Class 12 Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি

Join Roy Library Telegram Groups

Hello Viewers Today’s We are going to Share With You, The Complete Bengali Medium Syllabus of AHSEC Board Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) with you. Are you a Student of Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) Which you Can Download Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) for free using direct Download Link Given Below in This Post.

Class 12 Economics Question Answer in Bengali Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990)

Today’s We have Shared in This Post, HS 2nd Year Economics in Bengali Solutions for Free with you. HS 2nd Year Economics in Bengali Notes I Hope, you Liked The information About The Class 12 Economics Question Answer in Bengali PDF. if you liked Assam AHSEC HS 2nd Year Economics in Bengali Questions and Answers Then Please Do Share this Post With your Friends as Well.

প্রশ্ন ৬। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে বিদ্যমান কয়েকটি আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।

উত্তরঃ (১) লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। 

(২) কাগজ কারখানা। 

(৩) কাপড়ের কল। 

(৪) পাটশিল্পের কারখানা। 

(৫) চা শিল্প। 

(৬) কয়লা শিল্প। 

(৭) সিমেন্ট শিল্প।

প্রশ্ন ৭। ইংরেজ ঔপনিবেশিক সরকারে অনুসৃত শিল্পনীতির কয়েকটি দোষত্রুটি সম্বন্ধে অবগত করো।

উত্তরঃ (১) ঔপনিবেশিক সরকার কখনই চাইত না যে, ভারতে কোনো আধুনিক শিল্প গড়ে উঠুক, কারণ তারা জানত যে, ভারতে কোনো আধুনিক শিল্প গড়ে উঠলে ভারতের বাজার ও কাঁচামাল তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।

(২) সাধারণত কোনো দেশে নতুন শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করলে বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত থেকে শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকার বিদেশী মালের ওপর অধিক শুল্ক ধার্য করে। ভারতের অবস্থা ছিল ভিন্ন ধরনের। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ভারতে আমদানিকৃত বিলাতি মালের ওপর থেকে শুল্কের হার কমিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সস্তা বিদেশী মালে ভারতের বাজার ভরে যায় এবং ভারতীয় শিল্পের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

(৩) ব্রিটিশ সরকারের সংরক্ষণ শুল্ক নীতি। রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, ভারতীয় বস্তু রপ্তানীর ওপর 10% শুল্ক আর ব্রিটিশ সৃতিবস্ত্র আমদানির ওপর 2% শুল্ক ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের কারণ।

(8) বিদেশী ঔপনিবেশিক শাসননীতিই ছিল ভারতীয় উদ্যোগের বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। ভারতীয় শিল্পগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে নানা বাধা দেওয়া হত। ভারতীয় স্মৃতি শিল্পকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে তার ওপর ব্যাপক উৎপাদন শুল্ক চাপানো হয় এবং অপরদিকে ম্যাঞ্চেষ্টার থেকে অগিত স্মৃতিবস্ত্রের ওপর নামমাত্র কর ছিল।

প্রশ্ন ৮। ভারতের বস্ত্রশিল্পের বা স্মৃতিশিল্পের ধ্বংসের মূল কারণগুলি সংক্ষেপে বিবৃত করো।

উত্তরঃ ভারতের বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি হল –

(১) সস্তায় বিদেশী পণ্যের আমদানি।

(২) ধনী ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের বিদেশী পণ্যের প্রতি ঝোঁক।

(৩) দেশীয় রাজণ্যবর্গ ও প্রাচীন অভিজাত সম্প্রদায় দেশীয় শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ও খরিদ্দার ছিলেন। এই রাজ্যগুলি অবলুপ্তির পর দেশীয় শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(৪) ব্রিটিশ বণিক ও পুঁজিপতিরা এদেশ থেকে শিল্পপণ্যের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের নীতি।

(৫) ইংল্যাণ্ডে শিল্প বিপ্লব ও শিল্প পণ্যের বিপুল উৎপাদন ও অব্যাহত যোগান।

(৬) সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকারের সংরক্ষণ শিল্পনীতি। ভারতীয় পণ্যের ওপর উঁচু কর ভার চাপিয়ে সরকার কৌশলে জাতীয় শিল্পকে ধ্বংস করে।

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের ফলাফল বর্ণনা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় শিল্পবাণিজ্যের ধ্বংসের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী। শিল্প বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতীয় বাণিজ্যের রূপান্তর ঘটল।

(১) ভারত একটি রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হল। তৈরি করা পণ্যাদির পরিবর্তে ভারত থেকে রপ্তানি হতে লাগল কাঁচা তুলো, কাঁচা রেশম, নীল, চা প্রভৃতি কাঁচা মাল। ভারত পরিণত হল কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে। শিল্প প্রধান দেশ ভারত রূপান্তরিত হল কৃষি প্রধান দেশে।

(২) শিল্প বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে দেশে প্রবল বেকারত্ব দেখা দেয়। বেকার শিল্পী ও কারিগরেরা অন্য পেশায় মন দেয় এবং অধিকাংশই কৃষিকার্য অবলম্বন করে। এর ফলে জমির ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ভারতে কৃষিজীবি ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

