Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ is a textbook prescribed by the AHSEC Board Class 12 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ Solutions are free to use and easily accessible.

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর 2023, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর 2023 pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস মক টেস্ট, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ছোট প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস নোট, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস।

Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ Question Answer in Bengali. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Hs 2nd year Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ question answer in Bengali gives you a better knowledge of all the chapters. Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ Assam AHSEC Board HS 2nd Year, Class 12 History Chapter 2 রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ Answers The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. Class XII History Solutions Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Textbooks. HS 2nd Year History Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

প্রশ্ন ২। মহাজনপদ সৃষ্টি হওয়ার পর সমাজে কি কি পরিবর্তন এসেছিল?

উত্তরঃ মহাজনপদগুলো বিভিন্ন দিকে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। মহাজনপদগুলোর মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধবিগ্রহ হত। ফলে প্রত্যেকটি মহাজনপদই শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজন অনুভব করেছিল। সেনাবাহিনী গঠন করার জন্য রাজার ধনের প্রয়োজন হত। সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভরণপোষণ আর যুদ্ধসামগ্রী, সাজ – সরঞ্জামের জন্য ধনের প্রয়োজনও বেড়ে যেতে শুরু করে। এই সকল ধন আসত প্রজাদের কর থেকে। নিয়মিতভাবে কর দেওয়ার প্রথা তখন থেকে প্রচলিত হল। কর সংগ্রহ আর মহাজনপদের নিরাপত্তা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নানা দিক দেখাশোনা করার জন্য আধিকারিক নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সুষ্ঠুভাবে রাজ্য পরিচালনা করার জন্য কিছু নিয়মকানুনও তৈরি হয়। সেই সময় মানুষের ধনবলও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি হয়েছিল। ধনবল বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন ৩। মহাজনপদের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থা আলোচনা কর।

উত্তরঃ মহাজনপদের সময়সীমায় অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। সেই সময় লোহার তৈরি বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম, দা-কুঠার, কোদাল, লাঙলের ফাল ইত্যাদি ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হত। কৃষিকাজ ছাড়া পশুপালন সেই যুগের অর্থনৈতিক জীবনের অন্য এক প্রধান অঙ্গ ছিল। ধনবল বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে চিত্তাকর্ষক অলংকার, বাসন – কোসন, জামা গপড় ইত্যাদির ব্যবহার সমাজে বৃদ্ধি পায়। এই সব সামগ্রীর চাহিদা লক্ষ্য করে সে সব তৈরি করার জন্য অনেক কলাকুশলী ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। এইসব লোক আগের কৃষিকর্ম বাদ দিয়ে এ ধরনের নতুন কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করে। এভাবে সমাজে ছুতোর, কামার, কুমার, স্বর্ণকার, চিত্রকর ইত্যাদি শ্রেণীর সৃষ্টি হয়।

সিন্ধু সভ্যতার প্রাচীন নগরগুলোর ভগ্নাবশেষ থেকে সে সময়ের উন্নত জীবনযাপন প্রণালী সম্বন্ধে জানা যায়। বাড়ি – ঘর, রাস্তা – ঘাটগুলো অনেকটা আজকের মতোই ছিল। কৃষি ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা। পশুপালন করেও কিছু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। তামা, দস্তা, সিসা প্রভৃতি ধাতু ব্যবহার তারা করত। লোহা ব্যবহার করার নিদর্শন পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন ৪। হরপ্পা সভ্যতার পরবর্তী ১৫০০ বছরে ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা প্রকার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার পরবর্তী ১৫০০ বছরে ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিম্নোক্ত ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছিল:

(ক) সিন্ধু নদী ও তার উপনদী উপত্যকায় বসতিকারী জনগণ ঋকবেদ লিখতে আরম্ভ করেন।

(খ) উত্তর ভারত, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ও কর্ণাটকে কৃষক বসতি স্থাপন আরম্ভ হয়। তারা দাক্ষিণাত্যে মালভূমি ও দক্ষিণ ভারতে পশুপালন শুরু করে।

(গ) খ্রিস্টপূর্ব সহস্রাব্দে মৃতদেহ সৎকারের নূতন পদ্ধতি প্রচলিত হয়। এতে পাথরনির্মিত বিশাল শবাধার অন্তর্ভুক্ত হয়। এইগুলিকে মহাপাষাণ বলা হত। অনেক স্থানে মৃতদেহের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রশস্ত্র কবর দেওয়া হত।

প্রশ্ন ৫। ভারতের ইতিহাসে মৌর্যদের অবদানগুলো লিপিবদ্ধ কর।

উত্তরঃ ভারতের ইতিহাসে মৌর্যদের অবদান অপরিসীম। ভারতের শাসনব্যবস্থার অনেকটাই মৌর্যদের অবদান বলে মনে করা হয়। মৌর্য সম্রাটদের মধ্যে চন্দ্রগুপ্ত এবং অশোক দুজনেই সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তাঁরা বিশাল সাম্রাজ্যটি রাজধানী থেকেই প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। মৌর্য শাসনব্যবস্থায় সম্রাটই সর্বাধিনায়ক ছিলেন। দেশের সুশাসন সুনিশ্চিত করতে সম্রাটকে শাসনকার্যে মন্ত্রিপরিষদই পরামর্শ দিত।

শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে মৌর্যদের যথেষ্ট অবদান আছে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোক উভয়েই শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্রাট অশোকের প্রস্তরস্তম্ভ ও তাতে খোদাই করা লিপিগুলো, স্তূপ ও বৌদ্ধ বিহারগুলো তৎকালীন ভারতের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীকটি সারনাথের অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া হয়েছে। মৌর্যযুগে ভারতের সমাজে সাত শ্রেণীর মানুষ ছিল। সমাজে চতুর্বর্ণ প্রথাও প্রচলিত ছিল। সমাজে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের প্রভাব বেড়েছিল। মহিলাদের স্থান সমাজে খুব উঁচুতে ছিল না।

প্রশ্ন ৬। সম্রাট অশোককে কেন ‘মহামতি’ অশোক বলা হয়?

