Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

14. অষ্টাদশ শতকে সংঘটিত বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের নাম লেখ।

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে বহু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সংঘটিত হয়েছিল। নিম্নে কতকগুলি উল্লেখ করা হলঃ

15. পরিবহণের ক্ষেত্রে কি কি নুতন আবিষ্কার হয়েছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ পরিবহণের ক্ষেত্রে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের দৌলতেই তা সম্ভব হয়েছিল। এইসকল আবিষ্কারের প্রধান কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) রাস্তাঃ মেক এডাম নামে একজন স্কটিশ অভিযন্ত্রা শক্ত রাস্তা তৈরির জন্য পাথরের টুকরো ব্যবহার করেছিলেন। ইংল্যান্ডে এইরূপ অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছিল।

(খ) খালঃ জেমস ব্রিভলি বেশ কয়েকটি খাল খনন করেছিলেন। এর ফলে লন্ডন, বার্মিংহাম, লিভারপুল এবং ম্যাঞ্চেস্টার প্রভৃতি শহর খালপথে সংযুক্ত হয়েছিল।

(গ) রেল ইঞ্জিনঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ট্রেভিথিক প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিভেনশন ব্লাটচার নামে একপ্রকার বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে।

(ঘ) বাষ্পচালিত জাহাজঃ আমেরিকার বিজ্ঞানী রবার্ট ফুল্টন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে বাষ্পচালিত নৌকার নমুনা তৈরি করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে গ্লাসগো ও লিভারপুলের মধ্যে সর্বপ্রথম বাষ্পচালিত জাহাজ যাতায়াত শুরু করে।

16. বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার উদ্যোগ এবং পরিবহণ ব্যবস্থায় কীভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল?

উত্তরঃ বাষ্পচালিত ইঞ্জিন উদ্যোগ এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে এক বিরাট পদক্ষেপ। বাষ্পচালিত শক্তি মূলত প্রচুর পরিমাণ শক্তির উৎস ছিল যা কলকারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে শক্তির যোগান দিত। বাষ্পচালিত শক্তির তৈরি করা উচ্চচাপ প্রক্রিয়া বড় বড় মেশিনকে চালানোর শক্তি যোগান দিত এবং এই বাষ্পচালিত শক্তির সাহায্যেই বড় বড় কলকারখানার যন্ত্রগুলি অতিদ্রুত কম খরচে সহজে চালানো সম্ভব হয়েছিল। স্টিম শক্তি প্রথম ব্যবহার করা হয় খান থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পচালিত শক্তির ব্যবহার পাত বাম্পচালিত আবিষ্কারের প্রাক্ অবধি বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য। কিন্তু ১৭৬৯ সালে উন্নত মানের বাষ্পচালিত ইঞ্জিন, যাকে জেমস ওয়াট নামক ব্যক্তির আবিষ্কার বলা হত, তা এই সমস্যা সমাধানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছিল। ধনী শিল্পপতি ম্যাথু বলটন-এর সাহায্যে ওয়াট তৈরি করেন “Soho Foundry”। যার ফলে ওয়াট-এর বাষ্পচালিত ইঞ্জিন প্রচুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমর্থ হয়েছিল।

স্টীম ইঞ্জিনের সাহায্যে রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার পরিবহণ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশাল অশ্বশক্তি বিশিষ্ট রেলইঞ্জিন ব্রিটেন তথা সমগ্র ইউরোপে রেল পরিষেবায় এক দিগন্ত উন্মোচন করে। জল পরিবহণের ক্ষেত্রেও বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার নবদিগন্তের সূচনা করে। পালচালিত জাহাজের পরিবর্তে স্টীম ইঞ্জিনচালিত জাহাজ জল পরিবহণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

17. লন্ডন কেন বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

লন্ডনের গুরুত্ব উল্লেখ কর।

উত্তরঃ লন্ডন বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি হিসাবে গড়ে ওঠার পিছনে মুখ্য কারকগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) ইংল্যান্ডের সমস্ত বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্য লন্ডনকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হত। লন্ডন সমগ্র দেশের সাথে সংযুক্ত ছিল। 

(খ) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পর বৈশ্বিক বাণিজ্য ইতালি ও ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর থেকে হল্যান্ড ও ব্রিটেনের আটলান্টিক বন্দরকেন্দ্রিক হয়। 

(গ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ঋণের কেন্দ্র হিসাবে লন্ডন আমস্টারডামকে প্রতিস্থাপন করে।

(ঘ) লন্ডনকে কেন্দ্র করে ত্রিদেশীয় বাণিজ্য শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ড, আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।

