Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন

Join Roy Library Telegram Groups

Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class 11 History Question Answer in Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন are free to use and easily accessible.

Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Assam AHSEC Class 11 History in Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. Class 11 History Book PDF. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 11 History Notes in Bengali will be able to solve all the doubts of the students. Class 11 History Suggestion in Bengali, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 11 History Solution. Class 11 History Notes in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

11. “জমির স্বাভাবিক উর্বরতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি ছিল সংকটাপন্ন।” কারণগুলি সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

মেসোপোটামিয়ার গ্রামাঞ্চলে জমি ও জল নিয়ে বিবাদের কারণ কি? 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় জমির স্বাভাবিক উর্বরতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি ছিল সংকটাপন্ন। এর মুখ্য কারণগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) ইউফ্রেটিস নদীর শাখানদীগুলিতে বন্যা প্রায়শই উভয় তীর প্লাবিত করে শস্য নষ্ট করতে।

(খ) অনেক সময় নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় উর্বর কৃষিভূমি পরিত্যাগ করে অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

(গ) মানুষেরা নিজেরাও সমস্যার সৃষ্টি করত। যারা স্রোতের প্রতিকূলে বাস করত তারা নিজেদের প্রয়োজনে নালা কেটে অধিক জল নিয়ে যেত। ফলে যারা নিম্নাঞ্চলে বসবাস করত তাদের জলসংকট হত এবং কৃষি ব্যাহত হত।

(ঘ) অনেক সময় পলি ও অন্যান্য আবর্জনা জমে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের জলের প্রবাহ কমিয়ে দিত। এইসব কারণেই কৃষিকাজ ব্যাহত হত এবং এর ফলে গ্রামাঞ্চলের লোকের মধ্যে জল ও জমি নিয়ে প্রায়ই বিবাদ হত।

12. মেসোপোটামিয়ায় কিভাবে রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে? আধিপত্য/ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তারা (শাসকরা) কি ব্যবস্থা নিতেন? 

উত্তরঃ প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত মেসোপোটামীয়রা তাদের দলপতির অধীনে/নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ ছিল। দলপতি উৎপাদিত বা লুণ্ঠিত সম্পদ দলের সবাইকে ভাগ করে দিতেন। পরাজিত জনসমষ্টিকে ভৃত্য বা রক্ষী হিসাবে নিয়োগ করতেন এবং এভাবেই নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতেন। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। যখন এই দলপতিরাই সাধারণ লোকের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেন ও নতুন পদ/প্রতিষ্ঠান ও প্রথা প্রবর্তন করলেন তখনই তাদের সত্তা স্বীকৃতি লাভ করল। এইভাবেই দলপতিরা রাজা বা মুখ্য প্রশাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বলতে হয় এভাবেই রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।

শাসকরা উৎপাদিত বা লুণ্ঠিত দ্রব্যের মূল্যবান অংশ দেবতার উদ্দেশ্যে দান করতেন ও মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতেন। দক্ষতার সঙ্গে মন্দিরের সম্পদ বণ্টনের ও আয়-ব্যয়-এর হিসাব রক্ষা করতেন। এর ফলে তাদের সম্মান ও প্রভাব বৃদ্ধি পেত এবং কর্তৃত্ব বজায় থাকত তাদের রাজ্য ও দলের উপর।

13. মেসোপোটামিয়ার পরিবার ব্যবস্থা কেমন ছিল? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ বিভিন্ন আবিষ্কৃত নথি থেকে জানা যায় যে মেসোপোটামিয়া সমাজে অণু পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। একজন বিবাহিত পুত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে পিতামাতার সাথে খুব কমই থাকত, যদিও ব্যতিক্রমও ছিল। পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান।

বৈবাহিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে কন্যার পিতামাতা সম্মতি প্রকাশ করলেই বিবাহের কথা ঘোষণা করা হত। বরপক্ষ তখন কন্যাপক্ষকে একটি উপহার প্রদান করত। বিবাহের অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষ উপহার আদান-প্রদান করত। একসাথে খাওয়া-দাওয়াও মন্দিরে পূজার আয়োজন করত। শাশুড়ি বন্ধুকে আনতে গেলে পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যে সম্পত্তি, তার অংশ কন্যাকে দেওয়া হত। পিতার বাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, পালিত পশু ইত্যাদি লাভ করত পুত্ররা। পরিবার ব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক, তবে মহিলাদেরও অধিকার সুনিশ্চিত ছিল। 

14. বিশ্বের প্রতি মেসোপোটামিয়ার অবদান কি?

উত্তরঃ বিজ্ঞসুলভ ঐতিহ্য এবং গণিতশাস্ত্র হল বিশ্বে মেসোপোটামীয়দের সর্ববৃহৎ অবদানঃ

(ক) মেসোপোটামিয়ায় কতিপয় ফলক পাওয়া গিয়েছিল যা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ শতকের। এই ফলকগুলি গুণ ও ভাগ অঙ্কের টেবিল, বর্গ ও বর্গমূলের টেবিল, সুদের টেবিল প্রভৃতি।

(খ) মেসোপোটামীয়গণ পৃথিবীর চতুর্দিকে চন্দ্রের আবর্তন অনুযায়ী একটি বছরকে ১২ মাসে ভাগ করেছিল। তারা মাসকে চার সপ্তাহে, দিনকে ২৪ ঘণ্টায় এবং ঘণ্টাকে ৬০ মিনিটে ভাগ করেছিল। নিঃসন্দেহে এটা একটি বিরাট অবদান।

(গ) মেসোপোটামিয়ার মানুষ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের তারিখ লিখে রাখত।

(ঘ) তারা আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করত এবং এর তথ্যাদি সুরক্ষিত করত।

15. মেসোপোটামিয়ায় হস্তলিপি কলা কিভাবে বিকাশ লাভ করেছিল?