উত্তরঃ অশোক রাজা হওয়ার পর রাজ্যবিস্তারের জন্য কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। কলিঙ্গ এবং মগধ – উভয় পক্ষেরই সামরিক বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মগধের কাছে কলিঙ্গের শোচনীয় পরাজয় হয়। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান এবং দেড় লক্ষ মানুষকে বন্দী করে নিয়ে আসা হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের বিভীষিকাময় চিত্র অশোকের উপর গভীরভাবে রেখাপাত করে। এই যুদ্ধে নিহত হাজার হাজার মানুষের বিভীষিকাময় দুর্দশা দেখে তিনি আর কখনো যুদ্ধ না করার প্রতিজ্ঞা করেন। তাঁর মানসিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। এই যুদ্ধের সমাপ্তি পর্বে অশোক শান্তির খোঁজে ধর্মীয় চিন্তাভাবনার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই সময় থেকেই যুদ্ধ বিজয়ের নীতি পরিত্যাগ করে ধর্ম বিজয়ের নীতি অবলম্বন করেন। তিনি ক্রমশ অহিংস বৌদ্ধধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং উপগুপ্ত নামে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছ থেকে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর সম্রাট অশোক শান্তি ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি সমাজ গঠন করার চেষ্টা করেন। যুদ্ধ দ্বারা দেশ জয়ের পরিবর্তে শান্তির মাধ্যমে মানুষের মন জয়ের পথ অবলম্বন করেন। চণ্ডাশোক অশোক ধর্মাশোকে পরিণত হন। এই কারণে সম্রাট অশোককে ‘মহামতি’ অশোক বলা হয়।

প্রশ্ন ৭। মৌর্যযুগের শিল্পকলার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মৌর্যযুগে ভারতীয় শিল্পকলায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোক উভয়েই শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্রাট অশোকের প্রস্তরস্তম্ভ ও তাতে খোদাই করা লিপিগুলো, স্তূপ ও বৌদ্ধ বিহারগুলো তৎকালীন ভারতের উন্নত শিল্প ও ভাস্কর্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। স্তূপগুলোর মধ্যে সাঁচী স্তূপ উল্লেখযোগ্য। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীকটি সারনাথস্থিত অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর চক্রটি ভারতের জাতীয় পতাকার মধ্যে আছে।

প্রশ্ন ৮। চন্দ্রগুপ্তের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোকে একত্র করে ভারতে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। গোটা সাম্রাজ্যকে চারটি প্রদেশে ভাগ করে রাজ প্রতিনিধিদের সাহায্যে শাসন করা হত। প্রদেশগুলোকে আবার জেলাস্তরে ভাগ করা হয়েছিল। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর রাজধানী পাটলিপুত্র নগরটিকে সুশৃঙ্খলভাবে চালানোর জন্য ৩০ সদস্যের একটি পুরসভা গঠন করেছিলেন।

প্রশ্ন ৯। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য অশোক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তরঃ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পরে পরেই অশোক ধর্মের মহৎ বাণী জনগণের মধ্যে প্রচার করার তাগিদ অনুভব করেন। দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্তম্ভ স্থাপন করে তিনি ধর্মের বাণী খোদাই করে দেন। জনগণ যাতে সহজে পড়তে পারে এজন্য তিনি কথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। পর্বতগাত্রেও ধর্মের কথা লিপিবদ্ধ করে রাখেন। ধর্মপ্রচারের জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্মচারীদের নিযুক্ত করেন। রাজুক, যুত, প্রাদেশিক প্রভৃতি কর্মীরা প্রতি ৩/৫ বছর অন্তর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে ধর্মের মর্মকথা ব্যাখ্যা করেন। সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উন্নতির প্রতি এইসব রাজ – কর্মচারীদের লক্ষ্য রাখতে সম্রাট নির্দেশ দেন। ধর্ম – বিষয়ক কাজের জন্য অশোক ‘ধর্মমহামাত্র’ নামক বিশেষ কর্মচারীমণ্ডলী নিয়োগ করেন। তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির পর অশোক দেশের নানা অঞ্চলে ধর্মদূত প্রেরণ করেন। কাশ্মীর, নেপাল, মহারাষ্ট্র, সুবর্ণভূমি প্রভৃতি স্থানে তাঁর দূতরা ধর্মের বাণী প্রচার করেন। ভারতের বাইরেও তিনি ধর্মপ্রচারে উদ্যোগী হন।

প্রশ্ন ১০। ভারতের ইতিহাসে অশোকের স্থান কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ ঐতিহাসিক এইচ. জি. ওয়েলস মানবসভ্যতার ইতিহাসে ছয়জনের চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন যাদের দৃষ্টান্ত আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এঁরা হলেন যিশুখ্রিস্ট, বুদ্ধদেব, অশোক, অ্যারিস্টটল, বেকন এবং আব্রাহাম লিঙ্কন। মৌর্যসম্রাট অশোক ছিলেন একজন মহান শাসক। তিনি তাঁর রাজধর্মের আদর্শের মধ্যে দিয়ে মূল্যবোধের কথা বলেছেন তা অতুলনীয়। ঐতিহাসিক নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে অশোক তাঁর এই সামাজিক মূল্যবোধের নীতি জীবনের শেষ দিন অবধি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

অশোক তাঁর রাজকীয় কর্তব্যের প্রতি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি প্রজাদের উদ্দেশ্যে যে কথা বলতেন, সেই কথা তিনি নিজেও অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তিনি প্রজাদের নিজ সন্তানের ন্যায় দেখতেন। তিনি তাঁর শিলালেখ – এ বলেছেন সকল প্রজাই আমার সন্তান। অশোক তাঁর প্রজাবর্গের আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উন্নতির জন্য সর্বদা সজাগ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রাইস ডেভিস মন্তব্য করেছেন যে রোমান সম্রাট কনস্টানটিন যেমন খ্রিস্টধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে জাতীয় ধর্মে পরিণত করেন মৌর্য সম্রাট অশোকের মধ্যে এই ধরনের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। অশোকের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর ধর্মমতের সাহায্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মনুষ্যত্বের বাণী প্রচার করা। অনেক ঐতিহাসিকের মতে আলেকজান্ডার, সিজার, নেপোলিয়ান ছিলেন বিশ্বের মহান সম্রাট। কিন্তু ঐতিহাসিক এইচ. জি. ওয়েলস মন্তব্য করেছেন যে ওইসব সম্রাটরা ব্যক্তিগত স্বপ্নকে চরিতার্থ করতে চেয়েছিলেন। মনুষ্যত্বের বিকাশে তাদের অবদান বিশেষ ছিল না। কিন্তু অশোক নিঃস্বার্থভাবে মানবসভ্যতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন এবং এইখানেই অশোকের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য শাসকদের পার্থক্য।

প্রশ্ন ১১। মেগাস্থিনিস কে ছিলেন? তাঁর লিখিত বিবরণ হতে কি জানতে পারা যায়?