(৩) অষ্টাদশ শতকে ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, সুরাট, মসুলিপট্টম, তাঞ্জোর প্রভৃতি ছিল শিল্প সমৃদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর। এগুলি ক্রমে জনবিরল স্থানে পরিণত হয়।

(৪) চিরাচরিত অর্থনীতি ধ্বংসের ফলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ভারতীয় জীবনের অঙ্গে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় অর্থনীতির ওপর রেলপথ পত্তনের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ রেলপথের প্রবর্তন ভারতীয় অর্থনীতিতে যুগান্তর আনে। এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পের বিকাশ ও মানুষের জীবনধারায় সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটে যায়। নানা দিক থেকে কল্যাণকর হলেও রেল ভারতীয় জীবনে নানা বিপর্যয়ও ডেকে আনে। বলা হয় যে, রেলপথ নির্মাণ না করে সরকার যদি জলসেচের দিকে বেশি নজর দিত, তাহলে দুর্ভিক্ষের মোকাবিলা অনেক বেশি সহজতর হত।

নিম্নে রেলব্যবস্থার প্রতিকূল প্রভাব উল্লেখ করা হলঃ

(১) রেল যোগাযোগের ফলে ভারত ইংল্যাণ্ডের কারখানাগুলির কাছে খোলাবাজার এবং কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ইংল্যাগুজাত পণ্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে ভারতীয় কুটির শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(২) রেল যোগাযোগের ফলে দুর্ভিক্ষে ত্রাণ পাঠানো সহজতর হয় ঠিকই কিন্তু রেলপথই পরোক্ষে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির ফলে ভারতের নানা স্থানে খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়।

(৩) মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশী বিদেশী বণিকদের মধ্যে রেল মাশুলের বৈষম্য করা হয়। এর ফলে দেশীয় বণিকদের ক্ষতি হয়। রেলব্যবস্থার ফলে বিদেশী পণ্য ভারতীয় বাজারে বিক্রি হতে থাকে, ভারতীয় শিল্প ধ্বংস হয়, ভারতীয় অর্থ বহুল পরিমাণে বিদেশে চলে যায়।

(৪) বিদেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকায় কৃষক তার জমিতে খাদ্যশস্য অপেক্ষা বাণিজ্যিক পণ্যের চাষে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এর ফলে দেশে খাদ্যশস্যে ঘাটতি দেখা দেয় ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়।

সবশেষে বলা যায় যে, ‘স্ব-নির্ভরতার যে বর্ম ভারতের গ্রামগুলিকে এতদিন রক্ষা করে এসেছিল, ইস্পাতের রেল সেই বর্ম ভেদ করে গ্রাম-জীবনের রক্ত শোষণ করে দেয়।’

প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশ আসার পূর্বে ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে ভারতের অর্থনীতি ছিল প্রধানত গ্রামীণ অর্থনীতি। তখনকার গ্রামগুলি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল।

(২) ব্রিটিশ আসার পূর্বে 95% ভারতীয় জনগণ গ্রামে বসবাস করত। গ্রাম্য অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। গ্রামে কৃষিযোগ্য ভূমির অভাব ছিল না কিন্তু কৃষির বাণিজ্যিক রূপ ছিল না।

(৩) জনসংখ্যার তুলনায় জমির প্রাচুর্যতা থাকায় জমির একাংশ পতিত হিসাবে থেকে যেত। গৃহপালিত গবাদি পশুর চারণভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হত।

(৪) সেই সময় ভারতে গ্রামীণ শিল্প উন্নত ছিল। গ্রামবাসীগণ তাদের প্রয়োজনেই তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, স্বর্ণ শিল্প, চর্ম শিল্প প্রভৃতি বহুবিধ শিল্প গড়ে তুলেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের শিল্পজাত দ্রব্যের খুব চাহিদা ছিল।

প্রশ্ন ১২। মিশ্র অর্থনীতির ধারণা দাও। একটি অনুন্নত দেশের জন্য এটি ফলদায়ক বলে কি তুমি মনে করো ?

উত্তরঃ মিশ্র অর্থনীতি হল এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামো যেখানে সরকারি ক্ষেত্রের সাথে সাথে বেসরকারি ক্ষেত্রের অস্তিত্ব বিরাজ করে এবং কার্যতভাবে সরকারের আংশিক নিয়ন্ত্রণবিধির সাথে সাথে বাজার দেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রয়াসী হয়।

এই ধরনের অর্থব্যবস্থায় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উৎকৃষ্ট মানের বৈশিষ্ট্যগুলি একই সাথে বর্তায়।