(ঙ) এশিয়া ও আমেরিকায় বাণিজ্য করা কোম্পানিগুলির মুখ্য কার্যালয় লন্ডনে ছিল।

18. Smelting কি? এর সমস্যাগুলি কি কি লেখ। 

উত্তরঃ Smelting হচ্ছে এই পদ্ধতি যার মাধ্যমে খনি থেকে আহরণ করা আকরিক লোহাকে গলিয়ে তরল বিশুদ্ধ লোহা সংগ্রহ করা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কাঠকয়লাকে ব্যবহার করা হত। Smelting পদ্ধতিতে অপ উৎপাদনে। কিন্তু এর নিম্নোক্ত সমস্যা ছিলঃ

(ক) দূর যাত্রায় ভঙ্গুর কাঠকয়লা পরিবহণ ছিল খুব কষ্টকর। 

(খ) কাঠকয়লার অশুদ্ধতা খুব নিম্নমানের লোহা উৎপাদন করত।

(গ) কাঠকয়লার যোগান কম ছিল। 

(ঘ) কাঠকয়লা পর্যাপ্ত তাপ বা উষ্ণতা দিতে পারত না।

19. আব্রাহম ডার্বিরা কারা? ধাতুবিদ্যার জগতে তাদের অবদান লেখ।

উত্তরঃ শ্রোপশিয়ারের ডার্বিরা হচ্ছেন আয়রন মাস্টার পরিবার অর্থাৎ লোহা উৎপাদনে জড়িত পরিবার। এই পরিবারের তিন পুরুষ দাদু, বাবা ও ছেলে যাদের সবাই আব্রাহাম ডার্বি নামে পরিচিত। ১৮ শতাব্দীতে প্রায় অর্ধ শতাব্দী সময় ধরে পর্যায়ক্রমে ধাতুবিদ্যার জগতে তারা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।

ধাতুবিদ্যার জগতে তাদের অবদান নিম্নরূপঃ 

(ক) প্রথম আব্রাহাম ডার্বি ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে মারুতও চুল্লি আবিষ্কার করেন। এই চুল্লির ব্যবহারে অতি উন্নত লোহা উৎপাদন সম্ভব হয়। 

(খ) দ্বিতীয় আব্রাহাম ডার্বি কাঁচা লোহা থেকে পেটা লোহা তৈরি করেন যা ছিল কম ভঙ্গুর।

(গ) ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় আব্রাহাম ডার্বি সিভারন নদীর উপর পৃথিবীর প্রথম লোহার সেতু তৈরি করেন কোলব্রুক ডেইলে নামক স্থানে। এভাবেই আব্রাহাম ডার্বিদের অধীনে লোহার ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে। 

20. ব্রিটেনে লৌহশিল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ ব্রিটেনে লৌহশিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল তার লৌহ ও কয়লা খনির পাশাপাশি অবস্থান। এগুলি ছিল আবার বন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলে। এর ফলে উপযুক্ত কয়লার ব্যবহার উন্নত গুণগত মানবিশিষ্ট লোহা উৎপাদন সম্ভব ছিল।

পাঁচটি সমুদ্রতীরবর্তী কয়লা সংরক্ষণ স্থান যা সরাসরি তৈরি জিনিস জাহাজে পৌঁছাতে সম্ভব ছিল। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সংলগ্ন কয়লাখনি থাকার জন্য জাহাজ তৈরির কারখানা বাড়াতে শুরু করে এবং এর ফলে জাহাজের ব্যবসা ক্রমান্বয়ে বাড়তে আরম্ভ করে। এইভাবেই ব্রিটেনের লৌহশিল্প তিনগুণ পরিমাণে বাড়তে শুরু করে। 

21. ইংল্যান্ডের শ্রমিকদের উপর শিল্প বিপ্লবের প্রভাব কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের শ্রমিকগণ সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

(ক) শ্রমিকগণকে দিনে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হত। পরিশ্রান্ত হলেও তাদের বিশ্রাম করতে দেওয়া হত না।

(খ) তাদের কর্মস্থল ছিল অত্যন্ত নোংরা এবং তাদের নিরাপত্তার কোনরূপ ব্যবস্থা। ছিল না।

(গ) তাদের বসবাসের স্থান ছিল খুবই খারাপ। দুর্ঘটনা, নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল।

(ঘ) মহিলা ও শিশুদের ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থান দেওয়া হত, কিন্তু তাদের স্বল্প মজুরি দেওয়া হত। 

22. শিল্প বিপ্লব’-কালীন ইংল্যান্ডে শিশু ও মহিলাদের কারখানাতে নিয়োগ করতে কেন বেশি আগ্রহ ছিল?

