SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম 

Join Roy Library Telegram Groups

Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Notes in Bengali PDF Download. SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.

SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম

Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামন Suggestions in Bengali. SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Notes in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম 

প্রথম খণ্ড ইতিহাস

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর 

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও: 

প্রশ্ন ১। মহাত্মা গান্ধির জন্ম কবে হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর । 

প্রশ্ন ২। সত্যাগ্রহের কৌশল গান্ধি কোন দেশে সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেছিলেন ? 

উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকায় । 

প্রশ্ন ৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ‘ নাইট ’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন ? 

উত্তরঃ জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে । 

প্রশ্ন ৪। কার কার নেতৃত্বে ভারতে খিলাফৎ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ মৌলানা সৌকত আলি ও মহম্মদ আলির নেতৃত্বে । 

প্রশ্ন ৫। চৌরিচৌরার ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯২২ সালের ৫ ই ফ্রেব্রুয়ারী । 

প্রশ্ন ৬। কেমন পরিস্থিতিতে লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হয়েছিল ? 

উত্তরঃ সাইমন বিরোধী মিছিলে পুলিশের লাঠির আঘাতে । 

প্রশ্ন ৭। কখন এবং কোন অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতবাসীদের মূল দাবি হিসাবে পূর্ণ স্বরাজের দাবি উত্থাপন করেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশনে ।

প্রশ্ন ৮। গান্ধিজি সবরমতী আশ্রম থেকে দাণ্ডির সাগর পার অবধি লবণ আইন ভঙ্গ করতে গিয়েছিলেন । সবরমতী আশ্রম এবং দাণ্ডির মধ্যে দূরত্ব কতদূর ?  

উত্তরঃ ৩৮৫ কিঃ মিঃ ।

প্রশ্ন ৯। সীমান্ত গান্ধি নামে পরিচিত কে ? 

উত্তরঃ খান আবদুল গফর খান । 

প্রশ্ন ১০। লণ্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কে কংগ্রেসকে এককভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ? 

উত্তরঃ গান্ধিজি । 

প্রশ্ন ১১। ১৯৩২ সালে সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা ঘোষণাকারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নাম কী ? 

উত্তরঃ রামসে ম্যাকডনাল্ড । 

প্রশ্ন ১২। কোন আন্দোলনের সময় গান্ধিজি “ করব কিংবা মরব ” শ্লোগান দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ ভারত ত্যাগ আন্দোলনের সময় । 

প্রশ্ন ১৩। আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

উত্তরঃ কেপ্টেন মোহন সিং । 

প্রশ্ন ১৪। “ আমাকে রক্ত দাও , আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিব ” এই বিখ্যাত বাণীটি কোন ভারতীয় নেতার ? 

উত্তরঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর । 

প্রশ্ন ১৫। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যেকার সীমারেখাকে কী নামে জানা যায় ? 

উত্তরঃ রেডক্লিপ রেখা । 

Sl. No.সূচিপত্র
প্রথম খণ্ড: ইতিহাস
অধ্যায়-১বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫–১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন
অধ্যায়-২মহাত্মা গান্ধি এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম
অধ্যায়-৩অসমে ব্রিটিশ বিরোধী জাগরণ এবং কৃষক বিদ্রোহ
অধ্যায়-৪স্বাধীনতা আন্দোলন এবং অসমে জাতীয় জাগরণ
অধ্যায়-৫ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
দ্বিতীয় খণ্ড: ভূগোল
অধ্যায়-১অর্থনৈতিক ভূগোল: বিষয়বস্তু এবং সম্পদ
অধ্যায়-২পরিবেশ ও পরিবেশের সমস্যা
অধ্যায়-৩পৃথিবীর ভূগোল
অধ্যায়-৪অসমের ভূগোল
তৃতীয় খণ্ড: রাজনীতি বিজ্ঞান
অধ্যায়-১ভারতীয় গণতন্ত্র
অধ্যায়-২আন্তর্জাতিক সংস্থা ― রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য
অর্থনীতি বিজ্ঞান
অধ্যায়-১মুদ্রা এবং ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা
অধ্যায়-২অর্থনৈতিক উন্নয়ন

দীর্ঘ উত্তর লেখো: 

প্রশ্ন ১। সত্যাগ্রহ বলতে কী বোঝ ? যে তিনটি স্থানীয় বিবাদের ক্ষেত্রে গান্ধি সত্যাগ্রহকে প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন সেই তিনটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত লেখো । 

উত্তরঃ সত্যাগ্রহ :-  ‘ সত্যাগ্রহ ’ একটি সন্ধিযুক্ত শব্দ । এটি ‘ সত্য ’ এবং ‘ আগ্রহ ’ এই দুটি শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । সত্যাগ্রহের অর্থ হল “ সত্যের প্রতি আগ্রহ ” অর্থাৎ সত্যান্বেষী হয়ে কাজ করা । গান্ধিজির মতে , সত্যাগ্রহ শুধুমাত্র একপক্ষীয় প্রতিরোধ নয় । এর তাৎপর্য হল — জনগণ গভীর ও একনিষ্ঠভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপে আত্মনিয়োগ করা । অহিংসা হল সত্যাগ্রহের ভিত্তি । গান্ধিজি সত্যাগ্রহের ধারণাটি গ্রহণ করতে লিও টলস্টয় ও থরোর রচনার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন । 

স্থানীয় বিবাদের ক্ষেত্রে সত্যাগ্রহ প্রয়োগ :- গান্ধিজি সর্বপ্রথম তিনটি স্থানীয় বিবাদের ক্ষেত্রে সত্যাগ্রহ প্রয়োগ করেছিলেন । এগুলি হল— 

( ক ) ১৯১৭-১৮ সনে উত্তর বিহারের চম্পারণ । 

( খ ) গুজরাটের খেড়া ।

( গ ) আহমেদাবাদে সংঘটিত বিবাদ । 

( ক ) চম্পারণ :- ১৯১৭-১৮ সনে গান্ধিজি উত্তর বিহারের চম্পারণে ভূস্বামীগণের বি বিপক্ষে সাধারণ কৃষকদের নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন । গান্ধিজি এতে অহিংস সত্যাগ্রহ নীতি প্রয়োগ করেন । এটি চম্পারণ সত্যাগ্রহ নামে খ্যাত । 

( খ ) গুজরাট :- গুজরাটে খেড়া অঞ্চলে কৃষকদের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার পরও সরকার অধিক মাত্রায় কর আরোপ করেন । গান্ধিজি এর বিরুদ্ধে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন । কৃষকদের স্বার্থরক্ষার্থে তিনি সোচ্চার হন । 

( গ ) আহমেদাবাদ :- গুজরাটের কৃষকদের স্বরাজ ও স্ব – শাসন লাভের শর্তে গান্ধিজি সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করতে উৎসাহিত করেছিলেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে আহমেদাবাদের উদ্যোগপতিদের লোকসানের ফলে বহু উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকগণ কর্মহীন হয়ে পড়ে । এছাড হয়ে পড়ে । এছাড়াও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দরিদ্রতা সাধারণ মানুষকে জর্জরিত করে । এর ফলে গান্ধিজির মোহভঙ্গ হয় । তিনি অহিংস সত্যাগ্রহের পথ অবলম্বন করে কৃষক , উদ্যোগপতি ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান । 

প্রশ্ন ২। ভারতে খিলাফৎ আন্দোলন কেন আরম্ভ হয়েছিল ? 

উত্তরঃ রাওলাট সত্যাগ্রহ ব্যর্থ হলেও তা দুভাবে ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করে । 

( ১ ) রাওলাট – সত্যাগ্রহ গান্ধির জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তির গভীরতা প্রমাণ করে । এবং 

( ২ ) জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সাধারণ মানুষকে একমঞ্চে এনে , একলক্ষ্যে আন্দোলিত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় । খিলাফৎ আন্দোলনকে সামনে রেখে গান্ধিজি হিন্দু ও মুসলমান জনতাকে একই মঞ্চে এনে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন । 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল । সেজন্য যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে মিত্রপক্ষ তুরস্ক সাম্রাজ্যকে ভেঙে দেয় । তুর্কি সুলতান ‘ খলিফা ’ হিসেবে সমগ্র ইসলাম সমাজে সর্বোচ্চ ধর্মগুরুর মর্যাদা পেতেন । ফলে তুরস্ক সাম্রাজ্যের প্রতি অবমাননা বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়কে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে । এর প্রতিবাদে শুরু হয় খিলাফৎ আন্দোলন । ভারতের মুসলমান সমাজও সেই আন্দোলনের অংশীদার হন । মৌলানা আজাদ , হাকিম আজমল খাঁ এবং হসরৎ মোহানির নেতৃত্বে একটি ‘ খিলাফৎ কমিটি গঠিত হয় । গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনকে হিন্দু – মুসলমান ঐক্যের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন । 

গান্ধিজি মনে করেন যে , হিন্দু মুসলমান ঐক্যের এমন সুযোগ আগামী একশো বছরেও আর আসবে না । তিনি স্পষ্ট ভাষায় খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন জানান । ‘ ইয়ং – ইণ্ডিয়া ‘ পত্রিকায় তিনি লেখেন , “ মুসলমানকে যদি আমার ভাই বলে মনে করি , তাহলে তার বিপদ হলে এবং ন্যায় তার দিকে থাকলে , তাকে প্রাণপণে সাহায্য করাই আমার কর্তব্য । ” খিলাফৎ কমিটি গান্ধিজির বক্তব্যে অভিভূত হয় । সৌকত আলি , মহম্মদ আলি , মৌলানা আবুল কালাম আজাদ , আজমল খাঁ প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ গান্ধিজির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

মুসলমান নেতাদের যৌথ উদ্যোগে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ নিখিল ভারত খিলাফৎ সম্মেলন ‘ গঠিত হয় । নভেম্বর মাসে খিলাফৎ সম্মেলনের অধিবেশনে তাঁরা গান্ধিজিকে সভাপতি নির্বাচিত করেন । এই সম্মেলনেই স্থির হয় যে , সরকার খিলাফৎ সমস্যার দ্রুত মীমাংসা না করলে সরকারের প্রতি ‘ অসহযোগ ’ নীতি  অনুসরণ করা হবে । জুডিথ ব্রাউন – এর মতে , খিলাফৎ সম্মেলনেই গান্ধিজি প্রথম ‘ অসহযোগ ’ নীতির কথা চিন্তা করেন । 

৩। ১৯২০-২২ সালে গান্ধিজি কেন অসহযোগ আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন ? এর কার্যসূচি কী ছিল ? গান্ধিজি কেন এই আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নি । এছাড়া বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ফলে সারা দেশে খাদ্যাভাব , মহামারী ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের দুর্দশা বাড়তে থাকে । শাসন – সংস্কারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলনের আগুন আবার জ্বলে ওঠে । এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার শাসন – সংস্কার দূরে রেখে কঠোর দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে । কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রবর্তন এই দমননীতির অঙ্গবিশেষ । এই আইনে সম্মতি না দেওয়ার জন্য মহাত্মা গান্ধি লর্ড চেমস্‌ফোর্ডকে অনুরোধ করেন । কিন্তু এরই মধ্যে এই আইন বিধিবদ্ধ হয়েছে । 

রাওলাট আইন ছিল দমনমূলক । এই আইন অনুসারে বিনা বিচারে যে কোনো ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটক করে রাখা যেত । এই আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ হয় । হরতাল , শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ দ্বারা এর প্রতিবাদ জানানো হলেও সরকার দমনমূলক নীতি অব্যাহত রেখে পাঞ্জাবে সামরিক আইন বলবৎ করে । 

এই সামরিক আইন , দমন – নীতি প্রভৃতি অগ্রাহ্য করে ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় । অমৃতসর শহরের কাছাকাছি এই স্থানে সেদিন নিরস্ত্র প্রতিবাদীদের উপর ব্রিটিশ সরকারের সেনানায়ক ডায়ার গুলি চালনার নির্দেশ দিয়ে অনেক নর – নারী ও শিশুকে হত্যা করে । অনেক লোক আহতও হয় । 

