Class 12 Economics Chapter 3 মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা

Join Roy Library Telegram Groups

Hello Viewers Today’s We are going to Share With You, The Complete Bengali Medium Syllabus of AHSEC Board Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 3 মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা with you. Are you a Student of Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 3 মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা Which you Can Download Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 3 মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা for free using direct Download Link Given Below in This Post.

Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 3 মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা

Today’s We have Shared in This Post, HS 2nd Year Economics in Bengali Solutions for Free with you. HS 2nd Year Economics in Bengali Notes I Hope, you Liked The information About The Class 12 Economics Question Answer in Bengali PDF. if you liked Assam AHSEC HS 2nd Year Economics in Bengali Questions and Answers Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

প্রশ্ন ১৪। মুদ্রার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ (১) মুদ্রার সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।

(২) সমমূল্যের মুদ্রা পূর্ণ সাদৃশ্যযুক্ত।

প্রশ্ন ১৫। মুদ্রার দুটি কুফল বা অসুবিধা লেখো।

উত্তরঃ (১) মুদ্রা অর্থনীতির চালিকা শক্তি হলেও এটি মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রা সংকোচন সৃষ্টি করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে অস্থিরতার সৃষ্টি করে।

(২) মুদ্রার প্রতি লালসা বা স্পৃহাই নৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে। দুর্নীতি, শোষণ এবং অবিচারের একটি প্রধান কারণ হল মুদ্রার প্রতি দুর্বলতা।

প্রশ্ন ১৬। ঘাটতি বিত্তায়ন কী ?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে ঘাটতি দেখা দিলে ঘাটতি পূরণ করবার জন্য সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঋণপত্র বিক্রি করে সেই ব্যাংক থেকে মুদ্রা ঋণ হিসেবে নিয়ে সেই ঋণের সাহায্যে বাজেট ঘাটতি পূরণ করার ব্যবস্থাকে ঘাটতি বিত্তায়ন বলে।

প্রশ্ন ১৭। পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির থেকে নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির দুটি শেষ্ঠতার দিক উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অসুবিধা এই যে এগুলি ঋণের গুণাগুণ বিচার না করে সব ধরনের ঋণকেই একযোগে বাড়াতে বা কমাতে চায়। কিন্তু কোনো দেশের পক্ষে সব ধরনের ঋণ একযোগে বাড়ানো বা কমানো বাঞ্ছনীয় নয়। নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের মধ্যে নির্বাচিত ক্ষেত্রে ঋণের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সমস্ত ক্ষেত্রে ঋণকে নিয়ন্ত্রণ না করে।

(২) নির্বাচনমূলক বা গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণগ্রহীতার ঋণগ্রহণের ক্ষমতা যাচাই করে ঋণের বন্টন করে থাকে যা পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব নয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। মুদ্রার কার্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ মুদ্রার কার্যাবলি সম্পর্কে ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘Money is a matter of functions four- a medium, a measure, a standard and a store’। এই কথা দ্বারা বুঝা যায়, মুদ্রা চার ধরনের কাজ করে। যে গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল –

(১) বিনিময়ের মাধ্যমঃ মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কার্য সম্পাদন করে। মুদ্রার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকায় সামগ্রীর বিনিময় মুদ্রার মাধ্যমেই হয়।

(২) মূল্যের মাপকাঠিঃ মুদ্রা মূল্যের মাপকাঠি হিসাবে কাজ করে। সকল অর্থনৈতিক দ্রব্যের মূল্য মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময় মূল্যকে দাম বলা হয়। মুদ্রা হিসাবের একটি সুবিধাজনক একক হিসাবে কাজ

করে।

(৩) স্থগিত দেনা পাওনার মানদণ্ড: মুদ্রা শুধু তাৎক্ষণিক লেনদেনের মাধ্যম নয়। এটি ঋণদান, ঋণগ্রহণ ইত্যাদি সকল ধরনের স্থগিত লেনদেনেরও মাধ্যম। সমগ্র ঋণব্যবস্থা মুদ্রার ওপর প্রতিষ্ঠিত। মুদ্রাবিহীন ঋণব্যবস্থা অচল হয়ে যায়।

