Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা, AHSEC Class 11 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা Solutions are free to use and easily accessible.

Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই PDF, Assam Board Class 11 Political Science Question in Bengali Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 1st Year Political Science Notes in Bengali, Class 11 All Books PDF File Download in Bengali Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 11 Political Science Solution in Bengali, HS 1st Political Science Suggestion in Bengali, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান Question answer in Bengali, Class 11 Political Science Chapter 5 কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. NCERT Class 11 Political Science Solution, will be able to solve all the doubts of the students. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর, Class XI Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 11 Political Science Textbooks Solution. একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2023 Assam AHSEC Class 11 Political Science Suggestion are present on Roy Library’s website in a systematic order.

প্রশ্ন ২০। রাজ্যসভার প্রধান চারটি কার্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ রাজ্যসভার প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপঃ

(ক) সাধারণ বিল বিচার বিবেচনা ও অনুমোদন করা। প্রয়োজনবোধে অর্থ বিলে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া।

(খ) সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করা। 

(গ) নানা পদ্ধতিতে মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করা।

(ঘ) রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সংসদকে সুপারিশ করা। 

প্রশ্ন ২১। ভারতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন পদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায় উল্লেখ করা? 

উত্তরঃ আইন প্রণয়ণ পদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায়সমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) বিল উত্থাপন ও প্রথম পাঠ।

(খ) দ্বিতীয় পাঠ।

(গ) কমিটি ও রিপোর্ট পর্যায়।

(ঘ) তৃতীয় পাঠ।

(ঙ) অপর কক্ষে প্রেরণ।

(চ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি। 

প্রশ্ন ২২। বিল কী? বিভিন্ন প্রকার বিলের উল্লেখ করো?

উত্তরঃ আইন প্রস্তাবিত খসড়াকে বিল বলে। বিল বিভিন্ন প্রকারের। যে বিল সাধারণ সদস্য কর্তৃক উত্থাপিত হয় তাকে বেসরকারি বিল (Private member bill) বলে। অপরদিকে যে বিল মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সংসদে উত্থাপন করেন, তাকে সরকারি বিল (Public Bill বা Government bill) বলে। 

নিম্নে বিভিন্ন প্রকার বিলের উল্লেখ করা হলঃ

প্রশ্ন ২৩। জার্মানির দ্বি-সদনীয় আইনসভার সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও? 

উত্তরঃ জার্মানির আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় আইনসভার উচ্চ কক্ষ হল। ফেডারেল কাউন্সিল ও নিম্নকক্ষ হল ফেডারেল অ্যাসেম্বলি। জার্মানির ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রীয় অংগ রাজ্য ফেডারেল কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করে। ফেডারেল অ্যাসেম্বলি এক জটিল নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়।

প্রশ্ন ২৪। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রয়োজনীয়তা কী? 

উত্তরঃ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপঃ

(ক) আইনসভায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্য।

(খ) অঙ্গ রাজ্যগুলির স্বার্থ রক্ষার জন্য।

(গ) আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্যতা বজায় রাখার জন্য। 

(ঘ) আইন সভার ব্যাপক কাজের জন্য।

প্রশ্ন ২৫। কোন্ চারটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সংসদ রাজ্যিক সূচীতে থাকা বিষয়ের আইন প্রণয়ন করতে পারে, উল্লেখ করো?

উত্তরঃ নিম্নলিখিত চারটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সংসদ রাজ্যিক সূচীতে থাকা বিষয়ের উপরে আইন প্রণয়ন করতে পারেঃ

(ক) জাতীয় স্বার্থঃ সংবিধানের ২৪৯নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যসভা দুই–তৃতীয়াংশ ভোটে যদি এই মর্মে প্রস্তাব গ্রহণ করে যে জাতীয় স্বার্থে রাজ্যিক সূচীতে থাকা কোনো বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন করা উচিত; সেক্ষেত্রে সংসদ রাজ্যিক সূচীভুক্ত বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(খ) জরুরিকালীন অবস্থার সময়ঃ সংবিধানের ২৫০নং অনুচ্ছেদ অনুসারে জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকাকালীন সময়ে সংসদ ইচ্ছে করলে রাজ্যিক সুচীর অন্তর্ভুক্ত যে কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

(গ) সংবিধানের ২৫২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে দুই বা ততোধিক রাজ্যিক আইন সভা চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করে সংসদকে তাদের জন্য রাজ্যিক সুচীর অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয়ের উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করতে পারে।

(খ) সংবিধানের ২৫৩নং অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তির শর্ত রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনবোধে সংসদ রাজ্যিক সূচীতে থাকা বিষয়ের উপর আইন প্রদান করতে পারে। 

প্রশ্ন ২৬। সংসদ দ্বারা কার্যনির্বাহককে নিক্ষেপ করার চারটি ব্যবস্থা বর্ণনা করো?

উত্তরঃ সংসদ বিভিন্নভাবে কার্যনির্বাহককে নিয়ন্ত্রণ করে। সংসদ দ্বারা কার্যনির্বাহককে নিয়ন্ত্ৰণ করার ব্যবস্থাসমূহ না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র মন্ত্রীসভার একনায়কতন্ত্রে (cabinet dictatorship) পরিণত হতে পারে। 

সংসদ যে সকল ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহককে নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলো হলঃ

(ক) বিচার বিবেচনা ও আলোচনাঃ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংসদের সদস্যগণ কার্যসূচীর সঠিক পথ ও দিক নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দান করেন। এছাড়া সভার বিল সম্পর্কে পরামর্শ ও নিয়ন্ত্রণের আলোচনা করা হয়। সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল প্রশ্নোত্তরকাল। সংসদের অধিবেশনে প্রতিদিন এই মাধ্যমটি উত্থাপিত হয়। সংসদের সদস্যগণ এই পদ্ধতিটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। সদস্যগণ জনস্বার্থ বা জনকল্যাণের জন্য সরকার কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং মন্ত্রীগণ সে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপনের ফলে সভার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং অনেক সময় সদস্যগণ সভাত্যাগ (walk-out) করে বিরোধিতা প্রদর্শন করেন। উপরোক্ত কার্যপ্রক্রিয়া একটি রাজনৈতিক কলাকৌশল, যার উদ্দেশ্য হল মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারকে জনবিরোধী কার্য থেকে বিরত রাখা।

