Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Board Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of Assam SEBA Board Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ Notes in Bengali PDF Download. Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ Suggestions in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 10 Social Science Chapter 5 ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরণ Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
প্রথম খণ্ড ইতিহাস
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর:
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
প্রশ্ন ১। সিন্ধু সভ্যতার পূর্ব সীমা গাঙ্গেয় উপত্যকার কোন স্থান অবধি বিস্তৃত ছিল ?
উত্তরঃ মিরাট পর্যন্ত ।
প্রশ্ন ২। সিন্ধু সভ্যতায় নাগরিক সংস্কৃতির বিকাশ কখন হয়েছিল ?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে ।
প্রশ্ন ৩। ঋবেদের আনুমানিক রচনাকাল কত ?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ পর্যন্ত।
প্রশ্ন ৪। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীকের ‘ সত্যমেব জয়তে ‘ এই বাক্যটি মূলত কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উত্তরঃ মুণ্ডক উপনিষদ হতে ।
প্রশ্ন ৫। প্রাচীন ভারতে রচিত রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম কী ?
উত্তরঃ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ।
প্রশ্ন ৬। ‘ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ‘ ( Unity in Diversity ) এই বাক্যাংশ কোন গ্রন্থের মাধ্যমে স্থায়িত্ব লাভ করেছে ?
উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর “ ভারতসম্ভেদ ” গ্রন্থের মাধ্যমে ।
প্রশ্ন ৭। ভারতের ভাস্কর্য শিল্পকলার কোন শৈলীতে গ্রিক – রোমান কলা কৌশলের প্রয়োগ হয়েছিল ?
উত্তরঃ গান্ধার শিল্প ।
প্রশ্ন ৮। ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র কখন রচিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ২০০ হতে খ্রিস্টাব্দ ২০০ পর্যন্ত সময়ে ।
প্রশ্ন ৯। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে কতটি শ্লোক আছে ?
উত্তরঃ মোট ৬০০০ টি শ্লোক ।
প্রশ্ন ১০। হেরাকা আন্দোলন কী ?
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী রানী গৈদালু কর্তৃক নাগাল্যাণ্ডের পরম্পরাগত ধর্মবিশ্বাস তথা সংস্কৃতি সংরক্ষণ তথা পুনঃপ্রবর্তন করার উদ্দেশে হেরকা আন্দোলন গড়ে তোলেন ।
প্রশ্ন ১১। নাগাল্যাণ্ডের ‘ হর্নবিল ’ উৎসব কোন প্রাণীর নামে উৎসর্গিত ?
উত্তরঃ ধনেশ পাখির নামে ।
প্রশ্ন ১২। চপচর কূট ’ কোন রাজ্যের পরম্পরাগত উৎসব ?
উত্তরঃ মিজোরামের ।
Sl. No. | সূচিপত্র |
প্রথম খণ্ড: ইতিহাস | |
অধ্যায়-১ | বঙ্গ বিভাজন ( ১৯০৫–১৯১১ ) ও স্বদেশী আন্দোলন |
অধ্যায়-২ | মহাত্মা গান্ধি এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম |
অধ্যায়-৩ | অসমে ব্রিটিশ বিরোধী জাগরণ এবং কৃষক বিদ্রোহ |
অধ্যায়-৪ | স্বাধীনতা আন্দোলন এবং অসমে জাতীয় জাগরণ |
অধ্যায়-৫ | ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য |
দ্বিতীয় খণ্ড: ভূগোল | |
অধ্যায়-১ | অর্থনৈতিক ভূগোল: বিষয়বস্তু এবং সম্পদ |
অধ্যায়-২ | পরিবেশ ও পরিবেশের সমস্যা |
অধ্যায়-৩ | পৃথিবীর ভূগোল |
অধ্যায়-৪ | অসমের ভূগোল |
তৃতীয় খণ্ড: রাজনীতি বিজ্ঞান | |
অধ্যায়-১ | ভারতীয় গণতন্ত্র |
অধ্যায়-২ | আন্তর্জাতিক সংস্থা ― রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য |
অর্থনীতি বিজ্ঞান | |
অধ্যায়-১ | মুদ্রা এবং ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা |
অধ্যায়-২ | অর্থনৈতিক উন্নয়ন |
প্রশ্ন ১৩। মিজো শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ পাহাড়ের বাসিন্দা ।
প্রশ্ন ১৪। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের কোন রাজ্যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত ?
উত্তরঃ মেঘালয়ে ।
প্রশ্ন ১৫। মণিপুরী নৃত্যের মূল বিষয়বস্তু কী ?
উত্তরঃ ধ্রুপদী নৃত্য ।
প্রশ্ন ১৬। অসমের প্রাচীন নাম কী ছিল ?
উত্তরঃ প্রাগ্জ্যোতিষপুর ।
প্রশ্ন ১৭। কোন বড়োমূলীয় শব্দ থেকে অসম নামটির উৎপত্তি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় ?
উত্তরঃ আ – চাম ( হা – চাম ) ।
প্রশ্ন ১৮। চর্যাপদ মানে কী ?
উত্তরঃ প্রাচীন লিখিত সাহিত্য ।
প্রশ্ন ১৯। চর্যাপদ কখন রচিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় দশম শতক হতে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত সময়সীমায় ।
প্রশ্ন ২০। মাধব কন্দলি কার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে সপ্তকাণ্ড রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন ?
উত্তরঃ রাজা মহামাণিক্য ও অন্যান্য কয়েকজন কামতা রাজা ।
প্রশ্ন ২১। অসমের গদ্য সাহিত্যের সূচনা কে করেছিল ?
উত্তরঃ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ।
প্রশ্ন ২২। জিকির ও জারি ‘ কে রচনা করেছিল ?
উত্তরঃ আজান পীর ( শাহমিলন ) ।
প্রশ্ন ২৩। আজান পীর কে ?
উত্তরঃ সুফী সাধক ।
প্রশ্ন ২৪। আজান পীর কখন অসম এসেছিল ?
উত্তরঃ গদাধর সিংহের রাজত্বকালে ।
প্রশ্ন ২৫। দ – পর্বতীয়ার শিলার তোরণটি কখন নির্মিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ।
প্রশ্ন ২৬। চাংরুং ফুকন কোন দায়িত্বে ন্যস্ত ছিলেন ?
উত্তরঃ আহোম শাসন ব্যবস্থায় মঠ – মন্দির , রাস্তাঘাট , প্রাসাদ , ঘরবাড়ির নির্মাণকার্যে মাপজোখের দায়িত্বে ন্যস্ত ছিল ।
প্রশ্ন ২৭। লোকসংগীতে অবদানের জন্য অসমের কোন শিল্পীকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ প্রতিমা পাণ্ডে বরুয়া ।
প্রশ্ন ২৮। অসমের প্রথম সংবাদপত্রটির নাম কী ?
উত্তরঃ অরুণোদয় ।
প্রশ্ন ২৯। অস্ট্রিক নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত উত্তর – পূর্বাঞ্চলের জনজাতিটির নাম কী ?
উত্তরঃ খাসিয়া ।
প্রশ্ন ৩০। রচয়িতাগণের নাম লেখো :
গ্রন্থ |
( ক ) অর্থশাস্ত্র |
( খ ) হস্তিবিদ্যার্ণব |
( গ ) কীর্তন |
( ঘ ) নামঘোষা |
( ঙ ) চোরধরা পিম্পরা গুচোয়া |
( চ ) কালীয়দমন |
( ছ ) রামবিজয় |
( জ ) কথাগীতা |
( ঝ ) রাজতরঙ্গিণী |
( ঞ ) ভারত সম্ভেদ |
উত্তরঃ
গ্রন্থ | রচয়িতা |
( ক ) অর্থশাস্ত্র | ( ক ) কৌটিল্য ( চাণক্য ) |
( খ ) হস্তিবিদ্যার্ণব | ( খ ) সুকুমার বরকাইত |
( গ ) কীর্তন | ( গ ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেব |
( ঘ ) নামঘোষা | ( ঘ ) মাধবদেব |
( ঙ ) চোরধরা পিম্পরা গুচোয়া | ( ঙ ) মাধবদেব |
( চ ) কালীয়দমন | ( চ ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেব |
( ছ ) রামবিজয় | ( ছ ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেব |
( জ ) কথাগীতা | ( জ ) ভট্টদেব |
( ঝ ) রাজতরঙ্গিণী | ( ঝ ) কালহান |
( ঞ ) ভারত সম্ভেদ | ( ঞ ) পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু |
সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
প্রশ্ন ১। খ্রিস্টিয় ষষ্ঠ শতকের পর ভারতে এসেছে এমন দুটি বিদেশী জাতির নাম লেখো ।
উত্তরঃ আর্যজাতি ও দ্রাবিড় জাতি ।
প্রশ্ন ২। সিন্ধু উপত্যকায় আবিষ্কৃত এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত দুটি মূর্তির নাম লেখো ।
উত্তরঃ পশুপতি মূর্তি ও শিবলিঙ্গ ৷
প্রশ্ন ৩। অস্ট্রিকরা ভারতীয় সংস্কৃতি জগতে যে অবদান রেখেছে তার মধ্যে থেকে যে – কোনো দুটি অবদানের উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ অবদান দুটি হল—
( ক ) ধর্মীয় পরম্পরায় হলদি ও সিন্দুরের ব্যবহার।
( খ ) হাতি পোষ মানানো ।
প্রশ্ন ৪। ভারতীয় সংস্কৃতি জগতের বর্ণাঢ্যতায় ভৌগোলিক পরিবেশের ভূমিকা বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ ভারতীয় সংস্কৃতির বর্ণাঢ্যতার উৎপত্তি তথা সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে দেশের বিশালতা এবং ভৌগোলিক পরিস্থিতি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে । কৃষি উপযোগী উর্বর ভূমি , যাতায়াত ও যোগাযোগের সুবিধা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গুণে কোন অঞ্চল হয়তো আর্থিকভাবে অধিকমাত্রায় স্বচ্ছল এবং অপর সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্পর্শে এর উৎকর্ষতা বাড়ায়। আবার এই সকল সুবিধার অভাবে অপর অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন , কষ্টসাধ্য জীবন – যাপন করছে এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিও হচ্ছে না ।
প্রশ্ন ৫। বেদের চারটি সংহিতার নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) ঋকবেদ সংহিতা ।
( খ ) যজুঃবেদ সংহিতা ।
( গ ) সামবেদ সংহিতা । ও
( ঘ ) অথর্ববেদ সংহিতা ।
প্রশ্ন ৬। সম্রাট অশোকের দ্বাদশ মুখ্য শিলালিপিতে ধর্মীয় উদারতা বিষয়ে কী কথা লেখা আছে ?
উত্তরঃ অহিংসা পরম ধর্ম ।
প্রশ্ন ৭। সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ মানে কী ?
উত্তরঃ সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ বলতে কোন একটি সমাজের সাংস্কৃতিক বিবিধতা এবং বিবিধতার প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাবকে বোঝায় ।
প্রশ্ন ৮। ভারতের প্রাচীন যুগের দুজন বিজ্ঞানীর নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) আর্যভট্ট ।
( খ ) বরাহমিহির ।
প্রশ্ন ৯। প্রাচীন ভারতের দুটি চিকিৎসাশাস্ত্রের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) চরক সংহিতা ।
( খ ) সুশ্ৰুত সংহিতা ।
প্রশ্ন ১০। ভারতীয় চিত্রকলাকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায় ?
উত্তরঃ ভারতীয় চিত্রকলাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় । যথা—
( ক ) বৃহদাকার দেয়ালচিত্র ।
( খ ) ক্ষুদ্রাকার চিত্র ।
প্রশ্ন ১১। চিত্রকলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এমন দুজন মোগল বাদশাহের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) শাহজাহান ।
( খ ) জাহাঙ্গীর ।
প্রশ্ন ১২। ক্ষুদ্রাকার চিত্রযুক্ত অসমের দুখানি সাঁচিপতীয়া পুথির নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) আনন্দলহরী ।
( খ ) হস্তীবিদ্যার্ণব ।
প্রশ্ন ১৩। হস্তিবিদ্যার্ণব গ্রন্থটির দুজন চিত্রকরের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) দিলবর ।
( খ ) দোসর ।
প্রশ্ন ১৪। জুম চাষ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ পাহাড়ী জনজাতী পাহাড়ের ঢালু অঞ্চলে বনজঙ্গল পরিস্কার করে শাকসব্জী , ধান , মকাই প্রভৃতি চাষ করে । একেই বলা হয় জুমখেত ।
প্রশ্ন ১৫। জেং বিহু মানে কী ?
