Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড়

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) is a textbook prescribed by the AHSEC Board Class 12 Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Solutions are free to use and easily accessible.

Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা)

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Question Answer in Bengali. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. Hs 2nd year Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) question answer in Bengali gives you a better knowledge of all the chapters. Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Assam AHSEC Board HS 2nd Year, Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Answers The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. Class XII History Solutions Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 History Bengali Medium Textbooks. HS 2nd Year History Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) 

প্রথম খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্নঃ ১। Further Excavation at Mohenjo-daro বইটি কে লিখেছিলেন?

উত্তরঃ আর্নেষ্ট ম্যাকে (Arnest Mackay)।

প্রশ্নঃ ২। ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিজ্ঞানের জনক’ কাকে বলা হয়? 

উত্তরঃ আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম।

প্রশ্নঃ ৩। ভারতবর্ষের পুরাতত্ত্ব জরীপ বিভাগের প্রথম সঞ্চালক প্রধান কে ছিলেন?

উত্তরঃ আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম।

প্রশ্নঃ ৪।  হরপ্পা সভ্যতার শস্য গুড়ো করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রটির নাম কী?

উত্তরঃ কোয়ার্ণ বা জাঁতাকল।

প্রশ্নঃ ৫। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হরপ্পা সভ্যতার স্থানের নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা।

প্রশ্নঃ ৬। জন মার্শ্বেল কে ছিলেন?

উত্তরঃ জন মার্শ্বেল একজন ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ যিনি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব জরীপ বিভাগের ( Archaeological survey of India) সঞ্চালক ছিলেন।

প্রশ্নঃ ৭। মহেঞ্জোদারোর খনন কার্য কখন শুরু হয়েছিল?

উত্তরঃ 1921 সনে।

প্রশ্নঃ ৮। মাটির ঢিপি কী?

উত্তরঃ মানবজাতি দ্বারা কোন ভূখণ্ডের ক্রমাগত এবং পুর্ণব্যবহারের ফলে সেই ভূখণ্ডে সৃষ্ট আবর্জনাকে মাটির ঢিপি বলে।

প্রশ্নঃ ৯। হরপ্পা সভ্যতা কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জন মার্শালের নেতৃত্বে দয়ারাম সাহানী, রাখালদাস ব্যানার্জি এবং অন্যান্য পুরাতত্ত্ববিদ গণ হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রশ্নঃ ১০। ভারতবর্ষে কোন সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলে?

উত্তরঃ 1921 সনে অধুনা পাকিস্তানের হরপ্পা নামক স্থানে আবিষ্কৃত সভ্যতা যা খ্রিষ্টপূর্ব 2600 থেকে 1900 পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল সেই সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলে।

প্রশ্নঃ ১১। সিন্ধু সভ্যতা কখন প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উত্তরঃ 1921 সনে।

প্রশ্নঃ ১২। সিন্ধু সভ্যতায় কোন্ ধাতুর ব্যবহার অজানা ছিল?

উত্তরঃ লোহা।

প্রশ্নঃ ১৩। ‘মহেঞ্জোদারো এবং সিন্ধু সভ্যতা’ এই বইটির লেখক কে?

উত্তরঃ জন মার্শাল।

প্রশ্নঃ ১৪। হরপ্পার শীলমোহরগুলি কোন্ ধরনের পাথর দ্বারা নির্মিত ছিল?

উত্তরঃ ষ্টিয়াটাইট্।

প্রশ্নঃ ১৫। আৰ্লি ইনডাস্ সিভিলাইজেশন বইটির লেখক কে?

উত্তরঃ আর্নেষ্ট ম্যাকে।

প্রশ্নঃ ১৬। ‘দ্য ষ্টোরী অব ইণ্ডিয়ান আর্কিওলজি’ বইটির লেখকের নাম লেখো।

উত্তরঃ এস্. এন. ‘রায়।

প্রশ্নঃ ১৭। মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে উল্লেখজনক স্থাপত্য কীর্তিটি কী ছিল?

উত্তরঃ বৃহৎ স্নানাগার।

প্রশ্নঃ ১৮। হরপ্পা যুগের একটি নগরের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ লোথাল।

S.L. No.সূচীপত্র
প্রথম খণ্ড
অধ্যায় -1ইট, মনি ও হাড়
অধ্যায় -2রাজা, কৃষক ও নগরসমূহ
অধ্যায় -3জ্ঞাতিত্ব, বর্ণ ও শ্রেণি (প্রাচীন সমাজ)
অধ্যায় -4দার্শনিক প্রত্যয় ও স্থাপত্য (সাংস্কৃতিক অগ্রগতি)
অধ্যায় -5প্রাগৈতিহাসিক যুগ — ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ
দ্বিতীয় খণ্ড
অধ্যায় -6পর্যটকদের দৃষ্টিতে (দশম থেকে সপ্তদশ শতক)
অধ্যায় -7ভক্তি ও সুফী পরম্পরা
অধ্যায় -8একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর
অধ্যায় -9কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র
অধ্যায় -10কৃষক, জমিদার ও রাষ্ট্র
তৃতীয় খণ্ড
অধ্যায় -11উপনিবেশবাদ ও গ্রামাঞ্চল
অধ্যায় -12বিদ্রোহ ও রাজ (১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ)
অধ্যায় -13উপনিবেশিক নগর
অধ্যায় -14মহাত্মা গান্ধী ও জাতীয় আন্দোলন
অধ্যায় -15দেশ বিভাজনের উপলব্ধি
অধ্যায় -16সংবিধান প্রণয়ন
অধ্যায় -17মানচিত্র অঙ্কনকার্য

প্রশ্নঃ ১৯। হরপ্পা সভ্যতার সমসাময়িক একটি সভ্যতার নাম লেখো।

উত্তরঃ মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা।

প্রশ্নঃ ২০। হরপ্পার খনন কার্য কে শুরু করেন?

উত্তরঃ এম, এস্, ভাটস।

প্রশ্নঃ ২১। সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতাও বলা হয় কেন?

উত্তরঃ হরপ্পায় সর্বপ্রথম সভ্যতাটি আবিষ্কৃত হয় সেজন্য সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতাও বলা হয়।

প্রশ্নঃ ২২। অ্যাটিগ্রাফি কী?

উত্তরঃ মাটির স্তর নিয়ে অধ্যয়নকে ক্র্যাটিগ্রাফি বলে।

প্রশ্নঃ ২৩। সভ্যতার ঘরবাড়ি এবং রাস্তা কী দিয়ে নির্মাণ করা হত?

উত্তরঃ ঝলসানো ইট এবং কাদামাটি দিয়ে।

প্রশ্নঃ ২৪। মহেঞ্জোদারো শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ মহেঞ্জোদারো একটি সিন্ধি শব্দ এর অর্থ মৃতের দেশ।

প্রশ্নঃ ২৫। আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম কে ছিলেন?

