Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Notes in Bengali PDF Download. SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Suggestions in Bengali. SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Notes in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 9 Social Science Chapter 3 মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ
প্রথম খন্ড : ইতিহাস
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
● অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। মায়ামরা কি ?
উত্তরঃ মায়ামরা একটি বৈষ্ণব সত্রের নাম। মরাণ গোষ্ঠীর লোকজন এই সত্রের শিষ্য ছিল।
২। সত্র বলিতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ সত্র বলিতে শ্রীমন্ত শংকরদেব দ্বারা প্রচারিত নামধর্ম বা নববৈষ্ণব ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য গড়ে উঠা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বুঝি।
৩। সংহতি কি ?
উত্তরঃ সংহতি হলো সত্রসমূহের ভাগ। যেমন– ব্রক্ষ সংহতি, পুরুষ সংহতি কাল সংহতি ও নিকা সংহতি। মায়ামরা সত্র কাল সংহতি অন্তর্ভুক্ত।
৪। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ কোন আহোম রাজার সময় শুরু হয়েছিল ?
উত্তরঃ আহোম রাজা স্বর্গদেও লক্ষ্মীসিংহের মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ হয়েছিল।
৫। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ কোন রাজার সময়ে সমাপ্ত হয়েছিল ?
উত্তরঃ রাজা স্বর্গদেও কমলেশ্বর সিংহের রাজত্বকালে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়েছিল।
৬। কোন আহোম রাজা প্রথমে স্বর্গদেও/ স্বর্গনারায়ণ উপাধি গ্ৰহণ করেছিলেন বলে অনুমান করা যায়।
উত্তরঃ আহোম রাজা চুহংমুং প্রথম স্বর্গদেউ/স্বর্গনারায়ণ উপাধি গ্ৰহণ করেছিলেন বলে অনুমান করা যায়।
৭।চুরুমফা ভগারাজার সময়ে কোন মোয়ামরীয়া সত্রাধিকারকে হত্যা করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ চুরুমফা ভগারাজার সময়ে মোয়ামরিয়া সত্রাধিকার গুরু নিত্যানন্দদেবেকে হত্যা করা হয়েছিল।
৮। রুদ্রসিংহের রাজসভায় কোন মোয়ামরীয়া সত্রাধিকারকে হত্যা করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ রুদ্রসিংহের রাজসভায় মোয়ামরীয়া সত্রাধিকার চতুর্ভূজদেব মোহন্তকে হত্যা করা হয়েছিল।
৯। আহোমদের প্রধান উপাস্য দেবতার নাম কি ?
উত্তরঃ আহোমদের প্রধান উপাস্য দেবতার নাম হলো ছেমিদেও।
১০। জয়ধ্বজ সিংহ কোন সত্রাধিকারের শরণাগত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ জয়ধ্বজ সিংহ আউনিআটী সত্রের সত্রাধিকার নিরঞ্জনাদেবের শরণাগত হয়েছিলেন।
১১। রুদ্রসিংহ কার শরণ নিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ রুদ্রসিংহ আউনীআটী সত্রের সত্রাধিকার কেশবদেবের শরণ নিয়েছিলেন।
১২। কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্য কে ছিলেন ?
উত্তরঃ কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্য ছিলেন বঙ্গদেশের নদিয়া জেলার একজন শাক্ত ব্রাক্ষণ। তাঁকে আসামে এনেছিলেন রাণী “বররাজা” বা ‘ফুলেশ্বরী’।
১৩। কোন আহোম রাজার সময়ে শাক্তধর্ম পল্লবিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ আহোম রাজা স্বর্গদেও শিব সিংহের সময়ে শাক্তধর্ম পল্লবিত হয়েছিল।
১৪। গাগিনি কে ?
উত্তরঃ গাগিনি হলো মোয়ামরীয়া মোহন্ত অষ্টভূজের পুত্র।
১৫। মোয়ামরীয়ারা সর্বপ্রথম কাকে রাজা ঘোষণা করেছিলেন ?
উত্তরঃ মোয়ামরীয়ারা সর্বপ্রথম নাহরখোয়ার পুত্র রমাকান্তকে রাজা করেছিলেন।
১৬। ক্যাপ্টেন ওয়েল্স কবে থেকে কবে পযর্ন্ত অসমে ছিলেন।
উত্তরঃ ক্যাপ্টেন ওয়েল্স ১৭৭২ সালের ৮নভেম্বর থেকে ১৭৭৪ সাল পযর্ন্ত অসমে ছিলেন।
১৭। অসমে কত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ?
উত্তরঃ অসমে শদিয়া ও নাগা পাহাড়ে কিছু লবণ-উৎপাদন হয়েছিল।
১৮। অসমের সাধারণ-মানুষ কোন কোন লবণ ব্যবহার করতে পারত না ?
উত্তরঃ অসমে লবণ ছিল খুবই দামি সামগ্ৰি, তাই সাধারণ মানুষ লবণ ব্যবহার করতে পারত না।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। মোয়ামরীয়ারা কারা ? এই বিদ্রোহকে গণ অভ্যুথান বলা যায় কি ?
উত্তরঃ মোয়ামরীয়ারা ছিল মরাণ জনগোষ্ঠীর লোক। ময়ামরা ছিল সত্রের মোহন্ত বা সত্রাধিকারগণ শূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত। গুরুর প্রতি মোয়ামরীয়াগণের গভীর ভক্তি ছিল। এমন কি গুরুর কারণে তারা প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করত না। শিষ্যগণ একান্ত অনুগত ও ভক্তি আদায় করে মোয়ামরীয়া মোহন্তগণ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে পড়ে। এর ফলে মোয়ামরীয়া মোহন্ত ও আহোম রাজাগণের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
মোয়ামরীয়া বিদ্রোহকে একটি গণঅভ্যুথান বলা যায়। কেননা মোয়ামরীয়া গুরু নীত্যানন্দদেব হত্যার ক্ষোভ আহোম রাজা গদাধর সিংহ মোয়ামরীয়াগণের বিরুদ্ধে চালানো অত্যাচারী কার্য আগুনে ঘৃত ঢালার মতই হয়েছিল। গদাধর সিংহ পলাতক অবস্থায় আউনি আটি ও দক্ষিণ পাট সত্রে আশ্রয় গ্ৰহণে গেলে ভক্তগণ তাঁকে আশ্রয় দেয়নি। এমনকি দক্ষিণ পাট সত্রের সত্রাধিকারেরা তাঁকে কটুবাক্য শুনিয়েছিল। কছারী, চুতীয়া, মরাণ ইত্যাদি অনেকেই এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল।
S.L. No. | সূচী-পত্ৰ |
প্রথম খণ্ড | ইতিহাস |
পাঠ -১ | ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন |
পাঠ -২ | ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ |
পাঠ -৩ | মোয়ামরীয়া গণবিদ্রোহ |
পাঠ -৪ | মানের অসম আক্রমণ |
পাঠ -৫ | অসমে ব্রিটিশ প্রশাসনের সূচনা |
দ্বিতীয় খণ্ড | ভূগোল |
পাঠ -১ | ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন |
পাঠ -২ | বায়ুমণ্ডল : গঠন এবং বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ |
পাঠ -৩ | ভারতবর্ষের ভূগোল |
পাঠ -৪ | অসমের ভূগোল |
তৃতীয় খণ্ড | ৰাজনীতি ও অৰ্থনীতি বিজ্ঞান |
পাঠ -১ | ভারতের রাজনৈতিক দল |
পাঠ -২ | নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ |
পাঠ -৩ | অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো |
পাঠ -৪ | প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ |
প্রশ্ন ২। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ অসমের মধ্যযুগের ইতিহাসে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিদ্রোহ ১৭৬৯ সাল থেকে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫/৩৬ বছর ধরে চলেছিল। কিন্তু এই বিদ্রোহের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ১০০বছর আগে থেকেই। আহোম স্বর্গদেও লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ স্বর্গদেও কমলেশ্বর সিংহের রাজত্বকালে সমাপ্ত হয়। অবশ্য এই বিদ্রোহের কারণ সমূহ একশত বৎসর আগে থেকেই দানা বাঁধছিল। বিদ্রোহের মূল কারণ, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয়। জনগণের মধ্যে বছর বছর ধরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ অবশেষে স্বর্গদেও লক্ষ্মীসিংহের সিংহাসনে আরোহণের বছরেই বিদ্রোহে পরিণত হয়।
ময়ামরা সত্রের সত্রাধিকার গুরু নিত্যানন্দদেবের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের প্রধান উৎস নিহিত। আহোম স্বর্গদেও চুরাম্ফা ভগা রাজার রাজত্বকালে বেজদলৈ ভাণ্ডারী বরুয়া গুরুজনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে রাজার অনুমোদন সাপেক্ষে এটি কার্যকরী করেছিল। গুরুজনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে শিষ্যরা প্রতিজ্ঞা করেছিল। সত্রাধিকার নিত্যানন্দদেবকে হত্যার পর মোয়ামরীয়া সত্রের শিষ্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছিল।
দ্বিতীয়ত, গুরুজনকে হত্যার ক্ষোভ শেষ না হতেই আহোম স্বর্গদেও গদাধর সিংহের বৈষ্ণব নির্যাতন কার্যত আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। গদাধর সিংহ সত্রানুষ্ঠানে ধনদৌলতের গন্ধ পান। ধনে সম্পদে পরিপূর্ণ প্রতিটি সত্রানুষ্ঠান রাষ্ট্রসদৃশ ছিল। অপরদিকে দক্ষিণপাট সত্রের সত্রাধিকার গদাধর সিংহের সিংহাসনে আরোহণ সুনজরে দেখতেন না।
আগে প্রচলিত নিয়মমতে ব্রাক্ষণ,পরোহিত, সংসারী, বৈরাগী, সন্ন্যাসী, সত্রাধিকার ও ভক্তগণ পাইক সেবাদান থেকে অব্যাহিত পেত। এই সুবিধা গ্ৰহণের জন্য বহুলোক সত্রের ভক্ত হয়ে পাইকসেবা থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছিল। ফলে দেশের রাষ্ট্র নির্মাণ, খাল খনন, মঠ নির্মাণ করতে শ্রমিকের অভাব দেখা যায়।
আহোম রাজ্যে সত্রানুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার ফলে পাইক সেবাদান করা লোকের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমেছিল। সুতরাং গদাধর সিংহ সত্রানুষ্ঠান ধ্বংস করে এদের বিষয় সম্পত্তি রাজকোষে জমা এবং বৈষ্ণব মোহন্তগণকে শারীরিক শ্রমদানে নিযুক্ত করেন। প্রতিবাদ করলে শত শত মোহন্ত ও ভক্তকে শারীরিক নির্যাতন দেওয়া হয়। অনেককে নিজ বাসস্থান থেকে তাড়ানো হয়।
প্রজা বা বৈষ্ণব নির্যাতনের ঘটনা এভাবে শেষ হয়নি। রাজা শিব সিংহের প্রধানা মহিষী ছিলেন ফুলেশ্বরী। তিনি অতিসাধারণ অবস্থা থেকে রাণী বলে পরিচিত হন। ১৭২২ সালে রাজা ‘বররাজ’ উপাধি দিয়ে শাসনভার তার উপর অর্পণ করেন। ফুলেশ্বরী শাক্ত ব্রাক্ষণের দীক্ষাগ্ৰহণ করেন, তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। একবার দূর্গাপূজার সময় তিনি মোয়ামরীয়া মোহন্তগণকে মূর্তিপূজা করতে বাধ্য করেন এবং তাদের কপালে রক্ততিলক পরিয়ে দেন। এর ফলে মোয়ামরীয়াগণের আহোম রাজার উপর বিদ্বেষ জন্মে।
প্রশ্ন ৩। আহোমের ধর্মীয় নীতির পরিবর্তন মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের কারণ এ সম্পর্কে তোমার মত কী আলোচনা করো।
উত্তরঃ আহোম রাজার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ প্রধানত দুটি কারণে সংঘটিত হয়েছিল—-অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণে।
প্রথমত, পূর্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্রাক্ষণ, পুরোহিত, সন্ন্যাসী, বৈরাগী, সত্রাধিকার ও ভক্তগণ পাইক সেবাদান থেকে অব্যাহিত পেতেন। এই সুবিধালাভের জন্য বহুসংখ্যক লোক ভক্ত হয়ে পাইকসেবা হতে নিষ্কৃতি লাভ করেছিল। ফলে দেশের রাস্তাঘাট নির্মাণ, মঠ নির্মাণ অন্যান্য কল্যাণমুখী কাজের জন্য মানুষের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং গদাধর সিংহ উক্ত পত্রানুষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করে এতে নিয়োজিত লোকদের কাজে লাগাতে শুরু করেন।
দ্বিতীয়ত, রাজা গদাধর সিংহ ছিলেন শাক্তপন্থী। তিনি বৈষ্ণব ধর্মের ঘোর বিরোধী ছিলেন। বৈষ্ণবধর্ম উৎখাত করে শাক্তধর্ম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তিনি বৈষ্ণব সত্রানুষ্ঠা ধ্বংস করতে শুরু করেন।
আহাম স্বর্গদেও গদাধর সিংহ সত্রানুষ্ঠান ধ্বংস করতে শুরু করলে আহোম জনগণের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গদাধর সিংহের এই অপকাজের বিরোধীতা করে। কালক্রমে এটি বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে এবং মোয়ামরিয়া বিদ্রোহে পরিণত হয়।
প্রশ্ন ৪। পাইকপ্রথা মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের নেপথ্যে কতটুকু ভূমিকা নিয়েছিল এ প্রসঙ্গে তোমার মতামত বর্ণনা কর ?
উত্তরঃ আহোম রাজা স্বর্গদেও রাজেশ্বর সিংহের পাইক বা প্রজা শোষণ নীতি মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল, আগে চারজন পাইক নিয়ে একটি জোট করার ব্যবস্থা থাকত। এদের মধ্যে প্রতিজন বছরে ১২ মাসের মধ্যে তিন মাস বাধ্যচামূলক পাইকসেবা করত কিন্তু পাইকদের সংখ্যা হ্রাস পেলে ৩জন পাইক নিয়ে একটি জোট গঠন করা হত এবং প্রতি পাইকে বছরে চারমাস পাইকসেবা দিতে হত। সুতরাং প্রত্যেক পাইকের উপর শ্রমের বোঝা বেড়ে যায়। এভাবে প্রতিটি পাইক বছরের চারমাস রাষ্ট্রীয় পাইকরূপে সেবাদানের ফলে কৃষি ও অর্থনীতির প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়। শারীরিক শ্রমের বোঝা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রজাশোষণের নীতি দেশের সাধারণ প্রজা সহ্য করতে পারত না। তারা আহোম রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা রাজার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার সুযোগ খোঁজে।
ব্রক্ষপুত্রের উত্তর পারে তীরে ডফলা বহুতীয়া আহোম প্রজাগণকে সদাই দুই প্রকার করের বোঝা বহন করতে হত। এই ধরনের কর ব্রক্ষপুত্রের উত্তর তীরের আহোম প্রজাসাধারণকেও অসন্তষ্ট ও অতিষ্ঠ করে তোলে। স্বর্গদেও লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে মোয়ামরীয়াগণ বিদ্রোহ করার সঙ্গে সঙ্গে তারাও বিদ্রোহের সঙ্গে সংহতি স্থাপন করে প্রজাবিদ্রোহে যোগ দেয়।
