Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) is a textbook prescribed by the AHSEC Board Class 12 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) Solutions are free to use and easily accessible.
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর 2023, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর 2023 pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস মক টেস্ট, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর pdf, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ছোট প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস নোট, উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস।
Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ)
Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) Question Answer in Bengali. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Hs 2nd year History, Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) question answer in Bengali gives you a better knowledge of all the chapters. Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) Assam AHSEC Board HS 2nd Year, Class 12 History Chapter 3 জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ) Answers The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. Class XII History Solutions Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Textbooks. HS 2nd Year History Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
প্রশ্নঃ ১৭। প্রাচীন ভারতে অস্পৃশ্যদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আভাস দাও।
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতে অস্পৃশ্য জাতিদের অবস্থা খুবই করুণ ছিল। সমাজে তাদের সর্বনিম্ন অবস্থানে রাখা হয়েছিল। উঁচু শ্রেণির লোকেদের স্পর্শ করার অধিকার ছিল না তাদের। উঁচু শ্রেণির লোকেরা তাদের স্পর্শ করা খাদ্য বা জল গ্রহণ করতেন না। তাদের গ্রামের বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করা হত। এরা পরিত্যক্ত বাসন ব্যবহার করত এবং মৃত ব্যক্তির কাপড় পরিধান করত। এদের অলংকার লোহা দ্বারা নির্মিত হত এবং রাত্রে এরা গ্রাম বা শহরে চলাচল করতে পারত না। চীনা পরিব্রাজক ফা হিয়ান লিখেছিলেন যে অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী পথ চলার সময় হাততালি দিতে হত যাতে অন্যান্য পথচারী এদেরকে দেখা পরিহার করতে পারে। অন্য আরেক চীনা পরিব্রাজক হুয়ান জং লক্ষ্য করেছিলেন যে জল্লাদ এবং আবর্জনা পরিষ্কারকারীদের বলপূর্বক নগরের বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করা হত।
প্রশ্নঃ ১৮। বর্ণ বলতে কী বোঝ ? এই ব্যবস্থা কার্যকরী করতে ব্রাহ্মণরা কী কী উপায় উদ্ভাবন করেছিলেন?
উত্তরঃ ব্রাহ্মণ্য মতবাদ অনুযায়ী সমাজের মানুষকে মর্যাদা অনুযায়ী উচ্চ হতে নিম্নে চারটি সামাজিক শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এই বিভাজন প্রথা জন্মসূত্রের উপর নির্ভরশীল ছিল। এই প্রথাকে বর্ণপ্রথা বলা হয়।
এই রীতি প্রচলন করার জন্য ব্রাহ্মণগণ দুই বা তিনটি কৌশল প্রয়োগ করেন। প্রথমতঃ তারা এটা দৃঢ়তার সঙ্গে দাবী করেন যে এই বর্ণাশ্রম ঈশ্বরের নির্দেশে সৃষ্টি করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ তারা রাজন্যবর্গকে এই আদর্শবিধির প্রচলন করতে উৎসাহিত করেন এবং তৃতীয়তঃ তারা জনসাধারণকে এটা বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করতেন যে তাদের সামাজিক মর্যাদা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হবে। যদিও এই উপায় সর্বদা সহজ ছিল না সুতরাং বিধানগুলি প্রায়ই বলীয়ান করা হত মহাভারত ও অন্যান্য গ্রন্থে বলা কাহিনির মাধ্যমে।
প্রশ্নঃ ১৯। বি. বি. লাল কে ছিলেন? তিনি হস্তীনাপুর গ্রামে খনন কার্য চালিয়ে কী খুঁজে পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ বি.বি. লাল ছিলেন একজন ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদ। উনি 1951-52 সালে উত্তর প্রদেশের মীরাটের অন্তর্গত হস্তিনাপুর গ্রামে খননকার্য চালান।
এই খনন কার্যে লাল পাঁচটি পর্যায়ে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পেয়েছেন যেখানে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহাদি সম্পর্কে লাল লিখেছেন যে সেখানে গৃহাদির নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা দেখা যায়নি কিন্তু কাদার নির্মিত প্রাচীর এবং মাটির ইট দেখতে পাওয়া গিয়েছে। গৃহ সমূহের দেওয়াল নল খাগড়া দ্বারা নির্মিত করে মাটি লেপন করা হত। তৃতীয় পর্যায়ের ঘরগুলি মাটির ইট এবং পোড়া ইট উভয়ের দ্বারাই নির্মিত হত, শোষণ পাত্র এবং ইট নির্মিত পয়োপ্রণালী বর্জ্য জল নিকাশে ব্যবহৃত হত, যেখানে টেরাকোটা নির্মিত গোলাকার কূপ এবং আবর্জনার গর্ত উভয়ই ব্যবহার হত।
প্রশ্নঃ ২০। গ্রন্থসমূহ বিশ্লেষণ করার সময় ঐতিহাসিকগণ কী কী বিষয়ের প্রতি নজর দেন?
অথবা,
পাঠ্যপুস্তককে মাধ্যম হিসাবে নিতে ইতিহাসবিদদের কী কথার প্রতি সচেতন দেনহতে হবে?
উত্তরঃ কোন গ্রন্থের বিশ্লেষণ করার সময় ঐতিহাসিকগণ নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি নজর দেন–
(i) তারা বিচার করেন গ্রন্থটি সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য কোন ভাষা যেমন প্রাকৃত, পালি অথবা তামিল না পুরোহিতবর্গের দ্বারা ব্যবহৃত সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
(ii) তারা এটা বিচার করতেন যে গ্রন্থটি কি শুধু আচার ও প্রথা বিশেষজ্ঞ দ্বারা অধীত মন্ত্র বা গীত না এটা আকর্ষক কোন গল্প যা জনসাধারণ পড়ত বা বলত। অর্থাৎ গ্রন্থের নমুনা বিচার করা হত।
(iii) তারা গ্রন্থকার বা গ্রন্থকারগণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন যাদের দৃষ্টিকোণ এবং ভাবনাসূত্র গ্রন্থটির রূপ দিয়েছে।
(iv) তারা গ্রন্থের রচনা অথবা সংকলনের সম্ভাব্য তারিখ এবং স্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
(v) তাছাড়া ঐতিহাসিকগণ গ্রন্থের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য বোঝার লক্ষ্যে গ্রন্থের বিষয়বস্তুর উপর মনোনিবেশ করেন।
প্রশ্নঃ ২১। মনুস্মৃতি অনুসারে চণ্ডালদের কী দায়িত্ব ছিল?
উত্তরঃ যে সকল ব্যক্তি শবদেহ সৎকার করত এবং মৃতপশু ইত্যাদিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করত এবং এই সম্বন্ধীয় কার্যে নিযুক্ত থাকত তাদের চণ্ডাল বলা হত।
মনুস্মৃতিতে চণ্ডালদের দায়িত্ব লিপিবদ্ধ করা ছিল। এদের বসবাস গ্রামের বাইরে নির্ধারিত ছিল এবং এরা পরিত্যক্ত বাসনাদি ব্যবহার করত। চণ্ডালরা মৃত মানুষের কাপড় পরত এবং লৌহ নির্মিত অলংকার পরিধান করত। নিশাকালে গ্রাম এবং শহরে এদের বিচরণে নিষেধ ছিল। আত্মীয় বন্ধুহীন মৃতের সৎকার এদের করতে হত এবং প্রয়োজনে এরা জল্লাদের কাজ করত। চীনা পরিব্রাজক ফা হিয়ান লিখেছিলেন যে অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী পথ চলার সময় হাততালি দিতে হত যাতে অন্যান্য পথচারী এদেরকে দেখা পরিহার করতে পারে। আরেক চীনা পরিব্রাজক হুয়ান জং লক্ষ্য করেন যে জল্লাদ ও আবর্জনা পরিষ্কারকারীদের বলপূর্বক নগরের বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করা হত।
প্রশ্নঃ ২২। সাধারণ পূর্ব 600 কাল থেকে সাধারণ কাল 600 পর্যন্ত বিবাহের রীতিসমূহের আলোচনা করো।
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের বিবাহের রীতিসমূহ ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্র থেকে জানতে পারা যায়। তাছাড়া মনুস্মৃতি থেকেও বিবাহের নিয়ম সম্বন্ধে আভাস পাওয়া যায়। ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্রে মোট আট প্রকারের বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে যে সকল প্রথা ব্রাহ্মণ্য রীতিতে অনুমোদিত ছিল সেগুলিকে শুভ এবং অন্যগুলিকে অশুভ বা নিন্দিত বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণ্য রীতি অনুসারে একই গোত্রের স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল এবং বিবাহের পরে ভিন্ন গোত্র থেকে আসা স্ত্রীগণ পিতার গোত্র ত্যাগ করে স্বামীর গোত্র গ্রহণ করতেন। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের বহু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই গোত্রের মধ্যে বিবাহের রীতি বা অন্তর্বিবাহ প্রচলিত ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলারা পিতার গোত্রই ধরে রাখতেন এবং তাদের পুত্ররা তাদের মায়ের গোত্রে পরিচিতি লাভ করত।
প্রশ্নঃ ২৩। মহাভারতের ভাষা এবং বিষয়কে কীভাবে বিভাজিত করা হয়েছিল?
