Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Notes in Bengali PDF Download. SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Suggestions in Bengali. SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Notes in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 9 Social Science Chapter 2 ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ
প্রথম খন্ড : ইতিহাস
পাঠ্য পুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
● অতি সংক্ষিপ্ত/ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষের প্রধান কারণটি কি ? সময় উল্লেখ করে লিখ।
উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষের প্রধান কারণ হল ঊনবিংশ শতকের ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ।
প্রশ্ন ২। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের রচিয়তা কে ?
উত্তরঃ ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের রচিয়তা হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ৩। ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা……’ গানটির রচিয়তা কে ?
উত্তরঃ ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা……’ গানটির রচিয়তা কবি ইকবাল।
প্রশ্ন ৪। ভারতে রেল যাতায়াত প্রথম কখন, কোথায় সূচনা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতে রেল যাতায়াত ১৮৫৩ সালে, প্রথম বোম্বাই ও থানের মধ্যে ২১ কি.মি দীর্ঘ রেলপথের সূচনা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫। ভারতে প্রথম টেলিগ্ৰাম ব্যবস্থা কখন কোথায় সূচনা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতে প্রথম টেলিগ্ৰাম ব্যবস্থা ১৮৩৯ সালে, কলিকাতা ও আগ্ৰার মধ্যে সূচনা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৬। ভারতে প্রথম ছাপাখানা কখন, কোথায় স্থাপন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতে প্রথম ছাপাখানা ১৭৯৭ সালে, শ্রীরামপুরে স্থাপন করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ প্রথম কি নামে কোথায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ?
উত্তরঃ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ প্রথম হিন্দু কলেজ নামে কলকাতায় ১৮১৭ সালে, প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৮। লর্ড উইলিয়াম ব্যাণ্টিঙ্কের দুটি উল্লেখযোগ্য সমাজ সংস্কার বিষয়ে লিখ।
উত্তরঃ লর্ড উইলিয়াম ব্যাণ্টিঙ্কের দুটি উল্লেখযোগ্য সমাজ সংস্কার হল—–
(ক) সতীদাহ প্রথা রদ।
(খ) স্ত্রীশিক্ষা প্রসার ব্যবস্থা গ্ৰহণ।
প্রশ্ন ৯। ভারতীয় সংবাদপত্রের ইতিহাসে প্রথম সংবাদপত্র কোনটি ?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবাদপত্রের ইতিহাসে প্রথম সংবাদপত্র হল ‘বেঙ্গল গেজেট’।
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সিপাহী বিদ্রোহ কিভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিল সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে বিদ্রোহীরা ইংরেজ শাসন উৎখাত করে পুনরায় মোগল শাসককে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল। সিপাহী বিদ্রোহের উদ্দেশ্য পূরণ না হলেও এর ফলাফল ছিল ভারতীয় জনগণের জন্য সুদূরপ্রসারী। এক কথায় এই বিদ্রোহ থেকেই গড়ে উঠেছিল ভারতীয় জাতীয় জীবন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ছিল একপ্রকার মুক্তির আন্দোলন।
ইংরেজ প্রশাসন ভারতীয়ের পাশ্চাত্য শিক্ষা- সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় ভারতবাসীর দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়েছিল। তাদের মনে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। যুক্তি দিয়ে সব কথা বিবেচনা করার প্রতি তাদের অনুরাগ বেড়েছিল। শোষণ, অন্যায় প্রভৃতির বিচার ও মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতার ভাব জাগিয়ে তুলেছিল। এই নবচেতনাকে নবজাগরণ বা জাতীয়তাবাদের উন্মেষণ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ষষ্ঠদশ শতাব্দীর ইউরোপের নবজাগরণের মতো ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণ এক নূতন ভারত সৃষ্টি করেছিল।
S.L. No. | সূচী-পত্ৰ |
প্রথম খণ্ড | ইতিহাস |
পাঠ -১ | ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন |
পাঠ -২ | ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ |
পাঠ -৩ | মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ |
পাঠ -৪ | মানের অসম আক্রমণ |
পাঠ -৫ | অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা |
দ্বিতীয় খণ্ড | ভূগোল |
পাঠ -১ | ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন |
পাঠ -২ | বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ |
পাঠ -৩ | ভারতবর্ষের ভূগোল |
পাঠ -৪ | অসমের ভূগোল |
তৃতীয় খণ্ড | ৰাজনীতি ও অৰ্থনীতি বিজ্ঞান |
পাঠ -১ | ভারতের রাজনৈতিক দল |
পাঠ -২ | নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ |
পাঠ -৩ | অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো |
পাঠ -৪ | প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ |
প্রশ্ন ২। ‘উডের প্রেরণপত্র’র মূল উদ্দেশ্য কী কী ছিল লিখ ?
উত্তরঃ কিভাবে ভারতবর্ষের শিক্ষা পদ্ধতির উন্নতি সাধন করা যায় এর উপর ১৮৫৪ সালে ইংল্যাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ সভার সভাপতি স্যার চার্লস উড একটি নির্দেশনামা ভারত সরকারের কাছে প্রেরণ করেন। এই পত্রের মাধ্যমে ভারত সরকারকে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা প্রাথমিক স্তব থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পযর্ন্ত সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
উক্ত প্রেরণপত্রে নিম্নলিখিত নির্দেশগুলি হলো—-
(ক) ভারতের প্রত্যেক প্রদেশে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাবিভাগ স্থাপন করা।
(খ) পাশ্চাত্য শিক্ষা, কলা ও সাংস্কৃতির বিকাশ।
(গ) সরকারী চাকুরীর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক গড়ে তোলা।
(ঘ) স্ত্রীশিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা।
(ঙ) কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
(চ) কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ রাজ-কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য অক্ষুন্ন রাখা।
(ছ) বিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সঙ্গে ইংরেজী ভাষায় শিক্ষাদান এবং কলেজ পর্যায়ে শুধুমাত্র ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা।
(জ) শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বন করা।স্যার চার্লস উডের প্রেরণপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় শিক্ষিত সমাজের কাছে পাশ্চাত্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাবধারার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে ভারতবাসীকে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অনুরক্ত করা।
প্রশ্ন ৩। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া ৬ টি কারণ লিখ।
উত্তরঃ পাশ্চাত্য শিকার প্রসার এবং সর্বোপরি সরকারী চেষ্টায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের নীতি অনুসরণের পরও ভারতবাসীদের মধ্যে ইংরাজী শিক্ষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের তেমন প্রসার ঘটেনি। এই শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল অতি সামান্য সংখ্যক ভারতবাসীর মধ্যেই। তবু এই কথা অনস্বীকার্য যে, পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান, ও কারিগরি বিদ্যার জ্ঞানের প্রসারের ফলে এক নব-চেতনার সৃষ্টি হয়েছিল এবং তা ক্রমে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক ভারতবাসীকে এক নূতন আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। তাদের কাছে এইকথা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে ভারতবাসীর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অপরাপর ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা দূর করতে জন্য সামাজিক সংস্কার, ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রবর্তনের একান্ত দরকার।
মিল, বেন্থাম, পেইন প্রভৃতির রচনা পাঠের ফলে শিক্ষিত ভারতবাসীর অন্তরে সর্বপ্রকার অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা এবং মানুষে মানুষে বিভেদ সব কিছুর বিরোধিতা করবার এক মনোবৃত্তির সৃষ্টি হল। এই মনোবৃত্তি থেকে ভারতবাসী যেখানেই অত্যাচারিত বা বঞ্চিত সেখানেই বলিষ্ঠ প্রতিবাদের ক্ষমতা দেখা দিল।
নিজের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের ফলে ভারতের নিজস্ব যা কিছু শ্রেষ্ঠ, যা কিছু গর্বের তার প্রতি শ্রদ্ধা ভারতবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জাগরিত হল। ইংরাজী শিক্ষার ফলে শিক্ষিত ভারতবাসীর অন্তরে সেই পরিবর্তনই এল, যে পরিবর্তন রেনেসাঁসের ফলে ইউরোপীয়দের মধ্যে জন্মেছিল। ভারতবাসীর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা, এর ফলে বহুগুণে বাড়লো।উইলিয়াম জোন্স প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক সোসাইটির অবদান এই বিষয়ে বিশেষ উল্লেখ্য। এশিয়াটিক সোসাইটি ভারতবর্ষের তথা এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাস শিল্প, বিজ্ঞান প্রভৃতি সম্পর্কে গবেষণা এবং অত্যন্ত মূল্যবান প্রাচীন গ্ৰন্থের পাণ্ডুলিপি সংগ্ৰহ প্রভৃতির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে উদ্ঘাটিত করতে সাহায্য করেছে। এই সকল কারণে ভারতীয় সব কিছুর প্রতিই এক বিশেষ শ্রদ্ধা উপজাত হওয়ায়। ক্রমে ভারতবাসী তাদের হতাশা, হীনমন্যতা অতিক্রম করে এক আত্মপ্রত্যয়সম্পন্ন, বলিষ্ঠ মানসিকতার অধিকারী হয়ে উঠল।