সংসদের শূন্যকাল ( zero hour)-এ সদস্যগণ তাদের মতানুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন। অবশ্য মন্ত্রীগণ শূন্যকালে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বাধ্য নন। জনকল্যাণমূলক প্রশ্ন ও মুলতুবী প্রস্তাব (adjournment motion) এর জন্য আধা ঘণ্টা নির্ধারিত থাকে। এগুলোর মাধ্যমেই লোকসভা মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(খ) আইনের অনুমোদন অথবা বাতিলঃ সংসদ আইনের অনুমোদন অথবা বাতিলের মাধ্যমে কার্যনির্বাহককে নিয়ন্ত্রণ করে। কেবলমাত্র সংসদের অনুমোদন ক্রমেই একটি বিল আইনে পরিণত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও শাসকদল বিরোধীদলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। এভাবে আইনের অনুমোদন অথবা বাতিলের মাধ্যমেও সংসদ কার্যনির্বাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(গ) আর্থিক নিয়ন্ত্রণঃ বাজেটের প্রস্তুতি ও উপস্থাপন এবং সংসদের অনুমোদন সংগ্রহ মন্ত্রী পরিষদের একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বাজেট পেশ করা হয় এবং এই কক্ষে বাজেট অনুমোদিত হতে হয়। লোকসভা কেবল অর্থের অনুমোদন করে না, অর্থ প্রদানের পূর্বে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করে। হিসাব পরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারী হিসাব সমিতির রিপোর্টের ভিত্তিতে লোকসভা সরকারী অর্থের অপব্যবহার অনুসন্ধান করে। সংসদ আর্থিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মন্ত্রী পরিষদের সরকারী কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

(ঘ) অনাস্থা প্রস্তাবঃ মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল সংসদে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’ (No-confidence motion)-এর উত্থাপন। অনাস্থা প্রস্তাব কেবলমাত্র লোকসভাতেই উত্থাপিত হয়। অনাস্থা প্রস্তাব মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়। কোনো একজন মন্ত্রী বিশেষের বিরুদ্ধে অনাস্থা উত্থাপিত হয় না, পুরো মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধেই অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে সম্পূর্ণ মন্ত্রীসভারই পতন ঘটে। এভাবে লোকসভা মন্ত্রীপরিষদকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং একটি পূর্ণ সহানুভূতিশীল সরকার নিশ্চিত করে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?

উত্তরঃ সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভাকে ভারতের সংবিধান বিভিন্ন ক্ষমতা প্রদান করেছে। তাই রাজ্যসভা নানাবিধ কার্য সম্পাদন করে। রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

(ক) আইন-সংক্রান্তঃ অর্থ-সংক্রান্ত প্রস্তাব ব্যতীত যে কোনো আইনের প্রস্তাব রাজ্যসভা উত্থাপন করতে পারে। কোনো বিল নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষের মধ্যে মতানৈক্য হলে উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করে বিরোধের মীমাংসা করা হয়। 

(খ) অর্থ-সংক্রান্তঃ রাজ্যসভা অর্থ বিল (Money Bill) উত্থাপন করতে পারে না। তবে অর্থবিলকে ১৪ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে পারে এবং অর্থবিলটি সংশোধনের প্রস্তাব দিতে পারে। 

(গ) শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা তার কার্যের জন্য সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ হলেও রাজ্যসভা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, বিতর্ক, আলোচনা, প্রস্তাব প্রভৃতির মাধ্যমে মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

(ঘ) সংবিধান-বিষয়কঃ রাজ্যসভা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে লোকসভার সঙ্গে সমান অধিকার ভোগ করে।

(৫) নির্বাচন-সংক্রান্তঃ রাজ্যসভা লোকসভার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। রাজ্যসভা ও লোকসভা রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, এবং সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে।

(চ) বিশেষ ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধানের ২৪৯নং ধারা অনুসারে রাজ্যসভা জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকাভুক্ত যে কোনো বিষয়ের উপর আইন প্রণয়নের জন্য সংসদকে সুপারিশ করতে পারে।

রাজ্যসভা কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের নতুন সর্বভারতীয় সেবা ব্যবস্থার প্রস্তাব করতে পারে (Article 312)। ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রস্তাব একমাত্র রাজ্যসভাই উত্থাপন করতে পারে।

প্রশ্ন ২। লোকসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় লোকসভা দেশের প্রতিনিধিত্বের মূল স্তম্ভ স্বরূপ। 

লোকসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) আইন-বিষয়কঃ সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে। কোন বিষয়ে উভয় কক্ষের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বানের মাধ্যমে উভয় কক্ষের মধ্যে থাকা বিরোধের অবসান ঘটানো হয়।

(খ) জাতীয় অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ঃ লোকসভায় অর্থবিল (Money Bill উত্থাপন করা হয়। এই ক্ষমতা রাজ্যসভার অধিকারে নেই। কেন্দ্রীয় বাজেটও লোকসভায় পাস হয়। 

(গ) শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা তাদের কাজের জন্য লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ। তাই লোকসভার শাসনবিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকাটা স্বাভাবিক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তা অনুমোদন করে লোকসভা মন্ত্রীপরিষদের পতন ঘটাতে পারে।

(ঘ) প্রতিনিধিত্বের ভূমিকাঃ লোকসভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। তাই জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে জনগণের বিভিন্ন মতামত, আদর্শ ও লক্ষ্যাকে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রূপায়িত করা লোকসভার প্রধান কাজ।

(ঙ) সংবিধান-বিষয়কঃ লোকসভা ও রাজ্যসভা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন উপলব্ধি করে সংবিধানের বিভিন্ন অংশ সংশোধন করে।

(চ) অন্যন্য-বিষয়ঃ লোকসভা রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্ৰহণ করে। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের লোকসভা ও রাজ্যসভা অপসারণ করতে পারে। লোকসভা বিভিন্ন কমিটি ও আয়োগ গঠন করে এবং তাদের প্রতিবেদন বিচার-বিবেচনা করে।

প্রশ্ন ৩। লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা এবং পদমর্যাদা আলোচনা করো?

