Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ Question Answer in Bengali is a textbook prescribed by the AHSEC Board Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ Solutions in Bengali. The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ Notes in Bengali are free to use and easily accessible.
Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ Question Answer in Bengali. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 2nd year History in Bengali, Class 12 History Chapter 12 বিদ্রোহ ও রাজ Question answer in Bengali gives you a better knowledge of all the chapters. Assam AHSEC Board HS 2nd Year History in Bengali , Class 12 History Answers The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam AHSEC Board Class 12 History in Bengali Medium Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. Class XII History in Bengali Solutions Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 History in Bengali Medium Textbooks. HS 2nd Year History in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
বিদ্রোহ ও রাজ
তৃতীয় খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম কখন আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ২। কোন্ ঘটনাকে ভারতে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করা হয়?
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহকে।
প্রশ্ন ৩। সিপাহী বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৪। ভারতের শেষ মোঘল সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।
প্রশ্ন ৫। ভারতে কখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শেষ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ কোথায় ঘটেছিল?
উত্তরঃ ব্যারাকপুরে।
প্রশ্ন ৭। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে ঝালীর রানি কে ছিলেন?
উত্তরঃ রানি লক্ষ্মীবাঈ।
প্রশ্ন ৮। সিপাহী বিদ্রোহে প্রথম শহীদ কে?
উত্তরঃ মঙ্গল পাণ্ডে।
প্রশ্ন ৯। সিপাহী বিদ্রোহকে কে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে আখ্যায়িত করেন?
উত্তরঃ ভি ডি সাভারকার।
প্রশ্ন ১০। কানপুরে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ নানাসাহেব।
প্রশ্ন ১১। দিল্লিতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।
প্রশ্ন ১২। ঝাঙ্গীতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ রানি লক্ষ্মীবাঈ।
প্রশ্ন ১৩। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহীগণ কাকে হিন্দুস্থানের সম্রাট বলে ঘোষণা করেছিলেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।
প্রশ্ন ১৪। ভারতের শেষ মোগল সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।
প্রশ্ন ১৫। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ প্রথম কোথায় আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ মীরাটে।
প্রশ্ন ১৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর-জেনারেল কে ছিলেন?
উত্তরঃ লর্ড ক্যানিং।
প্রশ্ন ১৭। ভারতে কখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে?
উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ১৮। মহারানির ঘোষণাপত্র কখন জারি করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ১৯। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতবর্ষের কোন দুইটি অঞ্চলকে বেশি প্রভাবান্বিত করেছিল?
উত্তরঃ উত্তরপ্রদেশ ও বিহার।
প্রশ্ন ২০। কে, কখন অযোধ্যাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন?
উত্তরঃ লর্ড ডালহৌসী ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
প্রশ্ন ২১। মৌলবী আহমেদ-উল্লা শাহ কে ছিলেন? ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে তাঁর অবদান কি ছিল?
