Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, AHSEC Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Solutions are free to use and easily accessible. Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Assam AHSEC Board Class 12 Political Science Question Answer in Bengali The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.

Class 12 Political Science Chapter 18 ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

HS 2nd Year Political Science Notes in Bengali, Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 12 Political Science Solution in Bengali he experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 12 Political Science in Bengali Suggestions, will be able to solve all the doubts of the students. Class XII Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 12 Political Science Textbooks Solution are present on Roy Library’s website in a systematic order.

প্রশ্ন ২৮। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলশ্রুতি কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় রাজনীতির এক ‘কালো দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই দিন ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য করসেবার লক্ষ্যে অযোধ্যার বিবাদমান স্থানে এক বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন করে। প্রায় দুই লক্ষ হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক সেই দিন বিবাদমান স্থানে উপস্থিত ছিল। তারা করসেবার নামে বাবরি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে।

এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা দেখা দেয়। কলকাতা, মুম্বাই, ভূপালে এই সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুম্বাইতে দুই সপ্তাহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলতে থাকে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে সমগ্র দেশে প্রায় তিন হাজার লোক প্রাণ হারায়। 

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতীয় রাজনীতিতে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয়:

(ক) ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারকে বরখাস্ত করা হয়। বি. জে. পি. শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হয়।

(খ) উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়।

(গ) বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উপস্থিত থাকা বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী, ডঃ মুরলী মনোহর যোশী তথা উমা ভারতী এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংঘল প্রমুখের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দাখিল করা হয়।

(ঘ) এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি তদন্ত আয়োগ নিযুক্ত করেন।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উপর এক বিরাট আঘাতস্বরূপ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৯। নূতন আর্থিক নীতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বনির্ভর অর্থনীতি নির্মাণের জন্যই ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক হতে এবং বিশেষত ১৯৯১ সালে বিকাশ সম্পৰ্কীয় জাতীয় চিন্তা ও চর্চার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯১ সালে পি. ভি. নরসিংহ রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং দেশে নূতন অর্থনৈতিক নীতির সূচনা করেন। এইরূপ সংস্কার অবশ্য তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আরম্ভ হয় এবং একে সংক্ষেপে L.P.G.—Liberalization, Privatization and Globalization (উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ন) বলা হয়।

ভারতের আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) অর্থনৈতিক উদারীকরণ।

(খ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন।

(গ) সরকারি উদ্যোগের বেসরকারিকরণ।

(ঘ) সরকারি উদ্যোগের বিলগ্নীকরণ। ও

(ঙ) বৈদেশিক পুঁজি লগ্নীকরণ।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি ও কার্যক্রম বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বি. জে. পি. ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পার্টি পূর্বতন জনসংঘের পরিবর্তিত রূপ। ১৯৭৭ সালে জনসংঘ, সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল ও সমাজতন্ত্রী দল মিলিত হয়ে জনতা পার্টি গঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনতা পার্টি সাফল্য লাভ করে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে দলীয় কোন্দলে জনতা সরকারের পতন ঘটে। রাজনারায়ণ, চরণ সিং প্রভৃতি নেতাগণ জনতা পার্টি ত্যাগ করে জনতা পার্টি (সমাজতন্ত্রী) গঠন করে। এর পর ১৯৮০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পূর্বতন জনসংঘ গোষ্ঠী জনতা পার্টি ত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টি গঠন করেন।