উত্তরঃ শিশু ও মহিলাদের কারখানাতে নিয়োগ করা হত, কারণ—

(ক) এদের কম পারিশ্রমিকে অধিক সময় কাজ করান সম্ভব। 

(খ) এদের মধ্য থেকে কোন প্রতিরোধ গড়ে উঠত না, তারা সঠিকভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করত।

(গ) যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করতে শিশুরা খুব উপযোগী ছিল।

(ঘ) কয়লাখনিতে শিশুদের নিয়োগ করা হত, কারণ তারা সহজে চলতে পারত ও কয়লা আনয়নে সহায়তা করত। 

(ঙ) বয়নশিল্পে শিশুরা খুব উপযোগী ছিল, কারণ তাদের ছোটো হাত-পা তাদের কাজ করার সুবিধা দিত।

(চ) শিশুরা খুব সহজে যন্ত্রাংশের মধ্য দিয়া চলাফেরা করতে পারত।

23. শিল্পবিপ্লবকালীন সময় মহিলাদের অবস্থান কেমন ছিল সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবের অগ্রগতিতে মহিলাদের বিশেষ অবদান ছিল। মহিলারা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। যার ফলে তাদের সাংসারিক উপার্জন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় শিল্প কারখানায় নিয়োজিত থাকায় জীবনের আনন্দ দূর হয়ে যায়। শিল্প কারখানায় নির্দিষ্ট সময়ের অধিক এবং অত্যধিক কঠোর পরিশ্রম সহকারে ও সতর্কতা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে তাঁদের সর্বদাই কাজ করতে হত। তাছাড়াও পুরো সাংসারিক দায়িত্বও তারা পালন করত। যদিও মহিলারা শিল্প কারখানায় চাকরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছিল এবং তাদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু তাদের যে শর্তসাপেক্ষ কাজ করতে হত বা গর্ভাবস্থায় সন্তান হারানো বা শৈশবে সন্তান হারানো এবং নোংরা শহরাঞ্চলীয় বস্তিতে বাস করতে বাধ্য হত তা তাদের করুণ জীবনের প্রমাণ দেয়, যা শিল্প বিপ্লবেরই অবদান।

24. শিশু শ্রমিকের উন্নতির জন্য চারটি পরামর্শ দাও। 

উত্তরঃ শিশু শ্রমিকের উন্নতির জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি দেওয়া হলঃ

(ক) শিশু শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা পাঁচ ঘণ্টা থেকে কম নির্ধারিত করা উচিত।

(খ) চৌদ্দ বছরের নীচে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা উচিত। 

(গ) শিশু শ্রমিকদের প্রাণসংহারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিষিদ্ধ করা উচিত।

(ঘ) শিশু শ্রমিকদের প্রাপ্তবয়স্কদের সমান পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত।

(ঙ) শিশু শ্রমিকদের পড়াশুনার এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা উচিত। 

25. ‘লুডিজম’ কি? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ লুডিজম হচ্ছে প্রতিবাদ-এর একটি নতুন ধারা, যা শুরু করেছিলেন লেড লুড নামের এক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক। লুড মতবাদে বা লুডিজমে শুধু যন্ত্রপ্রযুক্তির বিরোধিতা করেই আন্দোলন শেষ ছিল না, বরং বিভিন্ন দাবিদাওয়া ছিল সরকারের প্রতি।

এদের দাবির মধ্যে মুখ্য ছিল-

(ক) কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও প্রদান।

(খ) শিশু ও মহিলাদের নাম নিয়ন্ত্রণ। 

(গ) কল/কারখানা স্থাপনের ফলে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া। 

(ঘ) শ্রমিক সংগঠন গড়ার অধিকার, যাতে এগুলির মাধ্যমে আইনসঙ্গতভাবে সরকারের নিকট দাবি তুলে ধরা যায়।

26. পিটারলু কি? এর ফলাফল লেখ।

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবের প্রারম্ভিক পর্যায়ে শ্রমিকদের কোন আইনসঙ্গত অধিকার ছিল না বা তাদের দাবি বা ক্ষোভ প্রকাশের অধিকারও ছিল না। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ম্যাঞ্চেস্টার শহরের সেন্ট পিটার্স চার্চের মাঠে প্রায় ৮০,০০০ লোকের এক বিরাট জনসভা হয়, যেখানে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার-রাজনৈতিক সংগঠন, জনসভা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবি জানায়। সরকার আগ্রাসী ও নির্মমভাবে এই প্রতিবাদ দমন করে যা পিটা নামে পরিচিত হয়।

ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) প্রতিবাদকারীরা যে অধিকারের দাবি জানিয়েছিল এইগুলি এই বছরই ৬টি আইনের মাধ্যমে অস্বীকার করে সরকার। বরং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর বাধা আরোপ করা হয়

(খ) House of Commons-কে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক করার প্রস্তাব আসে। 