উত্তরঃ মুখের সম্পুট ধ্বনি লিখবার জন্য নির্দিষ্ট চিহ্নকে বর্ণ বলে মেসোপোটামীয়দেরও নির্দিষ্ট বর্ণমালা ছিল। সমাজ যখন হিসাবনিকাশের প্রমাণাদি রাখবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তখন মানুষ লিখতে আরম্ভ করে। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩,২০০ বৎসর পূর্বে প্রথম মেসোপোটামীয় ফলক লিখিত হয়। এই সকল ফলকে ছবি, চিহ্ন, চিত্র, সংখ্যা খোদাই করা থাকত। ষাঁড়, ভেড়া, মাছ প্রভৃতি প্রায় ৫,০০০ ছবির একটি তালিকা মেসোপোটামিয়ায় পাওয়া গিয়েছে। এই তালিকাসমূহ সম্ভবত দক্ষিণাঞ্চলের উরুক নগরীর মন্দিরের পণ্যসামগ্রীরূপে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

16. মেসোপোটামিয়ায় সীলমোহর তৈরি এবং তার গুরুত্বের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গোল পাথরের সীলমোহর তৈরি শুরু হয়ে যায়। এই সকল সীলমোহরের মধ্যভাগে ছিদ্র থাকত। এর মধ্যভাগে একটি লাঠি লাগানো থাকত এবং ভেজা মাটির চাতুর্দিকে ঘোরানো হত। এই ভাবে অনবরত ছবি তৈরি করা হত। সীলমোহরগুলিকে অত্যন্ত দক্ষ কারিগর দ্বারা কেটে বে করা হত। কখনও কখনও এই সকল সীলমোহরগুলিতে মালিকের নাম, তার দেবতার নাম, নিজের সরকারি পদবি ইত্যাদি খোদিত থাকত।

17. “মেসোপোটামিয়ায় সমাজ এবং সংস্কৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির মানুষের একটি সংমিশ্রণ।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমির যাযাবর জাতি মেসোপোটামিয়ার সমৃদ্ধশালী কৃষিভূমিতে অনুপ্রবেশ করে। তারা তাদের পশুদেরও সেই অঞ্চলে নিয়ে যায়। এই সকল মানুষ ফসল সংগ্রহকারী শ্রমিক হিসাবে আসে। তারা কালক্রমে ঐশ্বর্যশালী হয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্ষমতা লাভ করে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এই সকল মানুষদের মধ্যে আর্কাডিয়ান, আসিরিয়ান ও আর্মেনিয়ান উল্লেখযোগ্য। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ঐ এলাকার মূল বাসিন্দাদের থেকে পৃথক ছিল। তারা মেসোপোটামিয়ার দেবতাদেরই কেবল মানা করত তা নয় তারা অন্যান্য দেবদেবীকে। মান্য করত। সুতরাং মেসোপোটামীয় সংস্কৃতি ও সমাজ বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির জন্য মুক্ত ছিল।

18. মেসোপোটামিয়ার আমদানি ও রপ্তানি বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া খাদ্য সম্পদে ভরপুর ছিল। কিন্তু সেখানে খনিজ সম্পদের অভাব ছিল। মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হাতিয়ার, সীলমোহর, অলঙ্কার প্রভৃতির জন্য কোনো প্রকার পাথর পাওয়া যেত না। ঝাউ গাছ ও খেজুর গাছের কাঠ নৌকা, টানা গাড়ি ও গাড়ির চাকা তৈরির উপযুক্ত ছিল না। বাসন, হাতিয়ার অথবা অলঙ্কার তৈরির কোনো প্রকার ধাতু ছিল না। ওই কারণেই প্রাচীন মেসোপোটামিয়ার মানুষ কৃষিজ পণ্যসামগ্রী ও প্রচুর পরিমাণ কাপড় রপ্তানি করত এবং তামা, কাঠ, রূপা সোনা, টিন ও নানা প্রকার পাথর আমদানি করত। বাণিজ্য সাধারণত তুর্কী, ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশসমূহের মধ্যে চলত। এইসব এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিল, কিন্তু কৃষিকার্যে, অনুন্নত ছিল। সুতরাং মেসোপোটামিয়ার মানুষ এই সকল অঞ্চলে কাপড়, কৃষিজ পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করত। সব্যসামগ্রী বিনিময়ের মাধ্যমে মেসোপোটামিয়ায় আমদানি-রপ্তানি চলত।