ভারতীয় জনতা পার্টি—

(ক) জাতীয়তাবাদ।

(খ) জাতীয় সংহতি। 

(গ) গণতন্ত্র। 

(ঘ) ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতা। 

(ঙ) গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র। এবং 

(চ) মূল্যবোধ-ভিত্তিক রাজনীতি—এই ছয়টি আদর্শে বিশ্বাসী। 

ভারতীয় জনতা পার্টিকে অনেকে সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করেন। কিন্তু তা সর্বাংশে সত্য নয়। এই দল ইতিবাচক ধর্মনিরপেক্ষতায় (Positive Secularism) বিশ্বাসী। ভারতীয় জনতা পার্টি সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দল কোন বিশেষ সম্প্রদায়কে তোষামোদের নীতির বিরোধী। ভারতীয় জনতা পার্টি সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সহিত সুসম্পর্ক স্থাপনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভারতীয় জনতা পার্টি অযোধ্যার রাম জন্মভূমি পুনরুদ্ধারে কৃতসংকল্পবদ্ধ। ১৯৮৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি রাম জন্মভূমিকে নির্বাচনী ইস্যু করে বিপুল সফলতা অর্জন করে এবং নির্বাচনে মোট ৮৪টি আসন লাভ করে। ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থনে ১৯৮৯ সালে ভি. পি. সিংয়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রে ‘জাতীয় মোর্চা’ (National Front) সরকার গঠিত হয়। কিন্তু জাতীয় মোর্চা সরকার রাম জন্মভূমি সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৯০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি মোর্চা সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করলে ‘জাতীয় মোর্চা’ সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯৮ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। মোট ১৮৪টি আসল দখল করে ভারতীয় জনতা পার্টি কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছে।

১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে কেন্দ্রে সম্মিলিত সরকার বা রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সরকার গঠিত হয়। ২০০৪ সালের লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। ভারতীয় জনতা পার্টি ও এর সংযোগী দলসমূহ মাত্র ১৮৭টি আসন লাভ করে।

২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা মাত্র ১৮৭টি আসন লাভ করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে বিজেপি মাত্র ১১৬টি আসন লাভ করে।

রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে এই দলের উল্লেখযোগ্য প্রভাব দৃষ্ট হয়। বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টি গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় ও কর্ণাটকে এককভাবে ক্ষমতাসীন। বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে সহযোগী দলের শরিক হিসাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই দল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন হয়। 

এই সময়ের মধ্যে দল ১৯৯৬, ১৯৯৮, এবং ১৯৯৯ সালে আঞ্চলিক দলগুলির সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৮৪ সালে দল লোকসভায় ২টি আসন লোকসভা এবং ২০১৪ সালের লোকসভায় গল ২৮২ আসন লাভ করে। সরকার গঠন করে।

প্রশ্ন ২। “মোর্চা রাজনীতির নূতন যুগে রাজনৈতিক দলসমূহের আদর্শের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা গড়ে না বা ভঙ্গ করে না।” এই উক্তিটির সপক্ষে বা বিপক্ষে তুমি কি যুক্তি দেখাবে?

উত্তরঃ এটা অবশ্যই সত্য ও বাস্তব যে সম্মিলিত রাজনীতির নূতন যুগ হওয়ার ফলে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ গোষ্ঠী নিরপেক্ষ বা গোষ্ঠীভুক্ত হয়। রাজনৈতিক দলসমূহের গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার মূল ভিত্তি হল নিজেদের স্বার্থরক্ষা করা এবং বিরোধীদের স্বার্থ বিপন্ন করা। কেন্দ্রে মনমোহন সরকারের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকারকে বামফ্রন্ট সমর্থন জানায়, যদিও কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু এর সাধারণ স্বার্থ ছিল কেন্দ্রে বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। তদ্রুপ বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বি. জে. পি. ও জনতা দলের আঁতাতের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে এই উভয় রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে রাখা। ঠিক সেইভাবে পাঞ্জাবে কংগ্রেসকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য অকালি দল-বিজেপি আঁতাত গড়ে ওঠে। কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা ও সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা এই ব্যাপারে উদাহরণস্বরূপ। সুতরাং আমরা এটা বলতে পারি যে সম্মিলিত রাজনীতির যুগে রাজনৈতিক দলসমূহ আদর্শের ভিত্তিতে গোষ্ঠীভুক্ত হয় না।

