SEBA Class 9 Bengali Byakaran | নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ provided by The Roy Library is one of the best content available on the internet as well as many other offline books. is made for Assam Seba Board students. SEBA Class 9 Bengali Byakaran | নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ We ensure that You can completely trust this content. SEBA Class 9 Bengali Byakaran | নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ If you learn from us then don’t need to buy any other books for text book Solutions.
SEBA Class 9 Bengali Byakaran | নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ
Here we will provide you complete Bengali Medium নবম শ্রেণীর , SEBA Class 9 Bengali Byakaran | নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ absolutely free of cost. If you read this solution very carefully with proper understanding & then memorize questions by yourself you can score the maximum number of marks in your upcoming Exam.
ব্যাকরণ
১। সন্ধি-ব্যঞ্জনসন্ধি
সন্ধি কথাটির অর্থ ‘মিলন’। সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকেসন্ধি বলে। সন্ধি প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় উচ্চারণের বিশেষ প্রবণতার জন্য। বাক্যের উচ্চারণে পরপর একাধিক শব্দ আসে; শব্দের উচ্চারণে পরপর আসে একাধিক বর্ণ। উচ্চারণের শ্রোতে বাগযন্ত্র সন্নিহিত মিলনকামী বর্ণগুলিকে সন্ধিসূত্রে যুক্ত করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় সন্নিহিত দুইটি বর্ণ মিলিত হয়ে কখনও পূর্বর্বর্ণের, কখনও পরবর্ণের রূপ প্রাপ্ত হয়। কখনও দুইটি বর্ণ মিলিত হয়ে তৃতীয় একটি বর্ণের প্রতিষ্ঠা করে।
সন্ধি মূলত দুই প্রকার ও স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি। বিসর্গসন্ধি মূলত ব্যঞ্জনসন্ধির অন্তর্ভুক্ত হলেও ইহা পৃথকভাবে আলােচিত হয়ে থাকে। পাঠ্যক্রম অনুসারে এ আমরা এখানে ব্যঞ্জনসন্ধি সম্বন্ধে আলােচনা করব।
ব্যঞ্জনসন্ধি-
স্বরবর্ণের সহিত ব্যঞ্জনবর্ণের অথবা ব্যঞ্জনবর্ণের সহিত ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়।
১। স্বরবর্ণের পর ছ থাকিলে ছ-স্থানে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- অনু + ছেদ = অনুচ্ছেদ, আ + ছাদন = আচ্ছাদন, বি + ছেদ = বিচ্ছেদ, বি + ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন।
২। স্বরবর্ণ, গ ঘ দ ধ ব ভ কিংবা য, র, ল পরে থাকিলে পূর্বপদের অন্তঃস্থিত বর্গের প্রথম বর্ণ স্থানে বর্গের তৃতীয় বর্ণ হয়। যেমন- দিক্ + অন্ত = দিগন্ত, পৃথক + অন্ন = পৃথগন্ন, বাক্ + অর্থ = বাগর্থ, বাক্ + আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর, বাক + ঈশ = বাগীশ, বাক + ঈশ্বরী = বাগীশ্বরী।
কিন্তু স্মরণীয় – যাচ্ + অক = যাচক [যাজক নয়], পত্ + অঙ্গ = পতঙ্গ [পৃদঙ্গ নয়]।
৩। চ বা ছ পরে থাকিলে ত ও দ স্থানে চ হয়। যেমন- উঃ + চারণ = উচ্চারণ, চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র, উৎ + চকিত উচ্চকিত, শরৎ + চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র [কিন্তু নামের ক্ষেত্রে সন্ধি হইবে না]।
৪। জ বা ঝ পরে থাকিলে ত্ ও দ স্থানে ‘জ’ হয়। যেমন- সৎ + জন = সজ্জন, উৎ + জল = উজ্জ্বল, উৎ + জীবন = উজ্জীবন।
৫। ট বা ঠ পরে থাকিলে ত ও দ স্থানে “ট হয়। যেমন- তৎ + টীকা = তট্টীকা, মহৎ + ঠক্কুর – মহটঠক্কুর, বৃহৎ + টঙ্কা = বৃহট্টঙ্কা, বৃহৎ +ঠাকুর = বৃহঠক্কুর।
৬। ড বা ঢ পরে থাকিলে ত ও দ স্থানে ‘ড় হয়। যেমন- উৎ + ডীন = উড্ডিন, উৎ + ডয়ন, =উড্ডয়ন।
৭। ল পরে থাকিলে ত ও দ স্থানে ‘ল’ হয়। যেমন- উৎ + লেখ = উল্লেখ, উৎ + লিখিত = উল্লিখিত, সম্পদ + লাভ = সম্পল্লাভ।
৮। পদের অন্তঃস্থ ত বা দ- এর পর হ থাকিলে ত ও দ স্থানে যথাক্রমে ‘দ ও ‘ধ হয়। যেমন- উৎ + হত = উদ্ধত, জগৎ + হিতায় = জগদ্ধিতায়, উৎ + হৃত = উদ্ধৃত, উৎ + হার = উদ্ধার, পদ + হতি = পদ্ধতি, তৎ + হিত = তদ্ধিত।
৯। পদের শেষে ত বা দ- এর পর শ থাকিলে ত ও দ স্থানে ‘চ’ এবং শ স্থানে ছ হয়। যেমন- চলৎ + শক্তি = চলচ্ছক্তি, উৎ + শ্রিত = উচ্ছিত, উৎ + শ্রিয়া = উচ্ছিায়া।
১০। চ বার্গের পরস্থিত ন- স্থানে ‘ঞ’ হয়। যেমন- যাচ্ + না = যাষ্ণা, রাজ + নী = রাজ্ঞী।
১১। য- এর পরস্থিত ত্ ও থ স্থানে যথাক্রমে ‘ট’ ও ‘ঠ হয়। যেমন- বৃষ + তি = বৃষ্টি, হৃষ + ত = হৃষ্ট, রুষ + ত = রুষ্ট, যম্ + থ = ষষ্ঠ, কৃ + তি = কৃষ্টি।
১২। ন্ বা ম্ পরে থাকিলে পদের অন্তঃস্থ ত দ ও ধ – স্থানে ন এবং ক- স্থানে ঙ হয়। যেমন- উৎ + নয়ন = উন্নয়ন, উৎ + নীত = উন্নীত।
১৩। ক- বর্গ, ত- বর্গ ও প- বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ণ কিংবা স্’ পরে থাকিলে ‘দ’ ও ঠ স্থানে ত [ৎ] হয়। যেমন- তদ + ত্ব = ত [ৎ + ত্ব] = তত্ত্ব, হৃদ + পিণ্ড = হৃৎপিণ্ড ।
১৪। ‘উৎ’ উপসর্গের পরবর্তী ‘স্থা’ ও ‘স্তনভ’ ধাতুয় ‘স্ লুপ্ত হয়। যেমন- উৎ + স্থান = উত্থান, উৎ + স্থাপন = উত্থাপন, উৎ + স্থাপিত উত্থাপিত, উৎ + স্তম্ভন = উত্থম্ভন।
১৫। স্পর্শবর্ণ পরে থাকিলে পদের অন্তঃস্থ ম- স্থানে ‘ং’ বা বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়। যেমন- শম + কর = শংকর বা শঙ্কর, সম + ক = সংকর বা সঙ্কর, স + গতি = সংগতি বা সঙ্গতি, পরম + প = পরংতপ বা পরন্তপ।
১৬। ‘সম্’ ও ‘পরি’ উপসর্গের পর কৃ- ধাতু থাকিলে ধাতুর পূর্বে ‘স্’-এর আগম হয়। যেমন- সম্ + কৃত = সংস্কৃত, সম্ + কৃতি = সংস্কৃতি।
১৭। য, র, ল, ব কিংবা শ, ষ, স, হ পরে থাকিলে পদের অন্তঃস্থিত ম- স্থানে ং হয়। যেমন- সম্ + যম = সংযম, সম + লগ্ন = সংলগ্ন, সম্ + যত = সংযত, সম্ + বাদ = সংবাদ, সম্ + হার = সংহার, সম্ + শ্লিষ্ট = সংশ্লিষ্ট, সম্ + যােগ = সংযােগ, সম্ + যুক্ত = সংযুক্ত।
১৮। বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বর্ণ বা য, র, ল, ব, হ পরে থাকিলে পদের অন্তঃস্থিত বর্গের প্রথম বর্ণ স্থানে তৃতীয় বর্ণ হয়। যেমন- বাক্ + জাল = বাগজাল, বাক্ + যন্ত্র = বাগযন্ত্র, বাক্ + দান = বাগদান, বাক্ + দত্তা = বাগদত্তা।
১৯। নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি – তৎ + কর = তস্কর, আ + চর্য = আশ্চর্য, বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি, গাে + পদ = গােষ্পদ, ষট্ + দশ = ষােড়শ, এক + দশ = একাদশ, অষ্ট + দশ = অষ্টাদশ, হরি + চন্দ্র = হরিশ্চন্দ্র।
২০। খাঁটি বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি – বাংলার নিজস্ব উচ্চারণ- রীতি অনুযায়ী বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি সংঘটিত হয়।
(ক) বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বর্ণ বা য, র, ল্ , ব, হ পরে থাকিলে বর্গের প্রথম বর্ণের স্থানে তৃতীয় বর্ণ’ হয়। যেমন- ছােট + দি = ছােড়দি, এত + দূর = এদ্দুর, পাঁচ + জন = পাঁজজন, রাত + দিন = রাদ্দিন, এক + গা = এগগা, এক + ঘা = এগঘা।
(খ) বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ পরে থাকিলে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে সেই বর্গের যথাক্রমে ‘প্রথম’ ও ‘দ্বিতীয়’ বর্ণ হয়। যেমন- বড় + ঠাকুর = বঠাকুর, আধ + খানা = আৎখানা, রাগ + করােনা = রাককরােনা।
(গ) শ, ষ, স্ থাকিলে চ স্থানে শ হয়। যেমন- পাঁচ + সের = পাঁশসের, পাঁচ + সিকে = পাঁশসিকে।