পাশ্চাত্য শিক্ষা শিক্ষিত বাঙালীর উপর এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে অন্তরে পাশ্চাত্যের উদারপন্থী মতবাদ, চিন্তার স্বাধীনতা, যুক্তিবাদী ধ্যান-ধারণা এবং আধুনিক যুগের সর্বপ্রকার বৈশিষ্ট্য স্থিতিলাভ করেছিল।
প্রশ্ন ৪। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে পাশ্চাত্য শিক্ষার চারটি প্রভাব নিয়ে লিখ।
উত্তরঃ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে দেশের নানানক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রথমত, ব্রিটিশ আমলের পূর্বে ভারতের এক প্রান্তের লোকের সঙ্গে অপর প্রান্তের লোকের কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের, রেল, মোটর, বিমান, টেলিগ্ৰাম, টেলিফোন প্রভৃতি প্রচলনের ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় দেশের একপ্রান্তের লোকদের সঙ্গে অন্যপ্রান্তের লোকদের সংযোগ ও ভাবের আদান-প্রদান থাকায় জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।দ্বিতীয়ত, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাই আভ্যন্তরীণ জন-প্রব্রজন সচল করে তুলেছিল। এক স্থান থেকে দলবদ্ধভাবে মানুষ অপর স্থানে যেতে পেরেছিল।তৃতীয়ত, রেল ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাই ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর লোকদের যাওয়া-আসা সচল করে তুলেছিল। বিদ্রোহ বা বিপ্লব দেখা দিলে তা দমন করতে দেশের যে-কোনো স্থানে কম সময়ের মধ্যে বেশি সৈন্য পাঠানো সম্ভব হয়। এই ব্যবস্বাই ব্রিটিশকে দেশের ঐক্য স্থাপনে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।
চতুর্থত, আধুনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাই ব্রিটিশকে দেশের কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করেছিল।পঞ্চমত, রেল ও মোটরগাড়ীতে আসা-যাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামী, সংকীর্ণ সামাজিকতা ও ধর্মবোধ ধীরে ধীরে কমেছিল। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রসারের ফলে কৃষিক্ষেত্রের বাণিজ্যকীকরণ
অনেকাংশে সম্ভব হয়েছিল। পূর্বে বিচ্ছিন্ন থাকা গ্ৰাম বা অঞ্চলসমূহ রেলপথ ও রাস্তা নগর-শহর ও সামুদ্রিক বন্দরের সঙ্গে সংযোগ করার ফলে কৃষকরা কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদিত শস্য বিক্রি করতে পারত এবং দেশের বিভিন্ন সরবরাহ করতে পারত।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে ভারতবাসীর মধ্যে ঐক্যের মেলবন্ধন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানুষের মনে সৌভ্রাতৃত্ববোধ ও দেশপ্রেম জেগে উঠে ফলে মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগরিত করে।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে যোগাযোগের উন্নতি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল ?
উত্তরঃ কোম্পানি শাসন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভারতের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। ১৮৩৯ সালে কলকাতা থেকে দিল্লি পযর্ন্ত গ্ৰ্যাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করা হয়েছিল। এই সড়কপথ নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। লর্ড ডালহৌসির কার্যকালে এই পথটি পেশেয়ার পযর্ন্ত সম্প্রসারিত হয়। প্রধান শহর, বন্দর, বাজারগুলিকে এই পথের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই ও থানের মধ্যে ২১ কিলোমিটার পথে রেল চলাচলের মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রথম রেল যাতায়াত ব্যবস্থার সূচনা হয়। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাজে রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুটি প্রধান স্থানকে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিয়ে রেল যোগাযোগের সম্প্রসারণ ঘটিনো হয়। ১৮৮৩ সালে অসমেও শাদিয়া থেকে ডিব্রুগড় পযর্ন্ত রেল যোগাযোগ শুরু হয়। ১৮৩৯ সালে কলকাতা এবং ডায়মণ্ডহারবারের মধ্যে বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রথম টেলিগ্ৰাম ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে টেলিগ্ৰাম ব্যবস্থাটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে কলকাতা এবং আগ্ৰার মধ্যে টেলিগ্ৰাম ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটান। এইভাবে ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে যোগাযোগের উন্নতি প্রভাব বিস্তার করেছিল।
প্রশ্ন ৬। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান বিষয়ে লিখ।
উত্তরঃ ১৭৭২ সালে রাজা রামমোহন রায় ভারতবর্ষে জন্মগ্ৰহন করেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। প্রাচ্য জ্ঞান ভাণ্ডারের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদকে যুক্ত করে তিনি মানুষের চিন্তাধারাকে রক্ষণশীলতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করেন। হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টান সভ্যতা ও সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করে রামমোহন ভারতে নবযুগের সৃষ্টি করেন। ভারতবাসীর অন্তরে সমাজ-সংস্কারক হিসাবে রামমোহন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর সাহায্যেই লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা রদ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। জাতিভেদ প্রথা দূরীকরণ, স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার, হিন্দু বিধবা বিবাহের প্রচলন প্রভৃতি সামাজিক সংস্কারে রামমোহনের অবদান অতুলনীয়। ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য রামমোহন অক্লান্ত চেষ্টা করেছিলেন। হিন্দুধর্মের প্রচলিত গোঁড়ামিকে তীব্রভাবে নিন্দা করে উপনিষদের একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হয়ে এই মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্রাক্ষ-সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষপাতী। রামমোহনের নীতিকেই অনুসারণ করে ভারতের জাতীয় আন্দোলন শুরু হয়। সেইজন্য রাজা রামমোহন রায়কে বলা হয় “ভারতের নবজাগরণের জনক”।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে দয়ানন্দ সরস্বতীর অবদান নিয়ে লিখ।
উত্তরঃ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী পাঞ্জাবে আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্পূর্ণ ভারতীয় ঐতিহ্য ও ভাবধারার উপর ভিত্তি করে পাঞ্জাবকে পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাব মুক্ত করতে দয়ানন্দ সরস্বতী “আর্যসমাজ” গঠন করেন। দয়ানন্দ অহিন্দুকে “শুদ্ধি” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার পথ প্রদর্শন করেন। হিন্দুধর্মকে কুসংস্কার মুক্ত করে বৈদিক ধর্ম পুনঃ প্রবর্তন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। আর্যসমাজ জাতিভেদ, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ধর্মভেদ, জাতিভেদ ভুলে ভারতবাসীগণের মধ্যে ঐক্যবোধ ও জাতীয়তাবোধের সৃষ্টিই কাম্য ছিল।
স্বামী দয়ানন্দের মতে বেদে যে ধর্ম রয়েছে সেটাই ধর্ম। হিন্দুধর্মের আগে অহিন্দু লোক হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেওয়ার কোনো প্রথা বা নিয়ম ছিল না। স্বামী দয়ানন্দই প্রথম ধর্মান্তকরণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে অন্যধর্মাবলম্বী লোককে ইচ্ছে অনুসারে হিন্দু ধর্মসমাজ গড়ার অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করেন।
প্রশ্ন ৮। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে কেশবচন্দ্র সেনের অবদান নিয়ে লিখ।
উত্তরঃ কেশবচন্দ্র সেন ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ও প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তি। ১৮৬৭ সালে তাঁর অনুপ্রেরণায় মহারাষ্টীয়রা বোম্বাই প্রদেশে “প্রার্থনা সমাজ” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। মাধব গোবিন্দ ছিলেন রাণাড়ে প্রার্থনা সমাজের প্রধান স্তম্ভ। তুকারাম, রামদাস প্রভৃতি মহারাষ্টীয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের নীতি গ্ৰহণ করে প্রার্থনা সমাজ, জাতিভেদ প্রথা রদ , অস্পৃশ্যতা বর্জন, বিধবা বিবাহের প্রচলন, অসবর্ণ বিবাহ এবং সমাজের ঘৃণ্য ও পতিতদের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেন। বোম্বাই ন্যায়ালয়ের বিচারপতি মাধব গোবিন্দ রাণাডে পাশ্চাত্য ভাবধারায় প্রভাবিত থাকায় রামমোহনের সঙ্গে তাঁর অনেক বিষয়ে মতের মিল ছিল।রাণাডের একান্ত চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল “বিধবা বিবাহ সংস্থা” এবং “দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ” নামে দুটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। প্রথম প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বিধবা বিবাহের প্রতি উৎসাহ ও অনাদৃত বিধবাদের আর্থিক সংস্থানের জন্যে কুটির শিল্প গঠন করেছিলেন। দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজে অনাথ শিশুকে শিক্ষাদান করার সঙ্গে তাদের লালন-পালনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আশ্রম স্থাপন করেছিলেন। নিরক্ষর এবং অনুন্নত জাতিকে শিক্ষাদানের জন্য স্থাপন করেছিলেন নৈশ বিদ্যালয়। প্রার্থনা সমাজের সংস্কার আন্দোলন সমগ্ৰ দক্ষিণ ভারতের জণগণের অন্তরে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার গভীর প্রেরণা সঞ্চার করে।
প্রশ্ন ৯। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে রামকৃষ্ণ পরমহংসের অবদান নিয়ে লিখ।
উত্তরঃ বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয় সাধনের জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছিল, তিনি হলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তিনি যেমন একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন, তেমনি দেবদেবীর মূর্তি পূজার তাঁর ছিল অগাধ ভক্তি। তাঁর মত হল “যত মত তত পথ”। শিবজ্ঞানে জীব সেবা করাই ধর্মের অঙ্গ হিসাবে তিনি গণ্য করতে। শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন ঐশ্বরিক শক্তির প্রতীক। তাঁর মতে হিন্দুর ভগবান, মুসলমানদের খোদা, খ্রিস্টানের খ্রিস্ট সকলই একই ভগবানের ভিন্ন ভিন্ন নাম।