অনুন্নত দেশে উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিই এর লক্ষ্য। মিশ্র অর্থনীতিতে পরিকল্পনার সাহায্যে সরকারি উদ্যোগে সৃষ্ট অনুকূল পরিবেশে বেসরকারি উদ্যোগ কাজ করে যা সরকারের সহযোগিতায় অর্থনীতিকে বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে উন্নয়নে সাহায্য করে। সুতরাং অনুন্নত দেশে মিশ্র অর্থনীতি ফলদায়ক বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন ১৩। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হিসাবে ‘আধুনিকীকরণ’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল আধুনিকীকরণ। আধুনিকীকরণ বলতে বুঝায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কাঠামোতে গঠনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনকে। অর্থাৎ একটি দেশের উৎপাদনের ক্ষেত্রগত গঠনের পরিবর্তন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে ও কার্যকলাপের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানগত দিক থেকে নতুনের পরিবর্তন যা একটি ঔপনিবেশিক দেশকে স্বাধীন ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে পারে তাকে আধুনিকীকরণ আখ্যা দেওয়া হয়।

দেশের উৎপাদনে ও রপ্তানিতে যে বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে, কৃৎকৌশলগত পরিবর্তনের ফলে উৎপাদনের মানগত ও উৎকর্ষগত পরিবর্তন ঘটেছে – যা দেশের আধুনিকীকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ের সাক্ষ্য বহন করছে।

প্রশ্ন ১৪। স্বাধীনতার পর অসমে প্রবর্তন করা যে কোন চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করো।

উত্তরঃ (১) অসম জমিদারী অধিগ্রহণ আইন, 1951

(২) আসাম রায়ত স্বত্ব আইন, 1971

(৩) আসাম ভূমি একত্রিকরণ আইন, 1960

(৪) ভূমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ আইন, 1956

প্রশ্ন ১৫। ঔপনিবেশিক ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) আমদামি এবং রপ্তানি উভয়ক্ষেত্রেই বৈদেশিক বাণিজ্য প্রধানত ভারত এবং ইংল্যাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। যেসব ক্ষেত্রে ইংরেজদের স্বার্থ বজায় থাকত সেসব জায়গায় ভারত আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত থাকত। যেমন – মরিসাস ছিল ব্রিটেনের উপনিবেশ। সেখানকার ইংরেজ বেনিয়াদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারতকে সে দেশ থেকে চিনি আমদানিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

(২) ভারতে রপ্তানি দ্রব্য ছিল প্রধানত প্রাথমিক বিভাগজাত। কৃষিপণ্যই ছিল রপ্তানির সবচেয়ে বড় উৎস। পাট, তুলা, চা, তৈলবীজ, কাঁচা চামড়া, পাটজাত ও তুলাজাত দ্রব্য ছিল প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।

(৩) আমদানি দ্রব্য ছিল প্রধানত শিল্পজাত ভোগ্যপণ্য। বস্ত্র, চামড়ার দ্রব্য, কাঁচের জিনিস, ঘড়ি, খেলনা, মোটরগাড়ি, সাইকেল, সেলাইকল, কাগজ, কলম প্রভৃতি আমদানি হত।

(৪) বাণিজ্য খাতে উদ্বৃত্ত থাকলেও হোমচার্জ বাবদ তা মেটানো হত বলে ভারত বাণিজ্য উদ্বৃত্তের সুযোগ গ্রহণ করতে পারত না।

প্রশ্ন ১৬। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি কী ? এই ধরনের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য‌ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলতে এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে দেশের উৎপাদন উপকরণের মালিকানা থাকবে বেসরকারি উদ্যোগপতিদের হাতে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং উৎপাদন উপকরণের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে।

(২) উদ্যোগপতি ও ভোক্তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে।

(৩) বাজার-ব্যবস্থা অর্থাৎ দাম-ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের মৌলিক সমস্যাগুলির‌ সমাধান করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ১৭। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলতে কী বোঝায় ? এই ধরনের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি হল এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণ সরকারের অধীনস্থ এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের উৎপাদন উপকরণের সদ্ব্যবহার করে আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধান করা হয়ে থাকে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) এই অর্থব্যবস্থায় জাতীয় সম্পদের মালিকানা সরকারের হাতে থাকে। ব্যক্তিগত মালিকানার কোনো সুযোগ এই ব্যবস্থায় থাকে না।

(২) সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদ ব্যবহার করা হয়।

(৩) সরকার পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের আয় ও সম্পদ বন্টনের বৈষম্য দূরীকরণে সক্ষম হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। সবুজ বিপ্লব কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে নতুন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। নতুন কার্যক্রমের মূল স্তম্ভ’ তিনটি। 

(১) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার। 

(২) সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। এবং 

(৩) রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধের ব্যবহার। 

এই নতুন কার্যক্রমকে ‘নতুন কৃষি কৌশল’ বলা হয়। এই নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে কৃষি উৎপাদন এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেকে একে বিপ্লবাত্মক আখ্যা দিয়েছেন। উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার এই ঘটনাকেই ‘সবুজ বিপ্লব’ বলা হয়ে থাকে।

