Class 12 Economics Chapter 8 উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ণ: একটি মূল্যায়ন

Join Roy Library Telegram Groups

Hello Viewers Today’s We are going to Share With You, The Complete Bengali Medium Syllabus of AHSEC Board Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 8 উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ণ: একটি মূল্যায়ন with you. Are you a Student of Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 8 উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ণ: একটি মূল্যায়ন Which you Can Download Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 8 উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ণ: একটি মূল্যায়ন for free using direct Download Link Given Below in This Post.

Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 8 উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ণ: একটি মূল্যায়ন

Today’s We have Shared in This Post, HS 2nd Year Economics in Bengali Solutions for Free with you. HS 2nd Year Economics in Bengali Notes I Hope, you Liked The information About The Class 12 Economics Question Answer in Bengali PDF. if you liked Assam AHSEC HS 2nd Year Economics in Bengali Questions and Answers Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। অর্থনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে LPG কৌশল সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ LPG Strategy অর্থাৎ Liberalisation, Privatisation and Globalisation বা পরিভাষায় উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়নের প্রকৌশল হল এক ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল। এই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রদর্শক হল বিশ্ব ব্যাংক। ভারতীয় অর্থনীতিতে বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে গৃহিত হয় এই কৌশল। সেখানে রপ্তানি বৃদ্ধি করে লেনদেনের ঘাটতির সমস্যা সমাধান করে একটি স্বনির্ভরশীল অর্থনৈতিক বাতাবরণ গড়ে তোলার বন্দোবস্ত করা হয়। তবে শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিকরণের কৌশলের তা সীমাবদ্ধ ছিল না। অর্থনীতিকে প্রতিযোগিতামুখী করে তুলে উৎপাদন উপকরণের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোই ছিল এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য।

বস্তুতপক্ষে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্তিমলগ্নে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেগুলিকে সমাধানের উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই কাঠামোতে সামঞ্জস্যবিধানের কর্মসূচিগুলি হল – উদারিকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়ন বা সংক্ষেপে LPG কৌশল। এই কর্মসূচি রূপায়নে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হয়ে ভারত বিশ্ব ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করে।

ভারতীয় অর্থনীতিতে এই নতুন উন্নয়ন কৌশল দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারি নিয়ন্ত্রণবিধি শিথিল করে অর্থাৎ লাইসেন্সিং প্রথা থেকে শুরু করে ব্যাংকের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উদারিকরণ এবং ভোক্তা ও উৎপাদনকারীদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বাড়িয়ে এক উদার অর্থনৈতিক বাতাবরণ সৃষ্টির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

পাশাপাশি, বেসরকারিকরণ কৌশল গৃহীত হয় মূলত সরকারি লোকসানগত ক্ষেত্রগুলির বিলগ্নিকরণ তথা বেসরকারিকরণের মাধ্যমে । উদারিকরণ ও বেসরকারিকরণের সাথে সাথে বিশ্ব অর্থনীতির মাঝে ভারতকে মুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে অবাধ বাণিজ্যের পথ সুগম হয়। এটাকে বিশ্বায়ন বলা হয়।

প্রশ্ন ২। বেসরকারিকরণ কী ? ভারতের প্রসঙ্গে বেসরকারিকরণের স্বপক্ষে তিনটি এবং বিপক্ষে তিনটি যুক্তি দেখাও।

উত্তরঃ সরকারি মালিকানা ও কর্তৃত্বাধীন কোনো সংস্থার শেয়ার সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করাকে বেসরকারিকরণ বলে। বারবারা লি এর মতে, যে সাধারণ পদ্ধতির দ্বারা সরকারি মালিকানা বা পরিচালনাধীন কোনো সংস্থায় বেসরকারি ক্ষেত্রকে মালিকানা বা পরিচালনার শরিক করা হয় তাকে বেসরকারিকরণ বলে।

