Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Chapter 7 পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

6. ‘নবজাগরণ’ এক নতুন যুগের সূচনা করে কি? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ নিঃসন্দেহে বলা যায় যে নবজাগরণ এক নতুন যুগের সূচনা করে। এর ক্ষেত্রে। মুখ্য যুক্তিগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) নবজাগরণ মানুষের মধ্যে প্রাচীন রক্ষণশীলতা দূর করে।

(খ) ভেঙে ফেলে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সৃষ্টি করে জাতি-রাষ্ট্রের।

(গ) মানুষের যুক্তিপূর্ণ চিন্তাধারার উদ্ভব হয়। 

(ঘ)মানুষ অযৌক্তিক, অমানবিক চিন্তাধারা, সিদ্ধান্ত এবং বিচার সর্বতোভাবে অস্বীকার করে ইত্যাদি।

7. নবজাগরণকালীন সময়ে মহিলাদের অবস্থা কেমন ছিল? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ নবজাগরণকালীন ইউরোপে যে স্বতন্ত্র ও নাগরিকত্ব নিয়ে যে নতুন আদর্শের সূচনা হয়েছিল সেখানে মহিলাদের কোন স্থান ছিল না। অভিজাত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত পরিবারগুলোর পুরুষেরাই জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তারা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তেরও নিয়ামক ছিলেন। স্বামীরা কিভাবে ব্যবসা চালাবেন সে ব্যাপারে তাদের স্ত্রীর মতামতের কোন অধিকার ছিল না, যদিও পণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ পারিবারিক ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করা হত। প্রায়ই ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে তুলতে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হত। পণ দিতে ব্যর্থ পিতারা মেয়েদের মঠে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা সন্ন্যাসিনী হয়েই জীবন কাটিয়ে দিত। মহিলাদের তাদের পরিবারের বাইরে কাজ করার বিশেষ সুযোগ ছিল না এবং মনে করা হত যে তারা একমাত্র গৃহকর্মের উপযুক্ত। তবে ব্যবসায়ী পরিবারে মহিলাদের অবস্থান একটু অন্যরকম ছিল। তারা ব্যবসায়ে স্বামীকে সহায়তা করত ও স্বামীর অবর্তমানে ব্যবসা চালাত। 

8. নবজাগরণের যুগের চারজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর নাম লেখ।

উত্তরঃ নবজাগরণের যুগের চারজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হলেন – 

(ক) মাইকেল এঞ্জেলো। 

(খ) রাফায়েল।

(গ) গিয়োট। এবং 

(ঘ) লিওনার্দ দা ভিঞ্চি।

9. নবজাগরণের যুগের চারজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম লেখ।

উত্তরঃ নবজাগরণের যুগের চারজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন—

(ক) কোপারনিকাস। 

(খ) কেপলার।

(গ) গ্যালিলিও। এবং 

(ঘ) ভেসেলিয়াস।

10. মানবতাবাদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ মানবতাবাদ নবজাগরণের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। মানবতাবাদের অর্থ হল মানুষের সুখ ও দুঃখে শরিক হওয়া এবং মানুষকে সম্মান দেওয়া। মানবতাবাদ মানুষের সমস্যা অধ্যয়ন করে, মানবজীবনের গুরুত্ব গ্রহণ করে এবং তার জীবন সমৃদ্ধশালী করতে চেষ্টা করে। মানবতাবাদের সমর্থকদের মানবতাবাদী বলে। ইটালির পেট্রার্ক একজন প্রধান মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের ও ধর্মীয় নেতাদের জীবনযাত্রার ধরনের সমালোচনা করেন। ইটালির জনগণ মানবতাবাদকে সমর্থন করেছিলেন।

11. সংস্কার আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ কি কি ছিল? 

উত্তরঃ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) ধর্মীয় চূড়ান্তবাদ এবং পোপ ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সীমাহীন অধিকার প্রতিহত করা।

(খ) এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের নৈতিক জীবন উন্নত করা।

(গ) গির্জায় প্রচলিত দুর্নীতি দূরীভূত করা।

(ঘ) জাতীয় গির্জা স্থাপনে গুরুত্ব দান।

(ঙ) সাধারণ মানুষকে পোপ অপেক্ষা ঈশ্বরের উপর অধিক নির্ভরশীল করা।

(চ) প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া। 

12. সংস্কার আন্দোলনের কয়েকটি ফলাফল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) এই আন্দোলনের ফলে ক্যাথলিক প্রাধান্য লোপ পায়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, হল্যান্ড ক্যাথলিক প্রভাব হতে মুক্তি পায়। 

(খ) পোপের প্রাধান্য লোপ পায়।

(গ) পোপের কর্তৃত্বের পরিবর্তে বাইবেলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মানুষ সমস্যার সমাধান যুক্তির ভিত্তিতে মীমাংসা করতে আরম্ভ করে। বাইবেলের নির্দেশ মানবার ফলে মানুষের নৈতিক উন্নতি সাধিত হয়।

(ঘ) প্রোটেস্টান্ট ধর্মই রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। প্রোটেস্টান্ট ও ক্যাথলিকদের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাতকে কেন্দ্র করেই ধর্মযুদ্ধ আরম্ভ হয়। 

(ঙ) রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে চার্চের অধীনে যে সমস্ত সম্পত্তি ছিল তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। শাসন ক্ষেত্রে রাজা পোপের কবল হতে মুক্তি পায়।

(চ) ক্যাথলিকগণ নিজেদের চার্চের অনেক সংস্কার সাধন করেন। 

(ছ) এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ফল ইউরোপে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ। এই আন্দোলনের ফলে যখন প্রোটেস্টান্ট রাজ্যগুলি স্বাধীনতা লাভ করে তখন নিজেদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠে।

(জ) প্রোটেস্টান্ট দেশগুলির ক্যাথলিক মঠগুলি যখন বাজেয়াপ্ত করা হয় তখন সেই বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি রাজার অনুচরদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার ফলে একদল লোক খুব ধনী হয়ে ওঠে।

13. সংস্কার প্রতি-আন্দোলন কি ছিল?

