর্পণ করা হয়। এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। ফলে খলিফা পদের সৃষ্টি হয়। প্রথম চারজন খলিফা মহম্মদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁরা তাদের ক্ষমতার যৌক্তিকতা দেখাতেন। এই খলিফাগণ মহম্মদ কর্তৃক নির্দেশনামা অনুযায়ী তাদের কার্য সমাধান করতেন।

8. আব্বাসি শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ছিল? আব্বাসি শাসকরা রাজ্য উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছিল কি?

উত্তরঃ আব্বাসি শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) আব্বাসি শাসনে আরব প্রভাব হ্রাস পেয়েছিল। অন্যদিকে ইরানী সংস্কৃতি গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

(খ) আব্বাসিরা বাগদাদে তাদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

(ঘ) আব্বাসিগণ অ-উপজাতি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রের পুনর্গঠন করেছিল। এর ফলে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রে ইরান ও খুরমানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। 

(ঘ) আব্বাসি শাসকদের দ্বারা খলিফাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও কার্যাবলী শক্তিশালী হয়। তারা ইসলামি সংগঠন ও পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। 

আব্বাসি শাসক ও রাজতন্ত্রঃ কোন আব্বাসি শাসকই রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে সক্ষন হননি। সরকারও সাম্রাজ্যের স্বার্থে তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে বাধ্য করেছিল। সুতরা যে সকল আব্বাসি শাসক রাজতন্ত্র উচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন তারা পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হন।

9. আব্বাসিরা আরব সাম্রাজ্যে তাদের অধিকার-এর যৌক্তিকতাকে তুলে ধরতে কি কি যুক্তি উপস্থাপন করত?

উত্তরঃ উমাইদ বংশের শাসনের শেষ পর্যায়ে গড়ে ওঠা আন্দোলন ‘দাওয়া’-এর মুখা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আব্বাসিরা। তারা উমাইদ শাসনকালকে কুশাসন বলে প্রচার করেন। এবং তারা মহম্মদ প্রদর্শিত আসল ইসলামকে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন।

আব্বাসিরা বিভিন্ন উমাইল শাসন বিরোধী গোষ্ঠীর সমর্থন লাভ করেছিলেন এবং নিজেদের অবস্থানকে আইনত গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাদের যুক্তি ছিল যে মহম্মদের বংশীয় কেউ ত্রাতারূপে এসে অত্যাচারী উমাইদ শাসন থেকে সমস্ত গোষ্ঠীকে রক্ষা করবে। সেই ক্ষেত্রে তারাই সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য।

10. আব্বাসি অভ্যুত্থান কোথায় শুরু হয় এবং কেন? 

উত্তরঃ পূর্ব ইরানের সুদূর খোরাসান অঞ্চলে আব্বাসি অভ্যুত্থান গড়ে ওঠে। আব্বাসি অভ্যুত্থান গড়ে উঠতে বিভিন্ন কারক সহায়ক ছিল; যেমন—

(ক) খরাসান অঞ্চলে বসবাসকারী মিশ্র ইরানীয়-আরব জনগণকে যে-কোন কাজের জন্য সহজে ব্যবহার করা যেত।

(খ) আরব সৈন্যদের অধিকাংশই ছিল ইরাক থেকে আগত, কিন্তু উমাইদ শাসনকালে সিরিয়দের আধিপত্য বিস্তার তারা মেনে নিতে পারত না।

(গ) খোরাসানে বসবাসকারী সাধারণ আরবদের উমাইদ শাসনব্যবস্থার প্রতি কোনও আস্থা ছিল না। কারণ তারা কর মকুব ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দানের আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়িত করেন নি।

(ঘ) জাত সচেতন আরবদের ঘৃণার পাত্র হয়ে ইরানীয়রা উমাইসদের ক্ষমতাচ্যুত করার যে-কোন আন্দোলনে যোগ দিতে প্রস্তুত ছিলেন। 

11. আব্বাসি শাসনকালে কিভাবে আরব আধিপত্য হ্রাস পায়? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ আব্বাসি শাসনকালে নিম্নলিখিত বিভিন্ন পরিঘটনার প্রেক্ষিতে আরবদের প্রতিপত্তি হ্রাস পেতে শুরু করেঃ

(ক) প্রাচীন ইরানীয় নগর Ctesiphon-এর পার্শ্ববর্তী বাগদাদে আব্বাসিরা তাদের রাজধানী স্থাপন করে। এর ফলে ইরানী সংস্কৃতি গুরুত্ব লাভ করে।

(খ) ইরাক ও খোরাসানের লোকদের যোগদানের বেশি সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রকে অ-উপজাতির ভিত্তিতে নতুনভাবে গঠন করা হয়।

 (গ) আব্বাসি শাসকরা খলিফাতন্ত্রের ধর্মীয় মর্যাদা ও কর্মকাণ্ডের উপর গুরুত্ব আরোপ হয়। করে ইসলামীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ও ইসলামীয় পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। 

(ঘ) রাষ্ট্রের কেন্দ্রীভূত শাসন পদ্ধতি বজায় রাখায় ইরানীয় আধিপত্য বিস্তার লাভ করে।

12. প্রথম খলিফাদের অধীন আরব সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ খলিফাগণ বিজয়ী সকল রাষ্ট্রে নুতন প্রশাসনিক কাঠামো প্রবর্তন করেন। এইসকল রাষ্ট্র গভর্নর (আমার) এবং উপজাতি দলপতি (আশ্রাফ) দ্বারা পরিচালিত হত। কেন্দ্রীয় শাসন কর্তৃপক্ষের রাজস্বের প্রধান দুই উৎস ছিল – মুসলমান প্রদেয় কর এবং অন্য রাষ্ট্রে হানার মাধ্যমে লুণ্ঠিত অর্থ। খলিফার সেনাবাহিনী মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত শহরের ক্যাম্পে থাকত যাতে তারা খলিফার আদেশের নাগালের সীমার মধ্যে থাকত। শাসকবর্গ এবং সেনাবাহিনী লুণ্ঠিত দ্রব্যের অংশ এবং মাসিক বেতন ও ভাতা (আগো) পেত। অ-মুসলমানগণকে ‘খারাজ’ ও ‘জিজিয়া’ নামক কর দিতে হত। এর মাধ্যমে তারা সম্পত্তির অধিকার ও ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন করত। ইহুদি ও খ্রিস্টানগণকে রাষ্ট্রের সুরক্ষিত প্রজা বলে গণ্য করা হত। তাদের সম্প্রদায়গত বিষয় পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়।

13. ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইসলামীয় সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ ১৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইসলামীয় সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) রাষ্ট্র ও সমাজের পৃথক সত্ত্বা।

(খ) ইসলামীয় সংস্কৃতির ভাষা হিসাবে পারসি ভাষার ক্রমোন্নতি।

(গ) চিন্তাধারা ও বিচারের আদান-প্রদান।

(ঘ) জ্ঞানী, শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের অবাধ চলাফেরার ধ্যানধারণা ও রীতিনীতির প্রচার এ প্রসার।

(ঙ) অন্য ধর্ম থেকে পৃথক একটি ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ধারা হিসাবে ইসলামের পরিচয় স্থাপিত হয়।

14. তুর্কী কারা ছিল? গজনীতে তুর্কী কর্তৃত্ব কিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয়েছিল?

