Class 12 Political Science Chapter 14 কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা 

Join Roy Library Telegram Groups

Class 12 Political Science Chapter 14 কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা, AHSEC Class 12 Bengali Medium Students will find the solutions very useful for exam preparation. Class 12 Political Science Chapter 14 কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা The experts of Roy Library provide solutions for every textbook question to help students understand and learn the language quickly. Solutions are free to use and easily accessible. Class 12 Political Science Chapter 14 কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা Bengali Medium Solutions by Roy Library helps students understand the literature lessons in the textbook. Assam AHSEC Board Class 12 Political Science Question Answer in Bengali The sole purpose of the solutions is to assist students in learning the language easily.

Class 12 Political Science Chapter 14 কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা

HS 2nd Year Political Science Notes in Bengali, Solution gives you a better knowledge of all the chapters. AHSEC Class 12 Political Science Solution in Bengali he experts have made attempts to make the solutions interesting, and students understand the concepts quickly. Class 12 Political Science in Bengali Suggestions, will be able to solve all the doubts of the students. Class XII Political Science Question Answer in Bengali provided are as per the Latest Curriculum and covers all the questions from the NCERT/AHSEC Class 12 Political Science Textbooks Solution are present on Roy Library’s website in a systematic order.

কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা 

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতবর্ষে কোন্ বছরকে ‘ভয়ংকর দশক’ বলা হয়?

উত্তরঃ ১৯৬০-এর দশককে।

প্রশ্ন ২। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কোন্ রাজ্যের ছিলেন?

উত্তরঃ উত্তর প্রদেশ।

প্রশ্ন ৩। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর উত্তরাধিকারী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।

প্রশ্ন ৪। কোন্ সালকে ভারতের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ইতিহাসের ঘটনাবহমান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালকে।

প্রশ্ন ৫। DMK-র সম্পূর্ণ নাম কি?

উত্তরঃ Dravida Munnetra Kazhagam

প্রশ্ন ৬। ভারতে কোয়ালিশন ব্যবস্থার শুরু কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

প্রশ্ন ৭। কোন্ বিধায়ককে ‘আয়ারাম গয়ারাম’ বলা হয়েছিল?

উত্তরঃ গয়ালালকে।

প্রশ্ন ৮। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

প্রশ্ন ৯। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কয়টি আসন লাভ করেছিল?

উত্তরঃ ২৮৩টি আসন।

প্রশ্ন ১০। দলত্যাগের অর্থ কি?

উত্তরঃ রাজনৈতিক দলের নেতাগণ একটি দল ত্যাগ করে অন্য একটি দলে যোগদান করা বা নূতন দল গঠন করাকে দলত্যাগ বলা হয়।

প্রশ্ন ১১। সিন্ডিকেট বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ সিন্ডিকেটের অর্থ হল শক্তিশালী ও প্রভাবশালী নেতাদের গোষ্ঠী। দলীয় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে রাখা কংগ্রেস নেতার আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠীকে সিন্ডিকেট বলা হয়। 

প্রশ্ন ১২। SVD-র সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ Sangjukta Vidayani Dal.

প্রশ্ন ১৩। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু কখন পরলোকগমন করেন?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে।

প্রশ্ন ১৪। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে লেখ:

(ক) লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের (প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয়) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

উত্তরঃ দ্বিতীয়।

(খ) বিখ্যাত শ্লোগান ‘জয় জোয়ান জয় কিষাণ’ বলেছিলেন (ইন্দিরা গান্ধী/মোরারজি দেশাই/লালবাহাদুর শাস্ত্রী)।

উত্তরঃ লালবাহাদুর শাস্ত্রী।

(গ) কংগ্রেস সিন্ডিকেটকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (কপূরী ঠাকুর/ কে. কামরাজ/এস. নিজলিঙ্গাপ্পা)।

উত্তরঃ কে. কামরাজ।

(ঘ) ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল (১৯৬৭/১৯৭৭) সালে।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

(ঙ) ডি.এম.কে. ভারতের (উত্তরপ্রদেশের/তামিলনাড়ুর/ মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত।

উত্তরঃ তামিলনাড়ু।

(চ) কোয়ালিশন সরকারের যুগ আরম্ভ হয়েছিল (১৯৭১/ ১৯৮৯/ ১৯৬৯/ ১৯৬৭) সালে।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

(ছ) সিন্ডিকেটের নেতা ছিলেন (কে. কামরাজ/এস. কে. পাতিল/ এন. সঞ্জীব রেড্ডি/এদের সবাই)।

উত্তরঃ কে, কামরাজ।

(জ) ইন্দিরা হটাও’ স্লোগানটি দিয়েছিলেন—(কংগ্রেস/ কমিউনিস্ট/ অ-কমিউনিস্ট ও অ-কংগ্রেসী মহাজোট)।

উত্তরঃ অ-কমিউনিস্ট ও অ-কংগ্রেসী মহাজোট।

প্রশ্ন ১৫। ১৯৬০-এর দশক কে কেন বিপজ্জনক দশক আখ্যা দেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ ষাট-এর দশকে বিপজ্জনক দশক আখ্যা দেওয়া হয়েছিল কারণ এই দশকে ভারত দারিদ্র, আর্থিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিক বৈষম্য চীনের আক্রমণ ভারত-পাক যুদ্ধ প্রভৃতি নানাপ্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৬। মোর্চা সরকারের যুগ কখন আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

প্রশ্ন ১৭। কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাপক কে?

উত্তরঃ রাম মনোহর লোহিয়া।

প্রশ্ন ১৮। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ লালবাহাদুর শাস্ত্রী।

প্রশ্ন ১৯। ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির একটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ।

প্রশ্ন ২০। ১৯৬৭ সালে লোকসভায় কোন্ দল মুখ্য বিরোধী দল ছিল?

উত্তরঃ স্বতন্ত্র পার্টি।

প্রশ্ন ২১। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।

প্রশ্ন ২২। ১৯৭১ সালের মহামোর্চা সম্পর্কে নীচের দেওয়া কোন্ তথ্যটি শুদ্ধ?

(ক) অ-কমিউনিস্ট, অ-কংগ্রেস দল দ্বারা গঠিত।

(খ) একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ও আদর্শমূলক কার্যসূচী ছিল।

(গ) সব অ-কংগ্রেসী দল মিলে গঠন করেছিল।

উত্তরঃ (ক) অ-কমিউনিস্ট, অ-কংগ্রেস দল দ্বারা গঠিত।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৩। ইন্দিরা গান্ধী কখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন?

উত্তরঃ ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি।

প্রশ্ন ২৪। ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী কাকে সমর্থন করেছিলেন?

উত্তরঃ ভি. ভি. গিরি।

প্রশ্ন ২৫। রাজন্য ভাতা কখন বিলোপ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

প্রশ্ন ২৬। ‘গরিবী হঠাও’ ধ্বনি কে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী।

প্রশ্ন ২৮। বিপজ্জনক দশক কাকে বলে?

উত্তরঃ ১৯৬০-এর দশককে।

প্রশ্ন ২৭। ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স’ কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

প্রশ্ন ২৯। ১৯৬৭ -র নির্বাচনে কংগ্রেস লোকসভায় কয়টি আসন পায়?

উত্তরঃ ২৮৩টি।

প্রশ্ন ৩০। ১৯৬৭-র নির্বাচনে জনসংঘ লোকসভায় কয়টি আসন পায়?

উত্তরঃ ৩৫টি।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সংক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রীত্বকালে ভারতের সম্মুখীন হওয়া প্রত্যাহ্বান দুটি কি কি ছিল?

উত্তরঃ লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আমলে সম্মুখীন হওয়া প্রত্যাহ্বান দুটি নিম্নরূপ:

(ক) খরা ও অনাবৃষ্টির ফলে উৎপাদন হ্রাস ও খাদ্যসংকট।

(খ) ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘটিত যুদ্ধ।

প্রশ্ন ২। দ্বিতীয়বারের মতো কখন এবং কেন কংগ্রেস রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে যখন ১০ই জানুয়ারি আকস্মিকভাবে প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর প্রয়াণ হয়।

প্রশ্ন ৩। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বিষয়ে তুমি কি জানো?

উত্তরঃ লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।

প্রশ্ন ৪। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন কেন কংগ্রেসকে নাড়া দিয়েছিল?