উত্তরঃ মহাভারতের প্রকৃত গ্রন্থটি প্রথমে সংস্কৃত ভাষায় লিখা হয়েছিল। মহাভারতে ব্যবহৃত সংস্কৃত ভাষা বেদে ব্যবহৃত অথবা ‘প্রশস্তিতে’ ব্যবহৃত সংস্কৃত ভাষা থেকে সহজতর ছিল এই কারণেই গ্রন্থটি সকলের বোধগম্য ছিল।
ইতিহাসবিদগণ মহাভারত গ্রন্থটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগ হল উপাখ্যান। এই ভাগে মূল গল্পটি বলা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ভাগটি হল নীতিগর্ভ অংশ। এই অংশে সামাজিক মূল্যবোধ এবং উপদেশসমূহ যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন কাহিনি যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই বিভাজন কোন ভাবেই নিশ্ছিদ্র নয়। অর্থাৎ উভয় অংশেরই অন্য অংশের সঙ্গে সমাবর্তন ঘটেছে। যেমন নীতিগর্ভ অংশে গল্প বা কাহিনি থাকে এবং অন্যদিকে উপাখ্যান অংশে সামাজিক সন্দেশও পাওয়া যায়। তবে সাধারণতঃ ঐতিহাসিকগণ একমত যে মহাভারত রচনা করা হয়েছিল একটি নাটকীয় আবেগপূর্ণ কাহিনি হিসাবে। নীতিগর্ভ অংশ সম্ভবতঃ পরে সংযোজিত করা হয়।
প্রশ্নঃ ২৪। বিভিন্ন পর্যায়ে মহাভারত কীভাবে রচিত হয়েছিল?
উত্তরঃ খুব সম্ভবত মহাভারতের মূল কাহিনি রথচালক চারণ কবি অর্থাৎ ‘সূত’ দের দ্বারা রচিত হয়েছিল। সাধারণ পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মণগণ এই কাহিনি লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন। এই সময় হতে গোষ্ঠীশাসিত অঞ্চলগুলি রাজ্যে রূপান্তরিত হচ্ছিলো। আনুমানিক সাধারণপূর্ব 200 কাল হতে সাধারণকাল 200 শতকের মধ্যে গ্রন্থটি রচনার আরও একটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ে বিষ্ণুর আরাধনা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং কৃষ্ণকে বিষ্ণুর সাথে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরবর্তীকালে আনুমানিক 200 এবং 400 সাধারণকালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশাল নীতিগর্ভ অংশ সংযোজিত হয়। এই সকল সংযোজনের ফলে এই গ্রন্থ 10,000 স্তবক থেকে 1,00,000 স্তবকের আকার ধারণ করে। আধুনিক কালে 1919 সালে বিখ্যাত সংস্কৃত বিশেষজ্ঞ ভি. এস. সুকথংকরের নেতৃত্বে কিছু পণ্ডিত 47 বৎসর সময় ধরে মহাভারতের বিশ্লেষণধর্মী সংস্করণ প্রস্তুত করেন।
প্রশ্নঃ ২৫। ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্রগুলোর বিধান দেওয়া চারটি বর্ণের আদর্শ বৃত্তিগুলি কী কী ছিল?
উত্তরঃ ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্রগুলো সমাজের চারটি বর্ণের জন্য কতিপয় আদর্শ বৃত্তির বিধান দিয়েছিল। ব্রাহ্মণগণ বেদ অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা করবেন, যজ্ঞ সম্পন্ন করবেন এবং করাবেন। তাঁরা উপহার প্রদান ও গ্রহম দুই-ই করবেন। ক্ষত্রিয়েরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন, জনসাধারণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন, ন্যায় বিধান করবেন, বেদ অধ্যয়ন করবেন, যজ্ঞ সম্পন্ন করাবেন এবং উপহার প্রদান করবেন। শেষোক্ত টিনটি বৈশ্যদেরও কৃত্য। বৈশ্যদের পেশাছিল কৃষিকাজ, পশুচারণ এবং বাণিজ্য। অন্যদিকে শূদ্রদের মূল পেশা ছিল দাসত্ব এবং বাকি তিন বর্ণের সেবা করা।
প্রশ্নঃ ২৬। কোন স্মৃতিশাস্ত্র চণ্ডালদের কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল? এই গ্রন্থটির মতে চণ্ডালদের কর্তব্যগুলো কী কী ছিল?
উত্তরঃ মনুস্মৃতি চণ্ডালদের কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
মনুস্মৃতিতে চণ্ডালদের দায়িত্ব লিপিবদ্ধ করা ছিল। এদের বসবাস গ্রামের বাইরে নির্ধারিত ছিল এবং এরা পরিত্যক্ত বাসনাদি ব্যবহার করত। চণ্ডালরা মৃত মানুষের কাপড় পরত এবং লৌহ নির্মিত অলংকার পরিধান করত। নিশাকালে গ্রাম এবং শহরে এদের বিচরণে নিষেধ ছিল। আত্মীয় বন্ধুহীন মৃতের সৎকার এদের করতে হত এবং প্রয়োজনে এরা জল্লাদের কাজ করত। চীনা পরিব্রাজক ফা হিয়ান লিখেছিলেন যে অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী পথ চলার সময় হাততালি দিতে হত যাতে অন্যান্য পথচারী এদেরকে দেখা পরিহার করতে পারে। আরেক চীনা পরিব্রাজক হুয়ান জং লক্ষ্য করেন যে জল্লাদ ও আবর্জনা পরিষ্কারকারীদের বলপূর্বক নগরের বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করা হত।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্নঃ ১। মহাভারত কী? এর বিশ্লেষণাত্মক সংস্করণ কীভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল?
অথবা,
কীভাবে বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন পর্যায়ে মহাভারত সংকলিত হয়েছিল?
অথবা,
কীভাবে পণ্ডিতগণ মহাভারতের প্রতিটি পাণ্ডুলিপি হতে স্তবকগুলি তুলনা করে মহাভারতের বিশ্লেষণাত্মক সংস্করণ প্রস্তুত করেছিলেন?