উত্তরঃ তুর্কীরা হল মধ্য এশিয়ার তুর্কীস্থানের যাযাবর সম্প্রদায়। তারা অত্যন্ত দক্ষ যোদ্ধা ও হানাদার ছিল। তারা আব্বাসিদ, সামানিদ এবং বাইয়িদ প্রশাসনের অধীন যোদ্ধা ও ক্রীতদাস হিসাবে কাজ করত। একমাত্র রাজ আনুগত্য ও সামরিক দক্ষতার দরুন তারা উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন।

১৬১ খ্রিস্টাব্দে তুর্কী আঘটেড্রিন ‘গজনভি সুলতানী প্রতিষ্ঠা করেন, যা গজনীর মহম্মদ (১৯৮-১০০০ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক সুসংহত হয়। বাইয়িদ-এর মতো গজনাভিদগণও সামরিক রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের তুর্কী ও ভারতীয় বৃত্তিধারী সেনাবাহিনী ছিল। কিন্তু খুরাসান ও আফগানিস্তান ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রভূমি। তাদের কাছে আব্বাসি খলিফাগণ বৈধতার উৎস ছিল। মানুষ এক ক্রীতদাসের পুত্র ছিলেন। এইজন্য তিনি খলিফার নিকট হতে সুলতান উপাধি গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে খলিফা সুন্নি গজনাভিদের সমর্থন কামনা করেছিলেন। সুতরাং গজনীতে খলিফাগণ তুর্কী কর্তৃপক্ষের বৈধতার উৎস হিসাবে পরিণত হয়েছিলেন। 

15. আরব সাম্রাজ্যে কৃষির সমৃদ্ধির জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ আরব সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষির সমৃদ্ধিও ঘটেছিল। এর জন্য নানা প্রকার পদক্ষেপ অবলম্বন করা হয়েছিলঃ

(ক) রাষ্ট্র পরিচালিত জলসেচ ব্যবস্থা, কূপ খনন এবং নানা এলাকা, বিশেষত নীলনদের উপত্যকায় বাঁধ ও খাল নির্মাণের ফলে কৃষি উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। 

(খ) যে সকল লোক অনাবাদী জমিকে আবাদী জমিতে পরিণত করেছে তাদের করের পরিমাণ হ্রাস করা হয়। ফলে কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

(গ) বিভিন্ন প্রকার শস্যও উৎপাদিত হতে থাকে। এদের মধ্যে কমলালেবু, কার্পাস, তরমুজ, কলা, বেগুন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সকল সামগ্রীর মধ্যে কিছু কিছু সামগ্রী ইউরোপে রপ্তানি করা হত। 

16. আরব সাম্রাজ্যের কৃষিব্যবস্থার উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লেখ।

অথবা,

অধিকৃত অঞ্চলে কৃষিব্যবস্থার ক্ষেত্রে আরব সাম্রাজ্যের ভূমিকা লেখ।

উত্তরঃ আরব সাম্রাজ্যে নতুনভাবে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী জনগণের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। এ ব্যাপারে আরব শাসকরা অর্থাৎ ইসলামীয় রাষ্ট্র কোনও পরিবর্তন সাধন করেনি। বড় ও ছোট কৃষকেরা ও কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ছিল জমির মালিক।

ইরান ও ইরাক অঞ্চলে বিস্তৃত ভূমি কৃষকরাই চাষ করত। আর জমিদাররা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে সেসেনীয় এবং ইসলামীয় আমলে কর/রাজস্ব আদায় করত। কিছু ক্ষেত্রে চারণভূমি থেকে কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হওয়া এলাকাগুলোতে জমি ছিল সামগ্রিকভাবে গ্রামের সম্পত্তি। শেষ পর্যায়ে ইসলামীয় রাজ্য জয়ের পর যে সমস্ত বড় খামার তাদের মালিকেরা পরিত্যাগ করেছিলেন সেগুলো রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করে এই সমস্ত জমি মুসলমান সম্ভ্রান্ত শ্রেণী বিশেষ করে খলিফার পরিবারের সদস্যদের হস্তান্তরিত করা হয়।

17. আরব সাম্রাজ্যের কর ব্যবস্থা কেমন ছিল? কেন অভিন্ন কর প্রথার প্রচলন করা হয়?

উত্তরঃ আরব শাসনকালে রাজ্যজয়ের পর্ব শেষ হবার পর সামগ্রিকভাবে কৃষিজমির উপর রাষ্ট্রের অধিকার স্থাপিত হয় এবং আদায়ীকৃত করের অধিকাংশই আসত কৃষিজমি থেকে। আরবদের অধিকৃত অংশ যে সমস্ত জমি মালিকদের হাতে রয়েছিল তাদের ‘স্বরাজ’ বলে এক ধরনের বিশেষ কর দিতে হত। এই করের পরিমাণ, উৎপাদনের পরিমাণ অনুযায়ী অর্ধেক থেকে এক-পঞ্চমাংশের মধ্যে ধার্য হত। মুসলমানের অধিকৃত বা কর্ষিত জমিতে উৎপন্ন শস্যের এক-দশমাংশ কর হিসাবে আদায় করা হত। মুসলমানদের যেহেতু কম কর দিতে হয়, তাই কম কর দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইসলাম ধর্মে ধর্মাত্তরিত হতে শুরু করলে রাষ্ট্রের আয়ের পরিমাণ কমে যায়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবার জন্য প্রথম অবস্থার খলিফারা ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়াকে নিরুৎসাহ করেন। এবং পরবর্তীতে অভিন্ন কর প্রথার প্রচলন করেন।

18. আরব সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

আরব সাম্রাজ্যে মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ রাজস্ব ব্যবস্থা ও বাজার অর্থনীতির ফলে আরব সাম্রাজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। পণ্য ও পরিষেবার মূল্য দেবার জন্য সোনা, রুপা ও তামার মুদ্রা প্রস্তুত করা হয়। প্র দেশগুলোর সাথে ব্যবসার বিনিময়ে ইউরোপ থেকে মূল্যবান ধাতু ও মুদ্রা আমদানি করা হত। মুদ্রার ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে লোকে পুঞ্জীভূত সম্পদ বাজারজাত করতে বাধ্য হয়। মুদ্রার পাশাপাশি ঋণ ব্যবস্থাও ব্যবসা বাণিজ্যকে পুষ্ট করে। উন্নতমানের মূল্য প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তুলে আরবরা মধ্যযুগীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল। ঋণপত্র, বিনিময়পত্র বা বাণিজ্যপত্রের ব্যবহার ব্যবসা, বিনিময় ও অর্থ আদানপ্রদানে নিরাপত্ত ও সুনির্দিষ্টতা সুনিশ্চিত করেছিল। 

19. আৱৰ সাম্রাজ্যে বা মধ্যযুগীয় ইসলামীয় ভূমিতে বাণিজ্যিক প্রথা বা ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ আরব সাম্রাজ্যে ব্যবসারীদের মধ্যে পারিবারিক ব্যবসা প্রবর্তন ও দাসদের নিয়োগ করবার প্রথা সাধারণ ক্ষেত্রে প্রচলিত ছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অংশীদাররা ভ্রমণকারী ব্যবসায়ীদের মূলধন দিয়ে সাহায্য করতেন এবং বোঝাপড়া অনুযায়ী লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নিতেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনে কোন বাধা ছিল। বিধিনিষেধের মধ্যে সুদসহ আদান-প্রদান ছিল আইন বিরুদ্ধে, যদিও কিছু লোক নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করত।

20. বিজ্ঞান এবং দর্শনের ক্ষেত্রে আরবদের অবদানের বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ বিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রে আরবদের অবদান অনস্বীকার্য। অনেক ইউরোপীয় পণ্ডিত গ্রিক সাহিত্য আরবীয় অনুবাদে পড়েছিলেন। আবার গ্রিকরাও আরবী এবং পারস্যের সাহিত্য অনুবাদ করেছিলেন যাতে এই অনুবাদ থেকে ইউরোপের আরও অন্য ভাষায় সেগুলো অনুবাদ করা যায়। এই কাজ যে বিষয়গুলোর উপর ছিল তা হল- সাধারণ বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র ও রসায়নশাস্ত্র। ভোগালবিদ টলেমির Almagest-এ আরবী শব্দ ‘AI’-এর ব্যবহার গ্রীকদের সঙ্গে আরবদের একটা বিশেষ “সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করছে। মুসলমান লেখকদের মধ্যে যারা ইটালীতে পণ্ডিত হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন তারা হলেন মধ্য এশিয়ার অন্তর্গত বুখারার একজন আরবীয় চিকিৎসক ও দার্শনিক ইবনসিনা। স্পেনের একজন আরবী দার্শনিক আবু রুশদ ধর্মীয় বিশ্বাস ও দার্শনিক জ্ঞানের মধ্যে যে টানাপড়েন রয়েছে তার মীমাংসা করতে চেষ্টা করেছিলেন। খ্রিস্টান চিন্তাবিদরা তাঁর এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছিলেন।

