Hello Viewers Today’s We are going to Share Assam SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ Question Answer in Bengali. As Per New Syllabus of SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ Notes in Bengali PDF Download. SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ Solutions in Bengali. Which you Can Download PDF Notes SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ in Bengali Textbook Solutions for using direct Download Link Given Below in This Post.
SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ
Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 10 Social Science Chapter 4 স্বাধীনতা আন্দোলন ও অসমে জাতীয় জাগরণ Suggestions in Bengali. I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 10 Social Science Part – I History, Social Science Part – II Political Science, Social Science Part – IIII Economics. If you liked SEBA Class 10 Social Science Chapter 3 অসমে ব্রিটিশ বিরোধী জাগরণ এবং কৃষক বিদ্রোহভারতের স্বাধীনতা Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.
১৮। ১৯৪১ সালের ৬ ই ডিসেম্বর কার নির্দেশে কটন কলেজের ছাত্রদের উপর পুলিশ লাঠি চালনা করে ?
( ক ) উপায়ুক্ত হামফ্রের
( খ ) লর্ড ক্যানিং – এর
( গ ) হপসকিনের
( ঘ ) মোঃ সাদুল্লার
উত্তরঃ ( ক ) উপায়ুক্ত হামফ্রের ( √ ) ।
সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো :
১। দীননাথ বেজবরুয়া ।
২। তেজপুর রায়ত সভা ।
৩। রাজ প্রভাতচন্দ্র বরুয়া ।
৪। জগন্নাথ বরুয়া ।
৫। চন্দ্রনাথ শর্মা ।
৬। পূর্ণ স্বরাজ দিবস ।
৭ । কানিংহাম সার্কুলার ।
৮। ধনঞ্জয় বুড়াগোহাঞি ।
৯। টিকেন্দ্রজিৎ ।
১০। গোপীনাথ বরদলৈ ।
১১। মিলের রিপোর্ট ।
১। দীননাথ বেজবরুয়া :- দীননাথ বেজবরুয়া ছিলেন অসমের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব । তিনি ছিলেন গুয়াহাটী ইংলিশ সেমিনারের সক্রিয় কর্মী । তাঁর ও অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় গৌহাটি ১৮৬৭ সালে সেমিনারী প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮৮০ সালে ইহার দ্বিতীয় সম্মেলনে এবং ১৮৮২ সালের তৃতীয় সম্মেলনে দীননাথ বেজবরুয়া সভাপতিত্ব করেন ।
২। তেজপুর রায়ত সভা :- ১৮৮৪ সালে তেজপুর রায়ত সভা প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সভার সংগঠন ও কর্মসূচী রূপায়ণে বিশেষত লক্ষ্মীকান্ত বরককেতী , হরিলাল আগরওয়ালা , ভবানীচরণ ভট্টাচার্য , জয়দেব শর্মা , লক্ষ্মীকান্ত দাস , মহেন্দ্র দে প্রমুখ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । রায়ত সভার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা ।
৩। রাজা প্রভাতচন্দ্র বরুয়া :- রাজা প্রভাতচন্দ্র বরুয়া ছিলেন অসম এসোসিয়েশনের একজন অন্যতম সক্রিয় কর্মী । মানিকচন্দ্র বরুয়া ১৯০৩ সালে অসম এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন । রাজা প্রভাতচন্দ্র বরুয়া অসম এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হন । তাঁর প্রচেষ্টায় উক্ত প্রতিষ্ঠান অসমের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
৪। জগন্নাথ বরুয়া :- জগন্নাথ বরুয়া ছিলেন অসমের বিশিষ্ট চা – বাগিচার মালিক । তিনি যোরহাট সর্বজনীন সভার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন । সর্বজনীন সভা গঠনের প্রথম জনসভায় অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে জগন্নাথ বরুয়াও হাজির ছিলেন । ১৮৯৩ সালের ১১ ই নভেম্বর জগন্নাথ বরুয়ার সভাপতিত্বে যোরহাট সর্বজনীন সভার সভায় অসমে আফিং চাষ বনধ করিবার দাবী জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয় । এই সভাপতি জগন্নাথ বরুয়া ও সম্পাদক দেবীচরণ বরুয়ার স্বাক্ষর করা স্মারকপত্র অসমের চীফ কমিশনারের নিকট পেশ করা হয় ।