এই প্রকার প্রজাশোষণে আহোম রাজতন্ত্রের রাজশক্তিকে ধাক্কা দিয়েছিল। সাধারণ প্রজারা এমনিতেই দুঃখী তার উপর তারা সমাজের কন্টক বলে পরিগণিত হয়েছিল। সমাজে তাদের মান মর্যাদা বলে কিছু ছিল না। তারা শুধুমাত্র শ্রম করার যন্ত্ররূপেই পরিচিত ছিল। ফলে দেশের সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত বেড়েছিল। সুতরাং সমাজের নিম্নশ্রেণির প্রজাগণও আহোম রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বহুবছর ধরে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি পোষণ করে রেখেছিল ফলে এই বিদ্রোহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে অংশগ্রহণ করে প্রজাবিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন ৫। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের ফলাফল বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ আহোম রাজতন্ত্রের ইতিহাসে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিদ্রোহের পরিণতি একদিকে আহোম রাজতন্ত্র অপরদিকে আহোম রাজতন্ত্র ও সমগ্ৰ অসমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভয়ানক ছিল। নিচে এই বিষয়ে আলোচনা করা হল।
দীর্ঘকাল বিদ্রোহ চলায় অসমের রাজনৈতিক সংহতি নষ্ট হয়েছিল। বিদ্রোহ রাজপদের মান-মর্যাদা কম করেছিল। রাজার অজ্ঞতা প্রমাণ হয়েছিল। ফলে আহোমদের পতন আসন্ন হয়েছিল।
বিদ্রোহের ফলে অনেক জনপদ জনশূন্য হয় এবং অনেক কৃষক কৃষিকাজ ত্যাগ করে স্থানান্তরে চলে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহের ফলে আহোম অভিজাত শ্রেণির নৈতিক অধঃপতন ঘটে। রাজশক্তি দুর্বল হয়ে অভিজাত শ্রেণি ক্ষুদ্র স্বার্থরক্ষায় তৎপর হয়।
বিদ্রোহ আহোমদের সামরিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছিল। মরাণগণ আহোম সোলার স্তম্ভস্বরূপ ছিল। কিন্তু বিদ্রোহে আহোম সোলাবাহিনীতে মরাণদের প্রভাব কমে যায়। এই বিদ্রোহের ফলে অসমে ইংরেজ প্রভাবের পথ উন্মুক্ত হয়।
মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ দমনের জন্য আহোম রাজার অনুরোধে ক্যাপ্টেন ওয়েলস কলিবর থেকে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর বঙ্গ সরকারের কাছে এক গোপন প্রতিবেদনে অসমের সম্ভাবনায় সম্পদ বিষয়ে জানিয়ে ছিলেন। তখন থেকেই কোম্পানি অসম দখলের স্বপ্ন দেখছিল। এই বিদ্রোহে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষতিকারক পরিণতি ছিল এটি।
প্রশ্ন ৬। মোয়ামরিয়া বিদ্রোহ সফল না ব্যর্থ যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ মোয়ামরীয়া বিদ্রোহীগণ আহোম রাজা গৌরীনাথ সিংহকে পরাজিত করে রংপুর দখল করে ভরত সিং নামে একজনকে রাজা এবং শুকুবা নামে অপর একজনকে বরবরা ঘোষণা করে দেশ শাসনের জন্য নিয়েছিল। ভরত সিং ছিলেন মায়ামরা সত্রের সত্রাধিকার। এদিকে বছা দয়াঙের লোকেরা জপ বা গোহাই নামে একজনের অধীনে নিজেকে স্বতন্ত্র বলে ঘোষণা করেছিল। ব্রক্ষপুত্রের উত্তর তীরে জাপারিভিঠা নামক স্থানে ডফলা বহতীয়াগণ এক তাঁতীকে রাজা বলে ঘোষণা করে। মাজুলীতে মোয়ামরীয়াগণ হাউহি নামে একজনকে রাজা ঘোষণা করে। বেংমা অর্থাৎ তিনসুকীয়ায় হাতীচুঙ্গি মরাণগণ সর্বানন্দ নামে একজনকে রাজা ও গোধাক নামে একজনকে বরবরুয়া ঘোষণা করে রাজ্যশাসন করেছিল। শদিয়ায় খামতীগণ বুঢ়া রাজা ও ডেকা রাজা নামে দুজনকে রাজা ঘোষণা করে রাজ্যশাসন করতে মনস্থির করেন।
উজান অসমে এইরূপ রাজনৈতিক পরিবর্তন চলাকালে নিম্ন অসমেও সমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের চেষ্টা চলেছিল। নিম্ন অসমের দরং ও নগাঁওতে বিদ্রোহীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। দরং-এর রাজা হংসনারায়ণকে গৌহাটী নিয়ে যাওয়ার ছল করে গৌরীনাথ সিংহকে হত্যা করার পর তার পুত্র কৃষ্ণনারায়ণ বাঙালী সেনাবাহিনীর সাহায্যে কামরূপ দখল করে বিদ্রোহ শুরু করে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মোয়ামরীয়া প্রজাবিদ্রোহে আহোম রাজতন্ত্রের ভিত্তিক সম্পূর্ণরূপে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
প্রশ্ন ৭। কোন পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন ওয়েলস অসমে এসেছিলেন ? কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখে তিনি ফিরে গেলেন কেন ?
উত্তরঃ কৃষ্ণনারায়ণকে দমন করার পর গৌরীনাথ সিংহ মোয়ামরীয়াগণকে সাহায্য করতে ক্যাপ্টেন ওয়েলস-এর প্রার্থনা করলেন ও বার্ষিক তিন লক্ষ টাকা দিতে রাজী হলেন। গভর্নর জেনারেলের এর অনুমতি পাওয়ার পর ওয়েলস্ গৌরীনাথ সিংহকে সঙ্গে নিয়ে একদল ইংরাজ সেন্যবাহিনী নিয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মোয়ামরীয়াগণ ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল না। তারা ইংরেজদের হাতে ভীষণভাবে পরাজিত হল। ইংরাজেরা গৌরীনাথ সিংহকে আবার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করলেন। গৌরীনাথ সিংহ ছিলেন অতি স্বেচ্ছাচারী রাজা। নিজের অকর্মণ্যতা ও স্বেচ্ছাচারীতার জন্যই মোয়ামরীয়াদের দ্বারা তিনি গৌহাটীতে বিতাড়িত হয়েছিলেন। রাজধানী গড়গাঁও ত্যাগ করবার পর গৌহাটীতে আশ্রয় গ্ৰহণ সত্ত্বেও তিনি শান্তিতে কালযাপান করতে পারেন নি। তিনি দরঙ্গের রাজা হংসনারায়ণকে হত্যা করে তাঁর জায়গায় বিষ্ণুনারায়ণকে দরঙ্গের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হংসনারায়ণের পুত্র কৃষ্ণনারায়ণ বাঙালী ও হিন্দুস্থানী বরকন্দাজদের সাহায্যে বিষ্ণুনারায়ণকে সরিয়ে নিজে সিংহাসন দখল করলেন। তিনি কামরূপের উত্তরাংশ দখল করে উত্তর গৌহাটী দখল করবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। এই অবস্থায় গৌরীনাথ সিংহের ইংরেজের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি তখন তাঁকে সাহায্য করতে কলিকাতাস্থ ইংরাজ গভর্নর জেনারেলের কাছে আবেদন করলেন।
১৭৯২সালে গভর্নর জেনারেল ক্যাপ্টেন ওয়েলস্কে একদল ইংরেজ সৈন্যবাহিনীসহ গৌরীনাথ সিংহকে সাহায্য করতে অসম অভিমুখে পাঠালেন। গৌরীনাথ সিংহ তখন গৌহাটী হতে পালিয়েছিলেন কারণ তাঁর পাশ্ববর্তী গৃহটি এক বৈরাগীর নেতৃত্বে কয়েকজন মৎস্যজীবি অধিকার করেছিল। ক্যাপ্টেন ওয়েলস্ গৌহাটী অধিকার করে কৃষ্ণনারায়ণও হিন্দুস্থানী বরকন্দাজদিগের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলেন কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজী না হওয়ায় ওয়েলস্ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। কৃষ্ণনারায়ণ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করলেন ও আহোম রাজাকে বার্ষিক ৫৮,০০০ টাকা কর দিতে রাজী হলেন। তাঁকে বরফুকনের অধীনে জমিদাররূপে থাকতে হল।