21. শরিয়া’ কি? ইসলামিক সমাজের গুরুত্ব লেখ। 

উত্তরঃ ‘শরিয়া’ অর্থাৎ ‘সরল পথ হচ্ছে ঈশ্বরের সাথে ইসলামধর্মে বিশ্বাসীদের সান্নিধ্য স্থাপনের উপায়। যা সম্ভব হত ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে ও অন্যান্য সামাজিক শ্রেণীর সাথে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। বস্তুত, এটা ছিল সুন্নী মুসলীম সমাজের আইনীর ধারা। 

‘শরিয়া’ আইন সুন্নী মুসলিম সমাজে সমস্ত সম্ভাব্য আইনী বিষয়ের দিকনির্দেশ করত। তবে এই আইনগুলিতে ব্যবসায়িক, ফৌজদারি ও সাংবিধানিক বিষয়ের চাইতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয়গুলো ছিল বেশি স্পষ্ট। চূড়ান্ত আকার দেওয়ার আগে শরিয়া আইন স্থানীয় প্রচলিত আইন এবং সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইনগুলো পর্যালোচনা করেছে। তা সত্ত্বেও শহরতলীতে প্রচলিত আইনের আধিপত্য বজায় ছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে, যেমন কন্যা সন্তানের জমির উত্তরাধিকার পাবার মতো বিষয়ে, শরিয়ত আইনের থেকে প্রচলিত আইন ছিল অধিক গ্রহণযোগ্য। তাই অধিক ক্ষেত্রে শাসকরা বা কাজিরা কঠোর হয়ে শরিয়া আইন প্রয়োগ না করে অনেক ক্ষেত্রেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন।

22. ইসলামি আইনের ভিত্তি কি? সর্বমোট কয় ধরনের ইসলামি আইন আছে? 

উত্তরঃ উলামাদের কাছে কোরান থেকে আহরিত জ্ঞান ও পয়গম্বরের আদর্শ আচরণই ছিল ইসলামী জীবনশৈলির সঠিক পথ। কিন্তু নগরায়নের ফলে জীবনযাত্রা ক্রমশ কঠিন হতে থাকে। তাছাড়া কোরান ও হাদিসে সমস্ত বিষয়ের স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায় না। তাই ইসলামী আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে নিজেদের বিচারশক্তি প্রয়োগ করেন।

আইনের সূত্র নির্দেশ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন মতের ফলে অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে চার ধরনের ইসলামী আইনের ধারা গড়ে ওঠে। বিখ্যাত আইন প্রণেতাদের নামানুসারে এই চার ঘরানার আইনের নামকরণ করা হয়। এইগুলো হচ্ছে—

(ক) মালিকি। 

(খ) হানাফি। 

(গ) সাফি। এবং 

(ঘ) হানবালি। 

এর মধ্যে হানবালি ঘরানা হচ্ছে সবথেকে গোঁড়া।

23. ইবন্‌ সিনা কে ছিলেন? তার সৃষ্টিকর্ম ও অবদান সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ইবন সিনা ছিলেন একজন আরব চিকিৎসক ও দার্শনিক। তিনি শেষ বিচারের দিনে দেহের পুনরুত্থানের তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না, ধর্মতাত্ত্বিকরা তার প্রবল বিরোধিতা করেন।

তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে তার অবদান অশেষ। তার চিকিৎসা-বিষয়ক গ্রন্থগুলো বহুলভাবে পাঠ করা হত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে “আল কানুন ফিল তির’। এতে প্রায় ৭৬০টি ঔষধের নাম পাওয়া যায়। এছাড়াও তিনি নিজের হাতে হাসপাতালগুলোতে যে. পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন সেগুলোর বর্ণনা পাওয়া যায়। খাদ্য ও পণ্যের গুণাগুণ, স্বাস্থ্যের উপর পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাব, কিছু ছোঁয়াচে রোগের বিবরণ ইত্যাদির বিবরণ তার লেখার মধ্যে পাওয়া যায়। তার এই বইটি ইউরোপে বিশাল জনপ্রিয় ছিল। এবং পাঠ্যবই হিসাবে ব্যবহৃত হত। কবি ওমর খৈয়াম মৃত্যুর সময় এই বইটিই পড়ছিলেন বলে অনুমান।

24. সুলতান মাসুদ কে ছিলেন? গজনী সুলতানতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ গজনী সুলতানতন্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন সুলতান মাহমুদ। গজনী সুলতানতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) গজনীর সুলতানরা ছিলেন তুর্কীদাস, যদিও তারা ছিলেন একটি সামরিক বংশ।

(খ) তুর্কী ও ভারতীয় সেনাদের নিয়ে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী ছিল।

(গ) তাদের ক্ষমতার উৎস ছিল খোরাসান অঞ্চল ও আফগানিস্তান।

(ঘ) গজনী ছিল সুন্নি সুলতানতত্ত্ব। তাই খলিফা শিয়া সুলতানতন্ত্রগুলিকে প্রতিহ করতে গজনীর সুলতানদের স্বীকৃতি দেন।

25. Outremer বলতে কি বোঝ? এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ প্রথম ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুশেডের পর ফ্রাঙ্কীয়রা তাদের বিজিত সিরিয়া প্যালেস্তাইন অঞ্চলে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি ক্রুশেডার বা ধর্মযোদ্ধা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে। এই রাজগুলো একত্রে Outremer বলে পরিচিত।

সর্বমোট চারটি ক্রুশেডার বা ধর্মযোদ্ধা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী ধর্মযোদ্ধাগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল Outremer-এর সুরক্ষা এবং বিস্তার। Outremer কিছুদিন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবার পর ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীরা এডেসা দখল করলে দ্বিতীয় ধর্মযুদ্ধের সূচনা হয়। জার্মানি ও ফ্রান্সের যৌথ সেনাবাহিনী দামাস্কাস দখলের চেষ্টা করে, কিন্তু তারা পরাজিত হয়ে দেশে ফেরে। এরপর থেকেই Outremer-এর শক্তির ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে।

26. ইসলামি ইতিহাসের উৎসসামগ্রী হিসাবে কোরানের ব্যবহার কি কি সমস্যা সৃষ্টি করেছিন? 

উত্তরঃ প্রাচীন ইসলামি ইতিহাসের উৎসসামগ্রী হিসাবে কোরানের ব্যবহার নিম্নোক্ত দুটি সমস্যা সৃষ্টি করেছিলঃ

(ক) কোরান হল একটি ধর্মশাস্ত্র। এটি এইরূপ একটি গ্রন্থ যাতে ধর্মীয় কর্তৃত্ব নাস্ত করা হয়েছে। মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যেহেতু কোরান হল আল্লার বাঁ সুতরাং তা আক্ষরিকভাবে উপলব্ধি করা উচিত। কিন্তু যুক্তিবাদীগণ কোরানের বিশদ ব্যাখ্যা নিয়েছেন। তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে কোরান কেবল আত্মার বাণীই নয়, এটি আল্লার সৃষ্টি।

(খ) সমস্যা হল কোরান প্রায়ই রূপকার্থ ব্যক্ত করে। অন্যদিকে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ ঘটনা বিবৃত থাকে না, এর প্রাসঙ্গিকতা ব্যক্ত করে। যার ফলে কোরান উপলব্ধির জন্য ‘হাদিস’ রচনা করা হয়েছে।

27. সুফি কারা ছিল? তাদের ধর্মীয় মতবাদ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সুফিগণ হল মধ্যযুগীয় ইসলামের ধর্মীয়মনস্ক মানুষের একটি গোষ্ঠী। সুফিদের ধর্মীয় মতবাদঃ সুফিরাণের প্রধান প্রধান ধর্মীয় মতবাদ নিম্নরূপঃ 

(ক) সুফিগণ অলৌকিকতার মাধ্যমে ঈশ্বর সম্পর্কে গভীরতর জ্ঞান অন্বেষণ করতে চেয়েছিল। 

(খ) তারা পার্থিব ভাগ্য অস্বীকার করে একমাত্র ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে চায় কারণ সমাজ কেবলমাত্র পার্থিব সুসমৃদ্ধির যোগান দেয়।

