Class 12 Political Science Chapter 3 বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য, AHSEC Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Political Science Chapter 3 বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Solutions are free to use and easily accessible. Class 12 Political Science Chapter 3 বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Assam AHSEC Board Class 12 Political Science Question Answer in Bengali The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.
Class 12 Political Science Chapter 3 বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য
HS 2nd Year Political Science Notes in Bengali, Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 12 Political Science Solution in Bengali he experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 12 Political Science in Bengali Suggestions, will be able to solve all the doubts of the students. Class XII Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 12 Political Science Textbooks Solution are present on Roy Library’s website in a systematic order.
বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য
প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। এক মেরুকরণ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ যখন পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি একটি কেন্দ্র বা একটি দেশে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে তখন তাকে এক মেরুকরণ বলা হয়।
প্রশ্ন ২। বাক্যটি শুদ্ধ কর:
‘আধিপত্য’ শব্দটির উৎপত্তিস্থল প্রাচীন রোমে নিহিত।
উত্তরঃ ‘আধিপত্য’ শব্দটির উৎপত্তিস্থল গ্রিক সাহিত্যে নিহিত।
প্রশ্ন ৩। হ্যাঁ বা না লেখ:
প্রাচীন গ্রীসের এথেন্সের প্রাধান্য অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করার জন্য আধিপত্য শব্দটি ব্যবহার করেছিল।
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
______ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গবেষণা পরিকল্পনার সরাসরি ফলাফল।
উত্তরঃ ইন্টারনেট।
প্রশ্ন ৫। Soft Power বা কোমল শক্তি বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ প্রতিপত্তির সঙ্গে জড়িত তৃতীয় অর্থ হল ‘সম্মতি গঠন’ করার ক্ষমতা। এর অর্থ হল বিশ্বে কোনো একটি রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিশেষত বিচারধারা বা আদর্শের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর নিজ প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা।
প্রশ্ন ৬। কোন্ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ আরম্ভ হয়?
উত্তরঃ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ আরম্ভ হয় ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে।
প্রশ্ন ৭। Hard Power বা কঠিন শক্তি কি?
উত্তরঃ আধিপত্যের প্রথম অর্থ বা কঠিন শক্তি হল সামরিক সামর্থতা। আমেরিকার সামরিক আধিপত্য নিরঙ্কুশ। কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমূহের গোষ্ঠী এই ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা প্রদান করতে পারে না।
প্রশ্ন ৮। ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ অনুমোদিত ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৩৪টি দেশের এক সম্মিলিত বাহিনী কুয়েতকে ইরাকের দখল মুক্ত করতে ইরাক অভিযান করে। এই অভিযানকে ‘Operation Desert Storm’ বা ‘মরুঝড় অভিযান’ বলে।
প্রশ্ন ৯। গঠনমূলক শক্তি হিসাবে আধিপত্যের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যোগাযোগের জন্য সমুদ্রপথ।
প্রশ্ন ১০। সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতিতে ‘৯/১১’ বলতে কোন্ ঘটনা বোঝায়?
উত্তরঃ ‘৯/১১’ বলতে নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও আরলিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন ভবনে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণকে বোঝায়।
প্রশ্ন ১১। কোন্ বছর ইরাক কুয়েত আক্রমণ করেছিল?
উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।
প্রশ্ন ১২। আমেরিকার ক্ষমতার একটি বাধ্যবাধকতা লেখ।
উত্তরঃ ন্যাটো গোষ্ঠী।
প্রশ্ন ১৩। মার্কিন আধিপত্য কখন শুরু হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর।
প্রশ্ন ১৪। কোন্ বছর মার্কিন সামরিক গবেষণা প্রকল্প আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালে।
প্রশ্ন ১৫। গোলকীয় সর্বজনীন পণ্যের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ইন্টারনেট।
প্রশ্ন ১৬। গোলকীয় গ্রাম কি?
উত্তরঃ গোলকীয় গ্রাম হল সেই বিশ্ব বসতি যেখানে গ্রামের মোড়লের আমরা প্রতিবেশী, আর এই মোড়ল হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রশ্ন ১৭। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ জর্জ ডব্লিউ বুশ।
প্রশ্ন ১৮। ৯/১১-এর আক্রমণে কত লোক নিহত হয়েছিল?
উত্তরঃ প্রায় তিন হাজার লোক।
প্রশ্ন ১৯। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম এম.বি.এ পাঠ্যক্রম কখন শুরু হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালে।
প্রশ্ন ২০। ১৮৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা প্রথম বাণিজ্যিক স্কুলের নাম কি?
উত্তরঃ ওয়ার্টন স্কুল, পেনসিলভ্যানিয়া।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২১। ৯/১১ ঘটনা কোন্ সালে ঘটেছিল?
উত্তরঃ ২০০১ সালে।
প্রশ্ন ২২। একাধিপত্য বা hegemony শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ বিশ্ব রাজনীতিতে যখন কেবলমাত্র একটি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থাকে তখন তাকে একাধিপত্য বা hegemony বলে।
প্রশ্ন ২৩। আমেরিকা কত সালে ইরাক আক্রমণ করে?
উত্তরঃ ২০০৩ সালে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। আধিপত্য বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমূহের গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা রক্ষা করবার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। ক্ষমতা সামরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি নানা প্রকারের হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা তার ক্ষমতা বিস্তার করেছে। এই ক্ষমতা বিস্তার করে সমগ্র বিশ্বে নিজের প্রভাব বা প্রাধান্য বজায় রাখাকেই আধিপত্য বলে।
প্রশ্ন ২। দুটি সার্বজনীন ভোগ্য পণ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ সার্বজনীন ভোগ্য পণ্য বা দ্রব্য বলতে সেই সকল দ্রব্য বা পণ্য বোঝায় যা উপভোগ করার পর সেই সকল দ্রব্য বা পণ্যের পরিমাণ হ্রাস পায় না; যেমন- বিশুদ্ধ বায়ু, সমুদ্রপথ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩। কে, কার বিরুদ্ধে Operation Enduring Freedom পরিচালনা করেছিল?
উত্তরঃ ৯/১১ আক্রমণের হোতা হিসাবে আল কায়দা এবং আফগানিস্তানের তালিবান শাসকগোষ্ঠীসহ যারা সন্দেহের তালিকায় ছিল তাদের সকলের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান শুরু করে। ঐ সামরিক অভিযানকে ‘স্বাধীনতা স্থায়ীকরণের যুদ্ধ’ বা ‘Operation Enduring Freedom’ বলা হয়।
প্রশ্ন ৪। কখন থেকে আমেরিকার আধিপত্য আরম্ভ হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সাল থেকে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্য বিশ্ব দুই ক্ষমতাগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তিতে পরিণত হয় এবং তখন থেকেই মার্কিন আধিপত্য আরম্ভ হয়।
প্রশ্ন ৫। কে এবং কখন Bretton Woods System আরম্ভ করে?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ব্রেটন উড্স’ পদ্ধতি চালু করে। এই পদ্ধতি হল বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির’ পোশাকি নামে আধিপত্য স্থাপন করা এবং এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
প্রশ্ন ৬। আমেরিকার আধিপত্যের দুটি উপাদান উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য স্থাপনের অন্যতম পন্থা হল বিশ্বায়ন। এই বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা; যেমন—
(ক) আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার। এবং
(খ) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।
প্রশ্ন ৭। Bandwagon পরিকল্পনা কি?
উত্তরঃ আধিপত্যকারী শক্তির বিরুদ্ধাচরণ না করে আধিপত্যের কারণে সৃষ্ট সুযোগ; যেমন—অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বাণিজ্যের প্রসার, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ ইত্যাদির সদ্ব্যবহার করা অনেক বেশি যুক্তিসংগত। এই কৌশলগত বুদ্ধিমত্তাকে ‘ব্যান্ডওয়াগন’ বা ‘Bandwagon’ পরিকল্পনা বলে।
বিষয় | সূচী-পত্ৰ |
প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি) | |
অধ্যায় – ১ | বিশ্ব রাজনীতিতে শীতল যুদ্ধের যুগ |
অধ্যায় – ২ | দ্বি-মেরুকরণের অবসান |
অধ্যায় – ৩ | বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য |
অধ্যায় – ৪ | বিকল্প শক্তির উৎস |
অধ্যায় – ৫ | সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া |
অধ্যায় – ৬ | আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ |
অধ্যায় – ৭ | সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা |
অধ্যায় – ৮ | পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ |
অধ্যায় – ৯ | বিশ্বায়ন |
দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি) | |
অধ্যায় – ১০ | একদলীয় প্রাধান্যের যুগ |
অধ্যায় – ১১ | জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান |
অধ্যায় – ১২ | পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি |
অধ্যায় – ১৩ | ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক |
অধ্যায় – ১৪ | কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা |
অধ্যায় – ১৫ | গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট |
অধ্যায় – ১৬ | গণ-আন্দোলনের উত্থান |
অধ্যায় – ১৭ | আঞ্চলিক প্রত্যাশা |
অধ্যায় – ১৮ | ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি |
প্রশ্ন ৮। বিকল্প অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা আমেরিকার আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দাও।
উত্তরঃ সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমেরিকাকে একক বা সম্মিলিতভাবে কোন রাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থায় নেই। তথাপি অনেকে বিশ্বাস করে যে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (NGOs), সামরিক আন্দোলন বা বিশ্ব জনমত কিছু পরিমাণে হলেও আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
প্রশ্ন ৯। ১৯৯২ এবং ১৯৯৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কে জয়ী হয়েছিলেন?