প্রশ্ন ৮। মোয়ামরিয়া বিদ্রোহ দমনে ওয়েলসের ভূমিকা বর্ণনা করো। তিনি কতটুকু সফল হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ লক্ষ্মীসিংহের মৃত্যুর পর ১৭৮০সালে তার পুত্র গৌরীনাথ সিংহ সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং পিতৃশক্র মোয়ামরীয়াদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করলেন। ফলে ১৭৮২। সালে তারা বিদ্রোহী হয়ে রাজধানী গড়গাঁও আক্রমণ করে এবং বহুলোককে হত্যা করে। তারা সিঙ্গরি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এই সংবাদ পেয়ে বুড়াগোঁহাই ঘনশ্যাম একদল সৈন্য নিয়ে এলে বিদ্রোহীগণ রাজধানী গড়গাঁও ত্যাগ করে। এর পর ঘনশ্যামের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র পূর্ণানন্দ বুড়াগোঁহাই পদে নিযুক্ত হন।
বিদ্রোহীরা গড়গাঁও হতে বিতাড়িত হয়ে রংপুর আক্রমণ করে এবং হত্যালীলা চালায়। পূর্ণানন্দ এসে তা দমন করেন। পূর্ণানন্দ ছিলেন দূরদর্শী। তিনি রাজা গৌরীসিংহকে মোয়ামরীয়াদের উপর অত্যাচার না করে তাদের সঙ্গে একটি বোঝাপড়া করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ১৭৮৫ সালে মোয়ামরীয়াগণ ব্রক্ষপুত্রের উত্তর পারে বিদ্রোহী হয়ে রংপুরের দিকে অগ্ৰসর হতে থাকে। রাজা গৌরীনাথ সিংহ ভীত হয়ে গৌহাটী পলায়ন করলে। বিদ্রোহীগণ গড়গাঁও ও রংপুর দখল করে ভরত সিংহ নামক একজনকে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করে।
১৭৯১ সালে দরং-এর পূর্ববর্তী রাজার পুত্র কৃষ্ণনারায়ণ গৌরীসিংহ মনোনীত দরং রাজা বিষ্ণুনারায়ণকে বঙ্গদেশ থেকে এসে হিন্দুস্থানী বিষ্ণুনারায়ণকে তাদের দ্বারা বিতাড়িত করেন। এর পর ব্রক্ষপুত্রের উত্তর তির ধরে অগ্ৰসর হয়ে উত্তর গৌহাটী অধিকার করলে গৌরীনাথ ইংরেজের সাহায্য প্রার্থনা করেন। লর্ড কর্ণওয়ালিস তখন ক্যাপ্টেন ওয়েলসের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সৈন্য আসামে প্রেরণ করেন। ওয়েলস কৃষ্ণনারায়ণকে পরাজিত করেন।
প্রশ্ন ৯। ক্যাপ্টেন ওয়েলসের অসম সম্পর্কিত বিবরণ নিয়ে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ক্যাপ্টেন ওয়েলস অসম থেকে প্রত্যাবর্তন করে ইংরাজ সরকারের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তা হল :
ওয়েলস তার রিপোর্টে লিখেছিলেন জনবহুল অসমের রাজধানী রংপুরের কাছাকাছি অঞ্চল কৃষিকার্যের উপযোগী ছিল। তবে বাজারে কোনো উৎপন্ন দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হত না। অভিজাতদের ক্রীতদাসেরা জমি চাষ করত এবং অভিজাতদের জমিদারীও ছিল। অসমে দ্রব্যমূল্য খুব সস্তা ছিল। একটি মহিষও একটি গরুর দাম ছিল যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও দুই টাকা। অসম মুদ্রার অভাব ছিল। আফিং এবং লবণের পরিবর্তে জিনিসপত্র পাওয়া যেত।বঙ্গদেশের সঙ্গে আসামের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। গৌহাটীতে বরফুকন প্রায় ৯০ হাজার টাকা বাণিজ্য শুল্ক আদায় করতেন। ঐ ৯০ হাজার টাকা বাণিজ্য শুল্কের মধ্যে রাজতহবিলে ২৬ হাজার টাকা জমা পড়ত। অসমে লবণের অভাব ছিল। উচ্চদরে লবণ বিক্রয় হত। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লবণ অসমে আমদানী করা হত।
১০। সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ :
(১) কীর্তিচন্দ্র বরবরুয়া।
(২) মায়ামরা সত্র।
(৩) পূর্ণানন্দ বুঢ়াগোঁহাই।
(৪) কাড়ী পাইক এবং চমুয়া পাইক।
(৫) ওয়েল্স এবং গৌরীনাথ সিংহের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি।
(৬) বররাজা ফুলেশ্বরী।
(৭) পার্বতীয়া গোঁসাই।
(৮) সর্বানন্দ।
(৯) ভরত সিংহ।
(১০) রংপুর নগর।
(১) কীতিচন্দ্র বরবরুয়া : আহোমরাজ শিব সিং এবং বররাজা ফুলেশ্বরীর রাজত্বকালে রাজা-রানী উভয়েই বৈষ্ণব মহন্তদের উপর চালানো নির্যাতন কার্যে কীতিচন্দ্র বরবরুয়া ইন্ধন যুগিয়েছিলেন। কীতিচন্দ্র বরবরুয়া গেন্ধেলা বরবরুয়া নামেও পরিচিত। রাজেশ্বর সিংহের রাজত্বকালে তাঁর ক্ষমতা বাড়ে। রাজার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি নিজের ক্ষমতা অসম্ভব রকম বাড়ান। কীর্তিচন্দ্রের এই ধরনের অভাবনীয় প্রতিপত্তি দেখে অনেক কর্মচারী মনে মনে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। নুমলী বড়গোঁহাই এই ধরনের একজন অসন্তুষ্ট রাজকর্মচারী। তিনি একটি বুরঞ্জী বা ইতিহাস বের করে কীর্তিচন্দ্রের বংশগৌরব সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁর চেষ্টায় রাজেশ্বর সিংহের পর রাজা হন লক্ষ্মীসিংহ। তাঁর অদূরদর্শীতার জন্য মোয়ামরীয়ারা রাজাকে বন্দী করে এবং তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে।
(২) মায়ামরা সত্র : মোয়ামরিয়ারা মূলত মরাণ সম্প্রদায়ের লোক। শংকর-মাধবের পরবর্তীকালে ‘মায়ামরা’ নামের বৈষ্ণব সত্রটি স্থাপিত হয়েছিল। এই ‘মায়ামরা’ শব্দ থেকে মোয়ামরিয়া শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমেয়। মায়ামরা সত্রের সত্রাধিকাররা শূদ্র ছিলেন। বিভিন্ন জাতি, জনজাতি যেমন কাছাড়ী, আহোম, কৈবর্ত, চুতিয়া ইত্যাদি জনসাধারণের কাছেও এই সত্র ছিল জনপ্রিয়। মায়ামরা সত্রের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ার ফলে গুরুদের শক্তি বেড়ে গিয়েছিল।
(৩) পূর্ণানন্দ বুঢ়াগোঁহাই : ঘনশ্যাম বুঢ়াগোঁহাইর পুত্র পূর্ণানন্দ বুঢ়াগোঁহাই। ১৭৮৪ সালে তিনি বুঢ়াগোঁহাই পদে নিযুক্ত হয়ে ১৮৯৭ সাল পযর্ন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গৌরীনাথ সিংহের রাজত্বকালে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ শুরু হলে দূরদর্শী পূর্ণানন্দ বিদ্রোহের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রাজাকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপোস করতে পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শমত কাজ হলে আহোমগণ চরম দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা পায়। তারপর তিনি বিধ্বস্ত রাজ্যে শান্তি ফিরে আনতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু বদনচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর মতের মিল হওয়ায় বদনচন্দ্র বর্মীসৈন্যকে অসম আক্রমণ করতে আহান জানায়। ১৮১৭ সালে বর্মীসৈন্যের কাছে আহোম সৈন্য পরাজিত হয়। এরপর পূর্ণানন্দ মৃত্যু হয়।
(৪) কাড়ী পাইক এবং চমুয়া পাইক : আহোম রাজ্যের সব পুরুষ নাগরিকমাত্রেই ছিল একেকজন পাইক। শুরুতে চারজন পাইককে একত্র করে একটি দল তৈরি করা হয়েছিল, যারা রাজার কাজ করত। পরে অর্থাৎ রাজেশ্বর সিংহের সময়ে এই পাইক সদস্য সংখ্যা তিন কমে যায়। যার ফলে একজন পাইকের রাজার কাজের ক্ষেত্রে সময়সীমা বেড়ে চারমাস হয়ে যায়। মোয়ামরিয়াদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বলে এই অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েছিল। পাইক শোষণের অপর একটি প্রক্রিয়া ছিল পাইকদের শ্রেণি বিভাজন। পাইকদের মধ্যে যে দুটি ভাগ ছিল তার মধ্যে প্রথম শ্রেণিটি ছিল কাড়ী পাইক, এদের সংখ্যাই ছিল বেশি। দ্বিতীয় শ্রেণি চমুয়া পাইক। সংখ্যায় কম হলেও মানের দিক থেকে এই দ্বিতীয় শ্রেণির পাইকরা ছিল অনেকটা উঁচু। অর্থের বিনিময়ে তারা শারীরিক শ্রম থেকে অব্যাহিত পেয়েছিল। অপরদিকে চমুয়া পাইকের সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করলে এদের উপর কাজের বোঝা আরও বেড়ে যায়। এর ফলে সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রটি সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং বৈষম্য বেড়ে যায়। পরিস্থিতি হয়ে উঠে সংঘাতময়।
