Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ Question Answer in Bengali, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class XII Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy Question Answer in Bengali The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ Solutions in Bengali are free to use and easily accessible. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ Notes in Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 6 ভাববাদ, Gives you a better knowledge of all the chapters. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Notes. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Suggestion will be able to solve all the doubts of the students. Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Solution, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Question Answer PDF. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

ভাববাদ

দ্বিতীয় খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভাববাদ কত প্রকার ও কী কী ?

উত্তরঃ ভাববাদ দুই প্রকার। 

এইগুলি হল —-

(ক) আত্মগত ভাববাদ।

(খ) বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ২। আধুনিক যুগে আত্মগত ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয় ?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলিকে ।

প্রশ্ন ৩। আধুনিক কালে বস্তুগত ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয় ?

উত্তরঃ হেগেলকে।

প্রশ্ন ৪। ” প্রত্যক্ষত বস্তু বিদ্যমান”—— কে বলেছিলেন ?

উত্তরঃ বার্কলি।

প্রশ্ন ৫। কার মতে, ” চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন” ?

উত্তরঃ হেগেলের মতে।

প্রশ্ন ৬। হেগেল কী ধরনের ভাববাদের প্রবর্তন করেন ?

উত্তরঃ বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ৭। কোন সূত্রের মতে বাহ্যিক পৃথিবীর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল ?

উত্তরঃ ডেকার্ট এর ” আমি চিন্তা করি অতএব, আমি আছি”, সূত্র মতে।

প্রশ্ন ৮। বার্কলি কী ধরনের ভাববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ৯। হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ মতে, সত্তা হল—-।

উত্তরঃ পরম ধারণা।

প্রশ্ন ১০। ‘ যেটি যুক্তিসঙ্গত , সেটি প্রকৃত এবং যেটি প্রকৃত সেটি যুক্তিসঙ্গত।’ —— এই বক্তব্যের সাথে জড়িত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ হেগেল।

প্রশ্ন ১১। ” Esse est percipi” বা অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর ” বা ‘ প্রত্যক্ষ বস্তু বিদ্যমান”—– এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম কী ?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলি।

প্রশ্ন ১২। হেগেলের প্রদত্ত ভাববাদ কোন ধরনের ভাববাদ ?

উত্তরঃ বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ১৩। আত্মজ্ঞানবাদ কী ?

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একজন ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

প্রশ্ন ১৪। কোন দার্শনিকে আধুনিক দর্শনের পিতৃ বলা হয় ?

উত্তরঃ রেনী ডেকার্ট।

প্রশ্ন ১৫। ” আমি ভাবি, গতিকে, আমি আছি।” —- কার উক্তি ?

উত্তরঃ রেনী ডেকার্টস।

প্রশ্ন ১৬। কোনজন দার্শনিকের মতে ‘ পরম ধারণাই পরম সত্তা ‘।

উত্তরঃ হেগেল।

প্রশ্ন ১৭। ‘The problems of philosophy ‘ এর লেখক কে?

উত্তরঃ বাট্রাণ্ড রাসেল।

S.L. No.সূচি-পত্র
অধ্যায় -১আগমন এবং এর প্রকার
অধ্যায় -২আগমনের ভিত্তি
অধ্যায় -৩প্রকল্প
অধ্যায় -৪মিলের পরীক্ষণমূলক অনুসন্ধা
অধ্যায় -৫বাস্তববাদ
অধ্যায় -৬ভাববাদ
অধ্যায় -৭নীতিবিদ্যা
অধ্যায় -৮ধর্ম

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠা কে ?

উত্তরঃ প্লেটো।

প্রশ্ন ২। ‘ Cogito ergo sum’- এর অর্থ কী?

উত্তরঃ আমি চিন্তা করি, অতএব, আমি আছি।

প্রশ্ন ৩। ‘ Cogito ergo sum’- এই উক্তিটি কে করেছিলেন ?

উত্তরঃ রেনী ডেকার্টস।

প্রশ্ন ৪। লক এর মতে, বস্তুর মধ্যে কত প্রকার গুণ থাকে ?

উত্তরঃ লক এর মতে বস্তুর মধ্যে দুই প্রকার গুণ থাকে। যেমন —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।

প্রশ্ন ৫। ‘ Esse est percipi or to be is to be perceived ‘——- এর অর্থ কী ?

উত্তরঃ একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর।

প্রশ্ন ৬। ‘ পূর্ব প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ ‘ তথ্যটির প্রবর্তক কে ?

উত্তরঃ লাইবনিজ ।

প্রশ্ন ৭। আধুনিক দর্শনের জনক কাকে বলা হয় ?

উত্তরঃ ডেকার্টস (Descartes)।

প্রশ্ন ৮। বাস্তববাদ/ ভাববাদের মতে ‘ মন বা আত্মাই পরম সত্তা।’

উত্তরঃ ভাববাদ।

প্রশ্ন ৯। আত্মজ্ঞানবাদ কী ?

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একজন ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ বস্তুগত ভাববাদ হলো সকল বস্তু তার ধারণার সঙ্গে এক এবং আদর্শ জ্ঞান হচ্ছে ধারণাসমূহের সুসংবদ্ধরূপ । এই বিষয়ে অন্যান্য ভাববাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হল এটি একবাদী। কেননা, এই মতবাদ বলে যে মনই সত্তার আধার। বস্তুগত ভাববাদের মতে, যাবতীয় সামান্যের সমষ্টি নিয়ে এই জগত। তাদের মন- নিরপেক্ষ সত্তা আছে। বস্তুগত ভাববাদ লৌকিক বাস্তববাদ কিন্তু স্বভাববাদকে বর্জন করে। এটাকে পরম ভাববাদ বললে আরও ভালো হয়।

প্রশ্ন ২। Esse est percipi – এর অর্থ কী?

অথবা, 

‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর ‘—- এই কথাটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ Esse est percipi বা ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর ‘ কথাটির অর্থ হল, বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার প্রত্যেক্ষের উপরে নির্ভর করে, অর্থাৎ যে বস্তুকে প্রত্যক্ষ করা যায় না, তার কোন অস্তিত্ব নেই।

প্রশ্ন ৩। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি কী ?