(ঘ) চ- বর্গ পরে থাকিলে পূববর্তী ত- বর্গ স্থানে ‘চ’- বর্গ হইয়া যায়। যেমন- নাতি [নাত] + জামাই = নাজ্জামাই, ভাত + জল = ভাজ্জল, বদ + জাত = বজ্জাত, সাত + জোড়া = সাজ্জোড়া, হাত + জোড়া = হাজ্জোড়া, দুধ + জাল = দুজ্জ্বল।
(ঙ) চ- বৰ্গ পরে থাকিলে পূর্ববর্তী স্বর লুপ্ত হয় এবং চ-বর্গের ‘দ্বিত্ব হয়। যেমন- জুয়া + চোর = জোচ্চোর, যা + ইচ্ছেতাই = যাচ্ছেতাই।
(চ) র- কারের পর ব্যঞ্জনবর্ণ থাকিলে র- এর লােপ হয় এবং ব্যঞ্জনবর্ণের ‘দ্বিত্ব’ হয়। যেমন- ঘর + জামাই = ঘজ্জামাই, ঘােড়ার + ডিম = ঘােড়াড্ডিম।
(ছ) ট- বর্গ পরে থাকিলে ত- বর্গ স্থানে ‘ট- বর্গ’ হয়। যেমন- হাত + টান = হাট্টান, পুরুত + ঠাকুর = পুরুটঠাকুর, এত + টুকু = এটটুকু।
(জ) ত- বর্ণের পর ‘স্’ থাকিলে উভয়ে মিলিয়া ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- উৎ + সন্ন = উচ্ছন্ন, বৎ + সর = বচ্ছর, কুৎ + সিৎ = কুচ্ছিৎ।
প্রত্যয়
S.L. No. | Group – A সূচীপত্র |
পাঠ – ১ | গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা |
পাঠ – ২ | খাই খাই |
পাঠ – ৩ | ধূলামন্দির |
পাঠ – ৪ | কবর |
পাঠ – ৫ | মনসামঙ্গল |
পাঠ – ৬ | প্রত্যুপকার |
পাঠ – ৭ | ছুটি |
পাঠ – ৮ | ডাইনী |
পাঠ – ৯ | পিপলান্ত্ৰি গ্ৰাম |
পাঠ – ১০ | অ্যান্টিবায়ােটিক ও পেনিসিলিনের কথা |
পাঠ – ১১ | লড়াই |
পাঠ – ১২ | আমরা |
পাঠ – ১৩ | আগামী |
পাঠ – ১৪ | আত্মকথা |
পাঠ – ১৫ | ভারতবর্ষ |
পাঠ – ১৬ | ব্যাকরণ |
পাঠ – ১৭ | রচনা |
S.L. No. | Group – B বৈচিত্রপূর্ণ আসাম |
পাঠ – ১ | আহােমগণ |
পাঠ – ২ | কাছাড়ের জনগােষ্ঠী |
পাঠ – ৩ | কারবিগণ |
পাঠ – ৪ | কোচ রাজবংশীগণ |
পাঠ – ৫ | গড়িয়া, মরিয়া ও দেশীগণ |
পাঠ – ৬ | গারােগণ |
পাঠ – ৭ | সাঁওতালগণ |
পাঠ – ৮ | চা জনগােষ্ঠী |
পাঠ – ৯ | চুটিয়াগণ |
পাঠ – ১০ | ঠেঙাল কছারিগণ |
পাঠ – ১১ | ডিমাসাগণ |
প্রত্যয় – শব্দ বা ধাতুর উত্তর যে সকল বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হইয়া নতুন শব্দ গঠিত হয় তাহাকে প্রত্যয় বলে। যেমন- রঘু + ষ্ণ = রাঘব। ঠাকুর + আলি = ঠাকুরালি।
প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা- কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়।
কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয় দুইটির প্রত্যেকটির দুইটি করিয়া উপবিভাগ রহিয়াছে। যেমন- সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় ও বাংলা কৃৎপ্রত্যয় এবং সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় ও বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়।
কৃৎ-প্রত্যয় – ধাতুর উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে কতকগুলি প্রত্যয় যুক্ত হইয়া যে সকল নূতন শব্দ গঠিত হয় তাহাদিগকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন- পড় + আ = পড়া, গম্ + তব্য = গন্তব্য।
তদ্ধিত প্রত্যয় – শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে কতকগুলি প্রত্যয় যুক্ত হইয়া যে সকল নূতন শব্দ গঠিত হয় তাহাদিগকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
যথা- পাণ্ডু + ষ্ণ = পাণ্ডব, দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি। দয়া + আলু = দয়ালু।
সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় – সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় যােগে তৎসম শব্দ গঠিত হয়। সংস্কৃত কৃৎ- প্রত্যয়ের কতকগুলি সম্পূর্ণভাবেই ক্রিয়ার সহিত যুক্ত হয় ; আবার কতকগুলি প্রত্যয়ের বর্ণগুচ্ছের আংশিক পরিত্যক্ত হইয়া অবশিষ্টাংশ যুক্ত হইয়া শব্দ গঠন করে।
কতকগুলি সংস্কৃত কৃৎ- প্রত্যয়ের উদাহরণ
অঙ (পুংলিঙ্গে ‘অ’, স্ত্রীলিঙ্গে ‘আ’) – এই প্রত্যয় কেবলমাত্র ভাববাচ্যেই প্রযুক্ত হয়। যেমন- চিন্ত + অঙ = চিন্তা, পূজ + অঙ = পূজা, নিদ + অঙ = নিন্দা, শ্রদ্ধ + অঙ = শ্ৰদ্ধা, কৃপ্ + অঙ = কৃপা, ভিক্ষ + অঙ = ভিক্ষা।
অচ (অ) – ভাববাচ্যে ও কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় যুক্ত হয়। কর্তৃবাচ্যে- ধৃ + অচ = ধর, কৃ + অচ্ = কর, হৃ + অচ = হর।
অপ (অ) – ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় যুক্ত হয়। জপ + অচ = জপ, কৃ + অপ্ = কর, ভূ + অপ্ = ভব, আ- দৃ + অপ্ = আদর।
কি (ই) – (ভাববাচ্যে)- বি- ধা + কি = বিধি, নি- ধা + কি = নিধি, সম- ধ + কি =সন্ধি, জল- ধা + কি = জলধি, বারি- ধা + কি
বারিধি, পয়ঃ- ধা + কি = পয়ােধি।
খল্ (অ) – সু- লভ + খল্ = সুলভ, দুর- গম্ + খল = দুর্গম্ , দুর- লভ + খল = দুর্লভ, সু- কৃ + খল = সুকর।
ড (অ) – কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়- সহ- জন্ + ড = সহজ, সরস- জন্ + ড = সরােজ, পঙ্ক- জন + উ = পঙ্কজ।
ক্ত (ত) – অতীত কালের কার্য হইয়াছে এই অর্থে প্রকাশ। কর্তৃবাচ্যে কর্তার ও কর্মবাচ্যে কর্মের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- গম্ + ক্ত = গত, কৃ + ক্ত = কৃত, মৃ + ক্ত = মৃত, বপ্ + ক্ত = উপ্ত, ভী + ক্ত = ভীত, ভিদ + ক্ত = ভিন্ন।
তব্য (উচিৎ অর্থে ) – গম্ + তব্য = গন্তব্য, দা + তব্য = দাতব্য, কৃ + তব্য = কর্তব্য, স্মৃ + তব্য স্মর্তব্য, পঠ + তব্য = পঠিতব্য।
অনীয় (উচিত অর্থে ) – পা + অনীয় = পানীয়, দা + অনীয় = দানীয়, পূজ + অনীয় = পূজনীয়, কৃ + অনীয় = করণীয়, বৃ + অনীয় = বরণীয়, স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয়, আ- চর + অনীয় = আচরণীয়।
ণক (অক) – কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। যথা- গৈ + ণক = গায়ক, পচ্ + ণক = পাচক, লিখ + ণক = লেখক, হন্ + ণক = আঘাত।
শতৃ (অৎ) – হইতেছে, চলিতেছে বা ঘটমান বর্তমান কাল নির্দেশ করে। যেমন- কৃ+ শতৃ = কুৰ্ব্বৎ, গম + শতৃ = গচ্ছৎ, চল + শতৃ = চলৎ।
ন্যৎ প্রত্যয় – কৃ + ণ্যৎ = কার্য, ভৃ + ণ্যৎ = ভার্য, ধূ + ন্যৎ = ধার্য।
যৎ প্রত্যয় – দা + যৎ = দেয়, পা + যৎ = পেয়, জ্ঞা + যৎ = জ্ঞেয়, গম্ + যৎ = গম্য, নম্ + যৎ = নম্য, সহ + যৎ = সহ্য।
ক্যপ (ষ) প্রত্যয় – কৃ + ক্যপ = কৃত্য, ভৃ + ক্যপ = ভৃত্য, শাস্ + ক্যপ = শিষ্য, দৃশ্ + ক্যপ = দৃশ্য, বিদ + ক্যপ + আ (স্ত্রী) = বিদ্যা।
ক্তিন (তি) – ভাব অর্থে ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। যেমন- গম + ক্তিন = গতি, প্র- গম্ + ক্তিন = প্রগতি, ভী + ক্তিন = ভীতি, স্থা + ক্তিন = স্থিতি, শক্ + জিন = শক্তি।
তৃণ, তৃচ প্রত্যয়- (শীলার্থে) – দা + তৃচ = দাতা, নী + তৃচ = নেত্য, যুধ + তৃচ = যােদ্ধা, মা + তৃচ = মাতা, সা + তৃচ = সবিতা, শ্রু + তৃচ = শ্রোতা, কৃ + তৃচ = কর্তা, বচ্ + তৃচ = বক্তা, রচ + তৃচ = রচয়িতা, প্র- নী + তৃচ = প্রণেতা ইত্যাদি।
বাংলা কৃৎ প্রত্যয়-
অ – ধাতুর অর্থে অথচ বিশেষ্যাকারে ব্যবহারের জন্য এই প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- ছাড + অ = ছাড়, বাঁধ + অ = বাঁধ, মার + অ = মার, হার + অ = হার ।
অন্ – ভাববাচ্যে, কারক বাচ্যে ও ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বুঝাইতে ‘অন’ প্রত্যয় হয়। যেমন- নাচ্ + অন = নাচন, বাঁচ + অন = বাঁচন, চল + তন = চলন।
অন্ত – কর্তৃবাচ্যে বর্তমানকালে ধাতুর উত্তর অন্ত প্রত্যয় হয়। যেমন- চল + অন্ত = চলন্ত, জ্বল + অন্ত = জ্বলন্ত, ফুট + অন্ত = ফুটন্ত, ডুব + অন্ত = ডুবন্ত।
অনা, না – লাঞ্ছ + অনা = লাঞ্ছনা, গঞ্জ + অনা = গঞ্জনা, কার্ট + না = কাটনা, ধর + না = ধরনা, খেল্ + না = খেলনা, কর + না = করনা, কুট + না = কুটনা, কাদ + না = কান্না।
আই – কর্তবাচ্যে ধাতুর উত্তর আই প্রত্যয় হয়। যথা- যাচ + আই = যাচাই, বাছ + আই = বাছাই, চড় + আই = চড়াই, খুদ + আহ = খােদাই, ঢাল + আই = ঢালাই।