উত্তরঃ আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম ছিলেন ভারতীয় আর্কিওলজিকেল সার্ভের (ASI) প্রথম সর্বোচ্চ অধিকর্তা থাকে ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্বের পিতা’ বলা হয়।

প্রশ্নঃ ২৬। হরপ্পা সভ্যতার স্থানগুলোতে প্রাপ্ত এক ধরনের শস্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ গঙ্গ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্নঃ ১। কে কখন হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জন মার্শালের নেতৃত্বে দয়ারাম সাহানী, রাখাল দাস ব্যানার্জি এবং অন্যান্য কয়েকজন পুরাতত্ত্ববিদ 1921 সনে হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেন।

প্রশ্নঃ ২। হরপ্পা সভ্যতার দুটি অঞ্চলের নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার দুটি স্থানের নাম হল – 

(i) হরপ্পা।

(ii) মহেঞ্জোদারো।

প্রশ্নঃ ৩। হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবহৃত দুটি ধাতুর নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবহৃত দুটি ধাতু হল – 

(i) তামা। 

(ii) রূপা।

প্রশ্নঃ ৪। লোখালে ব্যবহার করা দুই প্রকারের ইট কী কী ছিল?

উত্তরঃ লোথালে ব্যবহার করা দুই প্রকারের ইট হল – 

(i) গৃহ নির্মাণের জন্য কাদার দ্বারা তৈরি ইট। এবং 

(ii) পথঃ প্রণালী নির্মাণের জন্য পোড়া মাটির ইট।

প্রশ্নঃ ৫। হরপ্পা সভ্যতার লিপিসমূহের দুটি বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার লিপিসমূহের দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(i) এই লিপিতে বর্ণমালা ছিল না কারণ এটিতে প্রচুর চিহ্ন ছিল। (থ্রায় 375 থেকে 400 টি চিহ্ন থাকতো)।

(ii) লিপিটি ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হতো।

প্রশ্নঃ ৬। হরপ্পা সভ্যতার মাপ জোখ পদ্ধতির দুটো বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার মাপ জোখ পদ্ধতির দুটো বৈশিষ্ট্য হল—

(i) মাপ জোখের জন্য ব্যবহৃত ওজনগুলি চের্ট নামক আয়তঘনক আকৃতির পাথর দ্বারা নির্মিত ছিল সেগুলিতে কোন দাগ বা চিহ্ন ছিল না।

(ii) স্বল্প মাপের ওজনগুলিতে দ্বৈত প্রণালী এবং উচ্চ পরিমাপগুলোতে দশমিক প্রথা অনুসরণ করা হত।

প্রশ্নঃ ৭। হরপ্পা সভ্যতার পতনের দুটি কারণ লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার পতনের দুটি সম্ভাব্য কারণ হল – 

(i) পার্শ্ববর্তী মরুভূমি অঞ্চল বিস্তৃতি লাভ করার ফলে সভ্যতার কৃষিজমিতে লোনা ভার বৃদ্ধি পায় এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় ফলে কৃষিকার্য প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হয়।

(ii) ক্রমাগতভাবে হওয়া বন্যা।

প্রশ্নঃ ৮। মহেঞ্জোদারো নগরের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ মহেঞ্জোদারো নগরের দুটি বৈশিষ্ট্য হল—

(i) নগরের বসতিটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল, একটি ক্ষুদ্রতর কিন্তু উচ্চতর, অন্যটি যথেষ্ট বড় নিচে অবস্থিত।

(ii) রাস্তাঘাট সোজাসোজি ভাবে তৈরি করা হত এবং শহর অসংখ্য ছোট ছোট ব্লকে বিভক্ত ছিল।

প্রশ্নঃ ৯। পুরাতত্ত্ববিদগণ ‘সংস্কৃতি’ বলতে কী বোঝান? হরপ্পীয় সভ্যতার দুটা অঞ্চল উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সাধারণত একসাথে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানায় এবং সময়কালে দৃষ্ট হওয়া একটি স্বতন্ত্র বা বিশিষ্ট ধারা থাকা কোন বস্তু সমষ্টিকে বোঝাতে পুরাতত্ত্ববিদগণ ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

হরপ্পীয় সভ্যতার দুটা অঞ্চল হল – 

(i) হরপ্পা। 

(ii) মহেঞ্জোদারো।

প্রশ্নঃ ১০। হরপ্পার লোকেদের জীবন নির্বাহের দুটি কৌশল লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পার লোকেদের জীবন নির্বাহের দুটি কৌশল হল – 

(i) কৃষিকাজ। 

(ii) পশুপালন।

প্রশ্নঃ ১১। হরপ্পা সভ্যতার যে কোন দুটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

(i) নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। 

(ii) সুপরিকল্পিত পয়ঃ প্রণালী ব্যবস্থা।

প্রশ্নঃ ১২। সিন্ধু সভ্যতার রাস্তাগুলির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতার রাস্তাঘাটের দুটি বৈশিষ্ট্য হল – 

(i) রাস্তাঘাটগুলি প্রশস্ত এবং সোজা ছিল। 

(ii) রাস্তার দুই পার্শ্বে গৃহ নির্মাণ করা হতো।

প্রশ্নঃ ১৩। হরপ্পা সভ্যতার দুই ধরনের পেষকযন্ত্র বা জাতাকলের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার দুই ধরনের পেষকযন্ত্র বা জাতাকল আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রথম ধরনের জাতাকলে একটি বড় প্রস্তর খণ্ডের উপর আরেকটি ছোট প্রস্তর খণ্ড ছিল যাকে এধারে ওধারে গড়িয়ে কাজ করা হতো। এগুলির দ্বারা খাদ্যশস্য গুড়া করা হতো। অন্য ধরনের জাতাকলে দ্বিতীয় পাথরটি মূষল হিসাবে ব্যবহৃত হত যা মশলা গুড়া করার জন্য ব্যবহৃত হত।

প্রশ্নঃ ১৪। পুরাতত্ত্ববিদগণ কী তথ্যের উপর নির্ভর করে হরপ্পা সভ্যতার লোকেদের খাদ্যাভাস পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন?

উত্তরঃ খাদ্যাভাসের পুনর্নির্মাণ করতে নির্ভর করা তথ্যগুলি হল—

(i) ঐ স্থানসমূহ থেকে প্রাপ্ত দগ্ধ শস্য ও বীজ বিশ্লেষণ করা।

(ii) বন্যপ্রাণী এবং মাছের হাড় পর্যালোচনা করা।

প্রশ্নঃ ১৫। হরপ্পা সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করা পুরাতাত্ত্বিক বস্তুগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করা বস্তুগুলির মধ্যে প্রধান ছিল ষ্টিয়াটাইট প্রস্তরে নির্মিত শীলমোহর। তাছাড়া পুঁতি, ওজন মাপকযন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের পাত্র, অলঙ্কার, ধারালো যন্ত্রের ফলক ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ ১৬। হরপ্পা সভ্যতায় কোন্ কোন্ ধাতুর প্রচলন ছিল?