উত্তরঃ পরম সত্তার উদ্দেশ্য হলো, বিরোধকে সমন্বয়ে রূপান্তরিত করা। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি পরম সত্তার আত্মপ্রকাশের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ক্রমান্বয়ে বিরোধ , দ্বন্দ্ব এবং সমন্বয় থাকে। পরমসত্তা নিজের আভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ ভাবসমূহের সমন্বয় সাধন করে জগতের বিবর্তনের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করে।

প্রশ্ন ৪। ভাববাদ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃভাববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞাতার মন নির্ভর। কোন বস্তুরই জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, এই মতবাদকে ভাববাদ বলে।

প্রশ্ন ৫। পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে ? এই বিশ্বজগত সম্বন্ধে তাঁর ধারণা কী ?

উত্তরঃ পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা প্লেটো।

প্লেটোর মতে, এই জগত এবং তার বস্তুসমূহ ক্ষণস্থায়ী । তাঁর মতে, জড়বস্তু ‘ বিশেষ ‘ বস্তু মাত্র। বিশেষ বস্তু সর্বদাই ধ্বংসশীল । এই বিশেষের মধ্যে আছে সামান্য বা প্রত্যয় । এই সামান্য চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়। প্লেটো বলেন যে, এই বিশ্বজগত অস্তিত্বশীল, চিরন্তন এবং স্থায়ী। এটা পরিবর্তনের সীমার বাইরে। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য জগত, আত্মিক জগতের প্রতিচ্ছায়া।

প্রশ্ন ৬। লাইবনিজের ভাববাদকে বহুত্ববাদী ভাববাদ বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ লাইবনিজের মতে, সত্তা শাশ্বত অস্তিত্বশীল এবং অবিভাজ্য । গ্ৰীক পরমাণুবাদীরা বলেন যে জড় বস্তুর সর্বশেষ অংশ অবিভাজ্য। এই অবিভাজ্য ভৌতিক কণা হল পরমাণু। লাইবনিজের মতে পরমাণু কখনও পরমসত্তা হতে পারে না। তিনি একে নাম দিলেন চিৎ পরমাণু বা ‘ মোনাড’। এরা পরিবর্তনশীল এবং সংখ্যায় অগণিত। এজন্য লাইবনিজের এই মতবাদকে বহুত্ববাদী ভাববাদ বলে।

প্রশ্ন ৭। পূর্বস্থাপিত শৃঙ্খলা মতবাদ কী ?

উত্তরঃ লাইবনিজের মতে, সত্ত্বা শাশ্বত অস্তিত্বশীল এবং অবিভাজ্য। পরমাণুবাদীরা বলেন যে জড় বস্তুর সর্বশেষ অবিভাজ্য অংশটি ভৌতিক পরমাণু। লাইবনিজের মতে, পরমাণু কখনও পরম সত্তা হতে পারে না। তিনি এদের নাম দিয়েছেন চিৎ পরমাণু বা মোনাড। তার মতে, চিৎপরমাণুগুলি পরস্পরের থেকে স্বতন্ত্র। তিনি বলেন ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎপরমাণু। তিনি চিৎপরমাণুগুলির মধ্যে বিশ্ব সৃষ্টি আগে থেকেই সংহতি স্থাপন করে রেখেছেন। তার এই মতবাদকে ‘ পূর্ব স্থাপিত শৃঙ্খলাবাদ ‘ বলা হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভাববাদ কী ? ভাববাদের বিভিন্ন প্রকারগুলি কী কী ?

উত্তরঃ ভাববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞাতার মন নির্ভর। কোন বস্তুরই জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, এই মতবাদকে ভাববাদ বলে।

ভাববাদের বিভিন্ন প্রকারগুলি নিম্নরূপ —-

(ক) প্লেটোর ভাববাদ।

(খ) বার্কলির আত্মগত ভাববাদ।

(গ) কাণ্টের অতীন্দ্রিয় ভাববাদ।

(ঘ) হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ।

প্রশ্ন ২। তুমি কি মনে কর আত্মগত ভাববাদ একটি সন্তোষজনক তত্ত্ব ? যদি না কর তাহলে কেন ?

উত্তরঃ না, আত্মগত ভাববাদ সন্তোষজনক নয়। 

কারণ —–

(ক) বস্তুর অস্তিত্ব না থাকলে তাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। অতএব, বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর হতে পারে না।

(খ) এ কথা সত্য যে, যখন আমরা বস্তুকে জানি, তখন তা মনের ভিতরে আসে। এর অর্থ এই নয় যে মনের সাথে সম্পর্ক ছাড়া কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না।

(গ) বস্তু এবং সংবেদনকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কিন্তু এতে অভিন্নতা প্রমাণ হয় না। 

(ঘ) বার্কলির ভাববাদে ঈশ্বরকে টেনে আনা দুর্বলতার পরিচায়ক। এটি একটি কল্পনা মাত্র। 

প্রশ্ন ৩। আত্মগত ভাববাদের সাধারণ/ মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) এই মতবাদ অনুযায়ী, মনের একমাত্র সত্ত্বা আছে। বাহ্যবস্তুর প্রকৃত সত্ত্বা নেই।

(খ) বার্কলির মতে, একমাত্র ধারণাই প্রত্যক্ষের বিষয়।

(গ) আত্মগত ভাববাদে মন এবং মনের ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে।

(ঘ) বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

প্রশ্ন ৪। আত্মগত ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা ক্রটি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো নিম্নরূপ —-

(ক) প্রথমে বস্তু অস্তিত্বশীল , তারপর তাকে জানা যায় বা প্রত্যক্ষ করা যায়।

(খ) G.E. Moore বলেন যে, জ্ঞান সংক্রান্ত একটি সন্তোষজনক মতবাদের জন্য বস্তু ও সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার করতেই হবে।

