Class 11 History Chapter 5 যাযাবর সাম্রাজ্য

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 5 যাযাবর সাম্রাজ্য, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 5 যাযাবর সাম্রাজ্য The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 5 যাযাবর সাম্রাজ্য are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 5 যাযাবর সাম্রাজ্য

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

3. মঙ্গোলীয় জাতিদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ মঙ্গোলীয় জাতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) মঙ্গোলীয় জাতিরা জাত ও ভাষার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতার জন্য তাদের সমাজ নানাভাগে বিভক্ত ছিল। 

(খ) ধনী পরিবারসমূহ বিশালাকার ছিল। তারা অধিক পশুপক্ষী এবং পশুচারণভূমির মালিক ছিল। তাদের অনেক অনুগামী ছিল এবং তারা স্থানীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল।

(গ) বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের শসা ও খাদ্য মজুত ভাণ্ডার নিঃশেষ হয়ে যেত। বৃষ্টির অভাবে তৃণভূমি অঞ্চলও শুকিয়ে যেত।

(ঘ) মঙ্গোলীয় জাতিদের মধ্যে নানাপ্রকার পারস্পরিক কলহ থাকত; তারা খাদ্যসামগ্রীর জন্য অন্য দেশে হানা দিত।

(ঙ) আক্রমণ করা এবং আক্রমণ প্রতিহত করবার জন্য বহুসংখ্যক পরিবার একতাবদ্ধ হয়ে বাস করত। 

4. মঙ্গোল সাম্রাজ্যে চেঙ্গিস খানের অবদান কী ছিল?

উত্তরঃ সাধারণত মানুষের মতে চেঙ্গিস খান লুণ্ঠনকারী ও খুনি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। যিনি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেন এবং বহু শহর-নগর ধ্বংস করেন। এই কারণে ত্রয়োদশ শতকে ইরান, চীন এবং পূর্ব ইউরোপের নগর ও শহরের বাসিন্দাগণ চেঙ্গিস খানকে লুণ্ঠনকারীদের নেতা হিসাবে দেখত। কিন্তু মঙ্গোলীয়গণ তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা বলে মনে করেন। তিনি জনগণকে সংঘবদ্ধ করেন এবং জনজাতি যুদ্ধ ও চীনের শোষণ থেকে মুক্ত করেন। তিনি বিশাল আদান-প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলেন এবং বাজার ও রাস্তা পুনর্গঠন করেন। যার ফলে মঙ্গোলীয়গণ সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত হয়। 

5. মঙ্গোল সাম্রাজ্যকে ‘যাযাবর সাম্রাজ্য’ বলে আখ্যায়িত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ‘যাযাবর সাম্রাজ্য’ শব্দটি পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়। তবে, যাযাবররা স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও তাদের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো থাকে অপরিবর্তিত। ন্যূনতম রাজনৈতিক পরিকাঠামো তারা গঠন করে থাকে। অন্যদিকে সাম্রাজ্য শব্দটি জড়িয়ে আছে একটি স্থায়ী স্থানগত অবস্থান, জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা স্থায়িত্ব এবং একটি বিশদ শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত বিস্তৃত ক্ষেত্র। অতএব, মঙ্গোলদের জীবনশৈলী ও তাদের স্থাপিত প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে ভিত্তি করে মঙ্গোল সাম্রাজ্যকে ‘যাযাবর সাম্রাজ্য’ বলে আখ্যায়িত করা অযুক্তিক নয়।

6. মঙ্গোলদের জীবনশৈলী কেমন ছিল, সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ যাযাবর মঙ্গোল জনগোষ্ঠী/উপজাতি গোষ্ঠীর কিছুসংখ্যক ছিল পশুপালক ও অন্যরা ছিল শিকারী-সংগ্রহকারী। পশপালকেরা কিছু ঘোড়া, ভেড়া ও গোরু-মহিষ, ছাগল, উট পালন করত। ঋতু বিশেষে তৃণভূমি পশুচারণে উপযুক্ত হয়ে উঠলে শিকারের উপযুক্ত পশুও পাওয়া যেত। সাইবেরিয়ার জঙ্গলে চারণভূমির উত্তর দিকে খাদ্য সংগ্রাহকেরা বাস করত। গ্রীষ্মকালে শিকার করা পশুর চামড়া ও লোমের ব্যবসা ছিল তাদের জীবিকা। মঙ্গোলরা কৃষিকাজে উৎসাহী ছিল না। মঙ্গোলরা অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করত এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে স্থান পরিবর্তন করত।