উত্তরঃ মৌলবী আহমেদ-উল্লা দক্ষিণ ভারতের ১৮৫৭ সনের একমাত্র পথনির্দেশক ছিলেন।
তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং হাজার হাজার লোককে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
S.L. No. | সূচীপত্র |
প্রথম খণ্ড | |
অধ্যায় -1 | ইট, মনি ও হাড় |
অধ্যায় -2 | রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ |
অধ্যায় -3 | জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) |
অধ্যায় -4 | দার্শনিক প্রত্যয় ও স্থাপত্য (সাংস্কৃতিক অগ্রগতি) |
অধ্যায় -5 | প্রাগৈতিহাসিক যুগ — ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ |
দ্বিতীয় খণ্ড | |
অধ্যায় -6 | পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক) |
অধ্যায় -7 | ভক্তি ও সুফী পরম্পরা |
অধ্যায় -8 | একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর |
অধ্যায় -9 | কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র |
অধ্যায় -10 | কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র |
তৃতীয় খণ্ড | |
অধ্যায় -11 | উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল |
অধ্যায় -12 | বিদ্রোহ ও রাজ (১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ) |
অধ্যায় -13 | উপনিবেশিক নগর |
অধ্যায় -14 | মহাত্মা গান্ধী ও জাতীয় আন্দোলন |
অধ্যায় -15 | দেশ বিভাজনের উপলব্ধি |
অধ্যায় -16 | সংবিধান প্রণয়ন |
অধ্যায় -17 | মানচিত্র অঙ্কনকার্য |
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সম্পদ শোষণ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিল। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ শাসকগণ ভারতের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ইংল্যান্ডে চালান দিত। একেই সম্পদ শোষণ বলে।
প্রশ্ন ২। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর অসন্তোষের দুটি প্রধান কারণ লেখ।
উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর অসন্তোষের প্রধান কারণ দুটি নিম্নরূপ:
(ক) ব্রিটিশ শাসকবর্গ ভারতবাসীকে নানা উপায়ে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে চেষ্টা করে।
(খ) সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণেও ভারতবাসীর মনে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়।
প্রশ্ন ৩। ভারতে প্রারম্ভিক ব্রিটিশবিরোধী যে-কোন দুটি আন্দোলনের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভারতে প্রারম্ভিক ব্রিটিশবিরোধী দুটি আন্দোলন নিম্নরূপ:
(ক) ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের বাংলা বিদ্রোহ।
(খ) ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দের উড়িষ্যা বিদ্রোহ।
প্রশ্ন ৪। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের দুটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) ডালহৌসীর স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ।
(খ) এন্ফিল্ড রাইফেল-এর প্রবর্তন।
প্রশ্ন ৫। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের যে-কোন দুইজন নেতার নাম লেখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের দুইজন নেতার নাম-
(ক) বাহাদুর শাহ। ও
(খ) নানা সাহেব।
প্রশ্ন ৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) বিদ্রোহীগণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত এবং ঐক্যহীন ছিল।
(খ) বিদ্রোহীদের কোন নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ছিল না।
প্রশ্ন ৭। সিপাহী বিদ্রোহের যে-কোন দুটি ফলাফল লেখ।
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহের দুটি ফলাফল নিম্নরূপ:
(ক) সিপাহী বিদ্রোহের ফলে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং সরাসরি ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
(খ) সাধারণ ভারতবাসী রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৮। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ নিম্নোক্ত স্থানগুলিতে কার কার নেতৃত্বে পরিকল্পিত হয়েছিল?
কানপুর, ঝালী, বিহার ও লক্ষ্ণৌ
উত্তরঃ কানপুর — নানা সাহেব।
ঝাঙ্গী — রানি লক্ষ্মীবাঈ।
বিহার — কোঁয়র সিং।
লক্ষ্ণৌ (অযোধ্যা) — ব্রিজিস কাদির।
প্রশ্ন ৯। কোন্ কোন্ শ্রেণীর লোক ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ প্রচার করেছিলেন?
উত্তরঃ নিম্নোক্ত শ্রেণীর লোক ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন:
(ক) সাধারণ পুরুষ ও মহিলা।
(খ) ধর্মীয় লোক।
(গ) স্বঘোষিত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
(ঘ) স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রশ্ন ১০। স্বত্ববিলোপ নীতি’ কে প্রবর্তন করেছিল? এই নীতিতে ব্রিটিশ রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা একটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখ।