ভারতে বেসরকারিকরণের পক্ষে যুক্তি –

(১) ভারতে সরকারি ক্ষেত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এর পরিচালনা অদক্ষ। অনেক সরকারি ইউনিটে লোকসান চলছে। উৎপাদনে ক্ষমতা ব্যবহারের মাত্রা ও খুব কম। তাদের আমলাতান্ত্রিকতাও খুব বেশি। তাদের কাজকর্মে স্বাধীনতা কম এবং উৎসাহের অভাব।

(২) সরকারি উদ্যোগে প্রতিযোগিতার অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব হয় না। উদ্বৃত্ত উৎপাদন ক্ষমতা থেকে যায়। বেসরকারিকরণের ফলে উদ্যোগগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। ফলে একদিকে উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে ব্যয় হ্রাস পাবে।

(৩) সরকারি ক্ষেত্রের ইউনিটগুলি দুর্নীতিপূর্ণ এবং অপচয়মূলক। বেসরকারিকরণ এই অপচয় দূর করবে বলে আশা করা যায়। অধিকন্তু, বেসরকারিকরণের ফলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমবে। তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

(৪) অলাভজনক সরকারি সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ ঘটালে সরকারের আর্থিক দায় হ্রাস পাবে। ফলে বাজেটও কমবে।

ভারতে বেসরকারিকরণের বিপক্ষে যুক্তিঃ

(১) সরকারি ক্ষেত্রের লক্ষ্য হল জনগণের কল্যাণ আর বেসরকারি ক্ষেত্রের‌ লক্ষ্য হল ব্যক্তিগত মুনাফা। সুতরাং বেসরকারিকরণের ফলে সামাজিক কল্যাণের হ্রাস ঘটবে।

(২) বেসরকারিকরণের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটবে এবং অসাম্য বৃদ্ধি পাবে। আয় ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য বাড়বে।

(৩) বেসরকারিকরণে ফলে শ্রমিক শোষণ বৃদ্ধি পাবে। কাজের নিরাপত্তা কমবে এবং শিল্প বিরোধ বাড়বে।

(৪) শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি সেবামূলক ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ ঘটলে এগুলি নিম্ন আয়ের লোকেদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

প্রশ্ন ৩। বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও। বিশ্বায়নের তিনটি সুবিধা ও তিনটি অসুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বিশ্বায়ন কথাটির অর্থ হল বিশ্বের অর্থনীতিগুলির একে অপরের মধ্যে সংহতি সাধন। বিশ্বায়ন তখনই ঘটবে যখন উৎপাদিত দ্রব্য ও উৎপাদনগুলি অবাধে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সঞ্চালিত হবে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি একটি একক অর্থনীতিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ সারা বিশ্ব অর্থনীতি একটি বিশ্বপল্লির রূপধারণ করে যেখানে উৎপাদন উপকরণের সঞ্চালনের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক, আন্তর্জাতিক কর, লাইসেন্স ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধ বলে কিছুই থাকবে না। এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, মূলধনের সঞ্চালন ও অর্থের আদান-প্রদান সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিধির শূন্যতা পরিলক্ষিত হয়।

বিশ্বায়নের সুবিধাসমূহঃ

(১) বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রগুলো একটি সীমান্তহীন বিশ্বের দিকে যাত্রা করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে স্বাধীন এবং মুক্তভাবে পণ্যসামগ্রী, মূলধন, তথ্য প্রযুক্তি, শ্রম আদির  আদান প্রদানের মাধ্যমে সংহতি সম্ভব হয়।

(২) বিশ্বায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। উৎপাদনের মান ও উৎকর্ষ উভয়ই বর্ধিত হয়।

(৩) বিশ্বায়নের ফলে যে দেশে মূলধন বেশি সে দেশে মূলধন নিবিড় কৌশলের মাধ্যমে এবং যে দেশে শ্রম বেশি সে দেশে শ্রম নিবিড় কৌশলের মাধ্যমে উৎপাদন কার্য সম্পন্ন করে থাকে। ফলস্বরূপ, উৎপাদন উপকরণের আয় বৃদ্ধি পায়।

(৪) বিশ্বায়নের ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বায়নের অসুবিধা-

