Class 12 Advance Bengali Chapter 4 আমার কৈফিয়ৎ

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Advance Bengali Chapter 4 আমার কৈফিয়ৎ Question Answer is a textbook prescribed by the ASSAM AHSEC Board Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Advance Bengali Chapter 4 আমার কৈফিয়ৎ Notes The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Advance Bengali Chapter 4 আমার কৈফিয়ৎ Solutions are free to use and easily accessible.

Class 12 Advance Bengali Chapter 4 আমার কৈফিয়ৎ

Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily. HS 2nd year Advance Bengali Question Answer, Gives you a better knowledge of all the chapters. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. AHSEC Board Class XII Advance Bengali Books Solutions will be able to solve all the doubts of the students. HS 2nd Year Advance Bengali Suggestion, HS 2nd Year Advance Bengali Notes Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the AHSEC Board Class 12 Advance Bengali Textbooks Solution. HS 2nd Year Advance Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

আমার কৈফিয়ৎ

পদ্যাংশ

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটির কবির নাম কী?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম।

প্রশ্ন ২। ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

প্রশ্ন ৩। “ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ’ রবি!”- রবি কে?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রশ্ন ৪। “বর্তমানের কবি আমি ভাই’ ভবিষ্যতের নই নবী”। ‘নবী’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ ‘নবী’ শব্দের অর্থ হল ঈশ্বর প্রেরিত দূত।

প্রশ্ন ৫। ‘বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী।’ – কবি কে?

উত্তরঃ কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

প্রশ্ন ৬। “আমরা তো জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস্!’

– ‘বার্তাকু শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ বার্তাকু শব্দের অর্থ বেগুন।

প্রশ্ন ৭। ‘ভক্তরা বলে, নবযুগ রবি।

যুগের না হই, ______ কবি’ (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)

উত্তরঃ হুযুগের।

প্রশ্ন ৮। “গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তালোয়ার দিয়ে দাঁড়ি চাচা!”

– এখানে গুরু কে?

উত্তরঃ এখানে গুরু হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রশ্ন ৯। “ঠাঁই পাবে কবির ভবীর সাথে হেঁ।” – ‘ভবী’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ ‘ভবী’ শব্দের অর্থ নাছোড়বান্দা।

প্রশ্ন ১০। “বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই _____। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ নবী।

প্রশ্ন ১১। “আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী।”- ‘ভৈরবী’ কী?

উত্তরঃ ভোরবেলার সংগীতের রাগ।

প্রশ্ন ১২। “ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও।” – ‘ফতোয়া’ কী?

উত্তরঃ নির্দেশ বা আদেশ।

প্রশ্ন ১৩। “মাথার উপর জ্বলিছেন রবি।” – রবি কে?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রশ্ন ১৪। “মাথার উপর জ্বলিছেন রবি।” – রবি শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ সূর্য।

প্রশ্ন ১৫। “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতার কবিকে তাঁর প্রেয়সী কী বলে গালি দেন?

উত্তরঃ হাঁড়ি চাচা।

প্রশ্ন ১৬। “কাঁদে ছেলে মেয়ে। মাতা কয়” – কী বলে?

উত্তরঃ মা তার ছেলেদের বলে ‘ওরে চুপ হতভাগা স্বরাজ আসে যে দেখ চেয়ে।

প্রশ্ন ১৭। “প্রতি শনিবারেই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন” – এখানে কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শনিবারের চিঠি’র কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ১৮। ‘হেরিনু, জননী’, ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কবি মাকে কী করতে দেখেন?

উত্তরঃ কবি দেখেন মা ভিক্ষা চাইছে ঘরে ছেলের লাশ ঢেকে রেখে।

প্রশ্ন ১৯। ‘কেন ওঠে নাকো তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

– খুন শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘খুন’ শব্দের অর্থ রক্ত।

প্রশ্ন ২০। ‘আমি বলি, প্রিয়ে হাটে ভাঙি হাঁড়ি’ – হাঁটে হাঁড়ি ভাঙার অর্থ কী?