উত্তরঃ ভারতে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন ১৯৬৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একইসঙ্গে হয়েছিল। এই নির্বাচনকে বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ বলে অভিহিত করেন। কারণ ১৯৫১ সালের পর এই নির্বাচনে কংগ্রেস সর্বাপেক্ষা কম আসন (২৮৩) লাভ করেছিল। ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রীসভার অর্ধেকের বেশি সদস্য পরাজয় বরণ করেছিলেন। রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রেও কংগ্রেস মাত্র সাতটি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

প্রশ্ন ৫। সংযুক্ত (Coalition) সরকার বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ নির্বাচনে কোন দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করলে দুই বা ততোধিক দল মিলিত হয়ে যে সরকার গঠন করে তাকে সংযুক্ত সরকার বা কোয়ালিশন সরকার বলে।

প্রশ্ন ৬। নিচের স্লোগান দুটির জন্য পরিচিত দুজন নেতার নাম লেখ।

(ক) ‘জয় জোয়ান, জয় কিষাণ’। এবং 

(খ) ‘‘আয়ারাম, গয়ারাম’।

উত্তরঃ (ক) জয় জোয়ান, জয় কিষাণ—লালবাহাদুর শাস্ত্রী।

(খ) আয়ারাম, গয়ারাম—রাও বীরেন্দ্র সিং।

প্রশ্ন ৭। ‘আয়ারাম গয়ারাম’ কথাটি ব্যাখ্যা কর। কথাটি কিভাবে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ আয়া রাম গয়া রাম ভারতের রাজনৈতিক অভিধানের একটি জনপ্রিয় শব্দ। এর অর্থ হল দলীয় টিকিটে নির্বাচিত বিধায়কগণের ঘন ঘন স্বদল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান করা। অর্থাৎ দল পরিবর্তন করা। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর হরিয়ানার গয়ালাল নামক একজন বিধায়ক অত্যন্ত আশ্চর্জনকভাবে সদনের মধ্যে স্বদল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান করে। এই বিধায়ক একপক্ষকালের মধ্যে তিনবার দল পরিবর্তন করেছিল। প্রথমে কংগ্রেস হইতে সংযুক্ত ফ্রন্ট, তারপর কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন এবং ৯ ঘণ্টা পর পুনরায় সংযুক্ত ফ্রন্টে ফিরে আসে। গয়ালাল সংযুক্ত ফ্রন্ট ত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে কংগ্রেসে যোগদান করলে কংগ্রেসের রাও বীরেন্দ্র সিং নামে একজন নেতা চণ্ডীগড়ে সাংবাদিকদের কাছে এসে ঘোষণা করে—“গয়া রাম এখন আয়া রাম।”

প্রশ্ন ৮। ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ শব্দটি ভারতীয় রাজনীতিতে কি তাৎপর্য বহন করে?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে ভারতে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একই সঙ্গে হয়েছিল এবং এই নির্বাচনে কংগ্রেস ১৯৫১ সালের পর লোকসভায় সর্বনিম্ন আসন (২৮৩) লাভ করেছিল এবং বিধানসভায় মাত্র সাতটি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে রাজনৈতিক ভূমিকম্প আখ্যা দিয়েছেন।

প্রশ্ন ৯। অকংগ্রেসবাদ কি?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব হইতেই দেশে নানা প্রকার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। এই রূপ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসমূহ কংগ্রেসের বিরোধিতা আরম্ভ করে। একই সঙ্গে তারা অনুভব করেছিল যে বিরোধী ভোট বিভাজন কংগ্রেসকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে। নীতি ও আদর্শগত প্রভেদ থাকা সত্ত্বেও বিরোধী দলসমূহ কয়েকটি রাজ্যে আসন ভাগাভাগি করিতে সক্ষম হয়েছিল। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে ইন্দিরা গান্ধীর অনভিজ্ঞতা ও দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত কংগ্রেস দলকে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করা সম্ভব। এরূপ চিন্তাধারা ও পরিকল্পনাকে রাম মনোহর লোহিয়া ‘অকংগ্ৰেসবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন ১০। এস.ভি.ডি.-র অবস্থান বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে কোনো একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ার ফলে অকংগ্রেসী দলসমূহ একত্রিত হয়ে সংযুক্ত বিধায়িনী দল গঠন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দলসমূহের মধ্যে আদর্শগত প্রভেদ ছিল। তখনকার ভারতে মোট ১৬টি রাজ্যের মধ্যে ৮টি রাজ্যে এস.ভি.ডি. সরকার গঠন করেছিল।

প্রশ্ন ১১। ১৯৬৭ সালে লোকসভায় কোন দল প্রধান বিরোধী দল ছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে লোকসভায় মোট ৪২টি আসনসহ স্বতন্ত্র পার্টি প্রধান বিরোধী দল ছিল।

প্রশ্ন ১২। বৃহৎ মিত্র জোট (Grand Alliance) কি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় কেবল ভারতের সাম্যবাদী দল ও কংগ্রেসের বাইরে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ দেওয়ার জন্য যে নির্বাচনী মিত্রতা গঠন করেছিল তাকে ‘বৃহৎ মিত্র জোট’ বলা হয়। এর অধীনে থাকা প্রধান দলসমূহ ছিল—সংযুক্ত সমাজবাদী দল, প্রজা সমাজবাদী দল, ভারতীয় জনসংঘ, স্বতন্ত্র দল ও ক্রান্তি দল।

প্রশ্ন ১৩। ‘হুইপ’ কি? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ‘হুইপ’-এর অর্থ হল দলীয় নির্দেশ। অর্থাৎ দলীয় শীর্ষ নেতৃবর্গের দ্বারা সকল সদস্যকে প্রদান করা কঠোর নির্দেশ, যে নির্দেশ দলের প্রত্যেক সদস্যের মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

প্রশ্ন ১৪। মোরারজী দেশাই বিষয়ে কয়েকটি সারি লেখ।

উত্তরঃ ১৯৭৭ সালে গঠিত হওয়া ভারতের প্রথম অকংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই। তিনি একজন গান্ধীবাদী নেতা ছিলেন। বোম্বাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

প্রশ্ন ১৫। শাস্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীত্ব কখন শেষ হয়েছিল? তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৬০ সালের ১০ই জানুয়ারি রাশিয়ার তাসখণ্ডে শাস্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের অবসান ঘটে। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী।

প্রশ্ন ১৬। নীচের স্লোগান দুটির সঙ্গে জড়িত নেতা দুজন কে ছিলেন?

(ক) জয় জোয়ান, জয় কিষাণ।

(খ) গরিবী হটাও।

উত্তরঃ (ক) জয় জোয়ান, জয় কিষাণ — লালবাহাদুর শাস্ত্রী-র স্লোগান।

(খ) গরিবী হটাও — ইন্দিরা গান্ধী-র স্লোগান।

প্রশ্ন ১৭। আয়ারাম, গয়ারাম’ বাক্যাংশটির উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল?

উত্তরঃ আয়া রাম গয়া রাম ভারতের রাজনৈতিক অভিধানের একটি জনপ্রিয় শব্দ। এর অর্থ হল দলীয় টিকিটে নির্বাচিত বিধায়কগণের ঘন ঘন স্বদল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান করা। অর্থাৎ দল পরিবর্তন করা। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর হরিয়ানার গয়ালাল নামক একজন বিধায়ক অত্যন্ত আশ্চর্জনকভাবে সদনের মধ্যে স্বদল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান করে। এই বিধায়ক একপক্ষকালের মধ্যে তিনবার দল পরিবর্তন করেছিল। প্রথমে কংগ্রেস হইতে সংযুক্ত ফ্রন্ট, তারপর কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন এবং ৯ ঘণ্টা পর পুনরায় সংযুক্ত ফ্রন্টে ফিরে আসে। গয়ালাল সংযুক্ত ফ্রন্ট ত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে কংগ্রেসে যোগদান করলে কংগ্রেসের রাও বীরেন্দ্র সিং নামে একজন নেতা চণ্ডীগড়ে সাংবাদিকদের কাছে এসে ঘোষণা করে—“গয়া রাম এখন আয়া রাম।”

প্রশ্ন ১৮। পণ্ডিত নেহেরুর মৃত্যু কখন হয়েছিল এবং তার মৃত্যুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে হয়েছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে পণ্ডিত নেহেরুর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৯। নূতন মোর্চার যুগে SVD-র মর্যাদা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ নূতন SVD সরকার সম্মিলিত সরকার ছিল। তাদের মধ্যে নীতি ও আদর্শগত পার্থক্য ছিল।

প্রশ্ন ২০। পণ্ডিত নেহেরুর মৃত্যুর পর ভারতীয় রাজনীতিতে কি অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল?