(১) বিশ্বায়নের প্রভাবে দেশে আয় বৈষম্য ব্যাপকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

(২) বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির আধিপত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে বেসরকারিকরণের মন্দ প্রভাব হাতছানি দিচ্ছে।

(৩) বিশ্বায়নের ফলে মুনাফাকেন্দ্রিক চিন্তাধারা বিনষ্ট এবং বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

(৪) বিশ্বায়নের প্রভাব দেশে অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা মাথা চাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া, বিশ্বমানের অর্থ ব্যবস্থায় কোনো একটি দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্বের প্রায় সব দেশে।

প্রশ্ন ৪। উদারিকরণের সংজ্ঞা দাও। উদারিকরণের তিনটি সুবিধা ও তিনটি অসুবিধা লেখো।

উত্তরঃ দেশের অর্থনীতির ওপর থেকে সবরকম কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে প্রতিযোগিতার পরিবেশে বেসরকারি উদ্যোগকে অবাধে কাজ করতে দেওয়ার নীতিকে উদারিকরণ বলা হয়। দেশের অভ্যন্তরে বাজার ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ সহ বিভিন্ন সংস্কার সাধন এবং বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাণিজ্যের কৃত্রিম বাধা দূর করার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়।

উদারিকরণের সুবিধাঃ

(১) দেশীয় ও বিদেশ উদ্যোগে বেসরকারি শিল্পের অবাধ প্রবেশাধিকার প্রতিযোগিতার যে বাতাবরণ তৈরি করে তা নিয়ন্ত্রণ ও আমলাতন্ত্রের জাল থেকে শিল্পজগতকে উদ্ধার করে শিল্পোন্নয়নের গতি বাড়িয়ে দেয়।

(২) বিদেশে পুঁজির ও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ পুঁজিস্বল্পতার সমস্যা দূর করবে তেমনি উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ পাবে ভারতীয় শিল্প।

(৩) উদারিকরণের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অনুপ্রবেশ ঘটে। বহুজাতিক সংস্থাগুলি উন্নয়নশীল দেশসমূহের স্বল্পহারে সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের সমস্যাটিকে দূরে সরিয়ে উচ্চস্তরে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক হয় এবং তার ফলে দেশের জাতীয় ও মাথাপিছু আয় দ্রুত হারে বাড়ে।

(৪) ভারতবর্ষে বহুজাতিক সংস্থাগুলি দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং‌ সামাজিক মূলধন গঠনের সহায়ক হয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের পরিবহন ও সংবাদ আদান প্রদানের ক্ষেত্রে, সেচ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছে। এর ফলে ভারতের উৎপাদিকা শক্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উদারিকরণের অসুবিধা-

(১) উদারিকরণের ফলে বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশ দেশীয় শিল্পগুলোকে গ্রাস করবে। নতুন শিল্পনীতি আত্মনির্ভর অর্থনীতির পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারবে না বরং যা গড়ে উঠেছিল তা ভেঙে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

(২) উদারিকরণের ফলে অবাধ ঋণের অনুপ্রবেশ, বিদেশি পুঁজির কর্তৃত্ব এবং তার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি দেশের সম্পদ চালানের নতুন নালী তৈরি করছে বলে সমালোচকরা মনে করেন।

(৩) উদারিক্ররণের ফলে কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে, আয় বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে এবং ভারতের অর্থনীতি বিদেশি ও দেশীয় একচেটিয়া পুঁজির মৃগয়াক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে বলে অনেকে মনে করেন।

(৪) উদারিকরণের ফলে বিদেশি মূলধনের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বিদেশি মূলধন ভারতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের নামে অনেক সময় পুরানো ও বাতিল প্রযুক্তি আমদানি করেছে, হালকা ভোগ্যদ্রব্য যেমন – আলুভাজা, ঠাণ্ডা পাণীয়, শ্যাম্পু, সাবান ইত্যাদি উৎপাদনের বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে। এর ফলে দেশীয় ক্ষুদ্র শিল্পের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্যের আমদানি বাড়ছে। 