উত্তরঃ সংস্কার আন্দোলনের ফলস্বরূপ সংস্কার প্রতি-আন্দোলন আরম্ভ হয়। বস্তুত ক্যাথলিকরাদে বহু দোষ-ত্রুটি পরিদৃষ্ট হয়। কিন্তু রোমান ক্যাথলিক গির্জার সমর্থকগণ তার পরোয়া করে না। যার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলিত সংস্কার আন্দোলন রোমান গির্জা হতে সরে পড়ে। এটা রোমান ক্যাথলিক জনগণকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। ফলে তারা ক্যাথলিক গির্জার দোষ-ত্রুটি দূর করতে যত্নশীল হয়। তারা প্রোটেস্টান্টবাদ প্রতিহত করতে চেষ্টা আরম্ভ করে। এই আন্দোলনকে সংস্কার প্রতি-আন্দোলন বলে। এর ফলে ক্যাথলিকবাদ পুনরায় জনপ্রিয় হতে আরম্ভ করে। 

14. ক্যাথলিক চার্চের ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য প্রতিসংস্কার আন্দোলনে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? 

উত্তরঃ প্রতিসংস্কার আন্দোলনে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছিল ক্যাথলিক চার্চের ত্রুটিগুলি দূর করার জন্যঃ

(ক) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ ‘The Council of Trent’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রোটেস্টান্ট সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে। এই সংঘ চার্চের প্রশাসনিক ত্রুটি দূর করার পদক্ষেপ নেয়। চার্চের অমানবিক প্রথা বারণ করে এবং কিছু বই-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

(খ) ‘Society of Jesus’ প্রতিষ্ঠা হয় প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনকে প্রতিহত করতে। 

(গ) ক্যাথলিক চার্চ তাদের অংগ Inquisition’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। যদিও সম্পূর্ণ ইউরোপে এর ফলে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি তবুও যথেষ্ট সাফল্য দেখা দেয়। 

15. ১৪ শতকের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অগ্রগতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ ১৪ শতকের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অগ্রগতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) ধনী ও সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোকেরা শিল্পী ও লেখকদের কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।

(খ) মুদ্রণ শিল্পের আবিষ্কারের ফলে দূরপ্রান্তের লোকের কাছে মুদ্রিত বই-এর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য, মত, আদর্শ পৌঁছে যায়।

(গ) ইউরোপে ইতিহাসচর্চার প্রচার ও প্রসার ঘটে।

(ঘ) মানুষ তার বর্তমান পৃথিবীর সাথে পৌরাণিক গ্রিক ও রোমান ইতিহাস বা বর্ণনার সাথে তুলনা করা শুরু করলেন।

(ঙ) ধর্মকে একজন লোকের ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হিসাবে পরিগণিত হয়।

(চ) বিজ্ঞানীদের দ্বারা সৌরমণ্ডল আবিষ্কারের ফলে চার্চের পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বাস নস্যাৎ হয়ে পড়েছিল। 

16. ১৫ শতকে কিভাবে রোম স্বমহিমায় ফিরে আসে? বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ১৫ শতকে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোম নগরী স্বমহিমায় ফিরে আসে। কারণ ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কারণ পোপের পদকে নিয়ে যে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমে সমাধান হয়ে গিয়েছিল।

রোমের প্রাচীন ঐতিহ্য ও ইতিহাসচর্চায় আগ্রহের সৃষ্টি হয় ফলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা রোম নারীর ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানগুলোর খননকার্যে ব্রতী হয়েছিলেন। এতে রোমের ঐতিহ্য, প্রাচীন উন্নতি আবার লোকচক্ষুর সম্মুখে ফুটে ওঠে। পোপ, ধনী ব্যবসায়ী ও সম্ভ্রান্তবংশীয় ব্যক্তিরা প্রচীন রোমের স্থাপত্যে দক্ষ স্থাপত্যকারদের পুনরায় স্থাপত্য নবীকরণের কাজে নিয়োগ করেন। এভাবেই শিল্পী ও ভাস্করদের চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য এবং খোদাই শিল্পের মাধ্যমে রোম নারীকে তার প্রাচীন ঐতিহ্যশালী ও মহিমামণ্ডিত রূপে গড়ে তুলতে সহায় করেছিল। 

17. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ধ্বংস হওয়া ইটালির নগরসমূহ কী কারণে পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইটালির যে শহরগুলি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত হত সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে রোমে কোন একতাবদ্ধ সরকারের অভাব। তবে পরবর্তীতে কিছু ঘটনাপ্রবাহ ও পরিবর্তন অন্য ধারা নেয়।

(ক) সামন্ততান্ত্রিক চুক্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে।

(খ) পশ্চিম ইউরোপ ল্যাটিন বা ক্যাথলিক চার্চের নিয়ন্ত্রণে একত্রিত হয়।

(গ) পূর্ব ইউরোপ বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের অধীনে সংগঠিত হয়।

(ঘ) দূর পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামকে কেন্দ্র করে এক নতুন সভ্যতার সৃষ্টি হয়।

(ঙ) ইটালি ছিল দুর্বল ও খণ্ডিত। এই পরিস্থিতিতে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ও ইসলামিক দেশগুলির মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় ইটালির উপকূলের বন্দরগুলো পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে। কারণ এই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ইটালির শহরগুলো প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। 

18. কোন বইটি প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাযন্ত্রের সাহায্যে ছাপা হয়? ছাপাযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে কি লাভ হয়? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ প্রথম মুদ্রণ করা বা ছাপা বই হচ্ছে বাইবেল (১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে)। মুদ্রণযন্ত্রের বা ছাপাযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে নিম্নোক্ত লাভ হয়ঃ

(ক) মুদ্রিত পুস্তক যেহেতু সুলভে পাওয়া যেত, সেগুলো প্রয়োজনমতো যে কেউ। ক্রয় করতে পারত এবং পড়াশুনোর জন্য ছাত্রদের শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষের পাঠদানের উপর নির্ভর করতে হত না।