(গ) সুফিগণ প্রেম ও সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তাদের মতে সর্বেশ্বরবাদের অর্থ হল ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং তাঁর সৃষ্টি হল মানুষ। মানুষের আত্মাকে তার ঈশ্বরের সঙ্গে এক হতে হবে।

(ঘ) তারা কদাচিৎ ধর্মীয় অন্তর্ভুক্ত ও মর্যাদায় বিশ্বাস করে। সুফিবাদ সকলের জন্য উন্মুক্ত। 

28. দ্বিতীয় খলিফা, উমর কোন বাইজেনটাইন এবং সেসেনিয়ো সাম্রাজ্য আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন? এর ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ খলিফা উমর বাইজেন্টাইন ও সেসেনিয়ো সাম্রাজ্যের আক্রমণ পরিকল্পনা করেছিলেন, কারণ—

(ক) খলিফা উমর মুসলিম উম্মার ক্ষমতা বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। 

(খ) এই দুই সাম্রাজ্যের আর্থিক সমৃদ্ধি ছিল উত্তম স্তরের। তাই লুণ্ঠন বা আক্রমণের সাহায্যে এ অঞ্চল থেকে সম্পদ আহরণ সম্ভব। 

(গ) এই দুই সাম্রাজ্য আরব অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে বিশাল অঞ্চল দখল করে রেখেছিল। 

(ঘ) উভয় সাম্রাজ্যই ইসলাম ভিন্ন ধর্মমতকে পৃষ্ঠপোষকতা করত। আরবরা খুব সহজেই যুদ্ধ ও চুক্তির মাধ্যমে তাদের কর্তৃত্ব এই দুই সাম্রাজ্যের বিস্তার এলাকার উপর কায়েম করতে সক্ষম হয়। 

29. উমাইদ শাসকরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার বা মুসলিম উম্মার উপর কর্তৃত্ব স্থাপনে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ উমাইদ শাসকরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার বা মুসলিম উম্মার উপর কর্তৃত্ব স্থাপনে নিম্নলিখিত ধারাবাহিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেনঃ

(ক) প্রথম উমাইদ খলিফা মুয়াইয়া তার রাজধানী দামাস্কাসে স্থানান্তরিত করেন।

(খ) বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের আদলে রাজসভায় নানা প্রথা প্রবর্তন করেন এবং শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেন।

(গ) বংশগত উত্তরাধিকার প্রথা প্রবর্তন করেন। এই সকল নতুন প্রবর্তিত ব্যবস্থাগুলি মুয়াইয়া পরবর্তী খলিফারা মেনে চলেন। এর ফলেই উমাইদরা ৯০ বৎসর এবং আব্বাসিরা ২০০ বৎসর সময়কাল ক্ষমতাসীন থাকেন।

30. উমাইদ শাসনকালে আরব ও ইসলামিক অস্তিত্ব ধরে রাখতে ও সংরক্ষণে বি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? এই ক্ষেত্রে আবদ-আল-মালিক-এর অবদান লেখ।

উত্তরঃ উমাইদ শাসকরা সবসময় একতার জন্য আবেদন জানাতেন ও ইসলামের নামে সব ধরনের বিদ্রোহকে দমন করতেন। তাদের শাসনের বৈধতার ভিত্তিই ছিল ইসলাম তাছাড়া তারা তাদের আরবীয় সামাজিক পরিচিতিটাও বজায় রাখতেন। আবদ-আল-মালিক ও তার উত্তরাধিকারীদের আমলে আরবী ও ইসলামীয় দুই ধরনের পরিচয়ের উপরই দেওয়া হত।

এইক্ষেত্রে আবদ-আল-মালিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যেমন—

(ক) শাসনক্ষেত্রে আরবীয় ভাষার প্রবর্তন।

(খ) ইসলামীয় মুদ্রার প্রবর্তন, যাতে আরবীয় লিপির প্রচলন করা হয়।

(গ) তাছাড়াও, জেরুজালেমে Dome of the Rock নির্মাণ করে আবদ- আল-মালিক আরব-ইসলামীয় পরিচিতির বিস্তারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখেন।

31. মোট কয়টি ক্রুশেড সংঘটিত হয়? ক্রুশেডের ফলাফল লেখ। খ্রিস্টান-মুসলিম সম্পর্কে ক্রুশেডের প্রভাব লেখ।

উত্তরঃ সর্বমোট নয়টি (১টি) ক্রুশেড সংঘটিত হয়। এর মধ্যে প্রারম্ভিক ৪টিই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

(ক) প্রথম ক্রুশেড বা ধর্মযুদ্ধ — ১০৯৮-১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ।

(খ) দ্বিতীয় ক্রুশেড বা ধর্মযুদ্ধ — ১১৪৫-১১৪৯ খ্রিস্টাব্দ। 

(গ) তৃতীয় ক্রুশেড বা ধর্মযুদ্ধ — ১১৮৯-১১৯২ খ্রিস্টাব্দ।

(ঘ) চতুর্থ ক্রুশেড বা ধর্মযুদ্ধ — ১২০২-১২০৪ খ্রিস্টাব্দ।

এর পরবর্তীতে ১২১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট পাঁচটি ছোট পর্যায়ের ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়। ক্রুশেডের বা ধর্মযুদ্ধের ফলাফলগুলি নিম্নরূপঃ 

(অ) খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্ক:

(ক) খ্রিস্টান প্রজাদের প্রতি মুসলিম শাসকদের কঠিন মনোভাব দেখা দেয়।

(খ) মুসলিমরা ক্ষমতায় আসার পরও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসার ব্যাপারে ইটালিয় বণিক সম্প্রদায়ের আধিপত্য বিস্তার ও বজায় থাকে।

(আ) সাধারণ ফলাফলঃ

(ক) ইউরোপীয়রা সমুদ্রযাত্রা, জাহাজ নির্মাণ ও চুম্বকীয় কম্পাসের বিষয় জানে।

(খ) ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

(গ) ক্রুশেডের পর জ্ঞানচর্চা, ভ্রমণ ও নতুন চিন্তাধারার বিস্তার ইউরোপে নবজাগরণের ভিত্তি গড়ে তোলে।

32. পারসি সাহিত্যচর্চায় গজনী সুলতানতন্ত্রের অবদান লেখ। 

উত্তরঃ একাদশ শতকে গজনী সুলতানতন্ত্রে পারসিক সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। রাজসভার চাকচিক্য স্বাভাবিকভাবেই কবিদের আকর্ষণ করে। নিজেদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য সুলতানরা মহাকাব্যিক পদ রচয়িতাদের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। কবিদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ফিরদৌস। তিনি ৫০,০০০ দুই লাইনের পদ-এর শাহনামা গ্রন্থটি রচনা। করেন। পরবর্তীতে গজনীর ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পার্শিভাষা ভারতবর্ষে শাসন ও সংস্কৃতির ভাষা বলে পরিগণিত হয়।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন কখন হয়েছিল? এর ধর্মীয় মতবাদ আলোচনা কর। 

উত্তরঃ ইসলাম ধর্ম ৬১২ খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদ কর্তৃক প্রবর্তিত হয়েছিল। এই বছর তিনি নিজেকে ঈশ্বর বা আল্লার দূত (রসুল) বলে ঘোষণা করেন। তিনি একটি নূতন ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেন। যারা এই মতবাদ অবলম্বন করেন তাদেরকে ইসলাম বা মুসলমান বলে। ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসঃ ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাস পবিত্র কোরানের মধ্যে বর্ণিত আছে। এইগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) একমাত্র আল্লাকেই ডাকতে হবে।