(গ) বার্কলির মতে, ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য বস্তু এবং তার সংবেদন এক এবং অভিন্ন।

(ঘ) নব্য বাস্তববাদীরা বার্কলির ভাববাদকে  ‘ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ’ বলে মনে করেন।

প্রশ্ন ৫। ‘ Esse est percipi ‘ এর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একটি ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

বার্কলির মতে, জগতের সকল বস্তুই ব্যক্তি বিশেষের ধারণার উপর নির্ভর করে। মন এবং তার ধারণা ছাড়া আমরা কোন কিছুই জানিতে পারি না। জগতের অস্তিত্ব নির্ভর করে মন বা আত্মার উপর। বার্কলি লক এর বিজ্ঞানসম্মত মতবাদকে সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন যে, যদি আমরা কোন ধারণাই জানতে পারি তাহলে তার অন্তরালে থাকা একটি অজ্ঞাত দ্রব্য স্বীকার করে দেওয়ার কোন যুক্তি নেই, সেই জন্য আত্মা বা মনের ধারণার বাইরে কোন বস্তু নেই।

বার্কলির ভাববাদের মূল নীতিটি হল—- ‘ Esse est percipi ‘— Existence is to be perceived —- অর্থাৎ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভরশীল। আমাদের মন প্রত্যক্ষ করতে পারে না এমন কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। বার্কলি জড় জগৎটিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে মনে প্রত্যক্ষ না করা বস্তুরই অস্তিত্ব সত্য নয়। তিনি মন বলতে মানুষের মনের উপরিও ঈশ্বরের  মনের কথাও বিশ্বাস করেছেন। তাই বাহ্যিক বস্তু কোন ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা প্রত্যক্ষিত না হলেও বস্তুর অস্তিত্ব লুপ্ত হয় না। অতএব, আমরা বলতে পারি বস্তুর অস্তিত্ব কেবল ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষের উপরই নির্ভর করে না, দৈবিক বা ঐশ্বরিক প্রত্যক্ষের উপরও প্রকৃতার্থে নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৬। আত্মগত ভাববাদের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। এই ভাববাদের সমালোচনা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একটি ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

আত্মগত ভাববাদ বলতে আমরা বুঝি একমাত্র ধারণাকে জানা যায় এবং ধারণার সত্ত্বা আছে। বার্কলি লক এর অভিজ্ঞতাবাদকে যুক্তিসম্মত পরিণতিতে পৌঁছে দিয়ে আত্মগত ভাববাদের প্রর্বতন করেন। লক এর মতে, বস্তুর মধ্যে দুই প্রকারের গুণ থাকে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণ বস্তুর মধ্যে থাকে এবং সেগুলির জ্ঞাতার মনের বাইরে স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, তারা অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে, গৌণ গুণগুলি জ্ঞাতার মন নির্ভর, তারা বস্তুর মধ্যে থাকে না এবং মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়। বার্কলির আত্মগত ভাববাদকে এভাবে প্রকাশ করা হয়, জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। মুখ্য গুণ বা গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা বা আত্মগত ধারণা। অতএব, বার্কলি বলেছেন প্রত্যক্ষ বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাঁর ঘোষণা, ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষিত হওয়ার উপরে নির্ভর করে,’ কোন কিছুর অস্তিত্ব তাকে প্রত্যক্ষ করার উপরে নির্ভর করে ‘। ‘Esse est percipi or  Existence is to be perceived’ এর অর্থ হলো , একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর।

বার্কলির এই বক্তব্যের কারণে তাঁর ভাববাদকে আত্মগত এবং মনোস্তাত্বিক বলা হয়, কেননা তার‌ মতে, ব্যক্তি চেতনাই বহির্জগতের অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্তু ব্যক্তির ধারণা ব্যক্তির ইচ্ছার ফল। অচেতন জড় পদার্থের বাইরে আমাদের ধারণার কোন কারণ থাকে। বার্কলির মতে সেটি হল সক্রিয় সত্ত্বা  বা আত্মা । এই পর্যায়ে বার্কলির ভাববাদ পুরোপুরি আত্মগত।

আত্মগত ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো নিম্নরূপ —-

(ক) প্রথমে বস্তু অস্তিত্বশীল , তারপর তাকে জানা যায় বা প্রত্যক্ষ করা যায়।

(খ) G.E. Moore বলেন যে, জ্ঞান সংক্রান্ত একটি সন্তোষজনক মতবাদের জন্য বস্তু ও সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার করতেই হবে।

(গ) বার্কলির মতে, ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য বস্তু এবং তার সংবেদন এক এবং অভিন্ন।

(ঘ) নব্য বাস্তববাদীরা বার্কলির ভাববাদকে  ‘ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ’ বলে মনে করেন।

প্রশ্ন ৭। হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো কী কী ?

উত্তরঃ হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি সমালোচনা নিম্নরূপ —–

(ক) হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ অতিমাত্রায় বৌদ্ধিক।

(খ) সাধারণ মানুষের সীমিত ক্ষমতার ক্ষেত্রে এই বৌদ্ধিক ব্যাখ্যা অধিগত করা সম্ভবপর নয়।

(গ) হেগেল তাঁর পরম ধারণাকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

(ঘ) হেগেলের ভাববাদে মানব মনের অসীম ক্ষমতাকে খুব বেশি ক্ষুদ্র বলে দেখানো হয়েছে। ফলে মানুষের মনের গুরুত্ব, স্বাধীনতা ইত্যাদিকে অবহেলা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৮। হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপ —–

(ক) হেগেলের মতে পরম সত্তা এক সক্রিয় আধ্যাত্মিক সত্তা। তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন মানুষের মন ও প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে।

(খ) হেগেলের পরম সত্তার  প্রকাশ ঘটে দ্বান্দ্বিক নিয়মে। দ্বান্দ্বির নিয়মে বাদ, প্রতিবাদ ও সমন্বয় তিনটি মুহূর্ত আছে।

(গ) আত্মা এবং আত্মাহীন জড়বস্তু উভয়ই পরম সত্ত্বার প্রকাশ বলে তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও অভিন্ন।

