Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class XII Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy Question Answer in Bengali The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা Solutions are free to use and easily accessible. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.
Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা
Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা, Gives you a better knowledge of all the chapters. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Notes. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Suggestion will be able to solve all the doubts of the students. Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Solution, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Question Answer PDF. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.
প্রশ্ন ৭। মোক্ষ কী ? ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায় সমূহ মোক্ষকে কীভাবে বর্ণনা করেছেন ?
উত্তরঃ ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
মোক্ষ সম্পর্কে প্রধানত দুটি মত পাওয়া যায়।
যেমন— দৈহিক মুক্তি এবং জীবন মুক্তি। কোন কোন দার্শনিকের মতে, জীবের দার্শনিক আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করতে হবে না। দেহের সম্পর্কও ত্যাগ করতে হবে , এটিই দৈহিক মুক্তি। অন্যদিকে,জৈন , বৌদ্ধ, সাংখ্য এবং অদ্বৈত বেদান্ত মতে দেহ ধারণা করেও মোক্ষ লাভ করা যায়। মুক্তির জন্য দেহ ত্যাগ ও সংসার ত্যাগের কোন প্রয়োজন নেই। মোক্ষের প্রকৃত অর্থ হল আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করা। বৌদ্ধ দর্শনে মোক্ষকে নির্বাণ বলে।
শংকরাচার্যের মতে, মুক্ত আত্মাই স্বরূপরূপে অধিষ্ঠিত হয়। আত্মার এই মুক্ত অবস্থা সৎ এবং আনন্দ অবস্থা।
প্রশ্ন ৮। নীতিশাস্ত্রে ব্যবহৃত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ নীতিশাস্ত্রের অন্তর্গত চারটি বিষয় হলো নিম্নরূপ —-
(ক) নীতিবিদ্যার মুখ্য আলোচ্য বিষয় হলো — মানুষের কাজের ন্যায়, অন্যায় জাতীয় নৈতিক গুণের আলোচনা। এখানে মানুষের কাজ বলতে ঐচ্ছিক এবং অভ্যাসবশতঃ কৃত কাজগুলি কে বুঝায়।
(খ) নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নৈতিক আদর্শ। নৈতিক আদর্শ বা চূড়ান্ত উদ্দেশ্য নির্ণয় নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
(গ) নীতিবিদ্যা মানুষের স্বাধীনতার স্বরূপ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে। প্রত্যেকটি মানুষ নিজ কৃতকর্মের দায়ভাগী। নীতিবিদ্যা এই দায়িত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে।
(ঘ) নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় নৈতিক আবেগ। নৈতিক আবেগের প্রকৃতি এবং উৎস এবং এর সঙ্গে নৈতিক বিচারের বিষয়টিও নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
প্রশ্ন ৯। নীতিবিদ্যা কি একটি ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিজ্ঞান ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ নীতিশাস্ত্র প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান বলে সকল নীতিশাস্ত্রবিদ একমত নন। মেকেঞ্জির মতে, নীতিশাস্ত্র কেবল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। মানবজীবনের পরম কল্যাণ বা মঙ্গল বা পরমার্থ কী তাকে নির্ণয় করাই নীতিশাস্ত্রের উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, প্রায়োগিক বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করলে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়, তার নির্দেশ দেয়। নীতিশাস্ত্রই কেবল আদর্শ নির্ণয় করে কিন্তু সেই আদর্শে উপনীত হওয়ার কোন নিয়মনীতি পরিবর্তন করে না। সেই কারণে মেকেঞ্জির মতে, নীতিশাস্ত্র হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এটি প্রায়োগিক বিজ্ঞান নয়।
অন্যদিকে,হার্বার্ট স্পেনচারের মতে , নীতিশাস্ত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে। মুরহেডের মতে, নীতিশাস্ত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে না। সেথের মতে, নীতিশাস্ত্র এক সঙ্গে তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক উভয়েই। মূরহেড এবং সেথের মতে, সকল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানই তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক।
অতএব, নীতিশাস্ত্র আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এটি নৈতিক আদর্শ কী উপায়ে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তার নীতি নিয়মের নির্দেশ দেয়। এইগুলো বিবেচনা করলে নীতি শাস্ত্রকে প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান বলে অভিহিত না করাই ভালো।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কোনটি ল্যাটিন শব্দ থেকে Religion শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে?
