Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা, AHSEC Class 11 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা Solutions are free to use and easily accessible.
Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই PDF, Assam Board Class 11 Political Science Question in Bengali The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 1st Year Political Science Notes in Bengali, Class 11 All Books PDF File Download in Bengali Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 11 Political Science Solution in Bengali, HS 1st Political Science Suggestion in Bengali, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান Question answer in Bengali, The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. NCERT Class 11 Political Science Solution, will be able to solve all the doubts of the students. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর, Class XI Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 11 Political Science Textbooks Solution. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2023 Assam AHSEC Class 11 Political Science Suggestion are present on Roy Library’s website in a systematic order.
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কী ভাবে নিয়োগ করা হয়? তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবল আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন হিসাবে নিয়োগ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। তাঁর উপর ভারতের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) মন্ত্রী পরিষদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রীগণকে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পছন্দ অনুসারে মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। আবার প্রয়োজনবোধে মন্ত্রীদের দপ্তর রদবদলও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কোন মন্ত্রীকে মন্ত্রীপরিষদ হতে বাদ দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন মন্ত্রীর মতানৈক্য হলে সেই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মন্ত্রী পরিষদের পতন ঘটে। প্রধান মন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী ও তাঁদের মন্ত্রালয়ের কার্যাবলীর সমন্বয় রক্ষা করেন।
(খ) প্রধান পরামর্শ দাতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শ দাতা। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। তিনি শাসন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করান এবং সেই সকল বিষয়ের তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করেন।
(গ) সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা। তিনি তাঁর মন্ত্রীপরিষদ ও সংসদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। সংসদে তিনি তাঁর দল বা জোটের নীতিকে সমর্থন করেন এবং বিরোধী পক্ষের সকল সমালোচনার জবাব দেন। দেশের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ।
(ঘ) বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাঃ প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক নীতি গ্রহণ ও পরিচালনা করেন। অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(ঙ) জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী জাতি তথা সমগ্র দেশের নেতা। তিনি দেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। তিনি হলেন ভারত, সরকারের মুখপাত্র স্বরূপ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ভারতের বক্তব্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অপরিসীম। ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যত ক্ষমতা প্রদান করেছে তা বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদ প্রয়োগ করেন। শাসনতান্ত্রিক সকল বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদার সম্মান রক্ষা করতে পারেন।
প্রশ্ন ২। ভারতের রাষ্ট্রপতির নিজস্ব বিবেচনাধীন ক্ষমতার আলোচনা করো?
উত্তরঃ সাংবিধানিক মতানুযায়ী রাষ্ট্রপতির সংসদের সকল কার্যবিবরণীর তথ্য জানার অধিকার আছে। রাষ্ট্রপতি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শাসনতান্ত্রিক সকল বিষয় রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বাধ্য থাকেন। রাষ্ট্রপতি প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে দেশের বিতর্কিত বিষয়ে তাঁর মতামত জানান।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত তিনটি পরিস্থিতিতে তাঁর নিজস্ব বিবেচনাধীন (স্বেচ্ছাধীন) ক্ষমতা প্রযোগ করেনঃ
(ক) কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হলে বা তা তার নিকট দেশের স্বার্থবিরোধী মনে হলে তিনি তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
(খ) সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত কোন বিল (অর্থবিল বা Money Bill বাতীত) রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন বা ভেটো (Veto) প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিলে সম্মতি নাও দিতে পারেন।
প্রশ্ন ৩। মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্ব বলতে তুমি কী বোঝ?
অথবা,
মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বের ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ ভারতেও মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য যৌথভাবে আইনসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এর অর্থ হল মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্যগণকে সমগ্র পরিবন কর্তৃত গৃহীত নীতি ও কার্যসূচী সমর্থন করতে হবে। আইনসভার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মন্ত্রীপরিষদ যৌথভাবে কার্য পরিচালনা করবে। তাঁরা তাদের কার্যের জন্য লোকসভার নিকট যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকবে। কোন মন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত বিল যদি লোকসভায় অনুমোদিত না হয় তাহলে যৌথভাবে মন্ত্রীপরিষদের পরাজয় হয়েছে বলে ধরা হয়। তাঁরা সকলেই একই নৌকার যাত্রী। প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাঁদের কর্ণধার। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে সম্পূর্ণ মন্ত্রীপরিষদই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সুতরাং ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ যৌথভাবে লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ।
প্রশ্ন ৪। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যকরী আলোচনা করে?
উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ কার্যপালিকার মতো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদ আছে।
গঠনঃ ভারতীয় সংবিধানের ৭৫নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। পধানমন্ত্রী নারীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। সংসদের সদস্য নন এইরূপ ব্যক্তিও মন্ত্রী হতে পারেন। তবে তাকে ছয়মাসের সময়সীমার মধ্যে সংসদের যে কোন কক্ষের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হতে হবে।
মন্ত্রীসভার নির্দিষ্ট কোন কার্যকাল নেই। লোকসভার আস্থার উপর মন্ত্রীপরিষদের কার্যকাল নির্ভর করে।
সংবিধানে মন্ত্রীপরিষদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় নি। সাধারণত মন্ত্রীপরিবে তিন ধরনের মন্ত্রী আমরা দেখতে পাই। এগুলো হল- পূর্ণ মন্ত্রী, রাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ ভারতের শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে পর্যালোচনা করা হলঃ
(ক) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ প্রকৃত অর্থে ভারতের শাসন কার্য পরিচালনা করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে। দেশের শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি গুলো মন্ত্রীপরিষদ নির্ণয় করে জাতীয় কর্মসূচিগুলো তৈরি করে। বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ যোগসূত্ৰ স্থাপন করে এবং বিভাগগুলোর কাজের তদারকী করে।
(খ) আইন বিষয়ক ক্ষমতাঃ দেশের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে মন্ত্রীপরিষদ প্রয়োজনীয় আইন প্রণযনের ব্যবস্থা করে। সকল সরকারি বিল মন্ত্রীগণ সংসদে উত্থাপন করেন।
(গ) অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ আর্থিক বৎসরের প্রারম্ভে মন্ত্রীপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট কেন্দ্রীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। সাধারণত অর্থমন্ত্রী সংসদে এই বাজেট উত্থাপন করেন। মন্ত্রীপরিষদ কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রকার আয় ব্যয় নির্ধারণ, করধার্য ও বিলোপ প্রভৃতি বিষয় স্থির করে থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের অনুমোদন ক্রমে অধ্যাদেশ জারি করেন।
(ঘ) অন্যান্য ক্ষমতাঃ উপরে বর্ণিত ক্ষমতা ও কার্যাবলী ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য আরও ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে এবং সেই গৃহীত নীতির প্রকৃত বাস্তবায়নে মন্ত্রী পরিষদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তাছাড়া সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে মন্ত্রী পরিষদের সুপারিশ ক্রমেই রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে থাকেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদই ভারতের শাসন ব্যবস্থার প্রকৃত নির্ণায়ক।
প্রশ্ন ৫। ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নিয়মতান্ত্রিক কার্যপালিকা হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি ভারতের রাষ্ট্র প্রধান। তিনি মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করেন।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ নিম্নে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হল-
(ক) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ ভারতের শাসন কার্য রাষ্ট্রপতির নামেই পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাজ্যের রাজ্যপাল এবং ভারতের সকল উচ্চ পদস্থ কর্মচারীবৃন্দকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ করেন এবং বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-chief)।
(খ) আইন বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় সংসদ রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন। প্রয়োজনবোধে তিনি সংসদের অধিবেশন স্থগিত রাখতে পারেন এবং লোকসভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। নতুন বৎসরের শুরুতে তিনি সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দান করেন এবং সংসদে বাণী প্রেরণ করেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত প্রস্তাব আইনে পরিণত হয়। তিনি সংসদের অধিবেশন স্থগিত কালে জরুরি প্রয়োজনে ‘অধ্যাদেশ’ (Ordinance) জারী করতে পারেন। এতদ্ব্যতীত তিনি রাজ্যসভায় ১২ জন সদস্য ও লোকসভায় যদি ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্য নির্বাচিত না হয় তবে সেই সম্প্রদায় হতে দুজন সদস্য মনোনীত করেন।
(গ) অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতির অর্থসংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। লোকসভায় অর্থবিল (Money Bill উত্থাপন করার সময় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংসদে কোন বায় মঞ্জুরীর প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া উত্থাপন করা যায় না। তিনি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর একটি অর্থ কমিশন গঠন করেন। ভারতের সম্মিলিত তহবিল এবং আকস্মিক বায় তহবিল রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকে।
(ঘ) বিচার বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি ভারতের সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে নিয়োগ করেন। তিনি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং গুরুতর শাস্তিকে লঘুতরও করতে পারেন।