উত্তরঃ মেগাস্থিনিস বিখ্যাত গ্রিক পর্যটক ছিলেন। তিনি গ্রিক সম্রাট সেলুকাসের দ্রুত ছিলেন।

মেগাস্থিনিসের বিবরণ : সেলুকাসের দূত হিসেবে মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় আসেন। ভারতের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞানের কথা তিনি ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। মূল গ্রন্থটি পাওয়া যায়নি। পরবর্তী গ্রিক লেখকদের বর্ণনা থেকে ‘ইন্ডিকা’-র বিষয়বস্তু জানা যায়।

মেগাস্থিনিসের মতে, তখন মগধ ছিল ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য এবং চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন সর্বাধিক শক্তিশালী রাজা। মেগাস্থিনিস লিখেছেন — গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ নগর। নগরীর চতুর্দিক গভীর পরিখা ও সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। মগধের রাজপ্রাসাদ দেখেও তিনি মুগ্ধ হন। তাঁর মতে, এই প্রাসাদ বিশালতা ও সৌন্দর্যে পারস্যের যে – কোন প্রাসাদের থেকে উন্নত ছিল। ত্রিশজন সদস্যবিশিষ্ট একটি পৌরসভার উপর নগরীর শাসনদায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এই পরিষদ ছয়টি সমিতিকে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাজের তত্ত্বাবধান করত। সামরিক বিভাগের দায়িত্বও এমনই একটি পরিষদের হাতে ছিল।

মেগাস্থিনিস ভারতবাসীর নৈতিক চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশে তখন চুরি – ডাকাতি বা মামলা প্রায় ছিলই না। সাধারণভাবে মানুষ ছিল সরল ও সত্যবাদী।

প্রশ্ন ১২। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ অনুমান করা হয় যে, চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী ও প্রধান পরামর্শদাতা চাণক্য পণ্ডিত ‘কৌটিল্য’ নাম নিয়ে ‘অর্থশাস্ত্র’ রচনা করেন। এতে রাজার কর্তব্য, প্রশাসন ও অর্থনীতি সম্পর্কে নানা তথ্য আছে। ‘অর্থশাস্ত্র’ – র মতে, রাজাই ছিলেন রাজ্যের সর্বেসর্বা। তবে তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। রাজার কর্তব্য হিসেবে জনগণের নিরাপত্তা ও সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলসাধনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুষ্ঠু শাসন পরিচালনার জন্য রাজা কর্মচারী নিয়োগ করতেন। মৌর্য রাজারা অমাত্য বা সচিব, মন্ত্রী, অধ্যক্ষ ইত্যাদি উচ্চ কর্মচারীর সাহায্যে শাসন পরিচালনা করতেন।

সুশাসনের জন্য সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। সাধারণত রাজকুমারগণ প্রদেশের শাসক নিযুক্ত হতেন। প্রদেশগুলি জনপদ বা জেলায় এবং জেলাগুলি গ্রামে বিভক্ত ছিল। জেলার শাসনদায়িত্বে ছিলেন ‘স্থানিক’ নামক কর্মচারী। ‘গোপ’ নামক কর্মী গ্রাম-শাসন পরিচালনা করতেন।

‘অর্থশাস্ত্র’ – র মতে, ভূমিরাজস্ব ছিল আয়ের প্রধান উৎস। ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ রাজস্ব হিসেবে সংগৃহীত হত। একে বলা হত ‘ভাগ’। এছাড়া অন্যান্য নানাপ্রকার কর ও শুল্ক আদায় করা হত, যা ‘বলি’ নামে পরিচিত ছিল। রাজা ছিলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁকে সাহায্য করার জন্য গ্রাম থেকে প্রদেশ পর্যন্ত একাধিক বিচারালয় ছিল। বিচারের কাজে নিরপেক্ষতা অনুসরণ করা হত।

পররাষ্ট্র সম্পর্কের কাজে কৌটিল্য চারটি নীতির উল্লেখ করেছেন; যথা – সাম, দান, ভেদ ও দণ্ড। ‘সাম’ বা সন্ধির দ্বারা মিত্রতা, ‘দান’ বা সাহায্য প্রদানের দ্বারা বন্ধুত্ব, ‘ভেদ’ বা শত্রুরাষ্ট্রে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং দণ্ড’ বা যুদ্ধ দ্বারা রাজ্য জয় করা বোঝাত। ‘অর্থশাস্ত্র’-এ তিন ধরনের যুদ্ধের উল্লেখ আছে; যথা-লোভবিজয় অর্থাৎ পরাজিত দেশ থেকে অর্থ লুণ্ঠন, অসুরবিজয় অর্থাৎ পররাজ্য দখল করা এবং ধর্মবিজয় অর্থাৎ বশ্যতা স্বীকারের বিনিময়ে অধিকৃত রাজ্যফিরিয়ে দেওয়া।

প্রশ্ন ১৩। মৌর্য সাম্রাজ্য পতনের কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সম্রাট অশোকের সময় মৌর্য সাম্রাজ্যের চরম বিস্তৃতি হয়। কিন্তু নানা কারণে তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যেই তা ধ্বংস হয়ে যায়:

(ক) হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে ক্ষত্রিয় রাজা অশোক পশুবলি প্রভৃতি ব্রাহ্মণ ধর্মানুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে ব্রাহ্মণ শ্রেণীকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন। এই কারণে ব্রাহ্মণ পুষ্যমিত্রের নেতৃত্বে মৌর্যবংশের পতন সংঘটিত হয়েছিল।

(খ) অশোকের উত্তরাধিকারীগণ দুর্বল ও অত্যাচারী ছিলেন। বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার বহন করবার মতো শক্তি তাদের ছিল না।

(গ) কলিঙ্গযুদ্ধের পরে মগধের সামরিক শক্তি বহুকাল অব্যবহৃত থাকায় ক্ষীণধার হয়ে পড়েছিল। এইজন্য অশোকের উত্তরাধিকারীগণ ভারতবর্ষে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারলেন না।

(ঘ) মৌর্যশক্তির দুর্বলতার সুযোগে দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন এবং কলিঙ্গের চেতবংশীয় রাজাগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

(ঙ) মৌর্য সাম্রাজ্যের এই শোচনীয় দুরবস্থার সময় মৌর্য বংশের দশম বা শেষ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে তাঁর সেনাপতি পুষ্যমিত্র সুঙ্গ ‘পাটলিপুত্রের সিংহাসনে আরোহণ করেন।