(খ) বিচারের দিনই মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। 

(গ) প্রত্যেক মুসলমানকেই পাঁচটি নীতি মেনে চলতে হবেঃ

(অ) আল্লাহ একমাত্র ঈশ্বর এবং মহম্মদ হলেন তাঁর দূত। 

(আ) তাকে প্রতিদিন পাঁচবার নমাজ পড়তে হবে।

(ই) সে গরিবকে বিনামূল্যে আহার বিতরণ করবে। 

(ঈ) সে রমজান মাসে রোজা পালন করবে।

(উ) জীবনে অন্তত একবার মক্কা ভ্রমণ করবে।

(ঘ) কোন মুসলমান বিগ্রহ পূজা করবে না। 

(ঙ) সে কোন প্রকার সুদ ভোগ করবে না।

(চ) সে বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী পালন করবে।

(ছ) মানুষের সমতায় তাকে বিশ্বাসী হতে হবে।

(জ) তাকে উদার ও সুগুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। 

(ঝ) কোরানকে পবিত্র গ্রন্থ বলে গণ্য করবে।

2. ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তার এবং হজরত মহম্মদের অধীনে সমাজের প্রধান দিকসমূহ বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ হজরত মহম্মদ মদিনায় একটি রাজনৈতিক শৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন যা তার অনুগামীদের সুরক্ষা প্রদান করেছিল। তিনি মদিনা শহরে সংঘটিত বিশৃঙ্খলার সমাধান করেছিলেন। উম্মাসমূহকে একটি বিশাল সম্প্রদায়ে পরিণত করেছিলেন যাতে মদিনার ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায় মহম্মদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তারঃ মুসলমান সম্প্রদায় প্রথমাবস্থায় কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করত। কিছুদিন পর মুসলমানগণ মক্কা জয় করে। ফলে রাজনেতিক নেতা ও ধর্মীয় প্রবর্তক হিসাবে হজরত মহম্মদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন উপজাতি বিশেষত বেদুইনগণ মহম্মদের কৃতিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে যায় এবং তারা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়। এইভাবে তারা মুসলমান সমাজে অন্তর্ভুক্ত হয়।

সুতরাং মহম্মদের আঁতাত সমগ্র আরব দুনিয়ায় বিস্তার হতে আরম্ভ করে। মদি নবআবির্ভূত ইসলামি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক রাজধানী এবং মক্কা তার ধর্মীয় কেন্দ্রে পরিণত হয়। কাবা হতে বিগ্রহ পরিষ্কার করা হয়। মুসলমানদের কাবা শরিফের দিকে মুখ করে নমাজ পড়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আরবের এক বিশাল এলাকা মহম্মদের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়। ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা দীর্ঘকাল আরব উপজাতির এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর যুক্তরাজ্য হিসাবে পরিগণিত হয়।

3. খলিফাদের অধীনে ইসলামি কর্তৃত্ব কিভাবে বিস্তার লাভ করেছিল?

উত্তরঃ হজরত মহম্মদের মৃত্যুর পর বহুসংখ্যক উপজাতি ইসলামি রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কিছু নিজেদের ধর্মপ্রবর্তক ঘোষণা করে। 

(ক) প্রথম খলিফা আবু বকর বিদ্রোহ দমনের জন্য কয়েকটি অভিযান চালান। 

(খ) দ্বিতীয় খলিফা, উমর উম্মার ক্ষমতা বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন। খলিফা এই ব্যাপারে অবগত ছিলেন যে ব্যবসা এবং কর সংগ্রহ থেকে প্রাপ্ত সামান্য উপার্জন দ্বারা উম্মাকে পরিচালন করতে পারা যাবে না। এই কারণে খলিফা এবং তার সামরিক কমান্ডারগণ উপজাতিদের শক্তি বৃদ্ধি করেন যাতে পশ্চিম দিকের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং পূর্ব দিকের সাসানিয় সাম্রাজ্য জয় করতে পারা যায়। বাইজেন্টাইন এবং সাসানিয়ান উভয় সাম্রাজ্যের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্মের উন্নতি ঘটে এবং সাসানিয়ান সাম্রাজ্যে জুরস্থরিয়ান ধর্মের প্রসার ঘটে, যাকে ইরানের প্রাচীনতম ধর্ম বলা হয়। আরব আক্রমণের প্রাক্কালে ধর্মীয় বিরোধ এবং অভিজাতবর্গের বিরোধের জন্য উভয় সাম্রাজ্যের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই কারণে এই দুটি সাম্রাজ্য যুদ্ধ ও সন্ধির মাধ্যমে জয় করা আরবদের পক্ষে খুবই সহজ হয়। তিনটি সফল অভিযানের (৬৩৭-৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) মাধ্যমে আরবগণ ইরাক, সিরিয়া, ইরান এবং মিশরকে মদিনার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল। সম্মিলিত কৌশল, ধর্মীয় চেতনা এবং বিরোধীদের দুর্বলতার জন্যই আরবগণ সাফল্য অর্জন করে।

(গ) তৃতীয় খলিফা উথমান মধ্য এশিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য পুনরায় অভিযান চালান। এইভাবে হজরত মহম্মদের মৃত্যুর এক দশকের মধ্যে নীল ও অক্সাস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল আরব-ইসলামিক রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই অঞ্চলসমূহ আজ পর্যন্ত মুসলমানদের অধীনে রয়েছে।

4. খলিকাতন্ত্রের পতন কেন হয়েছিল?

উত্তরঃ হজরত মহম্মদ পরবর্তী সময়কালে ইসলামিক উন্নাকে কেন্দ্র করে আরব অঞ্চলে গঠিত হওয়া খলিফাতন্ত্র নানা শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে বিশাল অগ্রগতি লাভ করলেও নবম শতাব্দী থেকে তার পতন শুরু হয় এবং পতনের জন্য নিম্নলিখিত কারণসমূহ দায়ীঃ

(ক) নবম শতাব্দী থেকে দূরবর্তী রাজ্যগুলির উপর খলিফার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়।

(খ) সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্রে আরবপন্থী ও ইরানীয় পন্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে খলিফাতন্ত্রের অস্তিত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে।

(গ) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হারুণ আল রসিদের পুত্র আমীন ও মামুনের সমর্থকদের মধ্যে এক গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এর ফলে গোষ্ঠীছন্দু বৃদ্ধি পায় এবং তুর্কী দাস আধিকারিকদের (মামলুদ) নিয়ে একটি নতুন ক্ষমতা গোষ্ঠী সৃষ্ট হয়।

(ঘ) সিয়ারা সুন্নী রক্ষণশীলতার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। 

(ঙ) খোরাসান ও ট্রানসক্সিয়ানা অঞ্চলে তাহিরি ও সামানি এবং মিশর ও সিরিয়ায় তুলুনিরার মতো অসংখ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আব্বাসি খলিফাদের প্রতিপত্তি কেবলমাত্র মধ্য ও পশ্চিম ইরানে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে।

(চ) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বায়াদ নামে ইরানের কাস্পিয়ান এলাকায় একটি সিয়া গোষ্ঠী বাগদাদ দখল করে, যার ফলে খলিফাতন্ত্রের পতন ঘটে। তারা কেবল সুন্নী প্রজাদের নিয়মমাফিক প্রধানই রয়ে গেলেন।

5. খলিফাদের পতন এবং সুলতানদের উত্থানের কারণগুলো কি ছিল?

উত্তরঃ হজরত মহম্মদ পরবর্তী সময়কালে ইসলামিক উন্নাকে কেন্দ্র করে আরব অঞ্চলে গঠিত হওয়া খলিফাতন্ত্র নানা শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে বিশাল অগ্রগতি লাভ করলেও নবম শতাব্দী থেকে তার পতন শুরু হয় এবং পতনের জন্য নিম্নলিখিত কারণসমূহ দায়ীঃ

(ক) নবম শতাব্দী থেকে দূরবর্তী রাজ্যগুলির উপর খলিফার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়।

(খ) সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্রে আরবপন্থী ও ইরানীয় পন্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে খলিফাতন্ত্রের অস্তিত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে।

(গ) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হারুণ আল রসিদের পুত্র আমীন ও মামুনের সমর্থকদের মধ্যে এক গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এর ফলে গোষ্ঠীছন্দু বৃদ্ধি পায় এবং তুর্কী দাস আধিকারিকদের (মামলুদ) নিয়ে একটি নতুন ক্ষমতা গোষ্ঠী সৃষ্ট হয়।

(ঘ) সিয়ারা সুন্নী রক্ষণশীলতার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। 

(ঙ) খোরাসান ও ট্রানসক্সিয়ানা অঞ্চলে তাহিরি ও সামানি এবং মিশর ও সিরিয়ায় তুলুনিরার মতো অসংখ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আব্বাসি খলিফাদের প্রতিপত্তি কেবলমাত্র মধ্য ও পশ্চিম ইরানে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে।