উত্তরঃ প্রকাশ্য স্থানে আসল সত্যের উদঘাটন।

S.L. No.সূচীপত্র
পদ্যাংশ
পাঠ – ১বংশীনাদে
পাঠ – ২বিপ্রবেশে অর্জুন
পাঠ – ৩কপোতাক্ষ নদ
পাঠ – ৪আমার কৈফিয়ৎ
পাঠ – ৫মেরুর ডাক
পাঠ – ৬হায় চিল
পাঠ – ৭প্ৰত্যহের ভার
গদ্যাংশ
পাঠ – ৮ভালবাসার অত্যাচার
পাঠ – ৯পনেরো আনা
পাঠ – ১০সাহিত্যে খেলা
পাঠ – ১১দিবা দ্বিপ্রহরে
নাটক
পাঠ – ১২মুকুট
উপন্যাস
পাঠ – ১৩মেজদিদি
ব্যাকরণ
ছন্দ
অলঙ্কার

প্রশ্ন ২১। ‘স্বরাজিরা ভাবে নারাজি’ – ‘স্বরাজি’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ স্বরাজি শব্দের অর্থ স্বাধীনতাকামী।

প্রশ্ন ২২। “ভক্তরা বলে, নবযুগ-রবি

যুগের না হই, হুযুগের কবি”

নবযুগ-রবি কাকে বলা হয়েছে?

উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!”

– পংক্তি দুটি কোন কবিতার অংশ? কবিতার লেখক কে? এখানে কে, কাদের সর্বনাশের কথা বলেছেন?

উত্তরঃ পংক্তি দুটি ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার অংশ। কবিতার লেখক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এখানে কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্র ভারতবাসীর মুখ থেকে অন্ন যারা গ্রাস করে তাদের সর্বনাশের কথা বলেছেন।

প্রশ্ন ২। “বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী” বর্তমানের এই কবির নাম কী? নবী বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ বর্তমানের এই কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। নবী বলতে ঈশ্বর প্রেরিত দূতকে বোঝায়।

প্রশ্ন ৩। “মৌ-লোভী যত মৌলবী আর মোল্লারা কন্ হাত নেড়ে”

– ‘মৌলবী’ ও ‘মোল্লা’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ ‘মৌলবী’ শব্দের অর্থ মুসলমান শিক্ষাগুরু আর ‘মোল্লা’ শব্দের অর্থ ধর্ম প্রবক্তা।

প্রশ্ন ৪। ‘নবী’ ও ‘ভবী’ শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ নবী – পয়গম্বর; ভবী – নাছোড়বান্দা।

প্রশ্ন ৫। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কবি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-এ নিজের কী পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন?

উত্তরঃ নজরুল নিজেকে বর্তমানের কবি কিন্তু ভবিষ্যতের নবী নন বলে পরিচয় দিয়েছেন।

প্রশ্ন ৬। ‘মুখ বুজে তাই সই সবি।’ – কে, কী মুখ বুজে সহ্য করেন?

উত্তরঃ কবি নজরুলকে লোক সাধারণ কবি ও অ-কবি যাই বলে ডাকুক না কেন সবই তিনি মুখ বুজে সহ্য করেন।

প্রশ্ন ৭। ‘ক্ষুধাতুর শিশু’ কী চায় আর কী চায় না – ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা অনুসারে বলো।

উত্তরঃ ক্ষুধাতুর শিশু চায় দুটো ভাত আর একটু নুন, সে স্বরাজ চায় না।

প্রশ্ন ৮। ‘পড়ে নাক’ বই, বয়ে গেছে ওটা।

কেহ বলে, ‘বৌ’-এ গিলিয়াছে গোটা।’

– কে, বই পড়ে না? বৌ-এর পরিচয় কী?

উত্তরঃ নজরুল ইসলাম বই পড়েন না।

‘বৌ’ বলতে কবি পত্নী প্রমীলার কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ৯। ‘আমি বলি, প্রিয়ে হাটে ভাঙি হাঁড়ি _____

– কে, কাকে ‘প্রিয়ে’ বলেছেন?

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাসকে ‘প্রিয়ে’ সম্বোধন করেছেন।

প্রশ্ন ১০। নজরুল ইসালম রচিত দুখানি কাব্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ ‘অগ্নিবীণা’ ও ‘বিষের বাঁশি’।

প্রশ্ন ১১। নজরুল ইসলাম রচিত দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

উত্তরঃ ‘বাঁধনহারা’ ও ‘কুহেলিকা’।

প্রশ্ন ১২। নজরুল ইসলাম রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।

উত্তরঃ ‘আলেয়া’ ও ‘ঝিলিমিলি’।

প্রশ্ন ১৩। টীকা লেখো:

(ক) কনফুসি। 

(খ) প্রভাতের ভৈরবী। 

(গ) নবী। 

(ঘ) ভায়োলেন্সের ভায়োলিন।

উত্তরঃ (ক) কনফুসি: প্রাচীন চীনের ধর্মগুরু কনফুসিয়াসের প্রবর্তিত ধর্মকে ‘কনফুসিয়াস’ ধর্ম বলে। আর এই ধর্মের অবলম্বনকারীকেই ‘কুনফুসি’ বলা হয়। এই ধর্মের মূল কথা হল অহিংসা। কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় বলেছেন, ভারতবর্ষকে ইংরেজ শাসন থেকে মুক্ত করতে হলে কনফুসিদের মতো অহিংস নীতি অবলম্বন করলে চলবে না।