প্রশ্ন ১৪। কুষাণ সাম্রাজ্যের উত্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর একদিকে যেমন বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব হয় তেমনি পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশি শক্তি ভারতবর্ষে তাদের প্রভাব – প্রতিপত্তি বিস্তার করতে বিশেষ তৎপর হয়। বিদেশি শক্তির মধ্যে ছিল ব্যাকট্রীয় গ্রিক, শক, পার্থিয়ান, কুষাণ ইত্যাদি। এই সমস্ত বিদেশি শক্তির মধ্যে যে কয়েকটি জাতি ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয় তাদের মধ্যে কুষাণরা ছিল সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী। কুষাণরা ভারতবর্ষে প্রায় দুশো বছর ধরে একটানা শাসন করে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে কুষাণদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের রাজত্বকালে ভারতের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন দেখা যায়।

মনে করা হয় যে ৫০ খ্রিস্টাব্দে কুষাণদের দলপতি প্রথম কদফিসেস হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে কাবুল, কিলিন প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে কুষাণদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। অনেকে মনে করেন যে তাঁর সাম্রাজ্যের সীমানা পারস্য থেকে বিস্তৃত হয়ে সিন্ধু উপত্যকা অবধি প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথম কদফিসেস কুজুল বা কুসুলক কদফিসেস নামেও পরিচিত। তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রথম কদফিসেসের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় কদফিসেস কুষাণ সম্রাট হিসাবে মনোনীত হন। তাঁর আমলেই ভারতে কুষাণ সাম্রাজ্যের গোড়া পত্তন হয়।

প্রশ্ন ১৫। কণিষ্কের রাজত্বকালের গুরুত্ব সম্পর্কে লেখ।

উত্তরঃ কণিষ্কের রাজত্বকাল ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি একাধারে বিজয়ী বীর ও বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিদ্যোৎসাহী ও শিল্পানুরাগী বলেও কণিষ্কের প্রসিদ্ধি আছে। তাঁর রাজসভা ‘বৌদ্ধচরিত’ প্রণেতা অশ্বঘোষ, আয়ুর্বেদাচার্য চরক, বৌদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুন, সাহিত্যিক বসুমিত্র প্রভৃতি মনীষীগণ কর্তৃক অলংকৃত হয়েছিল। কণিষ্কের রাজত্বকালে গান্ধার ও মথুরা প্রদেশে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পে নতুন রীতি প্রবর্তিত হয়। তিনি অনেক স্তূপ ও বিহার নির্মাণ করান। রাজধানী পুরুষপুরে তিনি একটি অতিবৃহৎ স্তূপ নির্মাণ করান, যা দর্শকের বিস্ময় উৎপাদন করত।

প্রশ্ন ১৬। ইন্দো-গ্রিক, শক, কুষাণদের ভারতীয় সমাজ, কলা কৃষ্টি ও বিজ্ঞনের ক্ষেত্রে অবদান সম্পর্কে লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় সমাজের উন্নতির ক্ষেত্রে ইন্দো-গ্রিক, শক ও কুষাণদের যথেষ্ট অবদান আছে। তাদের শাসনকালেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন পথ উন্মুক্ত হয়। কুষাণরা ভারতে সোনার মুদ্রার প্রচলন করে মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিবর্তনের সূচনা করে। কুষাণদের কিছু মুদ্রায় শিব ও বুদ্ধের প্রতিমূর্তি পাওয়া যায়।

কণিষ্কের রাজত্বকালে মথুরা ও গান্ধার শিল্পকলারও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। তক্ষশিলা ও মথুরা এই শিল্পচর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল। ওই সময়েই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানী চরক ও সুশ্রুত শল্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছিলেন। এ সময় সংস্কৃত ভাষারও যথেষ্ট উন্নতি হয়। পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য’ গ্রন্থটি শব্দ, ভাষা ও ব্যাকরণের বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান গ্রন্থ।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ষোড়শ মহাজনপদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ রাজশক্তির উত্থান : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিম বিহারে লোহার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। লৌহশক্তি ব্যবহার এই অঞ্চলে আঞ্চলিক রাজ্যের উত্থানের পথ সুগম করে। লৌহ-নির্মিত অস্ত্রে বলীয়ান যোদ্ধৃশ্রেণী এই সময় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। লৌহ-নির্মিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই উদ্বৃত্ত ফসল আত্মসাৎ করে সামরিক বাহিনী ও রাজা নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।

ষোড়শ মহাজনপদ : বৌদ্ধগ্রন্থ ‘অঙ্গুত্তরনিকায়’, ‘জাতকসমূহ’ ও ‘জৈন ভগবতীসূত্র’ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ষোলোটি আঞ্চলিক রাজ্যের অস্তিত্ব জানা যায়। এগুলিকে একত্রে ‘ষোড়শ মহাজনপদ’ বলা হয়। এই ষোলোটি মহাজনপদ হল কাশী (বারাণসী), কোশল (অযোধ্যা), অঙ্গ (পূর্ব বিহার), মগধ (দক্ষিণ বিহার), বৃজি (উত্তর বিহার), মল্ল (মালব), চেদী (বুন্দেলখণ্ড), বৎস (এলাহাবাদ), কুরু (দিল্লী), পাঞ্চাল (রোহিলাখণ্ড), মাৎস্য (জয়পুর), শূরসেন (যমুনা নদীর তীরবর্তী রাজ্য), অস্মক (গোদাবরী তীরবর্তী অঞ্চল), অবস্তী (মধ্যভারত), গান্ধার (পেশোয়ার) এবং কম্বোজ (গান্ধারের নিকটবর্তী রাজ্য)। ষোলোটি মহাজনপদের অধিকাংশ গড়ে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যভারতে। পূর্ব ভারত ও সুদূর দক্ষিণে কোন জনপদ ছিল না। দক্ষিণ ভারতের একমাত্র জনপদ ছিল অস্মক। এছাড়া কপিলাবস্তু, পিপ্পলিবন, রাজগ্রাম প্রভৃতি স্থানে কয়েকটি স্বশাসিত উপজাতি গোষ্ঠীর অবস্থান ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তী কয়েক বছর ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস হল এই কয়েকটি রাজ্যের পারস্পরিক ক্ষমতার লড়াই। ষোলোটি মহাজনপদের মধ্যে কোশল, অবস্তী, বৎস ও মগধ ছিল তুলনামূলকভাবে অধিক শক্তিশালী। শেষ পর্যন্ত মগধ এদের পরাজিত করে একটি সাম্রাজ্য স্থাপন করে।

প্রশ্ন ২। মহাজনপদগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ প্রাচীন বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থাদিতে ‘মহাজনপদ’ নামে ষোলোটি রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও এই গ্রন্থগুলিতে মহাজনপদগুলি নামের সমরূপ উল্লেখ নেই তথাপি কতিপয় মহাজনপদের উল্লেখ উভয় ধর্মগ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। তা স্পষ্ট নির্দেশ দেয় যে এই মহাজনপদগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রধান বৈশিষ্ট্য : মহাজনপদগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