(গ) ১৮২৪-১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে Combination Act-গুলি বাতিল করা হয় ইত্যাদি।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. ‘শিল্প বিপ্লব’ বলতে কি বোঝ? আলোচনা কর।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের তৃতীয় জর্জের সময়ে দেশে নানা প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আবহ হয় এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর ফল সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পূর্বে ইংল্যান্ডের অধিকাংশ লোকই গ্রামে থেকে কৃষিকার্য ও পশুপালন করে জীবন ধারণ করত। মেয়েরা বাড়িতে কাপড় তৈয়ার করত। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রগতির যুগে গ্রামীণ লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বাস করতে আরম্ভ করেন। ফলে গ্রাম্য কুটির শিল্প ও প্রাচীন পদ্ধতিতে কৃষিকার্য ব্যাহত হতে লাগল।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্যঃ আমাদের দেশের মতো ইংল্যান্ডেও টুকরো টুকরো জমিতে কৃষকরা পুরানো পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করত। কিন্তু উনিশ শতকে ইংল্যান্ডে বৈজ্ঞানিক ক্ষতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ হওয়ায় ধনীক শ্রেণী কৃষকদের টুকরো টুকরো জমিগুলি ক্রয় করে বৃহৎ কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃষিকার্য আরম্ভ করেন। ফলে একদিকে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেল, কিন্তু অপরদিকে দরিদ্র কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে গেল। তারা নিমজুরে পরিণত হল।

বয়ন শিল্পের উন্নতিঃ এতদিন পর্যন্ত গ্রাম্য মেয়েরা ঘরে সুতা কেটে কাপড় প্রস্তুত করত। ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে John Cay উড়ন্ত মাকু এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে হার গ্রীভস এক প্রকার চরকা প্রস্তুত করেন যার দ্বারা একসঙ্গে আটগাছা সুতা কাটা যায়। এর পর আর্করাইট এবং স্যামুয়েল ক্রম্পটন কর্তৃক কলের তাঁত আবিষ্কৃত হওয়ায় বস্ত্রোৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

কলকারখানা স্থাপনঃ জেমস ওয়ার্ট স্টীম ইঞ্জিন আবিষ্কার করে বাষ্পীয় শক্তিতে নব আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলি চালাইবার ব্যবস্থা করায় মানুষ কর্তৃক যন্ত্র চালাবার কাজ কমে গেল এবং দেশে বৃহৎ বৃহৎ কলকারখানা স্থাপিত হওয়ায় গ্রাম্য কুটির শিল্পীর প্রয়োজন হ্রাস পেতে লাগল।

যাতায়াতের সুবিধাঃ ইংল্যান্ডে পূর্বে যাতায়াতের বিশেষ সুবিধা ছিল না। টেন ফোর্ড এবং ম্যাক অ্যাভাস কর্তৃক রাস্তা নির্মাণ এবং ব্রিন্ডলী কর্তৃক উন্নত ধরনের খাল খনন উদ্ভাবনের ফলে স্থলপথে ও জলপথে পরিবহণের যথেষ্ট উন্নতি হয়। তদুপরি জন উইলকিনসন এবং স্টিভেনশন কর্তৃক যথাক্রমে যান্ত্রিক জাহাজ অয়েল ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে যাতায়াত ও মাল বহনের যথেষ্ট সুবিধা হয় এবং দরিদ্র শ্রমিকদের বেকারত্ব বৃদ্ধি পর। সেই সঙ্গে হামফ্রে ডেভী কয়লাখনির জন্য Safety Lamp আবিষ্কার করেন। পূর্বে খনি হতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারাত। Safety Lamp আবিষ্কৃত হওয়ায় শ্রমিক দুর্ঘটনা হ্রাস পেল।

উপরিউক্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ঐতিহাসিকেরা এর নাম দিয়েছেন “শিল্প বিপ্লব’।

2. শিল্প বিপ্লব কি ছিল?’ শিল্প বিপ্লবের কারণসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইংল্যান্ডের একচেটিয়া বাণিজ্য উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ায় ঐ সকল দেশ হতে শিল্পোপযোগী প্রচুর কাঁচামাল আমদানি জাকায় ইংল্যান্ডে প্রচুর অর্থাগম হয়। ভারতবর্ষ, আমেরিকা ও অন্যান্য স্থানে ইংরেজ সহজ হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই সময় ইংল্যান্ডে ভূমি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। ফলে উৎপাদন প্রণালীর এক যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দেয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ হয়। নানা বৈজ্ঞানিক দ্রব্য ও যন্ত্রের আবিষ্কার হয়। যান্ত্রিক শক্তির সাহায্যে অল্প সময়ে অধিক সামগ্রী উৎপন্ন হয়। যানবাহন ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা দেয়। ইহাই শিল্প বিপ্লব। যদিও প্রথমত, ইংল্যান্ডে এই বিপ্লব আরম্ভ হয় তথাপি তা ক্রমে ক্রমে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করে।

কারণঃ শিল্প বিপ্লবের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) আমাদের দেশের কৃষিক্ষেত্রের মতো ইংল্যান্ডে জমি ছিল অসংখ্য টুকরোয় বিভক্ত। সেই জন্য ধনী কৃষকগণ আইনের সাহায্যে টুকরো জমিগুলি দখল করে। বড় বড় কৃষি ফার্ম গঠন করে নেয় এবং বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে কৃষিকার্য আরম্ভ করে। এর ফলে পূর্বের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ফসল উৎপন্ন হল। তাছাড়া কলের লাঙল তৈরি ও জমিতে সার দেওয়ার নুতন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হল।

