Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল Question Answer in Bengali is a textbook prescribed by the AHSEC Board Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল Solutions in Bengali. The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল Notes in Bengali are free to use and easily accessible.

Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল Question Answer in Bengali. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 2nd year History in Bengali, Class 12 History Chapter 11 উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল Question answer in Bengali gives you a better knowledge of all the chapters. Assam AHSEC Board HS 2nd Year History in Bengali , Class 12 History Answers The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam AHSEC Board Class 12 History in Bengali Medium Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. Class XII History in Bengali Solutions Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 History in Bengali Medium Textbooks. HS 2nd Year History in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল

তৃতীয় খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে।

প্রশ্ন ২। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কখন ইংল্যান্ডের রানির নিকট হতে বাণিজ্যিক সনদ লাভ করে?

উত্তরঃ ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৩। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বপ্রথম কোথায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তরঃ সুরাট।

প্রশ্ন ৪। পলাশীর যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৫। ভারতে কখন কোম্পানি শাসনের বিলুপ্তি ঘটে?

উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৬। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ।

প্রশ্ন ৭। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কখন প্রবর্তন করা হয়?

উত্তরঃ ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৮। সাঁওতালগণ কোথায় বাস করত?

উত্তরঃ রাজমহল পাহাড়ে।

প্রশ্ন ৯। সাঁওতাল বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ১০। দাক্ষিণাত্য বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ১১। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ কখন দেখা দিয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৬১-৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ১২। দাক্ষিণাত্য বিদ্রোহ আয়োগ কখন গঠন করা হয়?

উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।

S.L. No.সূচীপত্র
প্রথম খণ্ড
অধ্যায় -1ইট, মনি ও হাড়
অধ্যায় -2রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ
অধ্যায় -3জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ)
অধ্যায় -4দার্শনিক প্রত্যয় ও স্থাপত্য (সাংস্কৃতিক অগ্রগতি)
অধ্যায় -5প্রাগৈতিহাসিক যুগ — ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ
দ্বিতীয় খণ্ড
অধ্যায় -6পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক)
অধ্যায় -7ভক্তি ও সুফী পরম্পরা
অধ্যায় -8একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর
অধ্যায় -9কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র
অধ্যায় -10কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র
তৃতীয় খণ্ড
অধ্যায় -11উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল
অধ্যায় -12বিদ্রোহ ও রাজ (১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ)
অধ্যায় -13উপনিবেশিক নগর
অধ্যায় -14মহাত্মা গান্ধী ও জাতীয় আন্দোলন
অধ্যায় -15দেশ বিভাজনের উপলব্ধি
অধ্যায় -16সংবিধান প্রণয়ন
অধ্যায় -17মানচিত্র অঙ্কনকার্য

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। উপনিবেশিক বাংলায় জমিদারদের জমি নিলাম করা হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ বৃহৎ জমিদারগণ কখনও কখনও সরকারকে রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হত। অদেয় রাজস্বের পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুতরাং যে সকল জমিদার রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হত সরকার তাদের জমি বা ভূসম্পত্তি নিলামে বিক্রি করতেন।

প্রশ্ন ২। বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে এবং কখন প্রবর্তন করেন?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

প্রশ্ন ৩। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি সুফল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি সুফল নিম্নরূপ:

(ক) এই ব্যবস্থা বাংলাকে সর্বাপেক্ষা ধনী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছিল।

(খ) এই ব্যবস্থা সরকারের রাজস্ব নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।

প্রশ্ন ৪। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি কুফল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি কুফল নিম্নরূপ:

(ক) এই ব্যবস্থায় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষিত হয় নি।

(খ) এই ব্যবস্থা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়।

প্রশ্ন ৫। জোতদারগণ জমিদারদের কিভাবে প্রতিহত করেছিল?

উত্তরঃ জমিদারদের গ্রামের ‘জমা’ (কর) বৃদ্ধি করার প্রয়াসকে জোতদারগণ তীব্রভাবে প্রতিহত করেছিল।

প্রশ্ন ৬। পাহাড়িয়া কারা ছিল? তারা কিভাবে জীবিকা অর্জন করত?

উত্তরঃ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের পাহাড়িয়া বলা হয়। তারা রাজমহল পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করত। তারা বনজ উৎপাদিত সামগ্রীর দ্বারা জীবিকার্জন করত। তারা জুম চাষও করত।

প্রশ্ন ৭। কোদাল ও লাঙলের মধ্যে যুদ্ধ কি ছিল?

উত্তরঃ কোদাল ও লাঙলের মধ্যে যুদ্ধ হল সাঁওতাল ও পাহাড়িয়াদের মধ্যে যুদ্ধ। সাঁওতালগণ বনাঞ্চল পরিষ্কার করে, বৃক্ষ কেটে জমি চাষ করত। সেই জমিতে তারা ধান ও তুলা চাষ করত। সুতরাং তারা লাঙলের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে পাহাড়িরা জুম চাষের জন্য কোদাল ব্যবহার করে। সুতরাং তাদের জীবন কোদালের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রশ্ন ৮। ভাগচাষি বা বর্গাদার বা অধিয়ার কারা ছিল?