(ক) অধিকাংশ মহাজনপদ রাজা কর্তৃক শাসিত হত। কিন্তু একগোষ্ঠী লোক কয়েকটি রাজ্য শাসন করত। এই রাজ্যগুলিকে গণরাজ্য বলা হত। এই গোষ্ঠীর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই রাজা বলা হত। এই গণরাজ্যগুলির সঙ্গে মহাবীর ও বুদ্ধের সম্পর্ক ছিল।

(খ) প্রতিটি মহাজনপদের নিজস্ব রাজধানী ছিল। তা সর্বদা দুর্গবেষ্টিত ছিল। রাজধানী, সামন্ত বাহিনী ও অর্থনৈতিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজধানী দুর্গীকরণের প্রয়োজন ছিল।

সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। কিন্তু Native কবির লেখা সাহিত্যকে পাশ্চাত্য, সাহিত্যিক সমাজ ততটা মর্যাদা দান করল না। আশাহত কবি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ১৮৫৬ সালে পুলিশ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট কিশোরীচাঁদ মিত্রের অধীনে চাকুরি নেন। মধুসূদন এর পর ব্যারিস্টারি পড়তে ১৮৬২ সালে বিলাতে যান। সেখানে ভার্সাই শহরে থাকাকালীন নিদারুণ অর্থনৈতিক অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়। কবি বঙ্গভাষায় সাহিত্যচর্চা করার পর যে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন তা পাশ্চাত্য ভাষা তাঁকে দিতে পারেনি। মাতৃভাষার রত্নভাণ্ডারের সন্ধান যখন তিনি পেলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। কবি তাই অনুশোচনাগ্রস্ত হয়ে বলেছেন যে নিজের মাতৃভাষায় কতই না ধন-সম্পদ রয়েছে। তবুও তিনি ভিখারির বেশে পরদেশে ভ্রমণ করেছেন। বঙ্গদেশের সৌভাগ্যদেবী অর্থাৎ কুললক্ষ্মী যেন চোখে আঙুল দিয়ে তাঁর সেই ভুলের প্রতি ইঙ্গিত করছেন।

প্রশ্ন ৪। “মজিনু বিফল তপে অবরণ্যে বরি; – 

কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন!” 

মর্মার্থ বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই কবিতাংশে কবি মাইকেল মধুসূদন আত্মবিলাপের মধ্য দিয়ে আত্মসমালোচনা করেছেন। সাহিত্য সাধনায় কঠিন তপস্যার প্রয়োজন। কবি মাইকেল মধুসূদন এই তপস্যায় নিরত ছিলেন। কিন্তু প্রথমে তিনি যথার্থ পথের দিশা না পেয়ে ইংরাজি ভাষায় সাহিত্যসাধনা শুরু করেছিলেন। এ তো আসলে বিফল তপস্যায় মগ্ন হওয়ার নামান্তর। যাকে বরণ করে অমরত্ব লাভ করা যায় তাকে উপেক্ষা করে কবি বরণ করতে চেয়েছিলেন অন্যের ভাষা, অন্যের সাহিত্য, অন্যের কৃষ্টিকে। আসলে এ তো পদ্মবন পরিত্যাগ করে শৈবাল-বারিতে খেলা করা। শ্যাওলার বন আর পদ্মবন কখনোই এক নয়। এখানে কবি ভ্রমবশত শ্যাওলা – পুকুরে অবগাহন করতে চেয়েছিলেন। কবির ভাষায় শ্যাওলা বা শৈবাল হল বিদেশি ভাষা ও সাহিত্য এবং পদ্মবন বা কমল – কানন হল তাঁর মাতৃভাষা ও সাহিত্য।

প্রশ্ন ৫। “মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে৷” 

তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তর রচিত ‘বঙ্গভাষা’ কবিতার এই পংক্তিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কবি প্রথমে তাঁর মাতৃভাষা পরিত্যাগ করে ইংরাজি সাহিত্যে কাব্য রচনা করে বড় কবি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বীয় বাংলা ভাষায় যে অমূল্য রত্নরাজি আছে তা তিনি প্রথমাবস্থায় বুঝতে পারেন নি। পরে তিনি এই মহান সত্য উপলব্ধি করেন যে বাংলা ভাষা এক বিশাল মণিময় খনি। এখানে যে সম্পদ রয়েছে তা বিশ্বের রত্নভাণ্ডারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই সম্পদ লাভের জন্য পরবর্তীকালে কবি বাংলা ভাষায় সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কবির যে উপলব্ধি তার আলোকেই কবি বলেছেন যে, বঙ্গভাষা এমনই এক ভাণ্ডার যেখানে রয়েছে অমূল্য মণিমুক্তা। এই পংক্তিতে কবির মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ অনুরাগের প্রকাশ ঘটেছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ৬। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটির প্রথমাংশে কবির আত্মগ্লানি ও শেষাংশে আত্মপ্রসাদ ব্যক্ত হইয়াছে।” 

মন্তব্যটির যাথার্থ্য প্রমাণ কর।

উত্তরঃ ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি আরম্ভ হয়েছে কবির অনুতাপ ও আত্মগ্লানির মধ্য দিয়ে। কবি মধুসূদন বাঙালি পিতামাতার সন্তান হলেও ইংরাজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগ ছিল। বহু ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করে তিনি পণ্ডিত হয়ে উঠলেও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ছিল নির্মম অবহেলা। মহামতি বেথুনের কথায় অতঃপর তাঁর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। সম্ভাব্য ঐশ্বর্যে পূর্ণ মাতৃভাষার চর্চা তিনি আরম্ভ করেন। অচিরে এই ভাষায় বহুবিধ কাব্য, নাটক ও প্রহসন রচনা করে বাঙালি সমাজে তিনি প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গভাষার প্রতি তাঁর একদা অনাসক্তি কীভাবে আসক্তির রূপ পেল কবিতায় এটাই সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।