আনি, আনী – পার + আনি = পারানি, জ্বাল্ + আনি = জ্বালানি, শাস্ + আনি = শাসানি, পিট + আনী = পিটানী, শুন + আনি = শুনানি।
আরি, আরী – ধুন + আরী = ধুনারী, কাট + আরি = কাটারি ইত্যাদি।
নী, নি, অনী, উনি – কারক বাচ্যে ভাববাচক বিশেষ্য বুঝাইতে এই প্রত্যয় হয়। যথা- ছাঁক + নী = ছাঁকনী, নাচ + আনি = নাচনি।
সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়
অপত্যার্থে প্রযুক্ত তদ্ধিত প্রত্যয় – ষ্ণ (অ)- পৃথা + ষ্ণ = পার্থ, পাণ্ডু + ষ্ণ = পাণ্ডব, পুত্র + ষ্ণ = পৌত্র, যদু + ষ্ণ = যাদব, ভৃগু + ষ্ণ = ভার্গব, সুমিত্রা + ষ্ণ = সৌমিত্র।
ষ্ণি (ই) – দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি, সুমিত্রা + ষ্ণি = সৌমিত্রি, রাবণ + ষ্ণি = রাবণি, অর্জুন + ষ্ণি = আর্জুনি, ভাগীরথ + ষ্ণি = ভাগীরথী, অরুণ + ষ্ণি = আরুণি ইত্যাদি।
ষ্ণেয় (এয়) – কুন্তী + ষ্ণেয় = কৌন্তেয়, গঙ্গা + ষ্ণেয় = গাঙ্গেয়, রাধা + ষ্ণেয় = রাধেয়, ভগ্নী + ষ্ণেয় = ভাগিনেয়, অতিথি + ষ্ণেয় = আতিথেয়, আগ্নি + ষ্ণেয় = আগ্নেয় ।
ষ্ণায়ন (আয়ন) – নর + ষ্ণায়ন = নারায়ণ, দক্ষ + ষ্ণায়ন = দাক্ষায়ন, রাম্ + ষ্ণায়ন = রামায়ণ, দ্বীপ + ষ্ণায়ন = দ্বৈপায়ন।
ষ্ণ্য (য) – অদিতি + ষ্ণ্য = আদিত্য, দিতি + ষ্ণ্য = দৈত্য, গণপতি + ষ্ণ্য = গাণপত্য, বৃহস্পতি + ষ্ণ্য = বাৰ্হস্পত্য।
বিবিধ অর্থে প্রযুক্ত তদ্ধিত প্রত্যয় – পতঞ্জলি + ষ্ণ = পাতঞ্জল, শিব + ষ্ণ = শৈব, পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব, নীতি + ষ্ণিক = নৈতিক, জগৎ + ষ্ণিক = জাগতিক, ন্যায় + ষ্ণিক = নৈয়ায়িক, লোক + ষ্ণিক = লৌকিক, ভূগােল + ষ্ণিক = ভৌগােলিক, ভূমি + ষ্ণিক = ভৌমিক, পুরাণ + ষ্ণিক = পৌরাণিক, ইতিহাস + ষ্ণিক = ঐতিহাসিক, শরীর + ষ্ণিক = শারীরিক।
বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় – আ (উৎপন্ন অর্থে)- চীন + আ = চীনা, পশ্চিম + আ =পশ্চিমা, তেল + আ = তেলা, রােগ + আ = রােগ, রস + আ = রসা।
ঈ (আছে অর্থে) – দাম + ঈ = দামী, ঢাক + ঈ = ঢাকী, চাষ + ঈ = চাষী, কটক + ঈ = কটকী, পাঞ্জাব + ঈ = পাঞ্জাবী, মাদ্রাজ + ঈ = মাদ্রাজী, দোকান + ঈ = দোকানী, ভাণ্ডার + ঈ = ভাণ্ডারী।
আই (উৎপন্ন অর্থে) – ঢাক + আই = ঢাকাই, মােগল + আই = মােগলাই, পাটনা + ই = পাটনাই।
মিঃ (ভাব তার্থে) – বুড়াে + মি = বুড়ােমি, ছেলে + মি = ছেলেমি, দুষ্ট + মি = দূষ্টুমি, গোঁড়া + মি = গোঁড়ামি।
আমি (ভাব অর্থে) – পাগল + আমি = পাগলামি, পাকা + আমি = পাকামি, বাঁদর + আমি = বাঁদরামি ।
কতকগুলি ভিন্নার্থক বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় – মেয়ে + লি = মেয়েলি, গা + ইয়া = গাইয়া, জমক + আলাে = জমকালাে, শাঁস + আলাে = শাঁসালাে, মাঠ + উয়া = মাঠুয়া, দীপ + আলি = দিপালী, ঠাকুর + আলি = ঠাকুরালি, ষগক + ইয়াশ = হরিয়া, মিশ + উক = মিশুক, ভাব + উক = ভাবুক, পেট + উক = পেটুক, তুলা + ট = তুলট।
কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের পার্থক্য –
কৃৎ প্রত্যয় – ধাতুর উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে কতকগুলি প্রত্যয় যুক্ত হইয়া যে সকল নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাহাদিগকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।যথা- চল + অ = চলন্ত, পা + তব্য = পাতব্য।
তদ্ধিত প্রত্যয় – শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে কতকগুলি প্রত্যয় যুক্ত হইয়া যে সকল নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাহাদিগকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
যেমন- কুরু + ষ্ণ = কৌরব, দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি, ছেলে + মি = ছেলেমি।
পার্থক্য – কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয় যদিও প্রত্যয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং উভয়েই নুতন নুতন শব্দ গঠনে তথা বিশেষ্য- বিশেষণ শব্দ গঠনের কৃতিত্ব বহন করে তথাপি উভয়ের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য রহিয়াছে। যেমন-
১। কৃৎ-প্রত্যয় গঠিত হয় ধাতুর উত্তর প্রত্যয় যুক্ত হইয়া ;আর তদ্ধিত প্রত্যয় গঠিত হয় শব্দের উত্তর প্রত্যয় যুক্ত হইয়া ।
২। কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত শব্দকে “কৃদন্ত পদ” বলা হয় ; আর তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত পদকে “তদ্ধিতান্ত পদ” বলা হয় ।
৩। কৃৎ-প্রত্যয়ে বাচ্য সম্পর্ক থাকে ; কিন্তু ধাতুর উত্তর যুক্ত হয় না বলিয়া তদ্ধিতান্ত প্রত্যয়ের সহিত বাচ্যের কোনাে সম্পর্ক থাকে না।
৪। কৃৎ-প্রত্যয়ের প্রধান লক্ষ্য হইতেছে ধাতুর বিশ্লেষণ, তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রধান লক্ষ্যের বিষয় হইতেছে অর্থ।
৫। ধাতুর উত্তর এক সময়ে একটি মাত্র কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হয় (ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ভিন্ন), কিন্তু শব্দের উত্তর তদ্ধিত প্রত্যয় একের অধিক যুক্ত হইতে পারে।
নির্দেশক প্রত্যয়
যে সকল শব্দ বা শব্দাংশ বিশেষ্যের সঙ্গে বিশেষ্যের পূর্বে ব্যবহৃত সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশেষ্য ও সংখ্যাবাচক শব্দকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে, তাদের নির্দেশক প্রত্যয় বলে। যেমন- টা, টি, টুক, টুকুন, টুকু,খানা, খানি, গাছ, গাছা, গাছি ইত্যাদি। নির্দেশক প্রত্যয়গুলি প্রকৃতপক্ষে তদ্ধিত প্রত্যয়েরই একটি রূপ।
সংখ্যা নির্দেশ করিবার জন্য বিশেষ্যের পূর্বে সংখ্যাবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, সংখ্যাবাচক বিশেষণ একটি অনির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করে। সুনির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিশেষ্যের সঙ্গে বা বিশেষণের সঙ্গে নির্দেশক প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়।
১। টা,টি, টে, টো – যেমন- একটা, একটি, তিনটে, দুটো, ছেলেটা, মেয়েটি।
-টা – বিরক্তি বা অবজ্ঞাবােধক – “ছেলেটা ভীষণ দুষ্টু।”
-টি- স্নেহ ও সহানুভূতি ব্যঞ্জক – “ছেলেটি বড়াে ভালাে।”
-টে- সংখ্যাবাচক বিশেষণ তিন – চারের সঙ্গে বসে- টাকায় চারটে লেবু।
-টো- সংখ্যাবাচক বিশেষণ দু- এর সঙ্গে বসে- দুটো বাজে।
২। টুক, টুকু, টুকুন – যেমন- এতটুকু, একটুকু, কতটুকু, যতটুকু, ততটুকু, এতটুকন।
টুক – স্বল্পতম পরিমাণ- জ্ঞাপক, কিন্তু অবজ্ঞাবাচক – “বিড়ালের এঁটো দুধটুকু ফেলে দিও।”
টুকু – পরিমাণ- জ্ঞাপক অথবা ক্রিয়াবিশেষণরূপে – দুধটুকু খেয়ে ফেল। (পরিমাণ)।
“তােমাদের এইটুকু অনুরােধ শুনব না।” (ক্রিয়াবিশেষণ)।
টুকুন – স্বল্পতম পরিমাণ- জ্ঞাপক ও স্নেহাদরবােধক – “জামাই এইটুকুন দুধ খেলে না?
৩। খান, খানা, খানি – যেমন- একখান, তিনখান, কয়খান, চারখানা, দুইখানি।
খান- স্নেহাদর ব্যঞ্জক ও নিঃসঙ্গতাবােধক – “ছপছপ ছিপ খান তিনজন মাল্লার।
খানা – দৈর্ঘ্য প্রস্থযুক্ত বড় আয়তনের বস্তুবােধক ও অবজ্ঞা- ব্যঞ্জক – “একখানা দিলে নিয়ে ফেলিতে তিনখানা করে আনে”।খানি – দৈর্ঘ্য- প্ৰস্থ -যুক্ত ছােট আয়তনের বস্তু- বােধক ও স্নেহাদ- রব্যঞ্জক- “শুধু বাঁশিখানি হাতে দাও তুলি।”
৪। গাছ, গাছা, গাছি – যেমন- একগাছ লাঠি, দু-গাছ দড়ি, চারগাছি সূতা, একগাছ চুল, একগাছ শাক, গাছ তিনেক ছড়ি, গাছি তিন- চার সূতা ইত্যাদি।
গাছ- লম্বা বস্তু বুঝালে – “চিনিল না মোরে নিয়ে গেল ধরে কাধে তুলি লাঠিগাছ।”
গাছা – লম্বা বস্তু বুঝালে – “লাঠিগাছা রখলে কোথায়?”