উত্তরঃ উজান অসমের মহিলাগণ নির্জন স্থানে পুরুষ মানুষকে না দেখিয়ে প্রেম ও যৌবনের অনুভূতি প্রকাশক গান ও নৃত্যের মাধ্যমে বিহু পালন করে । এটাই হল জেং বিহু ।
প্রশ্ন ১৬। ওজাপালির দুটি ভাগের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) ব্যাস ওজা ।
( খ ) সুকনান্নী ওজা ।
প্রশ্ন ১৭। প্রাচীন ভারতবর্ষের দুজন দার্শনিকের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) কপিল ।
( খ ) পতঞ্জলি ।
প্রশ্ন ১৮। আহোম রাজত্বকালে রচিত দুখানি বুরঞ্জীর নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) দেওধাই বুরঞ্জী ।
( খ ) কাছাড়ী বুরঞ্জী ।
প্রশ্ন ১৯। বিহুর সমধর্মী নিম্ন অসমে উদ্যাপিত দুটি স্থানীয় উৎসবের উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বিহুর সমধর্মী হিসাবে নিম্ন অসমে উদ্যাপিত হওয়া দুটি স্থানীয় উৎসব হল — দরং জেলার দেউল ও পুরানো কামরূপের উঠেলি ।
প্রশ্ন ২০। দরঙের দুরকম লোকনৃত্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ ( ক ) ঢেপাঢুলীয়া ।
( খ ) বরঢুলীয়া ।
প্রশ্ন ২১। ভারতের প্রধান নৃগোষ্ঠীগুলি কী কী ?
উত্তরঃ ভারতের প্রধান নৃগোষ্ঠীগুলি হল — অষ্ট্ৰলয়ভ অথবা অষ্ট্রিক , মংগোলীয় গোষ্ঠী এবং পশ্চিম এশিয়া হতে আগত প্রশস্ত সম্ভিকী গোষ্ঠীর লোক ।
প্রশ্ন ২২। ভারতীয় সংস্কৃতিতে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিকারী তিনটি কারকের কথা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ভারতীয় সংস্কৃতিতে অনেকের মধ্যে একতা সৃষ্টিকারী তিনটি কারক হল—
( ক ) হিন্দুধর্মের স্বকীয় বহুত্ববাদীতা তথা উদারতা।
( খ ) রাজনৈতিক একতার ইতিহাস । ও
( গ ) শাসকগণের ধর্মীয় তথা সাংস্কৃতিক উদারতা।
প্রশ্ন ২৩। প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য নিদর্শনগুলিকে প্রধানত কী কী ভাগে ভাগ করা হয়েছে ?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য নিদর্শনকে মন্দির – মঠ , স্তূপ প্রভৃতি ধর্মীয় উপাসনা গৃহসমূহকে ভাগ করা যায় । সুলতানী ও বাদশাহী যুগের মুখ্যত চার প্রকার স্থাপত্য দেখা যায়— মসজিদ , মঞ্জিল , মাবোয়ারা ও মিনার ।
প্রশ্ন ২৪। ভারত এবং উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে , ‘ সাংস্কৃতিক একতার জালিকা ’ বলতে কী বোঝ লেখো ।
উত্তরঃ উত্তর – পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যে অনেক গোষ্ঠীগত লোক বসবাস করে থাকে । পরম্পরাগত পোশাক , নৃত্যগীত , বাদ্য , উৎসব , লোকবিশ্বাস , রীতিনীতি প্রভৃতি বর্ণময় সংস্কৃতি প্রতিটি রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায় । ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি উপজাতি।তাদের পৃথক পৃথক স্বকীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির সংরক্ষণ তথা সংবর্জন করে দেখার সময়ে অপরের কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে সহবর্তিতা ও সম্মানের ভাব পোষণ করা দেখা যায়। বিবিধতার সেই অনুভব করা মানসিক প্রশিক্ষা যুগ যুগ ধরে লাভ করে ভারতীয়রা একধরনের পরিপক্কতা লাভ করেছে ।
প্রশ্ন ২৫। UNESCO- র দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্র হিসাবে তালিকাভুক্ত ভারতের তিনটি স্থাপত্যের উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ UNESCO- র দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়া ভারতের তিনটি স্থাপত্য –
( ক ) সাঁচীর স্তূপ ।
( খ ) অজস্তার গুহাসমূহ । এবং
( গ ) তাজমহল ।
প্রশ্ন ২৬। ভারতের ভাস্কর্য শিল্পের ক্ষেত্রে কী কী মূর্তি নির্মাণ করতে দেখা যায় ?
উত্তরঃ ভারতীয় ভাস্কর্য শিল্পে একেবারে সহজ , সরল , সমানুপাতিক মূর্তি থেকে শুরু করে দ্বিভঙ্গ , ত্রিভঙ্গ , চতুর্ভঙ্গ , সমানুপাতিক , পোশাক অলংকার , নিখুত অলংকারে সুসজ্জিত মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল ।
প্রশ্ন ২৭। ভারতের ভাস্কর্য শিল্প কলার তিনটি প্রধান শৈলী কী কী ?
উত্তরঃ ভারতীয় ভাস্কর্য শিল্পকলার তিনটি প্রধান শৈলী হল—
( ক ) গান্ধার শিল্পকলা ।
( খ ) মথুরা শিল্পকলা । ও
( গ ) অমরাবতী শিল্পকলা ।
প্রশ্ন ২৮। দেয়াল চিত্রের নিদর্শন মেলে ভারতের এমন তিনটি স্থানের নাম উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ দেয়াল চিত্রের নিদর্শন থাকা তিনটি স্থান হল—
( ক ) মহারাষ্ট্রের অজস্তা ।
( খ ) মধ্যপ্রদেশের বাঘ । ও
( গ ) তামিলনাড়ুর চিওনায়াচল ।
প্রশ্ন ২৯। মোগল যুগের ক্ষুদ্রাকার চিত্র সম্বলিত তিনটি গ্রন্থের নাম লেখো ।
উত্তরঃ মোগল যুগের ক্ষুদ্রাকার চিত্র সম্বলিত তিনখানি গ্রন্থ হল—
( ক ) পাদসাহনামা ।
( খ ) তুতিনামা । ও
( গ ) জাহাঙ্গীর নামা ।
প্রশ্ন ৩০। চিত্রকলার ষড়ঙ্গ মানে কী বোঝ ?
উত্তরঃ চিত্রকলার ষড়ঙ্গ হল–
( ক ) আকৃতি ।
( ২ ) জোখ – মাখ ।
( ৩ ) আবেগ অনুভূতি প্রকাশক কৌশল ।
( ৪ ) কলাত্মক উপস্থাপন ।
( ৫ ) সাদৃশ্য জ্ঞান । ও
( ৬ ) তুলি ব্যবহারের নিয়ম ।
প্রশ্ন ৩১। ভারতের যোগবিদ্যা বিষয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ যোগবিদ্যা ভারতের এক গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সমগ্র মানব সমাজে এটি এক অনবদ্য অবদান । সিন্ধু সভ্যতার সময়ে ভারতীয়গণ যৌগিক জ্ঞানের অধিকারী ছিল বলে অনুমান করা যায় । বৈদিকযুগে এই বিদ্যার বহুল চর্চা হয়েছিল । আনুমানিক দ্বিতীয় শতকে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগসূত্র নামের গ্রন্থ সংকলন করে এই বিদ্যাকে এক সু – সংহত রূপ দিয়েছিলেন । পতঞ্জলির যোগ পদ্ধতিতে নিয়ম , আসন , প্রাণায়াম , প্রত্যাহার , ধ্যান ধারণা, সমাধি ও ক্ষম নামে “ অষ্টাঙ্গ ” কর্তব্যের বিধান দেওয়া হয়েছে । যোগবিদ্যার কার্যকারিতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রসংঘ ২১ শে জুন তারিখটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগদিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে ।
প্রশ্ন ৩২। ভারতের স্থাপত্যকলার তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ ভারতীয় স্থাপত্য কলার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
( ক ) ভারতীয় স্থাপত্যশিল্প রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সম্ভব হয়েছিল ।
( খ ) শিল্প নির্মিত মঠ – মন্দিরগুলির নির্মাণ শৈলীকে প্রধানত ভারতীয় নীগড় , দক্ষিণ ভারতীয় দ্রাবিড় ও বিন্ধ্য ও কৃষ্ণা নদীর মধ্যভাগে দেখতে পাওয়া শৈলী এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায় ।
( গ ) উত্তর ভারতের মন্দিরগুলির শিখর অর্দ্ধ বৃত্তাকার এবং দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরগুলির শিখর আয়তাকার ক্রমে উপর হতে সরু ।
প্রশ্ন ৩৩। রঙালি বিহুর সাতদিনকে কী কী নামে জানা যায় ?
উত্তরঃ রঙ্গালি বিহুর সাতদিনকে গরু বিহু , মানুষ বিহু , গোসাই বিহু , কুটুম বিহু , সেনেহী বিহু , মেলা বিহু এবং চেরা বিহু নামে জানা যায় ।
প্রশ্ন ৩৪৷ কামরূপী লোকগীত এবং গোয়ালপাড়িয়া লোকগীতের মূল বিষয়বস্তু কী ?