উত্তরঃ ভাগীচাষিগণ কৃষকের মতো ছিল। তারা জোতদারের জমিতে কৃষিকার্য করত। তারা নিজস্ব লাঙল টানত এবং জমিতে শস্য উৎপাদন করত। ফসল উৎপাদনের পর মোট উৎপাদিত শস্যের পঞ্চাশ শতাংশ উৎপাদন জোতদারদের প্রদান করত।

প্রশ্ন ৯। রাজস্ব সম্পর্কিত সূর্যাস্ত আইন কি ছিল?

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তানুসারে প্রত্যেক জমিদারকে নিয়মিত কর দিতে হত। কিন্তু সূর্যাস্ত আইন অনুসারে কোন জমিদার যদি নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে কর দিতে না পারত তখন সরকার তার সম্পত্তি নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কর আদায় করত।

প্রশ্ন ১০। পাহাড়িয়াদের জীবনযাত্রার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পাহাড়িয়াগণ রাজমহল পাহাড়ের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করত। তাদের জীবনযাত্রার দুটি বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) তারা লতাপাতায় নির্মিত কুটিরে বসবাস করত এবং আমগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিত।

(খ) তারা সম্পূর্ণ এলাকাকে নিজেদের সম্পত্তি বলে গণ্য করত।

প্রশ্ন ১১। বুকানন হ্যামিলটন কে ছিলেন? আসামের উপরে লেখা তাঁর গ্রন্থখানির নাম কি?

উত্তরঃ বুকানন হ্যামিলটন লর্ড ওয়েলেসলির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর লেখা গ্রন্থখানি হল—’আসামের একটি বিবরণ’ (An Account of Assam)।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। উপনিবেশবাদ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়। এই বিপ্লবের ফলস্বরূপ সেখানে মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রীসমূহ প্রয়োজনাতিরিক্ত হয়ে যায়। এই উৎপাদিত দ্রব্যসমূহ দেশের সরকার বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য অগ্রসর হয়। নূতন অঞ্চল বা নিজের হাতে অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে রাজনৈতিক আধিপত্য চালায় এবং সেখানের সম্পদ আহরণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ডের উৎপাদিত বস্তু বিক্রি করে। এইভাবে অর্থনৈতিক স্বার্থে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রসারের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জয়যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল। সেইভাবে ইউরোপের অন্যান্য বহু দেশে সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব বিশ্বের অনগ্রসর অঞ্চলে স্থাপন করেছিল। এই প্রক্রিয়াই প্রকৃত অর্থে উপনিবেশবাদ।

প্রশ্ন ২। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের পটভূমি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ সপ্তদশ শতকে ভারতে মোগল শাসন প্রচলিত ছিল। ভারতের শাসকগণের অনুমতি নিয়ে পর্তুগীজ ওলন্দাজ ও ফরাসি কোম্পানিসমূহ ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের নিকট হতে অনুমতি নিয়ে ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করে। কোম্পানি ১৬১২ খ্রিস্টাব্দ হতে সুরাট, মাদ্রাজ, বোম্বে, কলিকাতার ফোর্ট উইলিয়াম প্রভৃতি স্থানে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। পরবর্তীকালে এই কোম্পানি ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করে। প্রথমে দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার মোগল নবাবকে পরাস্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় দুই শত বৎসর ব্রিটিশ শাসন কায়েম করে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন বিলুপ্ত করে ভারতের শাসন প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সংসদের অধীনস্ত হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৩। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি ছিল?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ইংল্যান্ডের জমিদার বংশের লোক ছিলেন। তাঁর দেশীয় জমিদারগণ জমির বংশগত মালিক। সুতরাং ভারতের রাজস্ব আদায়ের পূর্ব প্রথার অসুবিধা দূর করবার জন্য ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশ জমিদারগণের সঙ্গে দশ বৎসরের (দশসালা) বন্দোবস্ত করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই বন্দোবস্তই বাংলার ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ বলে খ্যাত।

এই বন্দোবস্ত অনুসারে জমিদারদের রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য ধার্য করে দেওয়া হল। তারা যতদিন নির্দিষ্ট খাজনা দেবেন, ততদিন জমির মালিক থাকবেন। নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা দিতে না পারলে ‘সূর্যাস্ত আইন’-এর বিধান অনুযায়ী তাদের জমিদারি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করা হত। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়।

প্রশ্ন ৪। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফলগুলি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফলগুলি নিম্নরূপ:

(ক) এই ব্যবস্থা ব্রিটিশ সরকারকে জনপ্রিয় করেছিল।

(খ) বাংলাদেশকে ভারতের সর্বাপেক্ষা ধনী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছিল।

(গ) এই ব্যবস্থা বিশৃঙ্খলার স্থানে শৃঙ্খলা আনয়ন করে।

(ঘ) এই ব্যবস্থা সরকারের রাজস্ব নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।

(ঙ) জমিদারগণ নির্দিষ্ট খাজনা দেওয়ার শর্তে জমির সম্পূর্ণ মালিক হয়।

প্রশ্ন ৫। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি নিম্নরূপ:

(ক) এই বন্দোবস্তে জমিদারগণের অবস্থার উন্নতি হলেও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি।

(খ) ভূমিতে কৃষকগণের পুরাতন স্বত্ব একেবারে পরিত্যক্ত হল।

(গ) জমিদারদিগের উৎপীড়ন হতে প্রজাদিগকে রক্ষা করবার কোনও ব্যবস্থা হল না।

(ঘ) ‘সূর্যাস্ত’ আইনের কঠোরতার ফলে কয়েক বৎসরের মধ্যে অধিকাংশ জমিদারই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।

(ঙ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান ত্রুটি এই যে, এর দ্বারা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। রায়তদারি বন্দোবস্ত সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ টিপু সুলতানকে পরাজিত করার পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে ইংরেজের আধিপত্য স্থাপিত হয়। ওই অঞ্চলে বাংলার মতো বড়ো জমিদারশ্রেণী ছিল না। তাই সেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করার অসুবিধা হয়। টমাস মনরো, জন রীড প্রমুখ স্থানীয় ইংরেজ কর্মচারীর সুপারিশ অনুযায়ী সেই অঞ্চলে এক নতুন ধরনের বন্দোবস্ত চালু করা হয়। এটি ‘রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় সরকার সরাসরি রায়ত বা কৃষকদের সাথে রাজস্ব বন্দোবস্ত করে। রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় জমিদার বা মধ্যবর্তী কোন লোকের স্থান ছিল না। কৃষক নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রদানের শর্তে জমি ভোগদখল করত। এই জমি হস্তান্তরযোগ্য ছিল। কিন্তু জমির ওপর কৃষকের মালিকানাস্বত্ব ছিল না। ব্যবস্থাটি ছিল সম্পূর্ণ অস্থায়ী। সাধারণত ২০ বা ৩০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হত। তারপর রাজস্বের হার পর্যালোচনা করে আবার নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। প্রথমদিকে রায়তওয়ারি ব্যবস্থাতেও কিছু ত্রুটি ছিল। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের পর এই ব্যবস্থা একটি সন্তোষজনক রূপ পায়। এই ব্যবস্থায় কৃষক এবং সরকার উভয়েই উপকৃত হয়।

প্রশ্ন ৭। মহালওয়ারি বন্দোবস্তু কি ছিল? এর প্রভাব কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ গাঙ্গেয় সমভূমি, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ এবং পাঞ্জাবে আর এক ধরনের বন্দোবস্ত চালু করা হয়। এটি সাধারণভাবে ‘মহলওয়ারি বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় জমিদার বা কৃষকের পরিবর্তে গ্রামের সমষ্টি বা ‘মহল’-এর সাথে সরকারের বন্দোবস্ত হত। সমস্ত গ্রামবাসীর সাথে আলোচনা করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হত। রাজস্ব আদায়ের কাজে গ্রামের প্রধান দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন। সাধারণত ৩০ বছরের জন্য এই বন্দোবস্ত দেওয়া হত। নির্দিষ্ট সময়ের পর রাজস্বের হার পর্যালোচনা করা হত।

প্রভাব: কোম্পানির জমি-বন্দোবস্ত ব্যবস্থাগুলি ভারতের প্রাচীন বন্দোবস্ত ব্যবস্থা থেকে পৃথক ছিল। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের ওপর এর প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থায় জমি ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য বস্তুতে পরিণত হয়। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জমির ওপর চাপ বাড়লে জমি ক্রমশ টুকরো টুকরো হয়ে যায়। নতুন ভূমিব্যবস্থা ভারতের গ্রামগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন করে। অধিকাংশ কৃষক মহাজনের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষে আইন-আদালতের সুযোগ নেওয়া ছিল কষ্টকর। ফলে কৃষকশ্রেণী জমিদার, মহাজন, সরকারি কর্মচারী প্রমুখের শোষণ ও উৎপীড়নের বস্তুতে পরিণত হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত বা প্রধানের পরিবর্তে গ্রামজীবনে সরকারি কর্মীদের দাপট বাড়তে থাকে। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।

প্রশ্ন ৮। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জমিদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে ও তাদের ক্ষমতা সীমিত করতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জমিদারগণকে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করত। কিন্তু কোম্পানি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল যে জমিদারগণ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। সুতরাং কোম্পানি তাদের প্রতিহত করতে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করেছিল: 