উত্তরঃ Religion শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘Religare’ শব্দ থেকে। Religion শব্দের অর্থ হলো বন্ধন। এর অর্থ যে ধর্ম দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখে। যদিও Religion কে বন্ধন রূপে গণ্য করা হয় তবুও ব্যক্তির জীবন ও জাতীয় জীবনে যা যথার্থ সংহতি আনে তা – ই ধর্ম। সামাজিক জীবনে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে যে ব্যবস্থা মানুষের জীবনকে ধরে রাখে , তা-ই ধর্ম। ধর্ম তাই পরম পুরুষার্থ, যা অন্য কিছুর জন্য মূল্যবান নয়, যা নিজের মূল্যেই মূল্যবান। আমাদের যাবতীয় আচরণের শেষ এবং শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম পুরুষার্থ বা পরম কল্যাণ বা মঙ্গল।
ধর্মের উৎসে আছে মানুষের অসহায়তা বা সীমাবদ্ধতার অনুভূতি। মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম যুগ থেকে মানুষ নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে, তার নিজের চেয়ে অধিকতর শক্তি সম্পন্ন কল্পনার কাছে নানা রূপে, নানাভাবে প্রার্থনা জানিয়ে এসেঙ্গে। কেউ দেব দেবতার কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছে। আবার কেউবা আল্লা বা ঈশ্বরের কাছে জানাচ্ছে। যাতে দেবতা,আল্লা বা ঈশ্বর তাদেরকে যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এটিই তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস।
প্রশ্ন ২। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক স্তরের উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক স্তরের উপাদানগুলি হল নিম্নরূপ —-
(ক) কর্মের উৎস: প্রতিটি ঐচ্ছিক ক্রিয়ার উৎস হল কোন অভাববোধ বা প্রয়োজন। এই অভাববোধ টি বাস্তব বা আদর্শগত হতে হবে। অভাববোধ সব সময়ই পীড়াদায়ক। কিন্তু অভাবটি পূর্ণ হলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার চিন্তাও এই অনুভূতির সঙ্গে মিশ্রিত থাকে।
(খ) লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য: এই অভাববোধ থেকে একজন বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সেই অভাব পূরণের জন্য যা প্রয়োজন, সেই যথার্থ নির্ধারণ করে। যে বস্তু অভাব দূর করে, সেটাই হলো কাজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য।
(গ) আকাংখা: ক্রিয়ার উৎস এবং অভাববোধ আকাংখায় পরিণতি লাভ করে। আকাংখার মধ্যে সেই বস্তুটির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে,যার দ্বারা অভাবটি পূর্ণ হয়।
(ঘ) আকাংখার সংঘাত: কোন কাজ জটিল ক্রিয়াতে বহু অভাব পূরণের প্রয়োজন পড়ে। একটি পূর্ণ হলে অপরটি বর্জন করতে হয়।
(ঙ) বিবেচনা এবং নির্বাচন: যখন বিভিন্ন উদ্দেশ্যের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, তখন কাজটি স্তগিত থাকে এবং বিভিন্ন কাজের গুণাগুণ বিচার করে ও সকল দিক বিচার করে করণীয় কাজটিকে নির্বাচন করা হয়।
(চ) সিদ্ধান্ত এবং সংকল্প: বিচার বিবেচনার পর মন একটি উদ্দেশ্য নির্বাচন করে এবং বাকি উদ্দেশ্যকে বাদ দিয়ে একটি নির্বাচন করা হল সংকল্প বা সিদ্ধান্ত।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তর তিনটি। যেমন —- মানসিক স্তর, শারীরিক বা দৈহিক স্তর ও পরিসমাপ্তি বা ফলাফলের স্তর। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তরগুলিকে বিশ্লেষণ করলে তার লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ —-