(ঘ) হেগেলের মতে,—– ‘ যা কিছু বুদ্ধিগ্ৰাহ্য , তাই সত্য, এবং যা সত্য তাই বুদ্ধিগ্ৰাহ্য।’

প্রশ্ন ৯। আত্মগত ভাববাদ ও বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ ও বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) আত্মগত ভাববাদের মতে, একমাত্র ধারণাকেই জানা যায়, এবং ধারণারও সত্ত্বা আছে। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদ মতে, সকল বস্তু তার ধারণার সঙ্গে এক এবং আদর্শ জ্ঞান হচ্ছে ধারণা সমূহের সুসংবদ্ধ রূপ।

(খ) আত্মগত ভাববাদ মতে,জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদ জড় বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার করে।

(গ) আত্মগত ভাববাদের মতে, মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা। আবার বস্তুগত ভাববাদ মতে, জড় বস্তু থেকে মন আত্মিক প্রমূল্যগুলি বর্জন করে।

(ঘ) আত্মগত ভাববাদ হল অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদকে পরম ভাববাদ বলে ধরে নেওয়া হয়।

প্রশ্ন ১০। আত্মগত ভাববাদ ও বস্তুগত ভাববাদের পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদ ও বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) আত্মগত ভাববাদের মতে, একমাত্র ধারণাকেই জানা যায়, এবং ধারণারও সত্ত্বা আছে। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদ মতে, সকল বস্তু তার ধারণার সঙ্গে এক এবং আদর্শ জ্ঞান হচ্ছে ধারণা সমূহের সুসংবদ্ধ রূপ।

(খ) আত্মগত ভাববাদ মতে,জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদ জড় বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার করে।

(গ) আত্মগত ভাববাদের মতে, মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা। আবার বস্তুগত ভাববাদ মতে, জড় বস্তু থেকে মন আত্মিক প্রমূল্যগুলি বর্জন করে।

(ঘ) আত্মগত ভাববাদ হল অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর। কিন্তু বস্তুগত ভাববাদকে পরম ভাববাদ বলে ধরে নেওয়া হয়।

প্রশ্ন ১১। হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে প্রকাশ করো।

উত্তরঃ হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপ —–

(ক) হেগেলের মতে পরম সত্তা এক সক্রিয় আধ্যাত্মিক সত্তা। তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন মানুষের মন ও প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে।

(খ) হেগেলের পরম সত্তার  প্রকাশ ঘটে দ্বান্দ্বিক নিয়মে। দ্বান্দ্বির নিয়মে বাদ, প্রতিবাদ ও সমন্বয় তিনটি মুহূর্ত আছে।

(গ) আত্মা এবং আত্মাহীন জড়বস্তু উভয়ই পরম সত্ত্বার প্রকাশ বলে তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও অভিন্ন।

(ঘ) হেগেলের মতে,—– ‘ যা কিছু বুদ্ধিগ্ৰাহ্য , তাই সত্য, এবং যা সত্য তাই বুদ্ধিগ্ৰাহ্য।’

প্রশ্ন ১২। বার্কলির আত্মগত ভাববাদের ওপরে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একটি ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

আত্মগত ভাববাদ বলতে আমরা বুঝি একমাত্র ধারণাকে জানা যায় এবং ধারণার সত্ত্বা আছে। বার্কলি লক এর অভিজ্ঞতাবাদকে যুক্তিসম্মত পরিণতিতে পৌঁছে দিয়ে আত্মগত ভাববাদের প্রর্বতন করেন। লক এর মতে, বস্তুর মধ্যে দুই প্রকারের গুণ থাকে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণ বস্তুর মধ্যে থাকে এবং সেগুলির জ্ঞাতার মনের বাইরে স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, তারা অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে, গৌণ গুণগুলি জ্ঞাতার মন নির্ভর, তারা বস্তুর মধ্যে থাকে না এবং মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়। বার্কলির আত্মগত ভাববাদকে এভাবে প্রকাশ করা হয়, জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। মুখ্য গুণ বা গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা বা আত্মগত ধারণা। অতএব, বার্কলি বলেছেন প্রত্যক্ষ বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাঁর ঘোষণা, ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষিত হওয়ার উপরে নির্ভর করে,’ কোন কিছুর অস্তিত্ব তাকে প্রত্যক্ষ করার উপরে নির্ভর করে ‘। ‘Esse est percipi or  Existence is to be perceived’ এর অর্থ হলো , একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর।

বার্কলির এই বক্তব্যের কারণে তাঁর ভাববাদকে আত্মগত এবং মনোস্তাত্বিক বলা হয়, কেননা তার‌ মতে, ব্যক্তি চেতনাই বহির্জগতের অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্তু ব্যক্তির ধারণা ব্যক্তির ইচ্ছার ফল। অচেতন জড় পদার্থের বাইরে আমাদের ধারণার কোন কারণ থাকে। বার্কলির মতে সেটি হল সক্রিয় সত্ত্বা  বা আত্মা । এই পর্যায়ে বার্কলির ভাববাদ পুরোপুরি আত্মগত।

প্রশ্ন ১৩। বার্কলির আত্মগত ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ আত্মগত ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) এই মতবাদ অনুযায়ী, মনের একমাত্র সত্ত্বা আছে। বাহ্যবস্তুর প্রকৃত সত্ত্বা নেই।

(খ) বার্কলির মতে, একমাত্র ধারণাই প্রত্যক্ষের বিষয়।

(গ) আত্মগত ভাববাদে মন এবং মনের ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে।

(ঘ) বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

প্রশ্ন ১৪। ভাববাদ বলতে কী বোঝ ? ভাববাদ এবং বাস্তববাদের দুটা পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ ভাববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞাতার মন নির্ভর। কোন বস্তুরই জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, এই মতবাদকে ভাববাদ বলে।