(৪) মূল্যের ভাণ্ডারঃ মুদ্রার মাধ্যমে সামগ্রীর মূল্য সঞ্চয় করে রাখতে পারা যায়। প্রয়োজন অনুসারে সঞ্চিত মুদ্রা সামগ্রীতে রূপান্তরিত করতে পারা যায়। সকল সম্পদের মধ্যে মুদ্রার তারল্যগুণ সর্বাধিক।

প্রশ্ন ২। আধুনিক অর্থনীতিতে মুদ্রার ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আধুনিক অর্থব্যবস্থায় মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি দেশের সব অর্থনৈতিক কার্যকলাপ মুদ্রার সঙ্গেই জড়িত। মুদ্রা প্রতিটি সামগ্রী ও বিনিময়যোগ্য সেবাকার্যের ওপর স্পষ্ট দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারে, এটাই হচ্ছে মুদ্রার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

মুদ্রা অর্থনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করে। একটি অর্থনীতি কী উৎপাদন করবে, কীভাবে উৎপাদন করবে, কতটুকু উৎপাদন করবে এবং কীভাবে এগুলো বণ্টন করবে, মুদ্রার ব্যবহারই এগুলোকে সহজসাধ্য করে তোলে।

একটি রাষ্ট্রের বিত্তীয় ব্যবস্থায় মুদ্রা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। সরকারের বাজেটে মোট আয়-ব্যয়ের হিসাব, কর এবং ঋণ সংগ্রহের পরিমাণ মুদ্রার মাধ্যমেই উত্থাপিত হয়।

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মুদ্রার প্রচলন মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ সহজ করে তুলেছে।

বাজার অর্থনীতির মূল ভিত্তি তার দর প্রণালী। মুদ্রা ব্যবস্থায় মুদ্রার মাধ্যমেই বস্তুর দর নির্ণয় হয়। মুদ্রার পরিমাণের মাধ্যমে স্থির করা বস্তুর দরই বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।

উৎপাদনের উপাদানের মূল্য মুদ্রার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বর্তমান যুগে শ্রমিকের মজুরি বা সরকারি কর্মচারীর বেতন মুদ্রার দ্বারাই প্রদান করা হয়। ব্যবসা বাণিজ্যের লাভ লোকসান মুদ্রার মাধ্যমেই প্রকাশ করা হয়।

মুদ্রার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে মুদ্রা বাজার ও মূলধন বাজার। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ সম্প্রসারিত মুদ্রানীতি গ্রহণ করে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পেরেছে। মুদ্রার প্রচলনের জন্যই আধুনিক অর্থব্যবস্থা গতিশীল হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। বিনিময় প্রথার বিষয়ে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ বিনিময় ব্যবস্থা মানুষের প্রতিটি পার্থিব অবস্থানের মূল উপাদান। খাদ্য, বস্তু ও বাসস্থান হচ্ছে জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী। প্রাচীনকালে মানুষ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্ৰীসমূহ নিজে উৎপাদন করে নিয়েছিল এবং কিছু সামগ্রী নিজের উৎপাদিত বস্তুর সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করার পথ খুঁজে পেয়েছিল। যে ব্যবস্থায় দ্রব্যের সঙ্গে আরেক দ্রব্যের বিনিময় হয় তাকেই দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলে। দৃষ্টান্তস্বরূপ – একজন ভোক্তার যথেষ্ট চাউল আছে, অন্য একজন ভোক্তার যথেষ্ট চিনি আছে। প্রথম ব্যক্তির চিনির প্রয়োজন এবং চিনির বিনিময়ে সে চাউল দিতে প্রস্তুত আছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির চাউল প্রয়োজন এবং চাউলের বিনিময়ে সে চিনি দিতে প্রস্তুত আছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিময় সম্ভবপর হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্য বিনিময় প্রথার বিভিন্ন অসুবিধার দিক পরিলক্ষিত হল। তবে মুদ্রার ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এই অসুবিধাগুলি দূর হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ পণ্য বা দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহের ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হল –