উত্তরঃ ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বিল ক্লিনটন ১৯৯২ এবং ১৯৯৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
প্রশ্ন ১০। বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ কত?
উত্তরঃ বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন অংশ প্রায় ২৮ শতাংশ।
প্রশ্ন ১১। মার্কিন আধিপত্য কেন এবং কখন শুরু হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সোভিয়েত গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মার্কিন আধিপত্য শুরু হয়েছিল।
প্রশ্ন ১২। কি প্রক্রিয়ায় মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা হ’ল—
(ক) সামরিক প্রক্রিয়া।
(খ) অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। এবং
(গ) সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন ১৩। PPP বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ PPP বলতে Purchasing Power Parity বোঝায়, যা একটি রাষ্ট্রের মুদ্রার পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় করবার বাস্তব ক্ষমতার সূচক।
প্রশ্ন ১৪। মার্কিন আধিপত্যের প্রতিবন্ধকতাসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ মার্কিন আধিপত্যের প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) নিজস্ব রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো।
(খ) আভ্যন্তরীণ প্রকৃতির অর্থাৎ মুক্ত সমাজব্যবস্থা।
(গ) NATO শক্তিগোষ্ঠী।
প্রশ্ন ১৫। আল-কায়দা কি?
উত্তরঃ আল-কায়দা হল মুসলিম মৌলবাদীদের একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। আল-কায়দা ১৯৯৮ সালে নাইরোবি, কেনিয়া, তানজানিয়া এবং দার-এস-সালামে আমেরিকার দূতাবাসে বোমাবাজির জন্য দায়ী ছিল। ৯/১১ ঘটনায়ও আল-কায়দা জড়িত ছিল।
প্রশ্ন ১৬। সহজ ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্য কি?
উত্তরঃ সহজ ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামাজিক, রাজনৈতিকও আদর্শগত ক্ষেত্রে শ্রেণীর প্রাধান্য। বিশ্ব রাজনীতির এইসব ক্ষেত্রে আধিপত্যের এইদিক অনুযায়ী প্রাধান্যকারী শক্তি কেবল মাত্র সামরিক ক্ষমতা নয়, আদর্শকেও অন্যান্য শক্তির আচরণ প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ১৭। অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম কি?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ‘ইরাকী মুক্তির সংগ্রাম’ এই গূঢ় নামে ইরাকে হামলা শুরু করে। রাষ্ট্রসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ইরাক অভিযানে অনুমোদন না দিলে চল্লিশটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘ইচ্ছুকদের সম্মিলিত’ যুদ্ধজোটে যোগ দেয় এবং ইরাকে অভিযান চালায়। এটাই অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম নামে খ্যাত। এর ফলে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে এবং প্রায় ৫০,০০০ লোকের প্রাণহানি ঘটে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৮। রাজনৈতিক প্রচারাভিযান কৌশল বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রচারাভিযান কৌশল অনুযায়ী আমেরিকার আধিপত্যের বিরোধিতা না করে আর্থিক বিকাশের মাধ্যমে মার্কিন আধিপত্য প্রতিহত করা সম্ভব। এর জন্য উচ্চ আর্থিক বিকাশ বর্ধিত বাণিজ্য, উন্নত প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের প্রয়োজন।
প্রশ্ন ১৯। তিন প্রকার একাধিপত্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ তিন প্রকার একাধিপত্য হল—
(ক) হার্ড পাওয়ার একাধিপত্য।
(খ) সফ্ট পাওয়ার একাধিপত্য। এবং
(গ) স্ট্রাকচারাল পাওয়ার একাধিপত্য।
প্রশ্ন ২০। আমেরিকার একাধিপত্যের সূচনা কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের আকস্মিক অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে একটি নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে অপর মহাশক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক দৃশ্যপট থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার একাধিপত্যের সূচনা হয়।
প্রশ্ন ২১। বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার একাধিপত্যের যে-কোন দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার একাধিপত্যের কারণ দুটি নিম্নরূপ:
(ক) সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি ও শীতল যুদ্ধের অবসান।
(খ) জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রভাব স্তিমিত।
প্রশ্ন ২২। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের দুটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণ দুটি নিম্নরূপ:
(ক) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কুয়েত বৃটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। গ্রেট ব্রিটেন ইরাক ও কুয়েত উভয়কেই দুটি পৃথক রাষ্ট্র বলে গণ্য করত। কিন্তু ইরাক কখনও কুয়েতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নি।
(খ) ১৯৮০-র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে কুয়েত ইরাকের মিত্র ছিল। কিন্তু কুয়েত ইরাক সংলগ্ন তৈলক্ষেত্র থেকে গোপনে তেল উত্তোলন করছে বলে ইরাক অভিযোগ করে। ইরাক যুদ্ধকালে কুয়েত থেকে প্রাপ্ত ঋণ বাতিল করতে চায়। ফলে দুটি দেশের মধ্যে ১৯৯১ সালে যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রশ্ন ২৩। Operation Infinite Reach বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালে নাইরোবি, কেনিয়া এবং দার-এস-সালামের মার্কিন দূতাবাসে আলকায়দা সন্ত্রাসবাদীরা বোমাবাজি করে। তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন Operation Infinite Reach-এর আদেশ দিলেন। ফলে সুদান ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে মার্কিন বাহিনী আক্রমণ চালায়।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গুয়ান্টানামো বে কী? এর তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ গুয়ান্টানামো বে কিউবার একটি নৌঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ সন্ত্রাসবাদী হানার প্রত্যুত্তর ছিল অতি দ্রুত ও নিষ্ঠুর। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সমগ্র পৃথিবীতে বহু মানুষ আটক ও দেশান্তরিত করে জেলে আটক করে রেখেছিল। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বন্দীকে কিউবার গুয়ান্টানামো নৌঘাঁটিতে রেখেছিল। এই বন্দীগণ অতি দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় ছিল।
এই অঞ্চলে বন্দীগণ আন্তর্জাতিক আইন থেকে কোনপ্রকার রক্ষণাবেক্ষণ লাভ করে নি। নিজ অথবা আমেরিকার আইনি ব্যবস্থা থেকেও কোনো প্রকার সহায়তা পায়নি। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিগণকেও তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয় নি।
প্রশ্ন ২। আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করেছিল কেন?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ইরাকী মুক্তি সংগ্রাম’ এই গূঢ় নামে ইরাকে হামলা শুরু করে। চল্লিশটি অন্যান্য দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘ইচ্ছুকদের সম্মিলিত যুদ্ধ জোট’ (Coalition of the Willing)-এ যোগদান করে যখন রাষ্ট্রসংঘ এই আক্রমণ অনুমোদন করতে অস্বীকার করে। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল গণসংহারের জন্য অস্ত্র নির্মাণ হতে ইরাককে নিরস্ত্র করা। কিন্তু যখন এই ধরনের কোন অস্ত্রের প্রমাণ ইরাকের মাটিতে পাওয়া যায় নি তখন উপলব্ধি করা যায় যে আক্রমণের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য। এই উদ্দেশ্যসমূহ হল ইরাকী তৈলক্ষেত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন হবে এবং তাদের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
প্রশ্ন ৩। আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নানা পর্যায় অতিক্রম করেছে। দুটি দেশই বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছে।
তাদের মধ্যে সম্পর্কের সহমত ও মতানৈক্যের বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:
(ক) গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি: ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের উপর গভীর আস্থা প্রকাশ করে। উভয়ই বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। উভয় দেশই মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায় ও শান্তিতে বিশ্বাসী।
(খ) সন্ত্রাসবাদ বিরোধী: উভয় দেশই বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী। ভারত সর্বদাই সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবাদ দমন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ৯/১১ ঘটনার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্রিয়।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলি দুইটি দেশের মধ্যে মতানৈক্যের কারণ:
(ক) বৈদেশিক নীতির বিরোধিতা: ভারতবর্ষ বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা জোটে বিশ্বাসী এবং এই উদ্দেশ্যে সামরিক শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসী। কিন্তু ভারতবর্ষ সামরিক জোট অথবা নিরাপত্তা জোট থেকে দূরে থাকে।
(খ) নিরস্ত্রীকরণ: ভারতবর্ষ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি নয়। কিন্তু আমেরিকা সর্বদাই ভারতকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চাপ দিচ্ছে।