উত্তরঃ কামরূপী লোকগীতি এবং গোয়ালপাড়িয়া লোকগীতিগুলি প্রধানত জীবনের সুখ – দুখ, দেহের ভঙ্গিমা , জীবনে ঈশ্বরের চিন্তার গুরুত্ব , দেবদেবীর প্রশস্তি প্রভৃতি প্রকাশমূলক গান । এর ওপর গোয়ালপাড়িয়া লোকগীত স্থানীয় কিংবদন্তী তথা হাতি ধরা ও পোষ মানানো বিষয় নিয়ে রচিত।
প্রশ্ন ৩৫। অসমের প্রাচীন নাম কামরূপ ও প্রাগ্জ্যোতিষের উল্লেখ আছে এমন তিনটি গ্রন্থের নাম লেখো ।
উত্তরঃ রামায়ণ , মহাভারত , বিষ্ণুপুরাণ ও অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থে অসমের প্রাচীন নাম কামরূপ ও প্রাগজ্যোতিষপুরের উল্লেখ রয়েছে ।
দীর্ঘ উত্তর লেখো :
প্রশ্ন ১। ভারতের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের উৎপত্তি এবং বিকাশের কথা সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ ভারতবর্ষ এক বিশাল দেশ । এই বিশাল দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সার্বিক বৈচিত্র্য । ভারতবর্ষের ভৌগোলিক অবস্থান , জাতি , ধর্ম , ভাষা , আচার – অনুষ্ঠান ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনন্য বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ । ভারত জীবনের অনন্যতা হল এর মূলগত ঐক্য ও মিশ্র সংস্কৃতি । ভারতবাসীর কতকগুলি সুনির্দিষ্ট মানসিক ও নৈতিক চেতনা এবং মূল্যবোধ এত বৈচিত্র্য ও বিভেদের মধ্যেও গভীর ঐক্যবোধ দ্বারা একে একসূত্রে গেঁথে রেখেছে ।
অনেককাল ধরে শক , হন , গ্রিক , পারসিক , পাঠান , মোগল প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ভারত ভূমিতে প্রবেশ করেছে । তারা ক্রমান্বয়ে ভারতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । সেইহেতু ভারতের জনগোষ্ঠীতে আর্য , দ্রাবিড় , মঙ্গোলীয় , নেগ্রিটো প্রভৃতি বিভিন্ন অবয়ব ও বর্ণের মানুষের অস্তিত্ব দেখা যায় । এমন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী খুব কম দেশে দেখা যায় । তাদের ভাষা ও ধর্মের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা লক্ষ্য দেখা যায় । ভারতবাসীর মধ্যে প্রচলিত মূল ভাষার সংখ্যা প্রায় ৫ টি এবং উপভাষার সংখ্যা একশতেরও বেশি । ভারতের ভাষাগত বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্যসূত্রের কাজ করেছে সংস্কৃত ভাষা । হিন্দি , বাংলা , মারাঠি , ভোজপুরী , তামিল , তেলেগু , মালয়ালাম প্রভৃতি ভাষার উপর সংস্কৃত ভাষার প্রভাব গভীর।
ভারতবাসীর ধর্মবিশ্বাসও এই চিরন্তন ঐক্যের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে আসছে । হিন্দু , বৌদ্ধ , জৈন প্রভৃতি ধর্মপ্রচারকগণ আসমুদ্র হিমাচল পরিভ্রমণ করে মানব ধর্মের বাণী প্রচার করেছেন । ভারতীয় সংস্কৃতি পৃথিবীর সকল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । বর্তমানে প্রাচীন গ্রিস , মিশর , রোমান সংস্কৃতির কোনো চিহ্ন দেখা যায় না । কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি তার নিজস্বতা বজায় রেখে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতিকে পুষ্ট করেছে ।
প্রশ্ন ২। “ ভারতের প্রাচীন যুগে রচিত সংস্কৃত সাহিত্যসম্ভারে ভারতীয় সভ্যতা – সংস্কৃতির আত্মা নিহিত হয়ে আছে বললে সম্ভবত অত্যুক্তি করা হবে না । ” — বাক্যটির ভাবার্থ আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ভারতের প্রাচীন যুগে রচিত সংস্কৃত সাহিত্যরাজিতে ভারতীয় সভ্যতা – সংস্কৃতির আত্মা নিহিত আছে । বেদের সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক প্রভৃতি উপনিষদগুলি , রামায়ণ ও মহাভারত , গীতা , পুরাণগুলি , বেদাঙ্গগুলি , রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র , চিকিৎসা বিষয়ক চরক সংহিতা , কালিদাস , শূদ্রক , ভাস , বাণভট্ট প্রমুখ লেখকের বিশুদ্ধ সাহিত্যরাজি ভারতীয় সাহিত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন । এই গ্রন্থগুলির সৃষ্টিকর্তা মনীষীগণের কঠোর সাধনার দ্বারা আহরণ করা গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও অক্লান্ত বৌদ্ধিক সাধনার ফসল ।
এই গ্রন্থগুলিতে ভারতবাসীর সমাজ ব্যবস্থা , মনস্তত্ত্ব , সাহিত্য চেতনা , সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐক্যবোধ প্রভৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল । হিন্দু ধর্মের চতুর্বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা , পিতা – মাতা , গুরু , অতিথি , বিদ্যা ও বিদ্যানের প্রতি ভারতীয় সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধার শিক্ষা এই গ্রন্থগুলিতে প্রসার করেছিল । সেইভাবে জন্ম জন্মান্তরবাদ , অবতার বাদ , মোক্ষ , স্বর্গ , নরক , পাপ পুণ্য প্রভৃতির ধারণাও এই গ্রন্থগুলিতে জনপ্রিয় করে তুলেছে । এই গ্রন্থরাজিতে যারা “ সত্যমেব জয়তে ” ( মুণ্ডক উপনিষদ ) , “ অহিংসা পরমধর্ম ” ( মহাভারত ) , জননী “ জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি ” গরিয়সী ( রামায়ণ ) , “ বসুধৈব কুটুম্বকম ” প্রভৃতি বাণীসমূহ ভারতে মূল্যবোধের ভীত গড়ে দিয়েছে ।
প্রশ্ন ৩। ভারতের ধর্মীয় ঐতিহ্য বিষয়ে যা জান লেখো ।
উত্তরঃ আর্য সংস্কৃতির বিস্তারকালে এর সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতিগুলোর সংমিশ্রণ ঘটেছিল । এর ফলে আর্য কৃষ্টি – সংস্কৃতির মূল রূপটির পরিবর্তন ঘটে । অপরদিকে পূর্বের জনগোষ্ঠীসমূহও আর্য সংস্কৃতি থেকে উপাদান গ্রহণ করেছিল । সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক , উপনিষদসমূহ , মহাকাব্যদ্বয় , পরবর্তীকালে রচিত পুরাণ , স্মৃতি , বেদাঙ্গসমূহের এই রূপান্তরণের আভাস পরিলক্ষিত হয় ।
সিন্ধু সভ্যতার যুগে ধর্ম ব্যবস্থায় উপাস্য দেবতার বিভিন্নতা দেখা যায় । বৈদিক ধর্ম ব্যবস্থাতে বহু দেব – দেবীর সঙ্গে একেশ্বরবাদের ধারণাও বিদ্যমান ছিল । এইভাবে ভারতের প্রাচীনতম ধর্মীয় পরম্পরা তাদের বিশ্বাস , রীতি – নীতির ক্ষেত্রে সহবর্তিতা , সংযোজন ও সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে এক দ্বিধাহীন নীতি গ্রহণ করেছিল । এর সঙ্গে বর্তমান নীতির সংস্কার , সংশোধন , নতুন ব্যাখ্যা এবং বিরোধের প্রতিও তারা শ্রদ্ধার ভাব বজায় রেখেছিল । এই দৃষ্টিভঙ্গীর জন্যই ভারতে কয়েকটি তত্ত্বগতভাবে পরস্পর বিরোধী দর্শন সবলরূপে বিকশিত হয়েছিল ও বেদের কয়েকটি মূলতত্ত্বের বিরোধীতা সত্ত্বেও খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রকাশিত বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের সঙ্গে বৈদিক হিন্দুধর্মের সংঘর্ষ ঘটেনি । বিভিন্ন কারণে হিন্দুধর্মের মধ্যে বিভিন্ন পন্থার উদ্ভব হয়েছিল । পরবর্তীকালের বিভিন্ন রাজবংশ ধর্মীয় উদারতার নীতিটি অনুসরণ করেন এবং ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখা যায় । এইক্ষেত্রে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতেই সম্রাট অশোকের গির্ণারতে থাকা ১২ নং মুখ্য শিলালেখটিতে থাকা কিছু কথা বিশেষ স্মরণযোগ্য ।
এই লিপিতে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিরই একমাত্র নিজের ধর্মটির প্রশংসা করা এবং অপর ধর্ম সম্বন্ধে হীনমন্যতা উচিত নয় । বরং সকল ধর্মের সারসত্য গ্রহণ করে সমন্বয়ের পথ অনুসরণ করতে হয় । সম্রাট অশোকের এই ঘোষণাটি ভারতীয় শাসকগণের ধর্মীয় উদারতার প্রাচীনতম সাক্ষ্য বহন করে । পরবর্তীকালে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উদ্ভব হওয়া খ্রিস্টিয়ান , ইসলাম , জরাথ্রুস্ট , ইহুদী ইত্যাদি ধর্মেরও ভারতে আগমন ঘটেছিল । শাস্ত্রনির্ভর ধর্মগুলো ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিশ্বাস এবং রীতি – নীতির অনেক লৌকিক ধর্মপন্থা দেখা যায় ।
ধর্মীয় বিভিন্নতা এবং সহবর্তিতার সঙ্গে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতাই ভারতীয়দের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন ও সভ্যতা সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রকে গভীরভাবে প্রভাবিত করা বৈশিষ্ট্যটিও স্মরণীয় । জীবন ও জগৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী , সামাজিক রীতি – নীতি , উৎসব , পার্বণ সাহিত্য , স্থাপত্য , ভাস্কর্য , সঙ্গীত , নিত্য , চিত্রকলা , নৈতিকতা ইত্যাদিতে এর প্রভাব গভীরভাবে দেখা যায় ।
প্রশ্ন ৪। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের এক স্বতন্ত্র পারস্পরিক পরিচয় কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ উত্তর – পূর্বাঞ্চল শব্দটি — ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকগণ উদ্ভাবন করেছিল । উত্তর – পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশ , নাগাল্যাণ্ড , মণিপুর , মিজোরাম , ত্রিপুরা , মেঘালয় ও অসম প্রতিটি অঞ্চলের নিজ নিজ কৃষ্টি – সংস্কৃতি , রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে । তাছাড়া এই সমগ্র অঞ্চলটির একই রকম কতগুলো বৈশিষ্ট্যের জন্যই অঞ্চলটি নিজ নিজ পরিচয় লাভ করেছে । বর্তমান সময়েও ভারত সরকার ‘ নর্থ ইষ্ট কাউন্সিল ’ নামক একটি পরিষদ গঠন করে অঞ্চলটির উন্নয়নের জন্য পৃথক নীতি গ্রহণ করেছে । সিকিম রাজ্যটিকে এই পরিষদটির অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
উত্তর – পূর্বাঞ্চলের এক একটা বৈশিষ্ট্যের জন্য পৃথক পরিচয় সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে অঞ্চলটির ভৌগোলিক পরিস্থিতি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে । অসমের ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার উর্বর সমতল ভূমিখণ্ডকে মাঝখানে নিয়ে উত্তর , পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে অন্য রাজ্য কয়টি অবস্থিত আছে । এই রাজ্য কয়টির চারিদিকে ভূটান , চীন , মায়ানমার , বাংলাদেশ এই বিদেশী রাষ্ট্রগুলি অবস্থিত । অসমের নিকটবর্তী সবকয়টি রাজ্যই পাহাড়িয়া । এই পরিস্থিতিতে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অসম সবগুলো রাজ্যের জন্য সুবিধাজনক , সুচল কেন্দ্রীয় স্থল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । প্রাচীন যুগে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে অনুমান করা হয় । অবশ্য খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতাব্দীতে বর্মন বংশের প্রতিষ্ঠার পরে প্রাচীন অসমের রাজনৈতিক ইতিহাস উদ্ধার হয়েছে । বিভিন্ন যুগে অসমের শক্তিশালী রাজবংশসমূহের শাসনকালে নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহের স্থানীয় শাসকগণ অসমের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিল এবং কখনও কখনও আধিপত্য মেনেও নিয়েছিল ।