(ক) জমিদারদের সেনাবাহিনীকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

(খ) আবগারি শুল্ক বিলোপ করা হয়।

(গ) জমিদারদের দরবার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব আদায়কারীর পর্যবেক্ষণের অধীনে আনা হয়।

(ঘ) জমিদারদের স্থানীয় মামলার বিচার ও স্থানীয় পুলিশ যোগানের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

(ঙ) বিকল্প ক্ষমতার হিসাবে রাজস্ব আধিকারিকদের আবির্ভাব জমিদারদের ক্ষমতার এক্তিয়ার সীমিত করে।

প্রশ্ন ৯। বুকাননের টীকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ফ্রান্সিস বুকানন ও তাঁর সঙ্গে জরিপকারীর একটি বিশাল দল সরকার নির্ধারিত স্থানে জরিপ কার্যের জন্য গিয়েছিলেন। কোম্পানির অন্তর্গত হওয়া নূতন নূতন অঞ্চলসমূহ প্রাকৃতিক সম্পদ, খাজনার উৎস, ভূ-প্রকৃতি প্রভৃতি নানা বিষয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করা এই জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রয়োজনবোধে ভূগোলবিদ, ভূতত্ত্ববিদ, উদ্ভিদবিদ ও চিকিৎসকও পাঠানো হয়। তাঁরা স্থানীয় লবণ ও লোহা প্রস্তুত পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করে ছিলেন। বনবাসীগণের জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করে স্থায়ী কৃষিকার্যে তাদের নিয়োগ করার উপায় তাঁরা বিবেচনা করেছিল।

প্রশ্ন ১০। দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সুদখোর মহাজন ও শস্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এইরূপ একটি বিদ্রোহ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে হয়েছিল। পুনেতে এই বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। এই বিদ্রোহে সুদখোর, মহাজন ও দোকানিদের হিসাবের বই ও ঋণপত্রাদি ছিনিয়ে বিদ্রোহীরা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তাদের শস্যের গুদাম লুটপাট করে ও সুদখোর মহাজনদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। পুনার এই বিদ্রোহ আহমেদনগর ব্যাপী বিস্তৃত হয় এবং তাতে ত্রিশটিরও অধিক গ্রাম অংশগ্রহণ করে। এই সকল অঞ্চল হতে সুদখোরগণ বাড়ি-ঘর বিষয়-সম্পত্তি ছেড়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশগণ বনাঞ্চল পরিষ্কার করে স্থায়ী চাষবাস শুরু করতে চেয়েছিল কেন?

উত্তরঃ ব্রিটিশগণ নিম্নোক্ত কারণে বনাঞ্চল পরিষ্কার করে স্থায়ী কৃষিকার্যের বিস্তার করতে চেয়েছিল:

(ক) স্থায়ী কৃষিকার্য বিস্তারের মাধ্যমে ব্রিটিশগণ রাজস্ব বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল।

(খ) এর ফলে রপ্তানিকৃত অর্থকরী ফসল উৎপাদন করতে পারত।

(গ) ব্রিটিশগণ পাহাড়িদের অসভ্য, বর্বর ও হিংস্র বলে গণ্য করত। পাহাড়ি এলাকার লোকদের শাসন করা তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল। সুতরাং তারা সাঁওতালদের উদ্বাস্তু করে বনাঞ্চল পরিষ্কার করেছিল।

(ঘ) ব্রিটিশ সরকার একটি সভ্য ও সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলেছিল।

(ঙ) ব্রিটিশগণ পাহাড়িদের সভ্য করতে ও তাদের শিকার পরিত্যাগ করে চাষবাস আরম্ভ করতে উৎসাহ দিয়েছিল।

প্রশ্ন ১২। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর বাংলার অনেক জমিদারি নিলামে বিক্রি হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রত্যেক জমিদারের রাজস্বের পরমাণ ধার্য করে দেয়। রাজস্ব দিতে অপারগ জমিদারদের ভূসম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা হত। এইগুলিকে উচ্চ মূল্যে বণিকদের কাছে বিক্রি করা হত।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা,

বঙ্গদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে এবং কখন প্রবর্তন করেছিলেন? সংক্ষেপে এর প্রধান দোষ-গুণগুলি উল্লেখ কর।

অথবা,

বঙ্গদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দফা সমূহ কি কি? এর ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে ইংরেজের ভূমিরাজস্ব নীতি একটি স্থায়ী রূপ নেয়। কর্নওয়ালিশ দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর জমিদারের হাতে স্থায়ীভাবে জমি বন্দোবস্ত দেবার সিদ্ধান্ত নেন। নিলামের ভিত্তিতে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে সর্বোচ্চ নিলামদারকে প্রথমে দশ বছরের জন্য ‘বন্দোবস্ত’ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পরিচালকসভার অনুমোদনক্রমে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২শে মার্চ দশসালা বন্দোবস্তই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হয়।

বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পেছনে কর্নওয়ালিশের নিম্নোক্ত লক্ষ্য ছিল:

(ক) দেওয়ানি লাভের পর থেকেই কোম্পানির ভূমিরাজস্ব আয় সম্পর্কে আগে থেকে নিশ্চিন্ত থাকা যেত না। স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত চালু করে কর্নওয়ালিশ ভূমিরাজস্ব আয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন।

(খ) কোম্পানি ভারতে একদল স্থায়ী মিত্র পেতে উদগ্রীব ছিল। স্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে নতুন জমিদারদের মিত্র হিসেবে কোম্পানি তাদের পাশে পেতে চেয়েছিল।

(গ) কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলার চাষিদের মধ্যে ক্রমশ অসন্তোষ জমা হচ্ছিল। এই অসন্তোষ যে-কোন মুহূর্তে গণবিক্ষোভে ফেটে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কর্নওয়ালিশ একদল অনুগত জমিদারশ্রেণী তৈরি করে এই সম্ভাব্য বিক্ষোভের মোকাবিলা করতে আগ্রহী ছিলেন। অবশ্য অধ্যাপক বিনয়ভূষণ চৌধুরী এই গণবিক্ষোভের সম্ভাবনা এবং তার মোকাবিলায় কোম্পানির মিত্রসন্ধানের তত্ত্বটিকে ‘অবাস্তব’ বলে মনে করেন।

(ঘ) স্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার কৃষকশ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করায় একটি ইচ্ছাও কর্নওয়ালিশের ছিল। কারণ গ্রামীণ জনতার ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেই কোম্পানির কলে তৈরি সামগ্রীর ক্রয়বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।

আসলে কর্নওয়ালিশের মূল লক্ষ্য ছিল কোম্পানির স্বার্থরক্ষা করা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ইংরেজের রাজনৈতিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক সুবিধা অর্জন করতে চেয়েছিলেন কর্নওয়ালিশ। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথমে ওড়িশা, বাংলা ও বিহারে চালু হয়। পরে ওড়িশা, বেনারস ও মাদ্রাজের উত্তর অংশে চালু করা হয়। চিরস্থায়ী ব্যবস্থার ফলে, জমিদাররা রাজস্ব আদায়কারী ভূমিকা থেকে জমির মালিকে পরিণত হন। তাঁরা বংশানুক্রমে এই জমি ভোগদখল বা হস্তান্তর করার অধিকার পান। অন্যদিকে কৃষকেরা কেবলমাত্র ভাড়াটে চাষিতে পরিণত হয়।

ফলাফল: চিরস্থায়ী ব্যবস্থার কিছু তাৎক্ষণিক সুফল ছিল; এবং এর ফল ভোগ করেছিল বিদেশি ইংরেজ ও তাদের তাঁবেদার কিছু বিত্তবান জমিদার। কিন্তু কুফলের মাত্রা ছিল অনেক বেশি ভারী। আর সেই ভার বহন করতে হয়েছিল মূলত বাংলার কৃষক সমাজকে।

সুফল: এদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল:

(ক) এই ব্যবস্থার ফলে রাজস্বের পরিমাণ ও আদায়ের ব্যবস্থা নির্দিষ্ট হয়।

(খ) রাজস্ব আয় সম্পর্কে নিশ্চিত হবার ফলে সরকারের পরে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করা সহজ হয়।

(গ) এই ব্যবস্থার ফলে নতুন জমিদারশ্রেণীর উত্থান ঘটে। এই শ্রেণী ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ সমর্থকে পরিণত হন। ফলে ব্রিটিশ শাসনের ভিত সুদৃঢ় হয়।

(ঘ) স্থায়ীভাবে জমির মালিকানা পাবার ফলে কোন কোন জমিদার জমির উন্নতি করার উদ্যোগ নেন।

কুফল: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল অপেক্ষা কুফল ছিল অনেক বেশি:

(ক) জমি জরিপ না করে এবং জমির গুণাগুণ বিচার না করেই রাজস্বের পরিমাণ ধার্য করা হয়েছিল। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজস্বের হার ছিল বেশি।

(খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়েছিল কোম্পানির সঙ্গে জমিদারদের। এই বন্দোবস্তে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। কর্নওয়ালিশ আশা করেছিলেন যে, জমিদাররা স্বেচ্ছায় কৃষকদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তাঁর সেই আশা সফল হয়নি। পরন্তু জমিদাররা কৃষকদের ওপর ইচ্ছামতো রাজস্ব চাপিয়ে দেন। জমিদারের লাঠিয়াল নিপীড়নের দ্বারা কৃষকদের অতিরিক্ত রাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য করে। জমির ওপর কৃষকের অধিকার ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। জমিদাররা খেয়ালখুশিমতো কৃষকদের জমি থেকে বিতাড়িত করতেন। এইভাবে কৃষকশ্রেণী জমিদারদের মর্জি ও করুণার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