উত্তরঃ লোকসভার সভাপতিকে অধ্যক্ষ বলা হয়। ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার স্পীকারের অনুকরণে আমাদের সংবিধানে লোকসভার স্পীকার বা অধ্যক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লোকসভার অধ্যক্ষ পদটি অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন পদ। তিনি লোকসভার মুখপাত্র এবং লোকসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি সভার বিতর্ক পরিচালনা করেন এবং সভার নিয়ম শৃঙ্খলার ব্যাখ্যা করে তা বলবৎ করেন। সভার কোনো বিষয়ে বৈধতার প্রশ্ন উঠলে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসাবে গণ্য করা হয়। তাঁর এই ক্ষমতা তাঁকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছে। সভায় কোনো বিষয়ের বিতর্কে মূলতবী প্রস্তাব আনতে হলে স্পীকারের সম্মতির প্রয়োজন হয়। তাঁর সম্মতি ব্যতীত লোকসভায় কেউ কোনো বক্তব্য পেশ করতে পারেন না।

অধ্যক্ষ সভার নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা করেন। তিনি প্রয়োজনবোধে সভার কাজ স্থগিত রাখতে পারেন। কোন প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট হলে তিনি তাঁর নির্ণায়ক ভোট (Casting Vote) প্রয়োগ করতে পারেন। অধ্যক্ষ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করার অধিকারী। তিনি লোকসভায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করেন। 

অধ্যক্ষের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি সভায় তাঁর বাণী প্রেরণ করেন। কোনো বিল অর্থ বিল কিনা তা স্থির করার ক্ষমতা একমাত্র অধ্যক্ষেরই আছে। 

ভারতের লোকসভার অধ্যক্ষ ইংল্যাণ্ডের হাউস অব কমন্স সভা (House of commons)-র স্পীকারের মতো লোকসভার বিতর্কে অংশ নেন না। লোকসভার অধ্যক্ষের নিরপেক্ষ ভূমিকা তাঁকে দলীয় স্বার্থের উর্ধে স্থাপন করেছে। অধ্যক্ষ তাঁর কার্য কোনো দলের পক্ষে সম্পাদন করেন না। তাই ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় অধ্যক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্ন ৪। আসাম রাজ্যিক আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?

উত্তরঃ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে রাজ্যিক আইনসভা বা বিধানসভার সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আসাম রাজ্যের বিধানসভা ১২৬ জন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে গঠিত। আসাম বিধানসভার সদস্যগণ তাদের মধ্য হতে একজনকে অধ্যক্ষ ও একজনকে উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত করেন। বর্তমানে আসাম বিধানসভার অধ্যক্ষ হলেন হিতেন্দ্র নাথ গোস্বামী। 

আসাম বিধানসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপঃ

(ক) আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ বিধানসভা আসাম রাজ্যের স্বার্থে আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যে কোনো বিল এই সভায় উত্থাপিত হয়। আসাম বিধানসভা এক কক্ষবিশিষ্ট। এই জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এর দায়িত্বও অধিক।

(খ) শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ আসাম বিধানসভার প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে। আসাম বিধানসভা আসামের রাজ্যিক মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা স্বপদে বহাল আছে। 

(গ) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ আসাম বিধান সভার অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা রয়েছে। অর্থবিল এই সভায়ই উত্থাপিত হয়। আসাম বিধানসভার অনুমতি ব্যতীত আসাম সরকার কোনো কর আরোপ করতে পারেন না। আসাম বিধান সভার অনুমোদন ছাড়া আসাম সরকার কোনো রাজস্ব ব্যয় করতে পারেন না, কোনো কর ধার্থও করতে পারেন না।

(ঘ) বিবিধ ক্ষমতাঃ অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভার মতো আসাম বিধানসভারও অন্যান্য বিবিধ ক্ষমতা আছে। আসামের বিধানসভা জনমত গঠনে সহায়তা করছে। আসাম বিধানসভার ১২৬ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনও আসাম বিধানসভা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। 

প্রশ্ন ৫। বিধানসভার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতের অধিকাংশ অঙ্গরাজাগুলোর আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট। এই কক্ষের নাম বিধানসভা বা বিধানমণ্ডল। কতিপয় রাজ্যিক আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। এই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাগুলোর উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ এবং নিম্নকক্ষ বিধানসভা।

সংবিধানের ২৭০ ধারা অনুযায়ী কোনো রাজ্যের বিধানসভার নিম্নতম সদস্যসংখ্যা ৬০-এর কম বা উচ্চতম সদস্যসংখ্যা ৫০০-এর অধিক হতে পারবে না। বিধানসভার সদস্যগণ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষভাবে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তপশীলভুক্ত জাতি ও জনজাতিদের জন্য বিধানসভায় আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। বিধানসভার কার্যকাল সাধারণত ৫ বছর। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী বিধানসভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হলে বিধানসভা ভঙ্গ হতে পারে।

বিধানসভার সদস্যগণ তাদের মধ্য হতে একজনকে অধ্যক্ষ এবং অপর একজনকে উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত করেন। অধ্যক্ষ বিধানসভার কার্যপরিচালনা করেন। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ বিধানসভার কার্য পরিচালনা করেন।

ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ রাজ্যের বিধানসভার প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপঃ 

(ক) আইন-বিষয়ক ক্ষমতাঃ বিধানসভা রাজ্য ও যুগ্মতালিকাভুক্ত বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন করে।

(খ) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণকে বিধানসভার সদস্য হতে হয়। বিধানসভা মন্ত্রীপরিষদের কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিধানসভা অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। বিধানসভার আস্থার উপর মন্ত্রিপরিষদের কার্যকাল নির্ভর করে।

(গ) অর্থ-বিষয়ক ক্ষমতাঃ অর্থ বিল (Money Bill) একমাত্র বিধানসভায় উত্থাপন করা যায়। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় বিধান পরিষদ অর্থ বিল কেবলমাত্র ১৪ দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারে। রাজ্যের বার্ষিক বাজেট বিধানসভা অনুমোদন করে।

(ঘ) অন্যান্য ক্ষমতাঃ বিধানসভার অন্যান্য ক্ষমতাও রয়েছে। বিধানসভা আলোচনার মাধ্যমে জনমত গঠনে সহায়তা করে। বিধানসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। সংবিধানের কতিপয় ধারা সংশোধনেও বিধানসভা অংশ গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় সংসদের আইন প্রণয়ন পদ্ধতি আলোচনা করো?