(খ) মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন মতামত ও সংবাদাদি আগের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। 

(গ) মুদ্রিত তথ্যের মাধ্যমে নতুন ধ্যানধারণা অতি অল্প সময়ে শত শত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।

19. ইউরোপে চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে কিছু বিশেষ পরিবর্তন লক্ষিত হয়। এইগুলি কি কি লেখ।

উত্তরঃ চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপে নবজাগরণের সময় বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। এইগুলি হল—

(ক) শহরের বিকাশ এবং শহরাঞ্চলীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। 

(খ) মানুষের মধ্যে মানবতাবাদী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে। 

(গ) মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে জ্ঞান বিচার ও তথ্যের আদান-প্রদান সহজ হয়। এবং 

(ঘ) শিল্পী ও লেখকেরা অভিজা শ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।

20. মধ্যযুগীয় ও আধুনিক ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলি লেখ।

উত্তরঃ মধ্যযুগীয় ও আধুনিক ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) আধুনিক যুগে রাজনৈতিক একক একজন ব্যক্তি নিজে। কিন্তু মধ্যযুগীয় ইউরোপে একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য সংগঠিত ছিল।

(খ) মধ্যযুগীয় ইউরোপের সামাজিক চরিত্র ছিল সামন্ততান্ত্রিক, কিন্তু আধুনিক যুগে বিকাশ হয়েছে ত্রিস্তরীয় সমাজব্যবস্থা।

(গ) সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মধ্যশ্রেণীর কোন স্থান ছিল না, কিন্তু আধুনিক যুগে মধ্যশ্রেণীই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অংশ। 

(ঘ) মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্তিহীনতা এবং অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাই বিশেষ প্রভাবশালী ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে জ্ঞানচর্চা হয়ে ওঠে যুক্তি, সমালোচনা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নির্ভর।

21. লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ইটালির বিখ্যাত শিল্পী লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি রেনেসাঁ যুগের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৪৫২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন চিত্রশিল্পী। ভাস্কর, অভিযন্ত্রা, বিজ্ঞানী, কবি ও গায়ক ছিলেন। তার চিত্রশিল্পের সংখ্যা কম হলেও এইগুলি চিত্তাকর্ষক ছিল। এই চিত্রশিল্পের মধ্যে ‘ভার্জিন অফ দি রক’ এবং ‘মোনালিসা’ অসাধারণ। এইরূপ বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বিশ্বে আর জন্মগ্রহণ করেননি।

22. কোপারনিকাস সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। 

উত্তরঃ জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী কোপারনিকাস ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচনাবলী ইউরোপীয় বিজ্ঞানে একটি নূতন দিক উন্মোচন করে। খ্রিস্টানদের মতে পৃথিবী ছিল একটি পাপভূমি এবং তা পাপের ভারে অ- ভ্রাম্যমাণ ছিল। পৃথিবী ছিল স্থির এবং সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। কিন্তু কোপারনিকাস এই ধারণা পরিবর্তন করে বললেন যে সূর্য স্থির এবং পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। কিন্তু জনগণ এই ধারণা গ্রহণ করতে অনেক সময় অপেক্ষা করে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. নবজাগরণ বলতে কি বোঝ? নবজাগরণের কারণ ও ফলাফলগুলি কি কি?

উত্তরঃ মধ্যযুগে ক্যাথলিক খ্রিস্টান জাতির উপর প্রভুত্ব করত। পোপ খ্রিস্টের শিষ্য সাধু পিটারের প্রতিনিধি বলে পূজিত হতেন। সেকালে সমস্ত বিদ্যালয় চার্চের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। ফলে ইউরোপ হতে স্বাধীন চিন্তা ও গবেষণা প্রায় লোপ পেয়েছিল। কারণ সম্পদ লাভই তাঁদের একমাত্র কাম্য ছিল। তাঁদের ধর্মমতের নির্দেশ অমান্য করে কেউই কিছু করতে পারত না। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ইউরোপে এক নূতন আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পটে নুতন চিন্তা ও মনোজগতে এক অভিনব পরিবর্তন আরম্ভ হয়। এই চিন্তাধারা এক নবযুগের  সূচনা করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই পরিবর্তনের আলোড়ন বা জাগরণকে রেনেসাঁ (Renaissance) বলা হয়।

কারণঃ নবজাগরণের প্রধান কারণসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

(ক) ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীজাতীয় মুসলমানরা কনস্টানটিনোপল অধিকার করেন। তুর্কী উপদ্রব হতে রেহাই পাবার জন্য সেখানকার পণ্ডিতগণ নিজেদের পুঁথিপত্র নিয়ে প্রথমত ইটালিতে, পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যান। এই কনস্টানটিনোপল গ্রিক সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল। সুতরাং এই সকল পণ্ডিতগণের আগমনে লুপ্তপ্রায় গ্রিক সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি চর্চা আরম্ভ হল। ফলে মানুষের বিচারবুদ্ধি জেগে উঠল এবং চিত্র জগতে এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হল। ফলে মানুষ মধ্যযুগায় কুসংস্কার। পরিহার করে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে আরম্ভ করল। সম্ভবত নবজাগরণের ভিত্তি।

(খ) মুদ্রাযন্ত্র আবিষ্কার নবজাগরণের আর একটি কারণ। ইতিপূর্বে হস্তলিখিত পুস্তক ব্যবহৃত হত। পুস্তকের মূল্যও খুব বেশি ছিল। নকল করাও শ্রম ও ব্যয়সাধ্য ছিল। সুতরাং অল্প লোকের মধ্যেই বিদ্যাশিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু চতুর্থ এডোয়ার্ডের আমলে ক্যাক্সটন নামক একজন ইংরেজ ইংল্যান্ডে প্রথম মুদ্রাযন্ত্র প্রবর্তন করেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা বাড়ল। সাধারণ মানুষ জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেল। জ্ঞানার্জন যে ধর্মযাজকদের একচেটিয়া অধিকার নয়, তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারল।