বাস্তববাদ ও ভাববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) বাস্তববাদের মতে, জ্ঞাতার মনের বাইরে বস্তুর একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। কিন্তু ভাববাদের মতে, বাহ্যজগতের অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর, তাঁর কোন স্বাধীন অস্তিত্ব নেই।

(খ) বাস্তববাদীরা বলেন যে, জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের বিষয় বস্তুর সম্পর্ক বাহ্য সম্পর্ক। কিন্তু ভাববাদীরা বলেন যে জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর সম্পর্ক আন্তর সম্পর্ক।

প্রশ্ন ১৫। বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ কী ? হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বস্তুগত ভাববাদ হলো সকল বস্তু তার ধারণার সঙ্গে এক এবং আদর্শ জ্ঞান হচ্ছে ধারণাসমূহের সুসংবদ্ধরূপ । এই বিষয়ে অন্যান্য ভাববাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হল এটি একবাদী। কেননা, এই মতবাদ বলে যে মনই সত্তার আধার। বস্তুগত ভাববাদের মতে, যাবতীয় সামান্যের সমষ্টি নিয়ে এই জগত। তাদের মন- নিরপেক্ষ সত্তা আছে। বস্তুগত ভাববাদ লৌকিক বাস্তববাদ কিন্তু স্বভাববাদকে বর্জন করে। এটাকে পরম ভাববাদ বললে আরও ভালো হয়।

ইউরোপীয় দর্শনের ভাববাদের সামগ্ৰিক রূপটি হেগেলের বস্তুগত ভাববাদে ব্যক্ত হয়েছে।

হেগেলের মতে, পরম ধারণাই পরম সত্তা। মানুষের সসীম ধারণাগুলি পরম সত্তার অন্তর্গত নয়। পরম সত্তা তার চৈতন্যকে সসীম ও ধারণার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। এই জগতের পরম সত্তাই হল পরম ধারণা।

হেগেল বস্তুগত ভাববাদে বলেন যে পরম ধারণা বা পরম মানস বা চিন্তাই জগতের অন্তর্নিহিত  সত্তা। যা কিছু অস্তিত্বশীল বা জ্ঞেয়, পরম ধারণা তাদের প্রধান শক্তি। পরম ধারণা এবং জীবজগত আর মনের সম্পর্ক এমন যে, একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি থাকতে পারে না, ঠিক যেমন জীবদেহ এবং তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ পরস্পর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে না।

হেগেলের মতে পরম সত্তা জীবন্ত এবং পরিবর্তনশীল। পরম সত্তা নিজের জগতের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাঁর সত্তাকে প্রকাশ করে। জগতকে বাদ দিলে পরম সত্তা অসম্পূর্ণ। পরম সত্তা আত্মচেতনা উপলব্ধির কারণে তা অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা গুলির মধ্যে অন্তঃবিরোধ ঘটে। কিন্তু পরম সত্তা রহস্যময়। তাঁর মতে চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন। হেগেলের ভাববাদে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। জগতকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে, হেগেল ভাববাদ ও বাস্তববাদের সমন্বয় সাধন করেছেন। অতএব, আমরা দেখতে পাই যে, হেগেলের বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে ভাববাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ ঘটেছে।

প্রশ্ন ১৬।‌ আত্মনিষ্ঠ ভাববাদ কী ? আত্মনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একটি ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

আত্মগত ভাববাদ বলতে আমরা বুঝি একমাত্র ধারণাকে জানা যায় এবং ধারণার সত্ত্বা আছে। বার্কলি লক এর অভিজ্ঞতাবাদকে যুক্তিসম্মত পরিণতিতে পৌঁছে দিয়ে আত্মগত ভাববাদের প্রর্বতন করেন। লক এর মতে, বস্তুর মধ্যে দুই প্রকারের গুণ থাকে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণ বস্তুর মধ্যে থাকে এবং সেগুলির জ্ঞাতার মনের বাইরে স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, তারা অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে, গৌণ গুণগুলি জ্ঞাতার মন নির্ভর, তারা বস্তুর মধ্যে থাকে না এবং মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়। বার্কলির আত্মগত ভাববাদকে এভাবে প্রকাশ করা হয়, জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। মুখ্য গুণ বা গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা বা আত্মগত ধারণা। অতএব, বার্কলি বলেছেন প্রত্যক্ষ বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাঁর ঘোষণা, ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষিত হওয়ার উপরে নির্ভর করে,’ কোন কিছুর অস্তিত্ব তাকে প্রত্যক্ষ করার উপরে নির্ভর করে ‘। ‘Esse est percipi or  Existence is to be perceived’ এর অর্থ হলো , একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর।

বার্কলির এই বক্তব্যের কারণে তাঁর ভাববাদকে আত্মগত এবং মনোস্তাত্বিক বলা হয়, কেননা তার‌ মতে, ব্যক্তি চেতনাই বহির্জগতের অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্তু ব্যক্তির ধারণা ব্যক্তির ইচ্ছার ফল। অচেতন জড় পদার্থের বাইরে আমাদের ধারণার কোন কারণ থাকে। বার্কলির মতে সেটি হল সক্রিয় সত্ত্বা  বা আত্মা । এই পর্যায়ে বার্কলির ভাববাদ পুরোপুরি আত্মগত।

আত্মগত ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) এই মতবাদ অনুযায়ী, মনের একমাত্র সত্ত্বা আছে। বাহ্যবস্তুর প্রকৃত সত্ত্বা নেই।

(খ) বার্কলির মতে, একমাত্র ধারণাই প্রত্যক্ষের বিষয়।

(গ) আত্মগত ভাববাদে মন এবং মনের ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে।