স্বামী বিবেকানন্দ হলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রধান শিষ্য। ১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো ধর্ম-মহাসভার অধিবেশনে হিন্দুধর্মের বিশেষ প্রমাণ করে হিন্দুধর্ম ও সভ্যতাকে জগতের শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছিলেন। স্বামীজীর চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ। বর্তমানে ভারতের সর্বত্র এবং ইউরোপ ও আমেরিকার স্থানে স্থানে স্থাপিত হয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক কেন্দ্র। শুধুমাত্র হিন্দুজাতির মধ্যে নবজীবনের সঞ্চারে রামকৃষ্ণ মিশনের অবদান সীমিত নহে, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তার দান অতুলনীয়। সকল শ্রেণির লোকদের নিয়ে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিই ছিল বিবেকানন্দের আহান।তিনি বলতেন—“হে ভারত ভুলিও না,—নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত তোমার ভাই।”
প্রশ্ন ১০। ভারতীয় জাতীয় জাগরণ সৃষ্টিতে অ্যানি বেসান্তের অবদান নিয়ে লিখ।
উত্তরঃ থিওসোফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতবর্ষে জাতীয় চেতনা গড়ে তুলতে অ্যানিবেসান্ত বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মার্কিন কর্ণেল ইলবার্ট এবং ম্যাডাম স্কিম ১৮৭৫ সালে আমেরিকান থিওসফিক্যাল সোসাইটি নামে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৯ সালে তারা ভারতে চলে আসেন এবং মাদ্রাজের আদিয়ার নামক স্থানে গড়ে তোলেন নূতন ধর্মস্থল। এই সমাজকে হিন্দু সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের এক শক্তিশালী সংঘে মিসেস অ্যানিবেসান্ত পরিণত করেছিলেন। সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই সংঘ হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবনের জন্য যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। এই উদ্দেশ্যেই অ্যানিবেসান্ত বারাণসীতে স্থাপন করেন সেন্ট্রাল হিন্দু স্কুল নামে একটি বিদ্যালয়। পরবর্তীকালে তাকে কেন্দ্র করে মদনমোহন মালব্যের চেষ্টায় বারাণসীতে গড়ে উঠেছিল হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। থিওসফিক্যাল সোসাইটির অন্যতম স্বনামধন্য সদস্য ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গোখলে।
বেসান্ত ভারতবর্ষেকে মাতৃভূমি হিসাবে গ্ৰহণ করেছিলেন এবং তাঁর কর্মপন্থা ও চিন্তার বিশালতা ভারতবাসীকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। ১৯১৬ সালে বেসান্ত “হোমরোল লীগ” প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয়দের মধ্যে স্বশাসনের প্রয়োজনীয়তা প্রচার করেছিলেন। ১৯১৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।
প্রশ্ন ১১। আলিগড় আন্দোলন কি ? এই আন্দোলনে কিভাবে মুসলিমদের আধুনিক চিন্তা-চর্চার পথ দেখিয়েছিল লিখ।
উত্তরঃ ভারতীয় মুসলমান সমাজকে আলিগড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সঞ্চার করাকেই আলিগড় আন্দোলন বলা হয়।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ভারতের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করতে চেয়েছিল। তারা এই অভিমত পোষণ করেছিল যে ভারতবাসী ঐক্যবদদ্ধ থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অনুরূপ আরেকটি বিদ্রোহ ঘটতে পারে। ভারতের মুসলিম শাসনের অবসানের পর মুসলমানরা ব্রিটিশের উপর অসন্তূষ্ট ছিল। অফিস আদালতে পার্শী ভাষার পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন হয়। মুসলমানদের কাছে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ইংরেজি ভাষা ছিল গ্ৰহণযোগ্য।
স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁন মুসলমানদের এই ভুল সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। মুসলমান সমাজকে আধুনিক চিন্তা-চর্চার মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার ক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমেদ খাঁন-র অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার উদ্দেশ্যে ১৮৬৪ সালে গাজীপুরে একটি ইংরেজি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৬৫ সালে বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা স্থাপন করে তিনি ইংরেজি ভাষার কয়েকটি উৎকৃষ্ট গ্ৰন্থ উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৮৭৫ সালে আলিগড়ে অ্যাংলো অবিপ্রণ্টাল কলেজ স্থাপন করে মুসলমানগণের মধ্যে পাশ্চাত্য ভাবধারা বিস্তারে সহায়তা করেন। পরবর্তীকালে উক্ত কলেজ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। আলিগড়ে স্থাপন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ফর কংগ্রেস সমভাবাপন্ন অন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আলিগড় মোম্মদান অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান কলেজ বিশেষ উৎসাহ জুগিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিশেষ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ থিওডোর ব্যাক। আহমেদ খাঁন মুসলমানগণকে কংগ্রেসে যোগদান না করার পরামর্শ দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে মুসলমানগণ সংখ্যালঘু সুতরাং মুসলমানগণ কংগ্রেসের কাছ থেকে ন্যায় পাবে না।
প্রশ্ন ১২। ‘সংবাদপত্র’র জন্ম কীভাবে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তার উদ্ভব ঘটিয়েছিল বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ভারতবাসীর সম্পাদনায় ১৮৫৮ সালের পর থেকে দেশীয় ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা বিশেষভাবে বাড়ে। তিন বৎসর পর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘ইণ্ডিয়ান কাউন্সিলস্ অ্যাক্ট্’ পাস হলে ভারতীয় জনমত বেশ কিছুটা সচেতন হয়ে উঠে। সংবাদপত্র প্রকাশিত ঘটনাবলী এবং রাজনীতি এই দুয়ের প্রতি ভারতবাসীর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। সেই সময় থেকেই ভারতীয় সংবাদগুলি জাতিয়তাবোধ প্রসারে সচেষ্ট হয়। এদিকে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে হরিশচন্দ্র মুখার্জীর মৃত্যু ঘটলে সাময়িকভাবে ‘হিন্দু পেট্রিয়টের’ প্রভাব কিছুটা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষায় কৃষ্ণদাস পাল হিন্দু পেট্রিয়টের সম্পাদনার ভার নিলে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠে হিন্দু পেট্রিয়ট। কিন্তু ইংরাজ শাসনের গুণগ্ৰাহী কৃষ্ণদাস পাল ছিলেন ইংরাজ জাতির স্বাভাবিক উদারতা এবং যুক্তিবাদিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই জন্যে ইংরাজ শাসনের সমালোচনা এই পত্রিকায় তেমন করা হবে হত না। তাঁর আমলে হিন্দু পেট্রিয়ট মধ্যবিত্ত সম্প্রাদায়ের মুখপত্র হিসাবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকা বের হলে ক্রমে এতে কৃষক ও রায়তদের অভাব-অভিযোগ ও মতামত প্রকাশ করে তিনি এই পত্রিকাকে সাধারণ মানুষের মুখপত্র করে তোলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পত্রিকার সম্পাদক হলে এটি সরকারী কার্যকলাপের নির্ভীক সমালোচক এবং ভারতবাসীর অভাব-অভিযোগের প্রতিকার দাবির অন্যতম প্রবক্তা হয়ে উঠে। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথের অর্থে এবং মনমোহন ঘোষের সম্পাদনায় ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ নামে পত্রিকা বের হয়। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিন ভ্রাতা শিশিরকুমার, হেমন্তকুমার ও বসন্তকুমার ঘোষের চেষ্টায় ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকা বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়। এটি প্রথমে যশোহরে প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে এটি কলিকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের আইন দ্বারা দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের উপর বাধা-নিষেধ আরোপ করলে এক রাত্রিতে অমৃতবাজার পত্রিকা বাংলা থেকে ইংরাজি পত্রিকায় অনূদিত হয়।
এই সকল পত্রিকার প্রগতিশীল সাংবাদিকতা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছিল। বস্তুত, ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়াংশে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা মাত্রেই জনসাধারণের স্বাদেশিকতা ও জাতীয়তার মনোভাব জাগিয়ে তোলে এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই ভারতবাসীর দুর্দশার অবসান ঘটবে এই মনোবৃত্তির সৃষ্টি করে। সোমপ্রকাশ বঙ্গদর্শন, শিক্ষাদর্পন, আর্যদর্শন, সংবাদসার, প্রভৃতি পত্রিকার নাম এ-বিষয়ে উল্লেখ্য।
বোম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব এবং অন্যান্য অঞ্চলে ভারতীয় ভাষায় সংবাদপত্রের প্রকাশ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষের রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। মাদ্রাজে ‘নেটিভ পাবলিক ওপিনিয়ন’, ‘ক্রিসেন্ট’, ‘মাদ্রাজী’, ‘মাদ্রাজ স্ট্যানডার্ড’, ‘ইন্ডিয়ান সোশিয়াল রিফরমার’ প্রভৃতি, বোম্বাইয়ে দাদাভাই নৌরোজীর ‘ভয়েস অব ইণ্ডিয়া’, ‘সুধাকর’, তিলকের ‘মারাঠা ও ইন্দুপ্রকাশ’, ‘জ্ঞানপ্রকাশ’ ও অন্যান্য পত্রিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাঞ্জাবের ‘লাহোর ট্রিবিউন’, ইউনাইটেড প্রভিন্সেসের ‘পাইওনীয়ার’, ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন’, ‘ইণ্ডিয়ান হেরাল্ড’ প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশ দেশী পত্রিকার ক্রমবিকাশের পরিচায়ক।
ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত দেশীয় ভাষা ও ইংরাজীতে যে সকল পত্রিকা উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্থে প্রকাশিত হত সেগুলির রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী চরিত্র ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জনসাধারণের জ্ঞান বৃদ্ধির সাহায্যের যে মূল আদর্শ ভারতীয় পত্রিকাগুলির ছিল সে-আদর্শ অটুট রেখে ভারতবাসীর মধ্যে স্বাদেশিকতা ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি সেই সময়কার পত্রিকাগুলির উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। এ-বিষয়ে দ্বারকানাথ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’, ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘শিক্ষাদর্পণ’ ও ‘সংবাদসার’, অক্ষয় সরকারের ‘সাধারণী’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’, যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের ‘আর্য-দর্শন’ প্রভৃতির নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন। ব্রিটিশ শাসনের কঠোর এবং নির্ভীক সমালোচনায় ‘সোমপ্রকাশ’, ‘সহচর’, ‘সাধারণী’, ঢাকার ‘হিন্দু হিতৈষিণী’, ময়মনসিংহের ‘ভারত মিহির’ ছিল অগ্ৰণী। অমৃতবাজার পত্রিকা ব্রিটিশ শাসনের অকর্মণ্যতা, ক্রটি-বিচ্যুতির কথা প্রকাশ করে এবং ভারতবাসীর জন্য পার্লামেন্টারী শাসন চালু করবার দাবি উথাপন করে জাতীয়তাবোধ প্রসারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছিল।
প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্মের ইতিহাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর লিখ।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষভাবে বাংলাদেশ, মহারাষ্ট্র ও মাদ্রাজে (চেন্নাইয়ে) যে সকল রাজনৈতিক সংঘ-সমিতি গড়ে উঠেছিল, সেগুলি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার এবং সকল অংশের ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার পথ প্রস্তুত করেছিল।
ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজ সরকার সিভিল সার্ভিসে ভর্তি করতে অস্বীকার করে। ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করে “বেঙ্গল ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন” গঠন করেন এবং ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যেকের রাজনৈতিক স্বার্থ সমান—এই সত্য জনগণকে উপলব্ধি করে ভারতের রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে ঐক্যবদ্ধ করা।
ইলবার্ট বিল ইংরেজ সরকার কর্তৃক প্রত্যাহৃত হলে দেশে তীব্র আন্দোলন লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজ সেই আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয় এবং সুরেন্দ্রনাথকে কারারুদ্ধ করে। এর ফলে সমগ্ৰ ভারতে বিক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, বোম্বাই (মুম্বাই) ও মাদ্রাজ (চেন্নাই) থেকে অনেক প্রতিনিধি কলকাতার জাতীয় সভার অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে দেশের রাজনৈতিক সমস্যাবলী আলোচনাক্রমে কতিপয় প্রস্তাব গ্ৰহণ করে সরকারের কাছে উথাপন করেন। ১৮৮৫ সালে কলিকাতায় (কলকাতায়) জাতীয় সভার দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৮৫ সালে ভারতবন্ধু অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের প্রেরণায় ও কয়েকজন ভারতীয় নেতার প্রচেষ্টায় বড়দিনের ছুটির সময় কলকাতায় ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ৭২জন রাজনীতিবিদের উপস্থিতিতে বোম্বাই (মুম্বাই) শহরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন হয়। অধিবেশনে স্থির হয় যে সরকারের নীতি ও কাজের সমালোচনা এবং শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাব গ্ৰহণ করা জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য হবে। ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদ যাতে ইংরেজ-বিদ্বেষী না হয় এবং উগ্ৰপন্থী জাতীয়তাবাদীরা যাতে পৃথক সংস্থা গঠন করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই ইংরেজ সরকার জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠায় প্রথম দিকে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলী ও বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডাফরিনের কার্যকালে অ্যালেন অক্টোভিয়ান হিউম নামের একজন অবসর প্রাপ্ত অসামরিক আধিকারিক ভারতীয়দের স্বার্থে একটি জাতীয় সংগঠনের প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। হিউম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত স্নাতকদের সম্বোধন করে একটি খোলা চিঠিতে তাদের দেশমাতৃকার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ‘ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল ইউনিয়ন’ নামে নামাঙ্কিত এই বৈঠকটি দেশের উন্নতির স্বার্থে একটি সর্বভারতীয় জাতীয় সংগঠন গড়ে তোলার পোষকতা করেছিল। বোম্বাইয়ে একটি মহাসভা আয়োজন করার প্রস্তাব নিয়ে একটি জাতীয় সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বাইর গকুল দাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজে মহাসভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছিল কলকাতার ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মহাসভা প্রস্তাবিত জাতীয় সংগঠনটির নাম ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ বলে স্থির করেছিল। ভারতের প্রত্যেকটি জাতি-গোষ্ঠী, সম্প্রাদায়ের মতামতের প্রতি সম্মান জানিয়ে কংগ্রেস এগিয়ে আসার কর্মপন্থা স্থির করেছিল।
একটি নরমপন্থী সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাতীয় কংগ্রেস শুরুর দিকে আবেদন নিবেদনের মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল। ইংরেজ সরকার এবং ব্রিটেনের সরকারের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক বজায় রেখে শাসনতন্ত্রে ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব চাওয়াটাই জাতীয় কংগ্রেসে একটা অন্যতম লক্ষ্য ছিল। এই আশা করেই ১৮৯০ সালে জাতীয় কংগ্রেসর সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলকে ইংল্যাণ্ডে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ১৮৯২ সালে ভারত পরিষদ আইন কার্যতঃ ভারতীয়দের কোনও কিছু না দেওয়ায় জাতীয় কংগ্রেসকে হতাশ করেছিল। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্রিটিশের কাছে বহু আশা করে কিছু না পেয়ে কংগ্রেসের একাংশ নেতা- কর্মীর মনে প্রচলিত চিন্তা ত্যাগ করার মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। কংগ্রেসের ভিতর একটি নতুন শক্তি গড়ে উঠেছিল। তারা আবেদন-নিবেদনের পন্থা পরিহার করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সবাইকে সর্তক করে দিয়েছিলেন।
১৯০৫ সালে ঘটে যাওয়া দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে এক প্রবল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রথমটি ছিল জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয় এবং অপরটি বঙ্গভঙ্গ। এশিয়ার ক্ষুদ্র শক্তি জাপান শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়াকে পরাস্ত করার ঘটনা ভারতের জাতীয়তাবাদীদের মনে সংগ্ৰামী চেতনা জাগ্ৰত করেছিল। অপরদিকে কার্জনের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন জাতীয়তাবাদীদের অন্তরে তীব্র ইংরেজ বিরোধী মনোভাব জাগ্ৰত করেছিল।
১৯০৫ সালে বিপিনচন্দ্র পাল বারাণসী জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি গোপালকৃষ্ণ গোখলের নরম সুরের ভাষণের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি অনুনয় বিনয় ত্যাগ করে কেবল স্বদেশী কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় কংগ্রেসকে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে দাদাভাই নওরজির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন স্বদেশি আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করায় পরিস্থিতি কিছু পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ১৯০৭ সালে রাসবিহারী ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেস দুটি ভাগে ভাগ হয় একটি চরমপন্থী, অপরটি নরমপন্থী। চরমপন্থীর দলে ছিলেন বালগঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায় এবং বিপিনচন্দ্র পাল। চরমপন্থীরা অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে স্বরাজ, স্বদেশী, জাতীয় শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলির ওপর আস্থা রেখে ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের গতি সজীব রেখেছিলেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পযর্ন্ত চরমপন্থি মূল জাতীয় কংগ্রেস থেকে দূরে সরে ছিলেন।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুইটি কারণ লিখ।
উত্তরঃ (ক) বিদ্রোহীগণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বলে বিভক্ত এবং ঐক্যহীন ছিল।
(খ) বিদ্রোহীদের কোনো নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ছিল না।
প্রশ্ন ২। সিপাহী বিদ্রোহের যে-কোনো দুইটি ফলাফল লিখ।
উত্তরঃ(ক) সিপাহী বিদ্রোহের ফলে ভারতে কোম্পানী শাসনের অবসান ক্রমে সরাসরি ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
(খ) সাধারণ ভারতবাসী রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৩। ভারতে প্রারম্ভিক ব্রিটিশ বিরোধী যে-কোন দুইটি আন্দোলনের নাম লিখ।
উত্তরঃ (ক) ১৭৮৩ সালে বাংলা বিদ্রোহ।
(খ) ১৮০৪ সালের উড়িষ্যা বিদ্রোহ।
প্রশ্ন ৪। ঊনবিংশ শতকে ভারতে জাতীয়তাবাদ উন্মেষের দুইটি প্রধান কারণ লিখ।
উত্তরঃ (ক) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার।
(খ) সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার।
প্রশ্ন ৫। ঊনবিংশ শতকে ভিরতে সামাজিক সংস্কারে অগ্ৰণী দুইটি প্রতিষ্ঠানের নাম কি ?