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু হয় । এই বিক্ষোভের জন্য অনেক সত্যাগ্রহী বিভিন্ন রকমের শাস্তিও পেয়েছিলেন । অবশেষে ১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন । 

এরই মধ্যে বিশ্বযুদ্ধে তুর্কীদের উপর ইংরেজের অমানবীয় আচরণে ভারতের মুসলমানগণ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন । মহম্মদ আলি ও সৌকত আলি নামে দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে মুসলমানগণ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে খিলাফৎ আন্দোলন গড়ে তোলেন । গান্ধিজি কংগ্রেসের আন্দোলনের সঙ্গে খিলাফৎ আন্দোলন সংযুক্ত করতে সমর্থ হন । ১৯২০ সালে কলকাতা এবং ঐ বৎসরের শেষদিকে নাগপুর কংগ্রেস অধিবেশনে যৌথ আন্দোলনের নীতি গ্রহণ করা হয় । এই যৌথ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল— 

( ১ ) পাঞ্জাবে ব্রিটিশের অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিবাদ । 

( ২ ) তুর্কী সাম্রাজ্যের উপর ব্রিটিশের অবিচারের প্রতিবাদ ; এবং

( ৩ ) ভারত স্বরাজ গঠন । 

মহাত্মা গান্ধি এই অহিংস আন্দোলনের সূচনা করেন । অহিংস অসহযোগ এবং আইন অমান্য এই দুইটিই অহিংসার আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে গান্ধিজি আন্দোলনে এক নূতন যুগের সূচনা করেন । 

ব্রিটিশ সরকারকে অচল করে দেওয়ার জন্য আইনসভা , বিচারালয় , সরকারী চাকরি , স্কুল, কলেজ প্রভৃতি বর্জন করে অহিংস আন্দোলনে যোগদান করতে গান্ধিজি ভারতবাসীকে আহ্বান জানান হয় । জমির খাজনা ব্রিটিশ সরকারকে জমা না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। আফিং , ভাঙ , মদ , সিগারেট প্রভৃতি বিদেশী মাদকদ্রব্য বর্জন করতেও বলা হয় । চরকায় সূতা কাটা , খদ্দরের কাপড় পরা আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় । মহাত্মা গান্ধির প্রতি অসীম শ্রদ্ধার জন্য ভারতবাসী এইগুলি মেনে নিয়ে আন্দোলনে যোগদান করে । 

লালা লাজপত রায় , মতিলাল নেহরু , মহম্মদ আলি , সৌকত আলি , চিত্তরঞ্জন দাশ , জওহরলাল নেহরু , সুভাষচন্দ্র বসু , সরোজিনী নাইডু প্রমুখ দেশের প্রায় বেশিরভাগ নেতা এই আন্দোলনে যোগদান করেন । আসাম থেকে চন্দ্রকান্ত শর্মা , তরুণরাম ফুকন , নবীনচন্দ্র বরদলৈ প্রমুখ নেতারাও আন্দোলনে যোগদান করেন । 

অসহযোগ আন্দোলনকে দমন করার ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয় । ঠিক তখনই ব্রিটিশরাজ সিংহাসালের উত্তরাধিকারী প্রিন্স – অব – ওয়েলস ভারতে আসেন । সেইদিন দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ দেখানো হলে জনতার উপর নির্মম লাঠি চালানো হয় এবং ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় । মহাত্মা গান্ধি সহ অনেক নেতা কারারুদ্ধ হন । পুলিশের অত্যাচারে অনেক লোকের মৃত্যু ও অনেক লোক আহত হয় । উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরা নামক স্থানে পুলিশের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে বিক্ষুব্ধ একদল জনতা একটি থানা আক্রমণ করে কয়েকজন পুলিশকে হত্যা করে । 

অহিংস আন্দোলনের মধ্যে এই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার প্রতিবাদে গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন । গান্ধিজির এইরূপ সিদ্ধান্তে জওহরলাল নেহেরু , সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতারা অসত্তোষ প্রকাশ করেন । গান্ধিজির ছয় বৎসরের কারাবাস হয় । এদিকে তুরস্কের গাজী মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক বিজয়ী হলে সুলতান গদিচ্যুত হন এবং সঙ্গে সঙ্গে ভারতের খিলাফৎ আন্দোলনের অবসান ঘটে । এবং তখনই অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। 

প্রশ্ন ৪। আইন অমান্য আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল ? এই আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য কী ? 

উত্তরঃ ১৯৩০ সাল থেকে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল । গান্ধিজি নেহেরু রিপোর্টের সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ সরকারকে স্মরণ করিয়ে ভারতের ডোমিনিয়নের মর্যাদা দাবি করেন । তিনি তার ইয়ং ইণ্ডিয়া পত্রিকায় পূর্ণ স্বরাজের লক্ষ্যে এগারো দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করলেও সরকার ওই সব দাবি অগ্রাহ্য করে দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে সমস্ত প্রকার বিক্ষোভ দমনে তৎপর হয় । এই সময় ব্রিটিশ সরকার সুভাষচন্দ্র সহ আরও কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে এক আইনের বলে লবণের ওপর দ্বিগুণ কর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল । এছাড়া সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করা ছিল সরকারি আইনের বিরুদ্ধে । এর ফলে জনসাধারণ বিশেষ অসুবিধায় পড়ে । গান্ধিজি ভাইসরয় লর্ড আরউইনকে লবণ উৎপাদনের ব্যাপারে সমস্ত সরকারি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানান । লর্ড আরউইন এই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ায় গান্ধিজি লবণ সত্যাগ্রহের দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হন । 

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ পরিকল্পনা অনুযায়ী গান্ধিজি ৭৯ জন অনুগামীদের নিয়ে সবরমতী আশ্রম থেকে গুজরাটের সমুদ্রতীরে দাণ্ডির দিকে পদযাত্রা শুরু করেন । তাঁর এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে সমুদ্রতীরে লবণ তৈরি করে লবণ আইন লঙ্ঘন করা । দাণ্ডি অভিযান সারাদেশে নতুন আশার সঞ্চার করে । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল গান্ধিজি সমুদ্রতীর থেকে একমুঠো লবণ হাতে তুলে নিয়ে সরকারি লবণ আইন লঙ্ঘন করলে আইন অমান্য আন্দোলনের শুরু হয় । আইন অমান্য আন্দোলনকে কার্যকরি করতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে , যেমন — মাদ্রাজ , মুম্বাই , বাংলা , আসাম ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লবণ তৈরি শুরু হয় । এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি অন্যান্য কর অস্বীকার করা হয় । বিদেশি দ্রব্য বয়কট , সরকারি দোকানের সামনে বিক্ষোভ এবং ধর্মঘটের মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলনকে আরও সক্রিয় করে তোলা হয় । স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে এই আন্দোলনে যোগদান করে । 

আইন অমান্য আন্দোলনকে দমন করার উদ্দেশ্যে লবণ সত্যাগ্রহীদের ওপর পুলিশ চরম অত্যাচার শুরু করে । সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয় । সর্বোপরি সরকার জাতীয় কংগ্রেসকে বে – আইনী দল হিসাবে চিহ্নিত করে । এছাড়া আন্দোলনকারীদের সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করে । প্রায় ৬০,০০০ সত্যাগ্রহী গ্রেফতার হয় । 

প্রশ্ন ৫। কী পরিস্থিতিতে ভারত ত্যাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ? ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই আন্দোলনের কার্যসূচিকে তুমি মাইল স্টোন রূপে সাধ্যস্ত করতে চাও ? তোমার মতামতের সমর্থনে যুক্তি দাও । 

উত্তরঃ ভারত ত্যাগ আন্দোলন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর শেষ তথা চূড়ান্ত প্রত্যক্ষ আন্দোলন । ১৯৪২ সালে জার্মানির মিত্রশক্তি জাপানের ভারত মণ সম্ভা আক্রমণ করার সম্ভাবনা দেখা দেয় । জাপানের সাফল্যে ভয় পেয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতের জনগণের সহযোগিতা লাভের জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপকে ভারতে প্রেরণ করে । কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতা দানের কোনো উল্লেখ না থাকায় কংগ্রেস তা গ্রহণ করে নি । 

ভারত ত্যাগ আন্দোলন প্রস্তাব :- ভারত সীমান্তে যখন জাপানী সৈন্য উপস্থিত , তখন স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ তার মিশন অকৃতকার্য হওয়ায় ইংল্যাণ্ডে প্রত্যাবর্তন করেন । ভারতে সর্বত্র এক তীব্র হতাশা দেখা দেয় । ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ হতবাক হলেন । মহাত্মা গান্ধি তাঁর “ হরিজন ” পত্রিকায় ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করে যেতে বললেন । সমগ্র ভারতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে “ ভারত ত্যাগ ” ধ্বনি উত্থিত হয় । মহাত্মা গান্ধি স্পষ্টভাবে বললেন যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন বজায় থাকলেই জাপান থাকবে না । কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ১৯৪২ সালের ১৪ ই জুলাই ব্রিটিশকে ভারত ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানিয়ে এক প্রস্তাব পাস করেন । বোম্বাইতে ( মুম্বাইতে ) ১৯৪২ সালের ৮ ই আগস্ট কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব অনুমোদিত হয় । 

পৃথিবীতে শান্তি ও স্বাধীনতা স্থাপন এবং ভারতবাসীদের জাতীয় জীবনের উন্নতি বিধানের জন্য ভারতের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়া অপরিহার্য এই কথাও প্রস্তাবে গৃহীত হল । পরদিন অর্থাৎ ৯ ই আগস্ট প্রাতঃকালে মহাত্মা গান্ধিসহ কংগ্রেসের অন্যান্য গণ্যমান্য নেতাকে গ্রেপ্তার করা হল । ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ছিল যে , কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করলেই আন্দোলন থেমে যারে । এই উদ্দেশ্যে তাঁরা নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি এবং প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিগুলি বেআইনী বলে ঘোষণা করেন । 

গণ বিদ্রোহ :- সেইদিন নেতৃত্বহীন ভারতবাসী ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সরকারী প্রতিষ্ঠান , সরকারী সম্পত্তি প্রভৃতি বিনাশ করে ব্রিটিশের অত্যাচারী শাসালের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের বিক্ষোভ দেখাল । সমগ্র ভারতে আগুন জ্বলল । অনেক রেলস্টেশন , পোস্ট অফিস ও থানা ভস্মীভূত হল । মোট ৫৩৮ বার পুলিশ ও সৈন্যদেরকে গুলিবর্ষণ করবার আদেশ দিতে হয়েছিল । 

মহাত্মা গান্ধির “ করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে ” আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী ভারতের শহর , নগর , গ্রামাঞ্চল সর্বত্র গণবিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করল । এই গণবিক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসন অচল করে দেওয়া এবং যোগাযোগ ও সংযোগ ব্যবস্থা বিনাশ করে ব্রিটিশ শাসালের অবসান ঘটানো । বাংলাদেশের মেদিনীপুর জেলায় “ ভারত ত্যাগ ” আন্দোলন বা “ আগস্ট বিপ্লব ” এক অভূতপূর্ব সংগঠন ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিল । ভারত ত্যাগ আন্দোলন মেদিনীপুরে এক প্রকৃত বিপ্লবের রূপ ধারণ করেছিল । বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে এগিয়ে গিয়েছিলেন । শেষপর্যন্ত পুলিশের গুলিতেই তিনি জাতীয় পতাকা হাতে প্রাণদান করে দেশের জন্য চরম আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন । 

মেদিনীপুরের মতন বর্তমান উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলায় এবং বিহারের ভাগলপুরে সাময়িকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল । কয়েক মাস এই স্বাধীনতা বহাল ছিল । 