উত্তরঃ মহাভারত হল ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ এবং সর্ববৃহৎ কাব্যগ্রন্থ।
মহাভারতের রচনা 1000 বৎসরেও বেশি এক দীর্ঘ সময় জুড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে হয়েছিল। এর মূল কাহিনি হচ্ছে যুধ্যমান দু’দল ভ্রাতার কাহিনি। এই গ্রন্থের উচ্চাভিলাষী পাণ্ডিত্যপূর্ণ পরিকল্পনা শুরু হয় 1919 সনে। বিখ্যাত সংস্কৃত বিশেষজ্ঞ ভি.এস. সুকথংকর এর নেতৃত্বে কয়েক ডজন পণ্ডিতের একটি দল মহাভারতের বিশ্লেষণধর্মী সংস্করণ প্রস্তুত করার কাজের সুত্রপাত করেন। প্রাথমিকভাবে এদের কাজ ছিল বিভিন্ন লিপিতে গ্রন্থটির সংস্কৃত পাণ্ডুলিপি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সংগ্রহ করা। নির্দিষ্ট দলটি প্রতিটি পাণ্ডুলিপি হতে স্তবকগুলি তুলনা করার একটি পদ্ধতি বের করেছিল। অবশেষে এরা সেই স্তবকগুলি বাছাই করে যেগুলি অধিকাংশ ভাষান্তরে পাওয়া যায়। এবং তারা সেগুলিকে বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিত করেন। মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা 13,000 এরও বেশি ছিল। এই সম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করতে 47 বৎসর সময় লেগেছিল। এতে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
প্রথমত কাহিনিটির সংস্কৃত সংস্করণের সদৃশ অনেক উপাদান ছিল। এটা উত্তরে কাশ্মীর ও নেপাল থেকে দক্ষিণে তামিলনাড়ু এবং কেরালা পর্যন্ত সমগ্র উপমহাদেশে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপি হতে তা সুস্পষ্ট হয়।
দ্বিতীয়তঃ শতাব্দী হতে শতাব্দী যেভাবে গ্রন্থটি হস্তান্তরিত হয়েছে সেখানেও আঞ্চলিক বৈষম্য বৈচিত্র্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই বৈষম্যগুলি মূলগ্রন্থের পাদটীকা এবং ‘পরিশিষ্ট’ অংশে প্রামাণ্য অংশ হিসাবে সন্নিবেশিত থাকে। এই সকল বিচিত্রতা 13,000 পৃষ্ঠার অর্ধেকেরও বেশিতে বর্ণিত হয়েছে। এই বৈচিত্র্যময়তাগুলি পূর্ব ও পরবর্তী সামাজিক ইতিহাসকে আকার দেবার জটিল প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। এই প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে আমাদের বোধ উৎপন্ন হয়েছে মূলতঃ ব্রাহ্মণদের জন্য ব্রাহ্মণদের দ্বারা লিখিত বই সমূহ হতে। যখন প্রথমে সামাজিক ইতিহাসের বিষয়গুলি ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ঐতিহাসিকগণ যত্ন সহকারে পরীক্ষা করেন তখন তাঁরা ঐ গ্রন্থাবলিতে উল্লেখ করা বিষয় গভীরে না গিয়েই গ্রহণ করেন কারণ তারা বিশ্বাস করেছিলেন যে লিখিত সকল কিছুই বাস্তবে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে, পণ্ডিতেরা পালি, প্রাকৃত এবং তামিল ভাষায় লিখিত অন্যান্য পরম্পরাও অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। এই গবেষণা নির্দেশ করে যে আদর্শসমন্বিত সংস্কৃত গ্রন্থাবলিতে সন্নিহিত ভাবনাসমূহ সামগ্রিকভাবে প্রামাণ্য হিসাবে স্বীকৃত। এ সমস্ত কোন কোন সময় প্রশ্নেরও সম্মুখীন হয়েছে আবার কখনও নাকচ করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্নঃ ১। কেন পিতৃগোত্রজ বিশেষ করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে হয়ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের অভিজাত পরিবারগুলিতে- পিতৃতান্ত্রিক আদর্শ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হত। কারণ অভিজাত পরিবার সমূহ ব্রাহ্মণ্য রীতি দ্বারা পরিচালিত হত। ব্রাহ্মণ্য রীতিসমূহ ধর্মশাস্ত্র এবং ধর্মসূত্র গ্রন্থ দ্বারা পরিচালিত হত। ধর্মশাস্ত্র অনুসারে পুরুষকে পরিবারের প্রধান মানা হত। অন্যদিকে মনুস্মৃতি অনুসারে কোন একজন পুরুষের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে তার পুত্রদের মধ্যেই ভাগ করে দেওয়া হত। মনুস্মৃতি অনুসারে মহিলাদের উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি আহরণের রীতি ছিল না। এই সমস্ত কারণে পুরুষের প্রাধান্য সমাজে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। অভিজাত পরিবারগুলি ঋগ্বেদ মনুস্মৃতি তথা ধর্মশাস্ত্র ইত্যাদি গ্রন্থের প্রদত্ত ধারা অনুসারে পরিচালিত হওয়ার ফলে এই ধরনের পরিবারে পিতৃতান্ত্রিক আদর্শগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হত। তাছাড়া পুত্র সন্তান বংশের অগ্রগতি বজায় রাখতে পারত বলে পুত্র সন্তান পরিবারে বেশি সমাদৃত হত। এভাবেই অভিজাত পরিবারগুলি পিতৃগোত্রজ প্রতিস্থাপিত হয়।
প্রশ্নঃ ২। পূর্বের রাষ্ট্রগুলিতে রাজারা কি নিশ্চিত ভাবেই ক্ষত্রিয় বংশজাত হতেন? আলোচনা করো।
উত্তরঃ ধর্মশাস্ত্র এবং ধর্মসূত্র অনুযায়ী চারটি বর্ণের মানুষের জন্য আদর্শ জীবিকার বিধান রয়েছে। এই অনুসারে শুধুমাত্র ক্ষত্রিয় বংশজাতরাই রাজা হতে পারতেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাসক বংশের সম্ভবতঃ ভিন্নতর উৎস ছিল। মৌর্য বংশ এক বিশাল সাম্রাজ্যের আধিপত্য করলেও এই বংশের শাকদের ব্রাহ্মণ্য গ্রন্থে নিম্নবর্ণের বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শুঙ্গ এবং মৌর্যবংশের উত্তরাধিকারীগণ ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাছাড়া শকগণকে ব্রাহ্মণরা ‘ম্লেচ্ছ’ বর্বর অথবা ‘বহিরাগত’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করেছিলেন। যা থেকে তাদের অক্ষত্রিয় হওয়া নিশ্চিত করে বোঝায়। অন্যদিকে সাতবাহন বংশের বিখ্যাত শাসক গৌতমীপুত্র সিরি সাতকার্ণী একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন। এর থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে যদিও ধর্মশাস্ত্র এবং ধর্মসূত্র মতে শুধু ক্ষত্রিয়রাই রাজা হতে পারতেন কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা যেকোন ব্যক্তি যিনি সম্পদ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের শক্তি রাখতেন তার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
প্রশ্নঃ ৩। দ্রোণ, হিড়িম্বা এবং মাতঙ্গের কাহিনিতে উল্লেখিত ‘ধর্ম’ অথবা আদর্শের তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তরঃ (i) দ্রোণের কাহিনি – দ্রোণ ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ। কিন্তু তিনি অস্ত্র শিক্ষা দিতেন এবং যুদ্ধে অংশ নিতেন যা ব্রাহ্মণ্যরীতির বিরুদ্ধে ছিল। কারণ ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্র মতে শুধু মাত্র ক্ষত্রিয়রাই অস্ত্র শিক্ষা দান করবেন। যেহেতু একলব্য একজন নিষাদ পুত্র ছিলেন তাই দ্রোণ তাকে অস্ত্রশিক্ষা দেননি কারণ ব্রাহ্মণ্যরীতি অনুযায়ী নিষাদরা অস্ত্রশিক্ষার অধিকারী ছিলেন না। এক্ষেত্রে আবার দ্রোণ ব্রাহ্মণ্যরীতি অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। উচ্চ মাত্রার মেধা থাকা সত্ত্বেও একলব্য সামাজিক রীতির জন্য তার যোগ্য মর্যাদা পাননি। অন্যদিকে কাহিনিতে এটাও বোঝা যায় যে নামে মাত্র গুরু হওয়া সত্ত্বেও গুরুর সম্মানার্থে ও গুরুদক্ষিণা দানে একলব্য নিজের ডান হাতে বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে গুরুকে অর্পণ করেছিলেন। দ্রোণ একলব্যের আঙ্গুল দক্ষিণা হিসাবে গ্রহণ করে অর্জুনকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন যে তাকেই উনার সর্বশ্রেষ্ঠ শিষ্য হিসাবে গড়ে তুলবেন।
(ii) হিড়িম্বার কাহিনি – হিড়িম্বা এবং উনার ভ্রাতা ব্রাহ্মণ রীতির বিপরীতে মাংস গ্রহণ করতেন খাদ্য হিসাবে। তাছাড়া উনি মহিলা হয়েও তৎকালীন সামাজিক রীতির বিপরীতে একজন পুরুষকে (ভীম) প্রেম নিবেদন করেন এবং তাকে বিবাহ করেন। তাছাড়া হিড়িম্বার কাহিনি এটাও উল্লেখ করে যে রাক্ষস যারা ক্ষত্রিয়দের থেকে ভিন্ন বর্ণের ছিলেন সেই রাক্ষস মহিলার সঙ্গে ক্ষত্রিয় ভীমের বিবাহ হয়েছিল যা ব্রাহ্মণ্য রীতি এবং ধর্মশাস্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল।
(iii) মাতঙ্গের কাহিনি – মাতঙ্গ একজন চণ্ডাল ছিলেন যার নগরে প্রকাশ নিষেধ ছিল এবং ব্রাহ্মণ্য রীতি অনুযায়ী তার নগরে প্রবেশ নিষেধ ছিল। কিন্তু তিনি নগরে প্রবেশ করে বৈশ্য কন্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং একজন চণ্ডাল হয়েও তপস্যার দ্বারা ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেন যা ধর্মশাস্ত্রের নীতির বিরুদ্ধে ছিল। তাছাড়া একজন চণ্ডাল হয়েও একজন বৈশ্য কন্যাকে বিবাহ করেন। তিনি বলেছিলেন যে তপস্যা দ্বারা একজন অব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণত্ব লাভ করতে পারেন।
প্রশ্নঃ ৪। সামাজিক চুক্তি সম্পর্কে ‘পুরুষ শুক্ত’ হতে উদ্ভাবিত, ব্রাহ্মণ মতবাদ হতে বৌদ্ধ মতবাদ কীভাবে পৃথক?