উত্তরঃ (ক) ব্রাক্ষ সমাজ।
(খ) রামকৃষ্ণ মিশন।
প্রশ্ন ৬। কোঁয়র সিং কে ছিলেন ?
উত্তরঃ কোঁয়র সিং ছিলেন বিহারের জগদীশপুরের তালুকদার। তিনি সিপাহী বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করেন।
প্রশ্ন ৭। কখন, কাকে ভারত সম্রাজ্ঞী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে ভারত সম্রাজ্ঞী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন ৮। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর অসন্তোষের দুইটি প্রধান কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ (ক) ব্রিটিশ শাসকবর্গ ভারতবাসীকে নানা উপায়ে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে চেষ্টা করে।
(খ) সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণেও ভারতবাসীর মনে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়।
প্রশ্ন ৯। ঊনবিংশ শতকে ভারতে সামাজিক সংস্কারে অগ্ৰণী দুইজন মনীষীর নাম লিখ।
উত্তরঃ (ক) লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।
(খ) রাজা রামমোহন রায়।
প্রশ্ন ১০। এ্যানি বেসান্ত কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ?
উত্তরঃ এ্যানি বেসান্ত থিওসফিকেল সোসাইটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রশ্ন ১১। কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে কে সভাপতিত্ব করেছিলেন ?
উত্তরঃ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ১২। কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত থাকা একজন উকিলের নাম লিখ।
উত্তরঃ কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত থাকা একজন উকিল হলেন ফিরোজ শাহ মেহতা।
প্রশ্ন ১৩। কংগ্রেসের প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ কংগ্রেসের প্রথম সম্পাদক ছিলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।
প্রশ্ন ১৪। লর্ড ডালহৌসি কোন সালে কলকাতা ও ডায়মগুহারবারের মধ্যে টেলিগ্ৰাম লাইনটি সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন করেন ?
উত্তরঃ ১৮৫১ সালে।
প্রশ্ন ১৫। মহারাণীর ঘোষণাপত্র কি ছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর এলাহাবাদের এক দরবারে ভারতের সর্বপ্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং ইংল্যাণ্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন। উক্ত ঘোষণাপত্রের প্রধান বিষয় ছিল—-
(ক) দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
(খ) জনগণকে তাদের চিরাচরিত অধিকার ভোগ করতে দেওয়া হবে।
(গ) প্রজাদের মধ্যে ধর্মপালনের স্বাধীনতা এবং সরকারী চাকরি গ্ৰহণের সমতা প্রবর্তন হবে।
প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত থাকা একজন সাংবাদিকের নাম লিখ।
উত্তরঃ মতিলাল ঘোষ।
প্রশ্ন ১৭। রুশ-জাপান যুদ্ধ কখন সংগঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৯০৪ সালে।
প্রশ্ন ১৮। ভারতে সর্বপ্রথম কখন মুদ্রিত পুস্তক প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ ১৫৫৭ সালে।
প্রশ্ন ১৯। কোন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের পথ সুগম হয় ?
উত্তরঃ উড ডেসপাস কমিটি।
প্রশ্ন ২০। উডের নির্দেশনামা কখন জারি হয় ?
উত্তরঃ ১৮৮২ সালে।
প্রশ্ন ২১। ইলবার্ট বিলকে উথাপন করেন ?
উত্তরঃ লর্ড রিপন।
প্রশ্ন ২২। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে থাকা একজন শিক্ষকের নাম লিখ।
উত্তরঃ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ২৩। বেঙ্গল গেজেট পত্রিকা কখন প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ বেঙ্গল গেজেট পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে।
প্রশ্ন ২৪। অর্থনৈতিক নিষ্কাষণ তত্ত্বের প্রবক্তা কে ?
উত্তরঃ অর্থনৈতিক নিষ্কাষণ তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন দাদাভাই নৌরোজী।
প্রশ্ন ২৫। ১৮৫৮ সালের আইনের যে-কোন দুটি শর্ত লিখ।
উত্তরঃ (ক) ভারতবর্ষে কোম্পানী শাসনের অবসান ঘটিয়ে কোম্পানীর সকল সম্পত্তি ব্রিটিশ সরকারের উপর ন্যস্ত হবে।
(খ) একজন সেক্রেটারী অফ স্টেট ফর ইণ্ডিয়া ও তাঁর একটি পরিষদ ভারতবর্ষের শাসন পরিচালনা করবে।
প্রশ্ন ২৬। কোন তারিখে ভারতবর্ষে প্রথম রেলপথ চালু করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৩ সালের ১৫ই এপ্রিল।
প্রশ্ন ২৭। ভারতের তৃতীয় রেল লাইনটি কোথায় চালু করা হয় ?
উত্তরঃ কলিকাতা ও রাণীগঞ্জের মধ্যে।
প্রশ্ন ২৮। মাতৃভাষা মুদ্রণ আইন কখন চালু হয় ?
উত্তরঃ ১৮৭৭ সালে ।
প্রশ্ন ২৯। “মহমেডান ওরিয়েন্টাল কলেজ” কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তরঃ স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।
প্রশ্ন ৩০। মাতৃভাষা মুদ্রণ আইন কে বাতিল করেন ?
উত্তরঃ লর্ড রিপন।
প্রশ্ন ৩১। ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম রেললাইন কে উদ্বোধন করেন ?
উত্তরঃ বোম্বে প্রেসিডেন্সীর মুখ্য ন্যায়াধীশ।
প্রশ্ন ৩২। ভারতে পূর্ত বিভাগ কে স্থাপন করেন ?
উত্তরঃ লর্ড ডালহৌসি।
শুদ্ধ উত্তরটি বেছে বের করঃ
১। কোন্ কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের পথ রচনা করা হয়েছিল ?
(i) সেডলার কমিটি।
(ii) উড্ ডেসপাস কমিটি।
(iii) বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি।
(iv) হান্টার কমিশন।
উত্তরঃ (ii) উড্ ডেসপাস কমিটি।
২। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয় ?
(i) কলিকাতা।
(ii) দিল্লীতে।
(iii) বোম্বাইতে।
(iv) মাদ্রাজে।
উত্তরঃ (iii) বোম্বাইতে।
৩। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব সর্বপ্রথম ভারতের কোন রাজ্যে বিস্তার লাভ করে ?
(i) বঙ্গদেশে।
(ii) বোম্বাই প্রদেশে।
(iii) মাদ্রাজ প্রদেশে।
(iv) উত্তর প্রদেশে।
উত্তরঃ (i) বঙ্গদেশে।
৪। কার শাসনকালে ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট প্রণীত হয় ?
(i) লর্ড কার্জন।
(ii) লর্ড রিপন।
(iii) লর্ড লিটন।
(iv) লর্ড অর্কল্যাণ্ড।
উত্তরঃ (iii) লর্ড লিটন।
৫। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ?