(ঙ) জরুরি বিষয়ক ক্ষমতাঃ ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রদান করেছে। রাষ্ট্রপতি তিনটি বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা হলে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এই ধরনের জরুরি অবস্থাকে জাতীয় জরুরি অবস্থা আখ্যা দেওয়া হয়। তিনি রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তাছাড়া দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলেও তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি সংসদীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর উপরোক্ত ক্ষমতাসমূহ প্রকৃত অর্থে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ উপভোগ করে।
প্রশ্ন ৬। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা আঁতাতের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রী পরিষদ গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কোন ভূমিকা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করতে পারেন। লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর আস্থা থাকার দরুন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারেন না।
রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হন। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজ বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। প্রথমতঃ রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য আইন সভা কর্তৃক প্রেরিত বিল রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যদি কোন কারণে মন্ত্রীসভা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে মন্ত্রীসভ গঠন হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধানকারী সরকারকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি মেয়াদের পূর্বে লোকসভা ভঙ্গ করতে বাধ্য নন, বরং তিনি লোকসভা ভঙ্গ না করে নূতন মন্ত্রীসভা গঠন করার চেষ্টা করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সংযোগ, রক্ষা করেন। বিশেষ কয়েকটি সুযোগের উদ্ভব ব্যতীত প্রায় সকল ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শক্রমেই শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়।
প্রশ্ন ৭। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ ও সংসদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্ক ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার মতো ভারতেও মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের সংসদের যে কোনো এক কক্ষের সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীপরিষদ সংসদের একটি কমিটি বিশেষ। সংসদের সদস্য হিসাবে মন্ত্রীগণ সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন এবং সংসদে দলীয় সমর্থনের সহায়তায় প্রস্তাবকে আইনে পরিণত করতে পারেন। মন্ত্রীগণ যে কক্ষের সদস্য কেবল সেই কক্ষেই ভোট দিতে পারেন।
ব্রিটিশ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার মতো ভারতেও মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য যৌথভাবে সংসদের নিম্নকক্ষের (লোকসভার) নিকট দায়বন্ধ। মন্ত্রী পরিষদের কার্যকাল সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার আস্থার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং মন্ত্রী পরিষনে লোকসভায় ভাল অবস্থান থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৮। রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলী ও সাংবিধানিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৫৩নং অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের উল্লেখ আছে। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সংবিধানের ১৫৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন।
সংবিধানের ১৫৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপাল পদপ্রার্থীর জন্য কতকগুলি যোগ্যতা নির্ধারিত করা হয়েছে।
এগুলো হল-
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।
(গ) তিনি কেন্দ্রীয় সংসদ বা রাজ্য বিধানসভার সদস্য হতে পারবেন না।
রাজ্যপালকে সাধারণত ৫ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর স্বপদে বহাল থাকেন।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ সংবিধানে রাজ্যপালের প্রচুর ক্ষমতা উল্লেখ আছে। অবশ্য তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) শাসন-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যের শাসন ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে নাস্ত করা হয়েছে। তাঁর নামেই রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন পদস্থের সরকারি কর্মচারীদের নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও উপাচার্যদের নিযুক্ত করেন।
(খ) আইন-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপাল রাজ্যের আইনসভার অঙ্গ। তিনি আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে ও স্থগিত রাখতে পারেন। রাজ্য আইন সভা কর্তৃক গৃহীত বিল তাঁর সম্মতি লাভে আইনে পরিণত হয়। তিনি আইনসভায় গৃহীত বিলে সম্মতি দিতে পারেন বা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য আইনসভায় ফেরত পাঠাতে পারেন। অনেক সময় রাজ্যপাল আইনসভায় গৃহীত বিলে সম্মতি প্রকাশ না করে বিলটিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তাঁর নিকট প্রেরণ করতে পারেন। আইনসভার অধিবেশন না – চলাকালীন সময়ে রাজ্যপাল অধ্যাদেশ (Ordinance) প্রণয়ন করতে পারেন। উক্ত আইন রাজ্য আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত না হলে আইনসভার অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার ছয় সপ্তাহের পর বলবৎ থাকতে পারে না।
