SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা

Join Roy Library Telegram Groups

SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা Question Answer As Per New Syllabus of SEBA Provided by The Roy Library is one of the best content available on the internet as well as many other offline books. SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা Notes is made for SEBA Board Bengali Medium Students. SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা Solutions We ensure that You can completely trust this content. SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা Suggestions If you learn PDF from then you can BUY PDF সপ্তম শ্রেণীর অঙ্কুরণ সমাধান I hope You Can learn Better Knowledge.

SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা

Today’s We have Shared in This Post SEBA Class 7 Ankuran Chapter 4 মাতৃপূজা Suggestions with you. SEBA Class 7 Bengali Chapter 4 মাতৃপূজা I Hope, you Liked The information About The SEBA Class 7 Ankuran Chapter 4 মাতৃপূজা Question Answer. If you liked SEBA Class 7 Ankuran Chapter 4 মাতৃপূজা Notes Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

মাতৃপূজা

ক্রিয়াকলাপ

ক-পাঠভিত্তিক ক্রিয়াকলাপ 

১। ছাত্ৰ -ছাত্ৰীরা উপযুক্ত বিরাম সহ ছন্দ বজায় রেখে কবিতাটি আবৃত্তি করবে।

উত্তরঃ নিজে কর।

২। শব্দ সম্ভার দেখে জেনে নাও-

দিনু-

হিয়া-

নিয়ােজিত-

বিসর্জন-

ভূমি-

হৃদয়ে-

বিষাদময়-

অশ্ৰু-

ঘুচিবে-

উত্তরঃ দিনু – দিলাম। 

হিয়া – হৃদয় বা মন।

বিসর্জন – উৎসর্গ।

নিয়ােজিত – নয়ােগ হওয়া।

ভূমি – মাটি।

হৃদয়ে – মনে।

বিষাদময় – দুঃখপূর্ণ। 

অশ্রু – চোখের জল।

ঘুচিবে – দূর হবে।

৩। ক অংশের সাথে খ অংশকে মিলিয়ে কবিতার পংক্তিগুলাে সম্পূর্ণ করাে ?

ক 
যেহ দিন ও চরণে ডালিবর্তমান যদি যায়
অনল পুষিতে চাহিগাব তবে অনিবার
অতীতের কথা কহিআপনার হিয়া মাঝে
গাহি যদি কোন গানতােমার কলঙ্গ-ভার
যতদিন না ঘুচিবেদিনু এ জীবন

উত্তরঃ 

ক 
যেহ দিন ও চরণে ডালিদিনু এ জীবন
অনল পুষিতে চাহিআপনার হিয়া মাঝে
অতীতের কথা কহিবর্তমান যদি যায়
গাহি যদি কোন গানগাব তবে অনিবার
যতদিন না ঘুচিবেতােমার কলঙ্গ-ভার

৪। শিক্ষক / শিক্ষয়িত্রী প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে এই কবিতার দুটি করে পংক্তি মুখস্থ করতে বলবেন এবং পংকিত দুটির অর্থ, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ইত্যাদি বুঝিয়ে দিতে বলবেন।

উত্তরঃ নিজে করাে ।

S.L. No.সূচি পত্র
পাঠ -১গোষ্ঠযাত্রা – যাদবেন্দ্র
পাঠ -২জাতকের গল্প
পাঠ -৩পণ্ডিত আনন্দরাম বরুয়া
পাঠ -৪মাতৃপূজা
পাঠ -৫বিজ্ঞান ও আমাদের মানসিকতা
পাঠ -৬আশার আলো
পাঠ -৭পড়ার হিসাব
পাঠ -৮মিসাইল মানব
পাঠ -৯অসম
পাঠ -১০প্ৰত্যাহ্বান
পাঠ -১১ভালো থেকো
পাঠ -১২আমার ছেলেবেলা
পাঠ -১৩প্রাকৃতিক দুৰ্যোগ
পাঠ -১৪হে ভারতের শ্ৰমজীবি
পাঠ -১৫মালেগড়

৫। এই কবিতা থেকে চার জোড়া অন্তমিলযুক্ত শব্দ খুঁজে বের করাে এবং এগুলাে দিয়ে বাক্য রচনা করাে ?

উত্তরঃ জীবন – মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান।

বিসর্জন – দেশের জন্য বহু মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।

আব – আর কষ্ট করার দরকার নেই।

আমার – আমার দেশের মাটিতে মাথা ঠেকাই।

মাঝে – মনের মাঝে ঈশ্বর আছেন।

কাজে – কাজের মাঝে বিশ্রাম নাও।

তরে – দেশের তরে প্রাণ দিব।

ধরে – মাছ ধরে খাওয়া খুবই সুখের।

৬। উত্তর বলাে ও লেখাে।

(ক) মাতৃপূজা কবিতার কবি কে ?