সবুজ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার: চিরাচরিত নিম্ন ফলনশীল বীজের পরিবর্তে নতুন উচ্চ ফলনশীল বীজের প্রবর্তন করা হয়েছে। এই ধরনের বীজ কৃষি গবেষণার ফলে উদ্ভাবিত হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বীজের শারীরবৃত্তীয় গুণ হচ্ছে এর মাধ্যমে মাটির মধ্যে সঞ্চিত পুষ্টিসাধক বস্তুগুলি গাছের পাতা বৃদ্ধিতে রূপান্তরিত হয়, ফলে ছোটো ছোটো গাছে খুব বেশি ফলন হয়।

(২) রাসায়নিক সারের অধিক ব্যবহার: উচ্চ ফলনশীল বীজের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার বেশি করে ব্যবহার করতে হয়। প্রথম দিকে দরকার হয় নাইট্রোজেন সার ও পরের দিকে দরকার হয় ফসফরাস সার।

(৩) পর্যাপ্ত সেচের সুবিধা: উচ্চ ফলনশীল বীজের জন্য দরকার পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা। পর্যাপ্ত জলের যোগান না হলে আশানুরূপ ফলন হয় না। তাই ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হয়।

(৪) কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যাপক ব্যবহার: অধিক উৎপাদন ও একাধিক বার ফসল ফলানোর জন্য কৃষিক্ষেত্রে কিছু কিছু যন্ত্রপাতির ব্যবহার অনিবার্য হয়ে পড়ে। যেমন- সেচের জন্য চাই টিউবওয়েল ও পাম্পসেট। ঔষধ ছড়ানোর জন্য চাই স্প্রেয়ার। এছাড়া ট্রাক্টর, টিলার, থ্রেসার প্রভৃতিও প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ২। সবুজ বিপ্লবের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের ফলাফল নিচে বর্ণনা করা হল –

(১) উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে: এই প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে মোট উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে। 1966-67 সালে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় 75 মিলিয়ন টন, 2016-17 সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় 275 মিলিয়ন টনে। দেশ এখন খাদ্যশস্যে স্বনির্ভর হতে পেরেছে। বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করা বন্ধ হয়েছে। তবে নতুন প্রযুক্তির সুফল ধান ও গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে যতটা লক্ষ করা গেছে, ডাল, তৈলবীজ, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি শস্যের ক্ষেত্রে ততটা লক্ষ করা যায়নি। উৎপাদন কেন আশানুরূপ বাড়েনি তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত বীজ ব্যবহার করা হয় নি।

(২) কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব অনিশ্চিত: নতুন প্রযুক্তির ফলে কর্মসংস্থান বেড়েছে না কমেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। একদিকে, সারা বছরে একাধিক বার ফসল ফলানোর জন্য শ্রমিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বীজের ক্ষেত্রে আগাছাগুলি একাধিক বার নিড়ানি দিতে হয়। কারণ আগাছা সারা শুষে নেয়। একাধিক বার নিড়ানি দেওয়ার জন্য বেশি শ্রমিক দরকার। আবার অন্যদিকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে কর্মসংস্থান কিছুটা কমেও যাচ্ছে।

(৩) বড়ো চাষ বেশি সুফল ভোগ করেছেঃ  নতুন প্রযুক্তির সুফল বড়ো চাষি বেশি করে ভোগ করেছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যয়সাধ্য বলে ছোটো চাষি নতুন প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছে না। এর ফলে নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তিত হওয়ার গ্রামাঞ্চলের আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, ছোটো চাষি এবং ভূমিহীন কৃষক নতুন প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন প্রযুক্তি সমানভাবে প্রচলিত না হওয়ায় দেশের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(৪) আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধিঃ সবুজ বিপ্লবের ফলে রাজ্যগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি গম উৎপাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয় কারণ নতুন প্রযুক্তি প্রথমে গমের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী হয়।

(৫) নতুন প্রযুক্তি ও দারিদ্র্য: নতুন প্রযুক্তি একদিকে শ্রমের চাহিদা বাড়ায় অন্যদিকে খাদ্যশস্যের দাম কমায়। যেহেতু দরিদ্রদের প্রধান ভোগ্যদ্রব্য হল খাদ্যশস্য আর যেহেতু দরিদ্ররা শ্রমশক্তি বিক্রি করে আয় করে। তাই নতুন প্রযুক্তি দারিদ্র্য কমায়, দরিদ্রদের অনুকূল হয়।

(৬) কৃষি ও শিল্পের সংযোগ: সবুজ বিপ্লবের প্রভাব ভারতে কৃষির সঙ্গে শিল্পের সংযোগ সুদৃঢ় হয়। অর্থাৎ কৃষির উন্নয়নের সাথে সাথে কৃষির উপকরণ হিসাবে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে তা শিল্পায়নের সহায়ক হয়ে ওঠে। ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে সংযোগ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য।

সর্বশেষ বলা যায়, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির দরুণ – এদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে অনেকটাই সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবুজ বিপ্লবের প্রভাব অপরিহার্য।

প্রশ্ন ৩। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের মূলভিত্তি হল কৃষি। কৃষি ভারতীয় সভ্যতার ধারক। কৃষি ভারতের মেরুদণ্ড। 

ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব কতখানি তা আলোচনায় আলোকপাত করা হল –

(১) জীবনধারণের মূল উৎস হিসাবে কৃষিঃ ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষিকার্য হল এদেশের জনগণের মূল কর্মসংস্থান। বর্তমান ভারতে মোট শ্রমশক্তির প্রায় 58% কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত। প্রতি দশজনের মধ্যে প্রায় ছয়জনই জীবিকার সাথে সাথে কৃষির ভূমিকা অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় খানিকটা কমলেও তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

(২) ভারতের জাতীয় আয়ে কৃষির ভূমিকা: ভারতের জাতীয় আয়ের একটি বড়ো অংশ কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র থেকে আসে। ভারতের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়কালে দেশের জাতীয় আয়ের প্রায় 57% কৃষি থেকেই আসে। 2017-18 এর ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে বলা যায়, দেশের জাতীয় আয়ের 17% কৃষিক্ষেত্র থেকে এসেছে। যেখানে আমেরিকা ও ইংল্যাণ্ডের মতো উন্নত দেশগুলিতে কৃষির ভূমিকা জাতীয় আয়ের 3-4% । এই হিসেবে বিচার করলে দেখা যায়, ভারতের অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রের গুরুত্ব যথেষ্ট বেশি।

(৩) শিল্প উৎপাদনে কৃষির ভূমিকা: কৃষির উন্নয়ন শিল্পের অগ্রগতি ঘটাতে সাহায্য করে। এদেশের অধিকাংশ শিল্প কৃষিভিত্তিক। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে – পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, বনস্পতি শিল্প ও বাগিচা শিল্পগুলি মূলত কৃষির কাঁচামালের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল এবং দেশের অন্যান্য শিল্পগুলিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্যও কৃষির উন্নতি প্রয়োজন। কৃষিক্ষেত্রের আয় বৃদ্ধি পেলে তবেই কৃষিক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত আয় শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তার ফলে শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

(৪) রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষির ভূমিকাঃ আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে চা, পাট জাতীয় দ্রব্য, বস্ত্র ইত্যাদি সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করেছে। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেকেই কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি থেকে উদ্ভূত হয়। রপ্তানি বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হলে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির সমস্যা এড়াতে হলে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা একান্তই প্রয়োজন।

(৫) স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা: কৃষিক্ষেত্রের উন্মুক্ত প্রাঙ্গন ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দেশের পরিবেশকে অনেকটা দূষণমুক্ত রাখতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তু সংস্থানের ভারসাম্য ও দূষণমুক্ত পরিবেশ একান্ত অপরিহার্য এবং যার উৎস হল কৃষিক্ষেত্র।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ডই হল কৃষি এবং কৃষির উন্নতি ছাড়া ভারতের অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ কৃষির উৎপাদনশীলতা কম হওয়ার কারণগুলোকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি- 

(১) সাধারণ কারণ। 

(২) প্রতিষ্ঠানগত কারণ। এবং 

(৩) প্রযুক্তিগত কারণ। 

এই তিন ধরনের কারণকে আমরা একে একে ব্যাখ্যা করব।

(১) সাধারণ কারণ: প্রথমত, কৃষিতে জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কৃষিজমির যোগান স্থির। ফলে মাথাপিছু কর্ষিত জমিত যোগান হ্রাস পাচ্ছে। জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, অ-কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগের সুযোগ সেই হারে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে বাড়তি জনসংখ্যা কৃষিতেই ভিড় করছে। এর ফলে কৃষিতে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কৃষিতে জোতের খণ্ডীকরণ ও অসংবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর ফলেও জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, ভারতের কৃষকদের গুণগত মান খুবই নিম্ন। অধিকাংশ কৃষকই নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন। তার ফলে, তারা নতুন ধরনের উৎপাদন কৌশল প্রয়োগ করতে পারে না। এজন্যও কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা কম থাকে।

(২) প্রতিষ্ঠানগত কারণ: প্রথমত, ভারতের জোতের আয়তন খুবই ক্ষুদ্র। জোতের আয়তন খুব ছোটো হওয়ার জন্য উন্নত প্রথায় যন্ত্রের সাহায্যে নিবিড় চাষ করা সম্ভব হয় না।

দ্বিতীয়ত, ভারতে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, যারা জমির মালিক তারা নিজেরা চাষ করে না। জমির মালিকরা প্রজাদের কাছে জমি ইজারা বিল করে থাকে। এই প্রজাদের কাছ থেকে যে কোনো সময়ে জমি কেড়ে নেওয়া হতে পারে। প্রজাদের চাষ করার অধিকারের কোনো স্থায়িত্ব নেই। ফলে তারা অধিক ফসল ফলাতে উৎসাহী হয় না।

