SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ

Join Roy Library Telegram Groups

SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ Solutions in Bengali provided by The Roy Library is one of the best content available on the internet as well as many other offline books. SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ Question Answer in Bengali is made for SEBA Board Students. We ensure that You can completely trust this content. SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ Notes in Bengali If you learn from us then don’t need to buy any other books for text book Solutions.

SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ

Here we will provide you Boichirapurna Assam complete Question Answer in Bengali Medium নবম শ্রেণীর বৈচিত্রপূর্ণ আসাম , SEBA Class 9 বৈচিত্রপূর্ণ আসাম Chapter 1 আহােমগণ Suggestions If you read this solution very carefully with proper understanding & then memorize questions by yourself you can score the maximum number of marks in your upcoming Exam.

বৈচিত্রপূর্ণ আসাম

[ আহােমগণ ]

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তর-

১। আহােমেরা আদিতে কোন জাতির লােক ছিলেন ?

উত্তরঃ আহােমেরা আদিতে টাই জাতির মানুষ ছিলেন।

২। আহােমদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল ?

উত্তরঃ আহােমদের আদি বাসস্থান ছিল চীন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বর্তমানে ইউনান প্রদেশের মুংমাও রাজ্যে এই অঞ্চল অবস্থিত।

৩। আহােমগণ কত বছর অসম শাসন করেছিলেন ?

উত্তরঃ প্রায় ৬০০ বছরের অধিক কাল আহােমগণ অসম শাসন করেছিলেন।

৪। আহােমদের আদি ভাষা কী ছিল ?

উত্তরঃ আহােমদের আদি ভাষা টাই বা শ্যান ছিল।

৫। আহােমদের কয়েকটি উৎসবের নাম লেখাে।

উত্তরঃ আহােমদের দ্বারা পালিত উৎসবগুলি হলাে মে-ডাম, মে-ফী, ওমা, চাইফা, রিকখন, জাসিংফা, লাইলুংখাম ইত্যাদি।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখাে।

S.L. No.Group – A সূচীপত্র
পাঠ – ১গৌরাঙ্গের বাল্যলীলা
পাঠ – ২খাই খাই
পাঠ – ৩ধূলামন্দির
পাঠ – ৪কবর
পাঠ – ৫মনসামঙ্গল
পাঠ – ৬প্রত্যুপকার
পাঠ – ৭ছুটি
পাঠ – ৮ডাইনী
পাঠ – ৯পিপলান্ত্ৰি গ্ৰাম
পাঠ – ১০অ্যান্টিবায়ােটিক ও পেনিসিলিনের কথা
পাঠ – ১১লড়াই
পাঠ – ১২আমরা
পাঠ – ১৩আগামী
পাঠ – ১৪আত্মকথা
পাঠ – ১৫ভারতবর্ষ
পাঠ – ১৬ব্যাকরণ
পাঠ – ১৭রচনা
S.L. No.Group – B বৈচিত্রপূর্ণ আসাম
পাঠ – ১আহােমগণ
পাঠ – ২কাছাড়ের জনগােষ্ঠী
পাঠ – ৩কারবিগণ
পাঠ – ৪কোচ রাজবংশীগণ
পাঠ – ৫গড়িয়া, মরিয়া ও দেশীগণ
পাঠ – ৬গারােগণ
পাঠ – ৭সাঁওতালগণ
পাঠ – ৮চা জনগােষ্ঠী
পাঠ – ৯চুটিয়াগণ
পাঠ – ১০ঠেঙাল কছারিগণ
পাঠ – ১১ডিমাসাগণ

(ক) লাচিত বরফুকন

(খ) সতী জয়মতী

(গ) টেঙাই

(ঘ) দেওধাই ফুকন

(ঙ) কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ

(চ) পদ্মনাথ গােহাঞি বরুয়া

উত্তরঃ (ক) লাচিত বরফুকন – অসমের ইতিহাসে দেশপ্রেমিক বীর বলে বিশেষভাবে পরিচিত লাচিত বরফুকনের জন্ম হয়েছিল ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ছিল মােমাই তামুলি বরবরুয়া। বাল্যকাল থেকেই লাচিত ছিলেন যথেষ্ট সাহসী, সৎ এবং স্পষ্টবাদী। পিতার রাজকার্য নিরীক্ষণ করে তিনি অনেক কথাই শেখার সুযােগ পেয়েছিলেন।