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা কপার, টিন, ব্রোঞ্জ, সোনা, রূপা ইত্যাদি ধাতুর ব্যবহার জানত। কিন্তু সম্ভবত লোহার ব্যবহারের প্রচলন সেই সময় ছিল না।

প্রশ্নঃ ১৭। সিন্ধু সভ্যতার মোহরগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট শিল্প নিদর্শন হল সীলমোহরগুলি। প্রায় ২০০০ শীলমোহর এ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে। এগুলির আকৃতি চারকোণ এবং গোলাকৃতির। এগুলির গায়ে ছোট ছোট লিপি এবং বিভিন্ন পশুর প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে।

প্রশ্নঃ ১৮। হরপ্পা যুগে সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিকাশ হওয়া স্থানগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা যুগে সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিকাশ হওয়া স্থানগুলি হল পাকিস্তানের কিছু অংশ, দক্ষিণ আফগানিস্তান, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ, জম্মু এবং বেলুচিস্থান।

প্রশ্নঃ ১৯। হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা অতি উন্নত ধরনের ছিল। বাড়ি থেকে জল নির্গত হয়ে এসে রাস্তার নর্দমায় পড়ত। রাস্তার নর্দমাগুলিতে আধুনিক যুগের মত ম্যানহোল থাকত এবং রাস্তার নিচের দিকে পয়ঃ প্রণালী বানানো হত।

প্রশ্নঃ ২০। হরপ্পা সভ্যতায় কোন্ ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল?

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। কোন প্রাসাদ বা মন্দির না থাকায় এটা বুঝা যায় যে সমাজের নিয়ন্ত্রণ কোন রাজা বা পুরোহিতের হাতে ছিল না। সম্ভবতঃ বণিকরাই এই সভ্যতার সর্বনিয়ন্তা ছিলেন।

প্রশ্নঃ ২১। সিন্ধু সভ্যতার নালা-নর্দমা সম্বন্ধে ম্যাকে কী মন্তব্য করেছিলেন?

উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতার নালা-নর্দমা সম্বন্ধে ম্যাকে লিখেছিলেন— “এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ব্যবস্থার মধ্যে নিশ্চিতভাবে এটি সর্বাপেক্ষা পরিপূর্ণ একটি প্রাচীন ব্যবস্থা।”

প্রশ্নঃ ২২। হরপ্পাবাসীদের মধ্যে সামাজিক ব্যবধান সন্ধানের দুটি উপায় লেখো।

উত্তরঃ (i) মৃতদের সমাধিস্থল নিরীক্ষণ করা এবং সমাধিস্থলে রক্ষিত বস্তুসমূহের অধ্যয়ন।

(ii) কলা শিল্পদ্বারা প্রস্তুত সামগ্রীকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং বিলাস সামগ্রী এই দুই ভাগে ভাগ করা।

প্রশ্নঃ ২৩। হরপ্পার বসতির দুটি অংশের উল্লেখ করো এবং সেগুলির একটি করে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার বসতি দুটি অংশে বিভক্ত।

(i) উচ্চতর অংশ – এই অংশ উপরে অবস্থিত যাকে দুর্গ নাম দেওয়া হয়েছে। দুর্গটি প্রাচীর ঘেরা।

(ii) নিম্নশহর – এটি দুর্গের নিচে কিন্তু বড় এবং প্রাচীর দ্বারা দুর্গ থেকে পৃথক করা ছিল।

প্রশ্নঃ ২৪। সীলমোহর বা মুখবন্ধকরণ দ্বারা কীভাবে দূরবর্তী দেশের সাথে যোগাযোগ করা হত? মুখবন্ধনটি কী বুঝাতো?

উত্তরঃ বস্তাভর্তি জিনিস একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠালে বক্তার মুখের রজ্জতে এবং গাঁটের কাদায় শীল-মোহরের ছাপ থাকলে বুঝা যেত যে এটিতে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। মুখবন্ধনটি প্রেরকের পরিচিতি বহন করতো।

প্রশ্নঃ ২৫। হরপ্পা সভ্যতার ব্যবসা বাণিজ্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতায় পণ্যই ছিল সম্ভবত বিনিময়ের মাধ্যম। উৎপাদিত পণ্যের বিনিময়ে তারা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে ধাতু সংগ্রহ করত। আরব সাগরের উপকূলে তারা নৌকায় চলাচল করত। ইরানের সঙ্গে হরপ্পাবাসীর বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।

প্রশ্নঃ ২৬। সিন্ধু সভ্যতার ঘরবাড়িগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ বাড়িগুলি ইটের তৈরি ছিল। শহরের বাড়িগুলি গ্রিড় পদ্ধতিতে তৈরি করা হত। ইটগুলোকে আগুনে পুড়ে শক্ত করা হত। বাড়িগুলিতে উপর নিচে উঠানামার জন্য সিঁড়ির ব্যবহার ছিল। বাসগৃহের থেকে নালা দিয়ে জল গড়িয়ে রাস্তার নর্দমায় যেত।

প্রশ্নঃ ২৭। ঐতিহাসিকদের মতে লোথাল কীসের জন্য বিখ্যাত ছিল?

উত্তরঃ লোথাল শহরটি একটি সামুদ্রিক বন্দর ছিল। এই বন্দরের সাহায্যে হরপ্পাবাসীরা অন্যান্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য চালাত। তাছাড়া লোথালে একটি সুবৃহৎ গোদাম ছিল।

প্রশ্নঃ ২৮। হরপ্পা সভ্যতায় প্রস্তুত বিভিন্ন সামগ্রীর বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতায় ধাতুর তৈরি বিভিন্ন ধরনের পাত্র যেমন তাম্রপাত্র, পিতলের পাত্র, লোহার রন্ধন পাত্র ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছিল। সিন্ধু সভ্যতার শিল্পীরা অনেক সুন্দর সুন্দর ধাতুর মূর্তি গড়েছিলেন। তাছাড়া আগুনে পোড়া মাটির অসংখ্য মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।

প্রশ্নঃ ২৯। কানিংহ্যাম কে ছিলেন? ভারতের প্রাচীন ইতিহাস পূনর্নির্মাণ করতে তিনি কী পদ্ধতি অবলম্বন করেন?