(ক) মানসিক স্তরে থাকে কার্যের উৎস , লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, কামনা, নির্বাচন, অভিপ্রায় কামনার সংঘাত ইত্যাদি।
(খ) দৈহিক বা শারীরিক স্তরে ক্রিয়া সম্পন্ন করবার লক্ষ্যে ব্যক্তির শারীরিক প্রক্রিয়াগুলি থাকে। পরবর্তী পর্যায়ের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য দৈনিক অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ এবং মাংসপেশীর সঞ্চালন প্রয়োজন হয়।
(গ) পরিসমাপ্তির বা ফলাফলের স্তর হল কার্যটি সম্পন্ন হবার পর কাম্য ফল লাভ করাই পরিসমাপ্তির বাহ্য স্তর । ব্যক্তির দৈহিক ক্রিয়াগুলির ফলে বাইরের জগতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলিকে বলা হয় স্তর বাহ্য স্তর বা পরিসমাপ্তির স্তর।
এর মধ্যে থাকে যেমন—–
(১) নির্বাচিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণ।
(২) নির্বাচিত উপায় প্রয়োগ।
(৩) নির্বাচিত বা অভীস্পিত ফলাফল।
(৪) অনভীস্পিত আকস্মিক ফলাফল।
উদাহরণস্বরূপ —- একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করবার জন্য অস্ত্রোপ্রচার করলেন। সেই অস্ত্রোপচার সফল হবার ফলে রোগী সুস্থ হল। চিকিৎসকের উদ্দেশ্য সার্থক হল। এটাই পরিসমাপ্তির স্তর।
প্রশ্ন ২। নীতিবিদ্যা বলতে কী বোঝ ? নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কী ? আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘Ethics’ শব্দটি গ্ৰিক শব্দ ‘Ethica’ থেকে এসেছে। ‘Ethica’ এসেছে ‘Ethos’ থেকে। Ethos শব্দের অর্থ চরিত্র, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার,অভ্যাস ইত্যাদি। নীতিবিদ্যাকে নীতি দর্শনও বলা হয়।
নীতিবিদ্যাকে সংক্ষেপে নীতি বিজ্ঞান বা শুদ্ধ আচরণ বা কর্তব্যপালনের শাস্ত্র বলা হয়। এটা মূলতঃ ভালো- মন্দ , ন্যায়- অন্যায় এবং তার সঙ্গে জড়িত কাজকর্মে প্রকাশিত চরিত্রের ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। এই বিদ্যায় চরিত্রেরই বহিঃ প্রকাশ ঘটে। এই কারণে এই বিদ্যাকে চরিত্রের বিজ্ঞান বলা হয়।
নৈতিক বিচারের প্রধান বিষয়বস্তু হল মানুষ স্বেচ্ছায় বা অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে যে কাজ করে, সেই কাজ। অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে যে কাজ করে, তার নৈতিক মূল্যবোধ বিচার করা হয় এই কারণে যে,স্বেচ্ছাকৃত কাজের পুনরাবৃত্তির ফলে অভ্যাস তৈরি হয়। স্বেচ্ছায় করা কাজের দুটি দিক আছে। একটি মানসিক ও একটি বাহ্যিক। মানসিক দিকটিতে থাকে (ক) একটি অভাববোধ (খ) কাঙ্খিত বস্তু বা ধারণা যা কাজ করার প্রেরণা দেয়। আর বাহ্যিক দিক হল, কাজের ফলাফল যা ঘটবে বলে ভাবা হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন জাগে, কোন দিকটির নৈতিক গুণাগুণ বিচার করবো?
সুখবাদীরা বলেন যে কাজের ভালো মন্দ বাহ্যিক দিকটির উপর নির্ভর করে। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিবাদীরা বলেন যে কাজের নৈতিক গুণ নির্ভর করে প্রেরণার উপরেই । মিল বলেন যে, প্রেরণার সঙ্গে কাজের ভালোমন্দের কোন সম্পর্ক নেই। কাণ্ট- এর মতে, কাজের ভালো মন্দ তার ফলাফল দেখে বিচার করা যায় না। কাজেই এই সমস্ত মতের উপর নির্ভর করে বলতে পারি এই মতবাদটি গ্ৰহণযোগ্য।
কোনটি নৈতিক বিচারের বিষয়, প্রেরণা না ফলাফল ?