গাছি – সরু বস্তু বুঝালে – ফুলের মালাগাছি বিকাতে আসিয়াছি।”
অনির্দেশক প্রত্যয়-
১। জন, এক – যেমন- একজন, দুজন, জন দুই, জন চারেক।
জন – সংখ্যাবাচক বিশেষণের আগে এই নির্দেশক প্রত্যয় যােগ করে অনির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করা হয়।“জন চার লােক এখানে এসেছিল।”
এক – ‘এক’ সংখ্যাবাচক শব্দ অনিশচয় তাকে প্রত্যয় যোগ করে নির্দিষ্ট ভাবকে আরও জোরালো করে প্রকাশ করা যেতে পারে। “এক যে ছিল রাজা।”
২। গােটা, গুটি – অনেক সময়ে অনির্দিষ্ট ভাব বুঝাতে ব্যহত হয়।
-গােটা – অনাদর বোধক – “সেই সাপ জ্যান্ত, গোটা দুই আনতে।”
-গুটি – “প্ৰীতিবাক্যে কব গিয়া গুটিকত কথা।”
লিঙ্গ
বিশ্বের প্রাণী-জগৎ ও বস্তু-জগৎকে আমার। তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করতে পারি- স্ত্রী, পুরুষ ও ক্লীৰ। প্ৰাণী- জগতের মধ্যে তাছ। স্ত্রী- পুরুষ ভদ। বস্তু- জগতে সেই ভেদ নাই। সেই জন্য বস্তু- জাগতের সমস্ত কিছুকেই ক্লীব বলা হয়। যে- ধারণার দ্বারা শব্দ- সম্ভারের স্ত্রী, পুরুষ ও ক্লীব- এই ভদ- প্রতীতি ঘটে, তাকে ব্যাকরণে বলা হয় লিঙ্গ [Gender]। কতকগুলি প্রত্যয় শব্দে শব্দে এই ভেদ- প্রতীতি ঘটায়। সেই প্রত্যয়গুলিকেও লিঙ্গ বলা হয় ।
বিশ্ব- জগতের প্রাণী ও বস্ত্র সম্ভারের ন্যায় ভাষার শব্দ- সম্ভারেরও লিঙ্গ তিন প্রকার- পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ। যে সকল শব্দ পুরুষ-সূচক, তাদের পুংলিঙ্গ [Masculine Gender] বলা হয়। যেমন- পুরুষ, বালক, ছাত্র, ময়ূর, কোকিল, সুন্দর। যে সকল শব্দ স্ত্রী- সূচক, তাদের বলা হয় স্ত্রীলিঙ্গ [Feminine Gender]। যেমন- নারী, বালিকা, ছাত্রী, ময়ূরী, কোকিলা, সুন্দরী। যে সকল শব্দে পুরুষ বা স্ত্রী না বুঝিয়ে চেতনাহীন, প্রাণহীন বস্তুকে নির্দেশ করে, তাদের ক্লীবলিঙ্গ [Neuter Gender] বলে। যেমন- বাতাস, পাথর, বালি, জল, ঘর, মেঘ, আলাে, মাটি, ফুল, ফল, পথ, কাপড়।
সংস্কৃত ভাষায় লিঙ্গ শব্দের সংস্কার মাত্র, বলা যায় আভিধানিক। কিন্তু বাংলায় বাস্তব ক্ষেত্রের সাথে সেই মিল আছে। সংস্কৃতে ‘মিত্র’ শব্দ সূর্য অর্থে ক্লীবলিঙ্গ, আবার বন্ধু অর্থে পুংলিঙ্গ ; ‘দার’ – শব্দের অর্থ স্ত্রী হইলেও শব্দটি পুংলিঙ্গ। কাজেই, সংস্কৃতে লিঙ্গ ও অর্থের দ্যোতনা [sense]-র মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে মিল নাই। বাংলায় লিঙ্গ সম্পূর্ণরূপে অর্থ-দ্যোতনা নির্ভর।
সংস্কৃতে ‘সভা’ স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন- সুমহতী সভা। কিন্তু বাংলায় বিরাট সভা হয়। অর্থাৎ, বাংলায় ‘সভা’ ক্লীবলিঙ্গ। সংস্কৃতে বিশেষ্যের যে লিঙ্গ হয়, বিশেষণেও সেই লিঙ্গ প্রযুক্ত হয়। যেমন : তন্বী শ্যামা শিখরীদশনা পক্কবিম্বাধরােষ্ঠী’। সাধু বাংলায় এই বিধি অনুসৃত হলেও চলিত বাংলায় এইরূপ নাই। সাধু বাংলায় ‘সুন্দরী কন্যা’ ব্যবহৃত হলেও চলিত বাংলায় ‘সুন্দর মেয়ে’ ব্যবহৃত হয়। কেতকীর মতাে বােকা মেয়ে আর নেই। চন্দন খুব লক্ষ্মী ছেলে। আমাদের রমাদি খুব চালাক’- এ রকম ব্যবহার চলিত বাংলায় প্রচলিত। কিন্তু বাংলায় গদ্যে এবং কবিতায় বিশেষ্য ও বিশেষণ সমলিঙ্গ ও হয়ে থাকে এবং জড় ও অচেতন বস্তুতে অনেক সময় পুংলিঙ্গ কিংবা স্ত্রীলিঙ্গ আরােপ করে সেই মতাে সমলিঙ্গের বিশেষ্য ও বিশেষণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- জ্যোৎস্নাময়ী রজনী, সসাগরা ধরিত্রী, শােকাকুলা শকুন্তলা, পূর্ণগর্ভা হরিণী, কুলুনাদিনী গজা, প্রসন্ন – সলিলা গােদাবরী, শুভ্ৰমুখী শুদ্ধসরীরা, সুন্দরী নবমল্লিকা, আশা কুহকিনী, তিমিরা রজনী, চঞ্চলা নদী, বিপুলা পৃথিবী, চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী, উতলা তটিনী, প্রভাতমনা রাত্রি, সুখময়ী উষা, কৃষ্ণা রজনী, রঙ্গময়ী কল্পনা, রােরুদ্যমানা জননী, বনরাজিকুন্তলা পৃথিবী।
লিঙ্গ-পরিবতন –
।। সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ।।
সংস্কৃত বা তৎসম পুংলিঙ্গ শব্দগুলিকে তিন প্রকারে স্ত্রীলিঙ্গে পরিবর্তিত করা হয়- এক, স্ত্রী-প্রত্যয় যােগ করে, দুই, ভিন্ন শব্দ দ্বারা এবং তিন, স্ত্রী-বােধক শব্দ যােগ করে।
১। স্ত্রী-প্রত্যয় যােগ করে-
(ক) আ-প্রত্যয় যােগে – অ-কারান্ত শব্দের সাথে আ-প্রত্যয় যােগে স্ত্রীলিঙ্গ হয়। অজা-অজা। আর্য-আর্যা। অগ্রজ-অগ্রজা। অনুজ-অনুজা। দীন-দীনা। ক্রুর-ক্রুরা। সরল-সরলা। মলিন-মলিনা। চতুর-চতুরা।
(খ) অক্- প্রত্যয়ান্ত শব্দের অক্ স্থানে ইক যােগ করিয়া এবং শেষে আ-প্রত্যয় যােগে – অভিভাবক-অভিভাবিকা। নায়ক-নায়িকা। পাচক-পাচিকা। গায়ক-গায়িকা। পাঠক-পাঠিকা। লেখক-লেখিকা। বালক-বালিকা। পালক-পালিকা। কারক-কারিকা। শ্যালক-শ্যালিকা। সাধক-সাধিকা ।
(গ) ঈ-প্রত্যয় যােগে – রাক্ষস-রাক্ষসী। ছাগ-ছাগী। হংস-হংসী।মানব-মানবী। নর-নারী। দেব-দেবী। ভূজঙ্গ-ভূজঙ্গী। ভাগিনেয়-ভাগিনেয়ী। মাতামহ-মাতামহী। পৌত্র-পৌত্রী। পাত্র-পাত্রী। নদ-নদী। চণ্ডাল-চণ্ডালী। ব্যাঘ্র-ব্যাঘ্ৰী। মৃগ—মৃগী।
(ঘ) নী-প্রত্যয় যােগে – রাজা-রাজ্ঞী। পতি-পত্নী। নামা-নাম্নী।
(ঙ) আনী-প্রত্যয় যােগে – শিব-শিবানী। ঈশ-ঈশানী। বন-বনানী। ভব-ভবানী। রুদ্র-রুদ্রাণী। অরণ্য-অরণ্যানী। বরুণ-বরুণানী।
(চ) ইন-প্রত্যয়ান্ত পদে ইনী-প্রত্যয় যােগে – অধিকারী-অধিকারিণী। অভিমানী-অভিমনিনী। প্রিয়দর্শী-প্রিয়দর্শিনী। অনুগামী-অনুগামিনী। দুঃখী-দুঃখিনী। বিজয়ী-বিজয়িনী। মায়াবী-মায়াবিনী। পূজারী-পূজারিনী।
(ছ) তৃচ-প্রত্যয়ান্ত পদে ঈ-প্রত্যয় যােগ করে – গ্রহীতা-গ্রহীত্রী। দাতা-দাত্রী। কর্তা- কৰ্ত্ৰী। নেতা-নেত্রী। ধাতা-ধাত্রী। বিধাতা-বিধাত্রী।
(জ) পূরণবাচক শব্দে ঈ-প্রত্যয় যােগ করে – চতুর্থ-চতুর্থী। পঞ্চম-পঞ্চমী। ষষ্ঠ-ষষ্ঠী। অষ্টম-অষ্টমী। নবম-নবমী। দশম-দশমী। একাদশ-একাদশা। দ্বাদশ-দ্বাদশী। ত্রয়ােদশ-ত্রয়ােদশী। ষােড়শ-ষােড়শী।
(ঝ) বৎ, মৎ ও ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দে স্ত্রীলিঙ্গে যথাক্রমে বতী, মতী ও ঈয়সী যােগ করে – ভগবান-ভগবতী। গুণবান-গুণবতী। বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী। শ্রীমান-শ্ৰীমতী। বিদ্যমান -বিদ্যাবতী। রূপবান -রূপবতী। আয়ুষ্মন-আয়ুষ্মতী। ধনবান-ধনবতী। দয়াবান-দয়াবতী।
(ঞ) বহুব্রীহি সমাসবদ্ধ পদের অন্তে অঙ্গবাচক শব্দ থাকলে আ অথবা ঈ যােগে – চন্দ্রবদন-চন্দ্রবদনী। ত্রিনয়-ত্রিনয়নী।
২। ভিন্ন শব্দের দ্বারা- পিতা-মাতা। পুত্র-কন্যা। জনক-জননী। পুরুষ-প্রকৃতি, স্ত্রী, মহিলা। বিদ্বান-বিদুষী। স্বামী-স্ত্রী, পত্নী, ভার্যা। ভ্রাতা-ভগ্নী, ভ্রাতৃবধূ। যুবরাজ-যুবরাজ। বর-বধু [কনে]। শ্বশুর-শ্বশ্র। যুবা বা যুবক-যুনী, যুবতি, যুবতী। শ্বা- গুণী। এগুলিকে নিপাতনে সিদ্ধ স্ত্রীলিঙ্গও বলা যায় ।
৩। স্ত্রী-বােধক শব্দ যােগ করে।
কর্মকার-কর্মকার-পত্নী। রাজপুত্র-রাজকন্যা। কৃষক-পুত্র-কৃষক-দুহিতা। ব্রাহ্মণ-তনয়-ব্রাহ্মণ-তনয়া মুনি-মুনি-পত্নী। ব্যাব-ব্যাধ-পত্নী। যক্ষ-যক্ষ-পত্নী। সূতপুত্র-সূতপুত্ৰী।
তৎসম শব্দে লিঙ্গান্তর-