উত্তরঃ ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্র সমাজের চারটি বর্গ বা বর্ণের জন্য আদর্শ পেশার বিধান করেছে। ব্রাহ্মণরা এই বর্ণ প্রথায় বিশ্বাসী এবং এর সমর্থক ছিলেন। এই প্রথা অনুযায়ী সমাজে ব্রাহ্মণদের স্থান ছিল সর্বোচ্চ এবং শূদ্রদের স্থান ছিল সব থেকে নিচে। নিজেদের দাবীর সমর্থনে ব্রাহ্মণগণ প্রায়ই ঋগ্বেদের স্তোত্রগীতের ‘পুরুষ শুক্ত’ নামক স্তবকটি উদ্ধৃত করতেন। এটি ‘পুরুষ’ আদিমানবের যজ্ঞ বর্ণনা করে। জগতের সকল উপাদান এবং সমাজের চারটি বর্ণ তার শরীর হতে সৃষ্টি হয়েছে বলে বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণগণ তাঁর মুখমণ্ডল, ক্ষত্রিয়গণ তার দক্ষিণহস্ত, বৈশ্যগণ তার উরু এবং শূদ্রগণ তার পা থেকে সৃষ্টি হয়েছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। হ্মণ্যরীতি অনুসারে সমাজের লোকগণকে চারটি ভাগে ভাগ করার পর প্রতিটি বর্ণের মানুষের জন্য আদর্শ জীবিকা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের জন্মের ভিত্তিতে তার বর্ণ নির্ধারণ করা হত।
সমাজ সম্পর্কে ব্রাহ্মণ্য দৃষ্টিভঙ্গী যখন আইনসিদ্ধ হচ্ছিল তখন অন্যান্য পরম্পরা সমূহে বর্ণাশ্রম সম্পর্কে সমালোচনামূলক প্রবন্ধ তৈরি হচ্ছিল। বৌদ্ধধর্মে প্রচলিত বর্ণপ্রথা মেনে নেওয়া হয়নি। বৌদ্ধগণ স্বীকার করতেন যে সমাজে বৈষম্য আছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক বা অনমনীয় মনে করতেন না। এরা জন্মসূত্রে সামাজিক মর্যাদার দাবিও স্বীকার করতেন না।
প্রশ্নঃ ৬। ভারতীয় সাহিত্যের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মরিস উইনটারনিৎস্ মহাভারত সম্বন্ধে লিখেছেন— “মহাভারত একটি সমগ্র সাহিত্য কর্মেরও অধিক বর্ণনা করে এবং এতে এত বিষদ ও এত ধরনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত এই কারণে এটি আমাদের ভারতীয় জনসাধারণের আত্মার নিগূঢ় গভীরতার প্রতি আমাদের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে…” আলোচনা করো।
অথবা,
“মহাভারত এমন একটি গ্রন্থ যা ভারতীয় জনজীবনের সকল ধরনের ধারণাকে বর্ণনা করে” — আলোচনা করো।
উত্তরঃ এটা অনস্বীকার্য যে মহাভারত যদিও একটি সাহিত্য ভাণ্ডার তথাপিও এই গ্রন্থ তৎকালীন ভারতীয় লোক সমাজের জীবনধারার সকল দিকের একটি বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করে।
তৎকালীন সময়ে যদিও সমাজ চারটি বর্ণে বিভাজিত ছিল তবুও বর্ণপ্রথা ততটা কঠোর ছিল না। লোকেরা বর্ণের জন্য নির্ধারিত জীবিকা ছাড়াও অন্য জীবিকা গ্রহণ করতে পারত। মহিলাদের সমাজে অনেক উঁচু স্থান দেওয়া হয়েছিল। তারা স্বয়ংবরের মাধ্যমে নিজের জন্য স্বামী পছন্দ করে নিতে পারবেন। মহাভারতের যুগে অনেক বীরত্বের কাহিনি বর্ণিত আছে। যুদ্ধে প্রাণ হারানোকে সম্মানের মৃত্যু বলে গণ্য করা হত। সে যুগে কিছু সামাজিক কু-প্রথাও প্রচলিত ছিল যেগুলির মধ্যে ছিল পাশার সাহায্যে জুয়া খেলা, বহুগামীতা, ছলচাতুরী ইত্যাদি। সে যুগে সাধারণ মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। তাছাড়া লোকে পশুপালন, ব্যবসা, হস্তশিল্প ইত্যাদি পেশাও গ্রহণ করত। সেযুগে লোকে বিভিন্ন দেবতার আরাধনা করত, তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি ইত্যাদি। দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকার কথা প্রমাণ করে যে সেযুগে মহিলাদের একাধিক পতি থাকার প্রথারও প্রচলন ছিল। বাস্তবিক অর্থে মহাভারতের মূল ঘটনা এবং এতে বর্ণিত বিভিন্ন উপাখ্যানসমূহ তৎকালীন ভারতীয় সমাজের সামাজিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় আস্থা, অর্থনৈতিক জীবন সমস্ত কিছুই প্রতিফলিত করে। এজন্যই মরিস উইন্টারনিংসের উক্তি সর্বতো ভাবেই গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্নঃ ৭। মহাভারত কি একজন মাত্র রচয়িতার সাহিত্য কর্ম? আলোচনা করো।
উত্তরঃ মহাভারত একটি বিশাল মহাকাব্য। এই মহাকাব্যে 1,00,000 এরও বেশি স্তবক আছে। মহাভারতের মূল কাহিনি দুটি বিবাদমান গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কাহিনি। মূল কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপাখ্যান গ্রন্থটিতে বিভিন্ন সময়ে সংযোজিত হয়েছে। কোন একজন লেখক বা কবির পক্ষে এই বিশাল মহাকাব্য লিখা এবং বিভিন্ন সময়ে এতে সংযোজন করা অসম্ভব ছিল। খুব সম্ভবত মহাভারতের মূল কাহিনি রথচালক চারণ কবি অর্থাৎ ‘সূত’দের দ্বারা রচিত হয়েছিল। সাধারণ পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মণগণ এই কাহিনি লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন। এই সময় হতে গোষ্ঠীশাসিত অঞ্চলগুলি রাজ্যে রূপান্তরিত হচ্ছিলো। আনুমানিক সাধারণ পূর্ব 200 কাল হতে সাধারণ কাল 200 শতকের মধ্যে গ্রন্থটি রচনার আরও একটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ে বিষ্ণুর আরাধনা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে এবং কৃষ্ণকে বিষ্ণুর সাথে চিহ্নিত করা শুরু হয়। পরবর্তীকালে আনুমানিক 200 এবং 400 সাধারণ কালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশাল নীতিগর্ভ অংশ সংযোজিত হয়। এই সকল সংযোজনের ফলে এই গ্রন্থ 10,000 স্তবক থেকে 1,00,000 স্তবকের আকার ধারণ করে। যদিও এই বিশাল রচনা সম্ভারের শ্রেয়, পরস্পরাগতভাবে একজন ঋষি ব্যাসকে দেওয়া হয় কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবি এবং লেখক এর সম্ভারে সংযোজন করেন। আধুনিক কালে 1919 সালে বিখ্যাত সংস্কৃত বিশেষজ্ঞ ভি.এস্. সুকথংকরের নেতৃত্বে কিছু পণ্ডিত 47 বৎসর সময় ধরে মহাভারতের বিশ্লেষণ ধর্মী সংস্করণ প্রস্তুত করেন।
প্রশ্নঃ ৮। প্রাচীন কালের সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় যদিও নারীকে অনেক সম্মানের সঙ্গে উঁচুতে স্থান দেওয়া হয়েছিল তথাপিও সমাজ ব্যবস্থায় নারী এবং পুরুষের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট ভাবে দেখা দিয়েছিল। লিঙ্গ বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ ছিল সম্পত্তির অধিকার। মনুস্মৃতি অনুযায়ী পৈত্রিক সম্পত্তি পিতার মৃত্যুর পর ভাইগণের মধ্যে বিভাজিত করে দেওয়ার রীতি ছিল। মহিলাদের এই সম্পত্তি দাবী করার কোন অধিকার ছিল না। অন্যদিকে মহিলারা বিবাহের সময়ে পাওয়া সকল উপহারাদি নিজেদের অধিকারে রাখতে পারত। এগুলিকে স্ত্রীধন বলা হত। এই সম্পত্তি তার সন্তান সন্ততিগণ উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করত। এতে স্বামীর কোন অধিকার ছিল না। একই সঙ্গে মনুস্মৃতি স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মূল্যবান বস্তু নিজের অধিকারে রাখার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিল। অভিলেখন তথা বিভিন্ন গ্রন্থাদি নির্দেশ করে যে যদিও সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলাগণের সম্পত্তিতে প্রবেশগম্যতা ছিল কিন্তু জমি, গবাদি গৃহপালিত পশু এবং অর্থ পুরুষের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সব নির্দেশনার ফলে মহিলা এবং পুরুষের সামাজিক বৈষম্য বিষয় সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দেখা দিয়েছিল। তাছাড়া ব্রাহ্মণ্যরীতি অনুযায়ী তখনকার সমাজ পিতৃগোত্রজ রূপ ধারণ করেছিল। সন্তানরা পিতার গোত্রে পরিচিতি লাভ করত এবং বিবাহের পর মহিলারা নিজের গোত্র ত্যাগ করে স্বামীর গোত্র গ্রহণ করত। এই সব কারণে বলা যায় যে প্রাচীন ভারতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রশ্নঃ ৯। যে সকল প্রমাণাদি অনুধাবিত করে যে জ্ঞাতি সম্পর্ক ও বিবাহ সম্বন্ধে ব্রাহ্মণদের দ্বারা নির্দেশিত ব্যবস্থা পত্র সকলে সর্বত্র অনুসরণ করত না, সে সকল আলোচনা করো।