উত্তরঃ কানিংহ্যাম ছিলেন আর্কিওলজিকেল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার প্রথম মুখ্য অধিকর্তা। কানিংহ্যাম ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী সাধারণ কালে ভারত ভ্রমণকারী চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের রেখে যাওয়া বিবরণ হতে প্রাচীন বসতিসকল চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। তিনি পুরাকীর্তি স্থান খনন করার সময় সাংস্কৃতিক মূল্য থাকা হস্তকলা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন।

প্রশ্নঃ ৩০। জনমার্শালের পুরাতাত্ত্বিক কার্যকলাপের দুটি গলদ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (i) মার্শাল খনন কার্যে নিয়মিত অনুভূমিক একটি একক হিসাবে সুষমরূপে পরিমাপ করে ঢিবিগুলি আগাগোড়া মৃত্তিকার স্তরভেদ সংক্রান্ত সব জ্ঞান অগ্রাহ্য করে খনন করেছিলেন। 

(ii) বিভিন্ন স্তরে স্তরীভূত উদ্ধারীকৃত বস্তুগুলি একই দলে জড়ো করার ফলে বহু মূল্যবান তথ্য অপূরণীয় ভাবে হারিয়ে যায়।

প্রশ্নঃ ৩১। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার লোকেদের ব্যবসার কী প্রমাণ পাওয়া যায়?

উত্তরঃ নৌকার চিত্র খোদাই করা একটি মোহর পাওয়া যাওয়ার ফলে এটা অনুমান করা যায় যে সিন্ধুবাসীরা সাগর পথে নৌকা দ্বারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করত। তাছাড়া ইরাকের মত দূরবর্তী দেশে হরপ্পার শীলমোহর পাওয়া গিয়েছিল। এর থেকে সিন্ধু সভ্যতার লোকেদের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ ৩২। 1900 সাধারণ পূর্বকালের (BCE) পরের হরপ্পা সভ্যতার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ (i) 1900 সাধারণ পূর্বকালের পরে সভ্যতাটির সাতন্ত্র্যসূচক হস্তকলাসমূহ যেমন, ওজন, শীলমোহর, বিশেষ ধরনের পুঁতি, দূরদূরান্তের বাণিজ্য এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞতা অপসৃত হয়।

(ii) গৃহ নির্মাণ পদ্ধতির মান নিম্নগামী হতে থাকে এবং বৃহৎ মাপের সার্বজনিক ইমারত নির্মাণ বন্ধ হতে থাকে।

প্রশ্নঃ ৩৩। হরপ্পা সভ্যতার সমাধিতে পাওয়া গিয়েছিল এমন চারটি বস্তুর নাম লেখো।

উত্তরঃ চারটি বস্তুর নাম হল—

(i) পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের গয়না।

(ii) তাম্র নির্মিত দর্পন।

(iii) ধাতু এবং মাটির নির্মিত পাত্র।

(iv) বিভিন্ন ধরনের পুঁতি।

প্রশ্নঃ ৩৪। সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার নগরগুলিতে দুর্গ নগর নিম্নের নগর থেকে কীভাবে পৃথক ছিল?

উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদগণ সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার পরিকল্পিত নগরগুলিকে যথাক্রমে দুগচ্ছ এবং নিম্ননগর হিসাবে নামাঙ্কিত করেছেন। দুর্গের উচ্চতা নির্ধারিত হয়েছিল তৎকালীন অট্টালিকা ইত্যাদির কর্দম ও ইষ্টকখণ্ডের মিশ্রণে তৈরি মঞ্চসদৃশ ভিত্তিভূমির নির্মাণ শৈলীর উপর। দুর্গ নগর প্রাচীর দ্বারা ঘেরা ছিল। তাই এটি নিম্নের নগর থেকে পৃথক ছিল। দুর্গ নগরগুলো ক্ষুদ্র কিন্তু উচ্চ ছিল।

প্রশ্নঃ ৩৫। হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা রাজস্থানের ক্ষেত্রী অঞ্চল এবং দক্ষিণ ভারত থেকে কী কী ধাতু সংগ্রহ করেছিল?

অথবা,

রাজস্থানের ক্ষেত্রী অঞ্চল এবং কর্ণাটকের কোলার থেকে হরপ্পাবাসী কী কী ধাতু সংগ্রহ করেছিল?

উত্তরঃ রাজস্থানের ক্ষেত্রী থেকে তামা এবং দক্ষিণ ভারত থেকে সোনা সংগ্রহ করেছিল।

প্রশ্নঃ ৩৬। হরপ্পা সভ্যতার স্থানগুলিতে অস্থি পাওয়া গৃহপালিত জন্তুগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ মেষ, ছাগল, মহিষ, শূকর, হরিণ, ঘড়িয়াল।

প্রশ্নঃ ৩৭। হরপ্পা সভ্যতার কোন স্থানে কৃষিক্ষেত্রের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে? সেই স্থান ভারতের কোন রাজ্যের অন্তর্গত?

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার কালীবাঙ্গনে কৃষিক্ষেত্রের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কালীবাঙ্গান ভারতের রাজস্থান রাজ্যের অন্তর্গত।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্নঃ ১। হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ হল –

(i) পরিকল্পিত সভ্যতা – হরপ্পা সভ্যতার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে এই সভ্যতা একটি পরিকল্পিত সভ্যতা। এই সভ্যতার বিভিন্ন ব্যবস্থা পূর্ব পরিকল্পনা দ্বারা নির্মাণ করা হত।

(ii) নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা – হরপ্পা সভ্যতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল নগরকেন্দ্রিকতা।

(iii) পয়ঃপ্রণালী – হরপ্পীয় সভ্যতার আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল নগরসমূহের পরিকল্পিত পয়ঃ প্ৰণালী।

(iv) বিভাজিত বসতি – হরপ্পীয় বসতি দুইভাগে বিভাজিত ছিল যার উপরের অংশকে দুর্গ এবং নিম্নাংশকে নিম্নশহর বলে।

(v) বৈদেশিক যোগাযোগ – হরপ্পা বাসীদের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ব্যাবসা বাণিজ্যের যোগাযোগ ছিল।

প্রশ্নঃ ২। হরপ্পার আবিষ্কার করতে কানিংহ্যাম কী সামগ্রীর ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ উনিশ শতকের মধ্যভাগে কানিংহ্যাম যখন পুরাতাত্ত্বিক খনন শুরু করেন তখন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা লিখিত শব্দাবলিকে অনুসন্ধান কার্যের পথপ্রদর্শক হিসাবে গণ্য করতেন। কানিংহ্যামের মুখ্য আকর্ষণ ছিল প্রাচীন ঐতিহাসিক অভিলিখন। তিনি ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী সাধারণ কালে ভারত ভ্রমণকারী চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের রেখে যাওয়া বিবরণ হতে প্রাচীন বসতি সকল চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। কানিংহ্যাম নথিভুক্ত এবং ভাষান্তরিত উৎকীর্ণ লিপিও সংগ্রহ করেছিলেন। পুরাকীর্তির স্থান খনন করার সময় কানিংহ্যাম সাংস্কৃতিক মূল্য থাকা হস্তকলা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু যেহেতু হরপ্পার খনন স্থল চীনা পর্যটকদের ভ্রমণসূচীর অংশ ছিল না সেজন্য হরপ্পার আবিষ্কার কার্য কানিংহ্যামের অনুসন্ধান পরিকাঠামোর সাথে পরিচ্ছন্নভাবে খাপ খায়নি।