উত্তরঃ মাতৃপূজা কবিতার কবি কামিনী রায়।

(খ) মা আমার, মা আমার’- এখানে মা বলতে কাকে বােঝান হয়েছে ?

উত্তরঃ এখানে মা বলতে দেশমাতাকে বােঝানাে হয়েছে।

(গ) হাসি অশ্রু সেই দিন করিয়াছি বিসর্জন’- কবি কেন এখানে হাসি অশ্রু বিসর্জন করার কথা বলেছেন।

উত্তরঃ মাতৃভূমির সেবায় নিয়ােজিত সন্তানেরা যেদিন দেশ-মায়ের চরণে নিজেকে উৎসর্গ করেছে সেইদিন তারা হাসি অশ্রু সব বিসর্জন দিয়েছে।

(ঘ) মাতৃপূজা বলতে কী বােঝাে ? এই কবিতায় মাতৃপূজা কিভাবে করার কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ মাতৃপূজা বলতে বােঝায় দেশমাতৃকার সেবা। এই কবিতায় বলা হয়েছে মাতৃভূমিকে ভালােবেসে ও রক্ষা করে সেবা করার কথা বলা হয়েছে।

(ঙ) ‘যতদিন না ঘুচিবে তােমার কলঙ্ক ভার’- এখানে তােমার বলতে কাকে বােঝান হয়েছে ? তার কলঙ্ক ভার কবি কীভাবে ঘােচাবেন ?

উত্তরঃ এখানে তােমার’ বলতে দেশমাতাকে বােঝান হয়েছে। দেশের জন্য লড়াই করে প্রয়ােজনে প্রাণ দিয়েও কবি দেশমাতার কলঙ্কভার ঘােচাতে চাল।

৭৷ তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে-

অনল পুষিতে চাহি আপনার হিয়া মাঝে

আপনাৱে অপরেরে নিয়ােজিত তব কাজে

ছােটোখাটো সুখ দুঃখ- কে হিসাব রাখে তার

তুমি যৰে চাহ কাজ- মা আমার মা আমার

উত্তরঃ যাকে মূলত ভয় পাওয়া হয় বস্তুতপক্ষে সে অত্যন্ত ভীরু। পৃথিবীতে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত দুই শ্রেণিই রয়েছে আবহমানকাল ধরে। যে দুর্বল, যে ভীরু, যে অসহায় সে সর্বদাই শঙ্কিত। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, ভীরুর ওপর সাহসীর ক্রোধ, অসহায়ের পেছনে অত্যাচারীর দাপট আমরা চিরকালই দেখেছি। কিন্তু আমরা জানি অত্যাচারীর দল মিথ্যাই আপন পৌরুষের অহংকার দেখায়। অত্যাচারী যে শক্তির দম্ভ প্রকাশ করে, তা বস্তুতপক্ষে তার অন্তরশক্তি নিঃসৃত নয়, তা গড়ে ওঠে দুর্বলের ভীরুতার সুযােগ নিয়ে। যে অত্যাচারী তার নিজের চরিত্রের গভীরে যেমন থাকে সংশয় বা দ্বন্দ্ব তেমনি থাকে ভয়। এই দ্বিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য সে দুর্বলের অসহায়ত্বের সুযােগ নেয়। আসলে অত্যাচারী নিজেকে জানে, তার উপলব্ধিতে থাকে সে অন্যায় করছে। কিন্তু অন্যায়বােধকে সে প্রশ্রয় দিতে চায় না। প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাকেই বিলুপ্ত করতে চায় অত্যাচারের প্রবণতায়। কিন্তু অত্যাচারিত মানুষ যখনই নিজেকে উপস্থাপিত করে প্রবল মহিমায় তখনই সে পিছু হটতে শুরু করে। আত্মবিশ্বাস আর আত্মপ্রত্যয় দ্বিধাহীনতা এবং সাহস নিয়ে মানুষ যখনই দম্ভী অত্যাচারীর মােকাবিলা করতে যায়, তখনই সে ভীত হয়, তার কাপুরুষতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। নিজেকে কখনােই কোনাে অবস্থাতেই দুর্বল ভাবা উচিত নয়।

খ – ভাষা অধ্যয়ন (ব্যবহারিক ব্যাকরণ)