প্রশ্ন ৩। কংগ্রেস দলের আধিপত্য হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর প্রভাব বিরাজমান। তুমি এই কথায় সম্মত কি? যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হল ভারতের প্রাচীনতম সুসংগঠিত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল এবং ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভারতের রাজনীতিতে একাধিপত্য বিস্তার করেছিল। কংগ্রেস প্রথমবার ১৯৬৯ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৭৮ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৯৫ সালে বিভাজিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে বিভাজনের পর ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত কংগ্রেসকে কংগ্রেস(ই) নামে চিহ্নিত করা হয়। নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের ফলে ভারতের নির্বাচন আয়োগ ১৯৯৬ সালের ১২ই মে কংগ্রেস(ই)-কে প্রকৃত কংগ্রেসের স্বীকৃতি প্রদান করে।

বর্তমানে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা পূর্বের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে। কংগ্রেস এখনও ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। ১৯৯১ সালে দশম লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ২২৫টি আসন লাভ করে। ১৯৯৬ সালে একাদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৪১টি আসন লাভ করে। ১৯৯৮ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস দ্বাদশ লোকসভায় ১৪২টি আসন লাভ করে। ১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১১৪টি আসন লাভ করে। ২০০৪ সালের চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ১৪৫টি আসন লাভ করে এবং অন্যান্য সহযোগী দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা গঠিত হয়। ২০০৯ সালে পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ২০৬টি আসন লাভ করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার গঠিত হয়।

কেবল কেন্দ্রেই নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও কংগ্রেসের আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়। অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া মহারাষ্ট্র, জম্মু ও কাশ্মীর, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিক।

সুতরাং উপরের আলোচনায় এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে কংগ্রেসের একাধিপত্য হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব বিরাজমান।

প্রশ্ন ৪। কঠোর বিষয়সমূহের উপর বুদ্ধিশীল সহমতের বিষয়ে পরীক্ষা কর।

উত্তরঃ বিগত বছরগুলিতে ভারতীয় রাজনীতিতে দুই প্রধান রাজনৈতিক মোর্চা তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহমত পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

এই সহমতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) নূতন আর্থিক নীতি: ১৯৯১ সালে ডঃ মনমোহন সিং-এর অর্থমন্ত্রীত্বের সময় নূতন আর্থিক নীতিকে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। বর্তমানে অবশ্য অধিকাংশ সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসমূহের অন্তর্ভুক্ত ট্রেড ইউনিয়নসমূহ এই নীতির বিরোধিতা করে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আসে তখনই এই নীতি সমর্থন আরম্ভ করে।

(খ) অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর দাবির প্রতি সমর্থন: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের দাবির প্রতি সমর্থন করছে।

(গ) আঞ্চলিক প্রত্যাশা: কংগ্রেস অথবা ভারতীয় জনতা পার্টি এককভাবে দেশ শাসনের প্রচেষ্টা করে আসছে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে এটা স্পষ্ট যে তারা সমগ্র দেশের নিজ নিজ রাজনৈতিক স্থিতি সুদৃঢ় করতে পারবে না। সেইজন্য বিভিন্ন রাজ্যে এই দুইটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছে।

(ঘ) আদর্শগত অবস্থানের পরিবর্তে ক্ষমতা অধিকারের উপর অধিক গুরুত্ব: বর্তমান বছরগুলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শগত অবস্থানের পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। কতিপয় বামপন্থী দল ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল ক্ষমতা দখলের জন্য নিজ নিজ আদর্শ বিসর্জন দিয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৫। গুজরাটের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা নামক শহরের রেলস্টেশনে ‘সবরমতী এক্সপ্রেস’-এর কোন একটি কামরায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করে। সেই কামরায় অযোধ্যা হতে করসেবকগণ ফিরে আসছিল। এই ঘটনায় শিশু ও মহিলা সহ ৫৭জন লোক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। এই কাণ্ড স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আগুন জ্বলে ওঠে। সমগ্র গুজরাটে প্রায় ১৫০টি শহর ও এক হাজারেরও অধিক গ্রাম আক্রান্ত হয়। এই সংঘর্ষ প্রায় চার মাস ধরে চলে। সংঘর্ষে প্রায় একহাজার লোকের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হওয়া লোকদের মধ্যে ৮০% মুসলমান ও ২০% হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক। এই ঘটনায় দুইশত লোক নিখোঁজ হয়। প্রায় আড়াই হাজার লোক আহত হয়। একশোরও অধিক মহিলা বিধবা হয় এবং ছয় শতাধিক শিশু পিতা-মাতাকে হারায়।