(গ) জমিদার নির্দিষ্ট দিনে রাজস্ব জমা না দিলে ‘সূর্যাস্ত আইন’-এ জমি বাজেয়াপ্ত করে তা নিলাম করা হত। এর ফলে বহু বনেদি জমিদার তাঁদের জমিদারি হারান। অনেকে আইনের সাহায্য নিয়ে জমি নিলাম আটকাতে চান। ফলে সরকারকে বহু মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়তে হয়।

(ঘ) বহু জমিদার অন্য ব্যক্তিকে জমি ইজারা দিয়ে দেন। এই ব্যবস্থাকে ‘পাটনি’ বা ‘পত্তনি’ বলা হত। ইজারাদারকে বলা হত ‘পাটনিদার’। এই ব্যবস্থার ফলে কৃষকদের উপর মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর শোষণ বৃদ্ধি পায়।

(ঙ) অধিকাংশ জমিদার শহরে বাস করতেন। তাই গ্রাম ও কৃষকশ্রেণীর সুখদুঃখের সাথে জমিদারদের কোন সম্পর্কই থাকত না। জমিদারের অবর্তমানে নায়েব ও গোমস্তাদের অত্যাচার ও শোষণের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সব মিলিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকদের পক্ষে ছিল ক্ষতিকারক। কৃষকদের দুঃখদুর্দশা মোচনের জন্য সরকার কয়েকটি আইন চালু করলেও কৃষকদের দুঃখদুর্দশার অবসান হয়নি।

প্রশ্ন ২। বঙ্গদেশের গ্রামাঞ্চলে জোতদারগণ কেন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়েছিলেন?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে বঙ্গদেশে বহুসংখ্যক জমিদার যখন তীব্র সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল তখন এক শ্রেণীর ধনী কৃষক গ্রামসমূহে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে তুলেছিল। এই শ্রেণীর কৃষকরা জোতদার নামে পরিচিত। বিশাল পরিমাণ জমির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল। কখনো কখনো হাজার হাজার একর জমির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকত। তারা এমনকী স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঋণদাতাদের নিয়ন্ত্রণ করত। তারা এলাকার দরিদ্র কৃষকদের উপর প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করেছিল। তারা এমনকী কোন কোন ক্ষেত্রে জমিদার অপেক্ষা ক্ষমতাবান ছিল। 

তাদের ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) জোতদারগণ গ্রামে বাস করত। সুতরাং অনেক গ্রামে তাদের প্রভূত প্রভাব ছিল।

(খ) তারা জমিদারদের ‘জমা’ (কর সংগ্রহ)-র পরিমাণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিল।

(গ) জোতদারগণ জমিদারবর্গকে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্ব প্রদান করতে দেরি করাতে সংঘটিত করেছিল।

(ঘ) তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঋণদাতাগণকে নিয়ন্ত্রিত করত।

(ঙ) তারা বহু পরিমাণ জমি নিয়ন্ত্রণ করত।

জমিদারগণ সময়মতো রাজস্ব জমা না দিলে তাদের জমি নিলাম করা হত এবং এই নিলামকৃত জমি জোতদারগণ ক্রয় করত।

প্রশ্ন ৩। জমিদারগণ তাদের জমিদারির উপর কিভাবে নিয়ন্ত্রণ বহাল রেখেছিলেন?

উত্তরঃ জমিদারগণ তাদের জমিদারি বহাল রাখার জন্য নানা প্রকার উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। 

প্রধান উপায়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) জমিদারগণ তাদের জমির বেনামি বিক্রি আরম্ভ করেন। তাদের জমির একাংশ যখন নিলাম ডাকা হত তখন তাদের নিজস্ব লোক তা ক্রয় করত। পরবর্তীকালে তারা ক্রয়মূল্য দিতে অস্বীকার করত। তখন পুনরায় নিলাম ডাকা হত। জমি ক্রয়ের একই পদ্ধতি বারবার চলতে থাকত। একসময় সরকার বিরক্তি বোধ করতেন। এমতাবস্থায় সরকার পুনরায় জমিদারের কাছে কম মূল্যে সম্পত্তি বিক্রি করত।

(খ) জমিদারগণ বাইরের অন্য কোন ব্যক্তিকে তাদের জমিদারিতে প্রবেশ করতে অন্তরায় সৃষ্টি করত।

(গ) জমিদারগণ অনেক সময় তাদের ভূসম্পত্তি মহিলাদের নামে হস্তান্তরিত করতেন। মহিলাদের সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারেন না।

(ঘ) পূর্বতন জমিদারদের ‘লাঠিয়াল’ কখনও কখনও নূতন ক্রেতাকে আক্রমণ করত।

(ঙ) রায়তগণও কখনও কখনও বহিরাগতদের জমি ক্রয়ে বাধার সৃষ্টি করত।

প্রশ্ন ৪। বহিরাগতদের আগমনের প্রতি পাহাড়িয়ারা কিভাবে সমর্থন জানিয়েছিল?