(চ) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বায়াদ নামে ইরানের কাস্পিয়ান এলাকায় একটি সিয়া গোষ্ঠী বাগদাদ দখল করে, যার ফলে খলিফাতন্ত্রের পতন ঘটে। তারা কেবল সুন্নী প্রজাদের নিয়মমাফিক প্রধানই রয়ে গেলেন।

সুলতানদের উত্থানঃ খলিফাদের পতনের পর দশম ও একাদশ শতাব্দীতের তুরস্কের সুলতানতন্ত্রের উত্থান হয়। ১৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইসলামীয় সমাজ কোন একটা রাজনৈতিক বা ভাষিক সূত্রে গ্রথিত ছিল না। এর একতার মূলে ছিল অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ধারা। রাষ্ট্র ও সমাজের পৃথক সত্ত্বা। রাষ্ট্র সমাজের পৃথক সত্ত্বা, ইসলামীয় সংস্কৃতির ভাষা হিসাবে পারসি ভাষার ক্রমোন্নতি এবং বৌদ্ধিক পরম্পরার আদান-প্রদানের ফলে রাজনৈতিক ভেদাভেদের মধ্যেও একতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। মধ্য ইসলামীয় ভূমিতে পণ্ডিত, শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের অবাধ চলাফেরা ধ্যান ধারণা ও রীতিনীতির প্রসার ঘটিয়েছিল। কিছু ধ্যান-ধারণা ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে গ্রামস্তরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব কারণে সুলতানতন্ত্রের উত্থান ঘটে। ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দে মালজুক সুলতানগণ কাজ দান অধিকার করে এই এলাকাকে সুন্নি শাসনভুক্ত করে। খলিফা আল কায়েম তুম্বরীল বেগমকে সুলতান উপাধি দান করেন। এই ঘটনা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিচ্ছিন্নকরণ সূচিত করে। আলাপ আর সালানের রাজত্বকালে সালজুক সুলতানের সাম্রাজ্য আনাটোনিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

6. ধর্মযুদ্ধ বলতে কি বোঝ? বিভিন্ন ধর্মযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ একাদশ শতকের শেষভাগ থেকে প্রায় দুইশত বৎসর জেরুসালেম এ প্যালেস্টাইনের অধিকার নিয়ে ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং মুসলমানদের মধ্যে যে যুদ্ধ চলেছিল, সেই যুদ্ধকেই ইতিহাসে ধর্মযুদ্ধ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ধর্মযুদ্ধের কারণঃ প্যালেস্টাইনের অন্তর্গত বেথেলহ্যাম হল- যীশুখ্রিস্টের জন্মভূমি এবং জেরুসালেম তাঁর বধ্যভূমি। সুতরাং এই দুটি স্থান খ্রিস্টানদের নিকট অত্যন্ত প্রিয় ও পবিত্র ভূমি। প্রতি বৎসর ইউরোপ হতে বহু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী তথায় তীর্থ করতে যেতেন। আরবগণ কর্তৃক প্যালেস্টাইন অধিকৃত হওয়ার পরও খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের কোন প্রকার অসুবিধা হত না। আরবগণ তীর্থযাত্রীদের নিকট হতে প্রচুর তীর্থকর পেতেন। কিন্তু তুর্কী কর্তৃক প্যালেস্টাইন বিজয়ের পর তীর্থযাত্রীদের উপর নানা অত্যাচার আরম্ভ হয়। ফকির পিটার নামক একজন খ্রিস্টান সাধু তীর্থযাত্রীদের উপর অত্যাচারের কথা খ্রিস্টানদের গোচরে আনেন।

ধর্ম-বিষয়ক কারণ ছাড়া অর্থনৈতিক কারণও এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। তুর্কীরা ইউরোপ ‘ও এশিয়ার মধ্যে ইউরোপীয় বণিকদের ব্যবসা- বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল। তৃতীয় কারণ হল রাজনৈতিক। প্যালেস্টাইন অধিকার করে তুর্কীরা ইউরোপে তাদের আধিপত্য স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। 

প্রথম ধর্মযুদ্ধঃ ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীরা কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করলে ধর্মগুরু পোপ তুর্কী আক্রমণ প্রতিহত এবং জেরুসালেম উদ্ধারের জন্য সমগ্র খ্রিস্টান সমাজকে আহবান করেন। ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ থেকে তিনটি বিরাট সৈন্যবাহিনী কনস্টান্টিনোপোল অভিমুখে যাত্রা করে। ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তুর্কীদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের প্রথম ধর্মযুদ্ধ চলেছিল। যুদ্ধে তুর্কীবাহিনী পরাজিত হয় এবং জেরুসালেম ও প্যালেস্টাইন নিয়ে নবগঠিত খ্রিস্টান রাজ্যে গডফ্রেক রাজা নিযুক্ত হন। খ্রিস্টানরা বহির্বাসে ‘ক্রুশ চিহ্ন ব্যবহার করতেন।

দ্বিতীয় ধর্মযুদ্ধঃ ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীরা এডিমা শহর দখল করে নেওয়ায় খ্রিস্টান ও তুর্কীদের মধ্যে দ্বিতীয় ধর্মযুদ্ধ আরম্ভ হয়। জার্মান ও ফরাসি সৈন্য যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হয়েছিল। ফরাসিদের রণক্ষেত্রে পৌঁছাবার পূর্বেই জার্মান সৈন্যরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পরাজিত হয়। ফরাসিরাও দামাস্কাস অধিকারে ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

তৃতীয় ধর্মযুদ্ধঃ ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মিশরের সুলতান সালাদীন জেরুসালেম অধিকার করলে খ্রিস্টান ও তুর্কীদের মধ্যে তৃতীয় ধর্মযুদ্ধ ১১৮৯ খ্রিস্টাব্দে আরম্ভ হয়। ইংলন্ডেশ্বর প্রথম রিচার্ড, ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ, অস্ট্রিয়ার ডিউক এবং জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক এই যুদ্ধে যোগদান করেন; কিন্তু তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় জেরুসালেম বিজয় সম্ভব হয়নি।

চতুর্থ ধর্মযুদ্ধঃ পোপ তৃতীয় ইনোসেন্টের সহযোগে ইতালির বণিকগণ ১২০২ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ধর্মযুদ্ধ আরম্ভ করেন। কিন্তু আক্রমণকারীরা ধর্মযুদ্ধ অপেক্ষা রোম দেশে বাণিজ্যের এসারের দিকে বেশি লক্ষ্য রেখেছিলেন। অধিকন্তু পোপও রোম হতে গ্রিক ধর্মমতের উচ্ছেদ করতে প্রয়াসী ছিলেন। তাঁরা প্যালেস্টাইনে অভিযান না চালিয়ে রোমের রাজধানী আক্রমণ করেন। 

পঞ্চম ধর্মযুদ্ধঃ পঞ্চম ধর্মযুদ্ধ বাধলে ধর্মযোদ্ধারা জেরুসালেম জয়ের পরিবর্তে নীল নদীর মোহনাস্থিত দামিয়ত শহর অবরোধ করলে সুলতান এই শহরের পরিবর্তে জেরুসালেম ছেড়ে দিবার প্রস্তাব দেন। কিন্তু একমত হতে না পারায় ধর্মযোদ্ধারা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফ্রেডারিক নানা অজুহাত দেখিয়ে যুদ্ধে বিরত থাকেন। 

ষষ্ঠ ধর্মযুদ্ধঃ ফরাসি রাজ নবম লুইয়ের নেতৃত্বে খ্রিস্টানরা ষষ্ঠ ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১২৪৯ খ্রিস্টাব্দে ধর্মযোদ্ধারা ইজিপ্ট আক্রমণ করে দামিয়ত অধিকার করে অগ্রসর হবার চেষ্টা করলে মুসলমানদের হাতে তাদের পরাজয় ঘটে।