19. নগর অর্থনীতিতে দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা কি ভূমিকা পালন করে?মেসোপোটামিয়ার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ নগর উন্নয়নে দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্মচালিত গাড়ি অথবা জন্তুর পিঠে করে পণ্যসামগ্রী বহন করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য, কারণ তা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। নগর অর্থনীতি এই সকল আর্থিক বোঝা বহন করতে সক্ষম নন। নগর অর্থনীতির জন্য জল পরিবহণ একটি সুলভ পদ্ধতি। নদী-নৌকা অথবা শস্যবহনকারী যান নদীর জলস্রোতে বহন করা অত্যন্ত সহজ ও স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ। স্বাভাবিক খাল ও কৃত্রিম খাল মেসোপোটামিয়ার পরিবহণের উত্তম ব্যবস্থা। এককালে ইউফ্রেটিস নদী বিশ্ব বাণিজ্যে একটি প্রধান পথ বলে পরিচিত ছিল। এই পরিবহণ ব্যবস্থা মেসোপোটামিয়ার নগরায়ণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

20. মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্ব কি ছিল?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চল মরুময়। এই অঞ্চলে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী প্রবাহমান। উভয় নদীই উত্তরাঞ্চলের পর্বতমালা হতে বালুকামাটি ও কাদামাটি বহন করে। আনে। এই নদী দুটিতে বন্যা দেখা দিলে উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উর্বর মাটি ও বালুকা ছড়িয়ে দিয়ে এই অঞ্চলটিকে সুজলা সুফলা ও শস্যশ্যামলা করে তোলে।

ইউফ্রেটিস নদী মরু এলাকায় প্রবেশ করে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এই সকল ছোট ছোট শাখানদীসমূহে কখনও কখনও প্লাবন দেখা দেয়। অতীতে এই সকল খাল বা শাখানদীসমূহ জলসেচের কাজে ব্যবহৃত হত। বার্লি, গম, মটর প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো জলসেচ করা হত। যার ফলে কম বৃষ্টি এমনকি খরার সময়ে এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। সুতরাং মেসোপোটামিয়ার এই অঞ্চলটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

21. “ইরাক একটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ।” উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ বাস্তবিকই ইরাক একটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যময় দেশ, কারণ-

(ক) দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবুজ সমভূমি পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। এই সমভূমি ধীরে ধীরে সবুজ বৃক্ষবেষ্টিত পর্বতমালায় উদিত হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার জলে ঝরনাধারা এবং বন্যফুল পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে শস্য জন্মায়।

(খ) উত্তরাঞ্চলে ঊর্ধ্বগামী ভূমি দেখতে পাওয়া যায়। পশুপালন এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান জীবিকা। শীতকালীন বৃষ্টিপাতের পর ছাগল, ভেড়া প্রভৃতির খাওয়ার ঘাস জন্মে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে।

(গ) পূর্বদিকে টাইগ্রিস নদীর শাখানদীসমূহ ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রদান করে।

(ঘ) দেশের দক্ষিণাঞ্চল মরুভূমিময়।

22. মেসোপোটামিয়ো নগর জীবনে শ্রম বিভাজনের গুরুত্ব কি?

উত্তরঃ শ্রম বিভাজনের অর্থ হল প্রত্যেকের পৃথক পৃথক উৎপাদন ও সেবার দ্বারা আমাদের চাহিদা পরিপূর্ণ করা। এর কারণ হল খাদ্যোৎপাদন ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত ও নির্মাণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার সেবা নগর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শহরের মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাদের উৎপাদিত সামগ্রী ও সেবার জন্য অন্যান্য নগর বা গ্রামের উপর নির্ভর করিতে হয়। এর ফলে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে সংযোগ ও সহযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ পাথর খোদাইকারীর ব্রোঞ্জের হাতিয়ারের প্রয়োজন হয়, যা সে নিজে তৈরি করতে পারে না। এমনকি সে এটা জানেও না সীলমোহরের জন্য রঙিন পাথর কোথায় পাওয়া যায়। যে পাথর খোদাই-এ বিশেষজ্ঞ, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষজ্ঞ নয়। কিন্তু ব্রোঞ্জ-এর হাতিয়ার প্রস্তুতকারী নিশ্চয়ই বাইরে গিয়ে টিন, তামা প্রভৃতি ধাতু আনবে। সুতরাং এই সকল কার্য পরস্পর সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

23. ব্যাবিলন নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ। 

উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে আলেকজান্ডারের আক্রমণ পর্যন্ত ব্যাবিলন নগরী বিশ্বের একটি প্রধান নগরী ছিল। 

ব্যাবিলন নগরীর প্রধান সমস্যাসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ব্যাবিলন নগরীর আয়তন ৮৫০ হেক্টর অপেক্ষা অধিক ছিল।

(খ) এর চতুর্দিকে বিস্তারী দেওয়ান ছিল।

(গ) নগরীতে বিশাল অট্রালিকা ও মন্দির ছিল।

(ঘ) নগরীতে একটি সুউচ্চ স্তম্ভ ছিল।

(ঙ) ব্যাবিলন নগরীর প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রে শোভাযাত্রার রাস্তা ছিল।