প্রশ্ন ৫। ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবর্তনের জন্য দায়ী উপাদানগুলির সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া কেন আরম্ভ হল আলোচনা করো।

উত্তরঃ 1980 এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতীয় অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ সংকটের সম্মুখীন হয়। এই সংকটগুলি মোকাবিলা করার জন্যই অর্থনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন বা সংস্কার আনা হয়।

সংক্ষেপে এই সংকটগুলি নিম্নরূপ –

(১) ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি: 1982-83 সালে দামস্তর প্রায় স্থিতিশীল ছিল। ঐ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার 2.9% ছিল । সমগ্র ষষ্ঠ পরিকল্পনাকালে (1980-85) দামস্তর গড়ে বার্ষিক ৪% হারে বাড়ে। সপ্তম পরিকল্পনাকালেও (1985-90) দামস্তরের গতি দৃঢ়ভাবে ঊর্ধ্বমুখী। এই মুদ্রাস্ফীতির পিছনে একটি বড়ো কারণ হল বাজেট ঘাটতি। স্বভাবতই‌ সরকারের আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে শৃঙ্খলা আনার প্রয়োজন দেখা দেয়।

(২) ঘাটতি ব্যয় বৃদ্ধি: সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ঘাটতি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল 14000 কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতি ঘাটতি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় 28260 কোটি টাকা। ঘাটতি ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি। সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য ভর্তুকি তুলে দেওয়া এবং অলাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করার কথা ভাবা হল। পাশাপাশি, সরকারি ক্ষেত্রের বিলগ্নিকরণ ঘটিয়ে ও সরকারি আয় বাড়াতে উদ্যোগী হয়। সুতরাং ক্রমবর্ধমান ঘাটতি ব্যয় ও নয়া অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তনের পিছনে একটা শক্তি হিসাবে কাজ করছে।

(৩) লেনদেন বাণিজ্যের ঘাটতি: 1990-91 সালে ভারতের লেনদেন বাণিজ্যের ঘাটতি এক বিপুল আকার ধারণ করে। 1991 সালের মে মাসে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিলের পরিমাণ 2600 কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। এই বৈদেশিক মুদ্রার সাহায্যে মাত্র দু- সপ্তাহের আমদানির ব্যয় মেটানো সম্ভব। অবস্থা এত খারাপ হয় যে, বিদেশি ঋণের কিস্তি মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। RBI 46.9 টন সোনা Bank of England এর কাছে বন্ধক রেখে 40 কোটি ডলার ধার করে। লেনদেন ঘাটতির দরুণ এবং বিদেশি ঋণের বোঝা মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে বিশ্বব্যাংক থেকে যে বিশাল ঋণ নিতে হয় তারই শর্ত সাপেক্ষে ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হয়।

(4) GATT চুক্তি: GATT-এর ডাঙ্কেল খসড়ায় ভারত সরকার সম্মতি জানায়। এই চুক্তি অনুযায়ী শিল্পোৎপাদন ও আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধি নিষেধ তুলে নিতে ভারত অঙ্গীকার করে।

প্রশ্ন ৬। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সংস্কারের বিভিন্ন দুর্বলতাগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ 1956 সালের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল সাপেক্ষে যে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের কাঠামো গড়ে উঠেছিল তার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে একটি ধনতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু হয় 1991 সালের নতুন শিল্পনীতিতে। এই নতুন অর্থনৈতিক নীতিতে সরকারি ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ, সরকারি নীতির উদারিকরণ ও বিশ্বায়নের নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি করা হল। তবে, এই অর্থনৈতিক সংস্কার সর্বজনসম্মত হয়েছে বলে মনে হয় না। এই সংস্কার পদক্ষেপের কিছু সমস্যা বা দুর্বলতা আছে। 