প্রশ্ন ৪। আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দাও।
উত্তরঃ আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরামর্শসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ব্যান্ডওয়াগন পদ্ধতি: এই পদ্ধতি অনুসারে প্রতিপত্তিশালী দেশের বিরুদ্ধাচরণ করার পরিবর্তে এমন প্রকার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে রাষ্ট্রসমূহ এই প্রতিপত্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধাসমূহ আদায় করে নিতে পারে।
(খ) গোপনীয়তা বা Hide পদ্ধতি: এর অর্থ হল ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হতে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এটা প্রত্যক্ষ করা যায় যে চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় সংঘ নিজেকে আমেরিকার দৃষ্টি থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতার্থে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের পক্ষে আমেরিকা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। কিন্তু চীন, রাশিয়া বা ভারতের মতো বিশাল দেশের পক্ষে দীর্ঘদিন দূরে থাকা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৫। সমসাময়িককালে আমেরিকার আধিপত্য বলতে কি বোঝ? আমেরিকার আধিপত্যের যে-কোন দুটি প্রত্যাহ্বান উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করাকে আধিপত্য বলে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এককেন্দ্রীয় শক্তির ব্যাখ্যার জন্য ‘আধিপত্য’ শব্দটিই অধিক উপযুক্ত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা একক শক্তিতে পরিণত হয়; ফলে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে তার আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকল না। সমসাময়িক – কালে আমেরিকার আধিপত্যই বর্তমান।
প্রত্যাহ্বানসমূহ: আমেরিকার সাংবিধানিক বিচ্যুতি হয়তো আমেরিকার ক্ষমতার প্রত্যাহ্বানের জন্য দায়ী হতে পারে। সংবিধান আমেরিকার কার্যপালিকা, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে পৃথক করে দেওয়ার সঙ্গে একটি বিভাগের উপর অন্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমেরিকার কার্যপালিকা দ্বারা গ্রহণ করা বিভিন্ন সামরিক নীতি ও নিয়ন্ত্রণহীন সামরিক শক্তি প্রয়োগের উপর আইন বিভাগ বাধা আরোপ করতে পারে।
সম্ভবত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাহ্বান হল ন্যাটো (NATO)। যেহেতু বাজার অর্থনীতিকে যে সকল গণতন্ত্র সজীব রেখেছে সে সকল রাষ্ট্রের সাথে মিত্রবন্ধনে আবদ্ধ থাকতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতিশয় আগ্রহী। সুতরাং এটা সম্ভবপর যে ন্যাটো (NATO) আমেরিকার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ মার্কিন আধিপত্যের স্পর্ধাকে নমনীয় রাখতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন ৬। বিশ্বপল্লীতে রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রই বর্তমানে একটি ‘বিশ্বপল্লী’ (global village)-তে বাস করে। এই বিশ্ব বসতিতে গ্রামের মোড়লের (Leadman) সব রাষ্ট্রই প্রতিবেশী। মোড়লের ব্যবহার যদি দিনে দিনে অসহনীয় হয়ে ওঠে তাদের উপায় থাকছে না পৃথিবীব্যাপী এই বসতি ছেড়ে যাওয়ার, কেননা এই একমাত্র বিশ্বকেই তারা চেনে, জানে এবং এটি একমাত্র বসতি তাদের কাছে। এ অবস্থায় প্রতিরোধই একমাত্র উপায় যা তারা বেছে নিতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে প্রতিরোধ ছাড়া অন্য আর কোন উপায় তাদের হাতে নেই।
প্রশ্ন ৭। জেফারসন বিল ক্লিনটনের শাসনকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আলোচনা কর।
উত্তরঃ ১৯৯২-এর পর বিল ক্লিনটন ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সময়ে মার্কিন আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৯ সালে আলবেনীয় অধ্যুষিত কসোভ প্রদেশের বিরুদ্ধে যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ে। ক্লিনটনের মেয়াদকালে মার্কিন সামরিক শক্তি প্রয়োগের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে কেনিয়ার নাইরোবি এবং তানজানিয়ার দার-এস-সালামে। মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ‘অপারেশন ইনফিনিট রীচ’ অভিযান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ফলানোর একটি উদাহরণ।
প্রশ্ন ৮। অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম কি? এর ফলাফল লিপিবদ্ধ কর।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ‘ইরাকী মুক্তির সংগ্রাম’ এই গূঢ় নামে ইরাকে হামলা শুরু করে। রাষ্ট্রসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ইরাক অভিযানে অনুমোদন না দিলে চল্লিশটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘ইচ্ছুকদের সম্মিলিত’ যুদ্ধজোটে যোগ দেয় এবং ইরাকে অভিযান চালায়। এটাই অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম নামে খ্যাত। এর ফলে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে এবং প্রায় ৫০,০০০ লোকের প্রাণহানি ঘটে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ইরাকী মুক্তি সংগ্রাম’ এই গূঢ় নামে ইরাকে হামলা শুরু করে। চল্লিশটি অন্যান্য দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘ইচ্ছুকদের সম্মিলিত যুদ্ধ জোট’ (Coalition of the Willing)-এ যোগদান করে যখন রাষ্ট্রসংঘ এই আক্রমণ অনুমোদন করতে অস্বীকার করে। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল গণসংহারের জন্য অস্ত্র নির্মাণ হতে ইরাককে নিরস্ত্র করা। কিন্তু যখন এই ধরনের কোন অস্ত্রের প্রমাণ ইরাকের মাটিতে পাওয়া যায় নি তখন উপলব্ধি করা যায় যে আক্রমণের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য। এই উদ্দেশ্যসমূহ হল ইরাকী তৈলক্ষেত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন হবে এবং তাদের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
প্রশ্ন ৯। যে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে নির্ণায়ক তার উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নানা পর্যায় অতিক্রম করেছে। দুটি দেশই বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছে।
তাদের মধ্যে সম্পর্কের সহমত ও মতানৈক্যের বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:
(ক) গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি: ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের উপর গভীর আস্থা প্রকাশ করে। উভয়ই বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। উভয় দেশই মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায় ও শান্তিতে বিশ্বাসী।
(খ) সন্ত্রাসবাদ বিরোধী: উভয় দেশই বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী। ভারত সর্বদাই সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবাদ দমন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ৯/১১ ঘটনার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্রিয়।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলি দুইটি দেশের মধ্যে মতানৈক্যের কারণ:
(ক) বৈদেশিক নীতির বিরোধিতা: ভারতবর্ষ বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা জোটে বিশ্বাসী এবং এই উদ্দেশ্যে সামরিক শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসী। কিন্তু ভারতবর্ষ সামরিক জোট অথবা নিরাপত্তা জোট থেকে দূরে থাকে।
(খ) নিরস্ত্রীকরণ: ভারতবর্ষ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি নয়। কিন্তু আমেরিকা সর্বদাই ভারতকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চাপ দিচ্ছে।
প্রশ্ন ১০। সার্বজনীন পণ্য বলতে কি বোঝ? গোলকীয় সার্বজনীন পণ্যের একটি তালিকা প্রস্তুত কর।
উত্তরঃ সার্বজনীন পণ্য বা দ্রব্য বলতে সেই সকল পণ্য বা দ্রব্যকে বোঝায় যা উপভোগ করার পর সেই সকল পণ্য বা দ্রব্যের পরিমাণ হ্রাস পায় না; যেমন বিশুদ্ধ বায়ু, সমুদ্রপথ ইত্যাদি।
গোলকীয় সার্বজনীন পণ্যের তালিকা নিম্নে বর্ণনা করা হল:
(ক) বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষিতে সার্বজনীন পণ্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল অবাধ বাণিজ্যের জন্য বাণিজ্য জাহাজগুলির ব্যবহারের উপযোগী সমুদ্রপথ।
(খ) বিশ্বময় সার্বজনীন পণ্যের আরও একটি উদাহরণ হল ইন্টারনেট। প্রত্যেক বিশ্ববাসী ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারে এবং এতে কারও কোন প্রকার ক্ষতিসাধন হয় না।
প্রশ্ন ১১। ৯/১১ ঘটনা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবাদীগণ নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র (World Trade Centre) এবং ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ (Pentagon)-এ ছিনতাই করা বিমান দিয়ে আঘাত করে। মোট ১৯ জন সন্ত্রাসবাদী চারটি মার্কিন বাণিজ্য বিমানের নিয়ন্ত্রণ দখল করে। দুটি বিমান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের বিশাল অট্টালিকা দুটিতে আঘাত হানলে দুটি অট্টালিকাই ভস্মীভূত হয়। তৃতীয় বিমানটি ‘পেন্টাগন’ ভবনে আঘাত হানে। চতুর্থ বিমানটিকে ধ্বংস করা হয়। এই ঘটনাকে ৯/১১ বা ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা বলে। এর নেতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন।
প্রশ্ন ১২। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণসমূহ কি কি ছিল?