(ক) স্ত্রীলিঙ্গে দুই রূপে দুই রকম অর্থ – আচার্য-আচার্যা। উপাধ্যায়-উপাধ্যায় [যে মহিলা অধ্যাপনা করেন], উপাধ্যায়ানী [উপাধ্যায়ের পত্নী]। ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়, ক্ষত্রিয়াণী। শূদ্র-শূদ্রা। [শূদ্রবংশ-জাতা], শূদ্রী, শূদ্রানী [শূদ্রের স্ত্রী]। চণ্ড-চণ্ড [কোপন-স্বভাবা নারী], চণ্ডী [দেবী-বিশেষ]।
(খ) ক্ষুদ্রার্থে স্ত্রী-প্রত্যয় – পুস্তক-পুস্তিকা। নাটক-নাটিকা। কথা -কথিকা। গীত-গীতিকা। কোষা-কুষি। বটী-বটিকা।
(গ) বৃহদার্থে স্ত্রী-প্রত্যয় – হিম [শীত]-হিমানী [বৃহৎ বরফ]। অরণ্য-অরণ্যানী [বৃহৎ অরণ্য]। বন-বনানী [বৃহৎ বন]।
(ঘ) কতকগুলি নিত্য-পুংলিঙ্গ শব্দ- স্ত্রৈণ, বিপত্নীক, মৃতদার, অকৃতদার, জামাতা, পুরােহিত, কবিরাজ।
(ঙ) কতকগুলি নিত্য-স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ – সপত্নী, রূপসী, অবীরা, ধনী [সুন্দরী ], ধর্মপত্নী, অঙ্গনা, কমলা, ললনা, বিমাতা, গর্ভিণী।
(চ) কতকগুলি উভয়-লিঙ্গবাচক শব্দ – সন্তান, শিশু, দম্পতি, বন্ধু (স্ত্রীলিঙ্গে বন্ধু-পত্নীও হয়, কিন্তু বান্ধবী ‘বান্ধব’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ), কবি [ স্ত্রীলিঙ্গে মহিলা কবিও হয়], [স্ত্রীলিঙ্গে শত্রু- পত্নীও হয়]।
(ছ) উভয়-লিঙ্গে একই রূপ – সুশ্রী, বিশ্রী।
।।খাঁটি বাংলা শব্দ।।
বাংলা শব্দগুলিকেও তিন প্রকারে স্ত্রীলিঙ্গে পরিবর্তিত করা হয়। যেমন- এক, স্ত্রী-প্রত্যয় যােগ করে, দুই, ভিন্ন শব্দ দ্বারা এবং তিন, স্ত্রী-বোধক শব্দ যােগ করে।
১। স্ত্রী-প্রত্যয় যােগ করে।
(ক) ঈ [কখনও কখনও আ] প্রত্যয় মােগে – [পত্নী-অর্থে] কাকা-কাকী। জেঠা-জেঠী। মামা-মামী। চাচা-চাচী। খুড়া, খুড়ে-খুড়ী। দাদা, দাদু-দাদী [দিদিমা]। বামুন-বামনী।
[সম-জাতীয় অর্থে ঈ-প্রত্যয়] বুড়া-বুড়ী। খোঁড়া-খুড়ী। ঘােড়া-ঘাড়ী। বিড়াল-বিড়ালী। খােকা-খুকী [আদরে-খুকু]। ভাগিনী-ভাগিনী।
(খ) ক্ষুদ্রার্থে ই-প্রত্যয় যােগে – পোঁটলা-পুটলি। ঝোড়া-ঝুড়ি। ঝোলা – ঝুলি । গােলা-গুলি। কোষা-কুষি। ঘট-ঘটি। ছােরা-ছুরি।
(গ) আনী, ইনি ও নী-প্রত্যয় যােগে – গয়লা-গয়লানী। নাপিত-নাপতানী। চৌধুরী-চৌধুরাণী। ঠাকুর-ঠাকুরাণী [ঠাকরুণ]। চৌধুরী-চৌধুরাণী। ঠাকুর -ঠাকুরাণী |ঠাকরুণ]। রাজপুত-রাজপুতানী।
(ঘ) বিদেশী প্রত্যয়ান্ত শব্দে ঈ-প্রত্যয় যােগে – ফুলওয়ালা-ফুলওয়ালী।
(ঙ) নিত্য-পুংলিঙ্গ শব্দ – দারােগা, কুস্তিগীর। নিত্য-স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ- সধবা, বিধবা, সতীন, এয়াে, সজনী। উভয়লিঙ্গ শব্দ- মন্ত্রী, চালক।
২। ভিন্ন শব্দে দ্বারা – কর্তা-গিন্নী। ভাশুর-বড়, জা। শালা-শালী। শুক-সারি, সারিকা। বেহাই-বেয়ান। জামাইবাবু-ভগিনী।
বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রে – লর্ড, লাট-লেডী। ল্যাণ্ড লর্ড-ল্যাণ্ড লেডী। মিস্টার-মিস্ [কুমারী], মিসেস [বিবাহিতা]। নবাব, বাদশাহ-বেগম। সাহেব-মেম, বিবি, সাহেবা, খাতুন। চাকর-ঝি, দাসী। খানসামা-আয়া।
৩। স্ত্রী-বােধক শব্দ যােগ করে- বেটাছেলে-মেয়েছেলে। কবি-স্ত্রী-কবি, মহিলা-কবি। হুলাে-বিড়াল-মেনী বিড়াল। ঘােষবাবু-ঘােষজায়া। গোঁসাই- মা-গােসাই, গোঁসাই-মা। গুরু- গুরু-মা। বামুন-বামুন-গিন্নী, বামুন-মা। প্রতিনিধি- মহিলা-প্রতিনিধি।
বিশিষ্টার্থক শব্দ বা বাগধারা ও বাগবিধি- অকূল পাথাব (ভীষণ বিপদ)- বিধবংসী ভূমিকম্পের ফলে পরিবারটি সব কিছু হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছে।
অরণ্যে রােদন (নিষ্ফল আবেদন)- কৃপণের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা অরণ্যে রােদনের নামান্তর।
অকাল কুষ্মাণ্ড (অকর্মণ্য ব্যক্তি )- বড়লােকের অকাল কুষ্মাণ্ড পুত্রেরও চাকরি হয়, আমাদের বেলায় ‘নাে ভেকেন্সি।
অন্ধের যষ্টি (অসহায়ের একমাত্র সম্বল)- অন্ধের যষ্টির মতাে কর গাে আমারে দুঃখীর নির্ভর।
অমাবস্যার চাঁদ (দুর্লভ ব্যক্তি দর্শন)- তােমাকে তাে এ তল্লাটে কোনদিন দেখা যায় না, আজ দেখি অমাবস্যার চাদ উঠল।
আহ্লাদে আটখানা (অত্যন্ত খুশীভাব)- সেলাইয়ের প্রশংসা করায় মেয়েটি আহলাদে আটখানা হয়েছে।
চোখের বালি (বিরক্তি উদ্রেককারী ব্যক্তি)- কেন আমি তােমার চোখের বালি হলাম জানি না, আমাকে তুমি একেবারে সহ্য করতে পার না দেখি।
জিলিপির প্যাচ (কূটবুদ্ধি)- দেখতে তাে বেশ সহজ সরল মনে হয়, তার পেটে কি এমন জিলিপি প্যাচ ছিল?
টাকার কুমীর (বিপুল ধনের অধিকারী)- অসৎ পথে উপার্জন করে আজ টাকার কুমীর হয়েছ, তােমার মুখে জনসেবার নাম শুনলে ঘৃণা হয়।
ঠোটকাটা (স্পষ্টবক্তা)- সুবীরের মতো ঠোটকাটা ছেলে খুব কম দেখেছি, যা চিন্তা করল, তাই বলে দিল।
তুলসী বনের বাঘ (ছদ্মবেশী)- সাধুবেশধারী লােকটির কাপড়ের নীচে একটা ছােরা পাওয়া গেল, এইরূপ তুলসী বনের বাঘ হতে সাবধান থেকো।
তাসের ঘর (ভঙ্গুর)- আগ্নেয়গিরির আশেপাশে বাড়িগুলি তাসের ঘরের মতাে ভেঙ্গে পড়ল।
দক্ষযক্ষ (হৈ-হট্টগােল )- সভায় এইরূপ দক্ষযজ্ঞের মধ্যে মূল বক্তব্য উত্থাপন না করাই ভাল।
দাও মারা (সহজে লাভ করা)- উগ্রপন্থীদের তল্লাসির নামে বেশ কিছু অসৎ পুলিশ ভাল দাঁও মেরেছে বলে একটি মহল অভিযােগ তুলেছে।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি)- ডাকাতদের আক্রমণের সময় ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির সাজলে নিজের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না।
ননীর পুতুল (শ্রমবিমুখ)- এমন ননীর পুতুল তরুণদের নিয়ে দেশ গঠন সম্ভব নয়।
অগস্ত্য যাত্রা (শেষ যাত্রা)- এই যাত্রাই তার অগস্ত্য যাত্রা হল।
পুকুর চুরি (সমূলে চুরি)- গতরাত্রিতে বিশ্বম্ভরবাবুর আমবাগানে পুকুর চুরি হয়েছে, ফলগুলি তাে নিয়ে গেছে, গাছগুলিকেও নষ্ট করে দিয়াছে।
বেড়াল তপস্বী (ভণ্ড)- শরীরে নামাবলী থাকলে কি হবে, লােকটি আসলে একটা বিড়াল তপস্বী।
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরাে (একদিকে শাসন, অপরদিকে প্রশ্রয়)- অধিক বেলায় মা ছেলেটিকে ঘুম হইতে উঠবার জন্য ডাকাডাকি করছেন, আবার লেপটাকে ভালভাবে গুঁজে দিচ্ছেন, এইরূপ বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরাে নীতিতে ছেলেটি লাই পেয়ে গেছে।
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ (ভীষণ বিশৃঙ্খল অবস্থা)- সভার সমাপ্তিতে বিদ্যালয় কক্ষের আসবাবপত্র এমন অগােছালাে হয়ে আছে, দেখে মনে হয় ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হয়েছে।
মগের মুলুক (অরাজক অবস্থা)- তােমরা তাে বেশ মগের মুলুক পেয়েছ, শৃঙ্খলা বলতে কিছুই তাে তােমরা শিখ নাই।
রাঘব বােয়াল (বড় অপরাধী)- রাঘব বােয়ালটা পালিয়ে গেল, অথচ সাধারণ চুনােপুটিগুলিকে পুলিশ ধরে আনল।
শিবরাত্রির সলতে (একমাত্র বংশধর)- ভদ্রলােকের অধিক বয়সে শিবরাত্রির সলতে একটি পুত্র জন্মেছে।
গােবর গণেশ (নির্বোধ)- রামুর মতাে গােবর গণেশ যে উন্নতি করবে তা কেউ চিন্তা করে নি।
পদ-পরিবর্তন –
পদ পাঁচ প্রকার হলেও পদ-পরিবর্তন বলতে কেবলমাত্র বিশেষ্য হতে বিশেষণে এবং বিশেষণ হতে বিশেয্যে পরিবর্তনকেই বুঝায়। এই পরিবর্তন কতকগুলি নিয়মের অনুসরণে সংঘটিত হয়। নিচে সেই নিয়মগুলি দৃষ্টান্তসহ প্রদত্ত হল-