(৩) প্রযুক্তিগত কারণ: প্রথমত, ভারতে সেকেলে ধরনের উৎপাদন প্রযুক্তি গ্রহণ করা হচ্ছে, পশ্চিমি দেশগুলো এবং জাপান কৃষিক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে কৃষির উৎপাদনশীলতা যথেষ্ট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ভারতের কৃষিতে এখনও চিরাচরিত উৎপাদন কৌশলই ব্যবহৃত হচ্ছে। বলদ এবং লাঙলের সাহায্যে চাষ এখনও অধিকাংশ কৃষকদের কাছে প্রধান প্রযুক্তি।

দ্বিতীয়ত, ভারতের কৃষিকার্য প্রধানত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপরেই নির্ভরশীল। কোনো বছর অতিবৃষ্টি এবং কোনো বছর অনাবৃষ্টির জন্য কৃষির উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয়। জলসেচ ব্যবস্থার উপযুক্ত প্রসার না ঘটার জন্যও ভারতের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা এত কম।

প্রশ্ন ৫। ভারতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রথমত, কৃষির উপর নির্ভরশীল জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য অ-কৃষিক্ষেত্রে বিকল্প কর্মনিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কৃষিতে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির বিলোপ এবং প্রজাস্বত্বের নিরাপত্তা ও খাজনা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। তাছাড়া, জমির মালিকানার উপর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত জমি বন্টন করাও ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।

তৃতীয়ত, সেচ ব্যবস্থার প্রসারের জন্য একদিকে যেমন বড়ো এবং মাঝারি সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে ছোটো সেচ প্রকল্পের প্রসার ঘটানো হচ্ছে।

চতুর্থত, ঋণ ব্যবস্থার উন্নতি এবং সম্প্রসারণ ঘটানোর জন্য সমবায় সমিতির প্রসার ঘটানো হচ্ছে। আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়া এবং সরকারি ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে অধিক সংখ্যক শাখা বিস্তার করছে।

পঞ্চমত, কৃষিপণ্যের বিপণ্ন ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বোপরি, উন্নত প্রযুক্তি যাতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ প্রভৃতির যোগান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ৬। ভূমি সংস্কার কাকে বলে? ভূমি সংস্কার কার্যসূচির উদ্দেশ্য কী ? ভারতের ভূমি সংস্কার কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ দেশের মোট কৃষির উৎপাদন তথা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং প্রজাস্বত্বের সংস্কারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সাম্যের নীতি বজার রাখায় দৃষ্টিতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকায় কৃষি কাঠামোতে যে নৈতিক পরিবর্তন আনা হয়েছে তা হল ভূমি সংস্কার।

ভূমি সংস্কার নামক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণের পশ্চাতে যে উদ্দেশ্যগুলি নিহিত ছিল, সেগুলি হল ঃ-

(১) একটি প্রগতিশীল কৃষিকাঠামো গড়ে তুলে কৃষির উৎপাদনশীলতা তথা মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

(২) সংস্কারমূলক কর্মসূচি রূপায়ণের মাধ্যমে প্রজাস্বত্বের সংস্কারের সাথে সাথে জমির ঊর্ধসীমা নির্ধারণ ও খাজনার পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষিতে ন্যায়বিচার ও ন্যায়পরায়ণতা অক্ষুণ্ণ রাখা।

(৩) খাদ্যশস্যের উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে জনসাধারণের সমষ্টিগত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে দেশে মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

(৪) খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যশস্য ও কাঁচামালের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করা।

এই উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমি সংস্কারমূলক যে কর্মসূচিগুলি গৃহীত হয় সেগুলি হল –

(১) মধ্যস্বত্বভোগীদের বিলোপসাধন।

(২) জমির ঊর্ধসীমা নির্ধারণ ও উদ্বৃত্ত জমির বন্টন।

(৩) প্রজাস্বত্বের সংস্করণ – যেখানে প্রজাস্বত্বের সংস্কারের জন্য তিনটি। বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 

যথা 

(ক) খাজনার পরিমাণ নির্ধারণ। 

(খ) প্রজাস্বত্বের নিরাপত্তা রক্ষাকরণ। এবং 

(গ) প্রজাদের হাতে পাট্টা চুলে দিয়ে প্রজাদের মালিকানা প্রদান।

(৪) সমবায় কৃষিপ্রথার প্রবর্তন।

(৫) জোতের সংঘবদ্ধকরণ।

প্রশ্ন ৭। ভারতে ভূমি সংস্কার কর্মসূচির ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতে ভূমি সংস্কার কার্যসূচির অঙ্গ হিসাবে নানাবিধ আইন প্রণয়ন করা হলেও ভূমি সংস্কার কর্মসূচি সফল হতে পারে নি। 

তার কারণগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ

প্রথমত, ভারতে ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে অনেক সময় লাগে। রাজ্য বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পাশ হওয়ার পর এটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য। অনেক সময়েই এই সম্মতি পেতে দেরি হয়।

দ্বিতীয়ত, ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত আইনগুলি বলবৎ করার ভার দেওয়া হয়েছে যে সমস্ত আমলাদের হাতে তাদের অনেকেরই স্বার্থ আছে পুরানো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার। সেজন্য আইনগুলি কঠোরভাবে কার্যে রূপায়িত করা সম্ভব হয় নি। আমলাতন্ত্রের সহানুভূতিহীন এবং আগ্রহহীন মনোভাব ভূমি সংস্কার কর্মসূচির সার্থক রূপায়ণের পথে অন্যতম বাধা।