(৫) ওয়েলস এবং গৌরীনাথ সিংহের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি : ওয়েলস এবং গৌরীনাথ সিংহের মধ্যে ১৯৯৩ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী—
(১) ইংরেজ অধীনস্থ যে কোনো জায়গা থেকে অসমে আমদানী সামগ্ৰীর উপর ১০শতাংশ কর ধার্য করা হয়।
(২) অসম থেকে ইংরেজ অধীনস্থ যে কোনো স্থানে জিনিস রপ্তানী করা হলে সমপরিমাণ অর্থাৎ ১০শতাংশ কর ধার্য করা হয়।
(৩) ধান এবং চালের উপর কোনো কর থাকবে না।
(৪) গুয়াহাটি এবং কান্দাহারে দুটি শুল্ক চৌকি স্থাপন করে আমদানী ও রপ্তানী কর আরোপ করার ব্যবস্থা করা হয়।
(৫) ইংরেজ ছাড়া অপর কোনো ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ইংরেজ এবং আহোম সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যবসা করতে পারবেন না।
(৬) বররাজা ফুলেশ্বরী : রাজা শিবসিংহের প্রধানা মহিষী ছিলেন বররাজা ফুলেশ্বরী। অতি সাধারণ অবস্থা থেকে রাণী বলে পরিচিত হন। ১৭২২ সালে রাজা শাসনভার তাঁর উপর অর্পণ করেন। ফুলেশ্বরী শাক্ত ব্রাক্ষণের কাছে দিক্ষা গ্ৰহণ করেন। তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। কীর্তিচন্দ্র বরবরুয়ার সাহায্যে মায়ামরা সত্রের সন্ত-মহন্তদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। একবার দুর্গাপূজার সময় তিনি মোয়ামরীয়া মহন্তগণকে মূর্তিপূজা করতে বাধ্য করেন এবং তাদের কপালে রক্ততিলক পরিয়ে দেন। রানীর অত্যাচারে মোয়ামরীয়াগণের আহোম রাজার উপর বিদ্বেষ জন্মায়। ফুলেশ্বরী ছিলেন বিদ্যোৎসাহিনী। তিনি কয়েকটি টোল ও রংপুরে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনিই আহোম সিংহাসনে প্রথম মহিলা। ফুলেশ্বরী মৃত্যু হয় ১৭৩১ সালে।
(৭) পার্বতীয়া গোঁসাই : স্বর্গদেও রুদ্রসিংহ বাংলাদেশের নদীয়া থেকে কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্য নামে একজন শাক্ত ব্রাক্ষণ পণ্ডিতকে রাজ্যে ডেকে এনেছিলেন।পরবর্তীকালে পুত্র শিবসিংহ তাঁর শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করে ব্রাক্ষণকে নীলাচল পাহাড়ে থাকতে দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্য এবং তাঁর উত্তর পুরুষরা ‘পার্বতীয়া গোঁসাই’ নামে পরিচিত হন।
(৮) সর্বানন্দ : সর্বানন্দ হলেন মোয়ামরিয়াদের নেতা। মোয়ামরিয়াদের মধ্যে মরাণরা সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সংখ্যাগুরু একথা পূর্ণানন্দ বুঝতে পেরে তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে ১৮০৫ সাল মোয়ামরিয়াদের নেতা সর্বানন্দের সঙ্গে একটি চুক্তি করে বেংমরাকে কেন্দ্র করে ব্রক্ষপুএ ও দিহিংয়ের মাঝখানের ভূখণ্ড ‘মটক রাজ্য’ নাম দিয়ে একটি নতুন স্বতন্ত্র রাজ্য গঠন করেছিলেন। সর্বানন্দ বার্ষিক করদানের শর্তে রাজি হয়েছিলেন।
(৯) ভরত সিংহ : ভরত সিংহ ছিলে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের নেতা ভরত সিংহ মায়ামরা সত্রের সত্রাধিকার সম্পর্কীয় লোক ছিলেন। মোয়ামরিয়া মরীয়া বিদ্রোহ শুরু হলে বিদ্রোহীগণ রংপুর দখল করে। তারা ভরত সিংহকে রাজা ঘোষণা করে তাঁকে দেশ শাসনের দায়িত্ব অর্পণ করে।
(১০) রংপুর নগর : রংপুর নগর ছিল আহোমদের রাজধানী। মোয়ামরিয়ারা বারংবার আহোমদের রাজধানী রংপুর নগর আক্রমণ করেছিল।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। প্রথম মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ কখন ও কোন্ আহোম রাজার আমলে হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৭৬১ সালে আহোম রাজা লক্ষ্মীসিংহের আমলে হয়েছিল।
প্রশ্ন ২। “বররাজা” কাকে বলা হত ?
উত্তরঃ রাণী ফুলেশ্বরীকে ‘বররাজা’ বলা হত।
প্রশ্ন ৩। মোয়ামরীয়ারা প্রথমে কাকে সেনাপতি করেছিল ?
উত্তরঃ মোয়ামরীয়া গোঁসাই-এর পুত্র বাংগানকে।
প্রশ্ন ৪। মোয়ামরীয়াদের মধ্যে কে রাজা ও বরবরুয়া হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ নাহরের পুত্র রমাকান্ত ও রাঘ।
প্রশ্ন ৫। গৌরীনাথ সিংহ কেন ইংরেজ সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ দমনের জন্য গৌরী সিংহ ইংরেজ সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।
প্রশ্ন ৬। ওয়েলস কত মাস অসমে অবস্থান করেছিলেন ?
উত্তরঃ ওয়েলস প্রায় ১৭ মাস অসমে অবস্থান করেছিলেন।
প্রশ্ন ৭। ওয়েলস কখন গৌরীনাথ সিংহকে বাণিজ্যিক চুক্তি আরোপ করেন ?
উত্তরঃ ১৭৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী।
প্রশ্ন ৮। বাণিজ্যিক চুক্তির কয়টি শর্ত ছিল ?
উত্তরঃ ১৪টি শর্ত।
প্রশ্ন ৯। অসামরিক বিভাগে কতজন ফুকন থাকত ?
উত্তরঃ ১২ জন।
প্রশ্ন ১০। অসামরিক বিভাগে কতজন বরুয়া থাকত ?
উত্তরঃ ২০ জন।
প্রশ্ন ১১। কতজন লোকে একজন শইকীয়া থাকত ?
উত্তরঃ প্রতি ১০০ জনে।
প্রশ্ন ১২। ওয়েলস কখন বঙ্গ সরকারকে গোপন রাজনৈতিক প্রতিবেদন প্রেরণ করেন ?
উত্তরঃ ১৭৯৪ সালের ৬ ফ্রেব্রুয়ারী।
প্রশ্ন ১৩। ওয়েলেসের গোপন রাজনৈতিক প্রতিবেদন কয়টি প্রশ্ন ছিল ?
উত্তরঃ ১৩টি প্রশ্ন ছিল।
প্রশ্ন ১৪। ওয়েলসের প্রতিবেদন অনুযায়ী অসমে তখন কি প্রকার সরকার ছিল ?
উত্তরঃ রাজতান্ত্রিক।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ওয়েলসের গোপন রাজনৈতিক প্রতিবেদন মতে অসমের প্রশাসন কেমন ছিল ?
উত্তরঃ ওয়েলসের রাজনৈতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী তাঁর অভিযানের সময় অসমে প্রশাসন বলে কিছুই ছিল না। বিদ্রোহের পরিণতি স্বরূপ দেশে সরবরাহের অস্তিত্ব প্রায় ছিলই না।
প্রশ্ন ২। ওয়েলসের রাজনৈতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী অসমে সরকারের স্বরূপ কি ছিল ?
উত্তরঃ প্রতিবেদন অনুযায়ী অসমে রাজতান্ত্রিক সরকার ছিল। সেই সময়ের সরকার ছিল আংশিকভাবে বংশানুক্রমিক ও আংশিকভাবে নির্বাচনভিত্তিক। ওয়েলসের মতে উত্তরাধিকারের নীতি পিতৃতান্ত্রিক নয়, ভ্রাতৃতান্ত্রিক ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাবার মৃত্যুর পর ভাই রাজা হত।
প্রশ্ন ৩। ওয়েলসের গোপন রাজনৈতিক প্রতিবেদনে কি কি প্রধান প্রধান বিষয়ের উল্লেখ ছিল ?