৫। চন্দ্রনাথ শৰ্মা :- চন্দ্রনাথ শর্মা ছিলেন অসমের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী । তিনি ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯২০ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন । চন্দ্রনাথ শর্মা মূলত ছিলেন ছাত্রনেতা । তাঁর নেতৃত্বে অসমে ছাত্রসমাজ গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । ১৯২২ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারী চৌরিচৌরার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ই ফেব্রুয়ারী গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন । এতে চন্দ্ৰনাথ শর্মা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন । সেই সময় তিনি বিশ্রামের জন্য পুরীতে চলে যান । যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯২২ সালের ২০ জুলাই শিলং – এ পরলোকগমন করেন ।
৬। পূর্ণ স্বরাজ দিবস :- ১৯৩০ সালের ১২ ই মার্চ গান্ধিজি দান্ডি যাত্রা করে লবণ আইন ভঙ্গ করেন । এই সঙ্গে দেশে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয় । এটা ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব । অবশ্য ১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করার পর ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী প্রারম্ভিক কার্যসূচি শুরু হয় । সেইদিন সমগ্র দেশে “ পূর্ণ স্বরাজ দিবস ” পালন করা হয় । সেই সঙ্গে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন কার্যসূচি রূপায়িত হয় ।
৭। কানিংহাম সার্কুলার :- ১৯৩০ সালের মে মাসে অসমের শিক্ষাধিকর্তা ক্যানিংহাম এক নির্দেশনামায় ছাত্র – ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের হরতাল , পিকেটিং , রাজনৈতিক সভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নিষেধ করা এবং সব ধরনের সরকারী অনুশাসন মেনে চলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দানের কথা ঘোষণা করেন । ফলে অসমে ছাত্র – ছাত্রীগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে দলে দলে স্কুল – কলেজ ত্যাগ করে । এই সময়ে করিমগঞ্জে পাবলিক হাইস্কুল , গুয়াহাটীতে কামরূপ অ্যাকাডেমী স্কুল প্রভৃতি স্থাপিত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে ঐগুলিতে ভর্তি হয়েছিল । জাতীয় স্কুলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস সরকার বাধ্য হয়ে পরবর্তীকালে এই সার্কুলার প্রত্যাহার করেন ।
৮। ধনজয় বুড়াগোহাঞি :- ধনঞ্জয় বুড়াগোহাঞি ছিলেন গোমধর কোয়রের অন্যতম সহযোগী । ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গোমধরের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর ১৮৩০ সালে ধনঞ্জয় বুড়াগোহাঞি বদন চাঁদের পুত্র পিয়লী ‘ বরফুকনের সহযোগিতায় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন । কিন্তু কতিপয় বিদ্রোহী নেতার বিশ্বাসঘাতকায় ধনঞ্জয়ের পরিকল্পনা সফল হয়নি । এর পর ইংরেজগণ ভবিষ্যতে যাতে এইরূপ বিদ্রোহের চেষ্টা না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
৯। টিকেন্দ্রজিৎ :- বীর টিকেন্দ্রজিৎ রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন । নেতা হিসাবে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন । সেনাপতি হিসাবে টিকেন্দ্রজিৎ ছিলেন অসাধারণ দক্ষ । ব্রিটিশ মণিপুর রাজ্যে হস্তক্ষেপ করলে টিকেন্দ্রজিৎ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । টিকেন্দ্রজিতের তীক্ষ্ণবুদ্ধির জন্যই মহারাজা সুরচন্দ্র ১৮৯০ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন । পরে ফুলচন্দ্র নামে এক ব্যক্তি মণিপুরের সিংহাসন আরোহণ করেন । ব্রিটিশ সরকার কতিপয় শর্তে ফুলচন্দ্রকে স্বীকৃতি প্রদান করে । শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম হল টিকেন্দ্রজিতকে মণিপুর থেকে বিতাড়ন । সেই অনুযায়ী টিকেন্দ্রজিৎকে বিতাড়নের জন্য ব্রিটিশ অফিসারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হল । কুইন্টন নামে এক ব্রিটিশ অফিসার টিকেন্দ্রজিতকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি টিকেন্দ্রজিতের পক্ষ থেকে প্রবল বাধার সম্মুখীন হন । টিকেন্দ্রজিত ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে চারজন ব্রিটিশ নিহত হয় । ব্রিটিশ সরকার টিকেন্দ্রজিতকে গ্রেপ্তার করে মৃতুদণ্ডে দণ্ডিত করে ।