এগুলি হল –

(১) নতুন শিল্পনীতিতে বেসরকারিকরণের যে নীতি অনুসৃত হচ্ছে তাতে বেসরকারি শিল্পগুলি তাদের লাভের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর তাগিদে দেশে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার বাতাবরণ গড়ে তুলেছে যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পরিপন্থি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(২) বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলিকে এদেশে বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কিন্তু এই বহুজাতিক সংস্থাগুলির সামান্যতম সামাজিক দায়িত্ববোধ নেই। এরা‌ শুধু নিজের দেশে মুনাফা পাঠাতেই আগ্রহী। মূল্য ও ভারী শিল্পে এবং পরিকাঠামো শিল্পে এরা বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। এরা বরং পটাটো চিপস্, নরম পানীয়, শ্যাম্পু, সাবান, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি উৎপাদনে বেশী উৎসাহী কারণ এগুলি থেকে দ্রুত মুনাফা পাওয়া যায়।

(৩) নয় শিল্পনীতি অনুসরণে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অনুপ্রবেশের ফলে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি গোড়ার দিকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, যেহেতু বিদেশি শিল্পগুলি উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর। সেই ধারা আজও বয়ে চলেছে।

(৪) বাজারকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। মূলধনজনিত বিকাশের দ্বারা শ্রমিকের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে, ফলে বেকারত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের জন্য ভরতুকি (Subsidy) হ্রাস পাচ্ছে।

(৫) পণ্য সামগ্রীর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ ভোগবাদী অর্থনীতির সৃষ্টি করলে তা মানুষের নৈতিকতার প্রতি প্রত্যাহ্বান (Challenge) হতে পারে।

(৬) নতুন নীতিতে শুধু যোগানের দিকটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চাহিদার‌ দিকটি উপেক্ষিত থেকেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে আয় বণ্টনের বৈষম্য বাড়বে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মার খাবে, এর ফলে নিয়োগও কমবে এসবের প্রভাবে দেশের মোট চাহিদা কমবে। ফলে শিল্পের অগ্রগতি রুদ্ধ হবে।

প্রশ্ন ৭। ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক সংস্কারের ইতিবাচক দিক বা সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, 

নতুন অর্থনৈতিক সংস্কারের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ অর্থনৈতিক সংস্কারের ইতিবাচক দিক হল –

প্রথমত, নতুন শিল্পনীতি বিদেশি মূলধন ও প্রযুক্তি আনতে সাহায্য করবে। দেশীয় শিল্পপতিদের মধ্যে ও প্রতিযোগিতার আবহাওয়া সৃষ্টি হবে। এতে দক্ষতা বাড়বে এবং শিল্পের অগ্রগতির হার বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের সরকারি ক্ষেত্রে উন্নতির হার আশাপ্রদ নয়। এগুলি অনেকক্ষেত্রেই অলাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রের পরিধি কমলে সম্পদের অপচয় কমবে, প্রকল্পের সময় ও ব্যয় কমবে।

তৃতীয়ত, সংস্কারোত্তর ভারতে শিল্পোৎপাদনে এক বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন ঘটেছে।‌ বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে ও তথ্য প্রযুক্তিগত শিল্পে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে।

চতুর্থত, সংস্কারোত্তর ভারতে সেবা বিভাগের দ্রুত উন্নতি ঘটে। সফটওয়্যার পরিষেবার আউটসোর্সিং এর মত তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের মোট আন্তর্জাতিক বাজারের 65% ভারতের দখলে আছে। এছাড়া বি. পি. ও. শিল্পে 46% ভারত নিজের দখলে রেখেছে। সংস্কারোত্তর ভারতে এটাই ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল সাফল্য বলে মনে করা হয়।

প্রশ্ন ৮। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে কোন চারটি সাফল্যের ক্ষেত্র এবং যে কোনো চারটি দুর্বলতার ক্ষেত্র সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করো।

অথবা, 

1991 সালের পরে ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলির প্রধান সফলতাগুলি এবং বিফলতাগুলি অঙ্গুলি নির্দেশ করো।

উত্তরঃ ভারতের পরিকল্পনার যুগ শুরু হয় 1951 সালে। এরপর বারটি পঞ্চবার্ষিক ও কয়েকটি বার্ষিক পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে। 