উত্তরঃ জ্ঞাতি সম্পর্ক এবং বিবাহ সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে আলোচনা করলে বোঝা যায় যে ব্রাহ্মণ্যরীতি সর্বত্র অনুসরণ করা হত না।
(i) পিতৃগোত্রজ ধারা।
(ii) মহিলাদের গোত্র।
(iii) সম্পত্তির অধিকার।
(i) পিতৃগোত্রজ ধারা – ব্রাহ্মণ্যরীতি অনুসারে ধর্মশাস্ত্র এবং ধর্মসূত্র অনুসারে সন্তানরা পিতার গোত্র গ্রহণ করত এবং বংশের পরিচয় ‘পিতার পরিচয়ে পাওয়া যেত। কিন্তু অনেক সময় সন্তানেরা মাতার পরিচয়েও পরিচিতি লাভ করতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে অনেক সাতবাহন রাজারা তাদের মাতার নামে পরিচিত হতেন যেমন গৌতমীর পুত্র সাতকার্ণী। উনি তার মাতার নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
(ii) মহিলাদের গোত্র – ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী মহিলারা বিবাহের পর পিতার গোত্র ত্যাগ করে স্বামীর গোত্র গ্রহণ করতেন। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এটা হত না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যেত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে অনেক সাতবাহন নৃপতির একাধিক স্ত্রী ছিলেন। সেই স্ত্রীগণ তাদের গোত্র ত্যাগ করে স্বামীর গোত্র গ্রহণ করেননি। আবার গোত্র সম্বন্ধীয় আরেকটি রীতি ছিল যে একই গোত্রের দুই ব্যক্তির বিবাহ হতে পারত না কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে একই গোত্রে বিবাহ হত যা ব্রাহ্মণ রীতির অনুকূলে ছিল না। দক্ষিণ ভারতে এই রীতি প্রচলিত ছিল। তাছাড়া ব্রাহ্মণ্য রীতি অনুযায়ী একই বর্ণের মানুষের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল কিন্তু ভীম এবং হিড়িম্বার বিবাহ থেকে বোঝা যায় যে অসবর্ণের বিবাহও ক্ষেত্র বিশেষে হয়ে থাকত যা ব্রাহ্মণ্য রীতির বিপরীত ছিল।
(iii) সম্পত্তির অধিকার – ব্রাহ্মণ্যরীতি অনুযায়ী পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি শুধু মাত্র পুত্র সন্তানের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু অনেক অভিজাত বংশে মহিলারাও সম্পত্তি লাভ করেছিলেন যেমন প্রভাবতী দেবী। কাজেই দেখা যায় যে জ্ঞাতি সম্পর্ক এবং বিবাহ সম্বন্ধে ব্রাহ্মণ্য রীতি সর্বদা অনুসরণ করা হত না।
উৎস ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ
নিচের পাঠ্যাংশটি ভালভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও—
প্রশ্নঃ ১। এখানে মহাভারতের আদি পর্ব হতে একটি কাহিনি তুলে ধরা হল-
একদা দ্রোণ, কুরু রাজকুমারগণের ধনুর্বিদ্যা শিক্ষাদানে নিয়োজিত আচার্য, যিনি একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন, তাহার নিকট এক অরণ্যচারী নিষাদ (শিকারী) শিষ্য হইবার অভিপ্রায়ে আসিলেন। তাহার নাম ছিল একলব্য। দ্রোণের ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকায় তিনি তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিলে একলব্য অরণ্যে ফিরিয়া কর্দম দ্বারা দ্রোণের মূর্তি গড়িয়া, গুরু হিসাবে বরণ করিয়া ধনুর্বিদ্যা অভ্যাস আরম্ভ করেন। সময়কালে তিনি ধনুর্বিদ্যায় অপরিসীম দক্ষতা লাভ করেন। একদা কুরুরাজ কুমারগণ মৃগয়ার উদ্দেশ্যে অরণ্যে আসিলে তাহাদের সারমেয় একলব্যের নিকট আসিয়া পড়ে। সারমেয়টি কৃষ্ণ হরিণের চর্মাবৃত, কদমদ্বারা আবৃত কৃষ্ণ নিষাদের গন্ধ পাইয়া ডাকিতে আরম্ভ করিল। বিরক্ত একলব্য সাতটি বাণ নিক্ষেপ করেন সারমেয়টির মুখমণ্ডলে। সারমেয়টি পাণ্ডবদের নিকট ফিরিয়া গেলে পাণ্ডবগণ ধনুর্বিদ্যার এই চমৎকার নিদর্শন দেখিয়া অভিভূত হইয়া পড়িলেন। তাহারা একলব্যকে খুঁজিয়া বাহির করিলে একলব্য নিজেকে দ্রোণের শিষ্য হিসাবে পরিচয় প্রদান করেন। দ্রোণ তার প্রিয় শিষ্য অর্জুনকে বলিয়াছিলেন অর্জুন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হইবেন। অর্জুন দ্রোণকে সেই কথা মনে করাইয়া দিলে দ্রোণ একলব্যের নিকট গমন করিলেন। একলব্য অনতিবিলম্বে দ্রোণকে গুরু হিসাবে স্বীকার করিয়া সম্মান প্রদর্শন করিলেন। দ্রোণ গুরুদক্ষিণা হিসাবে একলব্যের দক্ষিণ বৃদ্ধাংগুষ্ঠ দাবী করিলে একলব্য বিনা দ্বিধায় তাহা কর্তন করিয়া দ্রোণকে নিবেদন করিলেন। পরন্তু ইহার পর তাহার অবশিষ্ট অঙ্গুলি দ্বারা একলব্য দ্রুত বাণ নিক্ষেপে সমর্থ রহিলেন না। এই রূপে দ্রোণ তাহার কথা রাখিলেন, অর্জুন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কেহ রহিল না।
(i) একলব্য কে?
(ii) ধনুর্বিদ্যাতে তিনি কীভাবে পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন?
(iii) দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যদের ধনুর্বিদ্যার কৌশল শিক্ষা দিতে ধর্মসূত্রের নিয়ম মেনেছিলেন কি?
উত্তরঃ (i) একলব্য ছিলেন একজন অরণ্যচারী নিষাদ পুত্র।
(ii) ড্রোণ একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে একলব্য বনে গিয়ে কাদা দ্বারা দ্রোণের মূর্তি গড়ে দ্রোণকে গুরু হিসাবে বরণ করে ধনুর্বিদ্যা অভ্যাস আরম্ভ করেন এবং এভাবে তিনি ধীরে ধীরে ধনুর্বিদ্যাতে পারদর্শিতা লাভ করেন।
(iii) ধর্মসূত্রের নিয়ম অনুযায়ী সে যুগে একমাত্র ক্ষত্রিয়রা অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করতে পারতেন। একলব্য একজন বিষাদপুত্র হওয়ার জন্য ধর্মসূত্রের নিয়মানুসারে তার অস্ত্রশিক্ষার কোন অধিকার ছিল না। কাজেই ধর্মসূত্রের এই নিয়ম মেনেই দ্রোণ একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে অস্বীকার করেন। যদিও তিনি প্রকৃত গুরুধর্ম পালন করেননি কারণ গুরুর কাছে সকল শিষ্যই সমান এবং জাতিভেদে শিক্ষাদান অনুচিত। কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণ্য রীতি পালন করার ফলে একলব্যকে শিক্ষাদানে অস্বীকার করেন।
প্রশ্নঃ ২। নিচের পাঠ্যাংশটি ভালোভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
দ্রৌপদী সম্ভবত যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁকে পণ রাখার পূর্বে যুধিষ্ঠির নিজেকে হারিয়েছিলেন কি না। উল্লিখিত প্রশ্নের দু’টি উত্তর পাওয়া যায়। প্রথম, যুধিষ্ঠির পণে নিজেকে হারালেও স্ত্রী হিসাবে দ্রৌপদী তারই নিয়ন্ত্রণে বা অধিকারে থাকায়, যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে পণ রাখতে পারেন।
দ্বিতীয়, এক পরাধীন ব্যক্তি (যেমন যুধিষ্ঠির নিজেকে পণ রেখে হেরে যান) অন্য কোন ব্যক্তিকে পণ রাখতে পারেন না।
বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। অবশেষে ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডব এবং দ্রৌপদীকে তাঁদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রত্যার্পণ করেন।
(i) যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে কেন বাজি ধরেছিলেন?