এই ঘটনার সময় কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। উভয় সরকারই এই ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন আয়োগ গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ৬। বহু লোক মনে করে যে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে। কুড়ি বছর ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান দল ব্যবস্থার সুবিধার উপর একটি রচনা লেখ।

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। অনেকে মনে করেন যে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য দ্বি-দলীয় প্রথা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার ফলে সেখানে গণতন্ত্র সফল। দ্বি-দলীয় প্রথার প্রধান সুবিধা হল এই ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা গঠন অত্যন্ত সহজ। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সরকার স্থায়ী ও দায়িত্বশীল।

ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালের পর ভারতে কোয়াাালিশন রাজনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৮৯ সালের পর ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কোয়ালিশন সরকার। বর্তমানে মোট ৬টি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল এবং বহু আঞ্চলিক ও রাজ্যিক দল বিদ্যমান। 

ভারতে বর্তমান বহুদলীয় ব্যবস্থার প্রধান সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ভারতে বর্তমানে বহুদলীয় ব্যবস্থার ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মতামত প্রকাশ ও প্রতিনিধিত্ব লাভ সম্ভব হচ্ছে। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সার্থকভাবে জনমতের প্রতিফলন হতে পারে না। ভারতের বহুজাতিক সমাজে বহুদলীয় ব্যবস্থার ফলে বিভিন্ন জাত ও সম্প্রদায় তাদের মতামত প্রকাশ ও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাচ্ছে।

(খ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকায় নির্বাচকগণের সামনে অনেক বিকল্প থাকে। তাহাদের স্বাধীনতাও বিস্তৃত হয়। ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাগরিকের পক্ষে প্রার্থী পছন্দ করবার বেশি সুযোগ থাকে।

(গ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকায় বর্তমানে কোন বিশেষ দলের একাধিপত্য নেই। এই ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্র ও বহু রাজ্যে জোট রাজনীতি ও জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত। জোট রাজনীতিতে কোন বিশেষ দলের একাধিপত্য না থাকায় সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না।

(ঘ) ভারতের বর্তমানে বহুদলীয় ব্যবস্থায় অগণিত আঞ্চলিক দল থাকার ফলে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।

সুতরাং ভারতের বর্তমান দলব্যবস্থার কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধাও বহুল পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ৭। জনতা দলের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ জনতা দল ১৯৮৯ সালের ১১ই অক্টোবরে গঠিত হয়। এই দলের প্রধান আহ্বায়ক বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীরাজীব গান্ধীর সঙ্গে ভি. পি. সিং-এর মতানৈক্য হওয়ার ফলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ১৯৮৮ সালে জনমোর্চা গঠন করেন। তারপর জনতা পার্টি ও লোকদলকে জনমোর্চায় সংযুক্ত করে জনতা দল নামে একটি নূতন দল তিনি গঠন করেন। ১৯৮৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে ‘বোফর্স কেলেঙ্কারি’-কে নির্বাচনে রাজীব গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হিসাবে অবলম্বন করে নির্বাচনে অবতীর্ণ হন এবং অন্যান্য শরিক দলগুলির সহায়তায় কেন্দ্রে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ সরকার গঠন করেন।

জনতা দল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই দল সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশে বিশ্বাসী। জনতা দল সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের কল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দল সংরক্ষণ নীতিতে বিশ্বাসী এবং ‘মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই দল গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী।

জনতা দল ১৯৮৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থনে কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভি. পি. সিং সরকার অযোধ্যা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৯০ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করে, ফলে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ সরকারের পতন ঘটে। চন্দ্রশেখর কয়েকজন অনুগামীসহ জনতা দল ত্যাগ করে সমাজবাদী জনতা পার্টি গঠন করেন এবং কংগ্রেসের সমর্থনে কিছুদিনের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করিলে ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে চন্দ্রশেখর সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে জনতা দলের বিপর্যয় ঘটে। দলীয় কোন্দলে বর্তমানে জনতা দল দুইটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। বর্তমানে বিহারে জনতা দল ইউনাইটেডের সরকার গঠন করেছে। বর্তমানে জনতা দল জাতীয় দলের মর্যাদা হারিয়েছে।