(ঘ) বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

প্রশ্ন ১৭। ভাববাদের ক্রমবিকাশে প্লেটো, ডেকার্টস এবং লাইবনিজের মতামত আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভাববাদের মতে, বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, তাকে কখনও জানা যায় না। কারণ, যে বস্তুর মানুষের মনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, তাকে জানা অসম্ভব। অতএব, জ্ঞানের সকল বিষয় বস্তু জ্ঞাতার মনের উপর নির্ভর করে। মন বা আত্মাই পরম সত্য এবং সকল বস্তুই মানসিক। ডেকার্ট বলেন যে, বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু আত্মা বা মনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নয়। কারণ আত্মাই অন্যের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে। তার বিখ্যাত উক্তি ‘ Cogito ergo sum ‘ এর অর্থ ‘ আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি।’ এভাবে ভাববাদীরা মন বা আত্মাকে পরম সত্তা বলে স্বীকার করেন।

প্লেটোর মতে, এই জগৎ ও বস্তুসমূহ ক্ষণস্থায়ী। তার মতে, জড়বস্তু ‘ বিশেষ ‘ বস্তুমাত্র। বিশেষ বস্তু সর্বদাই ধ্বংসশীল। এই বিশেষের পেছনে আছে সামান্য বা প্রত্যয় সামান্য হল আত্মিক বা ধারণা। তাঁর মতে, এই বিশ্বজৎ অস্তিত্বশীল , চিরন্তন এবং স্থায়ী। 

লাইবনিজের মতে, সত্ত্বা শাশ্বত অস্তিত্বশীল এবং অবিভাজ্য। তিনি অবিভাজ্য সত্ত্বাকে ভাগ করতে গিয়ে পরমাণু বাদের সাহায্য নেন। পরমাণুবাদীরা বলেন যে একটি জড় বস্তুকে ভাগ করতে গিয়ে এমন কিছু অংশ পাওয়া যায়,আর ভাগ করা যায় না। এই অবিভাজ্য ভৌতিক কণাগুলো হল পরমাণু। তার মতে পরমাণু কখনও পরম সত্তা হতে পারে না। তিনি এদের নাম দিয়েছেন চিৎ পরমাণু। তার মতে, চিৎপরমাণুগুলি পরস্পরের থেকে স্বতন্ত্র। তিনি বলেন ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎপরমাণু। তিনি চিৎপরমাণুগুলির মধ্যে বিশ্ব সৃষ্টি আগে থেকেই সংহতি স্থাপন করে রেখেছেন। তার এই মতবাদকে ‘ পূর্ব স্থাপিত শৃঙ্খলাবাদ ‘ বলা হয়।

প্রশ্ন ১৮। হেগেলের ভাববাদ, বাস্তববাদ এবং ভাববাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার চেষ্টা করেছে বলে তুমি মনে করো কী ? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ হ্যাঁ, হেগেলের ভাববাদ, বাস্তববাদ এবং ভাববাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে।

হেগেলের মতে পরম সত্তা জীবন্ত এবং পরিবর্তনশীল। পরম সত্তা নিজের জগতের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাঁর সত্তাকে প্রকাশ করে। জগতকে বাদ দিলে পরম সত্তা অসম্পূর্ণ। পরম সত্তা আত্মচেতনা উপলব্ধির কারণে তা অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা গুলির মধ্যে অন্তঃবিরোধ ঘটে। কিন্তু পরম সত্তা রহস্যময়। তাঁর মতে চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন। হেগেলের ভাববাদে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। জগতকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে, হেগেল ভাববাদ ও বাস্তববাদের সমন্বয় সাধন করেছেন। অতএব, আমরা দেখতে পাই যে, হেগেলের বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে ভাববাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ ঘটেছে।

প্রশ্ন ১৯। প্লেটোর ভাববাদের উপরে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ প্লেটোকে পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তাঁর মতে, এই জগত এবং তার বস্তুসমূহ ক্ষণস্থায়ী। প্লেটোর মতে, জড়বস্তু’ বিশেষ ‘ বস্তুমাত্র। বিশেষ বস্তু সর্বদাই ধ্বংসশীল। এই বিশেষের পেছনে আছে সামান্য বা প্রত্যয়। এই সামান্য চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়। সামান্য আত্মিক বা ধারণা। প্লেটো বলেন যে, এই বিশ্বজগৎ অস্তিত্বশীল , চিরন্তন এবং স্থায়ী। এটা পরিবর্তনের সীমার বাইরে। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য জগত আত্মিক জগতের প্রতিচ্ছায়া।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আত্মগত ভাববাদ কী ? এই ভাববাদের সমালোচনামূলক ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একটি ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

আত্মগত ভাববাদ বলতে আমরা বুঝি একমাত্র ধারণাকে জানা যায় এবং ধারণার সত্ত্বা আছে। বার্কলি লক এর অভিজ্ঞতাবাদকে যুক্তিসম্মত পরিণতিতে পৌঁছে দিয়ে আত্মগত ভাববাদের প্রর্বতন করেন। লক এর মতে, বস্তুর মধ্যে দুই প্রকারের গুণ থাকে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণ বস্তুর মধ্যে থাকে এবং সেগুলির জ্ঞাতার মনের বাইরে স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, তারা অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে, গৌণ গুণগুলি জ্ঞাতার মন নির্ভর, তারা বস্তুর মধ্যে থাকে না এবং মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়। বার্কলির আত্মগত ভাববাদকে এভাবে প্রকাশ করা হয়, জড় বস্তু হচ্ছে তার গুণ সমূহের সমষ্টি। মুখ্য গুণ বা গৌণ গুণ সকলই আমাদের মনের ধারণা বা আত্মগত ধারণা। অতএব, বার্কলি বলেছেন প্রত্যক্ষ বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাঁর ঘোষণা, ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষিত হওয়ার উপরে নির্ভর করে,’ কোন কিছুর অস্তিত্ব তাকে প্রত্যক্ষ করার উপরে নির্ভর করে ‘। ‘Esse est percipi or  Existence is to be perceived’ এর অর্থ হলো , একটি বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর।