বিশেষ্য হইতে বিশেষণ-
১। সংস্কৃত কৃ প্রত্যয় যােগে – অন্তর্ধান-অন্তর্হিত। অধ্যয়ন-অধীত। অবধান- অবহিত। অবসাদ- অবসন্ন। অবসান- অবসিত। অবিরাম-অবিরত। অভিপ্রায় -অভিপ্রেত। অভিধা-অভিহিত। অভিলাষ-অভিলষিত। অভিষেক-অভিষিক্ত। অভ্যাস- অভ্যস্ত। আরম্ভ-আরব্ধ।
২। সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় যােগে – অন্তর-আন্তর, আন্তরিক। অণু-আণবিক। অসুর-আসুরিক। ইতিহাস-ঐতিহাসিক। ইচ্ছা-ঐচ্ছিক। ইহ-ঐহিক। ঈশ-ঐশিক। ঈশ্বর-ঐশ্বরিক। ঋষি-আর্য। কায়-কায়িক। কল্পনা-কাল্পনিক।
৩। বাংলা কৃৎ-প্রত্যয় যােগে – কালাে-কালচে, কালােপান। কাদা-কঁদুনে। খেলা-খেলুড়ে। গাওয়া-গাইয়ে। ঘুম-ঘুমন্ত। চড়-চড়াই। চলা-চলতি, চলন্ত। জানা-জান্তা। জমা-জমাট। বােলা-ঝুলন্ত। ডুব-ডুবু। পড়া-পড়ন্ত।
৪। বাংলা তদ্ধিত-প্রত্যয় যোগে – অলক্ষণ-অলক্ষুণে। আঠা-আঠালো। আকাশ-আকাশী। আদর- আদুরে। আদাড়-আদাড়ে। আষাঢ়-আষাঢ়ে। আয়েশ-আয়েশী। আলাপ-আলাপী। ইদুর-ইদুরে। ইসলাম-ইসলামী।
বিশেষণ হতে বিশেষ্য
১। সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় যােগে – অকৃতজ্ঞ-অকৃতজ্ঞতা। অক্ষম-অক্ষমতা। অধিক-আধিক্য। অধীন-অধীনতা। অনুকূল-আনুকূল্য। অভিজাত-আভিজাত্য। অনুগত-আনুগত্য। কৰ্কশ-কাৰ্কশ্য। কুলীন-কৌলিন্য। কোমল-কোমলতা। কৃশ-কৃশতা। কিশাের-কৈশাের। কৃপণ-কৃপণতা, কার্পণ্য।
২। বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় যােগে – চালবাজ-চালবাজি। চিকন-চিকনাই, চেকনাই। জ্যাঠা-জ্যাঠামি। ডাকাত-ডাকাতি। দুরন্ত-দুরন্তপনা। ধূর্ত-ধূর্তামি । ন্যাকা-ন্যাকামি।
বাক্য সংকোচন – রচনার চমৎকারিত্ব সৃষ্টির জন্য এবং ভাবের সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্য বাক্য সংহতির প্রয়ােজন। বাক্য সংহতির অন্য নাম একপদে পরিণতকরণ। কতকগুলি উপায়ে বাক্যাংশের বা পদ-সমষ্টির সংকোচন সম্ভব। সেই উপায়গুলি হল-
১। কৃৎ-প্রত্যয় যােগে।
২। তদ্ধিত প্রত্যয় যােগে।
৩। সমাস-প্রয়ােগে।এবং
৪। সম্পূর্ণ ভিন্ন শব্দের প্রয়ােগে।
১। কৃৎ-প্রত্যয় যোগে – অনুসন্ধান করিবার ইচ্ছা = অনুসন্ধিৎসা।
অনুকরণ করিবার ইচ্ছা = অনুচিকীর্ষা।উপকার করিবার ইচ্ছা = উপচিকীর্ষা।লাভ করিবার ইচ্ছা = লিপ্সা।গমনের ইচ্ছা = জিগমিষা। জয় করিবার ইচ্ছা = জিগীষা।জানিবার ইচ্ছা = জিজ্ঞাসা।
শুনিবার ইচ্ছা = শুশ্রুষা।মুক্তির বাসনা = মুমুক্ষা।মরিবার ইচ্ছা = মুমূর্ষা।যাহার মৃত্যু নিকটবর্তী = মুমূর্ষ।খাইবার ইচ্ছা = বুভুক্ষা।
ক্ষমা করিবার ইচ্ছা = তিতিক্ষা।দেখিবার ইচ্ছা = দিদৃক্ষা।
পার হইতে বা ত্রাণ লাভ করিতে অভিলাষী = তিতীর্ষ।
হনন [হত্যা বা বধ] করিবার ইচ্ছা = জিঘাংসা।যে শুইয়া আছে = শয়ান।যাহা আসিবে = আগামী।যাহা লঙঘন করা যায় না = অলঙঘ্য।
যাহা অতিক্রম করা যায় না = অনতিক্রম্য।যাহা সহ্য করা যায় না = অসহ্য।যাহা বাক্যে প্রকাশ করা যায় না = অনির্বচনীয়।
যাহা আরােহণ করিতে কষ্ট হয় = দুরারােহ।যেখানে অবগাহন করা দুঃসাধ্য = দুরবগাহ।যাহাকে সহজে দমন করা যায় না = দুর্দমনীয়।
যে কষ্ট সহিতে পারে = কষ্টসহিষ্ণু।যাহারা এক স্থান হইতে অন্যস্থানে যাতায়াত করে = যাযাবর।যে নিজেকে পণ্ডিত মনে করে = পণ্ডিতন্মন্য। যে নারী সূর্যকে দেখে নাই = অসূর্যম্পশ্যা।
যিনি বহু দেখিয়াছেন = বহুদর্শী, ভুয়ােদর্শী।
২। তদ্ধিত প্রত্যয় যােগে – ঈশ্বরের অস্তিত্বে যে বিশ্বাস করে = আস্তিক।ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না যে = নাস্তিক।
মনুর পুত্র = মানব।দনুর পুত্র = দানব।অদিতির পুত্র = আদিত্য। পৃথুর পুত্র = পার্থ।ভৃগুর পুত্র = ভাৰ্গব।কুন্তীর পুত্র = কৌন্তেয়।জনকের কন্যা = জানকী।ব্যাকরণ জানেন যিনি = বৈয়াকরণ।বিজ্ঞান জানেন যিনি = বৈজ্ঞানিক।ইতিহাস জানেন যিনি = ঐতিহাসিক।
স্মৃতি জানেন যিনি = স্মার্ত।বুদ্ধের উপাসনা করেন যিনি = বৌদ্ধ। বিষ্ণুর উপাসনা করেন যিনি = বৈষ্ণব।শক্তির উপাসনা করেন যিনি = শাক্ত।বার মাসের কাহিনী = বারমাস্যা।যাহাতে মজা আছে = মজাদার। যাহার স্থান হইতে স্থানান্তরে ভ্রমণ করে = যাযাবর।সাধুর ভাব = সাধতা।
৩। সমাস-প্রয়ােগে – যিনি পণ্ডিত হইয়াও মুখ = পণ্ডিতমূখ।গাে-র ন্যায় বেচারী = গােবেচারী।শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।বীর যে শিশু = শিশুবীর।শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী।পা হইতে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক। জীবন পর্যন্ত = আজীবন।দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ। ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ।কূলের বিরুদ্ধে = প্রতিকূল।জন্ম হইতে অন্ধ = জন্মান্ধ।পুত্র নাই যাহার = অপুত্রক।পত্নী মৃত হইয়াছে যাহার = বিপত্মীক।পত্নীর সহিত বর্তমান = সপত্নীক।একই গুরুর শিষ্য = সতীর্থ।কানে কানে যে মন্ত্রণা = কানাকানি।যাহার সর্বস্ব হৃত হইয়াছে = হৃতসর্বস্ব।কৃষি মাতা যে দেশের = কৃষিমাতৃক।দুইদিকে অপ [জল] যাহার = দ্বীপ।যে স্ত্রীর ভর্তা [স্বামী] বিদেশে আছেন = প্রােষিতভর্তৃকা।
যাহার মন অন্য দিকে নাই = অনন্যমনা।যাহার দাড়ি জন্মায় নাই = অজাতশ্মশ্ৰু।সুগন্ধ আছে যাহার = সুগন্ধি।স্বামী নাই যাহার = বিধবা।
যাহার মমতা নাই = নির্মম।সমুদ্র হইতে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্র- হিমাচল।সাগর সমেত পৃথিবী = সসাগরা-পৃথিবী।যাহার পরিমাণ করা যায় না = অপরিমেয়।যাহার উপায় নাই = নিরুপায় । যাহার অন্য উপায় নাই = অনন্যো পায়।যাহার ভাতের অভাব আছে = হাভাতে।
৪। সম্পূর্ণ ভিন্ন শব্দের প্রয়ােগে – পুরুষের উদ্দাম নৃত্য = তাণ্ডব।
হস্তীর চীৎকার = বৃংহণ, বৃংহিত।অশ্বের চীৎকার = হ্ৰেষা।ভূষণাদির শব্দ = শিঞ্জন, টুংকার।নূপুরের শব্দ = নিক্কণ ।পাখীর কলরব = কাকলি, কূজন।ময়ূরের ডাক = কেকা।কোকিলের ডাক = কুহু।ভ্রমরের শব্দ = গুঞ্জন।
বাক্যের উক্তি-পরিবর্তন
একজন বলে, আর একজন শােনে। এই বক্তা এবং শ্রোতাকে লইয়া কথার কারবার। বক্তা যখন অন্যের কথা শ্রোতার কাছে বিবৃত করে, তখন সে দুইভাবে এরকম করতে পারে- এক নিজের জবানিতে এবং দুই অন্যে যেভাবে বলেছে, হুবহু ঠিক সেইভাবে- সেই অন্যের জবানিতে। এই ব্যাপারটাকে উক্তি বলা হয়।
উক্তি [Narration] – বক্তার বাক্যটিকে অবিকৃতভাবে উদ্ধৃত করা বা প্রকাশকের নিজের কথায় রূপান্তরিত করে বলাকে ব্যাকরণে উক্তি বলে।
বক্তা শ্রোতার সম্মুখে তার বক্তব্য দুই প্রকারের উপস্থাপিত করতে পারেন,- নিজস্ব উক্তিতে অথবা অপরের উক্তিতে। কাজেই, উক্তি দুই প্রকার ও প্রত্যক্ষ উক্তি এবং পরােক্ষ উক্তি।
১। প্রত্যক্ষ উক্তি |Direct Narration] – বক্তা যদি অন্য কোন বক্তার উক্তি অপরিবর্তিতভাবে হুবহু শ্রোতার সম্মুখে উপস্থাপিত করেন, তবে তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলা হয়। যেমন, আলেকজাণ্ডার পুরুকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি আমার নিকট কিরূপ ব্যবহার প্রত্যাশা করেন ?”