(গ) আধুনিক যুগের প্রারম্ভে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন। ভাস্কো-দা-গামা আফ্রিকার উপকূল ঘুরে ভারতবর্ষে পৌঁছাবার জলপথ আবিষ্কার করেন, জন কোট নিউফাউন্ডল্যান্ড আবিষ্কার করেন। এই সমস্ত ভৌগোলিক আবিষ্কারের পর যাজক পণ্ডিতগণ পৃথিবী ও সৌরজগৎ সম্বন্ধে যা প্রচার করে আসছিলেন। তা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হল। ফলে সাধারণ মানুষ চার্চের শিক্ষার প্রতি বিশ্বাস হারাল।

(ঘ) ধর্মযুদ্ধে যে সমস্ত ইউরোপবাসী নুতন নুতন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ছিলেন অ তাদের নুতনভাবে উৎসাহিত করেছিল।

ফলাফলঃ নবজাগরণের ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) রেনেসাঁ আন্দোলনের ফলে মানুষের মন হতে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার দূর হয় এবং তার পরিবর্তে স্বাধীন ও উচ্চ মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের মনে এক নুতন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। 

(খ) রেনেসাঁ আন্দোলনের ফলে বিজ্ঞানের অশেষ উন্নতি হয়, এবং কোপারনিকাস পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে বলে প্রমাণ করেন। 

(গ) এই আন্দোলনের ফলে শিল্প, কলা, ভাস্কর্যের অশেষ উন্নতি সাধিত হয়। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো, রাফায়েল প্রভৃতি মনীষীগণ শিল্পকলা ও ভাস্কর্যের নুতন যুগ সূচনা করেন।

(ঘ) মাতৃভাষার মাধ্যমে পুস্তক রচনা আরম্ভ হয়। ফলে অধিক সংখ্যক লোক এই রচিত পুস্তক পড়তে ও বুঝতে সমর্থ হয়। অধিকন্তু দেশীয় ভাষাগুলি সমৃদ্ধি লাভ করে।

(ঙ) নুতন নুতন দেশ আবিষ্কার এই রেনেসাঁ আন্দোলনেরই ফল।

(চ) এই আন্দোলনের ফলে সামন্তবাদের অবসান এবং চরম রাজতন্ত্রের প্রচলন আরম্ভ হয়। 

(ছ) নুতন নুতন দেশ আবিষ্কারের ফলে বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে। নুতন নুতন শহর সৃষ্টি হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমাজের আবির্ভাব হয়।

(জ) নবজাগরণের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ফলস্বরূপ ক্যাথলিক চার্চের কর্তৃত্ব হ্রাস পায়। যুক্তিবাদী মানুষ, চার্চকে আর অন্ধভাবে মেনে চলে না। 

(ঝ) এই নবজাগরণের আর একটি ফল ধর্মসংস্কার আন্দোলন।

2. ‘নবজাগরণ’ সর্বপ্রথম ইটালিতে শুরু হয়েছিল কেন? কারণ নির্দেশ কর।

অথবা, 

নবজাগরণ সর্বপ্রথম ইটালিতে আরম্ভ হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপে এক নূতন আলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে সেখানে স্বাধীন চিন্তা ও চেতনার বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এই চিন্তা ও চেতনার বিকাশই নবজাগরণ। এই নবজাগরণের বা রেনেসাঁর জন্ম হয় ইটালিতে। নবজাগরণ কেন সর্বপ্রথম ইটালিতে শুরু হয় তার কারণগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কীরণ কনস্টান্টিনোপল দখল করে নিলে সেখানকার পণ্ডিতগণ নিজ নিজ গ্রন্থাদি নিয়ে ইটালিতে পলায়ন করেন। এই সমস্ত পণ্ডিতগণের চেষ্টায় ইটালিতে পুরাতন গ্রিক-রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞান আলোচনা আরম্ভ হয়। তখন সেখানকার অধিবাসীদের শিক্ষার প্রতি প্রবল অনুরাগ দেখা দেয়।

(খ) ইটালির শহরগুলিতে মধ্যযুগীয় সভ্যতা আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে আসে। 

(গ) ইটালির সঙ্গে রোমের ঘনিষ্ঠতাও রেনেসাঁ আন্দোলনের আর একটি কারণ। এই ঘনিষ্ঠতার জন্য প্রাচীন রোমের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি ইটালিবাসীদের আকর্ষণ বেড়ে যায় এবং রোমের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাব ইটালিকে বিপুলভাবে প্রভাবান্বিত করে।

(ঘ) এই আন্দোলনের নায়কগণ অধিকাংশই ইটালিবাসী। ইটালিতে প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা প্রবল হয়ে উঠেছিল কৰি পেট্রাক ও তাঁর শিষ্য পেকাসিওর চেষ্টায়। এই ইটালিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, রাফায়েল ও এঞ্জেলো। এই আন্দোলনে তাদের প্রভাবও উল্লেখ করবার মতো।

(ঙ) রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পর ইটালির সঙ্গে বহু জাতির মিলন ঘটেছিল। ফলে সেই সমস্ত জাতির সহিত ইটালির যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল এবং ইটালি নবচেতনা লাভ করেছিল।

(চ) ইটালির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বাস্তব জীবনে কার্যকরী শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। এটাও রেনেসাঁ আন্দোলনের আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

(ছ) ইটালির ভৌগোলিক অবস্থানও এর আর একটি কারণ। ভূমধ্যসাগরের মাধ্যমে ইউরোপ ও আরব দেশের মধ্যে এক বাণিজ্য সূত্র গড়ে উঠেছিল। ইটালির ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে এই ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে ইটালির শহরগুলি বেশি সুযোগ পেত। তাই আরব দেশের সঙ্গে ইটালির একটা সাংস্কৃতিক সম্বন্ধ গড়ে উঠেছিল।

(জ) সর্বোপরি, এটাও বলা যায় যে, এই আন্দোলনকে সাহায্য করবার মতো সাহিত্য, সভ্যতা, শিল্প ইটালিতে ছিল। এই সমস্ত সাহিত্য, শিল্প রেনেসাঁ আন্দোলনকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। তাই এই আন্দোলন প্রথমত ইটালিতে শুরু হয়। 