উত্তরঃ লর্ড ডালহৌসী স্বত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করেন। এই নীতির দ্বারা প্রথম সাতারা ব্রিটিশ রাজ্যভুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন ১১। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে অসমে প্রধান নেতা কে ছিলেন? এই প্রধান নেতার সঙ্গে ফাঁসী দেওয়া অন্য বিদ্রোহী নেতার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে অসমের প্রধান নেতা ছিলেন মণিরাম দেওয়ান। পিয়ালী ফুকনকে তাঁর সঙ্গে ফাঁসী দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ১২। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহীরা কাকে ‘হিন্দুস্থানের সম্রাট’ হিসাবে মনোনীত করেছিলেন? তিনি শেষ জীবন কোথায় অতিবাহিত করেছিলেন?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে।
শেষ জীবন তিনি রেঙ্গুনে অতিবাহিত করেন।
প্রশ্ন ১৩। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের যে-কোন দুটি সামাজিক কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের দুটি সামাজিক কারণ নিম্নরূপ:
(ক) রক্ষণশীল ভারতীয় ব্রিটিশের সামাজিক সংস্কারে অসন্তুষ্ট ছিল।
(খ) পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাবে একশ্রেণীর ভারতবাসী; ইংরাজদের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন ছিল।
প্রশ্ন ১৪। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের দুটি রাজনৈতিক কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের দুটি রাজনৈতিক কারণ নিম্নরূপ:
(ক) ব্রিটিশগণ দত্তক প্রথার স্বীকৃতি দেয় নি। তারা অযোধ্যা সাঁতারা, ঝালী প্রভৃতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কর।
(খ) ব্রিটিশ সরকার অধিকৃত অঞ্চলে তাদের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এর ফলে ভারতবাসীর মনে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী অসন্তোষ দানা বাঁধে।
প্রশ্ন ১৫। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় দুইটি ধর্মীয় কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের দুটি ধর্মীয় কারণ নিম্নরূপ:
(ক) ভারতবাসী উপলব্ধি করতে পারে যে ইংরেজগণ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি ধ্বংস করছে।
(খ) ভারতবাসী খ্রিস্টান মিশনারীদের কার্যকলাপ পছন্দ করত না। সুতরাং তারা ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্তি চেয়েছিল।
প্রশ্ন ১৬। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের তৎকালীন কারণ কি ছিল?
উত্তরঃ সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘এনফিল্ড’ রাইফেল নামক একপ্রকার বন্দুকের প্রবর্তনই সিপাহী বিদ্রোহের তৎকালীন কারণ। সেনাবাহিনীর মধ্যে যখন গুজব রটল যে, হিন্দু ও মুসলমানদের জাতি নষ্ট করবার জন্য এই বন্দুকের টোটাতে গোরু ও শুকরের চর্বি মিশ্রিত করা হয়েছে, তখন অসন্তোষের বহ্নি প্রজ্বলিত হয়ে বিদ্রোহে পরিণত হল।
প্রশ্ন ১৭। দিল্লিতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কে পরিচালনা করেছিলেন? এই বিদ্রোহে দিল্লির উপর বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণের প্রভাব কি ছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে দিল্লিতে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন।
বিদ্রোহী কর্তৃক দিল্লি নিয়ন্ত্রণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র গাঙ্গেয় উপত্যকা ও পশ্চিম দিল্লির সেনা ছাউনিতে বিদ্রোহ তীব্র আকার ধারণ করে।
প্রশ্ন ১৮। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কখন ও কোথায় সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল ? বিদ্রোহ কে শুরু করেছিলেন।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ১০ই মে শুরু হয়েছিল। মীরাটের সেনা ছাউনিতে সিপাহীরা আরম্ভ করেছিলেন। বিদ্রোহীরা দেশীয় পদাতিক সেনা ছিল।
প্রশ্ন ১৯। বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের বিদ্রোহ করার দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের বিদ্রোহের দুটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) উপনিবেশিক সরকার সাঁওতালদের জমির উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেন।
(খ) সাঁওতালগণ তাদের নিজের মতানুসারে একটি আদর্শ বিশ্ব তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২০। বশ্যতামূলক মিত্রতা নীতির দুটি শর্ত উল্লেখ কর।
উত্তরঃ বশ্যতামূলক মিত্রতা নীতির দুটি শর্ত নিম্নরূপ:
(ক) ইংরেজ সরকার দেশীয় রাজাদের আভ্যন্তরীণ ও বাহিরের বিপদ থেকে সুরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