৮। নিজে করাে।

৯। নীচের বাক্যগুলাের নিম্নরেখ পদের বিভক্তি এবং বিভক্তি পরিচয় বেরাে করাে।

(ক) নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।

(খ) ওদের দিয়ে এ কাজ হবে না।

(গ) ঘরগুলোতে রং করা হবে।

(ঘ) তারা বাড়ি থেকে বের হল।

(ঙ) সে কানে শােনে না।

(চ) নদীতে এখন জোয়ার আসবে।

উত্তরঃ (ক) নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা’-

(খ) ওদের দিয়ে এ কাজ হবে না – তৃতীয়া বিভক্তি।

(গ) ঘরগুলােতে রং করা হবে – সপ্তমী বিভক্তি।

(ঘ) তারা বাড়ি থেকে বের হল – পথ মী বিভক্তি।

(ঙ) সে কানে শোনে না – সপ্তমী বিভক্তি।

(চ) নদীতে এখন জোয়ার আসবে – সপ্তমী বিভক্তি।

১০। (ক) নীচের ছবিগুলাের নামের আগের শূন্যস্থানগুলাে বিশেষণ পদ দিয়ে পূর্ণ করাে।

…………..জবা।

……………পাতা।

…………….ছাতি।

উত্তরঃ লাল জবা।

সবুজ পাতা।

কালাে ছাতি।

১১। বাক্যগুলােকে এক কথায় প্রকাশ করাে।

(ক) যিনি মানুষকে ভালােবাসেন __________

(খ) যিনি বিশ্বকে ভালােবাসেন __________

(গ) যে বিদেশে থাকে __________

(ঘ) যার মৃত্যু নেই __________

উত্তরঃ (ক) যিনি মানুষকে ভালােবাসেন – মানবপ্রেমী

(খ) যিনি বিশ্বকে ভালােবাসেন – বিশ্বপ্রেমী

(গ) যে বিদেশে থাকে – প্রবাসী

(ঘ) যার মৃত্যু নেই – অমর

১২। নীচের বাক্যগুলাে পরিবর্তন করে লেখাে।

উত্তরঃ (ক) দিদিমণি বললেন যে তিনি গীতাঞ্জলি পড়েছেন।

দিদিমণি বললেন, ‘আমি গীতাঞ্জলি পড়েছি।’

(খ) অঙ্কিতা বলল- ‘আমি আজ স্কুলে যাব না।’

উত্তর। অঙ্কিতা বলল যে সে আজ স্কুলে যাবে না।

(গ) দাদু বললেন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে’।

উত্তর। দাদু বললেন যে সূর্য পূর্বদিকে ওঠে।

গ – জ্ঞান সম্প্রসারণ-

১৩। নিজে করাে।

১৪। নিজে করাে।

ঘ – প্রকল্প-

১৫। নিজে করাে।

১৬। নিজে করাে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ বিশেষ্য পদকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

(ক) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। 

(খ) শ্রেণিবাচক বিশেষ্য।

(গ) ভাববাচক বিশেষ্য।

(ঘ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। 

(ঙ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য।

(ক) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য – যে বিশেষ্য পদ দ্বারা নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তি, স্থান, নদী, পর্বত, গ্রন্থ, প্রতিষ্ঠান, পত্র পত্রিকা প্রভৃতির নাম বােঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন- রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, কলকাতা, গঙ্গা, হিমালয়, গীতা, বাইবেল, আনন্দবাহার, রামায়ণ ইত্যাদি।

(খ) শ্রেণিবাচক বিশেষ্য – যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনাে জাতি, শ্রেণি, বস্তু, প্রাণী বা সম্প্রদায়ের নাম বােঝায় তাকে শ্রেণিবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন- মানুষ, গােরু, গাছ, ফুল, ফল, হিন্দু, মুসলমান, বাঙালি, খ্রিষ্টান, নদী, পর্বত ইত্যাদি।

(গ) ভাববাচক বিশেষ্য – যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনাে ভাবের নাম। দোষ, গুণ বা অবস্থার নাম বােঝায় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন- দয়া, মায়া, ঘৃণা, করুণা, সততা, সরলতা, শৈশব, যৌবন, সৌন্দর্য, লালিত্য ইত্যাদি।

(ঘ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য – যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনাে ক্রিয়া বা কাজের নাম বােঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন- দর্শন, শ্রবণ, ভােজন, শয়ন, পঠন, চলন, বলন, উত্থান, পতন, বহন ইত্যাদি।

(ঙ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য – যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনাে নির্দিষ্ট বস্তু বা ব্যক্তিকে পৃথকভাবে না বুঝিয়ে বহু ব্যক্তি বা বস্তুকে একসাথে বােঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন- ফুলগুলি, কলমগুলি ইত্যাদি।