(১) অভাবের পারস্পরিক সংগতিহীনতা: অভাবের পারস্পরিক সংগতি না থাকলে বিনিময় প্রথা কার্যকরী হয় না। অর্থাৎ বিনিময় প্রথা কার্যকরী করতে হলে দুজন ব্যক্তির অভাব পরস্পরের পরিপূরক হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ – একজন ব্যক্তি কাপড়ের বিনিময়ে চাল চাচ্ছে এবং অন্য ব্যক্তি চালের বিনিময়ে কাপড়। এক্ষেত্রে দুজন ব্যক্তির অভাব পরস্পরের পরিপূরক হওয়ায় বিনিময় কার্য সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু চাল চাওয়া ব্যক্তিটি কাপড়ের পরিবর্তে চাল না চেয়ে সরষের তেল চাইলে বিনিময় প্রথা কার্যকরী হবে না।

(২) মূল্য নির্ধারণে অসুবিধাঃ বিনিময় প্রথায় মূল্য পরিমাপের জন্য নির্দিষ্ট কোন মানদণ্ড নেই অর্থাৎ একটি বস্তুর কত পরিমাণের বিপরীতে অন্য বস্তুটি কত পরিমাণ সংগ্রহ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি বিনিময় প্রথায় ছিল না। তাই পণ্য বিনিময় প্রথায় দ্রব্যের মূল্যাংকনের  ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল।

(৩) বিভাজনের ক্ষেত্রে অসুবিধাঃ দ্রব্যসমূহের  বিভাজনীয়তা  গুণ না থাকার জন্য বিনিময় কার্য কঠিন হয়ে ওঠেছিল । উদাহরণস্বরূপ – একজন ব্যক্তির একটি ছাগল আছে, তার প্রয়োজন সামান্য লবণের। এক্ষেত্রে একটি ছাগলকে বিভক্ত করে লবণ সংগ্রহ করা অসম্ভব।

(৪) সঞ্চয়ের অসুবিধাঃ ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য মানুষ সঞ্চয় করতে চায়। পণ্য বিনিময় প্রথায় সঞ্চয় বলতে উৎপাদিত বস্তুর সঞ্চয়কে  বোঝায়। কিন্তু উৎপাদিত দ্রব্যগুলো দীর্ঘদিন সঞ্চয় করে রাখা সম্ভব নয়। কিছু কিছু বস্তু আছে যেগুলো অতি সহজে বিনষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য সঞ্চয়ের অসুবিধা দ্রব্য বিনিময় প্রথার একটি বড় সমস্যা ছিল।

প্রশ্ন ৫। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল পদ্ধতিগুলো আলোচনা করো।

উত্তরঃ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার সাধারণতঃ নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে থাকে।

(১) মুদ্রা সংক্রান্ত ব্যবস্থা: সরকার কর্তৃক গৃহীত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ব্যাঙ্কের হার নীতিটি উল্লেখযোগ্য। ব্যাঙ্কের হার হল সেই হার যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ঋণ প্রদান করে। যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক বাজারে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। পরিণামে ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণে নিরুৎসাহিত হয় এবং বাজারে ঋণ হ্রাস পেয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

(২) রাজকোষীয় নীতিঃ এই নীতিকে আয় এবং ব্যয় নীতিও বলা হয়। সরকারি ব্যয় কর্তন করে দেশের সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস করা যায় এবং মুদ্রাস্ফীতিও  হ্রাস করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন প্রকারের কর আরোপ করে জনসাধারণের হাতের সঞ্চিত মুদ্রা রাজকোষে  সঞ্চয় করা যায়। পরিণামে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে এবং মুদ্রাস্ফীতিও  নিয়ন্ত্রিত হবে। অধিকন্তু সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

(৩) উৎপাদন বৃদ্ধি নীতিঃ সরকার অব্যবহৃত সম্পদরাজি  সঠিকভাবে ব্যবহার করে উৎপাদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে, তা করলে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রীর বর্ধিত চাহিদার অনুপাতে যোগান বৃদ্ধি পেয়ে দামস্তর নিয়ন্ত্রিত হবে।

(৪) অন্যান্য ব্যবস্থাবলি: নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের গণবণ্টন  ব্যবস্থা, দ্রব্যের কালোবাজারি রোধ করা, কর ফাঁকি রোধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি প্রশাসনিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রশ্ন ৬। মুদ্রা কীভাবে বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ দূর করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মুদ্রা ব্যবহারের ফলে বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ দূর হয়েছে। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