প্রশ্নঃ ৩। হরপ্পা সভ্যতার হস্তশিল্পে কী কী কাঁচামাল ব্যবহার করা হত এবং এই সমস্ত দ্রব্য কোথা থেকে কী উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার হস্তশিল্পে নানা ধরনের কাঁচামালের প্রয়োজন হত। এগুলির মধ্যে কিছু সামগ্রী যেমন কাদা স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ হলেও বহু উপাদান যেমন প্রস্তর, কাঠ এবং টেরাকোটা নির্মিত গরুর গাড়ী দ্বারা সড়ক পথে তথা নৌকা দ্বারা সিন্ধুনদ এবং তার শাখা ধাতু ইত্যাদি পাললিক সমতলের বাহির থেকে সংগ্রহ করা হত। এগুলি খুব সম্ভবত নদীর জলপথে নিয়ে আসা হত। হস্তশিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচা সামগ্রীগুলি যে স্থানে উপলব্ধ হত হরপ্পাবাসী সেই স্থানে বসতি স্থাপন করে সেগুলি সংগ্রহ করত। উদাহরণ স্বরূপ ঝিনুক প্রাপ্তির স্থান নাগেশ্বর এবং বালাকোটে বসতি স্থাপনের কথা উল্লেখ করা যায়। তাছাড়া সামগ্রী প্রাপ্তির স্থানের স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সেই স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হত। যেমন রাজস্থানের খেতরি অঞ্চলে তামা এবং দক্ষিণ ভারতে স্বর্ণসন্ধানে করা অভিযান।

প্রশ্নঃ ৪। হরপ্পা সভ্যতার পুঁতি তৈরি করার পদ্ধতি এবং পুঁতি তৈরি করার কয়েকটি কেন্দ্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা যুগে পুঁতি তৈরির জন্য কার্ণেলিয়া, জেস্পা’র, স্ফটিক, সিয়েটাইট জাতীয় পাথর, সোনা, পিতল, ব্রোঞ্জ, তামা ইত্যাদি ধাতু ছাড়াও ঝিনুক ফেয়িন্স এবং টেরাকোটা জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হত। কোন কোন পুঁতি দুই বা ততোধিক পাথরকে সংযোজক পদার্থ দ্বারা যুক্ত করে নির্মাণ করা হত। পুঁতিগুলি গোলাকার, চোঙাকৃতি ইত্যাদি আকারের হতো। উপাদান অনুযায়ী নির্মাণকৌশলও পরিবর্তিত হতো। ষ্টিয়াটাইট্ নামক কোমল পাথরের চূর্ণের কাদাটে মিশ্রণ থেকেও পুঁতি তৈয়ারী করা হত। কাৰ্ণেলিয়ান নামক পুঁতি উৎপাদনের কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আগুনে গলিয়ে পাওয়া পিণ্ডগুলিকে পাতলা টুকরা করে কর্কশ আকার দেওয়া হত এবং সবশেষে চূড়ান্ত আকার দেওয়ার জন্য পরত করা হত এবং এরপর পেষণ করা, ঘষামাজা ও ছিদ্র করার সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হত। চানহুদারো, লোথাল এবং চোলাভিরাতে বিভিন্ন ধরনের পুঁতি তৈরী করা হত।

প্রশ্নঃ ৫। হরপ্পার শাসক এবং রাজপ্রাসাদ সম্বন্ধে কী জান লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পার রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে পুরাতত্ত্ববিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু পুরাতত্ত্ববিদের মতে হরপ্পীয় সমাজে কোন শাসক ছিল না এবং প্রত্যেকের সমান মর্যাদা ছিল। অন্য অনেকের ধারণা হল যে সেমানে একাধিক শাসক ছিলেন এবং একেক অঞ্চলে একেকজন শাসক ছিলেন। অন্য কয়েকজন পুরাতত্ত্ববিদ হস্তকলার সাদৃশ্য, পরিকল্পিত বসতি, ইটের নির্ধারিত মান তথা কাঁচামালের উৎসের নিকট বসতি স্থাপন ইত্যাদি প্রমাণের সাহায্যে যুক্তি উপস্থাপিত করেন যে সেখানে একটি রাষ্ট্র ছিল এবং আপাত দৃষ্টিতে এই ধরণাই সর্বাপেক্ষা যুক্তি সংগত বলে মনে হয় কারণ সমগ্র জনসম্প্রদায় দ্বারা একত্রে জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।

মহেঞ্জোদারোর একটি সুবিশাল ইমারতকে পুরাতত্ত্ববিদগণ প্রাসাদ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন যদিও কিন্তু এর সাথে আনুষাঙ্গিক কোন আবিষ্কার জড়িত নেই। একটি পাথরের মূর্ত্তিকে পুরোহিত রাজা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরাতত্ত্ববিদগণ মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়ায় এই ধারণা পোষণ করেন যে হরপ্পা সভ্যতা পুরোহিত দ্বারা শাসিত হত।

প্রশ্নঃ ৬। হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণসমূহ আলোচনা করো।

অথবা,

হরপ্পা সভ্যতা কীসের জন্য ধ্বংস হয়েছিল?

উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার পতনের সম্ভাব্য কারণগুলি হল—

(a) মরুভূমির বিস্তার – খুব সম্ভবত পার্শ্ববর্ত্তী, মরুভূমি অঞ্চল বিস্তৃতি লাভ করার ফলে সভ্যতার কৃষিজমিতে লোনা ভাব বৃদ্ধি পায় এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় ফলে কৃষিকাৰ্য্য প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হয় যা সভ্যতার পতন ডেকে আনে।

(b) বন্যা – সম্ভবতঃ ক্রমাগত ভূমিস্খলনের ফলে সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলির তলদেশ উঁচু হয়ে উঠে ফলে ক্রমাগত বন্যার সৃষ্টি হয় যা সভ্যতাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়।

(c) আর্যদের আক্রমণ – মার্টিমার হুইলারের মতে আর্যদের আক্রমণে হরঙ্গীয় সভ্যতার ধ্বংস হয়েছিল। কারণ খনন কার্য্যে অনেকগুলি কঁঙ্কাল পাওয়া গিয়াছিল যেগুলির গায়ে অস্ত্রাঘাতের চিহ্ন ছিল।

(d) প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার – সভ্যতার অত্যধিক বিস্তারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রারিক্ত এবং যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ হঠাৎ করে বিনষ্ট হওয়ার ফলে সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটতে পারে।

তাছাড়া আভন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, কেন্দ্রিভূত শাসন ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদিও হরপ্পা সভ্যতার বিলুপ্তির কারণ বলে মনে করা হয়।

প্রশ্নঃ ৭। হরপ্পা সভ্যতার নালা-নর্দমাগুলির পরিকল্পনা কীভাবে করা হয়েছিল?