লিব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহ দমন করতে সর্বপ্রকার দমনমূলক অত্যাচার নীতি অনুসরণ করতে লাগলেন । পুলিশ ও মিলিটারীর গুলিতে প্রায় দশ হাজার লোক প্রাণ হারায় এবং অসংখ্য লোক কারারুদ্ধ হয় । নেতৃত্ববিহীন জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্রোহ স্বাভাবিকভাবেই হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠে । মহাত্মা গান্ধি হিংসাত্মক কার্যাবলীর বিরুদ্ধে নৈতিক প্রতিবাদ হিসাবে দীর্ঘ তিন সপ্তাহ অনশনে ব্রতী হন । অনশনকালে যখন গান্ধিজির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠে তখন ব্রিটিশ সরকার বিনাশর্তে তাঁকে মুক্তিদানে স্বীকৃত হয় । সমগ্র দেশবাসীর প্রার্থনায় মহাত্মা গান্ধি দীর্ঘ তিন সপ্তাহের কঠোর অনশন – পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । 

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর বিষয়ে একটি টীকা লেখো । 

উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র চিরকাল ছিলেন নির্ভীক বিপ্লবী । দেশসেবায় দুঃসাহসিকতা , নূতন পন্থা উদ্ভাবন প্রতিভার সঙ্গে এক অসাধারণ সংগঠনী শক্তি তাঁকে স্বল্পকালের মধ্যে সমগ্র ভারতের জনপ্রিয় নেতার আসনলাভে সহায়তা করেছিল । 

১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু নরমপন্থীদের “ ডোমিনিয়ন স্টেটাসে ” র পাল্টা পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন । ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র সভাপতি নির্বাচিত হন । কিন্তু মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ বাড়তে থাকে । পর বৎসর ত্রিপুরী ( মধ্যপ্রদেশ ) কংগ্রেসে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন । কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সঙ্গে মতবিরোধ তীব্র হওয়ার কারণে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে “ ফরোয়ার্ড ব্লক ” নামে নূতন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন । 

সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার বার বার মহান বীর সন্তান নেতাজীকে কারারুদ্ধ করে । ১৯৪০ সালে তাঁকে নিরাপত্তা আইন বলে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে আটক করে রাখেন । কারাগারে বন্দী অবস্থায় ১৯৪০ সালে সুভাষচন্দ্র আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন । জেলে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্যভঙ্গ হলে তাঁকে পুলিশ প্রহরায় কলকাতার এলগিন রোডস্থ নিজ বাসভবনে নজরবন্দী করে রাখা হয় । 

আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন :- নজরবন্দী অবস্থায় ১৯৪১ সালের জানুয়ারী মাসে কোনো একসময়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধূলা দিয়ে সুভাষচন্দ্র ছদ্মবেশে দেশ থেকে পলায়ন করেন । তারপর তিনি আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের মধ্য দিয়ে জার্মানীতে গিয়ে উপস্থিত হন।হিটলারের সহায়তায় তিনি জার্মানীর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধৃত ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে এক স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনী গঠন করেন । অতঃপর তিনি জাপান এবং সেখান থেকে জাপান অধিকৃত সিঙ্গাপুরে এসে উপস্থিত হন । সেখানে রাসবিহারী বসু প্রমুখ ভারতীয় তাঁকে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনে সহায়তা করেন । 

জাপানের হাতে বন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনী গড়ে তোলেন । তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সৈনিকগণ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিল । তিনি সাম্প্রদায়িক একতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । তিনি হলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের “ নেতাজী ” । সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকারও গঠিত হয় । আজাদ হিন্দু বাহিনী নিয়ে “ নেতাজী ” আসামের সীমা অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করে কোহিমা ও শিলচরের কাছাকাছি মিতেনপুর অধিকার করতে সমর্থ হন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খাদ্যাভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় । ১৯৪১ সালের ১৮ ই আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রচারিত হয়েছে । কিন্তু এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো স্থির এবং সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় নি । নেতাজী ভারতবাসীর মধ্যে না থাকলেও তাঁর কীর্তি ভারতবাসীর হৃদয়ে চির উজ্জ্বল থাকবে । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর:  

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন ১। কোন তারিখে প্রথম বারের মত সর্বভারতীয় সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল । 

প্রশ্ন ২। ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তানের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমারে খাটির নাম কী ? 

উত্তরঃ রেডক্লিফ্ লাইন । 

প্রশ্ন ৩। জালিয়ানওয়ালা বাগের পুলিশের গুলি চালনার ফলে পুরুষ মহিলা ও শিশুসমেত ঘটনাস্থলে কতজনের মৃত্যু হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ৩৭৯ জন । 

প্রশ্ন ৪। পুলিশি নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরার কোন তারিখে পুলিশ চৌকিতে অগ্নিসংযোগ করেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯২২ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারী ।

প্রশ্ন ৫। কোন তারিখে গান্ধিজি দাণ্ডিতে লবণ আইন ভঙ্গ করবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ? 

উত্তরঃ ১৯৩০ সালের ১২ ই মার্চ । 

প্রশ্ন ৬। গান্ধিজি তার কতজন অনুগামীকে নিয়ে দাণ্ডি যাত্রা করেছিলেন ? 

উত্তরঃ ৭৮ জন । 

প্রশ্ন ৭। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে পরিচালিত যে কোন দুটি আন্দোলনের উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ ( ক ) অসহযোগ আন্দোলন । এবং

( খ ) আইন অমান্য আন্দোলন । 

প্রশ্ন ৮। অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি কারণ উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি কারণ হল –

( ক ) রাওলার্ট আইন ।

( খ ) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড । এবং

( গ ) তুর্কী সমস্যা । 

প্রশ্ন ৯। অসহযোগ আন্দোলনের কার্যসূচির প্রধান দুটি ভাগ উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) গঠনমূলক কার্যসূচি । এবং

( খ ) ধ্বংসমূলক কার্যসূচি । 

প্রশ্ন ১০। অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি গঠনমূলক কার্যসূচির উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ গঠনমূলক কার্যসূচিগুলি হল— 

( ক ) শিক্ষার জাতীয়করণ । 

( খ ) স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ এবং প্রচার । এবং

( গ ) খাদি বস্ত্রের ব্যবহার । 

প্রশ্ন ১১। অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি ধ্বংসাত্মক কার্যসূচির উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি ধ্বংসাত্মক কার্যসূচি হল— 

( ক ) ব্রিটিশ আইন – আদালত বর্জন । 

( খ ) ব্রিটিশ শিক্ষানুষ্ঠান বর্জন করা । এবং

( গ ) সরকারী কার্যসূচি ও উৎসব বর্জন করা । 

প্রশ্ন ১২। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন উঠা যেকোন চারটি গড়ে জাতীয় শিক্ষানুষ্ঠানের নাম উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ জাতীয় শিক্ষানুষ্ঠানগুলি হল –

( ক ) বিহার বিদ্যাপীঠ ( পাটনা ) । 

( খ ) বেঙ্গল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ।

( গ ) আলিগড় ন্যাশনাল মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় । এবং

( ঘ ) গুজরাট বিদ্যাপীঠ । 

প্রশ্ন ১৩। ১৯৩৯ সালে ভারত শাসন আইন মর্লি – মিণ্টো আইন – এর দুটি শর্ত উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার বেসরকারী সভ্যসংখ্যা বাড়ানো । এবং

( খ ) হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য আলাদা নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন করা । 

প্রশ্ন ১৪। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের দুটি শর্ত লেখো । 

উত্তরঃ ( ক ) সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের প্রতি প্রযোজ্য আাইন প্রণয়নের জন্য দ্বিকক্ষ সম্বলিত একটি আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় । এবং

( খ ) প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের উপর ন্যস্ত হয় । 

প্রশ্ন ১৫। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের যে কোন দুটি শর্ত উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । এবং

( খ ) প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থায় পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসালের প্রবর্তন । 

প্রশ্ন ১৬৷ অসহযোগ আন্দোলনের যে কোন দুটি লক্ষ্য সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ ( ক ) পাঞ্জাবে ব্রিটিশের অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিবাদ । এবং

( খ ) ভারতে স্বরাজ গঠন করা । 

প্রশ্ন ১৭। মেকডোনাল্ডের ঘোষণা অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের কোন কোন জাতি / শ্রেণির লোকদের সংখ্যালঘুরূপে স্বীকৃতি দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ সংখ্যালঘু জাতিসমূহ হল— 

( ১ ) মুসলমান । 

( ২ ) অবদলিত শ্রেণি ।

( ৩ ) অবহেলিত শ্রেণি ।

( ৪ ) ভারতীয় খ্রিস্টান ।

( ৫ ) এংলো ইণ্ডিয়ান ।

( ৬ ) ইউরোপীয় ।

( ৭ ) বণিক ও উদ্যোগপতি শ্রেণি । 

( ৮ ) মাটিগিরি ।

( ৯ ) শ্রমিক । এবং 

( ১০ ) শিখ । 

প্রশ্ন ১৮। বিয়াল্লিশের গণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চারটি সংস্থার নাম লেখো । 

উত্তরঃ চারটি সংস্থা হল— 

( ক ) সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন কমিউনিষ্ট লীগ । 

( খ ) সুভাষচন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লক । 

( গ ) ভগৎ সিংহের হিন্দুস্থান সোসালিষ্ট রিপাব্লিকান আর্মি । এবং 

( ঘ ) জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সমাজবাদী দল ।

প্রশ্ন ১৯। ভারতে খিলাফৎ আন্দোলনের যে – কোন দুটি লক্ষ্য লেখো । 

উত্তরঃ ( ক ) তুর্কী সাম্রাজ্যের উপর ব্রিটিশের অবিচারের প্রতিবাদ । এবং 

( খ ) ভারতে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্য স্থাপন করা । 

প্রশ্ন ২০। স্বদেশী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) ব্রিটিশ সরকার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করে । এবং 

( খ ) ১৯০৭ সালে কংগ্রেস বিভাজনের ফলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে । 

প্রশ্ন ২১। প্রতিষ্ঠার সময়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যে – কোন দুটি উদ্দেশ্য লেখো । 

উত্তরঃ ( ক ) দেশের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা । এবং 

( খ ) দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ আলোচনা করা ও সমাধানের পন্থা নির্ণয় করা । 

প্রশ্ন ২২। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যে কোন দুটি সুফল উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) ব্রিটিশ শাসনের ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার প্রসার ঘটে । এবং

( খ ) ব্রিটিশ শসনের ফলে ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় । 

প্রশ্ন ২৩। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যে কোন দুটি কুফল উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) ব্রিটিশ শাসনের অর্থনৈতিক শোষণের ফলে – ভারতের আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি পায় । এবং

( খ ) ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের কুটির শিল্পের বিনাশ ঘটে । 

প্রশ্ন ২৪। আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগঠিত হওয়ার মূল আদর্শগুলি লেখো।

উত্তরঃ ( ক ) ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ । এবং

( খ ) দেশপ্রেমের আদর্শ । 

প্রশ্ন ২৫। ভারতে জাতীয় আন্দোলনে চরমপন্থী উত্থানের দুটি কারণ লেখো । 

উত্তরঃ কংগ্রেসের দাবি পূরণের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতা । এবং 

( ক ) লর্ড কার্জনের দমনমূলক নীতি ।

প্রশ্ন ২৬। ক্রিপস্ মিশন ব্যর্থ হওয়ার দুইটি কারণ লেখো ।

উত্তরঃ ( ক ) ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতের স্বাধীনতা দানের কোন উল্লেখ না থাকায় কংগ্রেস তা গ্রহণ করে নি । এবং

( খ ) স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের উল্লেখ না থাকায় মুসলিম লীগও এটি প্রত্যাখ্যান করে ।

প্রশ্ন ২৭। মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার যে – কোন দুটি অনুবিধি লেখো । 

উত্তরঃ ( ক ) মুসলমান প্রধান অক্ষলাগুলির বাসিন স্মৃতি ইতাৰ বিকালে তারা আলাদা ডোমিনিয়ন গঠন করবে । এবং

( খ ) উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তানে যোগদান করতে চায় কিনা তা তথাকার জনগণের গণভোটের মাধ্যমে স্থির হবে । 

প্রশ্ন ২৮। ভারতের স্বাধীনতা আইনের প্রধান দুইটি শর্ত উল্লেখ করো । 

উত্তরঃ ( ক ) এই আইন ভারত ও পাকিস্তান নামে আলাদা দুটি রাষ্ট্র গঠন করে । এবং

( খ ) ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট হতে ভারত ও পাকিস্তানের শাসন ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের কোন কর্তৃত্ব থাকবে না ।

প্রশ্ন ২৯। মুসলমানদের জন্য মুসলিম লীগ কোন লীগসভার একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জানিয়েছিলেন ? লীগের সেই সভার সভাপতি কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে । সভাপতি ছিলেন জিন্না । 

প্রশ্ন ৩০। কখন এবং ভারতের কোথায় গান্ধিজি সর্বপ্রথম অহিংসা নীতির পরীক্ষা করেছিলেন ? 