পরিকল্পনার সাফল্যের দিকগুলি সংক্ষেপে‌ নিম্নরূপ-

(১) ভারতের পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধি করা। এই উদ্দেশ্য পূরণে পরিকল্পনার সময়কালে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে।‌ দেশে প্রকৃত মাথাপিছু আয় বার্ষিক গড়ে হারে পরিকল্পনার সময়কালে বৃদ্ধি পেয়েছে।

(২) স্বনির্ভরশীলতা অর্জন করা ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। বর্তমান ভারত খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ভারতে বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় 250 মিলিয়ন টন, 1951 সালে খাদ্যশস্য উৎপাদিক হত 50 মিলিয়ন টন।

(৩) ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল আধুনিকীকরণ। যোজনাকালে দেশের জাতীয় আয়ে শিল্প ও সেবার তুলনায় কৃষির অবদান কমছে। বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতির সেবাক্ষেত্রে GDP-র 50% এর বেশি উৎপাদিত হয়। দেশের উৎপাদনে ও রপ্তানিতে যে বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে ‌তা থেকে আধুনিকীকরণের ছাপ অনেক বেশি প্রতিফলিত হচ্ছে বলা যায়।

(৪) পরিকল্পনাকালে শক্তি, জলসেচ, পরিবহন ও যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে‌ প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। এর ফলে শিল্পায়নের ভিত্তি বিস্তৃত ও সুদৃঢ় হয়েছে। ভারতের শিল্প এখন শক্ত বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত।

ভারতীয় পরিকল্পনার ব্যর্থতা –

অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকালে যেমন চমকপ্রদ সাফল্য এসেছে তেমনি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনার শোচনীয় ব্যর্থতাও রয়েছে। 

সেই ব্যর্থতাগুলিকে সংক্ষেপে নিম্নলিখিতভাবে সাজানো যেতে পারে –

(১) দীর্ঘ সাত দশক পরিকল্পনার কাল অতিবাহিত হওয়ার পরেও ভারতীয় জনসংখ্যার প্রায় এক-চুতর্থাংশ লোক দারিদ্ররেখার নীচে বাস করে। ভারতীয় পরিকল্পনার এটি সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা।

(২) ভারতে পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হল সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে সাম্যের নীতি বজায় রাখার জন্য যে সব প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি পরিকল্পনায় গৃহীত হয় তা বাস্তবায়নে সরকার বহুলাংশে ব্যর্থতায়‌ পর্যবসিত হয়েছে। আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতি তেমন একটা হয়নি বললেই চলে।

(৩) ভারতের পরিকল্পনা যথেষ্ট সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে নি। এর‌  ফলে প্রতিটি পরিকল্পনার শেষে বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। ভারতীয় পরিকল্পনার‌  এটি অন্যতম ব্যর্থতা।

(৪) প্রতিটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষে ভারতে কালো টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐ কালো টাকা খুঁজে বের করার সরকারি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, “Much have been done, yet much remains to fulfill”

প্রশ্ন ৯। ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প (IT Industry) এর সম্ভাবনা সম্বন্ধে যা জানো‌ লেখো।

উত্তরঃ বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তি শিল্প একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তথ্য প্রযুক্তি শিল্প বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের ঢেউ তুলেছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে তার প্রভাব প্রতিভাত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কম্পিউটারের ব্যবহারের যে ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তারই পরিণতি হল তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তি শিল্প কম্পিউটারের সমার্থক – যেখানে কম্পিউটারের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়ক যন্ত্রপাতিগুলি জ্ঞানের পরিধি বিকাশে সাহায্য করছে।