প্রশ্ন ৮। সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ২০০৪ সনে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা পরাজিত হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা গঠন করা হয়। এই মোর্চার অংশীদারী গুরুত্বপূর্ণ দলসমূহ হল তামিলনাড়ুর ডি. এম. কে. বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি দল, শরদ পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দল প্রভৃতি। ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে গঠন করা এই সরকারকে বামপন্থী দলসমূহ ছাড়াও সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি বাইরে থেকে সমর্থন দেয়। মোর্চা সরকারের কার্যসূচী রূপায়নের জন্য ন্যূনতম সাধারণ কার্যসূচী তৈরি করা হয়। ২০০৯ সনের নির্বাচনে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বিজয়ী হয় এবং ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠন করা হয়। অবশ্যই নির্বাচনের সময় পূর্বের কয়েকটি রাজনৈতিক দল মোর্চা ত্যাগ করে এবং অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল নূতনভাবে অংশগ্রহণ করে। কংগ্রেস সভানেত্রী শ্রীমতী সোনিয়া গান্ধী ইউ. পি. এ.-র অধ্যক্ষ।

প্রশ্ন ৯। ১৯৮০-এর দশক থেকে নীতি নির্ধারকগণকে ভারতের অর্থনীতিতে রাজ্যের গুরুত্ব হ্রাস করতে হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ স্বনির্ভর অর্থনীতি নির্মাণের জন্যই ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক হতে এরং বিশেষত ১৯৯১ সালে বিকাশ সম্পৰ্কীয় জাতীয় চিন্তা ও চর্চার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯১ সালে পি. ভি. নরসিংহ রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন। এইরূপ সংস্কার অবশ্য তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আরম্ভ হয় এবং একে সংক্ষেপে L.P.G. Liberalization, Privatization and Globalization (উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়ন) বলা হয়।

ভারতের আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) অর্থনৈতিক উদারীকরণ।

(খ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন।

(গ) সরকারি উদ্যোগের বেসরকারিকরণ।

(ঘ) সরকারি উদ্যোগের বিলগ্নীকরণ।

(ঙ) বৈদেশিক পুঁজি লগ্নীকরণ।

আর্থিক সংস্কার বা নূতন আর্থিক নীতি সূচনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতির প্রকৃতি ও দিকের পরিবর্তন ঘটে। জাতীয় নির্ভরশীলতার পরিবর্তে আত্মনির্ভরশীল বিশ্ব অর্থনীতির দিকে ভারত ধাবিত হয়। আর্থিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

(ক) স্ব-নির্ভর অর্থনীতির পরিবর্তে সরকার আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। এর অংশ হিসাবে দেশের অর্থনীতির উদারীকরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি আর্থিক সংস্থার পরামর্শসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে। এটাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূল সূচনা বলা যায়।

(খ) গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ না করলেও ভারত এখন বিশ্বের প্রথম সারির পুঁজিবাদী দেশসমূহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করে তোলার উপর গুরুত্ব প্রদান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক ও অন্যান্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

(গ) সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অংশ হিসাবে গৃহীত বহুসংখ্যক কার্যসূচী এখনও প্রাথমিক কার্যসূচী হিসাবে পরিগণিত হয় নি। উদাহরণস্বরূপ, ভূমি সংস্কার এখন ভারত সরকারের প্রাথমিক কার্যসূচী নয়। এর পরিবর্তে এখন নানাবিধ কল্যাণমুখী কাৰ্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।

(ঘ) সরকার ব্যক্তিগত খণ্ডের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খণ্ডে দ্রুত হারে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে এইসব ক্ষেত্রে বিকাশের সুযোগ গড়ে উঠেছে।

(ঙ) দেশে এখন অতি-বিত্তশালী শ্রেণী গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ মুকেশ আম্বানী বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি।