উত্তরঃ পাহাড়িয়াগণ মূলত পাহাড়ের অধিবাসী ছিল। তারা রাজমহল পাহাড়ের আশেপাশে বাস করত। তারা বনে উৎপাদিত সামগ্রী সংগ্রহ করে জীবন ধারণা করত। তারা ‘স্থানান্তর চাষ’ (shifting cultivation) করত। তা ছাড়াও তারা শিকার, খাদ্য সংগ্রহ, কাঠসংগ্রহ ও রেশম পোকা পালন করত। বস্তুত তারা জঙ্গল জীবনের সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা বসতি স্থাপন করা এলাকাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করত। তারা তাকে তাদের অস্তিত্বের প্রতীক বলে গণ্য করত। এটা ছিল তাদের বেঁচে থাকার ভিত্তি। কিন্তু বহিরাগতদের প্রতি তাদের বৈরিভাবাপন্ন ও ভীত ছিল। 

নিম্নোক্ত বিষয়গুলি হতে তা প্রতীয়মান হয়:

(ক) তারা বহিরাগতদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করত। পাহাড়িয়াগণ বহিরাগতদের নিকট হতে নিয়মিত উপঢৌকন পেত।

(খ) পাহাড়িয়াগণ বহিরাগতদের সন্দেহের চোখে দেখত এবং এই কারণে তারা বহিরাগতদের সঙ্গে যুদ্ধে রত থাকত।

(গ) পাহাড়িয়াগণ রাজমহল পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার বহিরাগতদের প্রতিহত করেছিল।

প্রশ্ন ৫। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালগণ কেন বিদ্রোহ করেছিল?

উত্তরঃ সহজ প্রকৃতির সাঁওতালরা ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিল। হাজারিবাগ, মানভূম প্রভৃতি স্থান হতে সাঁওতালরা রাজমহল পাহাড়ি অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তাদের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে মহাজনরা তাদের শোষণ করতে থাকে। এছাড়া সরকারি খাজনা আদায়কারী, রেল কর্মচারী প্রমুখ সকল ব্যক্তিই তাদের উপর নানা প্রকার জুলুম শুরু করে। সাঁওতালী স্ত্রীলোকদের মান সম্ভ্রম নষ্ট করতেও তারা ছাড়ে না। এই সকল কারণে তারা মহাজন, পুলিশ, সরকারি কর্মচারী প্রভৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। সাহেবদের হাত হতে জমি মুক্ত করতে না পারলে এই অসহনীয় অবস্থার অবসান ঘটবে না এই কথা তাদের জনৈক ধর্মগুরু প্রচার করলে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তারা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা আংশিকভাবে সফল হয়। সাঁওতাল পরগণা নামে একটি পৃথক অঞ্চল গঠন করে এক বিশেষ ধরনের প্রশাসন সেখানে চালু করতে ইংরেজরা বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ৬। ঋণদানকারীদের বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের রায়তগণের ক্রোধ কি ব্যাখ্যা করে?

উত্তরঃ ঋণদানকারীদের বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের রায়তগণের ক্রোধের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ঋণদাতাগণ রায়তদের ঋণ দিতে অস্বীকার করেন। রায়তগণ অনুভব করে যে ঋণদাতাগণ তাদের আর্থিক দুরাবস্থার প্রতি উদাসীন।

(খ) ঋণদাতাগণ গ্রামীণ এলাকার চিরাচরিত রীতিনীতি ও পরম্পরাসমূহ অবমাননা করছিল। উদাহরণস্বরূপ, ঋণের অর্থের পরিমাণ হতে ঋণের সুদের পরিমাণ অধিক হতে পারে না। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে ঋণদাতা ১০০ টাকা ঋণের অর্থের বিপরীতে ২০০০ টাকা সুদের পরিমাণ ধার্য করে।

(গ) ঋণের সুদের অদেয় অর্থ নূতন গৃহীত ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হত যাতে ঋণদাতা আইনের হাত হতে দূরে থাকতে পারত এবং তার অর্থের পরিমাণ পূর্বাবস্থায় থাকত।

(ঘ) ঋণ শোধ করার প্রমাণস্বরূপ ঋণদাতা ঋণ গ্রহীতাদের কোন রসিদ দিত না।

(ঙ) রায়তগণ ঋণদাতাগণের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গ ও হিসাব গরমিলের অভিযোগ উত্থাপন করত।

প্রশ্ন ৭। সাঁওতালদের সঙ্গে পাহাড়িয়াদের জীবিকা কি কি ক্ষেত্রে পৃথক ছিল?