উত্তরঃ ওয়েলসের গোপন রাজনৈতিক প্রতিবেদনে অসমের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষিজাত, নৌপরিবহনের সচ্ছলতা, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য, সামরিক অভিযান প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ ছিল।
প্রশ্ন ৪। কেপ্টেন ওয়েলসের অসম অভিযানের পরিণাম কি ছিল ?
উত্তরঃ কেপ্টেন ওয়েলস মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ দমন করে অসমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি অসমের জনগণের পক্ষে নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ স্বরূপ। ওয়েলস এইরূপ কাজ করলেও অভিযানকালে তিনি ও তাঁর সহকর্মীগণ অসম থেকে প্রচুর ধনসম্পত্তি লুণ্ঠন করে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে রংপুরে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহীগণের হস্তগত করা বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় ১,১৭,৩৩৪ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছিল। অসমীয়া ইতিহাস গ্ৰন্থে উল্লেখ রয়েছে যে তারা অসম থেকে প্রচুর ধনদৌলত লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও ওয়েলস শিবদও বরফুকনের সঙ্গে ১৭৯৪ সালের ফেব্রুয়ারী স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তানুসারে সামরিক অভিযানের খরচ বাবদ আহোম রাজার কাছ থেকে বার্ষিক ১,৫০,০০০ টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এর ফলে, আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহে ক্ষত-বিক্ষত রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থায় দ্রুত অবনতি ঘটে।
প্রশ্ন ৫। ওয়েলসের প্রতিবেদন অনুযায়ী অসমের উৎপাদিত সামগ্ৰী সমূহের নাম লিখ।
উত্তরঃ তৎকালীন অসমের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে প্রধান ছিল—-উত্তরের পাহাড়ীয়া মিরিদের আম ও মনজিৎ, গোমধান, দফলাদের মনজিৎ, পিপলী আদা, মাইথোন, লবণ, কাপড়, ভুটান হতে মুথী, মিনা করা রূপার সামগ্ৰী।
রত্নাদি দ্রব্যের মধ্যে ছিল কার্পাস, মনজিৎ, আদা, সোনা, নীল প্রভৃতি।
প্রশ্ন ৬। ১৭৯২ সনে কি জন্য কেপ্টেন ওয়েলস অহম আক্রমণ/করেছিলেন ?
উত্তরঃ ১৭৯২ সনে এক বৈরাগীর নেতৃত্বে ডোমেরা গৌহাটী দখল করেছিলেন। এদিকে দরংরাজা কৃষ্ণনারায়ণও বিদ্রোহ শুরু করেন। এমতাবস্থায় রাজা গৌরীনাথ সিংহ ইংরেজ গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ফলে কর্ণওয়ালিশ গৌরীনাথ সিংহের সাহায্যার্থে কেপ্টেন ওয়েলসের নেতৃত্বে অসমে এক সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন।
প্রশ্ন ৭। ওয়েলসের রাজনৈতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী অসমে সেনাবাহিনী কিরূপ ছিল ?
উত্তরঃ আহোমদের সময় দেশে স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না। প্রতিটি পরিবারে প্রতি চারজন লোকের মধ্য হতে একজন লোক রাজার প্রতি সেবা দান করত। তাদের নিয়েই সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল। বিশজন লোককে নিয়ে একজন বরাই, ১০০ জনে এক জন শইকীয়া, ১,০০০ জনে একজন হাজারিকা, ৩০০০ জনে একজন রাজখোয়া, ৬০০০ জনে একজন ফুকন নেতৃত্বে প্রদান করত।
প্রশ্ন ৮। আহোম সামরিক বাহিনীতে থাকা কয়েকটি আমলার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ আমলাগণ হলেন—শদিয়া খোয়া গোহাই, মরঙ্গী খোয়া গোহাই, গোহাই সলাল এবং কলিয়াবরের বরফুকন।
প্রশ্ন ৯। বৈষ্ণব সত্র বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ বৈষ্ণব সত্র হলো শংকর ও মাধবদেব প্রচারিত নামধর্ম তথা নববৈষ্ণব ধর্মের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা কয়েকটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিষ্ঠান।
প্রশ্ন ১০। ১৭৯২ সালে কার নেতৃত্বে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর একটি সেনাবাহিনী অসমে প্রবেশ করে।
উত্তরঃ ১৭৯২ সালে ক্যাপ্টেন থমাস ওয়েলসের নেতৃত্বে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর একটি সেনাবাহিনী প্রথম অসমে প্রবেশ করে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কি কি কারণে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ হয়েছিল ?
উত্তরঃ মোয়ামরীয়াগণ মহাপুরুষীয়া বৈষ্ণব ধর্মের কালসংহতির অন্তর্গত “মায়ামরা” ছত্রের শিষ্য ছিল। তাদের মধ্যে চুতীয়া, কাছাড়ী, আহোম, কৈবর্ত প্রভৃতির লোক ও কিছু বর্ণহিন্দুর লোক ছিল। বেশিরভাগ অংশেই মরাণ জনজাতির লোক। ১৭শতকের দ্বিতীয় ভাগে মোয়ামরীয়াগণের বিদ্রোহের মনোভাব প্রকট হয়ে উঠে।
মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের কারণসমূহ নিম্নরূপ :
(১) ১৬০১খ্রিস্টাব্দে মোয়ামরীয়া সূত্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অন্যান্য সূত্র হতে সবদিক দিয়ে এর খুব উন্নতি হয়েছিল এবং সত্রের শিষ্যরা তাদের গুরুকে ভগবানের মতন ভক্তি করত। তারা গুরু ছাড়া অপর কারও পায়ে মাথা নত করত না। মোয়ামরীয়া মোহান্তের এই প্রতিপত্তিতে অন্যান্য সত্রের গোঁসাই এবং মোহান্তরা তাদের উপর বিরূপ হয়েছিল।
(২) শাক্তরা মোয়ামরীয়া মোহান্তদের উন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়েছিল।
(৩) মোয়ামরীয়াদের বিরুদ্ধাচারণকারীরা রাজার কাছে অভিযোগ করত যে একদিন মোয়ামরিয়া মোহান্ত রাজার আধিপত্য অস্বীকার করবেন। যেহেতু রাজা ছিলেন শাক্তধর্মের অনুরাগী, সেইজন্য তিনি তাদের কথা শুনে মোয়ামরিয়া বৈষ্ণবদের সুনজরে দেখতেন না। ফলে মোহান্ত ও অনুরাগীদের উপর নানাভাবে অত্যাচার চলত।
(৪) বররাজা ফুলেশ্বরী দেবী দুর্গাপূজায় মোয়ামরিয়া মোহান্তকে বলপূর্বক এনে দেবীকে প্রণাম করান ও তাঁর কপালে রক্ততিলক পরিয়ে দেন এবং দেবীর নির্মাল্য ও প্রসাদ গ্ৰহণে বাধ্য করেন।
(৫) মোয়ামরিয়া মোহান্ত একদিন রাজদর্শনে এসে কীর্তিচন্দ্র বরবরুয়াকে সম্মান প্রদর্শন না করায় কীর্তিচন্দ্র মোহান্তকে ভৎর্সনা করেন। মরাণদের নেতা নাহার একদিন হস্তী প্রদান করে রাজাকে অভিবাদন করেন, কিন্তু কীর্তিচন্দ্রকে অভিবাদন না করায় রাগ করে কীর্তিচন্দ্র নাহারকে প্রহার করেন এবং তার নাক ও কান কেটে ফেললে নাহার তার গুরু মোয়ামরিয়া মোহান্তকে সব জানান এবং রাজদ্রোহের অনুমতি প্রার্থনা করেন।
নাহারের প্রতি অত্যাচারের সুযোগ নিয়ে মোয়ামরিয়া মোহান্ত ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর শিষ্য ও অনুরাগীগণকে প্রকাশ্য বিদ্রোহের আহ্বান জানালেন। মরাণ কাছাড়ীরা তার শিষ্য নিয়ে দলে দলে বিদ্রোহে যোগদান করে। এমনকি রাজভ্রাতা মোহনমালাও বিদ্রোহীপক্ষ অবলম্বন করেন।