উত্তরঃ ১৯১৫ সালে বিহারের চম্পারণে । 

প্রশ্ন ৩১। কে , কখন ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধি ১৯১৯ সালে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।

প্রশ্ন ৩২। কাদের আদর্শের দ্বারা গান্ধিজি অহিংস নীতি উদ্ভাবনে প্রভাবিত হয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ ( ক ) ইমার্সন ।

( খ ) থরো । ও 

( গ ) টলস্টয় । 

প্রশ্ন ৩৩। প্রথম অসমীয়া সংবাদপত্রটির নাম কী ছিল ? এটি কখন প্রকাশিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ প্রথম অসমীয়া সংবাদপত্র “ অরুণোদয় ” ১৮৪৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল । 

প্রশ্ন ৩৪। মহাত্মা গান্ধি কেন এবং কখন অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন ? 

উত্তরঃ চৌরিচৌরা পুলিশ থানায় ১৯২২ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন । 

প্রশ্ন ৩৫ । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোন সভায় পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল ? সেই সভার সভাপতির নাম লেখো । 

উত্তরঃ ১৯২৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করা হয় । সেই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ।

প্রশ্ন ৩৬। একক সত্যাগ্রহ আন্দোলন কে এবং কখন শুরু করেছিলেন ? 

উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধি ১৯৩০ সালে লবণ আইন ভঙ্গ করার জন্য একক সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন । 

প্রশ্ন ৩৭। অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন মন্ত্রীর / সদস্যের নাম লেখো । 

উত্তরঃ মন্ত্রী বা সদস্যগণ হলেন ―

( ক ) পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু । 

( খ ) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল । 

( গ ) ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ । এবং

( ঘ ) চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী । 

প্রশ্ন ৩৮। অহিংস নীতির প্রবর্তক ছিলেন কে ? 

উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধী।

প্রশ্ন ৩৯। গান্ধিজি কখন সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ? 

উত্তরঃ ১৯১৫ সালে । 

প্রশ্ন ৪০। “ ভারত রক্ষা আইন ” কখন প্রবর্তন করা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯১৪ সালে । 

প্রশ্ন ৪১। গান্ধিজি কখন লবণ আইন ভঙ্গ করেন ? 

উত্তরঃ ১৯৩০ সালের ৬ ই এপ্রিল । 

প্রশ্ন ৪২। প্রথম গোলটেবিল বৈঠক কখন অনুষ্ঠিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৩০ সালে । 

প্রশ্ন ৪৩। গান্ধি আরউন চুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৩১ সালের ৫ ই মার্চ । 

প্রশ্ন ৪৪। দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক কোন সালে অনুষ্ঠিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৩১ সালে । 

প্রশ্ন ৪৫। সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা কখন ঘোষিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৩২ সালের ২০ আগস্ট । 

প্রশ্ন ৪৬। “ সাম্প্রদায়িক “ বাটোয়ারা ” ঘোষণা করেন কে ? 

উত্তরঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মেকডোনাল্ড । 

প্রশ্ন ৪৭। গান্ধিজিকে কে ‘ নগ্ন ফকির ’ বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল । 

প্রশ্ন ৪৮। কোন আন্দোলনকে ৪২ – এর  -এর গণ – আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয় ?

উত্তরঃ ভারত ত্যাগ আন্দোলনকে ।

প্রশ্ন ৪৯। কোন আন্দোলনকে আগস্ট বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয় ?

উত্তরঃ ভারত ত্যাগ আন্দোলনকে ৷ 

প্রশ্ন ৫০। বিয়াল্লিশের গণ আন্দোলন কখন সমাপ্ত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৪৪ সালে ।

প্রশ্ন ৫১। জার্মানী কখন পোল্যাণ্ড আক্রমণ করে ? 

উত্তরঃ ১৯৩৯ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর । 

প্রশ্ন ৫২। জার্মানী কখন সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করে ? 

উত্তরঃ ১৯৪১ সালে ২২ শে জুন । 

প্রশ্ন ৫৩। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কখন শুরু হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৩৯ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর । 

প্রশ্ন ৫৪। কমিউনিষ্ট লীগ – এ নেতা ছিলেন কে ? 

উত্তরঃ সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর । 

প্রশ্ন ৫৫। ফরওয়ার্ড ব্লক – এর প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

উত্তরঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু । 

প্রশ্ন ৫৬। হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাব্লিকান আর্মির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ ভগৎ সিং । 

প্রশ্ন ৫৭। কংগ্রেস সমাজবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কে ? 

উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ । 

প্রশ্ন ৫৮। অন্তর্বর্তী সরকার কখন কার্যভার গ্রহণ করে ? 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর । 

প্রশ্ন ৫৯। প্রত্যক্ষ দাবী দিবস কোনদিন পালিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট । 

প্রশ্ন ৬০। বাংলাদেশ কখন স্বাধীনতা লাভ করে ? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর । 

প্রশ্ন ৬১। ইণ্ডিয়ান “ ইণ্ডিপেনডেন্স লীগ ” -এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কে ? 

উত্তরঃ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । 

প্রশ্ন ৬২। ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেনডেন্স লীগ কোন সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ।

প্রশ্ন ৬৩। ভারতের স্বাধীনতা কালে ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কে ?

উত্তরঃ ক্লীমেণ্ট এটলি । 

প্রশ্ন ৬৪। কেবিনেট মিশন কখন ভারতবর্ষে এসেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের ২৩ শে মার্চ ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর: 

প্রশ্ন ১। গ্রাম স্বরাজ কাকে বলে ? এটি উদ্ভাবন করেছিলেন কে ? 

উত্তরঃ গ্রামের সকল মানুষের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতাকেই বলে গ্রাম স্বরাজ । 

ভারতবর্ষ এক বিশাল দেশ । স্বাধীনতার আগে এই দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল । তার উপর কয়েকবারের জন্য বর্তমান মায়ানমার ( ব্রহ্মদেশ ) এর অন্তর্ভুক্ত ছিল । এই বিশাল দেশটি ছিল গ্রামের সমষ্টি । পর্যায়ক্রমে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ থেকে ৯৫ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করত । সুতরাং গ্রামের জনগণের কল্যাণের উপরই দেশের জনগণের কল্যাণ এবং গ্রামের জনগণের উন্নয়নের উপরই দেশের উন্নয়ন নির্ভর করত । দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০/৮৫ শতাংশ লোক কৃষির উপরে নির্ভরশীল এবং অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ লোক ক্ষুদ্র ব্যবসায় এবং কুটির শিল্পের উপর নির্ভরশীল । মধ্যযুগের আগে থেকে গ্রামগুলি ছিল আত্মনির্ভরশীল এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী । 

সেই সময়ে গ্রামাঞ্চলে স্বাভাবিক দক্ষ , মামলা মোকদ্দমা , কোর্ট কাছারী , আইন আদালত ছিল না । গ্রামের শাসনব্যবস্থার চাবিকাটি ছিল গাঁওসভা তথা পঞ্চায়েতের হাতে । পঞ্চায়েত ছিল গ্রামের শাসনব্যবস্থার সর্বেসর্বা । 

কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্রামগুলির আর্থিক ভিত্তি বিনষ্ট করে ফেলে । কৃষিক্ষেত্রের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে হস্তশিল্প তথা কুটির শিল্পের অবনতি ঘটেছিল । গ্রামগুলির অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে অন্তর্হিত হতে থাকে । 

মহাত্মা গান্ধি গ্রামগুলির পূর্বগৌরব উদ্ধারের জন্য অর্থনৈতিক উৎপাদন পদ্ধতি , শাসনব্যবস্থা এবং বিচারব্যবস্থার পুনরুত্থানের জন্য গ্রাম – স্বরাজতত্ত্ব প্রচার করেছিলেন । গ্রামীণ ভারতবর্ষে গ্রাম – স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করলে সারা দেশে স্বরাজ লাভ করা সহজ হবে বলে গান্ধিজি মনে করতেন । কুটির তথা হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি চরকার উপর গুরুত্ব দিয়ে সূতা কাটা , কাপড় বোনা প্রভৃতির উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন । গান্ধিজি মনে করতেন গ্রাম প্রধান ভারতবর্ষে গ্রাম – স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশের স্বরাজ একসময় বিড়ম্বনায় পরিণত হয়ে পড়বে । তাই গ্রাম – স্বরাজ গান্ধিজির রাজনৈতিক আন্দোলনের এক প্রধান কার্যসূচিতে পরিণত হয়েছিল । তার কল্পনাপ্রসূত গ্রাম স্বরাজের মধ্যমণি ছিল পঞ্চায়েত । 

প্রশ্ন ২। অহিংস নীতি কাকে বলে ? কে – কখন কোথায় এর উদ্ভাবন করেছিলেন ? 

উত্তরঃ সত্যের প্রতি একান্ত অনুরাগ এবং হিংসা না করে সত্যের পথে এগোনোই হল অহিংস নীতি । 

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিজি দেশের সক্রিয় রাজনীতিতে অহিংস নীতি প্রবর্তন করেন । ১৮৯১ সালে তিনি ইংল্যাণ্ড থেকে ব্যারিষ্টারি পাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকার “ নাটালে ” আইন ব্যবসা শুরু করেন । দক্ষিণ আফ্রিকাতেই গান্ধিজির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় । সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে অনেক ভারতীয় বসবাস করত । দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার এই সকল প্রবাসী ভারতীয়দের ওপর অকথ্য অত্যাচার করত । এই সকল ভারতীয়দের কোনো ভোটাধিকার ছিল না । 

তারা কোনো ভালো জায়গায় বসবাস করতে পারত না । ভারতীয়দের নানা অপমানজনক শর্ত মেনে চলতে হত । এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষদের উপর এইরূপ বৈষম্যমূলক ও অমর্যাদাকর আচরণ গান্ধিজিকে বিচলিত করে । দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী সরকারের বিরুদ্ধে তিনি অহিংসভাবে গণ আন্দোলন সংগঠিত করেন । দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনে গান্ধিজি এক নূতন পদ্ধতি অবলম্বন করেন । এই পদ্ধতি অহিংস সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত । 

গান্ধিজি রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের অস্ত্র হিসাবে ‘ সত্যাগ্রহ ’ নীতি প্রয়োগ করেন । বেদ, গীতা , উপনিষদ , স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ইত্যাদি পাঠ করে গান্ধিজি মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে অবহিত হন । বিখ্যাত ইংরেজ লেখক রাসকিন রচিত ‘ শেষপর্যন্ত ’ এবং রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয় রচিত ‘ ঈশ্বরের রাজ্য ’ নামক দুটি গ্রন্থ তাঁকে নীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । অহিংস সত্যাগ্রহের দুটি মূল আদর্শ হল— 