তৃতীয়ত, অনেক সময় আইনের মধ্যে ফাঁক থেকে যায়। এই ফাঁকগুলিকে সদ্ব্যবহার করে অনেক ক্ষেত্রেই আইনকে ফাঁকি দেওয়া হয়। যেমন জোতের ঊর্ধসীমা নির্ধারণকারী আইন প্রণয়ন হতে হতে বাড়তি জমি বেনামে হস্তান্তর করা হয়ে যায়।

চতুর্থত, আইন প্রণয়ন করলেও সেই আইনকে কার্যে রূপায়িত করার মতো সদিচ্ছা অনেক সময়েই শাসক দলের থাকে না।

পঞ্চমত, জমি সংক্রান্ত সঠিক তথ্য এবং দলিলপত্রের অভাবের জন্য ভূমি সংস্কার কার্যসূচি সঠিকভাবে রূপায়ণ করা সম্ভব হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, কোনো জমিতে কে প্রজা বা কে ভাগচাষী তার রেকর্ড অনেক সময়েই লিখিতভাবে থাকে না। উপযুক্ত নথিপত্রের অভাবে অনেক সময়েই বর্গাদারদের স্বার্থরক্ষা করা হয় না।

ষষ্ঠত, গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র চাষি ও ভূমিহীন কৃষকদের কোনো জোরালো সংগঠন নেই। তারা দরিদ্র নিরক্ষর এবং সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। ফলে তারা সরকারের উপর ভূমি সংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলি রূপায়িত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে না।

প্রশ্ন ৮। ভারতের কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

অথবা, 

ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মোট জাতীয় আয়ের একটি বড়ো অংশ কৃষিক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হয়। আবার, দেশের জনসংখ্যারও একটি বড়ো অংশ কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত রয়েছে। ভারতের অর্থনীতির উত্থান পতন কৃষির উত্থানপতনের সঙ্গেই জড়িত। ভারতের কৃষিক্ষেত্রের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে। এগুলো ভারতীয় কৃষির সমস্যাও বটে।

প্রথমত, ভারতের কৃষিব্যবস্থা সনাতন ধরনের। প্রাচীন যুগের সেই লাঙল এবং বলদ দিয়ে এখনও চাষ চলে। সম্প্রতি সবুজ বিপ্লবের প্রসারের ফলে কোনো কোনো অঞ্চলের অবস্থার কিছুটা উন্নত হলেও এখনও অধিকাংশ রাজ্যেই কৃষিপদ্ধতি সেকেলে ধরনের।

দ্বিতীয়ত, ভারতের কৃষি উৎপাদন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। দেশের মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় 70% জলসেচের জন্য বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। কাজেই অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির ফলে অনেক সময়েই কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়।

তৃতীয়ত, ভারতে কৃষি একটি জীবনধারনের উপায় মাত্র। এটিকে লাভজনক বৃত্তি বা পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। অধিকাংশ কৃষক পরিবারই নিজেদের ভরণপোষণের জন্য কৃষিকার্যে অংশগ্রহণ করে। ফলে বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত সৃষ্টির কোনো তাগিদ এখানে লক্ষ করা যায় না।

চতুর্থত, ভারতীয় কৃষির অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল এখানে কৃষির উৎপাদনশীলতা খুবই কম। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের একর পিছু উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। জাপানে হেক্টর পিছু ধান উৎপাদন যখন 6250 কেজি, তখন ভারতে হেক্টর পিছু ধান উৎপাদন মাত্র 2000 কেজি।

পঞ্চমত, ভারতের কৃষির অপর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল জোতের গড় আয়তনের ক্ষুদ্রতা। ভারতের জোতগুলোর আয়তন খুবই ছোটো। গ্রামীণ পরিবারের 53% সাধারণতঃ এক একর থেকে 2.46 একর জমির মালিক। তাছাড়া, জমিগুলো যে শুধু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত তাই নয়; জমিগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে।

ষষ্ঠত, ভারতের কৃষি ব্যবস্থা অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল ব্যাপক প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের উপস্থিতি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবের জন্য কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্র থেকে কিছু লোককে সরিয়ে

নিয়ে গেলেও কৃষিক্ষেত্রের মোট উৎপাদন হ্রাস পাবে না।

ভারতীয় কৃষির এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভারতীয় কৃষির সমস্যাও নির্দেশ করে।