1994 সাল থেকে ভারতে তথ্য প্রযুক্তি শিল্প যে ভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে তা সত্যিই এদেশের অগ্রগতির পথে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। 2004-05 এর আর্থিক বছরে ভারত তথ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত সেবাকার্যে যে অকূল সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে তার প্রমাণ হিসাবে বলা যায় ভারত এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের 65 শতাংশে অধিকার এনেছে এবং বিশ্বব্যাপী BPO বাজারের 46 শতাংশ হস্তগত করেছে ভারত। ন্যাসকমের তথ্যানুসারে এই শিল্প থেকে ভারত 2012-13 আর্থিক বছরে মোট  100 মিলিয়ন আমেরিকান ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করে – সেখানে রপ্তানি আয় 69 বিলিয়ন আমেরিকান ডলার এবং অভ্যন্তরীণ আয় 31 বিলিয়ন আমেরিকান ডলার ছিল। 2015 সালে এই শিল্পে নিয়োগের পরিমাণ ছিল 14 মিলিয়ন।

প্রশ্ন ১০। 1991 সালের শিল্পনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ 1991 সালের 24 জুলাই ভারত সরকার নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করে। 

এই শিল্পনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

প্রথমত, এই শিল্পনীতিতে সরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকাকে সীমিত করা হয়েছে। মাত্র আটটি শিল্পকে সরকারি ক্ষেত্রের আওতায় রাখা হয়েছে। যেমন – রেল পরিবহন, কয়লা এবং লিগনাইন, আণবিক শক্তি, আকরিক লোহা, সোনা এবং হিরে উৎপাদন,‌ খনিজ তেল ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, নতুন শিল্পনীতিতে লাইসেন্স ব্যবস্থাকে আরও সরল করা হয়েছে। মাত্র 18 টি শিল্পের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই 18 টি শিল্প ছাড়া কোনো শিল্পেই লাইসেন্স লাগবে না।

তৃতীয়ত, মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার অনেক উদারনীতি গ্রহণ করেছে।‌ যেমন, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত 34 টি শিল্পে বিদেশি মূলধন কোম্পানীর মোট মূলধনের 51% পর্যন্ত হতে পারবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদেশি মূলধন 100% পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। তাছাড়া, ব্যাংক, বিমা প্রভৃতি পরিষেবামূলক ক্ষেত্রে বিদেশি মূলধনকে প্রবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

চতুর্থত, FEMA আইন সংশোধন করা হয়েছে। নতুন আইনের নাম Foreign Exchange Management Act বা FEMA এই আইনের দ্বারা বিদেশি কোম্পানি স্বদেশি কোম্পানির মধ্যে বিভেদমূলক আচরণ দূর হয়েছে।

পঞ্চমত, দেশীয় বড়ো শিল্পপতিদের অবাধে বিনিয়োগ করার ক্ষমতা এখন দেওয়া হয়েছে। এই বড়ো শিল্প সংস্থাগুলোর ওপর MRTP আইনের যে কড়াকড়ি ছিল, তা‌ শিথিল করা হয়েছে। সর্বোপরি, বিদেশি কৃৎকৌশল আমদানি করার ঢালাও অনুমতি এই শিল্পনীতিতে দেওয়া হয়েছে।

ষষ্ঠত, বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি যাতে ভারতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়‌সে সম্পর্কে আলোচনার জন্য Foreign Investment Promotion Board অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগ প্রসার পর্ষদ গঠন কার হয়েছে।

প্রশ্ন ১১। অর্থনৈতিক উদারিকরণ প্রক্রিয়া চলাকালীন ভারতে শিল্পোৎপাদন কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সংস্কার পরবর্তী সময়ে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার আশানুরূপ না হওয়ার কয়েকটি কারণ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথমত, সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে অনেক শিল্পই গড়ে উঠেছিল সংরক্ষণের ছত্রছায়ায়। সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমদানি শুল্ক কমিয়ে ফেলা হয়। ফলে হঠাৎ বিদেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় অনেক শিল্পই। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূলধনি দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প কারণ মূলধনি দ্রব্যের আমদানি করা সহজলভ্য হয়ে গিয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, সরকারি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগও হ্রাস পায়।‌ ফলে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়।