(খ) বয়ন শিল্পের উপরই এই বিপ্লবের প্রভাব সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায়। ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে জন কে নামক একজন ইংরেজ ‘ফ্লাইং সাটল’ আবিষ্কার করে বস্ত্র বয়নের কাজ অতি দ্রুত করে দেন। তাঁতীদের বেশি সুতা যোগানের জন্য। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে হারগ্রীভস নামক একজন তাঁতী স্পিনিং জেনি’ নামক এক যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে পূর্বের চেয়ে ষোলগুণ বেশি সুতা কাটা সম্ভব হল। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে আর্করাইট ‘ওয়াটার ফ্রেম’ নামক সুতাকাটার আর এক যন্ত্র আবিষ্কার করলেন। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল ক্রম্পটন নামক এক ব্যক্তি মিউল নামক আর এক যন্ত্র আবিষ্কার করে মিহি সুতা কাটার ব্যাপারে খুব সুবিধা করে দিলেন। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে কার্টরাইট পাওয়ার লুম আবিষ্কার করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত করে দিলেন। এই সমস্ত আবিষ্কারের ফলে একাধারে যেমন অধিক সুতাকাটা সম্ভব হল, অন্যদিকে অধিক উৎপাদনও সম্ভব হল।

(গ) ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে জেমস ওয়াট বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। এই ইঞ্জিনগুলি কয়লা দ্বারা চালিত হত। তাই কয়লার চাহিদা বেড়ে গেল। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিভেনসন এই ইঞ্জিনকে আরো উন্নত করলেন। কয়লার খনিতে যে সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটত তা নিবারণের জন্য হামফ্রি ডেভী ‘সেফটি ল্যাম্প আবিষ্কার করলেন। কয়লার প্রাচুর্যের সঙ্গে সঙ্গে লৌহ শিল্পেরও উন্নতি হল। আবিষ্কৃত হল ব্লাস্ট ফারনেস।

(ঘ) এর পরেই ডল্টা, ফ্যারাডে কর্তৃক আবিষ্কৃত হল বৈদ্যুতিক শক্তি এবং তার ফলে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের আবিষ্কার হয়।

(ঙ) আগে ইংল্যান্ডে ভালো রাস্তা ছিল না। এই সময়ে টেলফোর্ড ও ম্যাকাডম পাকা রাস্তা তৈরি করবার উপায় বের করলেন। ইঞ্জিনিয়ার জেমস ব্রিন্ডলি চমৎকার মাল খনন করবার উপায় বের করলেন।

(চ) তাছাড়াও মৃৎশিল্পের ব্যাপারে নূতন নূতন প্রণালী উদ্ভাবন হল। এইভাবেই নানা যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হওয়ায় এবং যাতায়াতের সুবিধা হওয়ায় শিল্প ও বাণিজ্য জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দিল।

3. শিল্প বিপ্লবের ফলাফলসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ কৃষি, বয়ন শিল্প, কয়লা শিল্প, যানবাহন, লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের ফলে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। পাওয়ার লুম, বাষ্পীয় পোত, নিরাপদ হাতি, রেলওয়ে, উড়োজাহাজ প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করল। 

রাজনৈতিক ফলঃ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে যন্ত্রচালিত কারখানাগুলিতে অল্প সময়ে অধিক বস্তু সস্তায় উৎপাদিত হতে লাগল। এক শ্রেণীর ইংরেজ বণিক বহির্দেশে সেই সকল পণ্য বিক্রয় করে লর্ড শ্রেণীভূত করে লর্ড সভায় নির্বাচিত হলেন। ফলে লর্ড সভায় অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়াও নুতন ধনী এক অভিজাত শ্রেণীর প্রভাব বিস্তৃত হল।

নূতন নূতন শিল্প নগরী গড়ে ওঠায় সাধারণ আইন সভায় প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন উঠল। ফলে হাউস অব কমন্সের নির্বাচন পদ্ধতিরও পরিবর্তন হল।

প্রথমদিকে সরকার কারখানার শ্রমিকদের সুখ-সুবিধার প্রতি নজর দিতেন না। শ্রমিকরা কম মজুরি পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে বাস করত। শ্রমিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করায় ১৮৩২, ১৮৬৭ এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার তিনটি আইন পাস করে শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিতে বাধ্য হন। এরই ফলস্বরূপ সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদের সৃষ্টি হয়। 

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব ক্রমশ সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, আজ পর্যন্তও তা বন্ধ হয়নি।

সামাজিক ফলঃ সামাজিক ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের ফলে ধনীরা অধিকতর ধনী হতে আরম্ভ করেন। পক্ষান্তরে কলকারখানা স্থাপনের জন্য দেশের কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই সকল শিল্পীরা দিনমজুরে পরিণত হয়। বৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিকার্য করার ফলে দুঃস্থ কৃষক শ্রেণীর বিলুপ্তি ঘটে এবং তারাও দিনমজুরি করে কোনমতে জীবনধারণে বাধ্য হয়। খনি মালিক, মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা বিনা পরিশ্রমে অধিক উপার্জন করতে লাগলেন, কিন্তু দিনমজুরদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে।