3. জনগণের জীবনযাত্রার উপর নবজাগরণের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তরঃ নবজাগরণের ফলে ইউরোপে নবচেতনার সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে জাতীয় সাহিত্য ও কাব্য সৃষ্টি হতে লাগল। ইংল্যান্ডের জন ওয়াইক্লিপ, ল্যাংল্যান্ড এবং ইটালির মাইকেল অ্যাঞ্জোলো, পেট্রার্ক প্রভৃতি পণ্ডিতগণ ল্যাটিন ভাষার পরিবর্তে নিজ নিজ মাতৃভাষার নবীন সাহিত্য রচনা করতে আরম্ভ করেন। এই সকল কাব্য ও সাহিত্যে যাজকদের প্রচলিত শিক্ষানীতি ও আচার-আচরণের তারা তীব্র বিরোধিতা করেন। মাতৃভাষায় পুস্তক লিখিত হওয়ায় জনসাধারণের অধিকাংশই সেইগুলি পড়ে মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেন। ওয়াইক্লিপ কর্তৃক বাইবেলের ইংরাজি অনুবাদ পড়ে জনসাধারণ আর যাজকদের বাইবেলের ভাষা মানতে রাজি হলেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের ফলে দেশে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরীক্ষা ও গবেষণা আরম্ভ হল। অন্যদিকে গির্জা এবং যাজকদের একাধিপত্যও নষ্ট হয়ে যায়।

শিক্ষাক্ষেত্রের মতো শিল্পক্ষেত্রেও নবজাগরণের ফলে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন হয়েছিল। ইটালিতে ক্যাথলিক যাজকদের নির্দেশে শিল্পকলা পরিচালিত হত; কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে রাফায়েল, লিয়োনার্ডো প্রভৃতি শিল্পীরা শিল্পের মধ্যে সৌন্দর্য সৃষ্টির প্রয়াসে মনোনিবেশ করেন। ইটালি ব্যতীত স্পেন, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশের চিত্রশিল্পেও এই রকম পরিবর্তন এসেছিল।

নবগরণের ফলে ভৌগোলিক এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ইউরোপের মানুষ নুতন নুতন দেশ আবিষ্কারে মেতে উঠেন।

নবজাগরণ আন্দোলনে ল্যাংল্যান্ড প্রভৃতির রচনায় যাজক সম্প্রদায়ের অনাচার ও বীভৎস স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত হয় এবং তা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে। 

4. ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ নবজাগরণের পরই ইউরোপের খ্রিস্টান সমাজে ক্যাথলিক যাজকদের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লব আরম্ভ হয়, ইতিহাসে তাকে ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

আন্দোলনের কারণঃ ক্যাথলিক যাজকরা মধ্যযুগে অধিকতর ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সু হয়ে ওঠেন। ধর্মীয় ব্যাপারে নিজেকে নিযুক্ত না রেখে বিলাসের ক্রোড়ে আশ্রয় নিয়ে রাজনীতি করতেই তারা অধিক ব্যস্ত থাকতেন। দিন দিন তাদের অর্থ-পিপাসা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ধর্মাধর্ম বিসর্জন দিয়ে অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহে তারা দ্বিধা করতেন না। এমনকী স্বয়ং পোপ রাজকদের মারফতে দেশে দেশে কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনসাধারণের নিকট অর্থের বিনিময়ে ক্ষমাপত্র বিক্রয় করতেন। সাধারণ লোককে যাজকরা বোঝাতেন যে সম্বৎসর দুষ্কর্ম করে এই ক্ষমাপত্র খরিদ করলে পাপের শাস্তি হতে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। নবজাগরণের ফলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির আমুল পরিবর্তন হওয়াতে ক্যাথলিক পুরোহিতদের কার্যকলাপের প্রতি তাদের ঘৃণা ও ক্রোধের সঞ্চার হয়।

ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলনঃ জার্মানির লুথারের ন্যায় ইংল্যান্ডের ললার্ড সম্প্রদায়ের ওয়াইক্লিপ বাইবেলের ইংরাজি অনুবাদ করে যাজকদের অনাচারের প্রতিবাদ করতে থাকেন। লুথারের মতবাদ ইংল্যান্ডের সুধা সমাজ সহজেই গ্রহণ করল। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘Act of Supremacy’ পাস হওয়ায় ইংল্যান্ডের ধর্মীয় ব্যাপারে পোপের প্রাধান্য বিনষ্ট হয়।

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলঃ এই আন্দোলনের ফলে জার্মানি, পশ্চিম সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে ক্যাথলিক একাধিপত্য নষ্ট হয়ে যায়। ক্যাথলিকরাও বুঝতে পেরেছিল যে তাদের মধ্যে যে অনাচার রয়েছে তা দুর করতে হবে। সেইজন্য তাদের মধ্যেও সংস্কারের জন্য আন্দোলন আরম্ভ হয়। ক্যাথলিক গির্জাগুলিতে যে সম্পদ জড় হয়েছিল বিভিন্ন দেশের রাজারা তা গ্রহণ করে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের নিমিত্ত বয় করেন। ফলে প্রোটেস্টান্ট দেশগুলিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষ প্রসার ঘটে। 

5. ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথার-এর ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তরঃ ধর্মসংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন জার্মানির গুটেনবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক মার্টিন লুথার। জার্মানির সেক্সনীর অন্তর্গত এমনিবেন নামক স্থানে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথার জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব হতেই খ্রিস্টধর্মের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। পোপের লোকেরা যে ক্ষমাপত্র বিক্রয় করতেন, লুথার তা অত্যন্ত ঘৃণার চক্ষে দেখতেন।