এই কারণেই আমরা বলতে পারি, কাজের উদ্দেশ্যে বা প্রেরণা নৈতিক বিচারের বিষয়। কিন্তু নৈতিক বিচার শুধু উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে না, কাজের ফলাফলের উপরও নির্ভর করে।
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই, উদ্দেশ্য ভালো থাকলেও ফলাফল মন্দ হয়ে যায়। একজন শল্য চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করার জন্য অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু রোগীটি মারা যায়, তখন সেই চিকিৎসকের কাজকে মন্দ বলা যাবে না।
আবার অনেক সময় দেখা যায় উদ্দেশ্য মন্দ হয়েও ফল ভালো হয়। একজন ব্যক্তি একজন ভিখারির উপর বিরক্ত হয়ে তার মাথায় আঘাত করার জন্য একটি মুদ্রা ছাড়লেন। ভিখারি সেই মুদ্রাটি নিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করল। এখানে উদ্দেশ্য মন্দ ছিল, ফলাফল ভালো হলো।
যেখানে উদ্দেশ্য এবং ফলাফলের মধ্যে বিরোধ থাকে না, সেখানে কাজের গুণাগুণ বিচারে কোন বাধা হয় না। যখন দুইয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় তখন সমস্যা হয়। কাজের ভালো মন্দ বিচার করতে গেলে আমাদের উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিচার করতে হবে। ম্যাকেঞ্জির মতে, অভিপ্রায় যেহেতু একজন মানুষের চরিত্রের প্রকাশ, সামগ্ৰিক চরিত্র বিচার করেই সেই ব্যক্তির কাজের গুণ নির্ণয় করা হয়।
সুতরাং, আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছি , উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্যসিদ্ধির উপায় এবং কাজের ফলাফল — এই তিনটিই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু।
প্রশ্ন ৩। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কী ? নীতিবিদ্যা কি আদর্শনিষ্ঠ না বস্তু নিষ্ঠ না কল্যাণের বিজ্ঞান ? আলোচনা করো।
উত্তরঃ নীতিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা এমন বিজ্ঞান, যা আমাদের সুসংবদ্ধ জ্ঞান দেয়। এটি একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। কারণ, এটি কোন আদর্শকে সামনে রেখে পর্যবেক্ষণ, শ্রেণিকরণ এবং ব্যাখ্যা ইত্যাদির সাহায্যে মানুষের আচরণের মূল্যায়ণ করে। মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তার নিয়েও আলোচনা করে। মানুষের মনের ভিতরে থাকা ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ইত্যাদির সঙ্গে মানুষের আচরণ নিয়ে নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।
কিন্তু, নীতিবিদ্যা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের প্রকৃতি, উৎস এবং বিকাশের সঙ্গে জড়িত নয়। এটি মানুষের আচরণের ব্যাখ্যা করে না। নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের বিচার করে, আচরণের শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতা নিয়ে বিচার করে। এটি শুধু বাস্তব বিচারের সঙ্গে জড়িত নয়, মূল্যবোধক বিচারের সঙ্গে জড়িত। বাস্তব বিচার হল ঘটনার স্বরূপ বিষয়ক বিচার কিন্তু মূল্যবোধক বিচার ঘটনাটি কেমন হওয়া উচিত, সেটাই বিচার করে। সুতরাং নীতিবিদ্যা বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়, আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। অতএব, নীতিবিদ্যা কল্যাণ বা মঙ্গলের বিজ্ঞান।
প্রশ্ন ৪। নীতিবিদ্যা বলতে কী বোঝ ? নীতিবিদ্যার প্রকৃতি বা স্বরূপ সম্পর্কে আলোনা করো ?
উত্তরঃ ‘Ethics’ শব্দটি গ্ৰিক শব্দ ‘Ethica’ থেকে এসেছে। ‘Ethica’ এসেছে ‘Ethos’ থেকে। Ethos শব্দের অর্থ চরিত্র, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার,অভ্যাস ইত্যাদি। নীতিবিদ্যাকে নীতি দর্শনও বলা হয়।
নীতিবিদ্যাকে সংক্ষেপে নীতি বিজ্ঞান বা শুদ্ধ আচরণ বা কর্তব্য পালনের শাস্ত্র বলা হয়। এটা মূলতঃ ভালো- মন্দ , ন্যায়- অন্যায় এবং তার সঙ্গে জড়িত কাজকর্মে প্রকাশিত চরিত্রের ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। এই বিদ্যায় চরিত্রেরই বহিঃ প্রকাশ ঘটে। এই কারণে এই বিদ্যাকে চরিত্রের বিজ্ঞান বলা হয়।
নীতি শাস্ত্র আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এই আদর্শ হচ্ছে পরম শ্রেয়। এটি সত্য, সুন্দর ও সৌন্দর্যকে মেনে নেয়। এই আদর্শ হচ্ছে পরমার্থ বা পরম কল্যাণের আদর্শ।
