Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা Question Answer in Bengali, is a textbook prescribed by the Assam AHSEC Board Class XII Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy Question Answer in Bengali The experts of The Roy Library provide solutions for every textbook question Answer to help students understand and learn the language quickly. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা Solutions in Bengali are free to use and easily accessible. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা Notes in Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 7 নীতিবিদ্যা, Gives you a better knowledge of all the chapters. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Notes. The experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Assam Board HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Suggestion will be able to solve all the doubts of the students. Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Solution, Provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the Assam AHSEC Board Class 12 Logic and Philosophy in Bengali Question Answer PDF. HS 2nd Year Logic and Philosophy in Bengali Syllabus are present on Roy Library’s website in a systematic order.

নীতিবিদ্যা

দ্বিতীয় খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘Ethics ‘ শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে?

উত্তরঃ গ্ৰিক শব্দ ‘Ethica’ বা  ‘Ethos’ থেকে এসেছে।

প্রশ্ন ২। ‘Moral’ শব্দ কোন শব্দ থেকে এসেছে ?

উত্তরঃ ল্যাটিন শব্দ ‘Mores’ থেকে।

প্রশ্ন ৩। ‘Moral’ শব্দটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ রীতিনীতির বা অভ্যাস।

প্রশ্ন ৪। ‘Ethos’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তরঃ Ethos শব্দের অর্থ চরিত্র, আচার – ব্যবহার, রীতি-নীতি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৫। নীতিবিদ্যার একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ নীতিবিদ্যা বুৎপত্তিগত অর্থে মানুষের চরিত্র, আচার ব্যবহার, রীতিনীতি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৬। নীতিবিদ্যা কি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান ?

উত্তরঃ হ্যাঁ,নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৭। ‘ চরিত্র হল আচার ব্যবহারের আভ্যন্তরীণ দিক বা রূপ ‘—- কথাটি কি শুদ্ধ ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, শুদ্ধ।

প্রশ্ন ৮। নীতিবিদ্যা কি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান ?

অথবা, 

“নীতিশাস্ত্র বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান “—- এটি কি শুদ্ধ ?

উত্তরঃ না, নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ৯। অনৈতিক ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কি ?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১০। ‘উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য উপায়কে নীতিগত ভাবে সমর্থন করে।’ স্বীকার করো কি ?

উত্তরঃ না, করি না।

প্রশ্ন ১১। নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কী ?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য+ উদ্দেশ্য লাভের উপায়+ ফলাফল= অভিপ্রায়।

প্রশ্ন ১২। নীতিশাস্ত্র কোন ধরনের বিজ্ঞান ?

উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ১৩। পুরুষার্থ কত প্রকার ?

উত্তরঃ চার প্রকার।

প্রশ্ন ১৪।‌ নীতিশাস্ত্র ব্যবহারিক বিজ্ঞান কি ?

উত্তরঃ হাঁ।

প্রশ্ন ১৫। বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিজ্ঞান।

প্রশ্ন ১৬। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ নীতিবিদ্যা।

প্রশ্ন ১৭। অনৈতিক ক্রিয়ার একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বন্যা, উন্মাদ ব্যক্তির অপরাধ।

প্রশ্ন ১৮। ঐচ্ছিক ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু হিসাবে গণ্য করা হয় কি ?

উত্তরঃ হাঁ, করা হয়।

প্রশ্ন ১৯। অভ্যাসজনিত ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু হিসাবে গণ্য করা হয় কি ?

উত্তরঃ হাঁ।

প্রশ্ন ২০। লক্ষই উপায়ের ন্যায্যতা প্রতিপালন করে নি ?

উত্তরঃ হাঁ।

প্রশ্ন ২১। নীতিশাস্ত্র হলো মানবীয় আচরণে জড়িত সর্বোচ্চ আদর্শের বিজ্ঞান —- কে একথা বলেছিল ?

উত্তরঃ নীতিশাস্ত্রবিদ মুরহেড বলেছিল।

প্রশ্ন ২২। নীতিশাস্ত্র সংজ্ঞা দিতে পারে আচরণের শুদ্ধতা ভাল সম্পর্কে এক অধ্যায়ন হিসাবে —- এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ ম্যাকেঞ্জি।

প্রশ্ন ২৩। সমাজে বাস করা মানুষের আচরণে আদর্শ বিজ্ঞান হিসাবে আমি নীতিশাস্ত্রের সংজ্ঞা দিতে পারি। এই উক্তিটির সঙ্গে জড়িত দার্শনিকের নাম কী ?