উত্তরঃ সংসদের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন। ভারতীয় সংসদে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন করা হয়ঃ

(ক) বিল উত্থাপন ও প্রথম পাঠঃ মন্ত্রীগণ সরকারি বিল উত্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিল উত্থাপনের জন্য অনুমতি নিয়ে বিলটিকে যে কোনো কক্ষে উত্থাপন করেন। এই পর্যায়ে কোন প্রকার আলোচনা করা হয় না। বিলটি অধ্যক্ষের অনুমতিক্রমে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হয়।

(খ) ২য় পাঠঃ বিলটি পেশ করবার অন্তত দুদিন পর এর ২য় পাঠ আরম্ভ হয়। ২য় পাঠের ১ম স্তরে বিলটির অন্তর্নিহিত মূল নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে তা সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়। এই স্তরে বিলটির কোন সংশোধন (পরিবর্তন) প্রস্তাব করা যায় না। 

(গ) কমিটি ও রিপোর্ট পর্যায়ঃ সিলেক্ট কমিটিতে আলোচনার পর বিলটি বিবরণী কমিটির সভাপতি সংসদে পাঠান। কমিটির প্রতিবেদন (report) পেশ হবার পর প্রস্তাব করা হয়- “কমিটি কর্তৃক প্রেরিত বিলের বিচার-বিবেচনা করা হোক।”

(ঘ) ৩য় পাঠঃ বিলের বিভিন্ন ধারার আলোচনা সমাপ্ত হলে বিলটি ৩য় পাঠের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এই সময় প্রস্তাব করা হয় – বিলটিকে বা সংশোধিত বিলটিকে পাস করা হোক। তখন বিলটি সামগ্রিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক হয়। এই পর্যায়ে গৃহীত হলে বিলটি ওই কক্ষের দ্বারা গৃহীত হয়েছে বলে স্থির করা হয়।

(ঙ) অন্য কক্ষে প্রেরণঃ এভাবে এক কক্ষের গৃহীত বিলটি অন্য কক্ষে পাঠানো হয়। অপর কক্ষে পূর্বে উল্লেখ করা প্রত্যেক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বিলটিকে অতিক্রম করতে হয়। উভয় কক্ষের মধ্যে মতানৈক্য ঘটলে সংসদের যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে বিরোধের মীমাংসা করা হয়।

(চ) রাষ্ট্রপতির সম্মতিঃ উভয় কক্ষের দ্বারা বিলটি গৃহীত হলে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। উপরোক্ত পদ্ধতিতে একটি বিল আইনে হয়।

প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংসদের কার্যাবলী আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতীয় গণতন্ত্রে জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিমূলক সংস্থা হল সংসদ। সংসদ বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে। 

সংসদের কার্যাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) আইন–বিষয়কঃ আইন প্রণয়ন সংসদের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেন্দ্রীয় ও যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংসদ আইন প্রণয়ন করে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সংসদ রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়ের উপরও আইন প্রণয়ন করে। রাজ্যসভা সংসদকে রাজ্যতালিকা বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করে।

(খ) অর্থ-বিষয়কঃ সংসদে অর্থ সংক্রান্ত প্রস্তাব লোকসভায় উত্থাপিত হয়। অর্থ-সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের ক্ষমতা রাজ্যসভার নেই। জাতীয় বাজেট সংসদ পাস করে। ভারত সরকার কর্তৃক কর ধার্য এবং অর্থ ব্যয় করবার জন্য সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংসদ সরকারের সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করার উপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। 

(গ) কার্যপালিকা বা শাসনবিভাগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়কঃ সংসদ কার্যপালিকার কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে এবং কার্যপালিকার সংসদের নিকট তার দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করে। শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

(ঘ) প্রতিনিধিত্ব বিষয়কঃ সংসদ ভারতের সকল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতের সকল শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের মতামত সাংসদরা সংসদে তুলে ধরেন। বিভিন্ন অঞ্চল এবং জাতি, ধর্ম, সামাজিক ও আর্থিক পদ মর্যাদা সম্পন্ন সকল জনসাধারণের প্রতিনিধি স্বরূপ সংসদ তাদের যথাযথ স্বার্থ প্রতিষ্ঠাকল্পে কার্যপালিকার উপর চাপ সৃষ্টি করে।

(ঙ) বিতর্ক-সংক্রান্তঃ সংসদে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা করা হয়। দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক করার সবচেয়ে ভাল মঞ্চ হচ্ছে সংসদ। সংসদের সকল সদস্য নির্ভয়ে ও স্বাধীন ভাবে যে কোনো বিষয় নিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখতে পারেন। 

(চ) সংবিধান-সংক্রান্তঃ সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারে। এই বিষয়ে সংসদের উভয় কক্ষের সমান ক্ষমতা। গতিশীল, আর্থ- সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সংসদ সংবিধান সংশোধন করে। সংসদ মৌলিক কাঠামো বাতীত সংবিধানের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন সাধন করতে পারে।

(ছ) নির্বাচন-সংক্রান্তঃ সংসদের সদস্য ও রাজ্যিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যাগণ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেন। সংসদ উপরাষ্ট্রপতিকেও নির্বাচিত করে। এইক্ষেত্রে রাজ্যিক আইনসভার প্রয়োজন হয় না।

(জ) বিচার-বিষয়কঃ সংসদ ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে।

প্রশ্ন ৮। লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা এবং কার্যাবলি আলোচনা করো?