২। পরােক্ষ উক্তি [Indirect Narration] – বক্তা অন্য কোন বক্তার উক্তিকে নিজের মতাে করে অর্থাৎ নিজের উক্তিতে প্রকাশ করলে তাকে পরােক্ষ উক্তি বলা হয়। যেমন- আলেকজাণ্ডার পুরুকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে তিনি তাহার নিকট কিরূপ ব্যবহার প্রত্যাশা করেন।
প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরােক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করার নিয়ম – এক প্রত্যক্ষ উক্তিতে যে উদ্ধৃত চিহ্ন বা ড্যাস-চিহ্ন থাকে, তা উঠিয়ে পরােক্ষ উক্তিতে তার স্থানে যে এই সংযােজক অব্যয় বসাতে হয়।
দুই প্রত্যক্ষ উক্তিতে যে পুরুষের ক্রিয়া থাকে, পরােক্ষ উক্তিতে তা উক্তিটির ভাব- অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।তিন সাধারণত- উত্তম ও মধ্য পুরুষের স্থানে প্রথম পুরুষ হয়। ক্ষেত্র-বিশেষে ভাবপ্রকাশের সহায়ক নুতন শব্দও ব্যবহার করতে হয়।চার ইংরেজিতে যেমন প্রত্যক্ষ উক্তির প্রধান ক্রিয়াটির কাল-অনুযায়ী পরােক্ষ উক্তিতে ক্রিয়ার কাল পরিবর্তিত হয়, বাংলায় তেমন হয় না।পাঁচ প্রত্যক্ষ উক্তির সর্বনাম পদকে পরােক্ষ উক্তিতে ভাব-অনুযায়ী পরিবর্তিত করতে হয়।
ছয় প্রত্যক্ষ উক্তিতে সম্বােধন পদ থাকলে পরােক্ষ উক্তিতে উহা কর্মকারকে রূপান্তরিত হয়।
সাত প্রত্যক্ষ উক্তিতে অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া থাকলে উহা পরােক্ষ উক্তিতে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত হয়।আট প্রত্যক্ষ উক্তিতে বিস্ময়বােধক বাক্য থাকলে পরােক্ষ উক্তিতে উহা ভাবানুযায়ী শব্দের প্রয়ােগে রূপান্তরিত করতে হয়।নয় প্রত্যক্ষ উক্তিতে মূল ক্রিয়া যদি সাধু ভাষায় হয়, তবে পরােক্ষ উক্তিতে সম্পূর্ণ বাক্যই সাধুভাষায় হবে ; আর মূল ক্রিয়া চলিত ভাষায় হলে পরােক্ষ উক্তিতে সম্পূর্ণ বাক্যই চলিত ভাষায় হবে।
দশ প্রত্যক্ষ উক্তিতে অদ্য, এখন, এখানে, আগামীকল্য, গতকল্য, ইতিমধ্যে ইত্যাদি শব্দ থাকলে তা পরােক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত আকারে যথাক্রমে সেইদিন, তখন, সেখানে বা সেইখানে, পরদিন, পূর্বদিন, তৎপূর্বে ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
উক্তি-পরিবর্তন
এক প্রত্যক্ষ উক্তি – ঠাকুরদাস যেরূপ ব্যগ্র হইয়া, মুড়কিগুলি খাইলেন, তাহা এক দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিয়া, ঐ স্ত্রীলােক জিজ্ঞাসা করিলেন, বাপঠাকুর, আজ বুঝি তােমার খাওয়া হয় নাই? তিনি বলিলেন, না, মা, আজ আমি, এখন পর্যন্ত, কিছুই খাই নাই। তখন, সেই স্ত্রীলােক ঠাকুরদাসকে বলিলেন, বাপাঠাকুর, জল খাইও না, একটু অপেক্ষা কর।
পরােক্ষ উক্তি – ঠাকুরদাস যেরূপ ব্যগ্র হইয়া, মুড়কিগুলি খাইলেন, তাহা এক দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিয়া ঐ স্ত্রীলােক তাহাকে সস্নেহে জিজ্ঞাসা করিলেন যে সেদিন তাহার খাওয়া হইয়াছে কিনা। তিনি [ঠাকুরদাস] সসম্ভ্রমে তাহাকে জানাইলেন যে সেদিন তখন পর্যন্ত তিনি কিছুই খান নাই। তখন সেই স্ত্রীলােক সস্নেহে ঠাকুরদাসকে জল না খাইতে এবং একটু অপেক্ষা করিতে অনুরােধ করিলেন।
দুই প্রত্যক্ষ উক্তি – বারেক কথাবার্তা স্থগিত রাখিয়া বৃদ্ধ নাবিকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাঝি, আজ কতদূর যেতে পারবি ?”
মাঝি কিছু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, “বলিতে পারিলাম না।” বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ হইয়া মাঝিকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। যুবক কহিলেন, “মহাশয়, যাহা জগদীশ্বরের হাত, তাহা পণ্ডিতে বলিতে পারে না- ও মূৰ্খ কি প্রকারে বলিবে ? আপনি ব্যস্ত হইবেন না।”
বৃদ্ধ উগ্রভাবে কহিলেন, “ব্যস্ত হব না? বল কি, বেটারা বিশ পঁচিশ বিঘার ধান কাটিয়া লইয়া গেল, ছেলেপিলে সম্বৎসর খাবে কি?”
পরােক্ষ উক্তি- বারেক কথাবার্তা স্থগিত রাখিয়া বৃদ্ধ নাবিকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তাহারা সেদিন কতদূর যাইতে পারিবে। মাঝি কিছু ইতস্ততঃ করিয়া তাহা বলিতে পারার অক্ষমতার কথা তাহাকে জানাইল। বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ হইয়া মাঝিকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। যুবক সবিনয়ে তাঁহাকে জানাইলেন যে, যাহা জগদীশ্বরের হাত, তাহা পণ্ডিতে বলিতে পারে না- মূৰ্খ সে [মাঝি] তাহা বলিতে অক্ষম। তিনি [যুবক ] তাহাকে [বৃদ্ধকে] ব্যস্ত না হইতে অনুরােধ করিলেন। বৃদ্ধ উগ্রভাবে কহিলেন যে, তাহার ব্যক্ত হওয়া যুক্তিসঙ্গত। বেটারা বিশ-পঁচিশ বিঘা জমির ধান কাটিয়া লইয়া গিয়াছে। ছেলেপিলে সম্বৎসর কি খাইবে তাহা জিজ্ঞাসা করিলেন।
তিন প্রত্যক্ষ উক্তি – পাগলের মতাে হইয়া তাহার কাছে গিয়া উপস্থিত। বলিল, “আমার স্ত্রীর এই অবস্থা, আমার মেয়ের এই অবস্থা, আমায় রক্ষা করাে।”
মাঝি বলিল, “মশাই, আমি এই ঢেউ থামাইয়া দিতে পারি কিন্তু, তাহাতে আপনার সাত-আট লক্ষ টাকা ক্ষতি হইবে। সহিতে পারিবেন তত বলুন।”
বিহারী বলিল, “আমার যথাসর্বস্ব যায় সেও আচ্ছা, আমার স্ত্রী ও কন্যা যেন প্রাণ পায় ও সুস্থ হয়।
“আচ্ছা, তবে আপনি ঘরে যান, আমি যাহা জানি করিয়া ফেলি।”
পরােক্ষ উক্তি – তখন বিহারী পাগলের মতাে হইয়া তাহার (মাঝির) কাছে গিয়া উপস্থিত হইয়া তাহার স্ত্রীর সেই অবস্থার কথা ও তাহার মেয়ের সেই অবস্থার কথা জানাইয়া তাহাকে রক্ষা করিতে অনুরােধ করিল। মাঝি সবিনয়ে বলিল যে সে সেই ঢেউ থামাইয়া দিতে পারে- কিন্তু তাহাতে তাহার (বিহারীর) সাত-আট লক্ষ টাকা ক্ষতি হইতে পারে। তাহা সে সহিতে পারিবে কিনা জানাইতে বলিল। বিহারী বলিল, যে, তাহার যথাসর্বস্ব যায় সেও আচ্ছা, কিন্তু তাহার স্ত্রী ও কন্যা যেন প্রাণ পায় ও সুস্থ হয়।
মাঝি আশ্বাস দিয়া তাহাকে ঘরে যাইতে অনুরােধ করিয়া সে যাহা জানে, তাহাbকরিয়া ফেলিবে বলিল।
চার প্রত্যক্ষ উক্তি – কারখানার লােকেরা বললে, “আজ কিছু করা অসম্ভব কাল চেষ্টা দেখা যাবে। আমরা জিজ্ঞাসা করলুম, রাত্রে আশ্রয় কোথায় ? তারা বলল, ‘ডাক বাংলায়।’
পরােক্ষ উক্তি – কারখানার লােকেরা আমাদের জানালে যে, সেদিন কিছু করা অসম্ভব। পরের দিন চেষ্টা দেখবে তারা বললে। আমরা রাত্রে কোথায় থাকবো তাদের জিজ্ঞাসা করলুম। তারা আমাদের ডাক বাংলায় থাকতে বললে।
পাঁচ প্রত্যক্ষ উক্তি – একদিন সতীশ এসে বললেন, যদি আমাকে গ্রহণ করেন আমি যােগ দিতে চাই আপনার কাজে। আমি বললুম, পরীক্ষা দিয়ে পরে চিন্তা। করাে। সতীশ বললেন, দেব না পরীক্ষা।
পরােক্ষ উক্তি – একদিন সতীশ এসে আমাকে বললেন, যে যদি আমি তাকে গ্রহণ করি [তাহলে] তিনি আমার কাজে যােগ দিতে চান। আমি তাকে পরীক্ষা দিয়ে পরে চিন্তা করতে বললুম। সতীশ আমাকে বললেন, যে তিনি পরীক্ষা দেবেন না।
ভাবসম্প্রসারণ
১
বসুমতি, কেন তুমি এতই কৃপণা
কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা
দিতে যদি হয়, দে মা প্রসঃ ‘সহাস-
কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস।
বিনা চাষে শস্য দিলে কী তাহাতে ক্ষতি ?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতী।
আমার গৌরব তাহে সামান্যই বাড়ে,
তােমার গৌরব তাহে নিতাই ছাড়ে।
প্রয়াসে ও বিনা শ্রমে ফসল পেতে চায় মানুষ। এ ‘ফসল’ অবশ্য সব অর্থেই সত্য। কাজ না করেই মাইনে পাওয়ার মতন। একজন কষকের রূপক কাহিনির মাধ্যমে কবি এই অমােঘ সত্যটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বসুমতী জোগান দেয় আমাদের খাদ্যের। কৃষক উৎপাদন করেন এই খাদ্য কৃষি-কর্মের মাধ্যমে। তাকে ভূমিকৰ্ষণ করতে হয়। করতে হয় অনেক খোঁড়াখুঁড়ি। যদিচ বসুমতী শস্যাদায়িনী, কিন্তু হাতে তুলে এ শস্য তিনি দেন না। অনেক ঘাম ঝরিয়ে কৃষককে এ শস্য আদায় করতে হয়। করতে হয় অনেক পরিশ্রম। শস্যকণার জন্য এই শ্রম করতে কৃষক প্রস্তুত, কিন্তু তারও অভিযােগ আছে। এ অভিযােগ স্বয়ং বসুমতীর কাছেই। কৃষক তার এই ফরিয়াদে বলেছে—মাতা বসুমতী, তুমি এত কৃপণা কেন ? চাষ করে শস্য পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সুতরাং বিনা চাষে শস্য দেওয়ার মতন ঔদার্য তােমার নেই কেন?