উত্তরঃ উইলিয়াম লিলি।

S.L. No.সূচি-পত্র
অধ্যায় -১আগমন এবং এর প্রকার
অধ্যায় -২আগমনের ভিত্তি
অধ্যায় -৩প্রকল্প
অধ্যায় -৪মিলের পরীক্ষণমূলক অনুসন্ধা
অধ্যায় -৫বাস্তববাদ
অধ্যায় -৬ভাববাদ
অধ্যায় -৭নীতিবিদ্যা
অধ্যায় -৮ধর্ম

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নীতি শাস্ত্রের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ ‘Ethics’ শব্দটি গ্ৰিক শব্দ ‘Ethica’ থেকে এসেছে। ‘Ethica’ এসেছে ‘Ethos’  থেকে। Ethos শব্দের অর্থ চরিত্র, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার,অভ্যাস ইত্যাদি। নীতিবিদ্যাকে নীতি দর্শনও বলা হয়।

নীতিবিদ্যাকে সংক্ষেপে নীতি বিজ্ঞান বা শুদ্ধ আচরণ বা কর্তব্যপালনের শাস্ত্র বলা হয়। এটা মূলতঃ ভালো- মন্দ , ন্যায়- অন্যায় এবং তার সঙ্গে জড়িত কাজকর্মে প্রকাশিত চরিত্রের ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। এই বিদ্যায় চরিত্রেরই বহিঃ প্রকাশ ঘটে। এই কারণে এই বিদ্যাকে চরিত্রের বিজ্ঞান বলা হয়।

প্রশ্ন ২। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কী ?

উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান সেই বিজ্ঞান , যাতে কোন আদর্শকে সামনে রেখে বিষয়বস্তুর বিচার করা হয়। সেই বিশেষ আদর্শকে অনুসরণ করে বিষয়বস্তুর মূল্য বিচার করা হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। যেমন যুক্তি বিজ্ঞান বা নীতি বিজ্ঞান। যুক্তি বিজ্ঞানের আদর্শ শুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে সত্য জ্ঞান অর্জন করা। আর নীতি বিজ্ঞানের আদর্শ আচরণের আদর্শ নির্ধারণ করা।

প্রশ্ন ৩। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরগুলি লেখো।

উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তর তিনটি। 

এইগুলি হল — 

(ক) মানসিক  স্তর। 

(খ) দৈহিক বা শারীরিক স্তর। 

(গ) বাহ্যিক স্তর বা ফলাফলের স্তর।

প্রশ্ন ৪। অভ্যাসজনিত ক্রিয়া কি নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু ?

উত্তরঃ হাঁ।

প্রশ্ন ৫। কামনার সংঘাত বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ মানুষের মনে একই সময়ে একাধিক কামনার উদয় হতে পারে। এই কামনাগুলির মধ্যে প্রাধান্য পাওয়ার জন্য যেন একটি প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। একেই কামনার সংঘাত বলে।

প্রশ্ন ৬। পুরুষার্থ কথাটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ পুরুষার্থ হলো মানবজীবনের পরমার্থ বা পরম শ্রেয়। ভারতীয় নীতি শাস্ত্রে এটি একটি পূর্ণতা মৌলিক সিদ্ধান্ত। পুরুষার্থ শব্দের অর্থ হল যা পুরুষ অথবা মানুষের প্রয়োজন। আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভের যে সমস্ত হেতু বা উপায় সেইগুলি মানুষের পুরুষার্থ। পুরুষার্থ চার প্রকার—- ধর্ম, অর্থ, কর্ম ও মোক্ষ।

প্রশ্ন ৭। বর্ণাশ্রম ধর্ম বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ বর্ণ ধর্ম + আশ্রম ধর্ম= বর্ণাশ্রমধর্ম । ভারতীয় হিন্দু সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য এবং মানুষের জীবনকে সুসংহত হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আর্য ঋষিরা বর্ণাশ্রম ধর্মের প্রচলন করেছিলেন। তারা মানুষের গুণ ও কর্ম হিসাবে ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চারটি বর্ণে ভাগ করেন। তারা চতুরাশ্রমের প্রবর্তন করে মানুষের জীবনকে ভাগ করেন। এই চতুরাশ্রম হল ব্রক্ষচর্য, গাহস্থ্য , বাণপ্রস্থ  ও সন্ন্যাস।

প্রশ্ন ৮। নীতি শাস্ত্রকে কেন আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় ?

উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কোন আদর্শকে সামনে রেখে তার বিষয়বস্তুর বিচার করে। নীতিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা এমন বিজ্ঞান, যা আমাদের সুসংবদ্ধ জ্ঞান দেয়। তার আদর্শ হল মানুষের পরম শ্রেয় বা কল্যাণ। মানুষের মনের ভিতরে থাকা ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ইত্যাদির সঙ্গে মানুষের আচরণ নিয়ে নীতিবিদ্যা আলোচনা করে। নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণ এবং ঐচ্ছিক মূল্য নির্ধারণ করে। মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত নীতিবিদ্যা সেটা নিয়ে আলোচনা করে। যেহেতু নীতিবিদ্যার উদ্দেশ্য মানুষের প্রকৃতি নির্ণয় করা নয় এবং তার আচরণের আদর্শ নির্ণয় , সেহেতু নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

প্রশ্ন ৯। মোক্ষের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।

প্রশ্ন ১০। ত্রিবর্গ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ধর্ম, অর্থ এবং কর্ম এই তিনটি আদর্শকে ত্রিবর্গ বলে। ধর্মের অর্থ হল যাবতীয় সদগুণ অর্জন, সৎ জীবন যাপন। অর্থ হল জীবনের প্রয়োজন মেটানোর সৎপথে অর্থ উপার্জন এবং কাম হলো সংযত কামনা বাসনা নিয়ে জীবন ধারণ।

প্রশ্ন ১১। পুরুষার্থ বলতে কী বোঝ ?

অথবা,  

পুরুষার্থ শব্দটি কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে ?

উত্তরঃ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে পুরুষার্থের ধারণা মৌলিক নৈতিক মূল্য সম্পর্কিত ধারণা। এই নীতি শাস্ত্রের নৈতিক জীবনের পরম শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে পুরুষার্থের কথা বলা হয়। পুরুষার্থ চারটি আদর্শকে বুঝায় —- ধর্ম, অর্থ,কাম এবং মোক্ষ। এই চারটি পুরুষার্থ অর্জন মানব জীবনের মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন ১২। মোক্ষ লাভের মার্গ তিনটি কী কী?

উত্তরঃ মোক্ষ লাভের মার্গ বা পথ তিনটি। 

এইগুলি হল —-

(১) কর্মযোগ। 

(২) জ্ঞান যোগ। 

(৩) ভক্তিযোগ।

প্রশ্ন ১৩। একজন উন্মাদ ব্যক্তির ক্রিয়াকে নৈতিক কর্ম বলা যায় কি ? তোমার মতের সপেক্ষ একটি যুক্তি দাও।

উত্তরঃ একজন উন্মাদ ব্যক্তির ক্রিয়াকে নৈতিক কর্ম বলা যায় না।

নৈতিক কর্ম হল সেই ক্রিয়া বা কর্ম যার মধ্যে নৈতিক গুণ আছে অর্থাৎ যে সব ক্রিয়ার মধ্যে ভালো,মন্দ, উচিত বা অনুচিত বলে বিচার করার মত গুণ আছে। উন্মাদ ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপের কোন নৈতিক গুণ নেই। এটাকে ন্যায় বা অন্যায় কোনটাই বলা যায় না।

প্রশ্ন ১৪। ‘ অভিপ্রায় ‘- এর অর্থ লেখো।

উত্তরঃ ‘ অভিপ্রায় ‘ হচ্ছে নৈতিক বিচারের বিষয়। এর মধ্যে থাকে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা এবং উপায় সম্পর্কে ধারণা। একটি কাজ ভালো হয় তখন, যখন ‘ অভিপ্রায় ‘ ভালো হয়। অতএব অভিপ্রায়= উদ্দেশ্য+ উদ্দেশ্যলাভের উপায়+ সম্ভাব্য ফলাফল।

প্রশ্ন ১৫। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার সংজ্ঞা দাও। একটি ঐচ্ছিক ক্রিয়াতে ক’টি স্তর থাকে।

উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়া —- যে সমস্ত কার্য কর্তা স্বজ্ঞানে বুদ্ধিবৃত্তি প্রয়োগ দ্বারা কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করে, তাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে।

একটি ঐচ্ছিক ক্রিয়াতে তিনটি স্তর থাকে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। নৈতিক কার্য কী ? নৈতিক ক্রিয়ার দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ নৈতিক ক্রিয়া বা কার্য হল, যেগুলির গুণ আছে। অর্থাৎ যে ক্রিয়ার মধ্যে ভালো মন্দ উচিত বা অনুচিত বলে বিচার করার মত গুণ আছে। 

যেমন — 

(ক) দুর্গতকে সাহায্য করা। 

(খ) অপরের অনিষ্ট করা।

প্রশ্ন ২। অনৈতিক কার্য কী  ? অনৈতিক কার্যের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে সব ক্রিয়ার মধ্যে নৈতিক গুণ নেই, অর্থাৎ যে সব ক্রিয়াকে ভালো,মন্দ, উচিত বা অনুচিত বলে বিচার করা যায় না, তাদের অনৈতিক ক্রিয়া বলে। যেমন —- বন্যা, উন্মাদ ব্যক্তির অপরাধ।

প্রশ্ন ৩। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার সংজ্ঞা লেখো। অভ্যাসমূলক কার্য ঐচ্ছিক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত কি ?