(১) অভাবের সংগতিহীনতা বিনিময় প্রথার প্রধান অসুবিধা ছিল। মুদ্রা আবিষ্কারের ফলে এই অসুবিধা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেছে।

(২) মুদ্রার ব্যবহারের ফলে দ্রব্য অবিভাজ্যতার অসুবিধা দূর হয়েছে। এখন ছাগলের মালিক ছাগলকে মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে সেই মুদ্রার দ্বারা কিছু লবণ, কিছু মাছ, কিছু কাপড় সংগ্রহ করতে পারে।

(৩) মুদ্রাই হল মূল্যের মাপকাঠি। প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য পরিমাপের সাধারণ মানদণ্ড হিসাবে মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। অতএব প্রতিটি মুদ্রার পৃথক পৃথক বিনিময় নির্ধারণের প্রয়োজন নেই।

(৪) মুদ্রা এখন সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে। মুদ্রা আবিষ্কার সঞ্চয়কে সহজ ও সরল করে তুলেছে। মানুষ তার উদ্বৃত্ত সম্পদ মুদ্রা হিসেবে দীর্ঘকাল সঞ্চয় করে রাখতে পারে।

ওপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়, মুদ্রা ব্যবহারের ফলে বিনিময় প্রথার সকল অসুবিধা দূর হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। নগদ স্পৃহার ফাঁদ বা তরলতার ফাঁদ কী ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ অতি নিম্ন সুদের হারে মুদ্রার কল্পনাপ্রসূত চাহিদা অসীম হলে মুদ্রার চাহিদা রেখা অনুভূমিক হয়ে যায়। X অক্ষের সমান্তরাল এই অনুভূমিক অংশটি তারল্য ফাঁদের সৃষ্টি করে। মুলধন ক্ষতি হওয়ার আশংকায় এক্ষত্রে বণ্ডে বিনিয়োগ করতে জনগণ নিরুৎসাহিত হয়।

নিচে চিত্রের সাহায্যে নগদস্পৃহার ফাঁদ দেখানো হয়েছে।

মুদ্রার প্রত্যাশাভিত্তিক চাহিদা অসীম হওয়ায় L বিন্দুর পর চাহিদা রেখা OX- অক্ষের সমান্তরাল সরলরেখা হয়েছে। এই অংশটিই তারল্য ফাঁদ।

প্রশ্ন ৮। মুদ্রার কল্পনাপ্রসূত চাহিদার বিষয়ে বর্ণনা করো।

অথবা, 

মুদ্রার কল্পনাপ্রসূত চাহিদা কীভাবে সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কোনও ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করে অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি লাভ করার সম্ভাবনা যদি দেখা দেয়, ওই সময় বিনিয়োগের জন্য যদি কেউ কিছু অর্থ হাতে রাখে, তাহলে একে বলা হয় কল্পনাপ্রসূত চাহিদা। কল্পনাপ্রসূত চাহিদার সাথে সুদের হারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাজারে যদি সুদের হার বেশি হয়, তাহলে লোকের নগদ টাকা হাতে রাখার ইচ্ছা কম হবে। আবার সুদের হার যদি কম হয়, তাহলে নগদ টাকা হাতে রাখার ইচ্ছা বেশি হবে।

ওপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়, সুদের হার বৃদ্ধি পেলে কল্পনাপ্রসূত অভিপ্রায়ে মুদ্রার চাহিদা কমে যায় এবং সুদের হার হ্রাস পেলে কল্পনাপ্রসূত অভিপ্রায়ে মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। নিচের চিত্রে এই বিষয়টি দেখানো হল –

ওপরের চিত্র থেকে প্রতীয়মান হয়, মুদ্রার যোগান স্থির থাকলে বাজারের সুদের হারের সঙ্গে মুদ্রার কল্পনাপ্রসূত চাহিদার বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৯। মুদ্রার যোগান প্রসঙ্গে M1, M2, M3 এবং M4 এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

সামগ্রিক মুদ্রাগত সম্পদ রাশির বিকল্প সংজ্ঞা বর্ণনা করো।

উত্তরঃ কোনো এক নির্দিষ্ট সময়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রার মোট সমষ্টিকে মুদ্রার যোগান বলে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক চারটি বিকল্প মুদ্রাযোগানের হিসাব প্রকাশ করে থাকে। এগুলো হল M1, M2, M3 এবং M4

প্রশ্ন ১০। RBI এর নিষ্ক্রিয়ণ (Sterilisation) অভিযান কী ?