(i) ১৮৫৭ সালে।
(ii) ১৮৫৮ সালে।
(iii) ১৯০৫ সালে।
(iv) ১৮৮৫ সালে।
উত্তরঃ (iv) ১৮৮৫ সালে।
৬। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
(i) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
(ii) উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
(iii) দাদাভাই নৌরজী।
(iv) অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।
উত্তরঃ (iv) অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ব্রাক্ষসমাজ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ।
উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায় বেদান্ত উপনিষদ পাঠ করে হিন্দুদের প্রচলিত মুর্তিপূজা ও বহুদেবীতে বিশ্বাস অসার মনে করে সমাজকে একেশ্বরবাদী ও কুসংস্কার মুক্ত করতে চেষ্টা করেন। যে অল্প সংখ্যক ব্যক্তি তাঁর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি তাদেরকে নিয়ে ব্রাক্ষসমাজ গঠন করেন। ব্রাক্ষসমাজ পর্দা প্রথা, বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথা, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধী ব্রাক্ষসমাজ মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষপাতী। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিক উপায়ে সামাজিক কুসংস্কার দূর করে সামাজিক সংস্কার করত নূতন সমাজ গড়ে তোলা।
প্রশ্ন ২। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে কি জান লিখ।
উত্তরঃ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্ৰামে ১৮২০ সালে জন্মগ্ৰহন করেন। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলার নব-জাগরণের ভাবধারায় প্রভাবিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিউম্যানিষ্ট বা ” মানবিক” ব্যক্তি। খাঁটি হিন্দু পণ্ডিত হিসাবে শিক্ষা-দীক্ষা গ্ৰহণ করলেও বিদ্যাসাগর পাশ্চাত্য শিক্ষাকে অবহেলা করেন নি। তাঁর মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল। সমাজ সংস্কার, কুসংস্কার থেকে মুক্তি, বিধবা-বিবাহ, সমাজের লাঞ্ছিত ও নিপীড়িতদের মুক্তিসাধন প্রভৃতি রামমোহনী প্রভাব যেমন তাঁর চরিত্রের একদিক জুড়ে রয়েছিল, অপরদিকে খাঁটি হিন্দু-ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, ব্রাক্ষণ্য ধর্ম পালন প্রভৃতিতে এবং বিশেষভাবে সংস্কৃত সাহিত্যের উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন প্রভৃতিতে ঈশ্বরচন্দ্রের প্রভাব দেখা যায়। স্ত্রী-শিক্ষা, বাংলা ভাষা, সংস্কৃত সাহিত্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের দান অবিস্মরণীয়। তাঁর উদার ও সংস্কারকামী মন বাল্যবিবাহ-নিরোধ, বিধবা-বিবাহের প্রচলন প্রভৃতি প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মাতৃভাষা প্রসারের জন্য নিজে কয়েকখানা গ্ৰন্থ রচনা করেন। তদুপরি সহজে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার জন্য তিনি আরও কয়েকখানা গ্ৰন্থ রচনা করেন। এই সকল গ্ৰন্থের মধ্যে “ব্যাকরণ কৌমূদী” , “উপক্রমণিকা” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক ও সমাজ সংস্কারক। রাজনীতির প্রতি তাঁর কোনো প্রকার আগ্ৰহ ছিল না। তিনি ছিলেন তেজস্বী, বিনম্র ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে বিদ্যাসাগর ছিলেন “ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতার একজন তেজোদীপ্ত প্রবক্তা”।
প্রশ্ন ৩। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যেকোন পাঁচটি নাগরিক সভার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ নাগরিক সভাসমূহের মধ্যে পাঁচটি হল—-
(ক) বেঙ্গল ল্যাণ্ড হোল্ডার্স সোসাইটি, ১৮৩৮
(খ) বেঙ্গল ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সোসাইটি ১৭৪৩
(গ) ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন, ১৮৫১
(ঘ) ইণ্ডিয়ান লীগ ১৮৭৫
(ঙ) ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ১৮৭৬
প্রশ্ন ৪। ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলনের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইহা ভারতীয় সাহিত্য, সমাজ ও ধর্মের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। মাত্র মুষ্টিমের শ্রেণি এই সুযোগ লাভ করেছিল সত্য, তবুও পাশ্চাত্য জ্ঞানের আলোকে দেশের প্রাচীন সভ্যতা ও কৃষ্টির প্রতি নবশিক্ষিত সম্প্রদায়ের এক নূতন দৃষ্টি খুলে যায়। এই শিক্ষার ফলে ভারতবাসীর মনে স্বাধীনতা স্পৃহা জেগে উঠে। বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রথমে, স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা গ্ৰহণ করেন। তাঁরা হিন্দু সমাজের কুপ্রথাগুলি দূর করে পশ্চিমের শিক্ষা ও ধারা গ্ৰহণ করে তাকে শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রচলনের অন্যতম প্রধান সুফল ভারতে স্ত্রীশিক্ষার উন্নতি এবং নারী জাতির আংশিক সামাজিক অধিকার লাভ।
প্রশ্ন ৫। ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট সম্পর্কে একটি টীকা লিখ।
উত্তরঃ ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট বা দেশীয় সংবাদপত্র দমন আইন ১৮৭৭ সালে লর্ড লিটনের শাসনকালে পাস করা হয়। সেই সময় দেশীয় ভাষায় মুদ্রিত সংবাদ-পত্রগুলিতে ব্রিটিশ-বিরোধী সংবাদ প্রকাশিত হলে লিটন সকল সংবাদপত্রের উপর কতকগুলি বিধিনিষেধ আরোপ করবার জন্য Vernacular press Act পাশ করলেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিরুদ্ধাচরণ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো মন্তব্য বা তথ্য দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রে ছাপানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। এইভাবে রাজনৈতিক বা সামাজিক বিষয়ে এই সকল পত্রিকার সমালোচনা করবার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল। ইংরেজী পত্রিকাগুলি অবশ্য এই আইনের কবলে পড়ল না। এই আইনের কবল থেকে মুক্ত হবার উদ্দেশ্যে বাংলা অমৃতবাজার পত্রিকা এক রাত্রিতে ইংরেজী পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়েছিল। লর্ড লিটনের পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড রিপন এই আইন বাতিল করে দিয়ে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলিকে রাজনৈতিক ও সমাজিক বিষয়ে সমালোচনার অধিকার দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৬। স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ ভারতের শিক্ষা দীক্ষা, ধর্ম-সংস্কৃতি বর্তমান যুগে স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে যেমন পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, এমনি আর কোনো একক ব্যক্তির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয় নাই, স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি উত্তর কলিকাতার সিমলা পল্লীতে ১৮৬৩ সনের ১২ই জানুয়ারী বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্ৰহন করেন।
সে যুগে ব্রাক্ষসমাজের বিবিধ সংস্কার আন্দোলনে যুব সম্প্রদায় বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়। নরেন্দ্র নাথের ধর্মপ্রধাশন সহজেই এর ধর্মাংশের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ব্রাক্ষসমাজের কোনো কোনো নেতা দক্ষিণেশ্বরের রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন। একবার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপনা কালে রামকৃষ্ণের কথা বলেছিলেন। এই রূপে রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার তাঁর বাসনা হল।তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত করতে লাগলেন। অবশেষে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ হল। নরেন্দ্রনাথ তাঁর সংম্পর্শে এসে একবারে অতিভূত হলেন। ধর্মের আলোকে তাঁর চিত্ত আলোকিত হল। পরমহংসদেবের তিরোধানের পর ১৮৮৬ সালেই নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে বরাহনগরের রামকৃষ্ণ মঠ স্থাপিত হয়। পর বৎসর নরেন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্ৰহণ করে ‘বিবেকানন্দ’ নামে ভূষিত হন। ১৮৯৩ সালে স্বামীজী আমেরিকার শিকাগো ধর্ম মহাসভার অধিবেশনে হিন্দুধর্মের বিশেষত্ব প্রমাণ করে হিন্দুধর্ম ও মহাসভ্যতাকে জগতের শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ১৮৯৭ সালের ১লা মে স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিশনের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান ভারতের সর্বত্র এবং ইউরোপে ও আমেরিকার স্থানে স্থানে রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ১৮৯৯ সনের প্রথম দিকে বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করেন। মাত্র ঊনচল্লিশ বৎসর বয়সে ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই স্বামীজির মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর জীবন ভারতবাসীর নিকট আলোকবর্তিকা স্বরূপ।
প্রশ্ন ৭। রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয় সাধনের জন্য যে মহাপুরুষের আর্বিভাব হয়েছিল, তিনি হলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদের। তিনি যেমন একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন, তেমনি দেবদেবীর মূর্তিপূজায় তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল। তাঁর মত হল “যত মত তত পথ”। মানুষ মাত্রকেই শিবজ্ঞান করে মানুষের সেবা করা তিনি ধর্মের অঙ্গ হিসাবে গণ্য করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন ঐশ্বরিক শক্তির প্রতীক। তাঁর মতে হিন্দুর ভগবান, মুসলমানদের খোদা, খ্রিস্টানের খ্রিস্ট সকলই একই ভগবানের ভিন্ন ভিন্ন নাম।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রধান শিষ্য হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় শিকাগো ধর্ম-মহাসভার অধিবেশনে হিন্দুধর্মের বিশেনত্ব প্রমাণ করে হিন্দুধর্ম ও সভ্যতাকে জগতশ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছিলেন। স্বামীজীর চেষ্টায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ভারতের সর্বত্র এবং ইউরোপ ও আমেরিকার স্থানে স্থানে রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। কেবল হিন্দুজাতির মধ্যে নবজীবন সঞ্চারে রামকৃষ্ণ মিশনের অবদান সীমিত নহে, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তার দান অতুলনীয়। সকল শ্রেণির লোকদের নিয়ে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিই ছিল বিবেকানন্দের আহ্বান। তিনি বলতেন—“হে ভারত ; ভুলিও না,–নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ ; মুচি, মেথর তোমার রক্ত তোমার ভাই।”
প্রশ্ন ৮। কংগ্রেসের যেকোনো চারজন চরমপন্থী নেতার নাম লিখ।
উত্তরঃ চরমপন্থী চারজন নেতা হলেন—-
(ক) বিপিনচন্দ্র পাল।
(খ) অরবিন্দ ঘোষ।
(গ) বালগঙ্গাধর তিলক।
(ঘ) লালা লাজপত রায়।
প্রশ্ন ৯। কংগ্রেসের প্রথম সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্য সমূহ কি কি ?