(খ) মিত্র রাজাদের রাজ্যে একটি ইংরেজ সেনা ছাউনি রাখা হবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর অসন্তোষের প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আধিপত্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ সরকার শোষণ ও দমন নীতির মাধ্যমে শাসনকার্য পরিকল্পনা করতে থাকে। ফলে ভারতবাসীর মনে ক্রমশ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। এর প্রধান প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ইংরেজ শাসকবর্গ ভারতবাসীকে নানা উপায়ে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে চেষ্টা করে। তাঁরা ভারতবাসীকে রাজনৈতিক অধিকার হতে বঞ্চিত করে। ব্রিটিশ শাসকবর্গের কার্যকলাপ জনমনে দারুণ আশঙ্কা ও উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
(খ) সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণেও ভারতবাসীর মনে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল। বিভিন্ন প্রকার সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন প্রভৃতির ফলে জনসাধারণের ধারণা হয়েছিল যে ইংরেজগণ তাদের জাতি ও ধর্ম নষ্ট করবার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।
(গ) ইংরেজ সরকারের নূতন অর্থব্যবস্থা বিশেষত কৃষিনীতি ও শিল্পনীতির ফলে পূর্বতন অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। ফলে ভারতবাসীব, আর্থিক দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। দেশীয় রাজ্যগুলি ইংরেজরা অধিকার করায়, তাদের কর্মচারীগণ বেকার হয়ে পড়ে। এইভাবে ভারতবাসীর আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। এই সকল নানা কারণে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর অসন্তোষ, ঘৃণা ও বিদ্বেষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রশ্ন ২। ভারতে প্রারম্ভিক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ ইংরেজদের দমন ও শোষণমূলক নীতির ফলে ভারতবাসীর মনে সন্তোষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত বাংলাদেশে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসীর অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইংরেজদের শোষণমূলক রাজস্বনীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, দেশীয় বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, দেশীয় রীতি-নীতি বিরোধী কার্যকলাপ বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সৃষ্টি করেছিল। মেদিনীপুর হতে শুরু করে দক্ষিণ বিহার, ছোটনাগপুর, উড়িষ্যা প্রভৃতি অঞ্চলে চৌয়াড়দের বিদ্রোহ পুনঃপুনঃ দেখা দিয়েছিল। মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল, সিংভূমের হোজ, ছোটনাগপুরের কোল ও মুণ্ডা, মানভূমের ভূমিজ, রাজমহলের সাঁওতাল বিদ্রোহ, আসামের খাসিয়া, গারো, নাগা ও উড়িষ্যার খোন্দ বিদ্রোহ ইংরেজ শাসকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা ইংরেজদের অধীনে আসে। পরের বৎসর অর্থাৎ ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে খুরদার রাজা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে খুরদার ইংরেজ শাসন পুনঃস্থাপিত হয়। মাদ্রাজের অন্তর্গত খোন্দমহলে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহ দমন করে খোন্দমহল মাদ্রাজের অধীন হতে সরিয়ে নিয়ে কটকের অধীনে স্থাপন করে। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের পর হতে আসামের খাসিয়া, গারো, নাগা প্রভৃতি উপজাতি ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান বিশেষত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
প্রশ্ন ৩। সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণগুলি কি ছিল?
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণগুলির মধ্যে লর্ড ডালহৌসির স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগই হল অন্যতম। এই নীতির দ্বারা তিনি সাতারা, ঝাঙ্গী, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্যগুলি ইংরেজ অধিকারভুক্ত করেন, দিল্লিশ্বর বাহাদুর শাহকে বিতাড়নের পরিকল্পনা, নানা সাহেবের বৃত্তিলোপ, সিকিমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অযোধ্যার বেগমদের উপর অত্যাচার প্রভৃতি ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অসন্তোষ বৃদ্ধি করছিল। দেশীয় রাজারা মনে করেছিলেন ইংরেজ সমস্ত ভারতবর্ষ গ্রাস করে ফেলবে। ইংরেজ রাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুসলমান ওমরাহরা যারা এতদিন রাজকার্য পরিচালনা করেছেন তাদের রাজকার্য পরিচালনার কোন অধিকার রইল না। বহু শত বৎসর আধিপত্য খাটানোর পর এইভাবে বঞ্চিত হওয়া মুসলমান অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রশ্ন ৪। সিপাহী বিদ্রোহের সামরিক কারণ কি ছিল?