উত্তরঃ যে সমস্ত কাজ কর্তা স্বজ্ঞানে বুদ্ধিবৃত্তি প্রয়োগ দ্বারা কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করে, তাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে।

হ্যাঁ, অভ্যাসজনিত ক্রিয়া ঐচ্ছিক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মানুষ শুরুতে স্বেচ্ছায় কোন কাজ করে, এবং পরে বারবার পুনরাবৃত্তির ফলে সে সব কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ৪। যে- কোন তিনটি অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ তিনটি অনৈচ্ছিক ক্রিয়া নিম্নরূপ —–

(ক) ভূমিকম্পে নেপাল ধ্বংস হল। যে প্রাকৃতিক কারণে নেপালে সম্প্রতি বিধ্বংসী ভূমিকম্প হল তার উপরে মানুষের ইচ্ছার কোন ব্যাপার ছিল না। এই রকম প্রাকৃতিক ঘটনা হল অনৈচ্ছিক ক্রিয়া।

(খ) প্রত্যাবর্তী ক্রিয়া অনৈচ্ছিক। 

যেমন—- অতি উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লে আমরা তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে ফেলি।

(গ) সহজাত ক্রিয়া অনৈচ্ছিক। 

যেমন — প্রাণী মাত্রেরই খাদ্যের সন্ধান, বংশবৃদ্ধি ইত্যাদি অনৈচ্ছিক ক্রিয়া।

প্রশ্ন ৫। কর্মের উৎস সম্পর্কে সংক্ষেপে টীকা লেখো।

উত্তরঃ প্রতিটি ঐচ্ছিক ক্রিয়ার হল কোন অভাববোধ বা প্রয়োজন। এই অভাববোধটি বাস্তব বা আদর্শগত  হতে হবে। অভাববোধ সব সময় পীড়াদায়ক। কিন্তু অভাবটি পূর্ণ হলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার মধ্যে চিন্তা ও অনুভূতি মিশ্রিত থাকে।

প্রশ্ন ৬। কামনার বা আকাংখার সংঘাত বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ মানুষের মনে একই সময়ে একাধিক কামনার উদয় হতে পারে। এই কামনাগুলির মধ্যে প্রাধান্য পাওয়ার জন্য যেন একটি প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। একেই কামনার সংঘাত বলে।

একই সময়ে একাধিক কামনা মানুষের মনে উদয় হয় এবং দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সৃষ্টি করে। কোন একটি বিশেষ কার্যকে মানুষ তখন নির্বাচন করে এবং সেই কার্যের পরিতৃপ্তির জন্য কর্মে প্রবৃত্ত হয়। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক পর্যায়ে অন্যতম অঙ্গ কামনার সংঘাত। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক।

প্রশ্ন ৭। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার পরিসমাপ্তির স্তর সম্পর্কে সংক্ষেপে টীকা লেখো।

উত্তরঃ মানুষ স্বেচ্ছায় যখন কোন কাজ করে, তখন বাইরের জগতে পরির্বতন হয়। আর কার্যটি সম্পন্ন হবার পর কাম্য ফল লাভ করাই পরিসমাপ্তি বা বাহ্য স্তর। ব্যক্তির দৈহিক ক্রিয়াগুলির ফলে বাইরের জগতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলিকে বলা হয় বাহ্য স্তর বা পরিসমাপ্তি স্তর । যেমন —- একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করবার জন্য অস্ত্রোপ্রচার করলেন। সেই অস্ত্রোপ্রচার সফল হবার ফলে রোগী সুস্থ হল । চিকিৎসকের উদ্দেশ্য সার্থক হলো। এটাই পরিসমাপ্তি স্তর।

মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ারই এই বাহ্য স্তরটি থাকে। তা ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে, কর্তার নিজের জন্য বা অপরের জন্য ভালো বা মন্দ হতে পারে। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার নৈতিক মূল্য নির্ধারণে বাহ্য স্তর বা ফলাফলের পর্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৮। কাম কী ? কামকে কেন পুরুষার্থ বলে বিবেচনা করা হয় ?