উত্তরঃ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রার যোগানে সৃষ্ট হওয়া বিভিন্ন বহিঃস্থ আঘাত সাধারণ অর্থনীতিতে কুপ্রভাব ফেলতে পারে। এর উত্তরণের জন্য RBI মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। এটাকে RBI র নিষ্ক্রিয়ণ অভিযান বলে। বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা ঋণপত্রে করা বিনিয়োগের ফলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হলে রিজার্ভ ব্যাংক নিজে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের সমপরিমাণের সরকারি ঋণপত্র মুক্ত বাজারে বিক্রির কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করে। ফলে অর্থনীতিতে দেখা দেওয়া প্রতিবন্ধকতা দূর করে RBI সুস্থির অবস্থা অক্ষত রাখার প্রয়াস চালায়। এই ধরনের কার্যকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের বন্ধ্যাকরণ অভিযান বা নিষ্ক্রিয়ণ অভিযান বলা হয়।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের একটি নমুনা উদ্বতপত্র (Balance Sheet) দেখাও।

উত্তরঃ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের উদ্বতপত্রের নমুনাঃ

প্রশ্ন ১২। আধুনিক অর্থনীতিতে মুদ্রার কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মুদ্রার কার্যাবলি সম্পর্কে ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘Money is a matter of functions four- a medium, a measure, a standard and a store’। এই কথা দ্বারা বুঝা যায়, মুদ্রা চার ধরনের কাজ করে। যে গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল –

(১) বিনিময়ের মাধ্যমঃ মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কার্য সম্পাদন করে। মুদ্রার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকায় সামগ্রীর বিনিময় মুদ্রার মাধ্যমেই হয়।

(২) মূল্যের মাপকাঠিঃ মুদ্রা মূল্যের মাপকাঠি হিসাবে কাজ করে। সকল অর্থনৈতিক দ্রব্যের মূল্য মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময় মূল্যকে দাম বলা হয়। মুদ্রা হিসাবের একটি সুবিধাজনক একক হিসাবে কাজ করে।

(৩) স্থগিত দেনা পাওনার মানদণ্ড: মুদ্রা শুধু তাৎক্ষণিক লেনদেনের মাধ্যম নয়। এটি ঋণদান, ঋণগ্রহণ ইত্যাদি সকল ধরনের স্থগিত লেনদেনেরও মাধ্যম। সমগ্র ঋণব্যবস্থা মুদ্রার ওপর প্রতিষ্ঠিত। মুদ্রাবিহীন ঋণব্যবস্থা অচল হয়ে যায়।

(৪) মূল্যের ভাণ্ডারঃ মুদ্রার মাধ্যমে সামগ্রীর মূল্য সঞ্চয় করে রাখতে পারা যায়। প্রয়োজন অনুসারে সঞ্চিত মুদ্রা সামগ্রীতে রূপান্তরিত করতে পারা যায়। সকল সম্পদের মধ্যে মুদ্রার তারল্যগুণ সর্বাধিক।

প্রশ্ন ১৩। সংকীর্ণ মুদ্রা এবং বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ M1 হচ্ছে সংকীর্ণ সংজ্ঞার মুদ্রা। অর্থাৎ জনসাধারণের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ, ব্যাংক সমূহের শুদ্ধ চাহিদা আমানত এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে জমা রাখা আমানত ইত্যাদির সমষ্টিই হল সংকীর্ণ মুদ্রা।

M3 হচ্ছে প্রশস্ত মুদ্রা বা বিস্তৃত মুদ্রা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের শুদ্ধ স্থির আমানত এবং ডাকঘর সঞ্চয় সংগঠনের নির্দিষ্ট সময়ের আমানত – এই দুটি আমানত সংকীর্ণ মুদ্রার সব আমানতের সঙ্গে যোগ করলে বিস্তৃত মুদ্রা হবে।

সংকীর্ণ মুদ্রায় মুদ্রার তারল্যতা অধিক থাকে কিন্তু বিস্তৃত মুদ্রায় মুদ্রার তারল্যতা কম থাকে। সংকীর্ণ মুদ্রা বিস্তৃত মুদ্রার একটি অংশ। বিস্তৃত মুদ্রায় সংকীর্ণ মুদ্রা অন্তর্ভূক্ত থাকে।

প্রশ্ন ১৪। RBI এর প্রয়োগ করা মুদ্রানীতির অস্ত্রগুলো কী কী ?