প্রশ্ন ৯। ‘ভূমি সংস্কার ও সবুজ বিপ্লব’ পরস্পর-বিরোধী বলে তুমি মনে কর কি ? তোমার উত্তরের সমর্থনে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ ভারতের কৃষির উৎপাদনশীলতা তথা মোট উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশের ভূমি সংস্কারমূলক কর্মসূচি এবং কৃষি উৎপাদনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন কমবেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, খুব স্বাভাবিকভাবে বলা যায় এই দুই ধরনের পরিবর্তন একে উপরের উপর কমবেশি বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারণ, তারা একে অপরের স্বভাব বিরোধী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভূমি সংস্কারমূলক কর্মসূচি দেশের সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণের প্রয়াস। পক্ষান্তরে সবুজ বিপ্লব সময়ের সাপেক্ষে কৃষি সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের সাথে সাথে ও কৃৎ-কৌশলগত উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকট বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়াস।

ভূমি সংস্কারমূলক কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি মূল‌ উদ্দেশ্য অনুসৃত হয় – দেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা তথা মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং দ্বিতীয়টি হল কৃষিক্ষেত্রে একটি সাম্যের নীতি বজায় রাখা, পক্ষান্তরে, সবুজ বিপ্লবের ফলে মূলত কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে, সেখানে সাম্যের নীতি ঠাঁই পায় না। কারণ এতে, শুধুমাত্র ধনী কৃষক এমনকি সমৃদ্ধশালী রাজ্যগুলি কৃষি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়। আর সেজন্যই, কৃষিতে উৎপাদনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য তথা রাজ্যভিত্তিক বৈষম্য দারুণভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।

ভূমি সংস্কারমূলক কর্মসুচি রূপায়ণে যে মূল কর্মসূচিগুলি গৃহীত হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হল প্রজাস্বত্বের সংস্কার অর্থাৎ প্রজাদের জমির মালিকানা প্রদান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গরিব চাষিদের হাতে জমির মালিকানা থাকলে তারা আধুনিক যুগের ব্যয় বহুল কৃষিকার্য সম্পন্ন করে কৃষি উৎপাদনে কখনোই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে না।

পরিশেষে বলা যায়, ভূমি সংস্কারের কর্মসূচি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ও কৃষি সংস্কৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো কিন্তু ভূমিসংস্কারের প্রয়োগ দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক নানা কারণে যথোপযুক্তভাবে হয় নি, তা অকপটে বলা যায়।

প্রশ্ন ১০। ভূমি সংস্কার বলতে কী বোঝ ? ভারতে ভূমি সংস্কাররে গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভূমি সংস্কার বলতে বোঝায় কৃষির উন্নয়নের পথে প্রতিষ্ঠানগত বাধাগুলি অপসারণ করা।

ভারতের অর্থনীতিতে ভূমি সংস্কারের গুরুত্ব নিচে বর্ণনা করা হল –

প্রথমত, ভারতের কৃষির প্রধান সমস্যা স্বল্প উৎপাদনশীলতা। স্বল্প উৎপাদনশীলতার একটি প্রধান কারণ হল – প্রতিষ্ঠানগত। প্রতিষ্ঠানগত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ অন-অর্থনৈতিক জোতের প্রাধান্য এবং অনুপযুক্ত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা। ভারতের জোতের আয়তন খুবই ছোটো। তার ফলে উন্নত প্রথায় যন্ত্রের সাহায্যে চাষ করা সম্ভব হয় না। ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয় না। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে জোতের খণ্ডীকরণ এবং অসংবদ্ধতা দূর করে বৃহদায়তন সমবায় চাষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, ভারতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, জমির মালিক তারা নিজেরা জমির চাষ করে না। জমির মালিকরা প্রজাদের কাছে জমি ইজারা বিলি করে থাকে। প্রজাদের চাষ করার অধিকারের কোনো ফলে তারা অধিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করে অধিক ফসল ফলাতে আগ্রহী হয় না। এজন্য জমির উৎপাদনশীলতা কম। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ভূমি সংস্কার দরকার স্থায়িত্ব নেই।

তৃতীয়ত, ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীর বিলোপসাধন করে কৃষি অর্থনীতিকে পরিকল্পিত ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আনা হয়। এর মাধ্যমে দেশের সর্বত্র একই ধরনের ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এক অভিন্ন কৃষিনীতি অনুসরণ ও রূপায়ণ করা সম্ভব হয়।

চতুর্থত, গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় যে বৈষম্য বর্তমান তা দূর করে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রকৃত চাষিদের জমির মালিকানা প্রদান করা, প্রজা ও ভাগচাষীদের নিরাপত্তা বিধান করা ও খাজনার যার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এগুলি ভূমি- সংস্কার কর্মসূচির অঙ্গ।

পঞ্চমত, যথোপযুক্ত ভূমি সংস্কারের দ্বারা ব্যয় না বাড়িয়েও কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে প্রকৃত চাষিকে যদি জমি দেওয়া হয় তবে চাষি সর্বশক্তি দিয়ে কৃষির উন্নয়নে মন দেবে। এর ফলে উৎপাদন বাড়বে।

সর্বোপরি, ভূমি-সংস্কারের ফলাফল শুধু গ্রামীণ অর্থনীতির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। তার বাইরে অর্থনীতির বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রেও এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে, যেখানে কৃষিই প্রধান জীবিকা, ভূমি-সংস্কারের গুরুত্ব আরও বেশি।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top