( ১ ) সত্যের প্রতি একান্ত অনুরাগ । এবং 

( ২ ) অহিংস উপায়ে সত্যের পথে অগ্রসর হওয়া । 

একজন আদর্শ সত্যাগ্রহী কোনো অবস্থাতেই অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবে না । আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় সে কিছুতেই হিংসার আশ্রয় অবলম্বন করবে না । সেজন্য প্রয়োজন অনুশীলন ও অধ্যবসায় । গান্ধিজির মতে দুর্বল বা কাপুরুষরাই হিংসার আশ্রয় অবলম্বন করে । কেবলমাত্র চরিত্রবান ও সাহসী ব্যক্তির পক্ষে অহিংসা সত্যাগ্রহের পথ অনুসরণ করা যায় । 

গান্ধিজি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অহিংস সত্যাগ্রহ নীতি প্রয়োগ করে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন । তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে , শক্তিশালী ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে নিরস্ত্র ভারতবাসীর সশস্ত্র সংগ্রামে ভারতবাসীর সাফল্য সম্ভব নয় । সেজন্য ভারতবাসীর নৈতিক শক্তি ও অহিংস পদ্ধতিকে ভিত্তি করে অধিকার ও সম্মান রক্ষার সংগ্রামে সত্যাগ্রহের আদর্শ প্রয়োগ করেন । অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শ জাতীয়তাবাদী ভারতীয়দের নবপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে । 

প্রশ্ন ৩। ভারত ত্যাগ প্রস্তাবের মূল লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো । কোন তারিখে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের প্রচেষ্টায় স্যার স্ট্যাফর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন । আলোচনা ব্যর্থ হলে ১৯৪২ সালের ১২ ই এপ্রিল ক্রিপস্ মিশন ইংল্যাণ্ডে ফিরে যায় ।

ক্রীপস্ মিশন ব্যর্থ হলে ভারতের সর্বত্র এক তীব্র হতাশা দেখা দেয় । ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ হতবাক হলেন । মহাত্মা গান্ধি তাঁর “ হরিজন ” পত্রিকায় ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করে যেতে বলেন । সমগ্র ভারতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে “ ভারত ছাড়ো ” ধ্বনি উত্থিত হয় । ১৯৪২ সালের ১৪ ই জুলাই কংগ্রেস ওয়ার্কি কমিটি ব্রিটিশকে ভারত ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানিয়ে এক প্রস্তাব পাশ করে । ১৯৪২ সালের ৮ ই আগস্ট বোম্বাইতে কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব অনুমোদিত হয় । উক্ত প্রস্তাবের উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ :- 

( ১ ) একটি নির্দিষ্ট দিনে হরতাল পালন করার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার অনশন ও ব্রত উপাসনা পালন করা , এবং হরতালের জন্য কোন দোকানী বা ব্যবসায়ীকে জোর – জুলুম না করা । হরতালের দিন সভা , শোভাযাত্রা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সত্যাগ্রহ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা । 

( ২ ) আন্দোলন মূলত লবণ আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে লবণ তৈরি করা । 

( ৩ ) ভূমিরাজস্ব আদায় বন্ধ করা । এর দুটি দিক ছিল — জমিদারী এলাকায় জমিদার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে তার প্রাপ্য অংশটুকু দান করা হবে । কিন্তু সরকারের প্রাপ্য অংশটুকু আদায় হবে না । 

সেই সময়কার কংগ্রেস সভাপতি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতে আন্দোলন কাৰ্যসূচী সম্পর্কে গান্ধিজির কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না ।

সে যাইহোক গান্ধিজির মতে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সত্য ও অহিংসায় বিশ্বাসী কংগ্রেসী ও অকংগ্রেসী সকল ভারতীয়ই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারবে । দেশের স্বাধীনতা কর্মী বিপুল জনতা দেশের সর্বত্র অংশগ্রহন করে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। 

প্রশ্ন ৪। ভারত বিভাজনের কারণসমূহ আলোচনা করো ।

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের রাজনৈতিক ঘটনাগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে থাকে । আন্তর্জাতিক চাপে ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রতি তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হন । অপরদিকে কংগ্রেস ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সামরিক কর্মচারীবর্গকে সর্বোতভাবে সাহায্য দান করে দেশবাসীর অধিকতর শ্রদ্ধা অর্জন করে ।  

১৯৪৫ সালে আগস্ট মাসে ইংল্যাণ্ডে সাধারণ নির্বাচনে রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পতন ঘটে । সেই স্থানে শ্রমিক দলের নেতা ক্লিমেণ্ট এট্লী প্রধানমন্ত্রী হন । সঙ্গে সঙ্গে নবগঠিত সরকার ভারতের সমস্যা সমাধানে মনোনিবেশ করেন । ঐ বিৎসর অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লর্ড ওয়াভেল ঘোষণা করলেন যে , ঐ বৎসরের শেষের দিকে যে সাধারণ নির্বাচন হবে এতে নির্বাচিত সদস্যবর্গ নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হবে । সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীগণ প্রায় সকল প্রদেশে বেশির ভাগ অ – মুসলমান পদগুলিতে নির্বাচিত হন । ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করতে পারেন যে কংগ্রেসই ভারতীয় জনগণের মুখপাত্র । 

নৌসেনা বিদ্রোহ :- ১৯৬৪ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী বোম্বাইতে ( মুম্বাইতে ) “ রয়্যাল ইণ্ডিয়ান নেভি ” -এর ভারতীয় কর্মচারীগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে । ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করলেন যে ভারতে আর বিদেশী শাসন টিকিয়ে রাখা চলবে না । ১৯৪৬ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী , অর্থাৎ নৌবিদ্রোহের পরদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এট্লী ঘোষণা করেন যে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রীবর্গের তিনজন — লর্ড পেথিক লরেন্স , স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস্ এবং মিঃ এম . ভি . আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে ভারতবর্ষে সংবিধান সভা গঠন ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করা হবে । 

ক্যাবিনেট মিশন :- ১৯৪৬ সালের ২৩ শে মার্চ ক্যাবিনেট মিশন ভারতে উপস্থিত হন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনার পর ১৯৪৬ সালের ১৬ ই মে তারিখে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি “ গণপরিষদ ” এবং শাসন পরিচালনার জন্য একটি “ অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পনার ” ‘ শ্বেতপত্রিকা ’ প্রকাশিত হয় । এটি মন্ত্রী মিশনের “ মে পরিকল্পনা ” । এতে পাকিস্তান প্রস্তাব বাতিল করে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্য নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয় । কংগ্রেস এই প্রস্তাব মেনে নেয়।প্রতিবাদে মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ কার্য দ্বারা মুসলমানগণকে ব্রিটিশ প্রদত্ত উপাধি বর্জন করতে নির্দেশ দেয় । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট লীগ “ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ” পালন করে কলকাতা , নোয়াখালি , ত্রিপুরা , বিহার , উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ঘটায়। 

অন্তর্বর্তী সরকার :- মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব অনুসারে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় । মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকার বয়কট করে । ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে ৯ ই ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয় সংবিধান প্রণয়ন শুরু হয় । 

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা :- মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ না দেওয়ায় শাসনব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ে । এদিকে মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এট্লী ১৯৪৭ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী এক বিবৃতিতে ভারতের শাসন ক্ষমতা ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে অর্পণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন । ১৯৪৭ সালের ২৬ শে মার্চ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে গান্ধিজি ও জিন্নার এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় ।

ভারত বিভাগ :- ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে লর্ড মাউন্টব্যাটেন গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব কার্যকর করার দায়িত্ব তাঁর উপরই দেওয়া হয় । কার্যভার গ্রহণ করেই মাউন্টব্যাটেন বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন । কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে আপোসের কোনো সম্ভাবনা না দেখে ১৯৪৭ সালের ৩ রা জুন ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয় । মুসলিম লীগ স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল । কংগ্রেস নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছায় ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নিল । মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা কার্যকর করতে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে “ ভারতের স্বাধীনতা আইন ” গৃহীত হয়। 

এই আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতীয়গণের হস্তে ভারতের শাসনভার সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত করা হল । এই আইনের ফলে ভারতের দুই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র — ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় । পাঞ্জাবের পশ্চিম ভাগ , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ , সিন্ধু , বেলুচিস্তান এবং পূর্বপ্রান্তে শ্রীহট্টসহ পূর্ববঙ্গ — এই পাঁচটি বিভিন্ন প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অন্যান্য প্রদেশগুলি নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ( Indian Union) গঠিত হয় । দুইটি পৃথক গণপরিষদ উভয় রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ শাসনপ্রণালী স্থির করবে বলে ধার্য হল । মহম্মদ আলি জিন্না পাকিস্তানের এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড়লার্ট নিযুক্ত নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন করে ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।

প্রশ্ন ৫। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজীর ভূমিকা আলোচনা করো । 

উত্তরঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারী উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি প্রসিদ্ধ আইনজীবী জানকীনাথ বসুর পুত্র । রামকৃষ্ণ – বিবেকানন্দের আদর্শে অনুরাগী সুভাষচন্দ্র বাল্য বয়স থেকে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দান করেন । কটক থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন । প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর সুভাষচন্দ্র কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন । ছাত্রাবস্থাতেই তার মধ্যে দেশপ্রেম জেগে ওঠে । প্রেসিডেন্সী কলেজের জনৈক অধ্যাপক ওটেন সাহেব ভারতবাসীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করায় তিনি উক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন । মাতৃভূমির শৃঙ্খল মুক্তির জন্য তিনি বদ্ধপরিকর হন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স সহ বি . এ . পাশ করে পিতার ইচ্ছানুযায়ী আই . সি . এস . পরীক্ষার জন্য বিলাত যান । 

জাতীয় আন্দোলনে যোগদান :- আই . সি . এস . পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করে সুভাষচন্দ্র স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন । এই সময় ভারতে গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল।দেশমাতৃকার একনিষ্ঠ সেবক সুভাষচন্দ্র লোভনীয় সিভিল সার্ভিস ত্যাগ করে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মোৎসর্গ করেন । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নির্দেশে তিনি বাংলার কংগ্রেসী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন । ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর কারাদণ্ড হয় । এর পর চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্য পার্টির সংগঠন কার্যের ভারও তাঁর উপরই ন্যস্ত হয়েছিল । সেই সময়ে উত্তরবঙ্গে বন্যার্তদের সেবাকার্যে এবং “ বাংলার কথা ” ও “ ফরোয়ার্ড ” নামক পত্রিকাদ্বয়ের পরিচালনায় তিনি অনন্য সাধারণ ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন । 

সুভাষচন্দ্র চিরকাল ছিলেন একজন নির্ভীক বিপ্লবী । দেশসেবায় দুঃসাহসিকতা , নূতন পন্থা উদ্ভাবন প্রতিভার সঙ্গে এক অসাধারণ সংগঠনী শক্তি তাঁকে অল্পকালের মধ্যেই সমগ্র ভারতের জনপ্রিয় নেতার আসন লাভে সাহায্য করেছিল ।

১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু নরমপন্থীদের “ ডোমিনিয়ন স্টেটাসে ” র পাল্টা পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন । ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন । কিন্তু মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ বাড়তে থাকে । পর বৎসর ত্রিপুরী ( মধ্যপ্রদেশ ) কংগ্রেসে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন । কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সঙ্গে মতবিরোধ তীব্র হওয়ায় তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে “ ফরোয়ার্ড ব্লক ” নামে নূতন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন । 

সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার বার বার মহান বীর সন্তান নেতাজীকে কারারুদ্ধ করে । ১৯৪০ সালে তাঁকে নিরাপত্তা আইন বলে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয় । কারাগারে বন্দী অবস্থায় ১৯৪০ সালে সুভাষচন্দ্র আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন । জেলে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্যভঙ্গ হলে তাকে পুলিশ প্রহরায় কলকাতার এলগিন রোডস্থ নিজ বাসভবনে নজরবন্দী করে রাখা হয় । 

আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন :- নজরবন্দী অবস্থায় ১৯৪১ সালে জানুয়ারী মাসে কোনো একসময়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধূলা দিয়ে সুভাষচন্দ্র ছদ্মবেশে দেশ থেকে পালান । তারপর তিনি আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের মধ্য দিয়ে জার্মানীতে গিয়ে উপস্থিত হন । হিটলারের সহায়তায় তিনি জার্মানীর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধৃত ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে এক স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনী গঠন করেন । অতঃপর তিনি জাপান এবং তথা হতে জাপান অধিকৃত সিঙ্গাপুরে এসে উপস্থিত হন । সেখানে রাসবিহারী বসু প্রমুখ অনেক ভারতীয় তাঁকে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনে সাহায্য করেন । জাপানের হস্তে বন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র তাঁর আজাদ হিন্দু বাহিনী গড়ে তোলেন । তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সৈনিকগণ তাঁর আহবানে সাড়া দেয় । সাম্প্রদায়িক একতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন । আজাদ হিন্দ ফৌজের তিনি হলেন “ নেতাজী ” । সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দু সরকারও গঠিত হল । 

আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে “ নেতাজী ” আসামের সীমা পার করে ভারতে প্রবেশ করে কোহিমা ও শিলচরের নিকটবর্তী মিতেনপুর অধিকার করতে সমর্থ হন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খাদ্যাভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় । ১৯৪১ সালের ১৮ ই আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রচারিত হয়েছে । কিন্তু এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অদ্যাবধি কোনো স্থির এবং সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি । নেতাজী ভারতবাসীর মধ্যে না থাকলে তার কীর্তি ভারতবাসীর হৃদয়ে চির উজ্জ্বল থাকবে । 

প্রশ্ন ৬। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধির অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর কাথিয়াবাড়ের অন্তর্গত পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন । রাজকোট ও ভাবনগরে স্কুল ও কলেজী শিক্ষা লাভের পর ১৮৮৮ সালে তিনি ব্যারিস্টারী পড়তে লণ্ডন গমন করেন । ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৮৯৯ সালে গান্ধিজি স্বদেশে ফিরে আসেন । গান্ধিজি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির থাকায় ভারতে আইন ব্যবসায়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি । 

দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ :- ১৮৯৩ সালে গান্ধিজি একটি বিশেষ মামলা পরিচালনার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেন । দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করে তাদের জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন করার প্রতিবাদে গান্ধিজি সেখানে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে ন্যায় ও সত্যের মর্যাদা রক্ষার জন্য নীরবে সকল অত্যাচার সহ্য করে শত্রু মনোভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করেন । তাঁর চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত নাটালের ভারতীয়গণ ভোটাধিকার লাভ করেন । 

ভারতের সত্যাগ্রহ :- দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বিহারের চম্পারণ জেলায় কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের

প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ভারতে প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । এর পর আহমেদাবাদের বস্ত্রকল শ্রমিকদের উপর মালিকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাফল্য অর্জন করেন । 

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান :- ১৯১৭ সালে গান্ধিজি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের অন্যতম হলেন । ১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেস গান্ধিজির “ অহিংসা – অসহযোগ ” এবং “ সত্যাগ্রহ ” প্রস্তাব গ্রহণ করে জাতীয় আন্দোলন চালনার পূর্ণ দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করে । ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য তিনি আইনসভার সদস্যগণকে এবং সরকারী কর্মচারীগণকে পদত্যাগ , ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত বিদ্যালয় এবং আইনজ্ঞদের আদালত বর্জনের আহ্বান করেন । অনেক ভারতবাসী বিদেশী দ্রব্য বর্জন করে সত্যাগ্রহে যোগদান করতে থাকেন । কিন্তু শেষপর্যন্ত আন্দোলন অহিংসাচ্যুত হওয়ায় গান্ধিজি আন্দোলন স্থগিত করেন । 

খিলাফৎ আন্দোলন :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তুরস্কের খলিফাকে জার্মান পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার অজুহাতে ইংরেজ সরকার সিংহাসনচ্যুত করলে ভারতীয় মুসলমানগণ খলিফার পক্ষে ভারতে আন্দোলন শুরু করেন । গান্ধিজি মুসলমানদের এই আন্দোলনকে কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত করেন ।

আইন অমান্য আন্দোলন :- ১৯১৯ সালে গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য ও বরদৌলী সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ভারতীয় জনগণ অভূতপূর্ণ সাড়া দেয় । কিন্তু এই আন্দোলন হিংসায় রূপান্তরিত হলে তিনি এটি বন্ধ করে দেন । ১৯৩০ সালে গান্ধিজি দাণ্ডি অভিযান করে লবণ আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন । 

গোলটেবিল বৈঠক :- ব্রিটিশ সরকার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় উপনীত হতে ১৯৩০ সালে লণ্ডনে প্রথম গোলটেবিল বেঠক আহবান করেন । কংগ্রেস এটি বয়কট করে । বড়লাট আরউইনের সঙ্গে গান্ধিজির একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় । চুক্তির শর্তানুযায়ী গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন । মুসলিম লীগ নেতা জিন্নার চাপে ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা প্রস্তাবের পক্ষপাতি থাকায় গান্ধিজি ডিসেম্বর মাসে বৈঠক ত্যাগ করে এসে দেখেন যে জাতীয়তাবাদের উপর সরকারী নির্যাতন চলছে । গান্ধিজি বড়লাটের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হন । তাঁকে ও অন্যান্য নেতাকে গ্রেপ্তার করে জাতীয় কংগ্রেসকে বে – আইনি ঘোষণা করা হয় । 

কংগ্রেস মন্ত্রীসভার পদত্যাগ :- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের শর্ত অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস মোট নয়টি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করে । কিন্তু কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইংরাজ সরকার ভারতকে যুদ্ধে লিপ্ত করার প্রতিবাদে গান্ধিজির নির্দেশে কংগ্রেসী মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করেন । 

ভারত ত্যাগ আন্দোলন :- ১৯৪২ সালে গান্ধিজি “ ভারত ত্যাগ ” আন্দোলন করলে ভারতের জনগণ তাতে অভূতপূর্ব সাড়া দেন । সরকারী অত্যাচারে অসংখ্য নর – নারী এই আন্দোলনে প্রাণ হারান । 

ভারত বিভাগ :- ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের ভারত বিভাগের প্রস্তাব গান্ধিজি প্রথমে নাকচ করেছিলেন কিন্তু পরে নেতৃবৃন্দের অনুরোধে এতে সম্মতি দান করেন । 

স্বাধীনতার পূজারী ছাড়া অস্পৃশ্যতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধির অবদান অসামান্য । কিন্তু কালের প্রভাবে অহিংসা মন্ত্রের পূজারী মহাত্মা গান্ধিকে ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারী আততায়ীর হাতে প্রার্থনা সভায় প্রাণ দিতে হয় । 

ভারতের জাতীয় জীবনে মহাত্মা গান্ধির জীবন একটি বিরাট শিক্ষাস্বরূপ । ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যগুলির এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল গান্ধিজির চরিত্রে । মহাত্মা গান্ধি সত্যই মহান আত্মার যুগপুরুষ ছিলেন । তাঁর প্রদর্শিত পথ ধরে চলতে পারলে শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের মঙ্গল সাধিত হবে । গান্ধিজিকে জাতির জনক বলা হয় ।

প্রশ্ন ৭। কেবিনেট মিশনের “ সমষ্টি পরিকল্পনা ” অনুযায়ী রাজ্যগুলির বিভাগকরণ কিভাবে হয়েছিল ? 

উত্তরঃ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বভারতীয় একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে এবং প্রদেশগুলি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে । ভারতীয় প্রদেশগুলি

ক,খ ও গ ―এই তিনভাগে ভাগ হবে । “ ক ” ভাগে থাকবে হিন্দু – প্রধান মাদ্রাজ ( চেন্নাই ) , বোম্বাই ( মুম্বাই ) , মধ্যপ্রদেশ , যুক্তপ্রদেশ ( উত্তরপ্রদেশ ) , বিহার ও উড়িষ্যা । “ খ ” ভাগে থাকবে মুসলমান প্রধান পাঞ্জাব , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ , সিন্দু ও বেলুচিস্তান । “ গ ” বিভাগে থাকবে বঙ্গদেশ ও আসাম । প্রত্যেক ভাগ নিজ নিজ এলাকার জন্য সংবিধান স্থির করবে । কিন্তু সকল ভাগ থেকেই প্রতিনিধিগণ এবং যে সকল দেশীয় রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যোগদানে স্বীকৃত হবে সেই সকল রাজ্যের প্রতিনিধিগণ সমবেতভাবে ভারত ইউনিয়নের সংবিধান স্থির করবেন । নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রথম নির্বাচনের পর যে কোনো প্রদেশ এ প্রদেশ এক ভাগ হতে অপর ভাগে যোগদান করতে পারবে । 

সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো: 

১। জালিয়ানওয়ালাবাগের হতাকা হত্যাকাণ্ড :- ১৯১৯ সালের সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি । তাছাড়া বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ফলে সমগ্র দেশে খাদ্যাভাব , মহামারী ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের দুর্দশা বেড়ে যায় । এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার শাসন সংস্কার দূরে রেখে কঠোর দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে । ১৯১৯ সালের ১৭ ই মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রবর্তন করে । এই আইনে বিনা বিচারে যে কোনো ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটক রাখা যেত । 

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে প্রতিবাদ শুরু হয় । ব্রিটিশ সরকার দমন নীতি অব্যাহত রেখে পাঞ্জাবে সামরিক আইন বলবৎ করে । এই সামরিক আইন , দমন নীতি প্রভৃতি অগ্রাহ্য করে ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল “ বৈশাখী ” উৎসবের দিন পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় । অমৃতসরের নিকটবর্তী এই স্থানে সেদিন নিরস্ত্র প্রতিবাদীদের উপর ব্রিটিশ সরকারের সেনানায়ক ডায়ার গুলি চালনার নির্দেশ দিয়ে অনেক নর – নারী ও শিশুকে হত্যা করে । এত বড়ো গণহত্যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসেও খুব পাওয়া যাবে । সারা দেশজুড়ে ইংরেজের এই পাশবিক আচরণের বিরুদ্ধে ধিক্কার ধ্বনিত হয় । রাগে , দুঃখে , অপমানে জর্জরিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদস্বরূপ ‘ নাইট ’ উপাধি বর্জন করেন । জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের মুখোশ খুলে দেয় । এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় যে , স্বার্থে আঘাত লাগলে ইংরেজের নৃশংসতা কোন স্তর পর্যন্ত যেতে পারে । 

২। চৌরিচৌরার হিংসাত্মক ঘটনা :- অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন ভারতের তৎকালীন বড়োলাট লর্ড রীলিং – এর নির্দেশ দমনমূলক নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয় । অনেক নেতা কারারুদ্ধ হন । এই সময় গান্ধিজি ভাইসরয়কে লেখা এক পত্রের দ্বাবা দমনমূলক নীতির অবসান এবং কারারুদ্ধ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানান । তিনি একথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে ওই দাবি অবহেলিত হলে সমস্ত দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে । কিন্তু গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তের স্বল্পকালের মধ্যেই গোরখপুর জেলার অন্তর্গত চৌরিচৌরা গ্রামের একটি হিংসাত্মক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গান্ধিজি তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন । 

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি এক নিরস্ত্র জনতার শোভাযাত্রার ওপর পুলিশ গোলাবর্ষণ করলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে চৌরিচৌরায় একটি পুলিশ থানায় আগুন লাগিয়ে দিলে বাইশজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয় । জনগণ অহিংসার পথ থেকে সরে গিয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ব্যথিত হয়ে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন । গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তকে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন । 