অথবা, 

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা ব্যবহৃত  মুদ্রানীতির ব্যবস্থাগুলি কী কী ?

উত্তরঃ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রার স্থিরতা রক্ষার জন্য ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই উদ্দেশ্যে রিজার্ভ ব্যাংক পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সামগ্রিকভাবে ঋণের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

নিম্নে RBI এর প্রয়োগ করা মুদ্রানীতির হাতিয়ারগুলো উল্লেখ করা হল।

পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাঃ

(১) ব্যাংক রেইটের হ্রাস-বৃদ্ধি।

(২) খোলা বাজারে কারবার।

(৩) নগদ জমা অনুপাত।

(৪) বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত।

গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাঃ

(১) ক্রেডিট রেশনিং বা ঋণ বরাদ্দ প্রথা।

(২) নৈতিক প্রণোদন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। মুদ্রার প্রাথমিক কার্য কী কী ?

উত্তরঃ মুদ্রা হল সর্বজন গ্রাহ্য বিনিময়ের এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম। মুদ্রার প্রাথমিক কার্যগুলি হল –

(১) মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কার্য সম্পাদন করে।

(২) মুদ্রা সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসাবে কার্য সম্পাদন করে।

(৩) মুদ্রা দেনা পাওনার মানদণ্ড রক্ষা করার কার্য সম্পাদন করে।

(৪) মুদ্রা হিসাবের একটি সুবিধাজনক একক হিসাবে কাজ করে।

প্রশ্ন ২। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্য কী কী ? 

অথবা, 

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কার্যাবলি লেখো।

উত্তরঃ (১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজী নোট প্রস্তুত করে।

(২) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে।

(৩) কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে লেনদেন করে মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধ করে।

(৪) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকের ব্যাংক হিসাবে কাজ করে।

(৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেষ ত্রাণকর্তা হিসাবে বিত্তীয় সাহায্য প্রদান করে।

(৬) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসাবে বিত্তীয় কার্যাবলি রূপায়ণ করে।

প্রশ্ন ৩। বাণিজ্যিক ব্যাংক কী ? বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি লেখো।

উত্তরঃ জনসাধারণের টাকা পয়সা সংগ্রহ করে আবার জনসাধারণকে ঋণ প্রদান করে বিত্তীয় কার্যাবলি সম্পাদন এবং লাভ অর্জন করা বিত্তীয় প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলিঃ

(১) বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানত গ্রহণ করে।

(২) বাণিজ্যিক ব্যাংক হ্রস্ব এবং দীর্ঘকালীন ঋণ প্রদান করে।

(৩) বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পদ এবং নগদ ধনের নিরাপত্তা প্রদান করে।

(৪) বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশপত্র আদি বিক্রি এবং ক্রয় করে।

(৫) বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানত সৃষ্টি করে।

(৬) বাণিজ্যিক ব্যাংক জনকল্যাণের জন্য বিত্তীয় সাহায্য প্রদান করে।

(৭) বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিময় বিল বাট্টাকরণ করে।

প্রশ্ন ৪। ‘বিমুদ্রাকরণ’-এর বিষয়ে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৮ নভেম্বর ২০১৬ সালে প্রচলিত ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করলেন। প্রচলিত মুদ্রাকে মুদ্রার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করাকে বিমুদ্রাকরণ বলে। 

বিমুদ্রাকরণের সুফলগুলি হলঃ

(১) ভারতবর্ষের সর্বাধিক কালো টাকার উদ্ধার।

(২) গরিবদের জন্য কাজের সুযোগ বৃদ্ধি

(৩) ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার শুদ্ধিকরণ

(৪) কর সংগ্রহে অভূতপূর্ব সাফল্য।

কালো টাকার উপর রাশ টানা, দুর্নীতি ও জাল নোট বন্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়েই বিমুদ্রাকরণ করা হয়।