উত্তরঃ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধকে পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ বলেও অভিহিত করা হয়। রাষ্ট্রসংঘের অধীন ৩৪টি দেশের ৬,৬০,০০০ সেনাদলের একটা সম্মিলিত জোট আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন এই যুদ্ধকে ‘সকল যুদ্ধের মাতৃস্বরূপ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই আক্রমণকে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৯শে নভেম্বর রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরাককে ১৯৯৯ সালের ১৫ই জানুয়ারির ভিতর ইরাকের সেনাবাহিনিকে কুয়েত ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। এই সময়সীমার মধ্যে ইরাকের সেনা যাতে কুয়েত ত্যাগ করে সেই উদ্দেশ্যে ইরাকের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু হয়। ইরাক কুয়েত ত্যাগ করতে অস্বীকার করলে ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হয়।
প্রশ্ন ১৩। ক্লিনটন যুগের মার্কিন সামরিক যুদ্ধের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বিল ক্লিনটন ১৯৯২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুটি পর্যায়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে কার্যনির্বাহ করেছিলেন। তাঁর সময়ে বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তে ঘরোয়া রাজনীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, যদিও আমেরিকার সামরিক শক্তি প্রয়োগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল।
এই প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালের উল্লেখযোগ্য কসভো প্রদেশের বহু পূর্বে বসবাস করা আলবেরিয়ান মানুষজনের উপর যুগোশ্লাভিয়া কর্তৃক গৃহীত কঠোর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমেরিকা গর্জন করে উঠেছিল। একে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের দেশসমূহের বিমানবাহিনী প্রায় দু মাস ধরে যুগোশ্লাভিয়ার উপর অবিরত বোমা বর্ষণ করে। এর ফলে স্লোবোডান মিলোসেভিক সরকারের পতন ঘটে এবং ন্যাটো কোসোভোতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সামরিক অভিযান হল ইসলাম সন্ত্রাসবাদে অণুপ্রাণিত আল-কায়দা যারা কেনিয়ার নাইরাবি এবং তানজানিয়ার দার-এস-সালামে আমেরিকার দূতাবাসে বোমা বর্ষণ করেছিল তাদের আফগানিস্তানে অবস্থিত ঘাঁটিগুলির উপর নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নির্দেশ প্রদান। এই অভিযানকে Operation Infinite Reach বলা হয়। এই অভিযানে আমেরিকা রাষ্ট্রসংঘের অনুমতি বা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ভ্রূক্ষেপ পর্যন্ত করেনি। এমনকি এমন অভিযোগও উঠেছিল যে সন্ত্রাসবাদীদের যাতায়াত বন্ধ করতে আমেরিকা অসামরিক নিরীহ জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বোমা বর্ষণ করেছিল।
প্রশ্ন ১৪। ‘কঠোর ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্য’ কি?
অথবা,
‘কঠোর ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্য’-এর বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ যখন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার একটিমাত্র শক্তিকেন্দ্র থাকে তখন তাকে আধিপত্য বলে। কঠোর ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামরিক ক্ষমতার আধিপত্য। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তিতে পরিণত হয় এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে বিশ্বে সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের প্রধান কারণ হল সামরিক ক্ষমতার অত্যধিক আধিপত্য। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আধিপত্য চূড়ান্ত। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী আমেরিকার সমকক্ষ নয়। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণই প্রকাশ করে যে তার সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য। এর ফলে কখনও কখনও আন্তর্জাতিক আইন-কানুনকেও তারা তোয়াক্কা করে না।
প্রশ্ন ১৫। বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার অবস্থান আলোচনা কর।
উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব বিস্তারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহরদুটিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বল প্রয়োগের দ্বারা আধিপত্য বিস্তারের একটি অমানবিক দৃষ্টান্ত বললে ভুল হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্ব দুটি শক্তিগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক গোষ্ঠী এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে অপর গোষ্ঠী। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তিতে পরিণত হয় এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে বিশ্বে সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে। সামরিক শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে আরম্ভ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের সহায়ক প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন করে তোলে এবং বাধাহীন প্রভাব বিস্তার করে।
(খ) পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের উদার গণতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার ও আধিপত্যের পথকে সুগম করে দেয়।
(গ) আমেরিকার আগ্রাসন নীতির প্রতি রাষ্ট্রসংঘের দুর্বল মনোভাব যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার আধিপত্য স্থাপনে সহায়ক হয়েছে।
(ঘ) সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে রাষ্ট্রসংঘের অনুমোদন বা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে আমেরিকা বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করে। এইসব আক্রমণের দ্বারা বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার একাধিপত্য বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন ১৬। কোন প্রক্রিয়ায় আমেরিকান আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আলোচনা কর।
উত্তরঃ জোসেফ ফ্র্যাংকল-এর মতে, অন্যের মন ও কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে কাঙ্খিত ফললাভের সামর্থ্যই হল ক্ষমতা বা শক্তি। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতা বলতে জাতীয় ক্ষমতা বা জাতীয় শক্তিকে বোঝায়। ক্ষমতা বা শক্তিকে বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তাগণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করেন। কোন দেশের বিশ্ব রাজনীতিকে প্রভাবিত করার মাত্রা নির্ভর করে তার ভৌগোলিক অবস্থানের উপর। তাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য স্থাপনের প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করে তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।
বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার একাধিপত্য বিস্তারের কারণসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হল:
(ক) সুদৃঢ় ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের প্রথম অর্থ হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামরিক ক্ষমতার সম্পর্ক, নকশা ও শক্তি সম্বন্ধীয়। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের প্রধান কারণ হল সামরিক ক্ষমতার অত্যধিক আধিপত্য। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আধিপত্য চূড়ান্ত। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী আমেরিকার সমকক্ষ হতে পারেনি। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণই প্রমাণ করে যে তার সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য।
(খ) কাঠামোগত ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের দ্বিতীয় দিক বা ধারণাটি বিশ্বে পণ্যসামগ্রী যোগানে আমেরিকার ভূমিকার উপর আলোকপাত করে। জনগণের পণ্যসামগ্রী বলতে সেই সকল পণ্যসামগ্রীকে বোঝায় যা কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ হ্রাস না করে ভোগ করতে পারে। সমুদ্রপথ, ইন্টারনেট প্রভৃতি বিশ্ব পণ্যসামগ্রী। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্যে (১৬%), বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে (২৮%) এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
(গ) তীক্ষ্ণ বা সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামাজিক, রাজনৈতিক ও আদর্শগত ক্ষেত্রে শ্রেণীর প্রাধান্য। বিশ্ব রাজনীতির এইসব ক্ষেত্রে আধিপত্যের এই দিক অনুযায়ী প্রাধান্যকারী শক্তি কেবলমাত্র সামরিক ক্ষমতা নয়, আদর্শকেও অন্যান্য শক্তির আচরণ প্রভাবিত করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৭। ‘Loya Jirga’ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে আফগান গোষ্ঠী জার্মানিতে অনুষ্ঠিত তালিবান বৈঠকের বিরোধিতা করে এবং আফগানিস্থানের স্থায়িত্ব ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সহমত হয়। ২০০১ সালের ২২শে ডিসেম্বর কাবুলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ২০০২ সালের জুন মাসে Loya Jirga বা Grand Council অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বতন রাজা জাহির খান এর নেতৃত্বে ছিলেন। গ্র্যান্ড কাউন্সিল বা Loya Jirga মোঃ হামিদ কারজাইকে দুই বছরের জন্য আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।