কিছু ক্ষেত্রে নীতি শাস্ত্রবিদগণ একমত নয়। মেকেঞ্জির মতে, নীতিশাস্ত্র কেবল আদর্শ নিষ্ঠ বিজ্ঞান। মানবজীবনের পরমার্থ নির্ণয় করাই এই বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। নীতিশাস্ত্র প্রায়োগিক বিজ্ঞান নয়। প্রায়োগিক বিজ্ঞান কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপনীত হওয়ার প্রয়োজনীয় বিধি বা নিয়ম প্রবর্তন করে। কিন্তু নীতি শাস্ত্রই কেবল আদর্শ নির্ণয় করে। কিন্তু সেই আদর্শে উপনীত হওয়ার কোন নিয়ম প্রবর্তন করে না। সেই হিসাবে মেকেঞ্জির মতে নীতিশাস্ত্র আদর্শ নিষ্ঠ বিজ্ঞান, প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান নয়।
অন্যদিকে , মুরহেড এবং সেথর এর মতে আদর্শ বিজ্ঞান এক সময় ছিল তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক। আসলে নীতিশাস্ত্রই নৈতিক আদর্শের স্বরূপ নির্ণয় করে। বাস্তবে রূপায়িত করার কোন উপায় বা নির্দেশ বা ব্যবহারিক নীতি নিয়ম নির্ণয় করে না। সেইজন্য নীতি শাস্ত্রকে প্রায়োগিক বিজ্ঞান বলে অভিহিত করা যুক্তিযুক্তি। নৈতিক আদর্শই নীতিশাস্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় নীতিবিদ্যায় পুরুষার্থের অর্থ কী ? নৈতিক আদর্শ হিসেবে পুরুষার্থ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ সনাতন হিন্দু ধর্মে মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ হিসাবে দুটি বিষয় স্বীকার করা হয় —-
(ক) অভ্যুদয় এবং নিঃশ্রেয়স। যার মধ্যে চারটি মূল্যের উল্লেখ আছে,
সেগুলো হল–
(১) ধর্ম।
(২) অর্থ।
(৩) কাম। ও
(৪) মোক্ষ।
অভ্যুদয়ের মধ্যে আছে ধর্ম, অর্থ ও কাম। এটি মানুষের জীবনের প্রথমে শ্রেষ্ঠতম আদর্শ এবং নিঃশ্রেয়সে আছে মোক্ষ নামক চতুর্থ পুরুষার্থ।
ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না।
ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।
অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।
পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।
বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণ কাম। বংশবৃদ্ধির জন্য, বংশরক্ষার জন্য এটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে কাম। হিন্দু চিন্তাবিদেরা বলেন কামের পরিপূর্তির ভিত্তি হল ধর্ম। আমরা বলতে পারি কামের তীব্রতা অভিশাপে পরিণত হয়। যখন সেটা উপযুক্ত স্থান ও কালের বিবেচনা বহির্ভূত হয়।
কামকে পুরুষার্থ বলে বিবেচনা করা হয় এই কারণে যে, বংশরক্ষা, বংশবৃদ্ধি, সমাজ রক্ষার জন্য মানুষের স্বভাবজাত কামের পরিতৃপ্তির প্রয়োজন। অবশ্য তা হবে, সংযত , সুনিয়ন্ত্রিত কামই মানুষের পুরুষার্থ।
ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
প্রশ্ন ৬। সাধ্যের দ্বারা তার সাধনের সমর্থন করা যায় কি ? উপযুক্ত বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে একটি যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কিছু কাজের উদ্দেশ্য এবং তাকে লাভ করার জন্য উপায় —- এই দুইয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধ নৈতিক বিরোধ। সুতরাং কাজের উদ্দেশ্য সৎ হলেও তার উপায় যদি অসৎ হয়, অর্থাৎ সাধ্য ও সাধনের মধ্যে নৈতিক বিরোধ থাকে, তবে এই বিরোধ নীতিশাস্ত্রে এক অতি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের অবতারণা করে।
একথা অবশ্যই মানতেই হবেই যে, কাজের উদ্দেশ্য বা প্রেরণা নৈতিক বিচারের বিষয়। নৈতিক বিচার শুধু উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে না। কাজের ফলাফলের উপরেও নির্ভর করে। কারণ, বাহ্যিক ফলাফলের মধ্যে দিয়েই উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয়।
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে উদ্দেশ্য ভাল হলেও ফলাফল মন্দ হয়ে যায়। একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করার জন্য অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু রোগীটি মারা গেল, তখন সেই চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যাবে কি ? নিশ্চিয় নয়।