(ii) দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরকে কী প্রশ্ন করেছিলেন?
(iii) এই ঘটনায় মহাভারতের দিনে মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিফলিত করে কি?
উত্তরঃ (i) যুধিষ্ঠির পাশাখেলায় নিজের রাজ্য সমস্ত সম্পত্তি এবং নিজের ভাইদের বাজি রেখে হেরে গিয়েছিলেন এবং জুয়াতে এর পর বাজি রাখার জন্য উনার কাছে আর কিছু ছিল না। তাই তিনি দ্রৌপদীকে বাজি ধরেছিলেন।
(ii) দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিলেন যে তাঁকে পণ রাখার পূর্বে যুধিষ্ঠির নিজেকে বাজিতে হেরেছিলেন কি না।
(iii) এই ঘটনা থেকে তৎকালীন সময়ে মহিলাদের সামাজিক অবস্থা এবং মর্যাদা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এটা বোঝা যায় যে মহিলাদের তাদের স্বামীর অধীনে থাকতে হত এবং পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করত।
প্রশ্নঃ ৩। ১নং প্রশ্নের সূত্রটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
(i) এই কাহিনির মাধ্যমে নিষাদদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে?
(ii) ক্ষত্রিয়দের এই কাহিনিটি কী বার্তা দিয়েছে?
(iii) দ্রোণাচার্য শিষ্যদের ধনুর্বিদ্যা প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ে ধর্মসূত্রসমূহ অনুসরণ করেছিলেন কি?
(iv) কাহিনিটিতে প্রকাশিত এই ধরনের সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ তুমি সমর্থন করবে কি?
উত্তরঃ (i) এই কাহিনির মাধ্যমে নিষাদদের অস্ত্রশিক্ষা থেকে বিরত থাকতে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্যভাবে চিন্তা করলে এটাও বোঝায় যে উৎসাহ আর ইচ্ছা থাকলে যে কেউ শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম হতে পারে।
(ii) ক্ষত্রিয়দের এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে অস্ত্রশিক্ষা এবং সমাজের দুর্বলদের রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। তাছাড়া এই কাহিনি এটাও শিক্ষা দেয় যে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সকলের উচিত।
(iii) ধর্মসূত্রে শুধুমাত্র ক্ষত্রিয়দেরই অস্ত্রশিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। নিষাদদের জন্য অস্ত্রশিক্ষার অনুমতি ধর্মসূত্রের নীতিতে ছিল না। কাজেই একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দান না করে দ্রোণাচার্য ধর্মসূত্রের নীতি পালন করেছিলেন।
(iv) জাতিগত বৈষম্য একটি সামাজিক কুসংস্কার যার ফলে সমাজে বিভাজনের সৃষ্টি হয় এবং যা উন্নতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কাজেই কাহিনিতে প্রকাশিত এই ধরনের সামাজিক বৈষম্য কিছুতেই সমর্থন যোগ্য নয়।
প্রশ্নঃ ৪। নিচের পাঠ্যাংশটি পড়ে প্রদত্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
মহাভারত বর্ণনা করছে কৌরব ও পাণ্ডবের মধ্যে যুদ্ধ যখন অবশ্যম্ভবী হয়ে ওঠে তখন কীভাবে গান্ধারী তার অগ্রজ পুত্র দুর্যোধনের কাছে শেষ আবেদন করছেনঃ ‘শান্তি স্থাপন করিয়া তুমি তোমার পিতা ও আমাকে এবং তৎসহ সকল শুভচিন্তককে সম্মান প্রদর্শন করিবে। যে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ইন্দ্রিয়সকল আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখিতে পারেন, তিনিই রাজ্য রক্ষা করিতে সক্ষম। লোভ এবং ক্রোধ একজন ব্যক্তির লাভের পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায়, এই শত্রুদ্বয়কে পরাস্ত করিয়া একজন নৃপতি পৃথিবী জয় করিতে পারেন। হে পুত্র, প্রাজ্ঞ ও বীরোচিত পাণ্ডবগণের সহিত তুমিও আনন্দের সাথে এই পৃথিবী উপভোগ করিতে পারিবে। যুদ্ধে তুষ্টিকর কিছু নাই, তৃপ্তি বা আনন্দের কথা তো ছাড়িয়াই দাও, ধর্ম ও অর্থও নাই, এবং অন্তে সত্যি অর্থে জয়ও নাই?… যুদ্ধের পক্ষে মনস্থির করিও না।’
(i) গান্ধারী দুর্যোধনের কাছে কী আবেদন জানিয়েছিলেন?
(ii) তুমি কি গান্ধারীর আবেদনকে সমর্থন করো?
(iii) দুর্যোধন কেন তার মার উপদেশ শুনেননি? দুটি সম্ভাব্য কারণ লেখো?
উত্তরঃ (i) গান্ধারী দুর্যোধনকে পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ না করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কারণ এটা তার নিজের ভালোর জন্যই বলা হয়েছিল কারণ যুদ্ধ শুধুই ধ্বংস ডেকে আনে। যুদ্ধে কোনও আনন্দ নেই তাই দুর্যোধন যেন যুদ্ধের পথ পরিহার করেন।
(ii) হ্যাঁ, গান্ধারীর আবেদন সম্পূর্ণ রূপে যুক্তি সংগত ছিল। কারণ যুদ্ধে বিনাশ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না এবং লোভ এবং ক্রোধ একজন ব্যক্তির লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
(iii) দুর্যোধন গান্ধারীর আবেদন শোনেননি। এর দুটি সম্ভাব্য কারণ হল–
(a) দুর্যোধন ক্ষমতার বশবর্তী হয়ে অত্যধিক দাম্ভিক হয়ে পড়েছিলেন।
(b) দুর্যোধনের পরামর্শদাতারা কপট এবং অসাধু ছিলেন।
প্রশ্নঃ ৫। নিচের পাঠ্যাংশটি ভালভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
‘অরণ্যে পলায়নকারী পাণ্ডবগণ ক্লান্ত হইয়া ঘুমাইয়া পড়িলেন। শুধুমাত্র ভীম, দ্বিতীয় পান্ডব যিনি তার অসীম পুরাক্রমের নিমিত্ত খ্যাতিমান ছিলেন, তিনি জাগ্রত থাকিয়া প্রহরায় রত ছিলেন। এক নরখাদক রাক্ষস পাণ্ডবদের গন্ধ পাইয়া তাহার ভগিনী হিড়িম্বাকে তাহাদের বন্দী করিয়া আনিবার নিমিত্ত পাঠাইলেন। হিড়িম্বা ভীমকে দেখিয়া প্রেমমুগ্ধ হইয়া পড়িল এবং নিজেকে এক অপরূপ লাবণ্যবতী কন্যায় রূপান্তরিত করিয়া ভীমকে বিবাহ প্রস্তাব দিল। ভীম তাহা প্রত্যাখ্যান করেন। ইতিমধ্যে রাক্ষস স্বয়ং সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া ভীমকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান করে। ভীম সেই প্রত্যাহ্বান গ্রহণ করিয়া রাক্ষসকে নিহত করেন। কোলাহল শুনিয়া সকলেই নিদ্ৰা হইতে জাগরিত হইলে হিড়িম্বা আপনার পরিচয় প্রদান করিয়া ভীমের প্রতি তাহার প্রেম নিবেদন করে। সে কুন্তীকে বলে, ‘আমি আমার আত্মীয় জ্ঞাতি বন্ধু এবং আমার ধর্ম পরিত্যাগ করিয়াছি, হে দেবী, এবং আপনার ব্যাঘ্রসদৃশ পুত্রকে আমার স্বামীরূপে বরণ করিয়াছি। হে দেবী, আপনি আমাকে নির্বোধ অথবা আপনাদিগের দাসী, যাহাই ভাবিয়া থাকুন, আমাকে আপনাদিগের পরিবারভুক্ত করুন, আপনার পুত্রের পত্নীরূপে স্বীকার করুন।
অবশেষে যুধিষ্ঠির এই বিবাহে একটিমাত্র শর্তে সম্মতি দিলেন যে দিবাভাগে তাহার উভয়ে পরস্পরের সহিত থাকিবে কিন্তু প্রতি নিশায় ভীম ফিরিয়া আসিবে। নব পরিণিত দম্পতি দিবাভাগে পৃথিবী ঘূরিয়া বেড়াইত। যথাসময়ে হিড়িম্বা ঘটোৎকচ নামে এক রাক্ষসের জন্ম দিল। তাহার পর মাতা ও পুত্র পাণ্ডবদিগকে ছাড়িয়া প্রস্থান করিল। ঘটোৎকচ বচন দিল যখনই পাণ্ডবদিগের প্রয়োজন পড়িবে তখন সে আসিয়া তাহাদের পার্শ্বে দাড়াইবে।’
কোন ঐতিহাসিকগণের মতে ‘রাক্ষস’ শব্দটি সেই সকল জনমানুষকে নির্দেশ করারbজন্য ব্যবহার হতো যাদের আচার আচরণ ব্রাহ্মণ গ্রন্থের আচরণবিধি হতে ভিন্নতর।
(i) হিড়িম্বাকে কে পাণ্ডবদের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং কেন?