(খ) প্রভাতের ভৈরবী: ভৈরবী হল গানের একটি রাগিনী। এই রাগিনী নতুন প্রভাতের বাণী বহন করে। এই রাগিনীতে সাংকেতিক হয় নূতন সূর্যের আগমনী বার্তা। সমকালে জাতীয় জীবনে পরাধীনতার লাঞ্ছনা, গ্লানির অন্ধকার জাতীয় জীবনকে আবৃত করেছিল। সেই অন্ধকার রাত্রির অবসানের সুর ধ্বনিত হয়েছিল নজরুলের কবিতায়।

(গ) নবী: নবী শব্দের অর্থ ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বা পয়গম্বর। শ্রীকৃষ্ণ, হজরত মহম্মদ, গৌতম বৌদ্ধ, যীশুখ্রীষ্ট, চৈতন্যদেব – এদের ঈশ্বর প্রেরিত দূত রূপে কল্পনা করা হয়। তাদের প্রচারিত বাণী ঈশ্বরের বাণী বলে মেনে নেওয়া যায়। অন্যদিকে সাহিত্যে কবিরা হলেন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। সত্য কল্পনার আলোকে তারা ভবিষ্যতের বাণী তুলে ধরেন কবিতার আশ্রয়ে। তাদের কবিতা হয় কালজয়ী।

(ঘ) ভায়োলেন্সের ভায়োলিন: ‘ভায়োলেন্স’ শব্দের অর্থ হল হিংসা এবং ভায়োলিন শব্দের অর্থ হল বেহেলা, যেটি একটি বাদ্যযন্ত্র। অতএব ‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ বলতে বোঝায় হিংসার বাদ্যযন্ত্র। কবি নজরুল ইসলাম এখানে ‘আমার কৈফিয়ৎ কবিতায় উল্লেখ করেছেন যে অহিংস পন্থীরা তাকে ‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ অর্থাৎ সহিংস মনে করতেন।

প্রশ্ন ১৪। ‘গোড়ারাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতিরাম ভাবে কনফুসি’

– গোড়ারাম ও পাতিরামের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ গোড়ারাম বলতে গোড়া রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় ব্যক্তি।

পাতিরাম বলতে বোঝানো হয়েছে স্বল্প সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় ব্যক্তি।

প্রশ্ন ১৫। ‘বোঝে নাক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে গান গেয়ে, 

গান শুনে সবে ভাবে, ভাবনা কি! দিন যাবে এবং পান খেয়ে

রবেনাক’ ম্যালেরিয়া মহামারী।”

উদ্ধৃতিটি কোন কবিতার অংশ? কবির নাম কী?

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার অংশ।

কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম।

প্রশ্ন ১৬। ‘ভক্তেরা বলে, নবযুগ রবি।

যুগের না হই হুজুগের কবি।

‘হুজুগের কবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ যে সব মানুষ জীবন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তাদের কথা, তাদের মুক্তির পথ খোঁজাই কবির মূল উদ্দেশ্য। সে কাব্য দুর্যোগ চলে যাওয়ার পর বেঁচে থাকবে কিনা তা নিয়ে কবির কোন চিন্তা নেই। এটাই কবির কাব্য সম্বন্ধে হুজুগের বলার কারণ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২। “বন্ধুগো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে”, – কবি বুকে বিষ-জ্বালা অনুভব করছেন কেন?

অথবা, 

উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ আপন ক্রোধ ও ক্ষোভ বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি এই উক্তি করেছেন। 

কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রকৃত দেশ প্রেমিক। দেশের স্বাধীনতা ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। দেশের স্বরাজ দলের আন্দোলনে তার মনে আশা জেগেছিল, এবার বুঝি স্বাধীনতা আসবে। কিন্তু তিনি দেখলেন, তারা গরিবের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে স্বরাজের মিথ্যা মিষ্টি বাক্য দিয়ে। লক্ষ লক্ষ শিশু অনাহারে মরছে। ছেলের লাশ ঢেকে রেখে মা পথে পথে ভিক্ষে করছে। এই ঘৃণ্য প্রতারণায় তিনি ক্ষুব্ধ। তাঁর বুকে জমা রয়েছে দুঃসহ বিষজ্বালা।

প্রশ্ন ২। ‘‘আনকোরা মত নন্‌ভায়োলেন্ট নন -কো’র দলও নন্ খুশী

‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি।”