উত্তরঃ লোকসভার সভাপতিকে অধ্যক্ষ বলা হয়। ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার স্পিকারের অনুকরণে ভারতের সংবিধানেও লোকসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকার (Speaker)- এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাধারণভাবে ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার স্পিকারের মতো লোকসভার অধ্যক্ষ ও নিরপেক্ষভাবে লোকসভার কার্য পরিচালনা করেন। লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নরূপঃ

(ক) লোকসভার বিতর্ক ও আলোচনা নিয়ন্ত্রণঃ অধ্যক্ষ লোকসভার বিতর্ক ও আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি লোকসভার কার্যক্রম স্থির করেন। তাঁর সম্মতি ব্যতীত লোকসভায় কেউ কোনো বক্তব্য পেশ করতে পারেন না। সভায় কোনো বিষয়ে বৈধতার প্রশ্ন উঠলে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনো বিলের সংশোধনী প্রস্তাব বা বিলটি গ্রহণ না করার প্রস্তাব আনা যায় না। কোন প্রস্তাবের উপর বিতর্কের পর অধ্যক্ষ প্রয়োজনবোধে ভোট গ্রহণ করেন। তিনিই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। তবে তিনি নিজে ভোটাভুটি বা বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেন না। কিন্তু কোনো প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভেট পড়লে তিনি তাঁর নির্ণায়ক ভোট প্রয়োগ করে অচলাবস্থার অবসান ঘটান [১০১ (১) ধারা]।

(খ) লোকসভার শৃঙ্খলা ও মর্যাদা রক্ষাঃ লোকসভার শৃঙ্খলা ও মর্যাদা রক্ষা করা অধ্যক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকল সদস্য যাতে সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে তাঁদের বক্তব্য পেশ করতে পারেন সে দিকে অধ্যক্ষকে সতর্ক নজর রাখতে হয়। লোকসভার কোনো সদস্যের বিশৃঙ্খল ও অশিষ্ট আচরণের জন্য তাঁকে তিনি বহিষ্কার করতে পারেন। লোকসভার আলোচনা বিশৃঙ্খল তর্ক বিতর্কের জন্য যাতে পও না হয় বা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তার জন্য তিনি সভার কাজ সাময়িকভাবে মুলতুবি রাখেন। লোকসভার অধিবেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চরম।  

(গ) অর্থবিল সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ কোনো বিল অর্থবিল কিনা সে বিষয়ে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অর্থ-সংক্রান্ত কোনো বিল লোকসভা থেকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সময় এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতির সময় অধ্যক্ষকে এই মর্মে প্রমাণ পত্র দিতে হয় যে বিলটি অর্থবিল (Money Bill) [ ১১০(৪) অনুচ্ছেদ)।

(ঘ) যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্বঃ সাধারণ বিল পাশের ক্ষেত্রে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসার জন্য রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন এবং অধ্যক্ষ সেই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন [১১৮(৪) অনুচ্ছেদ]।

(ঙ) রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে অধ্যক্ষঃ অধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেন। অধ্যক্ষের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি তাঁর বার্তা ও বাণী (Message) সংসদে উপস্থাপিত করেন। 

(চ) লোকসভার সংসদীয় কার্য পদ্ধতি সংক্রান্ত সকল নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাখ্যা প্রদানকারী হিসেবে অধ্যক্ষঃ অধ্যক্ষ সংসদীয় কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি সভার নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাখ্যা করে তা বলবৎ করেন। এক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

(ছ) লোকসভার কমিটি গঠনে অধ্যক্ষের ভূমিকাঃ লোকসভা তার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কতিপয় কমিটি গঠন করে। অধ্যক্ষ এ কমিটিগুলোর গঠন কার্যে সহায়তা ও তত্ত্বাবধান করেন। তিনি বিভিন্ন কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন। 

(জ) লোকসভার সচিবালয়ের প্রধান হিসাবে অধ্যক্ষঃ লোকসভার সচিবালয়ের প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। লোকসভার কর্মচারিদের বিভিন্ন সম্পত্তির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অধ্যক্ষের। সংসদের কার্য বিবরণী সংরক্ষণের দায়িত্ব অধ্যক্ষের।

এছাড়া লোকসভার কোনো সদস্য পদত্যাগপত্র অধ্যক্ষের কাছে জমা দেওয়ার পর অধ্যক্ষের যদি মনে হয় বলপূর্বক সেই সদস্যের পদত্যাগপত্র আদায় করা হয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি সেই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ নাও করতে পারেন এবং এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে পারেন। দলত্যাগ জনিত কারণে দলীয় সদস্যের অবস্থান সম্পর্কে কোনো সংশয় দেখা দিলে সেই ব্যাপারে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে লোকসভার অধ্যক্ষ পদটি অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন পদ। তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা তাঁকে দলীয় স্বার্থের উর্ধে স্থাপন করেছে। তাই ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় অধ্যক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। 

প্রশ্ন ৯। ভারতের সংসদের দুটি সদনের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতে দ্বি-সদন বিশিষ্ট সংসদ (কেন্দ্রীয় আইনসভা) আছে যার উচ্চ সদনের নাম রাজ্যসভা এবং নিম্নসদনের নাম লোকসভা। লোকসভা ও রাজ্যসভার পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভাই অধিক ক্ষমতাশালী। এর প্রধান কারণ লোকসভার সদস্যগণ জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত। 

রাজ্যসভা ও লোকসভার পারস্পরিক সম্পর্ক নিম্নোক্ত তিন দিক থেকে আলোচনা করা যায়ঃ

(ক) উভয় সদনের ক্ষমতা সমানঃ ভারতের আইনগত কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কতকগুলো বিষয়ে দুটি সদন সমান ক্ষমতা ভোগ করে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ, সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ, জরুরি অবস্থাজনিত ঘোষণার অনুমোদন, সংবিধান সংশোধন প্রভৃতি বিষয়ে দুটি সদনই সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। 