উত্তরঃ পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।

বিভিন্ন জীবের পারস্পরিক আকর্ষণের কারণ কাম। বংশবৃদ্ধির জন্য, বংশরক্ষার জন্য এটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সৃষ্টির ভিত্তি হচ্ছে কাম। হিন্দু চিন্তাবিদেরা বলেন কামের পরিপূর্তির ভিত্তি হল ধর্ম। আমরা বলতে পারি কামের তীব্রতা অভিশাপে পরিণত হয়। যখন সেটা উপযুক্ত স্থান ও কালের বিবেচনা বহির্ভূত হয়।

কামকে পুরুষার্থ বলে বিবেচনা করা হয় এই কারণে যে, বংশরক্ষা , বংশবৃদ্ধি, সমাজ রক্ষার জন্য মানুষের স্বভাবজাত কামের পরিতৃপ্তির প্রয়োজন। অবশ্য তা হবে, সংযত , সুনিয়ন্ত্রিত কামই মানুষের পুরুষার্থ।

প্রশ্ন ৯। ‘ অর্থ’ নামক অর্থ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।

অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।

প্রশ্ন ১০। মোক্ষ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শন মতে, মোক্ষই পরম পুরুষার্থ এবং মোক্ষ লাভেই জীবনের পরম লক্ষ্য। জন্ম- মৃত্যু সংসার চক্র থেকে অভ্যাহতি লাভ করাই হল মোক্ষ বা নির্বাণ । মোক্ষ মানে পরম আনন্দময় শান্তির অবস্থান। কারো কারো মতে, অজ্ঞানতা দূর করে শুদ্ধ চৈতন্য আত্মার উপলব্ধি হলো মুক্তি বা মোক্ষ।

প্রশ্ন ১১। কার্য কী ? নৈতিক এবং অনৈতিক ( নিনৈতিক) কার্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ পুরুষার্থের তিন নম্বর স্তরটির নাম হল কর্ম বা কাম। আক্ষরিক অর্থে কাম আকাংখাকে বোঝায়। আকাংখা সমস্থ কাজের জন্যই প্রেরক শক্তি। হিন্দু চিন্তাবিদেরা আকাংখাকে মূল্যবান বলে মনে করেন।

নৈতিক ক্রিয়া বা কর্ম হল, যে গুলির নৈতিক গুণ আছে। অর্থাৎ যে ক্রিয়ার মধ্যে ভালো – মন্দ উচিত অনুচিত বলে বিচার করার মত গুণ আছে।

আবার, যে সব ক্রিয়ার মধ্যে নৈতিক গুণ নেই অর্থাৎ যে সব ক্রিয়াকে ভালো মন্দ, উচিত বা অনুচিত বলে বিচার করা যায় না, তাদের অনৈতিক ক্রিয়া বলে।

সব কাজের বিষয়ে নৈতিক বিচার চলে না, একমাত্র ঐচ্ছিক ক্রিয়া এবং অভ্যাসজনিজ ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। আবার, অভ্যাস হল কোন ঐচ্ছিক ক্রিয়ার পুনরাবৃত্তির ফল। এই গুলি হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। অনৈচ্ছিক ক্রিয়া অনৈতিক।

প্রশ্ন ১২। অভ্যাসজনিত ক্রিয়া বলতে কী বোঝ।

উত্তরঃ যখন কোন একটি ক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বারে বারে অনুশীলন করা হয়, তখন এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। এইরূপ ক্রিয়াকে অভ্যাসজনিত ক্রিয়া বলে।

প্রশ্ন ১৩। ঐচ্ছিক ক্রিয়া কী ? ঐচ্ছিক ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ যে সমস্ত কাজ কর্তা স্বজ্ঞানে বুদ্ধিবৃত্তি প্রয়োগ দ্বারা কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করে, তাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে।

হ্যাঁ, অভ্যাসজনিত ক্রিয়া ঐচ্ছিক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মানুষ শুরুতে স্বেচ্ছায় কোন কাজ করে, এবং পরে বারবার পুনরাবৃত্তির ফলে সে সব কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়।

ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তর তিনটি-

যেমন —- মানসিক স্তর, শারীরিক বা দৈহিক স্তর ও পরিসমাপ্তি বা ফলাফলের স্তর। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্তরগুলিকে বিশ্লেষণ করলে তার লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ —-

(ক) মানসিক স্তরে থাকে কার্যের উৎস , লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, কামনা, নির্বাচন, অভিপ্রায় কামনার সংঘাত ইত্যাদি।