বাংলা কৃৎ প্রত্যয়

অ – ধাতুর সঙ্গে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয় দু-ভাবে।

১। প্রথমত, ধাতুর অর্থ কিন্তু বিশেষ্য-পদ রূপে।

যেমন- হার + অ = হার (পরাজয়ের ব্যাপার ) ; ডুক্ + অ = ডুব (ডুবার ব্যাপার)। সেরকম-

বাঁধ = ব + অ 

হাঁক= হাঁক + অ 

মার = মার + তা

পাকড় = পাকড় + অ 

ছুট = ছুট – অ 

সাজ = সাজ + অ

নাচ = নাচ + অ 

ধর = ধর + অ

ডাক = ডাক্ + অ

(লক্ষ্মণীয় – ‘অ’ -প্রত্যয়যুক্ত হলেও, প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলির শেষবর্ণের উচ্চারণ হলন্ত-ধবনিসমন্বিত।

২। দ্বিতীয়ত, ক্রিয়ার আসন্নতা বােঝাতে এবং দ্বিত্বভাবে বিশেষণ রূপে ব্যবহারের জন্য। (এই ক্ষেত্রে প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলির শেষবর্ণের 

উচ্চারণ ‘ও’ -ধবনিযুক্ত। যেমন-

পড় + অ = পড় (পড়-পড়) 

মর + অ = মর (মর-মর)

কাঁদ + অ = কাঁদ (কঁদ-কাঁদ) 

বল্ + অ = বল (বল-বল)

বাক্যে প্রয়ােগ – ১। সাদা ঘােড়ার সাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।’ -অবনীন্দ্রনাথ। ‘কেহ বা কতকগুলি ডুব পাড়িয়া চলিয়া যাইত।’ -রবীন্দ্রনাথ। আমি শুধু এদের মার ঠেকিয়েছি।’ -প্রমথ চৌধুরী। হাজার-হাজার মূর্তি র্তাহার, উহার কাছে মানছে যে হার’। -কুমুদরঞ্জন।

২। মাথার উপরে বাড়ি পড়- পড় তার খোঁজ রাখ কি ?’ -রবীন্দ্রনাথ। রােগীর তখন মর-মর অবস্থা।

অন- ভাববাচ্যে ও বিভিন্ন কারকবাচ্যে ধাতুর সঙ্গে অন-প্রত্যয় যুক্ত হয়। প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলি হয় বিশেষ্য-পদ। প্রধানত ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বােঝাতে ধাতুর শেষে অন্-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

বাঁধ + অন = বাঁধন। 

সাধ + অন = সাধন।

কাদ + অন = কাঁদন।

বাঁচ + অন = বাঁচন।

গড় + অন = গড়ন।

ভাঙ + অন = ভাঙন।

মাখ + অন = মাখন।

মাজ + অন = মাজন।

সাজ + অন = সাজন।

ঝুল্ + অন = ঝুলন।

ঝাড় + অন = ঝাড়ন। 

চল্ + অন = চলন।

বাক্যে প্রয়ােগ- ‘ভারে হৃদয় ভাঙুরে বাঁধন সাধুরে আজিকে প্রাণের সাধন।’ -রবীন্দ্রনাথ। ‘বাপ্পা…….. ঝুলন-পূর্ণিমার প্রকাণ্ড চাদের দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন’। -রবীন্দ্রনাথ। ‘যার রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণবাচন’। -নজরুল।

আও- ভাববাচ্যে ধাতুর সঙ্গে আও-প্রত্যয় যুক্ত হয়। প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলি হয় বিশেষ্য। ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষণ-পদও হয়ে থাকে। যেমন-

ঘের + আও = ঘেরাও।

ফল + আও = ফলাও।

ঢাল + আও = ঢালাও।

চড + আও = চড়াও।

পাকড + আও = পাকড়াও।

লাগ + আও = লাগাও।

বাক্যে প্রয়ােগ – কারখানার শ্রমিকেরা বাড়ি চড়াও হয়ে মালিককে ঘেরাও করল। বাড়িতে কেউ এলে তাকে না খাইয়ে যেতে দেবে না বলে কর্তাবাবুর ঢালাও হুকুম ছিল।

ইয়ে –  নিপুণ বা দক্ষ অর্থে ব্যবহৃত। ক্রিয়া থেকে বিশেষণ। যেমন-

গাইয়ে = গা + ইয়ে।

বাজিয়ে = বাজ + ইয়ে।

বলিয়ে = ব + ইয়ে।

নাচিয়ে = নাচ্ + ইয়ে।

খাইয়ে = খ + ইয়ে।

কইয়ে = ক + ইয়ে > এ।

বাক্যে প্রয়ােগ – টুবাইয়ের মতাে বলিয়ে কইয়ে ছেলে দেখিনি। গাইয়ে তাে আছে, বাজিয়ে কই ?