উত্তরঃ নেহেরুর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। অবশেষে লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়।

প্রশ্ন ২১। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) ______ সালের নির্বাচনে _______ এবং তাঁর দল পরাজিত হয়েছিল।

উত্তরঃ ১৯৭৭/ ইন্দিরা গান্ধী।

(খ) _______ চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে জনসংঘ লোকসভার________ টি আসন লাভ করেছিল।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালের/ ৩৫।

বিষয়সূচী-পত্ৰ
প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)
অধ্যায় – ১ বিশ্ব রাজনীতিতে শীতল যুদ্ধের যুগ
অধ্যায় – দ্বি-মেরুকরণের অবসান
অধ্যায় – ৩বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব বা আধিপত্য
অধ্যায় – ৪বিকল্প শক্তির উৎস
অধ্যায় – ৫সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া
অধ্যায় – ৬আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ
অধ্যায় – ৭সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা
অধ্যায় – ৮পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ
অধ্যায় – বিশ্বায়ন
দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)
অধ্যায় – ১০একদলীয় প্রাধান্যের যুগ
অধ্যায় – ১১জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান
অধ্যায় – ১২পরিকল্পিত বিকাশের রাজনীতি
অধ্যায় – ১৩ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক
অধ্যায় – ১৪কংগ্রেস প্রণালীর প্রতি প্রত্যাহ্বান এবং এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা 
অধ্যায় – ১৫গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট
অধ্যায় – ১৬গণ-আন্দোলনের উত্থান
অধ্যায় – ১৭আঞ্চলিক প্রত্যাশা
অধ্যায় – ১৮ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২২। তাসখন্ড কোথায় যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৬ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৬ সালে তাসখন্ড পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থিত ছিল। বর্তমানে তা উজবেকিস্তানের রাজধানী।

প্রশ্ন ২৩। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস বিভাজনের ফলে গঠিত হওয়া দুটি রাজনৈতিক দলের নাম লেখ।

উত্তরঃ কংগ্রেস বিভাজনের ফলে নিম্নোক্ত দুটি দল গঠিত হয়েছিল:

(ক) কংগ্রেস (আর R) [R = Requisitioned]

(খ) কংগ্রেস (সংগঠন O) [O = Organization]

প্রশ্ন ২৪। ১৯৭০ দশকের প্রথমার্ধে ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তার দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তার দুটি কারণ হল-

(ক) গরিবী হঠাও শ্লোগান। এবং

(খ) ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে ভারতের জয় ও বাংলাদেশের সৃষ্টি।

প্রশ্ন ২৫। কংগ্রেস সিন্ডিকেটের যে-কোন দুজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ কংগ্রেস সিন্ডিকেটের দুজন নেতা হলেন—

(ক) এস. কে. পাতিল (বোম্বাই)। ও 

(খ) সঞ্জীব রেড্ডি (অন্ধ্রপ্রদেশ)।

প্রশ্ন ২৬। ইন্দিরা গান্ধী কখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন? কখন তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে প্রথমবার এবং ১৯৮০ সালে দ্বিতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর আততায়ীর হাতে নিহত হন।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সম্মিলিত সরকার বা মোর্চা সরকারের উৎপত্তির বা আবির্ভাবের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ নির্বাচনে কোন দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করলে দুই বা ততোধিক দল মিলিত হয়ে কোয়ালিশন সরকার বা সম্মিলিত সরকার গঠন করে। ১৯৬৭ সাল থেকে ভারতে কোয়ালিশন সরকারের সূচনা হয়। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, কেরালা, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে পরাজিত হয়। অধিকন্তু হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে কংগ্রেস সরকার গঠিত হলেও ব্যাপক দলত্যাগের ফলে কিছুদিনের মধ্যেই এইসব রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। এর ফলে ভারতে ১৬টি রাজ্যের মধ্যে ৮টিতে অ-কংগ্রেসী যুক্তফ্রন্ট কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই সকল রাজ্যে কোয়ালিশন সরকারের স্থায়িত্ব ছিল না। কিছুদিনের মধ্যে এইগুলি ভেঙে যায় ও অন্তবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অন্তবর্তী নির্বাচনেও উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও মণিপুরে কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন ২। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দলে হওয়া বিভাজন অবশ্যম্ভাবী ছিল কি? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে আসে। ড০ জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর ঐ বছর রাষ্ট্রপতির পদটি খালি হয়। শ্রীমতী গান্ধীর আপত্তি সত্ত্বেও ‘সিন্ডিকেট’ তাঁর দীর্ঘ সময়ের বিরোধী লোকসভার স্পীকার এন সঞ্জীব রেড্ডীকে কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থী হিসাবে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত করতে সক্ষম হয়। শ্রীমতী গান্ধী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরিকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে উৎসাহিত করেন। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উভয় পক্ষের কাছেই ছিল শক্তি পরীক্ষার নির্বাচন। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নিজলিঙ্গপ্পা ‘হুইপ’ জারি করে কংগ্রেস সাংসদ ও বিধায়কদের দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেন। ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সমর্থকেরা ‘বিবেক ভোটের’ দাবি জানান। নির্বাচনে ভি ভি গিরি বিজয়ী হন।

কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থীর পরাজয় দলের বিভাজনকে চূড়ান্ত করে। কংগ্রেস সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কৃত করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে তাঁর গোষ্ঠীই প্রকৃত কংগ্রেস। নভেম্বর ১৯৬৯ সাল থেকে ‘সিন্ডিকেট’ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস গোষ্ঠী কংগ্রেস (O) এবং ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী কংগ্রেস (R) বলে পরিচিত হয়। ইন্দিরা গান্ধী এই বিভাজনকে সমাজবাদী ও সংরক্ষণশীল এবং দরিদ্র বনাম ধনিক শ্রেণীর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য বলে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৬৯ সালের কংগ্রেস দলের বিভাজনকে পরিহার করা যেত যদি ‘সিন্ডিকেট’ এবং ইন্দিরা গান্ধী উভয় পক্ষই সুসম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হতেন। দুই শ্রেণির মধ্যে মতাদর্শগত লড়াই এবং দলে কর্তৃত্ব স্থাপনের স্পৃহা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত গড়ায় এবং দলকে দুই ভাগে ভাগ করে।

প্রশ্ন ৩। দেশীয় রাজ্যসমূহের প্রিভি পার্স বা রাজন্যভাতা বিলোপসাধনের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্ত করা হয়। এই সংযুক্তিকরণের একটি শর্ত ছিল যে প্রাক্তন রাজপরিবারগুলিকে রাজ্যের আয়ের উপর ভিত্তি করে সরকারি অনুদান প্রদান করা হবে। এই বিশেষ অনুদানকে ‘রাজন্য ভাতা’ বা Privy Purse বলা হয়। সংযুক্তিকরণের সময় এই সুবিধা প্রদান করাকে বিশেষভাবে সমালোচনা করা হয়নি। এই বংশানুক্রমিক সুবিধা ভারতীয় সংবিধানে উল্লেখিত সমতার নীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নেহেরু এই ব্যবস্থার প্রতি অসন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে নির্বাচনের পর ইন্দিরা গান্ধী এই বিশেষ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার দাবি উচিত বলে বিবেচনা করেন। ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী সরকার এই মর্মে এক সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে এই বিষয়কে ইস্যু করে কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে এবং রাজন্য ভাতা বিলোপ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন আইন বিপুল ভোটে সংসদে অনুমোদিত হয়।

প্রশ্ন ৪। ১৯৭০-এর দশকের প্রথমদিকে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের জনপ্রিয়তা লাভ করার কারণসমূহ কি কি?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রথমাবস্থায় তিনি জনপ্রিয় ছিলেন না, কিন্তু কালক্রমে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নিম্নলিখিত কারণে:

(ক) প্রথিতযশা ও সম্মোহিনী ব্যক্তিত্ব: শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী নেহেরু পরিবারের প্রথিতযশা ও বিদুষী রমণী ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল পর্বতপ্রমাণ ও অসমান্তরাল। এইসব গুণাবলির জন্য তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর এই জনপ্রিয়তার জন্য ১৯৭১ সালের চতুর্থ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভে সক্ষম হয়েছিল।