কবির বক্তব্য এই যে, বঙ্গ ভাষালক্ষ্মীর ভাণ্ডারে নানাবিধ রত্নের সমাহার সত্ত্বেও তিনি বুদ্ধিহীনের মতো সেদিকে দৃষ্টি নিবন্ধ না করে ইংরাজি ভাষার প্রতি দরদী হয়ে উঠেছিলেন। আয়ত্তগম্য বাঙলা ভাষার পদ্মবনে বিচরণ না করে নিজের ভুলে তিনি বিদেশীয় ভাষার পঙ্কিলতায় গতিরুদ্ধ হয়েছেন। বঙ্গ ভাষালক্ষ্মী তাঁর এই অন্তরের দীনতায় ব্যথিত হয়ে সম্বিত ফিরিয়ে দিয়েছেন। ভিখারি কবির দৈন্যদশা তিনি সহ্য করতে পারেন নি। নিজের অপরিমেয় রত্নাদির পূর্ণ ভাণ্ডার তাঁর নিকট উন্মোচিত করে তাঁকে যেমন অনুরক্ত করেছেন, তেমনি অচিরে কবিখ্যাতি লাভে সহায়তাও করেছেন। নিজ মাতৃগৃহে প্রত্যাবর্তন করে কবিও নিজের হারানো সম্মানলাভে কৃতকার্য হয়েছেন। তাঁর আত্মগ্লানি আত্মপ্রসাদ লাভের মধ্যে ধন্য হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। ‘সনেট’ কী? সনেট হিসাবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটির সার্থকতা বিচার কর।

উত্তরঃ ‘সনেট’ হল চতুর্দশপদী কবিতা। এই ধরনের কবিতা পাশ্চাত্যে প্রথম ইতালীয় কবি পেত্রার্কা (১৩০৪–৭৪ খ্রিস্টাব্দ) রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে শেক্সপীয়রের হাতে পড়ে তা উৎকর্ষতা লাভ করে।

১৮৬৬ সালে মধুসূদনের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ প্রকাশিত হয়। তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে ইউরোপে গিয়েছিলেন। সেখানে ঋণের দায়ে তাঁকে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল। সেই মানসিক উদ্ভ্রান্তির সময়ে বিদেশী সনেটের আদর্শে তিনি অনেকগুলি সনেট লিখেছিলেন এবং তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘চতুর্দশপদী কবিতা’।

‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি পুস্তকে যেভাবে সজ্জিত আছে তাতে আমরা ‘অষ্টক’ও ‘ষটক’ দুটি ভাগ স্পষ্ট লক্ষ্য করি। অষ্টক ভাগে পংক্তিগুলির অন্ত্যমিল বিন্যাস লক্ষ্য করলে দেখি প্রথম পংক্তির সঙ্গে তৃতীয় পংক্তি, দ্বিতীয় পংক্তির সঙ্গে চতুর্থ পংক্তি, পঞ্চম পংক্তির সঙ্গে সপ্তম পংক্তি, ষষ্ঠ পংক্তির সঙ্গে অষ্টম পংক্তির মিল রয়েছে। আবার ‘ষটক’ পর্যায়ে প্রথম পংক্তির সঙ্গে চতুর্থ পংক্তি, দ্বিতীয় পংক্তির সঙ্গে তৃতীয় পংক্তি, পঞ্চম পংক্তি ও ষষ্ঠ পংক্তির মিল বর্তমান।

বিষয়বস্তু বিচারে আমরা দেখি নিজ মাতৃভাষার প্রতি কবির অনুরাগ এবং আনুগত্য সনেটের ক্ষুদ্র পরিসরে সংযম এবং সংহতির মধ্যে প্রকাশিত। কবির মাতৃভাষা-প্রীতি এখানে লক্ষণীয়। শব্দ যোজনায় এবং নানাবিধ অলংকার প্রয়োগে মধুসূদন বেপরোয়া হলেও আলোচ্য কবিতায় তাঁকে Poetic License দেওয়া যেতে পারে। এই সনেটের ‘ওরে বাছা, মাতৃ – কোষে রতনের রাজি,’ হতে ‘মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।’ পর্যন্ত পংক্তি কয়টি বাংলা সনেটের রচনাগত উৎকর্ষ যেমন প্রমাণ করে তেমনি মধুসূদনের আত্মার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ হিসাবে এটি চিরস্মরণীয়তার দাবী করতে পারে। সুতরাং পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে সনেট হিসাবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি সার্থক।

প্রশ্ন ৮। “তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,” 

এখানে ‘অবোধ’ কে? কেন তাকে ‘অবোধ’ বলা হয়েছে? তিনি কী অবহেলা করেছিলেন?

উত্তরঃ এখানে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেকে ‘অবোধ’ বা বুদ্ধিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথম জীবনে মাতৃভাষাকে অবহেলা করেছিলেন। তিনি বাল্যকাল থেকেই পাশ্চাত্য জীবনের বাহ্যিক চাক্‌চিক্য দর্শনে মোহগ্রস্ত হয়েছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে একদিন তিনি ইংরাজি সাহিত্যচর্চা করে বায়রন, মিলটন প্রমুখ ইংরেজ কবিদের সমগোত্রীয় হবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ইংরাজদের পোশাক – আশাক, চাল – চলন ইংরাজি সাহিত্যচর্চা, ইংরেজ রমনীকে বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ এবং তৎপরে ফরাসী মহিলাকে বিবাহ, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছিলেন। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করাতে তাঁর পিতা তাঁকে ত্যাজ্য করেন। তিনি ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ চলে যান এবং সেখানে The Captive Lady নামে একখানা কাব্য রচনা করেন। কিন্তু ইংরাজরা Native কবির কাব্যখানার যথেষ্ট সমাদর করেন নি। জীবনের অধিকাংশ সময় কবি পাশ্চাত্য মরীচিকার পশ্চাদ্ধাবন করেছিলেন বলে নিজেকে ‘অবোধ’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

কবি মধুসূদন মাতৃভাষাকে অবহেলা করেছিলেন। বঙ্গ জননীর ভাণ্ডারে যে কত রত্নরাজি সঞ্চিত রয়েছে তার অনুসন্ধান কবি বঙ্গে প্রত্যাবর্তনের পর অনুভব করতে পেরেছিলেন। তাই একদিন তিনি তাঁর মাতৃভাষা যা অমূল্য মণিজালে পরিপূর্ণ তাকে অবহেলা করেছিলেন বলে অনুতপ্ত হয়েছেন।

প্রশ্ন ৯। “অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,” 

কে, কাকে কায় – মন সঁপে দিয়েছিলেন? কেন তিনি অনিদ্রায় এবং অনাহারে দিনযাপন করেছেন?