আহোম রাজবংশের শাসনকালে ( ১২২৮-১৮২৬ খ্রিস্টাব্দ ) অসম ও নিকটবর্তী রাজ্যগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে এই যুগে রচিত হওয়া ইতিহাসসমূহে বহু তথ্য পাওয়া যায় । বিভিন্ন রাজপরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল , আপৎকালীন সময়ে সামরিক সাহায্য আদান – প্রদান ও দূত প্রেরণ করা হয়েছিল । পাহাড় ও ভৈয়ামে উত্পন্ন হওয়া সামগ্রীর আদান – প্রদান হয়েছিল । এইভাবে অঞ্চলটির বাসিন্দাদের মধ্যে ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয়েছিল । অসমসহ সমগ্র উত্তর – পূর্ব অঞ্চলটির অধিকাংশ লোকই বৃহত্তর মংগোলীয় গোষ্ঠীর বিভিন্ন শাখা প্রশাখাভুক্ত জনজাতীয় লোক । প্রাচীন ইতিহাসের তথ্য অনুসারে নাগাগণের একাংশের মধ্যে নিগ্রো নৃ – গোষ্ঠীর উপাদান পাওয়া গিয়েছে এবং মেঘালয়ের খাসীয়া গোষ্ঠীর লোকগণ অষ্ট্রিক গোষ্ঠীর লোক ছিলেন বলে জানা যায় ।
প্রশ্ন ৫। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর ধর্মীয় বাতাবরণ নিয়ে একটি টীকা লেখো।
উত্তরঃ ঔপনিবেশিক শাসনকালে মিশনারীগণ উত্তর – পূর্বাঞ্চলের সবকয়টি রাজ্যতে পাহাড়ীয়া লোকগণের মধ্যে খ্রিস্টিয়ান ধর্মের প্রসার ঘটায় । উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে অসমে আর্যভাষা ও হিন্দুধর্মের প্রসার অতি প্রাচীনকাল থেকেই ঘটছিল । মণিপুর ও ত্রিপুরাতেও অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দুধর্ম প্রসার লাভ করছিল । অবশ্য পাহাড়ীয়া জনজাতিগণের মধ্যে বর্তমানেও প্রাকৃতিক ( Animist ) বিশ্বাস তথা রীতি – নীতি সমান্তরালভাবে চলতে থাকা দেখা যায় । উদাহরণস্বরূপে অরুণাচলের বহুসংখ্যক লোক হিন্দু, খ্রিস্টিয়ান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী , একইভাবে বিভিন্ন স্থানীয় দেব – দেবীর সঙ্গে ডনিপ’ল অর্থাৎ চন্দ্র – সূর্যও তাঁদের জনপ্রিয় দেবতা ।
নাগাল্যাণ্ডের বিভিন্ন জনজাতীয় নৃত্য – গীত , বাদ্য শিল্পকলা ইত্যাদি প্রদর্শন করতে পারায় সম্প্রতি নাগাল্যাণ্ড সরকারে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দশদিনে উৎযাপিত ‘ হনবিল ’ উৎসবে প্রায় সকল নাগাগোষ্ঠীর লোক অংশগ্রহণ করে । ধনেশ পাখিকে নাগাগণ এক ত্রাণকর্তা পবিত্র জীব হিসাবে বিবেচনা করে বলে এই পাখির নামে এই উৎসবটি উদযাপিত হয় । উল্লেখযোগ্য যে স্বাধীনতা সংগ্রামী রানী গাইডুলে নাগাল্যাণ্ডের পরম্পরাগত ধর্মবিশ্বাস তথা সংস্কৃতি সংরক্ষণকল্পে পুনরায় প্রবর্তন করার উদ্দেশ্যে ‘ হেরাকা ’ নামক একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ।
মণিপুরের মেইটেই সম্প্রদায়টির অধিকাংশ লোক চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী । বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবিত গীতবাদ্য , নৃত্য প্রভৃতির রেওয়াজ তাঁদের মধ্যে দেখা যায় । চৈতন্য মহাপ্রভুর শৈশব , কৃষ্ণলীলা প্রভৃতি অবলম্বনে মণিপুরী নৃত্য ভারতের সঙ্গীত ও নাটক একাডেমির দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি ধ্রুপদী নৃত্য । মণিপুরীগণের একাংশের মধ্যে এখনও প্রকৃতি প্রাণবাদী ( Animist ) ধর্মপন্থার প্রচলন আছে ।
ত্রিপুরার অধিকাংশ লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও বঙ্গীয় সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত । বিভিন্ন জনগোষ্ঠীয় উপাদানের মিশ্রণে ত্রিপুরাতে একটি সংমিশ্রিত সংস্কৃতি দেখা যায় ৷
মেঘালয়ের পূর্বের প্রকৃতি উপাসক খাসিয়া , গারো , জয়ন্তীয়া ইত্যাদি লোকগণ ১৮৩০ সন হতে ক্রমে খ্রিস্টিয়ান ধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করে এবং বর্তমানে এখানকার সত্তর ( ৭০ ) শতাংশ হতে অধিক লোক খ্রিস্টিয়ান ধর্মাবলম্বী ।
মিজোদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্টিয়ান ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে কিছু সংখ্যক বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকও আছে । ১৯৭৩ সন হতে মিজোগণ তাঁদের পরম্পরাগত ‘ চপচরকূট ’ পুনরায় উদযাপন করছে । এটার সঙ্গে অন্যান্য বহু পরম্পরাগত নৃত্য , সঙ্গীত ইত্যাদিরও পুনরুদ্ধার করতে মিজোগণ যত্নপর হয়েছে ।
প্রশ্ন ৬। ‘ অসমে আর্য – অনার্য সকলের সমবায়িত অবদানে এক সংমিশ্রিত সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে ‘ — এই প্রসঙ্গটি সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ উত্তর – পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্য কয়টির তুলনায় অসমে সাংস্কৃতিক বিভিন্নতা , সংমিশ্রণ ও বিবর্তন অধিকতর হয়েছে । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উৎকৃষ্ট বা ভাল কৃষিভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটি উন্নত প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী দেশ চীনে যেতে পারা একটি পথ থাকা ছাড়াও চীন দেশ হতে রোমান সাম্রাজ্যে যাওয়া মহারেশমী পথের একটি শাখা অসম হয়ে অগ্রসর হয়েছিল । এছাড়াও অসমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তথা নির্জনতা ইত্যাদির জন্য সুদূর অতীতকাল থেকে নানাগোষ্ঠীর লোক স্বাভাবিক প্রব্রজনকারী হিসাবে , আক্রমণকারী হিসাবে , ব্যবসা – বাণিজ্য করতে ও তীর্থ ভ্রমণ , আধ্যাত্মিক সাধনা ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অসমে এসেছিল এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিল । এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতবর্ষে বসবাস করা প্রধান নৃ – গোষ্ঠী কয়টির সবকয়টি নৃ – গোষ্ঠী অসমে দেখা যায় এবং সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষে ঘটিত হওয়া নৃতাত্ত্বিক তথা সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের প্রক্রিয়াটি অসমেও ঘটেছিল । এর ফলে অসমে আর্য – অনার্য সকল জাতি সমন্বিত অবদানের একটি সংমিশ্রিত সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল ।
প্রশ্ন ৭। অসমের চিত্রকলার ঐতিহ্য বিষয়ে যা জান সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ সপ্তদশ শতাব্দী হতে অসমে উত্তর ভারতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পুথিচিত্রসমূহের অনুরূপ রাজঘরীয়া পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা সত্ৰীয়া সৃষ্টিতে চিত্রকলার একটি পরম্পরা আরম্ভ হয় । এই ধরনের উল্লেখযোগ্য সচিত্র পুথিগুলি হল — আনন্দ – লহরী , হস্তীবিদ্যার্ণব , চিত্রভাগবত গীতগোবিন্দ , কুমারহরণ , শংখচূড় বধ , লব – কুশের যুদ্ধ ইত্যাদি সাঁচিপাতীয়া পুথি । স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সামগ্রী থেকে প্রাকৃতিক রঙের বহুরঙীয়া এই চিত্রসমূহ অঙ্কন করা হয়েছিল । প্রথমে চিত্রের পটভূমিতে একটি নির্দিষ্ট রং বুলিয়ে নেওয়া হয় । তার উপরে চিত্রসমূহ অঙ্কন হয়েছিল ।
চিত্রসমূহে রাজা , রাজদরবার , দেবীমূর্তি , যুদ্ধের চিত্র , হাতি , জীবজন্তু ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট পুথির বা বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখে অঙ্কন হয়েছিল । খালি বা শূন্য স্থানগুলোতে ফুল , লতা ইত্যাদি এঁকে দেওয়া হয়েছিল । সাধারণত লাল , সবুজ , হলুদ ও কালো রঙের প্রচলন দেখা যায় । সমুখাংশ অর্থাৎ সামনের ও পার্শ্বের অংশে দুই ধরনের চিত্র অঙ্কন করা দেখা যায় । মানুষ ও জীব – জন্তুর ছবিগুলোতে মুখমণ্ডলের নিখুত প্রকাশ , শরীরের অনুপাত , মনের অনুভূতি প্রকাশে সূক্ষ্ম কৌশলের প্রয়োগ করার দক্ষতা দেখা না গেলেও চিত্রগুলো সহজ – সরল এবং দৃষ্টিনন্দন । সুকুমার বরকাইথের রচনা করা হস্তীবিদ্যার্ণব বইটিতে বিভিন্ন আকার ও ধরনের হাতির ছবি আছে । দিলবর ও দোচাই নামে দুইজন চিত্রকর এই চিত্রসমূহ অঙ্কন করেছিল । এই গ্রন্থসমূহের কয়েকটি গ্রন্থ ছাপা আকারে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ।
প্রশ্ন ৮। অসমের ধর্মীয় বিভিন্নতা এবং সংহতির বিষয়ে লেখো ।
উত্তরঃ অসমের অধিকাংশ লোক হিন্দুধর্মাবলম্বী । তারপরে আছে ইসলাম , খ্রিস্টিয়ান , জৈন, বৌদ্ধ , শিখ ও জনজাতীয় ধর্মপন্থাবলম্বী লোক । হিন্দুধর্মের ভিতরে প্রধানত শাক্ত , শৈব , বৈষ্ণব ও সৌরপন্থী লোক দেখা যায় । অসমের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত প্রবল প্রভাবী শক্তিপীঠ গুলির মধ্যে কামাখ্যা মন্দির পৃথিবী বিখ্যাত । নববৈষ্ণব আন্দোলন অসমের বৃহৎ সংখ্যক লোককে বৈষ্ণবী ভক্তিমার্গের অনুগামী করেছিল । খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে অসমে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটার তথ্য পাওয়া যায় । অসমের ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকগণের একটি পবিত্র তীর্থস্থান হাজোর পোয়ামক্কা । স্বর্গদেউ গদাধর সিংহের আমলে অসমে আসা সুফী সাধক আজানপীর নামে খ্যাত চাহ মিলনে রচনা করা জিকির ও জারিসমূহ অসমে প্রচলিত একধরনের জনপ্রিয় ধর্মীয় সঙ্গীত ।
মানের আক্রমণের সময়ে রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহকে সাহায্য করতে পাঞ্জাবের রঞ্জিত সিংহের নির্দেশে অসমে আসা শিখ সৈন্যদলের কিছুসংখ্যক লোক অসমে স্বইচ্ছায় থেকে গিয়েছিল । তাঁদের বংশধরগণ এখনও শিখধর্ম বজায় রেখেও অসমীয়া ভাষা , সংস্কৃতি গ্রহণ করে অসমের জাতীয় জীবনের অঙ্গীভূত হয়ে পড়েছে । অসমের পূর্ব অংশে বাস করা টাইফাকে , তুরুং , আইতন , খামটি , খাময়াং , নরা ( শ্যাম ) জনগণ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী । মধ্যযুগে আহোম স্বর্গদেউগণ ধর্মীয় উদারতা গ্রহণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোককে তাদের উপাসনাস্থলী নিজ নিজ নির্মাণ করে দান – দক্ষিণার মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন ।