অর্থনৈতিক ফলঃ কুটির শিল্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গ্রাম্য স্বাধীন শিল্প এবং দুঃস্থ চাষিরা গ্রাম ছেড়ে কলকারখানায় শ্রমিকের চাকুরি গ্রহণ করায় গ্রামগুলি জনশূন্য হয়ে নূতন নূতন শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। ধনী শ্রেণীর লোকেরা বড় বড় কৃষি ফার্ম খুলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ করায় অল্প খরচে অধিক শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেল। কলকারখানায়ও সস্তায় জিনিস উৎপাদিত হওয়ায় ইংরেজরা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পেল। ফলে বহির্বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং ইংল্যান্ডের আরও বৃদ্ধি পায়।

উপসংহারঃ উপসংহারে একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, হস্তচালিত কুটির শিল্পের পরিবর্তে যন্ত্র শিল্পের প্রবর্তন শিল্প বিপ্লবের অন্যতম অবদান। পৃথিবীর বর্তমান শ্রমিক আন্দোলনের সূচনাও এই যুগের আর এক বৈশিষ্ট্য।

4. ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। সেজন্য ইংল্যান্ডকে শিল্প বিপ্লবের জন্মস্থান বলা হয়। শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রসারের জন্য কিছু সুবিধা থাকা দরকার। ইংল্যান্ডে সে সুবিধা থাকায় সেখানেই প্রথম সে বিপ্লব শুরু হয়।

(ক) অর্থনৈতিক দিক থেকে যেসব দেশ অগ্রসর নয় অর্থাৎ যেসব দেশের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভালো নয় সেসব দেশে বড় বড় কারখানা গড়ে উঠতে পারে না। এরূপ কারখানার জন্য যথেষ্ট ধন বিনিয়োগ করতে হয়। সেজন্য ধনী দেশগুলোতেই সহজে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ইংল্যান্ড একটি ধনী দেশ। সেখানে অনেক পুঁজিপতিও রয়েছেন। এই পুঁজিপতিরা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ধন বিনিয়োগ করতে পারতেন। ধনের অভাবে সেজন্য সেখানে এগুলো বন্ধ করতে হয়নি।

(খ) শিল্পের প্রসারের ক্ষেত্রে খনিজ পদার্থের অবদান যথেষ্ট। অর্থাৎ যেসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে খনিজ পদার্থ, যেমন-লোহা, কয়লা প্রভৃতি পাওয়া যায় সেখানে কল-কারখানা স্থাপন করা সহজসাধ্য হয়। এগুলোর জন্য যাবতীয় খনিজ পদার্থের অভাব ইংল্যান্ডে নেই। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে লোহা, কয়লা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এজন্য ইংল্যান্ডে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান সহজে গড়ে উঠতে পেরেছে।

(গ) ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ব্যক্তিগত ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে, উৎপাদন বাড়ানোর নীতিকে ইংল্যান্ডে উৎসাহ দেওয়া হয়। এর ফলে পুঁজিপতিরা অধিক লাভের আশায় বড় বড় শিল্পানুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যবস্থার ফলে সেখানে শিল্প-বাণিজ্যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল।

(ঘ) বড় বড় কল-কারখানাকে টিকে থাকতে হলে উপযুক্ত বাজারের দরকার। অর্থাৎ এইগুলো যেসব সামগ্রী তৈরি করবে সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারের দরকার হয়। বিক্রির জন্যই কেবল উৎপাদন বাড়ানো হয়। নিজ দেশে গ্রাহকের অভাব হলে বিদেশের বাজারে এগুলো বিক্রি করতে হয়। ইংল্যান্ডের এই সুবিধা আছে। এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে ইংরাজদের উপনিবেশ ছিল। এর ফলে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন সামগ্রী এই উপনিবেশগুলিতে বিক্রি করা গিয়েছিল। এছাড়া উপনিবেশগুলোতে শিল্পানুষ্ঠান। গড়ে না ওঠায় সেখান থেকে কাঁচামাল এনে ইংল্যান্ডের কারখানাগুলো চালানো সম্ভব হয়েছিল।

(ঙ) ইংল্যান্ডের মানুষ উদ্যমী, বেপরোয়া ও সাহসী। তাঁরা ব্যবসা- বাণিজ্যের জন্য পৃথিবীর যে-কোন স্থানে গিয়ে সেসব অঞ্চলের অভাব- অভিযোগের সুযোগ নিয়ে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন সামগ্রী বিক্রি করে কাঁচামাল সংগ্রহ করতেন। ইংল্যান্ডে নানা রকমের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও হয়েছিল। এই আবিষ্কারও শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতিতেই যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল।