– নিম্নরেখগুলির অর্থ লেখো।

উত্তরঃ ‘আনকোরা নন্‌ভায়োলেন্ট’ বলতে বোঝায় নবনির্মিত অহিংস দল।

‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ বলতে বোঝায় সহিংস দল। ‘বিপ্লবী মন’ বলতে বোঝায় কোন অন্যায় বা অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা প্রতিবাদ করবার মন। ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসন-শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য দুটি দলের সৃষ্টি হয়। একদল অহিংস, যারা বিশ্বাস করত অহিংসভাবে স্বাধীনতা আসবে। অন্যদল সহিংস যারা চেয়েছিল সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা আনতে। অহিংসরা মনে করত, কবি সহিংস আর সহিংসরা মনে করত তিনি অহিংস।

প্রশ্ন ৩। “যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকালে – বাণী কই, কবি?

দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!

– উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম সমকালীন যুগ ও জীবনকে কেন্দ্র করে তাঁর কবিতাগুলি লিখতেন। ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার, উৎপীড়ন, ধনীক সমাজের শোষণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দুর্নীতি ও গরিবের দুঃখ জর্জর জীবন ছিল তার কবিতার বিষয়। অনেকে তাই তাঁর সমালোচনা প্রসঙ্গে বলতেন যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যে চিরন্তন সত্য ও সুন্দরের বাণীর প্রকাশ দেখা যায়, নজরুলের কবিতায় তা নেই। নজরুল এই সমালোচনা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন তিনি নতুন প্রভাতের আগমনি গান গাইছেন ভৈরবী রাগিণীতে।

প্রশ্ন ৪। “ভক্তরা বলে, নবযুগ-রবি !

যুগের না হই হুযুগের কবি”

– রবি কে ? কবির বক্তব্য বুঝিয়ে দাও।

অথবা, 

‘নবযুগ-রবি’ কাকে বলা হয়েছে? কবি নিজেকে ‘হুযুগের কবি’ বলেছেন কেন?

অথবা, 

‘হুজুগের কবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে রবি হলেন রবীন্দ্রনাথ, আর নবযুগ রবি কাজী নজরুল ইসলাম।

নিজের কাব্য এবং কবি হিসেবে নিজের অবস্থান সম্পর্কে এ হল কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। নিজের কবি প্রতিভার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কবি এখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন একটি যুগের সার্বিক বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে একজন কবি শ্রেষ্ঠ কবিরূপে স্বীকৃত হন। নজরুলের কাব্যের সিংহভাগ জুড়ে আছে সমসাময়িক ঘটনার উত্তালতা। সে যাই হোক নজরুল প্রেমীদের কাছে তিনি নবযুগের আলোক বিতরণকারী সূর্যের মতো। তাঁকে তাঁর ভক্তরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। নজরুলের কাছে এটাই ছিল সবচাইতে বড় উপহার। তাই তিনি বলতেন যুগের কবিরূপে স্বীকৃত না হলেও তাঁর দুঃখ নেই। হুজুগের কবি হিসেবে নিজের পরিচয় উপস্থিত করতে পেরেই তিনি গৌরববোধ করছেন।

প্রশ্ন ৫। ‘‘প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস,

যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

– অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

অথবা, 

কবি কাদের সর্বনাশ কামনা করেছেন ? তিনি কেন এই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন?

উত্তরঃ এখানে কবি তাদেরই সর্বনাশ কামনা করছেন যাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরা তখনকার দিনের অত্যাচারী বিদেশি শাসক।

কবিতার সমকালীন যুগে সাধারণ মানুষের উপর অন্যায় অবিচার উৎপীড়ন শাসন ও শোষণে মনের তীব্র যন্ত্রণাবোধ করেছেন। তিনি দেশবাসীকে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি কবি হবেন না অকবি হবেন, তা নিয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। তিনি জানেন, মাথার উপরে রবীন্দ্রনাথ সূর্যের মতো বিরাজমান। আর রয়েছে শত শত তরুণের দল। তারাই নতুন কাল নিয়ে আসবেন। যারা অত্যাচার আর শোষণে তখনকার যুগের ভারতের তেত্রিশ কোটি মানুষের মুখের অন্ন কেড়ে খেয়েছে, কবির এই রক্তলেখায় যেন তাদের উপর সর্বনাশের অভিশাপ নেমে আসে।

প্রশ্ন ৬। “মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল্লারা’ ক’ন হাত নেড়ে,

‘দেব-দেবী’ নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।”