উক – বিশেষণ বােধক। স্বভাব নির্দেশক। যেমন-

মিশুক = মিশি + উক।

নিন্দুক = নিন্দ + উক।

লাজুক = লাজ + উক।

ভাবুক = ভাল্ + উক।

বাক্যে প্রয়োেগ- এখনকার দিনে এতাে লাজুক হলে কী চলে? মিশুক না হলে অনেক কিছুই কিন্তু অজানা থেকে যাবে।

উ- বিশেষণ (কখনও বা বিশেষ্য) রূপে ধাতুর-শেষে উ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- 

(বিশেষণ)

ডুব + উ = ডুব।

নির্ + উ = নিবু।

হব + উ = হবু।

চাল + উ = চালু।

ঢাল + উ = ঢালু।

উড + উ = উডু।

(বিশেষ্য)

হাঁট + উ = হাঁটু।

ঝাড + উ = ঝাড়ু।

চুম + উ = চুমু।

( কোনাে কিছু হতে অথবা করতে উদ্যত অর্থে উ-প্রত্যয়-নিষ্পন্ন পদটির দ্বিত্ব হয়। যেমন। নিবুনিবু, ডুবুডুবু, উড়ুউড়ু )

বাক্যে প্রয়ােগ – নন্দার হবু বরকে দেখে পিসিমার অপছন্দ হলাে না। চালু কারখানাটা যে শেষটায় উঠে যাবে, তা ভাবতেই পারিনি। বলটা গড়িয়ে পড়লাে ঢালু জমিতে। নিবুনিবু হয়ে এল এই জীবনের বাতি’। ‘শান্তিপুর ডুবুডুবু নদে ভেসে যায়।’

উনি – ভাববাচক বা বস্তুবাচক বিশেষ্য-পদ গঠন করতে ধাতুর শেষে উনি-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

জ্বল্ + উনি = জ্বলুনি। 

গাঁথ + উনি = গাঁথুনি।

বক + উনি = বকুনি। 

বাঁধ + উনি = বাঁধুনি।

রাঁধ + উনি = রাঁধুনি। 

বিন্ + উনি = বিনুনি।

ঢাক + উনি = ঢাকুনি। 

খাট + উনি = খাটুনি।

চাল + উনি = চালুনি।

পিট + উনি = পিটুনি।

আঁট + উনি = আঁটুনি। 

চির + উনি = চিরুনি।

বাক্যে প্রয়ােগ – বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরাে।” ‘খাটুনি যে ভালাে ছিল জ্বলুনির চেয়ে’। -রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লেখার হাত যেমন ভালাে, কথার বাধুনিও তেমনি। চালুনি দিয়ে ময়দাটা ঝেড়ে ফেল।

ত (অত, আত) – বিশেষ্য বা বিশেষণ রূপে ধাতুর শেষে ত (অত বা আত) প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

(বিশেষ্য)

মান + অত (> ত) = মানত। 

বস্ + অত (> ত) = বসত।

ডাক্ + অত (> ত) = ডাকাত।

ফির + অত (> ত) = ফিরত।

(বিশেষণ)

ফির + অত (> ত) = ফিরত (ফেরত)।

পার + অত (> ত) = পারত।

বাক্যে প্রয়ােগ – ছেলের অসুখে উদ্বিগ্ন মা মানত করলেন। তােমায় এখন বসত (বিশেষ্য) কোথায়? দেনার দায়ে শেষপর্যন্ত বসত (বিশেষণ) -বাড়িও বিক্রি হয়ে গেল। পারতপক্ষে তিনি কোনাে দান গ্রহণ করেন না বলিয়া সমস্ত টাকাই ফিরত পাঠাইলেন।

তি (আত) – ভাববাচক বিশেষ্য অথবা বিশেষণ-পদ গঠন করতে ধাতুর শেষে তি (অতি)-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

কাট + তি = কাটতি। 

ঘাট + তি = ঘাটতি। 

কম্ + তি = কমতি।

গুন + তি = গুনতি।

উঠ + তি = উঠতি। 

পড় + তি = পড়তি।

ঝড় + তি = ঝাড়তি। 

বাড় + তি = বাড়তি। 

ফির + তি = ফিরতি।

চল্ + তি = চলতি। 

বস্ + অতি = বসতি (বস্ + তি = বস্তি)।

বাক্যে প্রয়ােগ – ‘আমরা দুজনে চলতি হাওয়ার পন্থী।’ -রবীন্দ্রনাথ। গুণতিতে কমতি হলাে, না বাড়তি হলাে, সেটা একবার ভালাে করে দেখ! এই উঠতি বয়সে এত কম খেলে চলে ? ফিরতি পথে দোকানের কাটতিটা একবার নিজের চোখেই দেখে যেয়াে।

না – ক্রিয়াবাচক ও বস্তুবাচক বিশেষ্য-পদ গঠন করতে ধাতুর শেষে না-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