প্রশ্ন ১৮। ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ বলতে কি বোঝ?
অথবা,
প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ১৯৯০ সালের ২রা আগস্ট ইরাক কুয়েত আক্রমণ করে। সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এর নিন্দা করে এবং শীঘ্রই কুয়েত থেকে ইরাকী বাহিনী সরিয়ে নিতে আদেশ দেয়। রাষ্ট্রসংঘ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কুয়েত থেকে ইরাকী বাহিনী সরানোর অঙ্গীকার করে। মোট ৩৪টি রাষ্ট্রের সম্মিলিত বাহিনীর ৬,৬০,০০০ সেনা ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পরাস্ত করে। রাষ্ট্রসংঘের এই অপারেশন ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ বা ‘প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। প্রভুত্ব অথবা আধিপত্য কত প্রকারের? প্রত্যেকটির উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ব্যক্তি যেভাবে লাভ করতে এবং টিঁকে থাকতে চায় ক্ষমতাগোষ্ঠীও সেইভাবে লাভ করতে এবং ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে চায়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও ঠিক সেইভাবে রাষ্ট্রসমূহ ও রাষ্ট্রসমূহের গোষ্ঠী ক্ষমতা অর্জন ও ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য লাগাতর প্রচেষ্টায় নিমগ্ন থাকে।
এই ক্ষমতা সাধারণত সামরিক আধিপত্য, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রাধান্যতা প্রভৃতি ধরনের হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘আধিপত্য বা দৌরাত্ম্য’ (hegemony)- কে ক্ষমতার কেবলমাত্র একটি কেন্দ্রযুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
একাধিপত্যের বিভিন্ন প্রকার: একাধিপত্য বা hegemony নিম্নলিখিত তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ
(ক) সুদৃঢ় ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের প্রথম অর্থ হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামরিক ক্ষমতার সম্পর্ক, নকশা ও শক্তি সম্বন্ধীয়। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের প্রধান কারণ হল সামরিক ক্ষমতার অত্যধিক আধিপত্য। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আধিপত্য চূড়ান্ত। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী আমেরিকার সমকক্ষ হতে পারেনি। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণই প্রমাণ করে যে তার সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য।
(খ) কাঠামোগত ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের দ্বিতীয় দিক বা ধারণাটি বিশ্বে পণ্যসামগ্রী যোগানে আমেরিকার ভূমিকার উপর আলোকপাত করে। জনগণের পণ্যসামগ্রী বলতে সেই সকল পণ্যসামগ্রীকে বোঝায় যা কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ হ্রাস না করে ভোগ করতে পারে। সমুদ্রপথ, ইন্টারনেট প্রভৃতি বিশ্ব পণ্যসামগ্রী। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্যে (১৬%), বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে (২৮%) এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
(গ) তীক্ষ্ণ বা সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামাজিক, রাজনৈতিক ও আদর্শগত ক্ষেত্রে শ্রেণীর প্রাধান্য। বিশ্ব রাজনীতির এইসব ক্ষেত্রে আধিপত্যের এই দিক অনুযায়ী প্রাধান্যকারী শক্তি কেবলমাত্র সামরিক ক্ষমতা নয়, আদর্শকেও অন্যান্য শক্তির আচরণ প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ২। “মার্কিন আধিপত্যের সর্ববৃহৎ প্রতিবন্ধকতা আধিপত্যের অন্তরেই নিহিত আছে।” আমেরিকার ক্ষমতার তিনটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরায় চিহ্নিত কর।
উত্তরঃ শক্তির ভারসাম্যের যুক্তির নিরিখে আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের শক্তির সমতা স্থাপন আজ প্রধান বিচার্য বিষয়। শক্তির সমতার এই যুক্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইতিহাস বিরাটভাবে সমর্থন করছে। ইতিহাস আরও বলে যে আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়। তার সর্বোত্তম উদাহরণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
আমেরিকার একাধিপত্যের তিনটি প্রধান অন্তরায় নিম্নরূপ:
(ক) আমেরিকার একাধিপত্যের প্রথম অন্তরায় হল আমেরিকার নিজস্ব রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো। সরকারের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন আমেরিকার নির্বিচারে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
(খ) আমেরিকার একাধিপত্যের দ্বিতীয় অন্তরায় হল আভ্যন্তরীণ প্রকৃতির এবং এর মূল কারণ আমেরিকার মুক্ত সমাজব্যবস্থা। এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
(গ) আমেরিকার একাধিপত্যের তৃতীয় এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হল ন্যাটো (NATO)। এই ন্যাটো শক্তিগোষ্ঠী আমেরিকার একাধিপত্য বিস্তারে কিয়দংশে বাধার সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৩। ভারত আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমানকালে দেখা দেওয়া নূতন দিকসমূহের বিষয় উল্লেখ কর।
উত্তরঃ শীতল যুদ্ধের সময় ভারত ছিল বিভাজনের অপর দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে। ঐ বৎসরগুলিতে ভারতের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভারতবর্ষ সহসা ক্রমাগত শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একাকী ও বন্ধুবিহীন হয়ে পড়ল। তখন ভারত আর্থিক উদারীকরণের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ যে বর্তমান সময়ে ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুটি কার্য-কারণ প্রকাশ পেয়েছে। একটি হল প্রযুক্তি পরিধি, অপরটি ইন্দো-মার্কিন অভিবাসী ও অধিবাসীদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে মিলিত ভূমিকা।
এই উপাদান পরস্পর সম্বন্ধীয়; যেমন—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ‘সফট্ওয়্যারের’ মোট রপ্তানির ৬৫ শতাংশের গ্রাহক।
(খ) বোয়িং বিমানের ৩৫ শতাংশ প্রায়োগিক কর্মী ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
(গ) ‘সিলিকন উপত্যকায়’ বর্তমানে ৩,০০,০০০ ভারতীয় কাজ করে।
(ঘ) উচ্চপ্রযুক্তিজাত যে-কোন উদ্যোগের ১৫ শতাংশের প্রারম্ভই আমেরিকাবাসী ভারতীয়দের দ্বারা হয়।
প্রশ্ন ৪। “আমেরিকার কাঠামোগত আধিপত্যের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল শিক্ষাগত সম্মান (Degree) অর্থাৎ MBA।” বিবৃত কর।
উত্তরঃ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন এই বিষয় আমেরিকাই বিশ্বকে শিখিয়েছিল। ব্যবসা পরিচালনার জন্য শিক্ষাগত মাস্টার উপাধি (MBA) যুক্তরাষ্ট্রের গঠনমূলক শক্তির একটি উত্তম উদাহরণ। ব্যবসায় এইরূপ একটি বৃত্তি যা কৌশল/নিপুণতার উপর নির্ভর করে। প্রথম এম.বি.এ. পাঠ্যক্রম ১৯০০ সালে আরম্ভ হয়। পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক বিদ্যালয় হোয়ার্টন পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৮১ সালে স্থাপিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম এম.বি.এ. পাঠ্যক্রম ১৯৫০ সালে আরম্ভ হয়। বর্তমান বিশ্বে এমন দেশ নেই যেখানে MBA পাঠ্যক্রম গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেই। কারণ অধিকাংশ অভিভাবকের মতে ব্যবসায় পারদর্শিতা লাভ করার কারণে তাদের সন্তানের MBA degree অর্জন করা উচিত। এই যে MBA পাঠ্যক্রমের উপর বিশ্বব্যাপী নির্ভরতা, এটাই আমেরিকার কাঠামোগত আধিপত্যের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
প্রশ্ন ৫। মার্কিন আধিপত্যের সাংস্কৃতিক আয়তনের বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে শুধুমাত্র সামরিক অথবা অর্থনৈতিক অর্থে বোঝার চেষ্টা করলে ভুল হবে। এর আদর্শভিত্তি ও সাংস্কৃতিক মাত্রাকে বোঝাও অত্যন্ত জরুরি।
আধিপত্যের সঙ্গে জড়িত তৃতীয় অর্থ হল সম্মতি গঠন করার ক্ষমতা। এর অর্থ হল বিশ্বের অন্য কোন রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক আর বিশেষ বিচারধারা বা আদর্শের ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা।
আমেরিকান সংস্কৃতি বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী সংস্কৃতি। আমেরিকার এই উপাদান বা গুণকে soft-power বলে। এর অর্থ শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে মানুষকে প্রভাবান্বিত করা।
ভালো জীবনযাপনের আগ্রহ বা ব্যক্তিগত সাফল্যের আদর্শ বা বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি মানুষের আকাঙ্খা কার্যকরী করার ইচ্ছা বাস্তবে আমেরিকায় সফল হতে দেখা গিয়েছে এবং এই জীবনযাপনের আদর্শের দ্বারা বিভিন্ন দেশের মানুষকে প্রভাবান্বিত হতে দেখা গিয়েছে।
শীতল যুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার জনগণের বিদেশী অতিথিদের পরা পুরানো Blue Jeans কিনে ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করতে দেখা যায়নি। এমনই অপ্রতিরোধ্য ছিল আমেরিকান সংস্কৃতির আকর্ষণ। শীতল যুদ্ধের পরে সামরিক দিক দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাস্ত করার লক্ষ্যের সঙ্গে soft power-এর মাধ্যমে মানুষের জীবনের মানদণ্ড স্থির করার লক্ষ্যেও আমেরিকা বেশ জোর কদমে পদক্ষেপ করে। যার পরিণতিতে সোভিয়েত রাশিয়ায় ভাঙন সৃষ্টি করে আমেরিকা তার লক্ষ্য পূরণ করে।
প্রশ্ন ৬। ইতিহাস আধিপত্য বা প্রভুত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয়?