মার্টিন লুথারের সঙ্গে ক্ষমাপত্র বিক্রয় নিয়ে পোপের বিরোধ বাধে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে। লুথার ক্যাথলিক গির্জার সংস্কারকল্পে আন্দোলন আরম্ভ করেন। তিনি ঘোষণা করলেন যে ব্রাজকদের সাহায্য ছাড়াও ভক্তি দ্বারা মুক্তিলাভ সম্ভব। জার্মানির অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি তাঁর মত গ্রহণ করেন। পোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরম্ভ করায় লুথার মতাবলম্বীদের ‘Protestant’ আখ্যা দেওয়া হয়।

লুথার ও তাঁর অনুচরদের শায়েস্তা করবার জন্য পোপ জার্মান সম্রাট চার্লসকে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের ফলে Protestant এবং Catholic দের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হয়। লুথারের মৃত্যুর পর এই বিরোধ গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। অগবার্গের সন্ধি দ্বারা গৃহযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং সন্ধির শর্ত অনুযায়ী ক্যাথলিক মতাবলম্বীরা মুখারের মতকে মেনে নিতে বাধ্য হয়। ঐতিহাসিকরা মার্টিন লুথারকে Morning Star of the Reformation Movement’ বলে থাকেন।

6. ইউরোপে সংস্কার আন্দোলনের কারণসমূহ উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ ষোড়শ শতাব্দীতে ক্যাথলিক চার্চগুলিতে ধর্মের নামে বহু অন্যায় অত্যাচার প্রশ্রয় পাচ্ছিল। এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল; তাই-ই ইতিহাসে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন নামে খ্যাত। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন জার্মানির গুটেনবার্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক মার্টিন লুথার। এই আন্দোলনের কারণগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) রোমান ক্যাথলিক চার্চগুলিতে যে অন্যায়-অত্যাচার চলছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর ফলেই এই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে যাজক যখন অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠল তখন এই যাজকগণ নিজেদের কর্ত ভুলে গিয়ে কুকর্মে লিপ্ত হতে আরম্ভ করল। সাধারণ লোকও এই অত্যাচার হতে রেহাই পেল না।

(খ) এই আন্দোলন যদিও ধর্ম আন্দোলন, তথাপি এর পিছনে রাজনীতির ছোঁয়াচ ছিল। চার্চগুলির ক্ষমতা এত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে রাজাও পোপের হাতে অনের সময় অপমানিত বা নিগৃহীত হতেন। চার্চের আদায়ী অর্থে রাজার অধিকার ছিল না—এমনকি ধর্মসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে কাউকেও বিচার করতে হলে রাজা বিচার করতে পারতেন না। ফলে পোপের ক্ষমতা খর্ব হোক তাই রাজাদের কামা ছিল। কাজেই এই আন্দোলনে রাজাদের বিরাট সমর্থন ছিল যা খুবই স্বাভাবিক এবং তারা লুকিয়ে লুকিয়ে এই আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। 

(গ) চার্চগুলির প্রচুর ভূসম্পত্তি ছিল, অথচ রাজা কোন রাজস্ব পেতেন না। জনসাধারণ। অনেক সময় এই চার্চগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিত, কিন্তু প্রতিদানে কিছুই পেত না। ফলে এই অসন্তোষের ভাব দেখা গিয়েছিল। তাই এই বিপ্লব।

(ঘ) অনেকের মতে নবজাগরণই এই আন্দোলনের প্রধান কারণ। নবজাগরণের ফলে মানুষ যখন সচেতন হয়ে উঠল তখন সেসব কিছুই যুক্তি দ্বারা মীমাংসা করতে চাইল। চার্চের প্রচারিত বহু মতবাদই বিচারসহ ছিল না, ফলে তা সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এই আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল।

(ঙ) ক্ষমাপত্র বিক্রয় এই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ। অনেক ধর্মসংস্কারকের উদ্দেশ্য ছিল চার্চগুলি হতে অন্যায় অত্যাচার দূর করা, কিন্তু ক্ষমাপত্র বিক্রয়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন বিপ্লবের রূপ ধারণ করে। মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পোপ এই রীতি চালু করেন। এতে বলা হয় যারা অন্যায় করবে, পাপ করবে তারা এই ক্ষমাপত্র কিনলে পাপ হতে মুক্তি পাবে। মার্টিন লুথার এর প্রতিবাদ জানালে আন্দোলন শুরু হয়।

7. ইউরোপের মধ্যযুগের একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ কর। 

উত্তরঃ ইউরোপের মধ্যযুগের আরম্ভ এবং শেষ কখন হয়েছিল সেই বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকে গথ, ফ্রাঙ্ক, ন প্রভৃতি বর্বর জাতি কর্তৃক রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর হতে প্রসিদ্ধ রাজনৈতিক পণ্ডিত ম্যাকিয়াভেলীর আবির্ভাব পর্যন্ত সময় হল ইউরোপের মধ্যযুগ। ষষ্ঠ শতাব্দী হতে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এক হাজার বছরকেই ঐতিহাসিকরা ইউরোপের মধ্যযুগ হিসাবে গণ্য করেন।

ক্ষমতার দ্বন্দ্বঃ ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি প্রভৃতি পশ্চিম রোমক সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। মধ্যযুগের প্রারম্ভে বর্বর জাতিদের আক্রমণের ফলে বিশাল রোমক সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি প্রভৃতি বর্বর জাতির করতলগত হয়। বর্বর জাতিরা সেই সকল দেশে কতকগুলি রাজ্য স্থাপন করেছিল এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে এই সকল রাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকায় মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে। ফ্রাঙ্ক জাতি ফ্রান্স ও জার্মানি দখল করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ৭৩২ খ্রিস্টাব্দে অন্তরা ইউরোপ আক্রমণকারী মুসলমানদের পরাভূত করেছিল। ফ্রাঙ্করাজ শার্লামেন পশ্চিম ইউরোপে বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করলে রোমের পোপ তাকে রোমক সম্রাট উপাধি দিয়েছিলেন। আনুমানিক দশম শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সময় মুসলমানরা পূর্ব ও দক্ষিণ হতে এবং উত্তর দিক হতে অন্যান্য জাতিরা ইউরোপ আক্রমণ করতে থাকায় দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। শুধু জাতিতে জাতিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ ছিল না, পোপ এবং রাজার মধ্যেও দ্বন্দ্ব চলছিল।