১০। গোপীনাথ বরদলৈ :- ১৮৯০ সালে লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ জন্মগ্রহণ করেন । তিনি কলকাতা হতে স্নাতকোত্তর ও আইন অধ্যয়ন করে অসমে আসেন এবং কিছুকাল গুয়াহাটির সোনারাম হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন । পরে তিনি আইন ব্যবসায় যোগদান করেন । ১৯২০ সালে গান্ধিজির আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইন ব্যবসা পরিত্যাগ করে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন । ১৯২২ সালে তাঁকে এক বৎসর কারাদণ্ড দেওয়া হয় । ১৯২৬ সালে পাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের ৪১ তম অধিবেশনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন । ১৯৩২ সালে গোপীনাথ গুয়াহাটী পৌরসভার সভাপতি হন ।
তিনিই প্রথম অসমের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্টের দাবী জানান । তিনি অসম হতে শ্রীহট্টের পৃথকীকরণের পক্ষে ছিলেন । ১৯৩৬ সালে তিনি অসম বিধান সভায় কংগ্রেস দলনেতা হন ও সাদুল্লা মন্ত্রীসভার তীব্র বিরোধিতা করেন । ১৯৩৮ সালে তিনি অসমে কংগ্রেস কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করেন । পরে ১৯৪৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে অসমে আবার কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠিত হয় । গোপীনাথ বরদলৈয়ের প্রচেষ্টায় ১৯৪৬ সালের কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার “ সমষ্টি পরিকল্প ” অনুযায়ী অসমকে বাংলার সঙ্গে একজোট করার প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় । ১৯৫০ সালে গোপীনাথ বরদলৈ পরলোকগমন করেন ।
১১। মিলের রিপোর্ট :- মোপট মিল ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক । তিনি ১৮৫৩ সালে উজান অসমের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য অসমে আসেন । মণিরাম দেওয়ান অসমে ব্রিটিশ অপশাসন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মিলের নিকট পেশ করেন এবং অসমে আহোম শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানান । মিল বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে ১৮৫৩ সালের শেষদিকে ভারতে ব্রিটিশ সরকারকে একটি রিপোর্ট বা প্রতিবেদন দাখিল করেন । মিলের রিপোর্ট থেকে অসমের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় । প্রশাসনিক সেবা ও বিচার বিভাগে মুখ্যপদাধিকারী এইরূপ ছিল —
( ক ) একজন আয়ুক্ত ।
( খ ) একজন উপায়ুক্ত ।
( গ ) ছয়জন মুখ্য সহকারী ।
( ঘ ) ৩ জন কনিষ্ঠ সহায়ক ।
( ঙ ) ৮ জন উপসহায়ক ।
( চ ) একজন মুখ্য সদর আমিন ।
( ছ ) ৬ জন সদর আমিন ।
( জ ) ১৭ জন মুন্সেফ ।
পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছিল । ভূমি ও রাজস্ব সংস্কারের ফলে সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পায় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন ১। অসম এসোসিয়েশন সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ ১৯০৩ সালে অসমে “ অসম এসোসিয়েশন ” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় চেতনার একটি নূতন অধ্যায়ের শুরু হয় । ১৯০৩ সালে জগন্নাথ বরুয়া , ঘনশ্যাম বরুয়া , ফৈজনুর আলী , মানিকচন্দ্র বরুয়ার উদ্যোগে ডিব্রুগড়ে অসম এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় । এর প্রথম সভাপতি ছিলেন গৌরীপুর রাজ প্রভাতচন্দ্র বরুয়া । ঐ সংঘ অসম এবং অসমীয়া স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবীগুলির সাংবিধানিক উপায়ে মীমাংসার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল । প্রথমদিকে অসম এসোসিয়েশন মধ্যম পন্থী ছিল , কিন্তু বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের উপর এটি চরম ইংরাজ বিরোধী হয়েছিল । এই সংস্থায় যুবকেরা যোগ দিয়েছিল । ১৯১৭ সালে ঐ সংস্থা স্বায়ত্ত্ব শাসনের ক্ষেত্রে অসমকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানিয়েছিল । কিন্তু অসম সরকার এর বিরোধিতা করে । পরে সভ্যদের দাবি চলতে থাকায় সরকার অসমকে ঐ নির্দেশিকার অন্তর্ভুক্ত করে । ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অসম অ্যাসোসিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ১৯২১ সালে অসম প্রদেশ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসম অ্যাসোসিয়েশনের বিলুপ্তি ঘটে ।