(খ) দৈহিক বা শারীরিক স্তরে ক্রিয়া সম্পন্ন করবার লক্ষ্যে ব্যক্তির শারীরিক প্রক্রিয়াগুলি থাকে। পরবর্তী পর্যায়ের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য দৈনিক অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ এবং মাংসপেশীর সঞ্চালন প্রয়োজন হয়।

(গ) পরিসমাপ্তির বা ফলাফলের স্তর হল কার্যটি সম্পন্ন হবার পর কাম্য ফল লাভ করাই পরিসমাপ্তির বাহ্য স্তর । ব্যক্তির দৈহিক ক্রিয়াগুলির ফলে বাইরের জগতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলিকে বলা হয় স্তর বাহ্য  স্তর বা পরিসমাপ্তির স্তর। 

এর মধ্যে থাকে যেমন—–

(১) নির্বাচিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণ।

(২) নির্বাচিত উপায় প্রয়োগ।

(৩) নির্বাচিত বা অভীস্পিত ফলাফল।

(৪) অনভীস্পিত আকস্মিক ফলাফল।

উদাহরণস্বরূপ —- একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করবার জন্য অস্ত্রোপ্রচার করলেন। সেই অস্ত্রোপচার সফল হবার ফলে রোগী সুস্থ হল। চিকিৎসকের উদ্দেশ্য সার্থক হল। এটাই পরিসমাপ্তির স্তর।

প্রশ্ন ১৪। উদ্দেশ্য কী ? অভিপ্রায়ের সঙ্গে এর পার্থক্য কী?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য হল মানুষের কাজের প্রেরক শক্তি। নীতিবিদ্যা প্রেরণা দিয়ে কাজের নৈতিকতার বিচার করে। কাজের ফল যা হোক উদ্দেশ্য সৎ হলে কাজটি ন্যায় এবং উদ্দেশ্য অসৎ হলে কাজটি অন্যায় হবে। একজন চিকিৎসক একজন রোগীকে কষ্ট নিবারণ করার জন্য অস্ত্রোপচার করলেন, কিন্তু রোগীটি মারা গেল । এখানে ফল দুঃখ জনক হলেও চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যাবে না।

কিন্তু কর্মের  নৈতিকতার বিচারে ব্যক্তির উদ্দেশ্যের বিচারই যথেষ্ট নয়। অভিপ্রায় হল মূলবস্তু । অভিপ্রায় হল— উদ্দেশ্য+সাধন – পরিণাম। একটি কাজকে বিচার করতে গেলে কর্তার সমগ্ৰ অভিপ্রায় বিচার করতে হবে। একটি কাজ তখনই ন্যায় সঙ্গত হবে, যদি  তার ফলাফল অথবা উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্য লাভের উপায় উভয়ই ভালো হয়, আর একটি কাজ অন্যায় বলে বিবেচিত হবে ,যদি এদের মধ্যে কোন একটি মন্দ হয়। অতএব সিদ্ধান্ত করা যায় যে শুধু উদ্দেশ্য দ্বারা কর্মের নৈতিক বিচার হয় না, তার সঙ্গে ব্যক্তির সমগ্ৰ অভিপ্রায় জানা দরকার।

প্রশ্ন ১৫। কামনার সংঘাত বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ মানুষের মনে একই সময়ে একাধিক কামনার উদয় হতে পারে। এই কামনাগুলির মধ্যে প্রাধান্য পাওয়ার জন্য যেন একটি প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। একেই কামনার সংঘাত বলে।

একই সময়ে একাধিক কামনা মানুষের মনে উদয় হয় এবং দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সৃষ্টি করে। কোন একটি বিশেষ কার্যকে মানুষ তখন নির্বাচন করে এবং সেই কার্যের পরিতৃপ্তির জন্য কর্মে প্রবৃত্ত হয়। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক পর্যায়ে অন্যতম অঙ্গ কামনার সংঘাত। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক।

প্রশ্ন ১৬। নীতিশাস্ত্রকে একটি ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিজ্ঞান বলা হয় কি ? যদি তুমি না বল, তবে কেন ?