– লাইন দুটির বক্তব্য পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ আমার কৈফিয়ৎ কবিতায় মৌলবীদের ‘মৌ-লোভী’ বলা হয়েছে এই কারণে যে তারা অর্থলাভের জন্য লালায়িত। কবি তাঁর বহু কবিতায় হিন্দু দেবদেবীদের কথা বলেছেন। তাঁর রচিত বহু শ্যামাসঙ্গীত অপূর্ব সম্পদ। এর ফলে মুসলমান শিক্ষাগুরু বা মুসলমান ধর্ম প্রবক্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে কবির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে বলেন যাতে কবির জাত নষ্ট করে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৭। ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটা ভাত একটু নুন’

– কবির নাম উল্লেখ করে, উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম।

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য নিজেদের যথাসর্বস্ব চাঁদা হিসাবে তুলে দিয়েছিল দেশের দরিদ্র জনসাধারণ। সন্তানের মুখের অন্ন চাঁদা হিসেবে দিতেও তারা পিছু পা হয়নি। তাদের দুচোখে তখন স্বরাজের স্বপ্ন। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না ও তাদের সংকল্পচ্যুত করতে পারেনি। কিন্তু অবুঝ শিশুর কাছে স্বরাজের চেয়েও ক্ষুধার অন্ন অনেক বেশি প্রার্থিত। তাদের প্রত্যাশা দু’টো ভাত আর একটু নুন। বেঁচে থাকার জন্য এই সামান্যতম নুনভাত ছাড়া তারা আর কিছু চায় না। এর নিগূঢ়ার্থ হল – মানুষ যদি বেঁচেই না থাকে তবে স্বরাজ আসার স্বার্থকতা কোথায়? ক্ষুধাতুর মানুষের কান্নায় কবির স্বরাজের স্বপ্ন ছুটে যায়।

প্রশ্ন ৮। ‘আম পারা পড়া হামবড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে।

– কোন কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে ? কবি কাদের সম্বন্ধে একথা বলেছেন? ‘আম পারা কী?

উত্তরঃ ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।

কবি মোল্লা আর মৌলবিদের সম্বন্ধে একথা বলেছেন।

‘আম পারা’ হল কোরান শরিফের ৩০নং খণ্ড।

প্রশ্ন ৯। ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে’ – পংক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার এই ছত্রে কবি নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের আনীত অভিযোগগুলির মধ্যে একটি। নজরুলের কবিতায় প্রচুর হিন্দু পুরাণের দেবদেবীর নাম দেখা যায়। তিনি অপূর্ব সব শ্যামা সঙ্গীত, আগমনী, বিজয়া প্রভৃতি রচনা করেছিলেন। মুসলমান মোল্লারা এতে রেগে গিয়ে তাকে মুসলমান সমাজ থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলতেন।

প্রশ্ন ১০। ‘‘গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা!

প্রতি শনিবারেই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন ‘তুমি হাঁড়ি চাঁচা”।”

– এখানে গুরু কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম তাঁর সমকালের সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণার সমব্যথী হয়ে তাদের মুক্তিপথ খুঁজতে কাব্য সাহিত্যে রাজনীতির আমদানি করেছেন। সাহিত্যে রাজনীতি? অনেকেরই না পছন্দ। তাঁরা বলেন তলোয়ারের ধার থাকে ঠিকই, তা দাঁড়ি কামানোর জন্য নয়। সাহিত্য জীবন নিষ্ঠ হবে ঠিকই কিন্তু তা সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা মুক্তির পথ কেন খুঁজবে? সাহিত্য রাজনীতি মুক্ত হবে। সাহিত্যকে বিপ্লবী কাজে ব্যবহার করলে তা হবে সাহিত্যের অপব্যবহার।

প্রশ্ন ১১। “কবি বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা পড়ে শ্বাস ফেলে।”

– কার লেখা? কবি বন্ধুরা কেন শ্বাস ফেলে?

উত্তরঃ কবি নজরুল নিজের কবিতা পড়ে তাঁর কিছু বন্ধুদের কী প্রতিক্রিয়া তা এখানে ব্যক্ত করেছেন।

অত্যাচারীত ও শোষিত মানুষের জীবনযন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে কবিকে তাঁর কাব্যে রাজনীতি চর্চা করেছেন। এই রাজনীতির কথা সাহিত্যে আনা অনেকেই সহ্য করতে পারেন নি। তারা মনে করেন তাঁর পূর্বের রাজনীতি বর্জিত সাহিত্য সৃষ্টি অনেক কাজের ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কথা ভাবতে গিয়ে ও সাহিত্যকে জীবনমুখী করতে গিয়ে তিনি সাহিত্যে রাজনীতির ছাই-পাঁশ এনেছেন।

প্রশ্ন ১২। ‘‘এলো কোটি টাকা, এল না স্বরাজ।

টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ॥”

কী বাবদ টাকা এল? “এল না স্বরাজ” – এর তাৎপর্য কী?