উত্তরঃ প্রথম সম্মেলন বা অধিবেশনে সভাপতি কংগ্রেসের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি ব্যাখ্যা করেন।
উদ্দেশ্যগুলি হল :
(১) ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যে সকল লোক দেশসেবায় নিয়োজিত তাদের মধ্যে সহযোগিতা ও সৌহার্দ্য স্থাপন।
(২) এই সৌহার্দ্যর মাধ্যমে জাতি, ধর্ম ও প্রাদেশিক সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি।
(৩) শিক্ষিত ও সম মনভাবাপন্ন লোকের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক সংস্কার ও সমস্যা সমাধানের পথ নির্ণয় করা।
(৪) রাজনৈতিক অগ্ৰগতির জন্য পরবর্তী বছরের কার্যসূচী গ্ৰহণ।
প্রশ্ন ১০। ঊনবিংশ শতকে ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের প্রভাব সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ ব্রিটিশ আমলে পূর্ব ভারতে উন্নত ও পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ভারতের এক প্রান্তের লোকের সঙ্গে অন্য প্রান্তের লোকের কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে, রেল, মোটর, বিমান, টেলিফোন, টেলিগ্ৰাফ, প্রভৃতি প্রচলনের ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগের উন্নতি হওয়ার দেশের একপ্রান্তের লোকের সঙ্গে অন্য প্রান্তের লোকের সংযোগ ও ভাবের আদান-প্রদান থেকে থাকায় ভারতে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ১১। কংগ্রেসের যেকোন চারজন নরমপন্থী নেতার নাম লিখ।
উত্তরঃ নরমপন্থী চারজন নেতা হলেন :
(ক) দাদাভাই নাওরোজী।
(খ) উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
(গ) গোপালকৃষ্ণ গোখলে।
(ঘ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ১২। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের জন্য ব্রিটিশরা নিন্দিত হলেও ভারতবর্ষের বিকাশে তাঁদের মৌলিক অবদানগুলি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের জন্য ব্রিটিশরা নিন্দিত হলেও ভারতবর্ষের বিকাশে তাঁদের মৌলিক অবদানগুলি হলো—-
(১) ইংল্যাণ্ড উৎপাদিত সামগ্ৰী ভারতে বিক্রির উদ্দেশ্যে যোগাযোগের সাবলীল ব্যবস্থার দরকার হয়েছিল। সেজন্য ব্রিটিশ প্রশাসন স্থলপথ, রেলপথ ও টেলিগ্ৰাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল। যার ফলে ভারত তথা অসম বিকাশের ক্ষেত্রে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয়।
(২) ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ব্রিটিশ মেজর জেনকিন্সের জন্যই অসমে চা, কয়লা ও তেল শিল্পের বিকাশ হয়েছিল। গুয়াহাটি ও শিবসাগরে ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ও স্থাপিত হয়েছিল।
(৩) মেজর জেনকিন্সের মত ব্রিটিশ অধিকারিক উপলব্ধি করেছিলেন অসমের মত অঞ্চলে স্থানীয় লোকের নিযুক্তির মাধ্যমেই তাদের বিকাশ ঘটাতে হবে। তিনি অসমে বাংলাদেশের আমলা নিয়োগের বিরোধিতা করেন।
প্রশ্ন ১৩। ‘প্রার্থনা সমাজ’ সম্পর্কে টীকা লিখ।
উত্তরঃ প্রার্থনা সমাজ : ব্রাক্ষ সমাজের ধাঁচে কেশবচন্দ্র সেন ১৮৬৭ সালে মহারাষ্ট্রে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। সমগ্ৰ দক্ষিণ ভারতে এই সংগঠন সংস্কারমুখী একটা প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করতে পেরেছিল।
প্রার্থনা সমাজের মূল নেতৃত্ব গ্ৰহণ করেছিলেন জাস্টিস মহাদেব গোবিন্দ রানাডে। রানাডের একান্ত চেষ্টায় ‘বিধবা বিবাহ সংস্কার’ এবং ‘দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ’ নামের দুটি বিখ্যাত সংস্থা গড়ে উঠেছিল। প্রথম সংস্থার মধ্য দিয়ে বিধবা বিবাহের প্রতি উৎসাহ জোগানের সঙ্গে সঙ্গে অনাদৃত বিধবাদের আর্থিক সংস্থাপনের জন্য কুটির শিল্প স্থাপন করেছিলেন। ‘দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ’ অনাথ শিশুদের শিক্ষাদান করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের লালন পালনের জন্য বিভিন্ন স্থানে আশ্রম স্থাপন করেছিল। নিরক্ষার এবং অনুন্নত জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। প্রার্থনা সমাজের সংস্কার আন্দোলন সমগ্ৰ দক্ষিণ ভারতের জনতার অন্তরে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার গভীর প্রেরণা সঞ্চার করেছিল।
প্রশ্ন ১৪। থিওসফিক্যাল সোসাইটি সম্বন্ধে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ থিওসফিক্যাল সোসাইটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৮৭৫ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করা হয়।এই সংস্থার শাখা কার্যালয় ১৮৮৫ সালে মাদ্রাজে উদ্বোধন করা হয়।
মাদ্রাজকে কেন্দ্র করে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে থিওসফিক্যাল সোসাইটিকে জনপ্রিয় করে তোলার মূলে ছিলেন আয়ারল্যাণ্ডের মহিলা মিসেস অ্যানি বেসান্তের বিশেষ কর্মদক্ষতা। অ্যানি বেসান্ত থিওসফিক্যাল সোসাইটির কাজে মাদ্রাজে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সমাজসেবার মধ্য দিয়ে অ্যানি বেসান্ত প্রাচীন ভারতের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি পুনরুদ্ধারের উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কয়েকটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১৯০৭ সালে বারণসীতে অ্যানি বেসান্তের প্রতিষ্ঠা করা ‘সেন্ট্রাল হিন্দু স্কুল’টিই ১৯১৫ সালে কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
১৯১৬ সালে বেসান্ত হোমরুল লিগ প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয়দের মধ্যে স্ব-শাসনের প্রয়োজনীয়তা প্রচার করেছিলেন। ১৯১৭ সালে বেসান্ত জাতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতি পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি ছিলেন।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি ছিল সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকালে এর লক্ষ্য ও আদর্শগুলি হলো—
(১) দেশের কল্যাণে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সকল শ্রেণির লোকদের সঙ্গে ব্যক্তি-সৌহার্দ্য ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলা।
(২) জাতিগত, আদর্শগত ও প্রাদেশিক সংকীর্ণতা পরিহার করে জাতীয় ঐক্যের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করা।
(৩) সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সকল সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে দেশের শিক্ষিত শ্রেণি দায়িত্বশীলভাবে তাদের অভিজ্ঞ মতামতের লিপিবদ্ধ করা।
(৪) আগামী বছরগুলিতে দেশের রাজনৈতিকভাবে কি ধরনের কার্যে অগ্ৰসর হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
প্রথম অধিবেশনের গ্ৰহণ করা কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়বস্তু ছিল এইরূপ—-
(ক) একটি রাজকীয় আয়োগের দ্বারা ভারতের শাসন ব্যবস্থার তদারকি করা।
(খ) লণ্ডনে অবস্থিত ভারত পরিক্রমা দপ্তরের মন্ত্রীর পরিষদটির বিলুপ্তি ঘটানো।
(গ) ইংল্যাণ্ড এবং ভারতে একই সঙ্গে লোকসেবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা।
(ঘ) সামরিক খাতে ব্যয় সংকোচন করা।
(ঙ) ১৮৬১ সনের ভারতীয় পরিষদ আইনের অধীনে গঠন করা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সম্প্রসারণ।
এই সকল আদর্শ ও উদ্দেশ্য ভিন্ন অধিক সংখ্যক ভারতীয়দের কর্ম-সংস্থান, কৃষকদের খাজনার পরিমাণ নির্দিষ্টকরণ, অরণ্য সংক্রান্ত আইন, লবণ আইন প্রভৃতির পরিবর্তন করে জনসাধারণের যাতে সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থা করা। শিক্ষার উন্নতিসাধন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বিচার বিভাগ ও শাসনবিভাগকে পৃথকীকরণ প্রভৃতি।
প্রশ্ন ২। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সময়ের সংস্কারসমূহের বিষয়ে একটি টীকা লিখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রায় সাত বৎসরকাল (১৮১৮-৩৫) ভারতের গভর্ণর ছিলেন। তাঁর শাসনকাল যুদ্ধ-বিগ্ৰহ কিংবা রাজ্যবিস্তারের গৌরবে সমুজ্জ্বল না হলেও উহা সামাজিক সংস্কার, শাসন-সংস্কার ও শিক্ষাবিস্তারের জন্য বিশেষ স্মরণীয়।
(১) সামাজিক সংস্কার : বেন্টিঙ্কের সমাজ-সংস্কারের মধ্যে সতীদাহ প্রথা নিবারণ, ঠগীদমন, অসভ্য জাতির সংস্কার প্রভৃতিই সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।