(চ) এর বাণিজ্য ঘরগুলি বিস্তৃত ছিল।

(ছ) ব্যাবিলনের গণিতজ্ঞা ও জ্যোতির্বিদগণ কতিপয় নুতন আবিষ্কার সম্পাদন করেন।

24. উর নগরীতে কখন খনন কার্য শুরু হয়? এই নগরীর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উত্তৰঃ মেসোপোটামিয়ায় প্রারম্ভিক খনন করা কেন্দ্রগুলির একটি হচ্ছে উর নগরী। ১৯৩০-এর দশকে এখানে খননকার্য শুরু হয়। 

ঊর নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) যাতায়াতের পথ ছিল অতি সরু।

(খ) বাড়িগুলো ছিল এলোমেলো আকৃতির। 

(গ) যাতায়াতের ক্ষেত্রে চাকা লাগানো গাড়ির ব্যবহার ছিল।

(ঘ) বাড়ির জল নিষ্কাশণের জন্য নালা ও মাটির নলের ব্যবহার ছিল।

(ঙ) বসতবাড়িতে জানালার পরিবর্তে দরজা দিয়ে আলো আসত এবং দরজাগুলো ভিতরের উঠানের দিকে খোলার ব্যবস্থা ছিল। এই ব্যবস্থা ছিল গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য।

25. ‘মারী নগরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে কেন প্রায়ই সংঘর্ষ হত, সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ “মারী” নগরের অবস্থান ছিল ইউফ্রেটিস নদীর উপরিভাগের অববাহিকায়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মারী নগরের উন্নতি ঘটে। এই অঞ্চলে একসাথে কৃষি ও পশুপালন প্রচলিত ছিল। তবে বেশিরভাগ ভূ-খণ্ডই মেষ ও ছাগল পালনে ব্যবহৃত হত। পশুপালক ও কৃষকরা উভয়েই নিজেদের মধ্যে উৎপাদনের দ্বারা তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটাত। আবার মারী নগরী তার অবস্থানের জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি লাভ করে। মারী অঞ্চলে পশুপালক ও কৃষকরা উভয়েই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল ছিল তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হত। এর কারণ হচ্ছে—

(ক) যাযাবর পশুপালকরা গ্রাম লুণ্ঠন করে খাদ্যশস্য নিয়ে যেত। এবং 

(খ) কৃষকরা পশুপালকদের তাদের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে বারণ করত বা বাধা দিত।

26. মারী নগরীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণ বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ মারী নগরীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত মারী ছিল বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।

(খ) মারীকে কেন্দ্র করেই কৃষিপ্রধান দক্ষিণাঞ্চল এবং তুরস্ক, সিরিয়া ও লেবানন-এর মধ্যে ইউফ্রেটিস নদী হয়ে কাঠ, তামা, টিন, তেল ও অন্যান্য সামগ্রীর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলত।

(গ) দক্ষিণাঞ্চলের পথে যেতে থাকা নৌকাগুলি মারীর শাসককে কর প্রদান করে। অগ্রসর হত।

(ঘ) বার্লি পরিবহণের জন্য বিশেষ নৌকার ব্যবহার হত।

(ঙ) তামা আসত আলাসিয়া নামের একটি দ্বীপ থেকে।

(চ) তাছাড়া টিন এবং অস্ত্রশস্ত্র তৈরির জন্য ব্রোঞ্জ-এরও বিশাল বাণিজ্যিক  চাহিদা ছিল।

এভাবে মারী তার অবস্থানের জন্য ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল, যা মারীকে অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী করে তুলেছিল।

27. প্রাচীন মন্দিরগুলি দেখতে প্রায় ঘরের মতো কেন?

উত্তরঃ নিম্নোক্ত কারণে প্রাচীন মন্দিরগুলি দেখতে ঘরের মতো মনে হতোঃ 

(ক) ঘরগুলি যেভাবে মানুষের বাসস্থান ঠিক সেভাবে মন্দিরগুলিও বিভিন্ন দেবদেবী; যেমন—চন্দ্র দেবা “ভর’ অথবা প্রলয় এবং যুদ্ধ দেবতা ‘ইনান্না’-এর বাসস্থান।

(খ) মন্দিরের আঙিনা কেবলমাত্র পূজার্চ্চনার স্থান হিসাবে নয়, গুদামঘর এবং কারিগরদের বাসস্থান হিসাবেও ব্যবহৃত হত।

(গ) মানুষ দেবতাদের শস্য, দই এবং মাছ সমর্পণ করত। দেবতাগণও তাত্ত্বিকদের কৃষিক্ষেত্র, মৎসচাষ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন।

(ঘ) গৃহস্থবাড়ির মতো মন্দিরগুলিতেও বিভিন্ন প্রকার উৎপাদন; যেমন— খাদ্যশস্য ভাঙানো, সুতা কাটা, কাপড় বোনা প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করা হত।