উত্তরঃ শক্তির ভারসাম্যর যুক্তির নিরিখে আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। বিশ্বের প্রত্যেক রাষ্ট্রকে তার নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নিজেকে সুনিশ্চিত করতে হবে। কোন এক রাষ্ট্রকে বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীকে এতটা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে দেওয়া যায় না যাতে সে অন্য রাষ্ট্রের কাছে ভীতিপ্রদ হন্তারক হয়ে দাঁড়ায়।
ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে ১৬৪৮ সাল থেকে সার্বভৌম অধিকারধীন রাষ্ট্রীয় সীমাসহ রাষ্ট্রদের উত্থান হয় এবং বিশ্ব রাজনীতিতে মুখ্য চরিত্রের ভূমিকা নির্বাহ করা শুরু করে। ইউরোপ মহাদেশীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৬০ সাল থেকে ১৭১৩ সাল পর্যন্ত ফ্রান্স হচ্ছে অধিপত্যবাদের প্রথম উদাহরণ এবং দ্বিতীয় উদাহরণ ব্রিটেন ১৮৬০ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত তার পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র অভিযান দ্বারা অধিকৃত সাম্রাজ্যের দৌলতে।
ইতিহাস বলে যে, আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়, ১৭১৩ সালে ইংল্যান্ড, হ্যাববুর্গ অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া ফরাসী শক্তির সমবাক্ষতার লড়াইয়ে নামে। ১৮৬০ সালে ভিক্টোরিয়ার সাম্রাজ্যকালের মধ্যগগনে শান্তি ও সন্ধির বাতাবরণে ব্রিটেনকে দেখে সমস্ত জীবনের জন্য সুরক্ষিত মনে হয়েছিল। ১৯১০ সালে এটি স্বচ্ছ হয়ে যায় যে জার্মানী, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশের সমকক্ষ শক্তির দাবীদার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। সুতরাং আজ হতে ২০ বছর পর আরেকটি পরাক্রমী শক্তি অথবা হয়তো সম্মিলিত কিছু বিশ্বশক্তি উঠে আসবে যেমনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে আপেক্ষিকভাবে।
প্রশ্ন ৭। একাধিপত্যের বিভিন্ন চরিত্র আলোচনা কর।
উত্তরঃ ব্যক্তি যেভাবে লাভ করতে এবং টিঁকে থাকতে চায় ক্ষমতাগোষ্ঠীও সেইভাবে লাভ করতে এবং ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে চায়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও ঠিক সেইভাবে রাষ্ট্রসমূহ ও রাষ্ট্রসমূহের গোষ্ঠী ক্ষমতা অর্জন ও ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য লাগাতর প্রচেষ্টায় নিমগ্ন থাকে।
এই ক্ষমতা সাধারণত সামরিক আধিপত্য, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রাধান্যতা প্রভৃতি ধরনের হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘আধিপত্য বা দৌরাত্ম্য’ (hegemony)-কে ক্ষমতার কেবলমাত্র একটি কেন্দ্রযুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
একাধিপত্যের বিভিন্ন প্রকার: একাধিপত্য বা hegemony নিম্নলিখিত তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ
(ক) সুদৃঢ় ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের প্রথম অর্থ হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামরিক ক্ষমতার সম্পর্ক, নকশা ও শক্তি সম্বন্ধীয়। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের প্রধান কারণ হল সামরিক ক্ষমতার অত্যধিক আধিপত্য। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আধিপত্য চূড়ান্ত। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী আমেরিকার সমকক্ষ হতে পারেনি। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণই প্রমাণ করে যে তার সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য।
(খ) কাঠামোগত ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: আধিপত্যের দ্বিতীয় দিক বা ধারণাটি বিশ্বে পণ্যসামগ্রী যোগানে আমেরিকার ভূমিকার উপর আলোকপাত করে। জনগণের পণ্যসামগ্রী বলতে সেই সকল পণ্যসামগ্রীকে বোঝায় যা কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ হ্রাস না করে ভোগ করতে পারে। সমুদ্রপথ, ইন্টারনেট প্রভৃতি বিশ্ব পণ্যসামগ্রী। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্যে (১৬%), বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে (২৮%) এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
(গ) তীক্ষ্ণ বা সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে একাধিপত্য: সূক্ষ্ম ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামাজিক, রাজনৈতিক ও আদর্শগত ক্ষেত্রে শ্রেণীর প্রাধান্য। বিশ্ব রাজনীতির এইসব ক্ষেত্রে আধিপত্যের এই দিক অনুযায়ী প্রাধান্যকারী শক্তি কেবলমাত্র সামরিক ক্ষমতা নয়, আদর্শকেও অন্যান্য শক্তির আচরণ প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ৮। আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে একাধিপত্যর বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ কার্ল ডয়েস্-এর মতে বিরোধে জয়লাভ ও প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার সামর্থ্যকেই ক্ষমতা বলা হয়। অধ্যাপক অ্যালান বলের মতে রাজনৈতিক ক্ষমতা হল এক ধরনের সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে কার্ল ডয়েস মনে করেন ক্ষমতা বা শক্তি হল একটি রাষ্ট্র কর্তৃক অন্যান্য রাষ্ট্রের আচরণকে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য। তাই আমরা দেখেছি যে বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশসমূহ এবং দলবদ্ধ দেশসমূহ অবিরত ক্ষমতা অর্জন ও তা ধরে রাখায় ব্যস্ত আছে। এই ক্ষমতার নানা রূপ; যেমন—সামরিক নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক ফলপ্রসূ ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক উৎকৃষ্টতা।
বিশ্ব রাজনীতি বুঝতে গেলে সারা বিশ্বে ক্ষমতা কিভাবে বণ্টিত হয় তা জানা জরুরি। যেমন শীতল যুদ্ধের সময় (১৯৪৫-৯১) ক্ষমতা রাষ্ট্রসমূহের দুটি গোষ্ঠীর নামে বিভক্ত ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত সংঘ ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র হিসাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিরাজ করছিল। সোভিয়েত সংঘের পতনের পর বিশ্বে একটিমাত্র শক্তি থেকে যায়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় কখনো কখনো কর্তৃত্ব করে একটিমাত্র বৃহৎ শক্তি বা অত্যুচ্চ কোন শক্তি। একে ‘একমেরুকেন্দ্রীক’ ব্যবস্থা বলা হয়। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যখন ক্ষমতার একটিমাত্র শক্তি কেন্দ্র থাকে তখন তাকে একাধিপত্য (hegemony) বলা হয়।
প্রশ্ন ৯। আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ শীতল যুদ্ধের সময় (১৯৪৫-৯১) ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক যতটা নিবিড় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ততটা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। স্বাধীনতার পর ভারত জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপছন্দের তালিকায় স্থান পায়। নানা সময়ে নানা কারণে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়গুলি নিম্নরূপ:
(ক) কাশ্মীর বিষয়ে আমেরিকার পাকিস্তানকে সমর্থন।
(খ) ১৯৫৪ সালে আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি সাক্ষরিত হওয়া।
(গ) ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকারকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে মতভেদ।
(ঘ) ১৯৬১ সালে যখন ভারত পর্তুগীজদের কবল থেকে গোয়া উদ্ধার করে তখন আমেরিকা পর্তুগীজ সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থন করে।
শীতল যুদ্ধের অবসানে বিশ্ব রাজনীতিতে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। বিশ্ব ‘একমেরুকেন্দ্রীক’ ব্যবস্থার সূচনা হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান বিশ্বে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই আমেরিকার সমকক্ষ কোনও শক্তি নেই। তাই ভারতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সাধন ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বলা যেতে পারে। ভারতের এই ক্ষেত্রে ‘ব্যান্ড- ওয়াগন’ কৌশল গ্রহণ করা অনেক বেশি যুক্তিসংগত। ইতিমধ্যেই ১৯৯১ সালে ভারত মুক্ত অর্থনীতি গ্রহণ করায় আমেরিকার সুনজরে আছে। তাছাড়া পূর্বতন NDA সরকার বা UPA সরকার এবং বর্তমান NDA সরকারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অতিনমনীয় মনোভাব ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নেহভাজন করেছে। ২০০৬ সালে ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু শক্তি-সম্বন্ধীয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দু পক্ষই লাভবান হবে। পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনোমোহন সিংহ মনে করেন ভারতের উচিৎ মার্কিন আধিপত্যের কারণে সৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।
সবশেষে বলা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সাধনের জন্য ভারতকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি যাতে না ঘটে তার প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না।
প্রশ্ন ১০। একাধিপত্য কতদিন স্থায়ী হবে? আমরা কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাব?
উত্তরঃ একাধিপত্য কতদিন স্থায়ী হবে? কিভাবে এর থেকে উত্তরণ ঘটবে? বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। তবে এটা পরিষ্কার যে নিকট ভবিষ্যতে এমন কোনও সুযোগ সৃষ্টি হয়ত বা হবে না যার দ্বারা মার্কিন আধিপত্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
প্রথমত, আমাদের এ কথা মেনে নিতে হবে কোন একটি শক্তিও মার্কিন সামরিক শক্তির সমকক্ষ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন সামরিক সম্মেলন তৈরির সম্ভাবনাও ক্ষীণ, কেননা বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি; যেমন—চীন, ভারত, রাশিয়া যারা মার্কিন আধিপত্যকে প্রত্যাখ্যান করার স্পর্ধা রাখে তাদের একে অন্যের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কেউ কেউ ‘ব্যান্ডওয়াগন’ পদ্ধতি সমর্থন করেন। এই পদ্ধতি বা কৌশল হল আধিপত্যকারী শক্তির বিরুদ্ধে না গিয়ে আধিপত্যের কারণে সৃষ্ট সুযোগ; যেমন—অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্যের প্রসার, প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ প্রভৃতির সদ্ব্যবহার করে রাষ্ট্রের উন্নতি সাধন করে নেওয়া অনেক বেশি যুক্তিসংগত।
তৃতীয়ত, চীন, রাশিয়া এবং সমগ্র ইউরোপীয় সমিতি ‘লুকিয়ে পড়া’ কৌশল অবলম্বন করেছে; অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্লার বাইরে থাকার চেষ্টা করছে। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের কাছে এই কৌশল লাভদায়ক হতেও পারে, কিন্তু বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহ; যেমন— চীন, ভারত, রাশিয়া বা বিপুল সংখ্যায় মিলিত রাষ্ট্রসমূহ; যেমন—ইউরোপীয় সমিতির পক্ষে দীর্ঘদিন এভাবে নাগালের বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আধিপত্যবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। কিছু সংখ্যক লোক বিশ্বাস করেন মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আসবে রাষ্ট্র-বহির্ভূত চরিত্র বা শক্তি থেকে। এই প্রতিরোধ আসবে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক আন্দোলন এবং জনমত মেলানো শক্তি থেকে। এর উত্থান হবে হয়ত গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং শিল্পীদের কোন শাখা হতে যারা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করবে জাতীয় সীমার বাইরে এবং মার্কিনীদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে সমালোচনা করার এবং প্রতিহত করার লক্ষ্যে। কারণ এমন এক পরিস্থিতির দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি যে অবস্থায় প্রতিরোধ ছাড়া অন্য আর কোন উপায় আমাদের হাতে নেই।