নতূন আর্থিক নীতির ফলশ্রুতি সম্পর্কে ভারতবর্ষে যথেষ্ট বিতর্ক গড়ে উঠেছে। সমালোচকগণের মতে ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে নব-ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিমত সর্বাংশে সত্য নয়। নূতন আর্থিক নীতি ভারতের অর্থনীতিকে সবল করে তুলেছে।

প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা ১৯৯৮ সাল থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই মোর্চা ১৯৯৮ সাল ও ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠন করা ছাড়াও কয়েকটি রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল। এই মোর্চা সরকারের অংশীদার দলসমূহের মধ্যে অন্যতম হল শিবসেনা, শিরোমণি অকালি দল, অসম গণ পরিষদ, রাষ্ট্রীয় লোকদল ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে এই সরকার থেকে হঠাৎ এ. আই. এ. ডি. এম. কে. দল সমর্থন প্রত্যাহার করার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পতন ঘটে।

১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা সর্বমোট ২৯৬টি আসন দখল করে পুনরায় বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে এবং সম্পূর্ণ পাঁচ বছর শাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা পরাজিত হয়। ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এই মোর্চা জয়লাভ করতে পারে নি। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা কেন্দ্রে পুনরায় সরকার গঠন করেছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১১। জনতা পার্টির উত্থান সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালের আভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা বলবৎকালে বহু সর্বভারতীয় নেতা কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমতি গান্ধী লোকসভার নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন এবং আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দানের ব্যবস্থা করেন। মুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সচেষ্ট হন। ১৯৭৭ সালের ২০শে জানুয়ারি শ্রীমোরারজী দেশাই সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল, জনসংঘ এবং সমাজতন্ত্রী দলের সম্মেলনে ‘জনতা পার্টি’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন। লোকনায়ক শ্রীজয়প্রকাশ নারায়ণ জনতা পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। শ্রীজগজীবন রামের গণতন্ত্রী কংগ্রেস স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রক্ষা করে ও জনতা দলের সহিত জোটবদ্ধ হয়। ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসের সাধারণ নির্বাচনে জনতা দল ২৬৩টি আসন এবং তার সহযোগী গণতন্ত্রী কংগ্রেস ২৮টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের পর গণতন্ত্রী কংগ্রেস জনতা পার্টির অঙ্গীভূত হয় এবং জনতা পার্টির আসন হয় ২৯৩।

আদর্শ ও লক্ষ্য: ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে ষষ্ঠ লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে জনতা দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে নূতন দলের লক্ষ্য ও আদর্শের কথা ঘোষণা করা হয়। পরস্পরবিরোধী ও বিভিন্ন মতাদর্শের সম্মিলনে গঠিত জনতা পার্টি গান্ধীবাদের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বলে ঘোষণা করে। নির্বাচনে ঘোষিত লক্ষ্য ও আদর্শ গ্রহণে শ্রীজয়প্রকাশ নারায়ণের বিশেষ প্রভাব ছিল। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মিসা আইন বাতিল, ৪২তম সংবিধান সংশোধন আইন বাতিল, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিদান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের অধ্যায় হতে বাদ দেওয়া, কৃষি এবং ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের উপর গুরুত্ব প্রদান, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে আয়ের বৈষম্য হ্রাস প্রভৃতি প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষিত হয়। 

সরকার গঠনের পর জনতা পার্টি কয়েকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রূপদান করে। ২৮ মাস শাসন ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত থাকবার পর ১৯৭৯ সালের সংসদের বাদল অধিবেশনের পূর্বে মোরারজী সরকারের পতন হয়। জনতা পার্টির মধ্যে ব্যাপক দলত্যাগ হয়। রাজনারায়ণ, চরণ সিং প্রভৃতির নেতৃত্বে জনতা পার্টি (এস) গঠন করে। 