৩। কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি :- ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্বেষ তুঙ্গে উঠেছিল । তুরস্কের সুলতান ‘ খলিফা ‘ পদের অধিকারী হওয়ায় তুর্কি সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করে । মৌলানা আবুল বারি , মৌলানা মহম্মদ আলি , সৌকত আলি , প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতে খলিফার সপক্ষে প্রচার শুরু হয় । খিলাফতের সংকট সম্পর্কে ভারতীয় মুসলমানদের কর্তব্যকর্ম নির্দ্ধারণের জন্য মৌলানা আবুল বারির নেতৃত্বে লক্ষ্ণৌতে সর্বভারতীয় মুসলিম সমাবেশ আহবান করা হয় । এখানে কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি গঠন করা হয় । বোম্বাই – এ এর প্রধান দপ্তর স্থাপিত হয় এবং বিভিন্ন প্রদেশে শাখা কার্যলয় গঠিত হয় ।

কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধি , মতিলাল নেহরু , মদনমোহন মালব্য প্রমুখ কংগ্রেস নেতা প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । ১৯১৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর দিল্লিতে সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । ১৯২০ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত খিলাফৎ কমিটির সভায় গান্ধিজির উপস্থিতি এবং পরামর্শমতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় । গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনে যোগদান করে মুসলমানদের ভারতীয় আন্দোলনেরর মূলস্রোতে যুক্ত করার উদ্যোগ নেন। 

৪৷ গ্রাম – স্বরাজ :- গ্রামের সকল মানুষের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতাকে গ্রাম – স্বরাজ বলে । গান্ধিজি ছিলেন গ্রাম – স্বরাজের প্রধান প্রবক্তা । ভারতবর্ষ গ্রাম – প্রধান দেশ । দেশের বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে । প্রাচীন ও মধ্যযুগে গ্রামগুলি ছিল আত্মনির্ভরশীল । কিন্তু ব্রিটিশ আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলির অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে । ব্রিটিশ সরকারের শোষণের ফলে গ্রামগুলির আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । কৃষির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে কুটির শিল্পেরও অবনতি ঘটে । গ্রামের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হতে থাকে । গান্ধিজি গ্রামগুলির আত্মনির্ভরশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য উৎপাদন পদ্ধতি , শাসনব্যবস্থা ও ব্যবহার পুনরুত্থানের জন্য গ্রাম – স্বরাজের তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন । গ্রামীণ ভারতবর্ষে গ্রাম – স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করলে সমগ্র দেশে স্বরাজ লাভ সম্ভব হবে বলে গান্ধিজি মনে করতেন । কুটীর শিল্প তথা হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি চরকার উপর গুরুত্ব দিয়ে সূতা কাটা ও কাপড় বোনার উপর গুরুত্ব আরোপ করতেন । গান্ধিজির কল্পনাপ্রসূত গ্রাম – স্বরাজের মধ্যমণি ছিল পঞ্চায়েত ।

৫। জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ার :- জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ার ব্রিটিশ সামরিক বিষয়া ছিলেন । পাঞ্জাবের লাট সাহেব স্যার মাইকেল ও ডায়ার ইতিমধ্যে একজন রুক্ষ প্রশাসকরূপে পাঞ্জাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন । রাওলাট আইনের প্রতিবাদে ১৯১৯ সালের ১৩ ই এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল । স্যার মাইকেল আশংকা করে অমৃতসরের শাসনভার জেনারেল রেজিনেল্ড ডায়ারের হাতে অর্পণ করেন । জালিয়ানওয়ালাবাগে প্রায় ২০,০০০ লোক সমবেত হয়েছিল । জেনারেল ডায়ার প্রায় ১০৫ জন বন্দুকধারী সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে নিরস্ত্র লোকের উপর গুলির আদেশ দেন । গুলিতে মোট ৩৭৯ জন লোকের মৃত্যু হয়েছিল । 

৬। সীমান্ত গান্ধি :- সীমান্ত গান্ধির প্রকৃত নাম ছিল খান আব্দুল গফুর খান । উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলনের তিনি নেতা ছিলেন বলে তাঁকে সীমান্ত গান্ধি বলা হত । ১৯২৭ সালে তিনি “ আফগান যুব সংঘ ” নামে একটি দল গঠন করেন । বহু আফগান যুবক এতে যোগদান করে । সমাজসেবার সঙ্গে সঙ্গে এই সংঘের সদস্যরা আফগানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগায় । এই যুব আন্দোলনের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি পেশোয়ারে খোদা – ই – খিদ – মৎগার বা “ ঈশ্বরের সেবক ” নামে একটি দল গড়ে তোলেন । এই সংস্থার সদস্যরা সবাই লাল রংয়ের কোর্তা পরতেন । 

সেজন্য তারা ‘ লাল কোর্তা ’ নামে পরিচিত হন এবং সীমান্ত গান্ধিকে “ লাল কোর্তা নেতা ” বলে অভিহিত করা হয় । তাঁর সুমধুর ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেম সীমান্ত উপজাতিদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগাতে সক্ষম হয় । খান জাফর খান তাঁর অহিংস নীতির জন্য সীমান্ত গান্ধি নামে পরিচিত হন । মহাত্মা গান্ধির অনুগামী এই নেতা মোট ৩০ বৎসর কারাগারে জীবনযাপন করার পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রায় এক দশক আফগানিস্তানে কাটান । ১৯৬৭ সালে তাঁকে নেহেরু পুরস্কার এবং ১৯৮৭ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয় । ১৯৮৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী তিনি পরলোক গমন করেন । 

৭। লবণ আইন ভঙ্গ :- আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গের মধ্য দিয়ে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । লবণ উৎপাদনে ব্রিটিশের একচেটিয়া অধিকার ছিল । বিদেশ থেকে আমদানি করা লবণ ভারতবাসীকে বেশি দামে গ্রহণ করতে বাধ্য করানো হত । গান্ধিজি এই আইন রদ করার জন্য বড়লাটের সাক্ষাৎকার প্রার্থনা করেন । কিন্তু বড়লাট তাঁর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন । অতঃপর গান্ধিজি ঐতিহাসিক লবণ সত্যাগ্রহ ও আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । ১৯৩০ সালের ১২ ই মার্চ গান্ধিজি ৭৮ জন অনুগামীসহ “ সবরমতী ” আশ্রম হতে গুজরাটের দাণ্ডি অভিমুখে লবণ আইন ভঙ্গের জন্য যাত্রা শুরু করেন । এই ঘটনা ইতিহাসে “ দাণ্ডি অভিযান ” নামে খ্যাত । ৬ ই এপ্রিল গান্ধিজি দাণ্ডির সমুদ্রতীরে লবণ তৈরি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে লবণ আইন ভঙ্গ করেন । লবণ আইন ভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বত্র আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় । লবণ আইন – অমান্যের সিদ্ধান্ত দেশের কৃষক – সম্প্রদায়ের আন্তরিক সমর্থন লাভ করে । 

৮। সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা :- ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র দমননীতির দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে চায়নি । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামজে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার নীতি ঘোষণার দ্বারা মুসলিম ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়গুলির জন্য আলাদা নির্বাচনের ব্যবস্থার কথা বলেন । এর দ্বারা তিনি চেয়েছিলেন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি । কিন্তু হিন্দুদের মধ্যেও সরকার বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করলে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন । পুনা জেলে থাকাকালীন গান্ধিজি সরকারি বিভেদনীতির বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন । ক্রমশ ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে এবং গান্ধিজির জীবন সংশয় দেখা দেয় । 

এই সময় ড . বি . আর . আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৫ সেপ্টেম্বর পুনা চুক্তি সম্পাদন করেন । চুক্তি অনুযায়ী অনুন্নত সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের দাবি নাকচ করা হয়।তবে আইন সভায় অনুন্নত হিন্দুদের আসন সংখ্যা বাড়ানো হয় । এই চুক্তি ব্রিটিশ সরকার মেনে নেয় এবং গান্ধিজিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় । গান্ধিজি জেলে থাকাকালীন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই নভেম্বর লন্ডনে তৃতীয় গোল – টেবিল বৈঠকে কংগ্রেস যোগদান না করায় এই বৈঠকও ব্যর্থ হয় । জেল থেকে ফিরে এসে গান্ধিজি আবার আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । 

৯। কেপ্টেন সোহান সিং :- কেপ্টেন সোহান সিং ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্মদাতা । তিনি পূর্বে ব্রিটিশ – ভারত সেনাবাহিনীর একজন কেপ্টেন ছিলেন । ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপান ব্রিটিশ শাসনাধীন মালয় দ্বীপ আক্রমণ করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে । তখন কেপ্টেন সোহান সিং – এর সঙ্গে একটি ক্ষুদ্র সামরিক দল পালায় । কিন্তু জাপানী সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে । সোহান সিং জাপানী সৈনিকদের পরামর্শ মত যুদ্ধবন্দী ভারতীয় সৈনিকগণকে নিয়ে একটি ব্রিটিশ বিরোধী সেনাবাহিনী গঠন করেন । এই সেনাবাহিনীর নাম ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ । 

১০। আইন অমান্য আন্দোলন: 

উত্তরঃ ১৯২৯ সালে জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী উত্থাপন করে । ১৯৩০ সালে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়রূপে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । ১৯৩০ সালের ৬ ই এপ্রিল গান্ধিজি তাঁর অনুচরবর্গসহ লবণ আইন ভঙ্গে সমুদ্র উপকূলবর্তী ‘ ডাণ্ডি ’ অভিযান করেন । অনুচরবর্গসহ গান্ধিজিকে গ্রেপ্তার ও কংগ্রেসকে বেআইনী ঘোষণা করে । সারা দেশে আইন অমান্য ও বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলন শুরু হয় । আন্দোলন তীব্র হতে তীব্রতর হয় । ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে পরপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠক হলেও এইগুলি নিষ্ফল হওয়ায় গান্ধিজি পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । 

১১। মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কার ( ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ): 

উত্তরঃ ১৯১৯ সালে লর্ড চেমসফোর্ডের শাসনকালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয় । ১৯১৭ সালে ভারত সচিব মিঃ মন্টেগু ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন যে , ভারতবাসীকে স্বায়ত্ত শাসন দেওয়া হবে । পরে ভারত সচিব ও বড়লাট চেমফোর্ড সম্মিলিতভাবে যে ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন সেটি মন্টেগু চেমফোর্ড সংস্কার নামে পরিচিত । ১৯১৯ সালে একে ভিত্তি করে গভর্নমেন্ট অব ইণ্ডিয়া অ্যাক্ট নামে এক আইন পাশ করা হয় ।

ফলে ভারত শাসন নীতির নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় : 

( ১ ) সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের প্রতি প্রযোজ্য আইন প্রণয়নের জন্য দ্বি – কক্ষ সম্বলিত একটি আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় । তাদের নাম ব্যবস্থাপক সভা এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদ । 

( ২ ) কেন্দ্রীয় আইনসভায় দেশীয় জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত সভ্যের সংখ্যা বাড়ানো হল । 

( ৩ ) প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের উপর ন্যস্ত করা হল । 

( ৪ ) প্রত্যেক গভর্নরকে সহযোগিতা করবার জন্য এক একটি শাসন পরিষদের সৃষ্টি হল । 

( ৫ ) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রত্যেক প্রদেশে একটি করে প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। 

( ৬ ) প্রাদেশিক শাসনতন্ত্রকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হল— 

( i ) রক্ষিত । এবং 

( ii ) হস্তান্তরিত । 

রক্ষিত বিষয়গুলি গভর্নরের শাসন পরিষদের অধীনে থাকল । হস্তান্তরিত বিষয়গুলি দেশীয় মন্ত্রীদের হাতে ন্যস্ত হল । এইরূপ শাসনব্যবস্থা দ্বৈতশাসন বা ডায়াকী নামে পরিচিত হল । 

১২। রাওলাট আইন : 