অতি অল্পকালের মধ্যে নিজের দক্ষতায় রাজঘরে লাচিত নিযুক্তি পেয়েছিলেন। প্রথমে তাকে রাজমন্ত্রী মহাশয়ের ‘হঁচতিধরা তামুলি’ হিসাবে নিযুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ‘ঘােড়া বরুয়া’ পদবি লাভ করেন। অতঃপর ‘দোলীয়া বরুয়া এবং ‘শিমুলগুরিয়া ফুকন’-এর পদে নিযুক্তি লাভ করেন। সেই সময় মিরজুমলা অসম আক্রমণ করায় লাচিত দিখৌমুখে শত্রুসৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। লাচিতের পারদর্শিতা ও পরাক্রমের পরিচয় পেয়ে তৎকালীন আহােম রাজা চক্ৰধ্বজ সিংহ লাচিতকে প্রধান সেনাপতি করে বরফুকন পদে নিযুক্ত করেছিলেন।

১৬৬৭ সালের ২০ আগস্ট আহােম ও মােগলদের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই যুদ্ধে আহােম সৈন্য অতি সুকৌশলে মােগলদের আক্রমণ করে এবং যুদ্ধে অগ্রসর হয়। আহােম সৈন্য নিজের দক্ষতায় ও সাহসিকতায় মােগল দুর্গ অধিকার করে এবং মােগল সৈন্যদের বিদ্ধস্ত করে। মােগলদের সঙ্গে হওয়া এই যুদ্ধ জয়ের ফলে অসমীয়া সৈন্যরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সেনাপতি হিসাবে লাচিত বরফুকনও যথেষ্ট প্রশংসিত হন।

অসমীয়া সেনার হাতে মােগল সেনার পরাজয়ের খবর যখন মােগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব জানতে পারেন তিনি এই লজ্জা ও অপমানের প্রতিশােধ নেওয়ার সংকল্প নেন। তিনি রামসিংহের নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী অসম আক্রমণ করবার জন্য পাঠান। লাচিত বরফুকনও প্রবল পরাক্রমে শক্তিশালী মােগলদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। মােগলদের আটকাবার জন্য আমিনগাঁওয়ের কাছে একটি দুর্গ তৈরির দায়িত্ব নিজের মামার উপর দিয়েছিলেন। কিন্তু দায়িত্বে অবহেলা করার জন্য দুর্গের কাজ অসমাপ্ত হওয়ায় লাচিত প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হন এবং তলােয়ারের এক কোপে নিজের মামার শিরচ্ছেদ করেন এবং বলেন, দেশের চেয়ে মামা বড় নয়। লাচিতের এই উগ্রমূর্তি দেখে দুর্গের কাজে নিযুক্ত মজদুরেরা ভীষণ ভয় পেয়েছিল এবং প্রচণ্ড পরিশ্রম করে এক রাতের মধ্যে সেই গড় বা দুর্গ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করেছিল। সেই গড় বা দুর্গকে আজও ‘মােমাই কাটা গড়’ বলে জানা যায়। আজও ‘লাচিতের সেই ‘দেশের চেয়ে মামা বড় নয়’ উক্তিটি দেশপ্রেমমূলক বাক্য বলে গণ্য হয়।

আহােম ও মােগলদের সর্বশেষ যুদ্ধ শরাইঘাটের যুদ্ধ। ১৬৭১ সালে মার্চ মাসে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই সময় লাচিত ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। আহােম সেনাপতি লাচিত অসুস্থ থাকায় অসমিয়া সৈন্যদের মনােবল অনেকটা কমে যায়। এই সুযােগে মােগল সেনারা যুদ্ধে বেশ কিছুটা অগ্রসর হওয়ার সুযােগ পায়। এতে অসুস্থ লাচিত অস্থির হয়ে ওঠেন। যুদ্ধে অসমিয়া সৈন্যদলের পিছু হটতে দেখে তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। দুর্বল অসুস্থ শরীরেই প্রচণ্ড প্রতাপের সঙ্গে পরাভূত অসমীয়া সেনাদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তার প্রচণ্ড বীরত্বের সামনে মােগল সেনারা দাঁড়াতেই পারল না। এভাবে লাচিতের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং প্রবল প্রতাপ প্রদর্শনের জন্যে আহােমরা যুদ্ধে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল।