বাজ + না = বাজনা। 

খেল্ + না = খেলনা।

ফেল্ + না= ফেলনা।

কাঁদ + না = কান্না।

বাঁধ + না = রান্না।

ধর + না = ধন্না।

মাগ + না = মাগনা।

ঢাক্ + না = ঢাকনা। 

দে + না = দেনা।

পাও + না = পাওনা। 

বাজ + না = বাজনা।

ঝর + না (অনা) = ঝরনা।

বাক্যে প্রয়ােগ – কান্না হাসির দোল-দোলানাে পৌষ-ফাগুনের পালা। -রবীন্দ্রনাথ। কুটনা কুটে বাটনা বেটে রান্না চড়াতে হবে। ‘মিটিয়ে দে তাে পাওনা-দেনা।’ -তারাশঙ্কর।

রি (আরি, উরি)- করুণবাচ্যে ও কর্তৃবাচ্যে ধাতুর শেষ রি (আরি, উরি)-প্রত্যয় যুক্ত হলে, প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দগুলি হয় বিশেষ্য-পদ। (আরি বা উরি প্রত্যয়ের, আ বা উ ধাতুর শেষবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয় বলে শেষে থাকে ‘রি’।) যেমন ও

কাটারি = কাট + আরি (কাট + আ = কাটা + রি)

প্রবন্ধ রচনা

আমাদের দেশ।

উত্তরঃ দেশপ্রেমিক মানুষ আবহমান কাল ধরেই বলে এসেছে-

“জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী”, কিংবা

এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।

সত্যই তাে জন্মভূমি আমাদের কাছে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। দেশ বলতে কেবল মাটির দেশ নয়, দেশ মানুষের দেশ। মানুষের বিচিত্র কর্ম, চিন্তা ও সৃষ্টির মধ্যে দেশের শ্রীমূর্তি প্রতিভাত হয়। আমাদের ভারতবর্ষ সুপ্রাচীন এক ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশ। কবি সাহিত্যিক মনীষীরা নানাভাবে এদেশের বন্দনা গেয়েছেন। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছেন, ভারত আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ। লিখেছেন, ‘আমার এই দেশেতে জন্ম মাগাে, এই দেশেতেই মরি। বিবেকানন্দের কাছে এই দেশ বাল্যের ‘শিশু শয্যা, যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, ব্যবসাবাণিজ্যের প্রাচীনকাল থেকেই এক গৌরবময় স্থান অধিকার করেছে। সর্বোপরি এদেশের বাণী হচ্ছে মানবকল্যাণের বাণী। ভারতবর্ষের ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য হ’ল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপন। ভারতের পথ হচ্ছে মানবিক ঐক্য ও কল্যাণের পথ।

যুগে যুগে এই ভারতের মাটিতে বৈদেশিক আক্রমণ হয়ে গেছে। কেউ এসেছে লুণ্ঠনের জন্য, কেউ এসেছে সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য, কেউবা এসেছে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। ভারত কিন্তু সবাইকে আপন করে নিয়েছে। এখানে ‘আর্য অনার্য শক হুনদল পাঠান মােগল ভারতের মাটিতে একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু দুশ বছর ইংরেজ ভারতকে শাসনের নামে এমনভাবে শােষণ করে যে ভারত তার মহান আদর্শ বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হয়নি। ব্রিটিশ শাসনে ভারতের দুর্দশা চরমসীমায় পৌছেছে। অর্থনৈতিক দুর্দশায়, সাম্প্রদায়িক বিচ্ছেদে, সংঘর্ষে হানাহানিতে ভারত আধুনিক যুগের সূর্যমণ্ডলীর মধ্যে কলঙ্কের মতাে থেকে যায়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ সংগ্রাম চালায়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। কূটকৌশলী ইংরেজ সরকার দেশত্যাগের পূর্বে অখণ্ড ভারতকে ভারত ও পাকিস্তান দু’ভাগে ভাগ করে দিয়ে যায়।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের ইতিহাস মূলত অগ্রগতির ইতিহাস। ১৯৯৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। তারপরও কেটে গেছে বেশ কয়েকটি বছর। ইতিমধ্যে দেশের প্রগতির জন্য নেতারা অনেক পরিকল্পনা নিয়েছেন। অনেক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি কৃষি ও শিল্পোন্নতি ঘটেছে যথেষ্ট। শিক্ষার মান উন্নীত হয়েছে। কৃষকেরা আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করছে। নতুন নতুন কলকারখানা গড়ে উঠেছে। পরমাণু বিজ্ঞানে বিশ্বে ভারতের স্থান উঁচুতে। আধুনিক বিজ্ঞান প্ৰযুক্তিবিদ্যার যথাযথ প্রয়ােগে শিল্পবাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। কম্পিউটার-ইন্টারনেট-এর সাহায্যে মুহূর্তে দেশ-বিদেশে যােগাযােগ করা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে দেশের সমস্যা মাঝেমধ্যেই সাংঘাতিক হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রকোপে দেশের সংহতি, বিপন্ন হয়। নিরন্তর সংঘর্ষে হানাহানিতে দেশের বুকে রক্ত ঝরে। নিরীহ নরনারীর মৃত্যু ঘটে।