প্রশ্ন ২। বৈষ্ণব সত্রাধিকার মহন্ত ভক্ত নির্যাতনে বররাজা ফুলেশ্বরীর ভূমিকা নির্ণয় কর।
উত্তরঃ মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সূত্রপাত গদাধর সিংহের আমলে হয়েছিল। তার বৈষ্ণব তাড়ন নীতি মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সূত্রপাত করেছিল। কিন্তু তার পুত্র রুদ্রসিংহের বদান্যতায় বিদ্রোহ সম্ভব হয় নাই। ফলে মোয়ামরীয়া সম্প্রদায় কিছুদিনের জন্য চুপচাপ ছিল কিন্তু রুদ্রসিংহের পুত্র শিবসিংহের রাজত্বকালে আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। শিব সিংহ ঘোর শাক্ত পন্থাবলম্বী ছিলেন। তার পত্নীও ঘোর শাক্ত ছিলেন। কারণ ফুলেশ্বরীর অত্যাচার অতিষ্ঠ হয়ে বৈষ্ণবেরা বিদ্রোহের অপেক্ষায় ছিল। তা লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল।
শিব সিংহ যদিও ছিলেন তথাপি রাজকার্য কিন্তু তার পত্নী ফুলেশ্বরীর পরামর্শে চলত। ১৭২২ সালে এক দৈবজ্ঞ তাকে বলেছিলেন, যে তার রাজত্বে বিপদ উপস্থিত। তিনি যদি কারোও নামে রাজ্যশাসন করেন তবে তার বিপদ কেটে যাবে। রাজা শিবসিংহ তাতে খুব ভয় পেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে বিপদ হতে রক্ষা করার নিমিও দৈবজ্ঞের আদেশে তার গুরুদেব কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে বড়রানী ফুলেশ্বরীকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করলেন ও নিজে তার অধীনে রাজ্যশাসন করতে লাগলেন। রাজা হওয়ার পর ফুলেশ্বরীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্রমথেশ্বরী।
ফুলেশ্বরী ঘোর শাক্ত ছিলেন। রাজা হওয়ার পর তার উৎপাত বেড়ে গেল। রাজা তার পরামর্শমত চলতেন। তিনি বৈষ্ণবদিগকে ভাল চোখা দেখতেন না। একবার বৈষ্ণবদেরকে আমন্ত্রণ করে তিনি তাদের সম্মুখে দেবী দুর্গার নিকট ছাগ বলি দিয়ে রক্তের তিলক জোর করে বৈষ্ণবদের কপালে পরিয়ে দিয়েছিলেন। তদুপরি তিনি জোর করে বৈষ্ণবদের মুখে মদ ঢেলে দিয়েছিলেন ও মাংস স্পর্শ করেছিলেন। যে সকল বৈষ্ণব মহন্ত তাতে আপত্তি করেছিল তাদের ভাগ্যে চরম দুর্দশা ঘটেছিল। রাজা শিব সিংহ বররাণীর প্রতিনিধি হওয়ার এর কোন প্রতিকার করতে পারলেন না। বৈষ্ণবদের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠল। মোয়ামরীয়া সম্প্রদায় বৈষ্ণবদের শিষ্য ছিল। সুযোগ পেয়েই মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ হওয়ার সূচনা হল। এই সব কারণে বর-রাজা ফুলেশ্বরীকে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের জন্য দায়ী করা হয়।
প্রশ্ন ৩। প্রথম মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের কারণ আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাজেশ্বর সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষ্মীসিংহ ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে আহোম সিংহাসনে আরোহণ করলেন। প্রথম মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ তাঁর রাজত্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। রুদ্রসিংহ যদিও বৈষ্ণবদের উপর নরম মনোভাব পোষণ করেছিলেন তথাপিও তার পুত্রগণ কিন্তু ঘোর শাক্ত মতাবলম্বী হওয়ায় আবার বৈষ্ণবদের উপর উৎপীড়ন আরম্ভ করেছিলেন। বিশেষভাবে বররাজা ফুলেশ্বরীর উৎপাতে মোয়ামরীয়া বৈষ্ণব সম্প্রদায় অতিষ্ঠ হয়েছিল। রাজা লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে তাদের অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছিল। রাজেশ্বর সিংহের নরম মনোভাবের জন্য তাদের অসন্তোষ চাপা পড়েছিল কিন্তু লক্ষ্মীসিংহের অত্যাচারে মোয়ামরীয়াদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করল।
মোয়ামরীয়ারা ছিলেন মোয়ামরীয়া সত্রের শিষ্য। কথিত আছে অনিরুদ্ধ নামে শ্রীমন্ত শংকরদেবের এক শিষ্য শদীয়াতে মোয়ামরীয়া সত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মোয়ামরীয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে মরাণেরা সর্বাধিক। মরাণ ছাড়া চুটিয়া, কাছাড়ী, কৈবর্ত এবং অনেক উচ্চবংশীয় হিন্দু ও মোয়ামরীয়া সম্প্রদায় ভুক্ত ছিলেন। কথিত আছে অনিরুদ্ধ মায়াশক্তিতে একটি জীবন্ত সিংহকে নিহত করেছিলেন। তার শিষ্যরা তখন তাকে ভগবৎ শক্তিধারী বলে মনে করল। তখন হতে তার শিষ্যগণ মায়ামরা বা মোয়ামরীয়া।
প্রশ্ন ৪। দ্বিতীয় মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের কারণ বিবৃত কর।
উত্তরঃ লক্ষ্মীসিংহের মৃত্যুর পর তার পুত্র যুবরাজ গৌরীনাথ সিংহ ১৭৮০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। গৌরীনাথ সিংহ মোয়ামরীয়াগণের ঘোর শুক্র ছিলেন। রাজা হয়েই তিনি মোয়ামরীয়াদের উপর অত্যাচার শুরু করেন। মোয়ামরীয়াগণ সুযোগের অপেক্ষায় থাকলো! ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে এক রাত্রে রাজা মৎস্য শিকার হতে ফিরে আসার সময় সুযোগ পেয়ে মোয়ামরীয়াগণ গড়গাঁওয়ে কোনও মতে প্রবেশ করল। কিন্তু বড়গোঁহাই-এর নিকট বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রংপুর অভিমুখে রওনা হল। সেখানে তারা অনেক নিরীহ লোকের ঘরবাড়ী আগুনে ভস্মীভূত করল ও অনেককে হত্যা করল। বরগোঁহাই তাদের অনুসরণ করে মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ ব্যর্থ দিলেন।
প্রশ্ন ৫। তৃতীয় মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের কারণ বিবৃত কথ।
উত্তরঃ পূর্ণানন্দ বুঢ়াগোঁহাই রাজাকে মোয়ামরীয়াদের প্রতি নম্রভাব পোষণ করবার জন্য উপদেশ দিলেন কিন্তু রাজা উপদেশানুসারে মোয়ামরীয়াগণকে হত্যার আদেশ দিলেন। মোয়ামরীয়াগণ তখন বাধ্য হয়ে লোহিতের উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। তা রাজকীয় সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে রংপুর অভিমুখে রওনা হল। বুঢ়াগোঁহাই ও বরবরুয়া বিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হলেন। গৌরীনাথ সিংহ ভয়ে ১৭৮৬ সালে গৌহাটীতে পালিয়ে যান। মোয়ামরীয়াগণকে দমন করার জন্য রওনা হলেন। গৌরীনাথ সিংহ ইংরেজগণকে তিন লক্ষ টাকা বার্ষিক কর দিতে রাজী হলেন। মোয়ামরীয়াগণ ইংরেজদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল না। ফলে যুদ্ধে ইংরেজদের হাতে ভীষণভাবে পরাজিত হল। ক্যাপ্টেন ওয়েলস রংপুরে প্রবেশ করলেন ও গৌরীনাথ সিংহকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। এইভাবে তৃতীয় মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের অবসান হল।