উত্তরঃ ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও ইংরেজ-বিদ্বেষ সংক্রামিত হয়েছিল। উত্তর ভারতে সৈন্যবাহিনী ব্রাহ্মণ, রাজপুত, উচ্চ জাতি নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইংরেজ সরকার বহিঃভারতে ভারতীয় সৈন্যদের পাঠাতে চাইলে ব্রাহ্মণ, রাজপুত প্রভৃতি সৈন্যরা জাতি নাশের ভয়ে ক্ষুব্ধ হল। ইউরোপে যুদ্ধের জন্য ভারতে ইংরেজদের সৈন্য হ্রাস এবং আফগান যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজয় দেশীয় সৈন্যদের সাহস বৃদ্ধি করে। তদুপরি ‘এনফিল্ড’ নামক এক প্রকার রাইফেলের প্রবর্তন যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ। এই বন্দুকে টোটা ভরবার সময় একাংশ দাঁত দিয়ে কেটে নিতে হত। গুজব রটল হিন্দু ও মুসলমানকে খ্রিস্টান করবার জন্য সকল টোটায় গোরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত রয়েছে তখন অসন্তোষের বহ্নি প্রজ্বলিত হয়ে সিপাহী বিদ্রোহে পরিণত হল।
প্রশ্ন ৫। সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রসার বা বিস্তার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের উত্তেজনার প্রথম প্রকাশ হয় ব্যারাকপুরে। শীঘ্রই তা মীরাট, লক্ষ্ণৌ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যভারতের নানাস্থানের বিস্তৃত হয়। প্রত্যেক স্থানে বিদ্রোহীরা ইউরোপীয়গণকে হত্যা করতে লাগল। বিদ্রোহী দল মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে। বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে নানা সাহেব, তাঁতিয়া তোপী ও ঝান্সীর রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ হলেন মঙ্গল পাণ্ডে। বিদ্রোহীদের প্রধান কেন্দ্র ছিল দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, বেরিলী ও ঝালী।
প্রশ্ন ৬। সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা হয় কেন?
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহকে প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ বললে ভুল হবে। তা প্রকৃতপক্ষে একটি গণ বিদ্রোহ বা ভারতের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম। বহু ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন যে প্রথমে এই বিদ্রোহ সিপাহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনের রূপ ধারণ করেছিল।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডঃ পট্রভি সীতারামাইয়া সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। এই বিদ্রোহ দেশবাসীর মনে দেশপ্রেম জাগরিত করে। এই বিদ্রোহ যদিও ব্যর্থ হয় তথাপি ভবিষ্যৎ আন্দোলনের বীজ বপন করে। এই সময় হতেই ভারতবাসীর হৃদয়ে ইংরেজ শাসকগণকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষার উন্মেষ হল।
প্রশ্ন ৭। সিপাহী বিদ্রোহের বিফলতার কারণসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা,
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিফলতার কারণ লেখ।
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) বিদ্রোহীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত এবং ঐক্যহীন ছিল।
(খ) তারা ভারতের সকল অঞ্চলের এবং সকল শ্রেণীর সমর্থন লাভ করতে ব্যর্থ।
(গ) বিদ্রোহীদের কোন নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ছিল না।
(ঘ) তাদের মধ্যে যোগ্য নেতার অভাব ছিল।
(ঙ) শিখ ও গোর্খাগণ প্রধানত ইংরেজের পক্ষে বিদ্রোহ দমন করেছিল।
(চ) বিদ্রোহীরা সমগ্র ভারতের প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে নি। এই সকল কারণে ইংরেজরা প্রথমে বিপর্যস্ত হলেও সংহতি ও সামরিক সম্ভারের বলে বিদ্রোহীদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।
প্রশ্ন ৮। সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ফলাফল কি ছিল?