7. মঙ্গোলদের সাথে চীনাদের সম্পর্ক কেমন ছিল? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চীনারা কিভাবে মঙ্গোলদের সাথে যুক্ত ছিল? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

মঙ্গোলদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ মঙ্গোল যাযাবর গোষ্ঠীগুলোর বাস করা সমতল তৃণভূমি অঞ্চলে জীবনধারণের জন্য সম্পদের পরিমাণ ছিল সীমিত। তাই মঙ্গোলা যাযাবর গোষ্ঠীগুলো প্রতিবেশী চীনদেশের কৃষিনির্ভর সুস্থির নাগরিকদের সঙ্গে ব্যবসা বা সম্পদের বিনিময় করত। ফলে উভয়ই লাভবান হত। মঙ্গোলরা ঘোড়া, পশুর লোম ও পশু ইত্যাদির বিনিময়ে চীনাদের নিকট থেকে আহরণ করত কৃষিজাত দ্রব্য ও লোহার বাসন। উভয় পক্ষই অধিক লাভের জন্য সচেষ্ট থাকায় অনেক সময়ই ব্যবসা বা বিনিময়ে অশান্তি দেখা দিত। দলবদ্ধ মঙ্গোলরা চীনাদের উপর বেশি লাভজনক শর্ত আরোপ করতে চেষ্টা করত ও কখনো-বা ব্যবসায়িক শর্ত ভুলে লুণ্ঠনে লিপ্ত হত। অন্যদিকে মঙ্গোলদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে চীনারা তাদের উপর শর্ত আরোপ করত। এই ধরনের সীমান্ত যুদ্ধ চীনের সুস্থির সমাজকে  দুর্বল করে দিত।

8. মঙ্গোল সমাজজীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ মঙ্গোল সমাজব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক। যদিও জাতিগত ও ভাষাগত  বন্ধনে মঙ্গোলরা আবদ্ধ ছিল, কিন্তু সম্পদের অভাব সমাজকে বিভাজিত করে রেখেছিল। আয়তন বড় পরিবারগুলোতে পালিত পশুর সংখ্যা ছিল বেশি ও তাদের চারণভূমির পরিমাণও কি অধিক এবং অধিক সংখ্যক অনুগামী থাকায় স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের প্রভাবও ছিল বেশি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা দুর্ভিক্ষের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে খাদ্যভাণ্ডার নিঃশেষি হয়ে যেত, তৃণভূমি শুকিয়ে যেত ও শিকারের উপযুক্ত পশুর অভাব দেখা দিত। সে রকম পরিস্থিতিতে পশুখাদ্যের সন্ধানে তৃণভূমি দখল বা খাদ্যের সন্ধানে অভিযানকে কেন্দ্র করে দ্বন্দু দেখা দিত। এই অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য অথবা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবও জন্য কিছুসংখ্যক পরিবার দলবদ্ধভাবে প্রভাবশালী পরিবারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে এই করত। কিন্তু এই ধরনের গোষ্ঠী সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হত না। 

9. চেঙ্গিস খানের অধীনস্ত সামরিক বাহিনীর কৃতিত্বের জন্য কি কি উপ সহায়তা করেছিল? 

উত্তরঃ নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ চেঙ্গিস খানের অধীনস্ত মঙ্গোলীয় সেনাবাহিনীর সাফলে সহায়তা করেছিলঃ

(ক) মঙ্গোল ও তুর্কীগণ অশ্বচালনায় অত্যন্ত সুদক্ষ ছিলেন। তা সেনাবাহিনীতে গতিসঞ্চার করেছিল।

(খ) তাদের অশ্বপৃষ্ঠ থেকে দ্রুত গুলিচালনার দক্ষতা ছিল। তারা বনাঞ্চলে নিয়মিত শিকার অভিযানের মাধ্যমে এই বিদ্যায় পারদর্শী হয়েছিল। ফলে তাদের সামরিক ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছিল।

(গ) সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের দুর্গম পথ ও আবহাওয়া সম্পর্কে অত্যন্ত অবস্থান ছিল। এটা ছিল সেনাবাহিনীর অপর একটি দক্ষতা ও বিশেষত্ব। এই কারণেই তারা তীব্র ঠান্ডায় কঠোর আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়েছিল। 

(ঘ) পরম্পরাগতভাবে যাযাবর লোক সুরক্ষিত দুর্গে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু চেষ্টিন খান তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

(ঙ) চেঙ্গিস খানের অভিযন্ত্রাগণ হালকা ও বহনযোগ্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করত। এই প্রকার অস্ত্রশস্ত্র শত্রু শিবিরের ধ্বংস প্রমাণিত করেছিল। 