প্রশ্ন ২। অসমের নবজাগরণ বা নবচেতনা সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভারতে যে জাতীয় চেতনার জাগরণ ঘটেছিল অসমেও তার প্রভাব পড়েছিল । ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে অসমবাসীও স্বাধীনতা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করেছিল । যোগাযোগ এবং যাতায়াতের প্রসার ঘটায় স্বাধীনতাপ্রিয় অসমবাসীরা সারা অসমে মনের কথা আদান – প্রদান করতে সমর্থ হয় । রায়ত সভা , সর্বজনীন সভা , অসম অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সামাজিক ও অথনৈতিক প্রতিষ্ঠান নবচেতনা জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া , হেমচন্দ্র গোস্বামী , চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা প্রভৃতি মনীষীগণ তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে অসমবাসীকে সচেতন করেন । এছাড়াও কতিপয় সংবাদপত্র নবজাগরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
প্রশ্ন ৩। অসমে রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে “ অসম ছাত্র সম্মিলন ” -এর ভূমিকা বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ ১৯১৬ সালে অসম ছাত্র সম্মেলন প্রতিষ্ঠিত হয় । এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গুয়াহাটীতে । অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া । স্বদেশী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রদের যোগদান , শ্রীমতী অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে হোমরুল আন্দোলন , তিলক , গোখলে প্রমুখ জাতীয় নেতাদের বক্তৃতা , ভারত ও বিশ্বের সমসাময়িক ঘটনাবলী অসমের ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । ফলে তাদের মধ্যে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে । অসম ছাত্র – সম্মেলন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই নবচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে । সারা ভারতে যখন সংগঠিত ছাত্র সংস্থার অভাব তখন অসমে এই সম্মেলন আন্দোলনকারীগণকে উদ্দীপিত করে ।
প্রশ্ন ৫। পাণ্ডু কংগ্রেস সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ ১৯২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে গুয়াহাটির নিকট পাণ্ডুতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৪১ তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । দক্ষিণ ভারতে বিখ্যাত স্বদেশপ্রেমিক ও রাজনীতিবিদ শ্রীনিবাস আয়াঙ্গার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন । অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী ও উমেশচন্দ্র চৌধুরী রচিত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের মাধ্যমে অধিবেশনের উদ্বোধন হয় । তরুণরাম ফুকন ও নবীনচন্দ্র বরদলৈ অধিবেশন সফল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন । উক্ত অধিবেশনে ব্রিটিশ নীতির বিরোধিতা ও গঠনমূলক কর্মসূচীর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় । মহাত্মা গান্ধি অধিবেশনে উপস্থিত থেকে মৌলবাদী আব্দুল রসিদ কর্তৃক নিহত স্বামী শ্রদ্ধানন্দের শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ।
প্রশ্ন ৬। অসমে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ ভারতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ১৮৮৫ সালে হলেও ১৯২১ সালে অসম প্রদেশ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় । এতদিন পর্যন্ত অসম বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির মাধ্যমে জাতীয় কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করত । ১৯২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসমে আলাদা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি গঠিত হয় ।
প্রশ্ন ৭। অসমের মহাত্মা গান্ধির আগমনের প্রতিক্রিয়া কীরূপ ছিল ?