(চ) ইংল্যান্ডের জলবায়ু শিল্পের পক্ষে অনুকূল। এর জলবায়ু অতি উষ্ণও নয়, অতি শীতলও নয়। এরূপ জলবায়ুতে সহজে শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠতে পারে। এজন্য ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। উপরোক্ত কারণ ও অন্যান্য নানা কারণের জন্যই ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়েছিল।

5. ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলাফল কি ছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের সূদুরপ্রসারী ফলাফল পরিলক্ষিত হয়ঃ

(ক) শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে প্রাচীন কুটির শিল্পের পরিবর্তে আধুনিক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। কম সময়ে ও কম খরচে অনেক জিনিস তৈরি করা সম্ভব হয়। অতিরিক্ত জিনিসগুলো বিক্রি করার জন্য বিদেশের বাজারের দরকার হয়। ফলে ইংল্যান্ডই বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়। আর উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলেই ইংল্যান্ডের পক্ষে নেপোলিয়নের মতো যোদ্ধাকে পরাজিত করা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবই নেপোলিয়নের পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ বলা হয়ে থাকে।

(খ) শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে বেকার সমস্যা দেখা দেয়। ইতিপুর্বে যেসব কাজ কায়িক শ্রমের দ্বারা করানো হত এখন সেগুলো যন্ত্রের সাহায্যে করা হচ্ছে। যন্ত্রপাতির অধিক ব্যবহারের ফলেও সমাজে বেকার সমস্যা বেড়ে যায়। 

(গ) নতুন নতুন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এগুলোকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন শহরের জন্ম হয়। গ্রামাঞ্চলের লোক কাজের খোঁজে শহরে আসতে বাধ্য হন। ফলে মানুষ শহরমুখী হয়ে পড়েন। এর ফলে শহরে লোকসংখ্যা বেড়ে যায়। 

(ঘ) নানা রকমের কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এগুলোর মালিক দিন দিন ধনী হতে থাকে; অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবের ফলে এক শ্রেণীর লোক ধনাঢ্য হয়। কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হয় না। ফলে সমাজে শ্রেণীবিভাজনের সৃষ্টি হয়। এই শ্রেণীবিভাজনের ফলেই ভিন্নমুখী রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়। ধনীরা চায় পুঁজিবাদ এবং শ্রমিকরা চায় অর্থনৈতিক সমতা ও সমাজবাদ।

(ঙ) শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিকল্পে তখন সৃষ্টি হয় শ্রমিক সংগঠন-এর। এরূপ সংগঠন বা সঙ্ঘ শ্রমিকদের উন্নতির জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এঁদের স্বার্থরক্ষার জন্যই ইংল্যান্ডে শ্রমিক দল (Labour Party)-এর সৃষ্টি হয়। ফলে সরকারকে সংস্কারমূলক বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য করা হয়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যুদ্ধে ব্রিটেনের জড়িত থাকা ব্রিটিশ শিল্পের উপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল? 

উত্তরঃ ফরাসী বিপ্লবের প্রভাব ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের উপরও পড়েছিল এবং শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিবাদ। কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার প্রতিবাদ দমনের আইন প্রণয়ন করে। এদিকে আবার ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং এর ফলে—

(ক) ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।

(খ) কল-কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। 

(গ) বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। 

(ঘ) শ্রমিকরা কাজ অর্থাৎ উপার্জনের পথ হারায়। এবং 

(ঙ) নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় ইত্যাদি।

এইভাবে ১৭৯৩–১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইঙ্গ-ফ্রান্স যুদ্ধের ফলে ইংল্যান্ডের উদ্যোগ ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। 

2. রেল ও খাল পরিবহণের আপেক্ষিক সুবিধাসমূহ কি কি ছিল? 

উত্তরঃ খালপথে প্রশস্ত ও ভারী দ্রব্যসামগ্রী পরিবহণ করা সুবিধাজনক। কিন্তু খালপথে পরিবহণ সময়সাপেক্ষ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যেতে পারা যায় না।

অন্যদিকে রেল পরিবহণে স্বল্প সময়ে ভারী এবং প্রশস্ত দ্রব্যসামগ্রী বহন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। 

3. কাঁচামালের যোগান কিভাবে ব্রিটিশ শিল্পায়নের প্রকৃতি প্রভাবিত করেছিল নির্দেশ কর।

উত্তরঃ প্রথমাবস্থায় ব্রিটিশরা উল বা পশম দ্বারা কাপড় তৈরি করত। সপ্তদশ শতক হতে ব্রিটেন ভারত হতে কার্পাস আমদানি আরম্ভ করে। পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেই সময় হতে ব্রিটেন ভারত হতে কাঁচা কার্পাস তুলা ও কাপড় আমদানি করতে থাকে। এই কাঁচা কার্পাস হতে সূতা তৈরি ও কাপড় বোনা আরম্ভ হয়। 