প্রশ্ন ৬। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ রাজা লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে শুরু হয়েছিল ও গৌরীনাথ সিংহের রাজত্বকালে শেষ হয়েছিল। এই বিদ্রোহ প্রায় ২৫বৎসর স্থায়ী ছিল। এই বিদ্রোহ আহোম রাজবংশের পতনের পথ সুগম করেছিল। রাজা গৌরীনাথ সিংহ বিদেশী শক্রদের সাহায্যে দেশের শক্রগণকে দমন করেছিলেন। পরে এই বিদেশী শক্ররাই অসমের ভাগ্যবিধাতা হয়েছিল। অসমে ইংরাজগণই গাঁজার চাষ আরম্ভ করেছিলেন যা অসমের জনসাধারণের পক্ষে ক্ষতিকারক ছিল। অসমে ইংরেজ আনয়নের জন্য গৌরীনাথ সিংহ অসম ইতিহাসে কলংকিত ছিলেন।
মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার প্রথম কারণ মোয়ামরীয়া নেতাগণ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন না। তাদের নিজেদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যবাহিনীর পক্ষে অত্যন্ত নগণ্য ছিল।
দ্বিতীয়ত, তাদের মধ্যে উপযুক্ত নেতার অভাব ছিল। যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা স্বার্থপর স্বেচ্ছাচারী ছিল।
তৃতীয়ত, বিদ্রোহটি নীচবংশীয় লোকদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। ফলে উচ্চবংশীয় লোকেরা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করে নাই।
চতুর্থত, দেশের জনসাধারণ বিদ্রোহীদের পক্ষে ছিল না।তারা রাজপরিবারের সমর্থক ছিলেন।
পঞ্চমত, পূর্ণানন্দ বুড়াগোঁহাই-এর দক্ষতার ফলে বিদ্রোহ প্রায় অন্তমিত হয়েছিল। তার সাহস ও বীর্যের জন্য মোয়ামরীয়াগণ কৃতকার্য হয় নাই। বিপদের দিনেও তিনি রাজপরিবারকে ত্যাগ করেন নাই।
প্রশ্ন ৭। পাইক প্রথার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা লিখ।
উত্তরঃ আহোম রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তির মূল উৎস ছিল এর মাটি ও মানুষ। অর্থাৎ মাটি বা ভূমির মাধ্যমে যে উৎপাদন হত সেটিই ছিল রাজ্যের মূল পরিচালিকা শক্তি। আহোম রাজ্যে কোনো স্থানী সোলাবাহিনী ছিল না। কিন্তু মধ্যযুগে আসামে যুদ্ধবিগ্ৰহ লেগেই থাকত। রাজ্যের অবস্থিতি ও ভৌগোলিক সম্প্রসারণের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর আবশ্যক ছিল। নিয়মিত সোলাবাহিনীর অভাবে রাজ্যের সকল কর্মঠ কৃষক প্রজাকে সোলাবাহিনীর কাজে লাগানো হত। এইভাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক কার্যে কৃষকদের ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে আহোম রাজ্যের পাইক ব্যবস্থা বা “পাইক প্রথা” বলা হয়।
“পাইক” শব্দের অর্থ পদাতিক সোলা বা সাধারণ শ্রেণির কৃষক কারিগর।
মধ্যযুগে অসমের বাইরেও পাইক ব্যবস্থা মণিপুর, বাংলাদেশ প্রভৃতিতে ছিল। কিন্তু অসমে থাকা পাইক প্রথার সঙ্গে অন্যান্য স্থানের পাইক প্রথার কোনো মিল নাই। এই প্রথা অনুযায়ী ১৬বছর হতে ৫০বছর পযর্ন্ত প্রত্যেকটি লোককে “পাইক” বলা হত। রাজেশ্বর সিংহের সময় তিনজন পাইক এনে একটি “গোট” সৃষ্টি হয়। উহাদের মূল, দেরাল এবং তেরাল বলা হত। এদের পালাক্রমে রাজগৃহে ৩/৪ মাস বেগার খাটত। পাইকরা বিনা করে ক্ষেতের জমি ভোগ করত। পাইক প্রথার ফলে সৈন্যদের চাহিদাও পূরণ হল।
তিন চার জন কর্মঠ মানুষকে নিয়ে একটি গোট তৈরি করা হত, কয়েকটি গোটের সমষ্টিকে ‘খেল’ বলা হত। ফলে নাওসাজা খেল, সোনা কামোরা খেল প্রভৃতি নানা প্রকার খেল দেখা যেত।
প্রতিটি খেল পরিচালনার জন্য একজন বিষয়া ছিল। তাকে ‘খেলদার’ বলা হত। উচ্চতম আধিকারীকের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলদার তার অধীনস্থ খেলদার সরকারী। কার্যে নিয়োজিত করত। প্রতিটি খেলে ১০০০ হতে ৩০০০ পাইক থাকত। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা খেলদার যেমন— নাওশলীয়া, খাবখরীয়া প্রভৃতি খেলগণ ‘ফুকন’ বা ‘রাজখোয়া’ জাতীয় সামরিক আধিকারীকের তত্ত্বাবধানে রাখা হত।
(৮) সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ :
(১) ডফ্লা বহতীয়া : ব্রক্ষপুত্রের উত্তর তীরে ডফলা বহতীয়া জনগোষ্ঠী বসবাস করত। তারা আহোম রাজ্যের প্রজা। তারা দুই প্রকার করের বোঝা মাথা পেতে নিয়েছিল। ডফলাগণ এক সময়ে আহোম রাষ্ট্রের প্রতি বাধ্যতামূলক পাইকসেবা দান করার সঙ্গে উত্তর তীরে বসবাসকারী ডফলা জনজাতিগণ পচারূপে আর এক প্রকার দিতে বাধ্য হত। স্বর্গদেও লক্ষ্মীসিংহের রাজত্বকালে মোয়ামরীয়াগণ বিদ্রোহ শুরু করলে ডফলাগণও উক্ত বিদ্রোহে যোগদান করে।
(২) চমুয়া : আহোম রাজ্যের সকল পুরুষ নাগরিকই ছিল একজন পাইক। দেশে মুদ্রা অর্থনীতির বহুল প্রচলন না থাকলেও মানুষের হাতে অল্প স্বল্প মুদ্রা থাকলে এইগুলির সাহায্যে তারা পাইক খাটানোর হাত হতে রেহাই পেত। কারণ অষ্টবিংশ শতকের প্রথমভাগে টাকার বিনিময়ে পাইক খাটা থেকে রেহাই দেওয়া ব্যবস্থা সরকার। ধনের বিনিময়ে পাইক খাটা হতে রেহাই পাওয়া পাইককে বলা হত চমুয়া। এইভাবে সাধারণ পাইক ধনের মাধ্যমে চমুয়া শ্রেণিতে উঠতে পারত। এই সকল পাইকের সামাজিক মর্যাদা ছিল উচ্চ ও উন্নত। চমুয়া পাইক সৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্যান্য সাধারণ পাইকের শ্রমের বোঝা বহুলাংশে বাড়ে।
(৩) মোহন মালাদেও : মোহন মালাদেও মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সময় একজন প্রধান অসন্তুষ্ট আহোম রাজপুত্র ছিলেন। বিদ্রোহের সময় ডেকা মহন্ত সপ্তভূজ ওরফে গাগিনী ডেকা ওরফে বায়ন ডেকা ও অন্যান্যরা মোহন মালাদেওকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করার আশ্বাস দিয়ে তাকে তাদের শিবিরে নিয়ে যায়।
(৪) গৌরীনাথ সিংহ : লক্ষ্মীনাথ সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র গৌরীনাথ সিংহ ১৭৮০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর রাজত্বকালে মোয়ামরীয়াগণ দ্বিতীয়বার বিদ্রোহ করে। তিনি পিতৃশক্র মোয়ামরীয়াদের উপর অকথ্য অত্যাচার আরম্ভ করলেন। ফলে ১৭৮২ সালে তারা বিদ্রোহী হয়ে রাজধানী গড়গাঁও আক্রমণ করে এবং বহুলোককে হত্যা করে এবং সিঙ্গারিঘর জ্বালিয়ে দেয়। এই সংবাদ পাওয়া মাত্র বুড়াগোঁহাই ঘনশ্যাম একদল সৈন্য নিয়ে এলে বিদ্রোহীগণ রাজধানী গড়গাঁও ছেড়ে যায়। এরপর ঘনশ্যামের মৃত্যু হলে তার পুত্র পূর্ণানন্দ বুড়াগোঁহাই পদে নিযুক্ত হন।
(৫) কৃষ্ণনারায়ণ : কৃষ্ণনারায়ণ গৌরীনাথ সিংহের পুত্র। মোয়ামরিয়া বিদ্রোহের সময় গৌরীনাথ সিংহের মৃত্যু হয়। কৃষ্ণনারায়ণ বাঙ্গালী বরকন্দাজের সাহায্যে কামরূপ দখল করেন এবং তখনই মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.