উত্তরঃ আমার কৈফিয়ৎ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশে স্বরাজ আনার নাম করে গরিব মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন।

নেতৃবৃন্দ মানুষকে বলেছিলেন যে তারা শীঘ্রই স্বরাজ অর্থাৎ স্বাধীনতা এনে দিবেন। তখন আর কারো দুঃখ কষ্ট থাকবে না। কিন্তু তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বরাজ এল না।

প্রশ্ন ১৩। “পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,

মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে!”

– উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম বলেন, আজ তিনি বেঁচে আছেন, কাল বেঁচে নাও থাকতে পারেন। তাঁর সাহিত্য কেউ হয়তো মনে নাও রাখতে পারে। তাতে কবির কোন দুঃখ নেই। তবে তিনি এ যুগের কবি। এ যুগের বাস্তবকে তুলে ধরা তাঁর প্রধান কর্তব্য। সত্য উত্থাপন করতে গিয়ে তিনি নিঃশেষ হয়ে গেলেও দেশের প্রতিভাবান কবি যেমন – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অন্যান্য উদীয়মান কবি ও সাহিত্যিক আছেন। যারা একের পর এক অমর কাব্য রচনা করবেন।

প্রশ্ন ১৪। “দুকানে চশমা আঁটিয়া ঘুমান।

কার সম্পর্কে এরূপ বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলামের সম্পর্কে এরূপ বলা হয়েছে। কণ্টকিত সমালোচনা নজরুলের সুখনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায় না। বরং সমালোচনার ঢেউয়ের দোলায় তিনি আরও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হন।

দুকানে চশমা এঁটে কেউ ঘুমায় না। বরং এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচ্ছন্ন সমালোচনা অন্যদের উদ্দেশ্য নিক্ষিপ্ত বলেই মনে হয়। কারণ নজরুল যখন এই কবিতা লেখেন তখন তিনি চশমা ব্যবহার করতেন না।

প্রশ্ন ১৫। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো: 

‘‘গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতিরাম ভাবে কনফুসি।

স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি।”

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের সর্বহারা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমার কৈফিয়ৎ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – কবি সম্বন্ধে মানুষের যে ধারণা, সে সম্বন্ধে তাঁর অন্তর্জালার বিস্ফোরণ ঘটেছে পংক্তিদ্বয়ের মধ্যে।

কবি মানবতায় বিশ্বাসী। ইসলাম ও হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কবির শ্রদ্ধা থাকলেও তিনি ধর্মের গোঁড়ামিকে ঘৃণা করতেন। কবির মতে মানবিক গুণধর্মই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়পত্র। সেই পরিচয়পত্রের কষ্টিপাথরে বিচার না করে মানুষকে তার বহিরঙ্গের ধর্মাচার দিয়ে বিচার করা কবি নজরুলের চিন্তা ও মূল্যবোধের বিরোধী।

‘গোঁড়া-রাম’ অর্থাৎ গোঁড়া রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িকগণ কবিকে ভাবেন, তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী নাস্তিক, কারণ তাঁর কবিতায় তিনি অনেক সময় ঈশ্বরকে গালাগালি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভাবে কবি বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস পন্থী। আবার স্বাধীনতা চান না। আবার যারা স্বাধীনতা চায় না তারা ভাবে কবি তাদের শত্রু অর্থাৎ তিনি স্বাধীনতা চান না।

প্রশ্ন ১৬। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো:

“মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।

প্রার্থনা করো – যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটীর মুখের গ্রাস

যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমার কৈফিয়ৎ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ – যারা ভারতবাসীর মুখের অন্ন কেড়ে খাচ্ছে কবির এই রক্ত ঝরা লেখায় তাদের সর্বনাশ চাইছেন।

এখানে কবি তাদেরই সর্বনাশ কামনা করছেন যাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরা তখনকার দিনের অত্যাচারী বিদেশি শাসক।

কবিতার সমকালীন যুগে সাধারণ মানুষের উপর অন্যায় অবিচার উৎপীড়ন শাসন ও শোষণে মনের তীব্র যন্ত্রণাবোধ করেছেন। তিনি দেশবাসীকে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি কবি হবেন না অকবি হবেন, তা নিয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। তিনি জানেন, মাথার উপরে রবীন্দ্রনাথ সূর্যের মতো বিরাজমান। আর রয়েছে শত শত তরুণের দল। তারাই নতুন কাল নিয়ে আসবেন। যারা অত্যাচার আর শোষণে তখনকার যুগের ভারতের তেত্রিশ কোটি মানুষের মুখের অন্ন কেড়ে খেয়েছে, কবির এই রক্তলেখায় যেন তাদের উপর সর্বনাশের অভিশাপ নেমে আসে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করো।