প্রশ্ন ৯। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্য কয়টির তুলনায় অসমে সাংস্কৃতিক বিভিন্নতা , সংমিশ্রণ এবং বিবর্তন কেন অধিকতর ? আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ভারতবর্ষের মত অসমেও অনেককাল ধরে বিভিন্নকালে বিভিন্ন প্রজাতির লোকের প্রব্রজন ঘটেছে । এইসকল বিভিন্ন প্রজাতির লোকের তালিকা অতি দীর্ঘ । এই সকল প্রজাতির মধ্যে প্রধান হল– নিগ্রোটো , অস্ট্রালয়ড ,মঙ্গোলীয় , ভূমধ্যসাগরীয় , আলপাইন , আর্য , স্বাইথিয়ান এবং কোকেসীয় । বর্তমানে একমাত্র নাগাদের মধ্যে নিগ্রোটো প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান বলে পণ্ডিতগণের অনুমান । অসমের জনবিন্যাসে অস্ট্রালয়ড প্রজাতির প্রাধান্য দেখার মতন ৷ অসমের বহুসংখ্যক জনজাতি বিশেষত রাভা , গারো , ব্যাধি এবং বর্তমান মেঘালয়ের খাসি এবং অরুণাচলের যাংচুদের মধ্যে এই প্রজাতির প্রভাব সুস্পষ্ট । রাভা , গারো কার্বিদের বাদ দিয়ে অস্ট্রালয়ড প্রজাতির লোকেরা অষ্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত । রাভা , গারো এবং কার্বিগণ তিবেতো – বর্মন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত । মঙ্গোলীয় প্রজাতির লোকেরা বহুকাল আগে বর্তমান চীনদেশের ইয়াংসিকিয়াং ও হোয়াংহো নদী উপত্যকা থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রব্রজন করে এই উপত্যকা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাস শুরু করে ।
আর্যরা প্রায় ১২০০ খ্রিস্টাব্দ আগে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে সিন্ধু ও গাঙ্গেয় উপত্যকায় বসতি বিস্তার করার কয়েক শত বৎসর পর ক্রমান্বয়ে তারা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করেছিল ।
১২২৮ খ্রিস্টাব্দে চীনদেশের মুংমাও নামক ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিবাসী টাই আহোমগণের একাংশ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে অসমে আহোম রাজার রাজত্বকালে দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া ও গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির লোক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রব্রজন করেছিল । অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে ব্রহ্মদেশ থেকে খামটি , দোয়নীয়া , টাই – ফাকে , টুরুং , আইটনীয়া প্রভৃতি জনজাতিগণ অসমে প্রব্রজন করেছিল । আর্যদের প্রব্রজনে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ব্রাহ্মণ লোকের প্রব্রজনের সাক্ষী দেয় ৷
এই আলোচনা থেকে দেখা যায় যে আহোমগণের আগমনের সময়ে এই ভূ – খণ্ডের জনবিন্যাসে মধ্যযুগের পূর্বেই বহুজাতিক চরিত্র পরিগ্রহ করেছে এবং পরবর্তীকালে সেই চরিত্রের অধিক পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ ঘটেছে । মধ্যযুগে অসমের সমাজ এভাবে বিভিন্ন জাতি – জনজাতির দ্বারা গঠিত হয়ে এক সংমিশ্রিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৃষ্টি করেছে ।
প্রশ্ন ১০। “ লোকসংস্কৃতি অধ্যয়নের জন্য প্রকৃতপক্ষে গোটা সমাজটাই একটা পুস্তকের মতো । ” — এই প্রসঙ্গে তোমার মন্তব্য বা মতামত দাও ।
উত্তরঃ অসমের লোকসংস্কৃতি সম্পদ ও ঐতিহ্যে ভরপুর । লোকসংস্কৃতির সাধারণ দিকগুলির উপরও অসমের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল , সম্প্রদায় , জাতি জনজাতির মধ্যে প্রচলিত কথিত ভাষা , লোকসাহিত্য , গান , নৃত্য , বাদ্য , পোশাক পরিচ্ছদ , অলঙ্কার , গৃহনির্মাণ , কৃষি , পশুপালন , ব্যবহার , পারিবারিক , সামাজিক সম্পর্ক , রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় অনেকক্ষেত্রে রেখাপাত করেছে । একটি জাতি অথবা সমাজের স্বাভাবিক রূপ – রং , সুখ – দুখ , শ্রম – বিনোদন প্রভৃতি লোক সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । সমাজের সদস্যগণ সমাজের লোকসংস্কৃতিকে আহরণ করে , কিন্তু সেইগুলির সঙ্গে অপরিচিত লোক একজন লোকসংস্কৃতির বিষয়কে প্রতিটি কথাই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশেষ মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারা যায় । সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বে সমাজ – বিজ্ঞানীগণের মধ্যে লোকসংস্কৃতির বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো :
১। প্রাচীন ভারতের ভাস্কর্যশিল্প ।
২। ভারতীয় চিত্রকলা ।
৩। ভারতের সংগীত এবং নৃত্যকলার ঐতিহ্য ।
৪। অসমের ভাস্কর্য শিল্প ।
৫। অসমের স্থাপত্য শিল্প ।
৬। অসমের বৈষ্ণব সাহিত্য ।
৭। অসমের লোকসংগীত ।
৮। অসমের ধর্মীয় সংহতি ।
৯। অসমের বুরঞ্জি সাহিত্য ।
১০। বিহু উৎসব ।
উত্তরঃ ১। প্রাচীন ভারতের ভাস্কর্য – শিল্প :- প্রাচীন ভারতবর্ষ ভাস্কর্য – শিল্পে ভরপুর । সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই ভারতের ভাস্কর্য – শিল্পের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । পরবর্তী সময়ে পাওয়া মাটি , শিলা , ব্রোঞ্জ , তামা , সোনা , রূপা প্রভৃতির মূর্তি নির্মাণ শৈলীতে ভারতীয়গণ নিজে বিকশিত করা স্থানীয় কলা কৌশলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী বৈশিষ্ট্যের সংযোজন ঘটানো হয়েছিল । গৌতম বুদ্ধ , মহাবীর , হিন্দু দেব – দেবী , যক্ষ – যক্ষিণী , অপ্সরী , হিন্দু তথা বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি এই ভাস্কর্য গুলির মধ্যে দেখা যায় । অশোকের স্তম্ভগুলির শীর্ষে থাকা জন্তুর মূর্তিগুলি , গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই জন্তুগুলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । বিভিন্ন পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভারতে গড়ে উঠা এই ভাস্কর্য – শিল্পকলাকে গান্ধার শিল্পকলা , মথুরা শিল্পকলা , অমরা শিল্পকলা নামে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ।
২। ভারতীয় চিত্রকলা :- প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকলার ঐতিহ্যগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়— বৃহদাকার দেয়াল চিত্র ও ক্ষুদ্রাকার দেয়াল চিত্র । ক্ষুদ্রাকার চিত্রগুলি গ্রন্থগুলিকে অলঙ্কৃত করতে এবং সচিত্র বিবরণের জন্য অঙ্কন করা হয়েছিল । দুটি চিত্রশৈলী ভারতের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ , জৈন , হিন্দু ধর্মের বিষয়বস্তুকে ভিত্তি করে অজন্তা , বাঘ , চিত্তনায়াচল, আরমামলাই প্রভৃতি গুহার দেয়ালগুলিতে আঁকা হয়েছিল । এইগুলির মধ্যে অজস্তার দেয়াল চিত্রগুলি পৃথিবী বিখ্যাত । খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের চিত্র অঙ্কনের জন্য প্রয়োজনীয় –
( ১ ) আকৃতি ।
( ২ ) পরিমাপ ।
( ৩ ) আবেগ অনুভূতি প্রকাশের কৌশল ।
( ৪ ) কলাত্মক উপস্থাপন ।
( ৫ ) সাদৃশ্য জ্ঞান । ও
( ৬ ) তুলি ব্যবহারের নিয়ম এই ষড়াঙ্গের চর্চা হয়েছিল । মোগল আমলে আকবর , জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষুদ্রাকার চিত্রশিল্পের বহুল চর্চা হয় । চিত্রসমূহে সম্রাটদের ছবি , দরবার , যুদ্ধজয় , শিকার , বাগান , ফুল , গাছপালা , জন্তু প্রভৃতি বিষয়ে আঁকা হয়েছিল ।
৩। ভারতের সংগীত এবং নৃত্যকলার ঐতিহ্য :– সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ভারতের এক সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য রয়েছে । সামবেদের স্তোত্রগুলি যজ্ঞে দেবতার সন্তুষ্টির অর্থে উদ্গাতা নামে পুরোহিতগণ গানের আকারে পাঠ করেছিলেন । খ্রিস্টপূর্ব ২০০ হতে খ্রিস্টীয় ২০০ সময়সীমার মধ্যে ভরতমুনির “ নাট্যশাস্ত্র ” রচিত হয় । এতে নাটক , সঙ্গীত ও নৃত্যের বিষয়ে ৫০০০ শ্লোকে বিভিন্ন নীতি নিয়ম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । ভারতের ধ্রুপদী সঙ্গীতের পরম্পরা গুরু – শিষ্য অনুক্রমে বর্তমান সময়ে সবল রূপে অধিষ্ঠিত রয়েছে । মোগলদের দিনে এর বিশেষ উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল । সঙ্গীতের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার বাঁশি ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারও প্রচলিত ছিল ।
৪। অসমের ভাস্কর্য শিল্প :- অসমের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরের দেয়ালে খোদিত করা দ্বিমাত্রিক অথবা পূর্ণাঙ্গরূপে নির্মিত ত্রি – মাত্রিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে । শিলা ছাড়াও হাতির দাঁত , সোনা , রূপা , তামা , কাঠ প্রভৃতির মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল । এই মূর্তিসমূহের মধ্যে দেবীমূর্তি , শিব , বিষ্ণু , গণেশ , সূর্য , ময়ূর , ঘোড়া , হাতি , সিংহ প্রভৃতি প্রধান । ভাস্কর্য শিল্পের নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়া কয়েকটি স্থান হল — তেজপুরের দ – পর্বতীয়া , বামুনী পাহাড় , মদন কামদেব , আমবাড়ি , ডবফা , গোয়াল পাড়ার পাগলাটেক , সূর্যপাহাড় অন্যতম ।
৫। অসমের স্থাপত্য শিল্প :- অসমে বর্তমান স্থাপত্য শিল্পের যেমন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় সেগুলির প্রায় বেশিরভাগই মধ্যযুগ এবং আহোম রাজবংশের অথবা কোচ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হয়েছিল । শিবসাগর জেলায় আহোম রাজত্বকালের রাজকীয় অট্টালিকা তিনটি যথাক্রমে রংপুরের রংঘর , কারেং ঘর এবং গড়গাঁও – এর তলাতল ঘর এবং অনেক মন্দির এখনও বিদ্যমান । এই সময়ের মন্দিরগুলি হল কামাখ্যা মন্দির , উগ্রতারা মন্দির , উমানন্দ মন্দির , শিবদৌল , জয়দৌল , হাজোর মন্দির , শুক্লেশ্বর মন্দির দেবালয় , দেরগাঁও এবং বিশ্বনাথের শিবমন্দির প্রভৃতি অন্যতম । মন্দিরগুলিতে সাধারণত দুটি অংশ দেখা যায় — গর্ভগৃহ এবং মণ্ডপ ।