(খ) ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি: ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভূমিসংস্কার, দারিদ্র দূরীকরণ, বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য এক ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এই বছরেই তিনি মোট ১৪টি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ব করেন। নিঃসন্দেহে এটা একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ যা তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অধিষ্ঠিত করেছিল। তিনি রাজন্য ভাতারও বিলোপ করেছিলেন।

(গ) গরিবী হঠাও: পঞ্চম লোকসভার সাধারণ নির্বাচন ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘গরিবী হঠাও’ উচ্চারণ ও প্রচার করেন। তাঁহার এই স্লোগান সারা দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই স্লোগান দ্বারা তিনি অনুন্নত সম্প্রদায়, আদিবাসী, বেকার যুবক, সংখ্যালঘু, মহিলা ও অনুসূচিত জাতি, জনজাতি প্রভৃতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন লাভ করেন।

প্রশ্ন ৫। ১৯৬৭ সনে ইন্দিরা সরকার কেন ভারতীয় মুদ্রার মূল্য হ্রাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল? এর ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ ষাট-এর দশকে ভারত নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ছিল। পরপর মৌসুমী বায়ুর ঘাটতি, বিস্তৃত খরা, কৃষি উৎপাদনে ঘাটতি, গুরুতর খাদ্যাভাব, বিদেশি মুদ্রা জমার পরিমাণ কমে যাওয়া, শিল্পোৎপাদন এবং রপ্তানি হ্রাস, তার সঙ্গে সামরিক খাতে অত্যধিক ব্যয়বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন খাত থেকে সম্পদ অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার দরুণ। এই সমস্যাসমূহ মোকাবিলার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি ছিল ভারতীয় টাকার দাম কমানো যা দৃশ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে করা হয়েছিল।

টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পায়। পূর্বে একটি আমেরিকান ডলার ৫ টাকার কমে কেনা যেত, কিন্তু অবমূল্যায়নের পর এর দাম হয় ৭ টাকারও বেশি। অর্থনৈতিক অবস্থা মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। জনসাধারণ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। দেশজুড়ে বন্ধ, হরতাল পালিত হতে থাকে।

প্রশ্ন ৬। মোর্চা সরকারের নূতন যুগে SVD-র বিষয়ে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ তীব্র জনঅসন্তোষ এবং রাজনৈতিক সমাবর্তনের প্রেক্ষাপটে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল জাতীয় ও রাজ্য উভয় পর্যায়েই কংগ্রেসকে নাড়া দিয়েছিল। কংগ্রেস লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কেবলমাত্র ২৮৩ আসন নিয়ে। শ্রীমতী গান্ধীর ক্যাবিনেটের অর্ধেক মন্ত্রী পরাজিত হন। কামরাজ, এস. কে পাটিল, অতুল্য ঘোষ এবং কে. বি. সহায়-এর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নির্বাচনে পরাজিত হন। কংগ্রেস মোট নয়টি রাজ্যে ক্ষমতা হারায়। মাদ্রাজ রাজ্যে ডি.এম.কে ছাড়া অন্য আটটি রাজ্যে বিভিন্ন অ-কংগ্রেসী দল মিলিত হয়ে বহুদলীয় সরকার গঠন করে।

১৯৬৭ সালের নির্বাচন বহুদলীয় সরকার নামে এক বিস্ময়কর বস্তুকে প্রকাশ্যে নিয়ে এলো। যেহেতু কোন একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেইজন্য অনেকগুলি অ-কংগ্রেসী দল মিলেমিশে পরিষদীয় দল গঠন করে যা অ-কংগ্রেস সরকারগুলিকে সমর্থন করে। এই বহুদলীয় সরকারকে এস ভি ডি বলা হত।

১৯৮৯ সালের নির্বাচনে পর আবার ভি পি সিংহের নেতৃত্বে বহুদলীয় অ-কংগ্রেসী সরকার কেন্দ্রে পুনরায় ক্ষমতা লাভ করে। সেই সরকারকে দুই পরস্পর বিরোধী দল ভাজপা এবং বামদলগুলি বাইরে থেকে সমর্থন করে। যদিও এই বহুদলীয় সরকার পাঁচ বছর স্থায়ী হয়নি। তবে ১৯৯৬ সাল থেকে ভারতে বহুদলীয় সরকারের প্রচলন শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। ভারতের কোন্ চারটি রাজ্যের বিধানসভায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নি?

উত্তরঃ ভারতের যে চারটি রাজ্যে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না সেগুলি হল- 

(ক) তামিলনাড়ু। 

(খ) পশ্চিমবঙ্গ।

(গ) মহারাষ্ট্র। ও 

(ঘ) বিহার।

প্রশ্ন ৮। ১৯৬৭ সনের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সনের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের (লোকসভা) ফলাফল নিম্নরূপঃ

দলপ্রাপ্ত আসন
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস২৮৩
স্বতন্ত্র দল৪২
ভারতীয় জনসংঘ৩৫
ভারতীয় সাম্যবাদী দল২৩
এস. এস. পি.২৩
ভারতের সাম্যবাদী দল (এম)১৯
পি. এস. পি.১৩

উল্লেখযোগ্য যে কেন্দ্রে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কংগ্রেস সরকার গঠন করলেও এই দল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। মোট সাতটি রাজ্যে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং দুটি রাজ্যে দলত্যাগের ফলে কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারে নি।

প্রশ্ন ৯। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর ভারতীয় রাজনীতিতে কি সন্দেহের উদয় হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে নেহেরুর মৃত্যুর পর ভারতীয় রাজনীতিতে বহু আশঙ্কার উদ্ভব হয়েছিল। নেহেরুর পরে কে? এই উত্তরাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে যথেষ্ট দূরকল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের মতো নতুন স্বাধীন দেশে এই অবস্থা আরো জটিল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল—নেহেরুর পরে কে?

দ্বিতীয় প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছিল অনেক বাইরের মানুষের সন্দেহ থেকে যে নেহেরুর পরে ভারতের গণতান্ত্রিক পরীক্ষা টিকতে পারে কি না তা থেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে বহু নতুন স্বাধীন দেশের মতো ভারতও গণতান্ত্রিক উত্তরাধিকার পরিচালনা করতে সক্ষম হবে কি না। আশঙ্কা করা হচ্ছিল ঐ অসামর্থ্য সৈন্যবাহিনীর জন্য রাজনৈতিক ভূমিকা সৃষ্টি করবে। তাছাড়া সন্দেহ ছিল যে নতুন নেতৃত্ব সমাধানের জন্য অপেক্ষায় থাকা বহু সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারবে কি না।

প্রশ্ন ১০। কংগ্রেস (আর)-এর প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেটের নেতাগণের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর মতানৈক্য সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে কংগ্রেস (O) ও কংগ্রেস (R) নামে দুটি দলের জন্ম হয়। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে গঠিত দলকে কংগ্রেস (R) বলে জানা যায়। তিনি এই বিভাজনকে সমাজবাদী ও রক্ষণশীল তথা দরিদ্রপন্থী ও ধনীপন্থীর মধ্যে বিভাজন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ইন্দিরা গান্ধী নিজে তাঁর দলকে সমাজবাদী আদর্শের ও দরিদ্রের স্বার্থের জন্য বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথা জনমুখী নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতিসমূহের মধ্যে ভূমিসংস্কার আইনের সংস্কার, ভূমির সর্বোচ্চ মালিকানা নির্ধারণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এইসকল কারণে এই দল অতি কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

প্রশ্ন ১১। ১৯৭১ সালের ‘বৃহৎ মোর্চার’ বিষয়ে নীচের কোন্ উক্তিটি শুদ্ধ?