 28. মারীর রাজা জিমরিলিমের প্রাসাদের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মারীর রাজা জিমরিলিমের প্রাসাদ একটি বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল। প্রাসাদে প্রায় ২৬০টি ঘর ছিল। রাজ পরিবার এখানে বাস করত এবং রাজকার্য এখান থেকেই পরিচালিত হত। দামী ধাতুর গহনা প্রাসাদের আশেপাশেই তৈরি হত। এই প্রাসাদের খ্যাতি সর্বজনবিদিত ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এই প্রাসাদের সৌন্দর্য দেখতে আসতেন। প্রতিদিন খাবার টেবিলে অনেক প্রকার পদ পরিবেশিত হত। প্রাসাদের উত্তরদিকে একমাত্র প্রবেশ পথটি ছিল। প্রাসাদের সম্মুখে বিশাল উন্মুক্ত পরিসর সুন্দরভাবে বাঁধানো ও সজ্জিত ছিল। রাজা জিমরিলিম একটি প্রশস্ত কক্ষে দরবার বসাতেন এবং এখানে তিনি বিদেশী অভ্যাগতদেরও স্বাগত জানাতেন। দরবার কক্ষ নানাপ্রকার চিত্রকলা দিয়ে সজ্জিত ছিল।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর  মধ্যবর্তী স্কুলে সুমেরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চল সুমার বা সুমের নামে পরিচিত ছিল। গ্রিকগণ এই অঞ্চলের নাম। নিয়েছিল মেসোপোটামিয়া অর্থাৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থল। যে কারণে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীল নদের অববাহিকা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। ঠিক অনুরূপ কারণেই এই নদীর মধ্যবর্তী হলে সুমেরীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। সুমেরীয় ছিল শক্তিশালী যোদ্ধা জাতি। মিশরীয়দের নাচ তারাও প্রাচীনকালে এক উ ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। একে মেসোপোটামিয়া সভ্যতা বলে।

কৃষিকার্য, ভাস্কর্য, স্থাপতা, মৃৎশিল্প প্রভৃতিতে তারা পারদর্শী ছিল। তাদের নানাপ্রকার দেবদেবীও ছিল। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে ‘সেমিটিক জাতির লোকদের হাতে সুমেরীয়রা তাদের স্বাধীনতা হারায়। এই নূতন জাতির লোকেরা ব্যাবিলন নামক এক শক্তিশালী নগর রাষ্ট্রের অধিবাসী ছিল। ব্যাবিলন রুমে এত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, সমগ্র মেসোপোটামিয়া অর্থাৎ সুমের অঞ্চল তার অধীন হয়ে পড়ে। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা হতে উন্নততর ছিল না। এই কারণে ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয় সভ্যতার অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিল।

ব্যাবিলনের উত্তরে সেমিটিক জাতির অপর এক শাখা আসিরীয় সভ্যতা নামে এর সত্যতা গড়ে তুলেছিল। তাদের দেবতা ‘অসুর’-এর নাম হতেই আসিরীয় সভ্যতার নামকরণ করা হয়েছিল। এই সভাবার প্রসিদ্ধ নারী ছিল নিনেভে। আসিরীয়রা ক্রমে ব্যাবিলন, মিশর প্রভৃতি স্থানেও নিজ প্রভুত্ব স্থাপনে সমর্থ হয়। আসিরীয়দের পোশাক কাধ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা ছিল। পুরুষদের মধ্যে লম্বা চুল ও দাড়ি রাখবার রীতি চালু ছিল।

আসিরীয় সৈন্যদল প্রাচীনকালের পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা নির্মম ছিল।

আমিনীর রাজাগণের মধ্যে অসুরবাণীপালের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন যেমন বীর যোদ্ধা, তেমনি বিধবী। তাঁর আমলেনিনেতে শহরে একটি বিশ স্থাপিত হয়েছিল। প্রায় বিশ হাজার লিপি খোদাই করা মাটির ফলক এই গ্রন্থাগারে পাওয় গিয়েছে |

2. মেসোপোটানিয়া সভ্যতার নগরজীবনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর নগরজীবন কতটুকু স্বনির্ভর ছিল, সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার উন্নত নগরজীবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এর মুখ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) নগরজীবন স্বনির্ভর ছিল না, বরং পণ্য ও পরিষেবার জন্য অন্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল ছিল।

(খ) শ্রমবিভাজন ছিল নবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

(গ) ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সামাজিক সংগঠনের।

(ঘ) নগর অর্থনীতিতে লিখিত নথিপত্রের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। নগরজীবন তখনই সমৃদ্ধ হয় যখন খাদ্য উৎপাদনের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও শহরের অর্থনীতির উপাদান হল ব্যবসাবাণিজ্য, বিভিন্ন পরিষেবা ও শিল্প উৎপাদন ইত্যাদি। মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় দেখা যায় যে শহরাঞ্চলের/ নগরাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবার জন্য অন্যান্য শহর বা গ্রামাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল ছিল এবং পারস্পরিক আদান-প্রদানের ফলেই গ্রাম্যজীবন ও নগরজীবন অগ্রসর হয়েছিল সমৃদ্ধির দিকে। তাই বলা যায় যে মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় নগরজীবন স্বনির্ভর ছিল না, বরং পারস্পরিক বিনিময় বা আদান-প্রদানের ফলে সমৃদ্ধ হয়েছিল।

3. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় মন্দিরের স্থাপত্য কেমন ছিল? এই সভ্যতায় মন্দিরের প্রভাব ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রারম্ভিক বসতকারীরা তাদের গ্রামের নির্দিষ্ট স্থানে মন্দির নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করত। প্রারম্ভিক মন্দিরগুলি ছিল কাঁচা ইটের তৈরি। এইগুলিতে বিভিন্ন দেবদেবীর অধিষ্ঠান ছিল। সময়ের সাথে সাথে মন্দিরের খোলা উদ্যানে কক্ষ সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মন্দিরের কলেবর বৃদ্ধি পায়। মন্দিরগুলো সাধারণত বসতবাড়ি থেকে পৃথক ছিল এবং এর চতুর্দিকে গড়ে দেওয়া হত।

মেসোপোটামিয়া সভ্যতার মানুষের উপর মন্দির ও উপাস্য দেবতার বিশাল প্রভাৱ ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর মন্দিরের দেবতাই স্থানীয় মানুষের কৃষিজমি, মাছের ভেড়ি ও পালিত পশুর স্বত্বাধিকারী। তাই দেবতাকে প্রদান করার উদ্দেশ্যে উৎপাদিত শস্য, দই, মাছ ইত্যাদি মন্দিরে নিয়ে আসত। সেই সময় তেল তৈরি, শস্য পেষণ, সুতাকাটা ও কাপড় বোনা প্রভৃতি সকল কাজই মন্দিরে হত। উৎপাদিত দ্রব্য বণ্টন ও তার হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করার জন্য মন্দিরগুলো নিজস্ব সাংগঠনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিল এবং পর্যায়ক্রমে মন্দিরই প্রধান শহরাঞ্চলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, যা নগরজীবনকে পরিচালিত করত।

4. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার ভৌগোলিক বৈচিত্রতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সমৃদ্ধির বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিম্নলিখিত বৈচিত্র্যতায় পূর্ণঃ

(ক) উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছিল সবুজ বিস্তীর্ণ তৃণভূমি অঞ্চল যা ঊর্ধ্বমুখী ছিল জঙ্গলাবৃত পর্বতমালার দিকে।

(খ) উত্তরদিক ছিল বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল, যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হত।

(গ) পূর্বাঞ্চল ছিল শুষ্ক অঞ্চল। টাইগ্রীস নদীর শাখানদী দিয়ে মানুষ ইরানের পর্বতমালা পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করত।

(ঘ) দক্ষিণ ছিল মরুভূমি, তবে মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সর্বাপেক্ষা উর্বর ও সমৃদ্ধ অঞ্চল। 

মেসোপোটামিয়া সভ্যতার পূর্বাঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হত ও প্রচুর নদী-নালা থাকায় এ অঞ্চল কৃষিকাজের সহায়ক ছিল। উত্তরাঞ্চল আবার পশুপালনের উপযোগী ছিল। পূর্বাঞ্চল বহির্বাণিজ্যের পথ প্রসারিত করেছিল। কিন্তু সভ্যতার সমৃদ্ধির মূল ভিত ছিল দক্ষিণাঞ্চল। যদিও দক্ষিণাঞ্চল ছিল মরুভূমি। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাহিত ইউফ্রেটিস নদী মরু অঞ্চলে প্রবেশ করার পর ছোট ছোট ধারায় তার জল ছড়িয়ে পড়ত। ফলে এই নদীর বন্যায় সমস্ত অঞ্চল প্লাবিত হত এবং বন্যায় পলি মাটি জমে জমি উর্বর হত। তাছাড়া জলাধারগুলো সেচের কাজেও ব্যবহৃত হত। ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত। যা প্রাচীন সমস্ত সাম্রাজ্যের তুলনায় সবচাইতে বেশি। এই কৃষিজাত উৎপাদনের ফলে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ছিল সর্বাধিক এবং এখানেই প্রথম নগরী ও লিখন পদ্ধতির গোড়াপত্তন হয়।

5. মেসোপোটামিয়ায় নিম্নোক্তগুলি সম্পর্কে তুমি কি জানো?

(ক) উচ্চশ্রেণীর পদমর্যাদা।

(খ) পরিবারের প্রকৃতি।

(গ) বিবাহ প্রথা।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় উচ্চশ্রেণীর মর্যাদা, পরিবারের প্রকৃতি ও বিবাহ প্রথা সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ 

(ক) উচ্চশ্রেণীর পদমর্যাদাঃ মেসোপোটামিয়ায় এক সম্ভ্রান্তশালী শাসক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। তারা সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ ছিল, কিন্তু সম্পদ ও ধনদৌলতে একটি বিরাট অংশ ছিল। এই সম্প্রদায়ের লোককে মৃত্যুর পর নানা প্রকার মূল্যবান সম্পদসহ সমাধিস্থ করা হত। এই দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে অলঙ্কার, সোনার পাত্র, কাঠের নির্মিত সংগীত যন্ত্র প্রভৃতি প্রধান।

(খ) পরিবারের প্রকৃতিঃ নানা প্রকার দলিলপত্র হতে উপলব্ধি করা যায় যে মেসোপোটামিয়ায় একক পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কিন্তু বিবাহিত পুত্র এবং তার পরিবার সাধারণত পিতামাতার সঙ্গে থাকত। পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান।