৬। অসমের বৈষ্ণব সাহিত্য :- শ্রীকৃষ্ণ শঙ্করদেব ও মাধবদেবের নেতৃত্বে পঞ্চদশ শতকে শুরু হওয়া নব বৈষ্ণব আন্দোলনে অসমীয়া সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । এই ধর্মীয় আন্দোলনের প্রভাবে অসমীয়া সাহিত্যে এক জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং বহুসংখ্যক কাব্য , নাটক , গীত , চরিত্রগ্রন্থ , গদ্যসাহিত্য রচিত হয় । সাহিত্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল রামায়ণ , মহাভারত , পুরাণ , হিন্দুধর্মের তত্ত্বকথা প্রভৃতি । শঙ্করদেব এবং মাধবদেব নিজেই বহু সংখ্যক সাহিত্য রচনা করেছিলেন । এগুলির মধ্যে শঙ্করদেবের “ কীর্তনঘোষা ” ও মাধবদেবের “ নামঘোষা ” এবং দুই জনের বরগীত সর্বাধিক জনপ্রিয় । শঙ্করদেব এবং মাধবদেবের পর ভট্টদেব , অনন্ত কন্দলি , রামসরস্বতী প্রমুখ সাহিত্যিক এই সাহিত্যচর্চা বহাল রাখেন ।
৭। অসমের লোকসঙ্গীত :- অসমে বিভিন্ন পরিবেশ তথা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের লোকসঙ্গীতের প্রচলন রয়েছে । বিয়া নাম , আই নাম , ধাই নাম , কামরূপী লোকগীত , গোয়ালপাড়িয়া লোকগীত প্রভৃতি কৃতিপয় প্রচলিত লোকগীতির উদাহরণ । এইগুলির মধ্যে বিয়া – নাম , কামরূপী – লোকগীত এবং গোয়ালপাড়িয়া লোকগীতির বিশেষ জনপ্রিয়তা রয়েছে । কামরূপী লোকগীত ও গোয়ালপাড়িয়া লোকগীতি জীবনের সুখ – দুখ , দেহের ভঙ্গিমা , জীবনে ঈশ্বরচিন্তার গুরুত্ব , দেবদেবীর প্রশস্তি প্রভৃতি প্রকাশমূলক গীত । এর উপরও গোয়ালপাড়িয়া লোকগীত স্থানীয় কিংবদন্তি তথা হাতি ধরা ও পোষা বিষয় নিয়ে রচিত ।
৮। অসমের ধর্মীয় সংহতি :- অসমের বেশিরভাগ লোক হিন্দুধর্মাবলম্বী । রাজ্যে ইসলাম, খ্রিস্টান , জৈন , বৌদ্ধ , শিখ এবং জনজাতীয় ধর্মাবলম্বী লোকের বসতি । খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের প্রথমভাগে অসমে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে । হাজোর পোয়ামক্কা ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকের পবিত্র তীর্থস্থান । রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহের রাজত্বকালে অসমে শিখসৈন্যের আগমন ঘটে । পরবর্তীকালে তারা স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হয় । তাদের বংশধরগণ এখনও শিখধর্ম অক্ষুণ্ণ রেখেও অসমিয়া ভাষা , সংস্কৃতি গ্রহণ করে জাতীয় জীবনের অঙ্গীভূত হয়ে পড়েছে । অসমে কিছুসংখ্যক বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীর লোকও আছে । সকল ধর্মের মধ্যে অসমে এক বিচিত্র সংহতি বিরাজ করছে ।
৯। অসমের বুরঞ্জি সাহিত্য :- বুরঞ্জি ( ইতিহাস ) আহোম সাহিত্যের এক অভিনব অবদান। আহোম রাজারা বুরঞ্জি রচনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন । শুরুতে বুরুঞ্জি ‘ টাই ’ ভাষায় লেখা হলেও অসমীয়া ভাষা গ্রহণের পর তা অসমীয়া ভাষাতেই লেখা হয় । বুরঞ্জিগুলিকে “ জ্ঞানের ভাণ্ডার ” আখ্যা দেওয়া হয় । প্রকৃতার্থে বুরঞ্জিগুলি এই নামের যোগ্য। রাজনৈতিক বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে সমসাময়িক সামাজিক ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ের নানা তথ্য সমৃদ্ধ বুরঞ্জিগুলি অসমের এক অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ ।
১০। বিহু উৎসব :- বিহু অসমের প্রধান জাতীয় উৎসব । অসমের লোকসংস্কৃতির বলিষ্ঠ এবং সমৃদ্ধ রূপটি বিহু উৎসবের মধ্যে অন্তর্হিত হয়ে আছে । এই উৎসবের মধ্যে সাধারণ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনের বর্ণাঢ্য প্রতিফলন ঘটেছে । বিহু উৎসবের উৎপত্তিকাল নির্ণয় করা খুব কঠিন । বিহু উৎসব পালিত হয় বৎসরে তিনবার তিনমাসে । বৈশাখ মাসে বহাগ বিহু বা রঙ্গালী বিহু , মাঘ মাসে মাঘ বিহু বা ভোগালি বিহু এবং আশ্বিন মাসের সংক্রান্তির দিন কাতি বিহু পালিত হয় বৈশাখ মাসের বহাগ বিহু বা রঙ্গালী বিহু সবচাইতে উৎসব মুখর । বিহু উৎসব অসমের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। মধ্যযুগের অসমীয়া সাহিত্য সম্পর্কে লেখো ।
উত্তরঃ মধ্যযুগে অসমীয়া সাহিত্যের বিশেষ চর্চা ও বিকাশ ঘটেছিল । প্রথমে আহোমদের ভাষা ছিল ‘ টাই ‘ । কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আহোম রাজারা অসমীয়া ভাষাকে “ রাজভাষা ” হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন । তাঁরা অসমীয়া ভাষার উন্নতির জন্য নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন । মধ্যযুগে মহাভারত , রামায়ণ ও পুরাণ অসমীয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছিল । কবিরাজ রাম নারায়ণ চক্রবর্তী “ পদ্মপুরাণ ” এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অসমীয়ায় অনুবাদ করে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন । কবি চন্দ্রদ্বিজ ধর্মপুরাণের অনুবাদ করেছিলেন । সুকুমার বরকাইত “ হস্তিবিদ্যার্ণব ” নামে হাতির চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গ্রন্থ রচনা করেন । ঘোড়ার চিকিৎসা বিষয়ক শাস্ত্র “ ঘোড়ানিদান ” গ্রন্থটিও আহোম রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত হয়েছিল ।
বুরঞ্জি ( ইতিহাস ) সাহিত্য মধ্যযুগে অসমীয়া সাহিত্যে এক অভিনব অবদান । আহোম রাজারা বুরঞ্জি রচনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন । শুরুতে বুরঞ্জি “ টাই ” ভাষায় লেখা হলেও অসমীয়া ভাষা গ্রহণের পর তা অসমীয়া ভাষাতেই লেখা হয় । বুরঞ্জিসমূহকে “ জ্ঞানের ভাণ্ডার ” আখ্যা দেওয়া হয় । প্রকৃতার্থে বুরঞ্জিসমূহ এই নামের যোগ্য । বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে সমসাময়িক সামাজিক , ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ের নানা তথ্যসমৃদ্ধ বুরঞ্জিগুলি অসমের অতি মূল্যবান সম্পদ ।
মধ্যযুগের অন্য একজন খ্যাতনামা অসমীয়া মনীষী হলেন শ্রীমন্ত শঙ্করদেব । তিনি ৩৬ টি বরগীত , কাব্য , নাটক , “ কীর্তন- ঘোষা ” প্রভৃতি বহু সংখ্যক গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করেছিলেন । তাঁর শিষ্য ও সহযোগী মাধবদেব অসমীয়া সাহিত্যের ভাণ্ডার প্রাচুর্যময় করে গিয়েছেন । তিনি ব্রজবুলী উপভাষার মোট ১৫৭ টি বরগীত রচনা করেছেন , তিনি বিখ্যাত “ নামঘোষা ” রচনা করেছিলেন । ভট্টদেব রচিত “ কথা – ভাগবত ” , “ কথা – গীতা ” , “ কথাভক্তি রত্নাবলী ” প্রভৃতি গদ্য রচনা করে মধ্যযুগে অসমীয়া সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন । রামনারায়ণ চক্রবর্তী অসমীয়া ভাষায় “ গীতগোবিন্দ ” , “ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ” ও শকুন্তলা কাব্য রচনা করে অমর হয়েছেন । সুতরাং দেখা যায় যে মধ্যযুগে অসমীয়া সাহিত্য ব্যাপক শ্রীবৃদ্ধি লাভ করেছিল ।
প্রশ্ন ২। মধ্যযুগের ভারতবর্ষ এবং অসমের চিত্রকলা সম্পর্কে একটি আভাস দাও ।
উত্তরঃ প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতবর্ষে ভিন্ন ভিন্ন চিত্রকলার বিকাশ হয়েছিল । সেই চিত্রকলাগুলি আধুনিক ভারতবর্ষের সভ্যতা – সংস্কৃতির মূল্যবান
উত্তরাধিকার । অজন্তা – ইলোরা গুহাচিত্রের সঙ্গে মোগলযুগে বিকাশ লাভ করা চিত্রকলার নিদর্শনগুলি ভারতীয় সভ্যতা – সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ । বিশেষ করে মোগলযুগে রচিত গ্রন্থসমূহে সন্নিবিষ্ট চিত্রকলাগুলি আজও মানুষের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে ।
মোগল চিত্রকলাগুলিতে প্রধানত রাজপরিবার , রাজসভা এবং সভাসদদের জীবন ধারণের প্রতিচ্ছবির আভাস মেলে । তার উপর সেই আমলে রচিত ও অনূদিত গ্রন্থের কাহিনী তথা ঘটনাপ্রবাহ চিত্ররূপের মাধ্যমে প্রকাশিত হত । কোনো কোনো চিত্রকলা বিশেষজ্ঞদের মতে মোগল সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতবর্ষে প্রথম চৈনিক চিত্রকলার আমদানি ঘটেছিল । চিত্রকলা দ্বারা মহিমামণ্ডিত গ্রন্থগুলির মধ্যে পার্শী ভাষায় রচিত “ দাস্তান – ই – আমির হামজাহ ” , “ তাবির – ই – খান্দান – ই – তাইমূরীয়া ” ও “ পাদছাহামা ” প্রধান । চিত্রকলা সমৃদ্ধ সেই যুগের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — ‘ রামায়ণ ’ , ‘ দিয়ান ’ , ‘ তারিখ – ই – কান্দাহারী ’ , ‘ আকবর নামা ’ ও ‘ বাবর নামা ’ ।
মধ্যযুগে অসমেও চিত্রকলা এবং গ্রন্থ অলংকরণ পরম্পরার উদ্ভব ও প্রচলন হয়েছিল । এই ব্যাপারে নব – বৈষ্ণব আন্দোলনের বিশেষ অবদান রয়েছে । নব বৈষ্ণব আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রচিত সাহিত্যগুলিতে অলংকরণ করার পরম্পরা গড়ে উঠেছে । এই যুগে সাহিত্যগুলি রচনা করা হয় প্রধানত শাল পাতা ও ভোজ পাতায় । কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিখনকার্য সমাপন করার পর চিত্রশিল্পী কথা – কাহিনীকে চিত্ররূপ দিয়েছিলেন ।
প্রশ্ন ৩। লোকসংস্কৃতির উৎস হিসাবে বিহুর অবদান সম্পর্কে লেখো ।
উত্তরঃ অসমের বিহু উৎসব কল্যাণ ও মিলনের বৈশিষ্ট্যে একটি জাতীয় উৎসব । অসমের লোক সংস্কৃতির বলিষ্ঠ এবং সমৃদ্ধ রূপটি বিহু ও বিহুগীতের মধ্যে সঞ্চিত রয়েছে । এতে সাধারণ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনের বর্ণাঢ্য প্রতিফলন ঘটেছে । বিহু উৎসবের উৎপত্তিকাল নির্ণয় করা ভীষণ কঠিন । যদিও এটা অনুমান করা যায় যে , অসমে আহোমদের আগমনের অনেক আগে থেকেই এই উৎসবের প্রচলন ছিল । তেজপুরের সন্নিকটে আবিষ্কৃত খ্রিস্টিয় নবম শতকের স্থাপত্যকলার নিদর্শনে থাকা নৃত্যচিত্রের সঙ্গে বিহু নৃত্যের সাদৃশ্য আছে বলে কোনো কোনো পণ্ডিতের অনুমান ।
বিহু উৎসব বৎসরে তিন বার তিন মাসে পালন করা হয় — বৈশাখ , কার্তিক ও মাঘ মাসে। বৈশাখ বিহু হল সর্বাপেক্ষা উৎসব মুখর । এই বিহুর সঙ্গে বিহু নৃত্য ও বিহু গানের ওতঃপ্রোত সম্পর্ক বিদ্যমান । এজন্যই এটা বেশি জনপ্রিয় ।
বিহু উৎসব আর্যভিত্তিক নয় , এটা জনজাতিভিত্তিক । অসমের বড়ো জনজাতির লোকেরা বিহুকে বলে “ বৈসাগু ” । সেইভাবে মিশিংগণ বিহুকে আলি আই – লিয়াং এবং লালুং সম্প্রদায়ের লোকেরা এটাকে বলে বহাগী উৎসব বা মেলা ।
অসমের বিহু উৎসব শুধু লীলাবিলাসের উৎসব নয় । পৃথিবীর অন্যান্য বহু উৎসবের মতোই এটাতেও জীবনের একটি কল্যাণময় অভীষ্টকেই আনন্দোচ্ছল রূপদান করা হয়েছে । বিহু অসমে লোকসংস্কৃতির অন্যতম উৎস ।
প্রশ্ন ৪। “ অসমীয়া সমাজ – সংস্কৃতি আর্যগোষ্ঠী সম্ভৃত বর্ণ হিন্দু এবং অনার্য লোকের যৌথ সৃষ্টি ও কৃতিত্ব । ” — আলোচনা করো ।