উত্তরঃ পাহাড়িয়াগণ রাজমহল পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করত। তারা সরকারি বিষয়াদের প্রতি ক্রুদ্ধ ও ভীত ছিল। তারা বহিরাগত ভ্রমণকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিল।

পাহাড়বাসীদের জীবিকা: পাহাড়িয়াগণ নিম্নোক্ত পেশা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবিকা সংগ্রহ করত:

(ক) তারা পাহাড়ি এলাকায় স্থানান্তর চাষ বা জুমচাষ করে ফসল উৎপাদন করত।

(খ) তারা নানা প্রকার খাদ্যশস্য ও তৈলবীজ উৎপাদন করত।

(গ) তারা খাওয়ার জন্য ‘মাওলা’ নামক একপ্রকার ফুল সংগ্রহ করত।

(ঘ) তারা রেশম পোকা প্রতিপালন করে রেশম সুতা রপ্তানি করত।

(ঙ) তারা রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করত।

(চ) তারা গবাদি পশু খাবারের জন্য তৃণজাতীয় উদ্ভিদের চাষ করত।

(ছ) তারা বন্যপ্রাণী শিকার করত।

(জ) তারা সমতলের স্থায়ী কৃষকদের আস্তানায় হানা দিত।

(ঝ) তারা বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ রোধ করত।

(ঞ) তারা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে কর সংগ্রহ করত।

সাঁওতালদের জীবিকা: সাঁওতালগণ বাংলায় ১৭৮০-এর দশকে এসেছিল। 

তারা নিম্নোক্ত পেশা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকার্জন করত:

(ক) তারা বনাঞ্চল পরিষ্কার করে এবং গাছ কাটে।

(খ) তারা জমিচাষ করে ধান ও তুলা চাষ করত।

(গ) তারা কৃষিকার্য বিস্তার করে এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করে।

(ঘ) তারা বাজারের জন্য নানা প্রকার বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদন করে।

(ঙ) তারা ব্যবসায়ী ও ঋণদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখত।

প্রশ্ন ৮। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ভারতের রায়তদের জীবন কিভাবে প্রভাবিত করেছিল?

উত্তরঃ আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয়। তা সমগ্র ইংল্যান্ডে ত্রাসের সৃষ্টি করে কারণ আমেরিকা হতে কাঁচা তুলা আমদানির পরিমাণ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ২০ লক্ষ বেল হতে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ৫৫০০ বেল-এ হ্রাস পায়। এমতাবস্থায় ইংল্যান্ড ভারত হতে তুলা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে চায়। এর ফলে তুলার মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তুলার বাজারের এই তেজি অবস্থা ভারতের তুলা উৎপাদনকারী দাক্ষিণাত্যের উপর বিশেষত রায়তদের জীবনে অত্যধিক প্রভাব বিস্তার করে:

(ক) রায়তগণ সীমাহীন ঋণের সুযোগ লাভ করে। বোম্বাইয়ের রপ্তানি বণিকগণ শহরের সাহুকরদের অগ্রিম অর্থ দেন। এই সাহুকরগণ গ্রামীণ ঋণদাতাদের ঋণ প্রদান করত। এই জন্য তারা প্রয়োজনীয় তুলা দেওয়ার আশ্বাস দেয়।

(খ) রায়তগণ প্রতি একর তুলা চাষের জমির জন্য ১০০ টাকা পেত।

(গ) সাহুকরগণও রায়তদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে উৎসাহী ছিলেন।

(ঘ) তুলা বাজারের এই তেজী ভাব রায়তদের উপকার করতে পারেনি। ধনী কৃষকরা উপকৃত হলেও বিশাল সংখ্যক সাধারণ কৃষক অত্যধিক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে।

(ঙ) তুলা বাজারের তেজী ভাব দীর্ঘদিন চলতে থাকে। ভারতীয় তুলা ব্যবসায়ীগণ আমেরিকার তুলা ব্যবসায়ীদের স্থান দখল করে। কিন্তু ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।

আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং সেখানে পুনরায় তুলা উৎপাদন শুরু হয়। এর ফলে ইংল্যান্ডে ভারতের তুলা রপ্তানি হ্রাস পায়।

FAQs

Question: Where I can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise?

Answer: You can get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Suggestion Chapter Wise On Roy Library. For every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly.

Question: Which is the best Site to get Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions?

Answer: Roy Library is a genuine and worthy of trust site that offers reliable information regarding Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Solutions.

Question: How can students use the solutions for exam preparation?

Answer: Students can use the solutions for the following:

  • Students can use solutions for revising the syllabus.
  • Students can use it to make notes while studying.
  • Students can use solutions to understand the concepts and complete the syllabus.

IMPORTANT NOTICE

We have uploaded this Content by Roy Library. You can read-write and Share your friend’s Education Purposes Only. Please don’t upload it to any other Page or Website because it is Copyrighted Content.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top