সপ্তম ধর্মযুদ্ধঃ ১২৬৭ খ্রিস্টাব্দে সপ্তম ধর্মযুদ্ধ আরম্ভ হয়। ১২৭০ খ্রিস্টাব্দে লুইর মৃত্যুর পর ইংলন্ডেশ্বর প্রথম এডওয়ার্ড কিছুদিন যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ফলাফলঃ ধর্মযুদ্ধের ফলে খ্রিস্টান যাজকদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছিল। যাজকরা সামরিক সত্ত্ব গড়ে তুললেন। যে সকল সামরিক সঙ্গ যাজকরা গড়েছিলেন সেইগুলির মধ্যে নাইট টেম্পলার্স সঙ্গ ছিল অন্যতম। প্রয়োজন বোধে তাঁরা যুদ্ধে লিপ্ত হতে ইতস্তত করতেন না। ধর্মযুদ্ধের আর একটি উল্লেখযোগ্য ফল হল খ্রিস্টানদের সংহতি বৃদ্ধি।

7. ধর্মযুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ? কি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা হয়েছিল লেখ।

উত্তরঃ একাদশ শতকের শেষভাগ হতে প্রায় দুইশত বৎসর জেরুজালেম এবং প্যালেস্টাইনের অধিকার নিয়ে ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ধর্মযুদ্ধের জন্য নিম্নলিখিত ঘটনাবলী দায়ী ছিলঃ

(ক) প্যালেস্টাইন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র ভূমি ছিল, কারণ সেখানে তাদের অধিকাংশ ধর্মস্থান অবস্থিত ছিল। এটি ছিল যীশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ ও পুনরুত্থানের স্থান। এটি ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে আরব কর্তৃক অধিকৃত। ফলে ইউরোপের খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

(খ) একাদশ শতকে মুসলমান সহ হাঙ্গেরীয়ান, নরমান এবং বহু দাসকে খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। এই কারণেই মুসলমান খ্রিস্টানদের প্রধান শত্রুরূপে পরিণত হয়।

(গ) একাদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনে নানা প্রকার পরিবর্তন দেখা দেয়। এর ফলে ইসলাম দুনিয়া ও খ্রিস্টান জগতের মধ্যে বিবাদ বৃদ্ধি পায়।

(ঘ) যাজক ও যোদ্ধা শ্রেণী এই অঞ্চলেই কৃষি ও বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে আর্থিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থায়িত্ব চেয়েছিলেন।

(ঙ) ঈশ্বরের শাস্তি (The Peace of God Movement) মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের সূত্রপাত করে।

8. কি কি ঘটনাপ্রবাহ ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত করেছিল। সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

বিভিন্ন কারক কিভাবে ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত করেছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ জেরুজালেম খ্রিস্টানদের একটি পবিত্র স্থান, কিন্তু ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানর জেরুজালেম অধিকারের পর বিশেষ করে এগারো শতক থেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকট হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতে কিছু পরিবর্তন হয়, যার ফলে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বৈরিতা বৃদ্ধি পায়।

যাজক সম্প্রদায় ও যোদ্ধা শ্রেণী কৃষি ও ব্যবসার উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন গড়ে তুলতে  সচেষ্টা ছিল। ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিল। কিন্তু Peace of God আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সামন্ত রাজ্যগুলির মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্বের ও লুটতরাজের উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গঠনের অবতারণা বা তাছাড়াও ধর্মাচরণের বিশেষ জায়গায়, চার্চের নিয়মানুযায়ী পবিত্র সময়ে, যাজক শ্রেণীর ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সমস্ত রকম সামরিক হিংসাত্মক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা আবার খ্রিস্টান জগতের প্রতি বা ঈশ্বরের শত্রুদের বিরুদ্ধে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সকল আগ্রাসী মনোভাবকে গতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

১০৯২ খ্রিস্টাব্দে সালজুক সুলতান মালিক শাহের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের ভাঙন দেখ দিলে বাইজেনটাইন সম্রাট প্রথম আলেক্সাস-এর নিকট এশিয়া মাইনর ও উত্তর সিরি পুনর্দখলের সুযোগ আসে। অনাদিকে পোপ আর্বান-এর নিকট এটা ছিল খ্রিস্ট পুনর্জাগরণের সুযোগ। পবিত্র ভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে পেল বাইজেন্টাইন সম্রাটের সঙ্গে যোগদান করেন এবং এতেই ধর্মযুদ্ধের শুরু হয়।

9. আব্বাসি বিপ্লব?

উত্তরঃ আরবে ‘দাওয়া’ নামক এক বিপ্লব ‘উমাইদ রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ৭ খ্রিস্টাব্দে ‘আব্বাসি’ নামে অন্য এক রাজবংশ প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। এই ঘটনাকে ‘আবাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করা হয়।

মুসলমান শাসনতন্ত্রের কেন্দ্রীকরণের সফলতার জন্য উমাইদদের প্রচুর মূল্য হয়েছিল। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে দাওয়া নামক সুসংগঠিত আন্দোলনের মাধ্যমে উমাইয়নে দিতে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাদের জায়গায় মক্কাকেন্দ্রীক আব্বাসিদ বংশ ক্ষমতায় আসে। আব্বাসিদরা উমিয়াদ শাসনকালকে কুশাসন বলে প্রচার করে পয়গম্বরের প্রদর্শিত আল ইসলাসকে ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করে। এই বিপ্লবের ফলে শুধু বংশগতই নয়; ইসলামে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দেয়।

আব্বাসিরা ছিলেন মহম্মদের কাকা আব্বাসের বংশধর। তারা বিভিন্ন বিদ্রোহী দলের সমর্থন লাভ করেছিলেন। মহম্মদের পরিবারের এক সদস্য ভ্রাতারূপে অত্যাচারী উমাইদ শাসন থেকে সমস্ত গোষ্ঠীকে রক্ষা করবে, এরকম প্রতিজ্ঞা করে আব্বাসিদরা ক্ষমতা লাভ করেন। আবু মুসলিম নামে একজন ইরানী ক্রীতদাসের নেতৃত্বে আব্বাসি দলের সেনাবাহিনী। শেষ উমাইদ খলিফা মারোয়ানকে ‘জাব’ নদীর যুদ্ধে পরাজিত করে।

10. হজরত মহম্মদ কিভাবে রাজনৈতিক পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করেছিলেন? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

হজরত মহম্মদ কিভাবে একক মতাদর্শে বা ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের মধ্যে একক রাজনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন? সংক্ষেপে বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদ উপলব্ধি করেছিলেন যে একটি ধর্মের স্থায়িত্ব নির্ভর করে, তার অনুগামীদের স্থায়িত্বের উপর। সেই ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণভাবে সুসংবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায়টিকে বাইরের বিপদের মোকাবিলা করবার ক্ষমতা রাখতে হবে। তাই সংবদ্ধতা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। যা হতে পারে একটি রাষ্ট্র বা সরকার। মহম্মদ তাই করলেন। মদিনাতে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করলেন। যার ফলে তার অনুগামীরা যেমন সুরক্ষিত হল, তেমনি সেখানকার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অবসান হল।

তিনি মুসলিম উম্মাকে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ে পরিবর্তিত করলেন যাতে বহুদেবতাবাদী ও ইহুদীরাও ছিল। তাছাড়া তিনি নতুন প্রথা ও নীতি যোগ করে, পুরনো প্রথা ও নীতিকে মার্জিত করে তার অনুগামীদের জন্য ধর্মমতদের সংঘটিত করেছিলেন। কিন্তু তার অনুগামীদের লুণ্ঠন প্রবৃত্তি মক্কাবাসী ও মদিনার ইহুদীদের সাথে বিবাদের রূপ নেয় এবং একাধিক যুদ্ধের পর মুসলমানেরা মক্কা অধিকার করে। মক্কা অধিকারের পর মহম্মদের পরিচিতি একজন ধর্মপ্রবর্তক ও রাজনৈতিক নেতা হিসাবে ছড়িয়ে পরে। ধর্মান্তকরণ-এর মধ্য দিয়া উম্মার সংখ্যা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এবং মুসলমানরা সমস্ত আরবদেশ জয় করে। এইভাবেই রাজনৈতিক দখলের মাধ্যমে মহম্মদ ইসলামের রক্ষণার্থে এই ধর্মে বিশ্বাসীদের একতাবদ্ধ করেছিলেন।