এবং এভাবে তা যদি দাও, তাতে তােমার ক্ষতি কী ? কৃষকদের এই জিজ্ঞাসার বা অভিযােগের বিষয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছেন বসুমতী। শ্রমবিমুখকে ফসল দিতে বসুমতীর আপত্তি নেই এবং এ বিষয়ে অকৃপণ হওয়াতেও তার গৌরব তেমন বাড়ে না। কিন্তু শ্রমবিমুখ কৃষকের পক্ষে সেটি কি গৌরবের হয়? শ্রমের ঘাম ঝরিয়ে যা পাওয়া যায়, তার নাম ‘অর্জন’। এই অর্জন করবার ভেতর আছে গৌরব। বিনা শ্রমে কিছু রােজগার করা মানে ‘অগৌরব। অনর্জিত ফসলদান দাতার পক্ষেও নিতান্ত অগৌরবের নিন্দার। -বসুমতীর ওই অগৌরবের কাজেই আপত্তি।
২
প্রাচীরের ছিদ্রে এক নামগােত্রহীন
ফুটিয়াছে ছােটো ফুল অতিশয় দীন।
ধিক্ ধিক্ করে তারে কাননে, সবাই,
সূর্য উঠি বলে তারে, ভালাে আছ, ভাই ?
ক্ষুদ্রের গৌরব স্বীকার করার মতাে মানসিকতা খুব অল্প লােকেরই থাকে। উদার হৃদয় মহৎ ব্যক্তি না হলে ক্ষুদ্র মানুষের গৌরব স্বীকার করতে পারে না। একটি কাননের রূপকের মাধ্যমে এই মহৎ সত্যটিকে কবি এই কবিতার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। এখানে বর্ণিত দৃশ্যপটে রয়েছে প্রাচীর ঘেরা একটি কানন । কানন যখন, তখন এখানে রয়েছে প্রচুর গাছপালা। রয়েছে নানান ধরনের ফুল। প্রাচীরের গায়েও রয়েছে নানা আগাছা এবং তাদের ছােটো ছােটো ফুল। এইরকম একটি পরিবেশে হঠাৎ ছােট্ট একটি ফুল ফুটল প্রাচীরের ছিদ্রে। ফুলটি ছােটো, কিন্তু সুন্দর। তবে সুন্দর হলে কী হবে, এর তেমন রাজসিক নামডাক নেই। বরং তাকে নামগােত্রহীন বলাই চলে। এই দীনহীন ছােট ফুলটিকে, নামগােত্রহীন এবং ক্ষুদ্রতার জন্য কাননের সকলেই ধিকৃত করছে। সকলেই করছে ছি-ছি। সে যে একটি ফুল, সেটুকু স্বীকৃতিও সে পাচ্ছে না। প্রাচীরের ছিদ্রে ফুটেছে বলে সে পাচ্ছে শুধু সকলের অবজ্ঞা। এইরকম যখন অবস্থা, ঠিক সেই সময় সূর্য উঠল। সূর্যের আলাে এই ফুলটির ওপরও পড়ল এবং তাকে ভ্রাতৃ সম্বােধনে সূর্য কুশল জিজ্ঞাসা করল, ভালাে আছ ভাই? মহৎ ব্যক্তিরা এইভাবেই সকলকে গ্রহণ করেন- ক্ষুদ্রের গৌরবকেও তারা সাদরে স্বীকৃতি দেন। অবজ্ঞা করেন না। -মহৎ ব্যক্তি কেন যে মহৎ, এই ধরনের আচরণেই ধরা পড়ে।
৩
রাজছত্র ভেঙে পড়ে ; রণডঙ্কা শব্দ নাহি তােলে ;
জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভােলে ;
রক্ত মাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত আঁখি
শিশু পাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি
ওরা কাজ করে
দেশে দেশান্তরে,
অঙ্গবঙ্গকলিঙ্গের সমুদ্র নদীর ঘাটে ঘাটে
পঞ্জাবে বােম্বাই গুজরাটে ।
ইতিহাসের পথ বা কালের গতির কেউই নিয়ামক নয়। কালের গতি অমােঘ। যা অনিবার্য, তা হবেই। অতীত হারিয়ে যাবে, আর বর্তমান হবে তার অনুচর। এর ভেতর দিয়েই ইতিহাস তার পথ করে নেয়। এই গতির ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। কেবল শ্রমজীবী মানুষদের কাজ করে যাওয়াটাই ইতিহাস ধরে রাখে তার স্মৃতির সূত্রে, আর কিছু না। বিষয়টিকে একটু গােলমেলে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কবি র দেওয়া উদাহরণগুলির সাহায্যে সব গােল কাটিয়ে দিয়েছেন। ইতিহাসের যারা দুর্জয় ও অপ্রতিহত সম্রাট, তারা রক্তের নদী বহিয়ে দিয়েছেন রাজ্য জয় করার সময়। তাদের রণডঙ্কার শব্দে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত হিম হয়ে গিয়েছে। এই সব দিগ্বিজয়ী সম্রাট ও বাদশাহের রাজছত্র ছিল তাদের শৌর্যের সুকঠিন ভিত্তিতে প্রােথিত। এ স্বৈরাচারী সম্রাটও ভেবেছিলেন যে তারা কালের নিয়ামক এবং তাদের শক্তি অমােঘ। তারা তাদের জয়ের কথা পাকা করে ধরে রাখতে তৈরি করেছিলেন, জয়স্তম্ভ। ভেবেছিলেন স্তম্ভই হবে ইতিহাস, স্মারক, কিন্তু কালের প্রবাহে সবই হারিয়ে গেল। ভেঙে পড়ল রাজছত্র, রণডঙ্কা আর শব্দ রণিত করতে পারে না। যে বাণী কাল থেকে কালান্তরে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য রচিত হয়েছিল জয়স্তম্ভ, বেচারি সেই স্মারক-স্তম্ভ আজ মূঢ়ের মতন হারিয়ে ফেলেছে তার প্রভুর বাণী। আর রক্তমাখা অস্ত্র, চোখরাঙানি সবই এখন ইতিহাসের পরিবর্তে ঠাই পেয়েছে শিশুপাঠ্য কাহিনীতে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষেরা আজও টিকে আছেন। দেশ-দেশান্তরের রাজা-বাদশারা হারিয়ে গেছেন কিন্তু সেদিন যাঁরা কাজ করছিলেন, আজও তারা কাজ করে চলেছেন। কেউ রয়েছেন ‘অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গের’ বন্দরে বন্দরে, কেউ রয়েছেন পঞ্জাব-বােম্বাই-গুজরাটে। -ইতিহাসে এঁরাই চিরায়ত। এরাই অমর।
8
দণ্ডিতের সাথে।
দণ্ড দা কাদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
অভিযােগ যার বিরুদ্ধে, সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির তাপরাধ যথাযথ খতিয়ে দেখার নাম, ‘বিচার। তবে বিচার কিন্তু এখানেই শেষ হয় না। যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন সেই অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করাও হল বিচারকের আর-এক কাজ। দণ্ডদানেই বিচারের নিষ্পত্তি। দণ্ডিতকে দণ্ড দেওয়া দণ্ডদাতার অবশ্য কর্তব্য। ন্যায়ধর্মের জন্য তাকে এ কাজ করতে হয়। কিন্তু ন্যায়ধর্মের সঙ্গে আরেকটি ধর্ম দণ্ডদাতার কাছে থাকা দরকার, তা হল মানবিক ধর্ম। ন্যায়ের খাতিরে দণ্ডিতকে দণ্ড দিতেই হয়। কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না, যাকে দণ্ডিত করা হয়েছে, সেও একজন মানুষ। হয়তাে সে সাময়িক উত্তেজনার বশে, কিংবা গভীরতর বিভ্রমে পড়ে এমন অপরাধ করে বসেছে, যা গুরুতর শাস্তিযােগ্য। হয়তাে কারাবাস তার অনিবার্য। নিকটতম আত্মীয় এবং একান্ত প্রিয়জনদের ছেড়ে নির্জন কারাবাসে তাকে কাটাতে হতে পারে বছরের পর বছর। এ ব্যবস্থা তার কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। আরও গুরুতর অপরাধে ‘প্রাণদণ্ড’ হলে তাে কথাই নেই। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখােমুখি হতে হবে তাকে ন্যায়ধর্মের বিধানে। দণ্ডদাতা বিচারক জানেন যে, তার এই বিধান কী নির্মমভাবেই না দেখা দিতে পারে দণ্ডিতের জীবনে। শাস্তি হিসাবে যে আঘাত দণ্ডিতকে দেওয়া হয়, এ আঘাতের নির্মমতা দণ্ডদাতা বিচারক অনেক সময়েই চেষ্টা করেন উপলব্ধি করতে। দণ্ডদাতা বােঝাবার চেষ্টা করেন যে ওই রকম আঘাত পেলে তিনি কেমন ও কতখানি বিচলিত হতেন। কী ভয়ংকরভাবে লাগত ওই আঘাত। এ ভাবনায় ওই দণ্ডদাতা সমান আঘাত পান দণ্ডিতের মতনই। হৃদয় কাঁদে। তবু ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে এ কাজ করতেই হয়। বলা বাহুল্য এ ধরনের বিচারই শ্রেষ্ঠ বিচার। আর এইভাবে বিচার যিনি করেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। বিচারকের এ ধরনের বােধ যদি না থাকে, তার বিচার কখনও যথার্থ হতে পারে না, শ্রেষ্ঠ হওয়া আরও দূরের কথা।
৫
কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন, কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ?
কিছু পেতে গেলে তার জন্য কিছু শ্রম খরচ করা দরকার। তার ভালাে জিনিস পেতে হলে, দরকার হয় একটু বেশি শ্রমের। অনায়াসে যা পাওয়া যায়, তাকে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ‘সুলভ’ বলেই অভিহিত করেছেন। সুলভে’কি কারও মন ওঠে? যে দুর্লভ জিনিসটির উপমা কবি এখানে উপস্থাপিত করেছেন, তা হল, ‘কমল’। -ফুলের দেশের রানি হল এই পদ্ম। সুন্দর তার গন্ধ, সুন্দর তার রং এবং আকৃতিও কিন্তু এই কমল সহজপ্রাপ্য নয়। তার গায়ে রয়েছে কাটা। তাকে পেতে হলে কাটার বাধা অতিক্রম করা দরকার। চয়নকারীকে খেতে হবে কাটার খোঁচাও। এ খোচায় হাত ক্ষতবিক্ষত হওয়াও কিছু বিচিত্র নয়। যিনি এই দুঃখটুকু বরণ করতে প্রস্তুত, তিনি অবশ্যই কমল পেতে পারেন। এই পৃথিবীতে সুখের আনন্দটুকু ঠিক এইরকম বাধার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়। জীবনের একটি পর্যায় দুঃখের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে স্বীকৃত হলে, তবেই নিশ্চিত সুখের ঠিকানায় পৌঁছানাে যায়। যিনি কোনাে পর্যায়েই দুঃখের ক্লেশ সহ্য করতে রাজি নন, তার পক্ষে দুর্লভ সুখের দেখা পাওয়া শক্ত। দুঃখ ও সাধনা এখানে সমার্থক। সাধনা না থাকলে যেমন সিদ্ধি মেলে না, এই সুখও ঠিক তেমনি। সিদ্ধির আর-এক নাম সুখ এবং তা হল শ্রমের ফসল। এই সুখকে অর্জন করতে হলে সাধনা করতে হবে। ঝরাতে হবে ঘাম। কাটায় হাত করতে হবে ক্ষতবিক্ষত। স্বীকার করতে হবে দুঃখ।–এগুলি সাধিত করলেই পাওয়া যাবে কমল। ক্ষান্তি দিলে তা চিরন্তন দুর্লভ বস্তু হয়েই থাকবে।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.