কিন্তু শরাইঘাট যুদ্ধের কিছুদিন পরেই গুয়াহাটিতে লাচিত বরফুকনের মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন একজন অতুলনীয় বীর এবং দেশপ্রেমিক। আহােম-মােগল যুদ্ধে প্রদর্শিত নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম এবং সফল নেতৃত্বের কাহিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

(খ) সতী জয়মতী – সতী জয়মতী তুং-খঙ্গিয়া গােত্রের লাঙ্গি গদাপাণির স্ত্রী ছিলেন। রাজকুমারী সতী জয়মতী জীবৎকালে আহােম রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর জটিল রূপ নিয়েছিল। মন্ত্রী লালুকসােলা বরফুকন তখন অসমের অশান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক রাজকুমার থাকা সত্ত্বেও মাত্র চৌদ্দবছরের ছ্যু-লিক-ফাকে অসমের রাজা হিসাবে অভিষেক করান হয়। ছ্যু-লিক-ফা বা রত্নধ্বজ সিংহ বয়সে বালক বলে প্রজাদের মধ্যে তিনি লরা রাজা নামে পরিচিত হন। লালুকসােলা ছ্যু-লিক-ফাকে রাজা করেই সে সময়ের রাজা ছ্যু-দৈয়-ফা-কে হত্যা করেছিলেন। এছাড়া আতন বুঢ়াগোঁহাই-কেও সবংশে হত্যা করে নিজের পছন্দের জন- দিঘলা আঙ্গিকে বুঢ়াগোঁহাই এবং লাই থেপেনাকে বরগোহাই পদে বসান। এছাড়াও লালুকসােলা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য লরা রাজার সঙ্গে নিজের পাঁচ বছরের মেয়ের বিয়ে দেন। বঙ্গের নবাবের আশ্বাস পেয়ে লালুকসােলার মনে আহােম রাজ্যের রাজা হওয়ার লালসা প্রবল হয়ে উঠেছিল।

রাজপরিবারের কয়েকজন রাজকুমারেরই রাজা হওয়ার যােগ্যতা ছিল। এদের যে কোন কেউ বিদ্রোহ করে সিংহাসনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এ আশঙ্কা ছিল লালুকসােলার। কিন্তু আহােম সম্প্রদায়ের নিয়ম মতে কোনাে অঙ্গচ্ছেদ রাজকুমার রাজা হতে পারেন না। সেজন্য লালুকসােলার পরামর্শমতে লরা রাজা আহােম রাজকুমারদের হত্যা কিংবা অঙ্গচ্ছেদ পর্ব শুরু করেন।

তুং-খুঙ্গিয়া গােত্রের লাঙ্গি গদাপাণি ছাড়া বাকি সব গােত্রের রাজকুমারদের লালুক বরফুকনের গুপ্তচরেরা ধরে ধরে অঙ্গচ্ছেদ বা হত্যা করলেন। কিন্তু গদাপাণির কোনাে সন্ধান তারা পেলেন না।

গদাপাণি ও জয়মতী তাদের দুই ছেলে লাই-লেচাই সহ তুংখঙ্গে বসবাস করছিলেন। লালুক-ছালিকফার রাজকুমার নিধনের সংবাদ পেয়ে দুই ছেলেকে নাগা রাজ্যের কোনাে এক নিভৃত স্থানে লুকিয়ে রাখে। নিজের দুই ছেলের সাথে গদাপাণিকেও লুকিয়ে থাকার জন্য পীড়াপীড়ি করেন জয়মতী। প্রথমে সম্মত না হলেও পরে নাগার ছদ্মবেশে নাগা পাহাড়ে আত্মগােপন করেন গদাপাণি। কিন্তু গদাপাণিকে খুঁজে না পেয়ে লরারাজার লােকেরা জয়মতীকেই রাজসভায় নিয়ে এসেছিলেন।