11. শহরের বিকাশ কিভাবে আরব সাম্রাজ্যের উন্নতি ত্বরান্বিত করেছিল ? শহর/ নগরগুলির পরিকাঠামোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ নগর বা শহরাঞ্চলীয় বিকাশ আরব সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছিল। বিশেষভাবে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার মেরুদণ্ডস্বরূপ আরব সৈন্যদের বসবাসের জন্য অনেক নতুন নগরের পত্তন হয়। তাছাড়াও পুরানো নগরগুলির পুনরুজ্জীবন ঘটে। খাদ্যশস্য ও নগরকেন্দ্রিক শিল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই নগরগুলোর জনসংখ্যা ও আকার বৃদ্ধি পায়। শহরগুলির যোগাযোগ এক বিশাল নাগরিক কর্মকাণ্ড গড়ে ওঠে। 

শহরগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল নিম্নরূপঃ 

(ক) শহরের কেন্দ্রস্থলে থাকত দুটি স্থাপত্য-মসজিদ ও কেন্দ্রীয় বাজার, বা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাক্ষ্য। প্রকাণ্ড মসজিদটি বহুদূর থেকে নজরে পড়ত ও বাজারটিতে ছিল শ্রেণীবদ্ধ বিপণী, ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ও মুদ্রা বিনিময়কারীদের কর্মস্থল। 

(গ) শহরের কেন্দ্রস্থলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বাস ছিল শাসকগোষ্ঠী, বিদ্বজ্জন ও ব্যবসায়ীদের। পরের অংশে থাকত সাধারণ নাগরিকরা। তাদের বাসস্থানের। নিকটবর্তী জায়গায় ছিল মসজিদ, গির্জা, অথবা সিনাগগ, বাজার, গণস্নানাগার ও একটি সভাস্থল।

(গ) শহরের বাইরের অংশে ছিল গরিব জনসাধারণের বসবাস, গ্রামাঞ্চল থেকে আনা কাঁচামালের বাজার, দলবদ্ধ চলাচলের গাড়ির বিরামস্থল ও অপরিচ্ছন্ন দোকান; যেমন-মাংস ও চামড়া।

(ঘ) নগরীর প্রাচীর বেষ্টনির বাইরে ছিল সরাইখানা। ওগুলিতে প্রাচীরের দ্বার বন্ধকালীন সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা ছিল।

12. আরবরা কিভাবে চীন, ভারত ও ইউরোপের সাথে লাভজনক ব্যবসা-বাণিে চালাত? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ আরব সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক একতাবদ্ধতা এবং খাদ্য ও বিলাসী দ্রব্যের নাগরিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে ব্যবসায়িক আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। যেহেতু ভারত মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের ব্যবসায়িক এলাকায় বিস্তৃত মুসলমান সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল। সুবিধাজনক। এর ফলে পাঁচ শতককাল ব্যাপী চীন, ভারত ও ইউরোপের সামুদ্রিক বাণিজ্যের উপর আরব ও ইরানী বণিকদের একাধিপত্য বজায় ছিল। এই ব্যবসা মূলত লোহিতসাগর, পারস্য উপসাগরের পথ ধরে চালিত হত। মশলা, কাপড়, পোর্সেলিন ও বারুদ ছিল বহুমূল্য ব্যবসায়িক পণ্য।

ভারত ও চীন থেকে পণ্য জাহাজ যোগে লোহিতসাগরের এডেন ও আয়-ব্যয় বন্দর ও উপসাগরীয় বন্দর সিরাফ ও বসেরা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হত। এখান থেকে স্থলপথে পণ্য বাগদাদ, দামাস্কাস ও আলেপ্পতে পাঠানো হত। এই যাত্রাপথে মক্কাও ছিল এবং শেষ কেন্দ্র ছিল আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর। এখান থেকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানীর দায়িত্ব পালন কর ইহুদীরা। তবে অনেক ব্যবসায়ীই ভারতের সাথে সরাসরি বাণিজ্য করত। এইভাবেই আরবরা বহির্বাণিজ্য চালাত।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. সপ্তম শতকের প্রথম দিকে বেদুইনদের জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্যসমূহ কি ছিল? 

উত্তরঃ বেদুইনরা হল আরবের উপজাতি। তারা যাযাবর ছিল। তারা তাদের নিজের খাদ্য, উটের খাদ্যের সন্ধানে শুষ্ক মরু অঞ্চল হতে তৃণভূমিময় অঞ্চলে চলে যেত। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নগরে ও শহরে বসতি স্থাপন করে এবং ব্যবসাবাণিজ্য করত।

2. ‘আব্বাসি বিপ্লব’ বলতে কি বোঝ? 

উত্তরঃ আরবে ‘দাওয়া’ নামক এক বিপ্লব ‘উমায়াদ’ রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘আব্বাসি’ নামে অন্য এক রাজবংশ প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। এই ঘটনাকে “আব্বাসিদ বিপ্লব’ বলে অভিহিত করা হয়।

3. আরব, ইরান ও তুর্কী প্রতিটি রাষ্ট্রে বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ রাষ্ট্রের বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) আরব সাম্রাজ্যে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত।

(খ) ইরান সাম্রাজ্যে মুসলমান ও এশীয় সংস্কৃতি বিকাশলাভ করেছিল।

(গ) তুর্কী সাম্রাজ্যে মিশরীয়, সিরীয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেছিল।

4. ইউরোপ ও এশিয়ায় ধর্মযুদ্ধের ফলাফলসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ ইউরোপ ও এশিয়ায় ধর্মযুদ্ধের ফলাফল নিম্নরূপঃ 

(ক) মুসলমান রাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করতে থাকে। 

(খ) পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলিতে ইটালীয় ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রভাব অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(গ) ধর্মযুদ্ধের ফলে ইউরোপীয় সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা হ্রাস পায়; ফলে ইউরোপে সামস্ত প্রথার ধীরে ধীরে পতন ঘটে এবং তা জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. ইসলামি স্থাপত্যের ধরন রোম সাম্রাজ্যের স্থাপত্যের ধরন অপেক্ষা কিরূপ পার্থক্য ছিল?

অথবা,

ইসলামিক নির্মাণশৈলী থেকে রোমান নির্মাণশৈলী থেকে কিভাবে পৃথক?

উত্তরঃ রোমান স্থাপত্যের ধরনঃ রোমগণ অত্যন্ত সুদক্ষ স্থাপত্যশিল্পী ছিলেন। তারা স্থাপত্যকার্যে স্তম্ভ ও গম্বুজের প্রচলন শুরু করেন। তাদের অট্টালিকাগুলি দুই বা তিনতলা বিশিষ্ট ছিল। এই অট্টালিকাগুলিতে একের পর এক স্তম্ভ থাকত। স্তম্ভগুলি সাধারণত গোলাকার ছিল। এইরূপ স্তম্ভ নগর ও শহরের মূল ফটক, সেতু, বৃহৎ অট্টালিকা এবং বিজয় স্তম্ভ তৈরিতে ব্যবহার করা হত। এই স্তম্ভগুলি নালা নির্মাণেও ব্যবহার করা হত।

ইসলামি স্থাপত্যের ধরনঃ ইসলামি স্থাপত্যের ধরন ইরানী শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। কিন্তু আরবগণ শিল্প কারুকার্যের মৌলিক ধরন আবিষ্কার করেন। তাদের নির্মিত অট্টালিকাগুলিতে গোল গম্বুজ, থাম, অশ্বক্ষুরাকৃতি স্তম্ভ এবং বাঁকানো খুঁটি থাকত। আরবদের মসজিদ, গ্রন্থালয়, প্রাসাদ, হাসপাতাল এবং বিদ্যালয়গৃহে ইসলামি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। 

6. সমরখণ্ড হতে দামাস্কাস যাওয়ার পথে নগরসমূহের উল্লেখ করে এই যাত্রার বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ সমরখণ্ড উত্তর-পূর্ব ইসলামি প্রদেশে এবং দামাস্কাস মধ্যস্থানে (সিরিয়ায়) অবস্থিত। কোন পর্যটক সমরখণ্ড হতে দামস্কাস-এর দিকে যাত্রা করলে মাঠ, নিশাপুর, সামাররা প্রভৃতি শহরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

We Hope the given একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন ও উত্তর will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top