10. “চেঙ্গিস খানের সৈন্যবাহিনীতে বিভিন্ন মানুষের সংমিশ্রণ ছিল।” উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ অস্ত্রশস্ত্র বহন করা সকল স্বাস্থ্যবান পুরুষ মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনবোধে তারা সশস্ত্র বাহিনী গঠন করত। বিভিন্ন মঙ্গোল সম্প্রদায়ের মধ্যে একীকরণের জন্য চেঙ্গিস খানের সেনাবাহিনীর মধ্যে বহু নূতন সদস্য যোগদান করেছিল। এই সকল সৈন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই কারণেই অতিক্ষুদ্র মঙ্গোল সৈন্যবাহিনী বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে তার্কিক, উইঘাস প্রভৃতি সম্প্রদায় স্বেচ্ছায় মঙ্গোলদের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে।

11. চেঙ্গিস খান কর্তৃক তৈরি যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ চেঙ্গিস খান দ্রুত ডাকব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন যা তার সাম্রাজ্যে বহুদূর পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল। নির্দিষ্ট দূরত্বে ফাঁড়ি বসানো হয়েছিল। নির্দিষ্ট যাযাবররা এই যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য তাদের পালিত পশুর এক-তৃতীয়াংশ দান করত। এই দানকে কোয়াবাখার কর বলা হত। এই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ স্বেচ্ছায় এই কর দিত। এই পদ্ধতি হতে তারা নানাভাবে উপকৃত হত। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর ডাকব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়।

12. চেঙ্গিস খানের সামরিক অভিযানের সাফল্যের কারণগুলি লেখ।

উত্তরঃ চেঙ্গিস খানের সামরিক অভিযানের সাফল্য তাকে বিশাল এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। এই সামরিক অভিযানের/সেনাবাহিনীর সাফল্যের কারণ নিম্নরূপঃ 

(ক) সমতল তৃণভূমিতে যুদ্ধে অভ্যস্ত বাহিনীকে তিনি একটি চূড়ান্ত কর্মক্ষম সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তিত করেছিলেন।

(খ) মঙ্গোল ও তুর্কীদের অশ্বচালনার দক্ষতা এবং অশ্বপৃষ্ঠ থেকে দ্রুত তির চালনার দক্ষতা সেনাবাহিনীতে গতি দিয়েছিল।

(গ) সমভূমিতে অশ্বচালনায় অভিজ্ঞ সেনাবাহিনী ভূখণ্ড ও আবহাওয়া জ্ঞান অনুমান করে যে-কোন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমাট বরফের উপর দিয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় অশ্বচালনা করে আক্রমণ করত।

 (ঘ) যাযাবররা স্বভাবতই সুদৃঢ় সামরিক শিবিরের মোকাবিলায় অদক্ষ ছিল, কিন্তু চেঙ্গিস খান এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হবার যুদ্ধকৌশল আয়ত্ব করেছিলেন। 

(ঙ) মঙ্গোল প্রযুক্তিবিদরা হালকা ও সহজে চালনাযোগ্য অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করেছিলেন, যেগুলির ফল হত বিধ্বংসী। 

13. চেঙ্গিস খানের অধীনে মঙ্গোল সেনাবাহিনী কিভাবে গঠিত হয়েছিল, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ চেঙ্গিস খানের বা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ক্ষমতার মূল উৎস ছিল তার সামরিক বাহিনী। সেনাবাহিনী গঠনে চেঙ্গিস খানের বিশেষ নজর বা গুরুত্ব ছিল। মঙ্গোল এবং অন্যান্য যাযাবর উপজাতির প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সমর্থ ব্যক্তিই সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষিত ছিল এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিত এবং এইভাবেই চেঙ্গিস খানের অধীনে প্রারম্ভিক সেনাবাহিনী গঠিত হয়। কিন্তু বিভিন্ন মঙ্গোল গোষ্ঠীর একতাবদ্ধতা ও নানা জাতির বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের ফলে মঙ্গোল সেনাতে নতুন সদস্যরা যোগদান করে। ফলে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র, ঐক্যবদ্ধ সেনাবাহিনীতে বহু জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই নতুন যোগদানকারী গোষ্ঠীর মধ্যে ছিল উইমুররা, যারা চেঙ্গিস খানের বশ্যতা স্বীকার করেছিল এবং কেরেইটদের মতো পরাজিত জনগোষ্ঠীর লোকেরা। তবে চেঙ্গিস খান নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধান করে মঙ্গোল সামরিক বাহিনীকে সুদৃঢ় করে গড়ে তুলেছিল।