উত্তরঃ নীতিশাস্ত্র প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান বলে সকল নীতিশাস্ত্রবিদ একমত নন। মেকেঞ্জির মতে, নীতিশাস্ত্র কেবল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। মানবজীবনের পরম কল্যাণ বা মঙ্গল বা পরমার্থ কী তাকে নির্ণয় করাই নীতিশাস্ত্রের উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, প্রায়োগিক বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করলে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়, তার নির্দেশ দেয়। নীতিশাস্ত্রই কেবল আদর্শ নির্ণয় করে কিন্তু সেই আদর্শে উপনীত হওয়ার কোন নিয়মনীতি পরিবর্তন করে না। সেই কারণে মেকেঞ্জির মতে, নীতিশাস্ত্র হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এটি প্রায়োগিক বিজ্ঞান নয়।

অন্যদিকে,হার্বার্ট স্পেনচারের মতে , নীতিশাস্ত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে। মুরহেডের মতে, নীতিশাস্ত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে না। সেথের মতে, নীতিশাস্ত্র এক সঙ্গে তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক উভয়েই। মূরহেড এবং সেথের মতে, সকল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানই তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক।

অতএব, নীতিশাস্ত্র আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এটি নৈতিক আদর্শ কী উপায়ে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তার নীতি নিয়মের নির্দেশ দেয়। এইগুলো বিবেচনা করলে নীতি শাস্ত্রকে প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান বলে অভিহিত না করাই ভালো।

প্রশ্ন ১৭। পুরুষার্থের ভিতর অন্যতম হিসাবে ধর্মের ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না। 

ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা। 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কী ? নীতিশাস্ত্রকে কেন আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় ?

উত্তরঃ আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান সেই বিজ্ঞান , যাতে কোন আদর্শকে সামনে রেখে বিষয়বস্তুর বিচার করা হয়। সেই বিশেষ আদর্শকে অনুসরণ করে বিষয়বস্তুর মূল্য বিচার করা হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। যেমন যুক্তি বিজ্ঞান বা নীতি বিজ্ঞান। যুক্তি বিজ্ঞানের আদর্শ শুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে সত্য জ্ঞান অর্জন করা। আর নীতি বিজ্ঞানের আদর্শ আচরণের আদর্শ নির্ধারণ করা।

আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কোন আদর্শকে সামনে রেখে তার বিষয়বস্তুর বিচার করে। নীতিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা এমন বিজ্ঞান, যা আমাদের সুসংবদ্ধ জ্ঞান দেয়। তার আদর্শ হল মানুষের পরম শ্রেয় বা কল্যাণ। মানুষের মনের ভিতরে থাকা ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ইত্যাদির সঙ্গে মানুষের আচরণ নিয়ে নীতিবিদ্যা আলোচনা করে। নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণ এবং ঐচ্ছিক মূল্য নির্ধারণ করে। মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত নীতিবিদ্যা সেটা নিয়ে আলোচনা করে। যেহেতু নীতিবিদ্যার উদ্দেশ্য মানুষের প্রকৃতি নির্ণয় করা নয় এবং তার আচরণের আদর্শ নির্ণয় , সেহেতু নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।

প্রশ্ন ২। মোক্ষ লাভের মার্গ বা পথ কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো।

অথবা, 

মোক্ষের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ মোক্ষ লাভের মার্গ বা পথ তিনটি। 

সেগুলি হল—-

(ক) কর্মযোগ। 

(খ) জ্ঞানযোগ। 

(গ) ভক্তিযোগ।

(ক) কর্মযোগ: মানুষের জীবন কর্মময়। কর্মবিহীন মানুষ থাকতে পারে না। গীতার মতে নিষ্কাম কর্মহীন প্রকৃত কর্মসাধনা। কর্মফলে আশক্তি না রেখে সার্থশূন্য সৎকর্ম বা কর্তব্য করাই হল নিষ্কাম কর্ম। নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে আত্মসুদ্ধি এবং আত্ম উপলদ্ধি হয়।

(খ) জ্ঞানযোগ: পরম সত্ত্বার সাক্ষাৎ দর্শনই জ্ঞানমামার্গ। এই পথে অগ্ৰসর সাধক জীবাত্মা পরমাত্মা , জগত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে মুক্তি লাভ করতে পারে। হিন্দু নীতি শাস্ত্রে পুরুষার্থ ত্রিবর্গ বিশিষ্ট। যথা ধর্ম, অর্থ, এবং কর্ম। মোক্ষকে পরমার্থ বলে গণ্য করা হয়।

(গ) ভক্তিযোগ: মোক্ষ লাভের অপর একটি পথ হল ভক্তি যোগ। এই পথ অনুসরণ করতে হলে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা, সেবা, ক্ষমা এবং সম্পর্কের প্রয়োজন। ঈশ্বরের উপর অবিচলিত বিশ্বাসের মাধ্যমে মোক্ষ সাধন সম্ভব।

প্রশ্ন ৩। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার পরিসমাপ্তির স্তর সম্বন্ধে কী জান লেখো।