ইতিহাস বলে যে আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়।
প্রশ্ন ১১। মার্কিন একাধিপত্যের প্রতিবন্ধকতাসমূহ কি কি? আলোচনা কর।
উত্তরঃ শক্তির ভারসাম্যের যুক্তির নিরিখে আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের শক্তির সমতা স্থাপন আজ প্রধান বিচার্য বিষয়। শক্তির সমতার এই যুক্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইতিহাস বিরাটভাবে সমর্থন করছে। ইতিহাস আরও বলে যে আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়। তার সর্বোত্তম উদাহরণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
আমেরিকার একাধিপত্যের তিনটি প্রধান অন্তরায় নিম্নরূপ:
(ক) আমেরিকার একাধিপত্যের প্রথম অন্তরায় হল আমেরিকার নিজস্ব রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো। সরকারের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন আমেরিকার নির্বিচারে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
(খ) আমেরিকার একাধিপত্যের দ্বিতীয় অন্তরায় হল আভ্যন্তরীণ প্রকৃতির এবং এর মূল কারণ আমেরিকার মুক্ত সমাজব্যবস্থা। এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
(গ) আমেরিকার একাধিপত্যের তৃতীয় এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হল ন্যাটো (NATO)। এই ন্যাটো শক্তিগোষ্ঠী আমেরিকার একাধিপত্য বিস্তারে কিয়দংশে বাধার সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ১২। গঠনমূলক শক্তি হিসাবে আধিপত্যের ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আধিপত্যের তিনটি ধারণার মধ্যে একটি হল কঠিন শক্তি হিসাবে আধিপত্য অর্থাৎ সামরিক আধিপত্য। দ্বিতীয় ধারণাটি কাঠামোগত শক্তি হিসাবে আধিপত্য। এই ধারণাটি উৎপন্ন হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে একটি বিশেষ জ্ঞান থেকে। মূল ধারণাটি হল যে মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে একজন অধিকর্তা অথবা প্রভাবী শক্তির প্রয়োজন আছে এটির সৃষ্টি ও অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য। কর্তৃত্ব বা আধিপত্য এই অর্থে প্রতিফলিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বময় সার্বজনীন ভোগ্য দ্রব্য যোগানদারের ভূমিকার মধ্য দিয়ে। সার্বজনীন ভোগ্য দ্রব্য বলতে সেই সকল দ্রব্যকে বোঝায় যা কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ভোগ্য পণ্যের পরিমাণ হ্রাস না করে ভোগ করতে পারে। সমুদ্রপথ, ইন্টারনেট প্রভৃতি সার্বজনীন ভোগ্য দ্রব্য। বর্তমানে আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্যে (১৫%), বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে (২৮%), এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যে ব্রেটন উডস পদ্ধতি চালু করে তা আজও বিশ্ব অর্থনীতির মূল কাঠামো। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মার্কিন আধিপত্যের পরিণাম।
মার্কিন কাঠামোগত শক্তির সর্বোত্তম উদাহরণ হল ‘বাণিজ্য’ প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী (MBA) পঠনরীতি। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই যেখানে MBA পাঠ্যক্রম গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেই। কারণ অধিকাংশ অভিভাবকের মতে ব্যবসায় পারদর্শিতা লাভ করার কারণে তাদের সন্তানের MBA degree লাভ করা উচিত। এই যে MBA পাঠ্যক্রমের উপর বিশ্বব্যাপী নির্ভরতা, এটাই আমেরিকার কাঠামোগত আধিপত্যের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৩। শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার প্রধান কারণসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীনতা অর্জন করে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় যে ভারত পশ্চিমী রাষ্ট্রগোষ্ঠীতে যোগদান করবে। কিন্তু ভারতবর্ষ জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিরোধিতা ও পাকিস্তানের সমর্থন আরম্ভ করে।
নিম্নোক্ত নানা কারণে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়:
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই কাশ্মীর বিষয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন ও ভারতের বিরোধিতা করত।
(খ) ১৯৫৪ সালে আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করতে আরম্ভ করে।
(গ) ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকারকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আমেরিকা চেয়েছিল যে ভারত চীনকে স্বীকৃতি না দেয়, কিন্তু ভারত চীনকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
(ঘ) ১৯৬১ সালে যখন ভারত পর্তুগীজদের কবল থেকে গোয়া উদ্ধার করে তখন আমেরিকা ভারতের বিরোধিতা করে এবং পর্তুগীজ সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থন করে।
(ঙ) রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদে চীনকে ভারতের সমর্থন আমেরিকাকে অসন্তুষ্ট করে।
(চ) জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করায় ভারতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হয়।
(ছ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৫ সাল ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করে।
প্রশ্ন ১৪। অপরিমিত ক্ষমতাশালী হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আলোচনা কর। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিশ্বের জন্য ভালো বলে মনে কর কী? যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমূহের গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা রক্ষা করবার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। ক্ষমতা সামরিক, সামরিক একাধিপত্য, অর্থনৈতিক প্রাধান্য, সাংস্কৃতিক প্রাধান্য প্রভৃতি নানা প্রকারের হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা একাধিপত্য বিস্তার করেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে যখন কেবলমাত্র একটি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থাকে তখন তাকে একাধিপত্য বা hegemony বলে।
কঠোর ক্ষমতা হিসাবে আধিপত্যের অর্থ হল সামরিক ক্ষমতার আধিপত্য। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের প্রধান কারণ হল সামরিক ক্ষমতার অত্যধিক আধিপত্য। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার সামরিক আধিপত্য চূড়ান্ত। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী আমেরিকার সমকক্ষ নয়। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণই প্রকাশ করে যে তার সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত সংঘের অবলুপ্তির থেকে বিশ্বে আমেরিকার প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় এবং তার সামরিক শক্তি প্রয়োগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
এই প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালের উল্লেখযোগ্য কোসোভো প্রদেশের বহু পূর্বে বসবাস করা আলবেরিয়ান মানুষজনের উপর যুগোশ্লাভিয়া কর্তৃক গৃহীত কঠোর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমেরিকা গর্জন করে উঠেছিল। একে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের দেশসমূহের বিমানবাহিনী প্রায় দু মাস ধরে যুগোশ্লাভিয়ার উপর অবিরত বোমা বর্ষণ করে। এর ফলে স্লোভোডাম মিলোসেভিক সরকারের পতন ঘটে এবং ন্যাটো কোসোভোতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সামরিক অভিযান হল ইসলাম সন্ত্রাসবাদে অণুপ্রাণিত আল-কায়দা যারা নাইরোবি, কেনিয়া আর দার-এস-সালামে আমেরিকার দূতাবাসে বোমা বর্ষণ করেছিল তাদের আফগানিস্তানে অবস্থিত ঘাঁটিগুলির উপর নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নির্দেশ প্রদান। এই অভিযানকে Operation Infinite Reach বলা হয়। এই অভিযানে আমেরিকা রাষ্ট্রসংঘের অনুমতি বা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ভ্রূক্ষেপ পর্যন্ত করেনি। এমনকি এমন অভিযোগও উঠেছিল যে সন্ত্রাসবাদীদের যাতায়াত বন্ধ করতে আমেরিকা অসামরিক নিরীহ জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বোমা বর্ষণ করেছিল। তাছাড়া লিবিয়ার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকার সামরিক অভিযান আধিপত্য বিস্তারের নবতম সংযোজন।
আমেরিকা বিশ্বে একাধিপত্য বিস্তারে সর্বদা সক্রিয় এবং এই লক্ষ্যে সে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। সামরিক ক্ষমতায় অপ্রতিরোদ্ধ হওয়ার ফলে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক আইনকেই আমেরিকা তোয়াক্কা করে না এবং কেবলমাত্র কাল্পনিক সন্দেহের উপর ভিত্তি করে কোন দেশে সামরিক অভিযান করে। যার উদাহরণ হল ইরাক। ইরাকে পারমাণবিক বোমা আছে এই সন্দেহে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে, যার পরিণতি প্রায় ৫০,০০০ লোকের প্রাণহানি। তাই বিশ্বে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বর্ধনে সকল রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতাই একমাত্র পন্থা। আমেরিকার ঔদ্ধত্য এবং সর্বগ্রাসী নীতি মানব সভ্যতার জন্য বিপদের কারণ এবং এই আধিপত্য অবশ্যই বিশ্বের জন্য ভালো নয়।
প্রশ্ন ১৫। অর্থনৈতিক মহাশক্তি হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিশদভাবে আলোচনা কর।
উত্তরঃ বর্তমান মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য সর্বত্র এবং অপরিসীম। বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্যে ১৫%, বিশ্ব অর্থনীতির সকল খণ্ডে ২৮% এবং প্রযুক্তির সকল দিকে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যে ব্রিটন উড্স্ পদ্ধতি চালু করে তা আজ বিশ্ব অর্থনীতির মূল কাঠামো। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্যের ফলশ্রুতি।
অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিফলিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বময় সার্বজনীন ভোগ্যদ্রব্য যোগদানের ভূমিকার মধ্য দিয়ে। সার্বজনীন ভোগ্যদ্রব্য বা ভোগ্যপণ্য হল যা কোন একজন উপভোগ করতে পারে অন্যজনের ভোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। উদাহরণ হিসাবে মুক্তবায়ু ও রাস্তাঘাটের কথা উল্লেখ করা যায়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষিতে সার্বজনীন ভোগ্যপণ্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো,সমুদ্রপথ বা সি লেন্স অব্ কমুনিকেশন (Sea Lanes of Communication, SLOC)। ইহা সমুদ্রে চলাচলের নির্দিষ্ট পথ যা সকল দেশের বাণিজ্যিক জাহাজসমূহ ব্যবহার করে থাকে। এই সমুদ্রপথ ব্যতীত অবাধ বিশ্ববাণিজ্য সম্ভব নয়। অধিপতি বা অধিকর্তার নৌশক্তি সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্রিটিশ নৌসেনা বাহিনীর অধোগতির পর থেকেই মার্কিন মহাসাগরীয় নৌবাহিনী এই ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিশ্ব অর্থনীতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে আমেরিকার ভাগ বা অংশ নেই, অর্থাৎ আমেরিকার কোন ভূমিকা নেই। বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে; এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিশাল অংশ অর্থাৎ ২৮ শতাংশের অংশীদার বা ভাগীদার। উল্লেখ্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্য এর কাঠামোগত শক্তি থেকে অনবিচ্ছেদ্য যা বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি বিশেষ আকার দেয়। ব্রিটন উড্স্ পদ্ধতি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চালু করে তা আজও বিশ্ব অর্থনীতির মূল কাঠামো।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। একাধিপত্য সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিবৃতিগুলির কোনটি সঠিক?