উত্তরঃ ১৯১৯ সালের সাংবিধানিক সংস্কার মূলত ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নি । তাছাড়া বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ফলে সারা দেশে খাদ্যাভাব , মহামারী ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের দুর্দশা বেড়ে যায় । এইরূপ অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার শাসন সংস্কার দূরে রেখে কঠোর দমনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন । ১৯১৯ সালের ১৭ ই মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত হয় । এই আইন অনুসারে যে কোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটক রাখা যায় । 

১৩। ক্রীপসের প্রস্তাব : 

উত্তরঃ ১৯৪২ সালে জাপান কর্তৃক ফিলিপাইন , সিঙ্গাপুর , মালয় , ইন্দো চীন , ব্রহ্মদেশ ও ইন্দোনেশিয়া অধিকৃত হয় । জাপানের ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় । জাপানের সাফল্যে ভীত হয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতের জনগণের সাহায্য লাভের জন্য স্যার স্টাফোর্ড ক্রীপকে ভারতে পাঠায় । ১৯৪২ সালে ক্রীপস্ মিশন ভারতে একসঙ্গে ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নিম্নলিখিত প্রস্তাব সুপারিশ করে— 

( ১ ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেওয়া হবে ।

( ২ ) ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি সংবিধান সভা আহ্বান করা হয় ।

( ৩ ) গভর্নর জেনারেল কার্যনির্বাহক সভায় অধিক সংখ্যক ভারতীয় প্রতিনিধি নেওয়া হবে। 

( ৪ ) সংবিধান রচনার পূর্ববিধি প্রতিরক্ষার ভার ব্রিটিশ সরকারের উপর ন্যস্ত থাকবে । 

( ৫ ) যুদ্ধের সময় ভারতের নিরাপত্তা রক্ষা করা হবে । ক্রীপসের প্রস্তাবে ভারতের স্বাধীনতা দানের কোনো উল্লেখ না থাকায় কংগ্রেস তা গ্রহণ করেনি । আবার স্বাধীন মুসলীম প্রধান সাম্রাজ্য স্থাপনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মুসলিম লীগও একে প্রত্যাখ্যান করে । এই সমস্ত কারণে ক্রীপস্ মিশন কার্যত ব্যর্থ হয় । 

১৪। মন্ত্রী মিশন বা কেবিনেট মিশন : 

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালে শ্রমিকদল ইংল্যাণ্ডে ক্ষমতা গ্রহণ করে । প্রধানমন্ত্রী এট্লী ভারত সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৪৬ সালে ভারত সচিব প্যাথিক লরেন্স , বাণিজ্য সচিব স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস্ , নৌ – সচিব মিঃ আলেকজাণ্ডারকে নিয়ে গঠিত মন্ত্রীমিশন ভারতে প্রেরণ করেন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনায় ১৯৪৬ সালের ১৬ ই মে তারিখে ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য একট ‘ গণপরিষদ ’ এবং শাসন পরিচালনার জন্য একটি “ অন্তর্বর্তী সরকার ” গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় । এতে পাকিস্তান প্রস্তাব বাতিল করা হয় । কংগ্রেস এই প্রস্তাব মেনে নেয় । প্রতিবাদে মুসলিম লীগ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় । 

১৫। ভারত ত্যাগ আন্দোলন : 

উত্তরঃ ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । ভারতবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতকে যুদ্ধে জড়ানো হয় । ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপকে ভারতে প্রেরণ করে । কিন্তু ক্রীপস্ মিশন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি । ক্রীপস্ মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৪২ সালের বোম্বাই ( মুম্বাই ) কংগ্রেসে ভারত ত্যাগ প্রস্তাব গৃহীত হয় । সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয় । অনেক নেতা কারাবরণ করেন । সমগ্র ভারতে গণবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে । জনগণ “ করেঙ্গে -ইয়ে – মরেঙ্গে ” ধ্বনি দিতে দিতে গ্রেপ্তার বরণ করেন । বিদ্রোহ দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার জনসাধারণের উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে । এই আন্দোলন “ আগস্ট বিপ্লব ” বা “ ভারত ত্যাগ আন্দোলন ” নামে পরিচিত । 

১৬। মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা :

উত্তরঃ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের গভর্নর জেনারেল । লর্ড ওয়াভেলকে অপসারিত করে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় পদে নিযুক্ত করা হয় । মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে শাসনভার গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালের ৩ রা জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘোষণা করলেন । এই ঘোষণায় বলা হল যে— 

( ১ ) মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলির বাসিন্দাগণ যদি ইচ্ছা করে তবে তারা পৃথক ডোমিনিয়ন গঠন করতে পারবে , কিন্তু সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাব ভাগ করার প্রয়োজন দেখা দেবে। 

( ২ ) উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তানে যোগদান করতে চায় কিনা তা সেখানকার জনগণের গণভোট দ্বারা স্থির হবে । 

( ৩ ) শ্রীহট্ট জেলা পাকিস্তানে যোগদান করতে চায় কিনা তাও গণভোট দ্বারা স্থির হবে । 

( ৪ ) বাংলা ও পাঞ্জাবের কোন্ কোন্ অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমা নির্ধারণ কমিশন নিয়োগ করা হবে । 

( ৫ ) ব্রিটিশ পার্লামেণ্ট অনতিবিলম্বে ভারতবর্ষকে একটি এবং পাকিস্তান গঠনের সপক্ষে মত হলে দুটি ডোমিনিয়নে পরিণত করতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করবে । 

তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা ভিন্ন গত্যন্তর ছিল না ।

১৭। রাসবিহারী বসু : 

উত্তরঃ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী । তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অবতীর্ণ হন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসু দেশ থেকে পলায়ন করে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন । সেখানে তিনি ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স লীগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন । তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন । রাসবিহারী বসু আজাদ হিন্দু ফৌজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন ।

১৮। ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেস লীগ : 

উত্তরঃ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু দেশ থেকে পলায়ন করে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন । তিনি ১৯৪২ সালের মার্চ মাসের শেষে টোকিও প্রবাসী ভারতীয় গণের সহায়তায় ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁকে এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় । এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা । একটি অভিবর্তনের মাধ্যমে একটি কার্যকরী পরিষদ গঠন করে রাসবিহারী বসুকে সভাপতি এবং সোহান সিংকে এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয় । 

১৯। অন্তর্বর্তী সরকার : 

উত্তরঃ মন্ত্রী – মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় । মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকার বয়কট করে । অন্তর্বর্তী সরকারে মোট ১২ জন মন্ত্রী ছিলেন । এর মধ্যে ছিলেন ৬ জন কংগ্রেস , কংগ্রেসের ১ জন ও লীগ বহির্ভূত ২ জন মুসলমান , শিখ , ভারতীয় খ্রিস্টান পার্শী সম্প্রদায়ের ৯ জন করে সদস্য মন্ত্রীসভায় যুক্ত হন । শেষপর্যন্ত মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগদান করে । খিলাফৎ আলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থদপ্তরের দায়িত্ব পান । কিন্তু মন্ত্রীসভার মধ্যে কংগ্রেস ও লীগ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে অক্ষম হয় । তাদের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ বাড়ে । ফলে সুষ্ঠুভাবে নীতি নির্দ্ধারণ ও শাসন পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

শুদ্ধ উত্তরটি বেছে উত্তরটির পাশে টিক্  ( √ ) চিহ্ন দাও: 

১। ভারতরক্ষা আইন প্রবর্তিত হয়— 

( i ) ১৯৯০ সালে 

( ii ) ১৯১১ সালে 

( iii ) ১৯১৪ সালে

( iv ) ১৯১৬ সালে  

উত্তরঃ ( iii ) ১৯১৪ সালে ( √ )।

২। গান্ধিজি কত সালে চম্পারণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন ? 

( i ) ১৯১৭ সালে 

( ii ) ১৯১৯ সালে

( iii ) ১৯৩০ সালে

( iv ) ১৯৪২ সালে

উত্তরঃ ( i ) ১৯১৭ সালে ( √ )।

৩। জওহরলাল নেহেরু সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন 

( i ) ১৯২৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর 

( ii ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি 

( iii ) ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি 

( iv ) ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট 

উত্তরঃ ( i ) ১৯২৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ( √ )।

৪। গান্ধিজির কল্পনা করা গ্রাম – স্বরাজের মধ্যমণি ছিলেন— 

( i ) গ্রাম 

( ii ) পঞ্চায়েত 

( iii ) শহর

( iv ) সংসদ 

উত্তরঃ ( ii ) পঞ্চায়েত ( √ )।

৫। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল— 

( i ) ১৯২০ সালে 

( ii ) ১৯৩০ সালে

( iii ) ১৯৪২ সালে 

( iv ) ১৯২৬ সালে

উত্তরঃ ( i ) ১৯২০ সালে ( √ )।

৬। আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল— 

( i ) ১৯২০ সালে 

( ii ) ১৯৩০ সালে

( iii ) ১৯৩৩ সালে 

( iv ) ১৯৪২ সালে

উত্তরঃ ( i ) ১৯৩০ সালে ( √ )।

৭। হোমরুল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

( i ) অ্যানি বেসান্ত 

( ii ) মহাত্মা গান্ধি 

( iii ) জওহরলাল নেহেরু 

( iv ) গোপাল কৃষ্ণ গোখলে

উত্তরঃ ( i ) অ্যানি বেসান্ত ( √ )।

৮। কোন দিনটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদ্‌যাপন করা হয়েছিল ? 

( i ) ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট

( ii ) ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি 

( iii ) ১৯৩০ সালের ১৫ ই আগস্ট

( iv ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি

উত্তরঃ ( iv ) ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ( √ )।

৯। শের – ই পাঞ্জাব কাকে বলা হয় ? 

( i ) চন্দ্রশেখর আজাদ 

( ii ) লালা লাজপত রায়

( iii ) রঞ্জিত সিং    

( iv ) গুরু গোবিন্দ সিং

উত্তরঃ ( ii ) লালা লাজপত রায় ( √ )।

১০। “ স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার ; এবং আমি ইহা ― চাই – ই ” উক্তিটি করেছিলেন 

( i ) লোকমান্য তিলক

( ii ) মহাত্মা গান্ধি

( iii ) গোপাল কৃষ্ণ গোখলে

( iv ) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল

উত্তরঃ ( i ) লোকমান্য তিলক ( √ )।

১১। গান্ধিজি কত সালে লণ্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন ?

( i ) ১৯৩০ সালে

( ii ) ১৯৩১ সালে

( iii ) ১৯৩২ সালে

( iv ) ১৯৩৩ সালে

উত্তরঃ ( i ) ১৯৩০ সালে ( √ )।

১২। পুণা চুক্তি কখন সম্পাদিত হয় ?

( i ) ১৯৩১ সালে

( ii ) ১৯৩০ সালে

( iii ) ১৯৩৩ সালে

( iv ) ১৯৩৮ সালে

উত্তরঃ ( iii ) ১৯৩৩ সালে ( √ )।

১৩। স্বাধীন ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন ―

( i ) মতিলাল নেহেরু 

( ii ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন 

( iii ) রাজা গোপালাচারী ) 

( iv ) ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ 

উত্তরঃ ( ii ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন ( √ )।

১৪। ভারতের স্বাধীনতার সময় ইংল্যাণ্ডের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন— 

( i ) উইনস্টোন চার্চিল 

( ii ) গ্লেডস্টোন

( iii ) ক্লিমেণ্ট এট্‌লী

( iv ) ডিজরেলি 

উত্তরঃ ( iii ) ক্লিমেণ্ট এট্‌লী ( √ )।

১৫। কোন ভারতীয় মনীষীর পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা হয় ? 

( i ) পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 

( ii ) রাজা রামমোহন রায় 

( iii ) গোবিন্দ রানাডে 

( iv ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 

উত্তরঃ ( iii ) গোবিন্দ রানাডে ( √ )।

Thank You for Visiting – Roy Library

1 thought on “SEBA Class 10 Social Science Chapter 2 মহাত্মা গান্ধি ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ”

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top