সংবাদপত্র খুললেই এ সমস্ত খবর চোখে পড়ে। তবু ভারত ভারতই। এতাে বড়াে দেশ। ভাষা আলাদা, ধর্ম আলাদা, সম্প্রদায় আলাদা; খাদ্যবস্ত্র-বাসস্থান ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং সব কিছু যে সর্বদা এক সূতােয় বাঁধা থাকবে, তা কী বলা চলে। কোনাে শক্তিই ভারতীয় মূল মন্ত্র বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’কে বিনষ্ট করতে পারে না। আমরা যেন ভুলে না যাই বিশ্বের কাছে গর্ব করার মতাে আমাদের ঐতিহ্যের সম্পদ অনেক আছে। আমাদের বেদবেদান্ত, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, শিল্প-সংস্কৃতি-সবই মানবিক উচ্চাদর্শ ও গভীর সৌন্দর্যানুভূতির স্বাক্ষর রেখেছে। এ নিয়ে আমরা গর্বিত ও বিশ্বের দরবারে সম্মানিত। গণতন্ত্রের কল্যাণে, বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও সমালােচনা করতে শাস্তি দিতে আমরা কুণ্ঠিত হই না। ভারতে অর্থনৈতিক ভারসাম্যও ফিরেছে -মুদ্রাস্ফীতি কমেছে -টাকার দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বড়াে কথা ভারতবাসী এখন আত্মসচেতন হয়েছে -‘উন্নয়ণশীল’ দেশ ভারতকে তারা উন্নত দেশে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।

সুতরাং ভারতের উন্নতি হচ্ছেই, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই, কিন্তু সমস্যাও ঘিরে রয়েছে আমাদের। ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হলেই একটা জাতি অচিরে সর্বনাশের অতল তলে তলিয়ে যায়। এভাবে পৃথিবীর বড়াে বড়াে সভ্যতা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা যদি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই, হীন স্বার্থবুদ্ধি ভুলে যাই, বৈদেশিক ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের মােহজালে জড়িয়ে পড়ি, -তবে ভারত আবার সমবেত মানুষের কর্মপ্রচেষ্টায় ‘বহুবলধারিণী’ হয়ে উঠবে। আমাদের সেই শুভবােধে জাগ্রত হতে হবে- অসৎ থেকে সতে উপনীত হতে হবে। তখন ভারত সত্যই আবার ‘জগৎসভায় কে আসন লবে।’

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

উত্তরঃ দয়ার্দ্রচিত্ততায়, সমাজ শাসনে, মানবিক বােধে এবং তেজোময় ব্যক্তিত্বে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনিশ শতকের বাঙালি সমাজে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে যখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জীবনধারার মধ্যে দ্বন্দ্বসংঘর্ষ ও বিপুল আলােড়ন চলছে,- তখন বিদ্যাসাগর বাঙালি জাতিকে মনুষ্যত্বের উচ্চ আদর্শে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৃঢ়পদক্ষেপে অগ্রসর হন।

১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পিত ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা ভগবতীদেবী। পিতামাতার পবিত্র জীবনাদর্শের প্রভাবে বিদ্যাসাগরের মনােজীবন গড়ে ওঠে। বাল্যকাল থেকেই তিনি মেধাবী। খুবই দারিদ্র্যের মধ্যে তাকে পড়াশুনা করতে হয়। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি শেষ পরীক্ষায় প্রশংসার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বাংলার পণ্ডিতসমাজ আঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এই উপাধি এর আগে অনেকেই পেয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্রই এই উপাধিতে পরিচিত হয়ে রইলেন মানবসমাজে। যা হােক, স্বীয় পাণ্ডিত্যের গুণে তিনি ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদ লাভ করেন। পরে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। অধ্যক্ষ হয়েই তিনি কলেজের প্রশাসন ও পঠনপাঠন ব্যাপারে আমূল সংস্কারসাধন করলেন। শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠলেন। পরে ইংরেজ সরকার তাকে বাংলাদেশের বিদ্যালয়-পরিদর্শক নিযুক্ত করেন। এই প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষের মৃত্যু হয় ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ২৯ জুলাই।