(ii) নরখাদক রাক্ষস কীভাবে মারা পড়েছিল?
(iii) কাকে ব্যাঘ্ৰসদৃশ পুত্র বলা হয়েছে এবং কেন?
উত্তরঃ (i) হিড়িম্বাকে পাণ্ডবদের কাছে পাঠিয়েছিলেন তার ভাই হিড়িম্ব। হিড়িম্ব পাণ্ডবদের তার কাছে বন্দি করে নিয়ে আসতে হিড়িম্বাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।
(ii) হিড়িম্ব তার বোন হিড়িম্বাকে পাণ্ডবদের বন্দি করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হিড়িম্বা ভীমের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভীম এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইতিমধ্যে হিড়িম্বার দেরী দেখে হিড়িম্ব নিজে সেখানে উপস্থিত হয়ে ভীমকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান জানান। ভীম সেই প্রত্যাহ্বান গ্রহণ করে রাক্ষসকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন।
(iii) এখানে ভীমকে ব্যাঘ্র সদৃশ পুত্র বলা হয়েছে কারণ তিনি বাঘের মত সাহসী এবং শক্তিশালী ছিলেন।
প্রশ্নঃ ৬। নিচের পাঠ্যাংশটি ভালভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
সামাজিক শ্রেণির ক্রমবিন্যাসে সর্বনিম্নে স্থান দেবার প্রয়াসকে চণ্ডালগণ কি প্রতিহত করেছিলেন? পালি গ্রন্থ মাতঙ্গ জাতকের এই অংশটি পড়, যেখানে বোধিস্বত্ত্ব (বুদ্ধ, তার পূর্বজন্মে) চিহ্নিত হয়েছেন চণ্ডাল হিসাবে। ‘একদা বোধিস্বত্ত্ব বারাণসী নগরীর বহির্ভাগে চণ্ডালপুত্র মাতঙ্গ রূপে জন্মগ্রহণ করেন। একদিন কোন কার্য উপলক্ষ্যে নগরে প্রবেশ করিয়া তিনি দিথা মাঙ্গলিকা নামে এক বণিকের কন্যার সম্মুখীন হইয়া পড়েন। তাহাকে দেখিয়া বণিককন্যা চীৎকার করিয়া উঠিলেন— ‘আমি অশুভ কিছু দেখিয়াছি।’ এবং আপনার চক্ষুদ্বয় ধুইয়া ফেলিলেন। ক্রুদ্ধ জনসাধারণ যাহারা সেইস্থলে একত্র হইয়াছিল তাহারা বোধিস্বত্ত্বেকে প্রচণ্ড প্রহার করে। ইহার প্রতিবাদে বোধিস্বত্ত্ব বণিক কন্যার পিতার গৃহের বাইরে ভূমিশয্যা গ্রহণ করিলেন, সপ্তমদিবসে গৃহের পরিজনগণ বণিক কন্যাকে লইয়া আসিয়া তাহাকে অর্পণ করিল। বণিককন্যা উপবাসী মাতঙ্গকে চণ্ডাল বসতিতে লইয়া আসে। গৃহে ফিরিয়া মাতঙ্গ সংসারত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন। আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করিয়া তিনি বারাণসীতে ফিরিয়া আসেন এবং বণিককন্যাকে বিবাহ করেন। মান্ডব্যকুমার নামে তাহাদিগের এক পুত্র জন্মলাভ করে। মান্ডব্যকুমার বড় হইয়া উঠিবার সময় তিনটি বেদ অধ্যয়ন করেন। বয়সপ্রাপ্ত হইলে তিনি প্রতিদিন ১৬,০০০ ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন।
একদা জীর্ণবস্ত্র পরিধান করিয়া এবং মৃত্তিকা নির্মিত ভিক্ষাপাত্র হস্তে মাতঙ্গ তাহার পুত্রের দ্বারপ্রান্তে আসিলেন এবং আহার ভিক্ষা করিলেন। মান্ডব্য বলিলেন যে ব্রাত্য জনেরা ভিক্ষা পাইবার যোগ্য নহে। এই আহার শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ দিগের জন্য প্রস্তুত করা হইয়াছে। মাতঙ্গ বলিলেন যাহারা আপন জন্ম লইয়া গর্বিত অথচ অজ্ঞ তাহারা উপহার লাভের যোগ্য নহে। মাভব্য ক্রুদ্ধ হইয়া তাহার দাসদিগকে ডাকিয়া তাহাকে বাহিরে ধাক্কা মারিয়া বাহির করিবার আদেশ করিলে মাতঙ্গ ঊর্ধ্ব আকাশে আরোহণ করিয়া অদৃশ্য হইলেন। দিথা মাঙ্গলিকা ঘটনা শুনিয়া মাতঙ্গকে অনুসরণ করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলে মাতঙ্গ তাহার ভিক্ষাপাত্রের অবশিষ্টাংশ হইতে এককণা লইয়া মান্ডব্য এবং ব্রাহ্মণদের দিতে কহিলেন।’
(a) এই কাহিনিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কার সঙ্গে কাহিনিটি সম্পর্কিত?
(b) মাতা দিথাকে কীভাবে বিবাহ করেন?
(c) মাল্ডব্যকুমার কে ছিলেন? তিনি মাতঙ্গকে খাদ্য দিতে অস্বীকার করেছিলেন কেন?