অথবা,

হরপ্পা নগরের পয়ঃ প্রণালী নির্মাণের বিষয়ে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ সম্ভবত পথ-ঘাট এবং নালা-নর্দমা প্রথমে পরিকল্পনা অনুসারে প্রস্তুত করার পরে তার ধারে ধারে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হতো। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব নর্দমাযুক্ত স্নানঘর ছিল এবং প্রতিটি ঘর রাস্তার পয়োনালীর সাথে যুক্ত থাকতো। মূল খালগুলি কংক্রীটের ইটের গাঁথনি দিয়ে তৈরী ছিল এবং আল্গা ইটের দ্বারা ঢাকা ছিল, যা পরিষ্কার করার জন্য অপসারিত করা যেত। ঘরের নর্দমাগুলি প্রথমে একটি নিষ্কাশন কূপ অথবা আচ্ছাদিত গর্তে খালি করা হত এবং এটাতে বর্জ্য পদার্থ থিতিয়ে গেলে বর্জ্য জল পথ-নালীতে বয়ে যেত। দীর্ঘ পথনালীতে কিছু দূর পরে পরে পরিষ্কার করার জন্য নিষ্কাশন কূপও থাকত। পয়ঃনালীগুলি রাস্তার নীচে দিয়ে তৈরী করা হত।

প্রশ্নঃ ৮। হরপ্পার কৃষিপদ্ধতির সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পা যুগের শীলমোহর এবং টেরাকোটা স্থাপত্য শিল্পে এটা প্রমাণিত হয় যে মানুষ সে সময় ষাড়কে জানতো এবং জমিচার্যের জন্য ষাড়ের ব্যবহার হত। তাছাড়াও চোলিস্তান ও বাণাওয়ালীতে লাঙ্গলের প্রতিরূপ পাওয়া গেছে যার থেকে বুঝা যায় সেই সময় লাঙ্গল দ্বারা জমি চাষ করা হত। তাছাড়া কালীবাংগানে কর্ষিত জমির নিদর্শনও পাওয়া গেছে। জমিতে লাঙ্গল দ্বারা করা ক্ষুদ্র পরিখা পরস্পরের সমকোণে অবস্থিত, যার থেকে অনুমান করা যায় দুইটি ভিন্ন জাতের শস্য একই সাথে উৎপন্ন করা হত। হরপ্পা সংস্কৃতির অধিকাংশ স্থান প্রায় শুষ্ক ও অনুব্বর জমিতে অবস্থিত, যেখানে কৃষিকাজের জন্য সম্ভবতঃ জলসেচনের প্রয়োজন হত। আফগানিস্তানের শোরতুমাইএ খালের দ্বারা জলসিঞ্চনের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। গুজরাতের ধোলাভিরায় আবিষ্কৃত জলাধারে জমা জল হয়তো কৃষিকার্য্যে ব্যবহৃত হত। 

প্রশ্নঃ ৯। দারো সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ব্যবস্থার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ এই সভ্যতার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল নগর পরিকল্পনা। বসতি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ভাগ ক্ষুদ্রতর কিন্তু উচ্চতর, একে দুর্গ বলা হত এবং অন্যভাগটি বড় এবং নিম্নে অবস্থিত ছিল যাকে নিম্ন শহর বলা হত। দুর্গটি প্রাচীর ঘেরা ছিল। শহরের বাড়িগুলি গ্রিড পদ্ধতিতে নির্মিত হত এবং রাস্তাঘাট সোজাসুজি ভাবে তৈরী করা হত। শহরগুলি অসংখ্য ছোট ছোট ব্লকে বিভক্ত ছিল। প্রশস্ত রাস্তাগুলির দুই ধারে বাসগৃহগুলি তৈরী করা হত। প্রতিটি বাসগৃহের থেকে নালা এসে বাস্তার পয়ঃপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত হত। বাস্তার নীচে ইটের দ্বারা পাকা নর্দমা তৈরী করা হত। মহেঞ্জোদারোতে একটি বিশাল আকারের স্নানাগার ছিল যার মাঝখানে একটি ১১.৪৮ × ৭.০১ × ২.৪৩ আয়তনের জলাশয় ছিল। তাছাড়া মহেঞ্জোদারোতে একটি বৃহৎ আকারের শস্য গোলা ছিল। অন্যদিকে হরপ্পাতে ছয়টি ছোট আকৃতির শস্য-গোলার সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্রশ্নঃ ১০। হরপ্পা সভ্যতার বহিঃজগতের সঙ্গে সম্পর্ক বর্ণনা করো।

উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদদের মতে আরব উপদ্বীপের পূর্বপ্রান্ত ওমান হতে হরপ্পীররা তামা সংগ্রহ করত। তাছাড়া টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীতীরস্থ নগরগুলির সঙ্গে সিন্ধু উপত্যকার শহরগুলির বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। সিন্ধু সভ্যতার অনেক শীলমোহর মেসোপটেমিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এর ফলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার যোগাযোগ ছিল। সম্ভবত মেসোপটেমিয়ার শহরবাসীদের প্রসাধন দ্রব্য সিন্ধুবাসীরা অনুকরণ করত। মেসোপটেমিয়ার গ্রন্থ অনুসারে মেসোপটেমিয়া মেলুহা নামক অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য চালাত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মেলুহা সম্ভবত সিন্ধু অঞ্চলের প্রাচীন নাম। প্রাচীন মেসোপটেমীয়া গ্রন্থাদিতে মেসোপটেমিয়া ও মেলুহার মধ্যবর্তী দুটি স্থান দিলমুন ও মাকানের উল্লেখ আছে। দিলমুন সম্ভবত বাহারিনের নাম। তাছাড়া আফগানিস্তান এবং ইরাণের সঙ্গে হরপ্পীয়দের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।