(ক) অসাম্যবাদী ও অ-কংগ্রেসীদের দ্বারা গঠিত।

(খ) স্পষ্ট রাজনৈতিক ও আদর্শগত কার্যসূচী ছিল।

(গ) সকল অকংগ্রেসী দলের দ্বারা গঠিত ছিল।

উত্তরঃ (ক) অসাম্যবাদী ও অ-কংগ্রেসীদের দ্বারা গঠিত।

প্রশ্ন ১২। ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস পরাজিত হওয়ার যুক্তিসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস পরাজিত হওয়ার যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) কংগ্রেস দলে মোহিনী শক্তিযুক্ত নেতার অভাব ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেহরুর নেতৃত্বে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করেছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে নূতন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বছরেরও কম সময়ে পদে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন পরিকল্পনা করেন। ফলে দল শক্তিশালী নেতৃত্ব হতে বঞ্চিত হয়।

(খ) কংগ্রেসের মধ্যে কোন্দল ও গোষ্ঠীবাদ এর পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

(গ) ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক জনগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান গতি কিয়ৎ পরিমাণে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ ছিল।

(ঘ) ১৯৬০-এর দশকে বিরোধী দলসমূহের মধ্যে ঐক্য দেখা যায়। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলসমূহ ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ।

(ঙ) কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ মতানৈক্য ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের একটি প্রধান কারণ।

প্রশ্ন ১৩। কখন এবং কেন কংগ্রেস দল দ্বিতীয়বার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রত্যহ্বানের সম্মুখীন হয়?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালে নেহেরুর মৃত্যুর পর কংগ্রেস দল প্রথমবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রত্যহ্বানের সম্মুখীন হয়। লালবাহাদুর শাস্ত্রী নেহেরুর যোগ্য উত্তরাধিকারী রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন এবং জনসাধারণ এবং সমালোচকদের ভুল প্রমাণিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি লালবাহাদুর শাস্ত্রী পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুতে কংগ্রেস দল দুবছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়।

এইবার মোরারজি দেশাই ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। মোরারজি ইতিপূর্বে বোম্বাই রাজ্য ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন এবং কেন্দ্রেও মন্ত্রী ছিলেন। এইবার প্রবীন নেতারা ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা কংগ্রেস সাংসদদের গোপন ব্যালটে নিষ্পত্তি হয়। ইন্দিরা গান্ধী মোরারজি দেশাইকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দলীয় সাংসদদের সমর্থন পেয়ে পরাজিত করেন। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরকরণ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ভারতীয় গণতন্ত্রের সাবালক হওয়ার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়।

প্রশ্ন ১৪। অ-কংগ্রেসবাদ কি? ১৯৬৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে এই বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ কংগ্রেস-বিরোধী দলগুলি উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে তাদের ভোট বিভাজনই কংগ্রেসকে ক্ষমতায় রেখেছে। কাজেই কর্মসূচী ও পুরোপুরি ভিন্ন ও অসম মতবাদ সত্ত্বেও তারা অনেক রাজ্যে কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ে তোলে ও নির্বাচনী আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় অংশ নেয়। সমাজতান্ত্রিক নেতা রাম মনোহর লোহিয়া এই কৌশলের নাম দিয়েছিলেন ‘কংগ্রেস বিহীনতা’। তাঁর তাত্ত্বিক যুক্তি ছিল—কংগ্রেস শাসন অগণতান্ত্রিক ও সাধারণ গরীব জনসাধারণের স্বার্থবিরোধী। অতএব জনগণের জন্য অ-কংগ্রেসী দলগুলির একজোট হওয়া গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে প্রয়োজনীয়। একেই অ-কংগ্রেসবাদ বলা হয়।

প্রথম তিনটি নির্বাচনকে কংগ্রেস আধিপত্য যুগ বলা হয়। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে ভারত-চীন যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ, দারিদ্র, অসাম্য, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খাদ্যাভাব, টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে কংগ্রেস দলের প্রতি জনসাধারণের মোহভঙ্গ হতে লাগল। বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলি অধিকতর সাম্যের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিশ্বাস জন্মায় যে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যূত করা সম্ভব। যদিও কংগ্রেস, ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২৮৩টি আসন লাভ করে কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছিলেন। কিন্তু নয়টি রাজ্যে অ-কংগ্রেসী দলগুলি জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৫। নতুন কংগ্রেস (আর) পার্টির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস দল বিভক্ত হয়ে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (O) এবং সিন্ডিকেট নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (R)-এর জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে অ-কমিউনিস্ট এবং অ-কংগ্রেসী দলগুলি এক কংগ্রেস-বিরোধী মহাজোট গঠন করে। এই জোটের নেতৃবৃন্দের ধারণা ছিল এই দলগুলির সম্মিলিত ভোট ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। এই মহাজোটের কোন সুসংগত রাজনৈতিক কর্মসূচী ছিল না। তাদের কেবলমাত্র একটি শ্লোগান ছিল ‘ইন্দিরা হটাও’। ইন্দিরা গান্ধী এর বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে ‘গরীবি হটাও’ শ্লোগান দিয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন এবং প্রদত্ত ভোটের ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৫২টি আসনে জয়লাভ করেন।

প্রশ্ন ১৬। কংগ্রেস দলে ‘সিন্ডিকেট’ কী ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তরঃ সিন্ডিকেট ছিল এক কংগ্রেস নেতাগোষ্ঠী যারা দলের সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি কে. কামরাজ। এর মধ্যে ছিলেন শক্তিশালী রাজ্য নেতারা যেমন বম্বে নগরের এস. কে. পাতিল, মহীশুরের এস. নিজলিঙ্গাপ্পা, অন্ধ্রপ্রদেশের এন. সঞ্জীব রেড্ডি, এবং পশ্চিমবঙ্গের অতুল্য ঘোষ। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পরে ইন্দিরা গান্ধী উভয়েই তাঁদের পদমর্যাদার জন্য সিন্ডিকেটের সমর্থনের কাছে ঋণী ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম মন্ত্রীসভায় এবং নীতি নির্ধারণ ও কার্যকরী করার ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠীর চূড়ান্ত প্রভাব ছিল। কংগ্রেস বিভাজনের পরে সিন্ডিকেটের নেতারা এবং যাঁরা তাঁদের প্রতি অনুগত ছিল তাঁরা কংগ্রেস (O)-তে রয়ে গেলেন। যেহেতু ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস (R) জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় বিজয়ী হয়েছিলেন, ওই সব বড় শক্তিশালী নেতারা ১৯৭১ সালের পরে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁদের শক্তি ও সম্মান হারিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৭। কামরাজ পরিকল্পনা কি?

উত্তরঃ কে. কামরাজ ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং কংগ্রেস সভাপতি। তিনি মাদ্রাজের (তামিলনাড়ু) মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার দরুন তিনি মাদ্রাজ প্রদেশে শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা করেন। সেইজন্য তিনি স্কুল শিশুদের জন্য মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি প্রস্তাব করেন যে দলের তরুণ কর্মীদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য সব বয়োজ্যেষ্ঠ কংগ্রেসীদের পদত্যাগ করা উচিৎ। তাঁর এই প্রস্তাব ‘কামরাজ পরিকল্পনা’ বলে খ্যাত হয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৮। দলত্যাগ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের পর ভারতের রাজনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দলত্যাগ। দলত্যাগ রাজনীতি রাজ্যসমূহে সরকার ভাঙাগড়ার ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দলত্যাগের অর্থ হল নির্বাচিত প্রতিনিধি তার নিজের দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে সেই দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান করা। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেস দল ত্যাগ করা বিধায়কগণ তিন রাজ্যে অকংগ্রেসী সরকার স্থাপন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই তিনটি রাজ্য হল হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ। এইভাবে ব্যাপক হারে রাজনৈতিক আনুগত্যের পরিবর্তন ‘আয়া রাম গয়া রাম’ ধারণার অবতারণা করেছিল।

প্রশ্ন ১৯। কংগ্রেসের অবনতির কারণগুলি আলোচনা কর।

উত্তরঃ কংগ্রেস ১৯৫২ পরবর্তী সময়ে সমস্ত দেশ জুড়ে প্রাধান্যকারী রাজনৈতিক শক্তি ছিল। এই প্রবণতা ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধনের সূচনা করে। সেই সময় থেকেই কংগ্রেসের অবনতি শুরু হয়।

এর প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বছরগুলিতে দেশ নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ছিল। অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রভৃতির ফলে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।

(খ) অ-কংগ্রেসী দলগুলি এই সুযোগে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ে তোলে ও নির্বাচনী আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় অংশ নেয়।

(গ) ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসে, যা দলকে দুর্বল করে।

(ঘ) ১৯৭৫ সালের দীর্ঘকালীন জরুরি অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার বিরোধী দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা হ্রাস করে। ফলে ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতা হারায়। এই সকল নানা কারণে কংগ্রেসের অবনতি ঘটতে থাকে।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দল বিভাজনের সম্মুখীন হওয়ার যে-কোন ছয়টি কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দল বিভাজনের সম্মুখীন হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে ছয়টি নিম্নরূপ:

(ক) তৎকালীন সিন্ডিকেট নেতারা ভেবেছিলেন যে ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ক; অতএব তিনি এই বর্ষীয়ান নেতাদের উপর নির্ভর করবেন।

(খ) ইন্দিরা গান্ধী বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে চেয়েছিলেন যা সিন্ডিকেট নেতারা অনুমোদন করেন নি।