খ্রিস্টধর্মের প্রসারঃ মধ্যযুগের প্রারম্ভেই সমগ্র ইউরোপে খ্রিস্টধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে। খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার জন্য সমগ্র ইউরোপকে ধর্মীয় পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত করে এক একজন পেট্রিয়ার্কের উপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। কালক্রমে রোমের পেট্রিয়ার্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পোপ অ্যাখ্যা দিয়ে তাকে সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টান জগতের ধর্মগুরুর মর্যাদা দেওয়া হয়। খ্রিস্টান যাজকরা গির্জায় বাস করে ধর্মপ্রচার ছাড়াও আর্তের সেবা এবং জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে নিজেদের নিয়োজিত রাখত। যাজকদের গির্জা, মঠ এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়সমূহে খ্রিস্টধর্ম- বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হত। দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের ব্যয়ভার যাজকরা বহন করতেন। যাজকদের শিক্ষাদানের ফলে জনসাধারণের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতির পরিবর্তন হয়েছিল।

সামস্ত প্রথাঃ মধ্যযুগে ইউরোপে সামন্ত প্রথা ছিল। এই প্রথানুযায়ী রাজা ছিলেন দেশের সমস্ত জমির মালিক। তিনি কিছু জমি নিজের জন্য রেখে তার অনুগত সামস্তদের মধ্যে জমিগুলি ভাগ করে দিতেন। সমাজের সর্ব নিম্নস্তরের লোকদের ভিলেন বা সার্চ বলা হত। সামন্তগণ যে সকল গৃহে থাকতেন সেইগুলিকে Manor House বলা হত। এইগুলিতে নানাপ্রকার আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা থাকত।

উপসংহারঃ খ্রিস্টান যাজকদের চেষ্টায় সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি হয় এবং দাসত্ব প্রথা যে নিন্দনীয় তা জনসাধারণ ধীরে ধীরে অনুভব করতে থাকেন। মধ্যযুগে ইউরোপে সভ্যতা ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশ সাধিত না হলেও তা একেবারে তাৎপর্যহীন নয়।

8. অন্ধকার যুগ’ বা ‘Dark Age’ বলতে কি বোঝ? কোন এক বিশেষ সময়কালকে অন্ধকার যুগ’ হিসাবে পরিচিত করা কতটুকু যুক্তিনির্ভর। সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ মানবতাবাদীরা খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে নবম শতাব্দী ব্যাপী সময়কালকে Dark Age বা অন্ধকার যুগ বলে পরিচিত করেন। 

“তাদের মতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর খ্রিস্টীয় চার্চ এবং যাজক শ্রেণী সমগ্র ইউরোপের মানুষের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। এর ফলে যুক্তিবাদী গ্রিক ও রোমান চিন্তাধারার অবসান ঘটে এবং সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস, কু-সংস্কার এবং অযৌক্তিক মূল্যবোধের উপর। তাই এই সময়কালকে তার বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে Dark Age বা অন্ধকার যুগ বলে পরিচিত করা হয়। 

তবে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোন এক সময়কালকে নির্দিষ্টভাবে ‘অন্ধকার যুগ’ হিসাবে গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ততা দেখা যায়। তাদের মতে—

(ক) শতাব্দী অনুযায়ী কোন সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক মতবাদ বা চিন্তাধারার উন্নতি বা অবনতির স্বচ্ছ বিভাজন সম্ভব নয়।

(খ) কোন চিন্তাধারা বা মনোভাব কেবল ক্রমাগতভাবেই পরিবর্তন সম্ভব, নাকি হঠাৎ। তাই এই সময়কালকে ‘Dark Age’ বা ‘অন্ধকার যুগ’ বলে সম্পূর্ণ পরিচিতি খানিকটা বিরোধাভাষী পরিচিতি।

9. মানবতাবাদ প্রচার ও প্রসার রোধে চার্চ এবং যাজকশ্রেণী কিভাবে কৌশল গ্রহণ করেছিল? সাধারণ মানুষের উপর চার্চের শোষণের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মানবতাবাসীরা খ্রিস্টীয় চার্চ এবং যাজক শ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে জনজাত্রিত্তি গড়ে তুলেছিল। এমনকী চার্চের আরোপ করা গাজনার বিরুদ্ধে বিগ্রহ গড়ে উঠেছিল। কিন্তু রাজপরিবার এবং শাসক শ্রেণী এই ধরনের অগ্রগতি মেনে নেয়নি এবং চার্চের কর্তৃত্ব স্থাপনে প্রয়াসী ছিল। সেইক্ষেত্রে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। যাজক শ্রেণী শাসকদের মানবতাবাদী চিন্তাধারার প্রসার রোধে প্রভাবিত করেছিলেন। এর ফলে মুক্তিনির্ভর মানবতাবাদী চিন্তাধারা এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়নি এবং এইগুলির প্রবক্তাদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হয়।

খ্রিস্টীয় মানবতাবাদীরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে চার্চগুলো যাজকদের লোভের কারখানায় পরিণত হয়েছে। কারণ চার্চের যাজকরা সাধারণ মানুষের নিকট থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যাজকরা যে সকল অন্যায় কাজ করতেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল অর্থের বিনিময়ে পাপ মুক্তির ঘোষণা বা ইন্ডালজেন্স (Indulgence) বিক্রি করা।