প্রশ্নঃ ১১। ইতিহাসবিদগণ সাধারণ লোকের জীবনশৈলী কীভাবে নির্ণয় করেন? এই বিষয়ে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকারের বস্তুগত নিদর্শন যেমন পাত্র, যন্ত্ৰ-পাতি, অলংকারাদি এবং ঘরে ব্যবহৃত অন্যান্য বস্তুগুলি মানুষের তৎকালীন জীবনশৈলী নির্ণয়ে সাহায্য করে। সাধারণতঃ পাথর, পোড়া মাটি এবং ধাতু নির্মিত বস্তুগুলি এই বিষয়ে বিশেষ কার্যকরী হয়। আবিষ্কৃত বস্তুটির ব্যবহারের ধরন নির্ণয় করে লোকের জীবন-যাপনের ধরন সম্বন্ধে বিশদভাবে জানা যেত। যেমন একটি বস্তু যন্ত্রাংশ না অলংকার সেটা জানলে লোকের জীবনশৈলী নির্ধারণ আরও সঠিক হয়। কোন একটি হস্তকলার কার্যকারিতা বোঝার জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত বস্তুর সাথে তার সাদৃশ্য দেখেও তা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে পুঁতি, প্রেষণযন্ত্র, পাথরের ফলক, পাত্র ইত্যাদির কথাও বলা যায়। তাছাড়া কোন বস্তুর কার্যকারিতা বোঝার জন্য বস্তুটির আবিষ্কারের স্থানও বিবেচনা করা হয়। কখনও প্রত্নতত্ত্ববিদগণ অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের সাহায্য নিয়ে থাকেন যেমন কাপড় সম্বন্ধে জানতে ভাস্কর্যের বর্ণনার উপর নির্ভর করা হয়। লোকের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠান শীল-মোহরগুলির মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ করা হয়।

প্রশ্নঃ ১২। কী প্রকার সামগ্রীর উপর হরপ্পীয় লিপিসমূহ পাওয়া গেছে?

উত্তরঃ হরপ্পীয়রা লিখতে জানত কিন্তু অন্যান্য সমকালীন সভ্যতার মত এরা দীর্ঘ শিলালিপি রচনা করেনি। অধিকাংশ লিপিই খোদাই করা হয়েছে শীলমোহরের উপর এবং সেগুলির কোনটাতেই কয়েকটির বেশি শব্দ নেই। বিভিন্ন ধরনের বস্তুতে প্রাচীন হরপ্পীয় লিখন পাওয়া গেছে এবং এই লিখনগুলি ডান দিক থেকে শুরু হয়ে বামদিকে আসত। লিখন পাওয়া বস্তুসমূহ হল শীলমোহর, তামার পাত্র, তামার যন্ত্র-পাতি, বৈয়ামের বেড়, টোরাকাটা পাত্র এবং টোয়াকাটা ফলক, অলংকারাদি, অস্থিদণ্ড ইত্যাদি। যে সমস্ত বস্তুতে লিখন পাওয়া গেছে সেগুলি অবিয়োজন যোগ্য এবং এর থেকে ধারণা করা যায় যে বিয়োজনযোগ্য বিভিন্ন সামগ্রীতেও হয়তো হরপ্পীয় লিখন ছিল।

প্রশ্নঃ ১৩। হরপ্পীয় লিপিসমূহ পাঠোদ্ধারে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ কী অসুবিধার সম্মুখীন হন?

উত্তরঃ হরপ্পীয়রা লিখতে জানতো। বিভিন্ন সামগ্রীতে হরপ্পীয় লিপিসমূহ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত হরপ্পীয় লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হল হরপ্পীয় লিপিসমূহ বর্ণমালাজাতীয় ছিল না বরং এগুলি কিছুটা চিত্রের মত বিভিন্ন আকারের ছিল। হরপ্পীয় লিপিতে প্রায় 375 থেকে 400 চিহ্ন ছিল যা লিপিটিকে দুর্বোধ্য করে তুলেছে। লিপির কোন দুটি চিহ্নের মধ্যে সাদৃশ্য যুজে পাওয়া যায়নি। কম্পিউটারের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে এটা অনুমান করা হয়েছে যে লিপিটি ডান দিক থেকে শুরু হয়ে বাম দিকে আসত। এই লিপির পাঠোদ্ধার অসম্ভব হওয়ার আরেকটি কারণ হল সমকালীন কোন সভ্যতার লিপির সঙ্গে এই লিপির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রশ্নঃ ১৪। হরপ্পাযুগে লোকের খাদ্যাভাস সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ হরপ্পাবাসীগণ নানান ধরনের লতাগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ও মৎসসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীজ আহার গ্রহণ করত। হরপ্পীয়গণের খাদ্য আসত গম, যব, মসুর, মটরকলাই, তিল ইত্যাদি খাদ্য শস্য থেকে। খাদ্য হিসাবে চালের প্রচলন খুব কম ছিল। তাছাড়া খেজুর, তরমুজ ইত্যাদি ফলকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরপ্পাবাসীগণ খাদ্য হিসাবে পশুর মাংস গ্রহণ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। মেষ, ছাগল, মহিষ, শূকর ইত্যাদি পশুর অস্থি হরপ্পা সভ্যতার অঞ্চলে পাওয়া গেছে, যার থেকে এটা বুঝা যায় যে সেসময় এই প্রাণীগুলির মাংস হরপ্পাবাসীগণ ভক্ষণ করত। এছাড়া মোরগের মাংস খাওয়ার প্রচলনও সে সময় ছিল বলে মনে করা হয়।

প্রশ্নঃ ১৫। মহেঞ্জোদারোর ঘরবাড়ী নির্মাণের কারিগরী শিল্পের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ মহেঞ্জোদারোর নিম্নশহরে বাসগৃহের চিহ্ন পাওয়া যায়। বেশীর ভাগ ঘরে উঠানটিকে মাঝখানে রেখে চারিদিকে কোঠা নির্মিত হত। ভূমি সংলগ্ন প্রথম তলার দেওয়ালে জানালা থাকতো না। তাছাড়া বাড়ীর প্রবেশ পথ থেকে সরাসরি বাড়ির অন্দর মহল বা উঠান দেখা যেত না। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব শানবাধানো নর্দমাযুক্ত স্নানঘর ছিল এবং নর্দমাগুলি প্রাচীরের মধ্য দিয়ে পথের নর্দমার সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকতো। দুইতালা ঘরে সিঁড়ির সাহায্যে দোতালিয় উঠার রাস্তা দেওয়া হতো। অনেক ঘরে কূপ ছিল, কোন কোন ঘরে কোঠার ভিতরে যেখানে বাইরে থেকে প্রবেশ করা যায় সেখানে কূপ তৈরী করা হতো যা সম্ভবত পথচারীদের জন্য করা হতো।

প্রশ্নঃ ১৬। মহেঞ্জোদারো স্থাপত্যের কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়?