(গ) ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্বকরণ সিণ্ডিকেট গোষ্ঠী ভালোভাবে নেয়নি।

(ঘ) ভূমি সংস্কারে ইন্দিরা গান্ধীর সদর্থক পদক্ষেপ তাদের মনঃপুত হয়নি।

(ঙ) মন্ত্রিসভায় সিন্ডিকেটের মনোনীত সদস্যদের স্থান না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হন।

(চ) সর্বোপরি সিন্ডিকেট-মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে সমর্থন না করে তার পরাজয় নিশ্চিত করা ও নির্দল প্রার্থীকে জয়লাভে সাহায্য করা।

এছাড়াও আরও অনেক কারণ ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস বিভাজনের জন্য দায়ী।

প্রশ্ন ২। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পরাজিত হওয়ার পিছনে নিম্নোক্ত কোন্ কারণগুলি দায়ী তা বিবৃত কর:

(ক) কংগ্রেস দলে আকর্ষণীয় নেতার অভাব।

(খ) কংগ্রেস দলে দেখা দেওয়া বিভাজন।

(গ) আঞ্চলিক, জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীসমূহের উত্থান।

(ঘ) অকংগ্রেসী দলসমূহের বর্ধিত ঐক্য।

(ঙ) কংগ্রেস দলে আভ্যন্তরীণ বিভেদ।

তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস পরাজিত হওয়ার যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) কংগ্রেস দলে মোহিনী শক্তিযুক্ত নেতার অভাব ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেহরুর নেতৃত্বে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করেছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে নূতন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বছরেরও কম সময়ে পদে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন পরিকল্পনা করেন। ফলে দল শক্তিশালী নেতৃত্ব হতে বঞ্চিত হয়।

(খ) কংগ্রেসের মধ্যে কোন্দল ও গোষ্ঠীবাদ এর পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

(গ) ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক জনগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান গতি কিয়ৎ পরিমাণে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ ছিল।

(ঘ) ১৯৬০-এর দশকে বিরোধী দলসমূহের মধ্যে ঐক্য দেখা যায়। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলসমূহ ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ।

(ঙ) কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ মতানৈক্য ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের একটি প্রধান কারণ।

প্রশ্ন ৩। ষাট-এর দশককে কেন ভয়ংকর দশক’ হিসাবে অভিহিত করা হয়?

উত্তরঃ ষাট-এর দশককে ভয়ংকর দশক হিসাবে অভিহিত করা হয়, কারণ এই দশকে ভারত দারিদ্র, আর্থিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিক বৈষম্য এবং অন্যান্য নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এই সকল সমস্যার দরুণ ভারতীয় গণতান্ত্রিক সমস্যা এবং এমনকি দেশের সংহতি বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল।

১৯৬২ সালের ২০শে অক্টোবর চীন ভারত আক্রমণ করে। যুদ্ধের মাধ্যমে চীন ভারতের বিশাল এলাকা দখল করে নেয়, যা এখনও চীনের অধিকারে আছে। ১৯৬৪ সনের ২৭শে মে নেহেরু পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে একই প্রশ্ন দেখা দেয় নেহেরুর পর কে? ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় দেশের আর্থিক অবস্থা সংকটজনক ছিল। তিনি ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সাল নানা কারণে কংগ্রেস বিভাজিত হয়। ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের দলীয় প্রার্থী সঞ্জীব রেড্ডির পরাজয় হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থনে নির্দল প্রার্থী ভি. ভি. গিরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ফলে কংগ্রেসের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।

প্রশ্ন ৪। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের পর ইন্দিরা গান্ধীর সম্মুখীন হওয়া দুটি প্রত্যাহ্বানের নাম লেখ। সেই প্রত্যাহ্বানের প্রতি তাঁর রণনীতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের পর ইন্দিরা গান্ধী সম্মুখীন হওয়া দুটি প্রত্যাহ্বান ছিল নিম্নরূপ:

(ক) কংগ্রেস সিন্ডিকেটের সঙ্গে মতানৈক্য: প্রকৃতপক্ষে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি হুমকি বিরোধী পক্ষ থেকে আসে নি; এসেছিল নিজ দল কংগ্রেস থেকে। কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠী ছিলেন সিন্ডিকেটের সদস্য। এই সদস্যগণ তাঁদের কথামতো কাজ না করার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর বিরোধিতা করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তাদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বামপন্থী প্রণালী গ্রহণ করে আদর্শের পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন এবং অবশেষে দল থেকে বহিষ্কার হলেও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন।

(খ) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী: ইন্দিরা গান্ধীর সম্মুখীন হওয়া অপর একটি প্রত্যাহ্বান হল ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ঘোষিত দলীয় প্রার্থী। কংগ্রেস দল সঞ্জীব রেড্ডিকে প্রার্থিত্ব দান করলেও ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে সমর্থন করেন নি। অবশেষে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে তিনি ভি. ভি. গিরিকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি দলীয় সদস্যদের বিবেক ভোটদানের আহ্বান জানান এবং অবশেষে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী এই নির্বাচনে জয়লাভ করেন। 

প্রশ্ন ৫। ষাটের দশকে কংগ্রেসে প্রচলিত থাকা সিন্ডিকেট বলতে কি বোঝ? কংগ্রেস দলে সিন্ডিকেট কি ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তরঃ দলের সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা নেতার আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠীকে সিন্ডিকেট বলা হয়। তামিলনাড়ুর (মাদ্রাজের) মুখ্যমন্ত্রী এবং তদানীন্তন কংগ্রেস সভাপতি কে. কামরাজ এটি পরিচালনা করেছিলেন। এতে ক্ষমতাশালী নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন—এস. কে. পাতিল (বোম্বাই), এস. নিজলিঙ্গপ্পা (মহীশূর), এন. সঞ্জীব রেড্ডি (অন্ধ্রপ্রদেশ), অতুল্য ঘোষ (পশ্চিমবঙ্গ) প্রমুখ।

ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর কংগ্রেস দলে সিন্ডিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধী এই সিন্ডিকেটের সাহায্যে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই গোষ্ঠী ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম মন্ত্রীসভার নীতি প্রণয়ন ও রূপায়ণে প্রভাব বিস্তার করেছিল। কংগ্রেস বিভাজন হওয়ার পর এই গোষ্ঠীর সদস্যগণ কংগ্রেস (সং)-এ থাকেন। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস (আর) জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের পর ভারতীয় রাজনীতির শক্তিশালী নেতৃবৃন্দ তাদের ক্ষমতা ও পদ হতে বঞ্চিত হয়। এইভাবে ইন্দিরা গান্ধী সিন্ডিকেট নেতৃবৃন্দকে ধীরে ধীরে কোণঠাসা করেন। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস (সং) অর্থাৎ সিন্ডিকেটের সকল সদস্য পরাজিত হন এবং ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস দল লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

প্রশ্ন ৬। ১৯৬৯ সালের কংগ্রেস বিভাজন কি অপরিহার্য ছিল? যদি এই বিভাজন না হত তাহলে কিভাবে ১৯৭০-এর দশকের ঘটনাবলিকে প্রভাবিত করত?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে আসে। ড০ জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর ঐ বছর রাষ্ট্রপতির পদটি খালি হয়। শ্রীমতী গান্ধীর আপত্তি সত্ত্বেও ‘সিন্ডিকেট’ তাঁর দীর্ঘ সময়ের বিরোধী লোকসভার স্পীকার এন সঞ্জীব রেড্ডীকে কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থী হিসাবে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত করতে সক্ষম হয়। শ্রীমতী গান্ধী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরিকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে উৎসাহিত করেন। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উভয় পক্ষের কাছেই ছিল শক্তি পরীক্ষার নির্বাচন। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নিজলিঙ্গপ্পা ‘হুইপ’ জারি করে কংগ্রেস সাংসদ ও বিধায়কদের দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেন। ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সমর্থকেরা ‘বিবেক ভোটের’ দাবি জানান। নির্বাচনে ভি ভি গিরি বিজয়ী হন।

কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থীর পরাজয় দলের বিভাজনকে চূড়ান্ত করে। কংগ্রেস সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কৃত করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে তাঁর গোষ্ঠীই প্রকৃত কংগ্রেস। নভেম্বর ১৯৬৯ সাল থেকে ‘সিন্ডিকেট’ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস গোষ্ঠী কংগ্রেস (O) এবং ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী কংগ্রেস (R) বলে পরিচিত হয়। ইন্দিরা গান্ধী এই বিভাজনকে সমাজবাদী ও সংরক্ষণশীল এবং দরিদ্র বনাম ধনিক শ্রেণীর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য বলে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৬৯ সালের কংগ্রেস দলের বিভাজনকে পরিহার করা যেত যদি ‘সিন্ডিকেট’ এবং ইন্দিরা গান্ধী উভয় পক্ষই সুসম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হতেন। দুই শ্রেণির মধ্যে মতাদর্শগত লড়াই এবং দলে কর্তৃত্ব স্থাপনের স্পৃহা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত গড়ায় এবং দলকে দুই ভাগে ভাগ করে।

কংগ্রেসের এই বিভাজনের ফলে দল কিছুটা দুর্বল হয়েছিল। বিরোধী দলগুলি উৎসাহিত হয়েছিল এই ভেবে যে তারা একজোট হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেন্দ্রে ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত বিচক্ষণতার দ্বারা তাঁর দল কংগ্রেস (আর)-কে পরিচালনা করতে পেরেছিলেন এবং ‘গরীবি হঠাও’ শ্লোগান দিয়ে নির্বাচকমণ্ডলিকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। তবে ১৯৭৭ সালে নির্বাচকমণ্ডলি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো বহুদলীয় সরকার গঠনের পক্ষে রায় দেন। এই বহুদলীয় সরকারের বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে অনেকেই কংগ্রেস ছেড়ে এসেছিলেন, যার অন্যতম হলেন মোরারজি দেশাই।

প্রশ্ন ৭। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন (১৯৬৭) কিভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করে?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালটি ভারতের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ইতিহাসে দিকনির্দেশক বছর। প্রথম তিনটি নির্বাচনে সমস্ত দেশ জুড়ে কংগ্রেস ছিল প্রাধান্যকারী রাজনৈতিক শক্তি। এই প্রবণতা ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধনের সূচনা করে। 

দুজন প্রধানমন্ত্রী খুব কাছাকাছি সময়ে প্রয়াত হয়েছেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে নাবালক বলে দেখা হচ্ছিল। দেশ বিরাট অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলি অধিকতর সাম্যের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। সিপিআই (এম-এল) সশস্ত্র কৃষক সংগ্রাম এবং কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করে।

এই অবস্থা দেশের দলীয় রাজনীতি থেকে আলাদা থাকতে পারে না। বিরোধী দলগুলি জনগণের প্রতিবাদ গড়ে তোলার পুরোভাগে থেকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। কংগ্রেস – বিরোধী দলগুলি কর্মসূচী ও মতবাদে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তারা অনেক রাজ্যে কংগ্রেস-বিরোধী জোট গড়ে তোলে ও নির্বাচনী আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় অংশ নেয়।

তীব্র জনঅসন্তোষ এবং রাজনৈতিক সমাবর্তনের প্রেক্ষাপটে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল জাতীয় ও রাজ্য উভয় পর্যায়েই কংগ্রেসকে নাড়া দিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী ক্যাবিনেটের অর্ধেক মন্ত্রী পরাজিত হন। কংগ্রেস কেন্দ্রতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও নয়টি রাজ্যের বিধানসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে ছাড়া বাকি ৮টি রাজ্যে কংগ্রেস-বিরোধী বহুদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬৭ সালের নির্বাচন বহুদলীয় সরকার নামে এক বিস্ময়কর বস্তুকে প্রকাশ্যে নিয়ে এলো। যেহেতু কোন একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেইজন্য অনেকগুলি অ-কংগ্রেসী দল মিলেমিশে পরিষদীয় দল গঠন করে যা অ-কংগ্রেস সরকারগুলিকে সমর্থন করে। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল রাজ্যগুলিতে সরকার গঠন ও পতনের ক্ষেত্রে দলবদলের ভূমিকা পালন। উক্ত সাধারণ নির্বাচনের পরে, দলছুট কংগ্রেস বিধায়করা তিনটি রাজ্যে—হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে অ-কংগ্রেসী সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ৮। ১৯৭১ সালের নির্বাচনের ফলাফল কিভাবে কংগ্রেসকে পুনঃস্থাপন করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস দল বিভক্ত হয়ে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (O) এবং সিন্ডিকেট নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (R)-এর জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে অ-কমিউনিস্ট এবং অ-কংগ্রেসী দলগুলি এক কংগ্রেস-বিরোধী মহাজোট গঠন করে। এই জোটের নেতৃবৃন্দের ধারণা ছিল এই দলগুলির সম্মিলিত ভোট ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। এই মহাজোটের কোন সুসংগত রাজনৈতিক কর্মসূচী ছিল না। তাদের কেবলমাত্র একটি শ্লোগান ছিল ‘ইন্দিরা হটাও’। ইন্দিরা গান্ধী এর বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে ‘গরীবি হটাও’ শ্লোগান দিয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন এবং প্রদত্ত ভোটের ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৫২টি আসনে জয়লাভ করেন।

১৯৬৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস কেন্দ্রতে ২৮৩ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে, কিন্তু নয়টি অঙ্গরাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এই ফলাফলের কারণ ছিল তীব্র জনঅসন্তোষ। ইন্দিরা গান্ধী এই নির্বাচনে জয়লাভের পর বামঘেঁষা কিছু কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে অ-কংগ্রেস, অ-কমিউনিস্ট দলগুলি এক মহাজোট গঠন করে এবং ‘ইন্দিরা হটাও’ শ্লোগান দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে। শ্রীমতী গান্ধী এর জবাবে ‘গরীবি হটাও’ স্লোগান দিয়ে ১৯৭১ সালের নির্বাচনে অবতীর্ণ হন। নির্বাচকমণ্ডলি তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন, কারণ বিরোধীদের কোন সুসংহত রাজনৈতিক কর্মসূচী ছিল না এবং ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে তাঁর দল কংগ্রেস (আর) প্রদত্ত ভোটের ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে লোকসভায় ৩৫২টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনের পর ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস দল পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৬৭ সালের নির্বাচন সম্পর্কে নীচে দেওয়া কোন্ কোন্ বাক্যসমূহ শুদ্ধ?

(ক) কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু বহু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল।

(খ) কংগ্রেস লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেছিল।

(গ) কংগ্রেস লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল, কিন্তু অন্য কিছু দলের সঙ্গে মিলে সংযুক্ত সরকার গঠন করেছিল।

(ঘ) কংগ্রেস বর্ধিত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছিল।

উত্তরঃ (ক) কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু বহু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২। নিম্নোক্তগুলি মিলিয়ে লেখ:

(a) সিন্ডিকেট।

(b) দলত্যাগ।

(c) জয়ধ্বনি।

(d) কংগ্রেসবাদ বিরোধী।

(i) একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যে দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে সেই দল ত্যাগ করেছিল।

(ii) জনমতকে আকর্ষিত করা একটি মুগ্ধকর বাক্য।

(iii) বিভিন্ন আদর্শের দল একজোট হয়ে কংগ্রেস ও তার নীতির প্রতিবাদ করা।

(iv) কংগ্রেসের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী নেতার গোষ্ঠী।

উত্তরঃ (a) সিন্ডিকেট।

(b) দলত্যাগ।

(c) জয়ধ্বনি।

(d) কংগ্রেসবাদ বিরোধী।

(iv) কংগ্রেসের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী নেতার গোষ্ঠী।

(i) একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যে দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে সেই দল ত্যাগ করেছিল।

(ii) জনমতকে আকর্ষিত করা একটি মুগ্ধকর বাক্য।

(iii) বিভিন্ন আদর্শের দল একজোট হয়ে কংগ্রেস ও তার নীতির প্রতিবাদ করা।

প্রশ্ন ৩। নীচের স্লোগানগুলি কাদের সম্পর্ক সনাক্ত করবে?