১৯৮০ সালের সপ্তম লোকসভা নির্বাচনে জনতা পার্টির লক্ষ্য ও কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। জনতা পার্টি ‘রুটি ও স্বাধীনতার’ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। দলত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা, সরকারি ব্যয়ে নির্বাচনী প্রচার, পঞ্চায়েতী রাজ প্রতিষ্ঠা, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রভৃতি লক্ষ্যের কথা জনতা পার্টি ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯৮০ সালের নির্বাচনে পার্টির ভরাডুবি হয়। বর্তমানে জনতা পার্টির অস্তিত্ব ম্রিয়মান।

প্রশ্ন ১২। ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর হতে ভারতে আঞ্চলিক দলের প্রসার ঘটেছে, যা ভারতের একতা ও অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক।

সমাজ বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির মদতেই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির আবির্ভাব ঘটে। এই শক্তির ফলেই ভারতে অসংখ্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি ঘটেছে। কতকগুলি আঞ্চলিক দলের অবশ্য সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে, কিন্তু তাদের কার্যকলাপ একটি বিশেষ এলাকায় নির্ধারিত থাকায় তাদেরকে আঞ্চলিক দল বলা হয়। কতকগুলি আঞ্চলিক দল অবশ্য আঞ্চলিকতাবাদের উপর গঠিত হয়।

সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতিতে বিশ্বাসী আঞ্চলিক দলগুলি নিঃসন্দেহে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতির পরিপন্থী। কিন্তু কোন বিশেষ আঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বিকাশের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক দল নিঃসন্দেহে কাম্য।

আঞ্চলিক দলগুলি সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক হতে পারে। সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক দলগুলি হল—পাঞ্জাবের অকালি দল, সংযুক্ত অকালি দল, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লিগ, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা ইত্যাদি। পাঞ্জাবের রাজনীতিতে অকালি দল, এবং মহারাষ্ট্রের শিবসেনা দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেছে। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা-বি.জে.পি. কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে।

অসাম্প্রদায়িক দলগুলি হল—তামিলনাড়ুতে এ. ডি. এম. কে; ডি. এম. কে; অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম; মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি; জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় কনফারেন্স ও প্যান্থার্স পার্টি; আসামে অসম গণ পরিষদ; পশ্চিমবঙ্গে তৃণমুল কংগ্রেস ফরওয়ার্ড ব্লক; এস. ইউ. সি. আই.; আর. এস. পি.; বিপ্লবী কমিউনিস্ট দল; গোর্খা লীগ ইত্যাদি; বিহারে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা; উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি; মণিপুরে মণিপুর পিপলস্ পার্টি; নাগাল্যান্ডে নাগা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি; মিজোরামে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট; মেঘালয়ে অল পার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্স; ত্রিপুরায় ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতি। তা ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক আঞ্চলিক দল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বর্তমান।

তামিলনাড়ুতে স্বাধীনতার পর থেকেই ডি. এম. কে. এবং এ. ডি. এম. কে. গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দুই দল দীর্ঘদিন ধরে পর্যায়ক্রমে এই রাজ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম দীর্ঘদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে জাতীয় সম্মেলন সুদীর্ঘকালব্যাপী ক্ষমতায় ছিল। আসামে অসম গণ পরিষদ পাঁচ বৎসর (১৯৮৫ – ১৯৯০) ক্ষমতায় ছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক দলের প্রভাব অধিক এবং প্রায়ই এই রাজ্যগুলির কোনটিতে আঞ্চলিক দলের সরকার গঠিত হয়।

ভারতে দলীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলির আবির্ভাব মোটেই শোভনীয় নয়। এটা ভারতের ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী। আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাবে ভবিষ্যতে কোনদিন হয়তো স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নাও হতে পারে। সুতরাং আঞ্চলিক দলগুলিকে ভারতীয় জাতীয় সমস্যার প্রতি দৃষ্টিলাভ করতে হবে।