বিমুদ্রাকরণের কুফলগুলি হলঃ

(১) নোট বাতিল প্রক্রিয়ার সময়ে প্রচুর পরিমাণে কালো টাকাকে সাদা করা হয়েছে।

(২) নোট বাতিলের সময়ে বহু মানুষ চাকুরি হারিয়ে বেকার হয়েছে।

(৩) নোট বাতিলের সময়ে ১০০রও বেশি মানুষ ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু হয়েছিল।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে কোনো চারটি কার্যাপ্রণালী সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি নিচে দেওয়া হল –

(১) সঞ্চয় গ্রহণঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠনের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করে। 

তিন প্রকারের জমা প্রচলিত আছে – 

(ক) চলতি জমা/‌ চাহিদা জমা। 

(খ) সঞ্চয় জমা। এবং 

(গ) স্থির জমা বা কাল জমা। 

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবসার মূল ভিত্তি হচ্ছে ব্যাংকের আমানত।

(২) ঋণের যোগান: বাণিজ্যিক ব্যাংক হ্রস্ব এবং দীর্ঘকালীন ঋণ প্রদান করে। ঋণ প্রদানের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক লাভ উপার্জন করে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক মাটি, সোনা, সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদি বন্ধকি হিসাবে গ্রহণ করে। ব্যাংক কৃষি, উদ্যোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা সংগঠনকে ঋণ প্রদান করে।

(৩) আমানতের সৃষ্টি: বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ মুদ্রা সৃষ্টি করে। সঞ্চয়কারীর জমা থেকে ব্যাংক উদ্ভূত আমানতের সৃষ্টি করে। ব্যাংক যখন ঋণ অনুমোদন করে তখন নগদ টাকা না দিয়ে একটি নতুন হিসাব খোলে। এই নতুন হিসাব বা আমানতই ঋণমুদ্রারূপে আত্ম প্রকাশ করে।

(৪) অন্যান্য কার্য: জনগণ ব্যাংকে মূল্যবান অলংকার, নথিপত্র ইত্যাদি নিরাপদে রাখার সুবিধা লাভ করে। আজকাল মানুষ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বা ভিসা কার্ডের সাহায্যে মূল্যবান বস্তু বাজার থেকে কিনতে পারে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অতি সহজে টাকা পাঠাতে পারে। জমাকারীরা ঘরে বসে ব্যাংককে নির্দেশ দিতে পারে এবং ব্যাংকের সেবা লাভ করতে পারে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ভারতের শীর্ষতম বিত্তীয় সংস্থা। 1935 সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। 1949 সালে এই ব্যাংকটির রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছিল। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রধান কার্যসমূহ নিচে দেওয়া হল।

(১) কাগজী নোট ছাপানোর অধিকার: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কাগজী নোট প্রস্তুত করে। এইজন্যই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংককে 200 কোটি টাকা মূল্যের সোনা এবং বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়। রিজার্ভ ব্যাংকের ছাপানো কাগজী মুদ্রা বিহিত মুদ্রা হিসাবে সমগ্র দেশে স্বীকৃত।

(২) সরকারের ব্যাংক: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংক হচ্ছে সরকারি টাকা পয়সার যোগানকারী, সরকারের পরামর্শদাতা এবং সরকারের প্রতিনিধি।

(৩) ব্যাংকসমূহের ব্যাংক: RBI ব্যাংক সমূহের ব্যাংক হিসাবে কাজ করে। RBI বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের হিসাব পরীক্ষা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের অন্তিম ঋণদাতা হিসাবে বিত্তীয় সাহায্য প্রদান করে।

(8) ঋণ নিয়ন্ত্রণ: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সম্প্রসারণের ফলে দেশে মোট মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি পায় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামী হয়। RBI নিয়ন্ত্রণমূলক পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করে মুদ্রাস্ফীতির হার কমাতে পারে। 

(৫) বৈদেশিক মুদ্রার রক্ষক: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রক্ষক। এছাড়াও RBI মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে।