স্বৰ্গদেউ- এর আদেশ ঘােষণা করে লালুকসােলা জয়মতীকে গদাপাণির সংবাদ জানতে চান। কিন্তু রাজকুমারী জয়মতীর কাছ থেকে কোনাে উত্তর না পাওয়ায় লালুকসােলার নির্দেশে চাওদাঙ (প্রহরী) জয়মতীকে জেরেঙার কাছে কোনাে নির্জন স্থানে নিয়ে এসে গদাপাণির সংবাদ বের করবার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। চাওদাঙ জয়মতীকে অনেকভাবে বুঝিয়ে ফুসলিয়ে, ভয় দেখিয়েও গদাপাণির কোনাে সংবাদ বের করতে না পেরে জয়মতীর উপর নির্যাতন শুরু করেন। কিন্তু সমস্ত ধরনের নির্যাতন নীরবে সহ্য করে ১৪ দিন পর ১৬৭৯ সালের ১৩ চৈত্র সতী জয়মতী মৃত্যুবরণ করেন। অসমীয়া নারীর পবিত্রতার উদাহরণ-সতী জয়মতী। তিনি নারীর অসীম মনােবলের মাহাত্ম্য, স্বামীর হিতার্থে স্ত্রীর মহান ত্যাগের আদর্শ জগতে প্রতিষ্ঠা করে যান।

সতী জয়মতীর জ্যেষ্ঠ পুত্র রুদ্ৰসিংহ মায়ের স্মৃতি চিরস্মরণীয় করার উদ্দেশ্যে জেরেঙ্গা পাথারে ১৬৭৯ সালে সাগর-সদৃশ বৃহৎ পুকুর খনন করে নাম দিয়েছিলেন জয়সাগর। এর পাঁচ বছর পর রুদ্ৰসিংহ মাতৃরক্তে পবিত্র জেরেঙ্গা পাথারে রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তর করেন এবং নাম রাখেন রংপুর। এছাড়া তিনি পুরনাে রাস্তা ও বড় রাস্তার মাঝখানে মায়ের নামে ময়দান (ক্ষেত্র) নির্মাণ করেছিলেন। এই পবিত্র ময়দান আজও সতী জয়মতীর স্মৃতি অক্ষুন্ন করে রেখেছে।

(গ) টেঙাই মহন – পণ্ডিত টেঙাই মহনের জন্ম হয়েছিল ১৭১৫ সনের চরাই-দেউয়ের মহুং-মাইচেউ পরিবারের তকরির ঘরে। তিন ভাইবােনের সবচেয়ে ছােটো ছিলেন তিনি।

আহােম রাজত্বের অন্তিম লগ্নে আহােম দরবারে বিভিন্ন কারণবশতঃ আহােম ভাষার পরিবর্তে ধীরে ধীরে অসমীয়া ভাষার প্রসার লাভ করছিল। অন্যদিকে আহােম ভাষা ক্রমাগত অবহেলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন বার্তালাপ থেকেও এই ভাষা নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে। এতে সচেতন বুদ্ধিজীবী আহােমেরা এই ভেবে চিন্তিত হয়েছিলেন যদি আহােম ভাষাটি একেবারে লুপ্ত হয়ে যায় তবে অসমের একটা জীবিত সভ্যতা অসমের ইতিহাস থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে। আহােমেরা অসমে আসার সময় তাদের সাহিত্য, বুরঞ্জি, ধর্ম, নৈতিকতা, জ্যোতিষ, দর্শন ইত্যাদি অনেক বিষয়ের গ্রন্থ-পুথি সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। এছাড়া অসমে আহােম রাজত্বকালেও বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করা হয়েছিল। এই বিশাল জ্ঞান-ভাণ্ডারে সমৃদ্ধ ভাষাটি লুপ্ত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে এই গ্রন্থ-পুথিগুলাে থেকে জ্ঞান আহরণ করাও দুষ্কর হয়ে পড়বে। এছাড়া আহােম শব্দও অপভ্রংশ হয়ে বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে আহােম ভাষা শিখতে পারে সেজন্য ভাষাবিদ টেঙাই মহন একটি অভিধান প্রণয়নের কাজ আরম্ভ করেন। ১৭৯৫ সালে গৌরীনাথ সিংহের রাজত্বের অন্তিমলগ্নে তিনি বরকাকত হুংমুং পুথি’ নামক এক অভিধান রচনা করেছিলেন। সাঁচি পাতায় লেখা এই পুথিতে সর্বমােট ৪২টি পৃষ্ঠা ছিল। এর আয়তন ৪০ x ১০ সে.মি.। প্রত্যেক পৃষ্ঠায় ৮-৯টা শারি ছিল। এখানে প্রত্যেক আহােম শব্দের বিপরীতে সম্ভাব্য সব অসমীয়া অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯১২ সালে কোচবিহারের কৈলাশচন্দ্র সেন নামক ব্যক্তির কাছ থেকে টেঙাই মহনের রচিত ‘বরকাকত হুংমুং’ গ্রন্থটি হেমচন্দ্র গােস্বামী মহাশয় উদ্ধার করে ‘বুরঞ্জি এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগে জমা করেছিলেন। টেঙাই মহনের রচিত ‘বরকাকত হুং- মুং’গ্রন্থটির সম্পাদিত রূপই হচ্ছে অসম বুরঞ্জি এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফ থেকে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত ‘আহােম লেক্সিকন’-এর বৃহৎ অর্ষ খণ্ড ।