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল নিম্নরূপ:
(ক) কোম্পানির রাজত্ব শেষ হয় এবং ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে ন্যস্ত হয়।
(খ) ভারতের গভর্নর জেনারেল, ভাইসরয় বা রাজপ্রতিনিধি উপাধি লাভ করেন।
(গ) ইংল্যান্ড রাজমন্ত্রীগণের মধ্য হতে একজন ভারত সচিব নিযুক্ত হন এবং তিনি পনেরো জন সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিষদের সাহায্যে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন বলে স্থির হয়।
(ঘ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মহারানির ঘোষণাপত্রও সিপাহী বিদ্রোহের একটি ফল। তা ভারতের মহাসনদ বা ‘ম্যাগনা কার্টা’ স্বরূপ।
(ঙ) দেশীয় নরপতিগণের সন্তোষের জন্য ‘স্বত্ব বিলোপ-নীতি’ বিলোপ করা হয়।
(চ) সাধারণ ভারতবাসী তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নব-যুগের সূচনা করে।
প্রশ্ন ৯। সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইংরেজ সমগ্র ভারতের উপর আধিপত্য স্থাপন করে। দেশীয় রাজাগণকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় অথবা তাদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সন্তুষ্ট ছিল না। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হলে হিন্দু ও মুসলমানগণ ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ পায়। উভয় সম্প্রদায়ই সেই সময়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। তাঁকে ‘ভারত সম্রাট’ বলে ঘোষণা করা হয়। তিনি ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ উপাধি গ্রহণ করেন। তাতে ইংরেজরা স্থায়ী হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিভেদের নীতি বা ‘Divide and Rule’ গ্রহণ করে।
প্রশ্ন ১০। সিপাহী বিদ্রোহের জন্য ডালহৌসী কতটুকু দায়ী ছিলেন?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের জন্য লর্ড ডালহৌসী যথেষ্ট পরিমাণে দায়ী ছিলেন। নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক মাত্রেই একথা স্বীকার করে থাকেন যে ডালহৌসী ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে তিনি কোন প্রকার নৈতিকতা বা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা বিবেচনা করতে প্রস্তুত ছিলেন না। স্বত্ব-বিলোপ নীতির উদ্ভাবন করেছিলেন ইংল্যান্ডস্থ কোম্পানীর ডাইরেক্টর সভা। কিন্তু ডালহৌসীর পূর্ববর্তী গভর্নরগণ এই নীতির প্রয়োগ করেন নি। ডালহৌসী এই নীতি প্রয়োগে প্রয়াসী হন। এই নীতির দ্বারা তিনি সাতরা, ঝালী, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্যগুলি ইংরেজদের অধিকারভুক্ত করেন। দিল্লির বাহাদুর শাহকে বিতাড়নের পরিকল্পনা, নানা সাহেবের বৃত্তিলোপ, সিকিমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অযোধ্যার বেগমের উপর অত্যাচার প্রভৃতি ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অসন্তোষ বৃদ্ধি করছিল। এইভাবে ডালহৌসী ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করেছিল। লর্ড ডালহৌসী ভারতবর্ষ ত্যাগের পূর্বে বিদ্রোহ শুরু না হলেও তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতির কঠোর প্রয়োগ এবং অপরাপর নানাবিধ কারণে বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। সুতরাং এই বিদ্রোহের জন্য ডালহৌসী যে যথেষ্ট পরিমাণে দায়ী ছিলেন, তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন ১১। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ:
(ক) নানা সাহেব।
(খ) ঝালীর রানি লক্ষ্মীবাঈ।
(গ) কোত্তর সিং।
(ঘ) তাঁতিয়া তোগী।
(ঙ) মঙ্গল পাণ্ডে।
উত্তরঃ (ক) নানা সাহেব: নানা সাহেব ইংরেজদের বৃত্তিভোগী শেষ পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও-এর পোষ্যপুত্র ছিলেন। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়ার মৃত্যু হলে তিনি ইংরেজদের নিকট বৃত্তি দাবি করেন। কিন্তু ইংরেজগণ এই বৃত্তি দিতে অস্বীকার করলে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম (সিপাহী বিদ্রোহ) শুরু হয়। কানপুরে তিনি সিপাহীদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কানপুরের ইংরেজগণকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। সেনাপতি হ্যাভলক ও নীল কানপুর অধিকার করলে নানা সাহেব নিরুদ্দেশ হলেন। সম্ভবত তিনি নেপালে গমন করেছিলেন।