14. আমলাতন্ত্র বা সামরিক ও শাসন ব্যবস্থায় নিজের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চেঙ্গিস খান কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

উত্তরঃ আমলাতন্ত্র বা সামরিক ও শাসন ব্যবস্থায় নিজের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চেঙ্গিস খান নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিয়েছিলেনঃ

(ক) চেঙ্গিস খান তার চার পুত্র ও বিশেষভাবে নির্বাচিত সেনা আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীকে গঠন করেন।

(খ) তার প্রতি অনুগত একশ্রেণীকে সার্বজনীনভাবে তার ‘প্রেতিভাই’ হিসাবে স্বীকৃতি দেন ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে বসান। 

(গ) কিছু অপেক্ষাকৃত নিচুশ্রেণীর স্বাধীন লোককে তার সঙ্গীমান্যতা দিয়ে ‘নৌকার’ পদবি দেন। এই পদবি চেঙ্গিস খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পরিচায়ক ছিল।

(ঘ) নতুন অভিজাত শ্রেণী গড়ে ওঠে যা সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং সম্রাটকে শাসনব্যবস্থায় নির্ভরতা দান করে।

15. ‘ইয়াম’ (Yam) কি? এর সংগঠনে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ‘ইয়াম’ (Yam) হচ্ছে মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খান প্রবর্তিত দ্রুত সংবাদ প্রদানকারক ব্যবস্থা। তার রাজত্বের দূরতম প্রান্তগুলোর সঙ্গে সুষ্ঠু যোগাযোগ রাখবার জন্য এই দ্রুত সংবাদ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এর গতি ও নির্ভরযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত।

এর সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা হয়ঃ

(ক) নিয়মিত দূরত্বে চৌকি স্থাপন করে সেখানে দক্ষ ঘোড়সওয়ারদের মোতায়েন। করা হয়।

(খ) এই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মঙ্গোল যাযাবর জাতিগুলোর নিকট থেকে বন্দোবস্ত হিসাবে তাদের পওধরের এক-দশমাংশ গ্রহণ করা/আদায় করা হত। এর বিনিময় তারা অন্য সুবিধা পেত।

চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর এই যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হন এবং সাম্রাজ্যের অগ্রগতিতে অবদান রাখে। কারণ এই ব্যবস্থার ফলে শাসকেরা বিভিন্ন মহাদেশে বিস্তৃত তাদের সাম্রাজ্যের দূরতম প্রান্তের ঘটনাবলী সম্বন্ধেও অবহিত থাকতেন।

16. বিজিত জাতিগুলি তাদের নতুন যাযাবর শাসকদের সঙ্গে কেন একাত্ম হতে পারেনি? এর ফলাফল লেখ।

উত্তরঃ মঙ্গোল সাম্রাজ্যে বিভিন্ন বিক্রিত জাতিগুলি তাদের নতুন যাযাবর শাসকের প্রতি একাত্ম হয়ে উঠতে পারেনি নিম্নলিখিত কারণেঃ

(ক) ব্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম অর্থের সামরিক অভিযানগুলোর ফলে বিভিন্ন নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(খ) কৃষি জমি ও কৃষিকাজ বিনষ্ট হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং হস্তশিল্প উৎপাদন ব্যবাহ হয়। 

(গ) অগণিত লোকের মৃত্যু হয়, তার অধিক সংখ্যক লোক ক্রীতদাসে পরিণত হয়।

(ঘ) বুদ্ধিজীবী থেকে কৃষিজীবি – সমস্ত শ্রেণীর লোক লাঞ্ছনার স্বীকার হয়। 

এর ফলে অস্থির/অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুরু ইরানি মালভূমিতে নির্মিত ভূগর্ভস্থ খালগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এতে ক্রমে মরুভূমি ঐ অঞ্চলকে গ্রাস করে ফেলে এবং পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. চেঙ্গিস খান কে ছিলেন? তিনি কিভাবে মঙ্গোলীয়দের প্রধান খানে পরিণত হয়েছিলেন?

অথবা,

চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলদের সবচেয়ে বড়ো নেতা বলে কেন গণ্য করা হয়?