অথবা, 

‘আমারা কৈফিয়ৎ’ কবিতার সারমর্ম লেখো।

উত্তরঃ নজরুল ইসলামের লেখা ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতাটি একটি ব্যতিক্রমী স্বতন্ত্র অসাধারণ কবিতা। কবিতাটিতে কবির ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনের কথা বর্ণিত। কবির কাব্যে চিরকালের কথা নেই বলে সবাই তাঁকে দোষারোপ করে। কিন্তু কবি মনে করেন তিনি বর্তমানের কবি। কবির বন্ধুরা তাঁর কবিতা পড়ে হতাশ হয়ে বলেছেন রাজনীতির আবর্তে তিনি ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ বলেছেন তিনি স্ত্রৈণ, জেলে গিয়ে মোটা হয়ে গেছেন। কবি হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছেন বলে হিন্দুমুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর প্রতি বিরূপ।

মৌলবী মোল্লারা কবির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাঁর জাত মারার বিধান দেন। ফার্সি শব্দের ব্যবহার কবিতায় থাকায় হিন্দুরা মনে করে তিনি নিম্নশ্রেণীর। স্বাধীনতা আন্দোলনে অহিংস-সহিংস কোন দলই কেউই কবির উপর খুশি ছিলেন না। পুরুষরা ভাবেন তিনি নারী ঘেঁষা আর নারীরা ভাবেন তিনি নারী বিদ্বেষী। কবি-বন্ধুদের কাছে তাঁর লেখা মূল্যহীন। অন্যদিকে শাসক দল তার লেখা বাজেয়াপ্ত করতে তৎপর। কবি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে গতানুগতিক করতে পারেন নি।

সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতাদের কবি ব্যঙ্গ করে বলেন চোখে লঙ্কাগুড়ো দিয়ে অশ্রু বিসর্জন করলেই নেতা হওয়া সম্ভব। কবি সস্তায় বাজিমাত করতে চান না। সাধারণ মানুষের ধারণা সুখ ঐশ্বর্য নিয়ে একদিন স্বাধীনতা তাদের দরজায় হাজির হবে। তাই লাগে চাঁদা। সন্তানদের অভুক্ত রেখে দরিদ্র মানুষ চাঁদা দেয়। ক্ষুধার্ত শিশু স্বাধীনতা বোঝে না। ক্ষুধার অন্নের জন্যই তাদের সব প্রার্থনা। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নায় কবির তথাকথিত স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে যায়।

প্রত্যাশিত স্বাধীনতা আসেনি। যা পাওয়া গেছে একেবারেই তা অকিঞ্চিতকর।

জীবনের এই লাঞ্ছনা, দুর্দশা কবিকে অস্থির করে তুলে। তিনি অন্তরে বিষ জ্বালা অনুভব করেন। তাঁর একার পক্ষে প্রতিপক্ষের রক্ত ঝরানো সম্ভব নয় বলেই তিনি রক্ত অক্ষরে প্রতিবাদ করেন। যুগের হুজুগ কেটে গেলে তাঁর কাব্য বেঁচে থাকবে কিনা সে ভাবনায় কবি বিচলিত নন। সেজন্য রবীন্দ্রনাথ সহ অন্য কবিরা আছেন। কবির প্রার্থনা – তাঁর রক্তলেখায় যেন অত্যাচারীর সর্বনাশ হয়।

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ পৃথিবীতে সকল বস্তুরই নামকরণ করা হয়। সাহিত্যেও লেখক বা কবি সাহিত্যিকরা তাদের সৃষ্টির বিভিন্ন নামকরণ করে থাকেন। আর এই নামকরণ করা হয় প্রধান চরিত্রের নামানুসারে, প্রসঙ্গের নাম বা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার নামকরণ প্রসঙ্গের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

আমার কৈফিয়ৎ কবিতাটিতে কবি তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন। এই হিসেবে এটি একটি আত্মবিশ্লেষণাত্মক রচনা। কবির এই কবিতাটি একটি স্বতন্ত্র ব্যতিক্রমী সৃষ্টি। এর মধ্যে কবি অকপটে নিজের কবি জীবনের ও ব্যক্তিগত জীবনের বিবিধ বিষয় বর্ণনা করেছেন। বন্ধুরা তাঁর সম্পর্কে যে মতামত দিতেন ও মন্তব্য করতেন, সে সম্বন্ধেও তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এই প্রতিক্রিয়াকেই তিনি ‘কৈফিয়ৎ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