উত্তরঃ মানুষ স্বেচ্ছায় যখন কোন কাজ করে, তখন বাইরের জগতে পরির্বতন হয়। আর কার্যটি সম্পন্ন হবার পর কাম্য ফল লাভ করাই পরিসমাপ্তি বা বাহ্য স্তর। ব্যক্তির দৈহিক ক্রিয়াগুলির ফলে বাইরের জগতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলিকে বলা হয় বাহ্য স্তর বা পরিসমাপ্তি স্তর । যেমন —- একজন চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করবার জন্য অস্ত্রোপ্রচার করলেন। সেই অস্ত্রোপ্রচার সফল হবার ফলে রোগী সুস্থ হল । চিকিৎসকের উদ্দেশ্য সার্থক হলো। এটাই পরিসমাপ্তি স্তর।

মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ারই এই বাহ্য স্তরটি থাকে। তা ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে, কর্তার নিজের জন্য বা অপরের জন্য ভালো বা মন্দ হতে পারে। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার নৈতিক মূল্য নির্ধারণে বাহ্য স্তর বা ফলাফলের পর্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৪। পুরুষার্থের একটি প্রকার হিসাবে ধর্মের ধারণা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের নামেই সব কাজ করা হয়। অধর্ম ভিত্তিক কোন কাজকেই সমাজ সমর্থন করে না। 

ধর্ম মানুষের সামাজিক,যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রয়োজন মেটায়। নৈতিক বিধি গুলো মেনে জীবন ধারণের মধ্যেই ধর্ম নিহীত থাকে। ধর্ম নৈতিক জীবনের অঙ্গ। কারণ, ঈশ্বরই এইসব নৈতিক বিধিগুলোকে তার আদেশ হিসাবে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। যে কাজ নৈতিক বিধি মেনে করা হয়,সে কাজ ভালো, আর যে কাজ নৈতিক বিধি ভেঙ্গে করা হয় সেটি মন্দ কাজ। মহাভারত বলে, ‘ সকল সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি। যা কিছু কোন সৃষ্টি জীবের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে,তাই ধর্ম।’ ধর্ম সকলক রক্ষা করে। অতএব নীতিগত ভাবে,ধর্মের সামাজিক অর্থ হল,ন্যায়ের পথে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা। 

প্রশ্ন ৫। উদ্দেশ্য কী ? উদ্দেশ্য নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কি ?

উত্তরঃ উদ্দেশ্য হল মানুষের কাজের প্রেরক শক্তি। নীতিবিদ্যা প্রেরণা দিয়ে কাজের নৈতিকতার বিচার করে। কাজের ফল যা হোক উদ্দেশ্য সৎ হলে কাজটি ন্যায় এবং উদ্দেশ্য অসৎ হলে কাজটি অন্যায় হবে। একজন চিকিৎসক একজন রোগীকে কষ্ট নিবারণ করার জন্য অস্ত্রোপচার করলেন, কিন্তু রোগীটি মারা গেল । এখানে ফল দুঃখ জনক হলেও চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যাবে না।

নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু অবশ্যই উদ্দেশ্য নয়। কারণ উদ্দেশ্যের ভালো – মন্দের উপর কার্যের ভালো মন্দ বিবেচিত হয় না। উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজের নৈতিক বিচার করলে অনেক ন্যায় সংঘাত নাও হতে পারে। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই, উদ্দেশ্য সৎ হলেও উদ্দেশ্য সাধনের উপায় যদি অসৎ হয়, সেই কাজকে সৎ বলে বিবেচনা করা যায় না। যেমন দারিদ্র্য লোককে সাহায্য করার জন্য অন্যের জিনিস চুরি করা কার্য অসৎ বা অন্যায় । সুতরাং কোন কার্য সৎ বলে বিবেচিত হতে হলে কেবল উদ্দেশ্য সৎ হলেই হবে না, উদ্দেশ্য সাধনের উপায়ও সৎ হতে হবে।

প্রশ্ন ৬। ‘অর্থ’ এর ওপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ পুরুষার্থের দ্বিতীয় স্তরটি হল অর্থ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে,অর্থ হল, মানুষের জীবিকা।

অর্থ ঐশ্বর্য এবং ক্ষমতাকে বুঝায়। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ, মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের দিকটি জীবনের অন্যান্য দিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমাদের অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হয়। যদি জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে অর্থ সংগ্ৰহের চেষ্টা সৎ হয়, তা হলে উদ্দেশ্যটি ন্যায় সম্মত হবে। এধরনের ঐশ্বর্য ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই উন্নতি সাধন করে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top