(গ) অর্থ-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপালের অনুমোদন ব্যতীত কোন তহবিল সংক্রান্ত বিল বিধানসভায় উত্থাপিত হয় না। প্রত্যেক অর্থ বর্ষের প্রারম্ভে রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভায় বাজেট উত্থাপন করেন। রাজ্যের আকস্মিক ব্যয় তহবিল রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে।
(ঘ) বিচার-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপালের কিছু বিচার-বিষয়ক ক্ষমতা আছে। তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে দণ্ডিত ব্যক্তিকে মার্জনা করতে পারেন। তিনি গুরুতর শাস্তিকে লঘুতর করতে পারেন।
(ঙ) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান রাজাপালকে কিন্তু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান করেছে। তিনি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ ছাড়াই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান। সাধারণ অবস্থার মন্ত্রী পরিষদই সর্বেসর্বা। রাজ্যপালের সকল ক্ষমতা রাজ্যিক মন্ত্রীপরিষদই বাস্তবে প্রয়োগ করেন।
(চ) রাজ্য শাসনে রাজ্যপালের ভূমিকাঃ রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক-প্রধান। বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদই রাজ্যপালের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদের বিধান সভায় শক্তিশালী অবস্থান থাকলে রাজ্যপাল নিজে কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সময় তিনি আর নিয়মতান্ত্রিক শাসক- প্রধান থাকেন না। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বহাল থাকাকালীন রাজ্যপাল প্রকৃত শাসকের ভূমিকা পালন করেন। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল মন্ত্রীপরিষদকে পরামর্শ দিতে পারেন। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রির শাসক-প্রধান। কিন্তু রাজ্যের বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থাৎ সাংবিধানিক সংকটকালে বা রাষ্ট্রপতি শাসনকালে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসকের ভূমিকা পালন করেন।
প্রশ্ন ৯। রাজ্যের শাসন-ব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো?
অথবা,
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা, কার্যাবলী ও ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক-প্রধান। সংবিধানের ২৬৩নং ধারায় মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ আছে।
সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজাপাল নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। সাধারণত বিধানসভার কার্যকালই মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকাল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকাল বিধানসভার আস্থার উপর নির্ভরশীল।
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রীপরিষদঃ মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যপাল অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। প্রয়োজনবে মন্ত্রীদের দপ্তরেরও রদবদল করেন। তিনি বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করেন এবং বিভাগীয় দপ্তরগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে রাজ্যপাল যে কোনো মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
(খ) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালঃ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শ দাতা। তিনি রাজাপাল ও মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রী পরিষদেরে সভায় গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে অবহিত করেন।
(গ) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য আইনসভাঃ আইনসভার সঙ্গে মুধ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আইনসভার সংখ্যা গরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্ৰী আইনসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজ্য আইনসভায় তিনি সরকারের নীতি সমর্থন করেন এবং বিরোধী দলগুলোর সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
(ঘ) দলীয় নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীঃ মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দলীয় নীতিকে অনুসরণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁর উৎকর্ষ শাসনকার্যের জন্য দলের সুনাম বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যপালের উল্লেখিত সকল ক্ষমতাই বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োগ করে থাকেন। তিনি রাজ্যের প্রকৃত শাসক প্রধান।
প্রশ্ন ১০। ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরিকালীন ক্ষমতাসমূহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে আপৎকালীন ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রপতির হাতে তিন প্রকার জরুরিকালীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হলো –