বার্কলির এই বক্তব্যের কারণে তাঁর ভাববাদকে আত্মগত এবং মনোস্তাত্বিক বলা হয়, কেননা তার‌ মতে, ব্যক্তি চেতনাই বহির্জগতের অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্তু ব্যক্তির ধারণা ব্যক্তির ইচ্ছার ফল। অচেতন জড় পদার্থের বাইরে আমাদের ধারণার কোন কারণ থাকে। বার্কলির মতে সেটি হল সক্রিয় সত্ত্বা  বা আত্মা । এই পর্যায়ে বার্কলির ভাববাদ পুরোপুরি আত্মগত।

আত্মগত ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো নিম্নরূপ —-

(ক) প্রথমে বস্তু অস্তিত্বশীল , তারপর তাকে জানা যায় বা প্রত্যক্ষ করা যায়।

(খ) G.E. Moore বলেন যে, জ্ঞান সংক্রান্ত একটি সন্তোষজনক মতবাদের জন্য বস্তু ও সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার করতেই হবে।

(গ) বার্কলির মতে, ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য বস্তু এবং তার সংবেদন এক এবং অভিন্ন।

(ঘ) নব্য বাস্তববাদীরা বার্কলির ভাববাদকে  ‘ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ’ বলে মনে করেন।

আত্মগত ভাববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো নিম্নরূপ —-

(ক) প্রথমে বস্তু অস্তিত্বশীল , তারপর তাকে জানা যায় বা প্রত্যক্ষ করা যায়।

(খ) G.E. Moore বলেন যে, জ্ঞান সংক্রান্ত একটি সন্তোষজনক মতবাদের জন্য বস্তু ও সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার করতেই হবে।

(গ) বার্কলির মতে, ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য বস্তু এবং তার সংবেদন এক এবং অভিন্ন।

(ঘ) নব্য বাস্তববাদীরা বার্কলির ভাববাদকে  ‘ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ’ বলে মনে করেন।

প্রশ্ন ২। হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের বিষয়ে সমালোচনামূলক আলোচনা করো।

অথবা, 

” হেগেলের বস্তুগত ভাববাদের মধ্যদিয়ে ভাববাদের পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে”— সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ইউরোপীয় দর্শনের ভাববাদের সামগ্ৰিক রূপটি হেগেলের বস্তুগত ভাববাদে ব্যক্ত হয়েছে।

হেগেলের মতে, পরম ধারণাই পরম সত্তা। মানুষের সসীম ধারণাগুলি পরম সত্তার অন্তর্গত নয়। পরম সত্তা তার চৈতন্যকে সসীম ও ধারণার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। এই জগতের পরম সত্তাই হল পরম ধারণা।

হেগেল বস্তুগত ভাববাদে বলেন যে পরম ধারণা বা পরম মানস বা চিন্তাই জগতের অন্তর্নিহিত  সত্তা। যা কিছু অস্তিত্বশীল বা জ্ঞেয়, পরম ধারণা তাদের প্রধান শক্তি। পরম ধারণা এবং জীবজগত আর মনের সম্পর্ক এমন যে, একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি থাকতে পারে না, ঠিক যেমন জীবদেহ এবং তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ পরস্পর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে না।

হেগেলের মতে পরম সত্তা জীবন্ত এবং পরিবর্তনশীল। পরম সত্তা নিজের জগতের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাঁর সত্তাকে প্রকাশ করে। জগতকে বাদ দিলে পরম সত্তা অসম্পূর্ণ। পরম সত্তা আত্মচেতনা উপলব্ধির কারণে তা অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা গুলির মধ্যে অন্তঃবিরোধ ঘটে। কিন্তু পরম সত্তা রহস্যময়। তাঁর মতে চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন। হেগেলের ভাববাদে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। জগতকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে, হেগেল ভাববাদ ও বাস্তববাদের সমন্বয় সাধন করেছেন। অতএব, আমরা দেখতে পাই যে, হেগেলের বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে ভাববাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ ঘটেছে।

হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদের চারটি সমালোচনা নিম্নরূপ —–

(ক) হেগেলের বস্তুনিষ্ঠ ভাববাদ অতিমাত্রায় বৌদ্ধিক।

(খ) সাধারণ মানুষের সীমিত ক্ষমতার ক্ষেত্রে এই বৌদ্ধিক ব্যাখ্যা অধিগত করা সম্ভবপর নয়।

(গ) হেগেল তাঁর পরম ধারণাকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

(ঘ) হেগেলের ভাববাদে মানব মনের অসীম ক্ষমতাকে খুব বেশি ক্ষুদ্র বলে দেখানো হয়েছে। ফলে মানুষের মনের গুরুত্ব, স্বাধীনতা ইত্যাদিকে অবহেলা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। বার্কলির ভাববাদ আত্মগত না বস্তুগত ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বার্কলির ভাববাদ আত্মগত। কারণ, আত্মগত ভাববাদের মতে, গুণের সমষ্টি হল পদার্থ। মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ উভয়ই আমরা মনের আত্মগত ধারণা। বার্কলির মতে কোন একটা বস্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে সেগুলো প্রত্যক্ষিত হয় কি না তার ওপরে। তাঁর এই মতবাদ ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর ‘ বলে জানা যায়। এই মন্তব্যের অর্থ হচ্ছে কোন বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষের উপর‌‌‌ নির্ভরশীল। ব্যক্তির মনে জগতের অস্তিত্ব নির্ভর করে। আমরা বাহ্য জগত উষ্ণও নয় শীতলও নয়, মিঠাও নয় টকও নয়। অর্থাৎ মনের বহির্ভূত কোন বস্তুর অস্তিত্ব নেই। বার্কলি তার বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় তার চিন্তাধারা আত্মনিষ্ঠ।

হেগেলের ভাববাদ মতে, পরম সত্তাই একমাত্র মূল সত্তা। জগতকে পরমাত্মাতেই প্রকাশ করে। এই জগত ব্যক্তি মনের ধারণা নয়, পরমাত্মার ধারণারূপে আছে। কাজেই পরমাত্মার প্রত্যক্ষের বিষয়রূপে জগতের অস্তিত্ব আছে।