উত্তরঃ ১৯২১ সালের আগস্ট মাসে মহাত্মা গান্ধি আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে প্রথমবার অসমে আসেন । ঐ সময় অসহযোগ আন্দোলন চলছিল । গান্ধিজি ঐ আন্দোলন শুরু করবার জন্য অসম ভ্রমণ করেন । তাঁর আগমনে অসমে ঐ আন্দোলন জোরদার হয় । মহাত্মাজিকে দর্শনের উদ্দেশ্যে গুয়াহাটী রেল স্টেশনের আশেপাশে বিরাট সংখ্যক মানুষ সমবেত হয় । গুয়াহাটি , তেজপুর , নগাঁও , যোরহাট , ডিব্রুগড় , শিলচর প্রভৃতি অন্যান্য স্থানে মহাত্মা গান্ধির জনসভায় মানুষের ভিড় উপচিয়ে পড়ে । গান্ধিজির আহ্বানে সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা উপত্যকার স্কুল – কলেজ প্রভৃতি বর্জন করা হয় । গুয়াহাটীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলাতী বস্ত্র বর্জন শুরু হয় । তরুণরাম ফুকন , নবীনচন্দ্র বরদলৈ , রোহিনী চৌধুরী , মোঃ তায়েবউল্লা প্রমুখ নেতাগণ অসমে এই সময়ে আন্দোলন পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন । গান্ধিজির অসম ভ্রমণ সম্পূর্ণ সফল হয় । “ ইয়ং ইণ্ডিয়া ” পত্রিকায় “ লাভলি অসম ” , প্রবন্ধে গান্ধিজি নিজেই এটি স্বীকার করেছিলেন ।
প্রশ্ন ৮। স্বাধীনতা সংগ্রামে অসমের ছাত্র সমাজের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসমের ছাত্র সমাজের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে । ১৯০৫ সালের স্বদেশী আন্দোলন থেকে অসমে ছাত্রসমাজ সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করে । ১৯১৬ সালে “ অসম ছাত্র সম্মেলন ” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছাত্র সমাজ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ছাত্র সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গুয়াহাটিতে । অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া । স্বদেশী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রদের যোগদান , শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে হোমরুল আন্দোলন , তিলক , গোখলে প্রভৃতি জাতীয় নেতাদের বক্তৃতা , ভারত ও বিশ্বের সমসাময়িক ঘটনাবলী অসমের ছাত্র যুব সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । ফলে তাদের মধ্যে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে ।
এই নবচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ছাত্র – সম্মেলন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে । এটি কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান না । কিন্তু সারা ভারতের ছাত্রসমাজের আবেদনে ও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনে ছাত্র সম্মেলন নানা ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং অসমের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১৯২০ মহাত্মা গান্ধি সালে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে সারা দেশের সঙ্গে অসমের জনগণ তথা ছাত্রসমাজ অসহযোগ আন্দোলন যোগদান করে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জন করা হয়।একইভাবে ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে অসমের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । ১৯৩০ সালে ক্যানিংহাম সার্কুলারের প্রতিবাদে অসমের ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে । দলে দলে স্কুল – কলেজ ত্যাগ করে । আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস করতে সরকার বাধ্য হয়ে এই সার্কুলার প্রত্যাহার করেন ।
১৯৪২ সালে ভারত ত্যাগ আন্দোলন শুরু হলে অসমের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে আন্দোলন অংশগ্রহণ করে । ১৯৪৬ সালের “ সমষ্টি পরিকল্পনা ” র বিরুদ্ধেও অসমের ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে মুখর হয় ।
প্রশ্ন ৯। অসমে ভারত ত্যাগ আন্দোলনের প্রভাব বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ ১৯৪২ সালের ভারত ত্যাগ আন্দোলনের প্রভাব অসমে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত । অসমে এই আন্দোলন স্থানে স্থানে সহিংস সংগ্রামে পরিণত হয় । ব্রিটিশ সরকারের অফিস আদালত , থানা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিরস্ত্র দৃঢ়সংকল্প জনতা আক্রমণ শুরু করে । ব্রিটিশ সরকারও নির্মম নির্যাতন চালায় । এই গণঅভ্যুত্থান দমন করতে ব্রিটিশ সরকার স্ত্রী – পুরুষ নির্বিশেষে গুলি করে হত্যা , পিটুনি , ট্যাক্স আরোপ প্রভৃতি অত্যাচার করে । আগস্ট আন্দোলনে অসমে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিহত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ভোগেশ্বরী ফুকনানী , বীরবালিকা , কনকলতা ও তিলক ডেকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য । এই সময়েই আহোম যুবক কুশান কোয়ার ব্রিটিশ কারাগারে ফাঁসিকাষ্ঠে আত্মত্যাগ করেন । তাঁদের চরম ত্যাগ ছাড়াও ভারত ত্যাগ আন্দোলনের সময় অসমের বহু বীরসন্তান অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন ।
প্রশ্ন ১০। সাদুল্লা মন্ত্রীসভা সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ স্যার মহম্মদ সাদুল্লা ছিলেন অসমে মুসলিম লীগের নেতা । ১৯৩৭ সালে তিনি অসমে প্রথম মন্ত্রীসভা গঠন করেন । কিন্তু সাদুল্লা মন্ত্রীসভা জনস্বার্থে কোনো কাজ করেনি । উপরন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফলে জনমনে অসন্তোষ দেখা দেয় । আস্থা ভোটের সম্মুখীন না হয়ে ১৯৩৮ সালের ১৩ ই সেপ্টেম্বর সাদুল্লা মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করে । ১৯ শে সেপ্টেম্বর গোপীনাথ বরদলৈয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হয় । ১৯৩৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর কংগ্রেস মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করলে সাদুল্লা দ্বিতীয় বারের জন্য মন্ত্রীসভা গঠন করেন এবং ১৯৪১ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করে । ১৯৪২ সালের ভারত ত্যাগ আন্দোলনে কংগ্রেস বিধায়কগণকে কারারুদ্ধ করা হয় । এই সুযোগে মোঃ সাদুল্লা ১৯৪২ সালের ২৫ শে আগস্ট শেষবারের মত মন্ত্রীসভা গঠন করেন । এই সময়ে অসমে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয় । কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে আলোচনা হয় , কিন্তু তা ব্যর্থ হয় ।
প্রশ্ন ১১। অসমে ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠন সম্পর্কে কী জান ?
উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে অসম বিধানসভার ১০৮ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মোট ৫০ টি আসন লাভ করে । কয়েকজন নির্দল সদস্যের সমর্থনে কংগ্রেস বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হয় । ১৯৪৬ সালে ১০ ই ফেব্রুয়ারী গোপীনাথ বরদলৈয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠন করে । নূতন মন্ত্রীসভা সমস্যা জর্জরিত অসমে সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটায় । কেবিনেট মিশনের “ সমষ্টি পরিকল্প ” ( Grouping Plan ) প্রস্তাবে অসমকে মুসলিম সংখ্যাধিক্য বাংলার সহিত একজোটে যুক্ত করে দেওয়া হয় । গোপীনাথ বরদলৈ – এর নেতৃত্বে কংগ্রেস এর তীব্র প্রতিবাদ করলে প্রস্তাবটি রদ হয় । কংগ্রেস মন্ত্রীসভা অসমের অন্যান্য নানা সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করে । এর মধ্যে আফিং – এর ব্যবসা বন্ধ , কালাজ্বর প্রতিরোধ , শ্রমিকের কল্যাণ , সরকারী চাকুরী জীবীর কল্যাণ , বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
প্রশ্ন ১২। অসমে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার প্রভাব বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ কেবিনেট মিশনের “ সমষ্টি পরিকল্প ” বা রাজ্যগুলির বিভাগকরণ এবং অসম ও বাংলাদেশকে “ গ ” বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনায় অসমে তীব্র অসন্তোষ দেখা যায় । অসম হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য । অসমকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বঙ্গদেশের সঙ্গে যুক্ত করলে অসমের নিজস্ব পরিচয় এবং অসমিয়াদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে । একমাত্র মুসলিম ব্যতীত রাজ্যের সকলশ্রেণির জনগণই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে । অসম প্রদেশ কংগ্রেস এই সমষ্টি পরিকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করে । সারা রাজ্যে অসম সম্পর্কিত এই প্রস্তাব বাতিলের দাবী জানানো হয় । ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয়চন্দ্র ভগবতী এবং মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী গান্ধিজির সঙ্গে দেখা করে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে তাকে ওয়াকিবহাল করেন । অবশেষে মহাত্মা গান্ধি ও গোপীনাথ বরদলৈয়ের প্রচেষ্টায় সমষ্টি পরিকল্পের অসম সম্পর্কিত বিষয়টি বাতিল হয় ।
প্রশ্ন ১২। আহোম সভা ( আহোম অ্যাসোসিয়েশন ) -র সংগঠন এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তরঃ আহোম জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি সামাজিক – রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে ১৮৯৩ সালে পদ্মনাথ গোঁহাই বরুয়া এবং অন্যান্য অনেক শিক্ষিত ব্যক্তির প্রচেষ্টায় আহোম সভা এবং আহোম অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় । সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রায় ৪০ বৎসর পদ্মনাথ গোঁহাই আহোম সভার সম্পাদক ছিলেন । এই সংগঠনটি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ছিল । প্রত্যেক জেলায়ই এর শাখা স্থাপন করেছিল ।
আহোম সভার মূল অধিবেশনে আহোমগণকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদা প্রদান করবার দাবি উত্থাপন করা হয় । তাদের জন্য বিধান সভায় আসন সংরক্ষণ করে পৃথক ভোটাধিকারের দাবি উত্থাপন করা হয় ।
১৯৩৫ সালের ২০-২১ এপ্রিল ডিব্ৰুগড়ে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে একাংশ আহোম লোক আহোম সভাকে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী আদর্শ গ্রহণ করতে জোর দিয়েছিল । এই অধিবেশনের পরই আহোম সভায় কংগ্রেসীগণের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় ।
১৯৪১ সালের এপ্রিল মাসে শিবসাগরে অনুষ্ঠিত নবম অধিবেশনে আহোম সভা বিভাজিত হয়।আহোম সভার একটি অংশ বের হয়ে “ জাতীয়তাবাদী আহোম সম্মেলন ” নামে একটি সংস্থা গঠন করে ।