উত্তরঃ এখানে কবি মধুসূদন দত্ত পাশ্চাত্ত্য জীবনশৈলী ও পাশ্চাত্ত্য সাহিত্যের প্রতি নিজের কায় – মন সমর্পণ করেছিলেন।

পাশ্চাত্য জীবনধারা ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ কবির জীবনে চরম দুর্দশা ডেকে আনে। পাশ্চাত্যের অনুরাগে তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। ফলে পিতা রাজনারায়ণ দত্ত তাঁকে ত্যাজ্য করেন। তিনি ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ যান। সেখানে দিনের বেলা শিক্ষকতা ও রাতে সংবাদপত্র সম্পাদনার কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু তাঁর অপরিমিত মদ্যপান ও বোহেমিয়ান জীবনপদ্ধতির জন্য অর্থের অনটন তাঁর জীবনে চিরসঙ্গী ছিল। তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে নিদারুণ বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। দিনের পর দিন তাঁকে অনাহারে কাটাতে হয়েছিল। তাই কবি উক্ত কথাটি বলেছেন।

প্রশ্ন ১০। ‘মজিনু বিফল তপে অবরণ্যে বরি’ 

কথাটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ মধুসূদন দত্ত জীবনের অধিকাংশ সময় পাশ্চাত্য জীবনধারা ও সাহিত্যের পশ্চাদধাবন করে কাটিয়েছিলেন। তিনি ইংরাজি সাহিত্যসাধনা করে একজন বিশ্ববরেণ্য ইংরাজি ভাষার সাহিত্যিকের শিরোপা লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হল না। নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট, অনিদ্রা-অনাহারের সেই সাধনার ফলে তিনি The Captive Lady নামক একটি কাব্য রচনা করেন। সেই কাব্য তাঁকে যশের শীর্ষ চূড়ায় তো নিয়ে গেলই না, বরঞ্চ ব্যর্থতা ও অবহেলার ‘বিষজ্বালা’ দান করে জর্জরিত করেছিল। তিনি পুনরায় মাতৃভাষার সাহিত্য-ক্রীড়াঙ্গনে ফিরে এলেন এবং তাঁর ঈপ্সিত যশলাভে সফল হলেন। নিজের মাতৃভাষার সাহিত্য-ভাণ্ডার যে বিবিধ রত্নরাজিতে পরিপূর্ণ তা তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হলেন। তিনি একদিন যে বহিরাগত ক্ষমতালিপ্সু এই বিদেশী জাতির অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণের বিফল তপস্যায় নিজেকে নিমগ্ন করেছিলেন — সেজন্য কবি অনুতপ্ত হয়ে উক্ত উক্তি করেছিলেন।

প্রশ্ন ১১। ‘কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন’ 

কবি এখানে কী ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছেন? ‘শৈবাল’ ও ‘কমল – কানন কীসের সঙ্গে তুলনীয়?

উত্তরঃ কবি মধুসূদন তাঁর জীবনের পূর্বাহ্নে যে ভুল করেছিলেন, সেই ভুলের পরিণাম তিনি ভোগও করেছিলেন। নিজের মাতৃভাষা ও বঙ্গ-সাহিত্যকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বিষম অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন ইংরাজ তোষণ ও ইংরাজি সাহিত্য সাধনা দ্বারা তিনি একদিন বায়রন, মিল্টন প্রমুখ কবিদের সমগোত্রীয় হবেন। কিন্তু তাঁর আশা ফলবতী হল না। ব্যর্থ কবি পুনরায় মাতৃভাষার শীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। বঙ্গের কুললক্ষ্মী যেন তাঁকে চোখে আঙুল দিয়ে তাঁর ‘ভিখারি দশা’ – র স্বরূপ বুঝিয়ে দিলেন। বঙ্গভাষার সাহিত্যভাণ্ডার যে কাব্য – মহাকাব্য – মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী, গীতিকাব্য, আখ্যানকাব্য ইত্যাদি নানা রত্নে পরিপূর্ণ তা কবি অনুধাবন করতে পারলেন। তখন তিনি স্বীয় ভুলের অনুশোচনা করে যে স্বীকারোক্তি করেন তাতে বলেন যে এতদিন তিনি যেন কমল-কানন সুশোভিত সুবাসিত স্বচ্ছ জলের সরোবর ত্যাগ করে শৈবাল আচ্ছাদিত ডোবায় জলক্রীড়া করেছেন।

কবি মধুসূদন শৈবালের উপমা দ্বারা ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের এবং কমল – কানন দ্বারা বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের উল্লেখ করে কবিতাটিতে এক অপূর্ব ব্যঞ্জনার সঞ্চার করেছেন।

সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা

১। “হে বঙ্গ-ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—”

উত্তরঃ আলোচ্য পংক্তিটি বাংলা সাহিত্যের মহাগৌরব মাইকেল মধুসূদন দত্তর বিখ্যাত সনেট ‘বঙ্গভাষা’ থেকে গৃহীত হয়েছে। এই অংশে কবির আত্মবিলাপের সুর স্পষ্ট।

বাংলা ভাষার জননী সংস্কৃত। যে-কোন ভাষা কতখানি সমৃদ্ধ তা জানতে হলে লক্ষ্য করতে হবে তার ইতিহাস। পর্বত থেকে যেমন বরফগলা জলধারা শুষ্কভূমিকে শীতল করে, তেমনি সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষাও নদীপ্রবাহের মতো জন্মলাভ করে, এক কূল ভেঙে এক কূল সৃষ্টি করে, অলক্ষ্যে ভাষা-উপভাষার পরিপূর্ণতায় আমাদের করেছে সদাবর্ণময়। সুদূর চর্যাপদের যুগ থেকেই বঙ্গজননী তারা রাঙা মুখখানির আবরণ যেন ধীরে ধীরে মোচন করতে শুরু করেছে। পরবর্তীযুগে ‘নব জয়দেব’ খ্যাত বিদ্যাপতি আমাদের দিলেন ব্রজবুলি — যা আজো বাংলা ভাষাবিদদের করে রোমাঞ্চিত। তাঁর প্রায় সমকালে কবি চণ্ডীদাসও বাংলা ভাষায় এক ভয়ঙ্কর ঝড় তুলে দান করে গেলেন সুললিত বাংলা পদাবলি। তাঁর পদছায়ায় বসে লোচনদাস, বৃন্দাবনদাস, কৃষ্ণদাস, জয়ানন্দ, গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস ইত্যাদি যুগন্ধর কবিরা এক এক করে নির্মাণ করলেন বাংলা সাহিত্যের সুবিশাল ভাণ্ডার। যে ভাণ্ডারে নিয়ত ঝিকমিকি করছে সমুদ্রগর্ভজাত রত্নখনির থেকেও মূল্যবান সম্পদসমূহ।

২। “ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি, 

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তর ‘বঙ্গভাষা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবির ভিখারি দশা দেখে কুললক্ষ্মী তার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন।