(৬) উন্নয়নমূলক কার্য: ভারতবর্ষের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, NABARD, IDBI ইত্যাদি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাংক কৃষি ও শিল্পের বিকাশের জন্য অর্থ যোগানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ৩। আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ বা আয় ব্যয়ের বৃত্তস্রোত বর্ণনা করো। 

উত্তরঃ অর্থনীতিতে উৎপাদন ও ভোগ প্রক্রিয়া চলতে থাকার ফলে ফার্ম ও পরিবারের মধ্যে আয়-ব্যয় প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই প্রবাহ বৃত্তাকারে আবর্তিত থাকে। কারণ একটি ক্ষেত্রের ব্যয় অন্য ক্ষেত্রের আয় হিসাবে সৃষ্ট হয়। আয় এবং ব্যয়ের এই অবিরত প্রবাহকেই অর্থনীতিতে আয়ের বৃত্তাকার বা চক্রাকার প্রবাহ বলে।

নিচের চিত্রের সাহায্যে এই বৃত্তাকার প্রবাহের ধারণাটি ব্যাখ্যা করা হল-

ওপরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, উৎপাদনের উপকরণের যোগানদাতা হল পরিবারবর্গ। ওই উপকরণ বিক্রি করে পরিবারবর্গের আয় হয়, যা ফার্মের ব্যয় অর্থাৎ ফার্মের ব্যয়ই পরিবারের আয় হিসাবে সৃষ্টি হচ্ছে। আবার, পরিবারের সদস্যরা যখন দ্রব্যসামগ্রী কিনতে এই অর্থ ব্যয় করবে, তখন ওই অর্থ আবার ফার্মের কাছে গিয়ে পৌঁছবে। অর্থাৎ যেখান থেকে শুরু করা হচ্ছে, সেখানেই শেষ হচ্ছে বলে একে আয়ের চক্রীয় প্রবাহ বলা হয়।

প্রশ্ন ৪। কেন্দ্রীয় ব্যাংকৃত ঋণ নিয়ন্ত্রণের তিন প্রকার পন্থা ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রয়োগ করা মুদ্রানীতির তিনটি হাতিয়ার বা অস্ত্র ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

একটি অর্থনীতির মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলি কীভাবে ব্যবহার করবে ?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে রিজার্ভ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব হল মুদ্রার যোগানের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কার্য সম্পাদন করা। এই কার্য সম্পাদন করার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দুই শ্রেণির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আশ্রয় গ্রহণ করে। পরিমাণগত ব্যবস্থা এবং গুণগত ব্যবস্থা। 

RBI- এর প্রয়োগ করা মুদ্রানীতির হাতিয়ার সমূহ হলো-

(১) ব্যাংকের হার: ব্যাংকের হার হল সেই হার যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে। মুদ্রাস্ফীতির সময় ব্যাংকের হার বৃদ্ধি করা হয় যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, পরিণামে ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণ নিরুৎসাহিত হয় এবং বাজারে ঋণ হ্রাস পেয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার, মুদ্রা সংকোচনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট প্রসারের জন্য ব্যাংক রেইট হ্রাস করে।

(২) মুক্ত বাজার অভিযান: মুক্ত বাজার অভিযান বলতে বোঝায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সরকারি ঋণপত্র ক্রয় বিক্রয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে ঋণপত্র বিক্রয় করলে ক্রেতারা ব্যাংক আমানত থেকে টাকা তুলে ওর দাম প্রদান করে। ফলে ব্যাংক আমানত হ্রাস পায় এবং ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও হ্রাস পায়। বাজারে ঋণ হ্রাস পেয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

(৩) ঋণ বরাদ্দ প্রথা: ঋণ বরাদ্দ প্রথা হল RBI এর ঋণ নিয়ন্ত্রণের গুণগত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অনুসারে, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ ঋণ প্রদান করতে পারবে তার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। এছাড়া, ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট হতে কী পরিমাণ ঋণ ব্যাংক রেটে আনতে পারবে তাও স্থির করে দেয়।

(৪) নৈতিক প্রণোদন: অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে RBI এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে বলে ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও অন্যান্য ব্যাংকগুলোর নিকট অনুরোধবার্তা বা নির্দেশ নামা পাঠিয়ে ওদের বিচারবুদ্ধির নিকট আবেদন করতে পারে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top