10. বৈজ্ঞানিক বিপ্লব’ বলতে কি বোঝ? মানুষের উপর এর প্রভাব লেখ। 

উত্তরঃ নবজাগরণের সময়কালে চিন্তাবিদদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে চিন্তাধারা এবং বিভিন্ন আবিষ্কার ঘটে। যা ছিল সম্পূর্ণভাবে গবেষণা নির্ভর, শুধু বিশ্বাস নির্ভর নয়। এইভাবে বৈজ্ঞানিকরা একবার পথ দেখিয়ে দেওয়ার পর পদার্থবিদ্যা, নতুন রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যাতেও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণরূপে যুক্তি ও প্রমাণসাপেক্ষ। ঐতিহাসিকরা জ্ঞানচর্চার এই নতুন বিকাশকে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এই চিন্তাধারার নতুন পর্যায়ে মানুষ ঈশ্বর-এর পরিবর্তে প্রকৃতিকে সৃষ্টির মূল বলে ভাবতে বা বিশ্বাস করতে শুরু করে। মানুষ বুঝতে শুরু করে যে পৃথিবীতে জীবন প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং নানা উপাদান এতে সাক্ষ্য। বিভিন্ন ‘বিজ্ঞান সংস্থা’ এই চিন্তাধারার উন্মেষে সহায়তা করে। এর ফলে নতুন বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে যার মাধ্যমে মানুষ যুক্তিপূর্ণ তথ্যনিষ্ঠ হয়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে গ্রিক ও রোম সংস্কৃতির কোন উপাদানসমূহ পুনর্জীবিত হয়েছিল?

উত্তরঃ রোম ও গ্রিক সংস্কৃতির ধর্মীয়, সাহিত্য এবং কলাশিল্পের উপাদান চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে পুনর্জীবিত হয়েছিল।

2. মধ্যযুগে ইটালি স্থাপত্যের সঙ্গে ইসলামি স্থাপত্যের বিষদ তুলনা কর।

উত্তরঃ ইটালি এবং গ্রিক উভয় স্থাপত্যে বিশাল সুসজ্জিত প্রাসাদসমূহ নির্মিত হয়েছিল। ইটালি স্থাপত্যে বিশাল সুসজ্জিত ক্যাথলিক গির্জা ও মঠ তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে ইসলামি স্থাপত্যে বিশাল মসজিদ তৈরি হয়েছিল। এই সকল প্রাসাদের স্তম্ভ ও খিলান ছিল প্রধান। বৈশিষ্ট্য।

3. ইটালিয় শহরগুলিতে প্রথম মানবতাবাদের আদর্শ দেখা গিয়েছিল কেন? 

উত্তরঃ রোমান ও গ্রিক লেখকগণ কর্তৃক বহুসংখ্যক চিরাচরিত গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার প্রসার না থাকার জন্য এই গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে ইটালিতে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে। যার ফলে এই গ্রন্থগুলিকে নানা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এই সকল গ্রন্থ ও গ্রন্থের উপর নানা প্রকার মন্তব্য ইটালির জনগণের মধ্যে মানবতাবাদের ধারণা প্রচার করে। সর্বপ্রথম ইটালির স্কুল ও কলেজে মানবতাবাদের বিষয়সমূহ পড়ানো হয়। এই সকল বিষয়ের মধ্যে প্রকৃতিবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সকল বিষয় জনগণের চিন্তাধারা কেন্দ্রীভূত করে।

4. মানবতাবাদী চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ছিল? 

উত্তরঃ মানবতাবাদী চিন্তাধারার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ হতে মানব জীবনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। 

(খ) মানুষের দৈহিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপর গুরুত্ব প্রদান। 

(গ) মানবতাবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ব্যক্তির অহস্তান্তরযোগ্য অধিকার ঘোষণা করে।

(ঘ) মানুষের মর্যাদায় উৎসাহদান।

(ঙ) মানুষের জন্য আদর্শ জীবন।

5. ভেনিসীয় সু-শাসনের সঙ্গে সমসাময়িক ফ্রান্সের সু-শাসনের তুলনা কর। 

উত্তরঃ ভেনিস ছিল ইটালির একটি নগরী, যা গির্জা ও সামন্ত প্রভুর প্রভাবমুক্ত ছিল। ব্যাঙ্কের মালিক ও সম্রান্তশালী ব্যবসায়ী ভেনিস নগরীর প্রশাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। অপরদিকে সমগ্র ফ্রান্সে চূড়ান্ত রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। সেখানে সাধারণ মানুষ সবধরনের অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

6. সপ্তদশ শতকে ইউরোপীয়দের নিকট বিশ্ব কিভাবে পৃথকরূপে আবির্ভূত হয়েছিল তা যত্ন সহকারে লেখ।

উত্তরঃ সপ্তদশ শতকে বিশ্ব আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। সুতরাং তা এক নূতন চেহারা প্রাপ্ত হয় যা পূর্বের বিশ্ব হতে নিম্নলিখিতভাবে পৃথক ছিলঃ

(ক) ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শহর-নগর গড়ে ওঠে।

(খ) পৃথক নুতন শহুরে সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। শহরের জনগণ নিজেদের গ্রামের জনগণ অপেক্ষা অধিক সুসভ্য বলে মনে করে। 

(গ) ফ্লোরেন্স, ভেনিস, রোম প্রভৃতি নগর ও শহর শিক্ষা ও শিল্পের পীঠস্থান রূপে আবির্ভূত হয়। শহরসমূহ রাজা ও গির্জা হতে অল্প পরিমাণে স্বশাসন অর্জন করে।

(ঘ) শিল্পী ও লেখকগণ ধনী ও অভিজাত সম্প্রদায় কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।

(ঙ) ছাপা আবিষ্কারের ফলে জনগণ পর্যাপ্ত মুদ্রিত গ্রন্থ পড়বার সুযোগ পায়।

(চ) ইউরোপে ইতিহাসের ধারণা বিকাশ লাভ করে। জনগণ আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে প্রাচীন রোম ও গ্রিকদের সঙ্গে তুলনা করতে থাকে। 

(ছ) ধর্ম এইরূপভাবে দেখা দেয় যে জনগণ নিজ ইচ্ছানুযায়ী যে-কোন ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে।

(জ) ‘গির্জা-সর্বস্ব বিশ্ব’ এই ধারণা বিজ্ঞানীগণ খণ্ডন করতে থাকেন। 

(ঝ) নূতন ভৌগোলিক জ্ঞান ইউরোপকেন্দ্রীক জ্ঞানকে খণ্ডন করে।

We Hope the given একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন ও উত্তর will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top