যুবক বয়স থেকেই কবি ইংরাজি ভাষায় কবিতা রচনা করে খ্যাতিলাভের আকাঙ্ক্ষা গভীরভাবে পোষণ করতেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্যে অবগাহন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ইংরাজিতে যে দুখানি কাব্য রচনা করলেন তাতে সমাদর পেলেন না। তৎকালীন ভারতপ্রেমিক বেথুন সাহেবের পরামর্শে তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেন। বঙ্গমাতার সাহিত্যের ভাণ্ডার যেন তাঁর দিব্যদৃষ্টি খুলে দেয়। তিনি লক্ষ্য করলেন বাংলা ভাষা এমনিই রত্নরাজিতে পরিপূর্ণ যে তার উৎকর্ষের পরিমাপ বোধহয় কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। ‘মাতৃ-কোষে রতনের রাজি’ এই রূপক রচিত করে মধুসূদন এখানে বঙ্গভাণ্ডারের কাব্যভাবের গভীরতা উল্লেখ করেছেন। বাংলা ভাষায় যে সমস্ত সাহিত্য ইতিপূর্বে রচিত হয়েছে তার বৈচিত্র্য এবং উৎকর্ষতা অপরিমেয়। এতদিন বিদেশি কাব্যসাধনায় মনপ্রাণ সমর্পণ করে শূন্যতা ব্যতীত অন্য কিছুই অর্জন করতে পারেন নি। অথচ নিজ ভাষায় তাঁর পূর্বসূরীদের রচিত মঙ্গলকাব্য ছিল তাঁর প্রাপ্য কাব্যসম্পদ — যা তাঁকে দিয়েছে পরবর্তীতে অতুলনীয় প্রেরণা। যা পেয়ে তিনি হয়েছেন মুগ্ধ ও বিহ্বল।

৩। “কাটাইনু বহুদিন সুখ পরিহরি।

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তর ‘বঙ্গভাষা’ নামক সনেট থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবির বিদেশে বসবাসের দুঃখ বর্ণিত হয়েছে।

হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে মাইকেল মধুসূদন ইংরাজি প্রভাবে অসম্ভব অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন মিলটন, শেলী, পেত্রার্ক, শেক্সপীয়র, টেনিসন ইত্যাদি কবিদের মতো ইংরাজি সাহিত্য রচনা করে পৃথিবীর বুকে নিজ কীর্তি প্রতিষ্ঠা করে যাবেন। নিজের মাতৃভাষায় যেখানে কাব্যসাধনা সহজসাধ্য সেখানে কবি সেই সম্ভাবনা ভুলে বিদেশি কাব্যচর্চা করেছেন। ফলে তাঁকে নানাভাবে অর্থকষ্টে পড়তে হয়েছে। এই বাক্য কবির সম্যক স্বীকারোক্তি এবং আত্মসমালোচনাও বটে। ইউরোপীয় সমাজে প্রতিষ্ঠার লোভে কবিকে অনেকগুলি ভাষায় মনঃসংযোগ করতে হয়েছে। এজন্য নিরলস সাধনার প্রয়োজন। ফলে শরীর – মন হয়েছে ক্লান্ত, অবসন্ন। মাদ্রাজে বসবাসকালে প্রত্যহ অতি গুরুতর পরিশ্রমে তিনি বিদেশি বহু ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেছেন। ফলে শারীরিক ও মানসিক শ্রম তাঁর জীবনীশক্তিকে নিঃশেষ করেছে। ইংরাজি কাব্যচর্চায় যে কৃচ্ছ্রসাধন তিনি করেছেন তা হয়েছে ভস্মে ঘি ঢালার সমতুল। ইংরাজিতে দুটি কাব্য লিখে তিনি যথোচিত ও স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেন নি। এই সমস্ত ঘটনাই কবির সুগভীর মনস্তাপের কারণ।

৪। ‘পালিলাম আজ্ঞ সুখে; পাইলাম কালে

মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তর ‘বঙ্গভাষা’ নামক সনেট থেকে উদ্ধৃত। এখানে আত্মসমালোচনার পর কবির আত্মসুখ বর্ণিত হয়েছে।

কবিতাটির শেষাংশে কবির যথেষ্ট আত্মতৃপ্তির সুর পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রথম জীবনে কবি ইংরাজি ভাষায় বিদ্যার্জন করে, ইংরাজি সাহিত্যে স্বীয় কীর্তি প্রতিষ্ঠার বাসনায় অকল্পনীয় সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর রচিত ইংরাজি কাব্যদুটি সমাদর পায়নি। এই ঘটনায় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রিয়জনদের পরামর্শে বাংলা ভাষায় কাব্যচর্চা শুরু করেছেন পরিপূর্ণ অনুরাগে। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি সুখ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হন। কবির যশোপ্রাপ্তিতেই ‘বঙ্গভাষা’ নামক সনেটটি তাঁর লেখনীতে সুগভীর ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে ওঠে। কবি বুকভরা আনন্দ নিয়ে বঙ্গজননীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপলব্ধি করেছেন খনির মতো অনন্ত রত্নের উৎস মাতৃভাষা। খনি থেকে যেমন হাজার প্রকারের রত্ন পাওয়া যায়, তেমনি কবি তাঁর বঙ্গজননীর খনিস্বরূপ সাহিত্যভাণ্ডার থেকে আহরণ করেছেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত রত্নরাজি। কবিকণ্ঠে বাংলা সাহিত্যে যে ‘পূর্ণ মণিজালে’ শব্দটি ধ্বনিত হয়েছে তা একটি রূপক অলঙ্কার। প্রকৃতপক্ষে কবি তাঁর পূর্বজ কবি জয়দেব, ভারতচন্দ্র, কবিকঙ্কণ কৃত্তিবাস, কাশীরাম প্রমুখের রচিত কাব্যসম্ভারে বিস্মিত হয়েছেন এবং অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

FAQs

Question: Where I can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise?

Answer: You can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise On Roy Library. For every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly.

Question: Which is the best Site to get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions?

Answer: Roy Library is a genuine and worthy of trust site that offers reliable information regarding Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions.

Question: How can students use the solutions for exam preparation?

Answer: Students can use the solutions for the following:

  • Students can use solutions for revising the syllabus.
  • Students can use it to make notes while studying.
  • Students can use solutions to understand the concepts and complete the syllabus.

IMPORTANT NOTICE

We have uploaded this Content by Roy Library. You can read-write and Share your friend’s Education Purposes Only. Please don’t upload it to any other Page or Website because it is Copyrighted Content.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top