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা (National Emergency): সংবিধানের ৩৫২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে যুদ্ধ, বহির্শত্রুর আক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বিদ্ৰোহ ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতির যদি মনে হয় যে এমন গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে ভারত বা ভারতের অংশ বিশেষের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তাহলে তিনি সমগ্র ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে যুদ্ধ, বহির্শত্রুর আক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ গোলযোগ ঘটার আগেই রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন যদি তাঁর মনে হয় যে এরূপ বিপন আসন্ন।
১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংশোধনী আইন অনুসারে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের লিখিত প্রস্তাবের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রপতি এই প্রকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন না। ভারতে আজ পর্যন্ত তিনবার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করার সময় এবং ১৯৭৫ সালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য এধরনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়। এই ঘোষণার ফলে ১৯নং অনুচ্ছেদের স্বাধীনতার অধিকারসমূহ স্থগিত বা ক্ষুণ্ণ হতে পারে [৩৫৮ নং অনুচ্ছেদ ] এবং সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকারটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হতে পারে [৩৫৯ (১) অনুচ্ছেদ]
(খ) রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা (Emergency due to Failure of constitutional Machinery in a state): সংবিধানের ৩৫৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে যে কোনো কারণে রাজ্যের রাজ্যপালের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে বা অন্য কোনোভাবে রাষ্ট্রপতির যদি এরূপ ধারণা হয় যে সেই রাজ্যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য শাসনতন্ত্র অনুযায়ী সে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় তাহলে তিনি সেই মর্মে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হয়। রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।১৯৫১ সালে পাঞ্জাবে প্রথম এধরনের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থ জারি করা হয়েছিল।
৩৫৬নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা নিজের হাতে তুলে নেন অথবা রাজ্যপাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তে ন্যস্ত করেন। রাষ্ট্রপতি বিধানসভা ভঙ্গ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। সাময়িককালের জন্য বিধানসভার কাজ ও ক্ষমতা স্বগিত রেখে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অস্থিরতা কাটার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন যাতে বিকল্প একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।
(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা (Financial Emergency ): সংবিধানের ৩৬০নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির যদি এরূপ ধারণা হয় যে ভারত বা ভারতের কোন অংশে আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিপন্ন হয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি এই মর্মে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। দু’মাসের মধ্যে এই ঘোষণা সংসদের উভয় কক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। নচেৎ দু’মাস পর এই ঘোষণা অকার্যকর হয়ে পড়বে। আজ পর্যন্ত আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি।
আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলোর অর্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমস্ত কর্মচারির বা তার কোনো বিশেষ অংশের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রকার জরুরিকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা সাময়িকভাবে হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। একটি সংসদীয় শাসন বিভাগের অর্থ হলঃ
(ক) যেখানে সংসদ আছে, সেখানের শাসন বিভাগ।
(খ) সংসদ দ্বারা নির্বাচিত শাসন বিভাগ।
(গ) যেখানে সংসদ শাসন বিভাগ হিসাবে কাজ করে।
(ঘ) শাসন বিভাগ যা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের উপর নির্ভর করে।
উত্তরঃ (ঘ) শাসন বিভাগ যা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন ২। কথোপকথনটি পড়। কোনটির সাথে তুমি একমত এবং কেন?
অমিত – সাংবিধানিক নীতির দিকে দেখ, মনে হবে রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র রাধার ষ্ট্যাম্প (rubber stamp)।
শ্যামা – রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। সুতরাং তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ ও করতে পারেন।
রাজেশ – আমাদের একজন রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের পর সংসদ একজন নেতাকে প্রধানমন্ত্রী রূপে নির্বাচিত করে নিতে পারে।
উত্তরঃ আমরা অমিতের মতের সঙ্গে একমত। ভারতের রাষ্ট্রপতি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। সংসদীয় সরকারের প্রধান বিশেষত্ব হল রাষ্ট্রপ্রধান সাংবিধানিক প্রধান। প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকে। সুতরাং অমিতের মত সঠিক।
প্রশ্ন ৩। নীচের খবরগুলো যে প্রকাশ করে, সেই মন্ত্রকটি চিহ্নিত কর। এটি কি একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক হবে না রাজ্য মন্ত্রক হবে? কেন?