(ক) জয় জোয়ান, জয় কিষান।

(খ) ইন্দিরা হঠাও।

(গ) গরিবী হঠাও।

উত্তরঃ (ক) জয় জোয়ান, জয় কিষান – লালবাহাদুর শাস্ত্রী।

(খ) ইন্দিরা হঠাও – বৃহৎ সম্মেলন।

(গ) গরিবী হঠাও – ইন্দিরা গান্ধী।

প্রশ্ন ৪। ৬০-এর দশকের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট শব্দ কি বোঝায়? কংগ্রেস দলের সিন্ডিকেট কি ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তরঃ দলের সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা নেতার আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠীকে সিন্ডিকেট বলা হয়। তামিলনাড়ুর (মাদ্রাজের) মুখ্যমন্ত্রী এবং তদানীন্তন কংগ্রেস সভাপতি কে. কামরাজ এটি পরিচালনা করেছিলেন। এতে ক্ষমতাশালী নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন—এস. কে. পাতিল (বোম্বাই), এস. নিজলিঙ্গপ্পা (মহীশূর), এন. সঞ্জীব রেড্ডি (অন্ধ্রপ্রদেশ), অতুল্য ঘোষ (পশ্চিমবঙ্গ) প্রমুখ।

ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর কংগ্রেস দলে সিন্ডিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধী এই সিন্ডিকেটের সাহায্যে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই গোষ্ঠী ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম মন্ত্রীসভার নীতি প্রণয়ন ও রূপায়ণে প্রভাব বিস্তার করেছিল। কংগ্রেস বিভাজন হওয়ার পর এই গোষ্ঠীর সদস্যগণ কংগ্রেস (সং)-এ থাকেন। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস (আর) জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের পর ভারতীয় রাজনীতির শক্তিশালী নেতৃবৃন্দ তাদের ক্ষমতা ও পদ হতে বঞ্চিত হয়। এইভাবে ইন্দিরা গান্ধী সিন্ডিকেট নেতৃবৃন্দকে ধীরে ধীরে কোণঠাসা করেন। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস (সং) অর্থাৎ সিন্ডিকেটের সকল সদস্য পরাজিত হন এবং ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস দল লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

প্রশ্ন ৫। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে নীচের দেওয়া কোন্ কারণসমূহের জন্য কংগ্রেস পরাজয় বরণ করেছিল? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে কারণ দর্শাও।

(ক) কংগ্রেস দলে মোহিনী শক্তিযুক্ত নেতার অভাব।

(খ) কংগ্রেস দলের বিভাজন।

(গ) আঞ্চলিক, জনগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান গতি।

(ঘ) অকংগ্রেসী দলসমূহের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঐক্য।

(ঙ) কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ মতভেদ।

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস পরাজিত হওয়ার যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) কংগ্রেস দলে মোহিনী শক্তিযুক্ত নেতার অভাব ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেহরুর নেতৃত্বে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করেছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে নূতন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বছরেরও কম সময়ে পদে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন পরিকল্পনা করেন। ফলে দল শক্তিশালী নেতৃত্ব হতে বঞ্চিত হয়।

(খ) কংগ্রেসের মধ্যে কোন্দল ও গোষ্ঠীবাদ এর পরাজয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

(গ) ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক জনগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান গতি কিয়ৎ পরিমাণে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ ছিল।

(ঘ) ১৯৬০-এর দশকে বিরোধী দলসমূহের মধ্যে ঐক্য দেখা যায়। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলসমূহ ১৯৬৭ সালের কংগ্রেস পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ।

(ঙ) কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ মতানৈক্য ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের একটি প্রধান কারণ।

প্রশ্ন ৬। কি কি কারণে ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দল বিভাজিত হয়েছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ও সিন্ডিকেটের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে আসে। ড০ জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর ঐ বছর রাষ্ট্রপতির পদটি খালি হয়। শ্রীমতী গান্ধীর আপত্তি সত্ত্বেও ‘সিন্ডিকেট’ তাঁর দীর্ঘ সময়ের বিরোধী লোকসভার স্পীকার এন সঞ্জীব রেড্ডীকে কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থী হিসাবে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত করতে সক্ষম হয়। শ্রীমতী গান্ধী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরিকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে উৎসাহিত করেন। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উভয় পক্ষের কাছেই ছিল শক্তি পরীক্ষার নির্বাচন। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি নিজলিঙ্গপ্পা ‘হুইপ’ জারি করে কংগ্রেস সাংসদ ও বিধায়কদের দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেন। ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সমর্থকেরা ‘বিবেক ভোটের’ দাবি জানান। নির্বাচনে ভি ভি গিরি বিজয়ী হন।

কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থীর পরাজয় দলের বিভাজনকে চূড়ান্ত করে। কংগ্রেস সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কৃত করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে তাঁর গোষ্ঠীই প্রকৃত কংগ্রেস। নভেম্বর ১৯৬৯ সাল থেকে ‘সিন্ডিকেট’ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস গোষ্ঠী কংগ্রেস (O) এবং ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী কংগ্রেস (R) বলে পরিচিত হয়। ইন্দিরা গান্ধী এই বিভাজনকে সমাজবাদী ও সংরক্ষণশীল এবং দরিদ্র বনাম ধনিক শ্রেণীর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য বলে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৬৯ সালের কংগ্রেস দলের বিভাজনকে পরিহার করা যেত যদি ‘সিন্ডিকেট’ এবং ইন্দিরা গান্ধী উভয় পক্ষই সুসম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হতেন। দুই শ্রেণির মধ্যে মতাদর্শগত লড়াই এবং দলে কর্তৃত্ব স্থাপনের স্পৃহা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত গড়ায় এবং দলকে দুই ভাগে ভাগ করে।

প্রশ্ন ৭। ১৯৭০ দশকের প্রথম ভাগে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের জনপ্রিয়তার কারণসমূহ কি কি?

উত্তরঃ ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রথমাবস্থায় তিনি জনপ্রিয় ছিলেন না, কিন্তু কালক্রমে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নিম্নলিখিত কারণে:

(ক) প্রথিতযশা ও সম্মোহিনী ব্যক্তিত্ব: শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী নেহেরু পরিবারের প্রথিতযশা ও বিদুষী রমণী ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল পর্বতপ্রমাণ ও অসমান্তরাল। এইসব গুণাবলির জন্য তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর এই জনপ্রিয়তার জন্য ১৯৭১ সালের চতুর্থ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভে সক্ষম হয়েছিল।

(খ) ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি: ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভূমিসংস্কার, দারিদ্র দূরীকরণ, বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য এক ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এই বছরেই তিনি মোট ১৪টি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ব করেন। নিঃসন্দেহে এটা একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ যা তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অধিষ্ঠিত করেছিল। তিনি রাজন্য ভাতারও বিলোপ করেছিলেন।

(গ) গরিবী হঠাও: পঞ্চম লোকসভার সাধারণ নির্বাচন ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘গরিবী হঠাও’ উচ্চারণ ও প্রচার করেন। তাঁহার এই স্লোগান সারা দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই স্লোগান দ্বারা তিনি অনুন্নত সম্প্রদায়, আদিবাসী, বেকার যুবক, সংখ্যালঘু, মহিলা ও অনুসূচিত জাতি, জনজাতি প্রভৃতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন লাভ করেন।

প্রশ্ন ৮। একটি রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল কিভাবে মিটমাট করা যায়? এর কিছু পরামর্শ আছে। প্রত্যেকটি চিন্তা কর এবং প্রত্যেকটির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ কর।

(ক) দলের সভাপতির পদক্ষেপ অনুসরণ করা।

(খ) সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর কথা শোনা।

(গ) প্রত্যেক ক্ষেত্রে গোপন ব্যালট পদ্ধতি।

(ঘ) দলে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করা।

উত্তরঃ সুবিধাসমূহ:

(ক) দলের সভাপতির পদক্ষেপ অনুসরণ করলে দল শক্তিশালী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে।

(খ) সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর কথা শুনলে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক নীতি শক্তিশালী হবে।

(গ) দলের মধ্যে কোন বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে গোপন ব্যালট সর্বোত্তম ব্যবস্থা।

(ঘ) দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ দলকে সঠিক পথের নির্দেশ দেবে।

অসুবিধাসমূহ:

(ক) দলীয় সভাপতিকে অনুসরণ না করলে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং দল দুর্বল হয়ে পড়বে।

(খ) সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত যথাযথভাবে অনুসরণ না করলে তা গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে যায়। অধিকন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে না।

(গ) প্রত্যেক বিষয়ে গোপন ভোট ব্যবস্থায় ক্রশ ভোটিং-এর সম্ভাবনা থাকে।

(ঘ) দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ না করলে দল সঠিক পথে পরিচালিত হবে না।

We Hope the given দ্বাদশ শ্ৰেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন উত্তর will help you. If you Have any Regarding, Class 12 Political Science Question and Answer in Bengali, drop a comment below and We will get back to you at the earliest.

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Scroll to Top