আবার, অনেক সময় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েও কাজ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। যেমন—- একজন ভদ্র লোক একজন ভিক্ষুকের ওপর বিরক্ত হয়ে তার মাথায় আঘাত করার জন্য একটি মুদ্রা ছুড়লেন। ভিক্ষুকটি সেই মুদ্রাটি কুড়িয়ে নিয়ে তা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করল। এখানে উদ্দেশ্য অসৎ হলেও ফলাফল ভালো হলো।
যেখানে, উদ্দেশ্য এবং ফলাফলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না, সেখানে নৈতিক গুণাগুণ বিচারে কোন বাধা থাকে না। সমস্যা হয় তখনই যখন এই দুইয়ের মধ্যে বিরোধ থাকে। কাজের ভালো মন্দ বিচার করতে হলে আমাদের উদ্দেশ্য ও ফলাফল দুই ই বিচার করতে হবে এবং কাজটি কী উপায়ে করা হয়েছিল তাও দেখতে হবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য+ উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায়+ ফলাফল= অভিপ্রায় হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। ম্যাকেঞ্জির মতে, অভিপ্রায় যেহেতু একজন ব্যক্তির চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, সামগ্ৰিক চরিত্র বিচার করেই সেই ব্যক্তির কাজের নৈতিক গুণ বিচার করতেই হয়।
সুতরাং, আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায় এবং কাজের ফলাফল —- এই তিনটিই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু।
প্রশ্ন ৭। কাজের উদ্দেশ্য দ্বারা তার ফলাফল সমর্থন করা যায় কি ? উপযুক্ত বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে একটি যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ কিছু কাজের উদ্দেশ্য এবং তাকে লাভ করার জন্য উপায় —- এই দুইয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধ নৈতিক বিরোধ। সুতরাং কাজের উদ্দেশ্য সৎ হলেও তার উপায় যদি অসৎ হয়, অর্থাৎ সাধ্য ও সাধনের মধ্যে নৈতিক বিরোধ থাকে, তবে এই বিরোধ নীতিশাস্ত্রে এক অতি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের অবতারণা করে।
একথা অবশ্যই মানতেই হবেই যে, কাজের উদ্দেশ্য বা প্রেরণা নৈতিক বিচারের বিষয়। নৈতিক বিচার শুধু উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে না। কাজের ফলাফলের উপরেও নির্ভর করে। কারণ, বাহ্যিক ফলাফলের মধ্যে দিয়েই উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয়।
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে উদ্দেশ্য ভাল হলেও ফলাফল মন্দ হয়ে যায়। একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করার জন্য অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু রোগীটি মারা গেল, তখন সেই চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যাবে কি ? নিশ্চিয় নয়।
আবার, অনেক সময় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েও কাজ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। যেমন—- একজন ভদ্র লোক একজন ভিক্ষুকের ওপর বিরক্ত হয়ে তার মাথায় আঘাত করার জন্য একটি মুদ্রা ছুড়লেন। ভিক্ষুকটি সেই মুদ্রাটি কুড়িয়ে নিয়ে তা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করল। এখানে উদ্দেশ্য অসৎ হলেও ফলাফল ভালো হলো।
যেখানে, উদ্দেশ্য এবং ফলাফলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না, সেখানে নৈতিক গুণাগুণ বিচারে কোন বাধা থাকে না। সমস্যা হয় তখনই যখন এই দুইয়ের মধ্যে বিরোধ থাকে। কাজের ভালো মন্দ বিচার করতে হলে আমাদের উদ্দেশ্য ও ফলাফল দুই ই বিচার করতে হবে এবং কাজটি কী উপায়ে করা হয়েছিল তাও দেখতে হবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য+ উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায়+ ফলাফল= অভিপ্রায় হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। ম্যাকেঞ্জির মতে, অভিপ্রায় যেহেতু একজন ব্যক্তির চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, সামগ্ৰিক চরিত্র বিচার করেই সেই ব্যক্তির কাজের নৈতিক গুণ বিচার করতেই হয়।
সুতরাং, আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায় এবং কাজের ফলাফল —- এই তিনটিই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু।
প্রশ্ন ৮। পুরুষার্থ কী ? পুরুষার্থের প্রত্যেকটি স্তর সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে পুরুষার্থের ধারণা মৌলিক নৈতিক মূল্য সম্পর্কিত ধারণা। এই নীতি শাস্ত্রের নৈতিক জীবনের পরম শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে পুরুষার্থের কথা বলা হয়। পুরুষার্থ চারটি আদর্শকে বুঝায় —- ধর্ম, অর্থ,কাম এবং মোক্ষ। এই চারটি পুরুষার্থ অর্জন মানব জীবনের মূল লক্ষ্য।