‘কৈফিয়ৎ’ শব্দের সাধারণ অর্থ ‘জবাবদিহি’। এখানে কবি অনেকটা তাঁর জীবনের বিভিন্ন কৃতকর্মের জন্য একটা জবাবদিহি করেছেন। এই জবাবদিহি কখনও বেদনার, কখনও ব্যঙ্গ, কখনও প্রতিবাদে, কখনও ধিক্কারে উত্তাল। এই কৈফিয়ৎ প্রসঙ্গে সমকালীন বন্ধু-বান্ধবের কথা যাদের সহজেই চেনা যায়, এসেছে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির কথা। রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সাহিত্যিক প্রসঙ্গ এই কৈফিয়তের অঙ্গীভূত। কবির প্রেম বিবাহ প্রসঙ্গে তাঁর আত্মকথন এই কবিতাতেই প্রকাশিত। সর্বশেষে প্রকাশিত হয়েছে কবির এই উদ্ধত ঘোষণা – ‘পরোয়া করি না, বাঁচি না বাঁচি’ – যা বাংলা ভাষায় প্রবাদ প্রবচনে পরিণত।

‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার সর্বত্রই কবির কৈফিয়তের সুর ধ্বনিত। কবিতার প্রথম দিকে নিজের সম্পর্ক নিয়ে তিনি মজা করেছেন। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতাটি আত্মসমালোচনামূলক কবিতা। নানা সমালোচনার কৈফিয়ত দিয়েছেন দীপ্ত ভঙ্গিতে। সেই হিসেবে কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।

প্রশ্ন ২। “আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে যে কৈফিয়ৎ দিয়েছিলেন, তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। মানুষের অন্তরে তিনি ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। নজরুল যখন সাহিত্যে বিচরণ করতে আরম্ভ করেন তখন দেশজুড়ে জাতীয় কংগ্রেসের ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চলছিল। তখন কিছু রাজনৈতিক নেতারা আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে স্বরাজের নামে চাঁদা আদায় করছিল। কিন্তু সে চাঁদা কতটুকু স্বরাজের কাজে লেগেছে তা বলা দুঃসাধ্য। সে সময় সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য, অনাহারে দিনযাপন করতে হচ্ছিল। কোনো-কোনো রাজনৈতিক নেতারা আপন স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষকে বিপথে চালনা করে। কবি স্বরাজে এরূপ দৃশ্য দেখে বিদ্রূপ করেছেন। তিনি ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের অনাহারে কাঁদতে দেখেছেন। এর ফলে তাঁর স্বরাজের নেশা চলে যায়। স্বরাজের আশায় সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তাদের শেষ সম্বলটুকু দান করে দেয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক নেতারা তাদের অভাব-অনটনে একবারও সহযোগিতার হাতে এগিয়ে দেয় না। নজরুল সেই স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী নেতাদের আলোচ্য কবিতায় ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ ও নিন্দা করেছেন।

প্রশ্ন ৩। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় সাধারণ দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির যে সহানুভূতি ও দরদের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন মানবতাবাদে বিশ্বাসী কবি। তাঁর কবিতাতে দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও দরদের পরিচয় পাওয়া যায়৷ নজরুল আলোচ্য কবিতায় সর্বস্তরের নিপীড়িত মানুষের যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন এবং সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদ করে গেছেন। নজরুল তথা কথিত রাজনৈতিক নেতা যারা জনসভায় বক্তৃতা দান করেন তাদেরকে ব্যঙ্গ করে পকেটে লঙ্কা গুড়া রাখতে বলেছেন। যাতে দরিদ্র মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা বলে চোখে লঙ্কার গুড়ো দিয়ে জল আনতে পারেন। কবি জানেন সর্বহারা মানুষের জন্য একান্না মায়াকান্না ছাড়া আর কিছু নয়। এই নেতাদের উদ্দেশ্য নিজেদের পকেট ভারি করা।

চাঁদা তুলে স্বরাজ আসবে এই মিথ্যাচারে কবি বিশ্বাসী নন। দেশের দরিদ্র জনসাধারণ সন্তানের ক্ষুধার অন্ন চাঁদা হিসেবে তুলে দিয়েছে। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নায় ভরে গেছে আকাশ-বাতাস। মৃত শিশুকে ঘরে রেখে মা তার সৎকারের জন্য ভিক্ষায় বেরিয়েছে। এসব নির্মম দৃশ্য দেখে কবি অস্থির হয়ে পড়েছেন। তাই তার কলমে প্রকাশিত হয়েছে – ‘প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস। যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top