(২) শাসন-সংস্কার : বেন্টিঙ্কের প্রধান প্রধান শাসন-সংস্কারগুলি হল :
(ক) ব্রক্ষযুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যয়ের কোম্পানীর অর্থকষ্ট উপস্থিত হয়। সুতরাং ব্যয়-সঙ্কোচের জন্য বেন্টিঙ্ক কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীর বেতন হ্রাস করেন।
(খ) মালবের উৎপন্ন আফিমের উপর শুল্ক নির্ধারণ করেন।
(গ) মাদ্রাজে জমির রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত এবং উত্তরপ্রদেশে ত্রিশ বৎসরের জন্য ভূমির বন্দোবস্ত করে তিনি কোম্পানীর আয়বৃদ্ধি করেন।
(ঘ) সিন্ধুপ্রদেশের আমীরদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন এবং পাঞ্জাবে রণজিৎ সিংহের সঙ্গে সন্ধির নূতন ব্যবস্থার ফলে সেইসকল স্থানেও ব্রিটিশ বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এতে সরকারের আয়বৃদ্ধি হয় এবং কোম্পানীর ঋণ পরিশোধের পরেও তহবিলে এক কোটি টাকা জমা হয়।
(৩) বিচার বিভাগের সংস্কার : বেন্টিঙ্ক বিচার বিভাগেরও সংস্কার সাধন করেন।
(ক) বেন্টিঙ্ক কর্ণওয়ালিশের স্থাপিত প্রাদেশিক বিচারালগুলি উঠিয়ে দিয়ে জিলায কালেক্টরগণের উপর বিচারের ভার অর্পণ করেন।
(খ) আদালতের কার্য পার্শী ভাষার পরিবর্তে দেশীয় ভাষায় সম্পাদিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
(গ) তিনিই সর্বপ্রথম বিচার ও শাসন বিভাগে ভারতীয়গণকে উচ্চপদে নিযুক্ত করবার প্রথা প্রবর্তন করেন। ভারতীয় বিচারকগণের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। এবং তাঁদের এলাকাও বিস্তৃত হয়।
(৪) সামরিক বিভাগের সংস্কার : বেন্টিঙ্ক সামরিক বিভাগেরও সংস্কার সাধন করেন। প্রথমত, তিনি সৈন্যবিভাগের ব্যয় হ্রাসের বন্দোবস্ত করেন এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর সময়ে ভারতীয় সৈন্যের বেত্রদণ্ডের প্রথা রদ হয়।
(৫) শিক্ষা-সংস্কার : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য বেন্টিঙ্কের নাম বিশেষ স্মরণীয়। তাঁর সময়েই ভারতে ইংরেজী শিক্ষার বিস্তার ঘটে। পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ১৮৩৫ সালে কলিকাতায় মেডিকেল কলেজ এবং বোম্বাইতে এলফিন্ষ্টোন ইন্ষ্টিটিউট স্থাপিত হয়। এই সকল ব্যবস্থার ফলে নবভারতের পথ উন্মুক্ত হল।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের নাম প্রজার মানসিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির চেষ্টার জন্য ভারত ইতিহাসে বিশেষ স্মরণীয়। শাসন সংস্কার, সাম্রাজ্য প্রসার প্রভৃতির ব্যাপারে তিনি কৃতি নন সত্য, কিন্তু লোকের মানসিক ও নৈতিক উন্নতি সাধন এবং সামাজিক কু-প্রথা দমন করে তিনি যে সৎকার্য করেছেন তা ভারতবাসী চিরদিন স্মরণ রাখবে।
প্রশ্ন ৩। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পরাজয়ের গ্লানি ও নৈরাশ্য দেশব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারিত হয়েছিল। এই চেতনাই ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সংগঠিত রূপ ধারণ করে এবং তখন থেকেই ভারতীয় মুক্তি সংগ্ৰামের ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা হয়। উনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবোধ উন্মেষের কারণসমূহ নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—-
(১) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক সমগ্ৰ ভারত জয়ের পর সমগ্ৰ ভারত ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকায় ভারতবাসী ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারে যে তারা একই জাতি অর্থাৎ ভারতীয়। ইংরেজ কৃত্রিমভাবে প্রদেশগুলি চিহ্নিত করে ভারতবাসীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।
(২) পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারা : পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারা প্রবর্তন ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধ উন্মেষের পথ সুগম করেছিল। ভারতবাসী তাদের অতীত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানত না। ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভারতবাসী তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা জানতে পেরে তাদের একাত্মবোধ ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
(৩) ব্রিটিশ অর্থনীতি : ব্রিটিশ সরকার ভারতকে তাদের অর্থনৈতিক শোষণের কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করে ইংরেজের শিল্পজাত দ্রব্যাদি আধিক লাভে ভারতে বিক্রয় করত এবং ভারতের কাঁচামাল স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে ইংল্যাণ্ডে নিয়ে যেত। ব্রিটিশ ভারতের শিল্প ধবংস করতে সচেষ্ট হয়। তারা কোনো শিল্প গড়ে তোলেনি। ফলে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ থেকে থাকে। ভারতবাসী এর জন্য ইংরেজকে দায়ী করে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ হয়।
(৪) ইংরেজ বিরোধী মনোভাব : ইংরেজরা ভারতবাসীকে নিকৃষ্ট জাতি বলে গণ্য করত।অনেক ইংরেজ মনে করত যেহেতু যুদ্ধ করে তারা ভারতবর্ষ জয় করেছে, অতএব বিজিত ভারতীয়রা তাদের আজ্ঞাবহ। ইংরেজের ঐরূপ মনোভাব ভারতবাসীর আত্মসম্মানে আঘাত করায় তাদের জাতীয় চেতনাবোধ জেগেছিল।
(৫) পাশ্চাত্য দেশের সঙ্গে সংযোগ : ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতবাসীরা পাশ্চাত্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সেই সকল দেশের জনগণের উন্নত জীবনযাত্রা উপলব্ধি করেন। অন্যদিকে ইংরেজ ভারতবাসীকে ন্যূনতম সুযোগও দিত না। ফলে ভারতবাসী সংঘবদ্ধভাবে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে বদ্ধপরিকর হয়।
(৬) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : ব্রিটিশ আমলের পূর্বে ভারতের এক প্রান্তের লোকের সঙ্গে অন্য প্রান্তের লোকের কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে, রেল, মোটর, বিমান, টেলিফোন, টেলিগ্ৰাফ প্রভৃতি প্রচলনের ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় দেশের এক প্রান্তের লোকদের সঙ্গে অন্য প্রান্তের লোকদের সংযোগ ও ভাবের আদান-প্রদান থেকে থাকায় ভারতে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।
(৬) সংবাদপত্রের ভূমিকা : নূতন জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রসারের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র ও পত্র-পত্রিকার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দেশীয় ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র ও পত্র-পত্রিকাগুলি ইংরেজ সরকারের ভারতনীনিকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে ভারতবাসীদের সজাগ করে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাধের নূতন ভাবধারা সঞ্চারিত করেছিল।
(৮) ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্থার ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের সাহিত্য ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নবজাগরণ ভারতের রাজনৈতিক জাগরণের পথ প্রশস্ত করে তোলে। ব্রাক্ষসমাজ, আর্যসমাজ, রামকৃষ্ণ মিশন প্রভৃতি ভারতীয় আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি একটি নূতন ভারত সৃষ্টি করতে উদ্দীপনা দিয়াছিল।
(৯) ইংরেজী শিক্ষার প্রভাব : ভারতে সরকারী ভাষা ইংরেজী হওয়ায় বহু ভারতবাসী বাধ্যতামূলক এই ভাষা শিখেছিল। ইংরেজী ভাষা আয়ও করায় ভারতবাসীরা ঐ ভাষায় লিখিত ইউরোপের বহু মনীষীর চিন্তাধারায় ভারতবাসীর মন আকৃষ্ট করে। অপরদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় সংগঠিত বিভিন্ন জাতীয় বিপ্লব এবং স্বাধীনতা সংগ্ৰামের বাণীও আদর্শ ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করে। ফলে ভারতবাসীর মনে জাতীয়তাবোধ জাগ্ৰত হয়।
(১০) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান : ১৮৫৭ সালের পর ভারতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। এইগুলির মধ্যে পুনরায় সার্বজনিক সভা, ইস্ট ইণ্ডিয়া এসোসিয়েশন, ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান যে বিভিন্ন কারণের জন্যই ঊনবিংশ শতকে ভারতে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.