(গ) বিবাহ প্রথাঃ মেসোপোটামিয়া সমাজে বিবাহ-সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেওয়া হত। এর পর কন্যার পিতামাতা বিবাহে তাদের সম্মতি দিতেন। তার পরিবারের লোকজন কন্যার মানুষজনকে উপহার দান করত। বিবাহের পর উভয়পক্ষ উপহার বিনিময় করত। উভয়পক্ষই একত্রে ভোজন করত এবং একত্রে মন্দিরে প্রার্থনা করত। পিতা কন্যাকে সম্পত্তির অংশ দান করতেন যখন শাশুড়ি কন্যাকে নিতে আসেন। পুত্র সাধারণত ঘরবাড়ি, পশুপাল, ক্ষেতের জমি প্রভৃতি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করত।

6. উরুক নগরীর বিস্তৃতি কতটুকু ছিল। এই অঞ্চলে শিল্প ও স্থাপত্যে অগ্রগতি কিভাবে শাসকদের দ্বারা সম্ভব হয়েছিল? 

অথবা,

উরুক অঞ্চলের শাসকরা কিভাবে প্রজাদের সহযোগিতায় এই অঞ্চলের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছিলেন?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার মন্দির শহরগুলির মধ্যে উরুক প্রাচীনতম। প্রথম থেকেই উরুক একটি প্রাচীরবেষ্টিত নগরী। ৪২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে থাকা উরুক নগরী ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রায় ৪০০ হেক্টর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উরুক অঞ্চলের শিল্প ও স্থাপত্যের অগ্রগতিতে শাসকরা প্রজাদের সহযোগিতায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেনঃ

(ক) স্থানীয় লোকদের উপর কৃষিকর আরোপ করা হত সম্পদ সংগ্রহ করার জন্য। 

(খ) স্থানীয়দের ও যুদ্ধবন্দীদের রাজার কাজে নিয়োগ করা হত, যার প্রতিদানে তাদের খাদ্যদ্রব্য ও কাপড় দেওয়া হত।

(গ) শাসকেরা জনগণকে মন্দির নির্মাণ করার জন্য পাথর ও ধাতু যোগাড় করবার, দূরবর্তী স্থানে গিয়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করে আনবার, কখনো-বা ইট তৈরি করবার বা ইট বিছিয়ে দেবার আদেশ দিতেন।

নিম্নোক্ত ধরনের কাজের মাধ্যমে উরুক প্রযুক্তিগতভাবে অনেক অগ্রসর হয় এবং শিল্প ও স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি ঘটেঃ

(ক) বিভিন্ন শিল্পকর্মের জন্য ব্রোঞ্জের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু হয়।

(খ) কাঠের স্তম্ভগুলো ছাদের ভার বহনের উপযুক্ত না হওয়ায় স্থপতিরা ইটের স্তম্ভ তৈরি করার কৌশল আয়ত্ত করেন।

(গ) বিভিন্ন মাটির ঘট তৈরি করে বিচিত্র রঙ-এ সাজিয়ে মন্দিরের দেওয়ালে লাগিয়ে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হত।

(ঘ) মূর্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আনা পাথর ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট শিল্প সৃষ্টি হয়।

(ঙ) ঢাকার ব্যবহার মৃৎশিল্পের প্রভূত উন্নতি নিশ্চিত করে। এই শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নতি উরুকের অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. আমরা কেন বলি যে স্বাভাবিক উর্বরতা এবং অধিক পরিমাণ উৎপাদন প্রাচীনকালে নগরায়ণের প্রধান কারণ নয়?

উত্তরঃ মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা ও অধিক পরিমাণে উৎপাদন প্রাচীনকালে নগরায়ণের কারণ নয়। 

এর কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উর্বরতা উন্নত কৃষির ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

(খ) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উর্বরতার জন্য তৃণভূমি জন্মলাভ করে, যা পশুপালনে উৎসাহ দান করে।

(গ) কৃষি ও পশুপালন মানবজীবন স্থায়ী করে তোলে, কারণ কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়। সুতরাং খাদ্যের অন্বেষণে তাকে আর স্থান হতে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতে হত না।

(ঘ) মানবজীবন যখন স্থায়ী হল তখন কৃষিজীবী মানুষের আবির্ভাব ঘটে এবং মানুষ একত্রে কুঁড়েঘরে বাস করতে আরম্ভ করে। এইভাবে গ্রামের আবির্ভাব ঘটে।

(ঙ) অধিক খাদ্যোৎপাদনের ফলে বিনিময় প্রথা আরম্ভ হয়। ফলে গ্রামের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

2. নিম্নোক্ত কোনগুলি নগর বিকাশের প্রাথমিক শর্ত এবং কোনগুলি নগর বিকাশের পরিণাম?

(ক) উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি। 

(খ) জল পরিবহণ।

(গ) ধাতু ও পাথরের অভাব। 

(ঘ) শ্রম বিভাজন।

(ঙ) সীলমোহরের ব্যবহার। 

(চ) রাজার সামরিক ক্ষমতা যা শ্রমদান বাধ্যতামূলক করেছে?

উত্তরঃ নিম্নলিখিতগুলি নগর বিকাশের প্রাথমিক শর্তঃ

(ক) উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষিকার্য।

(খ) জল পরিবহণ।

(গ) শ্রম বিভাজন।

নিম্নলিখিতগুলি নগর বিকাশের পরিণামঃ

(ক) ধাতু ও পাথরের অভাব।

(খ) সীলমোহর ব্যবহার।

(গ) রাজার সামরিক শক্তি যা শ্রমদান বাধ্যতামুলক করে।

3. ভ্রাম্যমাণ পশুপালকগণ কেন শহর জীবনের ভয়ের কারণ হয়নি?