(ক) একটি সরকারি (Official) বিজ্ঞপ্তি বলেছে যে ২০০৪-০৫ সালে তামিলনাডু পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনী অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণীর জন্য নতুন অনুবাদ প্রকাশ করবে।
(খ) আকরিক লোহা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য করার জন্য নতূন রেল লাইন চালু করা হবে জনাকীর্ন তিরুভাল্লুর চেন্নাই পথকে পাশ কাটিয়ে। নতুন লাইনটি আনুমিনিক ৮০ কিলোমিটার লম্বা হবে, পুত্তুরে শাখা থাকবে, এরপর পোর্ট এর কাছে আমি পাণ্ডুতে পৌঁছব।
(গ) তিন সদস্য বিশিষ্ট উপবিভাগীয় সমিতি গঠন করা হয়েছে। রামায়াপেট এ চাষীদের আত্মহত্যার তদন্ত করার জন্য। সেখানে দুজন চাষী আত্মহত্যা করেছে এমাসে, যাদের শস্যের অভাবের জন্য অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল।
উত্তরঃ (ক) তামিলনাডু রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রক।
(খ) কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রক। রেল কেন্দ্রীয় তালিকাভূক্ত বিষয়।
(গ) রাজ্যসরকারের কৃষিমন্ত্রক।
প্রশ্ন ৫। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার সময় রাষ্ট্রপতি পছন্দ করেন –
(ক) লোকসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতাকে।
(খ) জোট এর বড় দলের নেতাকে যার লোকসভায় গরিষ্ঠতা আছে।
(গ) রাজ্যসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতাকে।
(ঘ) জোট বা দলের নেতা যার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে।
উত্তরঃ (ঘ) জোট বা দলের নেতা যার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে।
প্রশ্ন ৬। আলোচনাটি পড় এবং বলো এরমধ্যে কোনটি প্রায় সমস্ত ভারতে প্রয়োগ করা হয়?
অলোকঃ প্রধানমন্ত্রী একজন রাজার মত। তিনি আমাদের দেশের সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেন।
শেখরঃ প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র সমপর্যায়ভূক্ত ব্যক্তিদের মধ্য অগ্রগণ্য (first among equals)। তাঁর কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। সকল মন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রীর একই ক্ষমতা।
ববিঃ প্রধানমন্ত্রীকে দলের সদস্যদের আশা আকাঙ্খা এবং সরকারের সমর্থকদের ইচ্ছার দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। কিন্তু মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের প্রাধান্য থাকে?
উত্তরঃ ববির বিবৃতিটি ভারতের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য।
প্রশ্ন ৭। তুমি কেন মনে করো রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য? একশ শব্দের মধ্যে তোমার উত্তর দাও?
উত্তরঃ ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। এই ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাই প্রকৃত শাসক। রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি দেশের মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পরামর্শ ব্যতীত তিনি কোনো কাজই করতে পারেন না। তাছাড়া সংবিধানের ৪২- তম সংশোধনী আইন
অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আইনগতভাবে মন্ত্রীসভার পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য।
প্রশ্ন ৮। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা আইন বিভাগকে অনেক ক্ষমতা অর্পণ করেছে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তুমি কেন মনে করো, শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা এত জরুরি?
উত্তরঃ সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। মন্ত্রীসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য। মন্ত্রীপরিষদ আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের আস্থার উপর স্ব-পদে-বহাল থাকে।
সংসদ নিম্নোক্ত উপায়ে মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেঃ
(ক) মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য সংসদের নিকট দায়বদ্ধ।
(খ) সংসদ আলোচনা বিতর্ক, প্রশ্ন ইত্যাদির মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(গ) সংসদে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
(ঘ) লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রশ্ন ৯। এটা বলা হয় যে আমলাতন্ত্রের উপর রাজনৈতিক প্রভাব খুব বেশি। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে অনেকটি স্বশাসিত সংস্থা থাকা উচিত, যারা মন্ত্রীদের কাছে উত্তর দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে না।
(ক) তুমি কি মনে করো এতে প্রশাসন অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে?
(খ) তুমি কি মনে করো এতে প্রশাসন অনেক বেশি দক্ষ হবে?
(গ) গণতন্ত্রের অর্থ হল প্রশাসনের উপর নির্বাচিত প্রতিনিধির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
উত্তরঃ (খ) স্বশাসিত সংস্থা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন অনেক বেশি দক্ষ হবে।
প্রশ্ন ১০। নিয়োগীকৃত প্রশাসনের বদলে নির্বাচিত প্রশাসন এর প্রস্তাব সম্পর্কে একটি রচনা লেখো?
উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মনোনীত বা নিয়োগকৃত প্রশাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। মনোনীত প্রশাসন ব্যবস্থা শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। মনোনীত প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে। নির্বাচিত প্রশাসন ব্যবস্থা পক্ষপাতমূলক হতে বাধ্য। কারণ তারা নির্বাচকদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। তাছাড়া নির্বাচিত প্রশাসন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল। নির্বাচিত প্রশাসনের বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব থাকে যা মনোনীত প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই দক্ষতা ও প্রশাসনের স্থায়িত্বের জন্য মনোনীত প্রশাসন অধিক উপযোগী।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.