প্রশ্ন ১৩। অসমে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বভারতীয় একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে এবং প্রদেশগুলি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে । ভারতীয় প্রদেশগুলি ক , খ ও গ — এই তিনভাগে ভাগ হবে । “ ক ” ভাগে থাকবে হিন্দুপ্রধান , মাদ্রাজ , বোম্বাই ( মুম্বাই ) , মধ্যপ্রদেশ , যুক্তপ্রদেশ ( বর্তমান উত্তরপ্রদেশ ) , বিহার ও উড়িষ্যা । “ খ ” ভাগে থাকবে বঙ্গদেশ ও অসম ৷ প্রত্যেক ভাগ নিজ নিজ এলাকার জন্য সংবিধান স্থির করবে । কিন্তু সকল ভাগ থেকেই প্রতিনিধিগণ এবং যে সকল দেশীয় রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যোগদানে স্বীকৃত হরে সেই সকল রাজ্যের প্রতিনিধিগণ সমবেতভাবে ভারত ইউনিয়নের সংবিধান স্থির করবেন । নূতন সংবিধান অনুযায়ী প্রথম নির্বাচনের পর যেকোন প্রদেশ এক ভাগ থেকে অপর ভাগে যোগদান করতে পারবে ।
কেবিনেট মিশনের “ সৃষ্টি পরিকল্প ” বা রাজ্যগুলির বিভাগকরণ ও অসম এবং বাংলাদেশকে “ গ ” বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা অসমে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় । একমাত্র মুসলিম লীগ ছাড়া রাজ্যের সকল শ্রেণির জনগণ কেবিনেট মিশনের এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানায় । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই মে তারিখে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা ঘোষণার দিনই অসম প্রদেশ কংগ্রেস এই পরিকল্পনায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করে । অসম জাতীয় মহাসভাও এইরূপ প্রতিবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করে । সমগ্র অসমে কেবিনেট মিশনের এই “ বিভাগকরণ ” প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয় । সারা রাজ্যে বিভিন্ন সভা – সমিতির মাধ্যমে কেবিনেট মিশনের অসম সম্পর্কিত এই পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানানো হয় । ১৯৪৬ সালের ১৬ ই জুলাই অসমের প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ অসম বিধানসভার এই প্রস্তাব বাতিলের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং বিধানসভায় এটি গৃহীত হয় ।
কেবিনেট মিশনের উক্ত পরিকল্পনা প্রস্তাবে অসমে অসন্তোষ ও ভয়ের প্রকৃত কারণ আছে । অসম সর্বদাই একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য । অসমকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য বঙ্গদেশের সঙ্গে যুক্ত করলে অসমের পরিচয় ও অস্তিত্ব বিপন্ন হবে । উপরন্তু অসম সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে লিপ্ত হবে। দিল্লীতে গোপীনাথ বরদলৈ কেবিনেট মিশন ও লর্ড ওয়াভেলের সঙ্গে আলোচনাকালে এই ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেন । ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয়চন্দ্র ভগবতী এবং মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী শ্রীরামপুরে মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে দেখা করে উক্ত বিষয়টি উত্থাপন করেন । মহাত্মা গান্ধি অসমের দাবী সমর্থন করে বললেন যে কেবিনেট মিশনের উক্ত প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অসমের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে ।
প্রশ্ন ১৫। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসমের অবদান বা ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসন ও শোষণ মুক্ত হতে ভারতবাসীর প্রথম প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে । অসমেও মণিরাম দেওয়ান এবং আরোও কতিপয় দূরদর্শী ব্যক্তি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ষড়যন্ত্র করেছিলেন । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে সারাদেশে এক নবজাগরণ শুরু হয় । অসমেও এই নবজাগরণের প্রভাব বিস্তার করে । ফলে ভারতবাসী তথা অসমবাসীর মনে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগরিত হয় ।
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর অসমের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে । ১৯০৩ সালে “ অসম অ্যাসোসিয়েশন ” প্রতিষ্ঠার পর ১৯২০ সাল পর্যন্ত ঐ সংস্থা স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । অসমের প্রতিনিধি দেবীচন্দ্র বরুয়া কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে অসমে একটি ব্যবস্থাপক সভা স্থাপনের জন্য দাবী উত্থাপন করেন । অবশেষে ব্রিটিশ সরকার এই দাবী মেনে নেয় । ১৯১৯ সালে মন্টেগু চেমস্ ফোর্ড সংস্কারের ফলে অসম একটি গভর্নর শাসিত প্রদেশে উন্নীত হয় এবং সমগ্র প্রদেশের জন্য একটা ব্যবস্থাপক সভা গঠন হয় ।