প্রশ্ন ১৩। ভারতে সম্মিলিত সরকারের বিকাশ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ ভারতে সম্মিলিত সরকারের সূচনা হয় ১৯৭৭ সালে। এই সালে জনতা পার্টির সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। রাজ্যস্তরে প্রথম সম্মিলিত সরকারের সূচনা হয় ১৯৬৭ সালে কেরালায়। ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে মোরারজি দেশাই-এর নেতৃত্বে জনতা পার্টির সরকার গঠিত হয়। জনতা পার্টি মোট পাঁচটি দল নিয়ে গঠিত হয়। জনতা পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১৯৭৯ সালে সরকারের পতন ঘটে। ১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জনতা দল, লোক দল (বি), কংগ্রেস (এস), তেলেগু দেশম, ডি. এম. কে. ও অসম গণ পরিষদ প্রভৃতি দলের সহযোগে ‘রাষ্ট্রীয় মোর্চা’ নামক এক সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ভারতীয় জনতা পার্টি ও বামপন্থী দলসমূহ বাইরে থেকে মোর্চা সরকারকে সমর্থন করে। ১৯৯০ সালে বি. জে. পি. সমর্থন প্রত্যাহার করলে উক্ত জোট সরকারের পতন ঘটে। পরে জনতা দলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে চন্দ্রশেখর কংগ্রেস (আই)-এর ছত্রছায়ায় সরকার গঠন করেন। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটে।

১৯৯৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে মোট ১৩টি দলের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এন. ডি. এ.) বা রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা নামক এক সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ১৩ মাস ক্ষমতায় থাকে। এ. আই. এ. ডি. এম. কে. দল সমর্থন প্রত্যাহার করলে ১৩ মাস পর এই সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯৯ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে মোট ২৪টি দলের এন. ডি. এ. সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ২০০৪ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে মোট নয়টি দলের ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউ. পি. এ.) বা সম্মিলিত প্রগতিশীল মোর্চা সরকার গঠিত হয়। এই সম্মিলিত সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রাক্-নির্বাচনী মিত্রতার সহযোগে কেন্দ্রে একটি সম্মিলিত সরকার গঠন করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৮৯ সালের পরবর্তী সময়কালে ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ লেখ। রাজনৈতিক দলগুলির পৃথক গঠন কি এই পার্থক্যসমূহ গঠন করে?

উত্তরঃ ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। ১৯৭৭ সালে প্রথমবার কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতা হারায় এবং জনতা পার্টির সরকার গঠিত হয়। এর পর থেকে ভারতে ঘন ঘন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৮৯ সালের পর ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা: ভারতে দীর্ঘকাল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সাল থেকে একদলীয় প্রাধান্যের অবসান প্রথমে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুদলীয় ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটায়।

(খ) কংগ্রেসের একাধিপত্যের অবসান: ভারতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘকাল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৯৭টি আসন লাভ করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ২৪৪টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করলেও এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়লাভ করতে পারেনি। ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস অন্যান্য দলের সমর্থনে মোর্চা সরকার গঠন করে। সুতরাং ১৯৮৯ সালের পর থেকেই ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থায়ীভাবে জাতীয় কংগ্রেসের একাধিপত্যের অবসান ঘটে।

(গ) মণ্ডল আয়োগের পরামর্শবলির প্রয়োগ ও ইহার ফলাফল: জনতা পার্টি সরকারের আমলে (১৯৭৭–৭৯) নিযুক্ত মণ্ডল কমিশন সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে পশ্চাদপদ জাতিদের জন্য ২৭ শতাংশ পদ সংরক্ষণের সুপারিশ করে। এই পরামর্শ ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী সরকার বাস্তবায়িত করেনি। ১৯৯০ সালের ৭ই আগস্ট বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকার মণ্ডল কমিশনের এই প্রস্তাব কার্যকরী করার কথা ঘোষণা করে।

(ঘ) নব-অর্থনৈতিক নীতি: ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও-এর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তাঁর মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন বিশ্বায়ন, বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণ-এর লক্ষ্যে।

(ঙ) বাবরি মসজিদ ধ্বংস: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর একশ্রেণীর মৌলবাদী হিন্দু অযোধ্যার রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। এই ঘটনাপ্রবাহ ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রবর্তন করা ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্রের বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্কের সূচনা করে।

We Hope the given দ্বাদশ শ্ৰেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন উত্তর will help you. If you Have any Regarding, Class 12 Political Science Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top