অষ্টাদশ শতকের প্রথম বছরগুলিতে কাপড় বোনার প্রক্রিয়া মন্থরগতিতে চলতে থাকে। যার জন্য সুতা কাটায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকত কিন্তু কাপড় তৈরিতে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সূতা পেতে দীর্ঘসময় অলসভাবে অতিবাহিত করত। কিন্তু এইক্ষেত্রে নানাপ্রকার যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে দ্রুতগতিতে তুলা হতে সুতা কাটা এবং কাপড় বোনা আরম্ভ হয়।। এই প্রক্রিয়া অধিকতর সুদক্ষ করে তুলবার জন্য কাপড় উৎপাদন প্রক্রিয়া গৃহ হতে ফ্যাক্টরিতে চলে যায়।

4. শিল্পায়নের যুগে বিভিন্ন আবিষ্কারসমূহের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ছিল?

উত্তরঃ এই যুগের অধিকাংশ আবিষ্কারের আবিষ্কারক হলেন বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানহীন কিছু লোক। তারা তাদের সংকল্প, কৌতূহল, স্বার্থ এমনকী ভাগ্যের উপর ভিত্তি করে এই সকল আবিষ্কার করেছিলেন।

(ক) উড়ন্ত মাকুর আবিষ্কারক জন কেই এবং স্পিনিং জেনির প্রস্তুতকর্তা জেমস্ হারপ্রীভস-এর কাপড় বোনা ও কাঠমিস্ত্রির অভিজ্ঞতা ছিল। 

(খ) ওয়াটার ফ্রেম-এর আবিষ্কারক রিচার্ড আর্করাইট একজন নাপিত ও পরচুল প্রস্তুতকারক ছিলেন।

(গ) সুতা কাটার যন্ত্রের আবিষ্কারক স্যামুয়েল ক্রম্পটন প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ছিলেন না। 

(ঘ) যন্ত্রচালিত তাঁতের আবিষ্কারক এডমন্ড কার্টরাইট-এর যান্ত্রিক অভিজ্ঞতা খুবই কম ছিল।

(ঙ) স্টীম ইঞ্জিনের নমুনা তৈরির কর্তা টমাস সেভারি একজন সামরিক বিষয়া লোক ছিলেন। 

(চ) টমাস নিউকোমেন যিনি স্টীম ইঞ্জিনের অন্য একটি নমুনা তৈরি করেছিলেন তিনি একজন কামার ছিলেন।

(ছ) রাস্তা নির্মাতা জন মেটকাফ একজন অন্ধ ব্যক্তি ছিলেন।

(জ) খাল নির্মাতা জেমস ব্রিন্ডলে ছিলেন প্রায় অশিক্ষিত। কিন্তু তাঁর স্মরণশক্তি ছিল প্রচণ্ড।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. শিল্প বিপ্লবের দরুন বিভিন্ন শ্রেণীর ব্রিটিশ মহিলাগণের জীবনযাত্রা কিভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

উত্তরঃ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্রিটিশ মহিলাদের জীবনযাত্রা শিল্প বিপ্লব দ্বারা নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

(ক) দরিদ্রশ্রেণীর মহিলাগণ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে আরম্ভ করে। তাদের স্বল্প মজুরিতে দিনে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়। ফ্যাক্টরিগুলির পরিবেশ দূষিত ও বিপজ্জনক ছিল। তা মহিলাদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। অধিকাংশ শিশুই রোগগ্রস্ত অবস্থায় জন্মে এবং জন্মের সঙ্গে সঙ্গে অথবা পাঁচ বছরের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে।

(খ) শিল্প বিপ্লব মধ্যবিত্ত মহিলা এবং ধনীক শ্রেণীর মহিলার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা প্রমাণিত করে। সর্বাধুনিক পণ্যসামগ্রী ও খাদ্যবস্তু তাদের হস্তগত হয়। পরিবহণ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার আবিষ্কারের ফলে তাদের  জীবনযাত্রা প্রণালী পরিবর্তিত হতে থাকে। তাদের জীবনযাত্রার মানদণ্ড দিন দিন। বৃদ্ধি পেতে থাকে।

6. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেল পরিবহণ প্রবর্তনের ফলাফলসমূহ তুলনা কর।

উত্তরঃ রেল প্রবর্তনের ফলাফল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার পরিলক্ষিত হয়। সাম্রাজ্যবাদী ও শিল্পোন্নত দেশগুলি রেল প্রবর্তনে নানাভাবে উপকৃত হয়েছিল। তারা তাদের উপনিবেশিক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সহজতর হয়। ফলে তাদের শিল্পোদ্যোগ প্রসার লাভ করে। অন্যদিকে উপনিবেশিক দেশে শিল্পোদ্যোগ ধ্বংস হয়ে যায় এবং তারা তীব্র দরিদ্রের সম্মুখীন হয়। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ দাস ব্যবস্থার শিকার হয়।

We Hope the given একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন ও উত্তর will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top