১৯১৯ সালে গান্ধিজি কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করে কংগ্রেসকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন । ১৯২০ সালে সারা দেশে তাঁর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় । এই আন্দোলন আরম্ভ করার জন্য গান্ধিজি ১৯২১ সালে অসম সফর করেন । গান্ধিজির আহ্বানে সমগ্র ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা উপত্যকার স্কুল – কলেজ প্রভৃতি বর্জন আরম্ভ হয় । গুয়াহাটীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলাতী বস্ত্র দাহ ও বিদেশী দ্রব্য বর্জন শুরু হয় । তরুণরাম ফুকন , নবীনচন্দ্র বরদলৈ , রোহিনী চৌধুরী প্রমুখ অসমে এই আন্দোলন পরিচালনা করেন । অসমের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ অসমের শিক্ষাধিকর্তা ক্যানিংহামের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে ।
১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধি অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়রূপে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন । অসমেও গোপীনাথ বরদলৈ , বিষ্ণুরাম মেধি , অমিয় কুমার দাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দের পরিচালনায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় । সুরমা উপত্যকায় বসস্ত দাস , ব্রজেন্দ্র চৌধুরী , শিবেন্দ্র বিশ্বাস , সুরেশ বিশ্বাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আন্দোলন আরম্ভ করেন । অসংখ্য যুবক , ছাত্র , কৃষক ইত্যাদি সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন , পুলিশের অত্যাচারেও অনেক সস্তান ত্যাগ স্বীকার করেন ।
ক্রিপস্ মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে সারাদেশে ‘ ভারত ত্যাগ ’ আন্দোলন শুরু হয় । অসমের বিভিন্ন স্থানে এই আন্দোলন সহিংস সংগ্রামে পরিণত হয় । ব্রিটিশ সরকারের অফিস , আদালত , থানা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিরস্ত্র ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ জনতা আক্রমণ শুরু করে । ব্রিটিশ সরকারও নির্মম নির্যাতন চালায় । আগস্ট আন্দোলনে অসমে যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিহত হয়েছিলেন , তাঁদের মধ্যে ভোগেশ্বরী ফুকনানী , কনকলতা , তিলক ডেকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য । এই সময়েই আহোম যুবক কুশল কোয়র ব্রিটিশ কারাগারে ফাঁসির কাঠে আত্মত্যাগ করেন । তাঁদের চরম ত্যাগ ছাড়াও “ ভারত ত্যাগ ” আন্দোলনের সময় অসমের অনেক বীর সন্তান কারাবরণ করেন ।
ইতিমধ্যে মুসলিম লীগ নেতা জিন্না ভারত বিভাগের দাবী করেন এবং অসমকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করেন ।
১৯৪৬ সালের কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজ্যসমূহের “ বিভাগকরণ ” প্রস্তাব অনুযায়ী অসমকে “ গ ” ভাগে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয় । ফলে সমগ্র রাজ্য ব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয় । গোপীনাথ বরদলৈ , শরৎ বসু , মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সহায়তায় অসম – বাংলার একজোট সংযুক্তির বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন শুরু হয় । অবশেষে কেবিনেট মিশনের অসম সংক্রান্ত উক্ত প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় ।
অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি হয় । মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা মতে শ্রীহট্টে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় । এর ফলে শ্রীহট্ট জেলাকে অসম হতে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করা হয় ।
Thank You for Visiting – Roy Library
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.