পুরুষার্থের স্তর চারটি। এইগুলি হল — ধর্ম, অর্থ,কাম ও মোক্ষ।
ধর্ম: ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না।
ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
অর্থ: পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।
অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।
কাম: পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।
বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণ কাম। বংশবৃদ্ধির জন্য, বংশরক্ষার জন্য এটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে কাম। হিন্দু চিন্তাবিদেরা বলেন কামের পরিপূর্তির ভিত্তি হল ধর্ম। আমরা বলতে পারি কামের তীব্রতা অভিশাপে পরিণত হয়। যখন সেটা উপযুক্ত স্থান ও কালের বিবেচনা বহির্ভূত হয়।
মোক্ষ: ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
প্রশ্ন ৯। অনৈতিক ক্রিয়া বলতে কী বোঝ ? যেকোন পাঁচটি অনৈতিক ক্রিয়ার সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ যে সব ক্রিয়ার মধ্যে নৈতিক গুণ নেই, অর্থাৎ যে সব ক্রিয়াকে ভালো,মন্দ, উচিত বা অনুচিত বলে বিচার করা যায় না, তাদের অনৈতিক ক্রিয়া বলে। যেমন —- বন্যা, উন্মাদ ব্যক্তির অপরাধ।
তিনটি অনৈচ্ছিক ক্রিয়া নিম্নরূপ —–
(ক) ভূমিকম্পে নেপাল ধ্বংস হল। যে প্রাকৃতিক কারণে নেপালে সম্প্রতি বিধ্বংসী ভূমিকম্প হল তার উপরে মানুষের ইচ্ছার কোন ব্যাপার ছিল না। এই রকম প্রাকৃতিক ঘটনা হল অনৈচ্ছিক ক্রিয়া।
(খ) প্রত্যাবর্তী ক্রিয়া অনৈচ্ছিক। যেমন—- অতি উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লে আমরা তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে ফেলি।
(গ) সহজাত ক্রিয়া অনৈচ্ছিক। যেমন —প্রাণী মাত্রেরই খাদ্যের সন্ধান, বংশবৃদ্ধি ইত্যাদি অনৈচ্ছিক ক্রিয়া।
(ঘ) ইতর প্রাণী , যেমন — কুকুর বিড়াল ইত্যাদি ক্রিয়াতে কোন নৈতিক গুণ নেই।
(ঙ) ছোট শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়া।
প্রশ্ন ১০। অভ্যাসজনিত ক্রিয়া বলতে কী বোঝ ? এইধরনের ক্রিয়াকে কেন নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু হিসাবে বিবেচনা করা হয়?
উত্তরঃ যখন কোন একটি ক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বারে বারে অনুশীলন করা হয়, তখন এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। এইরূপ ক্রিয়াকে অভ্যাসজনিত ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ —- মদ্যপের মদ্যপান একটি অভ্যাসজনিত ক্রিয়া। নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু মধ্যে অভ্যাসজনিত ক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত।
অভ্যাসজনিত ক্রিয়া প্রথমে ঐচ্ছিক থাকে। কারণ, যার মদ খাওয়ার অভ্যাস, সে কিন্তু প্রথম দিন সেচ্ছায় মদ খাওয়া শুরু করেছিল আর ইচ্ছাকৃত কাজের ওপরেই নৈতিক বিচার চলে।
প্রশ্ন ১১। নৈতিক বিচার এবং বাস্তব বিচারের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর নৈতিক বিচার হলো সেই বিচার, যাতে মানুষের কাজের নৈতিক গুণ অর্থাৎ সেই কাজ ভালো না মন্দ কিংবা উচিত বা অনুচিত এই বিচার করা হয়। কাজেই নৈতিক বিচার এমন একটি মানসিক ক্রিয়া, যা কোন নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে কাজের ভালো মন্দ বিচার করে। নৈতিক বিচারের ভিত্তিতে কাজের মূল্যায়ন করা হয়। যেমন— মিথ্যা কথা বলা অন্যায়।
অন্যদিকে, বাস্তব বিচার বা বস্তুগত বিচার হলো বাস্তব ঘটনার বিচার। যেমন— আজকের দিনটি বড়ো ঠাণ্ডা।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তর দাও —-
(ক) পুরুষার্থ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে পুরুষার্থের ধারণা মৌলিক নৈতিক মূল্য সম্পর্কিত ধারণা। এই নীতি শাস্ত্রের নৈতিক জীবনের পরম শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে পুরুষার্থের কথা বলা হয়। পুরুষার্থ চারটি আদর্শকে বুঝায় —- ধর্ম, অর্থ,কাম এবং মোক্ষ। এই চারটি পুরুষার্থ অর্জন মানব জীবনের মূল লক্ষ্য।
(খ) জীবনের চারটি পুরুষার্থ কী কী ?