(ক) শব্দটি কোন একটি রাষ্ট্রের নেতৃত্বের একাধিপত্য প্রকাশ করে।
(খ) এটা প্রাচীন গ্রীসে এথেন্সের একাধিপত্য প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হত।
(গ) যে দেশের একাধিপত্য থাকত সেই দেশে অপ্রতিরোধ্য সামরিক ক্ষমতা ভোগ করত।
(ঘ) একাধিপত্য মর্যাদা নির্ধারিত। একবার একাধিপত্য হল সর্বদা একাধিপত্য।
উত্তরঃ (গ) যে দেশের একাধিপত্য থাকত সেই দেশ অপ্রতিরোধ্য সামরিক ক্ষমতা ভোগ করত।
প্রশ্ন ২। সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিবৃতিগুলির কোনটি অশুদ্ধ?
(ক) বিশ্ব সরকারের অনুপস্থিতি, যা রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
(খ) বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রভূত খেলোয়াড়।
(গ) রাষ্ট্রসমূহ একে অন্যের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করছে।
(ঘ) যে সকল রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে তারা রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক কঠোর শাস্তিপ্রাপ্ত হয়।
উত্তরঃ (ক) বিশ্ব সরকারের অনুপস্থিতি যা রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
প্রশ্ন ৩৷ Operation Iraqi Freedom সম্পর্কে নিম্নোক্ত কোন্ বিবৃতিটি অশুদ্ধ?
(ক) চল্লিশটিরও অধিক রাষ্ট্র নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী ইরাক আক্রমণের জন্য আমেরিকা পরিচালিত জোটে যোগদান করেছিল।
(খ) ইরাক আক্রমণের প্রদত্ত কারণ হল তাকে মারণাস্ত্র তৈরি থেকে প্রতিহত করা।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের পূর্ব অনুমোদন নিয়ে এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
(ঘ) আমেরিকা পরিচালিত জোট ইরাকী বাহিনী থেকে কোন বড় বাধা পায় নি।
উত্তরঃ (ঘ) আমেরিকা পরিচালিত জোট ইরাকী বাহিনী থেকে কোন বড় বাধা পায় নি।
প্রশ্ন ৪। এই অধ্যায়ে আলোচিত তিন প্রকার একাধিপত্যের প্রত্যেকটির একটি করে উদাহরণ দাও। এই অধ্যায়ে উল্লিখিত উদাহরণ দিও না।
উত্তরঃ এই অধ্যায়ে তিন প্রকার একাধিপত্যের আলোচনা করা হয়েছে।
এইগুলি হল—
(ক) সামরিক শক্তিগত একাধিপত্য।
(খ) অর্থনৈতিক একাধিপত্য। ও
(গ) সাংস্কৃতিক একাধিপত্য।
(ক) ইরাকে আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপ ও একাধিপত্যের দরুন সাধারণ মানুষের জীবন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হয় নি।
(খ) অর্থনৈতিক একাধিপত্য আমেরিকা কর্তৃক সমগ্র বিশ্বে সাধারণ মানুষের পণ্যসামগ্রী সরবরাহের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। বর্তমান বিশ্বে মানুষ ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করে। এই ইন্টারনেট পরিষেবা আমেরিকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন। এটাই অর্থনৈতিক একাধিপত্য।
(গ) অনেক দেশের মানুষ বিশেষত যুব সম্প্রদায় যেসব পোশাক- পরিচ্ছদ পরিধান করে এবং যেসব শুকনো খাবার খায় তা সাংস্কৃতিক একাধিপত্যের উদাহরণ। এই সকলের অধিকাংশ মূলত আমেরিকাভিত্তিক। মানুষ টিভি প্রোগ্রাম ও ছায়াছবি দেখে—তাও আমেরিকার তৈরি।
প্রশ্ন ৫। মিলিয়ে লেখ:
(a) অপারেশন ইনফিনিট রিচ – (i) আলকায়েদা ও তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
(b) অপারেশন এন্ডিয়রিং ফ্রিডম – (ii) ইচ্ছুকদের সম্মিলিত জোট।
(c) অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম – (iii) সুদানে ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থা।
(d) অপারেশন ইরাকী ফ্রীডম – (iv) প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ।
উত্তরঃ (a) অপারেশন ইনফিনিট রিচ – (iii) সুদানে ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থা।
(b) অপারেশন এন্ডিয়রিং ফ্রিডম – (i) আলকায়েদা ও তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
(c) অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম – (iv) প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ।
(d) অপারেশন ইরাকী ফ্রীডম – (ii) ইচ্ছুকদের সম্মিলিত জোট।
প্রশ্ন ৬। “যদি বৃহৎ এবং সম্পদশালী রাষ্ট্রসমূহ মার্কিন আধিপত্যকে প্রতিহত করতে না পারে, তবে ক্ষুদ্রতম এবং দুর্বল, রাষ্ট্রবহির্ভূত চরিত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এ ধারণা অবাস্তব।” প্রস্তাবনাটি বিবেচনা কর এবং তোমার মতামত দাও।
উত্তরঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধারণা অবাস্তব বলে মনে হতে পারে কিন্তু এরকম কিছু ভবিষ্যতে ঘটবে না এমনটি হলপ করে বলা যাবে না।
আমরা জানি যে একটি রাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, কিন্তু একজন ব্যক্তির সেই বাধ্যবাধকতা নেই। একজন ব্যক্তি তার উন্নত চিন্তাধারা দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে। ইতিহাসে এই ধরনের অনেক ব্যক্তির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ শান্তিপ্রিয়। আর অভিজ্ঞতা মানুষকে শিখিয়েছে যে যুদ্ধ কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতার সম্বন্ধে বৃহৎ বা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র সকলেরই ধারণা আছে। তাই মার্কিন আধিপত্যকে প্রতিহত করার জন্য সামরিক অভিযানে কোন রাষ্ট্রই সম্মত হবে না। অর্থনৈতিক আধিপত্যের ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিরোদ্ধ। এর সবচেয়ে বড় কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার লেনদেনের প্রধান মাধ্যম। মার্কিন ডলারের গ্রহণযোগ্যতা মার্কিন অর্থনীতিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য শুধুমাত্র সামরিক বা অর্থনৈতিক নয়, এই আধিপত্য ‘সম্মতি নির্মাণ’ করার ক্ষমতাও বটে, যাকে ‘কোমল শক্তি’ বলে। এই পদ্ধতির মূল কথা হল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বিশেষত ভাবাদর্শের ক্ষেত্রে শ্রেণী কর্তৃত্ব অর্জন করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুকৌশলে তার সংস্কৃতি প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করা সম্ভব হতে পারে। সমস্ত বিশ্বে মার্কিন আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে অন্যতম এক পন্থা। একটি রাষ্ট্রের শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হল জনগণ আর বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণের হাতে এই ক্ষমতা থাকে যে সরকারের নীতি প্রণয়নে প্রভাব ফেলতে পারে অথবা নিজের পছন্দের সরকার চয়ন করতে পারে। অতএব বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার বিপ্লব ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে প্রভাবিত করা যেতেই পারে। তারা এমন সরকার চয়ন করবে যে ‘বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সামগ্রিক উন্নয়ন’-এর মতাদর্শকে সম্মান জানাবে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কেবলমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই মানব কল্যাণ সম্ভব হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার এই লড়াই কোন বৃহৎ বা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র করতে পারবে না এটা সম্ভব নয়। কিন্তু মানবাধিকার কর্মী বা সংস্থা, নাট্যকর্মী, সমাজকর্মী প্রভৃতির দ্বারা এই লড়াই করা অবশ্য সম্ভব; হয়ত-বা আরও আয়েশা পা হারাবে বা আরও কার্লো জিয়োলানি শহিদ হবে, কিন্তু জয় নিশ্চয়ই আসবে।
ইতিহাস বলে যে আধিপত্যবাদ তার শীর্ষ সীমায় ভয়ানক বা দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি চিরন্তন নয়। বরঞ্চ উল্টোভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্য ধীরে ধীরে অধিপতির বা আধিপত্যকারীর আপেক্ষিক ক্ষমতা খর্ব করে দেয়।
We Hope the given দ্বাদশ শ্ৰেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন উত্তর will help you. If you Have any Regarding, Class 12 Political Science Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.
Hi! I’m Ankit Roy, a full time blogger, digital marketer and Founder of Roy Library. I shall provide you all kinds of study materials, including Notes, Suggestions, Biographies and everything you need.