তৃতীয়ত, শিল্পক্ষেত্রের অসন্তোষজনক বৃদ্ধির হারের জন্য দায়ী অন্যতম কারণ পরিকাঠামোর অভাব। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন ও যোগাযোগের অভাব, বন্দরের অপ্রতুল‌ সুবিধা, রাস্তার বেহাল অবস্থা প্রভৃতি বিষয় বিনিয়োগ করতে বাধার সৃষ্টি করে।

চতুর্থত, শিল্পক্ষেত্রের বিকাশের জন্য মূলধনের বাজারকে সুস্থিত (orderly)‌ হতে হবে। কিন্তু সংস্কার পরবর্তী সময়ে ভারতে মূলধনের বাজারে দুটি কেলেঙ্কারি দেখা দেয় একটি 1992 সালে এবং অপরটি 2001 সালে। এগুলির ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।

পঞ্চমত, সংস্কার পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবছর রপ্তানি খুব অল্পহারে বেড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্যের গুণগতমান বজায় না রাখা, ঠিক সময়ে মাল ডেলিভারি দিতে না পারা প্রভৃতি। রপ্তানি বৃদ্ধির হার কম হওয়ায় রপ্তানি নির্ভর শিল্পগুলি উৎপাদনের হারও কম হয়।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দশকে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হয়নি।

প্রশ্ন ১২ । পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কাকে বলে ?

উত্তরঃ আমরা জানি রিজার্ভ ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ঋণ নিয়ন্ত্রণ। পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাহায্যে রিজার্ভ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কর্তৃক প্রদত্ত মোট ঋণের পরিমাণ বাড়ায় বা কমায়। ব্যাংক রেট, খোলা বাজারের কার্যকলাপ, জমার অনুপাতে পরিবর্তন এই তিনটি ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলে।

ব্যাংক রেট হল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি যখন‌‌ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেবে তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই হারে সুদ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছা করলে এই ব্যাংক রেট বাড়াতে বা কমাতে‌ পারে।

খোলা বাজারের কার্যকলাপ বলতে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাজার থেকে‌ সরকারি ঋণপত্রগুলি কিনে নেওয়া বাজারে সরকারি ঋণপত্র বিক্রি করাকেই বুঝি।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের আমানতের একটি নির্দিষ্ট অনুপাত রিজার্ভ আকারে রাখতে হবে। এই নির্দিষ্ট অনুপাতকে নগদ জমার অনুপাত (Cash reserve ratio) বলা হয়। এই নগদ জমার অনুপাতকে বাড়ানো বা কমানোর‌ ক্ষমতাকে পরিবর্তনীয় জমার অনুপাত পদ্ধতি বলা হয়

প্রশ্ন ১৩। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দুটি কাজ উল্লেখ করো। WTO তে যোগদান করার ফলে ভারতের দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ WTO বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দুটি কাজ নিম্নরূপ –

(১) বিভিন্ন দেশের মধ্যে বহুমুখী বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তারের উদ্দেশ্যে কাজ করা।

(২) সদস্য দেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো বিরোধ দেখা দিলে সেই বিরোধের মীমাংসা করা।

WTO তে যোগদানের ফলে ভারতের দুটি সুবিধা নিম্নরূপঃ

(১) উন্নত দেশগুলি কৃষিজাত দ্রব্যের উপর আমদানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলে ভারতের কৃষিজাত দ্রব্যের রপ্তানি বাড়বে।

(২) সেবাকার্যের আমদানি-রপ্তানি উদারিকরণ করা হলে ভারত বিদেশে শ্রম সেবা রপ্তানি করতে পারবে। ব্যাংকিং, বিমা প্রভৃতি পরিষেবাও রপ্তানি করতে পারবে।

WTO তে যোগদানের ফলে ভারতের দুটি অসুবিধা নিম্নরূপ –

(১) Patent আইনে পরিবর্তন আনার ফলে উৎপন্ন দ্রব্যের, বিশেষ করে ওষুধপত্রের দাম বাড়বে।

(২) পরিষেবার ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটলে প্রতিযোগিতায় স্বদেশি কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

We Hope the given Class 12 Economics Question Answer in Bengali PDF will help you. If you Have any Regarding, HS 2nd Year Economics in Bengali PDF, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top