(খ) ঝালীর রানি লক্ষ্মীবাঈ: ঝালীর রানি লক্ষ্মীবাঈ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অপুত্রক অবস্থায় ঝাঙ্গীর রাজার মৃত্যু হলে ডালহৌসী ঐ রাজ্যটি ব্রিটিশ রাজ্যভুক্ত করেন। বিংশবর্ষীয়া রানির উপর অত্যাচার করে মৃত রাজার ঋণ আদায় করা হয়েছিল। তিনি রাজ্য উদ্ধার করবার জন্য সিপাহীদের উত্তেজিত করেছিলেন। তাঁতিয়া তোপীর সহযোগিতায় অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে তিনি এই বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন। পুরুষের বেশে উন্মুক্ত তরবারি হাতে এই বীরাঙ্গনা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দেন।
(গ) কোওর সিং: কোঁত্তর সিং সিপাহী বিদ্রোহে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন রাজপুত দলপতি। তিনি বিহারের জগদীশপুরের তালুকদার ছিলেন। কোঁত্তর সিং সিপাহী বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলমানগণকে সমবেতভাবে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিজ অনুচরবর্গসহ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণও করেছিলেন।
(ঘ) তাঁতিয়া তোপী: তাঁতিয়া তোপী ছিলেন একজন মারাঠা ব্রাহ্মণ। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে তিনি নানা সাহেবের সঙ্গে কানপুরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়ালিয়রের বিদ্রোহী সৈন্যের সাহায্যে ঝাঙ্গীর রানি লক্ষ্মীবাঈকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করে তিনি পরাভূত হলেন। কিন্তু রানি ও তাঁতিয়া তোপী হঠাৎ গোয়ালিয়র দুর্গ অধিকার করে নানা সাহেবকে পেশোয়া ঘোষণা করেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে তাঁতিয়া তোপী পরাস্ত হয়ে ৮ হাজার অনুচরসহ রাজপুতানায় পলায়ন করেন। পর বৎসর তিনি ধৃত ও প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হলেন।
(ঙ) মঙ্গল পাণ্ডে: মঙ্গল পাণ্ডে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন। তিনি জাতিতে বাঙালি ব্রাহ্মণ ছিলেন। এনফিল্ড নামক বন্দুকে গোরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত টোটা ব্যবহারের ফলে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহীদের মতো শঙ্কিত ছিলেন। সিপাহীদের উপর ইংরেজ পদস্থ কর্মচারীদের ব্যবহারে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। এনফিল্ড রাইফেল সম্পর্কিত বিভিন্ন বিতর্কিত আলোচনার ভিত্তি জানতে চাইলে জনৈক ইংরেজ সামরিক অফিসার তাঁকে অপমানিত করলে মঙ্গল পাণ্ডে গুলি চালান। ফলে বিদ্রোহ শুরু হয়। সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৯শে মার্চ মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসি হয়। তিনি ছিলেন সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ।
প্রশ্ন ১২। সিপাহী বিদ্রোহ বা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ভারতের সামরিক বাহিনীতে যে পরিবর্তন সাধন করা হয়, তা উল্লেখ কর।
অথবা,
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে কি ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী দায়ী ছিল। সুতরাং বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা হয়। বিদ্রোহের পূর্বে ভারতে ব্রিটিশ রাজকীয় সেনা ও কোম্পানির সেনা—এই দুই প্রকার সেনাবাহিনী ছিল। কিন্তু বিদ্রোহের পর উভয় সেনাবাহিনীকে একত্রীকরণ করা হয়। এর ফলে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে একতার ভাব পরিলক্ষিত হয়। ব্রিটিশ সেনার হার কম থাকায় ব্রিটিশ সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। মোট চল্লিশ হাজার ব্রিটিশ সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৬৫ হাজার করা হয়। অপর দিকে ভারতীয় সেনা সংখ্যা ২,১৫,০০০ হতে হ্রাস করে মোট ১,৪০,০০০ করা হয়। সামরিক বিভাগের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে ইউরোপীয়গণকে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী ৫০ বৎসর সামরিক বিভাগে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হয় নি।
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.