উত্তরঃ (a) কাহিনিটি পালি গ্রন্থ মাতঙ্গ জাতক থেকে নেওয়া হয়েছে। কাহিনিটি বোধিসত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত যিনি চণ্ডালপুত্র মাতঙ্গ নামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
(b) একদিন দিথা মাতঙ্গকে দেখে ফেলেন এবং খারাপ কিছু দেখে ফেলেছেন বলায় লোকজন মাতঙ্গকে প্রচণ্ড প্রহার করে। প্রতিবাদে মাতঙ্গ দিথার পিতৃগৃহের সামনে ভূমিশয্যা গ্রহণ করেন। সাতদিন পরে দিথার পরিবার তাকে এনে মাতঙ্গের কাছে অর্পণ করেণ। দিথা এরপর মাতঙ্গকে চণ্ডাল বসতিতে নিয়ে আসেন। এরপর মাতঙ্গ তপস্যার জোরে আধ্যাতিক শক্তি লাভ করেন এবং দিথাকে বিবাহ করেন।
(c) মান্ডবকুমার ছিলেন মাতঙ্গ এবং দিথার পুত্র। তিনি বড় হয়ে তিনটি বেদ অধ্যয়ন করেন এবং ব্রাহ্মণ্য রীতিতে বিশ্বাসী হন। তিনি প্রতিদিন ১৬,০০০ ব্রাহ্মণকে ভোজন করাতেন। একদিন মাতঙ্গ জীর্ণ বস্ত্র পরে ভিক্ষাপাত্র হাতে মান্ডব কুমারের কাছে আসলেন। মান্ডব কুমার মাতঙ্গকে নীচু জাতির ভেবেছিলেন এবং সেই জন্য তাকে খাদ্য দিতে অস্বীকার করেন কারণ তিনি শুধু ব্রাহ্মণদেরই ভোজন করাতেন।
প্রশ্নঃ ৭। নিম্নলিখিত পাঠ্যাংশটি ভালোভাবে পড়ে এবং সেই মতো প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
একজন ব্যাঘ্র-সদৃশ স্বামী মহাভারতের আদি পর্বের একটি কাহিনির সারাংশ:
পাণ্ডবরা পালিয়ে অরণ্যে ঢুকল এবং পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ঘুমে মগ্ন হল। কেবল মহাবলী বলে খ্যাত দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম পাহারায় থাকল। এমন এসময় এক নরমাংসভোজী রাক্ষস পাণ্ডবদের গন্ধ পেয়ে তাদের ধরে আনতে নিজের ভগ্নী হিড়িম্বাকে পাঠাল। কিন্তু ভীমকে দেখে হিড়িম্বা এমন মুগ্ধ হল যে, একজন রমণীয় কুমারীর রূপ নিয়ে সে ভীমকে বিবাহের প্রস্তাব দিল। ভীম কিন্তু তার প্রস্তাব নাকচ করল। ইতিমধ্যে রাক্ষসটি এসে উপস্থিত হল এবং ভীমকে মল্লযুদ্ধে প্রত্যাহ্বান জানাল। ভীম এই প্রত্যাহ্বানে সাড়া দিয়ে রাক্ষসকে মেরে ফেলল। মল্লযুদ্ধের শব্দে বাকিরাও জেগে উঠল। হিড়িম্বা নিজের পরিচয় দিয়ে ভীমের প্রতি প্রেমের বিষয় ব্যক্ত করে কুন্তীকে এই বলে কাকুতিমিনতি করে বলল— “হে মহীয়সী নারী, আমি আমার বন্ধু-বান্ধব, ধর্ম এবং আত্মীয়স্বজন সকলকে ত্যাগ করে আপনার বাঘের মতো পুত্রকে নিজের স্বামী হিসেবে কামনা করছি— হে মহীয়সী নারী, আপনি আমাকে মূর্খ অথবা একজন বাধ্য দাসী,যা বলেই ভাবুন না কেন, আপনার পুত্রকে স্বামী হিসাবে বরণ করে আপনাদের সঙ্গে থাকতে দিন।”
অবশেষে যুধিইষ্ঠর একটি শর্তে এই বিবাহের অনুমতি দিলেন যে, বিবাহিত দম্পতি সারাদিন একসঙ্গে কাটাবে, কিন্তু প্রতি রাত্রিতে ভীমকে ফিরে আসতে হবে। সেইমতো দম্পতিয়া দিনটি একসঙ্গে সমগ্র পৃথিবীতে ঘুরে-ফিরে আসল। উপযুক্ত সময়ে হিড়িম্বা একটি রাক্ষস পুত্র জন্ম দিল। শিশুটির নাম রাখলা হল ঘটোৎকচ। এরপর মাতা-পুত্র দুজনে পাণ্ডবদের ছেড়ে গেল। বিদায়বেলায় ঘটোৎকচ্ অঙ্গীকার করে গেল যে, পান্ডবরা যখনই তার প্রয়োজন বোধ করবে সে তখনই আসবে।
কোন-কোন ঐতিহাসিকরা ভাবেন যে, যে সকল লোকের ক্রিয়া কর্মে ব্রাহ্মণ্য পাঠ্যের সাদৃশ্য নেই, সেরূপ লোকের উদ্দেশ্যে রাক্ষস শব্দটির ব্যবহার হয়েছিল।
প্ৰশ্নসমূহ –
(a) পাণ্ডবদের ধরে আনতে কে হিড়িম্বাকে পাঠিয়েছিল? সে অরণ্যে পাণ্ডবদের উপস্থিতির বিষয়ে কিভাবে জানতে পেরেছিল?
(b) হিড়িম্বা রাক্ষসী থেকে একজন রমণীয় কন্যাতে কেন নিজেকে পরিবর্তন করেছিল?
(c) যুধিষ্ঠির কি শর্তে হিড়িম্বার সঙ্গে ভীমের বিয়ে হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন? তারা কি এটা মেনেছিল?
উত্তরঃ (a) হিড়িম্বার নররাক্ষসরূপী ভাই হিড়িম্বাকে পাণ্ডবদের ধরে আনতে পাঠিয়েছিল। সে অরণ্যে পাণ্ডবদের গন্ধ পেয়ে তাদের উপস্থিতি জানতে পেরেছিল।
(b) হিড়িম্বা পাণ্ডবদের ধরতে অরণ্যে প্রবেশ এবং ভীমকে দেখে হিড়িম্বা মুগ্ধ হয়ে যায়। তাই হিড়িম্বা একজন রমণীয় কুমারীর রূপ নিয়ে ভীমকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়।
(c) যুধিষ্ঠির এই শর্তে বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন যে, বিবাহিত দম্পতি সারাদিন একসঙ্গে কাটাবে, কিন্তু প্রতি রাতে ভীমকে ফিরে আসতে হবে। তারা এই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
প্রশ্নঃ ৮। নিম্নের পাঠ্যাংশটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
পুরুষ ও মহিলা কিভাবে সম্পদ আহরণ করতে পারে?
মনুস্মৃতি পুরুষদের জন্য উপার্জনের ক্ষেত্রে যে সাতটি উপায়ের ঘোষণা করেছে, সেগুলি হল— উত্তরাধিকার সূত্রে, ক্রয়, বিজয়, কোনো কার্যে অর্থের বিনিয়োগ, কর্ম ও সজ্জন ব্যক্তির থেকে উপহার গ্রহণ।
নারীর ক্ষেত্রে এরকম ছয়টি উপায়ের অন্যতম হল – (বিবাহের সময়) অগ্নিসাক্ষী করে দেওয়া সম্পদ, শোভাযাত্রা করে বধূ আনার সময় বা ভালবেসে দেওয়া বিভিন্ন উপহার, পিতা-মাতা ও ভ্রাতা থেকে প্রাপ্ত ধন-সোনা আদি। এছাড়াও ( বিবাহের পর) প্রাপ্ত উপহার ও স্বামীর ‘স্নেহ-অনুরাগ’-এর উপহারকে নারীর সম্পদ বলে ধরা হয়।
প্রশ্নসমূহ –
(i) পুরুষ ও মহিলা কী কী উপায়ে সম্পদ আহরণ করতো?
(ii) তুমি কি মনে করো সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র পুরুষ ও মহিলাকে পৃথক করেছে? যদি তাই মনে করো, কীভাবে?
উত্তরঃ (i) পুরুষ সাতটি উপায়ে সম্পদ আহরণ করত। সেগুলি হ’ল— উত্তরাধিকার সূত্রে, ক্রয়, বিজয়, কোনো কার্যে অর্থের বিনিয়োগ, কর্ম ও সাজ্জন ব্যক্তির থেকে উপহার গ্রহণ।
মহিলারা ছয়টি উপায়ে সম্পদ আহরণ করত। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল— বিবাহের সময় অগ্নি সাক্ষী করে দেওয়া সম্পদ, শোভাযাত্রা করে বধু আনার সময় বা ভালোবেসে দেওয়া বিভিন্ন উপহার, পিতা- মাতা ও ভ্রাতা থেকে প্রাপ্ত ধন-সোনা প্রভৃতি। এছাড়াও বিবাহের পর প্রাপ্ত উপহার ও স্বামীর ‘স্নেহ-অনুরাগ’-এর উপহারকে নারীর সম্পদ বলে ধরা হয়।
(ii) হ্যাঁ, সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র পুরুষ ও মহিলাকে পৃথক করেছে। মহিলারা পুরুষদের মতো উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ আহরণ করতে পারত না। পুরুষদের সম্পদ আহরণের উপায়গুলি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। তাছাড়া মহিলাদের সম্পদ অধিকাংশ ক্ষেত্ৰই বৈবাহিক সূত্র সম্পর্কিত।
FAQs
Question: Where I can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise?
Answer: You can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise On Roy Library. For every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly.
Question: Which is the best Site to get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions?
Answer: Roy Library is a genuine and worthy of trust site that offers reliable information regarding Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions.
Question: How can students use the solutions for exam preparation?
Answer: Students can use the solutions for the following:
- Students can use solutions for revising the syllabus.
- Students can use it to make notes while studying.
- Students can use solutions to understand the concepts and complete the syllabus.
IMPORTANT NOTICE
We have uploaded this Content by Roy Library. You can read-write and Share your friend’s Education Purposes Only. Please don’t upload it to any other Page or Website because it is Copyrighted Content.
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.