বিদ্যাসাগরের সমস্ত জীবন হচ্ছে কর্মসাধনার ইতিহাস। অধঃপতিত বাঙালি জাতির মুক্তি ও সার্বিক উন্নতির জন্য তিনি নিরলসভাবে সারাজীবন কর্মসাধনায় ব্যাপৃত ছিলেন। কর্মজীবনের অবসরে রচনা করেন সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজসংস্কারমূলক গ্রন্থাদি। শিক্ষাসংস্কার ও শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি বর্ণপরিচয়, কথামালা ও বােধােদয় প্রভৃতি উচ্চাঙ্গের গ্রন্থ রচনা করেন। বেতালপঞ্চ বিংশতি, সীতার বনবাস, শকুন্তলা ও ভ্রান্তিবিলাস প্রভৃতি তার অনুবাদ-সাহিত্য। এইসব রচনাগুলি অনুবাদ হলেও সেগুলির মধ্যে মৌলিক সৃজনীশক্তির পরিচয় মেলে। বাংলা গদ্যকে তিনি শ্রীমণ্ডিত ও লালিত্য দান করেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাংলা গদ্যের তিনি জনক, তিনি যথার্থ শিল্পী। বাক্যের মধ্যে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন প্রভৃতি প্রয়ােগ করে বাংলা গদ্যকে সাবলীল ও শিল্পসৌন্দর্যে মণ্ডিত করে তােলার কাজে তার কৃতিত্ব অপরিসীম।

বিদ্যাসাগর বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন সমাজসংস্কার ও শিক্ষাবিস্তারের কর্মপ্রচেষ্টার জন্য। সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নির্ভীক যােদ্ধা- ‘He is the fighter for man and humanity’। হিন্দু কুলীনদের বহুবিবাহরােধ ও বিধবাবিবাহ প্রচলনে বিদ্যাসাগর মহৎ কীর্তি স্থাপন করেন। বাঙালি সমাজে বাল-বিধবাদের দুঃখের সীমা ছিল না। হিন্দুশাস্ত্র মন্থন করে শাস্ত্রের সারবত্তা দিয়ে তিনি প্রমাণিত করলেন যে, বহু-বিবাহ ও বাল্যবিবাহ প্রথা ঘােরতর অন্যায় এবং বিধবাদের পুনর্বিবাহ শাস্ত্রানুমােদিত। আইনসিদ্ধ হ’ল বিধবাবিবাহ।

শিক্ষাবিস্তার ছাড়া দেশ ও জাতির মুক্তি ও কল্যাণ সম্ভব নয়। বিদ্যাসাগর গ্রামাঞ্চলে সর্বসাধারণের জন্য বিশেষ করে নারীসমাজের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সর্বশক্তি নিয়ােগ করলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন কুড়িটি আদৰ্শ স্কুল ও মেয়েদের জন্য পঁয়ত্রিশটি বিদ্যায়তন। ঘােমটার আড়ালের অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলােতে মেয়েদের বেরিয়ে আসার পথ দেখালেন বিদ্যাসাগর। শিক্ষায় মাতৃভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইংরেজি ও সংস্কৃত শিক্ষাকেও দেশের কল্যাণকর হিসেবে গ্রহণ করলেন। তিনি এই নিগুঢ় সত্যটি উপলব্ধি করেন যে, নতুন রীতিতে দেশে শিক্ষাব্যবস্থা গৃহীত হলে নরনারী কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে ; -আর সেই শিক্ষা গ্রামেগঞ্জেও পৌছে দিতে হবে।

বিদ্যাসাগর ছিলেন অক্ষয় মনুষ্যত্বের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। আত্মশক্তির অচল কর্তৃত্বে তিনি চিরকালের এক উন্নত মহাপুরুষ। শিক্ষাসংস্কার, ব্যক্তির মুক্তি ও উন্নতি সাধন ও নারীর বৈধব্য-মুক্তিকে কেন্দ্র করেই বিদ্যাসাগরের  সাধনা তার গভীর স্বদেশপ্রেমকে উদভাসিত করে তােলে। আধুনিক ইউরােপের মানবতন্ত্রী যুক্তিবাদী আদর্শে তিনি নতুন বাংলা গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেন নারী ও পুরুষের সমানাধিকার ও সার্বিক মুক্তিতে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। সমস্ত প্রকার অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তিনি মানুষকে মনুষ্যত্ববােধের শুভ আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হন। এই উদার উন্নত মানবিকতার জন্যই তার স্বদেশপ্রেমে  কোনাে সংকীর্ণতা স্থান পায়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতার মেলবন্ধন  ঘটেছে সেখানে।

পুণ্যশ্লোক বিদ্যাসাগরের জন্মের ১৮৭ বছর অতিক্রান্ত। তথাপি তিনি আজও আমাদের সামনে উজ্জ্বল আদর্শ নিয়ে দণ্ডায়মান।

যেমন- জনতা, সভা, সমাজ, সংঘ, সমিতি, দল, পাল, গুচ্ছ, ঝাক, সংস্থা, বাহিনী, ইত্যাদি।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top