উত্তরঃ মঙ্গোল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস খান বর্তমান মঙ্গোলীয়ার উত্তর দিকে অবস্থিত ‘অনন’ নদীর নিকট ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম নাম ছিল ‘তেমুজিন। তার পিতার নাম ছিল ‘ইয়েসুজি’। তিনি কিয়াট উপজাতির দলপতি ছিলেন। চেঙ্গিস খানের কৈশোরকালে তার পিতা খুন হন। এই কারণে তেমুজিন, তার ভাইগণ এবং সৎ-ভাইগণ নানাপ্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হন। তেমুজিনকে ১১৭০ সালে ধরে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়। তার পত্নী বোরটিকে অপহরণ করা হয়। তিনি তার স্ত্রীকে উদ্ধার করবার জন্য কঠোর সংগ্রাম করেছিলেন। তার এই দুঃসময়ে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু জোগাড় করেছিলেন। বগুরচু হলেন তার সর্বাপেক্ষা অনুগত বন্ধু। জামুকা হলেন অপর একজন অনুগত বন্ধু।

প্রধান খান হওয়ার পথে চেঙ্গিস খানঃ তেমুজিনের রক্তের ভাই জামুকা পরবর্তীকালে তার শত্রুতে পরিণত হলেন। ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে এবং ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে তেমুজিন অনুগ খানের সহায়তায় অর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামুকাকে পরাজিত করেন। জামুকাকে পরাজিত করার পর তেমুজিন অন্যানা শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আত্মবিশ্বাস লাভ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল তার পিতৃহন্তাকারী পরাক্রমশালী টারটার এবং অনুগ খান। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নইমেন জনগণ ও পরাক্রমশালী জামুকাকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন।

প্রধান খান হিসাবে চেঙ্গিস খানের ঘোষণাঃ শত্রু দমনে সাফল্যের পর তেমুজিন চালু সঞ্চলের রাজনীতিতে অবিসংবাদী নেতারূপে আবির্ভূত হন। তার এই মর্যাদার স্বীকৃতি লাভ করে মঙ্গোলীয় দলপতিদের একটি সমবেত সভায়। এই সভায় তাকে প্রধান খান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তার উপাধি দেওয়া হয় ‘চেঙ্গিস খান’, ‘ওসেনিক খান’ অথবা ‘ইউনির্ভাসান খান। মঙ্গোলীয়গণ তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা বলে মনে করেন। 

2. চেঙ্গিস খানের পর মঙ্গোলীয়দের রাজনৈতিক কার্যকলাপ আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১২২৭ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্য দুই পর্যায়ে বিষয় হয়ে যায়ঃ

(ক) প্রথম পর্যায় ১২০৬-১২৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সময় মঙ্গোলীয় রাশিয়ার ঢালু অঞ্চল বুলঘার, কেইভ, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরিতে বড় মাপের সাফল্য লাভ করে। 

(খ) দ্বিতীয় পর্যায় ১২৫৫-১০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সময় সমগ্র চীন, ইরান, ইরাক ও সিরিয়া জয় করা হয়েছিল। ১২০০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী দশকগুলিতে মঙ্গোলীয় সামরিক বাহিনী নানাবিধ সমস্য সম্মুখীন হয়। ঠিকই যে ভিয়েনা, পশ্চিম ইউরোপ এবং মিশর প্রভৃতি মঙ্গোলীয় সেনাবাহিনীর নাগালের মধ্যে ছিল। কিন্তু যখন সেনাবাহিনী হাঙ্গেরির ঢালু অঞ্চলে হতে ঘুরে আসে তখন দুইটি রাজনৈতিক প্রবণতার সূত্রপাত ঘটেঃ

(ক) প্রথমটি ছিল মঙ্গোলীয় পরিবারের মধ্যে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের পরিণাম। জোচি ও অগোইড উত্তরাধিকারীরা প্রধান খানের পদকে নিয়ন্ত্রণের একতাবদ্ধ হয়।

(খ) দ্বিতীয় অবস্থা ঘটে যখন চেঙ্গিস খানের বংশধরের শাখা টোলুইড জোচি ও অগোড়েই যোগসূত্রকে কোণঠাসা করেন। চেঙ্গিস খানের পৌত্র মোঙ্গকী যখন শাসক হন তখন অর্থাৎ ১২৫০-এর দশকে ইরানে সামরিক অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ১২৬০-এর দশকে টলুই-এর উত্তরাধিকারীগণ চীনের দিকে অধিক আগ্রহ দেখায়; কিন্তু সেনাবাহিনীর যোগান সুষম ছিল না। একটি ক্ষুদ্র বাহিনী মিশরীয় বাহিনীর মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয় এবং এই কারণে তারা পরাজয় বরণ করে। এই পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পশ্চিম দিকের সাম্রাজ্য প্রসার নিঃশেষ হয়ে যায়। পরিশেষে তারা চীনকে একীকরণ করতে সেক্ষম হয়। 

3. চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য বিস্তারের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

অথবা,

চীন এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চেঙ্গিস খান কিভাবে তার সাম্রাজ্য এবং আধিপত বিস্তার করেছিলেন, তা সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের কুড়িলতাই-এর পূর্বে চেঙ্গিস খান মঙ্গোলদের একটি কর্মক্ষম নিয়মানুবর্তী সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। তবে কুড়িলতাই-এর স্বীকৃতি তাকে তার পরবর্তী পদক্ষেপে অগ্রসর হতে শক্তি ও ইন্ধন যুগিয়েছিল। মঙ্গোলদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের পর চেঙ্গিস খান সর্বপ্রথম চীন জয়ের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হন। ১২০৯ থেকে ১২১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে একে একে চীনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, উত্তর চীন এবং দক্ষিণ চীন অধিকার করে নেন, এবং ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার অধস্তনদের হাতে বিজিত অঞ্চল অর্পণ করে মঙ্গোলীয়ায় ফিরে আসেন।

১২১৮ খ্রিস্টাব্দে চীনের উত্তর-পশ্চিম পার্বত্য অঞ্চল অধিকার করলে মঙ্গোলদের সাম্রাজ্য আমুদরিয়া নদী এবং ট্রান্সঅক্সিয়ানা ও খওয়ারজম প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। খওয়ারজম-এর সুলতান মাহমুদ মঙ্গোল দূতকে হত্যা করলে ১২১৯ থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র অঞ্চল বড় বড় শহর যেমন সমরখন্দ, বান্ধ, হিরাট ইত্যাদি নির্মম মঙ্গোল আগ্রাসনের স্বীকার হয় এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়ে। সুলতান মাহমুদের পশ্চাদ্ভাবন করে মঙ্গোল বাহিনী আজারবাইজানে প্রবেশ করে, ক্রিমিয়াতে রাশিয়ার সেনাকে পরাজিত করে তারা কাস্পিয়ান সাগর অবরোধ করে নেয়। অন্য আরেকটি মঙ্গোল বাহিনী সুলতানের পুত্র জালালউদ্দিনকে অনুসরণ করে আফগানিস্থান ও সিন্ধু প্রদেশ পর্যন্ত অগ্রসর হয়, কিন্তু বিরূপ প্রাকৃতিক পরিস্থিতির সম্ভাবনায় মঙ্গোলবাহিনী ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত থাকে। এইভাবে জীবনের অধিকাংশ সময় সামরিক অভিযানে ব্যয় করে ১২২৭ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের মৃত্যু হয়, তবে মৃত্যুর আগে তিনি তার সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি বিশালভাবে প্রসারিত করে যান।

4. চেঙ্গিস খান কিভাবে তার পুত্রদের সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নিয়োগ করেছিলেন বিভিন্ন উলুতে? সংক্ষেপে লেখ। 

অথবা,

চেঙ্গিস খান কিভাবে তার পুত্রদের মধ্যে সাম্রাজ্যের বিভাগ করেছিলেন শাসনের জন্য ? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ চেঙ্গিস খান তার প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থায় নতুনভাবে জয় করা জাতিগুলোর শাসনের দায়িত্ব তার চার পুত্রের উপর ন্যস্ত করেন। তাদের অধীনে থাকা ‘উলু’ বলে পরিচিত চারটি শাসন অঞ্চলের কোন নির্দিষ্ট সুবিন্যস্ত ভূমিখণ্ড ছিল না। কারণ চেঙ্গিস খানের সমস্ত জীবনই রাজ্য জয় ও রাজ্য বিস্তারে অতিবাহিত হওয়ায় কখনো তার কোন নির্দিষ্ট রাজ্যসীমা গড়ে ওঠেনি। তবে চার পুত্রের মধ্যে বিতরণ করা অঞ্চল বা ‘উলু’ ছিল নিম্নরূপঃ 

(ক) তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জোচি রাশিয়ার সমভূমি অঞ্চলের অধিকারী হলেও তার অধিকৃত ভূখণ্ডের শেষসীমা ছিল অনির্দিষ্ট। তা দূর প্রাচ্যের দিকে বিস্তৃত ছিল। 

(খ) জোচির ভূখণ্ডের লাগোয়া পমির পর্বত শ্রেণীর উত্তর ভাগের অংশ এবং ট্রান্সঅক্সিয়ানার সমভূমি অঞ্চল লাভ করেন চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় পুত্র চাঘাতাই।

(গ) চেঙ্গিস খানের ইচ্ছা অনুসারে তার তৃতীয় পুত্র ওগোদাই তার পিতার উত্তরাধিকারী হন এবং সিংহাসনে আরোহন করে কারাকোরামে তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