অসমের প্রথম অভিধান প্রণেতা হচ্ছেন টেঙাই মহন। ‘বরকাকত হুংমুং’গ্রন্থটি ছাড়াও তাঁর রচিত আরও কুড়িটির অধিক পুথি পাওয়া গেছে। আহােম ভাষার পুথি অনুবাদের জন্যে ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে তাকে বিলেতে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৮২৩ সালে ডিব্ৰুগড় জেলার খুয়াঙে তার মৃত্যু হয়।

(ঘ) দেওধাই ফুকন – চরাইদেউ মহকুমার অন্তর্গত আখৈয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে এক শুভ লগ্নে উম্বরুধর দেওধাই ফুকনের জন্ম। পিতার নাম গঙ্গারাম ফুকন ও মাতার নাম ছিল চাদৈ ফুকন। পিতা গঙ্গারাম ফুকন ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। ডম্বরুধর ফুকন এম. ভি. স্কুলে পড়ার পর টাই ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে পড়াশুনা শুরু করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে টাই ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করেন। একজন টাই পণ্ডিত হিসাবে তিনি যথেষ্ট্ খ্যাতিলাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে অসম বুরঞ্জি এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. সূর্যকুমার ভূঞা টাই ভাষার বিশেষজ্ঞ রূপে টাই আহােম বুরঞ্জি অনুবাদের জন্য তাকে গুয়াহাটিতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। অসম বুরঞ্জি এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগে চার বছর আহােম পণ্ডিতরূপে কাজ করবার পর ১৯৩৫ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। 

১৯৬৪ সালে টাই ভাষা সংস্কৃতির উন্নতির জন্য প্রথমে একটি স্কুল নির্মাণ করেন। এরপর সেখানে পাটসাঁকো কেন্দ্রীয় টাই অকাদেমির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে অখিল অসম বৌদ্ধ ফ্রালুং সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক টাই শিক্ষা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৮১ সালের ৮ এপ্রিল পূর্বাঞ্চল টাই সভা গঠন করেন এবং প্রতিষ্ঠাপক সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে ব্যাংককে আয়ােজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টাই শিক্ষা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে একমাস থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই শহরে থেকে টাই ভাষা ও সংস্কৃতির সাধনা করেছিলেন। এসময় থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী ইত্যাদি বহু দেশ থেকে আসা বহু পণ্ডিত গবেষক তার আতিথ্য গ্রহণ করে টাই আহােম সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেছিলেন।

অসমের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত টাই ভাষা সংস্কৃতির বিকাশের উদ্দেশ্যে আজীবন সাধনা করে গেছেন দেওধাই ফুকন। ১৯৯৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিব্ৰুগড় জেলার লেঙেরিতে আয়ােজিত পূর্বাঞ্চল টাই-সাহিত্য সভার দশম অধিবেশনের পরদিন হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে ডিব্ৰুগড় চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে এই কর্মবীর পুরুষের মৃত্যু হয়।

(ঙ) কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ – ১৮৯৮ সালে যােরহাটে কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ-এর জন্ম হয়। তার পিতা রাধাকান্ত ও মাতা নারায়ণী সন্দিকৈ। ১৯১৩ সালে যােরহাট সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রেন্স পরীক্ষা দিয়ে কটন কলেজে অধ্যয়ন করেন। এখান থেকে আই, এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে কলকাতায় যান। কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৯১৭ সালে সংস্কৃতে প্রথম শ্রেণির সম্মান সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে বেদগ্রুপ নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম, এ. পাশ করেন। এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আধুনিক ইতিহাস বিভাগে সসম্মানে ১৯২৩ সালে এম. এ. উপাধি লাভ করেন। ১৯২৩-২৭ এই সময়ে তিনি প্যারিস এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিক, লাতিন, ইতালিয়ান ইত্যাদি ভাষা অধ্যয়ন করেন। ১৯৩০ সালে যােরহাট জে. বি. কলেজ প্রতিষ্ঠার পর কৃষ্ণকান্ত তার অবৈতনিক অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ তার প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন। এবং ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এই পদে নিযুক্ত ছিলেন।

কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। সংস্কৃত সাহিত্যে তার ছিল অগাধ জ্ঞান। তার দ্বারা প্রকাশিত ইংরাজি গ্রন্থ তিনটি হল শ্রীহর্ষের নৈষধচরিতের ইংরাজি অনুবাদ ও টীকা সম্বলিত গ্রন্থ, ‘নৈষধ চরিত’ (১৯৩৪), সােমদেবের যশস্তিলকের ভিত্তিতে রচিত ‘যশস্তিলক অ্যাণ্ড ইন্ডিয়ান কালচার’ (১৯৪৯) এবং মারাঠি লেখক প্রবর সেনের প্রাকৃত পুথি সেতুবন্ধনের ভাষ্য ‘সেতুবন্ধন’। এছাড়া কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধও লিখেছিলেন। ১৯৫১ সালে লক্ষ্ণৌতে ভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৫৩ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। অসমীয়া সাহিত্যের প্রতি তার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। বাঁশি, মিলন, আবাহন, চেতনা ইত্যাদি পত্রিকায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছিলেন। কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রচনা সম্ভার-এ এই সকল সংগৃহীত হয়েছে। ১৯৩৭ সালে অসম সাহিত্য সভার গুয়াহাটি অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন তিনি। ভারত সরকার ১৯৫৫ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৬৭ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে অলংকৃত করেন। গুয়াহাটি এবং ডিব্ৰুগড় বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট উপাধি প্রদান করেন। তিনি জে. বি. কলেজকে এগার হাজার এবং চন্দ্রকান্ত অভিধানের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করে ছিলেন। মৃত্যুর আগে নিজের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারটি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে যান।

(চ) পদ্মনাথ গােহাঞি বরুয়া – ১৮৭১ সালের ২৪ অক্টোবর উত্তর লখিমপুরের নকারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পদ্মনাথ গােহাঞি বরুয়া। তার পিতা ঘনরাম এবং মায়ের নাম লক্ষ্মীদেবী। উত্তর লখিমপুর থেকে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিবসাগর হাইস্কুলে ভর্তি হন। যদিও পরে কোহিমা হাইস্কুল থেকে ১৮৯০ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি কলকাতায় যান। সেখানে তিনি এফ. এ. ও আইন পড়েন। সেখান থেকে ফিরে এসে কোহিমা মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রূপে যােগদান করেন এবং পরে যােরহাটে কিছুকাল শিক্ষকতা করে ১৮৯৩ সালে তেজপুর নর্মাল স্কুলে চলে আসেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।

পদ্মনাথ গােহাঞি বরুয়া কবিতা, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি সাহিত্যের সকল ধারায় পূরদর্শী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগুলি হল- জুরনি, লীলা, চানেকি প্রধান। নাটকের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস ভিত্তিক নাটক জয়মতী, গদাধর, সাধনা, লাচিত বরফুকন, বাণ-রাজা। প্রহসন নাটকগুলাে হল-  গাঁওবুঢ়া, টেটোন তামুলি, ভূত নে ভ্রম ইত্যাদি। উপন্যাস সমূহ, যেমন- ভানুমতী, লাহরি বিখ্যাত। আত্মজীবনী- মাের সোঁঅরনি, সংগ্রহ সংকলনের মধ্যে আছে সাহিত্য, জীবনী সংগ্রহ, ধর্মমূলক গ্রন্থ- শ্রীকৃষ্ণ, গীতাসার। এছাড়াও ভূগােল দর্পণ, নীতিশিক্ষা, শিক্ষাবিধান ইত্যাদি অনেক পাঠ্যপুস্তক তিনি রচনা করেছিলেন, তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে, বিজুলি, আসাম বুন্তি এবং উষা।

তিনি ১৯১৭ সালে শিবসাগরে অনুষ্ঠিত অসম সাহিত্য সভার প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালের ৭ এপ্রিল এই সাহিত্যিকের পরলােক প্রাপ্তি হয়েছিল।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top