(খ) কতকগুলো বিশেষ ক্ষেত্রে রাজ্যসভার তুলনায় লোকসভা অধিক ক্ষমতার অধিকারীঃ কতকগুলো বিশেষ ক্ষেত্রে রাজ্যসভার তুলনায় লোকসভা অধিক ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী। এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলো হল– 

(অ) শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণঃ সংবিধানের ৭৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা কেবলমাত্র লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকেই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। লোকসভা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করলে মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। লোকসভাই মন্ত্রীসভার উৎসস্থল, আবার সেখানেই তাদের পতন। শাসনবিভাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রাজ্যসভার ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে।

(আ) অর্থবিলঃ অর্থবিল সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভাই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। রাজ্যসভায় অর্থবিল বা অর্থ-সম্পর্কিত বিল (Money Bill/Finance Bill) উত্থাপন করা যায় না। একমাত্র লোকসভাই এই সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করার অধিকারী।

(ই) সাধারণ বিলঃ সাধারণ বিল পাশের ক্ষেত্রে লোকসভার ক্ষমতা কার্যত বেশি। কারণ সাধারণ বিল নিয়ে উভয় সদনের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দিলেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি উভয় সদনের যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করেন এবং এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লোকসভার অধ্যক্ষ। রাজ্যসভার তুলনায় লোকসভার সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার দরুন লোকসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নিতে অসুবিধে হয় না।

(ঈ) জরুরি অবস্থাঃ জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণা উভয় সদন দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু ৪৪-তম সংশোধনী আইন অনুযায়ী জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে চেয়ে লোকসভা কোনো প্রস্তাব পাশ করলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে বাধ্য থাকেন। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার কোনো ক্ষমতা নেই।

(গ) কতকগুলো ক্ষেত্রে রাজ্যসভা লোকসভা থেকে অধিক ক্ষমতা ভোগ করে। যেমন – (অ) সংবিধানের ২৪৯নং অনুসারে রাজ্যসভা দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে যদি এই মর্মে প্রস্তাব গ্রহণ করে যে জাতীয় স্বার্থে রাজ্যিক সুচীতে থাকা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা উচিত সেক্ষেত্রে সংসদ রাজ্যসূচীতে থাকা সেই বিষয়ের উপর আইন প্রণয়ন করতে পারে। এক্ষেত্রে লোকসভার এরূপ কোনো ক্ষমতা নেই।

(আ) সংবিধানের ৩১২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নতুন সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টির ব্যাপারে রাজ্যসভা প্রস্তাব গ্রহণ করলে সংসদ সে ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

(ই) উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সম্পর্কিত প্রস্তাব কেবলমাত্র রাজ্যসভায়ই উত্থাপিত হয়। 

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অলক মনে করে আমাদের দেশের জন্য একটি কর্মক্ষম সরকার প্রয়োজন যা জনকল্যাগের জন্য কাজ করবে। তাই আমরা যদি মনে করি তা কেবল প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের নির্বাচিত করেই তাদের হাতে সরকারের সমস্ত কার্য অর্পণ করে দিয়েছি, তবে আর আমাদের আইনসভার প্রয়োজন নেই? তুমি কি তাতে একমত? যুক্তিসহ এই উত্তরটি লেখো?

উত্তরঃ আমরা অলকের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নই। এর প্রধান কারণ দেশ পরিচালনার জন্য আইনসভার প্রয়োজন। আইনসভা দেশের জনগণের প্রতিনিধিমূলক সংস্থা। কারণ আইনসভায় জনগণের মতামত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। আইনসভার প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। আর এই প্রণীত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শাসনবিভাগ শাসনকার্য পরিচালনা করে। দেশের জনগণ যদি কেবল প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের নির্বাচিত করে তাদের হাতে সমস্ত শাসনকার্যের দায়িত্ব অর্পণ করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণ দেশে তাদের একানায়কতন্ত্র (Dictatorship) প্রতিষ্ঠিত করে ফেলবে। তাই শাসনবিভাগের কার্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনসভার একান্ত প্রয়োজন। কারণ আইনসভা প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণকে স্বৈরাচারী হতে প্রতিহত করবে। 

প্রশ্ন ২। একটি শ্রেণীতে দ্বি-কক্ষযুক্ত আইনসভার সুবিধা (merits) নিয়ে বিতর্ক হয়। এই আলোচনা থেকে কয়েকটি বিশেষত্ব (Point) পাওয়া যায়। এগুলো যুক্তিসহ বিচার করে পক্ষে বা বিপক্ষে উত্তর দাও?

(ক) নেহার মতে দ্বি-সদনীয় বিধানমণ্ডল কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মীমাংসা করতে অক্ষম। 

(খ) শ্যামা বললো, দ্বিতীয় কক্ষে পারদর্শী ব্যক্তিদের মনোনীত করা উচিত। 

(গ) ত্রিদিব এর মতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ছাড়া দ্বিতীয় সদনের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

উত্তরঃ (ক) আমরা নেহার মতের সঙ্গে সহমত নই। নানা প্রকার উদ্দেশ্য সাধন ও লক্ষ্য পূরণের জন্য দ্বি-কক্ষযুক্ত আইন সভার ব্যবস্থা রাখা হয়। তাছাড়া নিম্নকক্ষের স্বৈরাচার প্রতিহত করতে দ্বি-কক্ষযুক্ত আইনসভার একান্ত আবশ্যক।

(খ) আমরা শ্যামার মতের সঙ্গে একমত। কারণ দ্বিতীয় কক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিগণকে মনোনীত করা হয়। এরফলে আইনসভায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক্তিদের মতামত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। যেসকল ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন – কলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী তাদেরকে আইনসভায় রাখার জন্য নির্বাচন পদ্ধতি অপেক্ষা মনোনয়ন পদ্ধতি রাখা ভাল। 

(গ) আমরা ত্রিদিবের অভিমতের সঙ্গে একমত নই।

আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে একমাত্র কক্ষটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ পায়। দ্বি-কক্ষযুক্ত আইনসভা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দ্বিতীয় কক্ষ রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব করে এবং এই কক্ষ নিম্নকক্ষের গৃহীত প্রস্তাবগুলির ভুলত্রুটি বের করে ও সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। তাই কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয় এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থায়ও দ্বিতীয়কক্ষ থাকা উচিত। ইংল্যাণ্ড ও জাপানের মতো এককেন্দ্রীক (Unitary) শাসন ব্যবস্থায়ও দ্বিকক্ষ-যুক্ত আইনসভা বিদ্যমান। 

প্রশ্ন ৩। রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভা কেন অধিক কার্যকরীভাবে কার্যপালিকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম?