(ঘ) সর্বকনিষ্ঠ পুত্ৰ তলুই মঙ্গোলীয়ার পৈতৃক ভূমিকর অধিকার লাভ করেন।চেঙ্গিস খানের ধারণা ছিল যে তার পুত্ররা সম্মিলিতভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনা করবে। এই বিশ্বাসেই তিনি প্রত্যেক পুত্রের প্রাপ্ত বা অধীনস্ত সামরিক বাহিনীকে তাদের (Ulu) উলুতে স্থাপন করেছিলেন।

5. ইতিহাসের পাতায় মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খানের অবস্থান লেখ।

অথবা,

মঙ্গোলদের ইতিহাসে চেঙ্গিস খানের অবদান ও অবস্থান সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খানের নামের সাথে নৃশংস, উদ্দম্য, বিধ্বংসী, রাজ্যজয়ী নগরধ্বংসকারী এবং অসংখ্য লোকের হত্যাকারী এক চরিত্র ফুটে ওঠে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর চীন, ইরান ও পূর্ব ইউরোপের শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে এই লোকটির প্রতি ছিল। তীব্র আতঙ্ক ও ঘৃণার মনোভাব। তবুও মঙ্গোল উপজাতির নিকট চেঙ্গিস খান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। তিনি—

(ক) মঙ্গোলদের একতাবদ্ধ করেছিলেন।

(খ) কালক্ষয়ী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও চীনদেশীয় শোষণ থেকে মুক্ত করেছিলেন।

(গ) তাদের সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন।

(ঘ) একাধিক মহাদেশ জুড়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।

(ঙ) ব্যবসাপথ এবং ব্যবসা পুনঃস্থাপিত করেছিলেন।

তাই স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গোল উপজাতির ইতিহাসে চেঙ্গিস খান এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব, যদিও বর্হিমোঙ্গল সমাজে ছিলেন এক দানবস্বরূপ। তথাপি তার সাম্রাজ্য গঠন, বিস্তার এবং আধিপত্য কেবলই তার ব্যতিক্রমী, কর্মনিষ্ঠ, সুদক্ষ এবং নেতৃত্বের আদর্শ পরাক্রমশালী সমর নায়কের চরিত্র তুলে ধরে যা মানব ইতিহাসের পাতায় অদ্বিতীয়। 

6. ‘যশা কি? মঙ্গোল উপজাতির ইতিহাসে যশার ভূমিকা লেখ।

উত্তরঃ এই শব্দটি তার প্রারম্ভিক প্রস্তুতিতে ‘যশাক’ (Yasaq) হিসাবে প্রচলিত ছিল যার অর্থ আইন, অনুশাসন অথবা আদেশ। এতে সন্নিবিষ্ট ছিল সুসংহত শিকার প্রক্রিয়া, ডাক ও সামরিক বাহিনী-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ। ১৩শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে মঙ্গোলরা বিশা’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে। এর ব্যাপক অর্থ ‘চেঙ্গিস খানের আইনি শাসন’। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের এই আইনি শাসন প্রবর্তিত হয়।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মঙ্গোলরা ঐক্যবদ্ধ জাতিরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য গঠন করে। তারা এক অত্যন্ত পরিশীলিত নাগরিক সমাজের উপ তাদের শাসন কায়েম করে। বৃহৎ রাজনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে তুললেও তাদের সংখ্যা ছিল সীমিত ক্ষুদ্রতর। তাই পূর্বপুরুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত পবিত্র আইনের মাধ্যমে তার তাদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছিল। ‘যশা’ ছিল মঙ্গোল সমাজে প্রচলিত প্রথাগুলোর সংকলিত রূপ। কিন্তু যশাকে চেঙ্গিস খানের প্রবর্তিত আইন বলে, মঙ্গোলরা তাদের মধ্যে Moses বা Solomon-এর মত একজন আইন প্রণেতার অবস্থান দাবী করে। এই আইনগুলি তাদের প্রজাদের উপর প্রয়োগ করে।

‘যশা’ মঙ্গোলদের ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক হয়েছিল। মঙ্গোলদের নিজস্ব জাতিগত পরিচয় ধরে রাখতে ও বিজিতদের উপর তাদের আইন চাপিয়ে দিতে ভরসা জুগিয়েছিল যশা। চেঙ্গিস খানের ধারণাতে এ ধরনের আইন বিধির স্থান না থাকলেও তার চিন্তাধারাই এই বিধির প্রণয়নে প্রেরণা জুগিয়েছিল এবং সার্বিক মঙ্গোল রাষ্ট্র গঠনে এই ‘যশা’-এর স্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. মঙ্গোলীয়দের কাছে বাণিজ্য এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন? 