উত্তরঃ ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ।
(গ) কাম শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।
বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণ কাম। বংশবৃদ্ধির জন্য, বংশরক্ষার জন্য এটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে কাম। হিন্দু চিন্তাবিদেরা বলেন কামের পরিপূর্তির ভিত্তি হল ধর্ম। আমরা বলতে পারি কামের তীব্রতা অভিশাপে পরিণত হয়। যখন সেটা উপযুক্ত স্থান ও কালের বিবেচনা বহির্ভূত হয়।
কামকে পুরুষার্থ বলে বিবেচনা করা হয় এই কারণে যে, বংশরক্ষা , বংশবৃদ্ধি, সমাজ রক্ষার জন্য মানুষের স্বভাবজাত কামের পরিতৃপ্তির প্রয়োজন। অবশ্য তা হবে, সংযত , সুনিয়ন্ত্রিত কামই মানুষের পুরুষার্থ।
(ঘ) অর্থ শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।
অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।
প্রশ্ন ২। মোক্ষ বা মুক্তি কী ? ভারতের বিভিন্ন দর্শন এর স্বরূপ কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ?
উত্তরঃ ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
মোক্ষ সম্পর্কে প্রধানত দুটি মত পাওয়া যায়। যেমন— দৈহিক মুক্তি এবং জীবন মুক্তি। কোন কোন দার্শনিকের মতে, জীবের দার্শনিক আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করতে হবে না। দেহের সম্পর্কও ত্যাগ করতে হবে , এটিই দৈহিক মুক্তি। অন্যদিকে,জৈন , বৌদ্ধ, সাংখ্য এবং অদ্বৈত বেদান্ত মতে দেহ ধারণা করেও মোক্ষ লাভ করা যায়। মুক্তির জন্য দেহ ত্যাগ ও সংসার ত্যাগের কোন প্রয়োজন নেই। মোক্ষের প্রকৃত অর্থ হল আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করা। বৌদ্ধ দর্শনে মোক্ষকে নির্বাণ বলে।
শংকরাচার্যের মতে, মুক্ত আত্মাই স্বরূপরূপে অধিষ্ঠিত হয়। আত্মার এই মুক্ত অবস্থা সৎ এবং আনন্দ অবস্থা।
প্রশ্ন ৩। ‘ ধর্মের ‘ ধারণা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না।
ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
প্রশ্ন ৪। পুরুষার্থের সামাজিক গুরুত্ব কী ? যুক্তি সহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে পুরুষার্থের ধারণা মৌলিক নৈতিক মূল্য সম্পর্কিত ধারণা। এই নীতি শাস্ত্রের নৈতিক জীবনের পরম শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে পুরুষার্থের কথা বলা হয়। পুরুষার্থ চারটি আদর্শকে বুঝায় —- ধর্ম, অর্থ,কাম এবং মোক্ষ। এই চারটি পুরুষার্থ অর্জন মানব জীবনের মূল লক্ষ্য।
পুরুষার্থের স্তর চারটি-
এইগুলি হল — ধর্ম, অর্থ,কাম ও মোক্ষ।
ধর্ম: ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না।
ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
অর্থ: পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।
অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।
কাম: পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।
বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণ কাম। বংশবৃদ্ধির জন্য, বংশরক্ষার জন্য এটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে কাম। হিন্দু চিন্তাবিদেরা বলেন কামের পরিপূর্তির ভিত্তি হল ধর্ম। আমরা বলতে পারি কামের তীব্রতা অভিশাপে পরিণত হয়। যখন সেটা উপযুক্ত স্থান ও কালের বিবেচনা বহির্ভূত হয়।
মোক্ষ: ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ। মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।
We Hope the given দ্বাদশ শ্রেণীর তর্কবিজ্ঞান ও দর্শন will help you. If you Have any Regarding AHSEC Board HS 2nd Year Logic and Philosophy Question and Answers in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.