উত্তরঃ আমাদের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় কার্যপালিকা বা শাসনবিভাগ তার কার্যের জন্য আইনসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা তাদের কার্যের জন্য যৌথভাবে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে।

রাজ্যসভা প্রশ্ন, বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদের উপর চাপ সৃষ্টি করলেও তা মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। সরকার অপসারণের ক্ষমতা কেবল লোকসভার উপর ন্যাস্ত। লোকসভাকে এই ক্ষমতা প্রদান করেছে ভারতের জনগণ। কারণ লোকসভা প্রশ্নোত্তর কাল, শূন্যকাল ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সর্বশেষে সরকারি বিল প্রত্যাখানের মাধ্যমে অথবা সরকারের বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রীপরিষদ অর্থাৎ কার্যপালিকাকে অপসারণ করতে পারে। এজন্য লোকসভা রাজ্যসভা অপেক্ষা অধিক ভাবে কার্যপালিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্ন ৪। কার্যপালিকা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও লোকসভা জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণের মঞ্চ। তুমি কি তা মনে করো? যুক্তি দেখাও?

উত্তরঃ আমরা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা কার্যপালিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কারণ কার্যপালিকা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা তাদের নীতি ও কার্যের জন্য লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। কার্যপালিকার এই নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও লোকসভাকে জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণের মঞ্চ হিসাবে গণ্য করা হয়। জনগণের প্রতিনিধিগণ অর্থাৎ লোকসভার সদস্যগণ তাদের নিজস্ব কেন্দ্রের জনগণ তথা দেশবাসীর অভাব অভিযোগ ও মতামত লোকসভায় তুলে ধরেন। তারা জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করান। তারা জনগণের স্বার্থ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি লোকসভার প্রশ্নোত্তরকাল, শূন্যকাল, মুলতুবি প্রস্তাব প্রভৃতির মাধ্যমে তুলে ধরেন। সুতরাং লোকসভা জনগণের আশা আকাঙ্খা পুরণের মঞ্চ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

প্রশ্ন ৫। সংসদকে আরও শক্তিশালী কর্মক্ষম করার উদ্দেশ্যে নিম্নে কতকগুলি প্রস্তাবের উল্লেখ করা হয়েছে, এর পক্ষে বা বিপক্ষে তোমার অভিমত ব্যক্ত করো, যদি এই পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হয় তবে এর ফলাফল কী হবে?

(ক) সংসদে দীর্ঘসময় কাজ করা উচিত।

(খ) সাংসদদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা উচিত। 

(গ) সভার কার্যে যে সদস্যগণ বাধাদান করবেন, অধ্যক্ষকে সেই সদস্যদের শান্তি প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা উচিত।

উত্তরঃ (ক) সংসদে সাংসদদের দীর্ঘ সময় কার্য করা উচিত। এই প্রস্তাবের পক্ষে আমরা সহমত পোষণ করি। সংসদের অধিবেশন দীৰ্ঘকালীন হলে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সময় পাওয়া যায় এবং জনগণের স্বার্থকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়। বর্তমানে অনেক বিল সংসদে দীৰ্ঘ আলোচনা ছাড়াই অনুমোদিত হয়ে যায়, এটা জনগণে স্বার্থের পরিপন্থ। 

(খ) সাংসদদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা উচিত। এই প্রস্তাবেও আমরা সহমত পোষণ করি।

লোকসভার অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন সাংসদকে অনুপস্থিত থাকতে দেওয়া উচিত নয়। কারণ তার অনুপস্থিতি গণতন্ত্রের আদর্শবিরোধী। তাই সংসদের সদস্যদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ফলে লোকসভায় বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যাধিক্যের সমর্থন পাওয়া যাবে। 

(গ) সংসদে সভার কার্যে বাধাদানকারী সাংসদদের শাস্তি দেওয়া উচিত। সাংসদদের বাধাদানের ফলে সময়ের অপচয় হয় এবং সংসদের কাজকর্ম বিঘ্নিত হয় যা জাতি তথা দেশের স্বার্থের ক্ষতি সাধন করে। তাই সাংসদদের শান্তি দিতে অধ্যক্ষকে ক্ষমতা প্রদান করা উচিত।

প্রশ্ন ৬। আরিফ যদি জানতে চায়, বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিলের প্রস্তাব মন্ত্রীগণ উত্থাপন করেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সমর্থনেই বিলটি আইনে পরিণত হয়, তবে আইন প্রণয়নে সংসদের ভূমিকা কী? তুমি তাকে কী উত্তর দেবে?

উত্তরঃ সংসদে অধিকাংশ বিলই মন্ত্রীগণ উত্থাপন করেন। কারণ অধিকাংশ বিলই সরকারি বিল যা সরকারের নীতি ও উদ্দেশ্য সম্বলিত। সরকারি বিল মন্ত্রীগণ উত্থাপন করেন। বিলগুলো অনুমোদন করানোর জন্য মন্ত্রীদের সাংসদদের সমর্থন প্রয়োজন হয়। স্বভাবত সংখ্যগরিষ্ঠ দলের শাসক হওয়ার সুবাদে বিলগুলো অনুমোদন করানোর ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হয় না। তথাপি আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সংসদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিলের সাধারণ আলোচনার সময় এর নীতি ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচিত হয়। কমিটি পর্যায়ে বিলের প্রতিটি ধারা বিস্তারিতভাবে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করা হয়। রিপোর্ট পর্যায়ে বিলের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ও সদস্যগণ কর্তৃক সংশোধনী প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি ধারাও সংশোধনী সভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে অনুমোদন হয়। বিলটি এক কক্ষে অনুমোদিত হওয়ার পর অন্যকক্ষে প্রেরণ করা হয়। এইভাবে সংসদ আইন প্রণয়নের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ৭। নিম্নের কোন্ বক্তব্যের সঙ্গে তুমি একমত? যুক্তি দেখাও? 