বার্কলির ভাববাদ প্রথম পর্যায়ে সম্পুর্ন আত্মগত ছিল। কিন্তু শেষের দিকে তাঁর প্রত্যক্ষের ব্যক্তি মনের থেকে সরে পরমাত্মার মনে গ্ৰহণ করেছে। সেই কারণে বার্কলির শেষের দিকে কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ভাববাদ বস্তুগত ভাববাদ বলে প্রকাশ পায়। তাঁর ভাববাদ প্রকৃত বস্তুগত ভাববাদ বলা যায় না। তাঁর মতে আত্মগত দোষ থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে পরমাত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছিল। সুতরাং উপরোক্ত মন্তব্য থেকে আমরা পাই বার্কলির ভাববাদ বস্তুগত নয়, আত্মগত।

প্রশ্ন ৪। বাস্তববাদ ও ভাববাদের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ বাস্তববাদ ও ভাববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —–

(ক) বাস্তববাদের মতে, জ্ঞাতার মনের বাইরে বস্তুর একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। কিন্তু ভাববাদের মতে, বাহ্যজগতের অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর, তাঁর কোন স্বাধীন অস্তিত্ব নেই।

(খ) বাস্তববাদীরা বলেন যে, জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের বিষয় বস্তুর সম্পর্ক বাহ্য সম্পর্ক। কিন্তু ভাববাদীরা বলেন যে জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের বিষয়বস্তুর সম্পর্ক আন্তর সম্পর্ক।

প্রশ্ন ৫। ভাববাদ কাকে বলে ? ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভাববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞাতার মন নির্ভর। কোন বস্তুরই জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, এই মতবাদকে ভাববাদ বলে।

ভাববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ —-

(ক) ভাববাদের মতে, বস্তু অপেক্ষা মনের প্রাধান্য বেশি। বিশ্বজগত নিয়ন্ত্রিত হয় মনের দ্বারা, বস্তুর দ্বারা নয়। 

(খ) ভাববাদ মানুষের অস্তিত্বকে প্রাধান্য দেয়। মানুষ বিশ্বজগতের একটি অংশ হলেও সে আধ্যাত্মিক চেতনার আধার। মানুষের মনকে জড় বস্তুতে রূপান্তর করা যায় না।

(গ) ভাববাদীরা বলেন ঈশ্বর জগত থেকে পৃথক নন। তিনি জগতের মধ্যেই বিরাজ করেন।

(ঘ) ভাববাদীরা বলেন,জগৎ উদ্দেশ্যধর্মী , এবং তার প্রকৃত স্বরূপ আধ্যাত্মিক।

(ঙ) ভাববাদীরা প্রমূল্য সমূহের উপর প্রাধান্য দেয়। ব্যক্তি হল নৈতিক কর্তা, সে প্রমূল্য বিচার ও সন্ধান করতে পারে। ভাববাদী নৈতিক মূল্য হিসাবে বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তি স্বীকার করেন।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভাববাদের একটি সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ ভাববাদ মতে, জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞাতার মন নির্ভর। কোন বস্তুরই জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই। জ্ঞাতার মনের বাইরে জ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতে পারে না, এই মতবাদকে ভাববাদ বলে।

প্রশ্ন ২। পাশ্চাত্য দর্শনে ভাববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে ?

উত্তরঃ প্লেটো।

প্রশ্ন ৩। ‘ অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর ‘—- কথাটি কে বলেছিলেন ?

উত্তরঃ জর্জ বার্কলি।

প্রশ্ন ৪। ‘ পূর্ব প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ ‘ তত্ত্বটির প্রবর্তক কে ?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

প্রশ্ন ৫। আত্মগত ভাববাদ কী ?

উত্তরঃ যে মতবাদ বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব একজন ব্যক্তির মন বা ব্যক্তির আত্মার উপর নির্ভরশীল বলে স্বীকার করে, সেই মতবাদকেই আত্মগত ভাববাদ বলে।

প্রশ্ন ৬। হেগেলের বস্তুগত ভাববাদ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ ইউরোপীয় দর্শনের ভাববাদের সামগ্ৰিক রূপটি হেগেলের বস্তুগত ভাববাদে ব্যক্ত হয়েছে।

হেগেলের মতে, পরম ধারণাই পরম সত্তা। মানুষের সসীম ধারণাগুলি পরম সত্তার অন্তর্গত নয়। পরম সত্তা তার চৈতন্যকে সসীম ও ধারণার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। এই জগতের পরম সত্তাই হল পরম ধারণা।

হেগেল বস্তুগত ভাববাদে বলেন যে পরম ধারণা বা পরম মানস বা চিন্তাই জগতের অন্তর্নিহিত  সত্তা। যা কিছু অস্তিত্বশীল বা জ্ঞেয়, পরম ধারণা তাদের প্রধান শক্তি। পরম ধারণা এবং জীবজগত আর মনের সম্পর্ক এমন যে, একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি থাকতে পারে না, ঠিক যেমন জীবদেহ এবং তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ পরস্পর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে না।

হেগেলের মতে পরম সত্তা জীবন্ত এবং পরিবর্তনশীল। পরম সত্তা নিজের জগতের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাঁর সত্তাকে প্রকাশ করে। জগতকে বাদ দিলে পরম সত্তা অসম্পূর্ণ। পরম সত্তা আত্মচেতনা উপলব্ধির কারণে তা অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা গুলির মধ্যে অন্তঃবিরোধ ঘটে। কিন্তু পরম সত্তা রহস্যময়। তাঁর মতে চিন্তা এবং সত্তা অভিন্ন। হেগেলের ভাববাদে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। জগতকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে, হেগেল ভাববাদ ও বাস্তববাদের সমন্বয় সাধন করেছেন। অতএব, আমরা দেখতে পাই যে, হেগেলের বস্তুগত ভাববাদের মধ্যে ভাববাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ ঘটেছে।

We Hope the given দ্বাদশ শ্রেণীর তর্কবিজ্ঞান ও দর্শন will help you. If you Have any Regarding AHSEC Board HS 2nd Year Logic and Philosophy Question and Answers in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top