উত্তরঃ আহোমদের সুদীর্ঘকাল অসম শাসালের মূলে ছিল তাঁদের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গী ও উদার সমাজনীতি । তাদের সামাজিক জীবন ছিল সহজ ও সরল । তারা প্রথম দিকে তাদের নিজস্ব ভাষা , ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতি ধরে রেখেছিলেন । কিন্তু ধীরে ধীরে আহোমরা এই দেশের সামাজিক আচার – আচরণ , ধর্ম ইত্যাদি গ্রহণ করেছিলেন । অসমে বসবাসকারী বহু জাতি – উপজাতি , বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে আহোমরা এক অনুকূল সামাজিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে পেরেছিল ।
ভারতবর্ষের মত অসমে বহুযুগ ধরে বিভিন্ন জাতির লোকের আগমন হয়েছে । তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান জনগোষ্ঠী হল— নিগ্রোটো , অস্ট্রালয়ড , মঙ্গোলীয় , মেডিটেরেনিয়ান , আলপাইন , আর্য ও ককেসীয় । আর্যদের আগমন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ব্রাহ্মণদের আগমনের সাক্ষ্য দেয় । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার জনবিন্যাসে স্কাইথিয়ান প্রজাতির সংমিশ্রণ আছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত । এই প্রজাতির লোক আর্যদের সমসাময়িকভাবে ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলে অবস্থান করে এবং ক্রমান্বয়ে বঙ্গদেশে প্রবেশ করে অবশেষে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে । চীন দেশের মুংমাও নামক ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিবাসী টাই – আহোমগণের একাংশ পাটকই পাহাড় অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে ।
সুতরাং লক্ষ্য করা যায় যে আহোম আগমনের সময় থেকেই এই ভূ – খণ্ডের জনবিন্যাসে মধ্যযুগের পূর্বেই বহুজাতিক চরিত্র পরিগ্রহ করেছে এবং এর পরবর্তীকালে সেই চরিত্রের বেশি পরিবর্তন এবং সম্প্রসারণ ঘটেছে । মধ্যযুগে এইভাবে অসমের সমাজ বিভিন্ন জাতি – জনজাতি দ্বারা গঠিত হয়েছে । ড . ভেঙ্কটরাও – এর মতে অসমে মোট ৬১ টি প্রধান জনজাতি ও অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনজাতি রয়েছে । প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের যৌথ সমাজ একদিকে আর্যগোষ্ঠী সম্ভৃত বর্ণ হিন্দু লোক এবং অন্যদিকে অনার্য লোকের দ্বারা গঠিত ও লালিত পালিত । সেই সমাজে জনজাতি লোক ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আর্যগণ ছিল জনজাতি সাকারে মাজুলী দ্বীপসদৃশ ।
প্রশ্ন ৫। মধ্যযুগে রচিত বিভিন্ন গ্রন্থসমূহের সঙ্গে রচয়িতাদের নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করো ।
উত্তরঃ মাধবকন্দলী অসমীয়া ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন । সুকুমার বরকাইথ ‘ হস্তিবিদ্যার্ণব ’ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন । রামনারায়ণ চক্রবর্তী অসমীয়া ভাষায় গীতগোবিন্দ , ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ , শকুন্তলা কাব্য , শঙ্খচূড় বধ কাব্য রচনা করেছিলেন । কবি নারায়ণ দেব সূর্যহরি দৈবজ্ঞ দরং রাজবংশাবলি রচনা করেছিলেন । রামসরস্বতি মহাভারত এবং পুরুষোত্তম বিদ্যাবাগীশ সংস্কৃত ভাষায় রত্নাবলী ব্যাকরণ রচনা করেন । অনস্ত কন্দলী ভাগবত এবং আরও কয়েকটি গ্রন্থ অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করেন । ভট্টদেব কথাগীত রচনা করেছিলেন ।
ভট্টদেবই ছিলেন ভারতের প্রথম গদ্য সাহিত্যের রচয়িতা । শ্রীমন্ত শঙ্করদেব রচিত ‘ কীর্তন ঘোষা ’ ও মাধবদেবের ‘ নামঘোষা ’ এবং গুরু দুজনের বরগীতসমূহ সর্বাধিক জনপ্রিয় । শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের রচনা করা পত্নীপ্রসাদ , কালিয়াদমন , কেলিগোপাল , রুক্মিণী হরণ , পারিজাত হরণ , রামবিজয় , মাধবদেবের চোরধরা পিম্পরা গুচোয়া ইত্যাদি অংকীয়া নাটক বিপুল জনসমাগমের উপস্থিতিতে নামঘর , সত্র ইত্যাদি স্থানে রাস অথবা অন্য উপলক্ষে ভাওনা পেতে মঞ্চস্থ করা হয় ।
প্রশ্ন ৬। ‘ সাম্প্রতিক অসমের ভাষা , সাহিত্য – সংস্কৃতি প্রতিটি জাতি জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত সৃষ্টি এবং সম্পত্তি — এই বাক্যটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ অসমিয়া সাহিত্য – সংস্কৃতিতে মধ্যযুগের অনবদ্য অবদানের আলোচনা ছাড়া বর্তমানের সাহিত্য – সংস্কৃতির আলোচনা করার কোনো অর্থ হয় , না । কারণ মধ্যযুগের সাহিত্য – সংস্কৃতিকে ভিত্তি করেই বর্তমানের সাহিত্য সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে । মধ্যযুগের সাহিত্য – সংস্কৃতি যে রাজ – পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এতো সমৃদ্ধ হত না তা স্বীকার করতে হবে । রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত কিছু সংখ্যক গ্রন্থে রাজা , মন্ত্রী বা অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গুণকীর্তন যদিও অনেকখানি অতিরঞ্জিত করা হয়েছিল তবুও এইগুলোর সাহিত্যমূল্য কোনো ভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
মধ্যযুগের অসমে সাহিত্য – সংস্কৃতির মানচিত্রটির নির্মাতা ছিলেন স্থানীয় জনজাতীয় ভাষিক গোষ্ঠী , কামতা রাজগণ এবং উজানের আহোমগণ । সাম্প্রতিক অসমের ভাষা , সাহিত্য – সংস্কৃতি প্রতিটি জাতি জনগোষ্ঠীরই সম্মিলিত সৃষ্টি এবং সম্পত্তি । কামরূপ – কামতার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হেম সরস্বতী , কবিরত্ন সরস্বতী এবং হরিহর বিপ্র অসমিয়া ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন । কছাড়ি রাজা মহামাণিক্যের পৃষ্ঠপোষকতায় মাধব কন্দলী অসমিয়া ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন । এই রাজার সময়ে কপিলির পারে আলি পুখুরির বরদোয়ায় মহেন্দ্র কন্দলী টোল প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞানমার্গের সাধনার দ্বারা অন্যদেরও জ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করেছিলেন।
মধ্যযুগের আহোমদের সাহিত্য – সংস্কৃতির অবদানের কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথমে বুরঞ্জী সাহিত্যের নাম নিতে হবে । প্রথমে তাই আহোম ভাষায় এরপর অসমিয়া ভাষায় লেখার পরম্পরা সৃষ্টি হয়েছিল । সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাভারত , রামায়ণ এবং পুরাণ ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ অসমিয়াতে অনুবাদ করা ছাড়াও অন্যান্য অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ সে সময়ে রচিত হয়েছিল ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো :
১। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ।
২। ভট্টদেব ।
৩। পীতাম্বর কবি ।
১। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব :- মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব অসমের নগাঁও জেলার অন্তর্গত আলীপুখুরী গ্রামে ১৪৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম কুসুম্বর ভুঁইয়া এবং মাতার নাম সত্যসন্ধ্যাদেবী । মহেন্দ্ৰ কন্দলী নামে এক পণ্ডিতের নিকট শঙ্করদেব নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন । তিনি সত্যবতী নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেন । সত্যবতী পরলোক গমন করলে শঙ্করদেব গৃহত্যাগ করে প্রায় ১২ বৎসর নানান তীর্থস্থান দর্শন করেন । শঙ্করদেব প্রবর্তিত ধর্মকে বলা হয় ভাগবতী বৈষ্ণব ধর্ম বা একশরণ নামধর্ম । অসমীয়া সমাজ , সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে শঙ্করদেবের দান অপরিসীম । তিনি গীত , কীর্তন , কাব্য , নাটক প্রভৃতি রচনা করেন । তিনি মোট ৩৬ টি বরগীত , কাব্য , নাটক , “ কীর্তন ঘোষা ” প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন । ১৫৬৯ সালে শঙ্করদেব স্বর্গারোহণ করেন।
২। ভট্টদেব :- ভট্টদেব মধ্যযুগীয় অসমীয়া সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও সাহিত্যিক । তাঁর প্রকৃত নাম বৈকুণ্ঠনাথ ভাগবত ভট্টাচার্য । ভট্টদেব “ কথা ভাগবত ” , “ কথা – গীতা ” , “ কথাভক্তি রত্নাবলী ” প্রভৃতি গদ্য রচনা করে মধ্যযুগে অসমীয়া গদ্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন ।
৩। পীতাম্বর কবি :- পীতাম্বর কবি মধ্যযুগের অন্যতম অসমীয়া কবি ও সাহিত্যিক । তিনি সাহিত্যসৃষ্টির মাধ্যমে অসমীয়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন । তিনি বিখ্যাত “ ঊষা পরিণয় ” কাব্য রচনা করে অসমীয়া সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন । এই কাব্যে ঊষা ও অনিরুদ্ধের প্রণয় কাহিনীর উল্লেখ আছে ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে আগমন করা কয়েক প্রকার মানব প্রজাতির উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে আগমন করা বিভিন্ন প্রজাতির মানবের মধ্যে প্রধান হল– দ্রাবিড় , আর্য , নেগ্রোটো , মেডিটেরিনিয়ান , আলপাইন ও মঙ্গোলীয় ।
প্রশ্ন ২। প্রাচীনকালে অসমে আগমন করা প্রধান মানব জাতির নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ প্রাচীনকালে অসমে আগমন করা প্রধান মানব প্রজাতিগুলি হলঃ নিগ্রোটো , অষ্ট্ৰালয়ড, মঙ্গোলীয় , মেডিটেরেনিয়ান , আলপাইন , আর্য ও ককেসীয় ।
প্রশ্ন ৩। তিবেতো – বর্মন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অসমের তিনটি জনজাতির নাম লেখো ।
উত্তরঃ তিবেতো – বর্মন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অসমের তিনটি জনজাতি হল — রাভা , গারো ও কার্বি ।
প্রশ্ন ৪। টাই – আহোমদের একাংশ কখন কার নেতৃত্বে এবং কোথা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করেছিল ?
উত্তরঃ ১৮২৮ সালে চীনদেশের মুংমাও নামক ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিবাসী টাই আহোমদের একাংশ চুকাফার নেতৃত্বে পাটকাই পাহাড় অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করেছিল।
প্রশ্ন ৫। অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে ব্রহ্মদেশ থেকে কোন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকেরা অসমে প্রব্রজন করেছিল ?
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগে ব্রহ্মদেশ থেকে খামটি , দোওনীয়া টাইফাকে , টুকং , আইটনীয়া প্রভৃতি জনজাতি অসমে প্রব্রজন করেছিল ।
প্রশ্ন ৬। আজান ফকির কে ছিল ? সে কোথা থেকে অসমে এসেছিল । এবং এখানে কী করেছিল ?