(ক) সংসদের সদস্যগণের যে কোন দলে যোগদানের স্বাধীনতা থাকা উচিত। 

(খ) দলত্যাগ-প্রতিরোধ আইন, সংসদের সদস্যদের উপর দলের নেতার আধিপত্য প্রদান করে।

(গ) স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যে দলত্যাগ হয়। তাই যে নির্বাচিত প্রতিনিধি অন্য কোন দলে যোগ দিতে চান তাদেরকে আগামী ২ বছরের জন্য মন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। 

উত্তরঃ (ক) সাংসদদের যে কোন দলে যোগদানের স্বাধীনতা কতিপয় সমর্থনযোগ্য সীমাবন্ধতার সঙ্গে থাকা উচিত। নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাংসদদের অন্য দলে যোগদানের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়।

(খ) দলত্যাগ প্রতিরোধ আইন সাংসদদের উপর দলীয় নেতার কিছুটা আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করে। কথাটি আংশিকভাবে সত্য।

(গ) আমরা এই বিবৃতির সঙ্গে একমত। আইনসভার সাংসদগণ যদি দল ত্যাগ করতে চান তবে তাদের পরবর্তী দুই বছরের জন্য মন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। কারণ দলত্যাগ যদি নিজ স্বার্থের উদ্দেশ্যে হয় তখন অন্যদলেও সে নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই যোগদান করবে। অতএব সেই দলত্যাগী সাংসদকে সঙ্গে সঙ্গেই মন্ত্রীত্ব দেওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন ৮। সাম্প্রতিককালে সংসদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে ডলি ও সুধার মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। ডলি বিশ্বাস করে, সংসদের অধিবেশনে সভাত্যাগ ইত্যাদি বৃদ্ধি ও বিতর্ক আলোচনার জন্য অল্প সময় ব্যয় হওয়ার জন্য ভারতীয় সংসদের গুরুত্ব ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সুধার মতে, লোকসভার অনাস্থা প্রস্তাবের কারণে বিভিন্ন সরকারের পতন এর অনুকম্পন প্রমাণ করে। ডলি ও সুধার পক্ষে ও বিপক্ষে তোমরাও কিছু যুক্তি প্রদর্শন করো।

উত্তরঃ আমরা ডলির অভিমতের সঙ্গে একমত। আমরা সংসদের কার্যকলাপের অবমূল্যায়ন দেখেছি। বেশিরভাগ সাংসদই জনসাধারণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সংসদে নিন্দাজনক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছেন। ঘন ঘন অধিবেশন বয়কট, সংসদে অশালীন মন্তব্য, কুরুচিকর বক্তব্য, অযথা হৈ-হল্পা, অকথ্য বাক্য বিনিময় প্রভৃতি সংসদের প্রতিদিনের ঘটনা। এই অবমূল্যায়নের জন্য আমরা বিশ্বের নিকট লজ্জাবোধ করছি।

প্রশ্ন ৯। আইন প্রণয়নের বিভিন্ন পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে লিখঃ

(ক) বিলের আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়। 

(খ) বিলটি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা হয় যদি তিনি সম্মতি দান না করেন তারপর কী হয় লেখো।

(গ) বিলটি অন্য কক্ষে অনুমোদনের পাশ করা হয়। 

(ঘ) যে সভা বিলটির প্রস্তাব করে সেই সভায় বিলটি গৃহীত হয়।

(ঙ) প্রতিটি ধারা ও উপধারার বিশ্লেষণ ও ভোটগ্রহণ হয়। 

(চ) বিলটি কমিটিতে প্রেরণ করা হয়, কমিটি কিছু পরিবর্তন, সংশোধন করে পুনরায় আলোচনার জন্য প্রেরণ করে। 

(ছ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রস্তাব করেন।

(জ) আইনবিভাগের মন্ত্রালয় বিলের খসড়া তৈরি করে।

উত্তরঃ (ক) বিলের আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়।

(খ) বিলটি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা হয় যদি তিনি সম্মতি দান না করেন, তাহলে সংসদ দ্বিতীয়বার বিলটি অনুমোদন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় এবং রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিতে বাধ্য।

(গ) বিলটি অন্য কক্ষে অনুমোদনের পর পাশ করা হয়।

(ঘ) যে সভা বিলটির প্রস্তাব করে সেই সভায় বিলটি গৃহীত হয়।

(ঙ) প্রতিটি ধারা ও উপধারার বিশ্লেষণ ও ভোটগ্রহণ হয়।

(চ) বিলটি কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। কমিটি কিছু পরিবর্তন, সংশোধন করে পুনরায় আলোচনার জন্য প্রেরণ করে।

(ছ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রস্তাব করেন।

(জ) আইন বিভাগের মন্ত্রালয় বিলের খসড়া তৈরি করে।

প্রশ্ন ১০। সংসদীয় কমিটি সংসদের আইন প্রণয়নের মূল্য নিরূপণে এবং তত্ত্বাবধানে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে? 

উত্তরঃ সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সংসদীয়কার্য সম্পাদন করবার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিগুলো সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিটিগুলো প্রতিটি ধারা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করে দেখে। ১৯৮৩ সালের পর ভারতবর্ষেও স্থায়ী কমিটির (Standing Committee) বিকাশ ঘটে। বর্তমানে প্রায় ২০টি এই ধরনের বিভাগীয় সম্পর্কযুক্ত কমিটি রয়েছে। কমিটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিল সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট সংসদে পেশ করে। সুতরাং কমিটিগুলো আইন প্রণয়নের মূল্য নিরূপণে এবং তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top