উত্তরঃ মঙ্গোলীয় সম্প্রদায় ঢালু অঞ্চলে বাস করত যেখানে খাদ্যসামগ্রী ও প্রাকৃতিক সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা ছিল। ফলে তাদের বাণিজ্যের উপর নির্ভর করতে হত। এইজন্যই বাণিজ্য তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা চীনের সঙ্গে প্রধানত বাণিজ্য করত।

2. চেঙ্গিস খান মঙ্গোলীয় জাতিকে একটি নূতন সামাজিক ও রাজনৈতিক শ্রেণীতে খণ্ড করবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন কেন?

উত্তরঃ বহুসংখ্যক মঙ্গোলীয় জাতি ঢালু অঞ্চলে বাস করিত। তাদের নিজস্ব পৃথক পরিচিতি ছিল। চেঙ্গিস খান তাদের পৃথক অস্তিত্ব বিলোপের মাধ্যমে একীকরণ করতে চেয়েছিলেন। এই কারণেই তিনি মঙ্গোলীয় জাতিকে নূতন সামাজিক ও সামাজিক শ্রেণীতে খণ্ড করবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।

3. পরবর্তী মঙ্গোলীয় প্রতিফলন চেঙ্গিস খানের সঙ্গে তাদের অস্থির সম্পর্ক যসা- এর উপর কিভাবে ব্যক্ত হয়েছে?

উত্তরঃ পরবর্তী মঙ্গোলীয়গণ ‘যশা’-কে চেঙ্গিস খানের আইনের আচরণবিধি বলে মনে করতেন। এর অর্থ এই যে মঙ্গোলীয় জনগণ আইনদাতাগণের নিকট দাবি উত্থাপন করতেন। এটাই মঙ্গোলীয়দের সঙ্গে চেঙ্গিস খানের অস্থির সম্পর্কের অবতারণা করে।

4. “ইতিহাস যদি শহরভিত্তিক লিখিত তথ্যাদির উপর নির্ভর করে তাহলে যাযাবর সমাজ সদাই উত্তেজিত প্রতিনিধিত্ব গ্রহণ করবে।” তুমি কি এই উক্তিতে একমত?

উত্তরঃ হ্যাঁ, আমি এই অভিমতে একমত যে যাযাবর সমাজ সদাই শহর-নগর লুণ্ঠন করত। এই কারণে নগরভিত্তিক সমাজ সদাই তাদের ঘৃণা করত। একই বিষয় পারসি উপজাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তারাও মঙ্গোলীয়া আক্রমণ দ্বারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. মঙ্গোলীয় ও বেদুইন সমাজের যাযাবর উপাদানের কথা মনে রেখে তাদের নিজ নিজ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার অর্থ সম্পর্কে তোমার মতামত কি? এই তফাতের ব্যাখ্যার কি বিবরণ দিতে পার?

উত্তরঃ বেদুইনগণ শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে বাস করত। অন্যদিকে মঙ্গোলীয়গণ যাযাবর জাতি যারা সুন্দর ঢালু অঞ্চলে বাস করত। বেদুইনগণ মরুভূমির মরূদ্যানে তাদের পালিত পশুদের জন্য জল ও খাদ্য অন্বেষণ করত। খাদ্য হিসাবে তারা প্রধানত খেজুরই ব্যবহার করত। পশুখাদ্যের জন্য তারা ঘুরেফিরে বেড়াত। উট তাদের প্রধান পশু ছিল। অন্যদিকে যাযাবর মঙ্গোলীয়রা সবুজ অঞ্চলে বাস করত। সেখানে জলাভাব ছিল না, কারণ ‘অনন” ও ‘মেলেনগা’ নদী দুটি এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত ছিল। ঢালু অঞ্চলে পাহাড় হতে শত শত ঝরনার জলধারা প্রবাহমান ছিল।

বেদুইনগণ শিকারি জাতি ছিল না। তারা প্রধানত পশুপালক ছিল। কিন্তু বহু মঙ্গোলীয়। শিকারি জাতি ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল তাদের প্রধান পেশা।

পার্থক্যের কারণঃ মঙ্গোলীয় এবং বেদুইনদের মধ্যে পার্থক্যের প্রধান কারণ হল তাদের স্বভূমির ভৌগোলিক অবস্থান।

We Hope the given একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন ও উত্তর will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top