উত্তরঃ আজান ফকির ওরফে সাহমিরান ছিল বাগদাদের ধর্মীয় নেতা । সে বাগদাদ থেকে অসমে এসে ধর্মপ্রচার করেছিল ।
প্রশ্ন ৭। অসমের পাহাড় ও সমতল উভয় স্থানে বসবাস করা কয়েকটি জনজাতির নাম লেখো ।
উত্তরঃ অসমের পাহাড় ও সমতল উভয় স্থানে বসবাসকারী প্রধান কয়েকটি জনজাতি হল — অঁকা , আদি , টাংদা , দফলা , মিরি , মিসিং (মিসমি) , খামটি , সেংফৌ , টুয়ং প্রভৃতি ।
প্রশ্ন ৮। ভট্টদেব রচিত তিনখানা সাহিত্যের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ভট্টদেব রচিত উল্লেখযোগ্য সাহিত্য হল –
( ক ) ভাগবত ।
( খ ) কথা গীতা । ও
( গ ) কথাভক্তি রত্নাবলী ।
প্রশ্ন ৯। রামনারায়ণ চক্রবর্তী কর্তৃক অসমীয়ায় অনূদিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো ।
উত্তরঃ ( ক ) গীতগোবিন্দ ।
( খ ) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ।
প্রশ্ন ১০। বিহু কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ বিহু তিন প্রকার , যথা—
( ক ) বহাগ বিহু বা রঙ্গালি বিহু ।
( খ ) মাঘ বিহু বা ভোগালি বিহু । ও
( গ ) কাতি বিহু ।
প্রশ্ন ১১। মহাভারতীয় সংস্কৃতি – সভ্যতা কাকে বলে ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে নানাদিক দিয়ে বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও দেশে বহুযুগ ধরে সংমিশ্রণ , সংশ্লেষণ ও সংবদ্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষ্টি , সংস্কৃতি , ভাষা – সাহিত্য , সভ্যতার বিকাশ ও উত্তরণ সংঘটিত হয়ে আসছে এবং এর সামগ্রিক রূপটিকে মহাভারতীয় সংস্কৃতি – সভ্যতা বলে অভিহিত করা যায় ।
প্রশ্ন ১২। ভারতের মূলগত ঐক্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ ভারতবর্ষের বৈচিত্র্য এবং বিভিন্নতার অন্তরালে এক বিরাট ঐক্যভাব নিহিত রয়েছে । মহাভারতের যুগ অবধি ‘ ভারতবর্ষ ’ নাম থেকে এর ভৌগোলিক একাত্মবোধ প্রমাণিত হয় । দেশের কবি ও রাজনীতিবিদগণ হিমালয় থেকে সাগর পর্যন্ত এক সার্বভৌম সাম্রাজ্যের আদর্শ প্রচার করেছেন । ভারতবর্ষে ধর্মগত ঐক্যও বিদ্যমান । দেশে বেশিরভাগ লোকই হিন্দু ধর্মাবলম্বী । ইসলাম ধর্মাবলম্বীগণও হিন্দু ধর্ম ও সভ্যতার প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকতে পারে নি । বিভিন্ন জাতি ও উপজাতি এবং ভাষাভাষী লোকের দেশ এই ভারতবর্ষ । কিন্তু তাদের মধ্যে ঐক্যভাব নিহিত রয়েছে । বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারতবর্ষের অন্যতম সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ।
প্রশ্ন ১৩। ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐক্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ সংস্কৃতি মানুষের তথা সমাজ ও জাতির একটি বড় সম্পদ । যে জাতি বা দেশ সাংস্কৃতিক দিক থেকে যত উন্নত সেই দেশ বা জাতির উন্নতি অবশ্যম্ভাবী । সংস্কৃতি হল মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ । সংস্কৃতি একমাত্র মানুষের আচার আচরণ , মূল্যবোধ , শিক্ষা , ধর্ম , সাহিত্যকে পরিমার্জিত করতে পারে । প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির একমাত্র লক্ষ্য হল শান্তি স্থাপন করা । ভারতীয় সংস্কৃতি পৃথিবীর সকল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । ভারতীয় সংস্কৃতি তার নিজস্বতা বজায় রেখে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতিকে পুষ্ট করেছে । ভারতীয় সংস্কৃতি প্রাচীন ঐতিহ্য ও নূতনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে ।
প্রশ্ন ১৪। ভারতবর্ষের জাতিগত ঐক্য সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ বহুকাল ধরে ভারতবর্ষে শক , হুন , গ্রিক , পারসিক , পাঠান , মোগল প্রভৃতি অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রবেশ করেছে । তারা ক্রমান্বয়ে ভারতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে । সেইহেতু ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীতে আর্য , দ্রাবিড় , মঙ্গোলীয় , নেগ্রিটো প্রভৃতি বিভিন্ন অবয়ব ও বর্ণের মানুষের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায় । এমন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী খুব কম দেশে দেখা যায় । তাদের ভাষা ও ধর্মের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন ১৫। ভারতবর্ষের ভাষাগত সম্পর্কে ঐক্য সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ ভাষার ক্ষেত্রেও প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সমন্বয়ী ঐক্য দেখতে পাওয়া যায় । ভারতের ভাষাগত বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্যসূত্রের কাজ করছে সংস্কৃত ভাষা , হিন্দি , বাংলা , মারাঠি , তামিল , তেলেগু , মালয়ালাম প্রভৃতি ভায়ার উপর সংস্কৃত ভাষার প্রভাব গভীর । লিপির ক্ষেত্রেও এই মিল বর্তমান ৷ বেশির ভাগ ভারতীয় লিপির উপর ব্রাহ্মীলিপির সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান । “ নানা ভাষা , নানা জাতি , নানা পরিধান , বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান ” —কবির এই বাণী সর্বাংশে সত্য ।
অতি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। কার রাজত্বকালে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় সমসাময়িকভাবে আর্যদের আগমন ঘটেছিল বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান ?
উত্তরঃ মহাভূতি বর্মণের রাজত্বকালে ।
প্রশ্ন ২। টাই – আহোমরা কোথা থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে ?
উত্তরঃ চীনের মুংমাও নামক ক্ষুদ্র রাজ্য থেকে ।
প্রশ্ন ৩। আজান ফকির কোথাকার লোক ছিলেন
উত্তরঃ বাগদাদের ।
প্রশ্ন ৪। বিহার রাজ্যের ভাষাটির নাম কী ?
উত্তরঃ ভোজপুরী – হিন্দী ।
প্রশ্ন ৫। রাভা , গারো ও কার্বিগণ কোন ভাষাগোষ্ঠীর ।
উত্তরঃ তিবেতো – বর্মন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত ।
প্রশ্ন ৬। ড . ভেঙ্কটরাও – এর মতে অসমে মোট কতটি প্রধান জনজাতি আছে ?
উত্তরঃ ৬১ টি ।
প্রশ্ন ৭। অসমীয়া ভাষায় রচিত প্রথম বুরঞ্জী কোনটি ?
উত্তরঃ স্বর্গনারায়ণ মহারাজার আখ্যান ।
প্রশ্ন ৮। স্বর্গনারায়ণ মহারাজার আখ্যান কোন সালে রচিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৫২৬ সালে ।
প্রশ্ন ৯। অসমের কোন মনীষী কোচ রাজা মহারাজা নরনারায়ণের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল ?
উত্তরঃ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ।
প্রশ্ন ১০। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কয়টি বরগীত রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ মোট ৩৬ টি ।
প্রশ্ন ১১। “ গীতগোবিন্দ ” কে অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করেন ?
উত্তরঃ কবি রামনারায়ণ চক্রবর্তী ।
প্রশ্ন ১২। “ পদ্মাপুরাণ ” অসমীয়া ভাষায় কে অনুবাদ করেন ?
উত্তরঃ নারায়ণদেব ।
প্রশ্ন ১৩। “ ঘামছা ” কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ আমীর খসরু ।
প্রশ্ন ১৪। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ব্রজবুলী উপভাষায় মোট কতটি বরগীত রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ ১৫৭ টি ।
প্রশ্ন ১৫। “ নামঘোষা ” কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ।
প্রশ্ন ১৬। ভট্টদেবের প্রকৃত নাম কী ছিল ?
উত্তরঃ বৈকুণ্ঠনাথ ভট্টাচার্য ।
প্রশ্ন ১৭। ঊষা পত্রিকা কাব্যের রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ পীতাম্বর কবি ।
প্রশ্ন ১৮। আজান ফকির গড়গাঁও এর নিকট চুনপোরাতে থেকে কখন ধর্মপ্রচার করেছিল ?
উত্তরঃ সপ্তদশ শতকে ।
প্রশ্ন ১৯। আজান ফকিরের প্রকৃত নাম কী ?
উত্তরঃ শাহমিরাণ ।
প্রশ্ন ২০। “ হস্তিবিদ্যার্ণব ” গ্রন্থের চিত্রসমূহ কে অঙ্কন করেছিল ?
উত্তরঃ দিলবর ও দোসর ।
প্রশ্ন ২১। বিহু উৎসব মোট কতটি ?
উত্তরঃ তিনটি ।
প্রশ্ন ২২। রঙ্গালি বিহু কোন মাসে পালিত হয় ?
উত্তরঃ বৈশাখ মাসে ।
প্রশ্ন ২৩। আহোমগণ কখন অসমে প্রব্রজন করেছিল ?
উত্তরঃ ১২২৮ সালে ।
প্রশ্ন ২৪। নাগারা কোন প্রজাতির লোক ?
উত্তরঃ নিগ্রোটো প্রজাতির ।
প্রশ্ন ২৫। অন্ধ্রপ্রদেশের ভাষার নাম কী ?
উত্তরঃ তেলেগু ।
প্রশ্ন ২৬। কর্ণাটকের ভাষার নাম কী ?
উত্তরঃ কন্নড় ।
প্রশ্ন ২৭। অস্ট্রালয়ড প্রজাতির লোক কোন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ?
উত্তরঃ অস্ট্রিক ভাষার ।
প্রশ্ন ২৮। অসমে সুফীবাদের প্রচারক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ‘ আজান পীর ’ বা ‘ আজান ফকির ’ ।
প্রশ্ন ২৯। আজান পীর রচিত ধর্মমূলক গীত অসমে কী নামে প্রসিদ্ধ ?
উত্তরঃ জিকির ।
প্রশ্ন ৩০। “ কীর্তনঘোষা ” কে রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ।
প্রশ্ন ৩১। “ নামঘোষা ” কে রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ মাধবদেব ।
প্রশ্ন ৩২। “ হস্তিবিদ্যার্ণব ” কে রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ সুকুমার বরকাইথ ।
প্রশ্ন ৩৩। ভারতে প্রথম গদ্যসাহিত্য রচয়িতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ভট্টদেব ।
প্রশ্ন ৩৪। শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের শিক্ষাগুরু কে ছিলেন ?
উত্তরঃ মহেন্দ্র কন্দলী ।
প্রশ্ন ৩৫। কোন ব্যক্তি সমগ্র ‘ মহাভারত ‘ কাব্যটিকে অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন ?
উত্তরঃ কবি রাম সরস্বতী ।
প্রশ্ন ৩৬। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর ছবিসংগ্রহ করে একটি অ্যালবাম তৈরি করো ।
( ক ) নাগাগণের হর্নবিল উৎসব ।
( খ ) মণিপুরী নৃত্য ।
( গ ) খাসীয়া নৃত্য ।
( ঘ ) মিজোগণের বাঁশনৃত্য ।
( ঙ ) মিজোগণের চাংঘর ।
( চ ) মদন কামদেব মন্দিরে থাকা পুরানো ভাস্কর্য ।
( ছ ) শিবসাগরের শিব দৌল ।
( জ ) শিবসাগরের তলাতল ঘর ।
( ঝ ) শিবসাগরের রংঘর ।
উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা উপরের প্রশ্ন গুলির উত্তর নিজে করার চেষ্টা কর ।
সঠিক উত্তর বেছে নিয়ে উত্তরটির পাশে টিক্ ( √ ) চিহ্ন দাও :
প্রশ্ন ১। নাগারা কোন প্রজাতির লোক ?
( i ) নিগ্রোটো
( ii ) মঙ্গোলীয়
( iii ) অস্ট্রালয়ড ৷
উত্তরঃ ( i ) নিগ্রোটো ( √ ) ।
প্রশ্ন ২। আহোমগণ কত সালে অসমে প্রব্রজন করেছিল ?
( i ) ১২২৬
( ii ) ১২২৮
( iii ) ১২৩০
উত্তরঃ ( ii ) ১২২৮ ( √ ) ।
প্রশ্ন ৩। আর্যরা কত খ্রিস্টাব্দ পূর্বে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে ?
( i ) ১২০০
( ii ) ১২৩০
( iii ) ১২৮০
উত্তরঃ ( i ) ১২০০ ( √ ) ।
প্রশ্ন ৪। “ নামঘোষা ” রচনা করেন কে ?
( i ) শঙ্করদেব
( ii ) মাধবদেব
( iii ) দামোদর দেব ।
উত্তরঃ ( ii ) মাধবদেব ( √ ) ।
প্রশ্ন ৫। অন্ধ্রপ্রদেশের ভাষা কী ?
( i ) তামিল
( ii ) তেলেগু
( iii ) মালয়ালাম
উত্তরঃ ( ii ) তেলেগু ( √ ) ।
প্রশ্ন ৬। কর্ণাটকের ভাষার নাম কী ?
( i ) তামিল
( ii ) তেলেগু
( iii ) কন্নড়
উত্তরঃ ( iii ) কন্নড় ( √ ) ।
প্রশ্ন ৭। গীতগোবিন্দ অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করেন কে ?
( i ) রামনারায়ণ চক্রবর্তী
( ii ) সুকুমার বরকাইত
( iii ) মাধবদেব
উত্তরঃ ( i ) রামনারায়ণ চক্রবর্তী ( √ ) ।
প্রশ্ন ৮। অসমে মোট ক’বার বিহু উৎসব পালিত হয় ?
( i ) একবার
( ii ) দুইবার
( iii ) তিনবার
উত্তরঃ ( iii ) তিনবার ( √ ) ।
প্রশ্ন ৯। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কয়টি বরগীত রচনা করেন ?
( i ) ৩০ টি
( ii ) ৩৬ টি
( iii ) ৪২ টি
উত্তরঃ ( ii ) ৩৬ টি ( √ ) ।
Thank You for Visiting – Roy Library
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.