উত্তরঃ ভ্রাম্যমাণ পশুপালকগণ তাদের পশুর পালকে চাষযুক্ত জমিতে জল দিতে নিয়েছিলেন যার ফলে শস্যহানি ঘটেছিল। তারা মজুতকৃত দ্রব্যসামগ্রী ধরবার জন্য কৃষিপ্রধান। গ্রামে হানা দিত। অনেক সময় স্থায়ী বসবাসকারী লোক পশুপালকদের একটি নির্দিষ্ট পথে নদী বা খালে যেতে দিত না। ফলে প্রায়ই সংঘাত বাধত। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ পশুপালক নগরজীবনের ভয়ের কারণ ছিল না। তারা তাদের ছোট পশুদের চামড়া, দুগ্ধ এবং মাংস, ধাতুর হাতিয়ার, খাদ্যশস্য, সার প্রভৃতির পরিবর্তে বিনিময় করত | মেসোপোটামিয়ান ইতিহাসের মাধ্যমে পশ্চিম মরুভূমিকে পশুপালকগণ সমৃদ্ধশালী কৃষিভূমিতে পরিণত করেছিল। এই সকল পশুপালক প্ৰকৃত পশুপালকে পরিণত হয় এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করে। তাদের মধ্যে কোনো কোনো গোষ্ঠী, যেমন—এমোরাইট, আর্কাডিয়ান, আসিরিয়ান এবং আর্মেনিয়ান ক্ষমতা অর্জন করে এবং তাদের নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

4. প্রাচীনকালের মন্দিরকে বহুলাংশে ঘরের মতো মনে হয় কেন? 

উত্তরঃ মন্দির সাধারণত কোনো দেবতার ঘর। এই কারণে প্রাচীনকালের মন্দিরকে বহুলাংশে ঘরের মতো দেখায়।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. নগর জীবন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে সকল প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেছিল তাদের মধ্যে কোনগুলি রাজার উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল ছিল? 

উত্তরঃ নগর জীবন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রকার নূতন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হল-মন্দির, বিদ্যালয়, বাণিজ্যকেন্দ্র, স্থায়ী সেনাবাহিনী, হস্তশিল্পী, নির্মাতা, ভাস্কর প্রভৃতি। এইসব নূতন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মন্দির, বাণিজ্যকেন্দ্র এবং হস্তলিপি রাজার উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল। 

6. মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে প্রাচীন কাহিনিসমূহ কি বলে?

উত্তরঃ প্রাচীন কাহিনি মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে নানা তথ্য প্রদান করে। মেসোপোটামিয়া টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে অবস্থিত ছিল। বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত। মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পদে, নগর জীবনে, সাহিত্যে, গণিতে এবং জ্যোতির্বিদ্যায় অতি সমৃদ্ধ ছিল। সেখানে একে একে তিনটি সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। এইগুলি হল সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা এবং আসিরীয় সভ্যতা। এই সভ্যতাসমূহকে একত্রে মেসোপোটামিয়া সভ্যতা বলে। 

এই সভ্যতার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলঃ

(ক) সমাজ জীবনঃ মেসোপোটামিয়া সমাজ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। প্রথম দুই শ্রেণী উঁচু শ্রেণীর জনগণ নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই শ্রেণীর লোকেরা সুন্দর ঘরে বাস করত, সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করত এবং নানা প্রকার অলঙ্কার পরিধান করত।

(খ) অর্থনৈতিক জীবনঃ মেসোপোটামীয় জনগণের অর্থনৈতিক জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। তারা মূলত কৃষিজীবী ছিল। কৃষিকার্য গ্রহণ করা হয়েছিল।

জলসেচের জন্য তারা নদীর তীর বরাবর বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তারা টিন, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার জানত। তারা কাপড় বোনা, অট্টালিকা নির্মাণ, অলঙ্কার তৈরি এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করতে জানত। তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করত।

(গ) ধর্মীয় জীবনঃ মেসোপোটামীয়গণ নানা প্রকার দেব-দেবীর পূজার্চনা করত। তারা তাদের বিগ্রহ তৈরি করে মন্দির স্থাপন করত। প্রত্যেক শহরের নিজস্ব দেব-দেবী ছিল। সুমেরীয়গণ তাদের মন্দিরকে ‘জিগুরাট’ বলত। তাদের প্রধান দেবতা ছিল শামাস (সূর্য), সিন্ (চন্দ্র), অণু (আকাশ) এবং এনিনেল (বায়ু) প্রভৃতি। ব্যাবিলনীয়দের প্রধান দেবতা হল ‘মার্দুক’ এবং দেবী হল ‘ইস্তার’। আসিরীয়দের প্রধান দেবতা হল অসুর। পুরোহিতগণ সমাজে একটি সম্মানজনক স্থানে ছিলেন।

We Hope the given Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন will help you. If you any Regarding, Class 11 History Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top