অথবা,

মহেঞ্জোদারো নগরটির গঠন প্রণালীর বিষয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ নগরকেন্দ্রীকতাই মহেঞ্জোদারোর পরিকল্পনার প্রধান ইঙ্গিত। সমস্ত মহেঞ্জোদারো নগরটি পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা হয়েছিল। নগরের রাস্তাগুলি চওড়া এবং সোজা সোজি ভাবে নির্মিত ছিল এবং রাস্তাগুলি একে অন্যকে সমকোণে ছেদ করতো। লোকজন ইট দ্বারা নির্মিত ঘরে বাস করতো। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব শানবাধানো নর্দমাযুক্ত স্নানঘর ছিল এবং নর্দমাগুলি প্রাচীরের মধ্যদিয়ে পথের নর্দমার সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকতো। শহরের রাস্তার পাশে পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী ব্যৱস্থা ছিল যাতে আধুনিককালের মতো ম্যানহোল থাকতো। প্রতিটি ঘর থেকে বর্জ্য জল এসে রাস্তার নর্দমায় পড়তো। এই ব্যবস্থা পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব ছিল। সেইজন্য এই বৈশিষ্ট্যগুলি মহেঞ্জোদারোর পরিকল্পিত সভ্যতা হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

প্রশ্নঃ ১৭। মহেঞ্জোদারোর সুবৃহৎ স্নানাগারটির বিষয়ে বর্ণনা করো।

অথবা, 

মহেঞ্জোদারোয় উদ্ধার হওয়া বৃহৎ স্নানাগারটির মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তরঃ মহেঞ্জোদারোর বৃহৎ স্নানাগারটি ছিল আয়তক্ষেত্র সদৃশ। এই স্নানাগারটির মাঝখানে একটি জলাশয় ছিল। স্নানাগারটির আয়তন ছিল ১১.৪৮৮ × ৭.০১ × ২.৪৩ ঘন মিটার। স্নানাগারটির উভয় প্রান্তে উঠা নামার সিঁড়ি আছে। স্নানের জায়গার পাশে কয়েকটি ছোট ছোট জামা কাপড় বদলাবার ঘর ছিল। স্নানাগারের মেঝেটি পোড়া মাটির তৈরী ছিল। স্নানাগারটিতে জল আসত পাশের একটি ঘরের কুঁয়া থেকে আর স্নানাগার থেকে নর্দমায় জল নির্গত হত ছোট নালী বেয়ে।

প্রশ্নঃ ১৮। হরপ্পা সভ্যতার সমাধিস্থলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির বিষয়ে আলোচনা করো।

উত্তরঃ হরপ্পীয় খননস্থলে পাওয়া সমাধিতে দেখা যায় যে সমাধিতে মৃতদেহগুলি গর্তে শোওয়ানো হত। কোন কোন ক্ষেত্রে সমাধির গর্তটির তৈরী করার পদ্ধতিতে পার্থক্য দেখা যেত, যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে কোন কোন গর্তের ভিতরের দেওয়ালে ইটের গাঁথনি দেওয়া হত। কোন কোন সমাধিস্থলে ধাতু বা মাটির পাত্র, অলঙ্কার ইত্যাদি থাকত। নারী-পুরুষ উভয়ের সমাধিতেই অলঙ্কার পাওয়া গেছে। কিছু ক্ষেত্রে মৃতদেহকে তামার দ্বারা তৈরী আয়নার সঙ্গেও সমাধিস্থ করা হত। তবে সামগ্রিকভাবে এটা ধারণা করা যায় যে হরপ্পাবাসীরা মৃতদেহের সাথে মূল্যবান সামগ্রী সমাধিস্থ করায় বিশ্বাস করত না।

প্রশ্নঃ ১৯। হরপ্পীয় হস্তশিল্প উৎপাদন কেন্দ্র সমূহ কীভাবে চিহ্নিত হয়?

উত্তরঃ হস্তশিল্প উৎপাদনের কেন্দ্রগুলি চিহ্নিত করার জন্য পুরাতত্ত্ববিদগণ সাধারণত কাঁচা সামগ্রী যেমন পাথরের পিণ্ড, আস্তঝিনুক, আকরিক তাম্র, যন্ত্রাদি অসমাপ্ত সামগ্রী, বর্জ্য পদার্থ, পরিতক্ত বস্তু ইত্যাদির সন্ধান করতেন। এই সমস্ত বস্তু কোন স্থানে বেশী পরিমাণে পাওয়া গেলে সেই স্থান হস্তশিল্প উৎপাদন কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশী হয়। প্রকৃত পক্ষে বস্তু উৎপাদনের পরে বর্জ্য সামগ্রীই অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্দেশক হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যদি ঝিনুক অথবা পাথর কেটে কোন বস্তু তৈরী করা হয় তবে ঝিনুকের কাটা পরিত্যক্ত অংশ গুলি উৎপাদন কেন্দ্রের পাশে বর্জ্য হিসাবে পাওয়া যাবে। কোন সময় অপেক্ষাকৃত বড় অংশগুলি ক্ষুদ্র বস্তু তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হতো কিন্তু উৎপাদনের কেন্দ্রে খুব ছোট ছোট টুকরা পড়ে থাকতো। এই চিহ্নগুলির দ্বারা হস্ত শিল্প উৎপাদন কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়।

প্রশ্নঃ ২০। পুরাতত্ত্ববিদগণ কীভাবে লোকের আর্থসামাজিক অবস্থার পার্থক্য নির্ণয় করে থাকেন?

উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদগণ সাধারণত নিম্নলিখিত কৌশলগুলির দ্বারা লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে থাকেন।

(i) সমাধি – সমাধির মধ্যে পার্থক্যকে বিশ্লেষণ করে লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হত। হরপ্পীয় সমাধিস্থলে মৃতদেহ গহ্বরে শায়িত করা হত। এর মধ্যে কিছু কিছু গহ্বরের ভেতরের দেওয়ালে ইটের গাঁথনি দেওয়া আভিজাত্যের ইঙ্গিত দেয়। যে সকল সমাধিতে মৃতদেহের সঙ্গে মূল্যবান সামগ্রী এবং অলঙ্কারাদি পাওয়া যেত সেগুলি অভিজাত লোকের আবার সাধারণ সামগ্রী থাকা সমাধিটি সাধারণ লোকের বলে মনে করা হয়।

(ii) বিলাস বহুল সামগ্রী – পুরাতত্ত্ববিদগণ কলা শিল্পের সামগ্রীগুলিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেন 

(ক) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী। এবং 

(খ) বিলাস ব্যাসনের উপকরণ। 

প্রথম শ্রেণীর সামগ্রীগুলি যেমন পাথর, এবং কাদা দিয়ে তৈরী সামগ্রী জাঁতাকল, সূঁচ ইত্যাদি কম মূল্যবান এবং এগুলি জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রী যেমন কেয়িন্স দ্বারা নির্মিত ক্ষুদ্র পাত্র, সূতাকাটার টাকু ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী বলে গণ্য হয়। যেসব অঞ্চলে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রীর চিহ্ন বেশী পাওয়া যায় সেই অঞ্চলকে অপেক্ষাকৃত ভাবে অভিজাত শ্রেণীর লোকের বাসস্থান বলে চিহ্নিত করা হয়।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top